
শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের আচরণের বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন ৪০ বিশ্বনেতা যুক্তরাষ্ট্রের দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্টে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন। গত মঙ্গলবার চিঠিটি প্রকাশিত হয়।
৪০ বিশ্বনেতার মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, দেশটির সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, আয়ারল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট মেরি রবিনসন, প্রয়াত মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড এম কেনেডির ছেলে টেড কেনেডি জুনিয়রের মতো আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব।
ইংরেজিতে লেখা চিঠিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে লেখা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আমরা বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে আপনাকে লিখছি, যারা আপনার দেশের জনগণের সাহস ও উদ্ভাবনী দক্ষতার প্রশংসা করে। আমাদের মধ্যে সরকারি কর্মচারী, ব্যবসায়ী, সুশীলসমাজের নেতা ও সমাজসেবক আছেন। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের মতো আমরাও বাংলাদেশে উদ্ভাবিত ও সারা বিশ্বে গৃহীত উদ্ভাবনগুলো দ্বারা অনুপ্রাণিত। আপনার দেশের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা থেকেই আমরা আপনাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নাগরিকদের একজন, শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মহান অবদানকে সমর্থন ও স্বীকৃতি দিতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে আপনাকে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি লিখছি।
‘ড. ইউনূসের ভালো থাকা, বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে মানবিক উন্নয়নে তিনি যে অবদান রেখে চলছেন, তা অব্যাহত রাখতে পারবেন কি না সে বিষয়ে আমাদের গভীর উদ্বেগ রয়েছে। আমরা নিশ্চিত, আপনি জানেন যে বাংলাদেশে মুহাম্মদ ইউনূসের অবদান, বিশেষ করে অতিদরিদ্র ও সবচেয়ে বিপদাপন্ন মানুষের জন্য তার অবদান বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ও সম্মানিত।
অধ্যাপক ইউনূস ইতিহাসের সাত ব্যক্তির মধ্যে একজন, যিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম ও কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল পেয়েছেন। এই সাতজনের মধ্যে নেলসন ম্যান্ডেলা, মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র, মাদার তেরেসা ও এলি উইজেলের মতো ব্যক্তিরা আছেন।
‘আমরা বিশ্বাস করি, সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হলো, এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে চিরায়ত ও সামাজিক উদ্যোক্তারা প্রস্ফুটিত হতে পারেন। আমরা আশা করি, টেকসই অগ্রগতি নিশ্চিতে কীভাবে একটি প্রাণবন্ত নাগরিক সমাজকে লালন করা যেতে পারে, সে বিষয়ে অন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য একটি মডেল হিসেবে বাংলাদেশ তার ভূমিকায় ফিরে আসবে। এ ক্ষেত্রে প্রথম একটি ভালো উদ্যোগ হওয়া উচিত, অধ্যাপক ইউনূসের অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া। তাকে নিজ নিরাপত্তায় ব্যস্ত রাখার পরিবর্তে দেশ ও বিশ্বের জন্য আরও ভালো কিছু করতে তার শক্তিকে কাজে লাগানোর সুযোগ করে দেওয়া। আমরা ও বিশ্বের কোটি মানুষ আশা করি, আপনি আমাদের এই দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করবেন।’
সরকারি যেকোনো প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকের (ডিসি) অনুমোদন নেওয়ার নিয়ম রয়েছে। জমির দামও নির্ধারণ করবে জেলা প্রশাসক। কিন্তু ডিসিকে না জানিয়ে আঞ্চলিক কার্যালয় নির্মাণের জন্য জমির দাম নির্ধারণ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। জমির দাম নির্ধারণ করে প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনেও পাঠিয়েছে এ সংস্থাটি। তবে এমন বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বিভিন্ন অঞ্চলে আঞ্চলিক কার্যালয় নির্মাণের মাধ্যমে নাগরিক সেবা সহজ করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ২১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৭টি ভবন নির্মাণেই খরচ হবে ১০০ কোটি টাকা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আর্থিক সীমাবদ্ধতা থাকায় ৯০ শতাংশ সরকারের এবং ১০ শতাংশ নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নের প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।
রাজধানীর খিলগাঁও, আজিমপুর, নয়াবাজার, সায়েদাবাদ, নন্দীপাড়া, দক্ষিণগাঁও ও মাতুয়াইলে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
তবে পরিকল্পনা কমিশন আপত্তি জানিয়ে বলেছে, পরিকল্পনা কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ভূমি অধিগ্রহণের ব্যয় প্রাক্কলন করার বিষয় উল্লেখ থাকলেও প্রকল্প প্রস্তাবে ১ দশমিক ৩২ একর ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ৩৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকার প্রাক্কলন জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে সংগ্রহ করা হয়নি। এ ক্ষেত্রে ভূমি অধিগ্রহণের ব্যয় বিভাজন জেলা প্রশাসন থেকে সংগ্রহ করাসহ ভূমির প্রাপ্যতা এবং ব্যয় প্রাক্কলনের ভিত্তি নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে।
তবে ঢাকা জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক আবু জাফর রিপন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি এ ধরনের কোনো চিঠি জেলা প্রশাসনে পাঠিয়েছে কি না, আমার জানা নেই।’
প্রকল্পটির পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কাজী বোরহানউদ্দিন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডিসি অফিসের রেট অনুযায়ীই জমির দাম ধরা হয়েছে।’ ডিসি অফিসকে জানানো হয়নি কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ বিষয় নিয়ে আমি কথা বরতে ইচ্ছুক নই।’
সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, ৫০ কোটি টাকা বেশি ব্যয়ের প্রকল্প হলেই ফিজিবিলিটি স্টাডি করতে হবে। তবে এই প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি পরিকল্পনা কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী করা হয়নি। বিভিন্ন প্রকল্পে দেখা যায়, এই ফিজিবিলিটি স্টাডি সঠিক না হওয়ার কারণে পরে প্রকল্পের ডিজাইন পরিবর্তন ও সংশোধন করতে হয়।
রোড নির্মাণ (অভ্যন্তরীণ আরসিসি) ও বিউটিফিকেশন খাতে ২ কিলোমিটারের জন্য প্রায় ৭ কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে, যাতে ১ কিলোমিটারে খরচ পড়বে ৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
শুধু তা-ই নয়, পরামর্শক খাতে ৩ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ রাখা হলেও পরামর্শকের ধরন, সংখ্যা, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ইত্যাদিসহ বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়নি। এই প্রকল্পে কোনো ধরনের পরামর্শকের প্রয়োজন আছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে কমিশন।
আসবাব ক্রয় বাবদ ৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। এর বিস্তারিত ব্যয় বিভাজন ডিপিপিতে সংযোজন করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া কর্মকর্তার এবং কর্মচারীর জন্য সব আসবাব কেনার প্রস্তাবের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। প্রস্তাবিত প্রকল্পে ৯৮টি কম্পিউটার কেনার প্রয়োজনীয়তা কী, সে ব্যাখ্যাও দিতে পারেনি তারা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭টি আঞ্চলিক কার্যালয় (মূল ভবন) নির্মাণের জন্য ১০০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। এর বিস্তারিত ব্যয়ও প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়নি।
প্রকল্পে ভূমি উন্নয়নের জন্য ৩৪ হাজার ৮৩৭ ঘনমিটার মাটির কাজের জন্য ৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে। ভূমির বর্তমান অবস্থা প্রস্তাবিত কাজের প্রকৃতি জানতে চেয়েছে কমিশন।
এইচটি বা এলটি লাইন, জেনারেটর এবং সাব স্টেশন খাতে ১৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা থোক বরাদ্দ রাখা হলেও এর ভিত্তি কী, তা স্পষ্ট করা হয়নি।
ডিপিডিসি লাইন এক্সটেনশন ডিপোজিট ওয়ার্ক খাতে ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে দেওয়া চিঠিতে এ খাতের বিস্তারিত ব্রেকআপসহ ব্যয় প্রাক্কলন ডিপিপিতে সংযুক্তির বিষয় উল্লেখ থাকলেও তা সংযোজন করেনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি। ডিপিডিসি থেকে প্রাক্কলিত ব্যয় সংগ্রহ করে ডিপিপিতে সংযোজন করতে বলা হয়েছে।
প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন অঞ্চলে আঞ্চলিক কার্যালয় নির্মাণের মাধ্যমে নাগরিক সেবা প্রদান সহজীকরণসহ জীবন যাত্রার মানোন্নয়ন করা। অঞ্চলভিত্তিক নাগরিক সেবা কেন্দ্র হিসেবে আঞ্চলিক কার্যালয় নির্মাণ, নাগরিক সেবা প্রদান সহজীকরণ, এলাকার মানুষের জীবন যাত্রার মান ও আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন করা।
প্রকল্পটির সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান প্রকৌশলী সালেহ আহম্মেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রকল্পটির পরিকল্পনা করা হয়েছে আরও দুই বছর আগে। আমি এখানে নতুন। এ দুই বছরে প্রকল্পটির পরিকল্পনায় আরও অনেক পরিবর্তন এনেছি আমরা। তবে জমি অধিগ্রহণে যে টাকাই আসবে, পুরো টাকাই ডিসি অফিসে যাবে। জমি অধিগ্রহণ পুরোটাই সরকারি। অধিগ্রহণের টাকা ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হয় ডিসি অফিসের মাধ্যমে।’
২ কিলোমিটারে ৭ কোটির খরচ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দুই কিলোমিটারের কোথায় কোথায় কী খরচ তা উল্লেখ করা প্রয়োজন। দেখা যায়, ৩০০ মিটারের রাস্তায়ও ১ কোটি খরচ হয়ে যায় বিভিন্ন ইউটিলিটি প্রতিস্থাপনে। যদি সেখানে ড্রেনেজ পাইপসহ বিভিন্ন কাজে নদী শাসনের মতো বাঁধ দিয়ে করতে গেলে ১২ কোটিও লাগতে পারে। তবে খরচ স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। প্রকল্প পরিচালক এর ব্যাখ্যা দিতে পারবেন।’ সম্ভাব্যতা যাচাই না করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখানে সম্ভাব্যতা যাচাই ফরমালি করা হয়নি। তবে শুনেছি, সিটির অন্য প্রকল্পের প্রকৌশলী দিয়ে এর সম্ভাব্যতা যাচাই হয়েছে।’
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে নতুনভাবে ১৮টি ওয়ার্ড, অর্থাৎ প্রায় ৬৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় বিদ্যমান ৫টি অঞ্চলের পরিবর্তে ১০টি অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে নবসংযুক্ত এলাকায় ৫টি আঞ্চলিক কার্যালয় এবং পুরনো এলাকায় ৪টিসহ মোট ৯টি আঞ্চলিক কার্যালয় নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
শীতের ছুটি শেষে আফগানিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পুনরায় খুলেছে। কিন্তু ক্ষমতাসীন তালেবানের নিষেধাজ্ঞার কারণে ক্লাসে ফিরতে পারছেন না নারী শিক্ষার্থীরা। ফেলে আসা খুশি ও আশায় পূর্ণ সময়ের কথা মনে করে এখন তারা শুধু কাঁদেন। নারী শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ করা পুরুষ শিক্ষার্থীদের জন্যও ভয়ংকর কষ্ট বয়ে নিয়ে এসেছে। শ্রেণিকক্ষ তাদের কাছে এখন শোকসভার মতো মনে হয়।
বিবিসি বলছে, ২০২১ সালে পুনরায় আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে তালেবান। তখন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নারী ও পুরুষ শিক্ষার্থীদের ক্লাসে আলাদা বসার নিয়ম জারি হয়। আর গত বছরের শেষদিকে তালেবান প্রশাসনের উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। শুধু উচ্চশিক্ষার অধিকারই নয় বরং তালেবান পুনরায় ক্ষমতায় এসে সে দেশের নারীদের কাজ করার অধিকারসহ আরও অনেক অধিকার কেড়ে নিয়েছে। আফগানিস্তানে মেয়েদের মাধ্যমিক স্কুলগুলো আরও আগেই বন্ধ করে দেয় তালেবান। নারীদের নিষিদ্ধ করা হয়েছে এনজিওসহ অনেক বেসরকারি কাজেও।
যদিও তালেবান প্রশাসনের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা অবশ্য দাবি করেছেন, এ ব্যবস্থা অস্থায়ী। তাদের কেউ কেউ কারণ ব্যাখ্যায় কঠোর পোশাক বিধি, তহবিলের অভাব বা ইসলামিক ধারায় পাঠ্যক্রম ঠিক করাসহ অনেক রকম কথাই বলছেন।
অবশ্য দেশটির বাস্তবতা নিয়ে কম্পিউটার সায়েন্সের চতুর্থ বর্ষের এক নারী শিক্ষার্থী দুঃখ ও ক্ষোভ নিয়ে বিবিসিকে বলেন, ‘এখন আমি আর কেউ না। আমার পরিকল্পনা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শেষ করে আমি আমার মাস্টার্স করব, তারপর পিএইচডি। আমি আমার দেশ, জাতি ও মানুষের জন্য কাজ করতে চেয়েছিলাম। আমি এখন আর সেটা করতে পারব না।’
অথচ মাত্র কয়েক মাস আগে তিনি এবং তার বন্ধুরা মিলে কীভাবে গ্র্যাজুয়েশনের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করবেন তা নিয়ে আলোচনা করেছেন। এমন বেশ কয়েকজন নারী শিক্ষার্থী বিবিসিকে জানিয়েছেন, ফেলে আসা খুশি ও আশায় পূর্ণ সময়ের কথা মনে করে এখন তারা শুধু কাঁদেন। আবার অনেকের নেই সেই স্মৃতিও। হেরাতের বাসিন্দা ১৯ বছর বয়সী আতেফা কম্পিউটার সায়েন্সের শিক্ষার্থী ছিলেন। কিন্তু তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের কোনো স্মৃতিও নেই, যেটা তিনি এখন মনে করবেন। কারণ, তিনি মাত্রই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে একজন ওয়েবসাইট ডেভেলপার হওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। কিন্তু তখনই তার স্বপ্নে বড় ধাক্কা আসে তালেবান সরকারের পক্ষ থেকে। আতেফা বলেন, ‘আমি এবং আমার বন্ধুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে কঠোর পরিশ্রম করেছি। কিন্তু আমার স্বপ্ন সত্যি করা গেল না... এটা তার আগেই শেষ হয়ে গেল।’
কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের একজন নারী শিক্ষার্থী বিবিসিকে বলেন, যদি তারা (তালেবান) আমাদের হিজাব পরতে বলে তবে আমরা খুশি মনেই তা মেনে নেব। যদি আমাদের আলাদা ক্লাস করতে বলা হয়, আমরা খুশি মনে সেটাও মেনে নেব। শুধু আমাদের শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ দিন। আফগানিস্তানে এখন মেয়েরা শুধু প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। পারওয়ান প্রদেশের এক তরুণ বলেন, শুধু পুরুষদের নিয়ে আপনি আমাদের দেশ গড়তে পারবেন না। নারীদেরও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করা প্রয়োজন।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামের কথোপকথনের আরেকটি অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। গত মঙ্গলবার রাত ১২টায় ফাঁস হওয়া এই অডিও ক্লিপে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষক পদে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি সংক্রান্ত কথোপকথন রয়েছে।
ফারাহ জেবিন নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে ওই অডিও ক্লিপ প্রকাশ করা হয়। যাতে উপাচার্যকে এক ব্যক্তির আত্মীয়কে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে প্রথম বা দ্বিতীয় করবেন এমন প্রতিশ্রুতি দিতে শোনা গেছে। তবে ওই প্রার্থীকে নিয়োগের নিয়ম পূরণ করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন উপাচার্য।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ মার্চ পর্যন্ত উপাচার্যের সঙ্গে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের একজন চাকরিপ্রার্থীসহ বিভিন্ন ব্যক্তির কথোপকথনের মোট ১০টি অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অডিও ফাঁসের পর ১৯ ফেব্রুয়ারি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগসহ তিনটি বিভাগের নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এ ছাড়া ২২ ফেব্রুয়ারি ফাঁস হওয়া অডিও ক্লিপের কথোপকথনের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দপ্তর এবং প্রকৌশল দপ্তরের নিয়োগ পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে। ১৮ ফেব্রুয়ারি তার ফাঁস হওয়া অডিও ক্লিপের কথোপকথনের বিষয়ে জানতে উপাচার্যের কাছে লিখিত বক্তব্য জমা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি এবং প্রগতিশীল শিক্ষকদের সংগঠন শাপলা ফোরাম।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপাচার্য শেখ আবদুস সালাম বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া অডিও ক্লিপের কথোপকথন তিনি শোনেননি। কর্র্তৃপক্ষ হিসেবে ইউজিসি ও সরকার রয়েছে। তারা বিষয়টি দেখবে।
এর আগে, অডিও ক্লিপ ফাঁসের ঘটনায় ১৭ ফেব্রুয়ারি রাতে ইবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান ইবি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
অন্যদিকে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের নিয়োগ বোর্ডের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তুলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ করেছেন এক চাকরিপ্রার্থী। শাহবুব আলম নামের ওই প্রার্থী উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি দুদকে অভিযোগ করেন। গতকাল বুধবার তার অভিযোগ আমলে নিয়েছে দুদক।
পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানি) সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ, সংঘর্ষ ও আহমদিয়া পল্লীতে হামলায় হতাহতের ঘটনার পর থেকে প্রতিদিনই হচ্ছে নতুন নতুন মামলা। গতকাল বুধবার সকাল পর্যন্ত ১৩টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় গতকাল সকাল পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৩৫ জনকে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টানা অভিযান ও কড়া নজরদারিতে জেলা শহরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। শহর ও এর আশপাশের এলাকার মোড়ে মোড়ে পুলিশ-বিজিবির টহল অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে গত শুক্রবারের ওই সহিংসতার ঘটনায় একের পর এক মামলা হলেও প্রকৃত অপরাধীরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আহমদিয়া সম্প্রদায়ের গণসংযোগ ও প্রেস বিভাগের প্রধান আহমদ তবশির চৌধুরী। একই সঙ্গে এই সহিংসতার ঘটনাকে কেউ কেউ রাজনৈতিক রং দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলেও দাবি তার।
শুক্রবারের সহিংসতার পর থেকে গত মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত হওয়া ১০টি মামলায় ১৩০ জনকে গ্রেপ্তার করছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরপর রাতভর অভিযান চালিয়ে আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। মঙ্গলবার রাতে আরও তিনটি মামলা করা হয়। এতে ১৩টি মামলায় গ্রেপ্তারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩৫। তাদের মধ্যে সহিংসতায় উসকানিদাতা হিসেবে তেঁতুলিয়া উপজেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. নাছিরউদ্দিনসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জেলা শহরসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে গ্রেপ্তার অভিযান চলায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। গ্রেপ্তারের আতঙ্কে অনেকেই বাড়িছাড়া। তবে নিরপরাধ কাউকে গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হবে না বলে পুলিশের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে।
হামলা, সংঘর্ষ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গত শনিবার রাতে পঞ্চগড় সদর থানায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে একটি এবং পুলিশের পক্ষ থেকে দুটি মামলা করা হয়। এরপর রবিবার রাতে পঞ্চগড় সদর থানায় র্যাব বাদী হয়ে একটি এবং পুলিশ বাদী হয়ে আরও দুটি মামলা করে। তারপর সোমবার রাতে জেলার বোদা থানায় আহমদিয়া সম্প্রদায় ও পুলিশ দুটি এবং পঞ্চগড় সদর থানায় আরও দুটি মামলা করে পুলিশ। সবশেষ মঙ্গলবার রাতে পঞ্চগড় সদর থানায় আরও তিনটি মামলা করে পুলিশ। এতে সদর থানার মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১টি এবং বোদা থানায় মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুটি।
এসব মামলায় প্রায় ১১ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জেলার পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা বলেন, ‘আরও মামলা করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। আমরা তদন্তের মাধ্যমে, ভিডিও ফুটেজ দেখে, বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত যাচাই করে অপরাধে জড়িতদের গ্রেপ্তার করছি।’
প্রকৃত অপরাধীদের না ধরার অভিযোগ : শুক্রবারের সহিংসতায় যারা জড়িত ছিল তারা এখনো গ্রেপ্তার হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন আহমদিয়া সম্প্রদায়ের গণসংযোগ ও প্রেস বিভাগের প্রধান আহমদ তবশির চৌধুরী। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিষয়টিতে (সহিংসতা) কেউ কেউ রাজনৈতিক রং দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু আমরা এটাকে রাজনীতির মধ্যে নিয়ে যেতে চাই না। আমরা কারও সাহায্য-সহযোগিতা চাই না। আমরা শুধু নিরাপদে বসবাস করতে চাই। নিজেদের জানমালের নিরাপত্তা চাই। নাম উল্লেখসহ ক্ষতিগ্রস্তরা মামলা করেছে। পুলিশও মামলা করেছে। কিন্তু প্রকৃত অপরাধীরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আহমদিয়া সম্প্রদায় অধ্যুষিত দুটি গ্রামে ও পঞ্চগড় শহরে আহমদিয়াদের দুই শতাধিক বাড়িঘর, দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়েছে। ৭০ জন সদস্য আহত হয়েছেন। একজনকে পিটিয়ে মেরেছে। তিন ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চলে। কিন্তু বিজিবি ও পুলিশ কোনো অ্যাকশনে যায়নি, যা আমাদের বিস্মিত ও হতবাক করেছে। তিন ঘণ্টা পর অ্যাকশন শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ততক্ষণে সব শেষ। এলাকার চিহ্নিতদের নাম পুলিশকে জানানো হয়েছে। কিন্তু ঘটনাটিকে কেউ কেউ রাজনীতির দিকে নিয়ে যাচ্ছেন, যা মোটেও কাম্য নয়।’
রেলমন্ত্রীর সঙ্গে থাকাদের গ্রেপ্তার দাবি হাফিজের : সদর উপজেলার আহমদনগর ও বোদা উপজেলার শালশিরি গ্রামে আহমদিয়াদের ক্ষতিগ্রস্ত জনপদ গতকাল পরিদর্শন করেছে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রমের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। পরে বিকেলে জেলা বিএনপি কার্যালয়ে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘১৭৯টি বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। শতাধিক আহত হয়েছেন। কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা জনমনে স্পষ্ট। কয়েক দিন আগে রেলমন্ত্রী যখন এখানে আসেন, তখন ক্ষতিগ্রস্তরা বলেছেন, ধ্বংসাত্মক কাজে যারা লিপ্ত ছিল তারা মন্ত্রীর সফরসঙ্গী ছিলেন। তারা তাদের নামও বলেছে। আমরা আশা করেছিলাম প্রশাসন তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করবে। কিন্তু তা হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি অনুমতি নিয়ে ক্ষতিগ্রস্তরা তাদের বার্ষিক জলসার আয়োজন করেছিল। যখন আক্রমণ করা হয়, বাড়িঘর পোড়ানো হয়, বারবার প্রশাসনকে ফোন করলেও প্রশাসন এগিয়ে আসেনি। বরং পুলিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম দেখেছে। তিন ঘণ্টা পর ডিসি-এসপি এসে দুষ্কৃতকারীদের খানিকটা প্রতিরোধ করেছে। ইতোমধ্যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে গেছে। এসব আলামত দেখে মনে হয়েছে এর মূল কারণ দেশে গণতন্ত্র নেই, আইনের শাসন নেই, গণমানুষের কোনো অধিকার নেই।’
নিয়ম ভেঙে গাড়ি ক্রয়, বেতনভাতা ছাড়াও ব্যাংক থেকে অতিরিক্ত সুবিধা গ্রহণের অভিযোগে জরিমানার কবলে পড়েছেন উত্তরা বাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রবিউল ইসলাম। পাশাপাশি বাসার বাবুর্চি, গার্ড, সার্ভিস চার্জ, লিভ ফেয়ার অ্যাসিস্ট্যান্স ইত্যাদি বাবদ ব্যাংক থেকে নেওয়া টাকার বিপরীতে কোনো রাজস্ব দেননি এই এমডি। এতসব অভিযোগের বিপরীতে তাকে প্রায় ১৩ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উত্তরা ব্যাংকের একজন পরিচালককে সুবিধা দিতে টয়োটা করোলা ১.৬ এল গাড়িটি ক্রয় করেন উত্তরা ব্যাংকের এমডি। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অবহিত না করেই স্পেশাল বোনাস ও বৈশাখী ভাতা গ্রহণ করেছেন তিনি। সম্প্রতি এ জন্য তাকে ১২ লাখ ৯০ হাজার ৮০০ টাকা জরিমানা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই মধ্যে সেই টাকা ফেরতও দিয়েছেন রবিউল ইসলাম। কিন্তু রাজস্বের বাকি টাকা পরিশোধ করেছেন কি না তার জানার জন্য একাধিকবার যোগাযোগ করেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে উত্তরা ব্যাংকের এমডির মাসিক বেতন ১৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে মূল বেতন, বাসা ভাড়া, বাবুর্চি, গার্ড, সার্ভিস চার্জ, পুনঃভরণ ভাতা, বাসা মেরামত, আসবাবপত্র, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, টেলিফোন বিল, ঈদের ভাতা এবং জিপ গাড়ির খরচ অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু এর বাইরেও তিনি ২০১৮, ’১৯, ’২০, ’২১ ও ’২২ সালে করোনাকালীন ভাতা, স্পেশাল বোনাস এবং বৈশাখী বোনাস গ্রহণ করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাননি। এ ছাড়া ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত চিকিৎসা বাবদ তিনি ২৪ লাখ ২৯ হাজার ৪৫৩ টাকা ব্যাংক থেকে গ্রহণ করেছেন। কিন্তু আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী যত টাকা রাজস্ব দেওয়ার কথা তা পরিশোধ করেননি। শুধু তাই নয়, বাসায় কুক, গার্ড, সার্ভিস ইত্যাদির জন্য ব্যাংক থেকে নেওয়া ২ লাখ ৬৩ হাজার ৫৩৮ কোটি এবং লিভ ফেয়ার অ্যাসিস্ট্যান্স বাবদ নেওয়া ১৭ লাখ ৬০ হাজার টাকার বিপরীতে কোনো রাজস্ব দেননি এমডি।
এদিকে ব্যবস্থাপনার পরিচালকের পারিবারিক প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য গাড়ি কেনার ক্ষেত্রেও হয়েছে অনিয়ম। ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতিমালা অনুযায়ী, একজন পরিচালক, তার একক মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, অংশীদারিতে পরিচালিত ফার্ম, পরিচালক হিসেবে আছেন এমন প্রাইভেট ও পাবলিক কোম্পানি, জামিনদাতা হিসেবে তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এবং পরিচালকের স্ত্রী, স্বামী, পিতা, মাতা, সন্তান, ভাই, বোন এবং পরিচালকের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তির অনুকূলে সকল প্রকার ঋণ সুবিধা, গ্যারান্টি এবং অন্য কোনো আর্থিক সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সংখ্যাগরিষ্ঠের পূর্বানুমোদন গ্রহণ করার বিধান রয়েছে। কারণ নিকটাত্মীয়ের কাছ থেকে ব্যাংকের ব্যবহার করা জিনিসপত্র কিনলে অনিয়ম হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু উত্তরা ব্যাংকের এমডি রবিউল ইসলাম নাভানা লিমিটেড থেকে পরিবারের ব্যবহারের জন্য টয়োটা করোলা ১.৬ এল গাড়িটি ক্রয় করেছেন। নাভানা লিমিটেডের পরিচালক শফিউল ইসলাম হচ্ছেন উত্তরা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ইফতেখারুল ইসলামের ভাই। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, এমন ক্রয়ে ক্ষেত্রে পরিচালনা পর্ষদের কার্যবিবরণীতে এ বিষয়ক কোনো এজেন্ডা থাকার কথা। কিন্তু কার্যবিবরণীতে তা দেখা যায়নি।
একই ঘটনা ঘটেছে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নিজের জন্য কেনা গাড়ির ক্ষেত্রেও। চেয়ারম্যানের ভাইয়ের প্রতিষ্ঠান থেকে গাড়িটি কেনা হয়েছে। চেয়ারম্যানের টয়োটা ল্যান্ড কুইজার প্রাডো টিএক্সেল ২০১৯ কেনার সময়ও ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ গাড়ির স্পেসিফিকেশনসহ কোটেশন দাখিল করার জন্য কোনো পত্র, চূড়ান্ত ক্রয় আদেশ এবং ডেলিভারি প্রত্যয়ন দিতে পারেনি। অর্থাৎ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কারও গাড়ি কেনার আগে বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রথমে চাহিদাপত্র পাঠাতে হয়। সেই চাহিদা ভিত্তেতে তারা ব্যাংকের কাছে গাড়ির দাম প্রস্তাব করে। সেই দাম পরিচালনা পর্ষদে অনুমোদন হলেই গাড়ি কেনার বৈধতা পায় ব্যাংক। কিন্তু এখানে প্রক্রিয়ার অনুসরণ হয়নি এবং প্রক্রিয়াসংশ্লিষ্ট কোনো কাগজ দেখাতে পারেনি উত্তরা ব্যাংক।
সার্বিক বিষয়ে উত্তরা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে একাধিক মাধ্যমে যোগাযোগ করেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। হোয়াটসঅ্যাপে প্রশ্ন লিখে পাঠালে তা দেখেও (সিন) কোনো উত্তর দেননি।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা ও নীতি বিভাগের পরিচালক ও ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র সারওয়ার হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ব্যাংকের এমডিদের তাদের বেতনভাতাসহ যাবতীয় ভাতা নির্ধারিত থাকে। এর বাইরে তাদের কোনো ভাতা নিতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হয়। যদি কেউ কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অবহিত না করে কোনো ভাতা নেন তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ ছাড়া এমডি বা তার পরিবারের গাড়ি ক্রয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা রয়েছে। যদি কেউ তা লঙ্ঘন করেন তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে।’
রিয়াল মাদ্রিদের সংগে ১৪ বছরের সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলছেন। ৪০ কোটি ইউরো চুক্তিতে সৌদি প্রো লিগের ক্লাব আলো ইত্তিহাদে যোগ দিচ্ছেন।
ক'দিন ধরে এমন কথা শোনা যাচ্ছিল করিম বেনজেমাকে নিয়ে। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন -এমন কথাও চাউর হয় স্পেনের সংবাদ মাধ্যমে।
কিন্তু সব কিছুতে জল ঢাললেন ব্যালন ডি অর জয়ী। স্পেনের গণমাধ্যম মার্কার দেয়া মার্কা লিজেন্ড এওয়ার্ড নিতে গিয়ে বললেন, 'আমি যখন রিয়ালেই আছি তখন ভবিষ্যৎ নিয়ে কেনো বলবো। ইন্টারনেটে যা প্রচার হচ্ছে তা ঠিক না। আমি এখানে ভালো আছি। শনিবার রিয়ালের ম্যাচ আছে, সব ফোকাস আমার সেই ম্যাচকে নিয়ে।'
ক্লাব প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজকে তাকে রিয়ালে আনার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বেনজেমা বলেন, '২১ বছরের আমি এই ক্লাবে যোগ দিয়েছিলাম। এই ক্লাবে খেলার মতো আর কিছু হয় না, সান্তিয়াগো বার্নাবু দারুন এক জায়গা।'
রিয়ালের সংগে চুক্তির মেয়াদ এ মাসেই শেষ হচ্ছে বেনজেমার।
পাকিস্তানের প্রস্তাবিত হাইব্রিড মডেলে নয়, এশিয়া কাপ হবে একটি দেশে। আর সেটা শ্রীলংকা। পাকিস্তান তাতে অংশ না নিতে চাইলে তাদেরকে ছাড়াই হবে এশিয়া কাপ।
ভারতের তরফ থেকে পাকিস্তানকে এমন বার্তা দেয়া হয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে কলকাতাভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক দা টেলিগ্রাফ।
বিসিসিআই সেক্রেটারি জয় শাহ যিনি এসিসিরও প্রেসিডেন্ট পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে বলেছেন, শ্রীলংকায় এশিয়া কাপ খেলতে রাজি আছে ভারতসহ চার পূর্ণ সদস্য। বিষয়টি নিয়ে এসিসির নির্বাহী সভায় আলোচনা করা হবে। পাকিস্তান রাজি না হলে ৫ দল নিয়েই হবে এশিয়া কাপ।
বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ম্যাচ অন্য কোনো দেশে আয়োজনে পিসিবি চেয়ারম্যান নাজমা শেঠির দাবিও নাকচ করে দিয়েছেন জয় শাহ। টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, পাকিস্তানকে ভারতেই খেলতে হবে, না হলে না খেলবে। এ বার্তা পিসিবি এবং আইসিসির দুই কর্মকর্তা যারা সম্প্রতি পাকিস্তান সফর করেন তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছে বিসিসিআই।
ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী বলছেন, তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে বিদ্রোহী প্রার্থীর লোকজন হামলা করে। ওই সময় গুলি ও ককটেলে অন্তত পাঁচজন আহত হন।
তবে বিদ্রোহী প্রার্থীর অভিযোগ, আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর সমর্থকরা মিছিল নিয়ে তার নির্বাচনী কার্যালয়ে গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে অন্তত ১৫ নেতাকর্মীকে আহত করেছে।
সংঘর্ষের পর ময়মনসিংহ-শেরপুর সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করে বিক্ষুব্ধরা। পরে রাত সাড়ে ১০টায় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আগামী ১২ জুন তারাকান্দা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে চার প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান ফজলুল হক, বিদ্রোহী প্রার্থী এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক নুরুজ্জামান সরকার, জাতীয় পার্টির এম এ মাসুদ তালুকদার, ইসলামী আন্দোলনের রফিকুল ইসলাম মণ্ডল।
বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে তারাকান্দা উপজেলা সদর বাজারে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নুরুজ্জামানের প্রধান নির্বাচন পরিচালনা কার্যালয়ে নেতাকর্মীরা অবস্থান করছিল। রাত ৮টার দিকে তারাকান্দা উত্তর বাজার থেকে উপজেলা সদরে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর সমর্থকরা একটি মিছিল বের করেন। মিছিলটি বিদ্রোহী প্রার্থীর কার্যালয়ের কাছে যেতেই ককটেল ও গুলির শব্দ শুনতে পান স্থানীয়রা।
স্থানীরা জানান, এ সময় চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় আহতদের উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। তাৎক্ষণিক ভাবে আহতদের কারো নাম সংগ্রহ করা যায়নি।
এদিকে ঘটনার পরপর ময়মনসিংহ-শেরপুর সড়কের তারাকান্দার মধুপুর বাজার এলাকায় সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে নিয়ে বিক্ষোভ করেন বিদ্রোহী প্রার্থী নুরুজ্জামানের সর্মথকরা। সড়কের দুই পাশে কয়েক কিলোমিটার এলাকায় যানবাহন আটকা পড়ে। পরে পুলিশ রাত সাড়ে ১০টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করে।
নুরুজ্জামান সরকার বলেন, আমার নেতাকর্মীরা নির্বাচনী কার্যালয়ে অবস্থান করার সময় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে একটি মিছিল বের হয়। সেই মিছিল থেকে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ককটেল, দেশীয় অস্ত্র ও নাইট শুটারগান দিয়ে আমাকে মারার জন্য হামলা করে। অন্তত ১৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে।
তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফজলুল হক দাবি করেন, তারাকান্দা উত্তর বাজার থেকে নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণ মিছিল বের করলে সেই মিছিলে অতর্কিতে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ও গুলিবর্ষণ করে হামলা করে বিদ্রোহী প্রার্থীর লোকজন। এ সময় তার অন্তত পাঁচ নেতাকর্মী আহত হন। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম বলেন, তারাকান্দা থেকে গুলিবিদ্ধসহ আটজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তারা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
তারাকান্দা থানার ওসি মো. আবুল খায়ের বলেন, সংঘর্ষে পাঁচজন আহত হয়েছে এমন তথ্য আছে আমাদের কাছে। ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে সত্য কিন্তু গুলির বিষয়টি যাচাই করতে হবে। ঘটনার পর সড়ক অবরোধ করলে পরিস্থিতি শান্ত করে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। ঘটনাস্থলসহ আশপাশ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
পলিথিন বা একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক, বিভিন্ন ধরনের পলিথিনজাত মিনিপ্যাকের উৎপাদন, ব্যবহার ও এর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সবগুলোই সমস্যা। পলিথিন উৎপাদন ও এর অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের মাধ্যমে বাতাসে যেমন কার্বন নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যায়, অন্যদিকে এর ব্যবহার প্রাণিকুল ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত। প্লাস্টিকের কণা এখন মানুষের রক্তে, মায়ের দুধে, সামুদ্রিক মাছে। শুধু ব্যবহার সম্পর্কিত সমস্যা না, পলিথিনের মাধ্যমে সৃষ্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আরও বেশি সমস্যাসংকুল। কারণ এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, কৃষির উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে, শহরের নর্দমা বন্ধ করে দিচ্ছে তা আবার রোগ-ব্যাধি ছড়াচ্ছে, জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে এবং সবশেষে শহরকে বসবাসের অনুপযোগী করে দিচ্ছে।
এতসব সত্ত্বেও পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ না করা বা বন্ধ করতে না পারার সংকট কোথায় সেটা বুঝতে আমাদের সমস্যা হয়। পলিথিন বন্ধে আইন আছে, নানা ধরনের প্যাকেজিংয়ে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাও অনেক দিন হলো। অন্যদিকে বেশ কিছুদিন ধরে পাটের ব্যাগ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে কিন্তু তা সহসাই হচ্ছে না। ‘সোনালি ব্যাগ’ নিয়ে অনেক ঢাকঢোল পেটানো হয়েছে কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সেই সোনালি স্বপ্ন কেমন জানি ফ্যাকাশে হয়ে আসছে এতদিনে।
পলিথিনের ব্যবহার শহরাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি যার অনেকটাই অভ্যাসগত কারণে। শহরের মানুষের পলিথিনের ওপর অভ্যস্ততা যেমন বেশি, তেমনি তারা ভুক্তভোগীও বেশি। রাস্তাঘাট, ড্রেন নোংরা হয়ে তো থাকেই, বাড়তি পাওনা দুর্গন্ধ, তৈরি হয় জলজট ও ডেঙ্গুর মতো রোগবালাই। বাসাবাড়িতে পলিথিনের ব্যবহার তো আছেই, পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য, বেকারিজাত পণ্যের পলিথিনের ব্যবহার ও পলিথিনের মোড়ক যত্রতত্র নিক্ষেপই এই অবস্থার জন্য দায়ী। শুধু ঢাকা নয় অন্যান্য ছোট-বড় সব শহরে প্রায় একই অবস্থা। আর এগুলোই হচ্ছে পলিথিন নির্ভর অর্থনীতির অনুষঙ্গ কিন্তু এর অনর্থনীতি হচ্ছে পলিথিনের কারণে পরিবেশদূষণ ও জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি যার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি। সাধারণভাবে পলিথিন ব্যবহারের ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক মূল্যমান নির্ধারণ করা হয় না। তবে দূষণের মাত্রা এখন এমন অবস্থায় পৌঁছেছে তাতে পলিথিনের অর্থনীতির থেকে এর ক্ষয়ক্ষতির অর্থনীতি যে অনেক বড় তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আসছে ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হবে। জলবায়ুর পরিবর্তনের পেছনে অন্যতম অনুঘটক হচ্ছে পরিবেশ দূষণ। অর্থমন্ত্রী তার এবারের বাজেট (২০২৩-২৪) বক্তৃতায় জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় অভিযোজন ও প্রশমন উভয় ক্ষেত্রে উদ্যোগ গ্রহণ করার কথা বলেছেন, পরিবেশ সংরক্ষণে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ২০২৩ এর উল্লেখ করেছেন কিন্তু পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে দৃশ্যমান কোনো রূপকল্প এবারের বাজেটে উল্লেখ করতে সমর্থ হননি। এবারের পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘প্লাস্টিক দূষণের সমাধানে শামিল হই সকলে’। গত বছরের এই দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘একটাই পৃথিবী’। পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের যত্রতত্র ব্যবহার আমাদের এই একমাত্র পৃথিবীকে দূষণের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে আইন হয়েছে ২০০২-এ এবং আজ ২০২৩ সাল, এই দীর্ঘ ২১ বছরেও এই আইনের বাস্তবায়ন করা যায়নি। যদিও এবারের বাজেট বক্তৃতায় প্লাস্টিকের তৈরি টেবিলওয়্যার এর মূল্য সংযোজন কর বৃদ্ধি করে ৫ শতাংশ থেকে ৭.৫ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। এখানে পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্ল্যাস্টিক সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। ধরেই নেওয়া যায় শুল্ক বৃদ্ধির এই হার কোনোভাবে পলিথিন নিরুৎসাহিত করার জায়গা থেকে না বরঞ্চ কিছুটা বাড়তি কর আদায়ের চিন্তা থেকে।
পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি সস্তা পলিথিনের ব্যবহার টেকসই ভোগের ধারণার জন্যও কোনোভাবে সহায়ক না। বরঞ্চ এটা এমন এক ধরনের মনস্তত্ত্ব তৈরি করে যা শুধু পরিবেশকেই ধ্বংস করে। যদিও বিশ্বব্যাপী টেকসই ভোগের ধারণার ওপর ভিত্তি করে এখন ‘সার্কুলার অর্থনীতির’ ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। সার্কুলার অর্থনীতি শুধু অপচয় কমায় না, প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা, দূষণরোধ, বর্জ্য থেকে তৈরি পরিবেশদূষণ ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারে। তাই পরিবেশগত ঝুঁকি, কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের অর্থনীতিকে সার্কুলার অর্থনীতিতে রূপান্তরের জন্য বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করছে। অন্যদিকে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই পৃথিবী গড়ে তোলা এবং এ সংশ্লিষ্ট অভীষ্ট ২০৩০ সমূহ অর্জনে সার্কুলার অর্থনীতি অন্যতম হাতিয়ার।
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা শহরে রাস্তায় কোনো পেট বোতল পড়ে থাকতে দেখা যায় না। এর কারণ হচ্ছে এখন পেট বোতলের প্রায় শতভাগ রিসাইকেল করা হয় এবং পেট বোতল সংগ্রহের জন্য অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে হলেও একটি সংগ্রহ-লাইন তৈরি হয়েছে। কিন্তু পলিথিনের ক্ষেত্রে তেমনটা দেখা যায় না। তবে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার সার্কুলার ইকোনমির ধারণার সঙ্গেও একেবারে মানানসই না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রযুক্তিগতভাবে একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিন রিসাইকেল করা অসম্ভব না হলেও এটি একটি জটিল এবং অর্থনৈতিকভাবে ব্যয়বহুল যে কারণে পেট বোতলের মতো রাস্তা থেকে পলিথিন সংগ্রহ করতে কাউকে দেখা যায় না উলটো রাস্তাঘাটে এখানে সেখানে পলিথিন পড়ে থাকে।
পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের অনর্থনীতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এখন প্রথম দরকার এর ব্যবহার বন্ধ করা, এর ব্যবহারকে অনেক বেশি দামি করে ফেলতে হবে আর এর প্রতিফলন থাকতে হবে বাজেটে। দ্বিতীয়ত, সার্কুলার অর্থনৈতিক চর্চার উৎসাহিত করার জন্য পরিকল্পনা, দক্ষতা বৃদ্ধি ও বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি, পলিথিনের বিকল্প সোনালি ব্যাগের মতো উদ্যোগগুলোকে সরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ ও বেসরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে প্রয়োজনীয় উৎসাহ ও প্রণোদনা প্রদান করতে হবে। সরকার প্রতি বছর বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবেশ দিবস পালন করে কিন্তু দিবস পালন শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলেই হবে না এর উদ্যোগ কতটুকু বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে তার ওপরও নজর দিতে হবে। তা নাহলে পলিথিনের অর্থনীতির নামে শুধু অনর্থনীতিকে বাড়িয়ে তোলা হবে, আর সেটা হবে টেকসই অর্থনীতি তৈরির সম্ভাবনার অপমৃত্যু।
লেখক : উন্নয়নকর্মী ও কলামিস্ট
আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে ১১ শতাংশ বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এ খাতে মোট ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ১২ হাজার ৬৯৬ হাজার কোটি টাকা বেশি।
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ প্রস্তাব করেন। সামাজিক সুরক্ষা খাতে প্রস্তাবিত এ বরাদ্দ মোট বাজেটের ১৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ এবং মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ দশমিক ৫২ শতাংশ।
এ খাতে বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা ১ লাখ এবং মাসিক ভাতার হার ১০০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের হিসাবে এ ভাতাভোগীর সংখ্যা ৫৭ লাখ ১ হাজার। আর মাসিক ভাতা ৫০০ টাকা।
বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারী ভাতাভোগীর সংখ্যাও ১ লাখ বাড়িয়ে ২৫ লাখ ৭৫ হাজার এবং মাসিক ভাতা ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৫৫০ টাকা করা হচ্ছে। প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর সংখ্যা ৫ লাখ ৩৫ হাজার বাড়িয়ে ২৯ লাখ প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর মাসিক শিক্ষা উপবৃত্তি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ১৫০ টাকা বাড়িয়ে যথাক্রমে ৯০০ ও ৯৫০ টাকা এবং উচ্চ মাধ্যমিকে ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৯৫০ টাকা করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।
প্রস্তাবিত বাজেটে হিজড়া জনগোষ্ঠীর ভাতাভোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৬৫ বাড়িয়ে ৬ হাজার ৮৮০ করা হচ্ছে। এ জনগোষ্ঠীর বিশেষ ভাতাভোগীর সংখ্যা ৩ হাজার ২০ বাড়িয়ে ৫ হাজার ৬২০ করা হচ্ছে।
অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রমে উপকারভোগীর সংখ্যা ১২ হাজার ৯৩০ বাড়ানো হয়েছে এবং বিশেষ ভাতাভোগীর সংখ্যা ৯ হাজার ৫০ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী ৪ হাজার ৩৮০ জন বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
সামাজিক সুরক্ষা আরও রয়েছে মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচি। এতে উপকারভোগীর সংখ্যা ৫০ হাজার বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়াও অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কার্যক্রমে উপকারভোগীর ভাতার হার দৈনিক ২০০ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
আগামী অর্থবছর থেকে সর্বজনীন পেনশন চালুর কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন পাস হয়েছে। আশা করছি, ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকেই বাংলাদেশে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করা সম্ভব হবে। শিগগির একটি পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে এবং জনবল নিয়োগের মাধ্যমে এ কর্তৃপক্ষকে কার্যকর করা হবে।’
অর্থমন্ত্রী জানান, প্রস্তাবিত স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হলে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী সুবিধাভোগী ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত এবং ৫০ বছরের অধিক বয়স্ক সুবিধাভোগী ন্যূনতম ১০ বছর পর্যন্ত চাঁদা দেওয়ার মাধ্যমে আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।