
আগামী বছর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে একটিই পরীক্ষা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেন, ‘সারা বিশ্বে যেভাবে হয়, একটি পরীক্ষা হয়, এখানেও সে রকম একটি পরীক্ষা হবে, সব বিশ্ববিদ্যালয় সেখানে অংশ নেবে এবং সেই একটি পরীক্ষার মাধ্যমেই একটা জাতীয় মেধাতালিকা হবে। তার ভিত্তিতেই সব বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করবে।’
গতকাল বুধবার দুপুরে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর কলেজে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান মেলা উদ্বোধনের আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নে জবাবে এসব কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী।
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গুচ্ছ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী শিক্ষক ও অভিভাবক সবার জন্যই হয়রানি অনেকখানি কমেছে, ব্যয় সাশ্রয়ী হয়েছে এতে কোনো সন্দেহ নেই, কিন্তু যে কোনো নতুন সিস্টেম চালু করতে গেলে সেখানে কিছু কিছু সমস্যা সৃষ্টি হতেই পারে, আমাদেরও সে রকম কিছু কিছু সমস্যা হয়েছে, কিছু কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, সেগুলোকে কাটিয়ে উঠে আরও ভালো করবার চেষ্টা আমাদের আছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগ দেওয়া নিয়ে সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে ক্ষমাতসীন দলের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। র্যাগিং বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ‘এখনো পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই কিন্তু সবাই চাওয়া সত্ত্বেও এবং বিভিন্ন ধরনের আইন-কানুন থাকা সত্ত্বেও র্যাগিং কোথাও না কোথাও এখনো চালু আছে। বিভিন্নভাবে হয়, অনেক শিক্ষার্থীর জীবন ধ্বংস হয়ে যায়, এটি নিশ্চয় কারও কাম্য নয়। আমি মনে করি সেখানে গণমাধ্যমের বিরাট ভূমিকা রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘র্যাগিং একেবারেই নিষিদ্ধ এবং সরকার সেটা বন্ধ করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এটা আইন করে বা শিক্ষকদের দিয়ে বললেই হয়ে যাবে এমনটা নয়। এর বিরুদ্ধে মানসিকতা ও সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে। সবাইকে নিয়ে কাজ করলে আমরা বিশ্বাস করি এটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।’
পরে শিক্ষামন্ত্রী বিজ্ঞানমেলার উদ্বোধন করেন এবং প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ক ম সরওয়ার জাহান প্রমুুখ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যে আস্থা নেই এর ৫৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ ব্যবহারকারীর। এ ছাড়া সংস্থাটির মোট তথ্য ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৩৫ শতাংশ সন্তুষ্ট থাকলেও, অসন্তুষ্ট হয়ে আরও তথ্য চান ৬৫ শতাংশ ব্যবহারকারী। গতকাল বুধবার বিবিএসের প্রকাশিত ‘ইউজার স্যাটিসফেকশন সার্ভে-২০২২’ শীর্ষক জরিপের প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। এই প্রথম এমন প্রতিবেদন প্রকাশ করল বিবিএস।
পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মাধ্যমে প্রস্তুতকৃত ও প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যান সম্পর্কে ব্যবহারকারীদের সন্তুষ্টি ও চাহিদার মাত্রা নিরূপণের জন্য বিবিএস প্রথমবারের মতো এই জরিপ পরিচালনা করে।
গতকাল আগারগাঁও বিবিএস মিলনায়তনে জরিপ প্রকাশ করা হয়। পরিসংখ্যান ভবনের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত এ প্রকাশনা অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. মতিয়ার রহমান।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, দ্রব্যমূল্যের ডেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিবিএসের দ্রব্যমূল্যের তথ্যে মানুষের মাঝে অনেক অসন্তোষ রয়েছে। এটি স্বাভাবিক। কারণ তারা অল্প কয়েকটি পণ্যের দাম মাথায় নিয়ে তথ্য বিচার করেন। তারা দেখেন হয়তো মুরগি, ডিমের দাম বেড়ে গেছে, কিন্তু একই সময় যেসব পণ্যের দাম কমেছে তারা তা মাথায় রাখেন না। তিনি বলেন, বিবিএসের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য নির্ভরযোগ্য। তারা সব সময় চেষ্টা করে যাতে ট্রেন্ড ধরা যায়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ‘এনএসডিএস ইমপ্লিমেন্টেশন সাপোর্ট প্রজেক্ট’-এর প্রকল্প পরিচালক মো. দিলদার হোসেন স্বাগত বক্তব্য ও জরিপের ফলাফল নিয়ে সংক্ষিপ্ত পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন।
প্রকল্প পরিচালক দিলদার হোসেন বলেন, এ ধরনের জরিপ বিবিএস প্রথমবারের মতো পরিচালনা করেছে। এ জরিপটির নমুনার আকার ছিল ৬০৯ জন যার মধ্যে ৫৮০ জন উত্তরদাতার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। জরিপে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী উত্তরদাতাদের ৭০ দশমিক ৫২ শতাংশ জনসংখ্যা, জনমিতি এবং জন্ম, মৃত্যু, বিবাহ, ইত্যাদি সংক্রান্ত পরিসংখ্যান ব্যবহার করেন। উত্তরদাতাদের ৬৫ শতাংশ পরিসংখ্যানের বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক আরও বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত প্রকাশের বিষয়ে মত প্রকাশ করেন। অর্থাৎ তারা সন্তুষ্ট নন এবং ৪২ দশমিক ১৪ শতাংশ প্রায়শই প্রত্যাশিত তথ্য-উপাত্ত খুঁজে পেয়েছেন বলে জরিপে উঠে এসেছে।
প্রকল্প পরিচালক আরও জানান, সামগ্রিকভাবে বিবিএস প্রস্তুতকৃত তথ্য সরকারি পরিসংখ্যান শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। তবে সরকারি পরিসংখ্যান ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীগণের ৪৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা অনুসরণ করেননি। বৈদেশিক বাণিজ্য পরিসংখ্যান ব্যবহারকারীদের ৭০ দশমিক ০৯ শতাংশ বিবিএসের মাধ্যমে প্রস্তুতকৃত সরকারি পরিসংখ্যানকে উপযোগী এবং ১৭ দশমিক ০৯ শতাংশ খুবই উপযোগী হিসেবে মত প্রকাশ করেন।
পর্যালোচনা করে দেখা যায়, জনসংখ্যা, জনমিতি এবং জন্ম, মৃত্যু, বিবাহ সম্পর্কিত পরিসংখ্যান, জাতীয় হিসাব পরিসংখ্যান, ও দারিদ্র্য পরিসংখ্যানের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ অসন্তুষ্ট ৫৯% ব্যবহারকারী সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। পাশাপাশি ৭৩ দশমিক ১৩ শতাংশ পরিসংখ্যান ব্যবহারকারী জনসংখ্যা, জনমিতি এবং জন্ম, মৃত্যু, বিবাহ সম্পর্কিত পরিসংখ্যানের ‘যথার্থতা’র ব্যাপারে সন্তুষ্ট। ‘সময়োপযোগিতা’র বিষয়ে তাদের ৬৯ দশমিক ৬১ শতাংশ জাতীয় হিসাব পরিসংখ্যানকে উপযুক্ত হিসেবে বিবেচনা করেন এবং ৭৯ দশমিক ৯০ শতাংশ ব্যবহারকারী জাতীয় হিসাব পরিসংখ্যানের ‘প্রাসঙ্গিকতা’-এর ব্যাপারে সন্তুষ্টি জানান।
জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ে বিবিএসের তথ্যে অসন্তোষ রয়েছে ৫৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ ব্যবহারকারীর। এরমধ্যে ৪৬ শতাংশ মনে করেন এসব তথ্য ব্যবহারযোগ্য নয়। তাছাড়া শিক্ষার তথ্য নিয়ে ৬০ শতাংশ ব্যবহারকারী জানিয়েছেন এগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ বা পুরনো তথ্য।
জরিপে উঠে এসেছে, তথ্য-উপাত্ত অনুসন্ধানকারীদের বিবিএসের সঙ্গে যোগাযোগের কারণ হিসেবে ৫৮ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ ব্যবহারকারী নির্দিষ্ট উপাত্ত অনুসন্ধান করেন। তাদের প্রায় ৭২ দশমিক ৫৬ শতাংশ এক সপ্তাহের মধ্যেই তাদের কাক্সিক্ষত তথ্য পেতে সমর্থ হয়েছেন বলে মত দিয়েছেন। এক্ষেত্রে ৫৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ ব্যবহারকারী বিবিএসর তথ্যে সন্তুষ্ট হলেও তাদের ৩৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ আংশিক সন্তুষ্ট ছিলেন।
ড. শামসুল আলম বলেন, সঠিক পরিকল্পনার অন্যতম পূর্বশর্ত হলো সঠিক তথ্য-উপাত্ত। একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, এসডিজির সূচকসমূহ, অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, এবং ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণে সঠিক ও সময়োচিত পরিসংখ্যানের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা হিসেবে সরকারের ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত তারা।
অনুষ্ঠানে পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান আহসান হাবিব মনসুর বলেন, কত মানুষ এখানে অংশগ্রহণ করেছে তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হলো টার্গেটেট গ্রুপের কাছে যাওয়া। বিবিএসের ফলাফলগুলো গবেষণার বেজলাইন হিসেবে কাজ করবে। তবে তথ্যকে আরও ভেঙে ভেঙে পূর্ণাঙ্গ তথ্য পরিবেশন করতে হবে। তাহলে মান বাড়বে। তিনি বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশেই এ ধরনের প্রতিষ্ঠান স্বাধীনভাবে কাজ করে। কোনো সরকারই তাদের কাজে হস্তক্ষেপ করে না। এ মুহূর্তে মানোন্নয়ন নিয়ে কাজ করা উচিত এ প্রতিষ্ঠানের। আর্থিক খাতের ডেটা এখানে পাওয়া যায়, কিন্তু রিয়েল সেক্টর ডেটা পাওয়া যায় না। সেটি খুব কম।
ফ্রান্সের উপকূলীয় শহর ঘাহসকে বলা হয় সুগন্ধির রাজধানী। দেশটিতে তৈরি পরিশীলতা, বিলাসিতা আর মদিরতার মিশেলে মোহনীয় সব সুগন্ধির কাঁচামালের মূল কেন্দ্র ওই শহর। তবে এসব সুগন্ধির বেশিরভাগই মূলত প্যারিসের বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনারদের তৈরি হয়। পৃথিবীর নাম করা সব সুগন্ধির ব্র্যান্ডও এই শহরে। এ জন্য প্যারিসকেও কেউ কেউ সুগন্ধির শহর নামে ডাকেন। তবে সুগন্ধি শিল্পে বহু যুগ ধরে বিশে্ব শীর্ষ স্থান দখল করে থাকা ফ্রান্সের রাজধানীর মানুষ গেল এক সপ্তাহ ধরে পড়েছে ভয়ংকর বিপাকে। অবসরের বয়সসীমা বাড়ানোর প্রস্তাবের বিরুদ্ধে বর্জ্য সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত কর্মীদের ধর্মঘটে প্যারিসের আস্তাকুঁড় থেকে শুরু করে মূল সড়কগুলোতেও উপচে পড়া বর্জ্যরে স্তূপ। হাজার হাজার টন বর্জ্যরে মধ্যে কিলবিল করছে তেলাপোকা আর ইঁদুর। নগরবাসীকে চলতে হচ্ছে নাকে রুমাল চেপে।
এএফপি বলছে, সম্প্রতি পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের পেনশনের বয়স সীমা ৬২ থেকে ৬৪ করার প্রস্তাব করেছে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর সরকার। এর প্রতিবাদেই কাজ বন্ধ রেখে আন্দোলন করছেন শ্রমিকরা। ধর্মঘটে প্যারিসের পাশাপাশি নোথ, হেন, ও লু হ্যাভা শহরেও ময়লার স্তূপ জমে আছে।
প্যারিস কর্র্তৃপক্ষ বলছে, ধর্মঘটে শহরের অর্ধেক ডিস্ট্রিক্টে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বন্ধ আছে। তিনটি বর্জ্য শোধনাগার অবরুদ্ধ, চতুর্থ আরেকটি আংশিক বন্ধ। ৫ হাজার ৬০০ টন বর্জ্য এখনো সংগ্রহ করা হয়নি। প্যারিস কাউন্সিল বলছে, বেসরকারি কোম্পানির আওতায় ১০টি ডিস্ট্রিক্টে কার্যক্রম প্রায় স্বাভাবিক রয়েছে। কিছু জায়গায় দেখা যাচ্ছে, পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের কাজে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। শহরের অন্যতম বড় ষষ্ঠ ডিস্ট্রিক্টের শীর্ষস্থানীয় কাউন্সিল কর্মকর্তা ইমানুয়েল গেগুয়া বলেন, পরিস্থিতি ছিল জটিল, তবে জননিরাপত্তার জন্য কর্র্তৃপক্ষ কাজ করছে। বাজার ও রাস্তায় পড়ে থাকা ময়লার ব্যাগ পরিষ্কার এবং পথচারীদের নিরাপত্তার ওপর জোর দিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞ হোমা ল্যাসআ ফরাসি পত্রিকা লু পারিজ্যঁকে বলেন, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের এই ধর্মঘট ইঁদুরের আচরণে পরিবর্তন আনছে। সেগুলো ডাস্টবিনে ঘুরে বেড়াবে, আরও ইঁদুরের জন্ম দেবে এবং মলমূত্র ত্যাগ করবে। ময়লা সংগ্রহকারী ও আমাদের জন্য একটি উদ্বেগজনক স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করছে।
প্যারিসের স্যোশালিস্ট মেয়রের বিরোধীরা ধর্মঘটকে কেবল বিদ্যমান সংকটের আরেকটি মাত্রা হিসেবে দেখছেন। ডানপন্থি রিপাবলিকান হাশিদা দাতির অভিযোগ, মেয়র অ্যানি ইদালগো পরিচ্ছন্নতা কাজের বাজেট দ্বিগুণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু প্যারিসবাসী স্পষ্টত প্যারিসকে নোংরা থেকে আরও নোংরা হয়ে উঠতে দেখছে।
উত্তরা আজিমপুর বিএনএস সেন্টার থেকে টঙ্গী ফায়ার সার্ভিস পর্যন্ত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের ফ্লাইওভারের দুটি লেন যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে করে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহনের চাপ অনেকাংশে কমে গেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী জুন মাসে উড়াল সেতু পুরোপুরি খুলে দিতে চায় বিআরটি। তবে উড়াল সেতুর পুরোপুরি সুফলের বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে উত্তরা আজমপুর সড়কের উপড়ে থাকা ময়লা ফেলার ডাম্পিং স্টেশন সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস)। এসটিএস সরিয়ে নিতে গত ১৫ ডিসেম্বর ২০২০ সালে করপোরেশনকে ৫৮ লাখ ৪১ হাজার তিনশত বাইশ টাকা দিয়েছে বিআরটি। কিন্তু এখনো তা সরানো হয়নি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উত্তরা আজিমপুর বিএনএস সেন্টারের পূর্ব পাশে ফ্লাইওভার ওঠার ও নামার মুখ। ফ্লাইওভারের দক্ষিণ পাশে ২০ গজ দূরে দেখা যায় সড়কের ওপর এসটিএস। বর্তমানে এসটিএস সড়কের মধ্যে ফ্লাইওভারের মুখে অবস্থান করছে। এর জন্য আট লেনের সড়কটি তিনটি লেন বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে সড়কে যানবাহন চলাচল বিঘিœত হচ্ছে। সড়কের মধ্যে থাকায় এসটিএস এর দুই পাশ দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়। যার জন্য এই জায়গায় হর হামেশা যানজট লেগেই থাকে।
প্রজাপতি পরিবহন চালক মানিক মিয়া দেশ রূপান্তরকে জানান, ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে ও নিচ দিয়ে গাড়ি চলাচল করে। বর্তমানে টঙ্গী থেকে উত্তরা গাড়ি ফ্লাইওভার দিয়ে নামার সময় বাম দিয়ে নামতে হয় একই জায়গায় দিয়ে উত্তরা থেকে টঙ্গী ওঠার রাস্তা। তেমনিভাবে ফ্লাইওভারের নিচের গাড়িগুলো ডানে মোড় নিতে হয় কারণ বামে ৬ নম্বর সেক্টর প্রবেশ পথ আর ২০ গজ সামনেই এসটিএস। আর এই জন্যই এখানে যানজট লেগে থাকে। সোজা গাড়িগুলো বের হতে পারলে এই এলাকা যানজট মুক্ত থাকত।
টঙ্গী ব্রিজে গিয়ে দেখা যায়, ব্রিজের উত্তর পাশে দুটি পিলার কাজ শেষ। একটু সামনে আরও একটি পিলারের কাজ করার জন্য মাটি খোঁড়া হয়েছে। দক্ষিণ পাশে নদী ঘেরাও দিয়ে ভেকু মেশিন ধারা মাটি সমান্তরাল কাজ চলছে। সেখানে একটি পিলারের পাইলিং কাজ হয়েছে। এই ব্রিজটি হতে উত্তর পাশে ছয়টি ও দক্ষিণ পাশে তিনটি মোট নয়টি পিলার সমর্পণ হলে ফ্লাইওভারের সঙ্গে সংযুক্ত হবে ব্রিজ। এছাড়া যানবাহন সঠিকভাবে চলাচলের জন্য টঙ্গী বেলিব্রিজ সামনের রাস্তাটা মেলামতের কাজ চলছে।
অন্যদিকে গতবছর ৬ নভেম্বর বিআরটি প্রকল্পের আজিমপুর-টঙ্গী ফায়ার সার্ভিস অংশে ২টি লেন উদ্বোধনের পর সুফল পেতে শুরু করে ডিএমপি ও জিএমপি ট্রাফিক বিভাগ। ফ্লাইওভার অন্যতম সুফল মিলছে বিশ্ব ইজতেমা দ্বিতীয় পর্বে। যানজট মুক্ত ছিল নগরবাসী।
বিআরটি প্রকল্প পরিচালক মো. মহিরুল ইসলাম খান দেশ রূপান্তরকে জানান, এসটিএস সরিয়ে নেওয়ার জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে ৫৮ লাখ ৪১ হাজার তিনশত বাইশ টাকা দেওয়া হয়েছে। গত দুই বছরেও এসটিএসটি সরিয়ে নিতে পারেনি ডিএনসিসি। মেয়রের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছি। তারা সরিয়ে নেবে বলে বেশ কয়েকবার আমাকে জানিয়েছেন। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। বাংলাদেশের এত বড় সাফল্য ছোট্ট একটি কারণে ব্যাহত হতে পারে।
এ বিষয় ঢাকা উত্তরা সিটি করপোরেশন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) মো. সেলিম রেজা দেশ রূপান্তরকে জানান, উত্তরা আজমপুর সড়কের ওপর এসটিএস সরিয়ে ফেলার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। উত্তরার ওয়ার্ড কাউন্সিলর এর সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা একটি জায়গা পেয়েছি। খুব শিগগিরই এসটিএসটি স্বল্প সময়ের মধ্যে সরিয়ে নেওয়া হবে। কত দিনের মধ্যে সরিয়ে নেওয়া হতে পারে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, জুন মাসের আগেই আমরা এটি সরিয়ে নেব।
২০১২ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় দুই হাজার ৪০ কোটি টাকার এই প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরে প্রথম দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। তখন ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় চার হাজার ২৬৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা। পরে আবারও ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়। ওই বাড়তি মেয়াদেও কাজ শেষ না হওয়ায় আবার সময় বাড়ানো হয় চলতি বছরের জুন পর্যন্ত। এ সময়ে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় চার হাজার ২৬৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা। কিন্তু এই সময়ের মধ্যেও কাজ শেষ হয়নি।
রাজধানীতে এটিই প্রথম বাস র্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্প। এ প্রকল্পের আওতায় রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মধ্যবর্তী উভয় পাশের একটি করে লেন শুধু বিআরটি বাস চলাচলের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে। বিআরটি লেনের পাশাপাশি করিডরটিতে উভয় দিকে দুটি করে যান্ত্রিক হালকা যান চলার পথ, উভয় পাশে ফুটপাত থাকছে।
ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে লিবিয়া থেকে অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার পথে নৌকাডুবির ঘটনায় ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার ১২ যুবকের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এতে চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন তাদের স্বজনরা। ওই ১২ যুবক বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে এখন পর্যন্ত তা জানতে পারছেন না তারা।
লিবিয়া থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ে অবৈধভাবে ইতালি অভিমুখে যাত্রা করা একটি নৌকা গত রবিবার বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে পড়ে ডুবে যায়। এতে ৩০ জন নিখোঁজ হয়। এর মধ্যে ১২ জনই নগরকান্দা উপজেলার।
নিখোঁজ যুবকেরা হলেন উপজেলার কোদালিয়া শহীদনগর ইউনিয়নের আটকাহনিয়া গ্রামের তোরাপ মোল্যার ছেলে শফিকুল ইসলাম রাসেল (৩০), ডাঙ্গী ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামের মোস্তফা মাতুব্বরের ছেলে আল আমিন মাতুব্বর (২০), সোবাহান মোল্যার ছেলে মাহফুজ মোল্যা (২২), এসকেন মোল্যার ছেলে নাজমুল মোল্যা (২৩) ও সেকেন ব্যাপারীর ছেলে আকরাম ব্যাপারী (২৭), বাশাগাড়ী গ্রামের ইছাহাক ফকিরের ছেলে স্বপন ফকির (২৭), শংকরপাশা গ্রামের সেকেন কাজীর ছেলে শামীম কাজী (২১), সরোয়ার মাতুব্বরের ছেলে বিপুল (২৫), মালেক শেখের ছেলে বিটুল শেখ (২৫), শ্রীঙ্গাল গ্রামের সলেমান শেখের ছেলে মিরান শেখ (২২), ইদ্রিস শেখের ছেলে তুহিন শেখ (২০) ও নারুয়াহাটি গ্রামের কাশেম তালুকদারের ছেলে শাওন তালুকদার (২২)। তারা সবাই স্থানীয় একটি দালাল চক্রের মাধ্যমে অবৈধভাবে ইতালি যাচ্ছিলেন।
নিখোঁজ রাসেলের বাবা তোরাপ মোল্যা জানান, উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামের আদম ব্যাপারী মুরাদ ফকিরের মাধ্যমে আট লাখ টাকার চুক্তি হয়। গত ৮ জানুয়ারি রাসেল বিমানে ঢাকা ত্যাগ করে। দুবাই হয়ে ১২ জানুয়ারি তারা লিবিয়া পৌঁছায়। দুই মাস লিবিয়ায় অবস্থানের পর রবিবার ইতালি যাওয়ার পথে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে।
নগরকান্দা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান ডাঙ্গী ইউনিয়নের বিল গোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি বলেন, ‘শুনেছি ইতালি যাওয়ার পথে ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটেছে। এতে এলাকার বেশ কয়েকজন উদ্ধার হয়েছেন। আবার বেশ কয়েকজন নিখোঁজ রয়েছেন।’
ডাঙ্গী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী আবুল কালাম জানান, মুরাদ একজন মানব পাচারকারী। তিনি অবৈধভাবে বিদেশে লোক পাঠিয়ে কয়েক কোটি টাকা আয় করেছেন।
তবে মুরাদ ফকির পলাতক থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তার সহযোগী বাশাগারী গ্রামের ইমারত মিয়া মোবাইল ফোনে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মানব পাচারের সঙ্গে আমি জড়িত নই। আমার হাত দিয়ে দুই একজনের টাকা মুরাদকে দিয়েছি মাত্র।’
নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মঈনুল হক বলেন, ‘এ ব্যাপারে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। নগরকান্দা থানার ওসি মিরাজ হোসেন বলেন, অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেছেন, দেশে বিরাজমান স্থিতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ধরে রাখা এবং আইনশৃঙ্খলাজনিত যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে বরিশাল জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধু কর্নার ও স্মৃতি লাইব্রেরি উদ্বোধন শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
পুলিশপ্রধান বলেন, দেশে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ যেভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল বাংলাদেশ পুলিশ অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে তা দমন করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে “জিরো টলারেন্স নীতি” ঘোষণা করেছেন। সেই নীতি বাস্তবায়নে দেশের আপামর জনগণ, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন, গণমাধ্যম, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্যান্য বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থাসহ আমরা সবাই একসঙ্গে একই প্ল্যাটফর্মে একযোগে কাজ করেছি। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে আমাদের ঈর্ষণীয় সাফল্য রয়েছে। জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে রোল মডেলের স্বীকৃতি পেয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম হয়েছি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে উন্নয়ন হয়েছে তা আমরা ধরে রাখতে চাই। এ জন্য বাংলাদেশ পুলিশের সক্ষমতা ও প্রস্তুতি রয়েছে।’
এরপর আইজিপি বরিশাল বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ ও ব্লাড ব্যাংক উদ্বোধন করেন।
পরে আইজিপি প্রধান অতিথি হিসেবে বরিশাল রেঞ্জ ও মেট্রোপলিটনে কর্মরত বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন। বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি এস এম আক্তারুজ্জামানের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান এবং বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম। বরিশালের পুলিশ সুপার ওয়াহিদুল ইসলাম, বরিশাল রেঞ্জ, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ, আরআরএফ, এপিবিএন, জেলা পুলিশ এবং বরিশাল অঞ্চলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন।
আইজিপি বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইনস পরিদর্শন করেন। তিনি সেখানে বৃক্ষরোপণ এবং মাছের পোনা অবমুক্ত করেন।
আইজিপি সকালে কুয়াকাটায় ট্যুরিস্ট পুলিশের কার্যালয় পরিদর্শন করেন। এ সময় ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান এবং অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পুনাকের সুবিধাবঞ্চিতদের মাঝে সেলাই মেশিন ও শুভেচ্ছা উপহার বিতরণ : সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর মাঝে সেলাই মেশিন ও শুভেচ্ছা উপহার বিতরণ করেছে পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক) বরিশাল জেলা শাখা। এ উপলক্ষে সংগঠনের কার্যালয় চত্বরে গতকাল বিকেলে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
পুনাক সভানেত্রী ডা. তৈয়বা মুসাররাত জাঁহা চৌধুরী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন। সংগঠনের বরিশাল জেলা শাখার সভানেত্রী তাহমিনা জয়নব প্রীতির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ, পুনাক সভানেত্রী সোনিয়া ইসলাম। অনুষ্ঠানে বরিশাল রেঞ্জের বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সহধর্মিণী এবং সংগঠনের বরিশাল জেলার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় পুনাক সভানেত্রী ডা. তৈয়বা মুসাররাত জাঁহা চৌধুরী বলেন, পুনাক নিজস্ব গণ্ডির বাইরে বেরিয়ে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। এ ছাড়া বৃহত্তর পরিসরে নারীর ক্ষমতায়নেও কার্যকর ভূমিকা পালন করছে। তিনি অন্যান্য সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মাঝে সেলাই মেশিন ও শুভেচ্ছা উপহার বিতরণ করেন।
পুনাক সভানেত্রী বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ পুনাক কার্যালয় পরিদর্শন ও পুনাক সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যু যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে না।
বুধবার (২৯ মার্চ) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
হেফাজতে সুলতানার মৃত্য নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, ‘হঠাৎ করে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। আপনি প্রায় প্রতিদিনই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই ধরনের দুর্ঘটনা দেখতে পাবেন।’
‘এই সপ্তাহে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি গণগুলিতে শিশু নিহত হয়েছে। কারও সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হচ্ছে? আমি মনে করি না এই ধরনের দুর্ঘটনা আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নষ্ট করবে।’
এর আগে, নওগাঁ পৌরসভা-চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অফিস সহকারী সুলতানাকে (৩৮) র্যাব-৫ এর একটি টহল দল ২২ মার্চ সকালে কাজে যাওয়ার সময় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ধরে নিয়ে যায়। হেফাজতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে নওগাঁ সদর হাসপাতাল এবং তারপর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৪ মার্চ তার মৃত্যু হয়।
মোমেন বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র সম্পর্কে অন্যদের কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়ার দরকার নেই।
‘বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যেখানে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের সংগ্রামে ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছে। অন্য দেশের গণতন্ত্র সম্পর্কে আমাদের কোনো পাঠের প্রয়োজন নেই।’
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখন খুবই শক্তিশালী।
যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্রের সমস্যা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তাদের গণতন্ত্র খুবই দুর্বল। তাই তারা দেশে ও বিদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কারের পক্ষে ওকালতি করার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র দেশে ও বিদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কারের বিষয়ে আরও সোচ্চার হওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা আমাদের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছি। আমরা এটি সম্পর্কে একই পৃষ্ঠায় আছি। আমাদের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো গত এক দশকে ব্যাপক সংস্কারের মধ্য দিয়ে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠা করেছি। আমরা ভুয়া ভোটারদের মোকাবিলা করার জন্য ছবিসহ ভোটার আইডি তৈরি করেছি। বিগত ১৪ বছরে নির্বাচন কমিশন হাজার হাজার নির্বাচন পরিচালনা করেছে। তাদের প্রায় সবগুলোই ছিল স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য। এবং ভবিষ্যতেও আমাদের নির্বাচন হবে স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য।’
মোমেন বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন বৈশ্বিক গণমাধ্যমে ‘জাদুকরী’ হিসেবে সমাদৃত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান বিশ্বব্যাপী আমাদের গুরুত্ব বাড়িয়েছে। এবং ক্রমাগত উন্নয়নের কারণে, বিশ্বের অনেক দেশ এখন আমাদের সঙ্গে বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী।’
তিনি আরও বলেন,‘এই স্বাধীনতা দিবসে এবং রমজানের শুরুতে, আমরা অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের কাছ থেকে অভিনন্দনমূলক চিঠি পেয়েছি।’
মেয়েদের বয়সভিত্তিক দল নিয়ে বাফুফে যতটা তৎপর, সিনিয়র জাতীয় দল নিয়ে ততটাই উদাসীন। আরো একবার দেশের ফুটবলের নিয়ন্তা সংস্থার সিদ্ধান্ত সেটাই প্রমাণ করল। অর্থাভাবের অজুহাত দিয়ে সাবিনা খাতুন, কৃষ্ণা রানী সরকারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
বুধবার এক বিজ্ঞপ্তিতে বাফুফে বলেছে, ‘মায়ানমার যাতায়াতের বিমান ভাড়া, ইনস্যুরেন্স ফি, সেখানে থাকা-খাওয়া ও ট্রান্সপোর্টশনসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় খরচের সংকুলান না হওয়ায় উক্ত প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ মেয়েদের জাতীয় ফুটবল দলের অংশগ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না।’
অলিম্পিক বাছাইয়ে বাংলাদেশের মেয়েরা আছে ‘বি’ গ্রুপে। স্বাগতিক মায়ানমারের সঙ্গে গ্রুপে আরও আছে ইরান ও মালদ্বীপ। গ্রুপের খেলাগুলো হবে আগামী ৫ থেকে ১১ এপ্রিল।
বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে চেয়েছিলাম এই বাছাই পর্বের স্বাগতিক হতে। কিন্তু স্বাগতিক মর্যাদা মায়ানমারকে দেওয়া হয়। টুর্নামেন্টের নিয়ম অনুযায়ী এখানে অংশ নিতে হলে সব খরচ নিজেদের বহন করতে হবে, যা বহন করার মতো অবস্থায় নেই বাফুফের।’
আবু নাঈম সোহাগ আরও বলেন, ‘আমরা ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম। সেই সাহায্য পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এরপরই আমরা দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
গত সেপ্টেম্বরে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের পর আর আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেননি সাবিনারা। এই সফর বাতিল হওয়ায় মাঠে নামার অপেক্ষাটা তাদের আরো বাড়ল।
মেয়েদের জাতীয় দল নিয়ে বাফুফের উদাসীনতার নজির এটাই প্রথম নয়। এর আগে ২০১৯ সালের এসএ গেমসে মেয়েদের দল পাঠায়নি বাফুফে।
সেবার যুক্তিটা ছিল অদ্ভুত। যেহেতু তখন মেয়েদের জাতীয় দলটি মূলত বয়সভিত্তিক দলের খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া ছিল, তাই শক্তিশালী দলগুলোর বিপক্ষে খারাপ করলে তারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে পারে। এই কারণের কথা বলে সেবার এসএ গেমসে দল পাঠায়নি বাফুফে।
মৌলভীবাজার জেলা পুলিশের প্রচেষ্টায় সমাজপতিদের বাধায় ঘরছাড়া সেই নবদম্পতি অবশেষে বাড়ি ফিরেছেন। ওই নবদম্পতিকে অবশেষে মেনে নিয়েছেন ও সমাজপতিরা।
বুধবার (২৯ মার্চ) বিকেলে জেলা পুলিশের একটি দল তাদের বাড়ি পৌঁছে দেয়।
এর আগে ওই নবদম্পতি মৌলভীবাজার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করেন। পুলিশ সুপার সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাসও দেন।
ছেলে মৎস্যজীবী পরিবারের হওয়ায় তাদেরকে ঘরে তুলতে পারছিলেন না। সেই বিয়েকে অস্বীকার করেন স্থানীয় সমাজপতি ও গ্রামের মোড়লরা। বিষয়টি নিয়ে গত ২৮ মার্চ দেশ রূপান্তরে ‘সমাজপতিদের না জানিয়ে বিয়ে, ঘরছাড়া নবদম্পতি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পরই এ ঘটনা সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে।
জানা যায়, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আপার কাগাবালা ইউনিয়নের উত্তর কাগাবলা গ্রামের ইমন মিয়ার সাথে গত ১৯ মার্চ সাতবাক গ্রামের পলি আক্তারের বিয়ে হয়। ধর্মীয় বিধান মেনে চার লাখ টাকা কাবিন নির্ধারণ করে নিকাহনামা রেজিস্ট্রির মাধ্যমে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের কথা এলাকায় জানাজানি হওয়ার পর বাধা হয়ে দাঁড়ান স্থানীয় মুরব্বিরা। তাদের দাবি, প্রথা অনুযায়ী মৎস্যজীবী পরিবারের সঙ্গে বাইরের কারো বিয়ে হয় না।
গত ২৫ মার্চ পলি আক্তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ নিয়ে পোস্ট দেওয়ার পর আলোচনায় আসে বিষয়টি।
বাড়ি ফিরে নবদম্পতি পলি আক্তার ও ইমন মিয়া বলেন, সমাজপতিদের ভয়ে আমরা আত্মগোপনে ছিলাম। আমরা বাড়ি ফিরেছি। সমাজ আমাদেরকে মেনে নিয়েছে। আমি পুলিশ প্রশাসন ও গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তাদের কারণে আমরা নতুন জীবন ফিরে পেলাম।
আপার কাগাবলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইমন মোস্তফা বলেন, নবদম্পতি তাদের বাড়ি ফিরেছেন। গ্রামের সব পক্ষকে নিয়ে মডেল থানায় বসে বিষয়টি সমাধান করা হয়। সেখানে সবাই একমত হয়েছে, তাদের সংসারে কেউ বাধা দেবেন না। আমরা তাদের মেনে নিয়েছি।
মৌলভীবাজারে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, সমাজের সবাই তাদের মেনে নিয়েছেন। বিষয়টির একটি সুন্দর সমাধান হয়েছে। যার কারণে নবদম্পতি বাড়ি ফিরতে পেরেছেন। পুলিশের একটি টিম তাদেরকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছে।
যদি কোনো নারী কমপক্ষে দুটি মুরগি পালন করেন অথবা কোনো ব্যক্তি যদি সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ করেন তাকে শ্রমশক্তির আওতায় এনেছে সরকার। অথচ সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ করে কর্মের আওতায় এসেছেন এমন পরিসংখ্যানের হিসাবই দেওয়া হয়নি। গতকাল বুধবার শ্রমশক্তি জরিপ ২০২২ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএস। ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে প্রকাশের কথা থাকলে শ্রমশক্তি জরিপটি ছয় বছর পর প্রকাশ করল বিবিএস। এতে বর্তমানে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৩০ হাজার বলে উল্লেখ করা হযেছে। যা ২০১৭ সালের জরিপে ছিল ২৭ লাখ। অর্থাৎ ছয় বছরের ব্যবধানে দেশে বেকার কমেছে ৭০ হাজার। শ্রমশক্তি জরিপ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান।
সরকারের বেকারত্বের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি ৩০ দিনে বেতন বা নিজস্ব পণ্য উৎপাদনের নিমিত্তে কোনো না কোনো কাজ খুঁজে থাকেন এবং গত সাত দিনে কাজ করার জন্য প্রস্তুত থাকেন তবে তাকে বেকার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
বিবিএস বলছে, করোনার সময় দেশে বেকারের সংখ্যা বাড়েনি বরং কমেছে। কারণ ওই সময় সরকার বিশেষ অনেক পদক্ষেপ নেওয়ায় এসব বেকারের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। তাছাড়া কৃষি খাতে অংশগ্রহণ বাড়ায় বেকারের সংখ্যা কমেছে।
জরিপে বলা হয়েছে, দেশে এখন ২৬ লাখ ৩০ হাজার বেকার আছে। এর আগে ২০১৭ সালের জরিপে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৭ লাখ। ছয় বছরের ব্যবধানে বেকার কমেছে ৭০ হাজার।
জরিপে দেখা গেছে, ছয় বছর আগের তুলনায় বেকারত্বের হারও কমেছে। ২০১৭ সালে বেকারত্ব ছিল ৪ দশমিক ২ শতাংশ। সর্বশেষ জরিপ বলছে, এখন বেকারত্ব কমে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ হয়েছে। সপ্তাহে এক ঘণ্টা মজুরির বিনিময়ে কাজ করার সুযোগ না পেলে তাকে বেকার হিসেবে ধরা হয়।
জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, এখন দেশে শ্রমশক্তিতে ৭ কোটি ৩৪ লাখ মানুষ আছে। এর মধ্যে কাজে নিয়োজিত ৭ কোটি ৭ লাখ ৮০ হাজার মানুষ। এ শ্রমশক্তির মধ্যে থাকা ৪ কোটি ৭৪ লাখ পুরুষ আর ২ কোটি ৫৯ লাখ নারী। ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৯৯ লাখ ১০ হাজার মানুষ শ্রমশক্তির আওতায় এসেছে অর্থাৎ এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
জরিপে ১৫ বছরের বেশি বয়সীদের বিবেচনা করা হয়েছে। গত বছর জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশের প্রায় সোয়া লাখ পরিবার থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তথ্য সংগ্রহ করা হয় দ্বৈবচয়ন অর্থাৎ লটারি পদ্ধতিতে বাছাইয়ের মাধ্যমে। এর আগে ২০১৭ সালে শ্রমশক্তি জরিপ করেছে বিবিএস। প্রতি চার থেকে পাঁচ বছরের ব্যবধান এ জরিপ করা হয়ে থাকে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেকারদের মধ্যে পুরুষ ১৬ লাখ ৯০ হাজার। আর নারী ৯ লাখ ৪০ হাজার। পাঁচ বছর আগের চেয়ে নারীর বেকারত্ব কমেছে। বেড়েছে পুরুষের বেকারত্ব। ২০১৭ সালের জরিপে ১৪ লাখ পুরুষ বেকার ছিল। ওই সময় ১৩ লাখ নারী বেকার ছিল।
জরিপ বলছে, মোট সাত কোটি কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তির মধ্যে কৃষি খাতে নিয়োজিত রয়েছে ৩ কোটি ২২ লাখ, শিল্প খাতে ১ কোটি ২০ লাখ এবং সেবা খাতে ২ কোটি ৬৬ লাখ।
জরিপের হিসাবে আরও দেখা যায়, দেশে শ্রমশক্তির বাইরে আছেন ৪ কোটি ৬৯ লাখ মানুষ। এর মধ্যে নারী ৩ কোটি ৪৮ লাখ, পুরুষের সংখ্যা ১ কোটি ২০ লাখ। বেকারত্ব কমে আসার পাশাপাশি কর্মে নিয়োজিত জনবলও বেড়েছে দেশে। ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী যুবকদের কর্মসংস্থান হয়েছে ২ কোটি ৬৮ লাখ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, এ জরিপের মাধ্যমে অর্থনীতির মূল গতিবিধি আমরা বুঝতে পারব। আমরা কোনো তথ্যই লুকিয়ে রাখব না। তিনি বলেন, আমাদের দেশের গৃহিণীরা প্রায় ২৪ ঘণ্টাই কাজ করেন। তাদের শ্রম হিসাব করা হয় না। তাদের শ্রম হিসাবে এলে জিডিপির আকার ৬০০ থেকে ৭০০ বিলিয়ন হতো। নারীদের শ্রমের প্রকৃত বিচার হয় না। আমরা আশা করছি এখন থেকে এ তথ্য প্রতি তিন মাসেই পাব।
আইএলওর আইন মানা হয়েছে কি না সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আইএলওর মানদ- অনুযায়ী এ জরিপ করা হয়েছে। কডিডের সময় আমাদের দেশে বেকারত্ব কমেছে কারণ সে সময় আমরা শিল্প খোলা রেখেছিলাম। লকডাউনে সড়কে বাস চলাচল করতে দিয়েছি। ১ মিলিয়ন ডলারের বেশি প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে সে সময়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, এটি প্রভিশনাল রিপোর্ট। এ তথ্য মূল প্রতিবেদনে পরিবর্তিত হতে পারে। অর্থনীতির হাল বোঝার জন্য এ তথ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশে বেকার বাড়ছে নাকি কমছে সে তথ্য সরকারের নীতি গ্রহণের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এসব তথ্য-উপাত্ত নিয়ে যেসব প্রশ্ন আসছে, এগুলো সবসময়ই এসে থাকে। এসব প্রশ্ন আসবেই। শহরের মহিলা শ্রমিক কমে গেছে, তার মানে হলো তারা গ্রামে গিয়ে কৃষিতে যুক্ত হচ্ছে।
বিবিএস বলছে, সরকারের বিভিন্ন প্রণোদনা ও নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে ঘরে ঘরে চাকরি প্রদানের বিষয়ে বিশেষ সুযোগ তৈরির প্রচেষ্টায় বেকার জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কমেছে।
এ সময় শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব এহসান-ই-এলাহী বলেন, আমি তো ভেবেছিলাম দেশে শ্রমিক ছয় কোটি, এখন দেখি সাত কোটির বেশি। এটি বড় সুসংবাদ। আমরা আগামী বছরের মধ্যে তিন লাখ শ্রমিকের ডেটাবেজ করব। কারণ আমাদের কাছে সঠিক কোনো ডেটাবেজ নেই।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় সাভারে কর্মরত প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গতকাল বুধবার ভোররাত ৪টার দিকে সাভারের আশুলিয়া থানাধীন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) সংলগ্ন আমবাগান এলাকার ভাড়া বাসা থেকে তাকে আটক করা হয়।
রাজধানীর তেজগাঁও থানায় মো. গোলাম কিবরিয়া নামে এক ব্যক্তির করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আজাদ রহমান। তিনি বলেন, ‘শামসুজ্জামানকে আদালতে পাঠানো হবে।’ তবে গতকাল রাত ৮টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে আদালতে পাঠানোর তথ্য পাওয়া যায়নি।
মামলার এজাহারে উল্লেখ আছে, ‘২৯ মার্চ ২.১৫ ঘটিকায়’ এজাহার পেয়ে মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে।
শামসুজ্জামান গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার ঘটনায় নিহত পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল করিমের ভাই। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষের (৩৫তম আবর্তনের) ছাত্র ছিলেন। পড়ালেখা করার সময়ও তিনি প্রথম আলো পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ভোররাত ৪টার দিকে তিনটি গাড়িতে মোট ১৬ জন ব্যক্তি শামসুজ্জামানের বাসার সামনে যান। তাদের মধ্যে ৭-৮ জন বাসার ভেতরে ঢোকেন। একজন শামসুজ্জামানের থাকার কক্ষ তল্লাশি করে তার ব্যবহৃত একটি ল্যাপটপ, দুটি মোবাইল ফোনসেট ও একটি পোর্টেবল হার্ডডিস্ক নিয়ে যান। বাসায় ১০-১৫ মিনিট অবস্থান করার পর তাকে নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় যান ওই ব্যক্তিরা।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, বটতলার নুরজাহান হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন, একজন নিরাপত্তা প্রহরী, শামসুজ্জামানসহ ১৯ জন সাহরির খাবার খান। ভোর পৌনে ৫টার দিকে বটতলা থেকে তারা আবার শামসুজ্জামানের বাসায় যান। দ্বিতীয়বার বাসায় যাওয়ার সময় আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রাজু সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় শামসুজ্জামানের বাসায় ছিলেন স্থানীয় সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম।
আরিফুল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বাসায় এসে তারা জব্দ করা মালামালের তালিকা করেন। শামসুজ্জামানকে জামাকাপড় নিতে বলা হয়। এ সময় কক্ষের ভেতরে দাঁড় করিয়ে তার ছবি তোলা হয়। ৫-৭ মিনিটের মধ্যে আবার তারা বের হয়ে যান। বাসা তল্লাশির সময় দুবারই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন উপস্থিত ছিলেন।’
শামসুজ্জামানকে আটকের সময় ওই বাসার মালিককে ডাকেন পুলিশের এক কর্মকর্তা। পুলিশ কর্মকর্তা তাকে জানান, শামসুজ্জামানের করা একটি প্রতিবেদনের বিষয়ে রাষ্ট্রের আপত্তি আছে। তাই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে নেওয়া হচ্ছে।
ছেলের গ্রেপ্তারের খবর শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা করিমন নেসা। রাতের আঁধারে ছেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই কি দেশের বিচার? শামসের ভাই রবিউল দেশের জন্য শহীদ হইছে। শহীদের ভাইয়ের রক্ত, একই রক্ত। দেশের জন্য জীবন দিয়া গেল যে, সে তার ভাই। আজ তার বাবা নাই।’
করিমন নেসা বলেন, ‘আল্লাহ আমার স্বামীরে নিছে, এক সন্তানরে নিছে। আমি খালি চাই, আমার এই ছেলে বুকে ফিরে আসুক। আমি আর কিচ্ছু চাই না। আমার সন্তান ঘরে থাকব, আমি ওর মা ডাক শুনব।’
উল্লেখ্য, গত রবিবার প্রথম আলো অনলাইনের একটি প্রতিবেদন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশের সময় দিনমজুর জাকির হোসেনের উদ্ধৃতি দিয়ে একটি ‘কার্ড’ তৈরি করা হয়। সেখানে উদ্ধৃতিদাতা হিসেবে দিনমজুর জাকির হোসেনের নাম থাকলেও ছবি দেওয়া হয় একটি শিশুর। পোস্ট দেওয়ার ১৭ মিনিটের মাথায় অসংগতিটি নজরে আসে এবং সঙ্গে সঙ্গে তা প্রত্যাহার করা হয়। পাশাপাশি প্রতিবেদন সংশোধন করে সংশোধনীর বিষয়টি উল্লেখসহ পরে আবার অনলাইনে প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনের কোথাও বলা হয়নি যে উক্তিটি ওই শিশুর। বরং স্পষ্টভাবেই বলা হয়েছে, উক্তিটি দিনমজুর জাকির হোসেনের।
শামসুজ্জামান শামসের গ্রেপ্তারের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘স্বাধীনতা দিবসে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করার জন্য যে কেউ ক্ষুব্ধ হতে পারেন। তাদেরই একজন মামলা করেছেন।’ তবে কে মামলা করেছেন, সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে বাদীর নাম জানাতে পারেননি। গতকাল দুপুরে মন্ত্রণালয়ের নিজ কার্যালয়ে ‘বেসরকারি রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারের মধ্যে অনুদান বিতরণ ও বার্ষিক ড্রাগ রিপোর্টের মোড়ক উন্মোচন’ অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। রাষ্ট্রও আইন অনুযায়ী চলে। প্রথম আলো যে সংবাদটি প্রকাশ করেছে, সেটা যে মিথ্যা ছিল, তা ৭১ টিভির সংবাদে পরিষ্কার হয়ে উঠে এসেছে। প্রথম আলোর সাংবাদিক সাহেব যে নিউজটি করেছেন সেটা সঠিক ছিল না। যেটা ৭১ টিভির মাধ্যমে আপনারাই প্রকাশ করেছেন। এই সংবাদটা যে ভিত্তিহীন, মিথ্যা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ছাপানো হয়েছে ৭১ টিভির মাধ্যমে সেটা স্পষ্ট হয়েছে। এই নিউজটা আপনাদের কাছেও নিশ্চয়ই ভালো লাগেনি।’
তবে একজন সাংবাদিককে রাতের অন্ধকারে তুলে নিয়ে যেতে হবে কেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাব দেননি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলার বাদী গোলাম কিবরিয়া রাজধানীর কল্যাণপুরের বাসিন্দা। তিনি দেশ রূপান্তরকে জানান, যুবলীগের ঢাকা মহনগর উত্তরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক তিনি। একই ওয়ার্ড শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিরও সদস্য ছিলেন। তিনি প্রথম আলোর রিপোর্টে সংক্ষুব্ধ হয়ে মামলা করেছেন। কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বা কারও চাপের মুখে তিনি মামলা করেননি বলে দাবি করেছেন।
মামলার এজাহারে ঘটনার তারিখ ও সময় উল্লেখ রয়েছে ২৯ মার্চ ২০২৩ ও ১.৩২ ঘটিকা। অর্থাৎ মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টা ৩২ মিনিটে ব্যক্তিগত কাজে বাদী গোলাম কিবরিয়া তেজগাঁও থানাধীন ফার্মগেট এলাকার আল রাজী হাসপাতালের সামনে অবস্থানকালে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে ফেসবুকসহ বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল ব্রাউজ করছিলেন। ওই সময় দেখতে পান, গত ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে একটি ছবিসহ সংবাদ প্রকাশ করে। একই সঙ্গে ওই সংবাদটি পত্রিকাটির ফেসবুক পেজে শেয়ার করে। সংবাদটিতে দেখা যায়, একটি শিশু ফুল হাতে জাতীয় স্মৃতিসৌধের ফটকে দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিবেদকের দাবি, সেই শিশুটির নাম জাকির হোসেন। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, শিশু জাকির হোসেন বলে, ‘পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব।’ সামাজিকমাধ্যমে সংবাদটি ভাইরাল হয়ে যায় এবং সংবাদটি দেশ-বিদেশে অবস্থানরত হাজার হাজার মানুষ তাদের ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ক্রিনশটসহ শেয়ার করে। এই ঘটনায় মহান স্বাধীনতা দিবসে বাংলাদেশের সোনালি গৌরবোজ্জ্বল ভাবমূর্তি নিয়ে বাংলাদেশের জনগণসহ বহির্বিশ্বে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবসের দিনে এ সংবাদ প্রকাশ করায় বিশ্বব্যাপী দেশের ভাবমূর্তি ও স্বাধীনতার অর্জন নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ৭১ টিভি চ্যানেল ও তাদের অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, প্রথম আলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা পরিচয় ও মিথ্যা উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদটি পরিবেশন করেছে। যে শিশুটির কথা প্রথম আলোর রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে তার সম্পর্কে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে। নাম-পরিচয় ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরীফ গতকাল রাতে মোবাইল ফোনে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শামস দুটো কোটেশন দিয়েছিল, একটা এক দিনমজুরের, আরেকটা হচ্ছে এক কিশোরের। সেই রিপোর্টের মধ্যে এখনো সেটা আছে। তারপর আমরা যখন সোশ্যাল মিডিয়াতে দিয়েছি তখন ছবিটা গেছে কিশোরের, কোটেশনটা গেছে দিনমজুরের। আমরা যখন দেখেছি দ্রুত সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সরিয়ে নিয়েছি। নিউজটা কিন্তু এখনো আছে এবং নিউজের মধ্যে আমরা সংশোধনী দিয়েছি মিস কমিউনিকেশন হতে পারে বলে। এখানে শামসের বিন্দুমাত্র দোষ নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনার পর যেটা হতে পারত, আমাদের প্রেস কাউন্সিল আছে, সিস্টেম আছে, ওইদিকে যেহেতু যায়নি তাতে বোঝা যায় আমাদের সাংবাদিকতা চাপের মধ্যে আছে। কারণ এখানে ছোট্ট ঘটনায় গভীর রাতে মামলা হয়েছে। খুব ভোরে তাকে বাড়ি থেকে তুলে এনেছে। শামস তো কোনো চুরিও করেনি, অপরাধও করেনি, এটা দুর্ভাগ্যজনক।’
আইনি পদক্ষেপের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা সব আইনি প্রক্রিয়া অবলম্বন করছি। শামসের বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে একটি মামলা হয়েছে। তাকে আদালতে সোপর্দ করার কথা। আমরা অপেক্ষা করছি। আইনি যেসব পদ্ধতি গ্রহণ করতে হয় আমরা আমাদের সহকর্মীর জন্য করব।’
সম্পাদকদের উদ্বেগ : সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা এবং তাকে আটকের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ। গতকাল বুধবার সংগঠনটির পক্ষে সভাপতি মাহফুজ আনাম ও সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের দেওয়া এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ জানানো হয়। একই সঙ্গে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসের বিরুদ্ধে করা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ।
এ ছাড়া ঢাকার সাভারে কর্মরত প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসকে তার বাসা থেকে সিআইডি পরিচয়ে তুলে নেওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এডিটরস গিল্ড অব বাংলাদেশ। গতকাল এক বিবৃতিতে বিষয়টি প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যমে নিষ্পত্তিরও আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। সম্পাদক পরিষদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮-এর ২৫(২), ২৬(২), ২৯(১), ৩১(২) ও ৩৫(২) ধারায় মামলা ও আটকে সম্পাদক পরিষদ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ ইতোমধ্যেই সাংবাদিকতাসহ বাকস্বাধীনতা ও মুক্তবুদ্ধিচর্চার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। সাংবাদিক, আইনবিদ, মানবাধিকারকর্মী, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিসহ সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের কাছ থেকেও আইনটির পরিবর্তন, পরিমার্জন, বিয়োজন ও সংযোজনের বিষয়ে নানা ধরনের পরামর্শ, সুপারিশ ও উদ্বেগ প্রকাশ অব্যাহত রয়েছে।’
এতে বলা হয়েছে, ‘আইনটি তৈরির সময় থেকেই সম্পাদক পরিষদ এবং সাংবাদিকরা এ আইনের বিষয়ে উদ্বেগ ও আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। আইনমন্ত্রী এই আইনের বিভিন্ন রকম অপব্যবহার এবং সেই পরিপ্রেক্ষিতে আইনটি সংশোধনের ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরও এই আইনের মাধ্যমে সংবাদকর্মী ও মুক্তমত প্রকাশকারী ব্যক্তিরা ক্রমাগতভাবে নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, কোনো সংবাদে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে তিনি প্রেস কাউন্সিলে অভিযোগ ও মামলা করতে পারেন। কিন্তু সেটি না করে সরাসরি ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা হচ্ছে। তাই সাংবাদিকতার স্বাধীন ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দ্রুত সংশোধনসহ সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসসহ সব সাংবাদিকের বিরুদ্ধে করা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি করছে সম্পাদক পরিষদ। একই সঙ্গে এই আইনে কেউ গ্রেপ্তার বা আটক থাকলে অবিলম্বে তার মুক্তি দাবি করছে সংগঠনটি।
এডিটরস গিল্ডের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সাংবাদিকদের কোনোভাবেই গ্রেপ্তার, হয়রানি বা নির্যাতন করা যাবে না। গণমাধ্যমের জন্য মুক্ত ও স্বাধীন কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে এডিটরস গিল্ড বলেছে, প্রথম আলো যদি সাংবাদিকতার নীতিবিরুদ্ধ কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করে, তাহলে সংক্ষুব্ধ পক্ষ বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যমে সাহায্য চাইতে পারে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি একটি জেলার ডিসিকে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের ‘স্যার’ সম্বোধন না করা নিয়ে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই বিতর্ক আজও চলছে। যদিও দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিদের কেউ কেউ বিভিন্ন সময় জনসাধারণের কাছ থেকে স্যার ডাক শুনতে চেয়েছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা ঘটনা-বিতর্কের জন্মও হয়েছে।
তবে এবারের ঘটনাকে কিছুটা ব্যতিক্রম বলতে হয়। খোদ একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে ডিসি প্রশ্ন করেন তাকে কেন ‘স্যার’ ডাকা হলো না। আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা হলো শিক্ষককে সবাই স্যার ডাকবেন; তিনি আরেকজন শিক্ষক ব্যতীত কাউকে স্যার ডাকবেন না।
প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জনসাধারণ স্যার ডাকতে বাধ্য নন। সেখানে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককেই কি না জিজ্ঞেস করা হলো ডিসিকে কেন স্যার ডাকা হলো না!
ঘটনাটা রংপুরের হলেও সুদূর ঢাকা থেকে যতটা বোঝা যায়, এখানে একটা জেন্ডার ইস্যু আছে। এ ঘটনায় দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত সংবাদে ওই নারী ডিসির মন্তব্য হলো, তিনি জানতে চেয়েছেন একজন পুরুষ হলে কি স্যার না ডেকে ভাই ডাকতেন?
এ প্রশ্ন গুরুতর। আমাদের সমাজের জন্য স্বাভাবিক। তারপরও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জাজমেন্টাল না হয়ে স্বাভাবিক কাজ করে যাওয়াটাই প্রাথমিক দায়িত্ব।
একই সঙ্গে আরেকটি প্রশ্নে আলোচনা হচ্ছে এবারের বিতর্ক নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় বা যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের যে শিক্ষার্থীরা ‘স্যার’ ডাকে-তা কতটা যৌক্তিক কিংবা গ্রহণযোগ্য।
বেশ কয়েকজন পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মত দিয়েছেন স্যার ডাকা জরুরি না। তারা স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করেন।
এ বিষয়ে শুক্রবার (২৪ মার্চ) দেশ রূপান্তরে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি কয়েকজন শিক্ষকের ফেসবুক মন্তব্য নিয়ে তৈরি করা। তাদের মন্তব্যের সূত্র ধরে দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আরো কয়েকজন শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হয়।
তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল, আমাদের সাহিত্যে বা সমাজের ইতিহাসে দেখেছি যে যারা শিক্ষাদান করেন বা পাঠদান করেন, তাদের পণ্ডিত, মাস্টার মশাই, ওস্তাদ, হুজুর এসব নামে সম্বোধন করা হতো, সেটা হঠাৎ স্যার হয়ে গেল কেন?
এ ছাড়া বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে ‘স্যার’ শব্দটি কোন কোন ক্ষমতা বা অর্থকে তার নিজের সঙ্গে ধারণ করে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘স্যার’ সম্বোধন কোন তাৎপর্য বহন করে?
এসব বিষয়ে শিক্ষকেরা ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তবে তাদের কথায় মিলও আছে।
যেমন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক স্বাধীন সেন বলেছেন, ‘স্যার সম্বোধন ঐতিহাসিকভাবেই আমরা ঔপনিবেশিক ক্ষমতা সম্পর্কের মধ্য দিয়ে পেয়েছি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে আমার কাছে স্যার সম্বোধন শোনা বা স্যার সম্বোধনে কাউকে ডাকা ততক্ষণ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ না যতক্ষণ পর্যন্ত সেই সম্বোধন প্রভুত্ব, উচ্চমন্যতা ও ক্ষমতার স্তরবিন্যাসকে প্রকাশ না করে। ভাষা, বিশেষ করে সম্বোধন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। শ্রেণি, লিঙ্গ, ক্ষমতার সম্পর্ক সম্বোধনের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত হতে পারে, হয়। স্যার ডাকা কিংবা স্যার ডাক শোনার বাসনা আমাদের দেশে নিতান্তেই নৈমিত্তিক ও স্বাভাবিক হিসেবে পরিগণিত হয়।
কারণ প্রভুত্ব ও দাসত্বের যে অদৃশ্য সম্পর্ক তার মধ্য থেকে ‘স্যার’ সম্বোধন দাপট আর আনুগত্যের প্রচ্ছন্ন সম্পর্ককে জারি রাখে, প্রকাশ করে আর প্রতিষ্ঠিত করে। স্যার ডাক শুনতে চাওয়ার বাসনাকে তাই ক্ষমতা সম্পর্কের ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা যায় না।
আবার ভাষা ব্যবস্থায় জুতসই শব্দ ব্যবহারের রীতি ও অভ্যাস না থাকায় আধিপত্যবাদী ভাষা দিয়ে আধিপত্য প্রতিরোধের চেষ্টা করি। পদমর্যাদায় ওপরে থাকা নারীদের পুরুষেরা আপা বা ম্যাডাম ডেকে তথাকথিত নৈকট্যের নামে অনেকে হেনস্তা করতে পারে, নির্দেশনা অমান্য করতে পারে, সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে ফেলতে পারে। তখন লিঙ্গ নিরপেক্ষভাবে স্যার সম্বোধনটি তাৎক্ষণিকভাবে আপৎকালীন মোকাবিলার জন্য ব্যবহার হয় অনেক ক্ষেত্রে।
কিন্তু পরিশেষে, স্যার সম্বোধনটি আধিপত্য ও অধীনস্থতার সম্পর্ক থেকে মুক্ত থাকতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপনিবেশ পূর্বকালেও আধিপত্য বা উচ্চ মর্যাদা বা দরবারি কেতা হিসেবে নানা ধরনের সম্ভাষণ, রীতি ও এমনকি শরীরী অভিব্যক্তি প্রচলিত ছিল। কিন্তু সেই প্রচলন সর্বজনীন যেমন ছিল না, তেমনই সুনির্দিষ্টভাবে মেনে চলাও হতো না। রাজা বা সম্রাট বা অভিজাতবর্গকে লিখিত দলিলে বা দরবারি রীতিনীতির লিখিত রূপে যেভাবে সম্ভাষণ করা হতো, বাস্তব জনপরিসরে সেই সম্ভাষণ অনেক পরিবর্তনশীল ও নমনীয় ছিল।
তার বক্তব্য, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইডিয়া সেখানে বৈষম্য ও পদমর্যাদার প্রসঙ্গটি গৌণ হওয়ার কথা ছিল। অন্ততপক্ষে স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। একটি সাংগঠনিক কাঠামো বা ব্যবস্থাতে উচ্চ ও নিচ পদ থাকে। সেই পদাধিকারীগণ নানাভাবে নানা কাজে নিয়োজিত থাকেন। কিন্তু এখনকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগে আমলাতান্ত্রিক করণ কেবল স্বাভাবিক বিবেচিত হয় না, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ তেমন স্তরবিন্যাস ও পদানুক্রম প্রত্যাশা করেন।
তিনি মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর সবচেয়ে আরাধ্য চাকরি হলো সিভিল সার্ভিস। তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কেন সরকারি চাকরিজীবী হতে চান তার পেছনে নিশ্চয়ই কারণ রয়েছে। ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা যে কেরানি তৈরির প্রকল্প নিয়েছিল বা যে প্রজা উৎপাদনের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করেছিল, যে প্রজাগণ মনেপ্রাণে ব্রিটিশ হবে, সেই শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো ও বৈশিষ্ট্যাবলি আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুসরণ করছি। তাহলে স্যার সম্বোধনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা স্তরে প্রভুত্ব বা উচ্চ মর্যাদা প্রকাশ করার জন্য ব্যবহৃত হওয়াটা বিস্ময়কর কিছু না।
স্বাধীন সেন দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত পরিবর্তন না করে, অনুগত অনুসারী শিক্ষক তৈরির কারখানা হিসেবে ‘স্যার’ বা ‘ম্যাডাম’ বা ‘ভাই’ - যেকোনো সম্বোধনই দাপট, দম্ভ, প্রভুত্বর অভিব্যক্তি হয়ে উঠতে পারে। আমি মনে করি, মার্কিন দেশীয় কিংবা ইউরোপীয় তরিকায় অধ্যাপক অমুক বা তমুক সম্বোধন, বা কেবল নাম ধরে শিক্ষককে সম্বোধন করাটা তখনই ক্ষমতা সম্পর্ককে প্রতিনিয়ত নমনীয় রাখতে পারে যখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিতামূলক এবং অব্যাহতভাবে আত্মসমালোচনামূলক ব্যবস্থা জারি থাকে।
তার কথায়, পরীক্ষা পদ্ধতি, শ্রেণি কক্ষে পাঠদানের পদ্ধতি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে যোগাযোগের ধরন ও প্রকৃতি যদি প্রতিনিয়ত আত্মসমালোচনা করে স্বাধীনভাবে চিন্তার উপযুক্ত করার পরিসর নির্মাণের উদ্দেশ্যে পরিচালিত না হয় তাহলে যেকোনো সম্বোধনই নিপীড়নমূলক ও প্রভুত্বকামী হয়ে উঠতে পারে। মার্কিন দুনিয়াতেও এমন বৈষম্য ও অসমতার উদাহরণ কম নেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেমন পরিবারের ধারণাটি বেশ জনপ্রিয়। শিক্ষকগণ নিজেদের শিক্ষার্থীদের বাবা, মা বা অভিবাবক হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। একটি সংহতি মূলত পরিচয়বাদী বয়ানে আমরা অমুক বিভাগ পরিবার, তমুক হল পরিবার, অমুক ব্যাচের পরিবার ইত্যাদি অভিধা অহরহ শুনতে পাই।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন শিক্ষার্থীরা রিকশাচালক, দোকানদার, বা অন্যান্য পেশাজীবীদের মামা বা খালা সম্বোধনে ডাকেন। এসব ডাকের মধ্যে অবশ্যই একটা পর্যায় পর্যন্ত মানবিক একটা করুণা ও ভালোবাসার অনুভূতি থাকে। কিন্তু যেকোনো সময় এই জ্ঞাতি সম্পর্কসূচক পদাবলি নিপীড়ন, আনুগত্য নিশ্চিতকরণ, অন্যায় আড়ালকরণ বা মর্যাদা জোরজবরদস্তিমূলকভাবে চাপিয়ে দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। মনে রাখা জরুরি যে, অনেক সময় প্রভু ও দাসের সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে, রাজা ও প্রজার সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে। দাস বা প্রজা সামান্য দয়া, বা মানবিকতায় তার আনুগত্য নিশ্চিত করতে পারেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বা যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষককে’ স্যার সম্বোধন বাধ্যবাধকতামূলক হওয়ার কোনো কারণ নাই। একটা সময় গুরুমুখী শিক্ষাও কিন্তু যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণমূলক আর অধিপতিশীল ছিল, তা যতই আমরা ঐতিহ্যের বড়াই করি না কেন। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে, নিঃসংকোচে আর সর্বক্ষেত্রে শিক্ষকদের প্রশ্ন করতে না-পারেন সেই বিদ্যায়তন তো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত না। শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থী বাহাজ করবেন, মতান্তর হবে। নিরন্তর একে অপরের চিন্তা করার সামর্থ্যকে সমতার ভিত্তিতে প্রসারিত করতে থাকবেন। পরীক্ষার নম্বরের ভয় থাকবে না। কারণ পরীক্ষার পদ্ধতি বা মূল্যায়নের পদ্ধতির সংস্কার করা হবে। শিক্ষককে শিক্ষার্থী চোখে চোখ রেখে বলতে পারবেন যে, স্যার বা অধ্যাপক অমুক, আপনি ভুল বলছেন। আপনার মতামতের বা তথ্যের সঙ্গে আমি একমত না। এই অনুশীলন যেকোনো সম্বোধন বজায় রেখেই চলতে পারে। সম্বোধন ছাড়া কেবল নাম ধরে ডেকেও চলতে পারে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমার অনুভব এমনই। আমি এমন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ও পড়ানোর স্বপ্ন দেখি।
তিনি বলেন, স্যার সম্বোধনটির ঐতিহাসিক ও জন্মগত আধিপত্য ও প্রভুত্বের সঙ্গে সম্পর্ক বিবেচনা করে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যার সম্বোধনটি বিলুপ্ত করা হোক।
স্বাধীন সেন বলেন, স্যারের সঙ্গে একই পাটাতনে দাঁড়িয়ে তর্ক করা, দ্বিমত করা আর পরীক্ষার খাতায় স্যারের মতামতের সমালোচনা লিখে ভালো নম্বর পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চার ঐতিহ্যের মধ্যেই তৈরি হয়। অবশ্য, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আদৌ জ্ঞানচর্চা হয় কিনা সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
এ বিষয়ে দেশ রূপান্তর যোগাযোগ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষক বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে আসেন তার সঙ্গে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক। তিনি শিক্ষকদের স্যার ডাকার প্রসঙ্গকে ভিন্ন খাতে ঘটনাটিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা বলে মনে করেন।
তার বক্তব্য, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য থেকে ক্লাসরুমে শিক্ষকদের স্যার বলে ডাকে। আমার জানামতে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি স্কুল পর্যায়ে স্যার ডাকতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হয় না। এখন যে বিষয়ে কোনো বাধ্য করার বিষয় নেই, বিতর্ক নেই সেই বিষয়ে কথা বলে আমরা মূল বিষয়টা হালকা করে ফেলছি কি না সেটাও ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, আমাকে যদি ক্লাসে কোনো শিক্ষার্থীর স্যার ডাকতে ইচ্ছে হয় ডাকবে, ডাকতে ইচ্ছে না হলে ডাকবে না। শিক্ষার্থীরা কী বলে শিক্ষকদের ডাকবে সেটা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। তারা যা বলে সম্বোধন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে আমাকে তাই বলে ডাকবে।
ওমর ফারুকের বক্তব্য, শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে যদি কোন দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, তাহলে সমাজের মানুষ, রাষ্ট্র, আইন ঠিক করবে কি করা উচিৎ। কিন্তু এ বিষয়ে তো কোন দ্বন্দ্ব নেই। যেটা নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব নেই সেটা নিয়ে আমরা কেন দ্বন্দ্ব তৈরি করছি। আর এটা করতে গিয়ে আমরা কি মূল বিষয় থেকে সরে যাচ্ছি না।
ওমর ফারুক এখানে মূল বিষয় বলতে বুঝিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্যার ডাকতে সেবাগ্রহিতাদের বাধ্য করেন তা। তবে আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে বিতর্ক অনুসন্ধান করা।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও অর্থনীতির শিক্ষক আনু মুহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে জানান, শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসরে চলে গেলেও তাকে স্যার ডাকেন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও অনেকে তাকে স্যার ডাকেন।
তিনি বলেন, স্যার ডাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাইতে বাইরের মানুষদের সংখ্যাই বেশি হবে। তবে ভাই ডাকও আমি অনেক শুনি। এগুলোতে আমার কোনো সমস্যা নাই। ‘আনু স্যার’ যেভাবে ডাকে অনেকে সেটা নাম ধরে ডাকাই মনে হয়। তবে আমি আমার শিক্ষকদের স্যারই বলি, শুধু শিক্ষকদেরই, স্যার বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি। এই স্যার বস নয়, শিক্ষক।
তার মন্তব্য, সবাই নাম ধরে ডাকলে ভালোই লাগবে। অনেক বাচ্চা ছেলেমেয়েরা এখনও ডাকে।
নৃবিজ্ঞানী ও লেখক সায়েমা খাতুন অবশ্য ইতিহাসের গোড়া ধরেই টান দিয়েছেন। তিনি স্যার অথবা পণ্ডিত যা-ই ডাকা হোক না কেন তাকে পুরুষতান্ত্রিক হিসেবে বোঝাতে চেয়েছেন।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, যেহেতু ভাষা বাস্তবতা তৈরি করে, আমাদের কলোনিয়াল লিগেসির বাস্তবতায় স্যার বা ম্যাডাম শ্রেণি ক্ষমতা ও পদমর্যাদার প্রকাশক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ক্ষমতা সম্পর্কের সঙ্গেই এটা চলবে বা বদলাবে। নারী শিক্ষক পণ্ডিত মশাই, ওস্তাদ, হুজুর, মাস্টার বলে সম্বোধিত হয় নাই। কেননা নারীকে শিক্ষক বা পণ্ডিত বলে গ্রহণে সমাজ প্রস্তুত ছিল না। সেই প্রস্তুতির সঙ্গে ভাষাও প্রস্তুত করতে হবে আমাদের।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক এবং বুদ্ধিজীবী আ-আল মামুনের কাছেও এ প্রতিবেদক বিষয়টি জানতে চেয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এটা পরিষ্কার শিক্ষকদের ওস্তাদজি, গুরুজি, গুরু এগুলো বলার একটা অভ্যাস ছিল। খুব পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, উপনিবেশ শাসনের আগে উপমহাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা এমন ছিল যে এখানে যারা শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিত ছিলেন তারা এর বিনিময়ে কোনো টাকা নিতেন না। সমাজ তাকে যেভাবে আশ্রয় দিত, তিনি বা তারা সেভাবে থাকতেন। লেনদেন বা টাকা দিয়ে পড়ানোর বিষয়টা তখন একদম ছিল না। ফলে সে সমাজ ব্যবস্থায় গুরুজি, ওস্তাদজিদের একটা আলাদা সম্মান ছিল। উপনিবেশ যুগে এসে স্যার শব্দটা আসলো বটে, কিন্ত স্যার শব্দটা এমনভাবে আসলো যে এটা ক্ষমতা কাঠামোর একটা অংশে পরিণত হলো।
তিনি বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে দেখেছি, সেখানে জুনিয়ররা অনেকে হয়তো স্যার বলে কিন্ত সেখানে সেখানে শিক্ষকদের দাদা বা দিদি বলাটা বহুল প্রচলিত। কলকাতায় শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক যতটা সহজ বাংলাদেশে কিন্ত সম্পর্ক টা ততটা সহজ না।
শিক্ষকদের স্যার বলা না বলায় কিছু যায় আসে না। তবে না বলাই ভালো বলে মনে করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যদি ওই রকম একতা সম্পর্কের ভেতর যেতে পারে, যেখানে উপনিবেশ আমলের স্যার শব্দটা থেকে বেরিয়ে আসা যায়, তাহলে তো খুব ভালো হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ক্ষমতার পরিমাপ হিসেবে যেখানে স্যার ব্যবহার হয়, শিক্ষকদের সেখান থেকে বের হয়ে আসা উচিত। শিক্ষকরা যদি বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারেন তাহলে খুব ভালো হয়।
আ-আল মামুন বলেন, আপনি দেখবেন শিক্ষকদের সঙ্গে এখন শিক্ষার্থীদের সহজ সম্পর্ক নেই। এখন অনেকটা প্রভু বা আনুগত্যের একটা সম্পর্কে এসে এটা দাঁড়িয়েছে। যেটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি যেমন অনেক সহজে মিশি স্টুডেন্টদের সাথে। ওরা কি বলল না বলল সেটা নিয়ে আমি চিন্তা করি না। বরং তাদের সাথে বন্ধুর মতো মিশি। এর ফলে আমাদের সম্পর্কটা অনেক সহজ থাকে।
কেবল স্যার বাদ দিয়ে অন্য কোন কিছু দিয়ে সম্বোধন করলেই কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে আ-আল মামুন বলেন, মূল বিষয়টা বুঝতে হবে। বিষয়টা এমন নয় যে স্যার বললেই কেবল দূরত্ব থাকে আর দাদা ভাই বা মিস্টার বললেই সব সংকট দূর হয়ে যাবে। কেবল স্যার না বললেই যে ছাত্র-শিক্ষকের প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক সেটা শেষ হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়। এখন ইস্যুটি ভাইরাল হওয়ার ফলে শিক্ষকরা উৎসাহের সাথে ফেসবুকে 'শিক্ষার্থীদের স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করছি' বললেই ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করা হয়ে যাবে না। এই পপুলারিজম থেকেও বের হয়ে আসতে হবে। যারা ফেসবুকে লিখছেন তাদের কেউ কিন্তু এটা বলছেন না যে তারা ক্ষমতাকাঠামো পুরোপুরি অস্বীকার করছেন। তারা কিন্তু ক্ষমতার চর্চা ঠিকই করেন।
তিনি বলেন, ইউরোপে বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা পড়তে আসে, যারা পরবর্তীতে শিক্ষা নিয়ে কাজ করবে, বা অন্য কোন বিশেষ শাখা নিয়ে গবেষণা করতে চান কেবল তারা ইউনিভার্সিটিতে পড়তে আসেন। আর যারা এমনিতে পড়াশোনা করবে তারা বিভিন্ন ধরনের প্রফেশনাল ট্রেনিং নেন, কোর্স করেন তারা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন না বা যেতে হচ্ছে না। এর ঠিক বিপরীত সিস্টেম বাংলাদেশে। এখানে যেটা ঘটে তা পুরো গোলমেলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় , আমাদের দেশের সাংবাদিকতা বিভাগের বিষয়ে সবার ধারণা আমাদের প্রধান কাজ মনে হয় সাংবাদিক তৈরি করা। এমনকি সরকার ও তাই মনে করছে। কিন্তু আমাদের তো মূল কাজ হওয়া উচিত মিডিয়াকে স্টাডি করা, তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, মিডিয়া নিয়ে গবেষণা করা। সরকার মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেশকে কর্মী সরবরাহ করা হবে।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব শিক্ষক ক্ষমতার চর্চা, বিশেষ করে শিক্ষক রাজনীতি বা অন্য কোন ক্ষমতার চর্চা করেন, তারা প্রত্যাশা করেন যে জুনিয়র শিক্ষকেরা তাদের স্যার ডাকবে। শিক্ষকদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। অনেক জুনিয়র শিক্ষক হয়তো জানেন ই না যে একজন শিক্ষক হিসেবে তার কি কি অধিকার আছে। তিনি অন্য যে কোন শিক্ষকের সমান এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থায় একজন শিক্ষক বুঝতেও দেওয়া হয় না। জুনিয়র যদি সম্মান না করে সিনিয়র শিক্ষকেরা তাদের বিভিন্ন সমস্যায় ফেলে দেন। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেওয়া, দুর্নাম রটনা করা ও মিটিংয়ে হয়রানি করা হয়। আমাদের দেশে আলোকিত শিক্ষক কম। সবাই তথাকথিত শিক্ষক অনেকটা সরকারি আমলাদের মতো। আমলাদের যেমন ক্ষমতার চর্চা ও প্রয়োগ করার মানসিকতা তেমনি শিক্ষকরাও একই চিন্তা বহন করছেন। ফলে এই স্যার ডাক শোনার বাসনা তাদের মনে কাজ করে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অধীনতার দাবি করে। আমাকে স্যার বা ভাই বলুক এতে শিক্ষার্থীদের সাথে বা অন্য কোন শিক্ষকের সাথে সম্পর্কের কোন তফাত হয় না।
তিনি বলেন, আমি ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করে তাদের সাথে বন্ধুর মত মিশি। আমার বাসায় নিয়ে আসি এবং বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে চাই। বর্তমান এই ভাইরাল ইস্যুর জন্য অনেকেই হয়তো স্যারের পরিবর্তে ভাই ডাকতে বলবে, আবার ক্ষমতার চর্চা করবে। যা বিপরীতমুখী এবং এর ফলে ক্ষমতা কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। ফলে এখন এটা ভাবতে হবে, ক্ষমতার চর্চার মানসিকতা থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায়।
তিনি কথা শেষ করেন এই বলে, এখন আমাদের সমাজে তথাকথিত ভিআইপির সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এটা এমন মহামারি আকার ধারণ করছে যে জেলা-উপজেলা পর্যায়েও এই তথাকথিত ভিআইপিদের ছড়াছড়ি। তাদেরকে প্রোটোকল দেওয়া হয়। এই যে একটা মোহ এখান থেকে কেউ বের হতে চান না। অথচ একটা দেশে ভিআইপি বলে কেউ থাকতে পারে না। আমাদের রাষ্ট্র কাঠামো ও আমলাতন্ত্র এ প্রবণতাকে টিকিয়ে রাখছে। গত ১০/১২ বছরে আমাদের সমাজে স্যার শুনতে চাওয়ার মানসিকতার লোকের সংখ্যা কিন্তু কয়েকগুণ বেড়েছে। এই প্রাদুর্ভাব আগে এত ছিল না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, স্যার বলার মধ্যে দিয়ে আমরা নিজেদের এক্সক্লুসিভ কোনো প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। সেই প্রবণতা থেকে স্যার ডাক শুনে একটা দাপট বোঝাতে চাই। এটা পুরোপুরি ঔপনিবেশিক চর্চা। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসকেরা চলে গেলেও, আমাদের মাথার মধ্যে সেই শাসনের বৈশিষ্ট্যগুলো পুরো মাত্রায় বিদ্যমান।
তার মতে, এটাকে আমরা আধিপত্যের প্রতীকে পরিণত করেছি। ব্রিটিশরা নিজেরা স্যার না বললেও তারা যেখানে শাসন করেছে, আধিপত্য দেখিয়েছে, সেখানে তারা স্যার বলাটা অভ্যাস হিসেবে তৈরি করে দিয়ে গেছে। আমি ব্রিটেনে পড়াশোনাকালীন শিক্ষার্থীদের কখনো কোনো শিক্ষককে স্যার বলতে শুনিনি বা দেখিনি। তারা মি. প্রফেসর বা নাম ধরেই ডাকতো।
তানজিম উদ্দিন বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমলাতন্ত্র। আমাদের আমলাতন্ত্র কিন্তু পুরোপুরি ঔপনিবেশিক কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত। শাসক এবং শোষিতের যে কাঠামো এখনো তাই রয়ে গেছে। স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষের যে মানসিকতা থাকা উচিত আমাদের কিন্তু তা গড়ে ওঠেনি। আমাদের মধ্যে ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানি আমলের আমলাতন্ত্র একইভাবে, একই পদ্ধতিতে এখনো রয়ে গেছে। কেবল আমলাতন্ত্র নয় সামাজিক অবস্থানেও স্যার বলা দিয়ে একটা আধিপত্য দেখানো হয়। স্যার দিয়ে আমি যে অধিপতি সেটা বোঝাতে চাই।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এটা থেকে কোনোভাবে মুক্ত নয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় তো সমাজ ব্যবস্থার অংশ। আর এই সংকটটা বর্তমানে পুরো সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনো মনে করি না স্যার বলাটা একান্ত জরুরি। বরং আমার শিক্ষার্থীরা যদি আমাকে প্রফেসর তানজিম বলে ডাকেন এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। বরং আমি উৎসাহ দেব।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন দেশ রূপান্তরের সহসম্পাদক আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।)
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
চতুর্থ পর্বে মাস্টারদা সূর্য সেনকে নিয়ে লিখেছেন ইসমত শিল্পী
সূর্য সেনের স্বাধীনতার স্বপ্ন
স্বাধীনতার মাস মার্চেই বিপ্লবী সূর্য সেনের জন্ম। ১৮৯৪ সালের ২২ মার্চ তিনি চট্টগ্রামের রাউজান থানার নোয়াপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
মাস্টারদা সূর্য সেন ছিলেন বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনের একজন অন্যতম নেতা এবং ‘ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি’র প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। ১৯৩০ সালে তিনি চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন কওে সেখানে বিপ্লবী সরকার গঠন করেন। ১৯৩৩ সালে তাকে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় এবং বিচারে তাঁর ফাঁসি হয়।
বালক বয়সেই সূর্য সেন বুঝতে পেরেছিলেন যে, সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপার থেকে ছুটে আসা ইংরেজদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতেই হবে। জাস্টিস কিংসফোর্ডকে হত্যাচেষ্টার জন্য ক্ষুদিরামের ফাঁসি সূর্য সেনের হৃদয় ও মনকে দারুণভাবে আলোড়িত করে। কলেজে পড়ার সময়ই ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য তিনি বিপ্লবী সংগ্রামে যোগ দেন। বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজে পড়ার সময় শিক্ষক সতীশচন্দ্র চক্রবর্তী তাকে বিপ্লবী ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ করেন। ইংরেজদের শোষণ-নির্যাতন থেকে মুক্তির পথ খুঁজে বের করার জন্য সূর্য সেনের হৃদয়-মন তৈরি হয়। তিনি সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এ দেশ থেকে ইংরেজ তাড়ানোর অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষা নেন।
সে সময় চট্টগ্রামে একটি গোপন বিপ্লবী দল ছিল। ১৯১৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে এই বিপ্লবী দলের কয়েকজন ছাড়া প্রায় সবাইকে গ্রেপ্তার করে সরকার জেল দেয়। বিপ্লবের জন্য স্বচ্ছ চিন্তা, জ্ঞান, বুদ্ধি ও মেধা অন্যদের তুলনায় বেশি থাকায় তিনি কিছু দিনের মধ্যেই দলের একজন নেতা হয়ে ওঠেন। চট্টগ্রামের বিভিন্ন অস্ত্রাগার লুণ্ঠন তার বুদ্ধি-পরামর্শ-নেতৃত্বেই সংঘটিত হয়েছিল।
সূর্য সেনের বিপ্লবী কর্মকাণ্ড, দুঃসাহসী অভিযান, সঠিক নেতৃত্ব¡ এই উপমহাদেশের মানুষকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিল। দেশের তরুণ ও যুবশক্তি তার আত্মাহুতিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে মরণপণ স্বাধীনতা সংগ্রামে দলে দলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সূর্য সেনের বাহিনী কয়েক দিনের জন্য ব্রিটিশ শাসনকে চট্টগ্রাম এলাকা থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল। সূর্য সেনের অন্যতম সাথী বিপ্লবী অনন্ত সিংহের ভাষায়, ‘কে জানত যে আত্মজিজ্ঞাসায় মগ্ন সেই নিরীহ শিক্ষকের স্থির প্রশান্ত চোখ দুটি একদিন জ্বলে উঠে মাতৃভূমির দ্বিশতাব্দীব্যাপী অত্যাচারের প্রতিশোধ নিতে উদ্যত হবে? ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহ দমনের জন্য বর্বর অমানুষিক অত্যাচারের প্রতিশোধ, জালিয়ানওয়ালাবাগের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ! কে জানত সেই শীর্ণ বাহু ও ততোধিক শীর্ণ পদযুগলের অধিকারী একদিন সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ রাজশক্তির বৃহত্তম আয়োজনকে ব্যর্থ করে তার সব ক্ষমতাকে উপহাস করে বছরের পর বছর চট্টগ্রামের গ্রামে গ্রামে বিদ্রোহের আগুন জ্বালিয়ে তুলবে?’
সূর্য সেন পরে ছাত্রদের মাঝে বিপ্লবের মন্ত্র ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য শিক্ষকতার পেশা গ্রহণ করেন। চরিত্রের মাধুর্য দিয়ে বুঝিয়ে-সুজিয়ে দলে দলে যুবকদের তার বিপ্লবী দলে টেনে আনেন। তিনি দেশপ্রেমের শিখাকে প্রত্যেকের অন্তরে জ্বেলে দেন। ছাত্রদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ মেলামেশার কারণে নিজের স্কুল ও শহরের বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রদের মধ্যে খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ছাত্ররা একান্ত আপনজনের মতো তাকে ‘মাস্টারদা’ বলে ডাকতে শুরু করে।
১৯২৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে মাস্টারদার স্ত্রী পুষ্পকুন্তলা হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে মারা যান। এ সময় মাস্টারদা জেলে ছিলেন। পরে তিনি জেল থেকে ছাড়া পান।
১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে মাত্র কয়েকজন যুবক রাত সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম পাহাড়ের ওপর অবস্থিত অস্ত্রাগারটি আকস্মিকভাবে আক্রমণ করে দখল করে নেন এবং সব অস্ত্র লুণ্ঠন ও ধ্বংস করে ফেলেন। সূর্য সেন সেই রাতে ঘোষণা করেন, চট্টগ্রাম এই মুহূর্তে দুইশ বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিন্ন করেছে। এই মুহূর্তে চট্টগ্রাম স্বাধীন।
মাস্টারদার নেতৃত্বে চট্টগ্রাম শহর ৪৮ ঘণ্টার জন্য ইংরেজ শাসনমুক্ত ও স্বাধীন ছিল। জালালাবাদ পাহাড়ে বিপ্লবীদের মুখোমুখি সংঘর্ষ শেষ হওয়ার পরও তারা টানা তিন বছর গেরিলা যুদ্ধ চালিয়েছিলেন। ব্রিটিশ সৈন্যদের দৃষ্টি থেকে মাস্টারদাকে আড়ালে রাখার উদ্দেশ্যেই বিপ্লবীরা এই যুদ্ধ চালিয়েছিলেন।
চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তৎকালীন ব্রিটিশ শাসনাধীন পরাধীন ভারতের স্বাধীনতাকামী বিপ্লবীরা। সূর্য সেন ছাড়াও এই দলে ছিলেন গণেশ ঘোষ, লোকনাথ বল, নির্মল সেন, অনন্ত সিং, অপূর্ব সেন, অম্বিকা চক্রবর্তী, নরেশ রায়, ত্রিপুরা সেনগুপ্ত, বিধুভূষণ ভট্টাচার্য, শশাঙ্ক শেখর দত্ত, অর্ধেন্দু দস্তিদার, হরিগোপাল বল, প্রভাসচন্দ্র বল, তারকেশ্বর দস্তিদার, মতিলাল কানুনগো, জীবন ঘোষাল, আনন্দ গুপ্ত, নির্মল লালা, জিতেন দাসগুপ্ত, মধুসূদন দত্ত, পুলিনচন্দ্র ঘোষ, সুবোধ দে, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার এবং কল্পনা দত্ত। ছিলেন সুবোধ রায় নামের এক ১৪ বছরের বালক।
বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তারের হাত থেকে অলৌকিকভাবে রক্ষা পেয়েছেন মাস্টারদা। চট্টগ্রামের কাছেই গইরালা গ্রামে এক বাড়িতে আত্মগোপন করেছিলেন মাস্টারদা। এক জ্ঞাতির বিশ্বাসঘাতকতায় ব্রিটিশ সৈন্যরা তার সন্ধান পেয়ে যায়। মাস্টারদা গ্রেপ্তার হন ১৯৩৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি। ১৯৩৪ সালে ফাঁসির আগেই স্বাধীনতার স্বপ্নের কথা বলেছিলেন সূর্য সেন। ১৯৩৪ সালে ১২ জানুয়ারি ভোর ১২.৩০ মিনিটে চট্টগ্রাম কারাগারে তার ফাঁসি কার্যকর হয়। ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার আগে সঙ্গীদের উদ্দেশে তিনি লিখে যান, ‘আমি তোমাদের জন্য রেখে গেলাম মাত্র একটি জিনিস, তা হলো আমার একটি সোনালি স্বপ্ন। স্বাধীনতার স্বপ্ন। প্রিয় কমরেডস, এগিয়ে চলো, সাফল্য আমাদের সুনিশ্চিত।’
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’