
দেশে বর্তমানে দুই কোটি মানুষ কিডনি রোগে ভুগছে। তার মধ্যে ৪০-৫০ লাখ শিশু। এমন তথ্য জানিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এসব শিশু কিডনি রোগীর চিকিৎসায় সরকারের পাশাপাশি বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিএসএমএমইউয়ের পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজি (শিশু কিডনি) বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে ৮৫ কোটি মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত। প্রতি বছর রোগটিতে মারা যায় ৪১ লাখ। তাদের মধ্যে ২৪ লাখ মানুষ ধীর গতিতে এবং ১৭ লাখ মানুষ আকস্মিক কিডনি বিকলে মারা যায়।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিএসএমএমইউর পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজি বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত বিশ্ব কিডনি দিবসের অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়। অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিল শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা। দিবসটি উপলক্ষে হাসপাতালের শিশু কিডনি রোগীদের নিয়ে পদ্মা সেতু ভ্রমণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বিএসএমএমইউয়ে শিশু কিডনি রোগীদের চিকিৎসার সুবিধার্থে হেমোডায়ালাইসিস সেবা সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা বরাদ্দ দেওয়ার আশ্বাস দেন।
বিএসএমএমিইউ পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজি বিভাগ থেকে জানানো হয়, ১৯৮২ সালে দেশে প্রথমবারের মতো এই প্রতিষ্ঠানে একটি ইউনিটে আটটি শয্যা নিয়ে শিশু কিডনি রোগীদের চিকিৎসা শুরু হয়। সে সময় প্রথম পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস শুরু হয়। প্রথম কিডনি বায়োপসি করেন অধ্যাপক ডা. মনিমুল হক। ২০০৪ সালে প্রথম পেডিয়াট্রিকস হেমোডায়ালাইসিস শুরু হয় এবং ২০০৬ সালে প্রথম শিশুদের কিডনি প্রতিস্থাপন করে।
অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, করোনার মধ্যেও বিএসএমএমইউয়ের শিশু কিডনি বিভাগের বহির্বিভাগে ৫ হাজার ৪৯৩ জন এবং অন্তঃবিভাগে ৬৮৫ জন শিশু কিডনি রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৭৩ জন কিডনি বিকল (ইএসআরডি) রোগী চিকিৎসা পান। এই বিভাগের ডায়ালাইসিস এক দিনের জন্যও বন্ধ থাকেনি। এ ছাড়া এই বিভাগের ১৩ জন শিশু কিডনি রোগীর কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়, যার মধ্যে দুজনের করোনাকালীন সময়েই প্রতিস্থাপন করা হয়।
এই বিভাগের চিকিৎসকরা বলেন, কিডনি রোগীদের চিকিৎসা করতে গিয়ে এই বিভাগ কিছুটা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো দরিদ্রতা। সমাজের বিত্তবান লোক এবং সরকার একই সঙ্গে এগিয়ে এলে এই কঠিন সমস্যার মোকাবিলা করা সম্ভব।
বিএসএমএমইউ ও জবির মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর : গতকাল বিএসএমএমইউ ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) মধ্যে এক সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। বিএসএমএমইউয়ের পক্ষে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ডা. স্বপন কুমার তপাদার ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে রেজিস্ট্রার ইঞ্জিনিয়ার মো. ওহিদুজ্জামান এ চুক্তিতে সই করেন। এ চুক্তি অনুযায়ী দুই প্রতিষ্ঠান শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা নিয়ে যৌথভাবে কাজ করবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা পাবেন।
এর আগে সকালে বিএসএমএমইউয়ের শিশু হৃদরোগ বিভাগের অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডারের মোড়ক উন্মোচন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।
মাছের অভয়ারণ্য তৈরির অনুমতি নিয়ে হবিগঞ্জের গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে বালু ও মাটি তুলে বিক্রির চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে জেলা মৎস্যজীবী লীগের এক নেতার বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যে হাওরটির বোরো ধান চাষের জমি নষ্ট করে বড় ড্রেজার ও পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে। এতে করে ধান উৎপাদন ব্যাহতসহ হাওরের পরিবেশ-প্রতিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কায় সাধারণ কৃষকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ ও হতাশা। তারা বলছেন, হবিগঞ্জ জেলা মৎস্যজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলামসহ কয়েকজন বালু ও মাটির এই কারবারের সঙ্গে জড়িত।
গত বৃহস্পতিবার গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে গিয়ে দেখা যায়, সমুদ্রফেনা মৌজার ‘খাইজ্জাউরি’ এলাকায় মুন্সীগঞ্জ থেকে মাটি ও বালু খননের ড্রেজার আনা হয়েছে। সেখান থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার পর্যন্ত প্লাস্টিকের মোটা পাইপলাইন বসানোর কাজ চলছে। সেখানে বছর দু-এক আগে সরকারি অর্থে নির্মিত সাবমারজিবল (বর্ষায় পানিতে ডুবে যায়) ঢালাই রাস্তা ভাঙা দেখতে পাওয়া যায়। এলাকাবাসী জানান, খননযন্ত্র ও অন্যান্য ভারী যন্ত্রপাতির চাপে এ অবস্থা। সড়কটি হাওরে উৎপাদিত ফসল হালকা যানের মাধ্যমে দ্রুত পরিবহনের জন্য নির্মাণ করা হয়।
হাওরে বোরো ধান চাষের কাজ করছিলেন এলাওর মিয়া, তৌরোদ মিয়াসহ কয়েকজন
কৃষক। তারা বলেন, বাহুবল উপজেলায় নির্মাণাধীন কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নিচু জমি ভরাটের জন্য তাজুল ইসলাম ও তার লোকজন বালু-মাটি সরবরাহের দায়িত্ব নিয়েছেন। এজন্য হাওরের বোরোজমিতে বড় ড্রেজার মেশিন ও কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে। মেশিন ও পাইপ স্থাপন করতে গিয়ে কয়েক একর জমির বোরো ধানের চারা মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
ভুক্তভোগী কৃষক দরছ মিয়া বলেন, ‘কাজে বাধা দেওয়া হলে তাজুল ইসলাম মামলা-মোকদ্দমার ভয় দেখান। ফলে নিরীহ কৃষকরা প্রতিবাদ করতে পারছেন না।’
হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে জানা যায়, গত জানুয়ারি মাসে বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান, মৎস্যজীবী লীগ নেতা তাজুল ইসলাম ও তার অনুসারীরা মাছের অভয়ারণ্য তৈরির জন্য হাওরে তাদের ১৪ দশমিক ৭৬ একর জমির মাটি কেটে চারদিক উঁচু করার অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন। বাহুবল উপজেলা প্রশাসনের সুপারিশ পেয়ে ১৫ জানুয়ারি জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে কয়েকটি শর্ত দিয়ে আবেদনটি মঞ্জুর করা হয়। শর্তগুলো হচ্ছে কাজ শুরুর পর এক মাসের মধ্যে তা শেষ করতে হবে। পার্শ্ববর্তী কোনো মালিকের জমি, রাস্তাঘাট, সরকারি স্থাপনার ক্ষতি করা যাবে না, খনন করা বালু ও মাটি বিক্রি বা পরিবহন করা যাবে না এবং বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ ও পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ অনুসারে খননকাজ করতে হবে। অন্যথায় অনুমতি বাতিল হবে।
অমৃতা গ্রামের মতিউর রহমান বলেন, ‘মাছের অভয়ারণ্য তৈরির নামে এসব মেশিন ও পাইপলাইন টানার পেছনে রয়েছে দীর্ঘ মেয়াদে বালু উত্তোলন ও মোটা অঙ্কের অর্থ উপার্জনের ধান্দা। বাহুবলে কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নিচু জমি ভরাটের ঠিকাদারির পর এই প্রভাবশালী মহলটি পার্শ্ববর্তী ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ছয় লেনের কাজ শুরু হলে সেখানে বালু ও মাটি বিক্রি করার ফন্দি করছে।’
কৃষক শফিক মিয়া বলেন, ‘গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে শুধু বোরো ফসল হয়ে থাকে। এই হাওরটি হবিগঞ্জ, নবীগঞ্জ, বাহুবল ও বানিয়াচং উপজেলায়
বিস্তৃত। হাজার হাজার কৃষক এই হাওরের জমির ওপর নির্ভরশীল। উৎপাদিত ফসল শুধু হবিগঞ্জ জেলারই খাদ্য চাহিদা পূরণ করে না, পার্শ্ববর্তী জেলারও খাদ্যঘাটতি পূরণে সহায়তা করে। এ ছাড়া মৎস্যজীবীরা হাওরে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা নানা প্রজাতির দেশি মাছ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। বালু ও মাটি পরিবহন করা হলে স্নানঘাট, বাগদাইর, অমৃতা, মুদাহরপুর, উজিরপুর, শিমেরগাঁও ও ফতেহপুরসহ বিভিন্ন গ্রামের
রাস্তাঘাট ও ব্রিজ কালভার্ট ভেঙে যাবে।’
অভয়ারণ্য তৈরির নামে বালু ও মাটির কারবারের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা মৎস্যজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদক (সদ্য বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার) তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘হাওরে মা-মাছ চাষ ও অভয়াশ্রম করতে জলাশয় খনন করার জন্য জেলা প্রশাসন আমাদের এক মাসের অনুমতি দিয়েছে। ওই সময় পর্যন্ত আমরা কাজ করব। প্রশাসন তদন্ত করে শর্তভঙ্গের যদি কোনো আলামত পায় তাহলে যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা মেনে নেব।’
এদিকে স্থানীয় কৃষক ও এলাকাবাসীর পক্ষে গত পহেলা মার্চ জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ করেন অমৃতা গ্রামের মাওলানা গোলাম সারওয়ার। এর আগে বাহুবল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একই বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেন একই গ্রামের মো. মতিউর রহমান। কিন্তু ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন স্থাপনের কাজ বন্ধ হয়নি।
মাওলানা গোলাম সারওয়ার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে এক ইঞ্চি জমি যেখানে অনাবাদি না রাখার জন্য বলছেন, সেখানে ওই চক্রটি হাওরের কৃষিজমি ও পরিবেশের বারোটা বাজানোর পাঁয়তারা করছে। আশা করছি জেলা প্রশাসক আমাদের সমস্যা বুঝে অনুমতির আদেশ বাতিল করবে।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, ‘কৃষিজমি ধ্বংস করে পুকুর ও জলাশয় তৈরির নামে যে প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে তা বেআইনি। কোটি কোটি ঘনফুট পানিমিশ্রিত বালু জমির নিচ থেকে তোলা হলে শুষ্ক মৌসুমে হাওরে পানি সংকট দেখা দেবে। জমি দেবে যাওয়া ছাড়াও বড় বড় ফাটল দেখা দেবে। জীববৈচিত্র্যে নেমে আসবে নানা বিপর্যয়।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাহুবল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহুয়া শারমিন ফাতেমা বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। তার প্রতিবেদন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে পাঠানো হবে।’
সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুহুল আমিন বলেন, ‘২ মার্চ সরেজমিনে হাওর পরিদর্শন করেছি। জেলা প্রশাসকের দেওয়া শর্ত তাজুল ইসলাম ভঙ্গ করেছেন। খননকাজ বন্ধ করার জন্য মৌখিকভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কাছেও প্রতিবেদন পাঠানো হবে।’
লোকসাহিত্য আমাদের জাতীয় সংস্কৃতির অঙ্গ, যা আমাদের মনের কথা বলে। বাংলাদেশের লোকজীবন বড় বিচিত্র। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ছড়া, লোককাহিনি ও লোকশিল্প থেকে আমাদের সমাজজীবন এবং ঐতিহ্য সম্পর্কে জানা যায়। এগুলো মানুষের যথাযথ পরিচয়ের জন্য ভাবনা ও চিন্তার খোরাক। এতে ফুটে ওঠে লোকায়ত বাংলার প্রতিচ্ছবি।
বাংলা লোকশিল্পের মধ্যে লোকসাহিত্যেরই বীজ নিহিত। এ শিল্পের শিকড় হাজার বছর আগে প্রোথিত হয়েছিল এ দেশেরই মাটিতে। নানা দেশের লোকঐতিহ্য ও লোকসংস্কৃতিতে এ রকমটি ধৃত আছে। কালপ্রবাহে এ রকম ধারা সজীব আছে আমাদের লোকসাহিত্যে এবং লোকজ শিল্পকলায়।
লোকসাহিত্য সামাজিক সৃষ্টি এবং এ কারণেই লোকসাহিত্য সমাজের কথা বলে। জনগণ এসবের স্রষ্টা, জনগণই এসবের ধারক ও লালনকর্তা। আবার জনগণই এর বাহক, তারা লোকসাহিত্যকে এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে বহন করে নিয়ে যায়।
এই নিরিখে আমরা আমাদের লোকায়ত বাংলা সিরিজে উপস্থাপন করছি, লোকসাহিত্যে বাংলাদেশের লোকায়ত শিল্পকলা বাংলাদেশের নকশিপাখা।
সত্যি কথা বলতে কি, বাংলাদেশের লোকায়ত পাখা সম্পর্কে বলতে গেলে বাংলাদেশের নকশিপাখালোককবির ভাষায় বলতে হয় :
‘শীতে তুমি লুকিয়ে থাক গরমে দাও দেখা,
আদর করে নাম রেখেছি তাই তো তোমার পাখা’
কোনো এক অখ্যাত-অজ্ঞাত গ্রাম্য কবির এই সরল বাণী আজও বুকে ধারণ করে আছে বাংলাদেশের নকশিপাখা।
আসলেও তা-ই। শীতে পাখা লুকিয়ে থাকে একান্ত অবহেলায়। শীতে প্রয়োজন কাঁথার। শীতে যেমন কাঁথা, গরমে তেমনি পাখা। শীতের পরে যেমন গরম আসে, তেমনি কাঁথার পরে পাখা।
বাংলাদেশের কাঁথাশিল্প প্রকরণ-উপকরণ বৈশিষ্ট্যে দুই ধরনের সুতার পাখা আর বেতের পাখা। চাকের (বা চাকতির) প্রেক্ষাপটে সুচের সাহায্যে পুরনো বস্ত্র-জাত সুতার বুনন কৌশলে সুতার পাখার শিল্পরূপ বিন্যস্ত। তবে নতুন কাপড় চাকে মুড়ে তার ওপর রুমালের মতো নতুন সুতার নকশা তুলেও অনেক সময় পাখা তৈরি হয়।
বুনন-বৈশিষ্ট্যে সুতার পাখার সঙ্গে সম্পর্কিত হলেও বাঁশ-বেত অথবা তালপাতার পাখার শিল্পায়ন-বৈশিষ্ট্য স্বতন্ত্র। বাঁশের ফালি থেকে অভ্যস্ত হাতের কৌশলে তৈরি হয় সূক্ষ্ম বেতি বা বেত। সেই বেতি মসৃণ করে চেঁছে অথবা তালপাতা ফালি ফালি করে চিঁড়ে বুননের কৌশলে তৈরি হয় পাখা।
তালপাতার বোনা পাখায় রঙের ব্যবহার সীমিত। বিশিষ্ট বুনন-কৌশলের মধ্যেই এর শিল্পরূপ বিন্যস্ত। বাঁশ-বেতের পাখায় বেতিগুলো বিচিত্র রঙে রাঙিয়ে বুননের কৌশলে এবং বর্ণসম্পাতের বৈচিত্র্যে তৈরি হয় নকশা। সুপারির খোলেও পাখা তৈরি হয়। তবে ময়ূর-পুচ্ছে তৈরি পাখায় স্বতন্ত্র নকশার প্রয়োজন হয় না।
পাখার চিত্র বা নকশা আল্পনাচিত্র-প্রভাবিত। পাখার সীমিত পরিসরে চিত্র বা নকশার বৈচিত্র্যের অবকাশ কম। এ কারণে পাখায় সাধারণত লতামণ্ডল সম্ভব হয় না। সচরাচর পাখার নকশায় থাকে তারা ফুল, ছিটা ফুল, পাখি (একই ধরনের দুটি পাখি মুখোমুখি অবস্থান করলে বলে ‘ভালোবাসা’) গাছ, (প্রধানত কদমগাছ), পাতা (অধিকাংশ পানপাতা), মাছ, হাতি, মানুষ, গম্বুজ প্রভৃতি।
লেখা পাখায় সাধারণত চিত্র থাকে না। বেতের পাখায় পালংপোষ, পাশার দান, ঘোষগুটির ঘর, বাঘবন্দি প্রভৃতি নকশা থাকে। চিত্ররূপ অনুযায়ী পাখার বিভিন্ন নামকরণ করা হয়। যেমন : ভালোবাসা, কাঁকইর জ্বালা, গুয়াপাতা, পালংপোষ, সুজনিফুল, বলদের চোখ, শঙ্খলতা, কাঞ্চনমালা, ছিটাফুল, তারাফুল, মনবিলাসী, মনবাহার, মনসুন্দরী, বাঘবন্দি, ষোলোকড়ির ঘর, সাগরদীঘি, হাতি-ফুল-মানুষ, লেখা প্রভৃতি।
বাংলা একাডেমির লোকশিল্প সংগ্রহে বিভিন্ন নামের নকশিপাখা আছে। পাখাগুলো কিশোরগঞ্জ ও সিলেট অঞ্চল থেকে সংগৃহীত। পাখার পরিচিতিপত্রে তার উল্লেখ আছে। প্রকারভেদ অনুযায়ী তার উল্লেখ করা যায় নিম্নলিখিত নামে :
সুতার পাখা : শঙ্খলতা, সুজনিফুল, বলদের চোখ, সাগরদীঘি।
বাঁশের পাখা : গুয়াপাতা, তারাফুল, ছিটাফুল, কাঁকইর জ্বালা, ভালোবাসা, গম্বুজ-তোলা, হাতি-ফুল-মানুষ, লেখা।
বেতের পাখা : পালংপোষ, পাশার দান।
কিশোরগঞ্জ অঞ্চল থেকে সংগৃহীত একটি মেয়েলি গীতে পাখার বর্ণনা পাওয়া যায় এভাবে :
‘সেইনা পাংখাত লেইখা গো থইছে
আঁসা আঁসির জোড়া গো।
সেইনা পাংখাত লেইখা গো থইছে
মউরা মউরীর জোড়া গো।’
বাংলাদেশের নকশিপাখায় বিধৃত হয়েছে বাংলাদেশের কৃষ্টি, সভ্যতা, সামাজিক ইতিহাস, জীবনাচরণ ও ঐতিহ্য, যা লোকায়ত বাংলার চিরায়ত সম্পদ ও সম্পত্তি। এতে পরিস্ফুট হয়ে উঠেছে লোকায়ত বাংলার মুখ। বাংলাদেশের চিরচেনা সচল ও সজীব প্রতিকৃতি।
লেখক : শিক্ষাবিদ ও প্রাবন্ধিক
২০২১ সালে চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদান রাখায় ২৭ ক্যাটাগরিতে ৩৪ জন শিল্পী-কলাকুশলীর হাতে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনার কারণে গত দুবছর এই আয়োজনে সশরীরে উপস্থিত থাকতে না পারলেও এবার প্রধানমন্ত্রী নিজ হাতে বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেন। শুধু তা-ই নয়, পুরস্কার বিতরণ শেষে দেশের শীর্ষস্থানীয় চলচ্চিত্র তারকাদের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পুরোটা উপভোগ করেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের পাশাপাশি চলচ্চিত্রশিল্পের উন্নয়নের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। শুধু তা-ই নয়, চলচ্চিত্রকে আরও উন্নত করতে কিছু বিষয়ে তিনি নতুনভাবে সিদ্ধান্তের কথা জানান।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে পাঠের পর বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন। তাদের আলোচনায় উঠে আসে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় চরিত্র গঠনে চলচ্চিত্রের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ভূমিকা, বর্তমান চলচ্চিত্রের অবস্থা, চলচ্চিত্র উন্নয়নে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কৃতিত্বের কথা। এরপরই পুরস্কার দেওয়া শুরু হয়। প্রথমেই প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন ডলি জহুর। এবার যৌথভাবে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন তিনি ও অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন। তবে ইলিয়াস কাঞ্চন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না।
এরপর পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় কলাকুশলীদের হাতে। সেরা কাহিনিকার রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত (নোনাজলের কাব্য), সেরা চিত্রনাট্যকার নূরুল আলম আতিক (লাল মোরগের ঝুঁটি), সেরা সংলাপ রচয়িতা তৌকীর আহমেদ (স্ফুলিঙ্গ)। সেরা সম্পাদক সামির আহমেদ (লাল মোরগের ঝুঁটি), সেরা শিল্পনির্দেশক শিহাব নূরুননবী (নোনাজলের কাব্য), সেরা চিত্রগ্রাহক দলগত সৈয়দ কাশেফ শাহবাজি, সুমন কুমার সরকার, মাজহারুল ইসলাম রাজু (লাল মোরগের ঝুঁটি), সেরা শব্দগ্রাহক শৈব তালুকদার (রেহানা মরিয়ম নূর), সেরা পোশাক ও সাজসজ্জা ইদিলা কাছরিন ফরিদ (নোনাজলের কাব্য) এবং সেরা রূপসজ্জাকর দলগত মো. ফারুখ, মো. ফরহাদ রেজা মিলন (লাল মোরগের ঝুঁটি)। এ ছাড়া শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ধড়’ (আকা রেজা গালিব), সেরা প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘বধ্যভূমিতে একদিন’ (কাওসার চৌধুরী) পুরস্কার গ্রহণ করেন।
এরপর শুরু হয় শিল্পীদের হাতে পুরস্কার প্রদানের পালা। শিশুশিল্পী শাখায় বিশেষ পুরস্কার জান্নাতুল মাওয়া ঝিলিক (যা হারিয়ে যায়), রেহানা মরিয়ম নূর সিনেমায় অভিনয়ের জন্য সেরা শিশুশিল্পী আফিয়া জাইন জায়মা, সেরা সংগীত পরিচালক সুজেয় শ্যাম (যৈবতী কন্যার মন), সেরা গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ারের পক্ষে তার স্ত্রী (অন্তরে অন্তর জ্বালা, যৈবতী কন্যার মন), সেরা সুরকার সুজেয় শ্যাম (অন্তরে অন্তর জ্বালা, যৈবতী কন্যার মন), সেরা গায়ক হিসেবে ‘পদ্মাপুরাণ’ সিনেমার ‘শোনাতে এসেছি আজ’ গানের জন্য মুহিন খান ও একই সিনেমায় ‘দেখলে ছবি পাগল হবি’ গানটির জন্য সেরা গায়িকার পুরস্কার গ্রহণ করেন চন্দনা মজুমদার।
এবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার সেরা চলচ্চিত্র নির্বাচিত হয়েছে ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’ ও ‘নোনা জলের কাব্য’। এই শাখায় পুরস্কার গ্রহণ করেন সিনেমা দুটির প্রযোজক মাতিয়া বানু শুকু ও রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত। সেরা সিনেমা পরিচালক হিসেবে ‘নোনাজলের কাব্য’ সিনেমার জন্য পুরস্কার গ্রহণ করেন তরুণ নির্মাতা রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে অন্যতম আগ্রহের ক্যাটাগরি সেরা অভিনয়শিল্পী। ‘নোনাজলের কাব্য’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য পার্শ্বচরিত্রে সেরা অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান ফজলুর রহমান বাবু। এটা তার চতুর্থ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ক্যারিয়ারে প্রথমবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার গ্রহণ করেন শম্পা রেজা। তিনি পার্শ্বচরিত্রে ‘পদ্মাপুরাণ’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পান। অভিনেতা জয়রাজও ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি খলচরিত্রে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। তিনি ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য এই পুরস্কার গ্রহণ করেন। অভিনেতা মিলন ভট্টাচার্য সেরা কৌতুক অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার গ্রহণ করেন। তিনি এই সম্মাননা পাচ্ছেন ‘মৃধা বনাম মৃধা’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য।
এবার যুগ্মভাবে সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন মীর সাব্বির (রাতজাগা ফুল) ও সিয়াম আহমেদ (মৃধা বনাম মৃধা)। ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ সিনেমার জন্য আগে থেকেই আলোচনায় ছিলেন আজমেরী হক বাঁধন। ২০২১ সালে সিনেমায় অভিনয় করার জন্য যুগ্মভাবে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে গ্রহণ করেন আজমেরী হক বাঁধন ও তাসনোভা তামান্না ‘নোনাজলের কাব্য’।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্যে জ্বালানি খাতে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়কে বরাদ্দ দিয়েছিল ৪৮ লাখ টাকা। অর্থবছর শেষ হতে আরও ৪ মাস অবশিষ্ট থাকলেও চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতেই বরাদ্দকৃত অর্থের অতিরিক্ত আরও ৪ লাখ ৬৯ হাজার টাকা ব্যয় করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮টি শিক্ষার্থী বাস ও ৪টি শিক্ষক কর্মকর্তাদের পরিবহনে ব্যবহৃত সিভিলিয়ানের পরিচালনা করতে এই ব্যয় করা হয়েছে।
এই অতিরিক্ত ব্যয় করাটিকে নিয়মের ব্যত্যয় হয়েছে বলে মনে করছে ইউজিসি। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে আগামীতে সমন্বয় করে ব্যবস্থা নেওয়ার ভাবনায় কাজ করা হচ্ছে। তবে এখন থেকে সমন্বয়ের সুযোগ থাকছে না বলেও মন্তব্য ইউজিসির।
২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে জ্বালানি তেলের ব্যবহারের যে চিত্র পাওয়া গেছে তাতে দেখা যায় পুরো বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকা ২০২০-২১ অর্থবছরে জ্বালানি বাবদ ২৫ লাখ ৮৫ হাজার ৫৬৮ টাকা ব্যয় করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসন। এই সময় সরকার থেকে লকডাউনের ঘোষণা থাকলেও প্রতি সপ্তাহে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা এবং ঢাকা থেকে ত্রিশাল যাতায়াত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক। এছাড়া ত্রিশালের অভন্তরীণ ৪ কিলোমিটারের সড়কে ময়মনসিংহ চ- ৫১০০২১ নম্বরের মাইক্রো ও এর অবর্তমানে অন্য একটি মাইক্রো ব্যবহার করে গ্যাস বাবদ বন্ধ ক্যাম্পাসে ব্যয় করা হয়েছে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৮২৬ টাকা।
এই সময়ের ব্যয়গুলোকে সরকারের সিদ্ধান্ত না মানার শামিল বলে মন্তব্য করেছেন ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, সরকার যখন সারা দেশ লকডাউন ঘোষণা করেছে সেই সময়ে এমন ব্যয় হলে তা কেবল অনিয়মই নয় সরকারের সিদ্ধান্তেরও লঙ্ঘন। যা বিশ্ববিদ্যালয় করতে পারে না। রাষ্ট্রের নিয়মের বাইরে গিয়ে কোনো কাজ করবার সুযোগ নেই।
তবে সে সময়ের গাড়ি পরিচালনা প্রশাসনের সিদ্ধান্তেই হয়েছে বলে দেশ রূপান্তরকে জানান বিশ্ববিদ্যালয়টির পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. আরিফুর রহমান। তিনি আরও বলেন, ঢাকায় গাড়ি চলাচলের বিষয়ে আমি একমত না থাকলেও প্রশাসনের সিদ্ধান্তে আমার তা করতে হয়েছে।
বন্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ে তেলের এত ব্যয় শুনে বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, আমি এমন ঘটনা আগে শুনিনি। আর আমি আগের বিষয়ে অবগত নই। তবে বন্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি এরকম ব্যয় হয়ে থাকে সেটি উচিত হয়নি। এমন অভিযোগ পেলে তদন্ত করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন অধ্যাপক ড. এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখানে একটা তেলের ব্যবসা হয়েছে। বন্ধ ক্যাম্পাসে খালি পকেটকে ভরতেই কেউ কেউ এই স্মার্ট পথ খুঁজে নিয়েছে। এছাড়া একটি পাম্প থেকেই তেলের সরবরাহ নেওয়ায় এক ধরনের মুনাফা নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একশ্রেণির সিন্ডিকেট। তারা তেল নিয়ে মুনাফা করছে। ক্ষতি হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের।
পরিবহন দপ্তরের যোগসাজশেই তেলের বাণিজ্য চলে বলেও জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট একাধিকজন। পরিমাণ নির্ধারণ করার কোনো ব্যবস্থাও নিতে পারেনি দপ্তরটি। তেলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ না করতে পারার আক্ষেপও রয়েছে পরিবহন প্রশাসকের। বারবার চেষ্টাও করেছেন বলেও জানান তিনি। অন্যদিকে একাধিক তেলের পাম্প থেকে তেল ক্রয়ের প্রস্তাব দিলেও সেটি বাস্তবায়ন করতে পারেননি তিনি।
অভ্যন্তরীণ কারণ দেখিয়ে তেল ক্রয়ের পাম্প নিয়ে আর কথা বলতে চাননি পরিবহন প্রশাসক আরিফুর রহমান।
২০২২-২৩ অর্থবছরে বরাদ্দের থেকে ব্যয় বেশি হওয়ায় সমাধান কি প্রশ্নে অর্থ ও হিসাব শাখার পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ড. মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের বাস তো চালু রাখতেই হবে। তাই আগামী অর্থবছরের সমন্বয় করে হয়তো সমাধান করতে হবে। এছাড়া আমরা পরিকল্পনা করে যাচ্ছি।
তবে সমন্বয়ের কথা নাকচ করে দিয়ে ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান বলেন, সরকার নিজেই সমন্বয় থেকে বের হয়ে আসছে। আর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে সেখানে কীভাবে সমন্বয় করা হবে? তাই সমন্বয়ের কোনো সুযোগ নেই।
লকডাউনে বন্ধ অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমের সময়ে ২৫ লাখ টাকার তেল ও গ্যাস বাবদ ব্যয়কে দুর্নীতি হিসেবে উল্লেখ করে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষক কর্মকর্তা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রমের বাইরেও প্রতি সপ্তাহে শুক্র ও শনিবার উইকেন্ড প্রোগ্রামের কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ির ব্যবহার করা হয়। এই বিষয়ে ইউজিসি সচিব দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি ব্যবহার করে কোনো ধরনের ইভিনিং কোর্স ব্যবহারের সুযোগ নেই।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, যারা দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামির নেতৃত্বে রাজনীতি করে তাদের মুখে অন্যদের নিয়ে পলায়নপর রাজনীতির আষাঢ়ে গল্প তামাশা ছাড়া কিছু নয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এ বিবৃতি দেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দল বিএনপির তথাকথিত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান একুশে আগস্টের খুনি দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি তারেক রহমান প্রায় দেড় দশক বিদেশে পলাতক রয়েছে। যারা দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামির নেতৃত্বে রাজনীতি করে তাদের মুখে অন্যদের নিয়ে পলায়নপর রাজনীতির আষাঢ়ে গল্প তামাশা ছাড়া কিছু নয়।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এদেশের গণমানুষের সংগঠন। এদেশের মানুষের অধিকার আদায়ে চরম প্রতিকূল পরিবেশে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এবং দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অপরিসীম ত্যাগ-তিতিক্ষা অত্যাচার-নির্যাতন শিকার করে ও আত্মদানের মধ্য দিয়ে বহু ঝড়-ঝঞ্ঝা, বাধা-বিঘœ পেরিয়ে এগিয়ে চলা সংগঠনের নাম আওয়ামী লীগ।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শত-সহস্র বৈরী পরিবেশেও জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো সংগঠনের নাম আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ কখনো পলায়নপর রাজনীতি করেনি, করবেও না।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিসংবাদিত নেতৃত্বে জনগণের মধ্য থেকে উত্থিত রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়ে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করেছিল বলেই মির্জা ফখরুল ইসলামরা আজ অপরাজনীতির সুযোগ পেয়েছে। বাক-স্বাধীনতার নামে লাগাতারভাবে মিথ্যাচার করার অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করতে পারছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জাতির পিতার নেতৃত্বে যদি দেশ স্বাধীন না হতো, তাহলে তাদেরকে এখনো পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর গোলামি করতে হতো। স্বাধীন বাংলাদেশে বসবাস করেও তারা পরাজিত পাকিস্তানের প্রতি এক ধরনের সংবেদনশীলতা অনুভব করে; পাকিস্তানের প্রতি তাদের ভাবাদর্শগত মোহ এখনো কাটেনি। আমরা স্পষ্টতই বলতে চাই, যাদের এখনো পাকিস্তানের প্রতি দুর্বলতা রয়েছে বাংলাদেশে তাদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার থাকতে পারে না।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সফল রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার সবসময় জন-আকাক্সক্ষা ও জনমতকে ধারণ করেই রাষ্ট্র পরিচালনা করে আসছে। জনকল্যাণকে সামনে রেখেই প্রণীত হয় বর্তমান সরকারের সব কর্মসূচি, পরিকল্পনা ও কর্মপন্থা। যার ফলশ্রুতিতে বিএনপি-জামায়াতের রেখে যাওয়া ভঙ্গুর অর্থনীতি ও চরম অনিশ্চয়তার বাংলাদেশ বিশ্বসভায় উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে অভিহিত হয়েছে; গত ১৪ বছরে অভাবনীয় অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকারকে পদত্যাগ করাতে বা তত্ত্বাবধায়কের অসাংবিধানিক, অগণতান্ত্রিক ও অযৌক্তিক দাবির হুঙ্কার দিয়ে কোনো লাভ নেই। কোনো অনির্বাচিত ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সরকার গণতন্ত্রের অন্তর্নিহিত আদর্শের পরিপন্থী। দেশে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নির্বাচনের মাধ্যমেই সরকার পরিবর্তন হবে। গণপ্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশে জনগণের ভোটেই সরকার গঠন হবে।’ বাসস
ভাঙাগড়ার মধ্য দিয়েই চলছে ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান। নেতৃত্ব পরিবর্তন হয়েছে, তারপরও যেন ভাগ্যটা ফেরানো যাচ্ছিল না। পরাশক্তির তকমাটা খসে যায় গেল এক যুগে। লিগ শিরোপা তাদের কাছে শুধুই মরীচিকা। সাদা-কালোদের কাছে টুর্নামেন্টের শিরোপাও দূর আকাশের তারায় রূপ নিয়েছিল। সেখান থেকে মোহামেডানকে বলতে গেলে একাই শিরোপার স্বাদ দিয়েছেন ‘ঘরের ছেলে’ সুলেমান দিয়াবাতে। মালির এই স্ট্রাইকার টানা পাঁচ মৌসুম ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন মাঝারি মানের মোহামেডানকে। তার জাদুতে গতকাল ফেডারেশন কাপের মহা-ফাইনালে আবাহনীকে হারিয়েছে সাদা-কালোরা। এই অর্জন এসেছে অনেক অপেক্ষার পর। তাই তো এই শিরোপাকে মোহামেডানের ঘুরে দাঁড়ানোর অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখছেন দিয়াবাতেও। বিশ্বাস করেন, এই শিরোপা বদলে দেবে মোহামেডানের চিন্তাধারাকে।
টাইব্রেকারে শিরোপা জয়ের পর ড্রেসিং রুমে সতীর্থদের হুল্লোড়ের মধ্যে ম্যাচসেরা, টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার নিয়ে এক কোনায় বসে দেশে পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলেন দিয়াবাতে। সেই ফাঁকেই সাংবাদিকদের কাছে জানালেন প্রতিক্রিয়া, ‘পেনাল্টি শুটআউটের আগ পর্যন্ত ম্যাচটা ভীষণ কঠিন ছিল আমাদের জন্য। আল্লাহ আমাদের সহায়তা করেছেন এই ট্রফিটি জিততে। তাই আমি অনেক খুশি। আমার ক্যারিয়ারে কোনো ফাইনালে প্রথমবারের মতো চার গোল করলাম। তাই সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই।’ দিয়াবাতে বলেন, ‘৯ বছর পর আমি একা নই, সব খেলোয়াড় মিলে মোহামেডানকে একটা শিরোপা এনে দিয়েছি। বিশ্বাস ছিল ম্যাচে ফিরতে পারলে আমরাই শিরোপা জিতব, সেটাই হয়েছে। আমি এই অর্জন মালিতে থাকা আমার পরিবার, বিশেষ করে আমার মাকে উৎসর্গ করছি।’ শিরোপাটা মোহামেডানের অন্তর্বর্তীকালীন কোচ আলফাজ আহমেদের জন্যও বিশেষ অর্জন। ফুটবল ক্যারিয়ারে অসংখ্য আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ খেলেছেন এবং জিতেছেন। তবে এই জয়টাকে আলাদা করে রাখছেন তিনি, ‘আজকের খেলাটা অনেক বড় অর্জন। ব্যাকফুটে থেকে ফিরে আসা, ম্যাচ দেখে বোঝা যাচ্ছিল না কে জিতবে। দিয়াবাতে আসাধারণ ফুটবল খেলেছে। মুজাফ্ফারভের হাত ভেঙে দিয়েছিল, ওই অবস্থায়ও সে খেলা চালিয়ে গেছে। খেলোয়াড়দের কমিটম্যান্ট ছিল অসাধারণ। খেলোয়াড় হিসেবে আমি শিরোপা জিতেছি, এবার কোচ হিসেবে শীর্ষ পর্যায়ে প্রথম শিরোপা জিতলাম। তাই শিরোপাটাকেই আমি এগিয়ে রাখব।’ প্রথমার্ধে ২ গোলে পিছিয়ে পড়ার পরও হাল ছাড়েননি আলফাজ। শিষ্যদের শিখিয়েছেন মাথা ঠান্ডা রেখে পাল্টা জবাব দেওয়ার মন্ত্র, ‘প্রথমার্ধের খেলা শেষে শিষ্যদের বলেছি, তোমরা মাথা ঠা-া রেখে খেলো। তারা সেটাই করেছে।’
চোটে পড়ে মাঠ ছাড়া গোলকিপার সুজন সতীর্থ বিপুকে টাইব্রেকারে দারুণ পারফরম্যান্সের জন্য প্রশংসায় ভাসিয়েছেন, ‘মাঠ ছাড়ার এক মিনিটের মধ্যে আবাহনী যখন গোল পরিশোধ করল, তখন ভীষণ খারাপ লাগছিল। মনে হচ্ছিল আমরা আর পারব না। তবে আমার ধারণা ভুল প্রমাণ করেছে বিপু। আমি তাই অনেক বেশি খুশি।’
বিজ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তির বিকাশের প্রয়োজনীয়তার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুসলিম উম্মাহকে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে তাদের সন্তানদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার ক্ষেত্রে আরও বেশি বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি) ক্যাম্পাসে ৩৫তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি বলেন, ‘আমাদের সন্তানদের পড়াশোনার জন্য আরও বেশি পরিমাণে বিনিয়োগ করতে হবে।’
মুসলমানদের যথেষ্ট পরিমাণ সম্পদ রয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে বিজ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তির উন্নয়নে যথাযথভাবে এই সম্পদ ব্যবহার করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, আমরা এটা করতে পারব।’ তিনি আরও বলেন, ‘যখনই আমি ওআইসি সদস্য দেশে যাই, তাদের আমি এই অনুরোধই করি।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘ইসলামের স্বর্ণযুগে বিশ^সভ্যতা, বিজ্ঞান, ইতিহাস, সাহিত্য, দর্শন, রসায়ন, গণিত, চিকিৎসা, জ্যোতির্বিদ্যা, ভূগোলসহ জ্ঞানের আরও অনেক শাখায় মুসলিম স্কলারদের ব্যাপক অবদান রয়েছে, যা আমাদের মুসলিমদের ঐতিহ্যের গৌরবময় ইতিহাস গড়েছে। সেই যুগের মুসলিম স্কলাররা সংস্কৃতি, জ্ঞান অর্জন, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার এবং সমসাময়িক সাহিত্যে বিশে^ আধিপত্য বিস্তার করেছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘সেই অবস্থান থেকে বর্তমানে মুসলিম উম্মাহর এই পিছিয়ে থাকার কারণগুলো আমাদের বিশ্লেষণ করা দরকার।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্প্রীতির অভাব, জ্ঞান-বিজ্ঞানের অভাব এবং অন্য অনেক বিষয় মুসলিম উম্মাহর পতনের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি এই হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারের জন্য আমাদের মুসলিম উম্মাহকে মতভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি মুসলিম দেশগুলোকে, বিশেষ করে তাদের নিজস্ব শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও বিজ্ঞান এবং আধুনিক প্রযুক্তির বিকাশে আরও বেশি বিনিয়োগ করতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, আধুনিক যুগে মুসলিমরা মাত্র তিনটি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে এটাই এই আধুনিক যুগে গবেষণা, প্রযুক্তি ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে মুসলিম উম্মাহর অবদানের প্রকৃত উদাহরণ। তিনি অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, ‘মুসলিম জাতির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে জোরালো প্রচেষ্টা প্রয়োজন, যাতে করে তারা এ ক্ষেত্রে আরও অবদান রাখতে পারেন।’
চতুর্থ শিল্পবিপ্লব দ্বারা উপস্থাপিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মুসলিম সম্প্রদায়ের পিছিয়ে পড়া উচিত নয়; বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবটিকস, ইন্টারনেট অব থিংস, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ও অন্যান্য খাতে।
ওআইসির মহাসচিব ও ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) চ্যান্সেলর হিসেন ব্রাহিম তাহার সভাপতিত্বে এতে স্বাগত বক্তব্য দেন আইইউটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। এ ছাড়া এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনিও বক্তব্য দেন।
সমাবর্তনে ২০২১ এবং ২০২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের স্নাতক, মাস্টার্স, পিএইচডি এবং ডিপ্লোমা ডিগ্রি দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের অসামান্য ফলাফলের জন্য দুই ধরনের স্বর্ণপদক আইইউটি স্বর্ণপদক এবং ওআইসি স্বর্ণপদক দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে আইইউটির ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী তার অর্থায়নে আইইউটির নবনির্মিত মহিলা হলেরও উদ্বোধন করেন।।
ক্রেডিট কার্ড একটি লাইফস্টাইল পণ্য। বাংলাদেশের অধিকাংশ ব্যাংক এখন ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করছে। বাংলাদেশে ইস্যুকৃত মোট ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা ২২ লাখ কিন্তু একক (ইউনিক) গ্রাহক সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম। ক্রেডিট কার্ড পুরোপুরি জামানতবিহীন পার্সোনাল ঋণ হলেও ঋণ পরিশোধের হার খুব সন্তোষজনক। গ্রাহক পর্যায়ে একটি ক্রেডিট কার্ড দিতে গেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী বেশ কিছু অত্যাবশ্যক কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়। এটিকে ঋণ হিসেবে না দেখে লাইফস্টাইল পণ্য হিসেবে দেখে এর আবশ্যকীয় কাগজপত্র জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা কিছুটা শিথিল করা হলে ক্রেডিট কার্ড ব্যাপ্তি অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে। তখন নিম্ন আয়ের মানুষরাও ক্রেডিট কার্ড নিতে পারবেন, যা ক্যাশলেস সোসাইটি গঠনের মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করবে।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থা দ্রুতগতিতে ডিজিটাল আর্থিক লেনদেনে রূপান্তরিত হচ্ছে। ক্যাশলেস বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেনে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে যেমন পিওএস, এটিএম, সিআরএম, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, কিউআর কোড ইত্যাদি। বিগত বছরগুলোতে ডিজিটাল লেনদেনের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২১ সালের মার্চ মাসে ইন্টারনেট ব্যাংকিং এবং ই-কমার্সের মাধ্যমে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২৪ হাজার কোটি টাকা, ২০২২ সালে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৩১ হাজার কোটি টাকা এবং ২০২৩ সালের মার্চ মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা। তাই বলা যায়, প্রত্যাশার চেয়েও দ্রুতগতিতে অত্যন্ত শক্তিশালীভাবে প্রথাগত আর্থিক লেনদেনের পাশাপাশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থা।
তুলনামূলক কম ব্যবহারকারী
আমাদের দেশে তুলনামূলকভাবে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনেক কম। দেশে ইস্যুকৃত ডেবিট কার্ডের সংখ্যা ৩ কোটি ১০ লাখ যেখানে ইস্যুকৃত ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা প্রায় ২২ লাখ। ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যার মধ্যে যে বড় ব্যবধান, এর প্রধান এবং অন্যতম কারণ হলো ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে কাগজপত্র জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা। এছাড়া রয়েছে ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কে গ্রাহকদের প্রচলিত বিভিন্ন ভ্রান্ত ধারণা।
ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে হলে আগে কার্ড ব্যবহারের ইকোসিস্টেম প্রসারিত করতে হবে। কিউ-আরকোড এবং অ্যাপসভিত্তিক লেনদেন বৃদ্ধি পেলে পুরো দেশে ক্রেডিট কার্ড তথা সামগ্রিকভাবে কার্ডের ব্যবহার ছড়িয়ে পড়বে।
ব্যবহারকারী কারা
ব্যাংকগুলো চাকরিজীবী এবং ব্যবসায়ী উভয় শ্রেণির গ্রাহকদের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করছে, তবে এক্ষেত্রে চাকরিজীবীদের বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। ক্রেডিট কার্ডের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো ঋণের সহজলভ্যতা এবং সুবিধাজনক পরিশোধ ব্যবস্থা। এছাড়া রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রমোশনাল অফার যেমন ইএমআই, ক্যাশব্যাক ডিসকাউন্টসহ বাই ওয়ান গেট ওয়ান, ইন্স্যুরেন্স, রিওয়ার্ড পয়েন্ট, মিট অ্যান্ড গ্রিট, লাউঞ্জ সুবিধা ইত্যাদি।
ঋণ শোধের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হয়
ক্রেডিট কার্ড আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অপরিহার্য পণ্য হয়ে উঠেছে। এটি নিতে হলে ঋণ পরিশোধের যোগ্যতার প্রমাণের সঙ্গে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রমাণও দাখিল করতে হয়। দেশে এখন রিটার্ন জমা দেওয়ার হার বেড়েছে। সবাই প্রতি বছর তার আয়কর রিটার্ন জমা দেয়। কিন্তু অনেকে অসাবধানতাবশত আয়কর রিটার্ন জমা দেয় না। তাছাড়া অনেকের করযোগ্য আয় না থাকায় তারাও রিটার্ন জমা দেয় না। যা ক্রেডিট ইস্যু করার ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও প্রভাব বিস্তার করছে বলে মনে করি।
জীবন সহজ করছে ক্রেডিট কার্ড
ক্রেডিট কার্ড আমাদের জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। এটির ব্যবহারও অত্যন্ত সহজ। ক্রেডিট কার্ড বিলম্বিত বিল পরিশোধের ভিত্তিতে কাজ করে, যার অর্থ আপনি এখন আপনার প্রয়োজনে কার্ড ব্যবহার করে অর্থ ব্যয় করতে পারেন এবং পরে তা সুবিধামতো সময়ে পরিশোধ করতে পারেন। ব্যবহৃত অর্থ গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে ডেবিট হয় না। এভাবে গ্রাহক প্রতিবার তার প্রয়োজনে কার্ড ব্যবহার করতে পারেন, যা আমাদের জীবনযাত্রাকে অত্যন্ত সহজ ও সাবলীল করে তুলেছে। একজন গ্রাহক যদি নিয়মিত সঠিক সময়ে তার ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধ করেন তাহলে কখনোই সেই গ্রাহক ঋণগ্রস্ত হবেন না। ব্যাংকগুলোর শক্তিশালী মনিটরিং ও রিকভারি ব্যবস্থা থাকার কারণে এই সেক্টরের খেলাপি ঋণের হার তুলনামূলক অনেক কম।
নিরাপত্তায় প্রয়োজন সচেতনতা
ডিজিটাল পেমেন্টগুলো সাধারণত বিভিন্ন ব্যবহারিক কারণে অফলাইন পেমেন্টের চেয়ে বেশি নিরাপদ। যেমন নগদ অর্থ বহনের ঝুঁকি না থাকা, চুরি, জালিয়াতির আশঙ্কা কম থাকা। ডিজিটাল লেনদেনে গ্রাহকের যে ধরনের সচেতনতা প্রয়োজন
কার্ড নম্বর, কার্ডের পেছনের ৩ সংখ্যার কার্ড ভেরিফিকেশন ভ্যালু (CVV2), ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (OTP), মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ এবং নিরাপত্তা পিন কারও সঙ্গে বিনিময় না করা।
সন্দেহজনক কোনো ওয়েবসাইটে ই-কমার্স লেনদেন থেকে বিরত থাকা ও কার্ডের তথ্য সংরক্ষণ থেকে বিরত থাকা।
সন্দেহজনক কোনো ই-মেইল অথবা এসএমএসে থাকা লিঙ্কে প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকা।
সাইবার সংক্রান্ত ঝুঁকি বিবেচনায় ডিজিটাল ডিভাইসের সব সফটওয়্যার হালনাগাদ রাখা এবং নিরাপত্তা সফটওয়্যার ব্যবহার করা।
যেকোনো সন্দেহজনক লেনদেন অতিসত্বর ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট ব্রাঞ্চ অথবা ব্যাংকের কল সেন্টারে অবহিত করা।
কার্ড হারানোর পরপরই ব্যাংকের কল সেন্টারে অবহিত করা।
সাধারণত, অধিকাংশ ব্যাংকই নির্দিষ্ট লেনদেনের পরিমাণের ভিত্তিতে ক্রেডিট কার্ডের বার্ষিক ফি সম্পূর্ণ বা আংশিক মওকুফ করে দিয়ে থাকে, যার ফলে এটি গ্রাহকের ওপর বাড়তি কোনো চাপ সৃষ্টি করে না। ক্রেডিট কার্ড একটি লাইফস্টাইল পণ্য, বিশ্বের অন্যান্য দেশের ক্রেডিট কার্ডের সুদের হারের তুলনায় বাংলাদেশে তা অপেক্ষাকৃত অনেক কম। তবে ব্যাংকগুলো সেটেলমেন্টের দিন থেকে সর্বোচ্চ ৪৫ দিন পর্যন্ত বিনাসুদে বিল পরিশোধের সুযোগ দিয়ে থাকে। তাই যদি কোনো গ্রাহক বুঝে সচেতনভাবে নিয়মিত বিল পরিশোধ করে তবে এটা কিন্তু গ্রাহকদের জন্য একটি চমৎকার সুযোগ।
গ্রাহকদের বিভিন্ন চাহিদার কথা মাথায় রেখে ব্যাংকগুলো বিভিন্ন উৎসবে নানা ধরনের অফার দিয়ে থাকে যার ফলে গ্রাহক বেশি বেশি লেনদেন করতে উদ্বুদ্ধ হয় যা ব্যবসায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
এ যেন ২০২২ বিশ্বকাপের ফাইনাল! সুলেমান দিয়াবাতে যেন কিলিয়েন এমবাপ্পে। না, ১৮ ডিসেম্বর লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে ফরাসি যুবরাজ এমবাপ্পের মতো ট্র্যাজিক হিরো হতে হয়নি দিয়াবাতেকে। হয়েছেন বিজয়ী দলের গর্বিত সেনাপতি। দুই ঐতিহ্যবাহী দল মোহামেডান ও আবাহনীর মধ্যে ফেডারেশন কাপের ফাইনালটা হয়ে উঠেছিল এক বাঁক বদলের লড়াই। যতবার আবাহনী এগিয়ে গেছে ততবারই দিয়াবাতে জ্বালিয়েছেন মোহামেডানের আশার প্রদীপ। নির্ধারিত ৯০ মিনিট ৩-৩। অতিরিক্ত সময়ে ৪-৪। আবাহনীর চার গোল চার জনের; কিন্তু মোহামেডানের চারটাই দিয়াবাতের। এরপর টাইব্রেকারের ভাগ্য পরীক্ষার শুরুটাও মালির ফরোয়ার্ডের লক্ষ্যভেদে। শেষ পর্যন্ত ভাগ্য পরীক্ষাটা ৪-২ গোলে জিতে ৯ বছর পর কোনো টুর্নামেন্টের শিরোপার স্বাদ পেল মোহামেডান।
ভাষা সৈনিক শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে ম্যাচের শুরুতে এগিয়ে ছিল আবাহনীই। তাদের সামনে প্রথমার্ধে বড্ড অগোছালো মনে হয়েছে আলফাজ শিষ্যদের। মারিও লেমস তুণের সব সেরা তীরদের জড়ো করে একাদশ সাজিয়েছিলেন। যার নেতৃত্ব দেন হাফ-ফিট রাফায়েল আগুস্তো। আক্রমণভাগে তার দুপাশে ছিলেন দানিয়েল কলিনদ্রেস ও তরুণ ফয়সাল আহমেদ ফাহিম। আর ঠিক ওপরে এমেকা ওগবাহ। আকাশির আক্রমণ ঠেকাতে তখন নাজেহাল সাদা-কালোরা। উপর্যুপরি আক্রমণ থেকে আবাহনীকে ১৬ মিনিটে এগিয়ে নেন ফাহিম। কলিনদ্রেসের কাছ থেকে বল পেয়ে এমেকা ওগবাহ ডিফেন্সচেড়া পাস বাড়ান। চলন্ত বলে ফাহিমের বাঁ পায়ের শট মোহামেডান কিপার সুজন হোসেনের গ্লাভস ছুঁয়ে জালে জড়ায়। মোহামেডান অসহায়ত্বের সুযোগ ৪৩ মিনিটে কাজে লাগান কোস্টারিকার বিশ্বকাপার কলিনদ্রেস। নিজেদের অর্ধ থেকে হৃদয়ের বাড়ানো বল আয়ত্তে নিয়ে মার্কার হাসান মুরাদকে কোনো সুযোগ না দিয়ে ডান পায়ের জোরালো শটে বল দূরের পোস্ট দিয়ে জালে জড়ান এই তারকা।
বিরতি থেকে মাঠে ফিরে অন্যরকম এক মোহামেডান। আলফাজ তিনটি পরিবর্তন করে মাঠে পাঠান জাফর ইকবাল, শাহরিয়ার ইমন ও আলমগীর রানাকে। তাতেই গতি পায় সাদা-কালোর আক্রমণ। ৫৬ মিনিটে ২-১ করেন দিয়াবাতে। কামরুলের ক্রস হেড করে ক্লিয়ার করতে গিয়ে ডিফেন্ডার আলমগীর মোল্লা বল দিয়ে দেন দিয়াবাতের কাছে; দুর্দান্ত সাইডভলিতে বল জালে জড়ায় দিয়াবাতে। চার মিনিট পর সমতাসূচক গোল করেন তিনি। উজবেক মিডফিল্ডার মোজাফফরভের জোরালো ভলি আবাহনী কিপার রুখলেও বাঁদিকে জাফর পেয়ে দ্রুত ক্রস ফেলেন গোলমুখে। মার্কারদের ছাপিয়ে দারুণ হেডে সোহেলকে পরাস্ত করে ম্যাচ জমিয়ে তোলেন দিয়াবাতে। ৬৫ মিনিটে এমেকা ওগবাহর হেড পোস্টে লেগে ফিরলে হতাশ হতে হয় আবাহনীকে। পরের মিনিটে ডান দিক থেকে ফাহিমের শট সুজন কোনোমতে সেভ করলেও আলতো ট্যাপে গোল করে আবাহনীর লিড পুনরুদ্ধার করেন এমেকা (৩-২)। তবে ৮৩ মিনিটে কামরুলের কর্নারে দিয়াবাতে হ্যাটট্রিক করে মোহামেডানকে আবার ম্যাচে ফেরান।
অতিরিক্ত সময়ের শুরুতে দুটি অসাধারণ সেভ করেন মোহামেডান কিপার সুজন। ৯৬ মিনিটে রহমতের কর্নার ঘুরে ফিরে রাফায়েলের কাছে এলে তাতে দারুণ শট নেন। তবে সুজন ঝাঁপিয়ে তা রুখে দেন। পরের মিনিটে কলিনদ্রেসের কর্নারে আসাদুজ্জামান বাবলুর হেড ফিস্ট করে বিপদমুক্ত করে মোহামেডানকে ম্যাচে রাখেন সুজন। ১০৬ মিনিটে মোহামেডানকে পেনাল্টি উপহার দেন সোহেল। শাহরিয়ার ইমনের ঠেলে দেওয়া বল ধরতে ছুটছিলেন দিয়াবাতে। তার এক টাচে বলটা চলে যাচ্ছিল গোললাইনের বাইরে। তবে সোহেলের পা ধরে টান দিলে পড়ে যান দিয়াবাতে। পেনাল্টি থেকে সোজাসুজি শটে প্রথমবারের মতো মোহামেডানকে লিড এনে দেন দিয়াবাতে। এই ম্যাচটা সেখানেই শেষ হয়ে যেতে পারত। তবে বিধাতা যে ফাইনালের চিত্রনাট্য লিখেছেন অন্যভাবে। ম্যাচের ১১৬ মিনিটে মোহামেডানের তেকাঠীর আস্থা সুজনকে ব্যথা পেয়ে মাঠ ছাড়তে হয়। মাঠে এসে অপ্রস্তুত আহসান হাবিব বিপুকে পরের মিনিটেই গোল হজম করতে হয়। রয়্যালের কাছ থেকে আড়াআড়ি পাস পেয়ে বক্সের অনেক বাইরে থেকে ডানপায়ের জোরালো শটে গোল করেন এই ডিফেন্ডার। তাতে ম্যাচ গড়ায় পেনাল্টিতে।
ভাগ্য পরীক্ষায় অবশ্য বিপু মোহামেডানের বিজয়ের নায়ক হয়ে ওঠেন বিপু। শুরুতেই ঠেকিয়ে দেন রাফায়েলের শট। অন্যদিকে দিয়াবাতে, আলমগীর কবির রানা, রজার দুরাতে টানা ৩ গোল করেন। আবাহনীর হয়ে এমেকা ও ইউসেফ গোল করলে স্কোরলাইন দাঁড়ায় ৩-২। এরপর মোহামেডানের শাহরিয়ার ইমনের শট সোহেল ঠেকিয়ে দিলে আবাহনীর ফেরার আশা জাগে। তবে বিপু কলিনদ্রেসের শট রুখে দিলে উত্তাল হয়ে ওঠে মোহামেডান গ্যালারি। আর কামরুল হাসান ঠিকঠাক লক্ষ্যভেদ করে অনেক চাওয়ার শিরোপা নিশ্চিত করেন মোহামেডানের।
অভিনেত্রী দর্শনা বণিক আবারও শাকিব খানের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করবেন। যদিও কলকাতার বেশ কিছু ছবিতে পর পর কাজ করেছেন দর্শনা। তবুও শাকিব খানের সঙ্গে দর্শনার নতুন কাজকে ঘিরে শুরু হয়েছিল নানা রকমের জল্পনা। ওপার বাংলার একের পর এক সিনেমায় সই করে চলেছেন দর্শনা। কিছু দিন আগে অভিনেতা আজাদ আদরের সঙ্গে একটি ছবিতে স্বাক্ষর করেছেন নায়িকা। এরপর আবার শাকিবের সঙ্গে জুটি বাঁধতে চলেছেন অভিনেত্রী।
সম্প্রতি ‘দিদি নম্বর ১’ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন অভিনেত্রী। সেই অনুষ্ঠানেই বাংলাদেশের কাজের পরিবেশ, শাকিবের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিলেন দর্শনা। ইদানীং কি টালিগঞ্জের থেকে ওপার বাংলায় বেশি গুরুত্ব পাচ্ছেন তিনি? দর্শনার স্পষ্ট জবাব, ‘এখানেও অনেক কাজ করছি। টালিগঞ্জের কাজের জন্যই তো বাইরে বিভিন্ন কাজের সুযোগ আসছে। দুই বাংলাই আমার কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ।’
বাংলাদেশে শাকিবের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে অনেক অভিনেতারই। সেখানে পদ্মা পাড়ের প্রথম ছবিতেই নায়ক হিসেবে পেয়েছেন তাকে। শাকিব প্রসঙ্গে দর্শনা বলেন, ‘খুবই ভালো অভিজ্ঞতা। শাকিব ওখানে এক বিশাল নাম। তবে সেটে তেমনটা কখনো মনে হয়নি।’ তবে নতুন কাজের প্রসঙ্গে কোনো কথা বলতে নারাজ অভিনেত্রী। এই মুহূর্তে কলকাতাতেই রয়েছেন। খুব শিগগিরই বাংলাদেশে আসছেন এমনটাই আভাস দিলেন এই নায়িকা।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।