
কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার করতে পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আগুন লাগানো হয়েছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় জড়িত কাউকে চিহ্নিত করতে পারেনি তদন্ত কমিটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগুনে ২ হাজার ৮০৫টি ঘর পুড়ে গেছে। এতে ৩ হাজার ১১ পরিবারের ১৫ হাজার ৯২৬ রোহিঙ্গা গৃহহীন হয়ে পড়ে। কেউ মারা না গেলেও আহত হয়েছেন ২১২ রোহিঙ্গা।
প্রতিবেদনে এমন তথ্য তুলে ধরার পাশাপাশি ঘটনার অধিকতর তদন্ত করতে মামলাসহ ১২টি সুপারিশ করেছে কমিটি। গতকাল রবিবার প্রতিবেদনটি জেলা প্রশাসকের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে কমিটির সদস্যরা জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরানের হাতে চার পৃষ্ঠার মূল প্রতিবেদনের সঙ্গে ৭০ পৃষ্ঠার সহায়ক নথিও তুলে দেন।
এরপর জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের শহীদ এটিএম জাফর আলম সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। এ সময় তদন্ত কমিটির সদস্য ক্যাম্প ইনচার্জ, উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) কক্সবাজারের উপপরিচালক, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক উপস্থিত ছিলেন।
তদন্ত কমিটির প্রধান আবু সুফিয়ান বলেন, গত ৫ মার্চ বিকেলের অগ্নিকাণ্ডের পর গঠিত সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি ৬ মার্চ থেকে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে। সরেজমিনে পরিদর্শনকালে ৭৫ জনের সাক্ষাৎকার ও লিখিত বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রোহিঙ্গা, সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি, জনপ্রতিনিধি এবং স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে তারা কথা বলেছেন। ক্যাম্পে লার্নিং সেন্টারের ইনস্ট্রাকটরসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেছেন তারা। প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত ও প্রচারিত সংবাদ যাচাই ও তিন দিন সরেজমিনে ও বিভিন্নভাবে ঘটনার বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখেছেন। সব মহলের সঙ্গে কথা বলে ও যাচাই-বাছাই করে তদন্ত কমিটি নিশ্চিত হয়েছে যে, আধিপত্য বিস্তার করতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আগুনটি লাগানো হয়েছে।
আবু সুফিয়ান আরও বলেন, ওই দিন দুপুর আড়াইটার দিকে ১১ নম্বর ক্যাম্পের ডি-ব্লকে আগুন জ্বলে ওঠে। এ সময় রান্নার কোনো কাজও ছিল না। এক স্থানে আগুন লাগার কিছু সময় পর আরও একাধিক স্থানে আগুন ধরার বিষয়টি কোনোভাবেই স্বাভাবিক অগ্নিকাণ্ড হতে পারে না। সবকিছু পর্যালোচনা করে এটি উদ্দেশ্যমূলক ঘটনা বলেই প্রতীয়মান হয়। ঘনবসতিতে আগুন ও সরু রাস্তা হওয়ায় দমকল বাহিনীর গাড়ি চলাচলে বাধাগ্রস্ত হয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে সময় লেগেছে প্রায় চার ঘণ্টা। ইতোমধ্যে প্রায় তিন হাজার ঘর পুড়ে ছাই হয়।
তার মতে, কে বা কারা আগুন লাগিয়েছে তা তদন্ত কমিটি নিশ্চিত হতে পারেনি। যেহেতু আগুন লাগার আগের রাতেও দুই গ্রুপে গোলাগুলি হয়েছে। সবকিছু যাচাই করে তদন্ত কমিটি নিশ্চিত হয়েছে, আগুন লাগার ঘটনাটি আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
এডিএম বলেন, ‘আমরা তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যৎ এ ধরনের ঘটনা এড়াতে ১২টি সুপারিশ উপস্থাপন করেছি। সেসবের মধ্যে তদন্ত কমিটির প্রথম ও প্রধান সুপারিশ হলো ঘটনার আদ্যোপান্ত জানতে মামলা করা। মামলা হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অধিক তদন্ত করে অপরাধীদের চিহ্নিত করতে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হবে।
তদন্ত কমিটির অন্য সুপারিশের মধ্যে আছে নিয়মিতভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চিরুনি অভিযান ও গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো, আগুন প্রতিরোধ ও নির্বাপণের ক্ষেত্রে জরুরি কিছু পদক্ষেপ।
লবণ পানিতে দিশেহারা চট্টগ্রাম নগরবাসী। ওয়াসার ইনটেকে (নদীর যে পয়েন্ট থেকে পানি সংগ্রহ করা হয়) প্রতি লিটার পানিতে ১৭০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত লবণ পাওয়া যাচ্ছে বলে পরিশোধিত পানিও লবণাক্ত।
ওয়াসা কর্তৃপক্ষ নলকূপ কিংবা অন্য প্ল্যান্টের পানি মিশিয়ে লবণের মাত্রা কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে। তারপরও সরবরাহ করা প্রতি লিটার পানিতে ৩০০-৩৫০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত লবণ থাকছে। গত কয়েক বছর পানিতে লবণের এ মাত্রা কম থাকলেও এবার হঠাৎ করে বেড়ে গেছে।
কেন লবণের মাত্রা বেড়ে গেল কারণ জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্মকর্তাদের গড়পড়তা উত্তর, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টি কমে গেছে। ফলে কাপ্তাই হ্রদে পানির পরিমাণ কমে গেছে। কাপ্তাই হ্রদের পানি এসে পড়ে কর্ণফুলী নদীতে। পানির পরিমাণ কম হওয়ায় জোয়ারের সময় সাগরের লবণাক্ত পানি নদীর অনেক ভেতরে প্রবেশ করছে। হালদা নদীর যে পয়েন্ট (মোহরায়) থেকে ওয়াসা পরিশোধনের জন্য পানি সংগ্রহ করে সেখানে দ্রুত লবণ পানি চলে আসে। তাই নগরীর পানিতে লবণ পাওয়া যাচ্ছে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, পানির পরিমাণ কমে যাওয়ায় জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের টারবাইন একটার বেশি চালু করা হচ্ছে না। ফলে কাপ্তাই থেকে পানি কম ডিসচার্জ (নিঃসরিত) হচ্ছে কর্ণফুলী নদীতে। লবণ পানি নিয়ে ওয়াসা কর্তৃপক্ষের এ বক্তব্য সঠিক ধরে নিলে প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুম জানুয়ারি থেকে মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত নগরীতে লবণ পানি পরিবাহিত হওয়ার কথা। প্রতি বছর হচ্ছে না কেন? এর খোঁজ নিতে গিয়ে কথা হয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, চট্টগ্রাম দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী রেজাউল করিমের সঙ্গে। তিনিও বললেন, একই কথা।
কাপ্তাই হ্রদে পানি কমে যাওয়ায় এখন একটার বেশি টারবাইন চালু করা যাচ্ছে না। তাই উজান থেকে পানি কম আসছে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম ওয়াসার সিনিয়র এক প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে জানান, কাপ্তাই হ্রদে শুষ্ক মৌসুমের জন্য পানি সংরক্ষণে নভেম্বরের পর থেকে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের চারটি টারবাইনের মধ্যে এক বা দুটি চালু রাখা হয়। কিন্তু এবার জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত চারটি টারবাইনই চালু ছিল। আর এতে হ্রদের পানি দ্রুত কমে যায়। ফলে এখন একটাও আর ঠিকভাবে চালু রাখা যাচ্ছে না।
ওয়াসার প্রকৌশলীর এ বক্তব্যের সূত্র ধরে কথা হয় কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক আবদুল জাহেরের সঙ্গে। তিনি টারবাইন চালু রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত আমরা চারটি টারবাইনও চালু রেখেছিলাম। বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ নিশ্চিত করতে আমাদের ওপর তা চালুর নির্দেশনা ছিল। এতেই দ্রুত হ্রদের পানি কমে যায়। স্বাভাবিকভাবে এ সময়ে এক বা দুটি টারবাইন চালু রেখে বাকি পানি এপ্রিল পর্যন্ত চালানোর জন্য মজুদ করে রাখা হয়।’
এখন পানির স্তর কত রয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পানির গভীরতা (সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে) ৭৮ দশমিক ০১ ফুট। এ সময় থাকার কথা ৯১ দশমিক ২৪ ফুট। পানির সর্বোচ্চ গভীরতা অক্টোবরে ১০৯ ফুট পর্যন্ত থাকে।’
এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে কী হবে এমন প্রশ্নে আবদুল জাহের বলেন, ‘একটি টারবাইনও সচল রাখা যায় কি না সন্দেহ। বৃষ্টি না আসা পর্যন্ত হ্রদের পানি বাড়ার কোনো সুযোগ নেই।’
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এখনই বৃষ্টির কোনো পূর্বাভাস নেই। কালবৈশাখী বা বৈশাখের আগাম বৃষ্টি হলেও তা সাময়িক। এতে হ্রদের পানি বৃদ্ধির কোনো সম্ভাবনা নেই।
চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্ণফুলী ও হালদা নদীর পানি পরিশোধন করে নগরীতে প্রায় ৪০ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করে। এর মধ্যে হালদা নদীর মোহরা প্ল্যান্টটি সবার আগে। একই নদীতে উজানে রয়েছে মদুনাঘাট পানি সরবরাহ প্রকল্প। অন্যদিকে মোহরা পয়েন্ট থেকে আরও উজানে কর্ণফুলী নদীর রাঙ্গুনিয়ার পোমরায় রয়েছে কর্ণফুলী পানি শোধনাগার প্রকল্পের দুটি পর্যায়। সাগরের লবণাক্ত পানিতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে মোহরায়।
এ বিষয়ে ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, ‘আমরা কর্ণফুলী ও মোহরার পানি মিশ্রণ করে রবিবার থেকে সরবরাহ করছি। এতে গ্রাহক পর্যায়ে সরবরাহ করা পানিতে লবণের পরিমাণ প্রতি লিটারে ২৫০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত নেমে এসেছে।’
২০০৭, ২০১৭ ও ২০২১ সালে ওয়াসার পানিতে লবণের পরিমাণ বেশি হয়েছিল। সাধারণ ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে এ ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। কিন্তু এবার গতকাল ১২ মার্চ মোহরা পয়েন্টে প্রতি লিটার পানিতে ১৮০০ মিলিগ্রাম লবণ পাওয়া গেছে। আগের দিন ১১ মার্চ ছিল ১৬৮০ মিলিগ্রাম।
গত ফেব্রুয়ারি শেষ সপ্তাহ থেকেই পানিতে লবণের পরিমাণ বাড়তে থাকে বলে জানান চট্টগ্রাম ওয়াসার মোহরা পানি শোধনাগার প্রকল্পের পরিচালক সাদেক হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি শেষ সপ্তাহ থেকে হালদার পানিতে লবণের পরিমাণ বেশি পাওয়া যাচ্ছে এবং এখন তা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আমরা যেহেতু লবণ পরিশোধন করতে পারি না তাই পানি ট্রিটমেন্ট করার পর লবণযুক্ত পানি সরবরাহ করা হয়ে থাকে। তারপরও গভীর নলকূপের পানি মিশিয়ে পানিতে লবণের মাত্রা কমিয়ে আনা হয়।’
এদিকে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, উপকূলীয় জেলা হিসেবে চট্টগ্রামে প্রতি লিটার সুপেয় পানিতে ৬০০ মিলিগ্রাম লবণ সহনীয়। তবে পানিতে লবণের মাত্রা বেশি থাকলে কী সমস্যা হতে পারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গৃহস্থালি পর্যায়ে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। তবে শিল্প-কারখানার মেশিনারিজে সমস্যা হতে পারে।’
অন্যদিকে মানবদেহে ক্ষতিকারক প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী বলেন, ‘লবণের মাত্রা বেশি হলে মানুষ হাইপারটনিক হয়ে পড়বে। এ ছাড়া আগে থেকে যাদের কিডনি ও প্রেশারের সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে এসব রোগ আরও ত্বরান্বিত হবে। তা থেকে ব্লাড প্রেশারের মাধ্যমে হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘মানব শরীরে স্বাভাবিকের বেশি লবণ প্রবেশ করলে অবশ্যই এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আর ওয়াসা কখনো পরিশোধনের মাধ্যমে লবণ কমাতে পারবে না। তারা জীবাণুনাশ করতে পারবে।’
লবণ পানি বিষয়ে সতর্ক থাকতে ওয়াসার পক্ষ থেকে জরুরি গণবিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়েছে। বর্তমানে ওয়াসার লবণযুক্ত পানি হালিশহর, পাহাড়তলী, উত্তর কাট্টলী ও পতেঙ্গা এলাকায় বেশি পাওয়া যাচ্ছে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (সুপ্রিম কোর্ট বার) নির্বাচনে ভোটের বাকি মাত্র কয়েক দিন। আগের বছরের মতো তিক্ত ও অস্বস্তিকর পরিস্থিতি নাকি সুন্দর ও বিতর্কহীন নির্বাচনএমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে আইনজীবীদের মধ্যে। ১৫ ও ১৬ মার্চ দুই দিনের নির্বাচনে সমিতির তালিকাভুক্ত প্রায় ৯ হাজার আইনজীবী ভোট দেবেন। ইতিমধ্যে সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শেষ সময়ের প্রচার জমে উঠেছে। পাশাপাশি আগের ঘটনার রেশে কিছুটা অস্বস্তিও রয়েছে আইনজীবীদের মধ্যে।
উচ্চ আদালতসহ সারা দেশের আইনজীবীদের কাছে সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনের একটি আলাদা আবেদন রয়েছে। এই নির্বাচন নির্দলীয় হলেও কার্যত দলীয় ছদ্মাবরণেই ভোট হয়। আওয়ামী লীগপন্থিরা সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ (সাদা প্যানেল) নামে এবং বিএনপিপন্থিরা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদ (নীল প্যানেল) নামে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনকে দুই পক্ষই মর্যাদা ও সম্মান রক্ষার লড়াই বলে বিবেচনা করে। ফলে ভোটের এই লড়াই হয় চোখে পড়ার মতো।
এবারের নির্বাচনে সাদা প্যানেল থেকে সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন ফকির এবং সম্পাদক পদে আব্দুন নূর দুলাল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দুজনই সুপ্রিম কোর্ট বারের বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক। অন্যদিকে নীল প্যানেল থেকে সভাপতি পদে ব্যারিস্টার এম মাহবুব উদ্দিন খোকনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এর আগে তিনি সমিতির বেশ কয়েকবারের সম্পাদক ছিলেন। এ প্যানেল থেকে সম্পাদক পদে সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল নির্বাচনে লড়ছেন।
বিগত বছরের (২০২২-২৩ মেয়াদে) নির্বাচনে সরকারপন্থি আইনজীবীদের ভোট পুনঃগণনার দাবি এবং বিএনপিন্থিদের ফলাফল ঘোষণার দাবি নিয়ে নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির আহ্বায়কের পদত্যাগ এবং এর জেরে প্রায় দেড় মাস ফল ঘোষণা স্থগিত থাকা, এই সময়ে সমিতির কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়া, সরকারপন্থি ও বিএনপিপন্থিদের মধ্যে বেশ কয়েকবার হট্টগোল, হাতাহাতি, মারামারি, হাতুড়ি নিয়ে হামলা ও রক্তারক্তির ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনের আশপাশে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এই পরিস্থিতিকে জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা নজিরবিহীন এবং আইনজীবী সমাজের জন্য অসম্মানজনক বলে উল্লেখ করেছিলেন।
এবারের নির্বাচন নিয়েও কিছুটা উত্তেজনার আঁচ পাওয়া গেছে কয়েক দিন আগে। সম্প্রতি নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটি নিয়ে সরকাপন্থি ও বিএনপিপন্থিরা পাল্টাপাল্টি কমিটি ঘোষণা করেন। এরপর জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের হস্তক্ষেপে আলোচনার পর ২ মার্চ জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মুনসুরুল হক চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। এ ছাড়া কিছুদিন আগে ঢাকা আইনজীবী সমিতির (ঢাকা বার) নির্বাচনের দুদিনের ভোটের প্রথম দিনই অনিয়মের অভিযোগ তুলে বিএনপি-জামায়াতপন্থি আইনজীবীরা ভোট বর্জন করলে অনেকটা সহজভাবেই নির্বাচনে উতরে যায় সরকারপন্থিরা। এসব নিয়ে উভয় পক্ষের রয়েছে অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ। সার্বিক পরিস্থিতিতে জ্যেষ্ঠ আইনবিদ ও নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের আশা দুপক্ষই সংযত আচরণ করবে। উচ্চ আদালতের আইনজীবীদের সম্মানের হানি হয় নির্বাচন নিয়ে এমন বিবাদে জড়াবেন না তারা।
সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মুনসুরুল হক চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অতীতে কী হয়েছে না হয়েছে, তা নিয়ে আমি চিন্তা করতে নারাজ। একটা সুন্দর পরিবেশে স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু ভোটের আয়োজনে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। এটুকু বলতে পারি একটি ভালো নির্বাচন হবে।’
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গেল বছরের যে পরিস্থিতি ছিল তাতে উচ্চ আদালতের আইনজীবীদের মর্যাদা ও সম্মান কিছুটা মøান হয়েছিল। এবার আশা করছি সেই তিক্ততা হবে না। নির্বাচন নিয়ে আইনজীবীদের মধ্যে মারামারির কোনো খবর আসুক তা চাই না। উচ্চ আদালতের আইনজীবীদের সম্মান রক্ষা হয় এমন ভোট চাই।’
সাদা প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী অ্যাডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন ফকির দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আপনারা মাঠ জরিপ করেন। এগুলো (বিবাদ) আমরা কখনো আশা করি না। নির্বাচনের সুন্দর পরিবেশ আছে, থাকবে। আমাদের পক্ষ থেকে কিছু হবে না। তাদের (বিএনপিপন্থি আইনজীবী) আশঙ্কাটা তো সব সময়ই ছিল। গোলমালের মানুষ যে কোনো জায়গায় গোলমাল বাধায়। কিন্তু আমরা একটি ভালো নির্বাচন চাই।’
বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীদের ইঙ্গিত করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভোটকেন্দ্র নিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করেন কিছু আইনজীবী। গত সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচনে দেখেছি। কিছুদিন আগে ঢাকা বারের নির্বাচনেও এমনটি দেখেছি। তবে বেশির ভাগ আইনজীবী এগুলো পছন্দ করেন না। তারা এ বিষয়ে সতর্ক। আমরাও সতর্ক আছি। নির্বাচন কমিশন যেহেতু পুনর্গঠন করা হয়েছে, আশা করি কোনো সমস্যা হবে না।’
রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা লুটের ঘটনায় আরও ২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা উদ্ধার করেছে পুলিশ। এর আগে উদ্ধার করা হয়েছিল ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত ৬ কোটি ৪৩ লাখ ৪৮ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান হারুন অর রশীদ।
গতকাল রবিবার রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন এসব তথ্য জানান।
এ ঘটনায় গত শনিবার রাতে ঢাকা, সুনামগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন ডিবি পুলিশের মিরপুর জোনাল টিমের পরিদর্শক সাজু মিয়া। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শান্ত ইসলাম মল্লিক তাদের প্রত্যেকের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ডিবি কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ বলেন, শনিবার রাতে বনানী থেকে সানোয়ার হাসান নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে ১ কোটি ১৪ লাখ ৫১ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। পরে মিলন ওরফে ইমন নামের আরেকজনকে বনানী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার জোয়ার সাহারার বাসায় আরও ৩২ লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা পাওয়া গেছে। উত্তরা থেকে আকাশ ও সাগর নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের বাসায় পাওয়া গেছে ১ কোটি ৭ লাখ টাকা এবং ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত প্রাইভেট কার।
এ ছাড়া সুনামগঞ্জ থেকে মো. বদরুল আলম, মো. মিজানুর রহমান, মো. সনাই মিয়া ও মো. এনামুল হক বাদশাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গতকাল ভোর থেকে খুলনায় অভিযান চালায় ডিবির আরেকটি দল।
খুলনার নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, নগরীর জোড়াগেট এলাকার সিঅ্যান্ডবি কলোনি থেকে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবির তদন্ত-সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, ডাচ্-বাংলার টাকা লুটের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। তারই ধারাবাহিকতায় খুলনায় অভিযান চালানো হচ্ছে। তবে খুলনার অভিযান এখনো শেষ না হওয়ায় কিছু বলা যাচ্ছে না।
গত বৃহস্পতিবার সকালে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথে টাকা পৌঁছে দিতে যাওয়ার সময় তুরাগ এলাকায় বেসরকারি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান মানিপ্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেডের একটি মাইক্রোবাস আটকে চার ট্রাংকভর্তি টাকা নিয়ে যায় একদল ডাকাত। ওই ট্রাংকগুলোতে ব্যাংকের ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ছিল বলে মানিপ্ল্যান্টের তরফ থেকে সেদিন জানানো হয়। ওইদিন দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত খিলক্ষেত এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিনটি ট্রাংক উদ্ধার করা হয়, সেখানে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা ছিল।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার মানিপ্ল্যান্টের পরিচালক (অপারেশনস) আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ১৩ এপ্রিল দিন রেখেছে আদালত। পরে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব ডিবিকে দেওয়া হয়।
গতকাল ডিএমপির ডিবিপ্রধান হারুন বলেন, লুটের কাজে নেওয়া মাইক্রোবাসটি ভাড়া নিয়েছিল সিলেটে যাওয়ার কথা বলে। ৯ মার্চ ভোর সাড়ে ৫টার দিকে কুর্মিটোলা যাত্রী ছাউনির সামনে গাড়িটি এলে ডাকাতরা চালককে পেছনের সিট ঠিক করতে বলে। চালক পেছনে গেলে তার হাত-পা ও চোখ বেঁধে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় তরা। পরে তারা ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের টাকা লুটের জন্য ডিওএইচএস এলাকায় ওত পেতে থাকে।
তিনি বলেন, আগের তথ্যমতো নির্দিষ্ট নম্বরের ডাচ্-বাংলার গাড়ি আসতেই অনুসরণ করে তারা ওই লুটের ঘটনা ঘটায়। পরে টাকাসহ গাড়ি ৩০০ ফুট সড়ক এলাকায় নিয়ে যায়। পথে পাঁচজনকে তারা নামিয়ে দেয়। দুই ট্রাংক টাকা বের করে তারা সেখানে দুটি চালের বস্তা এবং পাঁচটি ব্যাগ ভর্তি করে। সঙ্গে আর ব্যাগ না থাকায় তারা বাকি টাকা ফেলে রেখে চলে যায়। যাওয়ার সময় চালকের আসনে আরও একটি ব্যাগ তারা রেখে যায়। ওই গাড়ির চালক ছাড়া পেয়ে টাকার ব্যাগটি নিজের কাছে নেয়। ট্রাংক থেকে অবশিষ্ট টাকা বের করে সে তার ভাইয়ের কাছে দেয়। পরে তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তাদের বাসা থেকে টাকা উদ্ধার করা হয়।
দেশের সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় পাস করেছেন ৪৯ হাজার ১৯৪ জন। তাদের মধ্যে ছেলে ২০ হাজার ৮১৩, ও মেয়ে ২৮ হাজার ৩৮১ জন। পাসের হার ৩৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ। ছেলেদের পাসের হার ৪২ দশমিক ৩১ শতাংশ এবং মেয়েদের ৫৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এছাড়া লিখিত পরীক্ষায় ছেলেদের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছেন রাফসান জামান। তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ কেন্দ্র থেকে পরীক্ষা দিয়ে সর্বোচ্চ ৯৪ দশমিক ২৫ নম্বর পেয়েছেন। গতকাল রবিবার মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (পুরানো) সভাকক্ষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এই ফল প্রকাশ করেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, এ বছর এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে আবেদন করেছিলেন ১ লাখ ৩৯ হাজার ২১৭ জন। এর মধ্যে ছেলে ৪৬ দশমিক ২৬৪ শতাংশ অর্থাৎ ৬৪ হাজার ২৬৪ জন এবং মেয়ে ৫৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ অর্থাৎ ৭৪ হাজার ৯৫৩ জন। তাদের মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন ১ লাখ ৩৫ হাজার ৮১৩ জন, যা মোট আবেদনকারীর ৯৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সরকারি ও বেসরকারি ১০৮টি মেডিকেল কলেজে মোট আসন রয়েছে ১১ হাজার ১২২টি। এর মধ্যে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন ৪ হাজার ৩৫০টি এবং ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে আসন ৬ হাজার ৭৭২টি। সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে প্রতিটি আসনের জন্য লড়েছেন ১২ জন পরীক্ষার্থী। উত্তীর্ণদের মধ্যে সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পাবেন ৪ হাজার ৩৫০ জন। এর মধ্যে ছেলে ভর্তির সুযোগ পাবেন ৪৫ শতাংশ অর্থাৎ ১ হাজার ৫৭ জন এবং মেয়ে ৫৫ শতাংশ অর্থাৎ ২ হাজার ৩৯৩ জন। সরকারি মেডিকেলে মেধা তালিকায় ভর্তি হতে পারবেন ৩ হাজার ৩৮৪ শিক্ষার্থী। এ ছাড়া জেলা কোটায় ৮৪৮ জন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৮৭ জন এবং উপজাতি কোটায় ৩১ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন।
এর আগে গত শুক্রবার দেশের ১৯টি কেন্দ্রের ৫৭টি ভেন্যুতে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
গতকালের ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আজিজুর রহমান, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) সভাপতি অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হাসান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, কভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. শহিদুল্লাহ, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. টিটো মিঞা, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল ও অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজ উপস্থিত ছিলেন।
প্রথম চট্টগ্রামের রাফসান : মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় দেড় লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রথম চট্টগ্রামের রাফসান জামান। রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করা রাফসান থাকেন চট্টগ্রামের হালিশহর কে ব্লকে। তবে তাদের গ্রামের বাড়ি রংপুরে। ৯৪ দশমিক ২৫ পয়েন্ট পেয়ে তিনি ১ লাখ ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রথম হয়েছেন।
রাফসানের বাবা এ কে এম শামসুজ্জামান সিটি গ্রুপে চাকরি করেন। মা গৃহিণী। তারা এক ভাই ও এক বোন। বড় বোন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্য বিষয়ে স্নাতক করেছেন। তবে ভর্তি পরীক্ষা ভালো হলেও প্রথম হওয়ার কথা ভাবেননি রাফসান।
মেডিকেলের ফলাফল বের হওয়ার পরপরই মিডিয়ার লোকজনের পাশাপাশি কোচিং সেন্টারের লোকজন ভিড়ে পরিবারের সদস্যরা নাজেহাল। এর মধ্যে রেটিনা বলছে, রাফসান তাদের স্টুডেন্ট। অপরদিকে উদ্ভাস বলছে, তাদের। আর তা নিয়ে খুব বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। দুই কোচিং সেন্টারের লোকজনই বাসায় গিয়ে ভিড় করছেন।
এ সময় রাফসানের বাবা এ কে এম শামসুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার ছেলে মূলত রেটিনার শিক্ষার্থী। সে রেটিনায় কোচিং করেছে। তবে উদ্ভাসে শুধু পরীক্ষাগুলোয় অংশ নিত।’
ছেলের ফলাফল সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ছেলে ভালো ফলাফল করবে বিশ্বাস ছিল। কিন্তু প্রথম যে হবে, তা ধারণায় ছিল না। চট্টগ্রাম হালিশহরের গার্নাস ইংলিশ মাধ্যমে পড়াশোনার পর ষষ্ঠ শ্রেণিতে রাজশাহী ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হয়। সেখান থেকেই এসএসসি ও এইচএসসি শেষ করে।’
কোচিং সেন্টার প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে শামসুজ্জামান বলেন, ‘একজন শিক্ষার্থীর জন্য কোচিং সেন্টার সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সবার আগে নিজেকে পড়তে হবে। তবেই ভালো ফলাফল সম্ভব। আর আমার ছেলে বরাবরই ভালো ফলাফল করে আসছিল।’
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, পঞ্চগড়ে হামলা ঢাকা ও লন্ডন থেকে মনিটর করা হয়েছে। সারা দেশে গ-গোল লাগানোর উদ্দেশ্য তাদের ছিল। গতকাল রবিবার দুপুরে আহমদিয়া মুসলিম জামায়াতের বার্ষিক সালানা জলসা বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে ২-৪ মার্চ আহমদিয়া মুসলিম (কাদিয়ানি) জামায়াতের বোদা উপজেলার ফুলতলা, শালশিরি, আহমদনগর এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর, দোকানপাট পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, হামলা পরিচালনা করার আগে থেকে উসকানি ছড়ানো হয়েছে। বাঁশের কেল্লা পেজ থেকে কাদিয়ানিদের বিরুদ্ধে ঐক্য পরিষদ, বিএনপির সাবেক এমপি রুমিন ফারহানা ও হারুন উর রশিদের ফেসবুক পেজ থেকে উসকাানি ছড়ানো হয়েছে। উসকানি ছড়িয়ে সংগঠিত করে এই হামলা পরিচালনা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘মহা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই হামলা পরিচালনা করা হয়েছে। মানুষকে উসকানি দেওয়া হয়েছে। আমরা পুলিশ প্রশাসনকে বলছি, যে বা যারাই এটার সাথে যুক্ত থাকুক না কেন কোন দল বা কোন মত এটা না দেখে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ধাক্কামারা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুরশেদ এবং পৌর যুবলীগের সহসভাপতি শাহীন আলমের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে, হামলা চালানো হয়েছে। তারা পুলিশ বক্সে হামলা পরিচালনা করেছে। ডিসি অফিসে, এসপি অফিসে হামলা পরিচালনার চেষ্টা করেছে। থানায় হামলা পরিচালনার চেষ্টা করেছে, র্যাবের গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ইসলামের নামে এভাবে কারও ওপর হামলা পরিচালনা করা কোনোভাবেই ইসলাম অনুমোদন করে না। আমরা তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত দৃষ্টান্তমূলক বিচারের বিধান করতে বদ্ধপরিকর।’
পরে মন্ত্রী পঞ্চগড় শেরেবাংলা পার্কের মুক্ত মঞ্চে অনুষ্ঠিত জেলা আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। সেখানে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপি সরকারকে টান দিয়ে ফেলে দেবে বলেছে। কিন্তু দড়ি ছিঁড়ে ফখরুলসহ সবাই মাটিতে পড়ে গেলেন। হাসপাতালে ভর্তি হলেন। এখন বলছেন সরকারকে হটাতে আবার টান দেবেন। এবার টান দিলে তাদের কোমর ভেঙে যাবে আর হামাগুড়ি দিয়ে হাঁটতে হবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘সরকারি দল হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে দেশে যাতে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে। আওয়ামী লীগ রাজপথের দল, রাজপথে আছে এবং রাজপথেই থাকবে। এই কর্মসূচি আগামী নির্বাচন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।’
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রেলপথমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মো. নূরুল ইসলাম সুজনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সদর আসনের সংসদ সদস্য মজাহারুল হক প্রধান, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাট বক্তব্য দেন।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনকে বলা হয় ‘লাশের সাক্ষ্য’। সেই প্রতিবেদনে প্রায়ই ভুল থাকছে। হত্যা হয়ে যাচ্ছে আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনা। দেশের মর্গগুলোর আধুনিকায়ন না হওয়া, চিকিৎসকদের অদক্ষতা এবং মর্গে আসার আগেই মরদেহের আলামত নষ্ট হয়ে যাওয়া ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ভুলের অন্যতম কারণ। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য এরকমই।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের বেশিরভাগ মর্গে মরদেহের ভিসেরা বা বিভিন্ন নমুনা সংরক্ষণের আধুনিক সুবিধাসংবলিত জায়গা নেই। এসব ধারণের জন্য কনটেইনার, প্রিজারভেটিভ বা রাসায়নিকের সরবরাহও প্রয়োজনের তুলনায় কম। অনেক সময় প্রিজারভেটিভ না থাকলে লবণ পানির সাহায্যে মর্গে লাশ সংরক্ষণ করা হয় এবং হিস্টোপ্যাথলজিক্যাল ল্যাবে যেসব স্যাম্পল বা নমুনা পাঠানো হয়, সেসব ভালোমানের ফরমালিন দিয়ে সংরক্ষিত করে পাঠানো হয় না। ফলে আলামত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনেও ভুলের আশঙ্কা বাড়ে। কখনো চিকিৎসক প্রভাবিত হয়েও ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেন।
ময়নাতদন্তসংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা বলেন, আমাদের দেশে আধুনিক মর্গ ব্যবস্থাপনা নেই। তাছাড়া লাশ মর্গে আসার আগেই অনেক আলামত নষ্ট হয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে প্রথমে থানায় নেয়; তারপর থানা থেকে নেয় মেডিকেল কলেজে। এরপর অ্যাম্বুলেন্স, লেগুনা বা ট্রাকে বা ভ্যানে করে আনে মর্গে। এত আলামত নষ্ট হয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে। এসব কারণে ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আসে।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ময়নাতদন্তের ভুল প্রতিবেদনের প্রধান কারণ আধুনিক যন্ত্রপাতি ও আধুনিক মর্গের অভাব। দ্বিতীয় কারণ, লাশ যখন আমাদের কাছে আসে তখন আমরা সিন অব দ্য ক্রাইম (অপরাধের দৃশ্য) ভিজিট করি না। ফলে অনেক ইনফরমেশন ধরা পড়ে না। উন্নতবিশ্বে কোথাও অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে পুলিশ ওই স্থানকে হলুদ টেপ দিয়ে ঘিরে রাখে এবং সবার আগে ভিজিট করে একজন ফরেনসিক স্পেশালিস্ট। ওখান থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগৃহীত হয়ে মর্গে চলে আসে। মর্গে লাশ পাঠায় পুলিশ, পরে পোস্টমর্টেম করে সংগৃহীত তথ্য-উপাত্তের সঙ্গে মরদেহের ফাইন্ডিংস মিলিয়ে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। সেটাই সঠিক ও নির্ভরযোগ্য হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এমন হয় না।’
ময়নাতদন্ত কী : খুন বা অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর ভুক্তভোগীর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানার জন্য একজন ফরেনসিক চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞ মরদেহের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অঙ্গ বা অঙ্গবিশেষের গভীর নিরীক্ষণ করেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করে মন্তব্যসহ যে প্রতিবেদন দেওয়া হয় তাই পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন। তদন্তকারী কর্মকর্তা যদি মনে করেন, ময়নাতদন্ত হওয়া জরুরি, তখন মৃতদেহ সিভিল সার্জন বা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়।
সম্প্রতি ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আত্মহত্যা ও রেল দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর কথা উল্লেখ থাকা ২২টি মামলা তদন্ত করে পিবিআই জানায়, এগুলো ছিল পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। ওই মামলাগুলোতে পুলিশের অন্যান্য সংস্থা তদন্ত করে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছিল।
পিবিআইপ্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হত্যা বা অপমৃত্যুর মামলার তদন্তে ময়নাতদন্তের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভালো ময়নাতদন্ত মামলার রহস্য উদঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। অন্যদিকে ময়নাতদন্ত সঠিক না হলে তদন্ত ভিন্ন পথে মোড় নেয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তদন্তকারী কর্মকর্তাকে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে সাহায্য করে, ঘটনার রহস্য উদঘাটনে দারুণভাবে সহায়তা করে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিটফোর্ড বা স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মর্গে ২০২১ সালে ৭৪০টি, ২০২২ সালে ৬০০টি ও চলতি বছর ১৫ মে পর্যন্ত ১৪৫টি মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে। গত ১৫ মে দুপুরে সেখানকার মর্গে গিয়ে দেখা গেছে জরাজীর্ণ দশা। দুটি মরদেহ পড়ে আছে পোস্টমর্টেমের অপেক্ষায়। মর্গ সহকারী নাম প্রকাশ না করে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘মর্গের লাশ রাখার একমাত্র ফ্রিজটি তিন বছর ধরে নষ্ট। ময়নাতদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় মালামালের সংকট সবসময়ই থাকে। নেই আধুনিক কোনো সুবিধা। তিনজন মর্গ সহকারীই বছরের পর বছর চুক্তিভিত্তিতে কাজ করছেন।’
জানা গেছে, রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য মর্গের দশা একই।
ময়নাতদন্ত সম্পর্কিত সমস্যা নিয়ে পিবিআইয়ের এক প্রতিবেদনে দেশের মর্গসংশ্লিষ্টদের ফরেনসিক বিষয়ে আধুনিক ও বিশ্বমানের প্রশিক্ষণের অভাব, বিশেষজ্ঞ ফরেনসিক চিকিৎসকের তুলনায় লাশের সংখ্যা বেশি, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও হিমাগারসহ মানসম্মত অবকাঠামো না থাকাকে ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের জন্য দায়ী করা হয়েছে। এ ছাড়া মর্গ অ্যাসিস্ট্যান্ট বা ডোমের স্বল্পতা, জটিল ও চাঞ্চল্যকর মরদেহের ময়নাতদন্তের ক্ষেত্রে বোর্ড গঠন করে ময়নাতদন্ত না করা, আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা থাকায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ময়নাতদন্ত কাজে অংশ নিতে চান না বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ময়নাতদন্ত বিষয়ে পিবিআইয়ের প্রতিবেদন ও দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বাংলাদেশের মর্গগুলোতে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ ও আলোর ব্যবস্থাসহ আধুনিক অবকাঠামো ও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির ঘাটতি রয়েছে। অনেক জেলায় মর্গে বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে জেনারেটর নেই। অনেক জেলায় মর্গে পর্যাপ্ত দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল নেই। বংশ পরম্পরায় মর্গ অ্যাসিস্ট্যান্ট বা ডোমরা ময়নাতদন্তের সহযোগী হিসেবে কাজ করলেও তাদের কোনো মৌলিক প্রশিক্ষণ নেই। তাছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ ব্যস্ত মর্গগুলোতে মর্গ অ্যাসিস্ট্যান্টদের স্বল্পতা প্রকট। অনেক জায়গায় দেখা গেছে, লাশ সংরক্ষণের সুরক্ষিত পরিবেশ ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার অভাব। বিদেশি নাগরিক ও বিশেষ ক্ষেত্রে মরদেহ প্রচলিত নিয়মে হিমঘরে সংরক্ষণ করার প্রয়োজন পড়ে। অল্পসংখ্যক মর্গে কুলিং বা ফ্রিজিং বা মর্চুয়ারি কুলার সিস্টেম থাকলেও অধিকাংশ সময় নষ্ট থাকে বলে গরমের সময় লাশে দ্রুত পচন ধরে।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে মৃত্যুর সম্ভাব্য সময়ের উল্লেখ থাকা জরুরি। মর্গে আধুনিক প্রযুক্তি না থাকায় অভিমত প্রদানে বিশেষজ্ঞদের সমস্যা হয়। পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ১ জুন রাজধানীর কলাবাগান থানা এলাকায় নিজ বাসা থেকে ডা. কাজী সাবিরা রহমান লিপির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি খুন হয়েছিলেন। মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে। খুনের ধরন মোটামুটি স্পষ্ট হলেও ঘটনার রহস্য উন্মোচনে খুনের ‘সম্ভাব্য সময়’ জানার জন্য পিবিআই ঢামেক ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকদের সুযোগ-সুবিধা কম হওয়ায় চিকিৎসা শিক্ষায় এ শাখাটি অবহেলিত এবং কম গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত। ফলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে বিশেষজ্ঞ ফরেনসিক ডাক্তারের স্বল্পতা রয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে আরেকটি উদাহরণ দেওয়া হয়েছে, সিএমএম আদালতের নির্দেশে ২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি পিবিআই চট্টগ্রাম মহানগরের লালমোহন থানা এলাকা থেকে কামাল মাঝির (৪৫) ৩৮ মাসের পুরনো মরদেহ তুলে ভোলার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যায়। সেখানে কর্মরতদের কারও এ ধরনের মরদেহের ময়নাতদন্তের অভিজ্ঞতা না থাকায় মরদেহটি ভোলা থেকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে নেওয়া হয়। দায়িত্বরত প্রভাষক জানান, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপকের পদে কেউ কর্মরত নেই। তিনি মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য অন্য কোনো মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে নেওয়ার অনুরোধ করেন। পিবিআই মরদেহটি বরিশাল থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সংশ্লিষ্ট বিভাগে নিয়ে যায়।
হত্যা কেন ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনা হিসেবে আসে জানতে চাইলে ফরেনসিক চিকিৎসকরা জানান, কাউকে হত্যা করে রেললাইনে ফেলে রাখলে তার ওপর দিয়ে ট্রেন গিয়ে একেবারে ক্ষতবিক্ষত হয়ে হাড়গোড় বেরিয়ে দলিত হয়ে যায়। একে চিকিৎসাশাস্ত্রে মিউটিলেডেট লাশ বলে। ওইসব লাশের আলামত বোঝা যায় না। আগের আলামত নষ্ট হয়ে নতুন আলামত তৈরি হয়। তখন রেল দুর্ঘটনাই মনে হয়। এতে অনেক সময় চিকিৎসকরা মিসগাইডেড হয়।
ফরেনসিক বিভাগে চিকিৎসকের সংকট বিষয়ে এক চিকিৎসক বলেন, ‘আমি ঢাকায়ে আছি, অথচ আমাকে কক্সবাজার বা পঞ্চগড় গিয়ে স্বাক্ষর দিতে হচ্ছে। বাইরে যাওয়ার, বিশেষ করে একা, বিপদ আছে অনেক, সংক্ষুব্ধ পক্ষ হামলা চালাতে পারে। এজন্য অনেক চিকিৎসক এ বিভাগে থাকতে চান না। এখানে সুবিধাও অনেক কম। মফস্বলে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসককে মিসগাইড করে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে রিপোর্ট লেখানো হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।
ফ্যাটি লিভার রোগটি এখন ঘরে ঘরে। প্রাথমিকভাবে এই রোগের লক্ষণ না বুঝতে পারলে, অনেক সমস্যাই দেখা দিতে পারে। চিকিৎসকরা জানান, এই রোগ থেকে বাঁচতে জীবনধারায় বদল আনতে হবে।
কোন কোন উপসর্গ দেখলে সতর্ক হবেন? শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া, হঠাৎ ভুঁড়ি বেড়ে যাওয়া, হলুদ রঙের দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব, ওজন অত্যন্ত বেড়ে যাওয়া, সারাক্ষণ ক্লান্তিভাব— এই উপসর্গগুলি ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ হতে পারে। অনেকের ধারণা, মদ্যপান করলেই এই রোগের ঝুঁকি বাড়ে। তবে কেবল মদ্যপান ছেড়ে দিলেই এই রোগের ঝুঁকি কমবে না। কম তেলমশলার খাবার খাওয়া, বাড়ির খাবারে অভ্যস্ত হওয়া, মদ ছেড়ে দেওয়া— এই অভ্যাসগুলিই লিভারকে ভাল রাখার অন্যতম উপায়। এই অসুখকে ঠেকিয়ে রাখতে ডায়েটের ওপর বিশেষ নজর দিতে হবে। তবে এগুলিই শেষ কথা নয়। লিভার ভাল রাখতে মেনে চলতে হয় আরও কিছু নিয়মকানুন। কিন্তু কী কী?
চিনির মাত্রা কমানো
সহজে রোগা হতে চেয়ে অনেকেই নিজের খুশি মতো ডায়েট প্ল্যান বানিয়ে নেন। চিনি বাদ দিয়ে দেদারে কৃত্রিম চিনির উপরেই ভরসা করেন। এতেই আসলে চরম ক্ষতি করছেন শরীরের। অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার অভ্যাস আমাদের লিভারের ব্যাপক ক্ষতি করে। ফ্রুকটোজ হোক কিংবা কৃত্রিম চিনি, লিভারের অসুখ ডেকে আনে।
ব্যথার ওষুধ কম খান
বেশকিছু বেদনানাশক ওষুধ লিভারের ক্ষতি করে। কিছু প্যারাসিটামল বা কোলেস্টেরলের ওষুধও লিভারের প্রভূত ক্ষতি করে। ঘুম না হলে অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঘুমের ওষুধ খেতে শুরু করেন। এই অভ্যাসের কারণে লিভারের জটিল রোগে ভুগতে হতে পারে।
পানি বেশি করে খান
শরীর থেকে যতটা দূষিত পদার্থ বার করে দিতে পারবেন, লিভার ততটাই সুস্থ থাকবে। তাই বেশি করে পানি খেতে হবে। তবেই প্রস্রাবের সঙ্গে শরীরের টক্সিন পদার্থগুলি বেরিয়ে যাবে। দিনে কয়েক বার গরম পানিতে পাতিলেবুর রস দিয়ে সেই পানি খান। ডায়েটে রাখুন টক দইয়ের মতো প্রোবায়োটিক।
পর্যাপ্ত ঘুম
সারাদিন কর্মব্যস্ততা আর রাত জেগে মোবাইলে চোখ রেখে সিনেমা দেখা— সব মিলিয়ে ঘুমের সঙ্গে আপস। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ঘুমের অভাব হলে তার প্রভাব পড়ে লিভারের উপরেও।
ওজন কমান
শুধু সুন্দর দেখানোর জন্যই নয়, লিভার সুরক্ষিত রাখতে চাইলেও কিন্তু ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আমাদের শরীরে কার্বহাইড্রেট-প্রোটিন-ফ্যাটের সঠিক ভারসাম্য থাকা ভীষণ জরুরি। তবে ইদানিং বাড়ির খাবার নয়, বরং রেস্তোরাঁর খাবার, রেড মিট, বাইরের ভাজাভুজি, প্যাকেটজাত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশি খেয়ে অভ্যস্ত। আর এর জেরেই শরীরে ট্রান্স ফ্যাটের মাত্রা বাড়ছে। লিভারের পক্ষে এই ফ্যাট মোটেই ভাল নয়।
প্রথম সেট ২৫ মিনিট, দ্বিতীয়টি ২৮ মিনিটে জিতলেন কার্লোস আলকারাজ। মনে হচ্ছিল কোয়ালিফায়ার ফ্যাভিও কোবোলিকে বুঝি উড়িয়েই দিচ্ছেন শীর্ষ বাছাই।
না, তৃতীয় সেটতে প্রতিরোধ গড়লেন ইতালিয়ান। সময় গড়ালো ঘন্টায়। শেষপর্যন্ত জয় এসেছে ৬৬ মিনিটে। ৬-০, ৬-২, ৭-৫ গেমে প্রথম রাউন্ডের ম্যাচ জিতে রাফায়েল নাদালের উত্তরসুরি ক্লে কোর্টের সর্বোচ্চ আসর শুরু করলেন।
নাদালের চোটজনিত অনুপস্থিতিতে শীর্ষবাছাই আলকারাজ। ২০২১ এ তৃতীয় রাউন্ড, গতবার কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিয়েছিলেন। এবার আরো এগোলে সেমিফাইনালে নোভাক জকোভিচের সংগে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা।
সে দেখা যাবে। আপাতত দ্বিতীয় রাউন্ডে আলকারাজকে টপকাতে হবে জাপানের টি. দানিয়লেকে।
আইপিএলের পঞ্চম শিরোপা জিততে চেন্নাই সুপার কিংসের চাই ১৫ ওভারে ১৭১ রান। আহমেদাবাদে রাত ১২.৪০ মিনিটে শুরু হবে খেলা। গুজরাট টাইট্যান্সের ২১৪ রানের জবাবে খেলতে নেমে ৩ বলে ৪ রান করার পর বৃ্স্টিতে বন্ধ হয় ফাইনাল। অর্থাৎ বাকি ১৪.৩ ওভারে আরো ১৬৭ রান চাই ধোনীর দলের।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।