
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, যারা দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামির নেতৃত্বে রাজনীতি করে তাদের মুখে অন্যদের নিয়ে পলায়নপর রাজনীতির আষাঢ়ে গল্প তামাশা ছাড়া কিছু নয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এ বিবৃতি দেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দল বিএনপির তথাকথিত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান একুশে আগস্টের খুনি দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি তারেক রহমান প্রায় দেড় দশক বিদেশে পলাতক রয়েছে। যারা দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামির নেতৃত্বে রাজনীতি করে তাদের মুখে অন্যদের নিয়ে পলায়নপর রাজনীতির আষাঢ়ে গল্প তামাশা ছাড়া কিছু নয়।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এদেশের গণমানুষের সংগঠন। এদেশের মানুষের অধিকার আদায়ে চরম প্রতিকূল পরিবেশে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এবং দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অপরিসীম ত্যাগ-তিতিক্ষা অত্যাচার-নির্যাতন শিকার করে ও আত্মদানের মধ্য দিয়ে বহু ঝড়-ঝঞ্ঝা, বাধা-বিঘœ পেরিয়ে এগিয়ে চলা সংগঠনের নাম আওয়ামী লীগ।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শত-সহস্র বৈরী পরিবেশেও জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো সংগঠনের নাম আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ কখনো পলায়নপর রাজনীতি করেনি, করবেও না।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিসংবাদিত নেতৃত্বে জনগণের মধ্য থেকে উত্থিত রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়ে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করেছিল বলেই মির্জা ফখরুল ইসলামরা আজ অপরাজনীতির সুযোগ পেয়েছে। বাক-স্বাধীনতার নামে লাগাতারভাবে মিথ্যাচার করার অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করতে পারছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জাতির পিতার নেতৃত্বে যদি দেশ স্বাধীন না হতো, তাহলে তাদেরকে এখনো পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর গোলামি করতে হতো। স্বাধীন বাংলাদেশে বসবাস করেও তারা পরাজিত পাকিস্তানের প্রতি এক ধরনের সংবেদনশীলতা অনুভব করে; পাকিস্তানের প্রতি তাদের ভাবাদর্শগত মোহ এখনো কাটেনি। আমরা স্পষ্টতই বলতে চাই, যাদের এখনো পাকিস্তানের প্রতি দুর্বলতা রয়েছে বাংলাদেশে তাদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার থাকতে পারে না।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সফল রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার সবসময় জন-আকাক্সক্ষা ও জনমতকে ধারণ করেই রাষ্ট্র পরিচালনা করে আসছে। জনকল্যাণকে সামনে রেখেই প্রণীত হয় বর্তমান সরকারের সব কর্মসূচি, পরিকল্পনা ও কর্মপন্থা। যার ফলশ্রুতিতে বিএনপি-জামায়াতের রেখে যাওয়া ভঙ্গুর অর্থনীতি ও চরম অনিশ্চয়তার বাংলাদেশ বিশ্বসভায় উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে অভিহিত হয়েছে; গত ১৪ বছরে অভাবনীয় অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকারকে পদত্যাগ করাতে বা তত্ত্বাবধায়কের অসাংবিধানিক, অগণতান্ত্রিক ও অযৌক্তিক দাবির হুঙ্কার দিয়ে কোনো লাভ নেই। কোনো অনির্বাচিত ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সরকার গণতন্ত্রের অন্তর্নিহিত আদর্শের পরিপন্থী। দেশে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নির্বাচনের মাধ্যমেই সরকার পরিবর্তন হবে। গণপ্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশে জনগণের ভোটেই সরকার গঠন হবে।’ বাসস
মাছের অভয়ারণ্য তৈরির অনুমতি নিয়ে হবিগঞ্জের গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে বালু ও মাটি তুলে বিক্রির চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে জেলা মৎস্যজীবী লীগের এক নেতার বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যে হাওরটির বোরো ধান চাষের জমি নষ্ট করে বড় ড্রেজার ও পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে। এতে করে ধান উৎপাদন ব্যাহতসহ হাওরের পরিবেশ-প্রতিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কায় সাধারণ কৃষকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ ও হতাশা। তারা বলছেন, হবিগঞ্জ জেলা মৎস্যজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলামসহ কয়েকজন বালু ও মাটির এই কারবারের সঙ্গে জড়িত।
গত বৃহস্পতিবার গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে গিয়ে দেখা যায়, সমুদ্রফেনা মৌজার ‘খাইজ্জাউরি’ এলাকায় মুন্সীগঞ্জ থেকে মাটি ও বালু খননের ড্রেজার আনা হয়েছে। সেখান থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার পর্যন্ত প্লাস্টিকের মোটা পাইপলাইন বসানোর কাজ চলছে। সেখানে বছর দু-এক আগে সরকারি অর্থে নির্মিত সাবমারজিবল (বর্ষায় পানিতে ডুবে যায়) ঢালাই রাস্তা ভাঙা দেখতে পাওয়া যায়। এলাকাবাসী জানান, খননযন্ত্র ও অন্যান্য ভারী যন্ত্রপাতির চাপে এ অবস্থা। সড়কটি হাওরে উৎপাদিত ফসল হালকা যানের মাধ্যমে দ্রুত পরিবহনের জন্য নির্মাণ করা হয়।
হাওরে বোরো ধান চাষের কাজ করছিলেন এলাওর মিয়া, তৌরোদ মিয়াসহ কয়েকজন
কৃষক। তারা বলেন, বাহুবল উপজেলায় নির্মাণাধীন কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নিচু জমি ভরাটের জন্য তাজুল ইসলাম ও তার লোকজন বালু-মাটি সরবরাহের দায়িত্ব নিয়েছেন। এজন্য হাওরের বোরোজমিতে বড় ড্রেজার মেশিন ও কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে। মেশিন ও পাইপ স্থাপন করতে গিয়ে কয়েক একর জমির বোরো ধানের চারা মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
ভুক্তভোগী কৃষক দরছ মিয়া বলেন, ‘কাজে বাধা দেওয়া হলে তাজুল ইসলাম মামলা-মোকদ্দমার ভয় দেখান। ফলে নিরীহ কৃষকরা প্রতিবাদ করতে পারছেন না।’
হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে জানা যায়, গত জানুয়ারি মাসে বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান, মৎস্যজীবী লীগ নেতা তাজুল ইসলাম ও তার অনুসারীরা মাছের অভয়ারণ্য তৈরির জন্য হাওরে তাদের ১৪ দশমিক ৭৬ একর জমির মাটি কেটে চারদিক উঁচু করার অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন। বাহুবল উপজেলা প্রশাসনের সুপারিশ পেয়ে ১৫ জানুয়ারি জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে কয়েকটি শর্ত দিয়ে আবেদনটি মঞ্জুর করা হয়। শর্তগুলো হচ্ছে কাজ শুরুর পর এক মাসের মধ্যে তা শেষ করতে হবে। পার্শ্ববর্তী কোনো মালিকের জমি, রাস্তাঘাট, সরকারি স্থাপনার ক্ষতি করা যাবে না, খনন করা বালু ও মাটি বিক্রি বা পরিবহন করা যাবে না এবং বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ ও পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ অনুসারে খননকাজ করতে হবে। অন্যথায় অনুমতি বাতিল হবে।
অমৃতা গ্রামের মতিউর রহমান বলেন, ‘মাছের অভয়ারণ্য তৈরির নামে এসব মেশিন ও পাইপলাইন টানার পেছনে রয়েছে দীর্ঘ মেয়াদে বালু উত্তোলন ও মোটা অঙ্কের অর্থ উপার্জনের ধান্দা। বাহুবলে কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নিচু জমি ভরাটের ঠিকাদারির পর এই প্রভাবশালী মহলটি পার্শ্ববর্তী ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ছয় লেনের কাজ শুরু হলে সেখানে বালু ও মাটি বিক্রি করার ফন্দি করছে।’
কৃষক শফিক মিয়া বলেন, ‘গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে শুধু বোরো ফসল হয়ে থাকে। এই হাওরটি হবিগঞ্জ, নবীগঞ্জ, বাহুবল ও বানিয়াচং উপজেলায়
বিস্তৃত। হাজার হাজার কৃষক এই হাওরের জমির ওপর নির্ভরশীল। উৎপাদিত ফসল শুধু হবিগঞ্জ জেলারই খাদ্য চাহিদা পূরণ করে না, পার্শ্ববর্তী জেলারও খাদ্যঘাটতি পূরণে সহায়তা করে। এ ছাড়া মৎস্যজীবীরা হাওরে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা নানা প্রজাতির দেশি মাছ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। বালু ও মাটি পরিবহন করা হলে স্নানঘাট, বাগদাইর, অমৃতা, মুদাহরপুর, উজিরপুর, শিমেরগাঁও ও ফতেহপুরসহ বিভিন্ন গ্রামের
রাস্তাঘাট ও ব্রিজ কালভার্ট ভেঙে যাবে।’
অভয়ারণ্য তৈরির নামে বালু ও মাটির কারবারের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা মৎস্যজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদক (সদ্য বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার) তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘হাওরে মা-মাছ চাষ ও অভয়াশ্রম করতে জলাশয় খনন করার জন্য জেলা প্রশাসন আমাদের এক মাসের অনুমতি দিয়েছে। ওই সময় পর্যন্ত আমরা কাজ করব। প্রশাসন তদন্ত করে শর্তভঙ্গের যদি কোনো আলামত পায় তাহলে যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা মেনে নেব।’
এদিকে স্থানীয় কৃষক ও এলাকাবাসীর পক্ষে গত পহেলা মার্চ জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ করেন অমৃতা গ্রামের মাওলানা গোলাম সারওয়ার। এর আগে বাহুবল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একই বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেন একই গ্রামের মো. মতিউর রহমান। কিন্তু ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন স্থাপনের কাজ বন্ধ হয়নি।
মাওলানা গোলাম সারওয়ার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে এক ইঞ্চি জমি যেখানে অনাবাদি না রাখার জন্য বলছেন, সেখানে ওই চক্রটি হাওরের কৃষিজমি ও পরিবেশের বারোটা বাজানোর পাঁয়তারা করছে। আশা করছি জেলা প্রশাসক আমাদের সমস্যা বুঝে অনুমতির আদেশ বাতিল করবে।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, ‘কৃষিজমি ধ্বংস করে পুকুর ও জলাশয় তৈরির নামে যে প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে তা বেআইনি। কোটি কোটি ঘনফুট পানিমিশ্রিত বালু জমির নিচ থেকে তোলা হলে শুষ্ক মৌসুমে হাওরে পানি সংকট দেখা দেবে। জমি দেবে যাওয়া ছাড়াও বড় বড় ফাটল দেখা দেবে। জীববৈচিত্র্যে নেমে আসবে নানা বিপর্যয়।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাহুবল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহুয়া শারমিন ফাতেমা বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। তার প্রতিবেদন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে পাঠানো হবে।’
সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুহুল আমিন বলেন, ‘২ মার্চ সরেজমিনে হাওর পরিদর্শন করেছি। জেলা প্রশাসকের দেওয়া শর্ত তাজুল ইসলাম ভঙ্গ করেছেন। খননকাজ বন্ধ করার জন্য মৌখিকভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কাছেও প্রতিবেদন পাঠানো হবে।’
লোকসাহিত্য আমাদের জাতীয় সংস্কৃতির অঙ্গ, যা আমাদের মনের কথা বলে। বাংলাদেশের লোকজীবন বড় বিচিত্র। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ছড়া, লোককাহিনি ও লোকশিল্প থেকে আমাদের সমাজজীবন এবং ঐতিহ্য সম্পর্কে জানা যায়। এগুলো মানুষের যথাযথ পরিচয়ের জন্য ভাবনা ও চিন্তার খোরাক। এতে ফুটে ওঠে লোকায়ত বাংলার প্রতিচ্ছবি।
বাংলা লোকশিল্পের মধ্যে লোকসাহিত্যেরই বীজ নিহিত। এ শিল্পের শিকড় হাজার বছর আগে প্রোথিত হয়েছিল এ দেশেরই মাটিতে। নানা দেশের লোকঐতিহ্য ও লোকসংস্কৃতিতে এ রকমটি ধৃত আছে। কালপ্রবাহে এ রকম ধারা সজীব আছে আমাদের লোকসাহিত্যে এবং লোকজ শিল্পকলায়।
লোকসাহিত্য সামাজিক সৃষ্টি এবং এ কারণেই লোকসাহিত্য সমাজের কথা বলে। জনগণ এসবের স্রষ্টা, জনগণই এসবের ধারক ও লালনকর্তা। আবার জনগণই এর বাহক, তারা লোকসাহিত্যকে এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে বহন করে নিয়ে যায়।
এই নিরিখে আমরা আমাদের লোকায়ত বাংলা সিরিজে উপস্থাপন করছি, লোকসাহিত্যে বাংলাদেশের লোকায়ত শিল্পকলা বাংলাদেশের নকশিপাখা।
সত্যি কথা বলতে কি, বাংলাদেশের লোকায়ত পাখা সম্পর্কে বলতে গেলে বাংলাদেশের নকশিপাখালোককবির ভাষায় বলতে হয় :
‘শীতে তুমি লুকিয়ে থাক গরমে দাও দেখা,
আদর করে নাম রেখেছি তাই তো তোমার পাখা’
কোনো এক অখ্যাত-অজ্ঞাত গ্রাম্য কবির এই সরল বাণী আজও বুকে ধারণ করে আছে বাংলাদেশের নকশিপাখা।
আসলেও তা-ই। শীতে পাখা লুকিয়ে থাকে একান্ত অবহেলায়। শীতে প্রয়োজন কাঁথার। শীতে যেমন কাঁথা, গরমে তেমনি পাখা। শীতের পরে যেমন গরম আসে, তেমনি কাঁথার পরে পাখা।
বাংলাদেশের কাঁথাশিল্প প্রকরণ-উপকরণ বৈশিষ্ট্যে দুই ধরনের সুতার পাখা আর বেতের পাখা। চাকের (বা চাকতির) প্রেক্ষাপটে সুচের সাহায্যে পুরনো বস্ত্র-জাত সুতার বুনন কৌশলে সুতার পাখার শিল্পরূপ বিন্যস্ত। তবে নতুন কাপড় চাকে মুড়ে তার ওপর রুমালের মতো নতুন সুতার নকশা তুলেও অনেক সময় পাখা তৈরি হয়।
বুনন-বৈশিষ্ট্যে সুতার পাখার সঙ্গে সম্পর্কিত হলেও বাঁশ-বেত অথবা তালপাতার পাখার শিল্পায়ন-বৈশিষ্ট্য স্বতন্ত্র। বাঁশের ফালি থেকে অভ্যস্ত হাতের কৌশলে তৈরি হয় সূক্ষ্ম বেতি বা বেত। সেই বেতি মসৃণ করে চেঁছে অথবা তালপাতা ফালি ফালি করে চিঁড়ে বুননের কৌশলে তৈরি হয় পাখা।
তালপাতার বোনা পাখায় রঙের ব্যবহার সীমিত। বিশিষ্ট বুনন-কৌশলের মধ্যেই এর শিল্পরূপ বিন্যস্ত। বাঁশ-বেতের পাখায় বেতিগুলো বিচিত্র রঙে রাঙিয়ে বুননের কৌশলে এবং বর্ণসম্পাতের বৈচিত্র্যে তৈরি হয় নকশা। সুপারির খোলেও পাখা তৈরি হয়। তবে ময়ূর-পুচ্ছে তৈরি পাখায় স্বতন্ত্র নকশার প্রয়োজন হয় না।
পাখার চিত্র বা নকশা আল্পনাচিত্র-প্রভাবিত। পাখার সীমিত পরিসরে চিত্র বা নকশার বৈচিত্র্যের অবকাশ কম। এ কারণে পাখায় সাধারণত লতামণ্ডল সম্ভব হয় না। সচরাচর পাখার নকশায় থাকে তারা ফুল, ছিটা ফুল, পাখি (একই ধরনের দুটি পাখি মুখোমুখি অবস্থান করলে বলে ‘ভালোবাসা’) গাছ, (প্রধানত কদমগাছ), পাতা (অধিকাংশ পানপাতা), মাছ, হাতি, মানুষ, গম্বুজ প্রভৃতি।
লেখা পাখায় সাধারণত চিত্র থাকে না। বেতের পাখায় পালংপোষ, পাশার দান, ঘোষগুটির ঘর, বাঘবন্দি প্রভৃতি নকশা থাকে। চিত্ররূপ অনুযায়ী পাখার বিভিন্ন নামকরণ করা হয়। যেমন : ভালোবাসা, কাঁকইর জ্বালা, গুয়াপাতা, পালংপোষ, সুজনিফুল, বলদের চোখ, শঙ্খলতা, কাঞ্চনমালা, ছিটাফুল, তারাফুল, মনবিলাসী, মনবাহার, মনসুন্দরী, বাঘবন্দি, ষোলোকড়ির ঘর, সাগরদীঘি, হাতি-ফুল-মানুষ, লেখা প্রভৃতি।
বাংলা একাডেমির লোকশিল্প সংগ্রহে বিভিন্ন নামের নকশিপাখা আছে। পাখাগুলো কিশোরগঞ্জ ও সিলেট অঞ্চল থেকে সংগৃহীত। পাখার পরিচিতিপত্রে তার উল্লেখ আছে। প্রকারভেদ অনুযায়ী তার উল্লেখ করা যায় নিম্নলিখিত নামে :
সুতার পাখা : শঙ্খলতা, সুজনিফুল, বলদের চোখ, সাগরদীঘি।
বাঁশের পাখা : গুয়াপাতা, তারাফুল, ছিটাফুল, কাঁকইর জ্বালা, ভালোবাসা, গম্বুজ-তোলা, হাতি-ফুল-মানুষ, লেখা।
বেতের পাখা : পালংপোষ, পাশার দান।
কিশোরগঞ্জ অঞ্চল থেকে সংগৃহীত একটি মেয়েলি গীতে পাখার বর্ণনা পাওয়া যায় এভাবে :
‘সেইনা পাংখাত লেইখা গো থইছে
আঁসা আঁসির জোড়া গো।
সেইনা পাংখাত লেইখা গো থইছে
মউরা মউরীর জোড়া গো।’
বাংলাদেশের নকশিপাখায় বিধৃত হয়েছে বাংলাদেশের কৃষ্টি, সভ্যতা, সামাজিক ইতিহাস, জীবনাচরণ ও ঐতিহ্য, যা লোকায়ত বাংলার চিরায়ত সম্পদ ও সম্পত্তি। এতে পরিস্ফুট হয়ে উঠেছে লোকায়ত বাংলার মুখ। বাংলাদেশের চিরচেনা সচল ও সজীব প্রতিকৃতি।
লেখক : শিক্ষাবিদ ও প্রাবন্ধিক
দেশে বর্তমানে দুই কোটি মানুষ কিডনি রোগে ভুগছে। তার মধ্যে ৪০-৫০ লাখ শিশু। এমন তথ্য জানিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এসব শিশু কিডনি রোগীর চিকিৎসায় সরকারের পাশাপাশি বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিএসএমএমইউয়ের পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজি (শিশু কিডনি) বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে ৮৫ কোটি মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত। প্রতি বছর রোগটিতে মারা যায় ৪১ লাখ। তাদের মধ্যে ২৪ লাখ মানুষ ধীর গতিতে এবং ১৭ লাখ মানুষ আকস্মিক কিডনি বিকলে মারা যায়।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিএসএমএমইউর পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজি বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত বিশ্ব কিডনি দিবসের অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়। অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিল শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা। দিবসটি উপলক্ষে হাসপাতালের শিশু কিডনি রোগীদের নিয়ে পদ্মা সেতু ভ্রমণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বিএসএমএমইউয়ে শিশু কিডনি রোগীদের চিকিৎসার সুবিধার্থে হেমোডায়ালাইসিস সেবা সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা বরাদ্দ দেওয়ার আশ্বাস দেন।
বিএসএমএমিইউ পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজি বিভাগ থেকে জানানো হয়, ১৯৮২ সালে দেশে প্রথমবারের মতো এই প্রতিষ্ঠানে একটি ইউনিটে আটটি শয্যা নিয়ে শিশু কিডনি রোগীদের চিকিৎসা শুরু হয়। সে সময় প্রথম পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস শুরু হয়। প্রথম কিডনি বায়োপসি করেন অধ্যাপক ডা. মনিমুল হক। ২০০৪ সালে প্রথম পেডিয়াট্রিকস হেমোডায়ালাইসিস শুরু হয় এবং ২০০৬ সালে প্রথম শিশুদের কিডনি প্রতিস্থাপন করে।
অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, করোনার মধ্যেও বিএসএমএমইউয়ের শিশু কিডনি বিভাগের বহির্বিভাগে ৫ হাজার ৪৯৩ জন এবং অন্তঃবিভাগে ৬৮৫ জন শিশু কিডনি রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৭৩ জন কিডনি বিকল (ইএসআরডি) রোগী চিকিৎসা পান। এই বিভাগের ডায়ালাইসিস এক দিনের জন্যও বন্ধ থাকেনি। এ ছাড়া এই বিভাগের ১৩ জন শিশু কিডনি রোগীর কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়, যার মধ্যে দুজনের করোনাকালীন সময়েই প্রতিস্থাপন করা হয়।
এই বিভাগের চিকিৎসকরা বলেন, কিডনি রোগীদের চিকিৎসা করতে গিয়ে এই বিভাগ কিছুটা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো দরিদ্রতা। সমাজের বিত্তবান লোক এবং সরকার একই সঙ্গে এগিয়ে এলে এই কঠিন সমস্যার মোকাবিলা করা সম্ভব।
বিএসএমএমইউ ও জবির মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর : গতকাল বিএসএমএমইউ ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) মধ্যে এক সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। বিএসএমএমইউয়ের পক্ষে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ডা. স্বপন কুমার তপাদার ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে রেজিস্ট্রার ইঞ্জিনিয়ার মো. ওহিদুজ্জামান এ চুক্তিতে সই করেন। এ চুক্তি অনুযায়ী দুই প্রতিষ্ঠান শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা নিয়ে যৌথভাবে কাজ করবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা পাবেন।
এর আগে সকালে বিএসএমএমইউয়ের শিশু হৃদরোগ বিভাগের অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডারের মোড়ক উন্মোচন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।
২০২১ সালে চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদান রাখায় ২৭ ক্যাটাগরিতে ৩৪ জন শিল্পী-কলাকুশলীর হাতে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনার কারণে গত দুবছর এই আয়োজনে সশরীরে উপস্থিত থাকতে না পারলেও এবার প্রধানমন্ত্রী নিজ হাতে বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেন। শুধু তা-ই নয়, পুরস্কার বিতরণ শেষে দেশের শীর্ষস্থানীয় চলচ্চিত্র তারকাদের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পুরোটা উপভোগ করেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের পাশাপাশি চলচ্চিত্রশিল্পের উন্নয়নের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। শুধু তা-ই নয়, চলচ্চিত্রকে আরও উন্নত করতে কিছু বিষয়ে তিনি নতুনভাবে সিদ্ধান্তের কথা জানান।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে পাঠের পর বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন। তাদের আলোচনায় উঠে আসে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় চরিত্র গঠনে চলচ্চিত্রের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ভূমিকা, বর্তমান চলচ্চিত্রের অবস্থা, চলচ্চিত্র উন্নয়নে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কৃতিত্বের কথা। এরপরই পুরস্কার দেওয়া শুরু হয়। প্রথমেই প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন ডলি জহুর। এবার যৌথভাবে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন তিনি ও অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন। তবে ইলিয়াস কাঞ্চন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না।
এরপর পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় কলাকুশলীদের হাতে। সেরা কাহিনিকার রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত (নোনাজলের কাব্য), সেরা চিত্রনাট্যকার নূরুল আলম আতিক (লাল মোরগের ঝুঁটি), সেরা সংলাপ রচয়িতা তৌকীর আহমেদ (স্ফুলিঙ্গ)। সেরা সম্পাদক সামির আহমেদ (লাল মোরগের ঝুঁটি), সেরা শিল্পনির্দেশক শিহাব নূরুননবী (নোনাজলের কাব্য), সেরা চিত্রগ্রাহক দলগত সৈয়দ কাশেফ শাহবাজি, সুমন কুমার সরকার, মাজহারুল ইসলাম রাজু (লাল মোরগের ঝুঁটি), সেরা শব্দগ্রাহক শৈব তালুকদার (রেহানা মরিয়ম নূর), সেরা পোশাক ও সাজসজ্জা ইদিলা কাছরিন ফরিদ (নোনাজলের কাব্য) এবং সেরা রূপসজ্জাকর দলগত মো. ফারুখ, মো. ফরহাদ রেজা মিলন (লাল মোরগের ঝুঁটি)। এ ছাড়া শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ধড়’ (আকা রেজা গালিব), সেরা প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘বধ্যভূমিতে একদিন’ (কাওসার চৌধুরী) পুরস্কার গ্রহণ করেন।
এরপর শুরু হয় শিল্পীদের হাতে পুরস্কার প্রদানের পালা। শিশুশিল্পী শাখায় বিশেষ পুরস্কার জান্নাতুল মাওয়া ঝিলিক (যা হারিয়ে যায়), রেহানা মরিয়ম নূর সিনেমায় অভিনয়ের জন্য সেরা শিশুশিল্পী আফিয়া জাইন জায়মা, সেরা সংগীত পরিচালক সুজেয় শ্যাম (যৈবতী কন্যার মন), সেরা গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ারের পক্ষে তার স্ত্রী (অন্তরে অন্তর জ্বালা, যৈবতী কন্যার মন), সেরা সুরকার সুজেয় শ্যাম (অন্তরে অন্তর জ্বালা, যৈবতী কন্যার মন), সেরা গায়ক হিসেবে ‘পদ্মাপুরাণ’ সিনেমার ‘শোনাতে এসেছি আজ’ গানের জন্য মুহিন খান ও একই সিনেমায় ‘দেখলে ছবি পাগল হবি’ গানটির জন্য সেরা গায়িকার পুরস্কার গ্রহণ করেন চন্দনা মজুমদার।
এবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার সেরা চলচ্চিত্র নির্বাচিত হয়েছে ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’ ও ‘নোনা জলের কাব্য’। এই শাখায় পুরস্কার গ্রহণ করেন সিনেমা দুটির প্রযোজক মাতিয়া বানু শুকু ও রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত। সেরা সিনেমা পরিচালক হিসেবে ‘নোনাজলের কাব্য’ সিনেমার জন্য পুরস্কার গ্রহণ করেন তরুণ নির্মাতা রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে অন্যতম আগ্রহের ক্যাটাগরি সেরা অভিনয়শিল্পী। ‘নোনাজলের কাব্য’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য পার্শ্বচরিত্রে সেরা অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান ফজলুর রহমান বাবু। এটা তার চতুর্থ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ক্যারিয়ারে প্রথমবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার গ্রহণ করেন শম্পা রেজা। তিনি পার্শ্বচরিত্রে ‘পদ্মাপুরাণ’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পান। অভিনেতা জয়রাজও ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি খলচরিত্রে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। তিনি ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য এই পুরস্কার গ্রহণ করেন। অভিনেতা মিলন ভট্টাচার্য সেরা কৌতুক অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার গ্রহণ করেন। তিনি এই সম্মাননা পাচ্ছেন ‘মৃধা বনাম মৃধা’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য।
এবার যুগ্মভাবে সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন মীর সাব্বির (রাতজাগা ফুল) ও সিয়াম আহমেদ (মৃধা বনাম মৃধা)। ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ সিনেমার জন্য আগে থেকেই আলোচনায় ছিলেন আজমেরী হক বাঁধন। ২০২১ সালে সিনেমায় অভিনয় করার জন্য যুগ্মভাবে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে গ্রহণ করেন আজমেরী হক বাঁধন ও তাসনোভা তামান্না ‘নোনাজলের কাব্য’।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্যে জ্বালানি খাতে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়কে বরাদ্দ দিয়েছিল ৪৮ লাখ টাকা। অর্থবছর শেষ হতে আরও ৪ মাস অবশিষ্ট থাকলেও চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতেই বরাদ্দকৃত অর্থের অতিরিক্ত আরও ৪ লাখ ৬৯ হাজার টাকা ব্যয় করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮টি শিক্ষার্থী বাস ও ৪টি শিক্ষক কর্মকর্তাদের পরিবহনে ব্যবহৃত সিভিলিয়ানের পরিচালনা করতে এই ব্যয় করা হয়েছে।
এই অতিরিক্ত ব্যয় করাটিকে নিয়মের ব্যত্যয় হয়েছে বলে মনে করছে ইউজিসি। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে আগামীতে সমন্বয় করে ব্যবস্থা নেওয়ার ভাবনায় কাজ করা হচ্ছে। তবে এখন থেকে সমন্বয়ের সুযোগ থাকছে না বলেও মন্তব্য ইউজিসির।
২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে জ্বালানি তেলের ব্যবহারের যে চিত্র পাওয়া গেছে তাতে দেখা যায় পুরো বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকা ২০২০-২১ অর্থবছরে জ্বালানি বাবদ ২৫ লাখ ৮৫ হাজার ৫৬৮ টাকা ব্যয় করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসন। এই সময় সরকার থেকে লকডাউনের ঘোষণা থাকলেও প্রতি সপ্তাহে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা এবং ঢাকা থেকে ত্রিশাল যাতায়াত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক। এছাড়া ত্রিশালের অভন্তরীণ ৪ কিলোমিটারের সড়কে ময়মনসিংহ চ- ৫১০০২১ নম্বরের মাইক্রো ও এর অবর্তমানে অন্য একটি মাইক্রো ব্যবহার করে গ্যাস বাবদ বন্ধ ক্যাম্পাসে ব্যয় করা হয়েছে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৮২৬ টাকা।
এই সময়ের ব্যয়গুলোকে সরকারের সিদ্ধান্ত না মানার শামিল বলে মন্তব্য করেছেন ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, সরকার যখন সারা দেশ লকডাউন ঘোষণা করেছে সেই সময়ে এমন ব্যয় হলে তা কেবল অনিয়মই নয় সরকারের সিদ্ধান্তেরও লঙ্ঘন। যা বিশ্ববিদ্যালয় করতে পারে না। রাষ্ট্রের নিয়মের বাইরে গিয়ে কোনো কাজ করবার সুযোগ নেই।
তবে সে সময়ের গাড়ি পরিচালনা প্রশাসনের সিদ্ধান্তেই হয়েছে বলে দেশ রূপান্তরকে জানান বিশ্ববিদ্যালয়টির পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. আরিফুর রহমান। তিনি আরও বলেন, ঢাকায় গাড়ি চলাচলের বিষয়ে আমি একমত না থাকলেও প্রশাসনের সিদ্ধান্তে আমার তা করতে হয়েছে।
বন্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ে তেলের এত ব্যয় শুনে বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, আমি এমন ঘটনা আগে শুনিনি। আর আমি আগের বিষয়ে অবগত নই। তবে বন্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি এরকম ব্যয় হয়ে থাকে সেটি উচিত হয়নি। এমন অভিযোগ পেলে তদন্ত করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন অধ্যাপক ড. এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখানে একটা তেলের ব্যবসা হয়েছে। বন্ধ ক্যাম্পাসে খালি পকেটকে ভরতেই কেউ কেউ এই স্মার্ট পথ খুঁজে নিয়েছে। এছাড়া একটি পাম্প থেকেই তেলের সরবরাহ নেওয়ায় এক ধরনের মুনাফা নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একশ্রেণির সিন্ডিকেট। তারা তেল নিয়ে মুনাফা করছে। ক্ষতি হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের।
পরিবহন দপ্তরের যোগসাজশেই তেলের বাণিজ্য চলে বলেও জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট একাধিকজন। পরিমাণ নির্ধারণ করার কোনো ব্যবস্থাও নিতে পারেনি দপ্তরটি। তেলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ না করতে পারার আক্ষেপও রয়েছে পরিবহন প্রশাসকের। বারবার চেষ্টাও করেছেন বলেও জানান তিনি। অন্যদিকে একাধিক তেলের পাম্প থেকে তেল ক্রয়ের প্রস্তাব দিলেও সেটি বাস্তবায়ন করতে পারেননি তিনি।
অভ্যন্তরীণ কারণ দেখিয়ে তেল ক্রয়ের পাম্প নিয়ে আর কথা বলতে চাননি পরিবহন প্রশাসক আরিফুর রহমান।
২০২২-২৩ অর্থবছরে বরাদ্দের থেকে ব্যয় বেশি হওয়ায় সমাধান কি প্রশ্নে অর্থ ও হিসাব শাখার পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ড. মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের বাস তো চালু রাখতেই হবে। তাই আগামী অর্থবছরের সমন্বয় করে হয়তো সমাধান করতে হবে। এছাড়া আমরা পরিকল্পনা করে যাচ্ছি।
তবে সমন্বয়ের কথা নাকচ করে দিয়ে ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান বলেন, সরকার নিজেই সমন্বয় থেকে বের হয়ে আসছে। আর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে সেখানে কীভাবে সমন্বয় করা হবে? তাই সমন্বয়ের কোনো সুযোগ নেই।
লকডাউনে বন্ধ অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমের সময়ে ২৫ লাখ টাকার তেল ও গ্যাস বাবদ ব্যয়কে দুর্নীতি হিসেবে উল্লেখ করে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষক কর্মকর্তা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রমের বাইরেও প্রতি সপ্তাহে শুক্র ও শনিবার উইকেন্ড প্রোগ্রামের কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ির ব্যবহার করা হয়। এই বিষয়ে ইউজিসি সচিব দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি ব্যবহার করে কোনো ধরনের ইভিনিং কোর্স ব্যবহারের সুযোগ নেই।
ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র দাবদাহ চলছে। দফায় দফায় বিদ্যুৎ থাকছে না বাসা-বাড়ি, অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।
বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে একটি মহল পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টায় আছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য এসেছে। আর ওই তথ্য পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর নড়েচড়ে বসেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ শীর্ষ কর্তারা বৈঠক করেছেন। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোমবার পুলিশের সব রেঞ্জ অফিস ও ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
বিশেষ বার্তা পেয়ে ইউনিট প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপাররা আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে পুলিশ।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। এরই মধ্যে যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলো নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। এই জন্য আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সোমবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সব ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের কাছে বিদ্যুৎ স্টেশনে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি নজরদারি বাড়াতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একটি মহল লোডশেডিংয়ের অজুহাতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। যেসব এলাকায় বেশি বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তারও একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর আমরা বিশেষ বৈঠক করছি। এলাকায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তা সত্য। এ জন্য আমরা বেশ সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ অফিস ও স্টেশনগুলোর বিষয়ে থানার ওসিদের দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোডশেডিংয়ের অজুহাত তুলে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে একটি বিশেষ মহল। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়তি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে থানার ওসিদের নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন জেলার পুলিশ সুপাররা। এমনকি বাড়তি ফোর্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তা ছাড়া রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
বিদ্যুৎ অফিসের পাশাপাশি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলতে ৫০ থানার ওসিদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে জানান, বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে যাতে কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো বাড়তি নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে সবাইকে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎসহ যেকোনো সমস্যা নিয়ে কোন মহল যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। আশা করি বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটবে না। তারপরও পুলিশ সতর্ক আছে।
সূত্র জানায়, লোডশেডিংকে পুঁজি করে কেউ যাতে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশনার পর সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, বিদ্যুৎ অফিস, সাবস্টেশনসহ কেপিআই স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম ও পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা সমিতি বা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকেও পুলিশকে চিঠি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তাও চাওয়া হয়েছে।
সিনেমায় অভিনয় করতে গিয়ে প্রেম এরপর বিয়ে। দেড় বছরের দাম্পত্য জীবনে আট মাস ধরে চিত্রনায়িকা পরীমণি ও শরিফুল রাজের বনিবনা হচ্ছে না বলেই শোনা যাচ্ছে। চলছে টানাপোড়েন এবং সেই সংসার এখন ভাঙনের পথে। রাজের ফেসবুক থেকে অভিনেত্রী তানজিন তিশা, নাজিফা তুষি ও সুনেরাহ বিনতে কামালের কিছু ছবি ও ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর রাজের সঙ্গে পরীমণির মতপার্থক্য প্রকাশ্যে আসে। সব ছাপিয়ে যা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
রবিবার একটি গণমাধ্যমের ‘লাইভ’ অনুষ্ঠানে এসে শরিফুল রাজ জানান, আপাতত তারা সেপারেশনে আছেন এবং তাদের আর একসাথে হওয়ার কোন সুযোগ নেই। পরীকে তিনি শ্রদ্ধা করেন জানিয়ে সবশেষে পরীমণির উদ্দেশ্যে রাজ বলেন, ‘বেবি, আই লাভ ইউ। যা-ই হোক না কেন, আনন্দে থেকো। আমরা আমাদের সন্তানকে ভালো রাখব।’
রাজের এমন মন্তব্যের উত্তর দিতে সোমবার রাতে গণমাধ্যমটির লাইভে এসে রাজের উদ্দেশ্যে পরীমণি বলেন, ‘গরু মেরে জুতা দান করার কোনো দরকার নেই। কেউ রেসপেক্ট করলে সেটা তার কার্যকলাপ দেখেই বোঝা যায়, মুখ ফুটে বলতে হয় না। আমাকে পাবলিকলি অপমান করে এরপর রেসপেক্ট দেখানোর কোনো দরকার নেই। আর আমার বাচ্চাকে নিয়ে এসব ইমোশনালি কোনো কথা শুনতে চাই না। এসব ইমোশনালি কথা মানুষকে গিলিয়ে লাভ নেই। মানুষ বুঝে।’
ফাঁস হওয়া ভিডিওগুলো পরী বলেন, ‘এত বছর ধরে তারা বন্ধু অথচ আমি জানতাম না। এসব সামনে আসার পর জানতে পারলাম। আর রাজ যতটা তার বন্ধুদের ইমেজ নিয়ে কনসার্ন তার পরিবার নিয়ে এতটাও কনসার্ন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি এমনিতে অনেক শান্তশিষ্ট। অনেকটা সাপের মতো, লেজে পাড়া না দিলে চুপচাপ থাকি কিন্তু আমার লেজে পাড়া দিলেই আমি ফুঁস করে উঠি আর তখন কামড় দিবই।’
সবশেষে পরী বলেন, ‘আমি চাই এসবের শেষ হোক। আমি আজকে এখানে এসে এসব বলতাম না। তুমিই (রাজ) আমাকে বাধ্য করেছ। এরকম অসুস্থ মানুষের সঙ্গে আমি আর থাকতে চাই না। আমি চাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাজ আমাকে ডিভোর্স দিক।’
অবশেষে বন্ধ হয়ে গেল দেশের সর্ববৃহৎ পটুয়াখালীর পায়রায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন। গতকাল সোমবার দুপুরে কেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। কয়লা সংকটে গত ২৫ মে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট বন্ধ হয়। ২০২০ সালে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার পর এবারই প্রথম কয়লা সংকটে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন বন্ধ হলো।
চীন ও বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগের এই বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠানটিকে কয়লা ক্রয়ে ঋণ দিয়ে আসছে চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কোম্পানি (সিএমসি)। এপ্রিল পর্যন্ত কয়লার ৩৯০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দেয় সিএমসি। পরে ১০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হলে কয়লা আমদানির এলসি খোলার শর্ত দেয় চীনা প্রতিষ্ঠান। গতকাল পর্যন্ত ৯৮ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। এ মাসের শেষদিকে কয়লা দেশে আসার কথা রয়েছে।
কয়লার অভাবে দেশের সবচেয়ে বড় এবং নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি এক মাসে লোকসান হবে অন্তত ৩০০ কোটি টাকা। আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি লোডশেডিংয়ের কারণে জনদুর্ভোগ ও কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলে পুরো ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি।
এদিকে উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের বাইরে শুধু কয়লাবাবদ পিডিবির কাছে কেন্দ্রটির বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০০ মিলিয়ন ডলার। ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে থাকা এ বকেয়ার টাকা পরিশোধের জন্য দফায় দফায় চিঠি দিয়েও তা পরিশোধ করা হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অবহেলার কারণেই কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো নিজেদের দায় অস্বীকার করে বলছে, বৈশি^ক মন্দার পরিস্থিতিতে ডলার সংকটের কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের পাশাপাশি কেন্দ্রভাড়া বাবদ প্রতি মাসে পিডিবিকে ২৪৭ কোটি টাকা দিতে হবে। এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও নির্ধারিত কেন্দ্রভাড়া পরিশোধ করতে হবে পিডিবিকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, পিডিবির চাহিদা অনুযায়ী নিরবচ্ছিন্নভাবে গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার ২৪৪ মেগাওয়াট করে প্রায় তিন কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছিল কেন্দ্রটি। প্রতি মাসে এর পরিমাণ ছিল ৯০ কোটি ইউনিট। গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের বিক্রয়মূল্য ছিল ৫ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ৬ টাকার মতো।
প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফার প্রকৃত জানা না গেলেও নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানান, সব ধরনের ব্যয় বাদ দিয়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে তাদের নিট মুনাফা হতো ৫ থেকে ৬ শতাংশ। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড়মূল্য সাড়ে ৫ টাকা এবং মুনাফা সাড়ে ৫ শতাংশ বিবেচনায় নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির এক মাসে মুনাফার পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা। কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় এ মুনাফা থেকে বঞ্চিত হবে বিসিপিসিএল। এদিকে কয়লা কেনার জন্য সাড়ে ৬ শতাংশ সুদে ঋণ নেয় প্রতিষ্ঠানটি। গত ছয় মাসের বেশি সময় কয়লার বিল বকেয়া থাকায় সুদের পরিমাণও বেড়ে যাবে। বাড়তি এ সুদের অর্থ বিসিপিসিএলকেই পরিশোধ করতে হবে।
বর্তমানে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে পিডিবির বিদ্যুৎ ক্রয়ের প্রতি ইউনিটের গড়মূল্য প্রায় ১১ টাকা ৫০ পয়সা। যদিও পিডিবি এ বিদ্যুৎ লোকসান দিয়ে বিতরণ কোম্পানির কাছে বিক্রি করছে ৮ টাকা ১০ পয়সায়। পায়রা থেকে এক মাস বিদ্যুৎ কিনতে না পারলে পিডিবির লোকসান আরও বাড়বে।
সূত্রমতে, কয়লা দেশে পৌঁছানো এবং কেন্দ্র চালু করতে সব মিলে অন্তত এক মাসের মতো সময় লাগবে। কোনো কারণে যদি কয়লা আসতে আরও দেরি হয়, তাহলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এএম খোরশেদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বিশে^র সেরা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম। এক সুইচে চালু করার পর নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও বৈশি^ক কারণে ডলার সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে। এটা আমাদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক। তবে এ সময়ে আমরা বসে না থেকে কেন্দ্রের মেইনটেনেন্সের কাজটি করে ফেলব, যাতে দীর্ঘদিন আর মেইনটেনেন্স করা না লাগে।’
কেন্দ্রটি বন্ধের ফলে কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হবে তা জানতে চাইলে প্ল্যান্ট ম্যানেজার শাহ আবদুল মওলা দেশ রূপান্তরকে বলেন ‘আমরা এমনিতেই বকেয়া বিল পাচ্ছি না। এটাই বড় ক্ষতি। অন্যান্য ক্ষতির পাশাপাশি কেন্দ্রটি বন্ধের কারণে সাশ্রয়ী দামে দেশের মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। এ কেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ সাড়ে ৫ থেকে ৬ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। সাশ্রয়ী দামে বিদ্যুৎ দিতে না পেরে কমফোর্ড ফিল করছি না।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কেন্দ্র ভাড়ার পাশাপাশি লোডশেডিংয়ে মানুষের ভোগান্তি এবং কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলেও এ ক্ষতির পরিমাণ অপূরণীয়। আর লোডশেডিং না দিয়ে সরকার যদি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চায়, তাহলে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো ছাড়া কোনো উপায় নেই এই মুহূর্তে। সে ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটে ৪ টাকার ওপর লোকসান হবে।’ তিনি বলেন, ‘ডলার ছাড় ঠিকই হচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্রটি বন্ধ হওয়ার আগেই ডলার ছাড় করা উচিত ছিল। এতে বিরাট ক্ষতি হলো। এ ক্ষেত্রে দুটো বিষয় হতে পারে। একটি হলো যারা ডলার ছাড় করছেন তারা বিদ্যুৎ খাতের গুরুত্ব বুঝতে পারছেন না অথবা দেশের পরিস্থিতি আসলেই ভয়াবহ। তবে দেশের উন্নয়নে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতকে অবশ্যই প্রাধান্য দেওয়া উচিত।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জাকির হোসেন চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ডলার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের। আর বাংলাদেশ ব্যাংককে রিজার্ভ থেকে ডলার দেওয়া হয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে। এ ক্ষেত্রে খাতের গুরুত্ব বুঝে ডলার ছাড় করা হয়। তবে দেশের প্রয়োজনে ডলার ছাড় করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো ধরনের গাফিলতি নেই।’
বছরে ৪০ কোটি ডলার পারিশ্রমিকের প্রস্তাব নিয়ে লিওনেল মেসির সংগে যোগাযোগ করছে আলো হিলাল। তারা মংগলবার চুক্তির ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে বলে জানিয়ে রেখেছে। কিন্তু মেসি তাদেরকে ২০২৪ পর্যন্ত প্রস্তাবটা পিছিয়ে দিতে বলেছেন বলে খবর দিয়েছে ফুটবল বিষয়ক ওয়েব পোর্টাল গোল ডটকম।
তবে সৌদি ক্লাব এ-ই প্রস্তাব এখনই গ্রহন না করলে আগামী বছর তা একই রকম থাকবে না বলে জানিয়েছে।
মেসি আসলে তার শৈশবের ক্লাবে আরো অন্তত এক বছর খেলতে চান। তাতে তার পারিশ্রমিক সৌদি ক্লাবের প্রস্তাবের ধারে কাছে না হলেও ক্ষতি নেই। জানা গেছে, বার্সা তাকে এক বছরে ১৩ মিলিয়েন ডলার পারিশ্রমিক প্রস্তাব করতে যাচ্ছে।
লা লিগা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাওয়ায় মেসিকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেবে বার্সা। ধারনা করা হচ্ছে বুধ-বৃহস্পতিবারের মধ্যে এ ব্যাপারে একটা স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যাবে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে অস্বস্তিতে ছিল বিশ্বের প্রায় সব দেশই। অধিকাংশ দেশই তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। প্রতিবেশী ভারত ও শ্রীলঙ্কার নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির কথা প্রায় সবারই জানা, তারাও ইতিমধ্যে তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে এসেছে। তবে ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশ। কোনোভাবেই নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না সরকার। ফলাফল ভোক্তা মূল্যসূচকে (সিপিআই) বা মূল্যস্ফীতিতে ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রেকর্ড। মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সিপিআই ইনডেক্সে এ হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে।
গত ১ জুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করে সরকার। এ বাজেটের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল আগামী অর্থবছরে সরকার কীভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য বাজেট প্রস্তাবে কোনো পদক্ষেপ না থাকলেও লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি পরাবাস্তব বাজেট। মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখা আসলে সম্ভব নয়। গত ১১ মাসে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর আগে ২০১১ সালের মে মাসে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ২০ শতাংশ। সে হিসাবে মূল্যস্ফীতি ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। যদিও চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে গড় মূল্যস্ফীতি প্রায় ৯ শতাংশ।
মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার অর্থ হলো, আগের বছরের মে মাসে যে পণ্য গড়ে ১০০ টাকা কিনতে হয়েছে, এ বছরের মে মাসে তা কিনতে হচ্ছে গড়ে ১০৯ টাকা ৯৪ পয়সায়। আরও পরিষ্কারভাবে বললে, ধরুন আগের বছরের একই সময়ে ৫০০ টাকার একটি নোটে কোনো ব্যক্তি পাঁচটি পণ্য কিনতে পেরেছিলেন। এ বছরের একই সময়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় এখন একই টাকায় তিনটি পণ্য কিনতে পারছেন। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়।
খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১ বছরে বেড়েছে ১১.৩২ শতাংশ : ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ, অথচ এ বছরের মে মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ। এ বছরের এপ্রিল মাসেও খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ০৪ শতাংশ।
খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে এক বছরে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬৪ শতাংশ : বিবিএসের তথ্য বলছে, সদ্য শেষ হওয়া মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ হয়েছে। ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ০৮ শতাংশ। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬৩ দশমিক ৮২ শতাংশ বা ৬৪ শতাংশ।
গ্রামের চেয়ে শহরের মূল্যস্ফীতি বেশি : এক বছর আগেও শহরের মূল্যস্ফীতি গ্রামের চেয়ে কম ছিল। কারণ গ্রামের চেয়ে শহরে পণ্য মজুদের আধুনিক ব্যবস্থা আছে। তবে সরকারি উদ্যোগে শহরের মতো গ্রামেও কিছু স্থানে খাদ্যগুদামের ব্যবস্থা তৈরি হওয়ায় এখন শহরের তুলনায় গ্রামে মূল্যস্ফীতি কমেছে। মে মাসে শহর এলাকায় গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ, একই সময়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
বিশ্বে কমেছে মূল্যস্ফীতি, বাংলাদেশে বাড়ছে : গত শনিবার মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের (এমসিসিআই) বাজেট-পরবর্তী আলোচনায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ মূল্যস্ফীতি ইস্যুতে বলেন, বিশ্বের প্রায় সব দেশ সফলভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। শুধু বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, থাইল্যান্ডে ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৭ শতাংশ, গত এপ্রিলে তা নেমে এসেছে ২ দশমিক ৭ শতাংশে। অর্থাৎ আগের তুলনায় দেশটিতে মূল্যস্ফীতি কমেছে ৬৫ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ। সেখান থেকে ৪৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি কমিয়ে ৪ দশমিক ৯ শতাংশে আনতে সক্ষম হয়েছে তারা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের গত অক্টোবর মাসের মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৬ শতাংশ, সেখান থেকে ৩৪ শতাংশ কমিয়ে ৭ শতাংশে আনতে সক্ষম হয়েছে ইইউ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার বাড়িয়ে দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতি সুদহার বাড়িয়ে দেয়। তবে বাংলাদেশ এ ধরনের সংকট মোকাবিলায় শুরুর দিকে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। উল্টো গত বছর আগস্টে এক ঘোষণাতেই জ্বালানি তেলের দাম ৫১ শতাংশ বাড়ানো হয়। ওই মাসেই মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে দাঁড়িয়েছিল। বাংলাদেশ দেরিতে হলেও নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। বর্তমানে এ সুদহার ৬ দশমিক ২ শতাংশ। তবে নীতি সুদহার বাড়িয়েও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে আভাস দিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল দাবি করেছে, বিশে^র দেশে দেশে মূল্যস্ফীতির যে হার, তা সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য হুমকি। মূল্যস্ফীতির এই হার ১২ বছর বা এক যুগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭-০৮ সালে বিশ্ববাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতি বাড়তে বাড়তে ১৪ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
২০০৯ সালের প্রথম দিকে আওয়ামী লীগ সরকার যখন দায়িত্ব নেয়, তখনো মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপর ছিল। পরে অবশ্য তা কমতে কমতে সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসে। দীর্ঘদিন ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করেছে।
৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ঠিক এরকম এক সময়ে গত বছর ৫ আগস্ট সরকার জ্বালানি তেলের দাম ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ায়। এর পরপরই বাড়ানো হয় সব ধরনের পরিবহন ভাড়া। এ দুইয়ের প্রভাবে বেড়ে যায় প্রায় সব পণ্যের দাম। ফলে পরের মাস আগস্টে মূল্যস্ফীতি এক লাফে বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে ওঠে।
যদিও সেপ্টেম্বর থেকে তা কমতে থাকে। ওই মাসে মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ১০ শতাংশে আসে। জানুয়ারিতে তা আরও কমে ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশে নেমে আসে। তবে রোজাকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকায় বাড়তে থাকে মূল্যস্ফীতি। ফেব্রুয়ারি মাসে তা বেড়ে হয় ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। মার্চ মাসে হয় ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এপ্রিলে তা সামান্য কমে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে নেমে এসেছিল।
মজুরি সূচক বেড়েছে : বিবিএসের তথ্য বলছে, গত কয়েক মাস ধরেই মজুরি সূচক অল্প অল্প করে বাড়ছে। অক্টোবরে এ হার ছিল ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ। যা মে মাসে এসে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৩২ শতাংশে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।