
দেশে বর্তমানে দুই কোটি মানুষ কিডনি রোগে ভুগছে। তার মধ্যে ৪০-৫০ লাখ শিশু। এমন তথ্য জানিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এসব শিশু কিডনি রোগীর চিকিৎসায় সরকারের পাশাপাশি বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিএসএমএমইউয়ের পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজি (শিশু কিডনি) বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে ৮৫ কোটি মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত। প্রতি বছর রোগটিতে মারা যায় ৪১ লাখ। তাদের মধ্যে ২৪ লাখ মানুষ ধীর গতিতে এবং ১৭ লাখ মানুষ আকস্মিক কিডনি বিকলে মারা যায়।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিএসএমএমইউর পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজি বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত বিশ্ব কিডনি দিবসের অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়। অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিল শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা। দিবসটি উপলক্ষে হাসপাতালের শিশু কিডনি রোগীদের নিয়ে পদ্মা সেতু ভ্রমণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বিএসএমএমইউয়ে শিশু কিডনি রোগীদের চিকিৎসার সুবিধার্থে হেমোডায়ালাইসিস সেবা সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা বরাদ্দ দেওয়ার আশ্বাস দেন।
বিএসএমএমিইউ পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজি বিভাগ থেকে জানানো হয়, ১৯৮২ সালে দেশে প্রথমবারের মতো এই প্রতিষ্ঠানে একটি ইউনিটে আটটি শয্যা নিয়ে শিশু কিডনি রোগীদের চিকিৎসা শুরু হয়। সে সময় প্রথম পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস শুরু হয়। প্রথম কিডনি বায়োপসি করেন অধ্যাপক ডা. মনিমুল হক। ২০০৪ সালে প্রথম পেডিয়াট্রিকস হেমোডায়ালাইসিস শুরু হয় এবং ২০০৬ সালে প্রথম শিশুদের কিডনি প্রতিস্থাপন করে।
অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, করোনার মধ্যেও বিএসএমএমইউয়ের শিশু কিডনি বিভাগের বহির্বিভাগে ৫ হাজার ৪৯৩ জন এবং অন্তঃবিভাগে ৬৮৫ জন শিশু কিডনি রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৭৩ জন কিডনি বিকল (ইএসআরডি) রোগী চিকিৎসা পান। এই বিভাগের ডায়ালাইসিস এক দিনের জন্যও বন্ধ থাকেনি। এ ছাড়া এই বিভাগের ১৩ জন শিশু কিডনি রোগীর কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়, যার মধ্যে দুজনের করোনাকালীন সময়েই প্রতিস্থাপন করা হয়।
এই বিভাগের চিকিৎসকরা বলেন, কিডনি রোগীদের চিকিৎসা করতে গিয়ে এই বিভাগ কিছুটা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো দরিদ্রতা। সমাজের বিত্তবান লোক এবং সরকার একই সঙ্গে এগিয়ে এলে এই কঠিন সমস্যার মোকাবিলা করা সম্ভব।
বিএসএমএমইউ ও জবির মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর : গতকাল বিএসএমএমইউ ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) মধ্যে এক সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। বিএসএমএমইউয়ের পক্ষে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ডা. স্বপন কুমার তপাদার ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে রেজিস্ট্রার ইঞ্জিনিয়ার মো. ওহিদুজ্জামান এ চুক্তিতে সই করেন। এ চুক্তি অনুযায়ী দুই প্রতিষ্ঠান শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা নিয়ে যৌথভাবে কাজ করবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা পাবেন।
এর আগে সকালে বিএসএমএমইউয়ের শিশু হৃদরোগ বিভাগের অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডারের মোড়ক উন্মোচন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।
মাছের অভয়ারণ্য তৈরির অনুমতি নিয়ে হবিগঞ্জের গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে বালু ও মাটি তুলে বিক্রির চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে জেলা মৎস্যজীবী লীগের এক নেতার বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যে হাওরটির বোরো ধান চাষের জমি নষ্ট করে বড় ড্রেজার ও পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে। এতে করে ধান উৎপাদন ব্যাহতসহ হাওরের পরিবেশ-প্রতিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কায় সাধারণ কৃষকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ ও হতাশা। তারা বলছেন, হবিগঞ্জ জেলা মৎস্যজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলামসহ কয়েকজন বালু ও মাটির এই কারবারের সঙ্গে জড়িত।
গত বৃহস্পতিবার গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে গিয়ে দেখা যায়, সমুদ্রফেনা মৌজার ‘খাইজ্জাউরি’ এলাকায় মুন্সীগঞ্জ থেকে মাটি ও বালু খননের ড্রেজার আনা হয়েছে। সেখান থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার পর্যন্ত প্লাস্টিকের মোটা পাইপলাইন বসানোর কাজ চলছে। সেখানে বছর দু-এক আগে সরকারি অর্থে নির্মিত সাবমারজিবল (বর্ষায় পানিতে ডুবে যায়) ঢালাই রাস্তা ভাঙা দেখতে পাওয়া যায়। এলাকাবাসী জানান, খননযন্ত্র ও অন্যান্য ভারী যন্ত্রপাতির চাপে এ অবস্থা। সড়কটি হাওরে উৎপাদিত ফসল হালকা যানের মাধ্যমে দ্রুত পরিবহনের জন্য নির্মাণ করা হয়।
হাওরে বোরো ধান চাষের কাজ করছিলেন এলাওর মিয়া, তৌরোদ মিয়াসহ কয়েকজন
কৃষক। তারা বলেন, বাহুবল উপজেলায় নির্মাণাধীন কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নিচু জমি ভরাটের জন্য তাজুল ইসলাম ও তার লোকজন বালু-মাটি সরবরাহের দায়িত্ব নিয়েছেন। এজন্য হাওরের বোরোজমিতে বড় ড্রেজার মেশিন ও কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে। মেশিন ও পাইপ স্থাপন করতে গিয়ে কয়েক একর জমির বোরো ধানের চারা মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
ভুক্তভোগী কৃষক দরছ মিয়া বলেন, ‘কাজে বাধা দেওয়া হলে তাজুল ইসলাম মামলা-মোকদ্দমার ভয় দেখান। ফলে নিরীহ কৃষকরা প্রতিবাদ করতে পারছেন না।’
হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে জানা যায়, গত জানুয়ারি মাসে বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান, মৎস্যজীবী লীগ নেতা তাজুল ইসলাম ও তার অনুসারীরা মাছের অভয়ারণ্য তৈরির জন্য হাওরে তাদের ১৪ দশমিক ৭৬ একর জমির মাটি কেটে চারদিক উঁচু করার অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন। বাহুবল উপজেলা প্রশাসনের সুপারিশ পেয়ে ১৫ জানুয়ারি জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে কয়েকটি শর্ত দিয়ে আবেদনটি মঞ্জুর করা হয়। শর্তগুলো হচ্ছে কাজ শুরুর পর এক মাসের মধ্যে তা শেষ করতে হবে। পার্শ্ববর্তী কোনো মালিকের জমি, রাস্তাঘাট, সরকারি স্থাপনার ক্ষতি করা যাবে না, খনন করা বালু ও মাটি বিক্রি বা পরিবহন করা যাবে না এবং বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ ও পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ অনুসারে খননকাজ করতে হবে। অন্যথায় অনুমতি বাতিল হবে।
অমৃতা গ্রামের মতিউর রহমান বলেন, ‘মাছের অভয়ারণ্য তৈরির নামে এসব মেশিন ও পাইপলাইন টানার পেছনে রয়েছে দীর্ঘ মেয়াদে বালু উত্তোলন ও মোটা অঙ্কের অর্থ উপার্জনের ধান্দা। বাহুবলে কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নিচু জমি ভরাটের ঠিকাদারির পর এই প্রভাবশালী মহলটি পার্শ্ববর্তী ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ছয় লেনের কাজ শুরু হলে সেখানে বালু ও মাটি বিক্রি করার ফন্দি করছে।’
কৃষক শফিক মিয়া বলেন, ‘গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে শুধু বোরো ফসল হয়ে থাকে। এই হাওরটি হবিগঞ্জ, নবীগঞ্জ, বাহুবল ও বানিয়াচং উপজেলায়
বিস্তৃত। হাজার হাজার কৃষক এই হাওরের জমির ওপর নির্ভরশীল। উৎপাদিত ফসল শুধু হবিগঞ্জ জেলারই খাদ্য চাহিদা পূরণ করে না, পার্শ্ববর্তী জেলারও খাদ্যঘাটতি পূরণে সহায়তা করে। এ ছাড়া মৎস্যজীবীরা হাওরে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা নানা প্রজাতির দেশি মাছ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। বালু ও মাটি পরিবহন করা হলে স্নানঘাট, বাগদাইর, অমৃতা, মুদাহরপুর, উজিরপুর, শিমেরগাঁও ও ফতেহপুরসহ বিভিন্ন গ্রামের
রাস্তাঘাট ও ব্রিজ কালভার্ট ভেঙে যাবে।’
অভয়ারণ্য তৈরির নামে বালু ও মাটির কারবারের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা মৎস্যজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদক (সদ্য বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার) তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘হাওরে মা-মাছ চাষ ও অভয়াশ্রম করতে জলাশয় খনন করার জন্য জেলা প্রশাসন আমাদের এক মাসের অনুমতি দিয়েছে। ওই সময় পর্যন্ত আমরা কাজ করব। প্রশাসন তদন্ত করে শর্তভঙ্গের যদি কোনো আলামত পায় তাহলে যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা মেনে নেব।’
এদিকে স্থানীয় কৃষক ও এলাকাবাসীর পক্ষে গত পহেলা মার্চ জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ করেন অমৃতা গ্রামের মাওলানা গোলাম সারওয়ার। এর আগে বাহুবল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একই বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেন একই গ্রামের মো. মতিউর রহমান। কিন্তু ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন স্থাপনের কাজ বন্ধ হয়নি।
মাওলানা গোলাম সারওয়ার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে এক ইঞ্চি জমি যেখানে অনাবাদি না রাখার জন্য বলছেন, সেখানে ওই চক্রটি হাওরের কৃষিজমি ও পরিবেশের বারোটা বাজানোর পাঁয়তারা করছে। আশা করছি জেলা প্রশাসক আমাদের সমস্যা বুঝে অনুমতির আদেশ বাতিল করবে।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, ‘কৃষিজমি ধ্বংস করে পুকুর ও জলাশয় তৈরির নামে যে প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে তা বেআইনি। কোটি কোটি ঘনফুট পানিমিশ্রিত বালু জমির নিচ থেকে তোলা হলে শুষ্ক মৌসুমে হাওরে পানি সংকট দেখা দেবে। জমি দেবে যাওয়া ছাড়াও বড় বড় ফাটল দেখা দেবে। জীববৈচিত্র্যে নেমে আসবে নানা বিপর্যয়।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাহুবল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহুয়া শারমিন ফাতেমা বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। তার প্রতিবেদন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে পাঠানো হবে।’
সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুহুল আমিন বলেন, ‘২ মার্চ সরেজমিনে হাওর পরিদর্শন করেছি। জেলা প্রশাসকের দেওয়া শর্ত তাজুল ইসলাম ভঙ্গ করেছেন। খননকাজ বন্ধ করার জন্য মৌখিকভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কাছেও প্রতিবেদন পাঠানো হবে।’
লোকসাহিত্য আমাদের জাতীয় সংস্কৃতির অঙ্গ, যা আমাদের মনের কথা বলে। বাংলাদেশের লোকজীবন বড় বিচিত্র। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ছড়া, লোককাহিনি ও লোকশিল্প থেকে আমাদের সমাজজীবন এবং ঐতিহ্য সম্পর্কে জানা যায়। এগুলো মানুষের যথাযথ পরিচয়ের জন্য ভাবনা ও চিন্তার খোরাক। এতে ফুটে ওঠে লোকায়ত বাংলার প্রতিচ্ছবি।
বাংলা লোকশিল্পের মধ্যে লোকসাহিত্যেরই বীজ নিহিত। এ শিল্পের শিকড় হাজার বছর আগে প্রোথিত হয়েছিল এ দেশেরই মাটিতে। নানা দেশের লোকঐতিহ্য ও লোকসংস্কৃতিতে এ রকমটি ধৃত আছে। কালপ্রবাহে এ রকম ধারা সজীব আছে আমাদের লোকসাহিত্যে এবং লোকজ শিল্পকলায়।
লোকসাহিত্য সামাজিক সৃষ্টি এবং এ কারণেই লোকসাহিত্য সমাজের কথা বলে। জনগণ এসবের স্রষ্টা, জনগণই এসবের ধারক ও লালনকর্তা। আবার জনগণই এর বাহক, তারা লোকসাহিত্যকে এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে বহন করে নিয়ে যায়।
এই নিরিখে আমরা আমাদের লোকায়ত বাংলা সিরিজে উপস্থাপন করছি, লোকসাহিত্যে বাংলাদেশের লোকায়ত শিল্পকলা বাংলাদেশের নকশিপাখা।
সত্যি কথা বলতে কি, বাংলাদেশের লোকায়ত পাখা সম্পর্কে বলতে গেলে বাংলাদেশের নকশিপাখালোককবির ভাষায় বলতে হয় :
‘শীতে তুমি লুকিয়ে থাক গরমে দাও দেখা,
আদর করে নাম রেখেছি তাই তো তোমার পাখা’
কোনো এক অখ্যাত-অজ্ঞাত গ্রাম্য কবির এই সরল বাণী আজও বুকে ধারণ করে আছে বাংলাদেশের নকশিপাখা।
আসলেও তা-ই। শীতে পাখা লুকিয়ে থাকে একান্ত অবহেলায়। শীতে প্রয়োজন কাঁথার। শীতে যেমন কাঁথা, গরমে তেমনি পাখা। শীতের পরে যেমন গরম আসে, তেমনি কাঁথার পরে পাখা।
বাংলাদেশের কাঁথাশিল্প প্রকরণ-উপকরণ বৈশিষ্ট্যে দুই ধরনের সুতার পাখা আর বেতের পাখা। চাকের (বা চাকতির) প্রেক্ষাপটে সুচের সাহায্যে পুরনো বস্ত্র-জাত সুতার বুনন কৌশলে সুতার পাখার শিল্পরূপ বিন্যস্ত। তবে নতুন কাপড় চাকে মুড়ে তার ওপর রুমালের মতো নতুন সুতার নকশা তুলেও অনেক সময় পাখা তৈরি হয়।
বুনন-বৈশিষ্ট্যে সুতার পাখার সঙ্গে সম্পর্কিত হলেও বাঁশ-বেত অথবা তালপাতার পাখার শিল্পায়ন-বৈশিষ্ট্য স্বতন্ত্র। বাঁশের ফালি থেকে অভ্যস্ত হাতের কৌশলে তৈরি হয় সূক্ষ্ম বেতি বা বেত। সেই বেতি মসৃণ করে চেঁছে অথবা তালপাতা ফালি ফালি করে চিঁড়ে বুননের কৌশলে তৈরি হয় পাখা।
তালপাতার বোনা পাখায় রঙের ব্যবহার সীমিত। বিশিষ্ট বুনন-কৌশলের মধ্যেই এর শিল্পরূপ বিন্যস্ত। বাঁশ-বেতের পাখায় বেতিগুলো বিচিত্র রঙে রাঙিয়ে বুননের কৌশলে এবং বর্ণসম্পাতের বৈচিত্র্যে তৈরি হয় নকশা। সুপারির খোলেও পাখা তৈরি হয়। তবে ময়ূর-পুচ্ছে তৈরি পাখায় স্বতন্ত্র নকশার প্রয়োজন হয় না।
পাখার চিত্র বা নকশা আল্পনাচিত্র-প্রভাবিত। পাখার সীমিত পরিসরে চিত্র বা নকশার বৈচিত্র্যের অবকাশ কম। এ কারণে পাখায় সাধারণত লতামণ্ডল সম্ভব হয় না। সচরাচর পাখার নকশায় থাকে তারা ফুল, ছিটা ফুল, পাখি (একই ধরনের দুটি পাখি মুখোমুখি অবস্থান করলে বলে ‘ভালোবাসা’) গাছ, (প্রধানত কদমগাছ), পাতা (অধিকাংশ পানপাতা), মাছ, হাতি, মানুষ, গম্বুজ প্রভৃতি।
লেখা পাখায় সাধারণত চিত্র থাকে না। বেতের পাখায় পালংপোষ, পাশার দান, ঘোষগুটির ঘর, বাঘবন্দি প্রভৃতি নকশা থাকে। চিত্ররূপ অনুযায়ী পাখার বিভিন্ন নামকরণ করা হয়। যেমন : ভালোবাসা, কাঁকইর জ্বালা, গুয়াপাতা, পালংপোষ, সুজনিফুল, বলদের চোখ, শঙ্খলতা, কাঞ্চনমালা, ছিটাফুল, তারাফুল, মনবিলাসী, মনবাহার, মনসুন্দরী, বাঘবন্দি, ষোলোকড়ির ঘর, সাগরদীঘি, হাতি-ফুল-মানুষ, লেখা প্রভৃতি।
বাংলা একাডেমির লোকশিল্প সংগ্রহে বিভিন্ন নামের নকশিপাখা আছে। পাখাগুলো কিশোরগঞ্জ ও সিলেট অঞ্চল থেকে সংগৃহীত। পাখার পরিচিতিপত্রে তার উল্লেখ আছে। প্রকারভেদ অনুযায়ী তার উল্লেখ করা যায় নিম্নলিখিত নামে :
সুতার পাখা : শঙ্খলতা, সুজনিফুল, বলদের চোখ, সাগরদীঘি।
বাঁশের পাখা : গুয়াপাতা, তারাফুল, ছিটাফুল, কাঁকইর জ্বালা, ভালোবাসা, গম্বুজ-তোলা, হাতি-ফুল-মানুষ, লেখা।
বেতের পাখা : পালংপোষ, পাশার দান।
কিশোরগঞ্জ অঞ্চল থেকে সংগৃহীত একটি মেয়েলি গীতে পাখার বর্ণনা পাওয়া যায় এভাবে :
‘সেইনা পাংখাত লেইখা গো থইছে
আঁসা আঁসির জোড়া গো।
সেইনা পাংখাত লেইখা গো থইছে
মউরা মউরীর জোড়া গো।’
বাংলাদেশের নকশিপাখায় বিধৃত হয়েছে বাংলাদেশের কৃষ্টি, সভ্যতা, সামাজিক ইতিহাস, জীবনাচরণ ও ঐতিহ্য, যা লোকায়ত বাংলার চিরায়ত সম্পদ ও সম্পত্তি। এতে পরিস্ফুট হয়ে উঠেছে লোকায়ত বাংলার মুখ। বাংলাদেশের চিরচেনা সচল ও সজীব প্রতিকৃতি।
লেখক : শিক্ষাবিদ ও প্রাবন্ধিক
২০২১ সালে চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদান রাখায় ২৭ ক্যাটাগরিতে ৩৪ জন শিল্পী-কলাকুশলীর হাতে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনার কারণে গত দুবছর এই আয়োজনে সশরীরে উপস্থিত থাকতে না পারলেও এবার প্রধানমন্ত্রী নিজ হাতে বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেন। শুধু তা-ই নয়, পুরস্কার বিতরণ শেষে দেশের শীর্ষস্থানীয় চলচ্চিত্র তারকাদের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পুরোটা উপভোগ করেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের পাশাপাশি চলচ্চিত্রশিল্পের উন্নয়নের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। শুধু তা-ই নয়, চলচ্চিত্রকে আরও উন্নত করতে কিছু বিষয়ে তিনি নতুনভাবে সিদ্ধান্তের কথা জানান।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে পাঠের পর বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন। তাদের আলোচনায় উঠে আসে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় চরিত্র গঠনে চলচ্চিত্রের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ভূমিকা, বর্তমান চলচ্চিত্রের অবস্থা, চলচ্চিত্র উন্নয়নে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কৃতিত্বের কথা। এরপরই পুরস্কার দেওয়া শুরু হয়। প্রথমেই প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন ডলি জহুর। এবার যৌথভাবে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন তিনি ও অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন। তবে ইলিয়াস কাঞ্চন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না।
এরপর পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় কলাকুশলীদের হাতে। সেরা কাহিনিকার রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত (নোনাজলের কাব্য), সেরা চিত্রনাট্যকার নূরুল আলম আতিক (লাল মোরগের ঝুঁটি), সেরা সংলাপ রচয়িতা তৌকীর আহমেদ (স্ফুলিঙ্গ)। সেরা সম্পাদক সামির আহমেদ (লাল মোরগের ঝুঁটি), সেরা শিল্পনির্দেশক শিহাব নূরুননবী (নোনাজলের কাব্য), সেরা চিত্রগ্রাহক দলগত সৈয়দ কাশেফ শাহবাজি, সুমন কুমার সরকার, মাজহারুল ইসলাম রাজু (লাল মোরগের ঝুঁটি), সেরা শব্দগ্রাহক শৈব তালুকদার (রেহানা মরিয়ম নূর), সেরা পোশাক ও সাজসজ্জা ইদিলা কাছরিন ফরিদ (নোনাজলের কাব্য) এবং সেরা রূপসজ্জাকর দলগত মো. ফারুখ, মো. ফরহাদ রেজা মিলন (লাল মোরগের ঝুঁটি)। এ ছাড়া শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ধড়’ (আকা রেজা গালিব), সেরা প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘বধ্যভূমিতে একদিন’ (কাওসার চৌধুরী) পুরস্কার গ্রহণ করেন।
এরপর শুরু হয় শিল্পীদের হাতে পুরস্কার প্রদানের পালা। শিশুশিল্পী শাখায় বিশেষ পুরস্কার জান্নাতুল মাওয়া ঝিলিক (যা হারিয়ে যায়), রেহানা মরিয়ম নূর সিনেমায় অভিনয়ের জন্য সেরা শিশুশিল্পী আফিয়া জাইন জায়মা, সেরা সংগীত পরিচালক সুজেয় শ্যাম (যৈবতী কন্যার মন), সেরা গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ারের পক্ষে তার স্ত্রী (অন্তরে অন্তর জ্বালা, যৈবতী কন্যার মন), সেরা সুরকার সুজেয় শ্যাম (অন্তরে অন্তর জ্বালা, যৈবতী কন্যার মন), সেরা গায়ক হিসেবে ‘পদ্মাপুরাণ’ সিনেমার ‘শোনাতে এসেছি আজ’ গানের জন্য মুহিন খান ও একই সিনেমায় ‘দেখলে ছবি পাগল হবি’ গানটির জন্য সেরা গায়িকার পুরস্কার গ্রহণ করেন চন্দনা মজুমদার।
এবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার সেরা চলচ্চিত্র নির্বাচিত হয়েছে ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’ ও ‘নোনা জলের কাব্য’। এই শাখায় পুরস্কার গ্রহণ করেন সিনেমা দুটির প্রযোজক মাতিয়া বানু শুকু ও রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত। সেরা সিনেমা পরিচালক হিসেবে ‘নোনাজলের কাব্য’ সিনেমার জন্য পুরস্কার গ্রহণ করেন তরুণ নির্মাতা রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে অন্যতম আগ্রহের ক্যাটাগরি সেরা অভিনয়শিল্পী। ‘নোনাজলের কাব্য’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য পার্শ্বচরিত্রে সেরা অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান ফজলুর রহমান বাবু। এটা তার চতুর্থ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ক্যারিয়ারে প্রথমবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার গ্রহণ করেন শম্পা রেজা। তিনি পার্শ্বচরিত্রে ‘পদ্মাপুরাণ’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পান। অভিনেতা জয়রাজও ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি খলচরিত্রে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। তিনি ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য এই পুরস্কার গ্রহণ করেন। অভিনেতা মিলন ভট্টাচার্য সেরা কৌতুক অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার গ্রহণ করেন। তিনি এই সম্মাননা পাচ্ছেন ‘মৃধা বনাম মৃধা’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য।
এবার যুগ্মভাবে সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন মীর সাব্বির (রাতজাগা ফুল) ও সিয়াম আহমেদ (মৃধা বনাম মৃধা)। ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ সিনেমার জন্য আগে থেকেই আলোচনায় ছিলেন আজমেরী হক বাঁধন। ২০২১ সালে সিনেমায় অভিনয় করার জন্য যুগ্মভাবে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে গ্রহণ করেন আজমেরী হক বাঁধন ও তাসনোভা তামান্না ‘নোনাজলের কাব্য’।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্যে জ্বালানি খাতে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়কে বরাদ্দ দিয়েছিল ৪৮ লাখ টাকা। অর্থবছর শেষ হতে আরও ৪ মাস অবশিষ্ট থাকলেও চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতেই বরাদ্দকৃত অর্থের অতিরিক্ত আরও ৪ লাখ ৬৯ হাজার টাকা ব্যয় করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮টি শিক্ষার্থী বাস ও ৪টি শিক্ষক কর্মকর্তাদের পরিবহনে ব্যবহৃত সিভিলিয়ানের পরিচালনা করতে এই ব্যয় করা হয়েছে।
এই অতিরিক্ত ব্যয় করাটিকে নিয়মের ব্যত্যয় হয়েছে বলে মনে করছে ইউজিসি। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে আগামীতে সমন্বয় করে ব্যবস্থা নেওয়ার ভাবনায় কাজ করা হচ্ছে। তবে এখন থেকে সমন্বয়ের সুযোগ থাকছে না বলেও মন্তব্য ইউজিসির।
২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে জ্বালানি তেলের ব্যবহারের যে চিত্র পাওয়া গেছে তাতে দেখা যায় পুরো বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকা ২০২০-২১ অর্থবছরে জ্বালানি বাবদ ২৫ লাখ ৮৫ হাজার ৫৬৮ টাকা ব্যয় করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসন। এই সময় সরকার থেকে লকডাউনের ঘোষণা থাকলেও প্রতি সপ্তাহে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা এবং ঢাকা থেকে ত্রিশাল যাতায়াত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক। এছাড়া ত্রিশালের অভন্তরীণ ৪ কিলোমিটারের সড়কে ময়মনসিংহ চ- ৫১০০২১ নম্বরের মাইক্রো ও এর অবর্তমানে অন্য একটি মাইক্রো ব্যবহার করে গ্যাস বাবদ বন্ধ ক্যাম্পাসে ব্যয় করা হয়েছে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৮২৬ টাকা।
এই সময়ের ব্যয়গুলোকে সরকারের সিদ্ধান্ত না মানার শামিল বলে মন্তব্য করেছেন ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, সরকার যখন সারা দেশ লকডাউন ঘোষণা করেছে সেই সময়ে এমন ব্যয় হলে তা কেবল অনিয়মই নয় সরকারের সিদ্ধান্তেরও লঙ্ঘন। যা বিশ্ববিদ্যালয় করতে পারে না। রাষ্ট্রের নিয়মের বাইরে গিয়ে কোনো কাজ করবার সুযোগ নেই।
তবে সে সময়ের গাড়ি পরিচালনা প্রশাসনের সিদ্ধান্তেই হয়েছে বলে দেশ রূপান্তরকে জানান বিশ্ববিদ্যালয়টির পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. আরিফুর রহমান। তিনি আরও বলেন, ঢাকায় গাড়ি চলাচলের বিষয়ে আমি একমত না থাকলেও প্রশাসনের সিদ্ধান্তে আমার তা করতে হয়েছে।
বন্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ে তেলের এত ব্যয় শুনে বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, আমি এমন ঘটনা আগে শুনিনি। আর আমি আগের বিষয়ে অবগত নই। তবে বন্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি এরকম ব্যয় হয়ে থাকে সেটি উচিত হয়নি। এমন অভিযোগ পেলে তদন্ত করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন অধ্যাপক ড. এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখানে একটা তেলের ব্যবসা হয়েছে। বন্ধ ক্যাম্পাসে খালি পকেটকে ভরতেই কেউ কেউ এই স্মার্ট পথ খুঁজে নিয়েছে। এছাড়া একটি পাম্প থেকেই তেলের সরবরাহ নেওয়ায় এক ধরনের মুনাফা নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একশ্রেণির সিন্ডিকেট। তারা তেল নিয়ে মুনাফা করছে। ক্ষতি হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের।
পরিবহন দপ্তরের যোগসাজশেই তেলের বাণিজ্য চলে বলেও জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট একাধিকজন। পরিমাণ নির্ধারণ করার কোনো ব্যবস্থাও নিতে পারেনি দপ্তরটি। তেলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ না করতে পারার আক্ষেপও রয়েছে পরিবহন প্রশাসকের। বারবার চেষ্টাও করেছেন বলেও জানান তিনি। অন্যদিকে একাধিক তেলের পাম্প থেকে তেল ক্রয়ের প্রস্তাব দিলেও সেটি বাস্তবায়ন করতে পারেননি তিনি।
অভ্যন্তরীণ কারণ দেখিয়ে তেল ক্রয়ের পাম্প নিয়ে আর কথা বলতে চাননি পরিবহন প্রশাসক আরিফুর রহমান।
২০২২-২৩ অর্থবছরে বরাদ্দের থেকে ব্যয় বেশি হওয়ায় সমাধান কি প্রশ্নে অর্থ ও হিসাব শাখার পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ড. মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের বাস তো চালু রাখতেই হবে। তাই আগামী অর্থবছরের সমন্বয় করে হয়তো সমাধান করতে হবে। এছাড়া আমরা পরিকল্পনা করে যাচ্ছি।
তবে সমন্বয়ের কথা নাকচ করে দিয়ে ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান বলেন, সরকার নিজেই সমন্বয় থেকে বের হয়ে আসছে। আর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে সেখানে কীভাবে সমন্বয় করা হবে? তাই সমন্বয়ের কোনো সুযোগ নেই।
লকডাউনে বন্ধ অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমের সময়ে ২৫ লাখ টাকার তেল ও গ্যাস বাবদ ব্যয়কে দুর্নীতি হিসেবে উল্লেখ করে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষক কর্মকর্তা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রমের বাইরেও প্রতি সপ্তাহে শুক্র ও শনিবার উইকেন্ড প্রোগ্রামের কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ির ব্যবহার করা হয়। এই বিষয়ে ইউজিসি সচিব দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি ব্যবহার করে কোনো ধরনের ইভিনিং কোর্স ব্যবহারের সুযোগ নেই।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, যারা দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামির নেতৃত্বে রাজনীতি করে তাদের মুখে অন্যদের নিয়ে পলায়নপর রাজনীতির আষাঢ়ে গল্প তামাশা ছাড়া কিছু নয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এ বিবৃতি দেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দল বিএনপির তথাকথিত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান একুশে আগস্টের খুনি দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি তারেক রহমান প্রায় দেড় দশক বিদেশে পলাতক রয়েছে। যারা দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামির নেতৃত্বে রাজনীতি করে তাদের মুখে অন্যদের নিয়ে পলায়নপর রাজনীতির আষাঢ়ে গল্প তামাশা ছাড়া কিছু নয়।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এদেশের গণমানুষের সংগঠন। এদেশের মানুষের অধিকার আদায়ে চরম প্রতিকূল পরিবেশে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এবং দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অপরিসীম ত্যাগ-তিতিক্ষা অত্যাচার-নির্যাতন শিকার করে ও আত্মদানের মধ্য দিয়ে বহু ঝড়-ঝঞ্ঝা, বাধা-বিঘœ পেরিয়ে এগিয়ে চলা সংগঠনের নাম আওয়ামী লীগ।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শত-সহস্র বৈরী পরিবেশেও জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো সংগঠনের নাম আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ কখনো পলায়নপর রাজনীতি করেনি, করবেও না।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিসংবাদিত নেতৃত্বে জনগণের মধ্য থেকে উত্থিত রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়ে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করেছিল বলেই মির্জা ফখরুল ইসলামরা আজ অপরাজনীতির সুযোগ পেয়েছে। বাক-স্বাধীনতার নামে লাগাতারভাবে মিথ্যাচার করার অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করতে পারছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জাতির পিতার নেতৃত্বে যদি দেশ স্বাধীন না হতো, তাহলে তাদেরকে এখনো পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর গোলামি করতে হতো। স্বাধীন বাংলাদেশে বসবাস করেও তারা পরাজিত পাকিস্তানের প্রতি এক ধরনের সংবেদনশীলতা অনুভব করে; পাকিস্তানের প্রতি তাদের ভাবাদর্শগত মোহ এখনো কাটেনি। আমরা স্পষ্টতই বলতে চাই, যাদের এখনো পাকিস্তানের প্রতি দুর্বলতা রয়েছে বাংলাদেশে তাদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার থাকতে পারে না।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সফল রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার সবসময় জন-আকাক্সক্ষা ও জনমতকে ধারণ করেই রাষ্ট্র পরিচালনা করে আসছে। জনকল্যাণকে সামনে রেখেই প্রণীত হয় বর্তমান সরকারের সব কর্মসূচি, পরিকল্পনা ও কর্মপন্থা। যার ফলশ্রুতিতে বিএনপি-জামায়াতের রেখে যাওয়া ভঙ্গুর অর্থনীতি ও চরম অনিশ্চয়তার বাংলাদেশ বিশ্বসভায় উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে অভিহিত হয়েছে; গত ১৪ বছরে অভাবনীয় অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকারকে পদত্যাগ করাতে বা তত্ত্বাবধায়কের অসাংবিধানিক, অগণতান্ত্রিক ও অযৌক্তিক দাবির হুঙ্কার দিয়ে কোনো লাভ নেই। কোনো অনির্বাচিত ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সরকার গণতন্ত্রের অন্তর্নিহিত আদর্শের পরিপন্থী। দেশে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নির্বাচনের মাধ্যমেই সরকার পরিবর্তন হবে। গণপ্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশে জনগণের ভোটেই সরকার গঠন হবে।’ বাসস
ভাড়া করা বিমানে উড়িয়ে নিয়েও মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রথম ম্যাচে একাদশে রাখল না দিল্লি ক্যাপিটালস। আসরে তাদের শুরুটাও ভালো হলো না। লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হারল মোস্তাফিজবিহীন দিল্লি।
ঘরের মাঠে ৫০ রানের জয়ে আসর শুরু করল লক্ষ্ণৌ। ১৯৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দিল্লি থামে ৯ উইকেটে ১৪৩ রানে। ৪ ওভারে মাত্র ১৪ রান খরচায় ৫ উইকেট নিয়ে লক্ষ্ণৌয়ের জয়ের নায়ক মার্ক উড।
এদিন দিল্লির ব্যাটিং ছিল পুরো ফ্লপ। দলের অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার ৪৮ বলে ৫৬ রান করেছেন। পাশাপাশি রাইলি রোশো ২০ বলে ৩০ রানের ইনিংস খেলেন। কিন্তু বাকিরা সম্পূর্ণ ব্যর্থ। ফলে যা হরার তাই হলো ম্যাচের ফল।
এর আগে স্বাগতিক দলের হয়ে ঝড় তোলেন কাইল মেয়ার্স। এই ক্যারিবীয়ান ৩৮ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলেন। ২টি চারের সঙ্গে হাঁকান ৭টি ছক্কা। এ ছাড়া নিকোলস পুরান ২১ বলে ৩৬ রানের ইনিংস খেলেন। সুবাদে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৯৩ রানের পুঁজি গড়ে লক্ষ্ণৌ।
গত অক্টোবরের পর আর্সেনালের জার্সিতে প্রথম গোলের দেখা পেলেন গাব্রিয়েল জেসুস। তার আবার জোড়া গোল। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের জ্বলে ওঠার দিনে লিডস ইউনাইটেডকে উড়িয়ে ম্যানচেস্টার সিটির চেয়ে ফের আট পয়েন্টে এগিয়ে গেল আর্সেনাল।
ঘরের মাঠে শনিবার প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচটি ৪-১ গোলে জিতে আর্সেনাল। স্পট কিকে দলকে প্রথম এগিয়ে দেন জেসুস। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বেন হোয়াইট ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। এর খানিক পরই জোড়া গোল পূর্ণ করেন জেসুস।
এরপর লিডস একটি গোল শোধ করলেও গ্রানিত জাকার গোলে বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে স্বাগতিকরা।
আন্তর্জাতিক বিরতি থেকে ফেরার পর এটিই প্রথম ম্যাচ ছিল আর্সেনালের। বিরতিতে যাওয়ার আগে নিজেদের মাঠে একই ব্যবধানে তারা হারিয়েছিল ক্রিস্টাল প্যালেসকে।
এই জয়ে ২৯ ম্যাচে ৭২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান আরও মজবুত করল গানাররা। ২০০৩-০৪ মৌসুমের পর প্রথমবার প্রিমিয়ার লিগ জয়ের স্বপ্ন দেখছে আর্সেনাল। তাদের সঙ্গে গত লিগের চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটির পয়েন্ট ব্যবধান ৮।
গানারদের চেয়ে এক ম্যাচ কম খেলে ৬৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে সিটি। একই দিন তারাও নিজেদের মাঠে লিভারপুলকে উড়িয়ে দিয়েছে ৪-১ গোলে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
সময়ের আলোচিত চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া। একাধারে উপস্থাপিকা, নায়িকা এবং সংগীতশিল্পীও। সিনেমার বাইরে তিনটি গান প্রকাশ পেয়েছে তার। সে ধারাবাহিকতায় এবারের ঈদে নতুন গান নিয়ে আসছেন তিনি।
গানের শিরোনাম ‘বুঝি না তো তাই’। বাঁধনের লেখা এ গানটির সংগীতায়োজন করেছেন বলিউড র্যাপার মুমজি স্ট্রেঞ্জার। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ফারিয়া। বাবা যাদবের কোরিওগ্রাফিতে ভিডিওতে অংশ নিয়েছেন ফারিয়া ও মুমজি। আসছে ঈদে উন্মুক্ত হবে গানটি। গানটি প্রকাশ করবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্কটেশ ফিল্মস।
সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে গানটির টিজার, যা দর্শকমহলে প্রশংসা কুড়াচ্ছে। এরমধ্যে সোমবার বিকেলে নিজের ফেসবুকে গান ভিডিওর দৃশ্যের একটি ছবি পোস্ট করেন এ গায়িকা। সেখানে ক্যাপশনে লিখেন, মাই হাইট ইজ ৫' ৩'' বাট অ্যাটিচিউড ৬' ১''।
গানটি প্রসঙ্গে নুসরাত ফারিয়া জানিয়েছিলেন, ‘নতুন এ গানটি বেশ আনন্দের সঙ্গে করেছি। আমার আগের তিনটি গানের মতো এটিও বেশ মজার। আমার বিশ্বাস এটি সবার পছন্দ হবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ‘পটাকা’ গানের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ঘরানার গানে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন নুসরাত ফারিয়া। এরপর ২০২০ ও ২০২১ সালে প্রকাশ পায় ‘আমি চাই থাকতে’ ও ‘হাবিবি’। আসছে ঈদুল ফিতরে এ অভিনেত্রী গায়িকা হিসাবে চতুর্থবার হাজির হচ্ছেন দর্শক শ্রোতাদের সামনে।
দেশে ইতিমধ্যে কিছু এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভজি ইন্টারনেট সেবা চালু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক। অন্য অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক একই সেবা চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সব মোবাইল অপারেটরই দেশের বেশিরভাগ স্থানে ফোরজি সেবা চালু করেছে। আর সে হিসেবেই তারা ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু গ্রাহকরা ফোরজি ইন্টারনেট কিনলেও দেশের অনেক এলাকায় টুজি-থ্রিজি’র সেবা পাচ্ছেন। তারা অপারেটর কোম্পানিগুলোকে এ ব্যাপারে বারবার অভিযোগ জানালেও এর সুরাহা হচ্ছে না।
জানা গেছে, রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে মোটামুটিভাবে গ্রাহকরা ফোরজি সেবা পাচ্ছেন। তবে এসব এলাকায়ও অনেক সময় ফোরজি থাকে না, থ্রিজিতে নেমে আসে নেটওয়ার্ক। তবে জেলা পর্যায়ে বেশিরভাগ সময়েই থাকে থ্রিজি। আর মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলে বেশিরভাগ সময় সেই থ্রিজিও থাকে না, তখন টুজি নেটওয়ার্কই ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ইন্টারনেট প্যাকেজ যথাযথভাবে থাকার পর তা কাজ করে না, বাফারিং হয়। এতে গ্রাহকরা ত্যক্তবিরক্ত হয়ে উঠছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো সারা দেশের ব্যবসা একত্রে হিসাব না করে এলাকাভিত্তিক ব্যবসার হিসাব-নিকাশ করার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা দেখেন, কোন এলাকায় তাদের গ্রাহক সংখ্যা কত, সেখানে কত সিমে ইন্টারনেট চালু আছে। যদি দেখা যায়, তাদের হিসাব মতে তা সন্তোষজনক আছে তাহলে সেখানে ফোরজি সেবা চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বহাল রাখে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক টাওয়ার নির্মাণ করে। কিন্তু যদি দেখে সন্তোষজনক গ্রাহক নেই তাহলে সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় না, এতে সেই এলাকায় ফোরজি পাওয়া যায় না। অথচ শহর এলাকাগুলোতে তারা বেশি ব্যবসা করলেও সেটাকে হিসাবে ধরে না। কিন্তু মফস্বল এলাকা থেকে কল বাবদ প্রয়োজনের বেশি ব্যবসা হলেও তা ইন্টারনেটের সঙ্গে সমন্বয় করে না।
মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোর ফেসবুক পেইজে প্রতিনিয়ত অসংখ্য অভিযোগ জানান গ্রাহকরা। অভিযোগ অনুযায়ী, অপারেটরদের মধ্যে টেলিটকের নেটওয়ার্কই বেশি দুর্বল। টেলিটকের ফেসবুক পেজের এক পোস্টে মো. ফয়জুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই, নেটওয়ার্ক পাই না সকাল থেকে। মিরপুর-২ নম্বরে বাসা স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশে। আর আমার গ্রামের কথা না হয় বাদ দিলাম।’ আরাফাত আলী লেখেন, ‘২জিবি নেট কিনলে দেড় জিবি নষ্ট হয়। মেয়াদ ১৫ দিন তাও ফুরাতে পারি না। তাহলে বুঝেন নেটওয়ার্ক কত ভালো।’ কার্জন চাকমা লেখেন, ‘পাহাড়ি এলাকায় ফোরজি নিশ্চিত করুন। আমাদের পার্বত্য এলাকাগুলোতে টেলিটকের গ্রাহক সবচেয়ে বেশি, কিন্তু শুধু থ্রিজি-টুজিতে সীমাবদ্ধ।’ রাসেল আহমেদ লেখেন, ‘গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাংগা গ্রামে থ্রিজি নেটওয়ার্ক তো নেই-ই। মাঝেমধ্যে টুজি’ও নেই। বুঝুন অবস্থাটা। আমাদের থ্রিজি সেবা দেওয়ার চেষ্টা করুন।’
টেলিটকের মহাব্যবস্থাপক (সিস্টেম অপারেশন) নুরুল মাবুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ফাইভজি রেডিনেস প্রজেক্ট শুরু করেছি। যা শেষ হতে এক বছর বা তার কিছু বেশি সময় লাগতে পারে। এর ফলে আমাদের কাভারেজ এলাকাগুলোতে ফোরজি সেবা নিশ্চিত হবে। এছাড়া আমাদের কাভারেজ বাড়ানোরও বড় পরিকল্পনা রয়েছে।’
বাংলালিংকের পেজের একটি পোস্টে মাহাদী হাসান তালহা লেখেন, ‘আমার এলাকায় আপনাদের সিম ব্যবহার করতে হলে ফোন গাছের ডালে বেঁধে লাউডস্পিকার দিয়ে কথা বলা লাগে। এত্তো ফাস্ট কেন আপনাদের নেটওয়ার্ক।’ আকরাম হোসাইন লেখেন, ‘ভাই আপনাদের সবই ঠিক, তবে নেটওয়ার্ক সেøা।’
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অফিসার তৈমুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফোরজি সেবার জন্য ২৩০০ মেগাহার্জের স্পেকটার্ম প্রয়োজন হয়। কিন্তু টুজিতে তা লাগে মাত্র ৯০০ মেগাহার্জ। আমরা ইতিমধ্যে ৯৫ শতাংশ কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা নিশ্চিত করেছি। তবে আমাদের আরও বেশি সাইট লাগবে। যদি সব অপারেটর মিলে আমরা টাওয়ার শেয়ার করতে পারি, তাহলে সব গ্রাহকের কাছে ভালো সেবা পৌঁছে দেওয়া সহজ হবে।’
রবির পেজে এক পোস্টে তানভীর আহমেদ লেখেন, ‘কলাপাড়া থানা শহরে যদি থ্রিজি নেটওয়ার্ক না পাওয়া যায়, এরচেয়ে দুঃখজনক কিছুই হতে পারে না।’ এইচএমএম ইসমাঈল লেখেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার চম্পকনগর ইউনিয়নে রবি সিমের থ্রিজি নেই। অথচ অনেক বছর আগে রবি টাওয়ার বসানো হয়েছে। আমরা রবি সিম দিয়ে ইন্টারনেট চালাতে অক্ষম।’
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলটরি অফিসার শাহেদ আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা রয়েছে। তবে দেখা যায়, অনেক ফোন ফোরজি সাপোর্ট করে না। আর কাভারেজ এলাকা থেকে যতদূরে যাওয়া যাবে, নেটওয়ার্ক তত কমতে থাকবে। এছাড়া আমাদের কিছু জায়গায় নেটওয়ার্কের কাজ চলছে। পাশাপাশি নতুন কিছু টাওয়ার তৈরির কাজও আমাদের চলছে।’
গ্রামীণের পেইজে একটি পোস্টে রহিদুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই আমি যখন গ্রামে যাই তখন নেটওয়ার্কের ঝামেলা হয়।’ সাইদুর রহমান লেখেন, ‘এমন সার্ভিস হলে চলবে? কলরেট, ইন্টারনেটের দাম তো ঠিকই বেশি আপনাদের, বাকি সব অপারেটরদের থেকে।’
গত বছরের ২৮ এপ্রিল টেলিকম অপারেটররা বহুল প্রতীক্ষিত ‘আনলিমিটেড’ ও ‘মেয়াদবিহীন’ ইন্টারনেট ডাটা প্যাক চালু করেছে। তবে এতে গ্রাহকদের খুব বেশি সুবিধা হচ্ছে না। কারণ এজন্য প্যাকেজের দাম বাড়িয়েছে অপারেটররা। আর মেয়াদহীন ইন্টারনেট পেতে প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একই প্যাকেজ চালু করতে হবে। কিন্তু গ্রাহকের সব সময় একই ধরনের ইন্টারনেট প্যাকেজ নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে অব্যবহৃতই থেকে যাচ্ছে গ্রাহকের কেনা ইন্টারনেট। এছাড়া মেয়াদবিহীন হিসেবে মোবাইল অপারেটররা যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে গ্রাহকদের।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে সচল সিমের সংখ্যা ১৮ কোটি ২০ লাখ ৬১ হাজার। এরমধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা ৭ কোটি ৯০ লাখ ৯৫ হাজার, রবির ৫ কোটি ৫০ লাখ ১৪ হাজার, বাংলালিংকের ৪ কোটি ৮৫ হাজার এবং টেলিটকের ৬০ লাখ ৬৭ হাজার। আর গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৫০ লাখ। এরমধ্যে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ কোটি ৩০ লাখ ১৩ হাজার এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি ও পিএসটিএন)-এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ লাখ ৮৭ হাজার গ্রাহক।