
দেশে গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে করোনায় কোনো মৃত্যু নেই। সর্বশেষ ১ জন মারা গেছে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি। এমনকি এ বছর এখন পর্যন্ত মারা গেছে পাঁচজন। তাদের মধ্যে গত জানুয়ারিতে দুজনের ও ফেব্রুয়ারিতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। অথচ একসময় করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ছিল উদ্বেগজনক। গত বছরও মাসে গড়ে ১১৪ ও দিনে ৪ জন করে মারা গেছে। আগের বছর ২০২১ সাল ছিল করোনায় সর্বোচ্চ মৃত্যুর বছর। সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির পাশাপাশি সে বছর সর্বোচ্চ ২০ হাজার ৫১৩ জনের মৃত্যু হয়।
এখন করোনার সংক্রমণও কমে এসেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছে মাত্র পাঁচজন। পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হার ছিল শূন্য দশমিক ৩১ শতাংশ। এ বছরের জানুয়ারিতে দৈনিক গড়ে শনাক্ত হয়েছে ১৪ জন এবং পরের মাসে তা আরও কমে ১০ জনে নেমে আসে। আর ১৭ দিন ধরে দৈনিক গড় শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৭; অর্থাৎ দেশে করোনা মহামারীর আতঙ্ক তেমন নেই। মানুষ এখন অনেকটাই করোনামুক্ত বলে ধরে নিয়েছে। তবে মহামারী পরিস্থিতি মানুষকে অনেক বেশি সতর্ক করেছে। পরিস্থিতির দিকে তীক্ষè নজর রাখছে সরকারও।
করোনা পরিস্থিতির এমন নি¤œমুখী প্রবণতার মধ্যেই আজ করোনায় মৃত্যুর তিন বছর পার করল বাংলাদেশ। ৮ মার্চ ছিল করোনা মহামারীর তিন বছর। ২০২০ সালের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ দেখা দেয়। প্রথম শনাক্ত হয় তিনজন। এর ১০ দিন পর করোনায় প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা মহামারী নিয়ন্ত্রণে মোটামুটি সফল ছিল বাংলাদেশ। আর মৃত্যু নিয়ন্ত্রণে দেশের সাফল্য ছিল মাঝামাঝি ধরনের। এর কারণ হিসেবে করোনা টিকা প্রয়োগের সফলতাকে বড় করে দেখছেন। পাশাপাশি গ্রামপর্যায়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাব্যবস্থা, বয়স্ক জনসংখ্যার সংখ্যা কম, নিয়ন্ত্রণে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ ও সতর্কতাকেও কারণ বলে মনে করছেন তারা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত গত তিন বছরে দেশে করোনায় মোট মারা গেছে ২৯ হাজার ৪৪৫ জন এবং শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৩৭ হাজার ৯৫৯ জন। রোগটিতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ৫১ থেকে ৭০ বছর বয়সী মানুষের। সর্বোচ্চ মৃত্যু দেখেছে ঢাকা বিভাগের মানুষ।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘করোনায় মৃত্যু নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ মোটামুটি সফল ছিল। কারণ মৃত্যুর হারটা ১-২ শতাংশের কাছাকাছি ছিল। বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিশ্নেষণ করলে দেখা যায়, বাংলাদেশে যে মৃত্যুহার, সেটা গ্রহণযোগ্য। আমাদের যদি অন্য দেশের মতো অসংখ্য লোক মারাত্মক লক্ষণ নিয়ে আক্রান্ত হতো, তাহলে ভয়াবহ দুর্যোগ হতো।’
বাংলাদেশ করোনায় মৃত্যু নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে বলে মনে করেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের করোনা টিকার হার ভালো। এটাই মৃত্যু কমার বড় কারণ। টিকার কারণে এখানে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার সংখ্যা অনেক কমে গেছে। সরকার, স্বাস্থ্য কর্র্তৃপক্ষ গুরুত্ব দিয়েছে। নতুন ধরন এলেও টিকার কারণে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা কমে গেছে। কো-মর্বিডিটির কারণে বাংলাদেশে মৃত্যুতে বেশি মারা গেছে বয়স্ক মানুষ।
প্রথম মৃত্যু ২০২০ সালের ১৮ মার্চ : চীন থেকে প্রথম উৎপত্তি হওয়ার পর বাংলাদেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে ২০২০ সালের ৮ মার্চ। সেদিন তিনজনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর এই প্রথম মৃত্যু ঘটে ২০২০ সালের ১৮ মার্চ। এর পরের দুই মাস দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা ৩ অঙ্কের মধ্যে ছিল। পরে তা বাড়তে বাড়তে ওই বছরের জুলাই মাসে সর্বোচ্চে পৌঁছায়। ২ জুলাই সর্বোচ্চ ৪ হাজার ১৯ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। ২০২০ সালের নভেম্বরে সংক্রমণের গতি কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী হলেও ডিসেম্বর থেকে সেটা দ্রুত নিচের দিকে নামতে থাকে। সে বছরের মাঝামাঝি সময়ে সংক্রমণের হার ৩ শতাংশের নিচে নেমে এসেছিল আর দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৩০০ জনেরও কম।
বেশি মৃত্যু ৬১-৭০ বছরের : স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মোট মৃত্যুর ৩১ শতাংশই ছিল ৬১-৭০ বছর বয়সী মানুষ। এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মারা যায় ৫১-৬০ বছর বয়সী মানুষ, যা মোট মৃত্যুর ২৩ শতাংশ। তৃতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে ৭১-৮০ বছর বয়সী মানুষের, যা মোট মৃত্যুর ১৮ শতাংশ। এ ছাড়া ৪১-৫০ বছরের মধ্যে ১২ শতাংশ, ৮১-৯০ বছর ও ৩১-৪০ বছরের মধ্যে ৬ শতাংশ করে মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
ঢাকায় বেশি, ময়মনসিংহে কম : সর্বোচ্চ মানুষ মারা গেছে ঢাকা বিভাগে, যা মোট মৃত্যুর ৪৪ শতাংশ ও কম মারা গেছে ময়মনসিংহ বিভাগে, ৩ শতাংশ। এ ছাড়া চট্টগ্রামে ২০, খুলনায় ১৩, রাজশাহীতে ৭, রংপুরে ৫, সিলেটে সাড়ে ৪ ও বরিশালে ৩ শতাংশ মানুষ মারা গেছে।
বৈশ্বিক মানেও মাঝারি সফলতা বাংলাদেশের : ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশে বয়স্ক লোকদের আনুপাতিক সংখ্যা কম। এ কারণে মৃত্যুটা কোনো কোনো দেশের তুলনায় কম। ইউরোপ, আমেরিকায় যারা সিনিয়র সিটিজেন আনুপাতিক সংখ্যা অনেক বেশি। সে কারণে সেখানে মৃত্যুটা বেশি। বাংলাদেশে বৈশ্বিক মান অনুযায়ী সংক্রমণ ও মৃত্যু নিয়ন্ত্রণে মাঝারি মানের সাফল্য। আমাদের চেয়ে পূর্বের দেশ অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, জাপান, উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, সিঙ্গাপুর বেশি সফল। সেখানে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাব্যবস্থা খুব ভালো। তা ছাড়া ওদের প্রথম সার্স মহামারীর অভিজ্ঞতা আছে। ফলে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে ওখানকার নাগরিকরা আগে থেকেই অভ্যস্ত। যেসব দেশে সর্বজনীন প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ভালো, তারা দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। কিন্তু আমাদের দেশে সর্বজনীন প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নেই। শহরে এটা শূন্য। কমিউনিটি লেভেলে যেটুকু প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা আছে, বড় বড় শহরে তা নেই। এখানে বেসরকারি পর্যায়ের বড় বড় হাসপাতাল আছে।’
এ ব্যাপারে অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশে মোটামুটি কাছাকাছি মৃত্যুর হার। গ্রীষ্মপ্রধান ও অনুন্নত দেশগুলো যেখানে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা কম, সেই দেশগুলোতে মারাত্মক সংক্রমণ কম হয়েছে। আনুপাতিক হারে মৃত্যুও কম হয়েছে। যেমন করোনা টিকার উদ্যোগ বাংলাদেশের চেয়ে অন্যান্য দেশ দেরিতে নিয়েছে। সুতরাং এটা বলা যায়, বাংলাদেশ যা করেছে তা দক্ষিণ এশিয়ার দেশের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কাছাকাছি।
মহামারী ব্যবস্থাপনা রাখার পরামর্শ : অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রথমদিকে একটু সমস্যা হয়েছিল। যখন রোগী বাড়তে থাকল, তখন হাসপাতাল পাওয়া যাচ্ছিল না, প্রশিক্ষিত চিকিৎসা জনশক্তি ছিল না, আইসিইউ সেবা কম ছিল। কিন্তু পরে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এগিয়েছে এবং ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণের একটা পর্যায়ে এসেছে। চিকিৎসা সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি চিকিৎসাব্যবস্থা যুক্ত হলো। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু নিয়ন্ত্রণে খুব যে খারাপ করেছে বলা যাবে না। ভালোই করেছে। তবে অনেক ঘাটতি ছিল। সুতরাং এখান থেকে আমাদের উচিত শিক্ষা নেওয়া। এটাই শেষ প্যানডেমিক বা মহামারী নয়। এখন বার্ড ফ্লু দুয়ারে কড়া নাড়ছে। ভারতসহ বিভিন্ন দেশ ব্যবস্থা নিচ্ছে। করোনা থেকে শিক্ষা নিয়ে যে সব জায়গায় ঘাটতি, সেগুলো পূরণে সচেষ্ট হওয়া দরকার।’
ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘করোনা মোকাবিলায় আমরা যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বিস্তৃত করেছি, সেটা গুটিয়ে আনা ভালো হবে না। পরীক্ষার সুযোগ-সুবিধিা টিকিয়ে রাখতে হবে। আরটিপিসিআর ব্যবস্থ্য, হাইফ্লো অক্সিজেনব্যবস্থা, আইসিইউ এগুলো টিকিয়ে রাখতে হবে। সামনের দিকে এগোতে হবে। যত স্বেচ্ছাসেবক কর্মী তৈরি হয়েছে, তাদের রাখতে হবে। স্বাস্থ্যব্যবস্থায় এদের আত্তীকরণ করতে হবে। এদের যেন মাঝে মাঝে কাজে লাগানো যায়, সে ব্যবস্থা রাখতে হবে। করোনা মহামারী মোকাবিলার ব্যবস্থা যেন সরকার কোনোভাবেই ফেলে না রাখে।’
সেদিন আমার পকেটে সাকল্যে ছিল ১৫ টাকা। তৎকালীন দৈনিক বাংলা ভবনের লক্কর মার্কা লিফট দিয়ে সকালবেলা দুজন নামছি। আমি আর প্রয়াত সাংবাদিক মিনার মাহমুদ। মিনার ভাই আচমকা জানতে চাইলেন, পকেটে কত আছে? আচমকা প্রশ্ন করাটা ছিল তার অভ্যাস। আমিও যথারীতি চমকে গিয়ে জানিয়েছিলাম টাকার পরিমাণ। আশির দশকের মধ্যভাগে আমি তখন সাংবাদিকতা শিখি বন্ধ হয়ে যাওয়া দেশের বিখ্যাত সাপ্তাহিক কাগজ বিচিত্রায়। তখন আমাদের কারোর পকেটেই তেমন টাকা থাকত না। কিন্তু বিচিত্রার প্রিন্টার্স লাইনে নাম ছাপা হওয়ার আনন্দেই দিনগুলো সুবাসিত হয়ে থাকত। দেশের খ্যাতিমান সাংবাদিকদের সংস্পর্শে থেকে কাজ করার সুযোগ পাওয়াটাই ছিল এক বিশাল ঘটনা।
মিনার মাহমুদ সবেমাত্র বিচিত্রার স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। পত্রিকার সম্পাদকীয় বৈঠকে স্থির হলো আমরা দুজন মিলে মাদকাসক্তি নিয়ে স্টোরি করব। সেদিন সকালে আমাদের লক্ষ্য ছিলেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেত্রী জয়শ্রী কবিরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা। বিচিত্রা সম্পাদক প্রয়াত শাহাদত চৌধুরী সূত্রটা ধরিয়ে দিয়েছিলেন। তখন জয়শ্রী কবির প্যাথেড্রিনে আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন। স্পাইনাল কর্ডে একটা অপারেশনের পর তীব্র ব্যথা থেকে পরিত্রাণ পেতে তিনি চিকিৎসকের পরামর্শে এই ব্যথানাশক ইনজেকশন নিতে শুরু করেন এবং আসক্ত হয়ে পড়েন। তার ঠিকানা ছিল তখন মোহাম্মদপুরের একটি পরিত্যক্ত বাড়ি। এখনো মনে আছে, সেদিন আমরা দৈনিক বাংলা ভবন থেকে মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজার পর্যন্ত রিকশা ভাড়া করেছিলাম ১২ টাকায়। মিনার ভাইয়ের পকেট যে সেদিন একেবারেই শূন্য তার কোনো আভাস তখনো আমি পাইনি। মিনার ভাই রিকশায় উঠেই কয়েকটা সিগারেট কিনতে অমøান বদনে নির্দেশ দিলেন।
অগত্যা নিকট ভবিষ্যতে আর্থিক সংকটের চিন্তা জলাঞ্জলি দিয়ে সিগারেট কিনে রিকশায় উঠে বসি। তখন ঢাকার যানজটহীন রাস্তায় রিকশা ভ্রমণ বেশ আনন্দদায়ক ছিল। মিনার ভাই তার হাতে ধরা একটা বই দেখিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘বলো তো, এই বইটার মালিক কে?’
দেখি তার হাতে বাঁধানো একটা মোটা বই। মলাটে নাম লেখা নেই। বইটার প্রথম পৃষ্ঠা ওল্টাতেই জানা হয়, বইটি বিশ্বখ্যাত লেখক এরিখ মারিয়া রেমার্কের আরও বেশি আলোচিত উপন্যাস ‘থ্রি কমরেডস’। আগ্রহে পৃষ্ঠা ওল্টাতেই দেখি বইয়ের মালিক হিসেবে কবি আহসান হাবীবের নাম লেখা আছে। চমকে তাকাই মিনার ভাইয়ের দিকে। আমার দৃষ্টিতে ফুটে ওঠা বিস্ময় চিহ্নের সমাধান করতে জানিয়েছিলেন, বইটা চুরি করেছেন কবির লাইব্রেরি থেকে। এখানে উল্লেখ করা ভালো, কবির বড় ছেলে কথাশিল্পী মঈনুল আহসান সাবের ছিলেন তার বন্ধু। আমি রিকশায় বসেই সাগ্রহে বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টে যাই। আগে এ উপন্যাসটির বঙ্গানুবাদ আমি হাতে পাইনি।
সেদিন মোহাম্মদপুরে পৌঁছে বেশ কিছুক্ষণ এ গলি-সে গলি খোঁজাখুঁজির পর বাড়িটা আবিষ্কার করি। বাড়িটার পুরো অবয়ব এখন আর মনে পড়ে না। তবে সত্যিকার অর্থেই বাড়িটাকে পরিত্যক্ত মনে হয়েছিল। আমরা মøান কাঠের দরজায় কড়া নাড়তেই হাজির হন একজন নারী। তার পেছন পেছন ঢুকে পড়ি বাড়ির অন্দরমহলে। জানা গেল, জয়শ্রী কবির শাওয়ার নিচ্ছেন। অপেক্ষার পালা শুরু হয় আমাদের। মিনার ভাই প্রায় মাসুদ রানার ভঙ্গিতে দক্ষ হাতে তল্লাশি চালান ঘরে বসবাসরত একটি মাত্র টেবিলের ড্রয়ারে। একটু পরেই ঘরের জানালা দিয়ে অনুপ্রবেশকারী দুপুরের রোদ মøান করে দিয়ে উপস্থিত হলেন অভিনেত্রী। পরনে ছিল ঝকঝকে সাদা গাউন আর মাথায় একটা সাদা তোয়ালে উঁচু করে বাঁধা। মুখশ্রীতে সেই লাবণ্য আর নেই! সেদিন বেশ অনেকটা সময় কথা হয়েছিল জয়শ্রী কবিরের সঙ্গে। তিনি হেসেছিলেন, তিনি কেঁদেছিলেন সেই দুপুরে। তার অভিনয়ে উজ্জ্বল কিছু সিনেমার প্রসঙ্গ বারবার তুলছিলেন মিনার ভাই। আর তাতেই অশ্রুসজল হয়ে উঠছিলেন তিনি। একজন সাংবাদিককে তথ্য বের করতে কত কৌশল যে অবলম্বন করতে হয়! সেদিন আমাদের কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন। অনেক প্রশ্নে ছিলেন নিরুত্তর। কিছুটা সময় পরে নিজেই লাঞ্চ করবেন বলে বিদায় নিয়েছিলেন। আমরা পরের দিন আসব বলে বাড়িটা থেকে বের হয়ে এসেছিলাম বাইরে, তীব্র রোদের ভেতরে।
বিপত্তি হলো সাকুরা রেস্তোরাঁর কাছে এসে। মিনার ভাই চমকে তাকিয়ে দেখেন ‘থ্রি কমরেডস’ বইটা ফেলে এসেছেন ওই বাড়িতে। আবার যে ফিরে যাব তার উপায়ও ছিল না। কারণ আমাদের দুজনের পকেটই ছিল ফাঁকা। অগত্যা আগামীকালের ভরসা।
সেদিন আরেকটি ঘটনা ঘটেছিল। ফেরার পথে আমরা আরেকটি সাপ্তাহিক পত্রিকার অফিসে ঢুঁ দিয়েছিলাম। ভারপ্রাপ্ত সম্পাদককে এক পীর সাহেব সম্পর্কে একটা বানানো গল্প বলে সেই ঘটনার ওপর স্টোরি লেখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মিনার মাহমুদ আগাম টাকা নিয়েছিলেন কৌশলে। সে টাকায় সেদিন দুপুরে আমাদের জমজমাট মধ্যাহ্নভোজ জুটেছিল।
‘থ্রি কমরেডস’ বইটা কিন্তু আমরা হারিয়ে ফেলেছিলাম। হারিয়েছিলাম জয়শ্রী কবিরকেও। পরদিন মোহাম্মদপুরের সেই ঠিকানায় গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি রহস্যজনকভাবে। হয়তো তিনি আর কথা বলতে চাননি আমাদের সঙ্গে। যত দূর জানি, জয়শ্রী কবির এখন ইউরোপে বসবাস করেন। সেই দিনগুলোর ছায়া তার ওপর মেঘ বিস্তার করে নেই। আজকাল পেছন ফিরে তাকিয়ে ভাবি, সাংবাদিকতা শুরুর সেই দিনগুলো কী রোমাঞ্চকর আর ঘটনাবহুল ছিল! কত আবিষ্কারের আনন্দ আমাকে আলোড়িত করেছিল তুমুলভাবে। কত কী শিখেছিলাম একটা সময়ে! আর তাতে শেখার আনন্দটা ছিল রাজার মতো।
সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবি আদায়ের চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। সে কারণে নেতাকর্মীদের চাঙা করতে এবং কর্মসূচিগুলোতে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে দলের এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর প্রতি বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা দিচ্ছেন বিএনপির হাইকমান্ড।
বিএনপি এবং এর অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া যেসব নেতা পরপর তিনটি কর্মসূচিতে অনুপস্থিত থাকবেন তাদের দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে বলে সতর্ক করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে এ নির্দেশনার অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির দুই নেতাকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলকে চূড়ান্ত আন্দোলনে ভ্যানগার্ড হিসেবে দেখতে চান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আসন্ন রমজানে ইফতারের রাজনীতি শুরু হবে। এরপর সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নে চলমান আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ দেওয়া হবে। তাই চূড়ান্ত আন্দোলনের আগে নিষ্ক্রিয় নেতাদের দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে দলের ঘোষিত কর্মসূচিতে রাজপথে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ ছাড়া ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচিতে উপস্থিত না থাকলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে।’
আজ শনিবার ১২টি সাংগঠনিক মহানগরে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি করার পর নিষ্ক্রিয় নেতাদের তালিকা তৈরি করে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হবে বলে জানান আব্দুস সালাম।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হক গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, দলীয় কর্মসূচিতে গরহাজির থাকায় নেতাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি। এর অংশ হিসেবে মোহাম্মদপুর থানার অন্তর্গত ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির সহসভাপতি কেএম শামসুর রহমানকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শামসুর রহমান রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অনুপস্থিতিসহ সাংগঠনিক নির্দেশনা অমান্য করায় এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
আমিনুল হক বলেন, ‘এর আগে দলীয় শৃঙ্খলা বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির পল্লবী থানার আহ্বায়ক ও সাবেক কমিশনার মো. সাজ্জাদ হোসেনকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক যুগ্ম মহাসচিব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঢাকা মহানগর বিএনপির পাশাপাশি অঙ্গ সংগঠনগুলোর ঢাকা মহানগরের নেতাদের রাজপথে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে আগামীদিনের আন্দোলন সংগ্রামে ভ্যানগার্ড হিসেবে রাখতে চায় ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলকে। এই তিনটি অঙ্গ সংগঠনের ঢাকা মহানগরীর নেতাদের প্রস্তুত করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এর অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে সংগঠন তিনটির নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল সভা করেছেন তিনি। এখন সংগঠন তিনটির নেতারা নিজেদের কমিটির নেতাদের পাশাপাশি ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করছেন।
আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রামের জন্য ছাত্রদলকে কীভাবে প্রস্তুত করা হচ্ছে জানতে চাইলে বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আমরা ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের নেতাদের নিয়ে ধারাবাহিক বৈঠক করেছি। এখন ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়, বিভিন্ন কলেজ ইউনিটের নেতাদের নিয়ে ধারাবাহিক বৈঠক করছি। আগামীর আন্দোলন সংগ্রাম সফল করতে ছাত্রনেতাদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে।’
ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রাম যেকোনো মূল্যে সফল করতে চাই আমরা। এ কারণে সংগঠনে জবাবদিহিতা এবং সংগঠনের সব পর্যায়ের নেতাদের রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে নিয়মিত অংশগ্রহণের বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পদে থাকার পরও যাদের রাজপথে পাওয়া যাবে না তাদের দল থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবক ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এমন নির্দেশনা আমাদের দিয়েছেন।’
যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চলমান আন্দোলন সংগ্রামে সারা দেশে যুবদলের বেশ কিছু নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অনেকে। এছাড়া কারাগারে রয়েছে বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ যুবদল নেতা। সম্প্রতি যুবদল কেন্দ্রীয় সংসদের যে কমিটি গঠন করা হয়েছে তাদের নিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দিনব্যাপী স্কাইপে বৈঠক করেছি। নেতারা আগামীদিনের আন্দোলন সংগ্রাম সফল করতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে অঙ্গীকার করেছেন।’
স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের নতুন কমিটি গঠনের পর স্বল্প সময়ের মধ্যে পূর্ণা ঙ্গ কমিটি গঠন করে কেন্দ্রে জমা দিয়েছি। শিগগিরই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কমিটি যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত অনুমোদন করবেন। এরপর সে কমিটি ঘোষণা করা হবে। পাশাপাশি আগামীদিনের আন্দোলন সংগ্রামে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমাদের যে ভ্যানগার্ড হিসেবে দেখতে চায় তার জন্য সংগঠনের নেতাদের তৈরি করছি নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে।’
কাতার প্রবাসী জাহাঙ্গীর আলম ড্রাইভিং লাইসেন্স (অপেশাদার) পাওয়ার পরীক্ষা দিতে অনলাইনে আবেদন করেছেন গত ২৮ ফেব্রুয়ারি। তার লার্নার নম্বর হলো : ৫০-১৫৯৫৯৭০৮। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্র্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এই প্রবাসীর লাইসেন্স পরীক্ষায় অংশগ্রহণের তারিখ দিয়েছে আগামী ২৯ মে। কিন্তু সেদিনই জাহাঙ্গীরের কাতারের ভিসার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। যে কারণে এর আগে দেশটিতে পৌঁছাতে হবে তার। এমন পরিস্থিতিতে পরীক্ষার তারিখ এগিয়ে আনতে বিআরটিএর চট্টগ্রাম সার্কেল অফিসের কর্তাদের কাছে এরই মধ্যে একাধিকবার ধরনা দিয়েছেন জাহাঙ্গীর। কিন্তু মেলেনি কোনো ফল।
বিআরটিএর চট্টগ্রাম সার্কেল অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত তারিখ এগিয়ে আনতে হলে জাহাঙ্গীর আলমকে সশরীরে যেতে হবে ঢাকায় বিআরটিএ চেয়ারম্যানের দপ্তরে। মাত্র তিন মাস আগেও আবেদনকারীর জরুরি প্রয়োজনে পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন করার এখতিয়ার ছিল বিআরটিএ চট্টগ্রাম সার্কেল অফিসের প্রধান কর্তার। এখন তার সেই এখতিয়ার আর নেই। তারিখ পরিবর্তনের জন্য সংশ্লিষ্ট আবেদনকারীকে দৌড়াতে হচ্ছে ঢাকায় চেয়ারম্যানের দপ্তরে।
ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষার তারিখ এগিয়ে নিয়ে আসতে না পারায় চরম হতাশা প্রকাশ করেছেন কাতার প্রবাসী জাহাঙ্গীর আলম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী ২৯ মে আমার ভিসার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। কর্মকর্তাদের কাছে অনেক তদবির করেছি। কিন্তু তারা বলেছেন, পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তনের ক্ষমতা বিআরটিএ চেয়ারম্যানের হাতে। এটা এক ধরনের হয়রানি। লাইসেন্সটা পেলে কর্মক্ষেত্রে আমার উপকার হতো।’ বিআরটিএ চট্টগ্রাম সার্কেল অফিসের তথ্য অনুযায়ী, শুধু জাহাঙ্গীর আলম একাই নন, ২৯ মে ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য যে ২৫০ জনকে তারিখ দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে ৪০-৪২ জন আবেদনকারী এমন ভোগান্তিতে পড়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই বিদেশগামী। এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিআরটিএ চট্টগ্রাম সার্কেলের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লাইসেন্স পরীক্ষার তারিখ এগিয়ে আনতে যেসব আবেদনকারী বিআরটিএ চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করেছেন তারাও নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ঢাকায় আবেদন পাঠালেও সেটি ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে থাকে মাসের পর মাস। সেখানে সংশ্লিষ্টদের ঘুষ না দিলে আবেদনপত্র পৌঁছে না চেয়ারম্যানের টেবিলে। অবশ্য অনেকেই সরাসরি চেয়ারম্যানের কাছে গিয়ে পরীক্ষার তারিখ এগিয়ে নিয়ে আসতে সক্ষম হচ্ছেন।’
বিআরটিএ চট্ট-মেট্রো সার্কেল-২-এর সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার) মো. ওমর ফারুক চট্টগ্রাম কার্যালয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন করতে না পেরে আবেদনকারীদের ভোগান্তির বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তিন-চার মাস আগেও এখানকার কর্র্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করে পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন করা যেত। কিন্তু এখন তারিখ পরিবর্তনের এখতিয়ার শুধু চেয়ারম্যান স্যারের কাছে। আবেদনকারীরা বিপাকে পড়লেও আমাদের করার কিছু নেই।’
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদারের মোবাইল ফোনে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে কল করার কারণ জানিয়ে তার মোবাইল ফোনে বার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি।
উপাচার্য ছাড়াই এক বছরের বেশি সময় ধরে কার্যক্রম চালাচ্ছে রাজশাহীর নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। ভারপ্রাপ্ত হিসেবে আগের উপাচার্যকেই দায়িত্ব দিয়ে তার স্বাক্ষরেই দেওয়া হচ্ছে মূল সনদপত্রগুলো। এতে করে পরে এই সনদপত্রের সঠিক মূল্যায়ন হবে কি না তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে শিক্ষার্থীদের মনে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, উপাচার্য নিয়োগের জন্য প্যানেল পাঠানো হয়েছে। তাই যত দিন নতুন উপাচার্য নিয়োগ না হচ্ছে তত দিন ট্রাস্টি বোর্ডের নির্দেশে এই উপাচার্যই ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দাপ্তরিক কাজগুলো করবেন। কিন্তু ইউজিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেছেন, কাউকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষমতা নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের। নিয়ম অনুযায়ী, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হলে সেখানকার উপ-উপাচার্য দায়িত্ব পালন করবেন। আর উপ-উপাচার্যও যদি না থাকেন তবে সে ক্ষেত্রে কোষাধ্যক্ষ দায়িত্ব পালন করবেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার রিয়াজ মাহমুদ বলেন, ‘উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছরের জানুয়ারিতে। নতুন উপাচার্য নিয়োগের জন্য প্যানেল পাঠানো হয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ট্রাস্টি বোর্ড সর্বোচ্চ কর্র্তৃপক্ষ। তারা যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটা বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষকে মানতে হবে। ট্রাস্টি বোর্ড থেকে প্রফেসর আবদুল খালেককে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে। যেহেতু তিনি ভারপ্রাপ্ত হিসেবে এখন দায়িত্বে আছেন, সেহেতু সব ডকুমেন্টে তিনি স্বাক্ষর করতে পারবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্যানেল পাঠিয়েছি। সেটা ইউজিসি, মন্ত্রণালয় হয়ে চ্যান্সেলর নিয়োগ দেবেন। যেহেতু নিয়োগ এখনো হয়নি, সুতরাং বিশ্ববিদ্যালয় তো বন্ধ করে রাখা যাবে না। তাই স্বাভাবিক কার্যক্রম চালানোর স্বার্থে ট্রাস্টি বোর্ড তাকে (আবদুল খালেক) ভারপ্রাপ্ত হিসেবে রেখেছে। তবে কবে নাগাদ নিয়োগ হবে এটা ট্রাস্টি বোর্ড বলতে পারে।’
উপাচার্য নিয়োগ না হওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো দায় নেই দাবি করে রেজিস্ট্রার রিয়াজ মাহমুদ বলেন, ‘একটি সার্টিফিকেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের স্বাক্ষর লাগে। এখন উপাচার্য নিয়োগ দেন চ্যান্সেলর। তাই চ্যান্সেলর যত দিন নিয়োগ না দেবে তত দিন ভারপ্রাপ্ত যিনি আছেন তিনিই কাজ চালাবেন। এ ক্ষেত্রে উপাচার্য নিয়োগের জন্য প্যানেল না পাঠালে একটা দায় থাকে। কিন্তু এখানে এমনটি নয়। প্যানেল পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সেই অনুযায়ী এখনো নতুন উপাচার্য নিয়োগ হয়ে আসেনি।’
এ বিষয়ে নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রাশেদা খালেক বলেন, ‘আমাদের ইউনিভার্সিটিতে উপাচার্যের পদ শূন্য। আমরা নিয়োগের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন পাঠিয়েছি। তবে এখনো নিয়োগ দেয়নি। এখন উপাচার্য ছাড়া তো আর বিশ্ববিদ্যালয় চলে না। এটা তো বন্ধ থাকতে পারে না। তাই আমরা ট্রাস্টি বোর্ড থেকে প্রফেসর আবদুল খালেককে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে রেখেছি। যত দিন নিয়োগ না দেওয়া হবে তত দিন তিনিই সব কাজ চালিয়ে যাবেন। সার্টিফিকেটে তিনিও সাইন করছেন। সেখানে তিনি ভারপ্রাপ্ত হিসেবেই সাইন করছেন।’
তবে ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পরিচালক ওমর ফারুক জানান ভিন্ন তথ্য। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তাদের ট্রাস্টি বোর্ড উপাচার্য নিয়োগের জন্য একটি প্যানেল পাঠিয়েছেন। সেটি আমরা এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হয়ে যাবে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে। সেখান থেকেই চূড়ান্ত হবে এটি। তবে, যতক্ষণ নতুন উপাচার্য নিয়োগ না হচ্ছেন তত দিন সেখানকার উপ-উপাচার্য সেই দায়িত্ব পালন করবেন। আর উপ-উপাচার্য যদি না থাকেন তবে সেখানে কোষাধ্যক্ষ এই দায়িত্ব পালন করবেন।’
নর্থ বেঙ্গল ইউনিভার্সিটিতে আগের উপাচার্যই ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এটা নিয়মসম্মত কি না জানতে চাইলে ওমর ফারুক বলেন, ‘এভাবে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার নিয়ম নেই।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল জলিল বলেন, ‘বিষয়টা খুবই গোপনীয়। এটা আমার জানার কথা না যে, কবে প্যানেল পাঠানো হয়েছে।’
উপাচার্যের মেয়াদ শেষে নিয়ম অনুযায়ী উপ-উপাচার্য হিসেবে তারই দায়িত্বে থাকার কথা কি না জানতে চাইলে অধ্যাপক আবদুল জলিল বলেন, ‘আইনের ব্যাপারটি আমাকে জিজ্ঞেস না করাই ভালো। আমি এমপ্লয়ি আর খালেক স্যার হচ্ছে মালিক। কাজেই এমন জটিল প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারব না। এটা নিয়ে এসব প্রশ্ন সরাসরি স্যারের সঙ্গে কথা বলাই ভালো।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল খালেক বলেন, ‘উপাচার্য নিয়োগের জন্য তিনজনের একটি প্যানেল এখান থেকে পাঠানো হয়েছে। এটির প্রক্রিয়া চলছে। যতটুকু জানি এটি খুব তাড়াতাড়িই হয়ে যাবে। এখন আমি নিজেই ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।’
উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হলে নিয়ম অনুযায়ী উপ-উপাচার্য বা কোষাধ্যক্ষ এই দায়িত্বে থাকার কথা কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা ট্রাস্টি বোর্ড ঠিক করে।’
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় ১২ জন প্রাণ হারিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে গতকাল শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত নিহত হয় তারা।
এসব ঘটনায় আহত হয়েছে আরও অন্তত পাঁচজন। এর মধ্যে গতকাল সকালে ভোলার দৌলতখানে বাসচাপায় কলেজছাত্রীসহ তিনজন প্রাণ হারিয়েছে। নিহতরা ব্যাটারিচালিত গাড়ির যাত্রী ছিল। গতকাল দুপুর ১টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় ট্রাক উল্টে পথচারীসহ দুজন নিহত হয়েছে। রাজধানীর কাকরাইলে ট্রাকের ধাক্কায় এক ব্যবসায়ী এবং যাত্রাবাড়ীতে গাড়িচাপায় এক যুবক নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া টাঙ্গাইলে বাসচাপায় এক ট্রাকচালক প্রাণ হারিয়েছেন। সিরাজগঞ্জে সড়কে প্রাণ গেছে তিনজনের। বগুড়ায় দুই মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে এক মুক্তিযোদ্ধা নিহত হয়েছেন।
বিস্তারিত আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের খবরে :
দৌলতখানে বাসচাপায় ২ কলেজছাত্রীসহ নিহত ৩ : ভোলার দৌলতখানে যাত্রীবাহী বাসের চাপায় স্থানীয়ভাবে ‘বোরাক’ নামে পরিচিত ব্যাটারিচালিত গাড়িতে থাকা দুই কলেজছাত্রীসহ তিনজন নিহত হয়েছে। গতকাল সকালে ভোলা-চরফ্যাশন মহাসড়কে উপজেলার উত্তর জয়নগর ইউনিয়নের ওতরুদ্দিন এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেনÑ উত্তর জয়নগর ইউনিয়নের কয়ছর মাতাব্বরের কলেজপড়–য়া মেয়ে রিমা আক্তার, জাহাঙ্গীরের মেয়ে শিখা এবং মাংসব্যবসায়ী আবুল কালাম। নিহত দুই কলেজছাত্রী বাংলাবাজার হালিমা খাতুন মহিলা কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। তারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে যাচ্ছিলেন।
স্থানীয়রা জানান, দুই কলেজছাত্রীসহ তিনজন তাদের বাড়ির সামনের সড়ক থেকে বোরাকে চড়ে বাংলাবাজার যাচ্ছিলেন। পথে ওতরুদ্দিন এলাকায় বিপরীত দিক থেকে আসা চরফ্যাশনগামী একটি বাস বোরাকটিকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তারা নিহত হন।
দৌলতখান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সত্যরঞ্জন খাসকেল জানান, দুর্ঘটনার পর ‘বীর শ্যামলী’ নামে ওই বাস ও এর চালক আল আমীনকে আটক করেছে পুলিশ।
কসবায় ট্রাক উল্টে পথচারীসহ নিহত ২ : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় ট্রাক উল্টে পথচারীসহ দুজন নিহত হয়েছে। গতকাল দুপুর ১টার দিকে উপজেলার কসবা-সৈয়দাবাদ সড়কে বিনাউটি ইউনিয়নের চান্দাইসার গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত চালক কামাল মিয়াকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহতরা হলেন ওই ট্রাকের চালকের সহকারী পাপেল হোসেন (১৬) ও পথচারী দেলোয়ার হোসেন (৩৫)। কৃষক দেলোয়ার উপজেলার বিনাউটি ইউনিয়নের হাজীপুর গ্রামের আজিজুল হকের ছেলে। পাপেল একই ইউনিয়নের সৈয়দাবাদ গ্রামের আবদুর রহমানের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, দেলোয়ার হোসেন জুমার নামাজ আদায় করার জন্য জমিতে কাজ শেষে কসবা-সৈয়দাবাদ সড়ক দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। চান্দাইসার এলাকায় কসবা থেকে সৈয়দাবাদ ফেরার পথে ইটবহনকারী একটি খালি ট্রাক দুপুর ১টার দিকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এ সময় পথচারী দেলোয়ার, চালকের সহকারী পাপেল ও চালক সালাউদ্দিন গাড়ির নিচে পড়ে যায়। স্থানীয়রা তাদের কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে দেলোয়ার ও পাপেলকে মৃত ঘোষণা করা হয়। চালক সালাউদ্দিনকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পাঠানো হয়।
এদিকে নিহত দেলোয়ারে লাশ বাড়িতে নিয়ে গেলে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য তৈরি হয়। তার দুই মেয়ে আর এক ছেলেসহ স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়ে।
খবর পেয়ে কসবা থানার ওসি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হাবিবুর রহমান, বিনাউটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. বেদন মিয়া ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। দুঘর্টনার শিকার হওয়া ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে।
ওসি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এতে এক পথচারীসহ দুজন মারা গেছে।
রাজধানীতে নিহত ২ : রাজধানীর কাকরাইলে ট্রাকের ধাক্কায় আবদুল্লাহ লিমন (২৮) নামে এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। তিনি মোটরসাইকেল আরোহী ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ২টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে রাত আড়াইটার দিকে তার মৃত্যু হয়। এ ছাড়া যাত্রাবাড়ীতে সড়কে অজ্ঞাতনামা এক যুবক নিহত হয়েছে।
কাকরাইলে নিহত লিমনের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলার কলেজ রোডে। তার বাবার নাম মৃত মজিবুর রহমান। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে মেজ ছিলেন লিমন।
রমনা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মুজাহিদুল ইসলাম জানান, মধ্যরাতে কাকরাইলে প্রধান বিচারপতি বাসভবনের সামনের মোড়ে একটি ট্রাকের সঙ্গে লিমনের মোটরসাইকেলটির ধাক্কা লাগে। এতে ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হন তিনি। পরে ঢামেক হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। ঘটনার পরপরই ট্রাকটি জব্দ ও এর চালককে আটক করা হয়েছে।
নিহত লিমনের বড় ভাই মো. কাজল জানান, তারা নারায়ণগঞ্জে থাকেন। এলাকাতে ব্যাটারি-আইপিএসের ব্যবসা রয়েছে লিমনের। বন্ধুর বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে নিজের মোটরসাইকেল নিয়ে ঢাকায় আসেন লিমন। অনুষ্ঠান শেষে মাঝরাতে আবার বাড়ি ফেরার জন্য রওনা হয়েছিল। পরে পুলিশের মাধ্যমে তার দুর্ঘটনা খবর শুনে হাসপাতালে গিয়ে মরদেহ দেখতে পান তারা।
এদিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে সড়ক দুর্ঘটনায় অজ্ঞাতনামা এক যুবক নিহত হয়েছেন। তার বয়স আনুমানিক ৩৫ বছর। গত বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
যাত্রাবাড়ী থানার এসআই মোস্তাফিজার রহমান জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী মাতুয়াইল রাজধানী ফিলিং স্টেশনের সামনের সড়কের রাস্তা পার হওয়ার সময় কোনো যানবাহন তাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়। তার নাম পরিচয় সনাক্তের জন্য পুলিশ কাজ করছে।
টাঙ্গাইলে বাসচাপায় ট্রাকচালক নিহত : বঙ্গবন্ধু সেতু ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে বাসচাপায় ইরফান মিয়া (৫০) নামে এক ট্রাকচালক নিহত হয়েছেন। গতকাল বিকেলে মহাসড়কের কালিহাতী উপজেলার পৌলি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ইরফান মিয়া পৌলি এলাকার মৃত বাবর আলীর ছেলে।
স্থানীয়রা জানায়, ইরফান মহাসড়কের পূর্ব পাশ থেকে হেঁটে পশ্চিম পাশে ছোট ভাইকে টাকা দিতে আসছিল। এ সময় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা উত্তরবঙ্গগামী একটি বাস ইফরানকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই ইরফানের মৃত্যু হয়।
এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট শিবু নাথ সরকার বলেন, আইনি প্রক্রিয়া শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
সিরাজগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩ : সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় সোহান (১৯) নামে এক যুবক নিহত ও অপর দুইজন আহত হয়েছেন।
গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার ভাঙ্গাবাড়ি ইউনিয়নের বানিয়াগাঁতী নতুনপাড়া কবরস্থান এলাকায় বেলকুচি-বানিয়াগাঁতী সড়কে এ ঘটনা ঘটে। নিহত সোহান উপজেলার বওড়া পশ্চিমপাড়া এলাকার জাহাঙ্গীর হোসেনের ছেলে। আহতদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তাদের নাম জানা যায়নি।
বেলকুচি থানার এসআই সালাউদ্দিন জানান, তিনজন বানিয়াগাঁতী কবরস্থান এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মোটরসাইকেলটি রাস্তার পাশের একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ঘটনাস্থলেই সোহান মারা যায়। গুরুতর আহত হয় অপর দুই আরোহী। এলাকাবাসী তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় ক্লিনিকে ভর্তি করে। সেখানে তাদের অবস্থার অবনতি হলে ঢাকায় পাঠানো হয়।
অপরদিকে বৃহস্পতিবার রাতে রায়গঞ্জ উপজেলার ভূঁইয়াগাঁতী কামারপাড়া ব্রিজ এলাকায় বগুড়া-নগরবাড়ি মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাসচাপায় জাহাঙ্গীর আলম (৩০) নামে অপর এক যুবক নিহত হয়েছে। নিহত জাহাঙ্গীর বেলকুচি উপজেলার বাসিন্দা বলে জানা গেছে। তিনি রায়গঞ্জের বাড়িপাড়া গ্রামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের হিসাবরক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ওসি বদরুল কবির জানান, জাহাঙ্গীরসহ তিনজন একটি অটোভ্যানে করে যাচ্ছিল। এ সময় পেছন থেকে একতা পরিবহনের একটি বাস তাদের চাপা দিলে জাহাঙ্গীর ঘটনাস্থলেই মারা যায়। অটোভ্যানের অপর যাত্রীরা সামান্য আহত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে বাসটিকে জব্দ করেছে।
বগুড়ায় দুই মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে বৃদ্ধ নিহত : বগুড়ায় দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে আলী আজগর (৭২) নামে এক মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বিকেল সোয়া ৩টার দিকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। আলী আজগর সারিয়াকান্দি উপজেলার হিন্দুকান্দী গ্রামের মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে ও উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার। এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে ধুনটের কালেরপাড়া ইউনিয়নের আরকাদিয়া ব্রিজে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
ধুনট থানার ওসি রবিউল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার চিকাশী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সম্মেলনে যাওয়ার পথে আরকাদিয়া ব্রিজের কাছে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আজগরসহ দুজন গুরুতর আহত হন। পরে তাদের উদ্ধার করে প্রথমে ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাদের বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানেই আজ (গতকাল) সোয়া ৩টায় তিনি মারা যান।
ওসি আরও জানান, মোটরসাইকেল দুটি থানায় জব্দ করা আছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নির্ধারিত সময় পেরিয়েছে। ১০ জনের ব্রাজিল। তবুও এগিয়ে ২-০ গোলে। খেলা গড়ায় ইঞ্জুরি টাইমে। তখনই যেন বেড়ে যায় সেলেসাওদের গতি। মিনিট কয়েকের মুহূর্তে ব্যবধান দাঁড়ায় ৪-০ গোলে। তবে প্রতিপক্ষ তিউনিশিয়াও কম যায় না। হাল ছাড়েনি তারা। শেষ মুহূর্ত অবধি লড়ে গেছে। তাতে আদায় করেছে একটি গোল। যদিও সেই গোল তাদের নিয়ে যেতে পারেনি পরের ধাপে।
যুব বিশ্বকাপে আন্দ্রে সান্তোসের জোড়া গোলে ম্যারাডোনার মাঠে উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিশিয়ার বিপক্ষে ৪-০ গোলের জয় পেয়েছে ব্রাজিল। এতে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে সেলেসাওরা।
ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা মাল্টি পারপাস স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত শেষ ষোলোর খেলার পুরোটা সময় বলের দখলটা বেশি ছিল তিউনিশিয়ার পায়েই। আক্রমণের ধারও ছিল ভালো। গোলের সুযোগও অনেকগুলো সৃষ্টি হয়েছিল। তবু ফিনিশারদের ছিল ব্যর্থতা। আর সেটা কাজে লাগিয়েছেন ব্রাজিলের যুবারা। শুরুটা অবশ্য তিউনিশিয়ার কল্যাণেই।
খেলার ১১ মিনিটে পেনালটি পেয়ে যায় ব্রাজিল যুবারা। সেখান থেকে গোল আদায় করে নেন মার্কোস লিওনার্দো। ৩১ মিনিটে এই লিওনার্দো ফের দলকে এগিয়ে দেন। তবে এবার আর তিনি গোল করেননি, তবে করিয়েছেন। তার পাস থেকে পায়ে বল নিয়ে তিউনিশিয়ার জালে জড়ান আন্দ্রে সান্তোস।
২-০ গোলের ব্যবধান পেয়ে হৈ হৈ করতে করতে বিরতিতে যেতে পারত ব্রাজিল। কিন্তু প্রথমার্ধের শেষ বাঁশিটা বাজার আগ মুহূর্তেই লাল কার্ড দেখেন রবার্ট রেনান। তার এমন কাণ্ডে ১০ জনের দলে পরিণত হয় ব্রাজিল।
তাতে অবশ্য পরের অর্ধের নির্ধারিত সময়ে কোনো ছাপ পড়তে দেখা যায়নি। ব্যবধানটা যে তখনও ২-০ তেই ছিল। তবে ৯১ মিনিটে ফের গোল আদায় করে ফেলে ব্রাজিল। এবার ম্যাথুস মার্টিনস। তার ৯ মিনিট পর আন্দ্রে সান্তোস নিজের দ্বিতীয় গোল আদায় করে নেন। চার গোলে এগিয়ে থেকে ব্রাজিল যখন জয়ের অপেক্ষা করছিল, ঠিক তখনই ১০৩ মিনিটের সময় প্রথম গোলটি হজম করে সেলেসাওরা।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপ আর নির্বাচনী তাপের মধ্যেই আজ জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব পেশ করা হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শেষ বাজেট এটি। অনেক যোগ-বিয়োগ কষে বাজেট প্রণয়নের শেষ সময়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রস্তাবিত বাজেটে নির্বাচনী চমক হিসেবে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করতে সম্পূর্ণ নতুন পথে হেঁটেছেন। ভর্তুকি নাম দিয়ে বড় অঙ্কের ‘কর ছাড়’ দিয়েছেন। অথচ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে রাজস্ব জাল বিছিয়ে সাধারণ আয়ের মানুষকে আটকে ফেললেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো প্রস্তাবিত বাজেট সারসংক্ষেপ, ভর্তুকির নামে ‘কর ছাড়’কে বৈশি^ক মন্দা মোকাবিলার ঢাল হিসেবে উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের পরোক্ষ প্রভাবে বাজারে পণ্যের দাম কমার গতিরোধ করবে বলেও সরকারপ্রধানকে জানিয়েছেন।
তবে অর্থনীতির বিশ্লেষকরা বলেছেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে ছোটদের কর পরিশোধে চেপে ধরলেও কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের ঠিকই খুশি করলেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের ফলে বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমায় খুব বেশি প্রভাব পড়বে এমন আশা করা কঠিন।
এনবিআরের সাবেক সদস্য কর-বিশ্লেষক ড. আমিনুল করিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইএমএফের কাছ থেকে কর অব্যাহতি ও কর অবকাশ সুবিধা কমানোর চাপ আছে। এ শর্ত না মানলে ঋণের কিস্তি দেওয়া বন্ধ করা হতে পারে। অন্যদিকে নির্বাচনের আগের বাজেট হওয়ায় বড় মাপের ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার চাপ আছে। বিভিন্নমুখী চাপে সরকার সব পক্ষকে খুশি করতেই আগামীতে কৌশলে কর ছাড় রাখছে ভর্তুকির নাম দিয়ে। অন্যদিকে সাধারণ আয়ের মানুষের ওপর কিন্তু ন্যূনতম কর ধার্য করার কথা শুনছি। অনেক মানুষকে রাজস্বের আওতায় আনার কথাও শুনেছি। এভাবে ছোটদের ওপর ঠিকই কর পরিশোধে চাপ বাড়াল।’
একই মত জানিয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দেশের বড় মাপের ব্যবসায়ীদের অনেকে সরাসরি রাজনীতি করেন। অনেকে রাজনীতি না করলেও সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখে চলেন। এরা সমাজের প্রভাবশালী। বাজেট প্রণয়নকালেই এরা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে নিজেদের পক্ষে সুবিধামতো অনেক কিছু আদায় করে নেন। এবারও তাই হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করা হয়েছে। এভাবে আইএমএফের জেরার মুখে বলার সুযোগ থাকছে যে কর ছাড় ও ভর্তুকি দুই হিসাব এক করেছি।’
সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকে আশায় আছেন এবারের বাজেটে অর্থমন্ত্রী হয়তো জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে সূত্র কষবেন। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার এ বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় কোনো রক্ষাকবচ রাখলেন না। কৌশলী অর্থমন্ত্রী আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে দেওয়া কথা রেখেছেন। সাধারণ মানুষকে রাজস্ব জালে আটকে ফেলার ছক করেছেন। মূল বাজেটের আকার বাড়ানোর সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারের আয়ের হিসাবও বাড়ানো হয়েছে। রাজস্ব আয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। এখানে কর খাত থেকে ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছ থেকে চলতিবারের তুলনায় ৬০ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা করলেন। এনবিআরবহির্ভূত খাত থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে করবহির্ভূত খাত থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে। শেষ সময়ের হিসাবকষে শত সংকটের বাজেটে অর্থমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করেছেন।
আগামী বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী কর ছাড়সহ ২ লাখ ৮৯ হাজার ২২৮ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার প্রস্তাব করবেন। জাতীয় বাজেটে নিয়মিত ভর্তুকি হিসাবে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা রাখার কথা আছে। বাকিটা প্রত্যক্ষ কর ছাড় দিয়ে ভর্তুকি খাতে অন্তর্ভুক্তি হিসেবে রাখা হয়েছে। প্রত্যক্ষ কর ব্যয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বেতনসহ অন্য খাতে ৭৭ হাজার ২১৮ কোটি বা মোট কর ছাড়ের ক্ষুদ্রঋণ খাতে ১২ শতাংশ বা ১৫ হাজার ৩১৫ কোটি, প্রবাসী আয় খাতে ৯ শতাংশ বা ১১ হাজার ২৮৭ কোটি, বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতে ৭ শতাংশ বা ৮ হাজার ৩৮০ কোটি, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক শিল্প খাতে ৪ শতাংশ বা ৪ হাজার ৬১২ কোটি, গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল ৩ শতাংশ বা ৩ হাজার ৪৩৮ কোটি, পোলট্রি ও মৎস্য খাতে ২ শতাংশ বা ৩ হাজার ১২০ কোটি, আইটি এবং সফটওয়্যার খাতে ১ শতাংশ বা ১ হাজার ৪৭৭ কোটি এবং পুঁজিবাজার খাতে ১ শতাংশ বা ৯৬৬ কোটি টাকা।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইস মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ যেন পুরনো বোতলে নতুন পানীয়। বড়দেরই বিভিন্ন কৌশলে সুবিধা দেওয়া হলো।’
অর্থমন্ত্রী রাজস্ব আদায়ের কৌশল হিসেবে বড় সুবিধা দিলেও ইটিআইএন গ্রহণ ও রিটার্ন দাখিলে কঠোরতা এনেছেন। ইটিআইএন না নিলে ৪০ ধরনের সেবা এবং রিটার্ন দাখিলের সিøপ না নিলে ৩৮ ধরনের সেবা দেওয়া হবে না। এতদিন ইটিআইএন নিয়েও অনেকে করযোগ্য আয় না থাকলে শুধু রিটার্ন দাখিল করেছে, একটি টাকার কর দিতে হয়নি। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত অর্থ বিল বিশ্লেষণ করে বলা যায়, ১ জুলাই থেকে করযোগ্য আয় না থাকলেও ২ হাজার টাকা ন্যূনতম কর দিতে হবে।
সাধারণ আয়ের অনেক করদাতা বলেছেন, খাবারের খরচ অনেক বেড়েছে। বাসা ভাড়া, যাতায়াত, চিকিৎসা সবকিছুই এখন বেশি। এর মধ্যে সাধারণ আয়ের ওপর কর পরিশোধে চাপ দেওয়া হলে ভোগান্তি বাড়বে। সাধারণ মানুষকে কর পরিশোধে বাধ্য করলেও সম্পদশালীদের রাজস্ব ফাঁকি কমাতে, বকেয়া আদায়ে এবং অর্থ পাচার রোধে জোরালো কিছু রাখা হয়নি। এনবিআরের সক্ষমতা বাড়াতেও পুরনো পথেই হেঁটেছেন অর্থমন্ত্রী।
আগামী অর্থবছর থেকে রিটার্ন জমা দিতে দেরি হলে বেশি হারে জরিমানা দিতে হবে। বাজেটে আইন করে জরিমানার পরিমাণ প্রদেয় করের পরিমাণ দ্বিগুণ ৪ শতাংশ নির্ধারণে প্রস্তাব করা হয়েছে।
বড়রা সুবিধা দিয়ে রাজস্ব আদায়ে চাপ বাড়ানোয় জীবনযাত্রার অনেক খাতেই খরচ বাড়বে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি কমাতেও বাজেটে রাখা হয়নি কিছু। আন্তর্জাতিক পণ্যের বাজারের অস্থিরতা কবে কমবে তা নিয়ে রয়েছে অশ্চিয়তা। তাই গত মাস ছয়েক থেকে বেশি দামে বিক্রি হওয়া চাল, ডাল, আট, ময়দা, ভোজ্য তেল, লবণ, চিনি, মাছ, মাংসসহ সব ধরনের খাবারের দাম আপাতত কমছে না। চিকিৎসা, যাতায়াত, শিক্ষাসহ খাদ্যবহির্ভূত ব্যয়ও কমবে না। গত (নভেম্বর ২০২২-এপ্রিল ২০২৩) ছয় মাসের সাধারণ মূল্যস্ফীতির গড় হার ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ।
রোমাঞ্চকর ফাইনালে মোহামেডানকে ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপ শিরোপা এনে দেওয়ার অন্যতম নায়ক আহসান আহমেদ বিপু। দীর্ঘদিন সাদা-কালোদের হয়ে খেলা এই গোলরক্ষক কাল দেশ রূপান্তরের শিহাব উদ্দিনকে জানালেন আবাহনীর বিপক্ষে উত্তেজনার ম্যাচে চাপ মাথায় নিয়ে নামা ও পেনাল্টি ভাগ্যে জয়ী হওয়ার পেছনের গল্প…
এত বড় ফাইনালে হঠাৎ করে বদলি হিসেবে নামলেন। এটা কি আপনার জন্য চাপ হয়েছিল?
বিপু : চাপ তো অবশ্যই। গোল আর গোল, ফাইনাল, প্রতিপক্ষ আবাহনী। মানসম্মানের ব্যাপার। এটা কিন্তু একটা ফাইনাল না শুধু, সম্মানেরও ব্যাপার। চাপ তো অবশ্যই ছিল।
তো এই চাপটা সামলালেন কীভাবে?
বিপু : সত্যি বলতে আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ছিল যে আমরা কামব্যাক করতে পারব। শুধু আমি একা না পুরো দল, হাফটাইমে যখন ২ গোল হয়, আমরা ডাগআউটে একজনও হতাশার কথা বলিনি। আমরা চরম বিশ্বাসী ছিলাম যে এখান থেকে ম্যাচ ঘুরানো সম্ভব। আমাদের অধিনায়ক দিয়াবাতে আত্মবিশ্বাসী ছিল যে ম্যাচে ফেরা সম্ভব।
কিন্তু নামার পরপরই তো একটা গোল হজম করলেন। তাতে কি চাপ বাড়েনি?
বিপু : না বাড়েনি কারণ গতকাল যে ৮টা গোল হয়েছিল তার মধ্যে সবচেয়ে সেরা গোল ছিল ওটা। গোলটা সত্যি বলব আমি নিজের ভুলে হজম করেছি। হাতেও লেগেছিল কিন্তু আটকাতে পারিনি।
পরে তো পেনাল্টি মানে ভাগ্য পরীক্ষাতেও নামতে হলো? তার মানে আপনার ওপর সবার বিশ্বাস ছিল?
বিপু : ওটা জানি না, এটুক বলতে পারি আমাদের কোচিং স্টাফ আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছিল। যেহেতু ফাইনাল, পেনাল্টির একটা সম্ভাবনা তো থাকেই। তো আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল, গোলরক্ষক কোচ কানন ভাই আমাদের নিয়ে পেনাল্টির আলাদা কাজ করেছিলেন। কিছু বিষয় যেমন শুট নেওয়ার আগ মুহূর্ত মানে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করা। আর নিজেও একটু চিন্তাভাবনা রেখেছিলাম। তো প্রস্তুতি আগে থেকেই ছিল। চাপ নেওয়ার ব্যাপারটা আসলে আমি স্বাভাবিক ছিলাম। বেশি কিছু চিন্তা করিনি। এমন সময়গুলোতে বেশি চিন্তা করলে উল্টো চাপে পড়ে যেতে হয়।
পেনাল্টি নিয়ে প্রস্তুতির কথা বলছিলেন। আগে থেকেই কি পেনাল্টির প্রস্তুতি ছিল?
বিপু : সে রকম না। কারণ ফাইনালে আগে থেকেই তো বলা যায় না যে পেনাল্টি হবেই। তবে আমাকে খেলার আগে থেকেই মানে ফাইনালের আগেই বলা হয়েছিল যে খেলা যদি ড্রয়ের দিকে যায় তাহলে নামতে হতে পারে। সেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল। তবে পেনাল্টির একটু আগে নামতে হয়েছিল আরকি।
পেনাল্টিতে দুটো সেভ করলেন। এটা কীভাবে সম্ভব হলো। কী ভাবছিলেন ডাইভ দেওয়ার আগে?
বিপু : সত্যি বলছি আমার কোনো চিন্তাই ছিল না। হয়ে গেছে। আল্লাহ মিলিয়ে দিয়েছেন, এখানে আমার কিছু নেই।
বিশ্বকাপ ফাইনালেও তো পেনাল্টি হয়েছিল। তা তো দেখেছেন। নিজের পেনাল্টি মুখোমুখি হওয়ার সময় ওই রকম কিছু মনে হচ্ছিল?
বিপু : না, ওরকম কিছু না। আমি আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখেছিলাম। আর মনে মনে ভাবছিলাম যে দলের জন্য কিছু করতেই হবে। আমি বলতে পারি এই দলটার মধ্যে সবচেয়ে পুরনো খেলোয়াড় কিন্তু আমি। আমি দীর্ঘদিন মোহামেডানে খেলেছি। মোহামেডান থেকে সুপার কাপ জিতেছি, স্বাধীনতা কাপ জিতেছি। তো ক্লাবের জন্য কিছু করার তাগিদটা ছিল।
পেনাল্টিতে প্রথম সেভ করার পর আপনার সাহস কি বেড়ে গিয়েছিল?
বিপু : সাহস তো বেড়েছেই। প্রথম সেভটা যখন করি তখন আমার টিম মেটরাও মানসিকভাবে এগিয়ে গেছে। এরপর আমাদের অধিনায়ক গোল করল। প্রথম গোল করা মানে মানসিকভাবে এগিয়ে থাকা। রাফায়েল কিন্তু আবাহনীর অনেক বড় ব্র্যান্ড। হতে পারে কলিনদ্রেস নামের বিচারে ভারী কিন্তু রাফায়েল এগিয়ে।
প্রথমটা তো সেভ করলেন দ্বিতীয় পেনাল্টি সেভের আগে কী ভাবনা হচ্ছিল আপনার। দ্বিতীয়টা সহজ হয় না কঠিন?
বিপু : ওটা ফিফটি-ফিফটি ছিল। কলিনদ্রেস একটু অপেক্ষা করছিল মারার সময় তাই আমিও ওয়েট করলাম। আর সফল হই। কলিনদ্রেসের শটটা কিন্তু যথেষ্ট পাওয়ারফুল ছিল। আমি সঠিক দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। আর রাফায়েল একটু স্লো শট নেয় সবসময়। আর সবসময় একটু জার্ক করে বাঁদিকে শট নেয়, কাল নিয়েছিল ডানদিকে। আমি অপেক্ষা করায় সঠিক দিকে ডাইভ দিতে পেরেছি।
আচ্ছা আপনার পছন্দের গোলকিপার কে?
বিপু : পিওতর চেক।
বিশেষ কোনো কারণ আছে ওকে পছন্দ করার?
বিপু : ঠিক কেন সেটা বলতে পারব না। তবে ওর সেভগুলো আমার ভালো লাগে। এখন অনেক গোলরক্ষক থাকতে পারে, চেক আমার কাছে এখনো সেরা। বিশেষ করে একটা সেভ দেখেছিলাম ও মাটিতে পড়ে গিয়েও কীভাবে যেন হাত দিয়ে বল ফিরিয়েছিল। চেলসিতে থাকা অবস্থায় সম্ভবত। এছাড়া শুধু একটা না আরও অনেক সেভ করেছে সে। আর একটা ব্যাপার হলো তার ইনজুরির পরও যেভাবে সে খেলা চালিয়ে গেছে এটা আমাকে উজ্জীবিত করে। আমিও ইনজুরির পর খেলছি, ২০১৮-১৯ এ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বসুন্ধরার সঙ্গে ফেডারেশন কাপের ম্যাচ খেলার সময় আমার হাত ভেঙেছিল। এখনো হাতে প্লেট লাগানো আছে।
নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
বিপু : আমার কোনো নিজস্ব লক্ষ্য নেই। আমি খেলে যেতে চাই। কোচরা জানেন আমাকে কোথায় খেলাবেন। জাতীয় দলে খেলার ইচ্ছা তো সবারই থাকে কিন্তু আমি সেই লক্ষ্য নিয়ে আগাতে চাই না। হলে এমনিতেই হবে।
অনেক বছর পর মোহামেডান শিরোপা জিতল। এই ধারা অব্যাহত রেখে সামনেরবার কী লক্ষ্য রাখছেন?
বিপু : গত বছর আমরা সেমিফাইনাল থেকে বাদ পড়ে গিয়েছিলাম সেখানে রেফারিংয়ের কিছু ব্যাপার ছিল আপনারা সবাই দেখেছেন। ইনশাআল্লাহ এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আমাদের ফল তো আগের থেকে ভালো হচ্ছে। এটা বড় আত্মবিশ্বাসের কারণ।
কুষ্টিয়ায় আবারও এনআইডি জালিয়াত চক্রের দৌরাত্ম্যে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন জমির মালিকরা। অভিযোগ উঠেছে, রাজনৈতিক প্রভাবশালীর মদদ, সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের মুহুরি, দলিল লেখক ও অসাধু কর্মচারী-কর্মকর্তাদের যোগসাজশেই এসব চলছে নির্বিঘেœ। এরা ভুয়া এনআইডি ব্যবহার করে অন্যের জমির দাতা-গ্রহীতা বা ক্রেতা-বিক্রেতা সেজে একের পর এক দলিল সম্পাদন করে যাচ্ছে। এর আগে কুষ্টিয়ায় একাধিক এনআইডি জালিয়াতির ঘটনা ফাঁস হওয়ায় জেলাজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। নড়ে-চড়ে বসেন সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা। প্রশাসনের তৎপরতায় জালিয়াত চক্র কিছুদিন গা-ঢাকা দিলেও আবারও চক্রটি নতুন করে জালিয়াতির ঘটনা ঘটাচ্ছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, আগের জালিয়াতির ঘটনায় ডজনখানেক মামলা হলেও সেগুলোর বিচারিক প্রক্রিয়ায় কোনো ইতিবাচক দৃষ্টান্ত না থাকায় চক্রটি আবারও মাঠে নেমেছে। প্রতিকার না পেয়ে ভুক্তভোগীরা দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
কুষ্টিয়া জেলা রেজিস্ট্রি অফিসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘শর্তানুযায়ী দলিল সম্পাদনের সময় দাতা-গ্রহীতারা যে এনআইডি আমাদের দেখায় তা আদৌ সঠিক কি না তা যাচাই করার মতো তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা না থাকার সুযোগ নিয়ে একটি অসাধু চক্র একের পর এক জাল দলিল তৈরি করছে।’
তবে এই কর্মকর্তার মন্তব্যকে নাকচ করে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবু আনছার বলেন, ‘এনআইডি যাচাইয়ের সুযোগ নেই বলে জেলা রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মকর্তা দায় এড়িয়েছেন। কুষ্টিয়াতে যে হারে এনআইডি জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে তাতে ছোট্ট একটা ডিভাইস হলেই এনআইডি যাচাই করা সম্ভব।’
সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ফেব্রুয়ারিতে কুষ্টিয়া সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে জাল এনআইডি নম্বর (৬৪০২৬৬৯৪০৯) ও আমমোক্তারনামা দলিল (১১২১২/১৭ নম্বর) ব্যবহার করে কুষ্টিয়া শহরের প্রায় দুই কোটি টাকার ভূ-সম্পত্তি হস্তান্তরে ২৭ লাখ টাকার একটি দলিল রেজিস্ট্রি হয়। যার নম্বর ১৭৯৪/২৩। কুষ্টিয়া সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের রেকর্ডকিপার সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ওই আমমোক্তারনামা দলিলের সমর্থনে কোনো ধরনের যাচাইকরণ কাগজপত্র সংযুক্ত নেই এবং জালিয়াতির অভিযোগে মামলা বিচারাধীন থাকায় ওই দলিলও আদালতের আদেশে জব্দ করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। তা ছাড়া জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেপ্তার অবস্থায় দলিলদাতারা ওই আমমোক্তারনামা দলিল জাল বলে এর আগে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেয়। এরপরও ওই দলিলের সূত্র ধরে কুষ্টিয়া শহরের এনএস রোডের বাসিন্দা এমএম আবদুল ওয়াদুদদের পৈতৃক ভূ-সম্পত্তি জালিয়াতি করে দলিল রেজিস্ট্রি করে নেয় চক্রটি।
এ বিষয়ে সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিস চত্বরের দলিল লেখক নাসির উদ্দিন বলেন, ‘গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সহকারী দলিল লেখক শরিফুল ইসলাম সোহেল আমার কাছে একটা দলিলে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। কিন্তু এর মধ্যে এত জটিলতা ছিল সে সময় আমি বুঝতে পারিনি।’
সহকারী দলিল লেখক সোহেল জানান, ‘এই দলিলের গ্রহীতা মিস শেফালী খানমের স্বামী মো. মারজুম খাঁন নিজে ওই দলিল অন্য লেখকের কাছ থেকে লেখা সম্পন্ন করে আমার কাছে এসে বলে, ‘তুমি শুধু দলিল লেখক হিসেবে সাব-রেজিস্ট্রারের কাছে পেশ করবা, বাদবাকি সবাইকে ম্যানেজ করার দায়িত্ব আমার।’ সেজন্য আমাকে ১০ হাজার টাকা দেবে বলে আমার সঙ্গে মিটমাট হয়।’
এ বিষয়ে কথা বলতে দলিলদাতা কুষ্টিয়া শহরের উত্তর লাহিনী এলাকার বাসিন্দা মো. দেলোয়ার হোসেনকে (এনআইডি নম্বর : ৬৪০২৬৬৯৪০৯) মোবাইলে কল করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
দলিল গ্রহীতা শেফালী খানমকে তার মোবাইল ফোনে কল দিলে তা ব্যস্ত পাওয়া যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই শেফালী খানমের ফোন থেকে তার স্বামী মারজুম খাঁন এই প্রতিবেদককে কল করেন। প্রতিবেদকের পরিচয় জানার পর মারজুম ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘আপনি কি শেফালী খানমকে চিনেন? দলিলে দেওয়া ঠিকানাটা ভালো করে দ্যাখেন, উনি শেখ সেলিমের বোন, আপনার এত স্পর্ধা? আপনি ওই দলিল নিয়ে টানাটানি করছেন?’
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দবির উদ্দিন বলেন, ‘উল্লিখিত (১৭৯৪/২৩ নম্বর) দলিলটি জাল বলে আবদুল ওয়াদুদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জমির নামজারি প্রক্রিয়া স্থগিত করে রাখা হয়েছে।’
কুষ্টিয়া জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবু আনছার বলেন, ‘দলিলটিতে (১৭৯৪/২৩ নম্বর) দাতা দেলোয়ার হোসেন যে এনআইডি নম্বর (৬৪০২৬৬৯৪০৯) ব্যবহার করেছেন, তার কোনো বৈধ ডেটা নির্বাচন কমিশনের তালিকায় নেই।’
এভাবে দলিল নম্বর ২৫৩৩/২০২২ দাতা জোবায়দা নাহার শেখ ও জামিলা নাহার শেখ এবং গ্রহীতা শাহ মো. মেজবাহুর রহমান, দলিল নম্বর ২৫৩৪/২০২২ দাতা জামিলা নাহার শেখ গ্রহীতা শামসুল ইসলাম, ইউসুফ হাসাইন ও মো. সাদ্দম খাঁ, দললি নম্বর ১১৪৮/২০২২, দাতা জামিলা নাহার শেখ ও জোবায়দা নাহার শেখ এবং গ্রহীতা শামসুল ইসলাম এসব দলিল এনআইডি জালিয়াতির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন কুষ্টিয়া সিআইডির উপপরিদর্শক মাসুদ পারভেজ।
কুষ্টিয়া সদর সাব-রেজিস্ট্রার কাওছার আলী বলেন, ‘এখানে কাজের চাপ সামলানোর মতো প্রয়োজনীয় জনবল সংকট মাথায় নিয়েই কাজ করতে হচ্ছে। এনআইডি নকল বা আসল কি না তা যাচাই করার কোনো ব্যবস্থা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে নেই। যে কারণে জালিয়াত চক্রের এনআইডি জালিয়াতি ঠেকানোর কোনো কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারছি না। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্র্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত ছাড়া আমাদের কিছু করণীয় নেই।’
নির্বাচনের রাজনীতি একটা বিজ্ঞান এখানে হিসাব খুব জটিল। ভুল হলে গরল। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কার পরাজয় হয়েছে? বিশেষ করে জাহাঙ্গীর আলমের ভাষায় ‘এটি নৌকার নয় বরং ব্যক্তি আজমত উল্লার পরাজয়’ মন্তব্যটি আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অন্যদিকে নেটিজেনদের ঠাট্টা সুষ্ঠু ভোটের জন্য আমেরিকার চাপে প্রথম ‘বলি’ হলেন আজমত উল্লা। জাহাঙ্গীর ঠিকই আঁচ করতে পেরেছিলেন তাকে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না, তাই মাকে প্রার্থী করে রাখেন। তার এ কৌশলী সিদ্ধান্তের কাছে আওয়ামী লীগ হেরেছে। বাংলাদেশে এতদিন উত্তরাধিকারের রাজনীতির সংস্কৃতিতে বাবা কিংবা মায়ের আসনে সন্তান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেন। এবার তার উল্টোটা ঘটতে দেখা গেল।
আওয়ামী লীগ ভেবেছিল জাহাঙ্গীরের মা অখ্যাত। ছেলের মতো প্রভাব ফেলতে পারবেন না তিনি। হালকাভাবে নেওয়াটা আওয়ামী লীগের ভুল ছিল। বহুদিন ধরে তারা এ কাজটি করে আসছে। ‘প্রতিপক্ষকে কখনো দুর্বল ভাবতে নেই’, কথাটা দলটি ভুলে গেছে। প্রার্থী হওয়ার আগে জাহেদা খাতুনকে রাজনৈতিক-সামাজিকভাবে গাজীপুরের মানুষ চিনত না, নির্বাচন তো দূরের কথা কোনো রাজনৈতিক কমর্সূচিতে তিনি ছিলেন না। জাহাঙ্গীর তার সেই মায়ের পক্ষে আওয়ামী লীগ বিরোধী ভোটকে একাট্টা করেছেন। নীরব সমথর্কদের সংগঠিত করেছেন। তিনি তার মাকে নিয়ে সাধারণ ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে গেছেন, কান্নাকাটি করেছেন। সহানুভূতি আদায় করেছেন। আর আজমত উল্লা ভোটারদের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন না, হয়তো নানাশক্তির ওপর তিনি নির্ভরশীল ছিলেন। প্রতিপক্ষকে খুব একটা হিসাবে ধরেননি। এটা ছিল ক্ষমতাসীনদের ভুল।
এটা ঠিক, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের কাছে এ নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার চ্যালেঞ্জ ছিল। সেই চ্যালেঞ্জকে অনেকটাই সামাল দিতে পেরেছে সরকার। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে বিজয়ী হলেও সাধারণ মানুষকে আস্থায় নিয়ে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বৈতরণী পার হতে পারবে কি না সেই প্রশ্নটা এখন সামনে চলে এসেছে। আমার মনে হয়, এ নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য অস্বস্তিকর সতর্ক সংকেতও। আওয়ামী লীগের ভেতর আরেকটি আওয়ামী লীগ তৈরি হয়েছে, সেটাও প্রমাণ হয়েছে এ নির্বাচনে। এরা যে কখন আওয়ামী লীগের ভেতর প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে, এটা দলটি ধারণা করতে পারেনি। এখন যারা আওয়ামী লীগ করেন তাদের বেশিরভাগই তা করেন স্বার্থসিদ্ধির জন্য, দলের আদর্শের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি খুব ক্ষীণ এটাও এ নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ছিল অতি আত্মবিশ্বাসী ও আত্মপ্রত্যয়ী। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় দলটির কারও কারও মধ্যে অহংকার এবং অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস বিপজ্জনকভাবে পর্যায়ে চলে গেছে। তারা মনে করেন দল যাকে মনোনয়ন দেবে তাকে প্রভাব খাটিয়ে জিতিয়ে আনবে। গাজীপুরেও সেই প্রবণতা দেখা গেছে। যার কারণে যেভাবে গুরুত্ব সহকারে মাঠে কাজ করার দরকার ছিল, সেভাবে তারা গাজীপুরে কাজ করেননি। রাজনীতি হুমকি, ধমকের বিষয় নয়। একটি সমঝোতার কৌশল। এ চিরন্তন সত্যটা আওয়ামী লীগ ভুলেই গেছে। ভয় দেখিয়ে, প্রভাব খাটিয়ে রাজনীতিতে জয়ী হওয়া যায় না।
জাহাঙ্গীর ও তার মা যখন স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেন, তখন আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ‘দমননীতির’ কৌশল নিয়েছিল। ভোটের আগে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা, দুদকে তলব, প্রচারের সময় গাড়ি ভাঙচুর, পেশিশক্তি প্রয়োগ সবই জনগণের মধ্যে জায়েদা খাতুনের পক্ষে এক ধরনের সহানুভূতি তৈরি করেছে। ভোটের দিন দেখা গেছে, নৌকার কার্ড গলায় ঝুলিয়ে তারা ঘড়ি মার্কায় ভোট দিয়েছেন।
গাজীপুরে পরিচিত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললাম। তারা জানাল ব্যক্তি জাহাঙ্গীর আলমের ইমেজ ও তার উন্নয়ন কাজ নগরবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। তাদের ধারণা, তাকে মেয়র পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলে থমকে যাবে উন্নয়ন কাজ। নানা ষড়যন্ত্র ও প্রতিহিংসার শিকার হলেও জাহাঙ্গীরের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা অটুট।
জাহাঙ্গীর আলমের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও সাধারণ মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থনের কারণেই তার মায়ের বিজয় সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। ঋণখেলাপির দায়ে তার প্রার্থিতা বাতিল হবে এটা জানত জাহাঙ্গীর। তাই তার পক্ষে মা জায়েদা খাতুনকে তিনি মেয়র পদে দাঁড় করান। সাধারণ নারী ভোটারদের অকুণ্ঠ সমর্থন, শ্রমিকদের মধ্যে জাহাঙ্গীরের জনপ্রিয়তাও জায়েদা খাতুনের জয়ে ভূমিকা রাখে। এছাড়া নির্বাচনের প্রচারে কয়েক দফা হামলা, বাধা দেওয়ার বিষয়টি মানুষের নজর কেড়েছে। ফলে মানুষ অনেকটা বিরক্ত হয়েই আজমত উল্লা খানের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। বিরোধী শিবিরের ভোটও পড়েছে জাহাঙ্গীরের মায়ের ব্যালটে। জায়েদা খাতুন যেসব আসনে এজেন্ট দিতে পারেননি, সেখানেও জিতেছেন তিনি। বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় তারা ও তাদের শরিকরা জায়েদা খাতুনের প্রতীকে ভোট দিয়েছেন।
আজমত উল্লা মার্জিত, বিনয়ী ও স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ হিসেবে গাজীপুরের রাজনীতিতে পরিচিত হলেও তার বিরুদ্ধে জনবিচ্ছিন্নতার অভিযোগ রয়েছে। ভোটারদের সঙ্গে পর্যাপ্ত যোগাযোগের অভাব, দলীয় কোন্দল এবং স্থানীয় প্রভাবশালী মন্ত্রী ও এমপিদের উদাসীনতাও রয়েছে। জাহাঙ্গীরের তুলনায় নির্বাচনের প্রচারে নৌকার প্রার্থী তেমন একটা টাকা খরচ করেননি।
সবচেয়ে বড় বিষয় হলো আওয়ামী লীগের বিভক্তি। সেই বিভক্তি নির্বাচনের আগে অতটা দেখা না গেলেও ভোটের দিন প্রকাশ পেয়েছে। প্রচারেও ছিল গাফিলতি। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কারণে ঢিলেমি ছিল প্রচারণায়। বড় বড় শোডাউন এবং রোড শো করলেও মানুষের দ্বারে দ্বারে যাননি। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে একাধিক নেতা পরাজয়ের কারণ হিসেবে বলছেন, দলের স্থানীয় নেতাকর্মীর মধ্যে ভেতরে ভেতরে দ্বন্দ্ব, গ্রুপিং। এতে আওয়ামী লীগের ভোট দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। আওয়ামী লীগের একাংশ গোপনে ঘড়ির পক্ষে কাজ করেছে। নৌকার প্রার্থী তা আগে ধরতে পারেননি। ভোটের পর আজমত উল্লা বলেছেন, দলে থাকা বেইমানদের গাদ্দারিতে হেরেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামো ও নির্বাচনী ব্যবস্থাটি এমন জায়গায় চলে গেছে যে, কার চেয়ে কে কতটা যোগ্য ও ভালো মানুষ সেটি তার জয়-পরাজয় নিয়ন্ত্রণ করে না। মানুষ এখন ভোট দেয় কিছু পাওয়ার উদ্দেশ্যে নয়, বরং অনেক সময় ভোট দিয়ে তার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। যে কারণে দেখা যায়, দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকের বাইরে থাকা বিপুল ভোটারের অনেকেই সুযোগ পেলেই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে ভোট দিতে নিরুৎসাহিত হন। আবার ক্ষমতাবানের কাছ থেকে তার কমিউনিটির অনেক মানুষ যেমন উপকৃত হন, তার বিপরীতে বিপুল সংখ্যক মানুষ বঞ্চিত এবং নানাভাবে নির্যাতিতও হন। ফলে তারা ভোটের সময় ‘দেখিয়ে দেওয়া’র অপেক্ষায় থাকেন। এ দেখিয়ে দেওয়ার ব্যাপারগুলো গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ঘটেছে। মানুষের ক্ষোভের আঁচটা যে মাত্রায় ছড়িয়েছে, এর প্রভাবটা এ নির্বাচনে পড়েছে। প্রশ্ন হলো এ জয় কি তাহলে মানুষের ক্ষোভের বিস্ফোরণ?
বিএনপি এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি, আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হয়েছিল আওয়ামী লীগই। দলের মধ্যে একটা অংশ তো বিরুদ্ধে ছিলই। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এখন নতুন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ের রাজনীতি, অভ্যন্তীরণ দ্বন্দ্ব, জনগণের মনোভাব ইত্যাদি সম্পর্কে দলের নীতিনির্ধারকদের কাছে যে সঠিক তথ্য নেই, সেটা বেশ বোঝা যাচ্ছে। আগামী নির্বাচনগুলোতেও যদি এরকম অন্তঃকলহ থাকে, তাহলে আওয়ামী লীগের জন্য গাজীপুরের মতোই পরিণতি অপেক্ষা করছে।
লেখক: প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।