
আমি তখনো ‘শীতকাল কবে আসবে সুপর্ণা’ কবিতাটা পড়িনি। নীল জিনস জ্যাকেটের পকেটে শীত পুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাই। বাংলা সাহিত্যের প্রথম বর্ষের ছাত্র হিসেবে প্রয়াত শিক্ষক নরেন বিশ্বাসের ক্লাসে তার উদাত্ত কণ্ঠে বারবার শুনি, ‘চল চপলার চকিত চমকে চরণ করিছে বিচরণ...’। সস্তা সিগারেট খাই, এখানে-ওখানে গজিয়ে ওঠা আড্ডায় ঢুকে পড়ি। কোনো সুপর্ণার প্রেমেও পড়া হয়নি তখনো। তেমনি কোনো এক শীতের সকালে আনিস ভাইয়ের সঙ্গে আমার পরিচয়। তিনি তখনো গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক হননি। জলপাই রঙের একটা হান্টিং জ্যাকেট পরিহিত আনিস ভাই বিভাগের সামনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে পাইপ টানছিলেন। দৃশ্যটা চমকে ওঠার মতোই! তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন প্রখ্যাত সাংবাদিক খায়রুল আনোয়ার মুকুল। তিনি তখন একদা বন্ধ হয়ে যাওয়া দৈনিক বাংলা পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি।
আমার ভালো লেগে যায় রাগী, অস্থির অথচ হাসিমাখা মুখের মানুষ আনিস ভাইকে। প্রথম পরিচয়েই প্রশ্ন করেছিলেন, ‘সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়ের “আমি আরব গেরিলাদের সমর্থন করি” উপন্যাসটা পড়ছ?’ আনিস ভাই বেশির ভাগ সময় প্রমিত বাংলায় কথা বলতেন না। কথা বলার বিশেষ ভঙ্গিটাও তার প্রতিবাদ করার, প্রত্যাখ্যান করার অনুষঙ্গ ছিল। আমি মাথা নেড়ে পড়িনি জানাতেই বলেছিলেন, ‘পড়বা। পড়তে হবে। পড়ার কোনো বিকল্প নাই।’ সময়টা এমনই ছিল, ইয়াসির আরাফাত আর তার বিপ্লবী সংগঠন পিএলও যখন-তখন সংবাদের শিরোনাম হয়। আনিস ভাই পছন্দ করতেন আরাফাতকে। বন্ধু মহলে তাকে অনেকে মজা করে আনিস আরাফাত ডাকত। হয়তো সন্দীপনের উপন্যাসের জন্য প্রেমটা তার উসকে উঠেছিল আরব গেরিলাদের কারণে। সেদিন আমরা কথা বলতে বলতে চলে গিয়েছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তখন বিখ্যাত হাকিম ভাইয়ের চায়ের দোকানে। মনে আছে, আনিস ভাই সেদিনই লাইব্রেরি থেকে বার্ট্রান্ড রাসেলের ‘আনআর্মড ভিক্টরি’ বইটা আমাকে পড়ার জন্য দিয়েছিলেন। সদ্য পরিচিত আমাকে এ রকম একটা বই হুট করে দেওয়ায় খুব অবাক হয়েছিলাম। আবার একধরনের ভালো লাগা কাজ করেছিল। মনে হয়েছিল, অন্য ধরনের একজন মানুষের সঙ্গে পরিচয় হলো।
মেধাবী তরুণ আনিসুর রহমান অধ্যাপনা করলেও তার আচরণে গম্ভীর ভাবটা ছিল না। তার চলাফেরা, কথা বলার ভঙ্গি, জানার পরিধি সত্যিই অন্যদের থেকে খুব আলাদা ছিল। আর সেটাই আমার ভালো লেগেছিল। আনিস ভাইয়ের একটা কালো রোদচশমা ছিল। মাঝে মাঝে চোখ ঢেকে চা খেতেন হাকিম ভাইয়ের চায়ের দোকানের সামনে। দেখা হলেই হেসে বলতেন, ‘কী কবি, কেমন আছ?’
শীত পার হয়ে আমাদের সখ্য গ্রীষ্মে গড়ায়। তারপর পথ হাঁটে আরও অনেকট দূর। আনিস ভাইয়ের জানার বৃত্তটা অনেক দূর পর্যন্ত ছড়ানো ছিল। প্রাচীন সভ্যতা, চিত্রকলা, কবিতা, অ্যাস্ট্রোলজি, গদ্য সাহিত্য, পৃথিবীর বিভিন্ন বিপ্লব নিয়ে আলোচনা করতে ভালোবাসতেন। তার ছাত্রদের কাছে শুনতাম, পড়ানোর সময় তিনি এ ধরনের বিচিত্র বিষয় নিয়ে কথা বলতেন। একদিন হয়তো ক্লাসের সময়টা কাটিয়ে দিলেন শুধু চে গুয়েভারার ওপর বক্তৃতা দিয়ে।
খুব অদ্ভুত অদ্ভুত ভাবনা তার মাথায় ঘুরত। একদিন টিএসসির মোড় থেকে আমাকে ডেকে রিকশায় তুললেন। রিকশা চলছে ঢাকা মেডিকেল কলেজের দিকে। এ রকম প্রায়ই রিকশায় অনির্দিষ্ট ভ্রমণে যেতাম আমরা। রিকশায় বসেই বললেন, ফরাসি বিপ্লব দিবসে তিনি বিশাল লোহার কলম আর সিমেন্টের খাতা তৈরি করতে চান। আর সেই কলমটা তৈরি হবে একটা স্ট্রিট লাইটের পোস্ট দিয়ে। আমি তো অবাক পরিকল্পনা শুনে। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র, বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের রাজনৈতিক কর্মীদের মধ্যে আনিস ভাইয়ের বিশাল এক অনুগত বাহিনী ছিল। তিনি বললেন, সবাইকে কাজে লাগানো হবে পোস্টটা কাটার জন্য। তারপর সেটার মাথায় লোহা দিয়ে কলমের নিব তৈরি করে বসানো হবে। সিমেন্টের খাতাটা তৈরি করে সেটার ওপর রাখা হবে কলম। আনিস ভাইয়ের ভাবনাটা ছিল, পরবর্তী প্রজন্মকে লোহার কলম দিয়ে দৃঢ় আর সাহসী গদ্য লিখতে হবে। পুরো বিষয়টাই ছিল প্রতীকী। কিন্তু কী অদ্ভুত সুন্দর ছিল ভাবনাটা। যদিও কাজটা আমাদের কখনোই করা হয়নি।
আশির দশকে দেশে স্বৈরাচারী এরশাদবিরোধী আন্দোলন করছে ছাত্ররা। প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু টিয়ার গ্যাস আর বারুদের গন্ধে ভারী হয়ে থাকে। তেমনি এক পোড়া দিনে আমি রিকশায় কার্জন হলের দিকে যাচ্ছি। হঠাৎ দেখি বাংলা একাডেমির পাশেই একটা চায়ের টং দোকান থেকে আনিস ভাই ডাকছেন হাত নেড়ে। অগত্যা রিকশা ছেড়ে নেমে পড়ি। চায়ের অর্ডার দিয়েই আনিস ভাই বললেন, ‘শোনো মিয়া কবি, খালি কবিতা ভাবলে হইব? আমি ঠিক করছি মেঘনাদ বধ কাব্য নাটক করব। তুমি হবা মেঘনাদ। তোমার গায়ের রং কালো। দেবতাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা সেই অন্ত্যজ শ্রেণির বীর হিসেবে তোমাকে ভালো মানাবে।’ আনিস ভাইয়ের অদ্ভুত সব আইডিয়ার সঙ্গে তত দিনে আমি পরিচিত। ফলে ঘাবড়ে গেলাম না। আনিস ভাই সেদিন বলেছিলেন, ‘এইটা বিদ্রোহের যুগ। আমার ছাত্ররা রাজপথে লড়াই করছে। সাংস্কৃতিক বিপ্লবটা আমাগো শুরু করতে হবে।’ সেই নাটকটা আমাদের করা হয়নি। কিন্তু বহুদিন আনিস ভাই অভিনয়ের জন্য পাত্র-পাত্রী খুঁজতেন। তিনি তখন ছাত্ররাজনীতির সশস্ত্র ক্যাডারদের দিয়ে অভিনয় করাতে চেয়েছিলেন।
আমি এখনো মাঝে মাঝে অবাক হয়ে সেই মানুষটার চিন্তার স্রোত আর স্বপ্ন দেখার মাত্রাটা নিয়ে ভাবি। ভেবে আরও অবাক হই। আনিস ভাইয়ের মতো এ রকম কাউকে পেলাম না আর! আনিস ভাই পারিপাশির্^কের নানামুখী চাপে, তার নিজের একরোখা চেতনাস্রোতের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিটা হারিয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে সবার অভিযোগ ছিল, তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন অনেকটাই। এই কাহিনির শেষ অধ্যায়ে আনিস রহমান ঢাকা ছেড়ে আবার ফিরে যান তার গ্রামে। আমাকে বলেছিলেন, ‘কবি, আমি গ্রামের পোলা, গ্রামে যাই। তবে গ্রাম দিয়া শহর ঘেরাও করতে আবার ফিরে আসব।’ আনিস ভাই কোনো দিন ফিরে আসেননি। আরও অনেক বছর পর সেখানেই তার মৃত্যু হয়। আমি ভাবি, মানুষের স্বপ্নের কি মৃত্যু হয়? হয়তো এই শহরে সেই সব এলোমেলো, অনির্দিষ্ট দিনের স্মৃতি ভেতরে আনিস ভাইয়ের স্বপ্ন আর চেতনার জেদি, একরোখা স্রোত আমাদের কারও কারও মনে বেঁচে থাকল।
সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে মোটরসাইকেল চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে চায় সরকার। এরই মধ্যে ঢাকাসহ শহরের ভেতরে মোটরসাইকেলের সর্বোচ্চ গতি ৩০ কিলোমিটার করাসহ বেশ কটি খসড়া নীতিমালা করতে যাচ্ছে সরকার। কিন্তু খসড়া এই নীতিমালায় ইতিবাচক দিকগুলোর পাশাপাশি কিছু নেতিবাচক দিক রয়েছে বলে দাবি করছেন বাইকাররা। তারা খসড়া এই নীতিমালার কিছু সংশোধনের দাবি জানান।
বাইকাররা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার একটি ভালো উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে মোটরসাইকেলে দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য। কিন্তু শহরে একই রাস্তায় দুই ধরনের গতিতে চললে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যায়। কারণ মোটরসাইকেল চলার জন্য শহরে সেভাবে লেন নেই। তাই এত কিছুর পরও যানজটের শহরে তবুও প্রয়োজন মোটরসাইকেল।
সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র খসড়া এই নীতিমালা বিষয়ে জানা যায়, বাংলাদেশে বিক্রয়, বিপণন ও সড়কে চলাচলকারী প্রায় সব মোটরসাইকেলই স্পোর্টি শ্রেণির, যা অপেক্ষাকৃত দুর্ঘটনাপ্রবণ। অন্যদিকে স্কুটি মোটরসাইকেল তুলনামূলকভাবে নিরাপদ। এজন্য নীতিমালায় স্কুটি মোটরসাইকেলের প্রসার এবং স্পোর্টির ব্যবহার কমানোর ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। রাইড শেয়ারিং সার্ভিসে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের চালককে কর্র্তৃপক্ষ কর্র্তৃক নির্ধারিত পোশাক ও রঙের হেলমেট পরিধান করার কথা বলা হয়েছে। আর জরুরি প্রয়োজনে স্বল্প দূরত্বে যাতায়াতের জন্য মোটরসাইকেল ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দূরের পথে মহাসড়কসহ সর্বত্র মোটরসাইকেলের চলাচল দেখা যায়। বিশেষ করে উৎসবের সময় মোটরসাইকেলের ব্যবহার বহুগুণ বেড়ে যায়। তাই ঈদ বা দুর্গাপূজার মতো উৎসব বা পার্বণকালীন সময়ে ১০ দিন জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলতে পারবে না। যেকোনো সড়কে গর্ভবতী নারী, বয়স্ক ব্যক্তি ও ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের মোটরসাইকেলের আরোহী হিসেবে নেওয়া যাবে না।
এই খসড়া নীতিমালা তৈরিতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্র্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), পুলিশ এবং সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের প্রতিনিধিরা কাজ করেছেন।
মো. যুবায়ের নামে এক বাইকার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যানজটের শহরে বাইক ২৫ থেকে ৪০ কিলোমিটার গতিতে বেশির ভাগ সড়কে চলাচল করা হয়। অনেক সড়কে আবার ২০ কিলোমিটার গতিতেও চলাচল করা যায় না যানজটের জন্য। তবে যখন রাস্তা স্বাভাবিক থাকে তখন নতুন এই নীতিমালা অনুযায়ী মোটরসাইকেল ৩০ কিলোমিটার গতিতে চলাচল করলেও প্রাইভেট কার এই গতিতে চলবে না। তখন দুর্ঘটনার একটা আশঙ্কা রয়ে যাবে নতুন এই নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা অধরা ইয়াসমিন নামে এক নারী আড়াই বছর ধরে ঢাকায় স্কুটি চালায়। তিনি জানান, ‘গণপরিবহনে নারীদের যাতায়াতে হেনস্তার ঘটনার জন্য গণপরিবহনে ওঠা এক ধরনের হয়রানি। তার মধ্যে আবার গণপরিবহনে ভাড়া-নৈরাজ্যের স্বীকার হতে হয়। এজন্য গণপরিবহনে ব্যবহার না করে বিকল্প বাহন হিসেবে মোটরসাইকেল ও স্কুটি ব্যবহার করে অনেক নারী। এখন গতির বিষয় যে নিয়ম মানতে বলা হচ্ছে এই নিয়ম মানতে হলে বাইকারদের জন্য আলাদা লেন করে দেওয়া হোক।
নতুন এই নিয়মে শহরে বাইক চললে অন্য গাড়ির গতি কমে যাবে বলে দাবি করেন প্রাইভেট কারচালক মো. জাকির হোসেন। তিনি দেশ রূপান্তরকে জানান, শহরে মোটরসাইকেলকে যদি সর্বোচ্চ ৩০ কিলোমিটার গতি সীমাবদ্ধ করে, তাহলে আমাদের প্রাইভেট কারসহ অন্য যানবাহনের গতি কমে যাবে। তখন আরও যানজট বাড়বে।
পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী মো. রজ্জব আলী জানান, মোটরসাইকেল খসড়া নীতিমালার নামে চালকদের যেন হয়রানি না করা হয়, সেদিক বিবেচনায় আনা দরকার। এখন ঈদের সময় গণপরিবহন ভালোভাবে ব্যবস্থা না করে মোটরসাইকেল বন্ধ করার কথা বলছে। এগুলো তো বাস মালিকদের স্বার্থের জন্য করা হলো না?
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশে দিনের পর দিন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বাড়ছে। এটা সবাই বিভিন্ন সময় আমাদের প্রতিবেদনে দেখে আসছে। কিন্তু নতুন যে নীতিমালার কথা বলা হচ্ছে এগুলো কি ভালোভাবে মনিটরিং করা হবে? আর আগে যে নীতিমালা ছিল সেগুলো তো সেভাবে বাস্তবায়ন করা হয়নি। তার মধ্যে নতুন যে নীতিমালা করা হয়েছে তার মধ্যে ঈদের সময় বন্ধের ছুটিতে মোটরসাইকেল চালানো যাবে না। কিন্তু তার আগে তো যাত্রীদের জন্য সে সময়ে গণপরিবহনের ভালোভাবে ব্যবস্থা করতে হবে। বিকল্প ব্যবস্থা না করে এভাবে বন্ধ করার তো কোনো মানে নেই। তবে সরকার দেশের দুর্ঘটনা কমানোর জন্য দুর্ঘটনার কারণ মনিটরিং করে আরও ভালো নীতিমালা করবে, সে প্রত্যাশা করছি।
পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. এম শামসুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, দুর্ঘটনার পরিসংখ্যানে দেখা যায় মৃত্যুর প্রায় ৪০ শতাংশই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় হয়ে থাকে। তাই সরকার একটি নীতিমালা করতে চাচ্ছে এটি ভালো খবর। কিন্তু শুধু নীতিমালার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে সড়কে দুর্ঘটনা কমানো যাবে না। এটিও চিন্তা করতে হবে সড়কে কীভাবে গণপরিবহনের মান বাড়িয়ে মোটরসাইকেল কমানো যায়। কারণ মোটরসাইকেল তো গণপরিবহনের বিকল্প বাহন হতে পারে না। আবার নীতিমালার নামে মোটরচালকদের যেন হয়রানি না করে সেটিও দেখতে হবে।
পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানি) সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ ঘিরে সহিংসতা ও বাড়িঘরে হামলা-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আরও আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে মোট গ্রেপ্তারের সংখ্যা দাঁড়াল ১৭৩ জনে। এ ছাড়া গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে নতুন করে আরও তিনটি মামলা করা হয়েছে।
এর মধ্যে পঞ্চগড় সদর থানায় দুটি ও বোদা থানায় একটি মামলা হয়েছে। এতে সদর থানার মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩টি এবং বোদা থানায় মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩টিতে। এসব মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ১২ হাজারের বেশি।
এদিকে গতকাল জুমার নামাজের পর নতুন করে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা যাতে না ঘটে সে জন্য সকাল থেকেই আহমদিয়া সম্প্রদায়ের আবাসস্থলসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট এবং আহমদিয়াদের দুটি মসজিদের আশপাশে পুলিশ ও র্যাবের পর্যাপ্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়। বিশেষ করে জেলা শহরের উপকণ্ঠে আহম্মদনগর ও শালশিড়ি এলাকার আহমদিয়া সম্প্রদায়ের দুটি মসজিদের পাশে এবং তাদের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানো হয়। গত ৩ মার্চের (শুক্রবার) সংহিসতার পর উত্তপ্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও এখনো জেলাজুড়ে বিরাজ করছে গ্রেপ্তার আতঙ্ক। গ্রেপ্তারের সংখ্যাও বাড়ছে। পুলিশের পাশাপাশি গ্রেপ্তার অভিযান চালাচ্ছে র্যাব ও বিজিবি। তবে পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হচ্ছে, সহিংসতায় জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে জেলার পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা বলেন, ‘পুলিশ ও র্যাবের অভিযান চলমান রয়েছে। ভিডিও ও সিসিটিভি ফুটেজ এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নাশকতায় অংশগ্রহণকারী দুষ্কৃতকারীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। কোনো সাধারণ নিরীহ মানুষকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। শুক্রবার জুমার নামাজ, তাই শহরে ও আহমদিয়া সম্প্রদায়ের আবাসস্থলের সব গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ও আহমদিয়াদের দুটি মসজিদের আশপাশে পর্যাপ্তসংখ্যক পুলিশ ও র্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়। পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত ও স্বাভাবিক রয়েছে।’
গতকাল জুমার নামাজের পর পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা ও জেলা প্রশাসক (ডিসি) জহুরুল ইসলাম গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে শহরের বিভিন্ন পয়েন্ট পরিদর্শন করেন। এ সময় উপস্থিতি ছিলেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাকিবুল হাসান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুদুল হক, সদর থানার ওসি আবদুল লতিফ মিঞা, সদর থানার এসআই আবদুল কাইয়ুম প্রমুখ। এ সময় জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ও স্বাভাবিক রয়েছে। তবে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় মাঠে তৎপর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।’
ঠাকুরগাঁওয়ে বাইসাইকেল চালিয়ে কোচিংয়ে যাওয়ার পথে পিকআপ ভ্যানের চাপায় সপ্তম শ্রেণির এক স্কুলছাত্র প্রাণ হারিয়েছে। তার নাম রাব্বি (১৫)। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় মহাসড়কে ভূল্লী বাজারে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
রাব্বি উপজেলার বগুলাডাঙ্গী পাবনাপাড়ার মতিয়ার রহমানের ছেলে, সে বগুলাডাঙ্গী উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। এ ঘটনায় স্থানীয়রা আধা ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং স্থানীয়রা অবরোধ প্রত্যাহার করে নিলে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়।
ভূল্লী থানার ওসি একেএম আতিকুর রহমান জানান, ওই স্কুলছাত্র সাইকেল চালিয়ে কোচিংয়ে যাচ্ছিল। এ সময় পঞ্চগড়গামী একটি পিকআপ ভ্যান পেছন থেকে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই সে মারা যায়। এ ঘটনায় ভ্যানটিকে আটক করেছে হাইওয়ে থানা পুলিশ।
পটুয়াখালীতে মোটরসাইকেল আরোহী নিহত: পটুয়াখালীর লেবুখালী-বগা আরঅ্যান্ডএইচ সড়কের বাইতুল রুহুল আমীন কমপ্লেক্স এলাকায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এক সার্জেন্ট নিহত হয়েছেন। তার নাম আবু জাফর শাহীন (৪০)। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার মুরাদিয়া ইউনিয়নের সন্তোষদি গ্রামের সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট আবু জাফর শাহীন নিজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে মোটরসাইকেল করে বাড়ি ফিরছিলেন। এই সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন। পরে পথচারীরা অজ্ঞান অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত ‘ঘোষণা করেন।
আবু জাফর শাহীন চাকরি থেকে অবসর নিয়ে মুরাদিয়ার গ্রামের বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলে করে লেবুখালী শেখ হাসিনা সেনানিবাসের সামনে ওষুধের ব্যবসা করতেন।
মতিঝিলে বাসের ধাক্কায় ট্রাকচালক নিহত : রাজধানীর মতিঝিলে বাসের ধাক্কায় আ. জলিল (৪৫) নামে এক ট্রাকচালক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন রিকশাচালকসহ দুজন। গত বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১২টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। মুমূর্ষু অবস্থায় জলিলকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাত দেড়টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার আ. রশিদের ছেলে জলিল শাহ সিমেন্ট কোম্পানির ট্রাকচালক।
মতিঝিল থানার এসআই জহুরুল ইসলাম জানান, রাতে মতিঝিল বিদ্যুৎ অফিসের সামনের রাস্তায় গাড়ি পার্কিং করে চা পান করছিলেন জলিল। তখন সেঁজুতি ট্রাভেলস নামে একটি বাস এসে প্রথমে একটি রিকশাকে ধাক্কা দেয়। পরে জলিলকে ধাক্কা দেয়। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
তিনি আরও জানান, এ দুর্ঘটনায় রিকশাচালক ও এক যাত্রী আহত হয়েছেন। তবে তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। ঘটনার পরপরই সেঁজুতি ট্রাভেলসের বাসটি জব্দ ও এর চালককে আটক করা হয়েছে।
ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী দম্পতি নিহত : গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী স্বামী-স্ত্রী নিহত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকালে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে উপজেলার খাড়াজোড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর ট্রাকটি আটক করেছে পুলিশ।
নিহতরা হলেন গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের ফুলবাড়ি এলাকার লোকমান আলীর ছেলে ওহাব আকন্দ (৩৫) ও তার স্ত্রী তামান্না আক্তার (২২)।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে পুলিশ জানায়, স্থানীয় একটি পোশাক কারখানার কর্মী ওহাব আকন্দ ও তার স্ত্রী কালিয়াকৈর উপজেলার পল্লীবিদ্যুৎ এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। গতকাল পোশাক কারখানা ছুটি থাকায় তারা স্বামী-স্ত্রী দুজনে মোটরসাইকেল করে গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে যাচ্ছিলেন। পথে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে উপজেলার খাড়াজোড়া এলাকায় একটি ট্রাক তাদের মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। এতে দুজন মহাসড়কের ওপর ছিটকে পড়ে। পরে ঘটনাস্থলেই স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে হাইওয়ে পুলিশ নিহতদের লাশ উদ্ধার করে। এরপর লাশ তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
সালনা (কোনাবাড়ি) হাইওয়ে থানার ওসি আতিকুর রহমান জানান, ট্রাকটি আটক হলেও চালক ও সহযোগী পালিয়ে গেছে।
সাভারে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি গবেষণাকেন্দ্রে নির্মাণাধীন একটি বহুতল ভবনের ছাদ ধসে পড়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে উপজেলার গণকবাড়িতে গবেষণা প্রতিষ্ঠানের নির্মাণাধীন ১২তলা ক্যানসার হাসপাতালের ১০তলায় এ ঘটনা ঘটে।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, ভবনটির ১০তলার ছাদ ঢালাইয়ের জন্য কাঠামো নির্মাণ (সেন্টারিং) করা হয়েছিল। সেখানে বেঁধে রাখা রডের কাঠামোটি ধসে পড়ে অন্তত ১৬ শ্রমিক আহত হন।
তাদের উদ্ধার করে পাশের শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে হাসপাতালে ভর্তি করেন ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ডিইপিজেড) ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কর্মীরা। তবে ছাদ ধসের পরপরই ভবনটির নির্মাণকাজের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার ও তদারকির দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলীসহ অন্য শ্রমিকরা সেখান থেকে পালিয়ে যান।
ডিইপিজেড ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার জহিরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্মাণাধীন ভবনটির ১০তলার ছাদ ঢালাইয়ের জন্য করা সেন্টারিং ভেঙে পড়ে অন্তত ১৬ জন শ্রমিক আহত হয়েছে। তাদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে তাদের বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘নির্মাণাধীন ভবনের ইঞ্জিনিয়ার ও ঠিকাদারসহ অন্য শ্রমিকরা পালিয়ে গেছেন। ভবনটির ধসে যাওয়া অংশে কেউ আটকে আছেÑ এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। সেখানকার কর্র্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি আরবের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে (এসইজেড) জমির প্রস্তাব দিয়েছেন এবং তেলসমৃদ্ধ দেশটির কাছ থেকে বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ চেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে আরও সৌদি বিনিয়োগ চাই।’
সফররত সৌদি বাণিজ্যমন্ত্রী ড. মাজেদ বিন আবদুল্লাহ আল কাসাবির নেতৃত্বে ৯ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সাক্ষাৎ করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী এ অনুরোধ জানান। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
প্রধানমন্ত্রী সৌদি আরবকে বাংলাদেশে তেল শোধনাগার স্থাপনেরও প্রস্তাব দেন যেখানে অপরিশোধিত তেলসহ সব ধরনের তেল পরিশোধন করা যায়। বৈঠকে উভয়ে পারস্পরিক স্বার্থে উভয় দেশের ব্যবসা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা করেন।
সৌদি আরবের মন্ত্রী বলেন, তার দেশের শীর্ষ বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিশেষ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। এ প্রসঙ্গে তিনি বাংলাদেশে আমলাতান্ত্রিক বিলম্ব সমাধানের মাধ্যমে বিনিয়োগ পদ্ধতি সহজীকরণের আহ্বান জানান। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে বিনিয়োগ পদ্ধতি সহজ ও দ্রুত করার জন্য বলেছেন। প্রতিবেশী দেশগুলোতে বিশাল বাজার থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেসব দেশের সঙ্গে জলপথসহ সব পথে কানেকটিভিটি জোরদার করার মাধ্যমে তার সরকার পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা সহজ ও মসৃণ করতে কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা নদী খনন করে জলপথের নাব্য বাড়ানোর মাধ্যমে জলপথকে সচল করে তুলছে।
সরকারপ্রধান বলেন, তার সরকার সৌদি আরবে যাওয়ার আগে বাংলাদেশি শ্রমিকদের আরবি ভাষা ভালোভাবে জানার সুবিধার্থে একটি আরবি ভাষা ইনস্টিটিউট তৈরি করতে চায়, যাতে তারা আরবি ভাষার লোকদের সঙ্গে সহজে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে।
সৌদি মন্ত্রী বলেন, তাদের ক্রাউন প্রিন্স বাংলাদেশ সফরে আগ্রহী। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সৌদি ক্রাউন প্রিন্সকে গ্রহণ করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। প্রধানমন্ত্রীকে ওমরাহ পালনের আমন্ত্রণ জানান সৌদি মন্ত্রী।
সৌদি মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ও উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন। প্রধানমন্ত্রী সৌদি আরবের দ্রুত উন্নয়নেরও প্রশংসা করেন।
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সৌদি মন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
ড. মাজেদ বিন আবদুল্লাহ আল কাসাবি বাংলাদেশে সৌদি বিনিয়োগের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে আমাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারি। তিনি বলেন, গত ১০ মাসে ৬ লাখ ৫০ হাজার বাংলাদেশি চাকরিপ্রার্থী সে দেশে গেছে।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ এবং ঢাকায় সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ইসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলান এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনকে বলা হয় ‘লাশের সাক্ষ্য’। সেই প্রতিবেদনে প্রায়ই ভুল থাকছে। হত্যা হয়ে যাচ্ছে আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনা। দেশের মর্গগুলোর আধুনিকায়ন না হওয়া, চিকিৎসকদের অদক্ষতা এবং মর্গে আসার আগেই মরদেহের আলামত নষ্ট হয়ে যাওয়া ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ভুলের অন্যতম কারণ। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য এরকমই।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের বেশিরভাগ মর্গে মরদেহের ভিসেরা বা বিভিন্ন নমুনা সংরক্ষণের আধুনিক সুবিধাসংবলিত জায়গা নেই। এসব ধারণের জন্য কনটেইনার, প্রিজারভেটিভ বা রাসায়নিকের সরবরাহও প্রয়োজনের তুলনায় কম। অনেক সময় প্রিজারভেটিভ না থাকলে লবণ পানির সাহায্যে মর্গে লাশ সংরক্ষণ করা হয় এবং হিস্টোপ্যাথলজিক্যাল ল্যাবে যেসব স্যাম্পল বা নমুনা পাঠানো হয়, সেসব ভালোমানের ফরমালিন দিয়ে সংরক্ষিত করে পাঠানো হয় না। ফলে আলামত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনেও ভুলের আশঙ্কা বাড়ে। কখনো চিকিৎসক প্রভাবিত হয়েও ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেন।
ময়নাতদন্তসংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা বলেন, আমাদের দেশে আধুনিক মর্গ ব্যবস্থাপনা নেই। তাছাড়া লাশ মর্গে আসার আগেই অনেক আলামত নষ্ট হয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে প্রথমে থানায় নেয়; তারপর থানা থেকে নেয় মেডিকেল কলেজে। এরপর অ্যাম্বুলেন্স, লেগুনা বা ট্রাকে বা ভ্যানে করে আনে মর্গে। এত আলামত নষ্ট হয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে। এসব কারণে ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আসে।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ময়নাতদন্তের ভুল প্রতিবেদনের প্রধান কারণ আধুনিক যন্ত্রপাতি ও আধুনিক মর্গের অভাব। দ্বিতীয় কারণ, লাশ যখন আমাদের কাছে আসে তখন আমরা সিন অব দ্য ক্রাইম (অপরাধের দৃশ্য) ভিজিট করি না। ফলে অনেক ইনফরমেশন ধরা পড়ে না। উন্নতবিশ্বে কোথাও অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে পুলিশ ওই স্থানকে হলুদ টেপ দিয়ে ঘিরে রাখে এবং সবার আগে ভিজিট করে একজন ফরেনসিক স্পেশালিস্ট। ওখান থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগৃহীত হয়ে মর্গে চলে আসে। মর্গে লাশ পাঠায় পুলিশ, পরে পোস্টমর্টেম করে সংগৃহীত তথ্য-উপাত্তের সঙ্গে মরদেহের ফাইন্ডিংস মিলিয়ে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। সেটাই সঠিক ও নির্ভরযোগ্য হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এমন হয় না।’
ময়নাতদন্ত কী : খুন বা অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর ভুক্তভোগীর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানার জন্য একজন ফরেনসিক চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞ মরদেহের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অঙ্গ বা অঙ্গবিশেষের গভীর নিরীক্ষণ করেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করে মন্তব্যসহ যে প্রতিবেদন দেওয়া হয় তাই পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন। তদন্তকারী কর্মকর্তা যদি মনে করেন, ময়নাতদন্ত হওয়া জরুরি, তখন মৃতদেহ সিভিল সার্জন বা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়।
সম্প্রতি ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আত্মহত্যা ও রেল দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর কথা উল্লেখ থাকা ২২টি মামলা তদন্ত করে পিবিআই জানায়, এগুলো ছিল পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। ওই মামলাগুলোতে পুলিশের অন্যান্য সংস্থা তদন্ত করে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছিল।
পিবিআইপ্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হত্যা বা অপমৃত্যুর মামলার তদন্তে ময়নাতদন্তের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভালো ময়নাতদন্ত মামলার রহস্য উদঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। অন্যদিকে ময়নাতদন্ত সঠিক না হলে তদন্ত ভিন্ন পথে মোড় নেয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তদন্তকারী কর্মকর্তাকে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে সাহায্য করে, ঘটনার রহস্য উদঘাটনে দারুণভাবে সহায়তা করে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিটফোর্ড বা স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মর্গে ২০২১ সালে ৭৪০টি, ২০২২ সালে ৬০০টি ও চলতি বছর ১৫ মে পর্যন্ত ১৪৫টি মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে। গত ১৫ মে দুপুরে সেখানকার মর্গে গিয়ে দেখা গেছে জরাজীর্ণ দশা। দুটি মরদেহ পড়ে আছে পোস্টমর্টেমের অপেক্ষায়। মর্গ সহকারী নাম প্রকাশ না করে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘মর্গের লাশ রাখার একমাত্র ফ্রিজটি তিন বছর ধরে নষ্ট। ময়নাতদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় মালামালের সংকট সবসময়ই থাকে। নেই আধুনিক কোনো সুবিধা। তিনজন মর্গ সহকারীই বছরের পর বছর চুক্তিভিত্তিতে কাজ করছেন।’
জানা গেছে, রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য মর্গের দশা একই।
ময়নাতদন্ত সম্পর্কিত সমস্যা নিয়ে পিবিআইয়ের এক প্রতিবেদনে দেশের মর্গসংশ্লিষ্টদের ফরেনসিক বিষয়ে আধুনিক ও বিশ্বমানের প্রশিক্ষণের অভাব, বিশেষজ্ঞ ফরেনসিক চিকিৎসকের তুলনায় লাশের সংখ্যা বেশি, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও হিমাগারসহ মানসম্মত অবকাঠামো না থাকাকে ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের জন্য দায়ী করা হয়েছে। এ ছাড়া মর্গ অ্যাসিস্ট্যান্ট বা ডোমের স্বল্পতা, জটিল ও চাঞ্চল্যকর মরদেহের ময়নাতদন্তের ক্ষেত্রে বোর্ড গঠন করে ময়নাতদন্ত না করা, আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা থাকায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ময়নাতদন্ত কাজে অংশ নিতে চান না বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ময়নাতদন্ত বিষয়ে পিবিআইয়ের প্রতিবেদন ও দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বাংলাদেশের মর্গগুলোতে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ ও আলোর ব্যবস্থাসহ আধুনিক অবকাঠামো ও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির ঘাটতি রয়েছে। অনেক জেলায় মর্গে বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে জেনারেটর নেই। অনেক জেলায় মর্গে পর্যাপ্ত দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল নেই। বংশ পরম্পরায় মর্গ অ্যাসিস্ট্যান্ট বা ডোমরা ময়নাতদন্তের সহযোগী হিসেবে কাজ করলেও তাদের কোনো মৌলিক প্রশিক্ষণ নেই। তাছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ ব্যস্ত মর্গগুলোতে মর্গ অ্যাসিস্ট্যান্টদের স্বল্পতা প্রকট। অনেক জায়গায় দেখা গেছে, লাশ সংরক্ষণের সুরক্ষিত পরিবেশ ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার অভাব। বিদেশি নাগরিক ও বিশেষ ক্ষেত্রে মরদেহ প্রচলিত নিয়মে হিমঘরে সংরক্ষণ করার প্রয়োজন পড়ে। অল্পসংখ্যক মর্গে কুলিং বা ফ্রিজিং বা মর্চুয়ারি কুলার সিস্টেম থাকলেও অধিকাংশ সময় নষ্ট থাকে বলে গরমের সময় লাশে দ্রুত পচন ধরে।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে মৃত্যুর সম্ভাব্য সময়ের উল্লেখ থাকা জরুরি। মর্গে আধুনিক প্রযুক্তি না থাকায় অভিমত প্রদানে বিশেষজ্ঞদের সমস্যা হয়। পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ১ জুন রাজধানীর কলাবাগান থানা এলাকায় নিজ বাসা থেকে ডা. কাজী সাবিরা রহমান লিপির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি খুন হয়েছিলেন। মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে। খুনের ধরন মোটামুটি স্পষ্ট হলেও ঘটনার রহস্য উন্মোচনে খুনের ‘সম্ভাব্য সময়’ জানার জন্য পিবিআই ঢামেক ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকদের সুযোগ-সুবিধা কম হওয়ায় চিকিৎসা শিক্ষায় এ শাখাটি অবহেলিত এবং কম গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত। ফলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে বিশেষজ্ঞ ফরেনসিক ডাক্তারের স্বল্পতা রয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে আরেকটি উদাহরণ দেওয়া হয়েছে, সিএমএম আদালতের নির্দেশে ২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি পিবিআই চট্টগ্রাম মহানগরের লালমোহন থানা এলাকা থেকে কামাল মাঝির (৪৫) ৩৮ মাসের পুরনো মরদেহ তুলে ভোলার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যায়। সেখানে কর্মরতদের কারও এ ধরনের মরদেহের ময়নাতদন্তের অভিজ্ঞতা না থাকায় মরদেহটি ভোলা থেকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে নেওয়া হয়। দায়িত্বরত প্রভাষক জানান, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপকের পদে কেউ কর্মরত নেই। তিনি মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য অন্য কোনো মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে নেওয়ার অনুরোধ করেন। পিবিআই মরদেহটি বরিশাল থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সংশ্লিষ্ট বিভাগে নিয়ে যায়।
হত্যা কেন ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনা হিসেবে আসে জানতে চাইলে ফরেনসিক চিকিৎসকরা জানান, কাউকে হত্যা করে রেললাইনে ফেলে রাখলে তার ওপর দিয়ে ট্রেন গিয়ে একেবারে ক্ষতবিক্ষত হয়ে হাড়গোড় বেরিয়ে দলিত হয়ে যায়। একে চিকিৎসাশাস্ত্রে মিউটিলেডেট লাশ বলে। ওইসব লাশের আলামত বোঝা যায় না। আগের আলামত নষ্ট হয়ে নতুন আলামত তৈরি হয়। তখন রেল দুর্ঘটনাই মনে হয়। এতে অনেক সময় চিকিৎসকরা মিসগাইডেড হয়।
ফরেনসিক বিভাগে চিকিৎসকের সংকট বিষয়ে এক চিকিৎসক বলেন, ‘আমি ঢাকায়ে আছি, অথচ আমাকে কক্সবাজার বা পঞ্চগড় গিয়ে স্বাক্ষর দিতে হচ্ছে। বাইরে যাওয়ার, বিশেষ করে একা, বিপদ আছে অনেক, সংক্ষুব্ধ পক্ষ হামলা চালাতে পারে। এজন্য অনেক চিকিৎসক এ বিভাগে থাকতে চান না। এখানে সুবিধাও অনেক কম। মফস্বলে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসককে মিসগাইড করে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে রিপোর্ট লেখানো হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ফ্যাটি লিভার রোগটি এখন ঘরে ঘরে। প্রাথমিকভাবে এই রোগের লক্ষণ না বুঝতে পারলে, অনেক সমস্যাই দেখা দিতে পারে। চিকিৎসকরা জানান, এই রোগ থেকে বাঁচতে জীবনধারায় বদল আনতে হবে।
কোন কোন উপসর্গ দেখলে সতর্ক হবেন? শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া, হঠাৎ ভুঁড়ি বেড়ে যাওয়া, হলুদ রঙের দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব, ওজন অত্যন্ত বেড়ে যাওয়া, সারাক্ষণ ক্লান্তিভাব— এই উপসর্গগুলি ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ হতে পারে। অনেকের ধারণা, মদ্যপান করলেই এই রোগের ঝুঁকি বাড়ে। তবে কেবল মদ্যপান ছেড়ে দিলেই এই রোগের ঝুঁকি কমবে না। কম তেলমশলার খাবার খাওয়া, বাড়ির খাবারে অভ্যস্ত হওয়া, মদ ছেড়ে দেওয়া— এই অভ্যাসগুলিই লিভারকে ভাল রাখার অন্যতম উপায়। এই অসুখকে ঠেকিয়ে রাখতে ডায়েটের ওপর বিশেষ নজর দিতে হবে। তবে এগুলিই শেষ কথা নয়। লিভার ভাল রাখতে মেনে চলতে হয় আরও কিছু নিয়মকানুন। কিন্তু কী কী?
চিনির মাত্রা কমানো
সহজে রোগা হতে চেয়ে অনেকেই নিজের খুশি মতো ডায়েট প্ল্যান বানিয়ে নেন। চিনি বাদ দিয়ে দেদারে কৃত্রিম চিনির উপরেই ভরসা করেন। এতেই আসলে চরম ক্ষতি করছেন শরীরের। অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার অভ্যাস আমাদের লিভারের ব্যাপক ক্ষতি করে। ফ্রুকটোজ হোক কিংবা কৃত্রিম চিনি, লিভারের অসুখ ডেকে আনে।
ব্যথার ওষুধ কম খান
বেশকিছু বেদনানাশক ওষুধ লিভারের ক্ষতি করে। কিছু প্যারাসিটামল বা কোলেস্টেরলের ওষুধও লিভারের প্রভূত ক্ষতি করে। ঘুম না হলে অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঘুমের ওষুধ খেতে শুরু করেন। এই অভ্যাসের কারণে লিভারের জটিল রোগে ভুগতে হতে পারে।
পানি বেশি করে খান
শরীর থেকে যতটা দূষিত পদার্থ বার করে দিতে পারবেন, লিভার ততটাই সুস্থ থাকবে। তাই বেশি করে পানি খেতে হবে। তবেই প্রস্রাবের সঙ্গে শরীরের টক্সিন পদার্থগুলি বেরিয়ে যাবে। দিনে কয়েক বার গরম পানিতে পাতিলেবুর রস দিয়ে সেই পানি খান। ডায়েটে রাখুন টক দইয়ের মতো প্রোবায়োটিক।
পর্যাপ্ত ঘুম
সারাদিন কর্মব্যস্ততা আর রাত জেগে মোবাইলে চোখ রেখে সিনেমা দেখা— সব মিলিয়ে ঘুমের সঙ্গে আপস। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ঘুমের অভাব হলে তার প্রভাব পড়ে লিভারের উপরেও।
ওজন কমান
শুধু সুন্দর দেখানোর জন্যই নয়, লিভার সুরক্ষিত রাখতে চাইলেও কিন্তু ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আমাদের শরীরে কার্বহাইড্রেট-প্রোটিন-ফ্যাটের সঠিক ভারসাম্য থাকা ভীষণ জরুরি। তবে ইদানিং বাড়ির খাবার নয়, বরং রেস্তোরাঁর খাবার, রেড মিট, বাইরের ভাজাভুজি, প্যাকেটজাত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশি খেয়ে অভ্যস্ত। আর এর জেরেই শরীরে ট্রান্স ফ্যাটের মাত্রা বাড়ছে। লিভারের পক্ষে এই ফ্যাট মোটেই ভাল নয়।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।
প্রথম সেট ২৫ মিনিট, দ্বিতীয়টি ২৮ মিনিটে জিতলেন কার্লোস আলকারাজ। মনে হচ্ছিল কোয়ালিফায়ার ফ্যাভিও কোবোলিকে বুঝি উড়িয়েই দিচ্ছেন শীর্ষ বাছাই।
না, তৃতীয় সেটতে প্রতিরোধ গড়লেন ইতালিয়ান। সময় গড়ালো ঘন্টায়। শেষপর্যন্ত জয় এসেছে ৬৬ মিনিটে। ৬-০, ৬-২, ৭-৫ গেমে প্রথম রাউন্ডের ম্যাচ জিতে রাফায়েল নাদালের উত্তরসুরি ক্লে কোর্টের সর্বোচ্চ আসর শুরু করলেন।
নাদালের চোটজনিত অনুপস্থিতিতে শীর্ষবাছাই আলকারাজ। ২০২১ এ তৃতীয় রাউন্ড, গতবার কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিয়েছিলেন। এবার আরো এগোলে সেমিফাইনালে নোভাক জকোভিচের সংগে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা।
সে দেখা যাবে। আপাতত দ্বিতীয় রাউন্ডে আলকারাজকে টপকাতে হবে জাপানের টি. দানিয়লেকে।
আইপিএলের পঞ্চম শিরোপা জিততে চেন্নাই সুপার কিংসের চাই ১৫ ওভারে ১৭১ রান। আহমেদাবাদে রাত ১২.৪০ মিনিটে শুরু হবে খেলা। গুজরাট টাইট্যান্সের ২১৪ রানের জবাবে খেলতে নেমে ৩ বলে ৪ রান করার পর বৃ্স্টিতে বন্ধ হয় ফাইনাল। অর্থাৎ বাকি ১৪.৩ ওভারে আরো ১৬৭ রান চাই ধোনীর দলের।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।