
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রায় ১২ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে আটটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ থেকে ব্যয় মেটানো হবে ৮ হাজার ৯১২ কোটি টাকা। যেখানে একটি প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক ঋণ হিসেবে দেবে ৪ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা।
গতকাল রবিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভাশেষে প্রকল্পগুলোর সার্বিক বিষয় উপস্থাপন করেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম।
একনেকে অনুমোদনের জন্য সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের আটটি প্রকল্প উপস্থাপন করা হয়। এতে ব্যয় হবে ১২ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা। যার বেশির ভাগ বৈদেশিক অর্থায়ন।
একনেকে উপস্থাপন করা প্রকল্পগুলোর মধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের তিনটি, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি, বিদ্যুৎ বিভাগের একটি, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের একটি, পরিকল্পনা বিভাগের একটি এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের একটি রয়েছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের ‘রেজিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফর এডাপশন অ্যান্ড ভালনারাবিলিটি রিডাকশন প্রজেক্ট (রিভার)’ শীর্ষক প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৩২৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। সরকারি এবং বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে। সরকারি খাতে ৪৮ কোটি ৪৭ লাখ এবং বিশ্বব্যাংক দেবে ৪ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। প্রকল্পটি চলতি বছরে শুরু হয়ে ২০২৮ সালের জুনে কাজ শেষ হবে।
প্রকল্পের আওতায় ৫০০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র, ১০০টি সৌর শক্তিচালিত ক্ষুদ্রাকার গ্রিড স্থাপন, ২৫০টি মাঠ উঁচুকরণ, ২৭৫ কিলোমিটার বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র সংযোগ সড়ক উন্নয়ন, ৫০০ মিটার সেতু নির্মাণ, ১ হাজার ৩৩০ মিটার কালভার্ট নির্মাণ, ৬ হাজার ৬০০টি সৌরবাতি স্থাপন, ১ হাজার ৪০০টি বজ্রপাত-নিরোধক যন্ত্র স্থাপন, ১৫টি ল্যান্ডিং স্টেজ এবং ১১০ কিলোমিটার কমিউনিটি ইনফ্রাস্ট্রাকচার সংযোগ সড়ক উন্নয়ন করা হবে।
দক্ষিণ চট্টগ্রাম অঞ্চলের জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে একটি প্রকল্প নিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে জীবনমান উন্নয়ন শীর্ষক এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৭২৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। যার বেশির ভাগ বৈদেশিক ঋণ। জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকা এই প্রকল্পে ঋণ দেবে ২ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা। বাকিটা বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়ন।
এলজিইডির প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এ প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম বিভাগের বিশেষ করে কক্সবাজারের বিভিন্ন সড়ক অবকাঠামো এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থার মানোন্নয়ন করা হবে।
এ ছাড়া স্থানীয় সরকার বিভাগের ‘ময়মনসিংহ জেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক আরও একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়। এক হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্প পুরোটাই সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়ন হবে। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন মেয়াদ ধরা হয়েছে চলতি বছর থেকে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এ প্রকল্পের আওতায় ময়মনসিংহের গ্রামীণ জনগণের জন্য গ্রাম, বাজার, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন এবং শহরের সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করা হবে।
বিদ্যুৎ বিভাগের ৪ হাজার ৩২২ কোটি টাকা ব্যয়ের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ট্রান্সমিশন গ্রিড সম্প্রসারণ শীর্ষক প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয় একনেক বৈঠকে। এ প্রকল্পে ব্যয়ের অধিকাংশ ঋণ হিসেবে দেবে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড।
এ ছাড়া কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের ১২৮ কোটি টাকা ব্যয়ের ‘প্রমোটিং জেন্ডার রেসপন্সিভ এন্টারপ্রাইজ ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড টিভিইটি সিস্টেম’ শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।
এদিন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের ১ হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে কাস্টমস আধুনিকায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, পরিকল্পনা বিভাগের ৩২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে আরবান রেজিলিয়েন্স প্রজেক্ট, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ৩৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের পুনর্বাসন ও নদীতীর সংরক্ষণ প্রকল্প একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
লবণ পানিতে দিশেহারা চট্টগ্রাম নগরবাসী। ওয়াসার ইনটেকে (নদীর যে পয়েন্ট থেকে পানি সংগ্রহ করা হয়) প্রতি লিটার পানিতে ১৭০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত লবণ পাওয়া যাচ্ছে বলে পরিশোধিত পানিও লবণাক্ত।
ওয়াসা কর্তৃপক্ষ নলকূপ কিংবা অন্য প্ল্যান্টের পানি মিশিয়ে লবণের মাত্রা কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে। তারপরও সরবরাহ করা প্রতি লিটার পানিতে ৩০০-৩৫০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত লবণ থাকছে। গত কয়েক বছর পানিতে লবণের এ মাত্রা কম থাকলেও এবার হঠাৎ করে বেড়ে গেছে।
কেন লবণের মাত্রা বেড়ে গেল কারণ জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্মকর্তাদের গড়পড়তা উত্তর, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টি কমে গেছে। ফলে কাপ্তাই হ্রদে পানির পরিমাণ কমে গেছে। কাপ্তাই হ্রদের পানি এসে পড়ে কর্ণফুলী নদীতে। পানির পরিমাণ কম হওয়ায় জোয়ারের সময় সাগরের লবণাক্ত পানি নদীর অনেক ভেতরে প্রবেশ করছে। হালদা নদীর যে পয়েন্ট (মোহরায়) থেকে ওয়াসা পরিশোধনের জন্য পানি সংগ্রহ করে সেখানে দ্রুত লবণ পানি চলে আসে। তাই নগরীর পানিতে লবণ পাওয়া যাচ্ছে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, পানির পরিমাণ কমে যাওয়ায় জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের টারবাইন একটার বেশি চালু করা হচ্ছে না। ফলে কাপ্তাই থেকে পানি কম ডিসচার্জ (নিঃসরিত) হচ্ছে কর্ণফুলী নদীতে। লবণ পানি নিয়ে ওয়াসা কর্তৃপক্ষের এ বক্তব্য সঠিক ধরে নিলে প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুম জানুয়ারি থেকে মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত নগরীতে লবণ পানি পরিবাহিত হওয়ার কথা। প্রতি বছর হচ্ছে না কেন? এর খোঁজ নিতে গিয়ে কথা হয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, চট্টগ্রাম দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী রেজাউল করিমের সঙ্গে। তিনিও বললেন, একই কথা।
কাপ্তাই হ্রদে পানি কমে যাওয়ায় এখন একটার বেশি টারবাইন চালু করা যাচ্ছে না। তাই উজান থেকে পানি কম আসছে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম ওয়াসার সিনিয়র এক প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে জানান, কাপ্তাই হ্রদে শুষ্ক মৌসুমের জন্য পানি সংরক্ষণে নভেম্বরের পর থেকে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের চারটি টারবাইনের মধ্যে এক বা দুটি চালু রাখা হয়। কিন্তু এবার জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত চারটি টারবাইনই চালু ছিল। আর এতে হ্রদের পানি দ্রুত কমে যায়। ফলে এখন একটাও আর ঠিকভাবে চালু রাখা যাচ্ছে না।
ওয়াসার প্রকৌশলীর এ বক্তব্যের সূত্র ধরে কথা হয় কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক আবদুল জাহেরের সঙ্গে। তিনি টারবাইন চালু রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত আমরা চারটি টারবাইনও চালু রেখেছিলাম। বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ নিশ্চিত করতে আমাদের ওপর তা চালুর নির্দেশনা ছিল। এতেই দ্রুত হ্রদের পানি কমে যায়। স্বাভাবিকভাবে এ সময়ে এক বা দুটি টারবাইন চালু রেখে বাকি পানি এপ্রিল পর্যন্ত চালানোর জন্য মজুদ করে রাখা হয়।’
এখন পানির স্তর কত রয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পানির গভীরতা (সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে) ৭৮ দশমিক ০১ ফুট। এ সময় থাকার কথা ৯১ দশমিক ২৪ ফুট। পানির সর্বোচ্চ গভীরতা অক্টোবরে ১০৯ ফুট পর্যন্ত থাকে।’
এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে কী হবে এমন প্রশ্নে আবদুল জাহের বলেন, ‘একটি টারবাইনও সচল রাখা যায় কি না সন্দেহ। বৃষ্টি না আসা পর্যন্ত হ্রদের পানি বাড়ার কোনো সুযোগ নেই।’
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এখনই বৃষ্টির কোনো পূর্বাভাস নেই। কালবৈশাখী বা বৈশাখের আগাম বৃষ্টি হলেও তা সাময়িক। এতে হ্রদের পানি বৃদ্ধির কোনো সম্ভাবনা নেই।
চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্ণফুলী ও হালদা নদীর পানি পরিশোধন করে নগরীতে প্রায় ৪০ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করে। এর মধ্যে হালদা নদীর মোহরা প্ল্যান্টটি সবার আগে। একই নদীতে উজানে রয়েছে মদুনাঘাট পানি সরবরাহ প্রকল্প। অন্যদিকে মোহরা পয়েন্ট থেকে আরও উজানে কর্ণফুলী নদীর রাঙ্গুনিয়ার পোমরায় রয়েছে কর্ণফুলী পানি শোধনাগার প্রকল্পের দুটি পর্যায়। সাগরের লবণাক্ত পানিতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে মোহরায়।
এ বিষয়ে ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, ‘আমরা কর্ণফুলী ও মোহরার পানি মিশ্রণ করে রবিবার থেকে সরবরাহ করছি। এতে গ্রাহক পর্যায়ে সরবরাহ করা পানিতে লবণের পরিমাণ প্রতি লিটারে ২৫০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত নেমে এসেছে।’
২০০৭, ২০১৭ ও ২০২১ সালে ওয়াসার পানিতে লবণের পরিমাণ বেশি হয়েছিল। সাধারণ ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে এ ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। কিন্তু এবার গতকাল ১২ মার্চ মোহরা পয়েন্টে প্রতি লিটার পানিতে ১৮০০ মিলিগ্রাম লবণ পাওয়া গেছে। আগের দিন ১১ মার্চ ছিল ১৬৮০ মিলিগ্রাম।
গত ফেব্রুয়ারি শেষ সপ্তাহ থেকেই পানিতে লবণের পরিমাণ বাড়তে থাকে বলে জানান চট্টগ্রাম ওয়াসার মোহরা পানি শোধনাগার প্রকল্পের পরিচালক সাদেক হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি শেষ সপ্তাহ থেকে হালদার পানিতে লবণের পরিমাণ বেশি পাওয়া যাচ্ছে এবং এখন তা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আমরা যেহেতু লবণ পরিশোধন করতে পারি না তাই পানি ট্রিটমেন্ট করার পর লবণযুক্ত পানি সরবরাহ করা হয়ে থাকে। তারপরও গভীর নলকূপের পানি মিশিয়ে পানিতে লবণের মাত্রা কমিয়ে আনা হয়।’
এদিকে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, উপকূলীয় জেলা হিসেবে চট্টগ্রামে প্রতি লিটার সুপেয় পানিতে ৬০০ মিলিগ্রাম লবণ সহনীয়। তবে পানিতে লবণের মাত্রা বেশি থাকলে কী সমস্যা হতে পারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গৃহস্থালি পর্যায়ে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। তবে শিল্প-কারখানার মেশিনারিজে সমস্যা হতে পারে।’
অন্যদিকে মানবদেহে ক্ষতিকারক প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী বলেন, ‘লবণের মাত্রা বেশি হলে মানুষ হাইপারটনিক হয়ে পড়বে। এ ছাড়া আগে থেকে যাদের কিডনি ও প্রেশারের সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে এসব রোগ আরও ত্বরান্বিত হবে। তা থেকে ব্লাড প্রেশারের মাধ্যমে হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘মানব শরীরে স্বাভাবিকের বেশি লবণ প্রবেশ করলে অবশ্যই এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আর ওয়াসা কখনো পরিশোধনের মাধ্যমে লবণ কমাতে পারবে না। তারা জীবাণুনাশ করতে পারবে।’
লবণ পানি বিষয়ে সতর্ক থাকতে ওয়াসার পক্ষ থেকে জরুরি গণবিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়েছে। বর্তমানে ওয়াসার লবণযুক্ত পানি হালিশহর, পাহাড়তলী, উত্তর কাট্টলী ও পতেঙ্গা এলাকায় বেশি পাওয়া যাচ্ছে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (সুপ্রিম কোর্ট বার) নির্বাচনে ভোটের বাকি মাত্র কয়েক দিন। আগের বছরের মতো তিক্ত ও অস্বস্তিকর পরিস্থিতি নাকি সুন্দর ও বিতর্কহীন নির্বাচনএমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে আইনজীবীদের মধ্যে। ১৫ ও ১৬ মার্চ দুই দিনের নির্বাচনে সমিতির তালিকাভুক্ত প্রায় ৯ হাজার আইনজীবী ভোট দেবেন। ইতিমধ্যে সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শেষ সময়ের প্রচার জমে উঠেছে। পাশাপাশি আগের ঘটনার রেশে কিছুটা অস্বস্তিও রয়েছে আইনজীবীদের মধ্যে।
উচ্চ আদালতসহ সারা দেশের আইনজীবীদের কাছে সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনের একটি আলাদা আবেদন রয়েছে। এই নির্বাচন নির্দলীয় হলেও কার্যত দলীয় ছদ্মাবরণেই ভোট হয়। আওয়ামী লীগপন্থিরা সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ (সাদা প্যানেল) নামে এবং বিএনপিপন্থিরা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদ (নীল প্যানেল) নামে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনকে দুই পক্ষই মর্যাদা ও সম্মান রক্ষার লড়াই বলে বিবেচনা করে। ফলে ভোটের এই লড়াই হয় চোখে পড়ার মতো।
এবারের নির্বাচনে সাদা প্যানেল থেকে সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন ফকির এবং সম্পাদক পদে আব্দুন নূর দুলাল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দুজনই সুপ্রিম কোর্ট বারের বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক। অন্যদিকে নীল প্যানেল থেকে সভাপতি পদে ব্যারিস্টার এম মাহবুব উদ্দিন খোকনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এর আগে তিনি সমিতির বেশ কয়েকবারের সম্পাদক ছিলেন। এ প্যানেল থেকে সম্পাদক পদে সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল নির্বাচনে লড়ছেন।
বিগত বছরের (২০২২-২৩ মেয়াদে) নির্বাচনে সরকারপন্থি আইনজীবীদের ভোট পুনঃগণনার দাবি এবং বিএনপিন্থিদের ফলাফল ঘোষণার দাবি নিয়ে নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির আহ্বায়কের পদত্যাগ এবং এর জেরে প্রায় দেড় মাস ফল ঘোষণা স্থগিত থাকা, এই সময়ে সমিতির কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়া, সরকারপন্থি ও বিএনপিপন্থিদের মধ্যে বেশ কয়েকবার হট্টগোল, হাতাহাতি, মারামারি, হাতুড়ি নিয়ে হামলা ও রক্তারক্তির ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনের আশপাশে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এই পরিস্থিতিকে জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা নজিরবিহীন এবং আইনজীবী সমাজের জন্য অসম্মানজনক বলে উল্লেখ করেছিলেন।
এবারের নির্বাচন নিয়েও কিছুটা উত্তেজনার আঁচ পাওয়া গেছে কয়েক দিন আগে। সম্প্রতি নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটি নিয়ে সরকাপন্থি ও বিএনপিপন্থিরা পাল্টাপাল্টি কমিটি ঘোষণা করেন। এরপর জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের হস্তক্ষেপে আলোচনার পর ২ মার্চ জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মুনসুরুল হক চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। এ ছাড়া কিছুদিন আগে ঢাকা আইনজীবী সমিতির (ঢাকা বার) নির্বাচনের দুদিনের ভোটের প্রথম দিনই অনিয়মের অভিযোগ তুলে বিএনপি-জামায়াতপন্থি আইনজীবীরা ভোট বর্জন করলে অনেকটা সহজভাবেই নির্বাচনে উতরে যায় সরকারপন্থিরা। এসব নিয়ে উভয় পক্ষের রয়েছে অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ। সার্বিক পরিস্থিতিতে জ্যেষ্ঠ আইনবিদ ও নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের আশা দুপক্ষই সংযত আচরণ করবে। উচ্চ আদালতের আইনজীবীদের সম্মানের হানি হয় নির্বাচন নিয়ে এমন বিবাদে জড়াবেন না তারা।
সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মুনসুরুল হক চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অতীতে কী হয়েছে না হয়েছে, তা নিয়ে আমি চিন্তা করতে নারাজ। একটা সুন্দর পরিবেশে স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু ভোটের আয়োজনে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। এটুকু বলতে পারি একটি ভালো নির্বাচন হবে।’
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গেল বছরের যে পরিস্থিতি ছিল তাতে উচ্চ আদালতের আইনজীবীদের মর্যাদা ও সম্মান কিছুটা মøান হয়েছিল। এবার আশা করছি সেই তিক্ততা হবে না। নির্বাচন নিয়ে আইনজীবীদের মধ্যে মারামারির কোনো খবর আসুক তা চাই না। উচ্চ আদালতের আইনজীবীদের সম্মান রক্ষা হয় এমন ভোট চাই।’
সাদা প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী অ্যাডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন ফকির দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আপনারা মাঠ জরিপ করেন। এগুলো (বিবাদ) আমরা কখনো আশা করি না। নির্বাচনের সুন্দর পরিবেশ আছে, থাকবে। আমাদের পক্ষ থেকে কিছু হবে না। তাদের (বিএনপিপন্থি আইনজীবী) আশঙ্কাটা তো সব সময়ই ছিল। গোলমালের মানুষ যে কোনো জায়গায় গোলমাল বাধায়। কিন্তু আমরা একটি ভালো নির্বাচন চাই।’
বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীদের ইঙ্গিত করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভোটকেন্দ্র নিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করেন কিছু আইনজীবী। গত সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচনে দেখেছি। কিছুদিন আগে ঢাকা বারের নির্বাচনেও এমনটি দেখেছি। তবে বেশির ভাগ আইনজীবী এগুলো পছন্দ করেন না। তারা এ বিষয়ে সতর্ক। আমরাও সতর্ক আছি। নির্বাচন কমিশন যেহেতু পুনর্গঠন করা হয়েছে, আশা করি কোনো সমস্যা হবে না।’
রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা লুটের ঘটনায় আরও ২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা উদ্ধার করেছে পুলিশ। এর আগে উদ্ধার করা হয়েছিল ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত ৬ কোটি ৪৩ লাখ ৪৮ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান হারুন অর রশীদ।
গতকাল রবিবার রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন এসব তথ্য জানান।
এ ঘটনায় গত শনিবার রাতে ঢাকা, সুনামগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন ডিবি পুলিশের মিরপুর জোনাল টিমের পরিদর্শক সাজু মিয়া। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শান্ত ইসলাম মল্লিক তাদের প্রত্যেকের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ডিবি কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ বলেন, শনিবার রাতে বনানী থেকে সানোয়ার হাসান নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে ১ কোটি ১৪ লাখ ৫১ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। পরে মিলন ওরফে ইমন নামের আরেকজনকে বনানী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার জোয়ার সাহারার বাসায় আরও ৩২ লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা পাওয়া গেছে। উত্তরা থেকে আকাশ ও সাগর নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের বাসায় পাওয়া গেছে ১ কোটি ৭ লাখ টাকা এবং ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত প্রাইভেট কার।
এ ছাড়া সুনামগঞ্জ থেকে মো. বদরুল আলম, মো. মিজানুর রহমান, মো. সনাই মিয়া ও মো. এনামুল হক বাদশাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গতকাল ভোর থেকে খুলনায় অভিযান চালায় ডিবির আরেকটি দল।
খুলনার নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, নগরীর জোড়াগেট এলাকার সিঅ্যান্ডবি কলোনি থেকে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবির তদন্ত-সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, ডাচ্-বাংলার টাকা লুটের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। তারই ধারাবাহিকতায় খুলনায় অভিযান চালানো হচ্ছে। তবে খুলনার অভিযান এখনো শেষ না হওয়ায় কিছু বলা যাচ্ছে না।
গত বৃহস্পতিবার সকালে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথে টাকা পৌঁছে দিতে যাওয়ার সময় তুরাগ এলাকায় বেসরকারি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান মানিপ্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেডের একটি মাইক্রোবাস আটকে চার ট্রাংকভর্তি টাকা নিয়ে যায় একদল ডাকাত। ওই ট্রাংকগুলোতে ব্যাংকের ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ছিল বলে মানিপ্ল্যান্টের তরফ থেকে সেদিন জানানো হয়। ওইদিন দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত খিলক্ষেত এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিনটি ট্রাংক উদ্ধার করা হয়, সেখানে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা ছিল।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার মানিপ্ল্যান্টের পরিচালক (অপারেশনস) আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ১৩ এপ্রিল দিন রেখেছে আদালত। পরে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব ডিবিকে দেওয়া হয়।
গতকাল ডিএমপির ডিবিপ্রধান হারুন বলেন, লুটের কাজে নেওয়া মাইক্রোবাসটি ভাড়া নিয়েছিল সিলেটে যাওয়ার কথা বলে। ৯ মার্চ ভোর সাড়ে ৫টার দিকে কুর্মিটোলা যাত্রী ছাউনির সামনে গাড়িটি এলে ডাকাতরা চালককে পেছনের সিট ঠিক করতে বলে। চালক পেছনে গেলে তার হাত-পা ও চোখ বেঁধে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় তরা। পরে তারা ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের টাকা লুটের জন্য ডিওএইচএস এলাকায় ওত পেতে থাকে।
তিনি বলেন, আগের তথ্যমতো নির্দিষ্ট নম্বরের ডাচ্-বাংলার গাড়ি আসতেই অনুসরণ করে তারা ওই লুটের ঘটনা ঘটায়। পরে টাকাসহ গাড়ি ৩০০ ফুট সড়ক এলাকায় নিয়ে যায়। পথে পাঁচজনকে তারা নামিয়ে দেয়। দুই ট্রাংক টাকা বের করে তারা সেখানে দুটি চালের বস্তা এবং পাঁচটি ব্যাগ ভর্তি করে। সঙ্গে আর ব্যাগ না থাকায় তারা বাকি টাকা ফেলে রেখে চলে যায়। যাওয়ার সময় চালকের আসনে আরও একটি ব্যাগ তারা রেখে যায়। ওই গাড়ির চালক ছাড়া পেয়ে টাকার ব্যাগটি নিজের কাছে নেয়। ট্রাংক থেকে অবশিষ্ট টাকা বের করে সে তার ভাইয়ের কাছে দেয়। পরে তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তাদের বাসা থেকে টাকা উদ্ধার করা হয়।
দেশের সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় পাস করেছেন ৪৯ হাজার ১৯৪ জন। তাদের মধ্যে ছেলে ২০ হাজার ৮১৩, ও মেয়ে ২৮ হাজার ৩৮১ জন। পাসের হার ৩৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ। ছেলেদের পাসের হার ৪২ দশমিক ৩১ শতাংশ এবং মেয়েদের ৫৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এছাড়া লিখিত পরীক্ষায় ছেলেদের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছেন রাফসান জামান। তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ কেন্দ্র থেকে পরীক্ষা দিয়ে সর্বোচ্চ ৯৪ দশমিক ২৫ নম্বর পেয়েছেন। গতকাল রবিবার মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (পুরানো) সভাকক্ষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এই ফল প্রকাশ করেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, এ বছর এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে আবেদন করেছিলেন ১ লাখ ৩৯ হাজার ২১৭ জন। এর মধ্যে ছেলে ৪৬ দশমিক ২৬৪ শতাংশ অর্থাৎ ৬৪ হাজার ২৬৪ জন এবং মেয়ে ৫৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ অর্থাৎ ৭৪ হাজার ৯৫৩ জন। তাদের মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন ১ লাখ ৩৫ হাজার ৮১৩ জন, যা মোট আবেদনকারীর ৯৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সরকারি ও বেসরকারি ১০৮টি মেডিকেল কলেজে মোট আসন রয়েছে ১১ হাজার ১২২টি। এর মধ্যে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন ৪ হাজার ৩৫০টি এবং ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে আসন ৬ হাজার ৭৭২টি। সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে প্রতিটি আসনের জন্য লড়েছেন ১২ জন পরীক্ষার্থী। উত্তীর্ণদের মধ্যে সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পাবেন ৪ হাজার ৩৫০ জন। এর মধ্যে ছেলে ভর্তির সুযোগ পাবেন ৪৫ শতাংশ অর্থাৎ ১ হাজার ৫৭ জন এবং মেয়ে ৫৫ শতাংশ অর্থাৎ ২ হাজার ৩৯৩ জন। সরকারি মেডিকেলে মেধা তালিকায় ভর্তি হতে পারবেন ৩ হাজার ৩৮৪ শিক্ষার্থী। এ ছাড়া জেলা কোটায় ৮৪৮ জন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৮৭ জন এবং উপজাতি কোটায় ৩১ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন।
এর আগে গত শুক্রবার দেশের ১৯টি কেন্দ্রের ৫৭টি ভেন্যুতে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
গতকালের ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আজিজুর রহমান, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) সভাপতি অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হাসান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, কভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. শহিদুল্লাহ, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. টিটো মিঞা, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল ও অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজ উপস্থিত ছিলেন।
প্রথম চট্টগ্রামের রাফসান : মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় দেড় লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রথম চট্টগ্রামের রাফসান জামান। রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করা রাফসান থাকেন চট্টগ্রামের হালিশহর কে ব্লকে। তবে তাদের গ্রামের বাড়ি রংপুরে। ৯৪ দশমিক ২৫ পয়েন্ট পেয়ে তিনি ১ লাখ ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রথম হয়েছেন।
রাফসানের বাবা এ কে এম শামসুজ্জামান সিটি গ্রুপে চাকরি করেন। মা গৃহিণী। তারা এক ভাই ও এক বোন। বড় বোন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্য বিষয়ে স্নাতক করেছেন। তবে ভর্তি পরীক্ষা ভালো হলেও প্রথম হওয়ার কথা ভাবেননি রাফসান।
মেডিকেলের ফলাফল বের হওয়ার পরপরই মিডিয়ার লোকজনের পাশাপাশি কোচিং সেন্টারের লোকজন ভিড়ে পরিবারের সদস্যরা নাজেহাল। এর মধ্যে রেটিনা বলছে, রাফসান তাদের স্টুডেন্ট। অপরদিকে উদ্ভাস বলছে, তাদের। আর তা নিয়ে খুব বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। দুই কোচিং সেন্টারের লোকজনই বাসায় গিয়ে ভিড় করছেন।
এ সময় রাফসানের বাবা এ কে এম শামসুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার ছেলে মূলত রেটিনার শিক্ষার্থী। সে রেটিনায় কোচিং করেছে। তবে উদ্ভাসে শুধু পরীক্ষাগুলোয় অংশ নিত।’
ছেলের ফলাফল সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ছেলে ভালো ফলাফল করবে বিশ্বাস ছিল। কিন্তু প্রথম যে হবে, তা ধারণায় ছিল না। চট্টগ্রাম হালিশহরের গার্নাস ইংলিশ মাধ্যমে পড়াশোনার পর ষষ্ঠ শ্রেণিতে রাজশাহী ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হয়। সেখান থেকেই এসএসসি ও এইচএসসি শেষ করে।’
কোচিং সেন্টার প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে শামসুজ্জামান বলেন, ‘একজন শিক্ষার্থীর জন্য কোচিং সেন্টার সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সবার আগে নিজেকে পড়তে হবে। তবেই ভালো ফলাফল সম্ভব। আর আমার ছেলে বরাবরই ভালো ফলাফল করে আসছিল।’
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, পঞ্চগড়ে হামলা ঢাকা ও লন্ডন থেকে মনিটর করা হয়েছে। সারা দেশে গ-গোল লাগানোর উদ্দেশ্য তাদের ছিল। গতকাল রবিবার দুপুরে আহমদিয়া মুসলিম জামায়াতের বার্ষিক সালানা জলসা বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে ২-৪ মার্চ আহমদিয়া মুসলিম (কাদিয়ানি) জামায়াতের বোদা উপজেলার ফুলতলা, শালশিরি, আহমদনগর এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর, দোকানপাট পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, হামলা পরিচালনা করার আগে থেকে উসকানি ছড়ানো হয়েছে। বাঁশের কেল্লা পেজ থেকে কাদিয়ানিদের বিরুদ্ধে ঐক্য পরিষদ, বিএনপির সাবেক এমপি রুমিন ফারহানা ও হারুন উর রশিদের ফেসবুক পেজ থেকে উসকাানি ছড়ানো হয়েছে। উসকানি ছড়িয়ে সংগঠিত করে এই হামলা পরিচালনা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘মহা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই হামলা পরিচালনা করা হয়েছে। মানুষকে উসকানি দেওয়া হয়েছে। আমরা পুলিশ প্রশাসনকে বলছি, যে বা যারাই এটার সাথে যুক্ত থাকুক না কেন কোন দল বা কোন মত এটা না দেখে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ধাক্কামারা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুরশেদ এবং পৌর যুবলীগের সহসভাপতি শাহীন আলমের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে, হামলা চালানো হয়েছে। তারা পুলিশ বক্সে হামলা পরিচালনা করেছে। ডিসি অফিসে, এসপি অফিসে হামলা পরিচালনার চেষ্টা করেছে। থানায় হামলা পরিচালনার চেষ্টা করেছে, র্যাবের গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ইসলামের নামে এভাবে কারও ওপর হামলা পরিচালনা করা কোনোভাবেই ইসলাম অনুমোদন করে না। আমরা তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত দৃষ্টান্তমূলক বিচারের বিধান করতে বদ্ধপরিকর।’
পরে মন্ত্রী পঞ্চগড় শেরেবাংলা পার্কের মুক্ত মঞ্চে অনুষ্ঠিত জেলা আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। সেখানে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপি সরকারকে টান দিয়ে ফেলে দেবে বলেছে। কিন্তু দড়ি ছিঁড়ে ফখরুলসহ সবাই মাটিতে পড়ে গেলেন। হাসপাতালে ভর্তি হলেন। এখন বলছেন সরকারকে হটাতে আবার টান দেবেন। এবার টান দিলে তাদের কোমর ভেঙে যাবে আর হামাগুড়ি দিয়ে হাঁটতে হবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘সরকারি দল হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে দেশে যাতে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে। আওয়ামী লীগ রাজপথের দল, রাজপথে আছে এবং রাজপথেই থাকবে। এই কর্মসূচি আগামী নির্বাচন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।’
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রেলপথমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মো. নূরুল ইসলাম সুজনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সদর আসনের সংসদ সদস্য মজাহারুল হক প্রধান, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাট বক্তব্য দেন।
নির্ধারিত সময় পেরিয়েছে। ১০ জনের ব্রাজিল। তবুও এগিয়ে ২-০ গোলে। খেলা গড়ায় ইঞ্জুরি টাইমে। তখনই যেন বেড়ে যায় সেলেসাওদের গতি। মিনিট কয়েকের মুহূর্তে ব্যবধান দাঁড়ায় ৪-০ গোলে। তবে প্রতিপক্ষ তিউনিশিয়াও কম যায় না। হাল ছাড়েনি তারা। শেষ মুহূর্ত অবধি লড়ে গেছে। তাতে আদায় করেছে একটি গোল। যদিও সেই গোল তাদের নিয়ে যেতে পারেনি পরের ধাপে।
যুব বিশ্বকাপে আন্দ্রে সান্তোসের জোড়া গোলে ম্যারাডোনার মাঠে উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিশিয়ার বিপক্ষে ৪-০ গোলের জয় পেয়েছে ব্রাজিল। এতে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে সেলেসাওরা।
ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা মাল্টি পারপাস স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত শেষ ষোলোর খেলার পুরোটা সময় বলের দখলটা বেশি ছিল তিউনিশিয়ার পায়েই। আক্রমণের ধারও ছিল ভালো। গোলের সুযোগও অনেকগুলো সৃষ্টি হয়েছিল। তবু ফিনিশারদের ছিল ব্যর্থতা। আর সেটা কাজে লাগিয়েছেন ব্রাজিলের যুবারা। শুরুটা অবশ্য তিউনিশিয়ার কল্যাণেই।
খেলার ১১ মিনিটে পেনালটি পেয়ে যায় ব্রাজিল যুবারা। সেখান থেকে গোল আদায় করে নেন মার্কোস লিওনার্দো। ৩১ মিনিটে এই লিওনার্দো ফের দলকে এগিয়ে দেন। তবে এবার আর তিনি গোল করেননি, তবে করিয়েছেন। তার পাস থেকে পায়ে বল নিয়ে তিউনিশিয়ার জালে জড়ান আন্দ্রে সান্তোস।
২-০ গোলের ব্যবধান পেয়ে হৈ হৈ করতে করতে বিরতিতে যেতে পারত ব্রাজিল। কিন্তু প্রথমার্ধের শেষ বাঁশিটা বাজার আগ মুহূর্তেই লাল কার্ড দেখেন রবার্ট রেনান। তার এমন কাণ্ডে ১০ জনের দলে পরিণত হয় ব্রাজিল।
তাতে অবশ্য পরের অর্ধের নির্ধারিত সময়ে কোনো ছাপ পড়তে দেখা যায়নি। ব্যবধানটা যে তখনও ২-০ তেই ছিল। তবে ৯১ মিনিটে ফের গোল আদায় করে ফেলে ব্রাজিল। এবার ম্যাথুস মার্টিনস। তার ৯ মিনিট পর আন্দ্রে সান্তোস নিজের দ্বিতীয় গোল আদায় করে নেন। চার গোলে এগিয়ে থেকে ব্রাজিল যখন জয়ের অপেক্ষা করছিল, ঠিক তখনই ১০৩ মিনিটের সময় প্রথম গোলটি হজম করে সেলেসাওরা।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপ আর নির্বাচনী তাপের মধ্যেই আজ জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব পেশ করা হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শেষ বাজেট এটি। অনেক যোগ-বিয়োগ কষে বাজেট প্রণয়নের শেষ সময়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রস্তাবিত বাজেটে নির্বাচনী চমক হিসেবে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করতে সম্পূর্ণ নতুন পথে হেঁটেছেন। ভর্তুকি নাম দিয়ে বড় অঙ্কের ‘কর ছাড়’ দিয়েছেন। অথচ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে রাজস্ব জাল বিছিয়ে সাধারণ আয়ের মানুষকে আটকে ফেললেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো প্রস্তাবিত বাজেট সারসংক্ষেপ, ভর্তুকির নামে ‘কর ছাড়’কে বৈশি^ক মন্দা মোকাবিলার ঢাল হিসেবে উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের পরোক্ষ প্রভাবে বাজারে পণ্যের দাম কমার গতিরোধ করবে বলেও সরকারপ্রধানকে জানিয়েছেন।
তবে অর্থনীতির বিশ্লেষকরা বলেছেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে ছোটদের কর পরিশোধে চেপে ধরলেও কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের ঠিকই খুশি করলেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের ফলে বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমায় খুব বেশি প্রভাব পড়বে এমন আশা করা কঠিন।
এনবিআরের সাবেক সদস্য কর-বিশ্লেষক ড. আমিনুল করিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইএমএফের কাছ থেকে কর অব্যাহতি ও কর অবকাশ সুবিধা কমানোর চাপ আছে। এ শর্ত না মানলে ঋণের কিস্তি দেওয়া বন্ধ করা হতে পারে। অন্যদিকে নির্বাচনের আগের বাজেট হওয়ায় বড় মাপের ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার চাপ আছে। বিভিন্নমুখী চাপে সরকার সব পক্ষকে খুশি করতেই আগামীতে কৌশলে কর ছাড় রাখছে ভর্তুকির নাম দিয়ে। অন্যদিকে সাধারণ আয়ের মানুষের ওপর কিন্তু ন্যূনতম কর ধার্য করার কথা শুনছি। অনেক মানুষকে রাজস্বের আওতায় আনার কথাও শুনেছি। এভাবে ছোটদের ওপর ঠিকই কর পরিশোধে চাপ বাড়াল।’
একই মত জানিয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দেশের বড় মাপের ব্যবসায়ীদের অনেকে সরাসরি রাজনীতি করেন। অনেকে রাজনীতি না করলেও সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখে চলেন। এরা সমাজের প্রভাবশালী। বাজেট প্রণয়নকালেই এরা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে নিজেদের পক্ষে সুবিধামতো অনেক কিছু আদায় করে নেন। এবারও তাই হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করা হয়েছে। এভাবে আইএমএফের জেরার মুখে বলার সুযোগ থাকছে যে কর ছাড় ও ভর্তুকি দুই হিসাব এক করেছি।’
সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকে আশায় আছেন এবারের বাজেটে অর্থমন্ত্রী হয়তো জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে সূত্র কষবেন। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার এ বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় কোনো রক্ষাকবচ রাখলেন না। কৌশলী অর্থমন্ত্রী আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে দেওয়া কথা রেখেছেন। সাধারণ মানুষকে রাজস্ব জালে আটকে ফেলার ছক করেছেন। মূল বাজেটের আকার বাড়ানোর সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারের আয়ের হিসাবও বাড়ানো হয়েছে। রাজস্ব আয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। এখানে কর খাত থেকে ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছ থেকে চলতিবারের তুলনায় ৬০ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা করলেন। এনবিআরবহির্ভূত খাত থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে করবহির্ভূত খাত থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে। শেষ সময়ের হিসাবকষে শত সংকটের বাজেটে অর্থমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করেছেন।
আগামী বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী কর ছাড়সহ ২ লাখ ৮৯ হাজার ২২৮ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার প্রস্তাব করবেন। জাতীয় বাজেটে নিয়মিত ভর্তুকি হিসাবে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা রাখার কথা আছে। বাকিটা প্রত্যক্ষ কর ছাড় দিয়ে ভর্তুকি খাতে অন্তর্ভুক্তি হিসেবে রাখা হয়েছে। প্রত্যক্ষ কর ব্যয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বেতনসহ অন্য খাতে ৭৭ হাজার ২১৮ কোটি বা মোট কর ছাড়ের ক্ষুদ্রঋণ খাতে ১২ শতাংশ বা ১৫ হাজার ৩১৫ কোটি, প্রবাসী আয় খাতে ৯ শতাংশ বা ১১ হাজার ২৮৭ কোটি, বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতে ৭ শতাংশ বা ৮ হাজার ৩৮০ কোটি, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক শিল্প খাতে ৪ শতাংশ বা ৪ হাজার ৬১২ কোটি, গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল ৩ শতাংশ বা ৩ হাজার ৪৩৮ কোটি, পোলট্রি ও মৎস্য খাতে ২ শতাংশ বা ৩ হাজার ১২০ কোটি, আইটি এবং সফটওয়্যার খাতে ১ শতাংশ বা ১ হাজার ৪৭৭ কোটি এবং পুঁজিবাজার খাতে ১ শতাংশ বা ৯৬৬ কোটি টাকা।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইস মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ যেন পুরনো বোতলে নতুন পানীয়। বড়দেরই বিভিন্ন কৌশলে সুবিধা দেওয়া হলো।’
অর্থমন্ত্রী রাজস্ব আদায়ের কৌশল হিসেবে বড় সুবিধা দিলেও ইটিআইএন গ্রহণ ও রিটার্ন দাখিলে কঠোরতা এনেছেন। ইটিআইএন না নিলে ৪০ ধরনের সেবা এবং রিটার্ন দাখিলের সিøপ না নিলে ৩৮ ধরনের সেবা দেওয়া হবে না। এতদিন ইটিআইএন নিয়েও অনেকে করযোগ্য আয় না থাকলে শুধু রিটার্ন দাখিল করেছে, একটি টাকার কর দিতে হয়নি। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত অর্থ বিল বিশ্লেষণ করে বলা যায়, ১ জুলাই থেকে করযোগ্য আয় না থাকলেও ২ হাজার টাকা ন্যূনতম কর দিতে হবে।
সাধারণ আয়ের অনেক করদাতা বলেছেন, খাবারের খরচ অনেক বেড়েছে। বাসা ভাড়া, যাতায়াত, চিকিৎসা সবকিছুই এখন বেশি। এর মধ্যে সাধারণ আয়ের ওপর কর পরিশোধে চাপ দেওয়া হলে ভোগান্তি বাড়বে। সাধারণ মানুষকে কর পরিশোধে বাধ্য করলেও সম্পদশালীদের রাজস্ব ফাঁকি কমাতে, বকেয়া আদায়ে এবং অর্থ পাচার রোধে জোরালো কিছু রাখা হয়নি। এনবিআরের সক্ষমতা বাড়াতেও পুরনো পথেই হেঁটেছেন অর্থমন্ত্রী।
আগামী অর্থবছর থেকে রিটার্ন জমা দিতে দেরি হলে বেশি হারে জরিমানা দিতে হবে। বাজেটে আইন করে জরিমানার পরিমাণ প্রদেয় করের পরিমাণ দ্বিগুণ ৪ শতাংশ নির্ধারণে প্রস্তাব করা হয়েছে।
বড়রা সুবিধা দিয়ে রাজস্ব আদায়ে চাপ বাড়ানোয় জীবনযাত্রার অনেক খাতেই খরচ বাড়বে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি কমাতেও বাজেটে রাখা হয়নি কিছু। আন্তর্জাতিক পণ্যের বাজারের অস্থিরতা কবে কমবে তা নিয়ে রয়েছে অশ্চিয়তা। তাই গত মাস ছয়েক থেকে বেশি দামে বিক্রি হওয়া চাল, ডাল, আট, ময়দা, ভোজ্য তেল, লবণ, চিনি, মাছ, মাংসসহ সব ধরনের খাবারের দাম আপাতত কমছে না। চিকিৎসা, যাতায়াত, শিক্ষাসহ খাদ্যবহির্ভূত ব্যয়ও কমবে না। গত (নভেম্বর ২০২২-এপ্রিল ২০২৩) ছয় মাসের সাধারণ মূল্যস্ফীতির গড় হার ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ।
রোমাঞ্চকর ফাইনালে মোহামেডানকে ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপ শিরোপা এনে দেওয়ার অন্যতম নায়ক আহসান আহমেদ বিপু। দীর্ঘদিন সাদা-কালোদের হয়ে খেলা এই গোলরক্ষক কাল দেশ রূপান্তরের শিহাব উদ্দিনকে জানালেন আবাহনীর বিপক্ষে উত্তেজনার ম্যাচে চাপ মাথায় নিয়ে নামা ও পেনাল্টি ভাগ্যে জয়ী হওয়ার পেছনের গল্প…
এত বড় ফাইনালে হঠাৎ করে বদলি হিসেবে নামলেন। এটা কি আপনার জন্য চাপ হয়েছিল?
বিপু : চাপ তো অবশ্যই। গোল আর গোল, ফাইনাল, প্রতিপক্ষ আবাহনী। মানসম্মানের ব্যাপার। এটা কিন্তু একটা ফাইনাল না শুধু, সম্মানেরও ব্যাপার। চাপ তো অবশ্যই ছিল।
তো এই চাপটা সামলালেন কীভাবে?
বিপু : সত্যি বলতে আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ছিল যে আমরা কামব্যাক করতে পারব। শুধু আমি একা না পুরো দল, হাফটাইমে যখন ২ গোল হয়, আমরা ডাগআউটে একজনও হতাশার কথা বলিনি। আমরা চরম বিশ্বাসী ছিলাম যে এখান থেকে ম্যাচ ঘুরানো সম্ভব। আমাদের অধিনায়ক দিয়াবাতে আত্মবিশ্বাসী ছিল যে ম্যাচে ফেরা সম্ভব।
কিন্তু নামার পরপরই তো একটা গোল হজম করলেন। তাতে কি চাপ বাড়েনি?
বিপু : না বাড়েনি কারণ গতকাল যে ৮টা গোল হয়েছিল তার মধ্যে সবচেয়ে সেরা গোল ছিল ওটা। গোলটা সত্যি বলব আমি নিজের ভুলে হজম করেছি। হাতেও লেগেছিল কিন্তু আটকাতে পারিনি।
পরে তো পেনাল্টি মানে ভাগ্য পরীক্ষাতেও নামতে হলো? তার মানে আপনার ওপর সবার বিশ্বাস ছিল?
বিপু : ওটা জানি না, এটুক বলতে পারি আমাদের কোচিং স্টাফ আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছিল। যেহেতু ফাইনাল, পেনাল্টির একটা সম্ভাবনা তো থাকেই। তো আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল, গোলরক্ষক কোচ কানন ভাই আমাদের নিয়ে পেনাল্টির আলাদা কাজ করেছিলেন। কিছু বিষয় যেমন শুট নেওয়ার আগ মুহূর্ত মানে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করা। আর নিজেও একটু চিন্তাভাবনা রেখেছিলাম। তো প্রস্তুতি আগে থেকেই ছিল। চাপ নেওয়ার ব্যাপারটা আসলে আমি স্বাভাবিক ছিলাম। বেশি কিছু চিন্তা করিনি। এমন সময়গুলোতে বেশি চিন্তা করলে উল্টো চাপে পড়ে যেতে হয়।
পেনাল্টি নিয়ে প্রস্তুতির কথা বলছিলেন। আগে থেকেই কি পেনাল্টির প্রস্তুতি ছিল?
বিপু : সে রকম না। কারণ ফাইনালে আগে থেকেই তো বলা যায় না যে পেনাল্টি হবেই। তবে আমাকে খেলার আগে থেকেই মানে ফাইনালের আগেই বলা হয়েছিল যে খেলা যদি ড্রয়ের দিকে যায় তাহলে নামতে হতে পারে। সেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল। তবে পেনাল্টির একটু আগে নামতে হয়েছিল আরকি।
পেনাল্টিতে দুটো সেভ করলেন। এটা কীভাবে সম্ভব হলো। কী ভাবছিলেন ডাইভ দেওয়ার আগে?
বিপু : সত্যি বলছি আমার কোনো চিন্তাই ছিল না। হয়ে গেছে। আল্লাহ মিলিয়ে দিয়েছেন, এখানে আমার কিছু নেই।
বিশ্বকাপ ফাইনালেও তো পেনাল্টি হয়েছিল। তা তো দেখেছেন। নিজের পেনাল্টি মুখোমুখি হওয়ার সময় ওই রকম কিছু মনে হচ্ছিল?
বিপু : না, ওরকম কিছু না। আমি আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখেছিলাম। আর মনে মনে ভাবছিলাম যে দলের জন্য কিছু করতেই হবে। আমি বলতে পারি এই দলটার মধ্যে সবচেয়ে পুরনো খেলোয়াড় কিন্তু আমি। আমি দীর্ঘদিন মোহামেডানে খেলেছি। মোহামেডান থেকে সুপার কাপ জিতেছি, স্বাধীনতা কাপ জিতেছি। তো ক্লাবের জন্য কিছু করার তাগিদটা ছিল।
পেনাল্টিতে প্রথম সেভ করার পর আপনার সাহস কি বেড়ে গিয়েছিল?
বিপু : সাহস তো বেড়েছেই। প্রথম সেভটা যখন করি তখন আমার টিম মেটরাও মানসিকভাবে এগিয়ে গেছে। এরপর আমাদের অধিনায়ক গোল করল। প্রথম গোল করা মানে মানসিকভাবে এগিয়ে থাকা। রাফায়েল কিন্তু আবাহনীর অনেক বড় ব্র্যান্ড। হতে পারে কলিনদ্রেস নামের বিচারে ভারী কিন্তু রাফায়েল এগিয়ে।
প্রথমটা তো সেভ করলেন দ্বিতীয় পেনাল্টি সেভের আগে কী ভাবনা হচ্ছিল আপনার। দ্বিতীয়টা সহজ হয় না কঠিন?
বিপু : ওটা ফিফটি-ফিফটি ছিল। কলিনদ্রেস একটু অপেক্ষা করছিল মারার সময় তাই আমিও ওয়েট করলাম। আর সফল হই। কলিনদ্রেসের শটটা কিন্তু যথেষ্ট পাওয়ারফুল ছিল। আমি সঠিক দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। আর রাফায়েল একটু স্লো শট নেয় সবসময়। আর সবসময় একটু জার্ক করে বাঁদিকে শট নেয়, কাল নিয়েছিল ডানদিকে। আমি অপেক্ষা করায় সঠিক দিকে ডাইভ দিতে পেরেছি।
আচ্ছা আপনার পছন্দের গোলকিপার কে?
বিপু : পিওতর চেক।
বিশেষ কোনো কারণ আছে ওকে পছন্দ করার?
বিপু : ঠিক কেন সেটা বলতে পারব না। তবে ওর সেভগুলো আমার ভালো লাগে। এখন অনেক গোলরক্ষক থাকতে পারে, চেক আমার কাছে এখনো সেরা। বিশেষ করে একটা সেভ দেখেছিলাম ও মাটিতে পড়ে গিয়েও কীভাবে যেন হাত দিয়ে বল ফিরিয়েছিল। চেলসিতে থাকা অবস্থায় সম্ভবত। এছাড়া শুধু একটা না আরও অনেক সেভ করেছে সে। আর একটা ব্যাপার হলো তার ইনজুরির পরও যেভাবে সে খেলা চালিয়ে গেছে এটা আমাকে উজ্জীবিত করে। আমিও ইনজুরির পর খেলছি, ২০১৮-১৯ এ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বসুন্ধরার সঙ্গে ফেডারেশন কাপের ম্যাচ খেলার সময় আমার হাত ভেঙেছিল। এখনো হাতে প্লেট লাগানো আছে।
নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
বিপু : আমার কোনো নিজস্ব লক্ষ্য নেই। আমি খেলে যেতে চাই। কোচরা জানেন আমাকে কোথায় খেলাবেন। জাতীয় দলে খেলার ইচ্ছা তো সবারই থাকে কিন্তু আমি সেই লক্ষ্য নিয়ে আগাতে চাই না। হলে এমনিতেই হবে।
অনেক বছর পর মোহামেডান শিরোপা জিতল। এই ধারা অব্যাহত রেখে সামনেরবার কী লক্ষ্য রাখছেন?
বিপু : গত বছর আমরা সেমিফাইনাল থেকে বাদ পড়ে গিয়েছিলাম সেখানে রেফারিংয়ের কিছু ব্যাপার ছিল আপনারা সবাই দেখেছেন। ইনশাআল্লাহ এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আমাদের ফল তো আগের থেকে ভালো হচ্ছে। এটা বড় আত্মবিশ্বাসের কারণ।
কুষ্টিয়ায় আবারও এনআইডি জালিয়াত চক্রের দৌরাত্ম্যে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন জমির মালিকরা। অভিযোগ উঠেছে, রাজনৈতিক প্রভাবশালীর মদদ, সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের মুহুরি, দলিল লেখক ও অসাধু কর্মচারী-কর্মকর্তাদের যোগসাজশেই এসব চলছে নির্বিঘেœ। এরা ভুয়া এনআইডি ব্যবহার করে অন্যের জমির দাতা-গ্রহীতা বা ক্রেতা-বিক্রেতা সেজে একের পর এক দলিল সম্পাদন করে যাচ্ছে। এর আগে কুষ্টিয়ায় একাধিক এনআইডি জালিয়াতির ঘটনা ফাঁস হওয়ায় জেলাজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। নড়ে-চড়ে বসেন সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা। প্রশাসনের তৎপরতায় জালিয়াত চক্র কিছুদিন গা-ঢাকা দিলেও আবারও চক্রটি নতুন করে জালিয়াতির ঘটনা ঘটাচ্ছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, আগের জালিয়াতির ঘটনায় ডজনখানেক মামলা হলেও সেগুলোর বিচারিক প্রক্রিয়ায় কোনো ইতিবাচক দৃষ্টান্ত না থাকায় চক্রটি আবারও মাঠে নেমেছে। প্রতিকার না পেয়ে ভুক্তভোগীরা দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
কুষ্টিয়া জেলা রেজিস্ট্রি অফিসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘শর্তানুযায়ী দলিল সম্পাদনের সময় দাতা-গ্রহীতারা যে এনআইডি আমাদের দেখায় তা আদৌ সঠিক কি না তা যাচাই করার মতো তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা না থাকার সুযোগ নিয়ে একটি অসাধু চক্র একের পর এক জাল দলিল তৈরি করছে।’
তবে এই কর্মকর্তার মন্তব্যকে নাকচ করে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবু আনছার বলেন, ‘এনআইডি যাচাইয়ের সুযোগ নেই বলে জেলা রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মকর্তা দায় এড়িয়েছেন। কুষ্টিয়াতে যে হারে এনআইডি জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে তাতে ছোট্ট একটা ডিভাইস হলেই এনআইডি যাচাই করা সম্ভব।’
সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ফেব্রুয়ারিতে কুষ্টিয়া সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে জাল এনআইডি নম্বর (৬৪০২৬৬৯৪০৯) ও আমমোক্তারনামা দলিল (১১২১২/১৭ নম্বর) ব্যবহার করে কুষ্টিয়া শহরের প্রায় দুই কোটি টাকার ভূ-সম্পত্তি হস্তান্তরে ২৭ লাখ টাকার একটি দলিল রেজিস্ট্রি হয়। যার নম্বর ১৭৯৪/২৩। কুষ্টিয়া সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের রেকর্ডকিপার সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ওই আমমোক্তারনামা দলিলের সমর্থনে কোনো ধরনের যাচাইকরণ কাগজপত্র সংযুক্ত নেই এবং জালিয়াতির অভিযোগে মামলা বিচারাধীন থাকায় ওই দলিলও আদালতের আদেশে জব্দ করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। তা ছাড়া জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেপ্তার অবস্থায় দলিলদাতারা ওই আমমোক্তারনামা দলিল জাল বলে এর আগে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেয়। এরপরও ওই দলিলের সূত্র ধরে কুষ্টিয়া শহরের এনএস রোডের বাসিন্দা এমএম আবদুল ওয়াদুদদের পৈতৃক ভূ-সম্পত্তি জালিয়াতি করে দলিল রেজিস্ট্রি করে নেয় চক্রটি।
এ বিষয়ে সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিস চত্বরের দলিল লেখক নাসির উদ্দিন বলেন, ‘গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সহকারী দলিল লেখক শরিফুল ইসলাম সোহেল আমার কাছে একটা দলিলে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। কিন্তু এর মধ্যে এত জটিলতা ছিল সে সময় আমি বুঝতে পারিনি।’
সহকারী দলিল লেখক সোহেল জানান, ‘এই দলিলের গ্রহীতা মিস শেফালী খানমের স্বামী মো. মারজুম খাঁন নিজে ওই দলিল অন্য লেখকের কাছ থেকে লেখা সম্পন্ন করে আমার কাছে এসে বলে, ‘তুমি শুধু দলিল লেখক হিসেবে সাব-রেজিস্ট্রারের কাছে পেশ করবা, বাদবাকি সবাইকে ম্যানেজ করার দায়িত্ব আমার।’ সেজন্য আমাকে ১০ হাজার টাকা দেবে বলে আমার সঙ্গে মিটমাট হয়।’
এ বিষয়ে কথা বলতে দলিলদাতা কুষ্টিয়া শহরের উত্তর লাহিনী এলাকার বাসিন্দা মো. দেলোয়ার হোসেনকে (এনআইডি নম্বর : ৬৪০২৬৬৯৪০৯) মোবাইলে কল করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
দলিল গ্রহীতা শেফালী খানমকে তার মোবাইল ফোনে কল দিলে তা ব্যস্ত পাওয়া যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই শেফালী খানমের ফোন থেকে তার স্বামী মারজুম খাঁন এই প্রতিবেদককে কল করেন। প্রতিবেদকের পরিচয় জানার পর মারজুম ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘আপনি কি শেফালী খানমকে চিনেন? দলিলে দেওয়া ঠিকানাটা ভালো করে দ্যাখেন, উনি শেখ সেলিমের বোন, আপনার এত স্পর্ধা? আপনি ওই দলিল নিয়ে টানাটানি করছেন?’
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দবির উদ্দিন বলেন, ‘উল্লিখিত (১৭৯৪/২৩ নম্বর) দলিলটি জাল বলে আবদুল ওয়াদুদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জমির নামজারি প্রক্রিয়া স্থগিত করে রাখা হয়েছে।’
কুষ্টিয়া জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবু আনছার বলেন, ‘দলিলটিতে (১৭৯৪/২৩ নম্বর) দাতা দেলোয়ার হোসেন যে এনআইডি নম্বর (৬৪০২৬৬৯৪০৯) ব্যবহার করেছেন, তার কোনো বৈধ ডেটা নির্বাচন কমিশনের তালিকায় নেই।’
এভাবে দলিল নম্বর ২৫৩৩/২০২২ দাতা জোবায়দা নাহার শেখ ও জামিলা নাহার শেখ এবং গ্রহীতা শাহ মো. মেজবাহুর রহমান, দলিল নম্বর ২৫৩৪/২০২২ দাতা জামিলা নাহার শেখ গ্রহীতা শামসুল ইসলাম, ইউসুফ হাসাইন ও মো. সাদ্দম খাঁ, দললি নম্বর ১১৪৮/২০২২, দাতা জামিলা নাহার শেখ ও জোবায়দা নাহার শেখ এবং গ্রহীতা শামসুল ইসলাম এসব দলিল এনআইডি জালিয়াতির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন কুষ্টিয়া সিআইডির উপপরিদর্শক মাসুদ পারভেজ।
কুষ্টিয়া সদর সাব-রেজিস্ট্রার কাওছার আলী বলেন, ‘এখানে কাজের চাপ সামলানোর মতো প্রয়োজনীয় জনবল সংকট মাথায় নিয়েই কাজ করতে হচ্ছে। এনআইডি নকল বা আসল কি না তা যাচাই করার কোনো ব্যবস্থা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে নেই। যে কারণে জালিয়াত চক্রের এনআইডি জালিয়াতি ঠেকানোর কোনো কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারছি না। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্র্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত ছাড়া আমাদের কিছু করণীয় নেই।’
নির্বাচনের রাজনীতি একটা বিজ্ঞান এখানে হিসাব খুব জটিল। ভুল হলে গরল। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কার পরাজয় হয়েছে? বিশেষ করে জাহাঙ্গীর আলমের ভাষায় ‘এটি নৌকার নয় বরং ব্যক্তি আজমত উল্লার পরাজয়’ মন্তব্যটি আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অন্যদিকে নেটিজেনদের ঠাট্টা সুষ্ঠু ভোটের জন্য আমেরিকার চাপে প্রথম ‘বলি’ হলেন আজমত উল্লা। জাহাঙ্গীর ঠিকই আঁচ করতে পেরেছিলেন তাকে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না, তাই মাকে প্রার্থী করে রাখেন। তার এ কৌশলী সিদ্ধান্তের কাছে আওয়ামী লীগ হেরেছে। বাংলাদেশে এতদিন উত্তরাধিকারের রাজনীতির সংস্কৃতিতে বাবা কিংবা মায়ের আসনে সন্তান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেন। এবার তার উল্টোটা ঘটতে দেখা গেল।
আওয়ামী লীগ ভেবেছিল জাহাঙ্গীরের মা অখ্যাত। ছেলের মতো প্রভাব ফেলতে পারবেন না তিনি। হালকাভাবে নেওয়াটা আওয়ামী লীগের ভুল ছিল। বহুদিন ধরে তারা এ কাজটি করে আসছে। ‘প্রতিপক্ষকে কখনো দুর্বল ভাবতে নেই’, কথাটা দলটি ভুলে গেছে। প্রার্থী হওয়ার আগে জাহেদা খাতুনকে রাজনৈতিক-সামাজিকভাবে গাজীপুরের মানুষ চিনত না, নির্বাচন তো দূরের কথা কোনো রাজনৈতিক কমর্সূচিতে তিনি ছিলেন না। জাহাঙ্গীর তার সেই মায়ের পক্ষে আওয়ামী লীগ বিরোধী ভোটকে একাট্টা করেছেন। নীরব সমথর্কদের সংগঠিত করেছেন। তিনি তার মাকে নিয়ে সাধারণ ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে গেছেন, কান্নাকাটি করেছেন। সহানুভূতি আদায় করেছেন। আর আজমত উল্লা ভোটারদের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন না, হয়তো নানাশক্তির ওপর তিনি নির্ভরশীল ছিলেন। প্রতিপক্ষকে খুব একটা হিসাবে ধরেননি। এটা ছিল ক্ষমতাসীনদের ভুল।
এটা ঠিক, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের কাছে এ নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার চ্যালেঞ্জ ছিল। সেই চ্যালেঞ্জকে অনেকটাই সামাল দিতে পেরেছে সরকার। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে বিজয়ী হলেও সাধারণ মানুষকে আস্থায় নিয়ে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বৈতরণী পার হতে পারবে কি না সেই প্রশ্নটা এখন সামনে চলে এসেছে। আমার মনে হয়, এ নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য অস্বস্তিকর সতর্ক সংকেতও। আওয়ামী লীগের ভেতর আরেকটি আওয়ামী লীগ তৈরি হয়েছে, সেটাও প্রমাণ হয়েছে এ নির্বাচনে। এরা যে কখন আওয়ামী লীগের ভেতর প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে, এটা দলটি ধারণা করতে পারেনি। এখন যারা আওয়ামী লীগ করেন তাদের বেশিরভাগই তা করেন স্বার্থসিদ্ধির জন্য, দলের আদর্শের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি খুব ক্ষীণ এটাও এ নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ছিল অতি আত্মবিশ্বাসী ও আত্মপ্রত্যয়ী। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় দলটির কারও কারও মধ্যে অহংকার এবং অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস বিপজ্জনকভাবে পর্যায়ে চলে গেছে। তারা মনে করেন দল যাকে মনোনয়ন দেবে তাকে প্রভাব খাটিয়ে জিতিয়ে আনবে। গাজীপুরেও সেই প্রবণতা দেখা গেছে। যার কারণে যেভাবে গুরুত্ব সহকারে মাঠে কাজ করার দরকার ছিল, সেভাবে তারা গাজীপুরে কাজ করেননি। রাজনীতি হুমকি, ধমকের বিষয় নয়। একটি সমঝোতার কৌশল। এ চিরন্তন সত্যটা আওয়ামী লীগ ভুলেই গেছে। ভয় দেখিয়ে, প্রভাব খাটিয়ে রাজনীতিতে জয়ী হওয়া যায় না।
জাহাঙ্গীর ও তার মা যখন স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেন, তখন আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ‘দমননীতির’ কৌশল নিয়েছিল। ভোটের আগে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা, দুদকে তলব, প্রচারের সময় গাড়ি ভাঙচুর, পেশিশক্তি প্রয়োগ সবই জনগণের মধ্যে জায়েদা খাতুনের পক্ষে এক ধরনের সহানুভূতি তৈরি করেছে। ভোটের দিন দেখা গেছে, নৌকার কার্ড গলায় ঝুলিয়ে তারা ঘড়ি মার্কায় ভোট দিয়েছেন।
গাজীপুরে পরিচিত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললাম। তারা জানাল ব্যক্তি জাহাঙ্গীর আলমের ইমেজ ও তার উন্নয়ন কাজ নগরবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। তাদের ধারণা, তাকে মেয়র পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলে থমকে যাবে উন্নয়ন কাজ। নানা ষড়যন্ত্র ও প্রতিহিংসার শিকার হলেও জাহাঙ্গীরের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা অটুট।
জাহাঙ্গীর আলমের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও সাধারণ মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থনের কারণেই তার মায়ের বিজয় সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। ঋণখেলাপির দায়ে তার প্রার্থিতা বাতিল হবে এটা জানত জাহাঙ্গীর। তাই তার পক্ষে মা জায়েদা খাতুনকে তিনি মেয়র পদে দাঁড় করান। সাধারণ নারী ভোটারদের অকুণ্ঠ সমর্থন, শ্রমিকদের মধ্যে জাহাঙ্গীরের জনপ্রিয়তাও জায়েদা খাতুনের জয়ে ভূমিকা রাখে। এছাড়া নির্বাচনের প্রচারে কয়েক দফা হামলা, বাধা দেওয়ার বিষয়টি মানুষের নজর কেড়েছে। ফলে মানুষ অনেকটা বিরক্ত হয়েই আজমত উল্লা খানের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। বিরোধী শিবিরের ভোটও পড়েছে জাহাঙ্গীরের মায়ের ব্যালটে। জায়েদা খাতুন যেসব আসনে এজেন্ট দিতে পারেননি, সেখানেও জিতেছেন তিনি। বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় তারা ও তাদের শরিকরা জায়েদা খাতুনের প্রতীকে ভোট দিয়েছেন।
আজমত উল্লা মার্জিত, বিনয়ী ও স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ হিসেবে গাজীপুরের রাজনীতিতে পরিচিত হলেও তার বিরুদ্ধে জনবিচ্ছিন্নতার অভিযোগ রয়েছে। ভোটারদের সঙ্গে পর্যাপ্ত যোগাযোগের অভাব, দলীয় কোন্দল এবং স্থানীয় প্রভাবশালী মন্ত্রী ও এমপিদের উদাসীনতাও রয়েছে। জাহাঙ্গীরের তুলনায় নির্বাচনের প্রচারে নৌকার প্রার্থী তেমন একটা টাকা খরচ করেননি।
সবচেয়ে বড় বিষয় হলো আওয়ামী লীগের বিভক্তি। সেই বিভক্তি নির্বাচনের আগে অতটা দেখা না গেলেও ভোটের দিন প্রকাশ পেয়েছে। প্রচারেও ছিল গাফিলতি। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কারণে ঢিলেমি ছিল প্রচারণায়। বড় বড় শোডাউন এবং রোড শো করলেও মানুষের দ্বারে দ্বারে যাননি। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে একাধিক নেতা পরাজয়ের কারণ হিসেবে বলছেন, দলের স্থানীয় নেতাকর্মীর মধ্যে ভেতরে ভেতরে দ্বন্দ্ব, গ্রুপিং। এতে আওয়ামী লীগের ভোট দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। আওয়ামী লীগের একাংশ গোপনে ঘড়ির পক্ষে কাজ করেছে। নৌকার প্রার্থী তা আগে ধরতে পারেননি। ভোটের পর আজমত উল্লা বলেছেন, দলে থাকা বেইমানদের গাদ্দারিতে হেরেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামো ও নির্বাচনী ব্যবস্থাটি এমন জায়গায় চলে গেছে যে, কার চেয়ে কে কতটা যোগ্য ও ভালো মানুষ সেটি তার জয়-পরাজয় নিয়ন্ত্রণ করে না। মানুষ এখন ভোট দেয় কিছু পাওয়ার উদ্দেশ্যে নয়, বরং অনেক সময় ভোট দিয়ে তার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। যে কারণে দেখা যায়, দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকের বাইরে থাকা বিপুল ভোটারের অনেকেই সুযোগ পেলেই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে ভোট দিতে নিরুৎসাহিত হন। আবার ক্ষমতাবানের কাছ থেকে তার কমিউনিটির অনেক মানুষ যেমন উপকৃত হন, তার বিপরীতে বিপুল সংখ্যক মানুষ বঞ্চিত এবং নানাভাবে নির্যাতিতও হন। ফলে তারা ভোটের সময় ‘দেখিয়ে দেওয়া’র অপেক্ষায় থাকেন। এ দেখিয়ে দেওয়ার ব্যাপারগুলো গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ঘটেছে। মানুষের ক্ষোভের আঁচটা যে মাত্রায় ছড়িয়েছে, এর প্রভাবটা এ নির্বাচনে পড়েছে। প্রশ্ন হলো এ জয় কি তাহলে মানুষের ক্ষোভের বিস্ফোরণ?
বিএনপি এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি, আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হয়েছিল আওয়ামী লীগই। দলের মধ্যে একটা অংশ তো বিরুদ্ধে ছিলই। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এখন নতুন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ের রাজনীতি, অভ্যন্তীরণ দ্বন্দ্ব, জনগণের মনোভাব ইত্যাদি সম্পর্কে দলের নীতিনির্ধারকদের কাছে যে সঠিক তথ্য নেই, সেটা বেশ বোঝা যাচ্ছে। আগামী নির্বাচনগুলোতেও যদি এরকম অন্তঃকলহ থাকে, তাহলে আওয়ামী লীগের জন্য গাজীপুরের মতোই পরিণতি অপেক্ষা করছে।
লেখক: প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।