
সাভারে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি গবেষণাকেন্দ্রে নির্মাণাধীন একটি বহুতল ভবনের ছাদ ধসে পড়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে উপজেলার গণকবাড়িতে গবেষণা প্রতিষ্ঠানের নির্মাণাধীন ১২তলা ক্যানসার হাসপাতালের ১০তলায় এ ঘটনা ঘটে।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, ভবনটির ১০তলার ছাদ ঢালাইয়ের জন্য কাঠামো নির্মাণ (সেন্টারিং) করা হয়েছিল। সেখানে বেঁধে রাখা রডের কাঠামোটি ধসে পড়ে অন্তত ১৬ শ্রমিক আহত হন।
তাদের উদ্ধার করে পাশের শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে হাসপাতালে ভর্তি করেন ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ডিইপিজেড) ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কর্মীরা। তবে ছাদ ধসের পরপরই ভবনটির নির্মাণকাজের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার ও তদারকির দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলীসহ অন্য শ্রমিকরা সেখান থেকে পালিয়ে যান।
ডিইপিজেড ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার জহিরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্মাণাধীন ভবনটির ১০তলার ছাদ ঢালাইয়ের জন্য করা সেন্টারিং ভেঙে পড়ে অন্তত ১৬ জন শ্রমিক আহত হয়েছে। তাদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে তাদের বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘নির্মাণাধীন ভবনের ইঞ্জিনিয়ার ও ঠিকাদারসহ অন্য শ্রমিকরা পালিয়ে গেছেন। ভবনটির ধসে যাওয়া অংশে কেউ আটকে আছেÑ এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। সেখানকার কর্র্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।’
সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে মোটরসাইকেল চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে চায় সরকার। এরই মধ্যে ঢাকাসহ শহরের ভেতরে মোটরসাইকেলের সর্বোচ্চ গতি ৩০ কিলোমিটার করাসহ বেশ কটি খসড়া নীতিমালা করতে যাচ্ছে সরকার। কিন্তু খসড়া এই নীতিমালায় ইতিবাচক দিকগুলোর পাশাপাশি কিছু নেতিবাচক দিক রয়েছে বলে দাবি করছেন বাইকাররা। তারা খসড়া এই নীতিমালার কিছু সংশোধনের দাবি জানান।
বাইকাররা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার একটি ভালো উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে মোটরসাইকেলে দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য। কিন্তু শহরে একই রাস্তায় দুই ধরনের গতিতে চললে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যায়। কারণ মোটরসাইকেল চলার জন্য শহরে সেভাবে লেন নেই। তাই এত কিছুর পরও যানজটের শহরে তবুও প্রয়োজন মোটরসাইকেল।
সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র খসড়া এই নীতিমালা বিষয়ে জানা যায়, বাংলাদেশে বিক্রয়, বিপণন ও সড়কে চলাচলকারী প্রায় সব মোটরসাইকেলই স্পোর্টি শ্রেণির, যা অপেক্ষাকৃত দুর্ঘটনাপ্রবণ। অন্যদিকে স্কুটি মোটরসাইকেল তুলনামূলকভাবে নিরাপদ। এজন্য নীতিমালায় স্কুটি মোটরসাইকেলের প্রসার এবং স্পোর্টির ব্যবহার কমানোর ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। রাইড শেয়ারিং সার্ভিসে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের চালককে কর্র্তৃপক্ষ কর্র্তৃক নির্ধারিত পোশাক ও রঙের হেলমেট পরিধান করার কথা বলা হয়েছে। আর জরুরি প্রয়োজনে স্বল্প দূরত্বে যাতায়াতের জন্য মোটরসাইকেল ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দূরের পথে মহাসড়কসহ সর্বত্র মোটরসাইকেলের চলাচল দেখা যায়। বিশেষ করে উৎসবের সময় মোটরসাইকেলের ব্যবহার বহুগুণ বেড়ে যায়। তাই ঈদ বা দুর্গাপূজার মতো উৎসব বা পার্বণকালীন সময়ে ১০ দিন জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলতে পারবে না। যেকোনো সড়কে গর্ভবতী নারী, বয়স্ক ব্যক্তি ও ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের মোটরসাইকেলের আরোহী হিসেবে নেওয়া যাবে না।
এই খসড়া নীতিমালা তৈরিতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্র্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), পুলিশ এবং সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের প্রতিনিধিরা কাজ করেছেন।
মো. যুবায়ের নামে এক বাইকার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যানজটের শহরে বাইক ২৫ থেকে ৪০ কিলোমিটার গতিতে বেশির ভাগ সড়কে চলাচল করা হয়। অনেক সড়কে আবার ২০ কিলোমিটার গতিতেও চলাচল করা যায় না যানজটের জন্য। তবে যখন রাস্তা স্বাভাবিক থাকে তখন নতুন এই নীতিমালা অনুযায়ী মোটরসাইকেল ৩০ কিলোমিটার গতিতে চলাচল করলেও প্রাইভেট কার এই গতিতে চলবে না। তখন দুর্ঘটনার একটা আশঙ্কা রয়ে যাবে নতুন এই নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা অধরা ইয়াসমিন নামে এক নারী আড়াই বছর ধরে ঢাকায় স্কুটি চালায়। তিনি জানান, ‘গণপরিবহনে নারীদের যাতায়াতে হেনস্তার ঘটনার জন্য গণপরিবহনে ওঠা এক ধরনের হয়রানি। তার মধ্যে আবার গণপরিবহনে ভাড়া-নৈরাজ্যের স্বীকার হতে হয়। এজন্য গণপরিবহনে ব্যবহার না করে বিকল্প বাহন হিসেবে মোটরসাইকেল ও স্কুটি ব্যবহার করে অনেক নারী। এখন গতির বিষয় যে নিয়ম মানতে বলা হচ্ছে এই নিয়ম মানতে হলে বাইকারদের জন্য আলাদা লেন করে দেওয়া হোক।
নতুন এই নিয়মে শহরে বাইক চললে অন্য গাড়ির গতি কমে যাবে বলে দাবি করেন প্রাইভেট কারচালক মো. জাকির হোসেন। তিনি দেশ রূপান্তরকে জানান, শহরে মোটরসাইকেলকে যদি সর্বোচ্চ ৩০ কিলোমিটার গতি সীমাবদ্ধ করে, তাহলে আমাদের প্রাইভেট কারসহ অন্য যানবাহনের গতি কমে যাবে। তখন আরও যানজট বাড়বে।
পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী মো. রজ্জব আলী জানান, মোটরসাইকেল খসড়া নীতিমালার নামে চালকদের যেন হয়রানি না করা হয়, সেদিক বিবেচনায় আনা দরকার। এখন ঈদের সময় গণপরিবহন ভালোভাবে ব্যবস্থা না করে মোটরসাইকেল বন্ধ করার কথা বলছে। এগুলো তো বাস মালিকদের স্বার্থের জন্য করা হলো না?
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশে দিনের পর দিন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বাড়ছে। এটা সবাই বিভিন্ন সময় আমাদের প্রতিবেদনে দেখে আসছে। কিন্তু নতুন যে নীতিমালার কথা বলা হচ্ছে এগুলো কি ভালোভাবে মনিটরিং করা হবে? আর আগে যে নীতিমালা ছিল সেগুলো তো সেভাবে বাস্তবায়ন করা হয়নি। তার মধ্যে নতুন যে নীতিমালা করা হয়েছে তার মধ্যে ঈদের সময় বন্ধের ছুটিতে মোটরসাইকেল চালানো যাবে না। কিন্তু তার আগে তো যাত্রীদের জন্য সে সময়ে গণপরিবহনের ভালোভাবে ব্যবস্থা করতে হবে। বিকল্প ব্যবস্থা না করে এভাবে বন্ধ করার তো কোনো মানে নেই। তবে সরকার দেশের দুর্ঘটনা কমানোর জন্য দুর্ঘটনার কারণ মনিটরিং করে আরও ভালো নীতিমালা করবে, সে প্রত্যাশা করছি।
পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. এম শামসুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, দুর্ঘটনার পরিসংখ্যানে দেখা যায় মৃত্যুর প্রায় ৪০ শতাংশই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় হয়ে থাকে। তাই সরকার একটি নীতিমালা করতে চাচ্ছে এটি ভালো খবর। কিন্তু শুধু নীতিমালার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে সড়কে দুর্ঘটনা কমানো যাবে না। এটিও চিন্তা করতে হবে সড়কে কীভাবে গণপরিবহনের মান বাড়িয়ে মোটরসাইকেল কমানো যায়। কারণ মোটরসাইকেল তো গণপরিবহনের বিকল্প বাহন হতে পারে না। আবার নীতিমালার নামে মোটরচালকদের যেন হয়রানি না করে সেটিও দেখতে হবে।
আমি তখনো ‘শীতকাল কবে আসবে সুপর্ণা’ কবিতাটা পড়িনি। নীল জিনস জ্যাকেটের পকেটে শীত পুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাই। বাংলা সাহিত্যের প্রথম বর্ষের ছাত্র হিসেবে প্রয়াত শিক্ষক নরেন বিশ্বাসের ক্লাসে তার উদাত্ত কণ্ঠে বারবার শুনি, ‘চল চপলার চকিত চমকে চরণ করিছে বিচরণ...’। সস্তা সিগারেট খাই, এখানে-ওখানে গজিয়ে ওঠা আড্ডায় ঢুকে পড়ি। কোনো সুপর্ণার প্রেমেও পড়া হয়নি তখনো। তেমনি কোনো এক শীতের সকালে আনিস ভাইয়ের সঙ্গে আমার পরিচয়। তিনি তখনো গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক হননি। জলপাই রঙের একটা হান্টিং জ্যাকেট পরিহিত আনিস ভাই বিভাগের সামনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে পাইপ টানছিলেন। দৃশ্যটা চমকে ওঠার মতোই! তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন প্রখ্যাত সাংবাদিক খায়রুল আনোয়ার মুকুল। তিনি তখন একদা বন্ধ হয়ে যাওয়া দৈনিক বাংলা পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি।
আমার ভালো লেগে যায় রাগী, অস্থির অথচ হাসিমাখা মুখের মানুষ আনিস ভাইকে। প্রথম পরিচয়েই প্রশ্ন করেছিলেন, ‘সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়ের “আমি আরব গেরিলাদের সমর্থন করি” উপন্যাসটা পড়ছ?’ আনিস ভাই বেশির ভাগ সময় প্রমিত বাংলায় কথা বলতেন না। কথা বলার বিশেষ ভঙ্গিটাও তার প্রতিবাদ করার, প্রত্যাখ্যান করার অনুষঙ্গ ছিল। আমি মাথা নেড়ে পড়িনি জানাতেই বলেছিলেন, ‘পড়বা। পড়তে হবে। পড়ার কোনো বিকল্প নাই।’ সময়টা এমনই ছিল, ইয়াসির আরাফাত আর তার বিপ্লবী সংগঠন পিএলও যখন-তখন সংবাদের শিরোনাম হয়। আনিস ভাই পছন্দ করতেন আরাফাতকে। বন্ধু মহলে তাকে অনেকে মজা করে আনিস আরাফাত ডাকত। হয়তো সন্দীপনের উপন্যাসের জন্য প্রেমটা তার উসকে উঠেছিল আরব গেরিলাদের কারণে। সেদিন আমরা কথা বলতে বলতে চলে গিয়েছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তখন বিখ্যাত হাকিম ভাইয়ের চায়ের দোকানে। মনে আছে, আনিস ভাই সেদিনই লাইব্রেরি থেকে বার্ট্রান্ড রাসেলের ‘আনআর্মড ভিক্টরি’ বইটা আমাকে পড়ার জন্য দিয়েছিলেন। সদ্য পরিচিত আমাকে এ রকম একটা বই হুট করে দেওয়ায় খুব অবাক হয়েছিলাম। আবার একধরনের ভালো লাগা কাজ করেছিল। মনে হয়েছিল, অন্য ধরনের একজন মানুষের সঙ্গে পরিচয় হলো।
মেধাবী তরুণ আনিসুর রহমান অধ্যাপনা করলেও তার আচরণে গম্ভীর ভাবটা ছিল না। তার চলাফেরা, কথা বলার ভঙ্গি, জানার পরিধি সত্যিই অন্যদের থেকে খুব আলাদা ছিল। আর সেটাই আমার ভালো লেগেছিল। আনিস ভাইয়ের একটা কালো রোদচশমা ছিল। মাঝে মাঝে চোখ ঢেকে চা খেতেন হাকিম ভাইয়ের চায়ের দোকানের সামনে। দেখা হলেই হেসে বলতেন, ‘কী কবি, কেমন আছ?’
শীত পার হয়ে আমাদের সখ্য গ্রীষ্মে গড়ায়। তারপর পথ হাঁটে আরও অনেকট দূর। আনিস ভাইয়ের জানার বৃত্তটা অনেক দূর পর্যন্ত ছড়ানো ছিল। প্রাচীন সভ্যতা, চিত্রকলা, কবিতা, অ্যাস্ট্রোলজি, গদ্য সাহিত্য, পৃথিবীর বিভিন্ন বিপ্লব নিয়ে আলোচনা করতে ভালোবাসতেন। তার ছাত্রদের কাছে শুনতাম, পড়ানোর সময় তিনি এ ধরনের বিচিত্র বিষয় নিয়ে কথা বলতেন। একদিন হয়তো ক্লাসের সময়টা কাটিয়ে দিলেন শুধু চে গুয়েভারার ওপর বক্তৃতা দিয়ে।
খুব অদ্ভুত অদ্ভুত ভাবনা তার মাথায় ঘুরত। একদিন টিএসসির মোড় থেকে আমাকে ডেকে রিকশায় তুললেন। রিকশা চলছে ঢাকা মেডিকেল কলেজের দিকে। এ রকম প্রায়ই রিকশায় অনির্দিষ্ট ভ্রমণে যেতাম আমরা। রিকশায় বসেই বললেন, ফরাসি বিপ্লব দিবসে তিনি বিশাল লোহার কলম আর সিমেন্টের খাতা তৈরি করতে চান। আর সেই কলমটা তৈরি হবে একটা স্ট্রিট লাইটের পোস্ট দিয়ে। আমি তো অবাক পরিকল্পনা শুনে। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র, বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের রাজনৈতিক কর্মীদের মধ্যে আনিস ভাইয়ের বিশাল এক অনুগত বাহিনী ছিল। তিনি বললেন, সবাইকে কাজে লাগানো হবে পোস্টটা কাটার জন্য। তারপর সেটার মাথায় লোহা দিয়ে কলমের নিব তৈরি করে বসানো হবে। সিমেন্টের খাতাটা তৈরি করে সেটার ওপর রাখা হবে কলম। আনিস ভাইয়ের ভাবনাটা ছিল, পরবর্তী প্রজন্মকে লোহার কলম দিয়ে দৃঢ় আর সাহসী গদ্য লিখতে হবে। পুরো বিষয়টাই ছিল প্রতীকী। কিন্তু কী অদ্ভুত সুন্দর ছিল ভাবনাটা। যদিও কাজটা আমাদের কখনোই করা হয়নি।
আশির দশকে দেশে স্বৈরাচারী এরশাদবিরোধী আন্দোলন করছে ছাত্ররা। প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু টিয়ার গ্যাস আর বারুদের গন্ধে ভারী হয়ে থাকে। তেমনি এক পোড়া দিনে আমি রিকশায় কার্জন হলের দিকে যাচ্ছি। হঠাৎ দেখি বাংলা একাডেমির পাশেই একটা চায়ের টং দোকান থেকে আনিস ভাই ডাকছেন হাত নেড়ে। অগত্যা রিকশা ছেড়ে নেমে পড়ি। চায়ের অর্ডার দিয়েই আনিস ভাই বললেন, ‘শোনো মিয়া কবি, খালি কবিতা ভাবলে হইব? আমি ঠিক করছি মেঘনাদ বধ কাব্য নাটক করব। তুমি হবা মেঘনাদ। তোমার গায়ের রং কালো। দেবতাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা সেই অন্ত্যজ শ্রেণির বীর হিসেবে তোমাকে ভালো মানাবে।’ আনিস ভাইয়ের অদ্ভুত সব আইডিয়ার সঙ্গে তত দিনে আমি পরিচিত। ফলে ঘাবড়ে গেলাম না। আনিস ভাই সেদিন বলেছিলেন, ‘এইটা বিদ্রোহের যুগ। আমার ছাত্ররা রাজপথে লড়াই করছে। সাংস্কৃতিক বিপ্লবটা আমাগো শুরু করতে হবে।’ সেই নাটকটা আমাদের করা হয়নি। কিন্তু বহুদিন আনিস ভাই অভিনয়ের জন্য পাত্র-পাত্রী খুঁজতেন। তিনি তখন ছাত্ররাজনীতির সশস্ত্র ক্যাডারদের দিয়ে অভিনয় করাতে চেয়েছিলেন।
আমি এখনো মাঝে মাঝে অবাক হয়ে সেই মানুষটার চিন্তার স্রোত আর স্বপ্ন দেখার মাত্রাটা নিয়ে ভাবি। ভেবে আরও অবাক হই। আনিস ভাইয়ের মতো এ রকম কাউকে পেলাম না আর! আনিস ভাই পারিপাশির্^কের নানামুখী চাপে, তার নিজের একরোখা চেতনাস্রোতের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিটা হারিয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে সবার অভিযোগ ছিল, তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন অনেকটাই। এই কাহিনির শেষ অধ্যায়ে আনিস রহমান ঢাকা ছেড়ে আবার ফিরে যান তার গ্রামে। আমাকে বলেছিলেন, ‘কবি, আমি গ্রামের পোলা, গ্রামে যাই। তবে গ্রাম দিয়া শহর ঘেরাও করতে আবার ফিরে আসব।’ আনিস ভাই কোনো দিন ফিরে আসেননি। আরও অনেক বছর পর সেখানেই তার মৃত্যু হয়। আমি ভাবি, মানুষের স্বপ্নের কি মৃত্যু হয়? হয়তো এই শহরে সেই সব এলোমেলো, অনির্দিষ্ট দিনের স্মৃতি ভেতরে আনিস ভাইয়ের স্বপ্ন আর চেতনার জেদি, একরোখা স্রোত আমাদের কারও কারও মনে বেঁচে থাকল।
পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানি) সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ ঘিরে সহিংসতা ও বাড়িঘরে হামলা-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আরও আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে মোট গ্রেপ্তারের সংখ্যা দাঁড়াল ১৭৩ জনে। এ ছাড়া গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে নতুন করে আরও তিনটি মামলা করা হয়েছে।
এর মধ্যে পঞ্চগড় সদর থানায় দুটি ও বোদা থানায় একটি মামলা হয়েছে। এতে সদর থানার মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩টি এবং বোদা থানায় মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩টিতে। এসব মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ১২ হাজারের বেশি।
এদিকে গতকাল জুমার নামাজের পর নতুন করে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা যাতে না ঘটে সে জন্য সকাল থেকেই আহমদিয়া সম্প্রদায়ের আবাসস্থলসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট এবং আহমদিয়াদের দুটি মসজিদের আশপাশে পুলিশ ও র্যাবের পর্যাপ্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়। বিশেষ করে জেলা শহরের উপকণ্ঠে আহম্মদনগর ও শালশিড়ি এলাকার আহমদিয়া সম্প্রদায়ের দুটি মসজিদের পাশে এবং তাদের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানো হয়। গত ৩ মার্চের (শুক্রবার) সংহিসতার পর উত্তপ্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও এখনো জেলাজুড়ে বিরাজ করছে গ্রেপ্তার আতঙ্ক। গ্রেপ্তারের সংখ্যাও বাড়ছে। পুলিশের পাশাপাশি গ্রেপ্তার অভিযান চালাচ্ছে র্যাব ও বিজিবি। তবে পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হচ্ছে, সহিংসতায় জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে জেলার পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা বলেন, ‘পুলিশ ও র্যাবের অভিযান চলমান রয়েছে। ভিডিও ও সিসিটিভি ফুটেজ এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নাশকতায় অংশগ্রহণকারী দুষ্কৃতকারীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। কোনো সাধারণ নিরীহ মানুষকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। শুক্রবার জুমার নামাজ, তাই শহরে ও আহমদিয়া সম্প্রদায়ের আবাসস্থলের সব গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ও আহমদিয়াদের দুটি মসজিদের আশপাশে পর্যাপ্তসংখ্যক পুলিশ ও র্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়। পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত ও স্বাভাবিক রয়েছে।’
গতকাল জুমার নামাজের পর পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা ও জেলা প্রশাসক (ডিসি) জহুরুল ইসলাম গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে শহরের বিভিন্ন পয়েন্ট পরিদর্শন করেন। এ সময় উপস্থিতি ছিলেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাকিবুল হাসান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুদুল হক, সদর থানার ওসি আবদুল লতিফ মিঞা, সদর থানার এসআই আবদুল কাইয়ুম প্রমুখ। এ সময় জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ও স্বাভাবিক রয়েছে। তবে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় মাঠে তৎপর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।’
ঠাকুরগাঁওয়ে বাইসাইকেল চালিয়ে কোচিংয়ে যাওয়ার পথে পিকআপ ভ্যানের চাপায় সপ্তম শ্রেণির এক স্কুলছাত্র প্রাণ হারিয়েছে। তার নাম রাব্বি (১৫)। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় মহাসড়কে ভূল্লী বাজারে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
রাব্বি উপজেলার বগুলাডাঙ্গী পাবনাপাড়ার মতিয়ার রহমানের ছেলে, সে বগুলাডাঙ্গী উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। এ ঘটনায় স্থানীয়রা আধা ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং স্থানীয়রা অবরোধ প্রত্যাহার করে নিলে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়।
ভূল্লী থানার ওসি একেএম আতিকুর রহমান জানান, ওই স্কুলছাত্র সাইকেল চালিয়ে কোচিংয়ে যাচ্ছিল। এ সময় পঞ্চগড়গামী একটি পিকআপ ভ্যান পেছন থেকে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই সে মারা যায়। এ ঘটনায় ভ্যানটিকে আটক করেছে হাইওয়ে থানা পুলিশ।
পটুয়াখালীতে মোটরসাইকেল আরোহী নিহত: পটুয়াখালীর লেবুখালী-বগা আরঅ্যান্ডএইচ সড়কের বাইতুল রুহুল আমীন কমপ্লেক্স এলাকায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এক সার্জেন্ট নিহত হয়েছেন। তার নাম আবু জাফর শাহীন (৪০)। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার মুরাদিয়া ইউনিয়নের সন্তোষদি গ্রামের সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট আবু জাফর শাহীন নিজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে মোটরসাইকেল করে বাড়ি ফিরছিলেন। এই সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন। পরে পথচারীরা অজ্ঞান অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত ‘ঘোষণা করেন।
আবু জাফর শাহীন চাকরি থেকে অবসর নিয়ে মুরাদিয়ার গ্রামের বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলে করে লেবুখালী শেখ হাসিনা সেনানিবাসের সামনে ওষুধের ব্যবসা করতেন।
মতিঝিলে বাসের ধাক্কায় ট্রাকচালক নিহত : রাজধানীর মতিঝিলে বাসের ধাক্কায় আ. জলিল (৪৫) নামে এক ট্রাকচালক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন রিকশাচালকসহ দুজন। গত বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১২টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। মুমূর্ষু অবস্থায় জলিলকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাত দেড়টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার আ. রশিদের ছেলে জলিল শাহ সিমেন্ট কোম্পানির ট্রাকচালক।
মতিঝিল থানার এসআই জহুরুল ইসলাম জানান, রাতে মতিঝিল বিদ্যুৎ অফিসের সামনের রাস্তায় গাড়ি পার্কিং করে চা পান করছিলেন জলিল। তখন সেঁজুতি ট্রাভেলস নামে একটি বাস এসে প্রথমে একটি রিকশাকে ধাক্কা দেয়। পরে জলিলকে ধাক্কা দেয়। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
তিনি আরও জানান, এ দুর্ঘটনায় রিকশাচালক ও এক যাত্রী আহত হয়েছেন। তবে তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। ঘটনার পরপরই সেঁজুতি ট্রাভেলসের বাসটি জব্দ ও এর চালককে আটক করা হয়েছে।
ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী দম্পতি নিহত : গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী স্বামী-স্ত্রী নিহত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকালে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে উপজেলার খাড়াজোড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর ট্রাকটি আটক করেছে পুলিশ।
নিহতরা হলেন গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের ফুলবাড়ি এলাকার লোকমান আলীর ছেলে ওহাব আকন্দ (৩৫) ও তার স্ত্রী তামান্না আক্তার (২২)।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে পুলিশ জানায়, স্থানীয় একটি পোশাক কারখানার কর্মী ওহাব আকন্দ ও তার স্ত্রী কালিয়াকৈর উপজেলার পল্লীবিদ্যুৎ এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। গতকাল পোশাক কারখানা ছুটি থাকায় তারা স্বামী-স্ত্রী দুজনে মোটরসাইকেল করে গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে যাচ্ছিলেন। পথে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে উপজেলার খাড়াজোড়া এলাকায় একটি ট্রাক তাদের মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। এতে দুজন মহাসড়কের ওপর ছিটকে পড়ে। পরে ঘটনাস্থলেই স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে হাইওয়ে পুলিশ নিহতদের লাশ উদ্ধার করে। এরপর লাশ তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
সালনা (কোনাবাড়ি) হাইওয়ে থানার ওসি আতিকুর রহমান জানান, ট্রাকটি আটক হলেও চালক ও সহযোগী পালিয়ে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি আরবের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে (এসইজেড) জমির প্রস্তাব দিয়েছেন এবং তেলসমৃদ্ধ দেশটির কাছ থেকে বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ চেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে আরও সৌদি বিনিয়োগ চাই।’
সফররত সৌদি বাণিজ্যমন্ত্রী ড. মাজেদ বিন আবদুল্লাহ আল কাসাবির নেতৃত্বে ৯ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সাক্ষাৎ করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী এ অনুরোধ জানান। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
প্রধানমন্ত্রী সৌদি আরবকে বাংলাদেশে তেল শোধনাগার স্থাপনেরও প্রস্তাব দেন যেখানে অপরিশোধিত তেলসহ সব ধরনের তেল পরিশোধন করা যায়। বৈঠকে উভয়ে পারস্পরিক স্বার্থে উভয় দেশের ব্যবসা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা করেন।
সৌদি আরবের মন্ত্রী বলেন, তার দেশের শীর্ষ বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিশেষ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। এ প্রসঙ্গে তিনি বাংলাদেশে আমলাতান্ত্রিক বিলম্ব সমাধানের মাধ্যমে বিনিয়োগ পদ্ধতি সহজীকরণের আহ্বান জানান। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে বিনিয়োগ পদ্ধতি সহজ ও দ্রুত করার জন্য বলেছেন। প্রতিবেশী দেশগুলোতে বিশাল বাজার থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেসব দেশের সঙ্গে জলপথসহ সব পথে কানেকটিভিটি জোরদার করার মাধ্যমে তার সরকার পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা সহজ ও মসৃণ করতে কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা নদী খনন করে জলপথের নাব্য বাড়ানোর মাধ্যমে জলপথকে সচল করে তুলছে।
সরকারপ্রধান বলেন, তার সরকার সৌদি আরবে যাওয়ার আগে বাংলাদেশি শ্রমিকদের আরবি ভাষা ভালোভাবে জানার সুবিধার্থে একটি আরবি ভাষা ইনস্টিটিউট তৈরি করতে চায়, যাতে তারা আরবি ভাষার লোকদের সঙ্গে সহজে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে।
সৌদি মন্ত্রী বলেন, তাদের ক্রাউন প্রিন্স বাংলাদেশ সফরে আগ্রহী। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সৌদি ক্রাউন প্রিন্সকে গ্রহণ করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। প্রধানমন্ত্রীকে ওমরাহ পালনের আমন্ত্রণ জানান সৌদি মন্ত্রী।
সৌদি মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ও উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন। প্রধানমন্ত্রী সৌদি আরবের দ্রুত উন্নয়নেরও প্রশংসা করেন।
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সৌদি মন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
ড. মাজেদ বিন আবদুল্লাহ আল কাসাবি বাংলাদেশে সৌদি বিনিয়োগের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে আমাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারি। তিনি বলেন, গত ১০ মাসে ৬ লাখ ৫০ হাজার বাংলাদেশি চাকরিপ্রার্থী সে দেশে গেছে।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ এবং ঢাকায় সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ইসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলান এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।
নির্ধারিত সময় পেরিয়েছে। ১০ জনের ব্রাজিল। তবুও এগিয়ে ২-০ গোলে। খেলা গড়ায় ইঞ্জুরি টাইমে। তখনই যেন বেড়ে যায় সেলেসাওদের গতি। মিনিট কয়েকের মুহূর্তে ব্যবধান দাঁড়ায় ৪-০ গোলে। তবে প্রতিপক্ষ তিউনিশিয়াও কম যায় না। হাল ছাড়েনি তারা। শেষ মুহূর্ত অবধি লড়ে গেছে। তাতে আদায় করেছে একটি গোল। যদিও সেই গোল তাদের নিয়ে যেতে পারেনি পরের ধাপে।
যুব বিশ্বকাপে আন্দ্রে সান্তোসের জোড়া গোলে ম্যারাডোনার মাঠে উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিশিয়ার বিপক্ষে ৪-০ গোলের জয় পেয়েছে ব্রাজিল। এতে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে সেলেসাওরা।
ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা মাল্টি পারপাস স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত শেষ ষোলোর খেলার পুরোটা সময় বলের দখলটা বেশি ছিল তিউনিশিয়ার পায়েই। আক্রমণের ধারও ছিল ভালো। গোলের সুযোগও অনেকগুলো সৃষ্টি হয়েছিল। তবু ফিনিশারদের ছিল ব্যর্থতা। আর সেটা কাজে লাগিয়েছেন ব্রাজিলের যুবারা। শুরুটা অবশ্য তিউনিশিয়ার কল্যাণেই।
খেলার ১১ মিনিটে পেনালটি পেয়ে যায় ব্রাজিল যুবারা। সেখান থেকে গোল আদায় করে নেন মার্কোস লিওনার্দো। ৩১ মিনিটে এই লিওনার্দো ফের দলকে এগিয়ে দেন। তবে এবার আর তিনি গোল করেননি, তবে করিয়েছেন। তার পাস থেকে পায়ে বল নিয়ে তিউনিশিয়ার জালে জড়ান আন্দ্রে সান্তোস।
২-০ গোলের ব্যবধান পেয়ে হৈ হৈ করতে করতে বিরতিতে যেতে পারত ব্রাজিল। কিন্তু প্রথমার্ধের শেষ বাঁশিটা বাজার আগ মুহূর্তেই লাল কার্ড দেখেন রবার্ট রেনান। তার এমন কাণ্ডে ১০ জনের দলে পরিণত হয় ব্রাজিল।
তাতে অবশ্য পরের অর্ধের নির্ধারিত সময়ে কোনো ছাপ পড়তে দেখা যায়নি। ব্যবধানটা যে তখনও ২-০ তেই ছিল। তবে ৯১ মিনিটে ফের গোল আদায় করে ফেলে ব্রাজিল। এবার ম্যাথুস মার্টিনস। তার ৯ মিনিট পর আন্দ্রে সান্তোস নিজের দ্বিতীয় গোল আদায় করে নেন। চার গোলে এগিয়ে থেকে ব্রাজিল যখন জয়ের অপেক্ষা করছিল, ঠিক তখনই ১০৩ মিনিটের সময় প্রথম গোলটি হজম করে সেলেসাওরা।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপ আর নির্বাচনী তাপের মধ্যেই আজ জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব পেশ করা হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শেষ বাজেট এটি। অনেক যোগ-বিয়োগ কষে বাজেট প্রণয়নের শেষ সময়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রস্তাবিত বাজেটে নির্বাচনী চমক হিসেবে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করতে সম্পূর্ণ নতুন পথে হেঁটেছেন। ভর্তুকি নাম দিয়ে বড় অঙ্কের ‘কর ছাড়’ দিয়েছেন। অথচ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে রাজস্ব জাল বিছিয়ে সাধারণ আয়ের মানুষকে আটকে ফেললেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো প্রস্তাবিত বাজেট সারসংক্ষেপ, ভর্তুকির নামে ‘কর ছাড়’কে বৈশি^ক মন্দা মোকাবিলার ঢাল হিসেবে উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের পরোক্ষ প্রভাবে বাজারে পণ্যের দাম কমার গতিরোধ করবে বলেও সরকারপ্রধানকে জানিয়েছেন।
তবে অর্থনীতির বিশ্লেষকরা বলেছেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে ছোটদের কর পরিশোধে চেপে ধরলেও কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের ঠিকই খুশি করলেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের ফলে বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমায় খুব বেশি প্রভাব পড়বে এমন আশা করা কঠিন।
এনবিআরের সাবেক সদস্য কর-বিশ্লেষক ড. আমিনুল করিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইএমএফের কাছ থেকে কর অব্যাহতি ও কর অবকাশ সুবিধা কমানোর চাপ আছে। এ শর্ত না মানলে ঋণের কিস্তি দেওয়া বন্ধ করা হতে পারে। অন্যদিকে নির্বাচনের আগের বাজেট হওয়ায় বড় মাপের ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার চাপ আছে। বিভিন্নমুখী চাপে সরকার সব পক্ষকে খুশি করতেই আগামীতে কৌশলে কর ছাড় রাখছে ভর্তুকির নাম দিয়ে। অন্যদিকে সাধারণ আয়ের মানুষের ওপর কিন্তু ন্যূনতম কর ধার্য করার কথা শুনছি। অনেক মানুষকে রাজস্বের আওতায় আনার কথাও শুনেছি। এভাবে ছোটদের ওপর ঠিকই কর পরিশোধে চাপ বাড়াল।’
একই মত জানিয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দেশের বড় মাপের ব্যবসায়ীদের অনেকে সরাসরি রাজনীতি করেন। অনেকে রাজনীতি না করলেও সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখে চলেন। এরা সমাজের প্রভাবশালী। বাজেট প্রণয়নকালেই এরা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে নিজেদের পক্ষে সুবিধামতো অনেক কিছু আদায় করে নেন। এবারও তাই হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করা হয়েছে। এভাবে আইএমএফের জেরার মুখে বলার সুযোগ থাকছে যে কর ছাড় ও ভর্তুকি দুই হিসাব এক করেছি।’
সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকে আশায় আছেন এবারের বাজেটে অর্থমন্ত্রী হয়তো জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে সূত্র কষবেন। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার এ বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় কোনো রক্ষাকবচ রাখলেন না। কৌশলী অর্থমন্ত্রী আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে দেওয়া কথা রেখেছেন। সাধারণ মানুষকে রাজস্ব জালে আটকে ফেলার ছক করেছেন। মূল বাজেটের আকার বাড়ানোর সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারের আয়ের হিসাবও বাড়ানো হয়েছে। রাজস্ব আয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। এখানে কর খাত থেকে ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছ থেকে চলতিবারের তুলনায় ৬০ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা করলেন। এনবিআরবহির্ভূত খাত থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে করবহির্ভূত খাত থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে। শেষ সময়ের হিসাবকষে শত সংকটের বাজেটে অর্থমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করেছেন।
আগামী বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী কর ছাড়সহ ২ লাখ ৮৯ হাজার ২২৮ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার প্রস্তাব করবেন। জাতীয় বাজেটে নিয়মিত ভর্তুকি হিসাবে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা রাখার কথা আছে। বাকিটা প্রত্যক্ষ কর ছাড় দিয়ে ভর্তুকি খাতে অন্তর্ভুক্তি হিসেবে রাখা হয়েছে। প্রত্যক্ষ কর ব্যয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বেতনসহ অন্য খাতে ৭৭ হাজার ২১৮ কোটি বা মোট কর ছাড়ের ক্ষুদ্রঋণ খাতে ১২ শতাংশ বা ১৫ হাজার ৩১৫ কোটি, প্রবাসী আয় খাতে ৯ শতাংশ বা ১১ হাজার ২৮৭ কোটি, বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতে ৭ শতাংশ বা ৮ হাজার ৩৮০ কোটি, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক শিল্প খাতে ৪ শতাংশ বা ৪ হাজার ৬১২ কোটি, গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল ৩ শতাংশ বা ৩ হাজার ৪৩৮ কোটি, পোলট্রি ও মৎস্য খাতে ২ শতাংশ বা ৩ হাজার ১২০ কোটি, আইটি এবং সফটওয়্যার খাতে ১ শতাংশ বা ১ হাজার ৪৭৭ কোটি এবং পুঁজিবাজার খাতে ১ শতাংশ বা ৯৬৬ কোটি টাকা।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইস মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ যেন পুরনো বোতলে নতুন পানীয়। বড়দেরই বিভিন্ন কৌশলে সুবিধা দেওয়া হলো।’
অর্থমন্ত্রী রাজস্ব আদায়ের কৌশল হিসেবে বড় সুবিধা দিলেও ইটিআইএন গ্রহণ ও রিটার্ন দাখিলে কঠোরতা এনেছেন। ইটিআইএন না নিলে ৪০ ধরনের সেবা এবং রিটার্ন দাখিলের সিøপ না নিলে ৩৮ ধরনের সেবা দেওয়া হবে না। এতদিন ইটিআইএন নিয়েও অনেকে করযোগ্য আয় না থাকলে শুধু রিটার্ন দাখিল করেছে, একটি টাকার কর দিতে হয়নি। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত অর্থ বিল বিশ্লেষণ করে বলা যায়, ১ জুলাই থেকে করযোগ্য আয় না থাকলেও ২ হাজার টাকা ন্যূনতম কর দিতে হবে।
সাধারণ আয়ের অনেক করদাতা বলেছেন, খাবারের খরচ অনেক বেড়েছে। বাসা ভাড়া, যাতায়াত, চিকিৎসা সবকিছুই এখন বেশি। এর মধ্যে সাধারণ আয়ের ওপর কর পরিশোধে চাপ দেওয়া হলে ভোগান্তি বাড়বে। সাধারণ মানুষকে কর পরিশোধে বাধ্য করলেও সম্পদশালীদের রাজস্ব ফাঁকি কমাতে, বকেয়া আদায়ে এবং অর্থ পাচার রোধে জোরালো কিছু রাখা হয়নি। এনবিআরের সক্ষমতা বাড়াতেও পুরনো পথেই হেঁটেছেন অর্থমন্ত্রী।
আগামী অর্থবছর থেকে রিটার্ন জমা দিতে দেরি হলে বেশি হারে জরিমানা দিতে হবে। বাজেটে আইন করে জরিমানার পরিমাণ প্রদেয় করের পরিমাণ দ্বিগুণ ৪ শতাংশ নির্ধারণে প্রস্তাব করা হয়েছে।
বড়রা সুবিধা দিয়ে রাজস্ব আদায়ে চাপ বাড়ানোয় জীবনযাত্রার অনেক খাতেই খরচ বাড়বে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি কমাতেও বাজেটে রাখা হয়নি কিছু। আন্তর্জাতিক পণ্যের বাজারের অস্থিরতা কবে কমবে তা নিয়ে রয়েছে অশ্চিয়তা। তাই গত মাস ছয়েক থেকে বেশি দামে বিক্রি হওয়া চাল, ডাল, আট, ময়দা, ভোজ্য তেল, লবণ, চিনি, মাছ, মাংসসহ সব ধরনের খাবারের দাম আপাতত কমছে না। চিকিৎসা, যাতায়াত, শিক্ষাসহ খাদ্যবহির্ভূত ব্যয়ও কমবে না। গত (নভেম্বর ২০২২-এপ্রিল ২০২৩) ছয় মাসের সাধারণ মূল্যস্ফীতির গড় হার ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ।
রোমাঞ্চকর ফাইনালে মোহামেডানকে ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপ শিরোপা এনে দেওয়ার অন্যতম নায়ক আহসান আহমেদ বিপু। দীর্ঘদিন সাদা-কালোদের হয়ে খেলা এই গোলরক্ষক কাল দেশ রূপান্তরের শিহাব উদ্দিনকে জানালেন আবাহনীর বিপক্ষে উত্তেজনার ম্যাচে চাপ মাথায় নিয়ে নামা ও পেনাল্টি ভাগ্যে জয়ী হওয়ার পেছনের গল্প…
এত বড় ফাইনালে হঠাৎ করে বদলি হিসেবে নামলেন। এটা কি আপনার জন্য চাপ হয়েছিল?
বিপু : চাপ তো অবশ্যই। গোল আর গোল, ফাইনাল, প্রতিপক্ষ আবাহনী। মানসম্মানের ব্যাপার। এটা কিন্তু একটা ফাইনাল না শুধু, সম্মানেরও ব্যাপার। চাপ তো অবশ্যই ছিল।
তো এই চাপটা সামলালেন কীভাবে?
বিপু : সত্যি বলতে আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ছিল যে আমরা কামব্যাক করতে পারব। শুধু আমি একা না পুরো দল, হাফটাইমে যখন ২ গোল হয়, আমরা ডাগআউটে একজনও হতাশার কথা বলিনি। আমরা চরম বিশ্বাসী ছিলাম যে এখান থেকে ম্যাচ ঘুরানো সম্ভব। আমাদের অধিনায়ক দিয়াবাতে আত্মবিশ্বাসী ছিল যে ম্যাচে ফেরা সম্ভব।
কিন্তু নামার পরপরই তো একটা গোল হজম করলেন। তাতে কি চাপ বাড়েনি?
বিপু : না বাড়েনি কারণ গতকাল যে ৮টা গোল হয়েছিল তার মধ্যে সবচেয়ে সেরা গোল ছিল ওটা। গোলটা সত্যি বলব আমি নিজের ভুলে হজম করেছি। হাতেও লেগেছিল কিন্তু আটকাতে পারিনি।
পরে তো পেনাল্টি মানে ভাগ্য পরীক্ষাতেও নামতে হলো? তার মানে আপনার ওপর সবার বিশ্বাস ছিল?
বিপু : ওটা জানি না, এটুক বলতে পারি আমাদের কোচিং স্টাফ আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছিল। যেহেতু ফাইনাল, পেনাল্টির একটা সম্ভাবনা তো থাকেই। তো আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল, গোলরক্ষক কোচ কানন ভাই আমাদের নিয়ে পেনাল্টির আলাদা কাজ করেছিলেন। কিছু বিষয় যেমন শুট নেওয়ার আগ মুহূর্ত মানে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করা। আর নিজেও একটু চিন্তাভাবনা রেখেছিলাম। তো প্রস্তুতি আগে থেকেই ছিল। চাপ নেওয়ার ব্যাপারটা আসলে আমি স্বাভাবিক ছিলাম। বেশি কিছু চিন্তা করিনি। এমন সময়গুলোতে বেশি চিন্তা করলে উল্টো চাপে পড়ে যেতে হয়।
পেনাল্টি নিয়ে প্রস্তুতির কথা বলছিলেন। আগে থেকেই কি পেনাল্টির প্রস্তুতি ছিল?
বিপু : সে রকম না। কারণ ফাইনালে আগে থেকেই তো বলা যায় না যে পেনাল্টি হবেই। তবে আমাকে খেলার আগে থেকেই মানে ফাইনালের আগেই বলা হয়েছিল যে খেলা যদি ড্রয়ের দিকে যায় তাহলে নামতে হতে পারে। সেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল। তবে পেনাল্টির একটু আগে নামতে হয়েছিল আরকি।
পেনাল্টিতে দুটো সেভ করলেন। এটা কীভাবে সম্ভব হলো। কী ভাবছিলেন ডাইভ দেওয়ার আগে?
বিপু : সত্যি বলছি আমার কোনো চিন্তাই ছিল না। হয়ে গেছে। আল্লাহ মিলিয়ে দিয়েছেন, এখানে আমার কিছু নেই।
বিশ্বকাপ ফাইনালেও তো পেনাল্টি হয়েছিল। তা তো দেখেছেন। নিজের পেনাল্টি মুখোমুখি হওয়ার সময় ওই রকম কিছু মনে হচ্ছিল?
বিপু : না, ওরকম কিছু না। আমি আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখেছিলাম। আর মনে মনে ভাবছিলাম যে দলের জন্য কিছু করতেই হবে। আমি বলতে পারি এই দলটার মধ্যে সবচেয়ে পুরনো খেলোয়াড় কিন্তু আমি। আমি দীর্ঘদিন মোহামেডানে খেলেছি। মোহামেডান থেকে সুপার কাপ জিতেছি, স্বাধীনতা কাপ জিতেছি। তো ক্লাবের জন্য কিছু করার তাগিদটা ছিল।
পেনাল্টিতে প্রথম সেভ করার পর আপনার সাহস কি বেড়ে গিয়েছিল?
বিপু : সাহস তো বেড়েছেই। প্রথম সেভটা যখন করি তখন আমার টিম মেটরাও মানসিকভাবে এগিয়ে গেছে। এরপর আমাদের অধিনায়ক গোল করল। প্রথম গোল করা মানে মানসিকভাবে এগিয়ে থাকা। রাফায়েল কিন্তু আবাহনীর অনেক বড় ব্র্যান্ড। হতে পারে কলিনদ্রেস নামের বিচারে ভারী কিন্তু রাফায়েল এগিয়ে।
প্রথমটা তো সেভ করলেন দ্বিতীয় পেনাল্টি সেভের আগে কী ভাবনা হচ্ছিল আপনার। দ্বিতীয়টা সহজ হয় না কঠিন?
বিপু : ওটা ফিফটি-ফিফটি ছিল। কলিনদ্রেস একটু অপেক্ষা করছিল মারার সময় তাই আমিও ওয়েট করলাম। আর সফল হই। কলিনদ্রেসের শটটা কিন্তু যথেষ্ট পাওয়ারফুল ছিল। আমি সঠিক দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। আর রাফায়েল একটু স্লো শট নেয় সবসময়। আর সবসময় একটু জার্ক করে বাঁদিকে শট নেয়, কাল নিয়েছিল ডানদিকে। আমি অপেক্ষা করায় সঠিক দিকে ডাইভ দিতে পেরেছি।
আচ্ছা আপনার পছন্দের গোলকিপার কে?
বিপু : পিওতর চেক।
বিশেষ কোনো কারণ আছে ওকে পছন্দ করার?
বিপু : ঠিক কেন সেটা বলতে পারব না। তবে ওর সেভগুলো আমার ভালো লাগে। এখন অনেক গোলরক্ষক থাকতে পারে, চেক আমার কাছে এখনো সেরা। বিশেষ করে একটা সেভ দেখেছিলাম ও মাটিতে পড়ে গিয়েও কীভাবে যেন হাত দিয়ে বল ফিরিয়েছিল। চেলসিতে থাকা অবস্থায় সম্ভবত। এছাড়া শুধু একটা না আরও অনেক সেভ করেছে সে। আর একটা ব্যাপার হলো তার ইনজুরির পরও যেভাবে সে খেলা চালিয়ে গেছে এটা আমাকে উজ্জীবিত করে। আমিও ইনজুরির পর খেলছি, ২০১৮-১৯ এ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বসুন্ধরার সঙ্গে ফেডারেশন কাপের ম্যাচ খেলার সময় আমার হাত ভেঙেছিল। এখনো হাতে প্লেট লাগানো আছে।
নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
বিপু : আমার কোনো নিজস্ব লক্ষ্য নেই। আমি খেলে যেতে চাই। কোচরা জানেন আমাকে কোথায় খেলাবেন। জাতীয় দলে খেলার ইচ্ছা তো সবারই থাকে কিন্তু আমি সেই লক্ষ্য নিয়ে আগাতে চাই না। হলে এমনিতেই হবে।
অনেক বছর পর মোহামেডান শিরোপা জিতল। এই ধারা অব্যাহত রেখে সামনেরবার কী লক্ষ্য রাখছেন?
বিপু : গত বছর আমরা সেমিফাইনাল থেকে বাদ পড়ে গিয়েছিলাম সেখানে রেফারিংয়ের কিছু ব্যাপার ছিল আপনারা সবাই দেখেছেন। ইনশাআল্লাহ এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আমাদের ফল তো আগের থেকে ভালো হচ্ছে। এটা বড় আত্মবিশ্বাসের কারণ।
দেশের ৬০টি জেলার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এতে দিনের তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। এ ছাড়া দেশজুড়ে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহ আরও দুই দিন থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, ঢাকা বিভাগের ১৩টি, খুলনার ১০টি, রাজশাহীর আটটি, বরিশালের ছয়, রংপুরের আটটি, সিলেটের চার ও ময়মনসিংহ বিভাগের চারটি জেলাসহ চট্টগ্রাম, সীতাকুণ্ড, রাঙ্গামাটি, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও ফেনী জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা বিস্তার লাভ করতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।
আগামী দুই দিনে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু টেকনাফ উপকূল পর্যন্ত অগ্রসর হতে পারে এবং বিদ্যমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে বলেও জানান এই আবহাওয়াবিদ।
তিনি আরও জানান, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থায় বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।
নির্বাচনের রাজনীতি একটা বিজ্ঞান এখানে হিসাব খুব জটিল। ভুল হলে গরল। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কার পরাজয় হয়েছে? বিশেষ করে জাহাঙ্গীর আলমের ভাষায় ‘এটি নৌকার নয় বরং ব্যক্তি আজমত উল্লার পরাজয়’ মন্তব্যটি আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অন্যদিকে নেটিজেনদের ঠাট্টা সুষ্ঠু ভোটের জন্য আমেরিকার চাপে প্রথম ‘বলি’ হলেন আজমত উল্লা। জাহাঙ্গীর ঠিকই আঁচ করতে পেরেছিলেন তাকে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না, তাই মাকে প্রার্থী করে রাখেন। তার এ কৌশলী সিদ্ধান্তের কাছে আওয়ামী লীগ হেরেছে। বাংলাদেশে এতদিন উত্তরাধিকারের রাজনীতির সংস্কৃতিতে বাবা কিংবা মায়ের আসনে সন্তান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেন। এবার তার উল্টোটা ঘটতে দেখা গেল।
আওয়ামী লীগ ভেবেছিল জাহাঙ্গীরের মা অখ্যাত। ছেলের মতো প্রভাব ফেলতে পারবেন না তিনি। হালকাভাবে নেওয়াটা আওয়ামী লীগের ভুল ছিল। বহুদিন ধরে তারা এ কাজটি করে আসছে। ‘প্রতিপক্ষকে কখনো দুর্বল ভাবতে নেই’, কথাটা দলটি ভুলে গেছে। প্রার্থী হওয়ার আগে জাহেদা খাতুনকে রাজনৈতিক-সামাজিকভাবে গাজীপুরের মানুষ চিনত না, নির্বাচন তো দূরের কথা কোনো রাজনৈতিক কমর্সূচিতে তিনি ছিলেন না। জাহাঙ্গীর তার সেই মায়ের পক্ষে আওয়ামী লীগ বিরোধী ভোটকে একাট্টা করেছেন। নীরব সমথর্কদের সংগঠিত করেছেন। তিনি তার মাকে নিয়ে সাধারণ ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে গেছেন, কান্নাকাটি করেছেন। সহানুভূতি আদায় করেছেন। আর আজমত উল্লা ভোটারদের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন না, হয়তো নানাশক্তির ওপর তিনি নির্ভরশীল ছিলেন। প্রতিপক্ষকে খুব একটা হিসাবে ধরেননি। এটা ছিল ক্ষমতাসীনদের ভুল।
এটা ঠিক, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের কাছে এ নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার চ্যালেঞ্জ ছিল। সেই চ্যালেঞ্জকে অনেকটাই সামাল দিতে পেরেছে সরকার। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে বিজয়ী হলেও সাধারণ মানুষকে আস্থায় নিয়ে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বৈতরণী পার হতে পারবে কি না সেই প্রশ্নটা এখন সামনে চলে এসেছে। আমার মনে হয়, এ নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য অস্বস্তিকর সতর্ক সংকেতও। আওয়ামী লীগের ভেতর আরেকটি আওয়ামী লীগ তৈরি হয়েছে, সেটাও প্রমাণ হয়েছে এ নির্বাচনে। এরা যে কখন আওয়ামী লীগের ভেতর প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে, এটা দলটি ধারণা করতে পারেনি। এখন যারা আওয়ামী লীগ করেন তাদের বেশিরভাগই তা করেন স্বার্থসিদ্ধির জন্য, দলের আদর্শের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি খুব ক্ষীণ এটাও এ নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ছিল অতি আত্মবিশ্বাসী ও আত্মপ্রত্যয়ী। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় দলটির কারও কারও মধ্যে অহংকার এবং অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস বিপজ্জনকভাবে পর্যায়ে চলে গেছে। তারা মনে করেন দল যাকে মনোনয়ন দেবে তাকে প্রভাব খাটিয়ে জিতিয়ে আনবে। গাজীপুরেও সেই প্রবণতা দেখা গেছে। যার কারণে যেভাবে গুরুত্ব সহকারে মাঠে কাজ করার দরকার ছিল, সেভাবে তারা গাজীপুরে কাজ করেননি। রাজনীতি হুমকি, ধমকের বিষয় নয়। একটি সমঝোতার কৌশল। এ চিরন্তন সত্যটা আওয়ামী লীগ ভুলেই গেছে। ভয় দেখিয়ে, প্রভাব খাটিয়ে রাজনীতিতে জয়ী হওয়া যায় না।
জাহাঙ্গীর ও তার মা যখন স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেন, তখন আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ‘দমননীতির’ কৌশল নিয়েছিল। ভোটের আগে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা, দুদকে তলব, প্রচারের সময় গাড়ি ভাঙচুর, পেশিশক্তি প্রয়োগ সবই জনগণের মধ্যে জায়েদা খাতুনের পক্ষে এক ধরনের সহানুভূতি তৈরি করেছে। ভোটের দিন দেখা গেছে, নৌকার কার্ড গলায় ঝুলিয়ে তারা ঘড়ি মার্কায় ভোট দিয়েছেন।
গাজীপুরে পরিচিত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললাম। তারা জানাল ব্যক্তি জাহাঙ্গীর আলমের ইমেজ ও তার উন্নয়ন কাজ নগরবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। তাদের ধারণা, তাকে মেয়র পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলে থমকে যাবে উন্নয়ন কাজ। নানা ষড়যন্ত্র ও প্রতিহিংসার শিকার হলেও জাহাঙ্গীরের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা অটুট।
জাহাঙ্গীর আলমের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও সাধারণ মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থনের কারণেই তার মায়ের বিজয় সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। ঋণখেলাপির দায়ে তার প্রার্থিতা বাতিল হবে এটা জানত জাহাঙ্গীর। তাই তার পক্ষে মা জায়েদা খাতুনকে তিনি মেয়র পদে দাঁড় করান। সাধারণ নারী ভোটারদের অকুণ্ঠ সমর্থন, শ্রমিকদের মধ্যে জাহাঙ্গীরের জনপ্রিয়তাও জায়েদা খাতুনের জয়ে ভূমিকা রাখে। এছাড়া নির্বাচনের প্রচারে কয়েক দফা হামলা, বাধা দেওয়ার বিষয়টি মানুষের নজর কেড়েছে। ফলে মানুষ অনেকটা বিরক্ত হয়েই আজমত উল্লা খানের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। বিরোধী শিবিরের ভোটও পড়েছে জাহাঙ্গীরের মায়ের ব্যালটে। জায়েদা খাতুন যেসব আসনে এজেন্ট দিতে পারেননি, সেখানেও জিতেছেন তিনি। বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় তারা ও তাদের শরিকরা জায়েদা খাতুনের প্রতীকে ভোট দিয়েছেন।
আজমত উল্লা মার্জিত, বিনয়ী ও স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ হিসেবে গাজীপুরের রাজনীতিতে পরিচিত হলেও তার বিরুদ্ধে জনবিচ্ছিন্নতার অভিযোগ রয়েছে। ভোটারদের সঙ্গে পর্যাপ্ত যোগাযোগের অভাব, দলীয় কোন্দল এবং স্থানীয় প্রভাবশালী মন্ত্রী ও এমপিদের উদাসীনতাও রয়েছে। জাহাঙ্গীরের তুলনায় নির্বাচনের প্রচারে নৌকার প্রার্থী তেমন একটা টাকা খরচ করেননি।
সবচেয়ে বড় বিষয় হলো আওয়ামী লীগের বিভক্তি। সেই বিভক্তি নির্বাচনের আগে অতটা দেখা না গেলেও ভোটের দিন প্রকাশ পেয়েছে। প্রচারেও ছিল গাফিলতি। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কারণে ঢিলেমি ছিল প্রচারণায়। বড় বড় শোডাউন এবং রোড শো করলেও মানুষের দ্বারে দ্বারে যাননি। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে একাধিক নেতা পরাজয়ের কারণ হিসেবে বলছেন, দলের স্থানীয় নেতাকর্মীর মধ্যে ভেতরে ভেতরে দ্বন্দ্ব, গ্রুপিং। এতে আওয়ামী লীগের ভোট দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। আওয়ামী লীগের একাংশ গোপনে ঘড়ির পক্ষে কাজ করেছে। নৌকার প্রার্থী তা আগে ধরতে পারেননি। ভোটের পর আজমত উল্লা বলেছেন, দলে থাকা বেইমানদের গাদ্দারিতে হেরেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামো ও নির্বাচনী ব্যবস্থাটি এমন জায়গায় চলে গেছে যে, কার চেয়ে কে কতটা যোগ্য ও ভালো মানুষ সেটি তার জয়-পরাজয় নিয়ন্ত্রণ করে না। মানুষ এখন ভোট দেয় কিছু পাওয়ার উদ্দেশ্যে নয়, বরং অনেক সময় ভোট দিয়ে তার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। যে কারণে দেখা যায়, দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকের বাইরে থাকা বিপুল ভোটারের অনেকেই সুযোগ পেলেই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে ভোট দিতে নিরুৎসাহিত হন। আবার ক্ষমতাবানের কাছ থেকে তার কমিউনিটির অনেক মানুষ যেমন উপকৃত হন, তার বিপরীতে বিপুল সংখ্যক মানুষ বঞ্চিত এবং নানাভাবে নির্যাতিতও হন। ফলে তারা ভোটের সময় ‘দেখিয়ে দেওয়া’র অপেক্ষায় থাকেন। এ দেখিয়ে দেওয়ার ব্যাপারগুলো গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ঘটেছে। মানুষের ক্ষোভের আঁচটা যে মাত্রায় ছড়িয়েছে, এর প্রভাবটা এ নির্বাচনে পড়েছে। প্রশ্ন হলো এ জয় কি তাহলে মানুষের ক্ষোভের বিস্ফোরণ?
বিএনপি এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি, আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হয়েছিল আওয়ামী লীগই। দলের মধ্যে একটা অংশ তো বিরুদ্ধে ছিলই। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এখন নতুন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ের রাজনীতি, অভ্যন্তীরণ দ্বন্দ্ব, জনগণের মনোভাব ইত্যাদি সম্পর্কে দলের নীতিনির্ধারকদের কাছে যে সঠিক তথ্য নেই, সেটা বেশ বোঝা যাচ্ছে। আগামী নির্বাচনগুলোতেও যদি এরকম অন্তঃকলহ থাকে, তাহলে আওয়ামী লীগের জন্য গাজীপুরের মতোই পরিণতি অপেক্ষা করছে।
লেখক: প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।