
ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে লিবিয়া থেকে অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার পথে নৌকাডুবির ঘটনায় ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার ১২ যুবকের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এতে চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন তাদের স্বজনরা। ওই ১২ যুবক বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে এখন পর্যন্ত তা জানতে পারছেন না তারা।
লিবিয়া থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ে অবৈধভাবে ইতালি অভিমুখে যাত্রা করা একটি নৌকা গত রবিবার বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে পড়ে ডুবে যায়। এতে ৩০ জন নিখোঁজ হয়। এর মধ্যে ১২ জনই নগরকান্দা উপজেলার।
নিখোঁজ যুবকেরা হলেন উপজেলার কোদালিয়া শহীদনগর ইউনিয়নের আটকাহনিয়া গ্রামের তোরাপ মোল্যার ছেলে শফিকুল ইসলাম রাসেল (৩০), ডাঙ্গী ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামের মোস্তফা মাতুব্বরের ছেলে আল আমিন মাতুব্বর (২০), সোবাহান মোল্যার ছেলে মাহফুজ মোল্যা (২২), এসকেন মোল্যার ছেলে নাজমুল মোল্যা (২৩) ও সেকেন ব্যাপারীর ছেলে আকরাম ব্যাপারী (২৭), বাশাগাড়ী গ্রামের ইছাহাক ফকিরের ছেলে স্বপন ফকির (২৭), শংকরপাশা গ্রামের সেকেন কাজীর ছেলে শামীম কাজী (২১), সরোয়ার মাতুব্বরের ছেলে বিপুল (২৫), মালেক শেখের ছেলে বিটুল শেখ (২৫), শ্রীঙ্গাল গ্রামের সলেমান শেখের ছেলে মিরান শেখ (২২), ইদ্রিস শেখের ছেলে তুহিন শেখ (২০) ও নারুয়াহাটি গ্রামের কাশেম তালুকদারের ছেলে শাওন তালুকদার (২২)। তারা সবাই স্থানীয় একটি দালাল চক্রের মাধ্যমে অবৈধভাবে ইতালি যাচ্ছিলেন।
নিখোঁজ রাসেলের বাবা তোরাপ মোল্যা জানান, উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামের আদম ব্যাপারী মুরাদ ফকিরের মাধ্যমে আট লাখ টাকার চুক্তি হয়। গত ৮ জানুয়ারি রাসেল বিমানে ঢাকা ত্যাগ করে। দুবাই হয়ে ১২ জানুয়ারি তারা লিবিয়া পৌঁছায়। দুই মাস লিবিয়ায় অবস্থানের পর রবিবার ইতালি যাওয়ার পথে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে।
নগরকান্দা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান ডাঙ্গী ইউনিয়নের বিল গোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি বলেন, ‘শুনেছি ইতালি যাওয়ার পথে ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটেছে। এতে এলাকার বেশ কয়েকজন উদ্ধার হয়েছেন। আবার বেশ কয়েকজন নিখোঁজ রয়েছেন।’
ডাঙ্গী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী আবুল কালাম জানান, মুরাদ একজন মানব পাচারকারী। তিনি অবৈধভাবে বিদেশে লোক পাঠিয়ে কয়েক কোটি টাকা আয় করেছেন।
তবে মুরাদ ফকির পলাতক থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তার সহযোগী বাশাগারী গ্রামের ইমারত মিয়া মোবাইল ফোনে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মানব পাচারের সঙ্গে আমি জড়িত নই। আমার হাত দিয়ে দুই একজনের টাকা মুরাদকে দিয়েছি মাত্র।’
নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মঈনুল হক বলেন, ‘এ ব্যাপারে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। নগরকান্দা থানার ওসি মিরাজ হোসেন বলেন, অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যে আস্থা নেই এর ৫৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ ব্যবহারকারীর। এ ছাড়া সংস্থাটির মোট তথ্য ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৩৫ শতাংশ সন্তুষ্ট থাকলেও, অসন্তুষ্ট হয়ে আরও তথ্য চান ৬৫ শতাংশ ব্যবহারকারী। গতকাল বুধবার বিবিএসের প্রকাশিত ‘ইউজার স্যাটিসফেকশন সার্ভে-২০২২’ শীর্ষক জরিপের প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। এই প্রথম এমন প্রতিবেদন প্রকাশ করল বিবিএস।
পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মাধ্যমে প্রস্তুতকৃত ও প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যান সম্পর্কে ব্যবহারকারীদের সন্তুষ্টি ও চাহিদার মাত্রা নিরূপণের জন্য বিবিএস প্রথমবারের মতো এই জরিপ পরিচালনা করে।
গতকাল আগারগাঁও বিবিএস মিলনায়তনে জরিপ প্রকাশ করা হয়। পরিসংখ্যান ভবনের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত এ প্রকাশনা অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. মতিয়ার রহমান।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, দ্রব্যমূল্যের ডেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিবিএসের দ্রব্যমূল্যের তথ্যে মানুষের মাঝে অনেক অসন্তোষ রয়েছে। এটি স্বাভাবিক। কারণ তারা অল্প কয়েকটি পণ্যের দাম মাথায় নিয়ে তথ্য বিচার করেন। তারা দেখেন হয়তো মুরগি, ডিমের দাম বেড়ে গেছে, কিন্তু একই সময় যেসব পণ্যের দাম কমেছে তারা তা মাথায় রাখেন না। তিনি বলেন, বিবিএসের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য নির্ভরযোগ্য। তারা সব সময় চেষ্টা করে যাতে ট্রেন্ড ধরা যায়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ‘এনএসডিএস ইমপ্লিমেন্টেশন সাপোর্ট প্রজেক্ট’-এর প্রকল্প পরিচালক মো. দিলদার হোসেন স্বাগত বক্তব্য ও জরিপের ফলাফল নিয়ে সংক্ষিপ্ত পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন।
প্রকল্প পরিচালক দিলদার হোসেন বলেন, এ ধরনের জরিপ বিবিএস প্রথমবারের মতো পরিচালনা করেছে। এ জরিপটির নমুনার আকার ছিল ৬০৯ জন যার মধ্যে ৫৮০ জন উত্তরদাতার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। জরিপে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী উত্তরদাতাদের ৭০ দশমিক ৫২ শতাংশ জনসংখ্যা, জনমিতি এবং জন্ম, মৃত্যু, বিবাহ, ইত্যাদি সংক্রান্ত পরিসংখ্যান ব্যবহার করেন। উত্তরদাতাদের ৬৫ শতাংশ পরিসংখ্যানের বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক আরও বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত প্রকাশের বিষয়ে মত প্রকাশ করেন। অর্থাৎ তারা সন্তুষ্ট নন এবং ৪২ দশমিক ১৪ শতাংশ প্রায়শই প্রত্যাশিত তথ্য-উপাত্ত খুঁজে পেয়েছেন বলে জরিপে উঠে এসেছে।
প্রকল্প পরিচালক আরও জানান, সামগ্রিকভাবে বিবিএস প্রস্তুতকৃত তথ্য সরকারি পরিসংখ্যান শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। তবে সরকারি পরিসংখ্যান ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীগণের ৪৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা অনুসরণ করেননি। বৈদেশিক বাণিজ্য পরিসংখ্যান ব্যবহারকারীদের ৭০ দশমিক ০৯ শতাংশ বিবিএসের মাধ্যমে প্রস্তুতকৃত সরকারি পরিসংখ্যানকে উপযোগী এবং ১৭ দশমিক ০৯ শতাংশ খুবই উপযোগী হিসেবে মত প্রকাশ করেন।
পর্যালোচনা করে দেখা যায়, জনসংখ্যা, জনমিতি এবং জন্ম, মৃত্যু, বিবাহ সম্পর্কিত পরিসংখ্যান, জাতীয় হিসাব পরিসংখ্যান, ও দারিদ্র্য পরিসংখ্যানের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ অসন্তুষ্ট ৫৯% ব্যবহারকারী সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। পাশাপাশি ৭৩ দশমিক ১৩ শতাংশ পরিসংখ্যান ব্যবহারকারী জনসংখ্যা, জনমিতি এবং জন্ম, মৃত্যু, বিবাহ সম্পর্কিত পরিসংখ্যানের ‘যথার্থতা’র ব্যাপারে সন্তুষ্ট। ‘সময়োপযোগিতা’র বিষয়ে তাদের ৬৯ দশমিক ৬১ শতাংশ জাতীয় হিসাব পরিসংখ্যানকে উপযুক্ত হিসেবে বিবেচনা করেন এবং ৭৯ দশমিক ৯০ শতাংশ ব্যবহারকারী জাতীয় হিসাব পরিসংখ্যানের ‘প্রাসঙ্গিকতা’-এর ব্যাপারে সন্তুষ্টি জানান।
জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ে বিবিএসের তথ্যে অসন্তোষ রয়েছে ৫৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ ব্যবহারকারীর। এরমধ্যে ৪৬ শতাংশ মনে করেন এসব তথ্য ব্যবহারযোগ্য নয়। তাছাড়া শিক্ষার তথ্য নিয়ে ৬০ শতাংশ ব্যবহারকারী জানিয়েছেন এগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ বা পুরনো তথ্য।
জরিপে উঠে এসেছে, তথ্য-উপাত্ত অনুসন্ধানকারীদের বিবিএসের সঙ্গে যোগাযোগের কারণ হিসেবে ৫৮ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ ব্যবহারকারী নির্দিষ্ট উপাত্ত অনুসন্ধান করেন। তাদের প্রায় ৭২ দশমিক ৫৬ শতাংশ এক সপ্তাহের মধ্যেই তাদের কাক্সিক্ষত তথ্য পেতে সমর্থ হয়েছেন বলে মত দিয়েছেন। এক্ষেত্রে ৫৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ ব্যবহারকারী বিবিএসর তথ্যে সন্তুষ্ট হলেও তাদের ৩৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ আংশিক সন্তুষ্ট ছিলেন।
ড. শামসুল আলম বলেন, সঠিক পরিকল্পনার অন্যতম পূর্বশর্ত হলো সঠিক তথ্য-উপাত্ত। একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, এসডিজির সূচকসমূহ, অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, এবং ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণে সঠিক ও সময়োচিত পরিসংখ্যানের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা হিসেবে সরকারের ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত তারা।
অনুষ্ঠানে পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান আহসান হাবিব মনসুর বলেন, কত মানুষ এখানে অংশগ্রহণ করেছে তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হলো টার্গেটেট গ্রুপের কাছে যাওয়া। বিবিএসের ফলাফলগুলো গবেষণার বেজলাইন হিসেবে কাজ করবে। তবে তথ্যকে আরও ভেঙে ভেঙে পূর্ণাঙ্গ তথ্য পরিবেশন করতে হবে। তাহলে মান বাড়বে। তিনি বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশেই এ ধরনের প্রতিষ্ঠান স্বাধীনভাবে কাজ করে। কোনো সরকারই তাদের কাজে হস্তক্ষেপ করে না। এ মুহূর্তে মানোন্নয়ন নিয়ে কাজ করা উচিত এ প্রতিষ্ঠানের। আর্থিক খাতের ডেটা এখানে পাওয়া যায়, কিন্তু রিয়েল সেক্টর ডেটা পাওয়া যায় না। সেটি খুব কম।
ফ্রান্সের উপকূলীয় শহর ঘাহসকে বলা হয় সুগন্ধির রাজধানী। দেশটিতে তৈরি পরিশীলতা, বিলাসিতা আর মদিরতার মিশেলে মোহনীয় সব সুগন্ধির কাঁচামালের মূল কেন্দ্র ওই শহর। তবে এসব সুগন্ধির বেশিরভাগই মূলত প্যারিসের বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনারদের তৈরি হয়। পৃথিবীর নাম করা সব সুগন্ধির ব্র্যান্ডও এই শহরে। এ জন্য প্যারিসকেও কেউ কেউ সুগন্ধির শহর নামে ডাকেন। তবে সুগন্ধি শিল্পে বহু যুগ ধরে বিশে্ব শীর্ষ স্থান দখল করে থাকা ফ্রান্সের রাজধানীর মানুষ গেল এক সপ্তাহ ধরে পড়েছে ভয়ংকর বিপাকে। অবসরের বয়সসীমা বাড়ানোর প্রস্তাবের বিরুদ্ধে বর্জ্য সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত কর্মীদের ধর্মঘটে প্যারিসের আস্তাকুঁড় থেকে শুরু করে মূল সড়কগুলোতেও উপচে পড়া বর্জ্যরে স্তূপ। হাজার হাজার টন বর্জ্যরে মধ্যে কিলবিল করছে তেলাপোকা আর ইঁদুর। নগরবাসীকে চলতে হচ্ছে নাকে রুমাল চেপে।
এএফপি বলছে, সম্প্রতি পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের পেনশনের বয়স সীমা ৬২ থেকে ৬৪ করার প্রস্তাব করেছে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর সরকার। এর প্রতিবাদেই কাজ বন্ধ রেখে আন্দোলন করছেন শ্রমিকরা। ধর্মঘটে প্যারিসের পাশাপাশি নোথ, হেন, ও লু হ্যাভা শহরেও ময়লার স্তূপ জমে আছে।
প্যারিস কর্র্তৃপক্ষ বলছে, ধর্মঘটে শহরের অর্ধেক ডিস্ট্রিক্টে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বন্ধ আছে। তিনটি বর্জ্য শোধনাগার অবরুদ্ধ, চতুর্থ আরেকটি আংশিক বন্ধ। ৫ হাজার ৬০০ টন বর্জ্য এখনো সংগ্রহ করা হয়নি। প্যারিস কাউন্সিল বলছে, বেসরকারি কোম্পানির আওতায় ১০টি ডিস্ট্রিক্টে কার্যক্রম প্রায় স্বাভাবিক রয়েছে। কিছু জায়গায় দেখা যাচ্ছে, পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের কাজে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। শহরের অন্যতম বড় ষষ্ঠ ডিস্ট্রিক্টের শীর্ষস্থানীয় কাউন্সিল কর্মকর্তা ইমানুয়েল গেগুয়া বলেন, পরিস্থিতি ছিল জটিল, তবে জননিরাপত্তার জন্য কর্র্তৃপক্ষ কাজ করছে। বাজার ও রাস্তায় পড়ে থাকা ময়লার ব্যাগ পরিষ্কার এবং পথচারীদের নিরাপত্তার ওপর জোর দিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞ হোমা ল্যাসআ ফরাসি পত্রিকা লু পারিজ্যঁকে বলেন, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের এই ধর্মঘট ইঁদুরের আচরণে পরিবর্তন আনছে। সেগুলো ডাস্টবিনে ঘুরে বেড়াবে, আরও ইঁদুরের জন্ম দেবে এবং মলমূত্র ত্যাগ করবে। ময়লা সংগ্রহকারী ও আমাদের জন্য একটি উদ্বেগজনক স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করছে।
প্যারিসের স্যোশালিস্ট মেয়রের বিরোধীরা ধর্মঘটকে কেবল বিদ্যমান সংকটের আরেকটি মাত্রা হিসেবে দেখছেন। ডানপন্থি রিপাবলিকান হাশিদা দাতির অভিযোগ, মেয়র অ্যানি ইদালগো পরিচ্ছন্নতা কাজের বাজেট দ্বিগুণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু প্যারিসবাসী স্পষ্টত প্যারিসকে নোংরা থেকে আরও নোংরা হয়ে উঠতে দেখছে।
উত্তরা আজিমপুর বিএনএস সেন্টার থেকে টঙ্গী ফায়ার সার্ভিস পর্যন্ত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের ফ্লাইওভারের দুটি লেন যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে করে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহনের চাপ অনেকাংশে কমে গেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী জুন মাসে উড়াল সেতু পুরোপুরি খুলে দিতে চায় বিআরটি। তবে উড়াল সেতুর পুরোপুরি সুফলের বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে উত্তরা আজমপুর সড়কের উপড়ে থাকা ময়লা ফেলার ডাম্পিং স্টেশন সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস)। এসটিএস সরিয়ে নিতে গত ১৫ ডিসেম্বর ২০২০ সালে করপোরেশনকে ৫৮ লাখ ৪১ হাজার তিনশত বাইশ টাকা দিয়েছে বিআরটি। কিন্তু এখনো তা সরানো হয়নি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উত্তরা আজিমপুর বিএনএস সেন্টারের পূর্ব পাশে ফ্লাইওভার ওঠার ও নামার মুখ। ফ্লাইওভারের দক্ষিণ পাশে ২০ গজ দূরে দেখা যায় সড়কের ওপর এসটিএস। বর্তমানে এসটিএস সড়কের মধ্যে ফ্লাইওভারের মুখে অবস্থান করছে। এর জন্য আট লেনের সড়কটি তিনটি লেন বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে সড়কে যানবাহন চলাচল বিঘিœত হচ্ছে। সড়কের মধ্যে থাকায় এসটিএস এর দুই পাশ দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়। যার জন্য এই জায়গায় হর হামেশা যানজট লেগেই থাকে।
প্রজাপতি পরিবহন চালক মানিক মিয়া দেশ রূপান্তরকে জানান, ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে ও নিচ দিয়ে গাড়ি চলাচল করে। বর্তমানে টঙ্গী থেকে উত্তরা গাড়ি ফ্লাইওভার দিয়ে নামার সময় বাম দিয়ে নামতে হয় একই জায়গায় দিয়ে উত্তরা থেকে টঙ্গী ওঠার রাস্তা। তেমনিভাবে ফ্লাইওভারের নিচের গাড়িগুলো ডানে মোড় নিতে হয় কারণ বামে ৬ নম্বর সেক্টর প্রবেশ পথ আর ২০ গজ সামনেই এসটিএস। আর এই জন্যই এখানে যানজট লেগে থাকে। সোজা গাড়িগুলো বের হতে পারলে এই এলাকা যানজট মুক্ত থাকত।
টঙ্গী ব্রিজে গিয়ে দেখা যায়, ব্রিজের উত্তর পাশে দুটি পিলার কাজ শেষ। একটু সামনে আরও একটি পিলারের কাজ করার জন্য মাটি খোঁড়া হয়েছে। দক্ষিণ পাশে নদী ঘেরাও দিয়ে ভেকু মেশিন ধারা মাটি সমান্তরাল কাজ চলছে। সেখানে একটি পিলারের পাইলিং কাজ হয়েছে। এই ব্রিজটি হতে উত্তর পাশে ছয়টি ও দক্ষিণ পাশে তিনটি মোট নয়টি পিলার সমর্পণ হলে ফ্লাইওভারের সঙ্গে সংযুক্ত হবে ব্রিজ। এছাড়া যানবাহন সঠিকভাবে চলাচলের জন্য টঙ্গী বেলিব্রিজ সামনের রাস্তাটা মেলামতের কাজ চলছে।
অন্যদিকে গতবছর ৬ নভেম্বর বিআরটি প্রকল্পের আজিমপুর-টঙ্গী ফায়ার সার্ভিস অংশে ২টি লেন উদ্বোধনের পর সুফল পেতে শুরু করে ডিএমপি ও জিএমপি ট্রাফিক বিভাগ। ফ্লাইওভার অন্যতম সুফল মিলছে বিশ্ব ইজতেমা দ্বিতীয় পর্বে। যানজট মুক্ত ছিল নগরবাসী।
বিআরটি প্রকল্প পরিচালক মো. মহিরুল ইসলাম খান দেশ রূপান্তরকে জানান, এসটিএস সরিয়ে নেওয়ার জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে ৫৮ লাখ ৪১ হাজার তিনশত বাইশ টাকা দেওয়া হয়েছে। গত দুই বছরেও এসটিএসটি সরিয়ে নিতে পারেনি ডিএনসিসি। মেয়রের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছি। তারা সরিয়ে নেবে বলে বেশ কয়েকবার আমাকে জানিয়েছেন। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। বাংলাদেশের এত বড় সাফল্য ছোট্ট একটি কারণে ব্যাহত হতে পারে।
এ বিষয় ঢাকা উত্তরা সিটি করপোরেশন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) মো. সেলিম রেজা দেশ রূপান্তরকে জানান, উত্তরা আজমপুর সড়কের ওপর এসটিএস সরিয়ে ফেলার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। উত্তরার ওয়ার্ড কাউন্সিলর এর সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা একটি জায়গা পেয়েছি। খুব শিগগিরই এসটিএসটি স্বল্প সময়ের মধ্যে সরিয়ে নেওয়া হবে। কত দিনের মধ্যে সরিয়ে নেওয়া হতে পারে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, জুন মাসের আগেই আমরা এটি সরিয়ে নেব।
২০১২ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় দুই হাজার ৪০ কোটি টাকার এই প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরে প্রথম দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। তখন ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় চার হাজার ২৬৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা। পরে আবারও ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়। ওই বাড়তি মেয়াদেও কাজ শেষ না হওয়ায় আবার সময় বাড়ানো হয় চলতি বছরের জুন পর্যন্ত। এ সময়ে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় চার হাজার ২৬৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা। কিন্তু এই সময়ের মধ্যেও কাজ শেষ হয়নি।
রাজধানীতে এটিই প্রথম বাস র্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্প। এ প্রকল্পের আওতায় রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মধ্যবর্তী উভয় পাশের একটি করে লেন শুধু বিআরটি বাস চলাচলের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে। বিআরটি লেনের পাশাপাশি করিডরটিতে উভয় দিকে দুটি করে যান্ত্রিক হালকা যান চলার পথ, উভয় পাশে ফুটপাত থাকছে।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেছেন, দেশে বিরাজমান স্থিতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ধরে রাখা এবং আইনশৃঙ্খলাজনিত যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে বরিশাল জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধু কর্নার ও স্মৃতি লাইব্রেরি উদ্বোধন শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
পুলিশপ্রধান বলেন, দেশে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ যেভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল বাংলাদেশ পুলিশ অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে তা দমন করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে “জিরো টলারেন্স নীতি” ঘোষণা করেছেন। সেই নীতি বাস্তবায়নে দেশের আপামর জনগণ, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন, গণমাধ্যম, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্যান্য বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থাসহ আমরা সবাই একসঙ্গে একই প্ল্যাটফর্মে একযোগে কাজ করেছি। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে আমাদের ঈর্ষণীয় সাফল্য রয়েছে। জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে রোল মডেলের স্বীকৃতি পেয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম হয়েছি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে উন্নয়ন হয়েছে তা আমরা ধরে রাখতে চাই। এ জন্য বাংলাদেশ পুলিশের সক্ষমতা ও প্রস্তুতি রয়েছে।’
এরপর আইজিপি বরিশাল বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ ও ব্লাড ব্যাংক উদ্বোধন করেন।
পরে আইজিপি প্রধান অতিথি হিসেবে বরিশাল রেঞ্জ ও মেট্রোপলিটনে কর্মরত বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন। বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি এস এম আক্তারুজ্জামানের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান এবং বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম। বরিশালের পুলিশ সুপার ওয়াহিদুল ইসলাম, বরিশাল রেঞ্জ, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ, আরআরএফ, এপিবিএন, জেলা পুলিশ এবং বরিশাল অঞ্চলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন।
আইজিপি বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইনস পরিদর্শন করেন। তিনি সেখানে বৃক্ষরোপণ এবং মাছের পোনা অবমুক্ত করেন।
আইজিপি সকালে কুয়াকাটায় ট্যুরিস্ট পুলিশের কার্যালয় পরিদর্শন করেন। এ সময় ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান এবং অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পুনাকের সুবিধাবঞ্চিতদের মাঝে সেলাই মেশিন ও শুভেচ্ছা উপহার বিতরণ : সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর মাঝে সেলাই মেশিন ও শুভেচ্ছা উপহার বিতরণ করেছে পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক) বরিশাল জেলা শাখা। এ উপলক্ষে সংগঠনের কার্যালয় চত্বরে গতকাল বিকেলে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
পুনাক সভানেত্রী ডা. তৈয়বা মুসাররাত জাঁহা চৌধুরী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন। সংগঠনের বরিশাল জেলা শাখার সভানেত্রী তাহমিনা জয়নব প্রীতির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ, পুনাক সভানেত্রী সোনিয়া ইসলাম। অনুষ্ঠানে বরিশাল রেঞ্জের বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সহধর্মিণী এবং সংগঠনের বরিশাল জেলার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় পুনাক সভানেত্রী ডা. তৈয়বা মুসাররাত জাঁহা চৌধুরী বলেন, পুনাক নিজস্ব গণ্ডির বাইরে বেরিয়ে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। এ ছাড়া বৃহত্তর পরিসরে নারীর ক্ষমতায়নেও কার্যকর ভূমিকা পালন করছে। তিনি অন্যান্য সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মাঝে সেলাই মেশিন ও শুভেচ্ছা উপহার বিতরণ করেন।
পুনাক সভানেত্রী বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ পুনাক কার্যালয় পরিদর্শন ও পুনাক সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসীদের গুলিতে আব্দুর রশিদ (২৮) নামে এক রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে তার মাথায় ও পিঠে গুলি করে পালিয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গতকাল বুধবার সকালে বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত আব্দুর রশিদ বালুখালী ৮ ওয়েস্ট রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এ-২৮ ব্লকের বাসিন্দা নুর বশরের ছেলে। তিনি আশ্রয় শিবিরটির স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, একটি এনজিওর অফিসে রাতে দায়িত্ব পালন শেষে ভোরে নিজের ছাউনিতে ফেরার সময় সন্ত্রাসীরা রশিদকে ধরে ঘটনাস্থলে নিয়ে যায়। পরে তাকে গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে মরদেহ ফেলে রেখে চলে যায়।
পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক সৈয়দ হারুন অর রশিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সকাল ৮টার দিকে ৮ নম্বর ক্যাম্পের ওয়েস্ট ব্লকে কিছু সন্ত্রাসী স্বেচ্ছাসেবক রশিদকে গুলি করে পালিয়ে যায়। উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’
নিহত আব্দুর রশিদের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয় বলে জানিয়েছেন উখিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী।
এর আগে গত মঙ্গলবার ভোরে দুর্বৃত্তদের গুলিতে এক রোহিঙ্গা গুরুতর আহত হন। তিনি বর্তমানে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।