
নিয়ম ভেঙে গাড়ি ক্রয়, বেতনভাতা ছাড়াও ব্যাংক থেকে অতিরিক্ত সুবিধা গ্রহণের অভিযোগে জরিমানার কবলে পড়েছেন উত্তরা বাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রবিউল ইসলাম। পাশাপাশি বাসার বাবুর্চি, গার্ড, সার্ভিস চার্জ, লিভ ফেয়ার অ্যাসিস্ট্যান্স ইত্যাদি বাবদ ব্যাংক থেকে নেওয়া টাকার বিপরীতে কোনো রাজস্ব দেননি এই এমডি। এতসব অভিযোগের বিপরীতে তাকে প্রায় ১৩ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উত্তরা ব্যাংকের একজন পরিচালককে সুবিধা দিতে টয়োটা করোলা ১.৬ এল গাড়িটি ক্রয় করেন উত্তরা ব্যাংকের এমডি। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অবহিত না করেই স্পেশাল বোনাস ও বৈশাখী ভাতা গ্রহণ করেছেন তিনি। সম্প্রতি এ জন্য তাকে ১২ লাখ ৯০ হাজার ৮০০ টাকা জরিমানা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই মধ্যে সেই টাকা ফেরতও দিয়েছেন রবিউল ইসলাম। কিন্তু রাজস্বের বাকি টাকা পরিশোধ করেছেন কি না তার জানার জন্য একাধিকবার যোগাযোগ করেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে উত্তরা ব্যাংকের এমডির মাসিক বেতন ১৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে মূল বেতন, বাসা ভাড়া, বাবুর্চি, গার্ড, সার্ভিস চার্জ, পুনঃভরণ ভাতা, বাসা মেরামত, আসবাবপত্র, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, টেলিফোন বিল, ঈদের ভাতা এবং জিপ গাড়ির খরচ অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু এর বাইরেও তিনি ২০১৮, ’১৯, ’২০, ’২১ ও ’২২ সালে করোনাকালীন ভাতা, স্পেশাল বোনাস এবং বৈশাখী বোনাস গ্রহণ করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাননি। এ ছাড়া ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত চিকিৎসা বাবদ তিনি ২৪ লাখ ২৯ হাজার ৪৫৩ টাকা ব্যাংক থেকে গ্রহণ করেছেন। কিন্তু আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী যত টাকা রাজস্ব দেওয়ার কথা তা পরিশোধ করেননি। শুধু তাই নয়, বাসায় কুক, গার্ড, সার্ভিস ইত্যাদির জন্য ব্যাংক থেকে নেওয়া ২ লাখ ৬৩ হাজার ৫৩৮ কোটি এবং লিভ ফেয়ার অ্যাসিস্ট্যান্স বাবদ নেওয়া ১৭ লাখ ৬০ হাজার টাকার বিপরীতে কোনো রাজস্ব দেননি এমডি।
এদিকে ব্যবস্থাপনার পরিচালকের পারিবারিক প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য গাড়ি কেনার ক্ষেত্রেও হয়েছে অনিয়ম। ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতিমালা অনুযায়ী, একজন পরিচালক, তার একক মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, অংশীদারিতে পরিচালিত ফার্ম, পরিচালক হিসেবে আছেন এমন প্রাইভেট ও পাবলিক কোম্পানি, জামিনদাতা হিসেবে তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এবং পরিচালকের স্ত্রী, স্বামী, পিতা, মাতা, সন্তান, ভাই, বোন এবং পরিচালকের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তির অনুকূলে সকল প্রকার ঋণ সুবিধা, গ্যারান্টি এবং অন্য কোনো আর্থিক সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সংখ্যাগরিষ্ঠের পূর্বানুমোদন গ্রহণ করার বিধান রয়েছে। কারণ নিকটাত্মীয়ের কাছ থেকে ব্যাংকের ব্যবহার করা জিনিসপত্র কিনলে অনিয়ম হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু উত্তরা ব্যাংকের এমডি রবিউল ইসলাম নাভানা লিমিটেড থেকে পরিবারের ব্যবহারের জন্য টয়োটা করোলা ১.৬ এল গাড়িটি ক্রয় করেছেন। নাভানা লিমিটেডের পরিচালক শফিউল ইসলাম হচ্ছেন উত্তরা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ইফতেখারুল ইসলামের ভাই। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, এমন ক্রয়ে ক্ষেত্রে পরিচালনা পর্ষদের কার্যবিবরণীতে এ বিষয়ক কোনো এজেন্ডা থাকার কথা। কিন্তু কার্যবিবরণীতে তা দেখা যায়নি।
একই ঘটনা ঘটেছে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নিজের জন্য কেনা গাড়ির ক্ষেত্রেও। চেয়ারম্যানের ভাইয়ের প্রতিষ্ঠান থেকে গাড়িটি কেনা হয়েছে। চেয়ারম্যানের টয়োটা ল্যান্ড কুইজার প্রাডো টিএক্সেল ২০১৯ কেনার সময়ও ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ গাড়ির স্পেসিফিকেশনসহ কোটেশন দাখিল করার জন্য কোনো পত্র, চূড়ান্ত ক্রয় আদেশ এবং ডেলিভারি প্রত্যয়ন দিতে পারেনি। অর্থাৎ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কারও গাড়ি কেনার আগে বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রথমে চাহিদাপত্র পাঠাতে হয়। সেই চাহিদা ভিত্তেতে তারা ব্যাংকের কাছে গাড়ির দাম প্রস্তাব করে। সেই দাম পরিচালনা পর্ষদে অনুমোদন হলেই গাড়ি কেনার বৈধতা পায় ব্যাংক। কিন্তু এখানে প্রক্রিয়ার অনুসরণ হয়নি এবং প্রক্রিয়াসংশ্লিষ্ট কোনো কাগজ দেখাতে পারেনি উত্তরা ব্যাংক।
সার্বিক বিষয়ে উত্তরা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে একাধিক মাধ্যমে যোগাযোগ করেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। হোয়াটসঅ্যাপে প্রশ্ন লিখে পাঠালে তা দেখেও (সিন) কোনো উত্তর দেননি।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা ও নীতি বিভাগের পরিচালক ও ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র সারওয়ার হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ব্যাংকের এমডিদের তাদের বেতনভাতাসহ যাবতীয় ভাতা নির্ধারিত থাকে। এর বাইরে তাদের কোনো ভাতা নিতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হয়। যদি কেউ কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অবহিত না করে কোনো ভাতা নেন তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ ছাড়া এমডি বা তার পরিবারের গাড়ি ক্রয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা রয়েছে। যদি কেউ তা লঙ্ঘন করেন তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে।’
সরকারি যেকোনো প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকের (ডিসি) অনুমোদন নেওয়ার নিয়ম রয়েছে। জমির দামও নির্ধারণ করবে জেলা প্রশাসক। কিন্তু ডিসিকে না জানিয়ে আঞ্চলিক কার্যালয় নির্মাণের জন্য জমির দাম নির্ধারণ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। জমির দাম নির্ধারণ করে প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনেও পাঠিয়েছে এ সংস্থাটি। তবে এমন বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বিভিন্ন অঞ্চলে আঞ্চলিক কার্যালয় নির্মাণের মাধ্যমে নাগরিক সেবা সহজ করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ২১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৭টি ভবন নির্মাণেই খরচ হবে ১০০ কোটি টাকা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আর্থিক সীমাবদ্ধতা থাকায় ৯০ শতাংশ সরকারের এবং ১০ শতাংশ নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নের প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।
রাজধানীর খিলগাঁও, আজিমপুর, নয়াবাজার, সায়েদাবাদ, নন্দীপাড়া, দক্ষিণগাঁও ও মাতুয়াইলে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
তবে পরিকল্পনা কমিশন আপত্তি জানিয়ে বলেছে, পরিকল্পনা কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ভূমি অধিগ্রহণের ব্যয় প্রাক্কলন করার বিষয় উল্লেখ থাকলেও প্রকল্প প্রস্তাবে ১ দশমিক ৩২ একর ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ৩৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকার প্রাক্কলন জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে সংগ্রহ করা হয়নি। এ ক্ষেত্রে ভূমি অধিগ্রহণের ব্যয় বিভাজন জেলা প্রশাসন থেকে সংগ্রহ করাসহ ভূমির প্রাপ্যতা এবং ব্যয় প্রাক্কলনের ভিত্তি নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে।
তবে ঢাকা জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক আবু জাফর রিপন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি এ ধরনের কোনো চিঠি জেলা প্রশাসনে পাঠিয়েছে কি না, আমার জানা নেই।’
প্রকল্পটির পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কাজী বোরহানউদ্দিন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডিসি অফিসের রেট অনুযায়ীই জমির দাম ধরা হয়েছে।’ ডিসি অফিসকে জানানো হয়নি কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ বিষয় নিয়ে আমি কথা বরতে ইচ্ছুক নই।’
সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, ৫০ কোটি টাকা বেশি ব্যয়ের প্রকল্প হলেই ফিজিবিলিটি স্টাডি করতে হবে। তবে এই প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি পরিকল্পনা কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী করা হয়নি। বিভিন্ন প্রকল্পে দেখা যায়, এই ফিজিবিলিটি স্টাডি সঠিক না হওয়ার কারণে পরে প্রকল্পের ডিজাইন পরিবর্তন ও সংশোধন করতে হয়।
রোড নির্মাণ (অভ্যন্তরীণ আরসিসি) ও বিউটিফিকেশন খাতে ২ কিলোমিটারের জন্য প্রায় ৭ কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে, যাতে ১ কিলোমিটারে খরচ পড়বে ৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
শুধু তা-ই নয়, পরামর্শক খাতে ৩ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ রাখা হলেও পরামর্শকের ধরন, সংখ্যা, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ইত্যাদিসহ বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়নি। এই প্রকল্পে কোনো ধরনের পরামর্শকের প্রয়োজন আছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে কমিশন।
আসবাব ক্রয় বাবদ ৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। এর বিস্তারিত ব্যয় বিভাজন ডিপিপিতে সংযোজন করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া কর্মকর্তার এবং কর্মচারীর জন্য সব আসবাব কেনার প্রস্তাবের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। প্রস্তাবিত প্রকল্পে ৯৮টি কম্পিউটার কেনার প্রয়োজনীয়তা কী, সে ব্যাখ্যাও দিতে পারেনি তারা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭টি আঞ্চলিক কার্যালয় (মূল ভবন) নির্মাণের জন্য ১০০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। এর বিস্তারিত ব্যয়ও প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়নি।
প্রকল্পে ভূমি উন্নয়নের জন্য ৩৪ হাজার ৮৩৭ ঘনমিটার মাটির কাজের জন্য ৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে। ভূমির বর্তমান অবস্থা প্রস্তাবিত কাজের প্রকৃতি জানতে চেয়েছে কমিশন।
এইচটি বা এলটি লাইন, জেনারেটর এবং সাব স্টেশন খাতে ১৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা থোক বরাদ্দ রাখা হলেও এর ভিত্তি কী, তা স্পষ্ট করা হয়নি।
ডিপিডিসি লাইন এক্সটেনশন ডিপোজিট ওয়ার্ক খাতে ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে দেওয়া চিঠিতে এ খাতের বিস্তারিত ব্রেকআপসহ ব্যয় প্রাক্কলন ডিপিপিতে সংযুক্তির বিষয় উল্লেখ থাকলেও তা সংযোজন করেনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি। ডিপিডিসি থেকে প্রাক্কলিত ব্যয় সংগ্রহ করে ডিপিপিতে সংযোজন করতে বলা হয়েছে।
প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন অঞ্চলে আঞ্চলিক কার্যালয় নির্মাণের মাধ্যমে নাগরিক সেবা প্রদান সহজীকরণসহ জীবন যাত্রার মানোন্নয়ন করা। অঞ্চলভিত্তিক নাগরিক সেবা কেন্দ্র হিসেবে আঞ্চলিক কার্যালয় নির্মাণ, নাগরিক সেবা প্রদান সহজীকরণ, এলাকার মানুষের জীবন যাত্রার মান ও আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন করা।
প্রকল্পটির সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান প্রকৌশলী সালেহ আহম্মেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রকল্পটির পরিকল্পনা করা হয়েছে আরও দুই বছর আগে। আমি এখানে নতুন। এ দুই বছরে প্রকল্পটির পরিকল্পনায় আরও অনেক পরিবর্তন এনেছি আমরা। তবে জমি অধিগ্রহণে যে টাকাই আসবে, পুরো টাকাই ডিসি অফিসে যাবে। জমি অধিগ্রহণ পুরোটাই সরকারি। অধিগ্রহণের টাকা ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হয় ডিসি অফিসের মাধ্যমে।’
২ কিলোমিটারে ৭ কোটির খরচ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দুই কিলোমিটারের কোথায় কোথায় কী খরচ তা উল্লেখ করা প্রয়োজন। দেখা যায়, ৩০০ মিটারের রাস্তায়ও ১ কোটি খরচ হয়ে যায় বিভিন্ন ইউটিলিটি প্রতিস্থাপনে। যদি সেখানে ড্রেনেজ পাইপসহ বিভিন্ন কাজে নদী শাসনের মতো বাঁধ দিয়ে করতে গেলে ১২ কোটিও লাগতে পারে। তবে খরচ স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। প্রকল্প পরিচালক এর ব্যাখ্যা দিতে পারবেন।’ সম্ভাব্যতা যাচাই না করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখানে সম্ভাব্যতা যাচাই ফরমালি করা হয়নি। তবে শুনেছি, সিটির অন্য প্রকল্পের প্রকৌশলী দিয়ে এর সম্ভাব্যতা যাচাই হয়েছে।’
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে নতুনভাবে ১৮টি ওয়ার্ড, অর্থাৎ প্রায় ৬৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় বিদ্যমান ৫টি অঞ্চলের পরিবর্তে ১০টি অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে নবসংযুক্ত এলাকায় ৫টি আঞ্চলিক কার্যালয় এবং পুরনো এলাকায় ৪টিসহ মোট ৯টি আঞ্চলিক কার্যালয় নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
শীতের ছুটি শেষে আফগানিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পুনরায় খুলেছে। কিন্তু ক্ষমতাসীন তালেবানের নিষেধাজ্ঞার কারণে ক্লাসে ফিরতে পারছেন না নারী শিক্ষার্থীরা। ফেলে আসা খুশি ও আশায় পূর্ণ সময়ের কথা মনে করে এখন তারা শুধু কাঁদেন। নারী শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ করা পুরুষ শিক্ষার্থীদের জন্যও ভয়ংকর কষ্ট বয়ে নিয়ে এসেছে। শ্রেণিকক্ষ তাদের কাছে এখন শোকসভার মতো মনে হয়।
বিবিসি বলছে, ২০২১ সালে পুনরায় আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে তালেবান। তখন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নারী ও পুরুষ শিক্ষার্থীদের ক্লাসে আলাদা বসার নিয়ম জারি হয়। আর গত বছরের শেষদিকে তালেবান প্রশাসনের উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। শুধু উচ্চশিক্ষার অধিকারই নয় বরং তালেবান পুনরায় ক্ষমতায় এসে সে দেশের নারীদের কাজ করার অধিকারসহ আরও অনেক অধিকার কেড়ে নিয়েছে। আফগানিস্তানে মেয়েদের মাধ্যমিক স্কুলগুলো আরও আগেই বন্ধ করে দেয় তালেবান। নারীদের নিষিদ্ধ করা হয়েছে এনজিওসহ অনেক বেসরকারি কাজেও।
যদিও তালেবান প্রশাসনের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা অবশ্য দাবি করেছেন, এ ব্যবস্থা অস্থায়ী। তাদের কেউ কেউ কারণ ব্যাখ্যায় কঠোর পোশাক বিধি, তহবিলের অভাব বা ইসলামিক ধারায় পাঠ্যক্রম ঠিক করাসহ অনেক রকম কথাই বলছেন।
অবশ্য দেশটির বাস্তবতা নিয়ে কম্পিউটার সায়েন্সের চতুর্থ বর্ষের এক নারী শিক্ষার্থী দুঃখ ও ক্ষোভ নিয়ে বিবিসিকে বলেন, ‘এখন আমি আর কেউ না। আমার পরিকল্পনা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শেষ করে আমি আমার মাস্টার্স করব, তারপর পিএইচডি। আমি আমার দেশ, জাতি ও মানুষের জন্য কাজ করতে চেয়েছিলাম। আমি এখন আর সেটা করতে পারব না।’
অথচ মাত্র কয়েক মাস আগে তিনি এবং তার বন্ধুরা মিলে কীভাবে গ্র্যাজুয়েশনের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করবেন তা নিয়ে আলোচনা করেছেন। এমন বেশ কয়েকজন নারী শিক্ষার্থী বিবিসিকে জানিয়েছেন, ফেলে আসা খুশি ও আশায় পূর্ণ সময়ের কথা মনে করে এখন তারা শুধু কাঁদেন। আবার অনেকের নেই সেই স্মৃতিও। হেরাতের বাসিন্দা ১৯ বছর বয়সী আতেফা কম্পিউটার সায়েন্সের শিক্ষার্থী ছিলেন। কিন্তু তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের কোনো স্মৃতিও নেই, যেটা তিনি এখন মনে করবেন। কারণ, তিনি মাত্রই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে একজন ওয়েবসাইট ডেভেলপার হওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। কিন্তু তখনই তার স্বপ্নে বড় ধাক্কা আসে তালেবান সরকারের পক্ষ থেকে। আতেফা বলেন, ‘আমি এবং আমার বন্ধুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে কঠোর পরিশ্রম করেছি। কিন্তু আমার স্বপ্ন সত্যি করা গেল না... এটা তার আগেই শেষ হয়ে গেল।’
কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের একজন নারী শিক্ষার্থী বিবিসিকে বলেন, যদি তারা (তালেবান) আমাদের হিজাব পরতে বলে তবে আমরা খুশি মনেই তা মেনে নেব। যদি আমাদের আলাদা ক্লাস করতে বলা হয়, আমরা খুশি মনে সেটাও মেনে নেব। শুধু আমাদের শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ দিন। আফগানিস্তানে এখন মেয়েরা শুধু প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। পারওয়ান প্রদেশের এক তরুণ বলেন, শুধু পুরুষদের নিয়ে আপনি আমাদের দেশ গড়তে পারবেন না। নারীদেরও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করা প্রয়োজন।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামের কথোপকথনের আরেকটি অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। গত মঙ্গলবার রাত ১২টায় ফাঁস হওয়া এই অডিও ক্লিপে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষক পদে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি সংক্রান্ত কথোপকথন রয়েছে।
ফারাহ জেবিন নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে ওই অডিও ক্লিপ প্রকাশ করা হয়। যাতে উপাচার্যকে এক ব্যক্তির আত্মীয়কে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে প্রথম বা দ্বিতীয় করবেন এমন প্রতিশ্রুতি দিতে শোনা গেছে। তবে ওই প্রার্থীকে নিয়োগের নিয়ম পূরণ করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন উপাচার্য।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ মার্চ পর্যন্ত উপাচার্যের সঙ্গে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের একজন চাকরিপ্রার্থীসহ বিভিন্ন ব্যক্তির কথোপকথনের মোট ১০টি অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অডিও ফাঁসের পর ১৯ ফেব্রুয়ারি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগসহ তিনটি বিভাগের নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এ ছাড়া ২২ ফেব্রুয়ারি ফাঁস হওয়া অডিও ক্লিপের কথোপকথনের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দপ্তর এবং প্রকৌশল দপ্তরের নিয়োগ পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে। ১৮ ফেব্রুয়ারি তার ফাঁস হওয়া অডিও ক্লিপের কথোপকথনের বিষয়ে জানতে উপাচার্যের কাছে লিখিত বক্তব্য জমা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি এবং প্রগতিশীল শিক্ষকদের সংগঠন শাপলা ফোরাম।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপাচার্য শেখ আবদুস সালাম বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া অডিও ক্লিপের কথোপকথন তিনি শোনেননি। কর্র্তৃপক্ষ হিসেবে ইউজিসি ও সরকার রয়েছে। তারা বিষয়টি দেখবে।
এর আগে, অডিও ক্লিপ ফাঁসের ঘটনায় ১৭ ফেব্রুয়ারি রাতে ইবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান ইবি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
অন্যদিকে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের নিয়োগ বোর্ডের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তুলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ করেছেন এক চাকরিপ্রার্থী। শাহবুব আলম নামের ওই প্রার্থী উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি দুদকে অভিযোগ করেন। গতকাল বুধবার তার অভিযোগ আমলে নিয়েছে দুদক।
পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানি) সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ, সংঘর্ষ ও আহমদিয়া পল্লীতে হামলায় হতাহতের ঘটনার পর থেকে প্রতিদিনই হচ্ছে নতুন নতুন মামলা। গতকাল বুধবার সকাল পর্যন্ত ১৩টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় গতকাল সকাল পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৩৫ জনকে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টানা অভিযান ও কড়া নজরদারিতে জেলা শহরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। শহর ও এর আশপাশের এলাকার মোড়ে মোড়ে পুলিশ-বিজিবির টহল অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে গত শুক্রবারের ওই সহিংসতার ঘটনায় একের পর এক মামলা হলেও প্রকৃত অপরাধীরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আহমদিয়া সম্প্রদায়ের গণসংযোগ ও প্রেস বিভাগের প্রধান আহমদ তবশির চৌধুরী। একই সঙ্গে এই সহিংসতার ঘটনাকে কেউ কেউ রাজনৈতিক রং দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলেও দাবি তার।
শুক্রবারের সহিংসতার পর থেকে গত মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত হওয়া ১০টি মামলায় ১৩০ জনকে গ্রেপ্তার করছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরপর রাতভর অভিযান চালিয়ে আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। মঙ্গলবার রাতে আরও তিনটি মামলা করা হয়। এতে ১৩টি মামলায় গ্রেপ্তারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩৫। তাদের মধ্যে সহিংসতায় উসকানিদাতা হিসেবে তেঁতুলিয়া উপজেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. নাছিরউদ্দিনসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জেলা শহরসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে গ্রেপ্তার অভিযান চলায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। গ্রেপ্তারের আতঙ্কে অনেকেই বাড়িছাড়া। তবে নিরপরাধ কাউকে গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হবে না বলে পুলিশের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে।
হামলা, সংঘর্ষ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গত শনিবার রাতে পঞ্চগড় সদর থানায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে একটি এবং পুলিশের পক্ষ থেকে দুটি মামলা করা হয়। এরপর রবিবার রাতে পঞ্চগড় সদর থানায় র্যাব বাদী হয়ে একটি এবং পুলিশ বাদী হয়ে আরও দুটি মামলা করে। তারপর সোমবার রাতে জেলার বোদা থানায় আহমদিয়া সম্প্রদায় ও পুলিশ দুটি এবং পঞ্চগড় সদর থানায় আরও দুটি মামলা করে পুলিশ। সবশেষ মঙ্গলবার রাতে পঞ্চগড় সদর থানায় আরও তিনটি মামলা করে পুলিশ। এতে সদর থানার মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১টি এবং বোদা থানায় মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুটি।
এসব মামলায় প্রায় ১১ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জেলার পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা বলেন, ‘আরও মামলা করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। আমরা তদন্তের মাধ্যমে, ভিডিও ফুটেজ দেখে, বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত যাচাই করে অপরাধে জড়িতদের গ্রেপ্তার করছি।’
প্রকৃত অপরাধীদের না ধরার অভিযোগ : শুক্রবারের সহিংসতায় যারা জড়িত ছিল তারা এখনো গ্রেপ্তার হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন আহমদিয়া সম্প্রদায়ের গণসংযোগ ও প্রেস বিভাগের প্রধান আহমদ তবশির চৌধুরী। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিষয়টিতে (সহিংসতা) কেউ কেউ রাজনৈতিক রং দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু আমরা এটাকে রাজনীতির মধ্যে নিয়ে যেতে চাই না। আমরা কারও সাহায্য-সহযোগিতা চাই না। আমরা শুধু নিরাপদে বসবাস করতে চাই। নিজেদের জানমালের নিরাপত্তা চাই। নাম উল্লেখসহ ক্ষতিগ্রস্তরা মামলা করেছে। পুলিশও মামলা করেছে। কিন্তু প্রকৃত অপরাধীরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আহমদিয়া সম্প্রদায় অধ্যুষিত দুটি গ্রামে ও পঞ্চগড় শহরে আহমদিয়াদের দুই শতাধিক বাড়িঘর, দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়েছে। ৭০ জন সদস্য আহত হয়েছেন। একজনকে পিটিয়ে মেরেছে। তিন ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চলে। কিন্তু বিজিবি ও পুলিশ কোনো অ্যাকশনে যায়নি, যা আমাদের বিস্মিত ও হতবাক করেছে। তিন ঘণ্টা পর অ্যাকশন শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ততক্ষণে সব শেষ। এলাকার চিহ্নিতদের নাম পুলিশকে জানানো হয়েছে। কিন্তু ঘটনাটিকে কেউ কেউ রাজনীতির দিকে নিয়ে যাচ্ছেন, যা মোটেও কাম্য নয়।’
রেলমন্ত্রীর সঙ্গে থাকাদের গ্রেপ্তার দাবি হাফিজের : সদর উপজেলার আহমদনগর ও বোদা উপজেলার শালশিরি গ্রামে আহমদিয়াদের ক্ষতিগ্রস্ত জনপদ গতকাল পরিদর্শন করেছে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রমের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। পরে বিকেলে জেলা বিএনপি কার্যালয়ে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘১৭৯টি বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। শতাধিক আহত হয়েছেন। কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা জনমনে স্পষ্ট। কয়েক দিন আগে রেলমন্ত্রী যখন এখানে আসেন, তখন ক্ষতিগ্রস্তরা বলেছেন, ধ্বংসাত্মক কাজে যারা লিপ্ত ছিল তারা মন্ত্রীর সফরসঙ্গী ছিলেন। তারা তাদের নামও বলেছে। আমরা আশা করেছিলাম প্রশাসন তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করবে। কিন্তু তা হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি অনুমতি নিয়ে ক্ষতিগ্রস্তরা তাদের বার্ষিক জলসার আয়োজন করেছিল। যখন আক্রমণ করা হয়, বাড়িঘর পোড়ানো হয়, বারবার প্রশাসনকে ফোন করলেও প্রশাসন এগিয়ে আসেনি। বরং পুলিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম দেখেছে। তিন ঘণ্টা পর ডিসি-এসপি এসে দুষ্কৃতকারীদের খানিকটা প্রতিরোধ করেছে। ইতোমধ্যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে গেছে। এসব আলামত দেখে মনে হয়েছে এর মূল কারণ দেশে গণতন্ত্র নেই, আইনের শাসন নেই, গণমানুষের কোনো অধিকার নেই।’
সড়ক দুর্ঘটনায় গতকাল বুধবার ও তার আগের দিন মঙ্গলবার দেশের বিভিন্নস্থানে অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন। এর মধ্যে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে যাত্রীবাহী বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী স্কুলশিক্ষক ও দুই বাইসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। রাজশাহীতে ইজিবাইক ও ভ্যানের সংঘর্ষে প্রাণ গেছে দুইজনের। মুন্সীগঞ্জে প্রাইভেট কারের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছে মোটরসাইকেল আরোহী কিশোর। দিনাজপুরে ট্রাকচাপায় প্রাণ গেছে স্নাতকের এক শিক্ষার্থীর। রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে সড়ক দুর্ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ঠাকুরগাঁয়ে পৃথক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে আরও তিনজন।
দেশ রূপান্তরের নিজস্ব প্রতিবেদক ও সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, জেলার কাশিয়ানীতে বাসের চাপায় মাদ্রাসা শিক্ষকসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের কাশিয়ানী উপজেলার পোনা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার হেলেঞ্চা গ্রামের সামচুল হকের ছেলে মাদ্রাসা শিক্ষক এমএ হাসিব (৫০), কাশিয়ানী উপজেলার পোনা গ্রামের বাইসাইকেল আরোহী লোকমান শেখের ছেলে নবীর শেখ (২২) ও মো. রাজা মিয়ার ছেলে আব্দুর রহিম (২০)।
ভাটিয়াপাড়া হাইওয়ে পুলিশের এসআই মানবেন্দ্র বিশ্বাস ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানিয়েছেন, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা দোলা পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ঘটনাস্থলে একটি মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেলকে চাপা দেয়। এতে মোটরসাইকেল আরোহী এমএ হাসিব ঘটনাস্থলে নিহত হন এবং বাইসাইকেল আরোহী নবীর শেখ ও আব্দুর রহিম মারাত্মক আহত হয়। পরে ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা হতাহতদের উদ্ধার করে কাশিয়ানী উপজেলা ১০০ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় মহাসড়কের ওই স্থানে কিছু সময়ের জন্য যানচলাচল বন্ধ ছিল। বর্তমানে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
এদিকে রাজশাহীর কাটাখালীতে চার্জার ভ্যান ও অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন। গতকাল সকাল ৯টার দিকে পবা উপজেলার কাটাখালি থানার মোসলেমের মোড়ে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, ভ্যানচালক রাহাত আলী (৪৫) ও যাত্রী রিনা বেগম (৫০)। এদের মধ্যে রিনা বেগম বাঘার আড়ানী গ্রামের বাসিন্দা ও রাহাত আলী পবার পারিলা গ্রামের বাসিন্দা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মহাসড়ক দিয়ে যাত্রীবাহী চার্জার ভ্যান যাচ্ছিল। এ সময় একটি অটোরিকশা মহাসড়কে ওঠার সময় মুখোমুখি ধাক্কা লাগে। এতে ভ্যানচালক ও যাত্রী গুরুতর জখম হন। তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
দিনাজপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জেলার চিরিরবন্দর উপজেলায় দ্রুতগামী ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে এক কলেজ ছাত্রী নিহত হয়েছেন। গতকাল দুপুর ১২টায় দিনাজপুর-রংপুর মহাসড়কের চিরিরবন্দর উপজেলার ভুষিরবন্দর এলাকায় আত্রাই নদীর ব্রিজের সামনে এই ঘটনা ঘটে। নিহত প্রীতি রানী (২২) দিনাজপুর সরকারি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী। তিনি ভুষিরবন্দর এলাকার জেলেপাড়ার ছত্রমোহন রায়ের মেয়ে।
দশমাইল হাইওয়ে থানার এএসআই মো. সাইফুল ইসলাম জানান, দুর্ঘটনার পর ট্রাকটি পালিয়ে গেছে। থানায় একটি অপমৃত্যুর (ইউডি) মামলা করা হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে প্রাইভেট কারের সঙ্গে সংঘর্ষে মোটরসাইকেল চালক রায়হান শেখ (১৫) নিহত হয়েছে। এ সময় আরোহী হৃদয় হোসেন (১৮) আহত হয়। গতকাল সকাল ৬টার দিকে জেলার শ্রীনগর উপজেলার সমষপুর এলাকার এক্সপেসওয়ের সার্ভিস লেনে এ দুঘর্টনা ঘটে। নিহত ও আহত দুজনেরই বাড়ি ঢাকার কামরাঙ্গীরচর এলাকায়।
এসব দুর্ঘটনা ছাড়াও ঠাকুরগাঁয়ে কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় নয়ন চৌধুরী নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। গতকাল দুপুরে পীরগঞ্জ উপজেলার তেতুলতলায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত নয়ন সদর উপজেলার মোহাম্মাদপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা ছিলেন। এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কসবায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ১০ বছর বয়সী এক শিশু। মৌলভীবাজারের রাজানগরে নিহত হয়েছেন সাহেদ আহমেদ নামের আরেক মোটরসাইকেল আরোহী।
যাত্রাবাড়ীতে সড়ক দুর্ঘটনায় নারী নিহত : রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে সড়ক দুর্ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। তার বয়স আনুমানিক ৬০ বছর। গতকাল বুধবার সকাল পৌনে ৬টার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
যাত্রাবাড়ী থানার এসআই ফারজানা আক্তার জানান, সকালে রায়েরবাগ হাশেম রোডে রাস্তা পার হওয়ার সময় কোনো একটি যানবাহন ওই নারীকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি। খবর পেয়ে মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়।
তিনি আরও জানান, নিহত নারীর পরিচয় কেউ সনাক্ত করতে পারেনি। ধারণা করা হচ্ছে তিনি ভিক্ষাবৃত্তি করতেন। তার পরিচয় সনাক্তের চেষ্টা চলছে।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
মার্চে ঘরের মাঠে দুটি প্রীতি ম্যাচের পর আন্তর্জাতিক ফুটবলে দেখা যায়নি আর্জেন্টিনাকে। তিন মাস পর আগামী মাসে তারা খেলবে আরও দুটি প্রীতি ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে সেই ম্যাচের জন্য ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করেছেন লিওনেল স্কালোনি। তবে ঘোষিত সেই দলে নেই লাউতারো মার্তিনেজ।
আর্জেন্টিনার ক্রীড়াভিত্তিক সংবাদমাধ্যম টিওয়াইসি স্পোর্টস ও ওলে তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গোড়ালির চোটের কারণে মার্তিনেজ চিকিৎসাধীন আছেন। তাই তাকে জাতীয় দলের স্কোয়াডে রাখা হয়নি।
চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে ইন্টার মিলানের হয়ে গোল করেছিলেন। ফাইনালেও তাকে ইতালিয়ান ক্লাবটির হয়ে খেলতে দেখা যেতে পারে। তারপরই তিনি মাঠের বাইরে চলে যাবেন। ঐ সময়ে তিনি বিশ্রামে থাকবেন। আর তাই কোচ স্কালোনি তাকে দলে রাখবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার শিরোপা জয়ের অন্যতম সদস্য মার্তিনেজ। তবে পুরো টুর্নামেন্টে তিনি ব্যাথানাশক ঔষধ খেয়ে খেলছিলেন।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ও ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা।
ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার আজমপুর ইউনিয়নের মদনপুর গ্রামে স্ত্রীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় চাচাতো ভাইয়ের ছুরিকাঘাতে পলাশ হোসেন (২৮) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন।
শনিবার রাত ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত পলাশ হোসেন ওই গ্রামের মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে।
স্থানীয়রা জানায়, নিহত পলাশ হোসেনের চাচাতো ভাই সুমন প্রায়ই পলাশের স্ত্রীকে উত্ত্যক্ত করত। শনিবার সন্ধ্যায় আবারো উত্ত্যক্ত করে। পলাশ বাড়িতে এলে বিষয়টি তাকে জানায় তার স্ত্রী। এ ঘটনায় পলাশ তার চাচাতো ভাইয়ের কাছে বিষয়টির প্রতিবাদ করতে গেলে উভয়ের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে সুমন ছুরি দিয়ে পলাশকে আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই পলাশ মারা যায়।
মহেশপুর থানার ওসি খন্দকার শামীম উদ্দিন বলেন, নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। নিহত পলাশ পেশায় ভ্যানচালক ছিলেন, সঙ্গে কৃষিকাজও করত।
রেফারির বাঁশি বাজার তিন মিনিটের মধ্যেই রিয়াল মাদ্রিদের জালে জড়ায় বল। রাফা মিরের দুর্দান্ত এক গোলে লিড পায় সেভিয়া। তবে শেষ অবধি তারা ধরে রাখতে পারেনি সে হাসি। রদ্রিগোর জোড়া গোলে জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে রিয়াল।
রাতে লা-লিগার ম্যাচে সেভিয়ার মুখোমুখি হয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। খেলার তৃতীয় মিনিটেই লিড পেয়েছিল সেভিয়া। তবে ২৯ মিনিটে রদ্রিগো সমতায় ফেরান রিয়ালকে। সমতা নিয়ে বিরতিতে যায় দুই দল।
বিরতির পর ফের বাড়ে আক্রমণের ধার। যার ফলে ৬৯ মিনিটে দ্বিতীয় গোলের দেখা পায় রিয়াল। এবারও নায়ক রদ্রিগোই। এবারেরটি অবশ্য টনি ক্রুসের সহায়তায়। পরে আর কোনো গোল না হওয়ায় ২-১ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে মাদ্রিদের ক্লাবটি।
তবে ম্যাচের ৮৩ মিনিটে লাল কার্ড দেখে আকুনা। হারের আগে সেভিয়ার আর্জেন্টাইন এই ডিফেন্ডারের ভুলে ১০ জনের দল নিয়ে খেলতে হয় রিয়ালকে।
শুরুতে গোল হজম করলেও ৬৭ শতাংশ সময় নিজেদের দখলে বল রেখেছিল রিয়াল। ছয়বার আক্রমণে গিয়েছিল তারা, যার মধ্যে তিনটি শট ছিল গোলবার লক্ষ্য করে।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
সংলাপে রাজনৈতিক সংকট দূর হওয়ার নজির তৈরি হয়নি এখনো। তবুও নানা সময়ে সংকট নিরসনে রাজনীতিতে সংলাপ করা নিয়ে আলোচনা হয়। সংলাপের আশ্রয় নিতেও দেখা গেছে দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভিন্ন মেরুতে অবস্থান থাকায় আবারও রাজনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে। এই সংকট মোকাবিলায় আলোচনায় এসেছে ‘সংলাপ’। যদিও প্রধান দুই দলের নেতারা সংলাপে অনীহা প্রকাশ করে আসছেন। আবার আড়ালে আলাপে দুই দলের আগ্রহও দেখা গেছে।
অন্তরালের সংলাপ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার আড়ালে আলাপের মূল কারণ হলো বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বড় একটি অংশ বয়স্ক হয়ে গেছেন। তাদের অনেকের এবারের পরে নির্বাচন করার সক্ষমতা আর থাকবে না। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকতে গিয়ে সামাজিক মর্যাদা নষ্ট হয়েছে। এ সময় সংসদ সদস্য হয়ে মর্যাদা নিয়ে চলতে চান তারা। বিএনপির ওই অংশের সঙ্গে তৃণমূল পর্যায়ের অনেক নেতাও রয়েছেন যারা নির্বাচনে যেতে চান। ফলে নির্বাচনে যেতে আগ্রহী বিএনপির সেই সব নেতা আড়ালে আলাপে থাকতে রাজি আছেন। অন্যদিকে আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক দেখতে চাওয়া বিদেশি শক্তিগুলোর সরকারের ওপর চাপ থাকায় বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে চায় আওয়ামী লীগ। ফলে প্রকাশ্যে সংলাপের আগ্রহ না দেখিয়ে আড়ালের আলাপে আগ্রহী দলটির নেতারা।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংবিধানের বাইরে এক চুলও নড়বে না। অন্যদিকে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে কোনোভাবেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যাবে না। দুই দলই নিজেদের এমন অনড় অবস্থান দেখাচ্ছে। দুই দলের পরস্পরবিরোধী অবস্থানে সৃষ্ট সংকট সমাধানে বিদেশি তৎপরতা বেশ আগে থেকেই শুরু হয়েছে। নির্বাচন যতই এগিয়ে আসতে শুরু করেছে বিদেশি সেই তৎপরতায়ও গতি এসেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ-বিএনপি কাউকেই কাছাকাছি অবস্থানে, অর্থাৎ এক মেরুতে আনতে পারেনি এখনো। তবে বিদেশি প্রভাবশালী দেশগুলোর প্রতিনিধিরা সংকট নিরসনে দুই দলকেই সংলাপে বসার জন্য বলছেন।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকেরা সংলাপের মধ্য দিয়ে সমস্যা সমাধানের রাস্তা ঠিক করতে দুই দলকেই তাগিদ দিয়েছেন। বিদেশিদের অবস্থান হলো আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক দেখতে চান তারা। সে জন্য রাস্তা তৈরি করতে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ ও ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপিকে পরামর্শ দিয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলই সংলাপে অনীহা দেখিয়ে আসছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ্যে অনীহার কথা জানিয়েছেন। বিএনপিও প্রায় প্রতিদিনই অনীহা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখছে।
তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও সংলাপে সমাধান আসেনি। এবারও সংলাপে সমাধান আসার সম্ভাবনা কম। যদি সংলাপের আগেই এজেন্ডা নির্ধারণ করে সংলাপে বসে, সেই সংলাপ সফল হওয়ার পথ থাকে না।
দুই দলের একাধিক সূত্র দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, প্রকাশ্যে সংলাপ না করে এবার আড়ালে সংলাপ হতে পারে। অনেকটা হঠাৎ করেই আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘এমন ঘটনা ঘটে যেতে পারে-বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন দিয়ে বসতে পারেন।’ তিনি বলেন, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। সেই প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
নির্বাচন সামনে রেখে দেশে অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকেরা সংকট নিরসনে এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। ওই সব বৈঠকে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দুই দলেরই অবস্থান জানতে চেয়েছেন তারা। একই সঙ্গে দুই দলকে তারা এই বার্তাই দিতে চেয়েছেন যে ভিন্নমত থাকলেও স্থিতিশীলতা ও সুশাসনের স্বার্থে আগামী সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও অবাধ হওয়া জরুরি। এ কারণে নির্বাচনের আগে দুই প্রধান দলের মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতার আবশ্যকতা রয়েছে। এই সমঝোতার জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ, কিংবা উভয় পন্থায় দুই দলের মধ্যে ‘আলাপ’ হওয়া দরকার, তা সেটা সংলাপ বা আলোচনা যে নামেই করা হোক না কেন। এদিকে কূটনীতিকদের কাছে আওয়ামী লীগ অভিযোগ করেছে, বিএনপি কোনো ধরনের সংলাপে আগ্রহী নয়। ২০১৪ সালের নির্বাচন কেন্দ্র করে বিএনপির আচরণ বিদেশিদের কাছে তুলে ধরে সংলাপে বিএনপির অনীহার কথা জানান।
ক্ষমতাসীন দলের নেতারা দাবি করছেন, রাজনীতিতে কোনো কিছু আদায় করতে হলে আন্দোলনের মাধ্যমে পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ক্ষমতাসীনদের বাধ্য করতে হয়। কিন্তু সেটা বিএনপি পারছে না। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ আন্দোলন করেছিল। সেখানে জনগণকে সম্পৃক্ত করে বিএনপিকে পদত্যাগে বাধ্য করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিএনপি এখন সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারবে বলে মনে করছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। মাঠে আওয়ামী লীগের অবস্থান আছে। জনগণ সরকারের সঙ্গে আছে। আর তাদের সঙ্গে জনগণই নেই। তাই তো খালেদা জিয়াকে এখনো মুক্ত করতে পারেনি।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ‘যেকোনো সমস্যার সমাধান সংলাপের মাধ্যমেই পাওয়া সম্ভব। সংলাপে বসলে হয়তো শতভাগ পাব না। তবে গিভ অ্যান্ড টেক তো কিছু হবেই। গণতন্ত্রে সংলাপের কোনো বিকল্প নেই।’
তবে দলটির সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য বলেন, ‘সংলাপ চলছে। মিডিয়ায়, টক শোতে, মাঠে মঞ্চে। এক দল আরেক দলকে উদ্দেশ্য করে যে বক্তব্য দিচ্ছে, তাও এক ধরনের সংলাপ। এসব অনেকেই সংলাপ বলে টের না পেলেও মূলত এটাও সংলাপ।’
আওয়ামী লীগের নেতাদের দাবি, সংলাপের ব্যাপারে পশ্চিমা কূটনীতিকেরা তাদের তেমন কোনো পরামর্শ দেননি। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ‘আমরা তাদের (কূটনীতিক) বলেছি সংলাপের উদ্যোগ আমরা নিয়ে কী করব? তাদের (বিএনপি) যদি কোনো দাবি থাকে তাহলে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলতে পারে। নির্বাচন কমিশন যদি সুপারিশ করে, সেটা অবশ্যই সরকারের কাছে আসবে। সরকার দেখবে তখন।’
সংলাপ প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘এ ধরনের কোনো ভাবনা আমাদের নাই।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি। আর আওয়ামী লীগ বলছে, নির্বাচনকালীন এই সরকারই থাকবে এবং তাদের অধীনে নির্বাচনে হবে। নিরপেক্ষ বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ অবস্থায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নির্বাচনকালীন সংকট সমাধানে কূটনীতিকদের দূতিয়ালি চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারেও ইতিবাচক বিএনপি। সাম্প্রতিক সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, জাতিসংঘসহ বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী দেশ ও সংস্থার দূতসহ বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। ওই বৈঠকগুলোতে কেন এই সরকারের অধীনে, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যেতে চায় না তা ব্যাখ্যা করেছে দলটি। বিএনপি দলীয় সরকারের অধীনে যাবে না, সেটিও স্পষ্ট করেছে। একই সঙ্গে কূটনীতিকদের বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা কী হবে সে বিষয়ে সংলাপের আহ্বান আসলে তাতে সাড়া দেবে বিএনপি। আর এই সংকট মোকাবিলায় কূটনীতিকদের ‘রোল প্লে’ (ভূমিকা রাখা) করার সুযোগ আছে বলে মনে করেন দলটির নেতারা। তাদের মতে, প্রকাশ্যে না হলেও পর্র্দার অন্তরালে সংলাপ হতে পারে। কূটনীতিকদের দৌড়ঝাঁপের কারণে রাজনৈতিক অঙ্গনেও গুঞ্জন রয়েছে ভেতর-ভেতর সংলাপ হচ্ছে।
সর্বশেষ ১৮ মে গুলশানের আমেরিকান ক্লাবে মার্কিন দূতাবাসের পলিটিক্যাল চিফ ব্রান্ডন স্ক্যাট, পলিটিক্যাল অফিসার ম্যাথিউ বে, পলিটিক্যাল কনস্যুলার ডেনিয়েল শেরির সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ।
জানতে চাইলে শামা ওবায়েদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকগুলোতে তারা আমাদের অবস্থান জানতে চান। আমরাও আমাদের অবস্থান তুলে ধরি। সর্বশেষ তারা জানতে চেয়েছেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে আপনাদের অবস্থান কী। আমরা বলেছি, আন্দোলন চলছে, সেটা আমরা কন্টিনিউ (চালিয়ে যাব) করব। তারা অন্য পক্ষের (ক্ষমতাসীনদের) কথাও শুনছেন। এ অবস্থায় তারা কী করছে (দূতিয়ালি), নাকি অন্য কিছু হচ্ছে সেটা তাদের বিষয়। তবে আমরা মনে করি, গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে আরেকটি গণতান্ত্রিক দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসুক, মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত হোক, সে ব্যাপারে তাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকুক।’
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আনুষ্ঠানিক সংলাপের ব্যাপারে কূটনীতিকেরা কোনো বৈঠকেই আমাদের কিছু বলেনি।’
তবে বৈঠকগুলোতে থাকা দলের আরেক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা একাধিকবার সরকারের সঙ্গে সংলাপ করেছি। ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনের সংলাপে পর চরম বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের তিন মাস পর নতুন নির্বাচন দেওয়ার কথা বলে তারা প্রতারণা করেছে। তাই এজেন্ডা ছাড়া কোনো সংলাপে আমরা যাচ্ছি না। কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে আমরা বলেছি, আনুষ্ঠানিক সংলাপের বিষয়ে আমরা ইতিবাচক। কিন্তু সেটি হতে হবে নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা কী হবে তা নিয়ে।’
ওই নেতার আরও বলেন, ‘সরকার এখন বিভিন্ন চাপে আছে। আন্তর্জাতিক চাপ তো আগে থেকেই আছে। এখন নতুন করে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপ বেড়েছে। এসব চাপ সামাল দিতে তারা সংলাপের নামে নানা কথা বলবে। কূটনীতিকদের সঙ্গে আলোচনায় সরকারের মনোভাবে কিছু হলেও আঁচ করা যায়। হয়তো কয়েক দিন পর সরকার আনুষ্ঠানিক সংলাপের জন্য আমন্ত্রণও জানাতে পারে।’
তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে বর্তমানে তার মাসিক বেতন প্রায় ৩৪ হাজার। বাবার আর্থিক অবস্থাও অসচ্চল। কিন্তু তার আছে বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, দামি জমিসহ অন্যান্য সম্পত্তি। সবমিলে তিনি অন্তত ১০ কোটি টাকার মালিক। দেশের ভেতরে যাতায়াত করেন বিমানে। ইচ্ছে হলে বিদেশেও যান। মাত্র ২৬ বছরে এত স্বল্প বেতনে চাকরি করেও সম্পদের বিশাল পাহাড় গড়ে সবাইকে তাজ্জব লাগিয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী মুহাম্মদ এয়াকুব। একই সঙ্গে তিনি সিবিএর সাধারণ সম্পাদক এবং গ্যাস অ্যান্ড অয়েলস ফেডারেশনের মহাসচিব। তার বিরুদ্ধে রয়েছে নিয়োগ-পদোন্নতি নিয়ে বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে বিভিন্ন সময়ে ভুয়া অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তা প্রমাণ হয়নি। আমি নিয়মিত আয়কর দাখিল করি। কোথাও অসামঞ্জস্য থাকলে সেটা আরও আগে ধরা পড়ত। আমি দুর্নীতিবাজ না। তবে আবার সুফিও না। সিবিএর নেতা হয়ে মসজিদের ইমাম সাহেবও হওয়া যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমি পাঁচবার প্রত্যক্ষ ভোটে এবং তিনবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। আমি খুব গরিব ঘরের সন্তান। কিন্তু বেতন-ভাতা ভালো। এর বাইরে প্রতি বছর ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা কোম্পানির লভ্যাংশ পাই। মাছ চাষের জন্য তিনটি পুকুর আছে। গরু পালন করি। দুই ভাই বিদেশে থাকে। এসব টাকা দিয়েই বাড়ি কিনেছি। যমুনা অয়েলের একজন ক্লিনারেরও তো বাড়ি আছে। আমি সিবিএর নেতা। আমার একটা বাড়ি থাকা কি অন্যায়?’
এয়াকুব বলেন, ‘আমি আমার বিরুদ্ধে লেখেন কোনো সমস্যা নেই। মানুষ আজ পড়লে কাল ভুলে যাবে। হয়তো কিছু সম্মানহানি হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেও দেশ ও পারিবারিক প্রেক্ষাপটে আজ আমি কেরানি। কমার্স কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করেছি। চাইলে আজ থেকে ১০ বছর আগেই কর্মকর্তা হতে পারতাম। কিন্তু সিবিএর নেতা হওয়া একটা নেশা।’
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার বেঙ্গুরা গ্রামের এয়াকুব ১৯৯৪ সালে যমুনা অয়েল কোম্পানিতে অস্থায়ী পদে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে চাকরি শুরু করেন। মাত্র তিন বছরের মাথায় ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠানের টাইপিস্ট পদে তার চাকরি স্থায়ী হয়। দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রভিডেন্টফান্ড ও অন্যান্য খাতে টাকা কর্তন শেষে মাস শেষে তিনি বেতন পান ৩৩ হাজার ৯০৩ টাকা।
জানা গেছে, এত দিন ৪২ হাজার টাকার ভাড়া বাড়িতে থাকতেন এয়াকুব। সম্প্রতি ভাড়া বাসা ছেড়ে চট্টগ্রাম নগরীর অভিজাত এলাকা লালখান বাজারে তিনটি ফ্ল্যাট কিনেছেন, যার আয়তন প্রায় সাড়ে চার হাজার বর্গফুট। দুটো ইউনিটে তিনি নিজে থাকেন, অন্যটি ভাড়া দিয়েছেন।
স্থানীয়দের দাবি, তিনটি ফ্ল্যাটের আনুমানিক মূল্য প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার মতো হবে। অভিজাত ফ্ল্যাট দুটি দামি আসবাব দিয়ে সাজানো হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিষয়টি জানতে চাইলে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা ঋণ এবং নিজের জমানো টাকা দিয়ে চার হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনেছি।
আরও জানা গেছে, নিজস্ব ফ্ল্যাট ছাড়াও চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এক্সেল রোডে এয়াকুবের ৪ কাঠা জমিতে টিনশেডের ঘর আছে। ১০টি পরিবারের কাছে ভাড়া দিয়েছেন তিনি। দুদকের অনুসন্ধানেও এর প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। এয়াকুবের জমি ও ঘরসহ বর্তমানে ওই সম্পত্তির বাজারমূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা হতে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে তিনি অস্বীকার করে বলেছেন, ওই সম্পত্তির মালিক তিনি নন। জমিটি প্রথমে বায়না করলেও পরে আর কেনেননি।
এর বাইরে পতেঙ্গা, বেঙ্গুরাসহ বিভিন্ন স্থানে এয়াকুবের নামে-বেনামে জমি ও অন্যান্য সম্পদ থাকার তথ্য এসেছে দেশ রূপান্তরের কাছে।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এয়াকুব একটি মাইক্রোবাস ব্যবহার করেন। তবে দেশ রূপান্তরের কাছে তার দাবি, এই গাড়ির মালিক তার পরিচিত। কিন্তু গাড়িটি তার নয়।
অভিযোগ উঠেছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির ঠিকাদারের শ্রমিক মো. আবদুল নুর ও মো. হাসান ফয়সালের সহযোগিতায় সিবিএ নেতা এয়াকুব কোম্পানির ডিপোতে চাকরি দেওয়ার নামে ৮ জনের কাছ থেকে কুরিয়ার সার্ভিস ও বিকাশের মাধ্যমে ২০১৯ সালে কয়েক দফায় ২৯ লাখ ৭৪ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু তাদের কাউকে চাকরি দেওয়া হয়নি। ওই টাকাও ফেরত পাননি কেউই। সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী ডিপোতে কর্মরত তৎকালীন কর্মচারী তোতা মিয়ার মাধ্যমে এয়াকুবকে ওই টাকা পাঠানো হয়। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর একাধিক রসিদ দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে।
চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে তোতা মিয়া ও চাকরি প্রার্থীদের নানা রকম ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে এয়াকুবসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানায় ২০১৯ সালের ১৯ জুলাই সাধারণ ডায়েরি করেন মো. তোতা মিয়া।
এয়াকুব দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছিল। তিনি কোনো ধরনের অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত নন। বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় অভিযোগকারী আমার কাছে এবং কোম্পানির দায়িত্বশীলদের কাছে ক্ষমা চেয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
তবে বিষয়টি নিয়ে যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর। তাদের অভিযোগ, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিবিএ নেতা এয়াকুব তোতা মিয়াকে ডেকে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার নির্দেশ দেন। ওই সময় টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে একটা মীমাংসা করা হলেও পরে ওই টাকা ফেরত দেয়নি এয়াকুব। তবে এয়াকুবের দাবি, তিনি কাউকে চাপ প্রয়োগ করেননি। অভিযোগটি মিথ্যে প্রমাণিত হওয়ায় তোতা মিয়া তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিযোগ করেন, সিবিএর কিছু নেতা নানা রকম অনিয়ম-দুর্নীতি করলেও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেন না।
এ বিষয়ে জানতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গিয়াস উদ্দীন আনচারীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করে, খুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। কোম্পানির ঢাকা কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি দুদকের এক প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, ক্যাজুয়াল ও কন্ট্রাক্টর ক্যাজুয়াল নিয়োগ, ফার্নেস অয়েল, বিটুমিনসহ বিভিন্ন খাতে এয়াকুব মাসোহারা নেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী জানিয়েছেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় প্রধান তেল স্থাপনা ও দেশের সব ডিপো থেকে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায়েরও মৌখিক অভিযোগ পেয়েছে দুদক। তার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে বদলিসহ নানা রকম শাস্তি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যোগসাজশ থাকার অভিযোগ করেছেন একাধিক কর্মচারী।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১-এর সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, বিভিন্ন রেকর্ডপত্র এবং সরেজমিন তথ্য পর্যালোচনা করে এয়াকুবের বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য হওয়ায় তা প্রকাশ্যে অনুসন্ধান করা দরকার। তার ওই সুপারিশ আমলে নিয়ে কমিশন আজ রবিবার সকালে চট্টগ্রাম কার্যালয়ে শুনানিতে হাজির হতে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছেন।
তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে বর্তমানে তার মাসিক বেতন প্রায় ৩৪ হাজার। বাবার আর্থিক অবস্থাও অসচ্চল। কিন্তু তার আছে বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, দামি জমিসহ অন্যান্য সম্পত্তি। সবমিলে তিনি অন্তত ১০ কোটি টাকার মালিক। দেশের ভেতরে যাতায়াত করেন বিমানে। ইচ্ছে হলে বিদেশেও যান। মাত্র ২৬ বছরে এত স্বল্প বেতনে চাকরি করেও সম্পদের বিশাল পাহাড় গড়ে সবাইকে তাজ্জব লাগিয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী মুহাম্মদ এয়াকুব। একই সঙ্গে তিনি সিবিএর সাধারণ সম্পাদক এবং গ্যাস অ্যান্ড অয়েলস ফেডারেশনের মহাসচিব। তার বিরুদ্ধে রয়েছে নিয়োগ-পদোন্নতি নিয়ে বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে বিভিন্ন সময়ে ভুয়া অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তা প্রমাণ হয়নি। আমি নিয়মিত আয়কর দাখিল করি। কোথাও অসামঞ্জস্য থাকলে সেটা আরও আগে ধরা পড়ত। আমি দুর্নীতিবাজ না। তবে আবার সুফিও না। সিবিএর নেতা হয়ে মসজিদের ইমাম সাহেবও হওয়া যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমি পাঁচবার প্রত্যক্ষ ভোটে এবং তিনবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। আমি খুব গরিব ঘরের সন্তান। কিন্তু বেতন-ভাতা ভালো। এর বাইরে প্রতি বছর ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা কোম্পানির লভ্যাংশ পাই। মাছ চাষের জন্য তিনটি পুকুর আছে। গরু পালন করি। দুই ভাই বিদেশে থাকে। এসব টাকা দিয়েই বাড়ি কিনেছি। যমুনা অয়েলের একজন ক্লিনারেরও তো বাড়ি আছে। আমি সিবিএর নেতা। আমার একটা বাড়ি থাকা কি অন্যায়?’
এয়াকুব বলেন, ‘আমি আমার বিরুদ্ধে লেখেন কোনো সমস্যা নেই। মানুষ আজ পড়লে কাল ভুলে যাবে। হয়তো কিছু সম্মানহানি হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেও দেশ ও পারিবারিক প্রেক্ষাপটে আজ আমি কেরানি। কমার্স কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করেছি। চাইলে আজ থেকে ১০ বছর আগেই কর্মকর্তা হতে পারতাম। কিন্তু সিবিএর নেতা হওয়া একটা নেশা।’
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার বেঙ্গুরা গ্রামের এয়াকুব ১৯৯৪ সালে যমুনা অয়েল কোম্পানিতে অস্থায়ী পদে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে চাকরি শুরু করেন। মাত্র তিন বছরের মাথায় ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠানের টাইপিস্ট পদে তার চাকরি স্থায়ী হয়। দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রভিডেন্টফান্ড ও অন্যান্য খাতে টাকা কর্তন শেষে মাস শেষে তিনি বেতন পান ৩৩ হাজার ৯০৩ টাকা।
জানা গেছে, এত দিন ৪২ হাজার টাকার ভাড়া বাড়িতে থাকতেন এয়াকুব। সম্প্রতি ভাড়া বাসা ছেড়ে চট্টগ্রাম নগরীর অভিজাত এলাকা লালখান বাজারে তিনটি ফ্ল্যাট কিনেছেন, যার আয়তন প্রায় সাড়ে চার হাজার বর্গফুট। দুটো ইউনিটে তিনি নিজে থাকেন, অন্যটি ভাড়া দিয়েছেন।
স্থানীয়দের দাবি, তিনটি ফ্ল্যাটের আনুমানিক মূল্য প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার মতো হবে। অভিজাত ফ্ল্যাট দুটি দামি আসবাব দিয়ে সাজানো হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিষয়টি জানতে চাইলে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা ঋণ এবং নিজের জমানো টাকা দিয়ে চার হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনেছি।
আরও জানা গেছে, নিজস্ব ফ্ল্যাট ছাড়াও চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এক্সেল রোডে এয়াকুবের ৪ কাঠা জমিতে টিনশেডের ঘর আছে। ১০টি পরিবারের কাছে ভাড়া দিয়েছেন তিনি। দুদকের অনুসন্ধানেও এর প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। এয়াকুবের জমি ও ঘরসহ বর্তমানে ওই সম্পত্তির বাজারমূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা হতে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে তিনি অস্বীকার করে বলেছেন, ওই সম্পত্তির মালিক তিনি নন। জমিটি প্রথমে বায়না করলেও পরে আর কেনেননি।
এর বাইরে পতেঙ্গা, বেঙ্গুরাসহ বিভিন্ন স্থানে এয়াকুবের নামে-বেনামে জমি ও অন্যান্য সম্পদ থাকার তথ্য এসেছে দেশ রূপান্তরের কাছে।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এয়াকুব একটি মাইক্রোবাস ব্যবহার করেন। তবে দেশ রূপান্তরের কাছে তার দাবি, এই গাড়ির মালিক তার পরিচিত। কিন্তু গাড়িটি তার নয়।
অভিযোগ উঠেছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির ঠিকাদারের শ্রমিক মো. আবদুল নুর ও মো. হাসান ফয়সালের সহযোগিতায় সিবিএ নেতা এয়াকুব কোম্পানির ডিপোতে চাকরি দেওয়ার নামে ৮ জনের কাছ থেকে কুরিয়ার সার্ভিস ও বিকাশের মাধ্যমে ২০১৯ সালে কয়েক দফায় ২৯ লাখ ৭৪ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু তাদের কাউকে চাকরি দেওয়া হয়নি। ওই টাকাও ফেরত পাননি কেউই। সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী ডিপোতে কর্মরত তৎকালীন কর্মচারী তোতা মিয়ার মাধ্যমে এয়াকুবকে ওই টাকা পাঠানো হয়। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর একাধিক রসিদ দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে।
চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে তোতা মিয়া ও চাকরি প্রার্থীদের নানা রকম ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে এয়াকুবসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানায় ২০১৯ সালের ১৯ জুলাই সাধারণ ডায়েরি করেন মো. তোতা মিয়া।
এয়াকুব দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছিল। তিনি কোনো ধরনের অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত নন। বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় অভিযোগকারী আমার কাছে এবং কোম্পানির দায়িত্বশীলদের কাছে ক্ষমা চেয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
তবে বিষয়টি নিয়ে যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর। তাদের অভিযোগ, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিবিএ নেতা এয়াকুব তোতা মিয়াকে ডেকে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার নির্দেশ দেন। ওই সময় টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে একটা মীমাংসা করা হলেও পরে ওই টাকা ফেরত দেয়নি এয়াকুব। তবে এয়াকুবের দাবি, তিনি কাউকে চাপ প্রয়োগ করেননি। অভিযোগটি মিথ্যে প্রমাণিত হওয়ায় তোতা মিয়া তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিযোগ করেন, সিবিএর কিছু নেতা নানা রকম অনিয়ম-দুর্নীতি করলেও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেন না।
এ বিষয়ে জানতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গিয়াস উদ্দীন আনচারীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করে, খুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। কোম্পানির ঢাকা কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি দুদকের এক প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, ক্যাজুয়াল ও কন্ট্রাক্টর ক্যাজুয়াল নিয়োগ, ফার্নেস অয়েল, বিটুমিনসহ বিভিন্ন খাতে এয়াকুব মাসোহারা নেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী জানিয়েছেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় প্রধান তেল স্থাপনা ও দেশের সব ডিপো থেকে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায়েরও মৌখিক অভিযোগ পেয়েছে দুদক। তার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে বদলিসহ নানা রকম শাস্তি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যোগসাজশ থাকার অভিযোগ করেছেন একাধিক কর্মচারী।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১-এর সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, বিভিন্ন রেকর্ডপত্র এবং সরেজমিন তথ্য পর্যালোচনা করে এয়াকুবের বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য হওয়ায় তা প্রকাশ্যে অনুসন্ধান করা দরকার। তার ওই সুপারিশ আমলে নিয়ে কমিশন আজ রবিবার সকালে চট্টগ্রাম কার্যালয়ে শুনানিতে হাজির হতে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছেন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।