
সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচন ঘিরে আইনজীবীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপিকে দায়ী করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বিএনপিকে লক্ষ করে তিনি বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টে আপনাদের দলের এক নেতা ভোট চুরি করতে গিয়েছিল। এটা ধরা পড়ে গেছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্বাচনে জিততে ব্যালট পেপার ছিনতাই করতে গিয়েছে। আজকে (গতকাল বুধবার) সকালে নির্বাচন প- করতে হামলা করেছে। ৪০০ জন সন্ত্রাসী পাঠিয়ে জঙ্গি কায়দায় তারা হামলা পরিচালনা করেছে। ব্যালট পেপার ছিনতাই করতে ব্যর্থ হয়ে দফায় দফায় হামলা করেছে।’
গতকাল বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে দলের যৌথসভায় ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে দলের ঢাকা মহানগর ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের এই যৌথসভা হয়।
এ সময় বিএনপিকে ‘ভোট চোরের রাজা’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘বিএনপি উল্টো আওয়ামী লীগের ওপর ভোট চুরির দায় চাপাতে চায়। তারা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ১ কোটি ২৩ হাজার ভুয়া ভোটার করেছিল।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘নির্বাচন সামনে রেখে আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। নির্বাচন ঠেকাতে একটা চক্রান্ত শুরু হয়েছে। তাদের (বিএনপি) কার্যক্রমে তারা বোঝাচ্ছে তারা নির্বাচনেও আসবে না, নির্বাচন করতেও দেবে না। তারা ২০১৩-১৪ সালের মতো আবারও সন্ত্রাস সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করছে। অশুভ আলামতও আমরা পাচ্ছি।’
বিএনপিকে ইঙ্গিত করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আজকে বিজ্ঞাপন দিয়ে পুরনো সেই ১/১১ বিরাজনীতিকরণের যে অশুভ তৎপরতা তার চক্রান্ত আবার শুরু হয়েছে। শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে হটানোর জন্য আবারও বিদেশ থেকে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সামনের দিনগুলো অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং, অত্যন্ত কঠিন।’
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, কামরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম প্রমুখ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যে আস্থা নেই এর ৫৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ ব্যবহারকারীর। এ ছাড়া সংস্থাটির মোট তথ্য ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৩৫ শতাংশ সন্তুষ্ট থাকলেও, অসন্তুষ্ট হয়ে আরও তথ্য চান ৬৫ শতাংশ ব্যবহারকারী। গতকাল বুধবার বিবিএসের প্রকাশিত ‘ইউজার স্যাটিসফেকশন সার্ভে-২০২২’ শীর্ষক জরিপের প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। এই প্রথম এমন প্রতিবেদন প্রকাশ করল বিবিএস।
পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মাধ্যমে প্রস্তুতকৃত ও প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যান সম্পর্কে ব্যবহারকারীদের সন্তুষ্টি ও চাহিদার মাত্রা নিরূপণের জন্য বিবিএস প্রথমবারের মতো এই জরিপ পরিচালনা করে।
গতকাল আগারগাঁও বিবিএস মিলনায়তনে জরিপ প্রকাশ করা হয়। পরিসংখ্যান ভবনের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত এ প্রকাশনা অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. মতিয়ার রহমান।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, দ্রব্যমূল্যের ডেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিবিএসের দ্রব্যমূল্যের তথ্যে মানুষের মাঝে অনেক অসন্তোষ রয়েছে। এটি স্বাভাবিক। কারণ তারা অল্প কয়েকটি পণ্যের দাম মাথায় নিয়ে তথ্য বিচার করেন। তারা দেখেন হয়তো মুরগি, ডিমের দাম বেড়ে গেছে, কিন্তু একই সময় যেসব পণ্যের দাম কমেছে তারা তা মাথায় রাখেন না। তিনি বলেন, বিবিএসের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য নির্ভরযোগ্য। তারা সব সময় চেষ্টা করে যাতে ট্রেন্ড ধরা যায়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ‘এনএসডিএস ইমপ্লিমেন্টেশন সাপোর্ট প্রজেক্ট’-এর প্রকল্প পরিচালক মো. দিলদার হোসেন স্বাগত বক্তব্য ও জরিপের ফলাফল নিয়ে সংক্ষিপ্ত পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন।
প্রকল্প পরিচালক দিলদার হোসেন বলেন, এ ধরনের জরিপ বিবিএস প্রথমবারের মতো পরিচালনা করেছে। এ জরিপটির নমুনার আকার ছিল ৬০৯ জন যার মধ্যে ৫৮০ জন উত্তরদাতার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। জরিপে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী উত্তরদাতাদের ৭০ দশমিক ৫২ শতাংশ জনসংখ্যা, জনমিতি এবং জন্ম, মৃত্যু, বিবাহ, ইত্যাদি সংক্রান্ত পরিসংখ্যান ব্যবহার করেন। উত্তরদাতাদের ৬৫ শতাংশ পরিসংখ্যানের বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক আরও বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত প্রকাশের বিষয়ে মত প্রকাশ করেন। অর্থাৎ তারা সন্তুষ্ট নন এবং ৪২ দশমিক ১৪ শতাংশ প্রায়শই প্রত্যাশিত তথ্য-উপাত্ত খুঁজে পেয়েছেন বলে জরিপে উঠে এসেছে।
প্রকল্প পরিচালক আরও জানান, সামগ্রিকভাবে বিবিএস প্রস্তুতকৃত তথ্য সরকারি পরিসংখ্যান শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। তবে সরকারি পরিসংখ্যান ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীগণের ৪৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা অনুসরণ করেননি। বৈদেশিক বাণিজ্য পরিসংখ্যান ব্যবহারকারীদের ৭০ দশমিক ০৯ শতাংশ বিবিএসের মাধ্যমে প্রস্তুতকৃত সরকারি পরিসংখ্যানকে উপযোগী এবং ১৭ দশমিক ০৯ শতাংশ খুবই উপযোগী হিসেবে মত প্রকাশ করেন।
পর্যালোচনা করে দেখা যায়, জনসংখ্যা, জনমিতি এবং জন্ম, মৃত্যু, বিবাহ সম্পর্কিত পরিসংখ্যান, জাতীয় হিসাব পরিসংখ্যান, ও দারিদ্র্য পরিসংখ্যানের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ অসন্তুষ্ট ৫৯% ব্যবহারকারী সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। পাশাপাশি ৭৩ দশমিক ১৩ শতাংশ পরিসংখ্যান ব্যবহারকারী জনসংখ্যা, জনমিতি এবং জন্ম, মৃত্যু, বিবাহ সম্পর্কিত পরিসংখ্যানের ‘যথার্থতা’র ব্যাপারে সন্তুষ্ট। ‘সময়োপযোগিতা’র বিষয়ে তাদের ৬৯ দশমিক ৬১ শতাংশ জাতীয় হিসাব পরিসংখ্যানকে উপযুক্ত হিসেবে বিবেচনা করেন এবং ৭৯ দশমিক ৯০ শতাংশ ব্যবহারকারী জাতীয় হিসাব পরিসংখ্যানের ‘প্রাসঙ্গিকতা’-এর ব্যাপারে সন্তুষ্টি জানান।
জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ে বিবিএসের তথ্যে অসন্তোষ রয়েছে ৫৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ ব্যবহারকারীর। এরমধ্যে ৪৬ শতাংশ মনে করেন এসব তথ্য ব্যবহারযোগ্য নয়। তাছাড়া শিক্ষার তথ্য নিয়ে ৬০ শতাংশ ব্যবহারকারী জানিয়েছেন এগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ বা পুরনো তথ্য।
জরিপে উঠে এসেছে, তথ্য-উপাত্ত অনুসন্ধানকারীদের বিবিএসের সঙ্গে যোগাযোগের কারণ হিসেবে ৫৮ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ ব্যবহারকারী নির্দিষ্ট উপাত্ত অনুসন্ধান করেন। তাদের প্রায় ৭২ দশমিক ৫৬ শতাংশ এক সপ্তাহের মধ্যেই তাদের কাক্সিক্ষত তথ্য পেতে সমর্থ হয়েছেন বলে মত দিয়েছেন। এক্ষেত্রে ৫৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ ব্যবহারকারী বিবিএসর তথ্যে সন্তুষ্ট হলেও তাদের ৩৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ আংশিক সন্তুষ্ট ছিলেন।
ড. শামসুল আলম বলেন, সঠিক পরিকল্পনার অন্যতম পূর্বশর্ত হলো সঠিক তথ্য-উপাত্ত। একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, এসডিজির সূচকসমূহ, অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, এবং ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণে সঠিক ও সময়োচিত পরিসংখ্যানের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা হিসেবে সরকারের ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত তারা।
অনুষ্ঠানে পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান আহসান হাবিব মনসুর বলেন, কত মানুষ এখানে অংশগ্রহণ করেছে তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হলো টার্গেটেট গ্রুপের কাছে যাওয়া। বিবিএসের ফলাফলগুলো গবেষণার বেজলাইন হিসেবে কাজ করবে। তবে তথ্যকে আরও ভেঙে ভেঙে পূর্ণাঙ্গ তথ্য পরিবেশন করতে হবে। তাহলে মান বাড়বে। তিনি বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশেই এ ধরনের প্রতিষ্ঠান স্বাধীনভাবে কাজ করে। কোনো সরকারই তাদের কাজে হস্তক্ষেপ করে না। এ মুহূর্তে মানোন্নয়ন নিয়ে কাজ করা উচিত এ প্রতিষ্ঠানের। আর্থিক খাতের ডেটা এখানে পাওয়া যায়, কিন্তু রিয়েল সেক্টর ডেটা পাওয়া যায় না। সেটি খুব কম।
ফ্রান্সের উপকূলীয় শহর ঘাহসকে বলা হয় সুগন্ধির রাজধানী। দেশটিতে তৈরি পরিশীলতা, বিলাসিতা আর মদিরতার মিশেলে মোহনীয় সব সুগন্ধির কাঁচামালের মূল কেন্দ্র ওই শহর। তবে এসব সুগন্ধির বেশিরভাগই মূলত প্যারিসের বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনারদের তৈরি হয়। পৃথিবীর নাম করা সব সুগন্ধির ব্র্যান্ডও এই শহরে। এ জন্য প্যারিসকেও কেউ কেউ সুগন্ধির শহর নামে ডাকেন। তবে সুগন্ধি শিল্পে বহু যুগ ধরে বিশে্ব শীর্ষ স্থান দখল করে থাকা ফ্রান্সের রাজধানীর মানুষ গেল এক সপ্তাহ ধরে পড়েছে ভয়ংকর বিপাকে। অবসরের বয়সসীমা বাড়ানোর প্রস্তাবের বিরুদ্ধে বর্জ্য সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত কর্মীদের ধর্মঘটে প্যারিসের আস্তাকুঁড় থেকে শুরু করে মূল সড়কগুলোতেও উপচে পড়া বর্জ্যরে স্তূপ। হাজার হাজার টন বর্জ্যরে মধ্যে কিলবিল করছে তেলাপোকা আর ইঁদুর। নগরবাসীকে চলতে হচ্ছে নাকে রুমাল চেপে।
এএফপি বলছে, সম্প্রতি পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের পেনশনের বয়স সীমা ৬২ থেকে ৬৪ করার প্রস্তাব করেছে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর সরকার। এর প্রতিবাদেই কাজ বন্ধ রেখে আন্দোলন করছেন শ্রমিকরা। ধর্মঘটে প্যারিসের পাশাপাশি নোথ, হেন, ও লু হ্যাভা শহরেও ময়লার স্তূপ জমে আছে।
প্যারিস কর্র্তৃপক্ষ বলছে, ধর্মঘটে শহরের অর্ধেক ডিস্ট্রিক্টে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বন্ধ আছে। তিনটি বর্জ্য শোধনাগার অবরুদ্ধ, চতুর্থ আরেকটি আংশিক বন্ধ। ৫ হাজার ৬০০ টন বর্জ্য এখনো সংগ্রহ করা হয়নি। প্যারিস কাউন্সিল বলছে, বেসরকারি কোম্পানির আওতায় ১০টি ডিস্ট্রিক্টে কার্যক্রম প্রায় স্বাভাবিক রয়েছে। কিছু জায়গায় দেখা যাচ্ছে, পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের কাজে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। শহরের অন্যতম বড় ষষ্ঠ ডিস্ট্রিক্টের শীর্ষস্থানীয় কাউন্সিল কর্মকর্তা ইমানুয়েল গেগুয়া বলেন, পরিস্থিতি ছিল জটিল, তবে জননিরাপত্তার জন্য কর্র্তৃপক্ষ কাজ করছে। বাজার ও রাস্তায় পড়ে থাকা ময়লার ব্যাগ পরিষ্কার এবং পথচারীদের নিরাপত্তার ওপর জোর দিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞ হোমা ল্যাসআ ফরাসি পত্রিকা লু পারিজ্যঁকে বলেন, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের এই ধর্মঘট ইঁদুরের আচরণে পরিবর্তন আনছে। সেগুলো ডাস্টবিনে ঘুরে বেড়াবে, আরও ইঁদুরের জন্ম দেবে এবং মলমূত্র ত্যাগ করবে। ময়লা সংগ্রহকারী ও আমাদের জন্য একটি উদ্বেগজনক স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করছে।
প্যারিসের স্যোশালিস্ট মেয়রের বিরোধীরা ধর্মঘটকে কেবল বিদ্যমান সংকটের আরেকটি মাত্রা হিসেবে দেখছেন। ডানপন্থি রিপাবলিকান হাশিদা দাতির অভিযোগ, মেয়র অ্যানি ইদালগো পরিচ্ছন্নতা কাজের বাজেট দ্বিগুণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু প্যারিসবাসী স্পষ্টত প্যারিসকে নোংরা থেকে আরও নোংরা হয়ে উঠতে দেখছে।
উত্তরা আজিমপুর বিএনএস সেন্টার থেকে টঙ্গী ফায়ার সার্ভিস পর্যন্ত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের ফ্লাইওভারের দুটি লেন যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে করে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহনের চাপ অনেকাংশে কমে গেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী জুন মাসে উড়াল সেতু পুরোপুরি খুলে দিতে চায় বিআরটি। তবে উড়াল সেতুর পুরোপুরি সুফলের বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে উত্তরা আজমপুর সড়কের উপড়ে থাকা ময়লা ফেলার ডাম্পিং স্টেশন সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস)। এসটিএস সরিয়ে নিতে গত ১৫ ডিসেম্বর ২০২০ সালে করপোরেশনকে ৫৮ লাখ ৪১ হাজার তিনশত বাইশ টাকা দিয়েছে বিআরটি। কিন্তু এখনো তা সরানো হয়নি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উত্তরা আজিমপুর বিএনএস সেন্টারের পূর্ব পাশে ফ্লাইওভার ওঠার ও নামার মুখ। ফ্লাইওভারের দক্ষিণ পাশে ২০ গজ দূরে দেখা যায় সড়কের ওপর এসটিএস। বর্তমানে এসটিএস সড়কের মধ্যে ফ্লাইওভারের মুখে অবস্থান করছে। এর জন্য আট লেনের সড়কটি তিনটি লেন বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে সড়কে যানবাহন চলাচল বিঘিœত হচ্ছে। সড়কের মধ্যে থাকায় এসটিএস এর দুই পাশ দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়। যার জন্য এই জায়গায় হর হামেশা যানজট লেগেই থাকে।
প্রজাপতি পরিবহন চালক মানিক মিয়া দেশ রূপান্তরকে জানান, ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে ও নিচ দিয়ে গাড়ি চলাচল করে। বর্তমানে টঙ্গী থেকে উত্তরা গাড়ি ফ্লাইওভার দিয়ে নামার সময় বাম দিয়ে নামতে হয় একই জায়গায় দিয়ে উত্তরা থেকে টঙ্গী ওঠার রাস্তা। তেমনিভাবে ফ্লাইওভারের নিচের গাড়িগুলো ডানে মোড় নিতে হয় কারণ বামে ৬ নম্বর সেক্টর প্রবেশ পথ আর ২০ গজ সামনেই এসটিএস। আর এই জন্যই এখানে যানজট লেগে থাকে। সোজা গাড়িগুলো বের হতে পারলে এই এলাকা যানজট মুক্ত থাকত।
টঙ্গী ব্রিজে গিয়ে দেখা যায়, ব্রিজের উত্তর পাশে দুটি পিলার কাজ শেষ। একটু সামনে আরও একটি পিলারের কাজ করার জন্য মাটি খোঁড়া হয়েছে। দক্ষিণ পাশে নদী ঘেরাও দিয়ে ভেকু মেশিন ধারা মাটি সমান্তরাল কাজ চলছে। সেখানে একটি পিলারের পাইলিং কাজ হয়েছে। এই ব্রিজটি হতে উত্তর পাশে ছয়টি ও দক্ষিণ পাশে তিনটি মোট নয়টি পিলার সমর্পণ হলে ফ্লাইওভারের সঙ্গে সংযুক্ত হবে ব্রিজ। এছাড়া যানবাহন সঠিকভাবে চলাচলের জন্য টঙ্গী বেলিব্রিজ সামনের রাস্তাটা মেলামতের কাজ চলছে।
অন্যদিকে গতবছর ৬ নভেম্বর বিআরটি প্রকল্পের আজিমপুর-টঙ্গী ফায়ার সার্ভিস অংশে ২টি লেন উদ্বোধনের পর সুফল পেতে শুরু করে ডিএমপি ও জিএমপি ট্রাফিক বিভাগ। ফ্লাইওভার অন্যতম সুফল মিলছে বিশ্ব ইজতেমা দ্বিতীয় পর্বে। যানজট মুক্ত ছিল নগরবাসী।
বিআরটি প্রকল্প পরিচালক মো. মহিরুল ইসলাম খান দেশ রূপান্তরকে জানান, এসটিএস সরিয়ে নেওয়ার জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে ৫৮ লাখ ৪১ হাজার তিনশত বাইশ টাকা দেওয়া হয়েছে। গত দুই বছরেও এসটিএসটি সরিয়ে নিতে পারেনি ডিএনসিসি। মেয়রের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছি। তারা সরিয়ে নেবে বলে বেশ কয়েকবার আমাকে জানিয়েছেন। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। বাংলাদেশের এত বড় সাফল্য ছোট্ট একটি কারণে ব্যাহত হতে পারে।
এ বিষয় ঢাকা উত্তরা সিটি করপোরেশন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) মো. সেলিম রেজা দেশ রূপান্তরকে জানান, উত্তরা আজমপুর সড়কের ওপর এসটিএস সরিয়ে ফেলার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। উত্তরার ওয়ার্ড কাউন্সিলর এর সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা একটি জায়গা পেয়েছি। খুব শিগগিরই এসটিএসটি স্বল্প সময়ের মধ্যে সরিয়ে নেওয়া হবে। কত দিনের মধ্যে সরিয়ে নেওয়া হতে পারে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, জুন মাসের আগেই আমরা এটি সরিয়ে নেব।
২০১২ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় দুই হাজার ৪০ কোটি টাকার এই প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরে প্রথম দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। তখন ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় চার হাজার ২৬৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা। পরে আবারও ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়। ওই বাড়তি মেয়াদেও কাজ শেষ না হওয়ায় আবার সময় বাড়ানো হয় চলতি বছরের জুন পর্যন্ত। এ সময়ে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় চার হাজার ২৬৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা। কিন্তু এই সময়ের মধ্যেও কাজ শেষ হয়নি।
রাজধানীতে এটিই প্রথম বাস র্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্প। এ প্রকল্পের আওতায় রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মধ্যবর্তী উভয় পাশের একটি করে লেন শুধু বিআরটি বাস চলাচলের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে। বিআরটি লেনের পাশাপাশি করিডরটিতে উভয় দিকে দুটি করে যান্ত্রিক হালকা যান চলার পথ, উভয় পাশে ফুটপাত থাকছে।
ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে লিবিয়া থেকে অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার পথে নৌকাডুবির ঘটনায় ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার ১২ যুবকের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এতে চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন তাদের স্বজনরা। ওই ১২ যুবক বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে এখন পর্যন্ত তা জানতে পারছেন না তারা।
লিবিয়া থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ে অবৈধভাবে ইতালি অভিমুখে যাত্রা করা একটি নৌকা গত রবিবার বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে পড়ে ডুবে যায়। এতে ৩০ জন নিখোঁজ হয়। এর মধ্যে ১২ জনই নগরকান্দা উপজেলার।
নিখোঁজ যুবকেরা হলেন উপজেলার কোদালিয়া শহীদনগর ইউনিয়নের আটকাহনিয়া গ্রামের তোরাপ মোল্যার ছেলে শফিকুল ইসলাম রাসেল (৩০), ডাঙ্গী ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামের মোস্তফা মাতুব্বরের ছেলে আল আমিন মাতুব্বর (২০), সোবাহান মোল্যার ছেলে মাহফুজ মোল্যা (২২), এসকেন মোল্যার ছেলে নাজমুল মোল্যা (২৩) ও সেকেন ব্যাপারীর ছেলে আকরাম ব্যাপারী (২৭), বাশাগাড়ী গ্রামের ইছাহাক ফকিরের ছেলে স্বপন ফকির (২৭), শংকরপাশা গ্রামের সেকেন কাজীর ছেলে শামীম কাজী (২১), সরোয়ার মাতুব্বরের ছেলে বিপুল (২৫), মালেক শেখের ছেলে বিটুল শেখ (২৫), শ্রীঙ্গাল গ্রামের সলেমান শেখের ছেলে মিরান শেখ (২২), ইদ্রিস শেখের ছেলে তুহিন শেখ (২০) ও নারুয়াহাটি গ্রামের কাশেম তালুকদারের ছেলে শাওন তালুকদার (২২)। তারা সবাই স্থানীয় একটি দালাল চক্রের মাধ্যমে অবৈধভাবে ইতালি যাচ্ছিলেন।
নিখোঁজ রাসেলের বাবা তোরাপ মোল্যা জানান, উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামের আদম ব্যাপারী মুরাদ ফকিরের মাধ্যমে আট লাখ টাকার চুক্তি হয়। গত ৮ জানুয়ারি রাসেল বিমানে ঢাকা ত্যাগ করে। দুবাই হয়ে ১২ জানুয়ারি তারা লিবিয়া পৌঁছায়। দুই মাস লিবিয়ায় অবস্থানের পর রবিবার ইতালি যাওয়ার পথে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে।
নগরকান্দা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান ডাঙ্গী ইউনিয়নের বিল গোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি বলেন, ‘শুনেছি ইতালি যাওয়ার পথে ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটেছে। এতে এলাকার বেশ কয়েকজন উদ্ধার হয়েছেন। আবার বেশ কয়েকজন নিখোঁজ রয়েছেন।’
ডাঙ্গী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী আবুল কালাম জানান, মুরাদ একজন মানব পাচারকারী। তিনি অবৈধভাবে বিদেশে লোক পাঠিয়ে কয়েক কোটি টাকা আয় করেছেন।
তবে মুরাদ ফকির পলাতক থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তার সহযোগী বাশাগারী গ্রামের ইমারত মিয়া মোবাইল ফোনে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মানব পাচারের সঙ্গে আমি জড়িত নই। আমার হাত দিয়ে দুই একজনের টাকা মুরাদকে দিয়েছি মাত্র।’
নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মঈনুল হক বলেন, ‘এ ব্যাপারে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। নগরকান্দা থানার ওসি মিরাজ হোসেন বলেন, অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেছেন, দেশে বিরাজমান স্থিতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ধরে রাখা এবং আইনশৃঙ্খলাজনিত যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে বরিশাল জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধু কর্নার ও স্মৃতি লাইব্রেরি উদ্বোধন শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
পুলিশপ্রধান বলেন, দেশে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ যেভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল বাংলাদেশ পুলিশ অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে তা দমন করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে “জিরো টলারেন্স নীতি” ঘোষণা করেছেন। সেই নীতি বাস্তবায়নে দেশের আপামর জনগণ, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন, গণমাধ্যম, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্যান্য বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থাসহ আমরা সবাই একসঙ্গে একই প্ল্যাটফর্মে একযোগে কাজ করেছি। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে আমাদের ঈর্ষণীয় সাফল্য রয়েছে। জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে রোল মডেলের স্বীকৃতি পেয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম হয়েছি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে উন্নয়ন হয়েছে তা আমরা ধরে রাখতে চাই। এ জন্য বাংলাদেশ পুলিশের সক্ষমতা ও প্রস্তুতি রয়েছে।’
এরপর আইজিপি বরিশাল বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ ও ব্লাড ব্যাংক উদ্বোধন করেন।
পরে আইজিপি প্রধান অতিথি হিসেবে বরিশাল রেঞ্জ ও মেট্রোপলিটনে কর্মরত বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন। বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি এস এম আক্তারুজ্জামানের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান এবং বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম। বরিশালের পুলিশ সুপার ওয়াহিদুল ইসলাম, বরিশাল রেঞ্জ, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ, আরআরএফ, এপিবিএন, জেলা পুলিশ এবং বরিশাল অঞ্চলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন।
আইজিপি বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইনস পরিদর্শন করেন। তিনি সেখানে বৃক্ষরোপণ এবং মাছের পোনা অবমুক্ত করেন।
আইজিপি সকালে কুয়াকাটায় ট্যুরিস্ট পুলিশের কার্যালয় পরিদর্শন করেন। এ সময় ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান এবং অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পুনাকের সুবিধাবঞ্চিতদের মাঝে সেলাই মেশিন ও শুভেচ্ছা উপহার বিতরণ : সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর মাঝে সেলাই মেশিন ও শুভেচ্ছা উপহার বিতরণ করেছে পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক) বরিশাল জেলা শাখা। এ উপলক্ষে সংগঠনের কার্যালয় চত্বরে গতকাল বিকেলে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
পুনাক সভানেত্রী ডা. তৈয়বা মুসাররাত জাঁহা চৌধুরী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন। সংগঠনের বরিশাল জেলা শাখার সভানেত্রী তাহমিনা জয়নব প্রীতির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ, পুনাক সভানেত্রী সোনিয়া ইসলাম। অনুষ্ঠানে বরিশাল রেঞ্জের বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সহধর্মিণী এবং সংগঠনের বরিশাল জেলার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় পুনাক সভানেত্রী ডা. তৈয়বা মুসাররাত জাঁহা চৌধুরী বলেন, পুনাক নিজস্ব গণ্ডির বাইরে বেরিয়ে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। এ ছাড়া বৃহত্তর পরিসরে নারীর ক্ষমতায়নেও কার্যকর ভূমিকা পালন করছে। তিনি অন্যান্য সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মাঝে সেলাই মেশিন ও শুভেচ্ছা উপহার বিতরণ করেন।
পুনাক সভানেত্রী বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ পুনাক কার্যালয় পরিদর্শন ও পুনাক সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
রোজার মাসে খাবারের জন্য শরীফুল আলমের বাজেট ১২ হাজার টাকা। পাঁচ দিনের বাজার করতে গিয়ে তিনি দেখেন, মাছ কিনলে মুরগি কেনা যায় না, মুরগি কিনলে মাছ বাদ দিতে হয়। গরুর মাংস তো বিলাসী খাবার, তাই সে দোকানে নজরই দেননি তিনি। পাঁচ দিনের মধ্যে তিন দিনই তার পরিবারকে মাছ-মাংসের মতো প্রোটিন খাবারের তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। আর ইফতারিতে উচ্চ মূল্যের বিদেশি ফল বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত তিনি আগেই নিয়েছেন। শুধু শরিফুলই নন, বাজার করতে আসা নিম্ন মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্ন আয়ের সব ভোক্তারই একই গল্প। তারা বলছেন, এবারের রমজানে কম খেয়েই রোজা রাখতে হবে।
গত এক বছরে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ৮০ শতাংশের বেশি। প্রায় একই হারে বেড়েছে পাকিস্তানি ককসহ অন্যান্য মুরগির দাম। সব ধরনের মাছের দাম গড়ে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
একটু সাধারণ হিসাব করা যাক। চারজনের একটি পরিবার যদি মাছ, মাংস বাদ দিয়ে সাহরিতে গড়ে ২০০ টাকা, সন্ধ্যা রাতের খাবারে যদি গড়ে ১৫০ টাকা আর ইফতারিতে ফল যোগ না করে গড়ে যদি ১০০ টাকা খরচ করেন তবে মাসে ব্যয় হবে প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ টাকা। আর যদি মাছ-মাংস যোগ হয় তাহলে সাহরিতে ন্যূনতম ৩০০, রাতের খাবারে ৩০০ ও ইফতারিতে ফল যোগ করলে গড়ে ২০০ টাকা খরচ করলে মাসে খরচ হবে প্রায় ২৪ হাজার টাকা। এ হিসাব চারজনের একটি পরিবারের সর্বনিম্ন হিসাব। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গত অক্টোবরের হিসাবে বলা হয়েছে, চারজনের একটি পরিবারে খাবার তালিকায় মাছ-মাংস যোগ করলে মাসে খরচ হবে ২২ হাজার ৪২১ টাকা। এটি শুধু খাবারের খরচ। যদি কোনো পরিবার মাছ-মাংস যোগ না করেন তাতে মাসিক খরচ দাঁড়ায় ৯ হাজার ৫৯ টাকা।
সিপিডির গবেষণা সেলের কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, চলতি মাসে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে। পরিবারপ্রতি এ মাসে খরচ আরও বেড়ে গেছে। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু পণ্যে আমদানি শুল্ক কমানোর পরামর্শ দিচ্ছি আমরা। কিছু ক্ষেত্রে ট্যাক্স ভ্যাট পুরোপুরি উঠিয়ে দিলে সেখানে সবাই উপকৃত হবে।
সিপিডির অক্টোবরের হিসাবই যদি ধরা হয়, তাহলে এবারের রোজায় খাবারের তালিকা ছোট করা ছাড়া উপায় নেই ভোক্তাদের। ২২ হাজার টাকার সঙ্গে যদি বাসা ভাড়া, বিদ্যুৎ, গ্যাস বিল ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক ভাড়াসহ গড়ে ১৫ হাজার টাকা ধরলে চারজনের একটি পরিবারের খরচ দাঁড়ায় ৩৭ হাজার টাকা।
অবশ্য সিপিডির এ তথ্য যখন প্রকাশ করা হয়, তখন মুরগির মাংসের কেজি ছিল ১৫০ টাকা, এখন তা ২৬০ থেকে ২৮০ টাকার মধ্যে। গরুর মাংসের দাম ছিল ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকায়, এখন তা ৭৫০ টাকায়। চিনির দাম ছিল ৯৮ টাকায় এখন তা ১২২ টাকায়। অর্থাৎ সব পণ্যেরই দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে।
দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা হয় কয়েকজন ভোক্তার। বেসরকারি স্কুল শিক্ষক শিহাবউদ্দিন থাকেন রাজধানীর বাড্ডায়। থাকেন ৩ কামরা একটি ফ্ল্যাটে। তার মাসিক খরচ ৩১-৩২ হাজার টাকা। এর মধ্যে শুধু মাত্র বাসা ভাড়ায় খরচ হয় ১৬ হাজার টাকা। একমাত্র সন্তানের পড়া ও পরিবারের ভরণ-পোষণে খরচ হয় আরও ১৩-১৫ হাজার টাকা। বাদ বাকি খরচ আরও ২ হাজার। তবে এই শিক্ষক মাসে আয় করেন ২৮-৩০ হাজার টাকা। মাসিক আয় হিসেবে তার অতিরিক্ত খরচ হয় ২-৩ হাজার টাকা।
এ শিক্ষক খরচের সমন্বয় করতে সঞ্চয়ও ভেঙেছেন ইতিমধ্যে। তাতেও তার বাড়তি খরচের টাকা প্রতি মাসে ঋণের খাতায় যোগ হয়। উপায়ান্তর না দেখে পরিচয় গোপন করে মাঝেমধ্যে রাইড শেয়ার দিয়ে থাকেন। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত কাজে এসেছিলাম মহাখালীতে। ভাবলাম একই সঙ্গে রোজার বাজার করে বাসাই ফিরি। তবে বাজারে প্রবেশ করে চিন্তায় পড়ে গেলাম। ব্যাগ দেখিয়ে বলেন, ১ কেজি করে মুরগি, মাছ ও ছোলাসহ আরও দুএকটি পণ্য কিনতেই ১ হাজার টাকা শেষ। দামের অবস্থা দেখে বুঝা যাচ্ছে চাহিদা মতো বাকি সদাইগুলো বাসায় নিয়ে যেতে পারব না। আর নয়তো অর্ধেকের ওপর ভরসা রাখতে হবে।
শুধু স্কুল শিক্ষক শিহাবউদ্দিনই নন, গেল কয়েক মাসে দ্রব্যমূল্যের ভয়াবহ অবস্থার কারণে মধ্য ও নিম্নমধ্য আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে নিত্যপণ্যের বাজার। মাছ-মাংস থেকে শুরু করে সব ধরনের সবজির দামও মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। গরিবের মাছ বলে খ্যাত পাঙ্গাস, তেলাপিয়াও এখন বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকায়। গত ৩-৪ মাস আগেও পাঙ্গাস ১৪০-১৪৫ টাকা ও তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হয়েছিল ১৩৫-৪০ টাকা করে। এছাড়া অন্যান্য মাছের মধ্যে মান ভেদে রুই মাছ ২৯০-৩৮০ টাকা, সরপুঁটি ২০০-৪০০ টাকা, চাষের মাগুর ৬০০ টাকা, শোল মাছ ৮০০ টাকা, গলদা চিংড়ি ১ হাজার টাকা করে বিক্রি করছেন মাছ ব্যবসায়ীরা।
দ্রব্যমূল্য যে সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে, তা শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল মজুমদারও বলছেন। গত বুধবার শিল্প মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, পাইকারি বাজারের সঙ্গে খুচরা বাজারের কোনো মিল নেই। এক শ্রেণির ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে ব্যবসা করছে। ডলারের দাম বাড়ার অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবেই দেখা যায়, গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় এ বছর ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ২ দশমিক ৬১ শতাংশ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। যদিও গত মঙ্গলবার একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, চলতি মার্চে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। চৈত্রের খরা ও রোজায় মানুষের অতিরিক্ত মজুদের কারণে এ মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে বলে শঙ্কার কথা বলেছেন তিনি।
বিবিএসের চিত্রেই আবার ফেরা যাক। গত বছর চিনির কেজি ছিল ৮২ টাকা, সেই চিনি বিক্রি হচ্ছে ১২২ টাকায়। যদিও বাজারের চিত্র ব্যতিক্রম। গরুর মাংস গত বছরের মার্চে কেজি ছিল ৬১০ টাকা, কিন্তু বছর ঘুরতেই এ পণ্যের দাম এখন ৭৫০ টাকা। মানুষ বেশি দামে গরুর মাংস কিনতে না পেরে কিছুদিন আগেও ভরসা করত ব্রয়লার মুরগির ওপর, যার দাম এখন ২৬০ থেকে ২৮০ টাকার মধ্যে।
রমজানের ইফতারিতে বেশি চাহিদা থাকে ফলের ওপর। কিন্তু সেই ফলের দামও লাগামছাড়া। ডলার সংকটের কারণে ফল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে ফলের ওপর শুল্কারোপ বাড়িয়ে দেয় সরকার। ফলে গত কয়েক মাস ধরেই ফলের দাম অনেক বেশি।
সাহরিতে রোজাদারের পুষ্টি চাহিদা মেটানোর অন্যতম উপাদান দুধ। গত বছরের মার্চে দুধের লিটার কিনতে হয়েছিল ৭০ টাকায়, এ বছর তা ৯০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, দ্রব্যমূল্যে ঊর্ধ্বগতির কারণ হিসেবে করোনার ধাক্কা কাটিয়ে না উঠতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের একটা প্রভাব রয়েছে। তবে আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করে যাচ্ছি বাজার নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য। তিনি বলেন, রমজানের ভোক্তা পর্যায়ে ভোগান্তি কমাতে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছি। মাঠ পর্যায়ে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। যেখানে অনিয়ম পাচ্ছি তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কিছুটা দায়ী। কিন্তু পুরোপুরি না। সম্পূর্ণ দায় এ যুদ্ধের ওপর চাপানো ঠিক না। ভোক্তাদের দায় বেড়েছে, তাদের ওপর চাপও বেড়েছে।
সিন্ডিকেশন করে মুরগির বাচ্চা ও ব্রয়লার মুরগির দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়ে মাত্র ৫২ দিনে বড় উৎপাদকদের একটি চক্র ৯৩৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পোলট্রি খাতের উদ্যোক্তাদের অন্য একটি সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন গতকাল বৃহস্পতিবার এ অভিযোগ করে। এদিকে মুরগির দাম নিয়ে ‘বিগ ফোর’ হিসেবে পরিচিত চার প্রতিষ্ঠানকে গতকাল তলব করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আলোচনার পর ওই চার কোম্পানি ব্রয়লার মুরগির দাম প্রায় ৪০ টাকা কমানোর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। অন্য এক মতবিনিময় সভায় এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন জানিয়েছেন, মুরগি ও গরুর মাংসের দাম না কমালে তা তারা বিদেশ থেকে আমদানি করার সুপারিশ করবেন। রমজানের নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সরকারি তদারকি না থাকায় হরিলুট চলছে পোলট্রি সেক্টরে। প্রতিদিন ব্রয়লার মুরগির চাহিদা ৩ হাজার ৫০০ টন। কিন্তু অস্বাভাবিক দাম ও প্রান্তিক খামারি পর্যায়ে উৎপাদন কমায় এখন দুই থেকে আড়াই হাজার টন সরবরাহ হচ্ছে। প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন খরচ আগে কম থাকলেও এখন প্রতি কেজিতে ১৬০-১৬৫ টাকা এবং করপোরেট কোম্পানিদের উৎপাদন খরচ ১৩০-১৪০ টাকা। কিন্তু পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ২৩০ টাকা পর্যন্ত।
সংগঠনটি জানিয়েছে, ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজিতে যদি অতিরিক্ত ৬০ টাকা মুনাফা ধরা হয় তবে প্রতিদিন অন্তত ২ হাজার টনে ১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। গত ৩১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ৫২ দিনে শুধু ব্রয়লার মুরগি থেকে ৬২৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এ সিন্ডিকেট। এ ছাড়া এক দিনের মুরগির বাচ্চা প্রতিদিন উৎপাদন হয় ২০ লাখ। একটি মুরগির বাচ্চা উৎপাদন খরচ ২৮ থেকে ৩০ টাকা। যা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ১০-১৫ টাকা বিক্রি হয়েছে। গত ৩১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত সেই বাচ্চা ৬২ থেকে ৬৮ টাকা মেসেজ করলেও প্রকৃতপক্ষে তা বিক্রয় হয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। প্রতি বাচ্চায় ৩০ টাকা অতিরিক্ত মুনাফা ধরা হলে আলোচ্য সময়ে মুরগির বাচ্চা বিক্রি থেকে ৩১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ব্রয়লার মুরগি ও বাচ্চা বিক্রি থেকেই ৫২ দিনে ৯৩৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে শীর্ষ কয়েকটি করপোরেট প্রতিষ্ঠান।
পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, পোলট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চা শতভাগ উৎপাদন করে করপোরেট গ্রুপ। তারাই আবার আংশিক ডিম ও মুরগি উৎপাদন করে এবং চুক্তিভিক্তিক খামার করেন। এতে বাজার এসব প্রতিষ্ঠানের দখলে চলে যাচ্ছে।
ব্রয়লার মুরগির দাম কমল ৪০ টাকা : ব্রয়লার মুরগির বাজার নিয়ন্ত্রণে শীর্ষ উৎপাদনকারী ফার্মগুলো নতুন এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোজার মাসে ভোক্তা পর্যায়ে অস্বস্তি কমাতে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি খামারি পর্যায়ে ১৯০-১৯৫ টাকা দরে বিক্রি করা হবে বলে জানিয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় চারটি মুরগি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। যা গেল কয়েক সপ্তাহে ২২০-২৩০ টাকায় বিক্রি হয়ে আসছে। হাতবদল হয়ে এসব মুরগি ভোক্তাপর্যায়ে এসে বিক্রি হচ্ছে ২৭০-২৮০ টাকায়।
‘বিগ ফোর’ হিসেবে পরিচিত এই চার প্রতিষ্ঠানকে গতকাল তলব করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আলোচনার পর ওই চার কোম্পানি ব্রয়লার মুরগির দাম প্রায় ৪০ টাকা কমানোর সিদ্ধান্তের কথা জানায়।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত জাতীয় ভোক্তা অধিকারের কনফারেন্স কক্ষে কাজী ফার্মস, প্যারাগন পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি, আফতাব বহুমুখী ফার্মস ও সিপি বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠক হয়।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, গতকাল আমরা ২৭০-২৮০ টাকায় ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হতে দেখেছি। এ দাম অযৌক্তিক। এটা ২০০ টাকার বেশি হতে পারে না। ফার্ম পর্যায়ে ২২০-২৩০ টাকা দরে ব্রয়লারের কেজি বিক্রি হচ্ছে। হাতবদল হয়ে ভোক্তাপর্যায়ে এ অবস্থা। ব্রয়লার মুরগি এসএমএসের মাধ্যমে নিলাম হচ্ছে। আমি তাদের আহ্বান করেছি, আপনারা এ রমজান মাসে একটু কম লাভ করেন। তারা একমত হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, খামার থেকে আসা ব্রয়লার মুরগি হাতবদলে যেন দাম খুব বেশি না বাড়ে, সে বিষয়ে সংস্থাটি নজর রাখবে। ব্রয়লারের দাম কমাতে প্রয়োজনে বর্ডার উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
এ সময় কাজী ফার্ম কর্তৃপক্ষ জানান, তারা রমজানে ২২০ টাকা থেকে কমিয়ে ব্রয়লার বিক্রি করবেন ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকায়। এ বিষয়ে একমত পোষণ করছে আফতাব, প্যারাগন ও সিপি কোম্পানি।
রমজানের নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে : মুরগি ও গরুর মাংসের দাম বাড়ায় শঙ্কা প্রকাশ করেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারকে আগামী দুই-তিন মাসের জন্য মুরগি ও গরুর মাংস বিদেশ থেকে আমদানি করার সুপারিশ করবে সংগঠনটি। গতকাল এফবিসিসিআই বোর্ডরুমে ‘রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি, মজুদ, সরবরাহ ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় সভায়’ এ কথা জানানো হয়। এ সময় সংগঠনটির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন জানান, রমজানের নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, দেশীয় উৎপাদক, ব্যবসায়ীদের টিকিয়ে রাখার জন্য সরকার কিছু পণ্যে বাড়তি শুল্ক আরোপ ও কিছু পণ্য আমদানি বন্ধ রেখেছে। এ সুযোগে বাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ইচ্ছেমতো দাম বাড়ালে হবে না। ভোক্তার ওপর এত চাপ দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, বাজারে চাহিদার তুলনায় বেশি খেজুর আছে। পর্যাপ্ত রয়েছে ছোলা, পামঅয়েল, সয়াবিনসহ অন্যান্য পণ্য। আমরা চাই না ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে ব্যবসায়ীদের হেনস্তা করুক। পণ্য ক্রয়-বিক্রয় ও মজুদ বিষয়ে সরকারের নিয়মনীতি রয়েছে। এসব বিষয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীদের সচেতন করতে বাজার কমিটিগুলো উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পণ্যের সরবরাহ বিঘ্নিত হলে আমাদের জানান, আমরা সহযোগিতা করব।
জসিম উদ্দিন বলেন, এখন গরু ও পোলট্রির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। দেশীয় এ খাত বাঁচাতে এতদিন মাংস আমদানি বন্ধ ছিল। এখন তারা যদি সঠিক মূল্যে গরুর মাংস ও ব্রয়লার মুরগি দিতে না পারে তাহলে আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বলব, বাজার ঠিক রাখতে আমদানির অনুমতি দেওয়ার জন্য। আমদানি করলে যদি বাজারে দাম কমে যায়, তাহলে আমদানি করতে হবে। মানুষ যদি ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে না পারে, তাহলে ইন্ডাস্ট্রির কথা চিন্তা করে লাভ নেই।
এফবিসিসিআই সভাপতি ব্যবসায়ীদের বলেন, এবার সরকার বাজার মনিটরিংয়ে থাকবে কঠোরভাবে। কোনো বাজারে বেশি মূল্য রাখা হলেই সেই বাজার কমিটি বাতিল করবে সরকার। একই সঙ্গে দাম বেশি নেওয়া প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সও বাতিল করা হবে। আমরা চাই না, রোজায় কোনো ব্যবসায়ীর লাইসেন্স বাতিল হোক, কাউকে আটক করা হোক।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের সমস্যা থাকতে পারে। সমস্যাটি আমাদের জানাবেন। আমরা কথা বলব। আমাদের টিমও বাজার মনিটরিংয়ে থাকবে। আশা করব আপনারা কেউ বেশি মুনাফা করবেন না।
কয়েক দফা বাড়ার পর রমজানের প্রথম দিন কিছুটা কমেছে মুরগির দাম। শুক্রবার (২৪ মার্চ) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমনটা দেখা গেছে। এ ছাড়াও গতকাল শীর্ষ চার পোল্ট্রি উৎপাদন প্রতিষ্ঠানকে তলব করে ভোক্তা অধিকার। পরে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয় মুরগির দাম।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা কমে ২৪৫-২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালির দাম ২০ টাকা কমে ৩৬০ টাকায়, আর দেশি মুরগি ৬৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মূলত চাহিদা কমে যাওয়ায় দাম কমেছে। তারা জানান, আগের তুলনায় তাদের বিক্রি কমে গেছে। এ অবস্থায় দাম আরও কমতে পারে বলে জানান তারা।
আর ক্রেতারা বলছেন, এখনও তাদের নাগালের বাইরেই রয়ে গেছে মুরগি ও ডিম।
এদিকে, বাজার তদারকিতে সকাল থেকে অভিযানে নেমেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। রোজার প্রথম দিন শুক্রবার (২৪ মার্চ) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অভিযানে নামে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। সকাল সাড়ে ১০টায় এ বাজারের কিচেন মার্কেটে অভিযান শুরু করেন সংস্থার সদস্যরা। অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার। উপস্থিত আছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ও ঢাকা জেলা কার্যালয়ের অফিস প্রধান আব্দুল জব্বার মণ্ডলসহ বিভিন্ন কর্মকর্তা।
এর আগে, গতকাল বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে মুরগির দাম সমন্বয়ের জন্য ডাকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সেখানে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, 'মুরগির দাম ২০০ টাকার বেশি হতে পারে না।'
ব্রাজিলের সমুদ্রতীরবর্তী শহর রিও ডি জেনেইরোর কাছে একটি অপরাধী চক্রের প্রধানের গ্রেপ্তারে অভিযানের সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার রিও ডি জেনেইরোর উত্তর-পূর্বে অবস্থিত সাও গনসালো শহরের শ্রমিকদের আবাসিক এলাকা সালগেইরোতে এ ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ জানায়। পুলিশের দাবি, নিহতরা সবাই সন্দেহভাজন অপরাধী।
ব্রাজিলের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য পারার মাদক-নেতা অভিযুক্ত লিওনার্দো কোস্তা আরাউজো সালগেইরোতে লুকিয়ে আছে- এমন খবরের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালায় পুলিশ। সংঘর্ষে নিহতদের মধ্যে আরাউজোও আছেন। পারার বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার নিহতের ঘটনায় তার হাত আছে বলেও অভিযোগ।
পুলিশ জানিয়েছে, আরাউজোকে গ্রেপ্তারে বৃহস্পতিবার চালানো এই অভিযানে হেলিকপ্টার ও সাঁজোয়া যান ব্যবহার করা হয়।
রিও শহরের পুলিশ প্রায়ই এ ধরনের অভিযান পরিচালনা করে। শহরটির গভর্নর ক্লডিও কাস্টো সোশালে এক পোস্টে লেখেন, আমরা আমাদের এই শহরকে অন্য কোনো এলাকা থেকে আসা দুর্বৃত্তদের অভয়াশ্রম হতে দেব না।
এ ঘটনায় অপরাধী চক্রের স্থানীয় তিনজন সোর্সও গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘সততার বুলি’ আওড়ান। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো বদলি হয় না এ কথাই জোর দিয়ে বলেন তারা।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলির বিষয়ে জানা গেছে ভয়ংকর তথ্য। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর অনলাইন-বদলির সুযোগ না থাকলেও, টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে জারি করা হচ্ছে আদেশ। এসব আদেশ অবশ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় না। নিয়মিত রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে। তারা যোগদানও করেছেন। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরেই এসব হচ্ছে।
গত তিন মাসে অনলাইন-ছাড়াই শতাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এমন আটটি বদলির আদেশের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। কয়েকজনের যোগদানপত্রও দেশ রূপান্তরের কাছে আছে। বদলির এসব আদেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। কোনো কারণে তার ছুটিতে থাকার সময় দায়িত্বে থাকা পরিচালক মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত কিছু আদেশও রয়েছে।
যেহেতু অনলাইন ছাড়া শিক্ষক বদলি বন্ধ, তাই আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে এখন শুধু আদেশ জারি করা হচ্ছে। বদলির আদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গত তিন মাসের কোনো বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হচ্ছেন তারা সশরীরে অধিদপ্তরে এসে আদেশপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বদলির আদেশ জারির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছেও কিছু আদেশের কপি এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে জানিয়েছেন, এসব বদলির আদেশ গত বছর ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আদেশের সংখ্যা বেশি নয়। ১০-২০টি হতে পারে। সংশোধিত নির্দেশিকা জারির পর সরাসরি নতুন কোনো বদলির ফাইল অনুমোদনের সুযোগ নেই। এখন বদলি করতে হলে অনলাইন আদেশের মাধ্যমেই করতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘অনলাইনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বদলি শুরু হলেও তাতে কিছু সমস্যা ছিল। সমস্যা কাটিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এরপর আর অনলাইনের বাইরে বদলির সুযোগ নেই।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদের বদলির আদেশ জারি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি একই উপজেলার উত্তর পেলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। তার বদলির আদেশটি মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। ২৮ ফেব্রুয়ারি যোগদানও করেছেন তিনি। আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। গত ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে সব সংযুক্তির আদেশ বাতিল হয়। তিনি অনলাইন-ছাড়াই বদলির আদেশ করিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদ গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যতম সহযোগী। স্কুলে তেমন ক্লাস নেন না। সারাক্ষণ ডিপিইওর অফিসে থাকেন। শিক্ষক নেতার পরিচয়ে তদবিরবাণিজ্য করেন। জেলার আট-নয় হাজার শিক্ষকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে প্রায়ই চাঁদা আদায় করেন। সহকারী শিক্ষক হয়েও মাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী হাসান আলীর মাধ্যমে তার বদলির আদেশ করিয়েছেন বলে গল্প করেন। এ কাজে তিন-চার লাখ টাকার লেনদেনের কথাও বলেন। হাসান আলীকে প্রায়ই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়। তিনি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের আশপাশেই থাকেন।
গত ১৩ মার্চ চাঁদপুরের কচুয়ার নোয়ার্দ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সূত্রাপুরের শহীদ নবী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী। তার সরাসরি বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা। সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দিগচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগমও রাজধানীর মিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর বনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার। তার বদলির আদেশে স্বাক্ষর রয়েছে মো. হামিদুল হকের।
সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাদিজা আক্তার আমার স্কুলে ১৯ মার্চ যোগ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, অনলাইনে আগে আবেদন করা ছিল। পরে অধিদপ্তর থেকে সরাসরি বদলির আদেশ করিয়ে নিয়ে এসেছেন।’
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তিলকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসাফিকুর রহমান গত ১০ মার্চ বদলি হয়ে যান একই জেলার সদর উপজেলার সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার আদেশটিও মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদরের আজমতপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক তাসমিনা নার্গিস। একই তারিখে স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ময়মনসিংহের নান্দাইলের গলগ-া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চকনজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। এসব বদলির আদেশ মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত।
গত ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের কুঠুরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক আবিদা সুলতানা। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা।
গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাকলী গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে বলতে পারব না। তবে আবিদা সুলতানা বলেছে, অনলাইনে হয়েছে। আমার স্কুলে তিনি ২ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন।’
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার রাজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ২৮ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন একই উপজেলার বড় বিলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন মনীষ চাকমা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে সাবিনা ইয়াসমিন যোগ দিয়েছেন।’
দেশের কোনো জায়গা থেকে রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি খুবই কঠিন। রাজধানীতে বদলির জন্য শিক্ষকরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। আর অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর দেশের অন্য জায়গায়ও বদলির রেট বেড়ে গেছে। এ জন্য তিন-চার লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাখা হয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিও। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। ঘোষণা দেওয়া হয়, অনলাইনের বাইরে কোনো ধরনের বদলি কার্যক্রম চলবে না। ওই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই অক্টোবরের মধ্যে বদলিকৃত স্কুলে যোগদান শেষ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দফায় বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই যেহেতু অক্টোবরের মধ্যে যোগদান শেষ করেছেন, অতঃপর গত ফেব্রুয়ারির আগে আর কোনো বদলির আবেদনের সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয় দফায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির আবেদন নেওয়া হয়। কারা বদলি হলেন তা প্রকাশ করা হয় ৯ মার্চ। গত ১৪ ও ১৫ মার্চ একই বিভাগের মধ্যে বদলির জন্য অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আর এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে অনলাইনে বদলির আবেদন গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয় বলেছে, শিগগির তা শুরু হবে। ফলে এসবের বাইরে যে বদলি হয়েছে সেসব কোনোভাবেই অনলাইন বদলির মধ্যে পড়ে না।
অনলাইন বদলির আদেশের একাধিক কপিও দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। একই উপজেলার মধ্যে বদলির আদেশ উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। আর একই জেলার মধ্যে বদলির আদেশ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যেসব বদলির আদেশ জারি হয়েছে সেসব ‘অনলাইন বদলি’ নয়। মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে অনলাইনের বাইরে বদলি বন্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন দিয়ে এবং এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির কাজ হবে পুরোপুরি অনলাইনে। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে আবেদনটি পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি নির্ধারণ করা হবে। এরপর আবার ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। তাই সাধারণ নিয়মে উপজেলার মধ্যেই শিক্ষকদের বদলি হতে হবে। বিশেষ কারণে উপজেলা বা জেলা পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।