
সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবি আদায়ের চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। সে কারণে নেতাকর্মীদের চাঙা করতে এবং কর্মসূচিগুলোতে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে দলের এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর প্রতি বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা দিচ্ছেন বিএনপির হাইকমান্ড।
বিএনপি এবং এর অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া যেসব নেতা পরপর তিনটি কর্মসূচিতে অনুপস্থিত থাকবেন তাদের দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে বলে সতর্ক করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে এ নির্দেশনার অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির দুই নেতাকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলকে চূড়ান্ত আন্দোলনে ভ্যানগার্ড হিসেবে দেখতে চান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আসন্ন রমজানে ইফতারের রাজনীতি শুরু হবে। এরপর সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নে চলমান আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ দেওয়া হবে। তাই চূড়ান্ত আন্দোলনের আগে নিষ্ক্রিয় নেতাদের দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে দলের ঘোষিত কর্মসূচিতে রাজপথে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ ছাড়া ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচিতে উপস্থিত না থাকলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে।’
আজ শনিবার ১২টি সাংগঠনিক মহানগরে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি করার পর নিষ্ক্রিয় নেতাদের তালিকা তৈরি করে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হবে বলে জানান আব্দুস সালাম।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হক গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, দলীয় কর্মসূচিতে গরহাজির থাকায় নেতাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি। এর অংশ হিসেবে মোহাম্মদপুর থানার অন্তর্গত ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির সহসভাপতি কেএম শামসুর রহমানকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শামসুর রহমান রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অনুপস্থিতিসহ সাংগঠনিক নির্দেশনা অমান্য করায় এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
আমিনুল হক বলেন, ‘এর আগে দলীয় শৃঙ্খলা বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির পল্লবী থানার আহ্বায়ক ও সাবেক কমিশনার মো. সাজ্জাদ হোসেনকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক যুগ্ম মহাসচিব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঢাকা মহানগর বিএনপির পাশাপাশি অঙ্গ সংগঠনগুলোর ঢাকা মহানগরের নেতাদের রাজপথে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে আগামীদিনের আন্দোলন সংগ্রামে ভ্যানগার্ড হিসেবে রাখতে চায় ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলকে। এই তিনটি অঙ্গ সংগঠনের ঢাকা মহানগরীর নেতাদের প্রস্তুত করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এর অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে সংগঠন তিনটির নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল সভা করেছেন তিনি। এখন সংগঠন তিনটির নেতারা নিজেদের কমিটির নেতাদের পাশাপাশি ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করছেন।
আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রামের জন্য ছাত্রদলকে কীভাবে প্রস্তুত করা হচ্ছে জানতে চাইলে বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আমরা ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের নেতাদের নিয়ে ধারাবাহিক বৈঠক করেছি। এখন ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়, বিভিন্ন কলেজ ইউনিটের নেতাদের নিয়ে ধারাবাহিক বৈঠক করছি। আগামীর আন্দোলন সংগ্রাম সফল করতে ছাত্রনেতাদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে।’
ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রাম যেকোনো মূল্যে সফল করতে চাই আমরা। এ কারণে সংগঠনে জবাবদিহিতা এবং সংগঠনের সব পর্যায়ের নেতাদের রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে নিয়মিত অংশগ্রহণের বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পদে থাকার পরও যাদের রাজপথে পাওয়া যাবে না তাদের দল থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবক ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এমন নির্দেশনা আমাদের দিয়েছেন।’
যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চলমান আন্দোলন সংগ্রামে সারা দেশে যুবদলের বেশ কিছু নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অনেকে। এছাড়া কারাগারে রয়েছে বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ যুবদল নেতা। সম্প্রতি যুবদল কেন্দ্রীয় সংসদের যে কমিটি গঠন করা হয়েছে তাদের নিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দিনব্যাপী স্কাইপে বৈঠক করেছি। নেতারা আগামীদিনের আন্দোলন সংগ্রাম সফল করতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে অঙ্গীকার করেছেন।’
স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের নতুন কমিটি গঠনের পর স্বল্প সময়ের মধ্যে পূর্ণা ঙ্গ কমিটি গঠন করে কেন্দ্রে জমা দিয়েছি। শিগগিরই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কমিটি যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত অনুমোদন করবেন। এরপর সে কমিটি ঘোষণা করা হবে। পাশাপাশি আগামীদিনের আন্দোলন সংগ্রামে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমাদের যে ভ্যানগার্ড হিসেবে দেখতে চায় তার জন্য সংগঠনের নেতাদের তৈরি করছি নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে।’
দেশে গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে করোনায় কোনো মৃত্যু নেই। সর্বশেষ ১ জন মারা গেছে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি। এমনকি এ বছর এখন পর্যন্ত মারা গেছে পাঁচজন। তাদের মধ্যে গত জানুয়ারিতে দুজনের ও ফেব্রুয়ারিতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। অথচ একসময় করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ছিল উদ্বেগজনক। গত বছরও মাসে গড়ে ১১৪ ও দিনে ৪ জন করে মারা গেছে। আগের বছর ২০২১ সাল ছিল করোনায় সর্বোচ্চ মৃত্যুর বছর। সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির পাশাপাশি সে বছর সর্বোচ্চ ২০ হাজার ৫১৩ জনের মৃত্যু হয়।
এখন করোনার সংক্রমণও কমে এসেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছে মাত্র পাঁচজন। পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হার ছিল শূন্য দশমিক ৩১ শতাংশ। এ বছরের জানুয়ারিতে দৈনিক গড়ে শনাক্ত হয়েছে ১৪ জন এবং পরের মাসে তা আরও কমে ১০ জনে নেমে আসে। আর ১৭ দিন ধরে দৈনিক গড় শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৭; অর্থাৎ দেশে করোনা মহামারীর আতঙ্ক তেমন নেই। মানুষ এখন অনেকটাই করোনামুক্ত বলে ধরে নিয়েছে। তবে মহামারী পরিস্থিতি মানুষকে অনেক বেশি সতর্ক করেছে। পরিস্থিতির দিকে তীক্ষè নজর রাখছে সরকারও।
করোনা পরিস্থিতির এমন নি¤œমুখী প্রবণতার মধ্যেই আজ করোনায় মৃত্যুর তিন বছর পার করল বাংলাদেশ। ৮ মার্চ ছিল করোনা মহামারীর তিন বছর। ২০২০ সালের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ দেখা দেয়। প্রথম শনাক্ত হয় তিনজন। এর ১০ দিন পর করোনায় প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা মহামারী নিয়ন্ত্রণে মোটামুটি সফল ছিল বাংলাদেশ। আর মৃত্যু নিয়ন্ত্রণে দেশের সাফল্য ছিল মাঝামাঝি ধরনের। এর কারণ হিসেবে করোনা টিকা প্রয়োগের সফলতাকে বড় করে দেখছেন। পাশাপাশি গ্রামপর্যায়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাব্যবস্থা, বয়স্ক জনসংখ্যার সংখ্যা কম, নিয়ন্ত্রণে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ ও সতর্কতাকেও কারণ বলে মনে করছেন তারা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত গত তিন বছরে দেশে করোনায় মোট মারা গেছে ২৯ হাজার ৪৪৫ জন এবং শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৩৭ হাজার ৯৫৯ জন। রোগটিতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ৫১ থেকে ৭০ বছর বয়সী মানুষের। সর্বোচ্চ মৃত্যু দেখেছে ঢাকা বিভাগের মানুষ।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘করোনায় মৃত্যু নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ মোটামুটি সফল ছিল। কারণ মৃত্যুর হারটা ১-২ শতাংশের কাছাকাছি ছিল। বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিশ্নেষণ করলে দেখা যায়, বাংলাদেশে যে মৃত্যুহার, সেটা গ্রহণযোগ্য। আমাদের যদি অন্য দেশের মতো অসংখ্য লোক মারাত্মক লক্ষণ নিয়ে আক্রান্ত হতো, তাহলে ভয়াবহ দুর্যোগ হতো।’
বাংলাদেশ করোনায় মৃত্যু নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে বলে মনে করেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের করোনা টিকার হার ভালো। এটাই মৃত্যু কমার বড় কারণ। টিকার কারণে এখানে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার সংখ্যা অনেক কমে গেছে। সরকার, স্বাস্থ্য কর্র্তৃপক্ষ গুরুত্ব দিয়েছে। নতুন ধরন এলেও টিকার কারণে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা কমে গেছে। কো-মর্বিডিটির কারণে বাংলাদেশে মৃত্যুতে বেশি মারা গেছে বয়স্ক মানুষ।
প্রথম মৃত্যু ২০২০ সালের ১৮ মার্চ : চীন থেকে প্রথম উৎপত্তি হওয়ার পর বাংলাদেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে ২০২০ সালের ৮ মার্চ। সেদিন তিনজনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর এই প্রথম মৃত্যু ঘটে ২০২০ সালের ১৮ মার্চ। এর পরের দুই মাস দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা ৩ অঙ্কের মধ্যে ছিল। পরে তা বাড়তে বাড়তে ওই বছরের জুলাই মাসে সর্বোচ্চে পৌঁছায়। ২ জুলাই সর্বোচ্চ ৪ হাজার ১৯ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। ২০২০ সালের নভেম্বরে সংক্রমণের গতি কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী হলেও ডিসেম্বর থেকে সেটা দ্রুত নিচের দিকে নামতে থাকে। সে বছরের মাঝামাঝি সময়ে সংক্রমণের হার ৩ শতাংশের নিচে নেমে এসেছিল আর দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৩০০ জনেরও কম।
বেশি মৃত্যু ৬১-৭০ বছরের : স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মোট মৃত্যুর ৩১ শতাংশই ছিল ৬১-৭০ বছর বয়সী মানুষ। এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মারা যায় ৫১-৬০ বছর বয়সী মানুষ, যা মোট মৃত্যুর ২৩ শতাংশ। তৃতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে ৭১-৮০ বছর বয়সী মানুষের, যা মোট মৃত্যুর ১৮ শতাংশ। এ ছাড়া ৪১-৫০ বছরের মধ্যে ১২ শতাংশ, ৮১-৯০ বছর ও ৩১-৪০ বছরের মধ্যে ৬ শতাংশ করে মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
ঢাকায় বেশি, ময়মনসিংহে কম : সর্বোচ্চ মানুষ মারা গেছে ঢাকা বিভাগে, যা মোট মৃত্যুর ৪৪ শতাংশ ও কম মারা গেছে ময়মনসিংহ বিভাগে, ৩ শতাংশ। এ ছাড়া চট্টগ্রামে ২০, খুলনায় ১৩, রাজশাহীতে ৭, রংপুরে ৫, সিলেটে সাড়ে ৪ ও বরিশালে ৩ শতাংশ মানুষ মারা গেছে।
বৈশ্বিক মানেও মাঝারি সফলতা বাংলাদেশের : ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশে বয়স্ক লোকদের আনুপাতিক সংখ্যা কম। এ কারণে মৃত্যুটা কোনো কোনো দেশের তুলনায় কম। ইউরোপ, আমেরিকায় যারা সিনিয়র সিটিজেন আনুপাতিক সংখ্যা অনেক বেশি। সে কারণে সেখানে মৃত্যুটা বেশি। বাংলাদেশে বৈশ্বিক মান অনুযায়ী সংক্রমণ ও মৃত্যু নিয়ন্ত্রণে মাঝারি মানের সাফল্য। আমাদের চেয়ে পূর্বের দেশ অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, জাপান, উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, সিঙ্গাপুর বেশি সফল। সেখানে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাব্যবস্থা খুব ভালো। তা ছাড়া ওদের প্রথম সার্স মহামারীর অভিজ্ঞতা আছে। ফলে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে ওখানকার নাগরিকরা আগে থেকেই অভ্যস্ত। যেসব দেশে সর্বজনীন প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ভালো, তারা দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। কিন্তু আমাদের দেশে সর্বজনীন প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নেই। শহরে এটা শূন্য। কমিউনিটি লেভেলে যেটুকু প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা আছে, বড় বড় শহরে তা নেই। এখানে বেসরকারি পর্যায়ের বড় বড় হাসপাতাল আছে।’
এ ব্যাপারে অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশে মোটামুটি কাছাকাছি মৃত্যুর হার। গ্রীষ্মপ্রধান ও অনুন্নত দেশগুলো যেখানে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা কম, সেই দেশগুলোতে মারাত্মক সংক্রমণ কম হয়েছে। আনুপাতিক হারে মৃত্যুও কম হয়েছে। যেমন করোনা টিকার উদ্যোগ বাংলাদেশের চেয়ে অন্যান্য দেশ দেরিতে নিয়েছে। সুতরাং এটা বলা যায়, বাংলাদেশ যা করেছে তা দক্ষিণ এশিয়ার দেশের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কাছাকাছি।
মহামারী ব্যবস্থাপনা রাখার পরামর্শ : অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রথমদিকে একটু সমস্যা হয়েছিল। যখন রোগী বাড়তে থাকল, তখন হাসপাতাল পাওয়া যাচ্ছিল না, প্রশিক্ষিত চিকিৎসা জনশক্তি ছিল না, আইসিইউ সেবা কম ছিল। কিন্তু পরে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এগিয়েছে এবং ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণের একটা পর্যায়ে এসেছে। চিকিৎসা সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি চিকিৎসাব্যবস্থা যুক্ত হলো। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু নিয়ন্ত্রণে খুব যে খারাপ করেছে বলা যাবে না। ভালোই করেছে। তবে অনেক ঘাটতি ছিল। সুতরাং এখান থেকে আমাদের উচিত শিক্ষা নেওয়া। এটাই শেষ প্যানডেমিক বা মহামারী নয়। এখন বার্ড ফ্লু দুয়ারে কড়া নাড়ছে। ভারতসহ বিভিন্ন দেশ ব্যবস্থা নিচ্ছে। করোনা থেকে শিক্ষা নিয়ে যে সব জায়গায় ঘাটতি, সেগুলো পূরণে সচেষ্ট হওয়া দরকার।’
ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘করোনা মোকাবিলায় আমরা যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বিস্তৃত করেছি, সেটা গুটিয়ে আনা ভালো হবে না। পরীক্ষার সুযোগ-সুবিধিা টিকিয়ে রাখতে হবে। আরটিপিসিআর ব্যবস্থ্য, হাইফ্লো অক্সিজেনব্যবস্থা, আইসিইউ এগুলো টিকিয়ে রাখতে হবে। সামনের দিকে এগোতে হবে। যত স্বেচ্ছাসেবক কর্মী তৈরি হয়েছে, তাদের রাখতে হবে। স্বাস্থ্যব্যবস্থায় এদের আত্তীকরণ করতে হবে। এদের যেন মাঝে মাঝে কাজে লাগানো যায়, সে ব্যবস্থা রাখতে হবে। করোনা মহামারী মোকাবিলার ব্যবস্থা যেন সরকার কোনোভাবেই ফেলে না রাখে।’
সেদিন আমার পকেটে সাকল্যে ছিল ১৫ টাকা। তৎকালীন দৈনিক বাংলা ভবনের লক্কর মার্কা লিফট দিয়ে সকালবেলা দুজন নামছি। আমি আর প্রয়াত সাংবাদিক মিনার মাহমুদ। মিনার ভাই আচমকা জানতে চাইলেন, পকেটে কত আছে? আচমকা প্রশ্ন করাটা ছিল তার অভ্যাস। আমিও যথারীতি চমকে গিয়ে জানিয়েছিলাম টাকার পরিমাণ। আশির দশকের মধ্যভাগে আমি তখন সাংবাদিকতা শিখি বন্ধ হয়ে যাওয়া দেশের বিখ্যাত সাপ্তাহিক কাগজ বিচিত্রায়। তখন আমাদের কারোর পকেটেই তেমন টাকা থাকত না। কিন্তু বিচিত্রার প্রিন্টার্স লাইনে নাম ছাপা হওয়ার আনন্দেই দিনগুলো সুবাসিত হয়ে থাকত। দেশের খ্যাতিমান সাংবাদিকদের সংস্পর্শে থেকে কাজ করার সুযোগ পাওয়াটাই ছিল এক বিশাল ঘটনা।
মিনার মাহমুদ সবেমাত্র বিচিত্রার স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। পত্রিকার সম্পাদকীয় বৈঠকে স্থির হলো আমরা দুজন মিলে মাদকাসক্তি নিয়ে স্টোরি করব। সেদিন সকালে আমাদের লক্ষ্য ছিলেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেত্রী জয়শ্রী কবিরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা। বিচিত্রা সম্পাদক প্রয়াত শাহাদত চৌধুরী সূত্রটা ধরিয়ে দিয়েছিলেন। তখন জয়শ্রী কবির প্যাথেড্রিনে আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন। স্পাইনাল কর্ডে একটা অপারেশনের পর তীব্র ব্যথা থেকে পরিত্রাণ পেতে তিনি চিকিৎসকের পরামর্শে এই ব্যথানাশক ইনজেকশন নিতে শুরু করেন এবং আসক্ত হয়ে পড়েন। তার ঠিকানা ছিল তখন মোহাম্মদপুরের একটি পরিত্যক্ত বাড়ি। এখনো মনে আছে, সেদিন আমরা দৈনিক বাংলা ভবন থেকে মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজার পর্যন্ত রিকশা ভাড়া করেছিলাম ১২ টাকায়। মিনার ভাইয়ের পকেট যে সেদিন একেবারেই শূন্য তার কোনো আভাস তখনো আমি পাইনি। মিনার ভাই রিকশায় উঠেই কয়েকটা সিগারেট কিনতে অমøান বদনে নির্দেশ দিলেন।
অগত্যা নিকট ভবিষ্যতে আর্থিক সংকটের চিন্তা জলাঞ্জলি দিয়ে সিগারেট কিনে রিকশায় উঠে বসি। তখন ঢাকার যানজটহীন রাস্তায় রিকশা ভ্রমণ বেশ আনন্দদায়ক ছিল। মিনার ভাই তার হাতে ধরা একটা বই দেখিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘বলো তো, এই বইটার মালিক কে?’
দেখি তার হাতে বাঁধানো একটা মোটা বই। মলাটে নাম লেখা নেই। বইটার প্রথম পৃষ্ঠা ওল্টাতেই জানা হয়, বইটি বিশ্বখ্যাত লেখক এরিখ মারিয়া রেমার্কের আরও বেশি আলোচিত উপন্যাস ‘থ্রি কমরেডস’। আগ্রহে পৃষ্ঠা ওল্টাতেই দেখি বইয়ের মালিক হিসেবে কবি আহসান হাবীবের নাম লেখা আছে। চমকে তাকাই মিনার ভাইয়ের দিকে। আমার দৃষ্টিতে ফুটে ওঠা বিস্ময় চিহ্নের সমাধান করতে জানিয়েছিলেন, বইটা চুরি করেছেন কবির লাইব্রেরি থেকে। এখানে উল্লেখ করা ভালো, কবির বড় ছেলে কথাশিল্পী মঈনুল আহসান সাবের ছিলেন তার বন্ধু। আমি রিকশায় বসেই সাগ্রহে বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টে যাই। আগে এ উপন্যাসটির বঙ্গানুবাদ আমি হাতে পাইনি।
সেদিন মোহাম্মদপুরে পৌঁছে বেশ কিছুক্ষণ এ গলি-সে গলি খোঁজাখুঁজির পর বাড়িটা আবিষ্কার করি। বাড়িটার পুরো অবয়ব এখন আর মনে পড়ে না। তবে সত্যিকার অর্থেই বাড়িটাকে পরিত্যক্ত মনে হয়েছিল। আমরা মøান কাঠের দরজায় কড়া নাড়তেই হাজির হন একজন নারী। তার পেছন পেছন ঢুকে পড়ি বাড়ির অন্দরমহলে। জানা গেল, জয়শ্রী কবির শাওয়ার নিচ্ছেন। অপেক্ষার পালা শুরু হয় আমাদের। মিনার ভাই প্রায় মাসুদ রানার ভঙ্গিতে দক্ষ হাতে তল্লাশি চালান ঘরে বসবাসরত একটি মাত্র টেবিলের ড্রয়ারে। একটু পরেই ঘরের জানালা দিয়ে অনুপ্রবেশকারী দুপুরের রোদ মøান করে দিয়ে উপস্থিত হলেন অভিনেত্রী। পরনে ছিল ঝকঝকে সাদা গাউন আর মাথায় একটা সাদা তোয়ালে উঁচু করে বাঁধা। মুখশ্রীতে সেই লাবণ্য আর নেই! সেদিন বেশ অনেকটা সময় কথা হয়েছিল জয়শ্রী কবিরের সঙ্গে। তিনি হেসেছিলেন, তিনি কেঁদেছিলেন সেই দুপুরে। তার অভিনয়ে উজ্জ্বল কিছু সিনেমার প্রসঙ্গ বারবার তুলছিলেন মিনার ভাই। আর তাতেই অশ্রুসজল হয়ে উঠছিলেন তিনি। একজন সাংবাদিককে তথ্য বের করতে কত কৌশল যে অবলম্বন করতে হয়! সেদিন আমাদের কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন। অনেক প্রশ্নে ছিলেন নিরুত্তর। কিছুটা সময় পরে নিজেই লাঞ্চ করবেন বলে বিদায় নিয়েছিলেন। আমরা পরের দিন আসব বলে বাড়িটা থেকে বের হয়ে এসেছিলাম বাইরে, তীব্র রোদের ভেতরে।
বিপত্তি হলো সাকুরা রেস্তোরাঁর কাছে এসে। মিনার ভাই চমকে তাকিয়ে দেখেন ‘থ্রি কমরেডস’ বইটা ফেলে এসেছেন ওই বাড়িতে। আবার যে ফিরে যাব তার উপায়ও ছিল না। কারণ আমাদের দুজনের পকেটই ছিল ফাঁকা। অগত্যা আগামীকালের ভরসা।
সেদিন আরেকটি ঘটনা ঘটেছিল। ফেরার পথে আমরা আরেকটি সাপ্তাহিক পত্রিকার অফিসে ঢুঁ দিয়েছিলাম। ভারপ্রাপ্ত সম্পাদককে এক পীর সাহেব সম্পর্কে একটা বানানো গল্প বলে সেই ঘটনার ওপর স্টোরি লেখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মিনার মাহমুদ আগাম টাকা নিয়েছিলেন কৌশলে। সে টাকায় সেদিন দুপুরে আমাদের জমজমাট মধ্যাহ্নভোজ জুটেছিল।
‘থ্রি কমরেডস’ বইটা কিন্তু আমরা হারিয়ে ফেলেছিলাম। হারিয়েছিলাম জয়শ্রী কবিরকেও। পরদিন মোহাম্মদপুরের সেই ঠিকানায় গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি রহস্যজনকভাবে। হয়তো তিনি আর কথা বলতে চাননি আমাদের সঙ্গে। যত দূর জানি, জয়শ্রী কবির এখন ইউরোপে বসবাস করেন। সেই দিনগুলোর ছায়া তার ওপর মেঘ বিস্তার করে নেই। আজকাল পেছন ফিরে তাকিয়ে ভাবি, সাংবাদিকতা শুরুর সেই দিনগুলো কী রোমাঞ্চকর আর ঘটনাবহুল ছিল! কত আবিষ্কারের আনন্দ আমাকে আলোড়িত করেছিল তুমুলভাবে। কত কী শিখেছিলাম একটা সময়ে! আর তাতে শেখার আনন্দটা ছিল রাজার মতো।
কাতার প্রবাসী জাহাঙ্গীর আলম ড্রাইভিং লাইসেন্স (অপেশাদার) পাওয়ার পরীক্ষা দিতে অনলাইনে আবেদন করেছেন গত ২৮ ফেব্রুয়ারি। তার লার্নার নম্বর হলো : ৫০-১৫৯৫৯৭০৮। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্র্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এই প্রবাসীর লাইসেন্স পরীক্ষায় অংশগ্রহণের তারিখ দিয়েছে আগামী ২৯ মে। কিন্তু সেদিনই জাহাঙ্গীরের কাতারের ভিসার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। যে কারণে এর আগে দেশটিতে পৌঁছাতে হবে তার। এমন পরিস্থিতিতে পরীক্ষার তারিখ এগিয়ে আনতে বিআরটিএর চট্টগ্রাম সার্কেল অফিসের কর্তাদের কাছে এরই মধ্যে একাধিকবার ধরনা দিয়েছেন জাহাঙ্গীর। কিন্তু মেলেনি কোনো ফল।
বিআরটিএর চট্টগ্রাম সার্কেল অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত তারিখ এগিয়ে আনতে হলে জাহাঙ্গীর আলমকে সশরীরে যেতে হবে ঢাকায় বিআরটিএ চেয়ারম্যানের দপ্তরে। মাত্র তিন মাস আগেও আবেদনকারীর জরুরি প্রয়োজনে পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন করার এখতিয়ার ছিল বিআরটিএ চট্টগ্রাম সার্কেল অফিসের প্রধান কর্তার। এখন তার সেই এখতিয়ার আর নেই। তারিখ পরিবর্তনের জন্য সংশ্লিষ্ট আবেদনকারীকে দৌড়াতে হচ্ছে ঢাকায় চেয়ারম্যানের দপ্তরে।
ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষার তারিখ এগিয়ে নিয়ে আসতে না পারায় চরম হতাশা প্রকাশ করেছেন কাতার প্রবাসী জাহাঙ্গীর আলম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী ২৯ মে আমার ভিসার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। কর্মকর্তাদের কাছে অনেক তদবির করেছি। কিন্তু তারা বলেছেন, পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তনের ক্ষমতা বিআরটিএ চেয়ারম্যানের হাতে। এটা এক ধরনের হয়রানি। লাইসেন্সটা পেলে কর্মক্ষেত্রে আমার উপকার হতো।’ বিআরটিএ চট্টগ্রাম সার্কেল অফিসের তথ্য অনুযায়ী, শুধু জাহাঙ্গীর আলম একাই নন, ২৯ মে ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য যে ২৫০ জনকে তারিখ দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে ৪০-৪২ জন আবেদনকারী এমন ভোগান্তিতে পড়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই বিদেশগামী। এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিআরটিএ চট্টগ্রাম সার্কেলের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লাইসেন্স পরীক্ষার তারিখ এগিয়ে আনতে যেসব আবেদনকারী বিআরটিএ চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করেছেন তারাও নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ঢাকায় আবেদন পাঠালেও সেটি ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে থাকে মাসের পর মাস। সেখানে সংশ্লিষ্টদের ঘুষ না দিলে আবেদনপত্র পৌঁছে না চেয়ারম্যানের টেবিলে। অবশ্য অনেকেই সরাসরি চেয়ারম্যানের কাছে গিয়ে পরীক্ষার তারিখ এগিয়ে নিয়ে আসতে সক্ষম হচ্ছেন।’
বিআরটিএ চট্ট-মেট্রো সার্কেল-২-এর সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার) মো. ওমর ফারুক চট্টগ্রাম কার্যালয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন করতে না পেরে আবেদনকারীদের ভোগান্তির বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তিন-চার মাস আগেও এখানকার কর্র্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করে পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন করা যেত। কিন্তু এখন তারিখ পরিবর্তনের এখতিয়ার শুধু চেয়ারম্যান স্যারের কাছে। আবেদনকারীরা বিপাকে পড়লেও আমাদের করার কিছু নেই।’
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদারের মোবাইল ফোনে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে কল করার কারণ জানিয়ে তার মোবাইল ফোনে বার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি।
উপাচার্য ছাড়াই এক বছরের বেশি সময় ধরে কার্যক্রম চালাচ্ছে রাজশাহীর নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। ভারপ্রাপ্ত হিসেবে আগের উপাচার্যকেই দায়িত্ব দিয়ে তার স্বাক্ষরেই দেওয়া হচ্ছে মূল সনদপত্রগুলো। এতে করে পরে এই সনদপত্রের সঠিক মূল্যায়ন হবে কি না তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে শিক্ষার্থীদের মনে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, উপাচার্য নিয়োগের জন্য প্যানেল পাঠানো হয়েছে। তাই যত দিন নতুন উপাচার্য নিয়োগ না হচ্ছে তত দিন ট্রাস্টি বোর্ডের নির্দেশে এই উপাচার্যই ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দাপ্তরিক কাজগুলো করবেন। কিন্তু ইউজিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেছেন, কাউকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষমতা নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের। নিয়ম অনুযায়ী, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হলে সেখানকার উপ-উপাচার্য দায়িত্ব পালন করবেন। আর উপ-উপাচার্যও যদি না থাকেন তবে সে ক্ষেত্রে কোষাধ্যক্ষ দায়িত্ব পালন করবেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার রিয়াজ মাহমুদ বলেন, ‘উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছরের জানুয়ারিতে। নতুন উপাচার্য নিয়োগের জন্য প্যানেল পাঠানো হয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ট্রাস্টি বোর্ড সর্বোচ্চ কর্র্তৃপক্ষ। তারা যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটা বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষকে মানতে হবে। ট্রাস্টি বোর্ড থেকে প্রফেসর আবদুল খালেককে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে। যেহেতু তিনি ভারপ্রাপ্ত হিসেবে এখন দায়িত্বে আছেন, সেহেতু সব ডকুমেন্টে তিনি স্বাক্ষর করতে পারবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্যানেল পাঠিয়েছি। সেটা ইউজিসি, মন্ত্রণালয় হয়ে চ্যান্সেলর নিয়োগ দেবেন। যেহেতু নিয়োগ এখনো হয়নি, সুতরাং বিশ্ববিদ্যালয় তো বন্ধ করে রাখা যাবে না। তাই স্বাভাবিক কার্যক্রম চালানোর স্বার্থে ট্রাস্টি বোর্ড তাকে (আবদুল খালেক) ভারপ্রাপ্ত হিসেবে রেখেছে। তবে কবে নাগাদ নিয়োগ হবে এটা ট্রাস্টি বোর্ড বলতে পারে।’
উপাচার্য নিয়োগ না হওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো দায় নেই দাবি করে রেজিস্ট্রার রিয়াজ মাহমুদ বলেন, ‘একটি সার্টিফিকেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের স্বাক্ষর লাগে। এখন উপাচার্য নিয়োগ দেন চ্যান্সেলর। তাই চ্যান্সেলর যত দিন নিয়োগ না দেবে তত দিন ভারপ্রাপ্ত যিনি আছেন তিনিই কাজ চালাবেন। এ ক্ষেত্রে উপাচার্য নিয়োগের জন্য প্যানেল না পাঠালে একটা দায় থাকে। কিন্তু এখানে এমনটি নয়। প্যানেল পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সেই অনুযায়ী এখনো নতুন উপাচার্য নিয়োগ হয়ে আসেনি।’
এ বিষয়ে নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রাশেদা খালেক বলেন, ‘আমাদের ইউনিভার্সিটিতে উপাচার্যের পদ শূন্য। আমরা নিয়োগের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন পাঠিয়েছি। তবে এখনো নিয়োগ দেয়নি। এখন উপাচার্য ছাড়া তো আর বিশ্ববিদ্যালয় চলে না। এটা তো বন্ধ থাকতে পারে না। তাই আমরা ট্রাস্টি বোর্ড থেকে প্রফেসর আবদুল খালেককে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে রেখেছি। যত দিন নিয়োগ না দেওয়া হবে তত দিন তিনিই সব কাজ চালিয়ে যাবেন। সার্টিফিকেটে তিনিও সাইন করছেন। সেখানে তিনি ভারপ্রাপ্ত হিসেবেই সাইন করছেন।’
তবে ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পরিচালক ওমর ফারুক জানান ভিন্ন তথ্য। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তাদের ট্রাস্টি বোর্ড উপাচার্য নিয়োগের জন্য একটি প্যানেল পাঠিয়েছেন। সেটি আমরা এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হয়ে যাবে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে। সেখান থেকেই চূড়ান্ত হবে এটি। তবে, যতক্ষণ নতুন উপাচার্য নিয়োগ না হচ্ছেন তত দিন সেখানকার উপ-উপাচার্য সেই দায়িত্ব পালন করবেন। আর উপ-উপাচার্য যদি না থাকেন তবে সেখানে কোষাধ্যক্ষ এই দায়িত্ব পালন করবেন।’
নর্থ বেঙ্গল ইউনিভার্সিটিতে আগের উপাচার্যই ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এটা নিয়মসম্মত কি না জানতে চাইলে ওমর ফারুক বলেন, ‘এভাবে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার নিয়ম নেই।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল জলিল বলেন, ‘বিষয়টা খুবই গোপনীয়। এটা আমার জানার কথা না যে, কবে প্যানেল পাঠানো হয়েছে।’
উপাচার্যের মেয়াদ শেষে নিয়ম অনুযায়ী উপ-উপাচার্য হিসেবে তারই দায়িত্বে থাকার কথা কি না জানতে চাইলে অধ্যাপক আবদুল জলিল বলেন, ‘আইনের ব্যাপারটি আমাকে জিজ্ঞেস না করাই ভালো। আমি এমপ্লয়ি আর খালেক স্যার হচ্ছে মালিক। কাজেই এমন জটিল প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারব না। এটা নিয়ে এসব প্রশ্ন সরাসরি স্যারের সঙ্গে কথা বলাই ভালো।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল খালেক বলেন, ‘উপাচার্য নিয়োগের জন্য তিনজনের একটি প্যানেল এখান থেকে পাঠানো হয়েছে। এটির প্রক্রিয়া চলছে। যতটুকু জানি এটি খুব তাড়াতাড়িই হয়ে যাবে। এখন আমি নিজেই ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।’
উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হলে নিয়ম অনুযায়ী উপ-উপাচার্য বা কোষাধ্যক্ষ এই দায়িত্বে থাকার কথা কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা ট্রাস্টি বোর্ড ঠিক করে।’
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় ১২ জন প্রাণ হারিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে গতকাল শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত নিহত হয় তারা।
এসব ঘটনায় আহত হয়েছে আরও অন্তত পাঁচজন। এর মধ্যে গতকাল সকালে ভোলার দৌলতখানে বাসচাপায় কলেজছাত্রীসহ তিনজন প্রাণ হারিয়েছে। নিহতরা ব্যাটারিচালিত গাড়ির যাত্রী ছিল। গতকাল দুপুর ১টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় ট্রাক উল্টে পথচারীসহ দুজন নিহত হয়েছে। রাজধানীর কাকরাইলে ট্রাকের ধাক্কায় এক ব্যবসায়ী এবং যাত্রাবাড়ীতে গাড়িচাপায় এক যুবক নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া টাঙ্গাইলে বাসচাপায় এক ট্রাকচালক প্রাণ হারিয়েছেন। সিরাজগঞ্জে সড়কে প্রাণ গেছে তিনজনের। বগুড়ায় দুই মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে এক মুক্তিযোদ্ধা নিহত হয়েছেন।
বিস্তারিত আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের খবরে :
দৌলতখানে বাসচাপায় ২ কলেজছাত্রীসহ নিহত ৩ : ভোলার দৌলতখানে যাত্রীবাহী বাসের চাপায় স্থানীয়ভাবে ‘বোরাক’ নামে পরিচিত ব্যাটারিচালিত গাড়িতে থাকা দুই কলেজছাত্রীসহ তিনজন নিহত হয়েছে। গতকাল সকালে ভোলা-চরফ্যাশন মহাসড়কে উপজেলার উত্তর জয়নগর ইউনিয়নের ওতরুদ্দিন এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেনÑ উত্তর জয়নগর ইউনিয়নের কয়ছর মাতাব্বরের কলেজপড়–য়া মেয়ে রিমা আক্তার, জাহাঙ্গীরের মেয়ে শিখা এবং মাংসব্যবসায়ী আবুল কালাম। নিহত দুই কলেজছাত্রী বাংলাবাজার হালিমা খাতুন মহিলা কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। তারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে যাচ্ছিলেন।
স্থানীয়রা জানান, দুই কলেজছাত্রীসহ তিনজন তাদের বাড়ির সামনের সড়ক থেকে বোরাকে চড়ে বাংলাবাজার যাচ্ছিলেন। পথে ওতরুদ্দিন এলাকায় বিপরীত দিক থেকে আসা চরফ্যাশনগামী একটি বাস বোরাকটিকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তারা নিহত হন।
দৌলতখান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সত্যরঞ্জন খাসকেল জানান, দুর্ঘটনার পর ‘বীর শ্যামলী’ নামে ওই বাস ও এর চালক আল আমীনকে আটক করেছে পুলিশ।
কসবায় ট্রাক উল্টে পথচারীসহ নিহত ২ : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় ট্রাক উল্টে পথচারীসহ দুজন নিহত হয়েছে। গতকাল দুপুর ১টার দিকে উপজেলার কসবা-সৈয়দাবাদ সড়কে বিনাউটি ইউনিয়নের চান্দাইসার গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত চালক কামাল মিয়াকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহতরা হলেন ওই ট্রাকের চালকের সহকারী পাপেল হোসেন (১৬) ও পথচারী দেলোয়ার হোসেন (৩৫)। কৃষক দেলোয়ার উপজেলার বিনাউটি ইউনিয়নের হাজীপুর গ্রামের আজিজুল হকের ছেলে। পাপেল একই ইউনিয়নের সৈয়দাবাদ গ্রামের আবদুর রহমানের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, দেলোয়ার হোসেন জুমার নামাজ আদায় করার জন্য জমিতে কাজ শেষে কসবা-সৈয়দাবাদ সড়ক দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। চান্দাইসার এলাকায় কসবা থেকে সৈয়দাবাদ ফেরার পথে ইটবহনকারী একটি খালি ট্রাক দুপুর ১টার দিকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এ সময় পথচারী দেলোয়ার, চালকের সহকারী পাপেল ও চালক সালাউদ্দিন গাড়ির নিচে পড়ে যায়। স্থানীয়রা তাদের কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে দেলোয়ার ও পাপেলকে মৃত ঘোষণা করা হয়। চালক সালাউদ্দিনকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পাঠানো হয়।
এদিকে নিহত দেলোয়ারে লাশ বাড়িতে নিয়ে গেলে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য তৈরি হয়। তার দুই মেয়ে আর এক ছেলেসহ স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়ে।
খবর পেয়ে কসবা থানার ওসি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হাবিবুর রহমান, বিনাউটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. বেদন মিয়া ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। দুঘর্টনার শিকার হওয়া ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে।
ওসি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এতে এক পথচারীসহ দুজন মারা গেছে।
রাজধানীতে নিহত ২ : রাজধানীর কাকরাইলে ট্রাকের ধাক্কায় আবদুল্লাহ লিমন (২৮) নামে এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। তিনি মোটরসাইকেল আরোহী ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ২টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে রাত আড়াইটার দিকে তার মৃত্যু হয়। এ ছাড়া যাত্রাবাড়ীতে সড়কে অজ্ঞাতনামা এক যুবক নিহত হয়েছে।
কাকরাইলে নিহত লিমনের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলার কলেজ রোডে। তার বাবার নাম মৃত মজিবুর রহমান। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে মেজ ছিলেন লিমন।
রমনা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মুজাহিদুল ইসলাম জানান, মধ্যরাতে কাকরাইলে প্রধান বিচারপতি বাসভবনের সামনের মোড়ে একটি ট্রাকের সঙ্গে লিমনের মোটরসাইকেলটির ধাক্কা লাগে। এতে ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হন তিনি। পরে ঢামেক হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। ঘটনার পরপরই ট্রাকটি জব্দ ও এর চালককে আটক করা হয়েছে।
নিহত লিমনের বড় ভাই মো. কাজল জানান, তারা নারায়ণগঞ্জে থাকেন। এলাকাতে ব্যাটারি-আইপিএসের ব্যবসা রয়েছে লিমনের। বন্ধুর বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে নিজের মোটরসাইকেল নিয়ে ঢাকায় আসেন লিমন। অনুষ্ঠান শেষে মাঝরাতে আবার বাড়ি ফেরার জন্য রওনা হয়েছিল। পরে পুলিশের মাধ্যমে তার দুর্ঘটনা খবর শুনে হাসপাতালে গিয়ে মরদেহ দেখতে পান তারা।
এদিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে সড়ক দুর্ঘটনায় অজ্ঞাতনামা এক যুবক নিহত হয়েছেন। তার বয়স আনুমানিক ৩৫ বছর। গত বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
যাত্রাবাড়ী থানার এসআই মোস্তাফিজার রহমান জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী মাতুয়াইল রাজধানী ফিলিং স্টেশনের সামনের সড়কের রাস্তা পার হওয়ার সময় কোনো যানবাহন তাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়। তার নাম পরিচয় সনাক্তের জন্য পুলিশ কাজ করছে।
টাঙ্গাইলে বাসচাপায় ট্রাকচালক নিহত : বঙ্গবন্ধু সেতু ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে বাসচাপায় ইরফান মিয়া (৫০) নামে এক ট্রাকচালক নিহত হয়েছেন। গতকাল বিকেলে মহাসড়কের কালিহাতী উপজেলার পৌলি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ইরফান মিয়া পৌলি এলাকার মৃত বাবর আলীর ছেলে।
স্থানীয়রা জানায়, ইরফান মহাসড়কের পূর্ব পাশ থেকে হেঁটে পশ্চিম পাশে ছোট ভাইকে টাকা দিতে আসছিল। এ সময় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা উত্তরবঙ্গগামী একটি বাস ইফরানকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই ইরফানের মৃত্যু হয়।
এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট শিবু নাথ সরকার বলেন, আইনি প্রক্রিয়া শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
সিরাজগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩ : সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় সোহান (১৯) নামে এক যুবক নিহত ও অপর দুইজন আহত হয়েছেন।
গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার ভাঙ্গাবাড়ি ইউনিয়নের বানিয়াগাঁতী নতুনপাড়া কবরস্থান এলাকায় বেলকুচি-বানিয়াগাঁতী সড়কে এ ঘটনা ঘটে। নিহত সোহান উপজেলার বওড়া পশ্চিমপাড়া এলাকার জাহাঙ্গীর হোসেনের ছেলে। আহতদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তাদের নাম জানা যায়নি।
বেলকুচি থানার এসআই সালাউদ্দিন জানান, তিনজন বানিয়াগাঁতী কবরস্থান এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মোটরসাইকেলটি রাস্তার পাশের একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ঘটনাস্থলেই সোহান মারা যায়। গুরুতর আহত হয় অপর দুই আরোহী। এলাকাবাসী তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় ক্লিনিকে ভর্তি করে। সেখানে তাদের অবস্থার অবনতি হলে ঢাকায় পাঠানো হয়।
অপরদিকে বৃহস্পতিবার রাতে রায়গঞ্জ উপজেলার ভূঁইয়াগাঁতী কামারপাড়া ব্রিজ এলাকায় বগুড়া-নগরবাড়ি মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাসচাপায় জাহাঙ্গীর আলম (৩০) নামে অপর এক যুবক নিহত হয়েছে। নিহত জাহাঙ্গীর বেলকুচি উপজেলার বাসিন্দা বলে জানা গেছে। তিনি রায়গঞ্জের বাড়িপাড়া গ্রামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের হিসাবরক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ওসি বদরুল কবির জানান, জাহাঙ্গীরসহ তিনজন একটি অটোভ্যানে করে যাচ্ছিল। এ সময় পেছন থেকে একতা পরিবহনের একটি বাস তাদের চাপা দিলে জাহাঙ্গীর ঘটনাস্থলেই মারা যায়। অটোভ্যানের অপর যাত্রীরা সামান্য আহত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে বাসটিকে জব্দ করেছে।
বগুড়ায় দুই মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে বৃদ্ধ নিহত : বগুড়ায় দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে আলী আজগর (৭২) নামে এক মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বিকেল সোয়া ৩টার দিকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। আলী আজগর সারিয়াকান্দি উপজেলার হিন্দুকান্দী গ্রামের মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে ও উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার। এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে ধুনটের কালেরপাড়া ইউনিয়নের আরকাদিয়া ব্রিজে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
ধুনট থানার ওসি রবিউল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার চিকাশী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সম্মেলনে যাওয়ার পথে আরকাদিয়া ব্রিজের কাছে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আজগরসহ দুজন গুরুতর আহত হন। পরে তাদের উদ্ধার করে প্রথমে ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাদের বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানেই আজ (গতকাল) সোয়া ৩টায় তিনি মারা যান।
ওসি আরও জানান, মোটরসাইকেল দুটি থানায় জব্দ করা আছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেলের আলো ঝলমলে অডিটোরিয়ামে দেশি-বিদেশী মডেল ভাড়া করে এনে সাড়ম্বরে ঘোষণা করা হয়েছিল প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক নারী ফুটবল আসর ওমেন্স সুপার লিগের। সিনে জগতের তারকাদের সঙ্গে মঞ্চে র্যাম্প করতে করতে প্রত্যাশার ঘুড়িটা দূর আকাশে উড়িয়েছিলেন সাবিনা-সানজিদারা। দেশের ফুটবলের বড় বিজ্ঞাপন এখন তারা। ফুটবলপ্রেমীদের তাদের নিয়ে অসীম আগ্রহকে পুঁজি করে কে-স্পোর্টস আর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন চেয়েছিল ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট করে ফায়দা লুটতে। তবে দিন যত গড়িয়েছে, মেয়েদের স্বপ্ন ধূসর হয়েছে। এখন তো তা মিলিয়ে গেছে বহুদূরে।
কে-স্পোর্টস-বাফুফের কর্তারা বুঝেছেন, তাদের লেখা চিত্রনাট্য আর বাস্তবতায় বড্ড ফাঁরাক। তাই তারা বারবার টুর্নামেন্ট শুরুর তারিখ দিয়েও আলোচিত টুর্নামেন্টকে মাঠে নিয়ে যেতে পারেননি। সর্বশেষ ১০ জুন আসর শুরুর ঘোষণা দিয়েছিলেন খোদ বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। সেটাও মিথ্যে হয়ে গেছে। তাই হতাশা ছাঁপিয়ে নারী ফুটবলারদের মনে ভর করেছে রাজ্যের ক্ষোভ।
কে-স্পোর্টস আর বাফুফের কর্তারা ভেবেছিলেন এমন একটা টুর্নামেন্টের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করতে হামলে পড়বে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। গত বছর নেপালে সাফ শিরোপা জয়ের পর মেয়েদের নিয়ে যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল, সেটাই আসলে স্বপ্নবাজ করে তোলে সালাউদ্দিন-মাহফুজা আক্তার-ফাহাদ করিমদের। তবে হয়েছে উল্টো। সেটাই যে হওয়ার কথা! কে-স্পোর্টস কিংবা বাফুফে, দুটি প্রতিষ্ঠানই যে এখন ভীষণভাবে ইমেজ সঙ্কটে ভুগছে। এর মাঝে অগোচরে একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে, যেটা কখনই প্রত্যাশিত ছিল না। কে-স্পোর্টস আর বাফুফের দেখানো স্বপ্নে বুদ হয়ে গিয়েছিলেন ফুটবলাররা। এমন একটা টুর্নামেন্টে খেলতে মুখিয়ে ছিলেন তারা। এমনিতে ঘরোয়া ফুটবল খেলে সেভাবে পারিশ্রমিক জুটে না। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে হলে একটা আকর্ষণীয় পারিশ্রমিকের হাতছানি ছিল। তারচেয়েও বেশি ছিল নানা দেশের নামী-দামী ফুটবলারদের সঙ্গে ড্রেসিং রুম শেয়ার করার সুবর্ণ সুযোগ। দারুণ একটা স্বপ্ন বাস্তবায়নে মুখ বুজে মেয়েরা কঠোর পরিশ্রম করে গেছেন দিনের পর দিন। এর মাঝেই তারা দেখেছেন বাবার মতো কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের বিদায়। বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর ন্যায্য দাবী পুরোপুরি পূরণ না হওয়ার পরও তারা বাফুফের কঠোর অনুশাসন মেনে দুঃসহ গরমে সকাল-বিকাল ঘাম ঝড়িয়েছেন। এরপর যখন দেখলেন এই স্বপ্ন বারবার হোচট খাচ্ছে কে-স্পোর্টসের ব্যর্থতা আর বাফুফের অদূরদর্শীতায়, তখন আর মুখ বুজে থাকতে পারলেন না। হতাশার কথা জানাতে গিয়ে অগোচরে তাদের কণ্ঠ থেকে বের হয়ে এসেছে ক্ষোভের আগুন।
অবস্থা বেগতিক দেখে তড়িঘড়ি বৃহস্পতিবার ক্যাম্প বন্ধ ঘোষণা করে বাফুফে। সিনিয়র খেলোয়াড়দের দেওয়া হয় পাঁচ দিনের ছুটি। বৃহস্পতিবার রাতে বাসে করে সাতক্ষীরাগামী সাফজয়ের অগ্রনায়ক সাবিনা খাতুন দেশ রূপান্তরকে মুঠোফোনে বলছিলেন, 'ওমেন্স সুপার লিগ স্রেফ আমাদের আবেগ নিয়ে খেললো।' একটু থেমে আবার বলতে শুরু করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, 'প্রথমত সাফের পর কোন খেলা নেই। তারপর এই লিগ মেয়েদের নিয়ে দুই দফা এত কিছু করলো, এত আশা দিলো, মেয়েরা খেলার জন্য মুখিয়ে ছিল। আর সব থেকে বড় ব্যাপার বিদেশী খেলোয়াড় যারা দক্ষিণ এশিয়ার, তাদের নিয়ে আমি নিজেও কাজ করছিলাম। তাদের কাছে এখন আমার সম্মান কই থাকলো! বারবার তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। মেয়েরা অনেক আশায় ছিল। কিন্তু... । এটা নিয়ে অবশ্য মেয়েরা অনেক আগেই আশা ছেড়ে দিয়েছিল। এখন আমিও কোন আশা দেখছি না।'
সতীর্থদের সংগে ময়মনসিংহের কলসিন্দুরে বাড়ির যেতে যেতে জাতীয় দলের রাইট উইঙ্গার সানজিদা বলছিলেন, 'আসলে কিছু বলার ভাষাই হারায় ফেলেছি। একটা টুর্নামেন্ট হওয়ার কথা ছিল। এর জন্য আমরা কঠোর অনুশীলণ করছিলাম। আশা ছিল খেলবো। এখন সেটা হচ্ছে না বলে খুব কষ্ট লাগছে। যখন শুনলাম লিগটা হবে না, তখন মনের অবস্থা কেমন হতে পারে, বুঝতেই পারছেন।'
সাফের পর কোন ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি সিনিয়র ফুটবলাররা। এ নিয়ে ভীষণ হতাশ সানজিদা বলেন, 'নয়টা মাস ধরে অপেক্ষায় আছি খেলার। প্রীতি ম্যাচ বলেন কিংবা কোন টুর্নামেন্ট, একটা ম্যাচও আমরা খেলতে পারিনি সাফের পর। অথচ আমাদের সঙ্গে যারা সাফে খেলেছে, তারা প্রায় সবাই পাঁচটা-ছয়টা করে প্রীতি ম্যাচ খেলে ফেলেছে এর মধ্যে।' মেয়েদের সিঙ্গাপুরে গিয়ে প্রীতি ম্যাচ খেলার কথা ছিল, মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাই খেলার কথা ছিল। অথচ বাফুফে অর্থ সঙ্কটসহ নানা অযুহাতে তাদের খেলতে পাঠায়নি। সানজিদা বললেন, 'আমরা আসলে হতাশ হতেও ভুলে গেছি। বারবার টুর্নামেন্টে খেলার কথা বলা হয়, আবার সেটা বাতিল হয়। এরকমটা হতে হতে আসলে আমরা পরিস্থিতির শিকার হয়ে গেছি।'
হতাশা, বঞ্চনায় বাফুফের চাকুরি থেকে পদত্যাগ করেছেন নারী দলের প্রধান কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। প্রিয় কোচের জন্য কষ্ট পান সানজিদা, 'ছোটন স্যারের হাত ধরেই আমার এখানে আসা। তার কাছেই আমার ফুটবলার হয়ে গড়ে ওঠা। তিনি চলে গেছেন। এতে খুব কষ্ট পাই। তিনি আমাদের অনেক আদর-যত্ন করতেন। বাবা-মেয়ের সম্পর্ক যেমন হয়, ঠিক তেমন সম্পর্ক ছিল।'
১৩ জুন সাবিনা-সানজিদাদের ক্যাম্পে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে বাফুফে। বিকল্প নেই বলে তারা হয়তো ফিরবেন। তবে ফেরার সময় তাদের চোখে থাকবে না বড় কোন স্বপ্ন। সেটা দেখাই বারণ। কে-স্পোর্টস আর বাফুফে মিলে যে মেয়েদের সব স্বপ্ন গলা টিপে মেরে ফেলেছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর মেয়ের জামাতাকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার, কাস্টমস ব্যাগেজ, ইমিগ্রেশনসহ অন্যান্য প্রটোকল দেওয়ার একটি চিঠি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
অনেকেই চিঠিটি শেয়ার করে সমালোচনা করছেন। কেউ বলছেন, মন্ত্রীর মেয়ের জামাই বলে কথা! কেউ কেউ প্রশ্ন করছেন, মন্ত্রীর মেয়ের জামাই প্রটোকল কোন হিসেবে পান? আবার কেউবা বলছেন, একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে!
জানা যায়, গত ৬ জুন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ইস্যু করা হয়। পরে ৭ জুন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালককে চিঠিটি পাঠানো হয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে চিঠিটির সত্যতাও পাওয়া যায়।
মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন শাখার উপসচিব ড. অমিতাভ চক্রবর্ত্তী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হকের মেয়ের জামাতা মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান ৯ জুন শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট নম্বর ইকে ৫৮৬ যোগে দুবাই থেকে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন। তাকে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের অনুমতিসহ মন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার মশিউর রহমানকে কাস্টমস ব্যাগেজ, ইমিগ্রেশন এবং বিমানবন্দরের অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা পালনের জন্য বোর্ডিং ব্রিজ পাস দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিমানবন্দর পরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গুরুত্বপূর্ণ ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ব্যবহারের জন্য পৃথক লাউঞ্জ রয়েছে। যেটাকে ভিআইপি লাউঞ্জ বলা হয়। ভিআইপি লাউঞ্জ কারা ব্যবহার করতে পারবেন এমন একটি স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের।
লাউঞ্জ রজনীগন্ধা, বকুল, দোলনচাঁপা ও চামেলি নামে বিমানবন্দরে ৪টি ভিআইপি লাউঞ্জ রয়েছে। রজনীগন্ধা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ভিআইপিরা ব্যবহার করেন। বকুল ব্যবহার করেন অতিরিক্ত সচিব বা তার পদমযার্দার ও সমমর্যাদার ব্যক্তিরা। দোলনচাঁপা ব্যবহার করেন সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আর চামেলি দিয়ে একুশে পদক পাওয়া ব্যক্তি, সংবাদপত্রের সম্পাদক ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা প্রবেশ ও বের হতে পারেন।
আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভা আজ শুক্রবার। এদিন সন্ধ্যা ৭টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি বাসভবন গণভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংশ্লিষ্ট সবাইকে স্বাস্থ্যসুরক্ষা বিধি মেনে যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী অ্যাক্রেডিটেশন কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি বাণিজ্য সম্প্রসারণে কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ডের (বিএবি) প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
তিনি ‘বিশ্ব অ্যাক্রেডিটেশন দিবস ২০২৩’ উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে এ আহবান জানান।
‘বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও শুক্রবার (৯ জুন) বিএবি’র উদ্যোগে ‘বিশ্ব অ্যাক্রেডিটেশন দিবস ২০২৩’ পালিত হচ্ছে জেনে সন্তোষ প্রকাশ করে মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, অ্যাক্রেডিটেশন ও বাণিজ্য পারস্পরিক আস্থার সূত্রে গাঁথা।
তিনি বলেন, মান নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিধি-বিধান, মেট্রোলজি, নিরপেক্ষ ও স্বীকৃত সাযুজ্য নিরূপণ ব্যবস্থা একটি দেশের গুণগত মান অবকাঠামোর প্রাথমিক ভিত্তি, যা ব্যবসায়ী ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যক্রমকে সহজতর করার পাশাপাশি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও অর্থনীতিকে সুদৃঢ় করতে সহায়তা করে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বিশ্ব বাণিজ্যে কারিগরি বাধা অপসারণে অ্যাক্রেডিটেশনের গুরুত্ব অপরিসীম। জাতীয় মান ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং ভোক্তা ও উৎপাদকের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে অ্যাক্রেডিটেশন বিশ্ব বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এ প্রেক্ষিতে দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য-‘অ্যাক্রেডিটেশন : সাপোটিং দ্যা ফিউচার অব গ্লোবাল ট্রেড’ যথার্থ ও সময়োপযোগী হয়েছে বলেও তিনি মনে করেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বিএবি অ্যাক্রেডিটেশন সেবা প্রদানের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে অবদান রাখছে। সংস্থাটি আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী অ্যাক্রেডিটেশন কার্যক্রম পরিচালনা করবে এবং দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে- এটাই সকলের প্রত্যাশা।
মাত্র এক বছরেই পাল্টে গেছে বাংলাদেশের চিত্র। শ্রীলঙ্কাকে ধার দিয়ে ঋণদাতা হিসেবে গর্ব করা দেশের মানুষের এখন নাকাল দশা। বিদেশি মুদ্রা বিশেষ করে ডলার সংকটের কারণে সরকার জরুরি অনেক পণ্য আমদানি করতে পারছে না। এতে সরবরাহজনিত সংকট তৈরি হয়ে অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের দাম।
একই কারণে জ¦ালানি সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় ভয়াবহ লোডশেডিং চলছে। গরম আর লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত মানুষ। হিটস্ট্রোকে মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। বাধ্য হয়ে সরকার অনেক স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেছে। বিদ্যুতের পাশাপাশি গ্যাস সংকটে শিল্পোৎপাদন কমে ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছে। এটিও পণ্যমূল্য বৃদ্ধির আরেকটি কারণ।
এমন পরিস্থিতিতে পরিকল্পনামন্ত্রীও স্বীকার করেছেন, নিত্যপণ্য আর বিদ্যুতে ভয়াবহ সংকটে আছে বাংলাদেশ।
সর্বশেষ মে মাসের মূল্যস্ফীতি গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ, যা ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। রেকর্ড মূল্যস্ফীতির কারণে জীবনযাত্রার প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। কিন্তু আয় বাড়েনি। ব্যয়ের সঙ্গে আয়ের সংগতি না মেলায় ধার করে চলতে হচ্ছে অনেককে। এখন গ্রামের চেয়ে শহরের মানুষের নিত্যপণ্যের ক্ষেত্রে খরচ করতে হচ্ছে বেশি। যেটি কয়েক মাস আগেও গ্রামে বেশি ছিল। ব্যয়ের চাপ সামলাতে অনেকেই শহর ছেড়ে গ্রামে ফিরে যাচ্ছেন।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, শুধু আমদানি পণ্যে নয়, দেশে উৎপাদিত পণ্য ঘিরেও নানান সিন্ডিকেট সক্রিয়। এসব সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে সব পণ্য। পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছে সরকার। এক বছরের বেশি সময় ধরে উচ্চমূল্যে পণ্য কিনতে গিয়ে বেসামাল হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
সম্প্রতি মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের (এমসিসিআই) বাজেট পরবর্তী আলোচনায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ মূল্যস্ফীতি ইস্যুতে বলেন, বিশে^র প্রায় সব দেশ সফলভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। শুধু বাংলাদেশ এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম।
২০২১ সালের আগস্টে দেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল। করোনায় আমদানি কমে যাওয়ায় এবং অনেক ঋণপত্রে (এলসি) নিষ্পত্তি ছয় মাস থেকে এক বছর পিছিয়ে দেওয়ায় রিজার্ভ ওই পরিমাণে উন্নীত হয়েছিল। কিন্তু ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালসহ সব পণ্যের দাম ব্যাপকহারে বেড়ে যাওয়ায় আমদানি-রপ্তানিতে ব্যাপক ঘাটতি তৈরি হয়। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ এক বছরের মধ্যে ৩০ বিলিয়নের নিচে নেমে আসে। বেসরকারি খাতের স্বল্পমেয়াদি বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ঋণ পরিশোধের চাপ এবং আমদানির পুরনো দায় পরিশোধের চাপে বেসামাল হয়ে পড়ে সরকার।
ফলে ২০২১ সালে যেখানে শ্রীলঙ্কাকে ধার দিয়েছিল বাংলাদেশ ২০২২ সালে সেই বাংলাদেশকেই ডলার ধারের জন্য আন্তর্জাতিক পরিম-লে হাত পাততে হয়েছে। নানা রকম শর্ত মেনে আইএমএফের কাছ থেকে ধার নিতে হয় বাংলাদেশকে। সংস্থাটির কাছ থেকে সাড়ে তিন বছরের কিস্তিতে ৪৭০ কোটি ডলার ধারের প্রথম কিস্তি পেলেও দেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। বরং আইএমএফের শর্তের কারণে রিজার্ভ ন্যূনতম পর্যায়ে রাখতে গিয়ে আমদানি সীমিত করে আনতে হয়েছে। অনেক আমদানির বিলও বকেয়া পড়েছে। অবস্থা এমন পর্যায়ে নেমেছে যে, এখন জরুরি প্রয়োজনের বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা, এলএনজির মতো জ¦ালানিও আনতে পারছে না।
মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) সর্বশেষ হিসাব বলছে, শিল্পের অবদান কমেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে জিডিপিতে শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধির হার কমে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৭৯ শতাংশে। আগের অর্থবছরে যা ছিল ১৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
সামগ্রিক এই সংকটের বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, জ¦ালানি সংকট সমাধানে যেগুলো ডেফার্ড পেমেন্ট আছে সেগুলো দিতে হবে। সেগুলো দিয়ে যে সাপ্লাই চেইন বন্ধ আছে সেগুলোকে সচল করতে হবে। এটাকে প্রথম অগ্রাধিকার দিতে হবে। দরকার হলে অন্য জায়গায় যে প্রকল্পগুলো আছে সেসব প্রকল্পে ধীরে যেতে হবে। প্রকল্পের টাকা এখানে নিয়ে আসতে হবে। কারণ আমদানিতে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হচ্ছে। ডলার খরচের ক্ষেত্রে জ¦ালানিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এখন জ¦ালানি না কিনে যদি রিজার্ভ বাড়ানোর চিন্তা করি তাহলে দেখা যাবে রপ্তানিকারকরা রপ্তানি করতে পারছেন না। কারণ তারা উৎপাদন করতে পারছেন না। তখন রপ্তানি আয়ও কমে যাবে। তখন রিজার্ভে অন্য সমস্যা আসবে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদ্ধতি কী হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে ড. মোস্তাফিজ বলেন, বাজারে খুব দ্রুত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য রাজস্ব নীতি এবং মুদ্রানীতি দুটোই ব্যবহার করতে হবে। এখন টাকার সরবরাহ যা আছে তা কমাতে হবে। সুদহারকে বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। আর যেসব জায়গায় প্রয়োজন আমদানি শুল্ক ও ভ্যাট যৌক্তিকীকরণ করতে হবে। পেঁয়াজের বাজারে কী হলো সেটি তো দেখা গেছে। উৎপাদন কত, চাহিদা কত এগুলো ঠিক মতো পর্যালোচনা করে তারপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সময়মতো আমদানি করলে তো এটি এতটা বাড়ত না।
তিনি আরও বলেন, মূল্যস্ফীতির এমন পরিস্থিতিতে ফ্যামিলি কার্ড বাড়াতে হবে। খোলাবাজারে বিক্রি করে কিছুটা সামাল দিতে হবে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।