
উপাচার্য ছাড়াই এক বছরের বেশি সময় ধরে কার্যক্রম চালাচ্ছে রাজশাহীর নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। ভারপ্রাপ্ত হিসেবে আগের উপাচার্যকেই দায়িত্ব দিয়ে তার স্বাক্ষরেই দেওয়া হচ্ছে মূল সনদপত্রগুলো। এতে করে পরে এই সনদপত্রের সঠিক মূল্যায়ন হবে কি না তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে শিক্ষার্থীদের মনে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, উপাচার্য নিয়োগের জন্য প্যানেল পাঠানো হয়েছে। তাই যত দিন নতুন উপাচার্য নিয়োগ না হচ্ছে তত দিন ট্রাস্টি বোর্ডের নির্দেশে এই উপাচার্যই ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দাপ্তরিক কাজগুলো করবেন। কিন্তু ইউজিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেছেন, কাউকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষমতা নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের। নিয়ম অনুযায়ী, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হলে সেখানকার উপ-উপাচার্য দায়িত্ব পালন করবেন। আর উপ-উপাচার্যও যদি না থাকেন তবে সে ক্ষেত্রে কোষাধ্যক্ষ দায়িত্ব পালন করবেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার রিয়াজ মাহমুদ বলেন, ‘উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছরের জানুয়ারিতে। নতুন উপাচার্য নিয়োগের জন্য প্যানেল পাঠানো হয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ট্রাস্টি বোর্ড সর্বোচ্চ কর্র্তৃপক্ষ। তারা যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটা বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষকে মানতে হবে। ট্রাস্টি বোর্ড থেকে প্রফেসর আবদুল খালেককে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে। যেহেতু তিনি ভারপ্রাপ্ত হিসেবে এখন দায়িত্বে আছেন, সেহেতু সব ডকুমেন্টে তিনি স্বাক্ষর করতে পারবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্যানেল পাঠিয়েছি। সেটা ইউজিসি, মন্ত্রণালয় হয়ে চ্যান্সেলর নিয়োগ দেবেন। যেহেতু নিয়োগ এখনো হয়নি, সুতরাং বিশ্ববিদ্যালয় তো বন্ধ করে রাখা যাবে না। তাই স্বাভাবিক কার্যক্রম চালানোর স্বার্থে ট্রাস্টি বোর্ড তাকে (আবদুল খালেক) ভারপ্রাপ্ত হিসেবে রেখেছে। তবে কবে নাগাদ নিয়োগ হবে এটা ট্রাস্টি বোর্ড বলতে পারে।’
উপাচার্য নিয়োগ না হওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো দায় নেই দাবি করে রেজিস্ট্রার রিয়াজ মাহমুদ বলেন, ‘একটি সার্টিফিকেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের স্বাক্ষর লাগে। এখন উপাচার্য নিয়োগ দেন চ্যান্সেলর। তাই চ্যান্সেলর যত দিন নিয়োগ না দেবে তত দিন ভারপ্রাপ্ত যিনি আছেন তিনিই কাজ চালাবেন। এ ক্ষেত্রে উপাচার্য নিয়োগের জন্য প্যানেল না পাঠালে একটা দায় থাকে। কিন্তু এখানে এমনটি নয়। প্যানেল পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সেই অনুযায়ী এখনো নতুন উপাচার্য নিয়োগ হয়ে আসেনি।’
এ বিষয়ে নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রাশেদা খালেক বলেন, ‘আমাদের ইউনিভার্সিটিতে উপাচার্যের পদ শূন্য। আমরা নিয়োগের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন পাঠিয়েছি। তবে এখনো নিয়োগ দেয়নি। এখন উপাচার্য ছাড়া তো আর বিশ্ববিদ্যালয় চলে না। এটা তো বন্ধ থাকতে পারে না। তাই আমরা ট্রাস্টি বোর্ড থেকে প্রফেসর আবদুল খালেককে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে রেখেছি। যত দিন নিয়োগ না দেওয়া হবে তত দিন তিনিই সব কাজ চালিয়ে যাবেন। সার্টিফিকেটে তিনিও সাইন করছেন। সেখানে তিনি ভারপ্রাপ্ত হিসেবেই সাইন করছেন।’
তবে ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পরিচালক ওমর ফারুক জানান ভিন্ন তথ্য। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তাদের ট্রাস্টি বোর্ড উপাচার্য নিয়োগের জন্য একটি প্যানেল পাঠিয়েছেন। সেটি আমরা এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হয়ে যাবে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে। সেখান থেকেই চূড়ান্ত হবে এটি। তবে, যতক্ষণ নতুন উপাচার্য নিয়োগ না হচ্ছেন তত দিন সেখানকার উপ-উপাচার্য সেই দায়িত্ব পালন করবেন। আর উপ-উপাচার্য যদি না থাকেন তবে সেখানে কোষাধ্যক্ষ এই দায়িত্ব পালন করবেন।’
নর্থ বেঙ্গল ইউনিভার্সিটিতে আগের উপাচার্যই ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এটা নিয়মসম্মত কি না জানতে চাইলে ওমর ফারুক বলেন, ‘এভাবে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার নিয়ম নেই।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল জলিল বলেন, ‘বিষয়টা খুবই গোপনীয়। এটা আমার জানার কথা না যে, কবে প্যানেল পাঠানো হয়েছে।’
উপাচার্যের মেয়াদ শেষে নিয়ম অনুযায়ী উপ-উপাচার্য হিসেবে তারই দায়িত্বে থাকার কথা কি না জানতে চাইলে অধ্যাপক আবদুল জলিল বলেন, ‘আইনের ব্যাপারটি আমাকে জিজ্ঞেস না করাই ভালো। আমি এমপ্লয়ি আর খালেক স্যার হচ্ছে মালিক। কাজেই এমন জটিল প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারব না। এটা নিয়ে এসব প্রশ্ন সরাসরি স্যারের সঙ্গে কথা বলাই ভালো।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল খালেক বলেন, ‘উপাচার্য নিয়োগের জন্য তিনজনের একটি প্যানেল এখান থেকে পাঠানো হয়েছে। এটির প্রক্রিয়া চলছে। যতটুকু জানি এটি খুব তাড়াতাড়িই হয়ে যাবে। এখন আমি নিজেই ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।’
উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হলে নিয়ম অনুযায়ী উপ-উপাচার্য বা কোষাধ্যক্ষ এই দায়িত্বে থাকার কথা কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা ট্রাস্টি বোর্ড ঠিক করে।’
দেশে গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে করোনায় কোনো মৃত্যু নেই। সর্বশেষ ১ জন মারা গেছে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি। এমনকি এ বছর এখন পর্যন্ত মারা গেছে পাঁচজন। তাদের মধ্যে গত জানুয়ারিতে দুজনের ও ফেব্রুয়ারিতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। অথচ একসময় করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ছিল উদ্বেগজনক। গত বছরও মাসে গড়ে ১১৪ ও দিনে ৪ জন করে মারা গেছে। আগের বছর ২০২১ সাল ছিল করোনায় সর্বোচ্চ মৃত্যুর বছর। সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির পাশাপাশি সে বছর সর্বোচ্চ ২০ হাজার ৫১৩ জনের মৃত্যু হয়।
এখন করোনার সংক্রমণও কমে এসেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছে মাত্র পাঁচজন। পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হার ছিল শূন্য দশমিক ৩১ শতাংশ। এ বছরের জানুয়ারিতে দৈনিক গড়ে শনাক্ত হয়েছে ১৪ জন এবং পরের মাসে তা আরও কমে ১০ জনে নেমে আসে। আর ১৭ দিন ধরে দৈনিক গড় শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৭; অর্থাৎ দেশে করোনা মহামারীর আতঙ্ক তেমন নেই। মানুষ এখন অনেকটাই করোনামুক্ত বলে ধরে নিয়েছে। তবে মহামারী পরিস্থিতি মানুষকে অনেক বেশি সতর্ক করেছে। পরিস্থিতির দিকে তীক্ষè নজর রাখছে সরকারও।
করোনা পরিস্থিতির এমন নি¤œমুখী প্রবণতার মধ্যেই আজ করোনায় মৃত্যুর তিন বছর পার করল বাংলাদেশ। ৮ মার্চ ছিল করোনা মহামারীর তিন বছর। ২০২০ সালের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ দেখা দেয়। প্রথম শনাক্ত হয় তিনজন। এর ১০ দিন পর করোনায় প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা মহামারী নিয়ন্ত্রণে মোটামুটি সফল ছিল বাংলাদেশ। আর মৃত্যু নিয়ন্ত্রণে দেশের সাফল্য ছিল মাঝামাঝি ধরনের। এর কারণ হিসেবে করোনা টিকা প্রয়োগের সফলতাকে বড় করে দেখছেন। পাশাপাশি গ্রামপর্যায়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাব্যবস্থা, বয়স্ক জনসংখ্যার সংখ্যা কম, নিয়ন্ত্রণে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ ও সতর্কতাকেও কারণ বলে মনে করছেন তারা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত গত তিন বছরে দেশে করোনায় মোট মারা গেছে ২৯ হাজার ৪৪৫ জন এবং শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৩৭ হাজার ৯৫৯ জন। রোগটিতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ৫১ থেকে ৭০ বছর বয়সী মানুষের। সর্বোচ্চ মৃত্যু দেখেছে ঢাকা বিভাগের মানুষ।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘করোনায় মৃত্যু নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ মোটামুটি সফল ছিল। কারণ মৃত্যুর হারটা ১-২ শতাংশের কাছাকাছি ছিল। বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিশ্নেষণ করলে দেখা যায়, বাংলাদেশে যে মৃত্যুহার, সেটা গ্রহণযোগ্য। আমাদের যদি অন্য দেশের মতো অসংখ্য লোক মারাত্মক লক্ষণ নিয়ে আক্রান্ত হতো, তাহলে ভয়াবহ দুর্যোগ হতো।’
বাংলাদেশ করোনায় মৃত্যু নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে বলে মনে করেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের করোনা টিকার হার ভালো। এটাই মৃত্যু কমার বড় কারণ। টিকার কারণে এখানে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার সংখ্যা অনেক কমে গেছে। সরকার, স্বাস্থ্য কর্র্তৃপক্ষ গুরুত্ব দিয়েছে। নতুন ধরন এলেও টিকার কারণে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা কমে গেছে। কো-মর্বিডিটির কারণে বাংলাদেশে মৃত্যুতে বেশি মারা গেছে বয়স্ক মানুষ।
প্রথম মৃত্যু ২০২০ সালের ১৮ মার্চ : চীন থেকে প্রথম উৎপত্তি হওয়ার পর বাংলাদেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে ২০২০ সালের ৮ মার্চ। সেদিন তিনজনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর এই প্রথম মৃত্যু ঘটে ২০২০ সালের ১৮ মার্চ। এর পরের দুই মাস দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা ৩ অঙ্কের মধ্যে ছিল। পরে তা বাড়তে বাড়তে ওই বছরের জুলাই মাসে সর্বোচ্চে পৌঁছায়। ২ জুলাই সর্বোচ্চ ৪ হাজার ১৯ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। ২০২০ সালের নভেম্বরে সংক্রমণের গতি কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী হলেও ডিসেম্বর থেকে সেটা দ্রুত নিচের দিকে নামতে থাকে। সে বছরের মাঝামাঝি সময়ে সংক্রমণের হার ৩ শতাংশের নিচে নেমে এসেছিল আর দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৩০০ জনেরও কম।
বেশি মৃত্যু ৬১-৭০ বছরের : স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মোট মৃত্যুর ৩১ শতাংশই ছিল ৬১-৭০ বছর বয়সী মানুষ। এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মারা যায় ৫১-৬০ বছর বয়সী মানুষ, যা মোট মৃত্যুর ২৩ শতাংশ। তৃতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে ৭১-৮০ বছর বয়সী মানুষের, যা মোট মৃত্যুর ১৮ শতাংশ। এ ছাড়া ৪১-৫০ বছরের মধ্যে ১২ শতাংশ, ৮১-৯০ বছর ও ৩১-৪০ বছরের মধ্যে ৬ শতাংশ করে মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
ঢাকায় বেশি, ময়মনসিংহে কম : সর্বোচ্চ মানুষ মারা গেছে ঢাকা বিভাগে, যা মোট মৃত্যুর ৪৪ শতাংশ ও কম মারা গেছে ময়মনসিংহ বিভাগে, ৩ শতাংশ। এ ছাড়া চট্টগ্রামে ২০, খুলনায় ১৩, রাজশাহীতে ৭, রংপুরে ৫, সিলেটে সাড়ে ৪ ও বরিশালে ৩ শতাংশ মানুষ মারা গেছে।
বৈশ্বিক মানেও মাঝারি সফলতা বাংলাদেশের : ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশে বয়স্ক লোকদের আনুপাতিক সংখ্যা কম। এ কারণে মৃত্যুটা কোনো কোনো দেশের তুলনায় কম। ইউরোপ, আমেরিকায় যারা সিনিয়র সিটিজেন আনুপাতিক সংখ্যা অনেক বেশি। সে কারণে সেখানে মৃত্যুটা বেশি। বাংলাদেশে বৈশ্বিক মান অনুযায়ী সংক্রমণ ও মৃত্যু নিয়ন্ত্রণে মাঝারি মানের সাফল্য। আমাদের চেয়ে পূর্বের দেশ অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, জাপান, উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, সিঙ্গাপুর বেশি সফল। সেখানে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাব্যবস্থা খুব ভালো। তা ছাড়া ওদের প্রথম সার্স মহামারীর অভিজ্ঞতা আছে। ফলে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে ওখানকার নাগরিকরা আগে থেকেই অভ্যস্ত। যেসব দেশে সর্বজনীন প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ভালো, তারা দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। কিন্তু আমাদের দেশে সর্বজনীন প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নেই। শহরে এটা শূন্য। কমিউনিটি লেভেলে যেটুকু প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা আছে, বড় বড় শহরে তা নেই। এখানে বেসরকারি পর্যায়ের বড় বড় হাসপাতাল আছে।’
এ ব্যাপারে অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশে মোটামুটি কাছাকাছি মৃত্যুর হার। গ্রীষ্মপ্রধান ও অনুন্নত দেশগুলো যেখানে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা কম, সেই দেশগুলোতে মারাত্মক সংক্রমণ কম হয়েছে। আনুপাতিক হারে মৃত্যুও কম হয়েছে। যেমন করোনা টিকার উদ্যোগ বাংলাদেশের চেয়ে অন্যান্য দেশ দেরিতে নিয়েছে। সুতরাং এটা বলা যায়, বাংলাদেশ যা করেছে তা দক্ষিণ এশিয়ার দেশের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কাছাকাছি।
মহামারী ব্যবস্থাপনা রাখার পরামর্শ : অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রথমদিকে একটু সমস্যা হয়েছিল। যখন রোগী বাড়তে থাকল, তখন হাসপাতাল পাওয়া যাচ্ছিল না, প্রশিক্ষিত চিকিৎসা জনশক্তি ছিল না, আইসিইউ সেবা কম ছিল। কিন্তু পরে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এগিয়েছে এবং ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণের একটা পর্যায়ে এসেছে। চিকিৎসা সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি চিকিৎসাব্যবস্থা যুক্ত হলো। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু নিয়ন্ত্রণে খুব যে খারাপ করেছে বলা যাবে না। ভালোই করেছে। তবে অনেক ঘাটতি ছিল। সুতরাং এখান থেকে আমাদের উচিত শিক্ষা নেওয়া। এটাই শেষ প্যানডেমিক বা মহামারী নয়। এখন বার্ড ফ্লু দুয়ারে কড়া নাড়ছে। ভারতসহ বিভিন্ন দেশ ব্যবস্থা নিচ্ছে। করোনা থেকে শিক্ষা নিয়ে যে সব জায়গায় ঘাটতি, সেগুলো পূরণে সচেষ্ট হওয়া দরকার।’
ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘করোনা মোকাবিলায় আমরা যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বিস্তৃত করেছি, সেটা গুটিয়ে আনা ভালো হবে না। পরীক্ষার সুযোগ-সুবিধিা টিকিয়ে রাখতে হবে। আরটিপিসিআর ব্যবস্থ্য, হাইফ্লো অক্সিজেনব্যবস্থা, আইসিইউ এগুলো টিকিয়ে রাখতে হবে। সামনের দিকে এগোতে হবে। যত স্বেচ্ছাসেবক কর্মী তৈরি হয়েছে, তাদের রাখতে হবে। স্বাস্থ্যব্যবস্থায় এদের আত্তীকরণ করতে হবে। এদের যেন মাঝে মাঝে কাজে লাগানো যায়, সে ব্যবস্থা রাখতে হবে। করোনা মহামারী মোকাবিলার ব্যবস্থা যেন সরকার কোনোভাবেই ফেলে না রাখে।’
সেদিন আমার পকেটে সাকল্যে ছিল ১৫ টাকা। তৎকালীন দৈনিক বাংলা ভবনের লক্কর মার্কা লিফট দিয়ে সকালবেলা দুজন নামছি। আমি আর প্রয়াত সাংবাদিক মিনার মাহমুদ। মিনার ভাই আচমকা জানতে চাইলেন, পকেটে কত আছে? আচমকা প্রশ্ন করাটা ছিল তার অভ্যাস। আমিও যথারীতি চমকে গিয়ে জানিয়েছিলাম টাকার পরিমাণ। আশির দশকের মধ্যভাগে আমি তখন সাংবাদিকতা শিখি বন্ধ হয়ে যাওয়া দেশের বিখ্যাত সাপ্তাহিক কাগজ বিচিত্রায়। তখন আমাদের কারোর পকেটেই তেমন টাকা থাকত না। কিন্তু বিচিত্রার প্রিন্টার্স লাইনে নাম ছাপা হওয়ার আনন্দেই দিনগুলো সুবাসিত হয়ে থাকত। দেশের খ্যাতিমান সাংবাদিকদের সংস্পর্শে থেকে কাজ করার সুযোগ পাওয়াটাই ছিল এক বিশাল ঘটনা।
মিনার মাহমুদ সবেমাত্র বিচিত্রার স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। পত্রিকার সম্পাদকীয় বৈঠকে স্থির হলো আমরা দুজন মিলে মাদকাসক্তি নিয়ে স্টোরি করব। সেদিন সকালে আমাদের লক্ষ্য ছিলেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেত্রী জয়শ্রী কবিরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা। বিচিত্রা সম্পাদক প্রয়াত শাহাদত চৌধুরী সূত্রটা ধরিয়ে দিয়েছিলেন। তখন জয়শ্রী কবির প্যাথেড্রিনে আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন। স্পাইনাল কর্ডে একটা অপারেশনের পর তীব্র ব্যথা থেকে পরিত্রাণ পেতে তিনি চিকিৎসকের পরামর্শে এই ব্যথানাশক ইনজেকশন নিতে শুরু করেন এবং আসক্ত হয়ে পড়েন। তার ঠিকানা ছিল তখন মোহাম্মদপুরের একটি পরিত্যক্ত বাড়ি। এখনো মনে আছে, সেদিন আমরা দৈনিক বাংলা ভবন থেকে মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজার পর্যন্ত রিকশা ভাড়া করেছিলাম ১২ টাকায়। মিনার ভাইয়ের পকেট যে সেদিন একেবারেই শূন্য তার কোনো আভাস তখনো আমি পাইনি। মিনার ভাই রিকশায় উঠেই কয়েকটা সিগারেট কিনতে অমøান বদনে নির্দেশ দিলেন।
অগত্যা নিকট ভবিষ্যতে আর্থিক সংকটের চিন্তা জলাঞ্জলি দিয়ে সিগারেট কিনে রিকশায় উঠে বসি। তখন ঢাকার যানজটহীন রাস্তায় রিকশা ভ্রমণ বেশ আনন্দদায়ক ছিল। মিনার ভাই তার হাতে ধরা একটা বই দেখিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘বলো তো, এই বইটার মালিক কে?’
দেখি তার হাতে বাঁধানো একটা মোটা বই। মলাটে নাম লেখা নেই। বইটার প্রথম পৃষ্ঠা ওল্টাতেই জানা হয়, বইটি বিশ্বখ্যাত লেখক এরিখ মারিয়া রেমার্কের আরও বেশি আলোচিত উপন্যাস ‘থ্রি কমরেডস’। আগ্রহে পৃষ্ঠা ওল্টাতেই দেখি বইয়ের মালিক হিসেবে কবি আহসান হাবীবের নাম লেখা আছে। চমকে তাকাই মিনার ভাইয়ের দিকে। আমার দৃষ্টিতে ফুটে ওঠা বিস্ময় চিহ্নের সমাধান করতে জানিয়েছিলেন, বইটা চুরি করেছেন কবির লাইব্রেরি থেকে। এখানে উল্লেখ করা ভালো, কবির বড় ছেলে কথাশিল্পী মঈনুল আহসান সাবের ছিলেন তার বন্ধু। আমি রিকশায় বসেই সাগ্রহে বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টে যাই। আগে এ উপন্যাসটির বঙ্গানুবাদ আমি হাতে পাইনি।
সেদিন মোহাম্মদপুরে পৌঁছে বেশ কিছুক্ষণ এ গলি-সে গলি খোঁজাখুঁজির পর বাড়িটা আবিষ্কার করি। বাড়িটার পুরো অবয়ব এখন আর মনে পড়ে না। তবে সত্যিকার অর্থেই বাড়িটাকে পরিত্যক্ত মনে হয়েছিল। আমরা মøান কাঠের দরজায় কড়া নাড়তেই হাজির হন একজন নারী। তার পেছন পেছন ঢুকে পড়ি বাড়ির অন্দরমহলে। জানা গেল, জয়শ্রী কবির শাওয়ার নিচ্ছেন। অপেক্ষার পালা শুরু হয় আমাদের। মিনার ভাই প্রায় মাসুদ রানার ভঙ্গিতে দক্ষ হাতে তল্লাশি চালান ঘরে বসবাসরত একটি মাত্র টেবিলের ড্রয়ারে। একটু পরেই ঘরের জানালা দিয়ে অনুপ্রবেশকারী দুপুরের রোদ মøান করে দিয়ে উপস্থিত হলেন অভিনেত্রী। পরনে ছিল ঝকঝকে সাদা গাউন আর মাথায় একটা সাদা তোয়ালে উঁচু করে বাঁধা। মুখশ্রীতে সেই লাবণ্য আর নেই! সেদিন বেশ অনেকটা সময় কথা হয়েছিল জয়শ্রী কবিরের সঙ্গে। তিনি হেসেছিলেন, তিনি কেঁদেছিলেন সেই দুপুরে। তার অভিনয়ে উজ্জ্বল কিছু সিনেমার প্রসঙ্গ বারবার তুলছিলেন মিনার ভাই। আর তাতেই অশ্রুসজল হয়ে উঠছিলেন তিনি। একজন সাংবাদিককে তথ্য বের করতে কত কৌশল যে অবলম্বন করতে হয়! সেদিন আমাদের কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন। অনেক প্রশ্নে ছিলেন নিরুত্তর। কিছুটা সময় পরে নিজেই লাঞ্চ করবেন বলে বিদায় নিয়েছিলেন। আমরা পরের দিন আসব বলে বাড়িটা থেকে বের হয়ে এসেছিলাম বাইরে, তীব্র রোদের ভেতরে।
বিপত্তি হলো সাকুরা রেস্তোরাঁর কাছে এসে। মিনার ভাই চমকে তাকিয়ে দেখেন ‘থ্রি কমরেডস’ বইটা ফেলে এসেছেন ওই বাড়িতে। আবার যে ফিরে যাব তার উপায়ও ছিল না। কারণ আমাদের দুজনের পকেটই ছিল ফাঁকা। অগত্যা আগামীকালের ভরসা।
সেদিন আরেকটি ঘটনা ঘটেছিল। ফেরার পথে আমরা আরেকটি সাপ্তাহিক পত্রিকার অফিসে ঢুঁ দিয়েছিলাম। ভারপ্রাপ্ত সম্পাদককে এক পীর সাহেব সম্পর্কে একটা বানানো গল্প বলে সেই ঘটনার ওপর স্টোরি লেখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মিনার মাহমুদ আগাম টাকা নিয়েছিলেন কৌশলে। সে টাকায় সেদিন দুপুরে আমাদের জমজমাট মধ্যাহ্নভোজ জুটেছিল।
‘থ্রি কমরেডস’ বইটা কিন্তু আমরা হারিয়ে ফেলেছিলাম। হারিয়েছিলাম জয়শ্রী কবিরকেও। পরদিন মোহাম্মদপুরের সেই ঠিকানায় গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি রহস্যজনকভাবে। হয়তো তিনি আর কথা বলতে চাননি আমাদের সঙ্গে। যত দূর জানি, জয়শ্রী কবির এখন ইউরোপে বসবাস করেন। সেই দিনগুলোর ছায়া তার ওপর মেঘ বিস্তার করে নেই। আজকাল পেছন ফিরে তাকিয়ে ভাবি, সাংবাদিকতা শুরুর সেই দিনগুলো কী রোমাঞ্চকর আর ঘটনাবহুল ছিল! কত আবিষ্কারের আনন্দ আমাকে আলোড়িত করেছিল তুমুলভাবে। কত কী শিখেছিলাম একটা সময়ে! আর তাতে শেখার আনন্দটা ছিল রাজার মতো।
সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবি আদায়ের চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। সে কারণে নেতাকর্মীদের চাঙা করতে এবং কর্মসূচিগুলোতে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে দলের এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর প্রতি বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা দিচ্ছেন বিএনপির হাইকমান্ড।
বিএনপি এবং এর অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া যেসব নেতা পরপর তিনটি কর্মসূচিতে অনুপস্থিত থাকবেন তাদের দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে বলে সতর্ক করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে এ নির্দেশনার অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির দুই নেতাকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলকে চূড়ান্ত আন্দোলনে ভ্যানগার্ড হিসেবে দেখতে চান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আসন্ন রমজানে ইফতারের রাজনীতি শুরু হবে। এরপর সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নে চলমান আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ দেওয়া হবে। তাই চূড়ান্ত আন্দোলনের আগে নিষ্ক্রিয় নেতাদের দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে দলের ঘোষিত কর্মসূচিতে রাজপথে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ ছাড়া ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচিতে উপস্থিত না থাকলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে।’
আজ শনিবার ১২টি সাংগঠনিক মহানগরে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি করার পর নিষ্ক্রিয় নেতাদের তালিকা তৈরি করে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হবে বলে জানান আব্দুস সালাম।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হক গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, দলীয় কর্মসূচিতে গরহাজির থাকায় নেতাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি। এর অংশ হিসেবে মোহাম্মদপুর থানার অন্তর্গত ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির সহসভাপতি কেএম শামসুর রহমানকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শামসুর রহমান রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অনুপস্থিতিসহ সাংগঠনিক নির্দেশনা অমান্য করায় এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
আমিনুল হক বলেন, ‘এর আগে দলীয় শৃঙ্খলা বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির পল্লবী থানার আহ্বায়ক ও সাবেক কমিশনার মো. সাজ্জাদ হোসেনকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক যুগ্ম মহাসচিব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঢাকা মহানগর বিএনপির পাশাপাশি অঙ্গ সংগঠনগুলোর ঢাকা মহানগরের নেতাদের রাজপথে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে আগামীদিনের আন্দোলন সংগ্রামে ভ্যানগার্ড হিসেবে রাখতে চায় ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলকে। এই তিনটি অঙ্গ সংগঠনের ঢাকা মহানগরীর নেতাদের প্রস্তুত করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এর অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে সংগঠন তিনটির নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল সভা করেছেন তিনি। এখন সংগঠন তিনটির নেতারা নিজেদের কমিটির নেতাদের পাশাপাশি ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করছেন।
আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রামের জন্য ছাত্রদলকে কীভাবে প্রস্তুত করা হচ্ছে জানতে চাইলে বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আমরা ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের নেতাদের নিয়ে ধারাবাহিক বৈঠক করেছি। এখন ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়, বিভিন্ন কলেজ ইউনিটের নেতাদের নিয়ে ধারাবাহিক বৈঠক করছি। আগামীর আন্দোলন সংগ্রাম সফল করতে ছাত্রনেতাদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে।’
ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রাম যেকোনো মূল্যে সফল করতে চাই আমরা। এ কারণে সংগঠনে জবাবদিহিতা এবং সংগঠনের সব পর্যায়ের নেতাদের রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে নিয়মিত অংশগ্রহণের বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পদে থাকার পরও যাদের রাজপথে পাওয়া যাবে না তাদের দল থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবক ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এমন নির্দেশনা আমাদের দিয়েছেন।’
যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চলমান আন্দোলন সংগ্রামে সারা দেশে যুবদলের বেশ কিছু নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অনেকে। এছাড়া কারাগারে রয়েছে বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ যুবদল নেতা। সম্প্রতি যুবদল কেন্দ্রীয় সংসদের যে কমিটি গঠন করা হয়েছে তাদের নিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দিনব্যাপী স্কাইপে বৈঠক করেছি। নেতারা আগামীদিনের আন্দোলন সংগ্রাম সফল করতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে অঙ্গীকার করেছেন।’
স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের নতুন কমিটি গঠনের পর স্বল্প সময়ের মধ্যে পূর্ণা ঙ্গ কমিটি গঠন করে কেন্দ্রে জমা দিয়েছি। শিগগিরই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কমিটি যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত অনুমোদন করবেন। এরপর সে কমিটি ঘোষণা করা হবে। পাশাপাশি আগামীদিনের আন্দোলন সংগ্রামে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমাদের যে ভ্যানগার্ড হিসেবে দেখতে চায় তার জন্য সংগঠনের নেতাদের তৈরি করছি নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে।’
কাতার প্রবাসী জাহাঙ্গীর আলম ড্রাইভিং লাইসেন্স (অপেশাদার) পাওয়ার পরীক্ষা দিতে অনলাইনে আবেদন করেছেন গত ২৮ ফেব্রুয়ারি। তার লার্নার নম্বর হলো : ৫০-১৫৯৫৯৭০৮। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্র্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এই প্রবাসীর লাইসেন্স পরীক্ষায় অংশগ্রহণের তারিখ দিয়েছে আগামী ২৯ মে। কিন্তু সেদিনই জাহাঙ্গীরের কাতারের ভিসার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। যে কারণে এর আগে দেশটিতে পৌঁছাতে হবে তার। এমন পরিস্থিতিতে পরীক্ষার তারিখ এগিয়ে আনতে বিআরটিএর চট্টগ্রাম সার্কেল অফিসের কর্তাদের কাছে এরই মধ্যে একাধিকবার ধরনা দিয়েছেন জাহাঙ্গীর। কিন্তু মেলেনি কোনো ফল।
বিআরটিএর চট্টগ্রাম সার্কেল অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত তারিখ এগিয়ে আনতে হলে জাহাঙ্গীর আলমকে সশরীরে যেতে হবে ঢাকায় বিআরটিএ চেয়ারম্যানের দপ্তরে। মাত্র তিন মাস আগেও আবেদনকারীর জরুরি প্রয়োজনে পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন করার এখতিয়ার ছিল বিআরটিএ চট্টগ্রাম সার্কেল অফিসের প্রধান কর্তার। এখন তার সেই এখতিয়ার আর নেই। তারিখ পরিবর্তনের জন্য সংশ্লিষ্ট আবেদনকারীকে দৌড়াতে হচ্ছে ঢাকায় চেয়ারম্যানের দপ্তরে।
ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষার তারিখ এগিয়ে নিয়ে আসতে না পারায় চরম হতাশা প্রকাশ করেছেন কাতার প্রবাসী জাহাঙ্গীর আলম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী ২৯ মে আমার ভিসার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। কর্মকর্তাদের কাছে অনেক তদবির করেছি। কিন্তু তারা বলেছেন, পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তনের ক্ষমতা বিআরটিএ চেয়ারম্যানের হাতে। এটা এক ধরনের হয়রানি। লাইসেন্সটা পেলে কর্মক্ষেত্রে আমার উপকার হতো।’ বিআরটিএ চট্টগ্রাম সার্কেল অফিসের তথ্য অনুযায়ী, শুধু জাহাঙ্গীর আলম একাই নন, ২৯ মে ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য যে ২৫০ জনকে তারিখ দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে ৪০-৪২ জন আবেদনকারী এমন ভোগান্তিতে পড়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই বিদেশগামী। এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিআরটিএ চট্টগ্রাম সার্কেলের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লাইসেন্স পরীক্ষার তারিখ এগিয়ে আনতে যেসব আবেদনকারী বিআরটিএ চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করেছেন তারাও নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ঢাকায় আবেদন পাঠালেও সেটি ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে থাকে মাসের পর মাস। সেখানে সংশ্লিষ্টদের ঘুষ না দিলে আবেদনপত্র পৌঁছে না চেয়ারম্যানের টেবিলে। অবশ্য অনেকেই সরাসরি চেয়ারম্যানের কাছে গিয়ে পরীক্ষার তারিখ এগিয়ে নিয়ে আসতে সক্ষম হচ্ছেন।’
বিআরটিএ চট্ট-মেট্রো সার্কেল-২-এর সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার) মো. ওমর ফারুক চট্টগ্রাম কার্যালয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন করতে না পেরে আবেদনকারীদের ভোগান্তির বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তিন-চার মাস আগেও এখানকার কর্র্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করে পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন করা যেত। কিন্তু এখন তারিখ পরিবর্তনের এখতিয়ার শুধু চেয়ারম্যান স্যারের কাছে। আবেদনকারীরা বিপাকে পড়লেও আমাদের করার কিছু নেই।’
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদারের মোবাইল ফোনে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে কল করার কারণ জানিয়ে তার মোবাইল ফোনে বার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি।
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় ১২ জন প্রাণ হারিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে গতকাল শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত নিহত হয় তারা।
এসব ঘটনায় আহত হয়েছে আরও অন্তত পাঁচজন। এর মধ্যে গতকাল সকালে ভোলার দৌলতখানে বাসচাপায় কলেজছাত্রীসহ তিনজন প্রাণ হারিয়েছে। নিহতরা ব্যাটারিচালিত গাড়ির যাত্রী ছিল। গতকাল দুপুর ১টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় ট্রাক উল্টে পথচারীসহ দুজন নিহত হয়েছে। রাজধানীর কাকরাইলে ট্রাকের ধাক্কায় এক ব্যবসায়ী এবং যাত্রাবাড়ীতে গাড়িচাপায় এক যুবক নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া টাঙ্গাইলে বাসচাপায় এক ট্রাকচালক প্রাণ হারিয়েছেন। সিরাজগঞ্জে সড়কে প্রাণ গেছে তিনজনের। বগুড়ায় দুই মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে এক মুক্তিযোদ্ধা নিহত হয়েছেন।
বিস্তারিত আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের খবরে :
দৌলতখানে বাসচাপায় ২ কলেজছাত্রীসহ নিহত ৩ : ভোলার দৌলতখানে যাত্রীবাহী বাসের চাপায় স্থানীয়ভাবে ‘বোরাক’ নামে পরিচিত ব্যাটারিচালিত গাড়িতে থাকা দুই কলেজছাত্রীসহ তিনজন নিহত হয়েছে। গতকাল সকালে ভোলা-চরফ্যাশন মহাসড়কে উপজেলার উত্তর জয়নগর ইউনিয়নের ওতরুদ্দিন এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেনÑ উত্তর জয়নগর ইউনিয়নের কয়ছর মাতাব্বরের কলেজপড়–য়া মেয়ে রিমা আক্তার, জাহাঙ্গীরের মেয়ে শিখা এবং মাংসব্যবসায়ী আবুল কালাম। নিহত দুই কলেজছাত্রী বাংলাবাজার হালিমা খাতুন মহিলা কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। তারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে যাচ্ছিলেন।
স্থানীয়রা জানান, দুই কলেজছাত্রীসহ তিনজন তাদের বাড়ির সামনের সড়ক থেকে বোরাকে চড়ে বাংলাবাজার যাচ্ছিলেন। পথে ওতরুদ্দিন এলাকায় বিপরীত দিক থেকে আসা চরফ্যাশনগামী একটি বাস বোরাকটিকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তারা নিহত হন।
দৌলতখান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সত্যরঞ্জন খাসকেল জানান, দুর্ঘটনার পর ‘বীর শ্যামলী’ নামে ওই বাস ও এর চালক আল আমীনকে আটক করেছে পুলিশ।
কসবায় ট্রাক উল্টে পথচারীসহ নিহত ২ : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় ট্রাক উল্টে পথচারীসহ দুজন নিহত হয়েছে। গতকাল দুপুর ১টার দিকে উপজেলার কসবা-সৈয়দাবাদ সড়কে বিনাউটি ইউনিয়নের চান্দাইসার গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত চালক কামাল মিয়াকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহতরা হলেন ওই ট্রাকের চালকের সহকারী পাপেল হোসেন (১৬) ও পথচারী দেলোয়ার হোসেন (৩৫)। কৃষক দেলোয়ার উপজেলার বিনাউটি ইউনিয়নের হাজীপুর গ্রামের আজিজুল হকের ছেলে। পাপেল একই ইউনিয়নের সৈয়দাবাদ গ্রামের আবদুর রহমানের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, দেলোয়ার হোসেন জুমার নামাজ আদায় করার জন্য জমিতে কাজ শেষে কসবা-সৈয়দাবাদ সড়ক দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। চান্দাইসার এলাকায় কসবা থেকে সৈয়দাবাদ ফেরার পথে ইটবহনকারী একটি খালি ট্রাক দুপুর ১টার দিকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এ সময় পথচারী দেলোয়ার, চালকের সহকারী পাপেল ও চালক সালাউদ্দিন গাড়ির নিচে পড়ে যায়। স্থানীয়রা তাদের কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে দেলোয়ার ও পাপেলকে মৃত ঘোষণা করা হয়। চালক সালাউদ্দিনকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পাঠানো হয়।
এদিকে নিহত দেলোয়ারে লাশ বাড়িতে নিয়ে গেলে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য তৈরি হয়। তার দুই মেয়ে আর এক ছেলেসহ স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়ে।
খবর পেয়ে কসবা থানার ওসি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হাবিবুর রহমান, বিনাউটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. বেদন মিয়া ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। দুঘর্টনার শিকার হওয়া ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে।
ওসি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এতে এক পথচারীসহ দুজন মারা গেছে।
রাজধানীতে নিহত ২ : রাজধানীর কাকরাইলে ট্রাকের ধাক্কায় আবদুল্লাহ লিমন (২৮) নামে এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। তিনি মোটরসাইকেল আরোহী ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ২টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে রাত আড়াইটার দিকে তার মৃত্যু হয়। এ ছাড়া যাত্রাবাড়ীতে সড়কে অজ্ঞাতনামা এক যুবক নিহত হয়েছে।
কাকরাইলে নিহত লিমনের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলার কলেজ রোডে। তার বাবার নাম মৃত মজিবুর রহমান। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে মেজ ছিলেন লিমন।
রমনা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মুজাহিদুল ইসলাম জানান, মধ্যরাতে কাকরাইলে প্রধান বিচারপতি বাসভবনের সামনের মোড়ে একটি ট্রাকের সঙ্গে লিমনের মোটরসাইকেলটির ধাক্কা লাগে। এতে ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হন তিনি। পরে ঢামেক হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। ঘটনার পরপরই ট্রাকটি জব্দ ও এর চালককে আটক করা হয়েছে।
নিহত লিমনের বড় ভাই মো. কাজল জানান, তারা নারায়ণগঞ্জে থাকেন। এলাকাতে ব্যাটারি-আইপিএসের ব্যবসা রয়েছে লিমনের। বন্ধুর বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে নিজের মোটরসাইকেল নিয়ে ঢাকায় আসেন লিমন। অনুষ্ঠান শেষে মাঝরাতে আবার বাড়ি ফেরার জন্য রওনা হয়েছিল। পরে পুলিশের মাধ্যমে তার দুর্ঘটনা খবর শুনে হাসপাতালে গিয়ে মরদেহ দেখতে পান তারা।
এদিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে সড়ক দুর্ঘটনায় অজ্ঞাতনামা এক যুবক নিহত হয়েছেন। তার বয়স আনুমানিক ৩৫ বছর। গত বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
যাত্রাবাড়ী থানার এসআই মোস্তাফিজার রহমান জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী মাতুয়াইল রাজধানী ফিলিং স্টেশনের সামনের সড়কের রাস্তা পার হওয়ার সময় কোনো যানবাহন তাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়। তার নাম পরিচয় সনাক্তের জন্য পুলিশ কাজ করছে।
টাঙ্গাইলে বাসচাপায় ট্রাকচালক নিহত : বঙ্গবন্ধু সেতু ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে বাসচাপায় ইরফান মিয়া (৫০) নামে এক ট্রাকচালক নিহত হয়েছেন। গতকাল বিকেলে মহাসড়কের কালিহাতী উপজেলার পৌলি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ইরফান মিয়া পৌলি এলাকার মৃত বাবর আলীর ছেলে।
স্থানীয়রা জানায়, ইরফান মহাসড়কের পূর্ব পাশ থেকে হেঁটে পশ্চিম পাশে ছোট ভাইকে টাকা দিতে আসছিল। এ সময় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা উত্তরবঙ্গগামী একটি বাস ইফরানকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই ইরফানের মৃত্যু হয়।
এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট শিবু নাথ সরকার বলেন, আইনি প্রক্রিয়া শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
সিরাজগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩ : সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় সোহান (১৯) নামে এক যুবক নিহত ও অপর দুইজন আহত হয়েছেন।
গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার ভাঙ্গাবাড়ি ইউনিয়নের বানিয়াগাঁতী নতুনপাড়া কবরস্থান এলাকায় বেলকুচি-বানিয়াগাঁতী সড়কে এ ঘটনা ঘটে। নিহত সোহান উপজেলার বওড়া পশ্চিমপাড়া এলাকার জাহাঙ্গীর হোসেনের ছেলে। আহতদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তাদের নাম জানা যায়নি।
বেলকুচি থানার এসআই সালাউদ্দিন জানান, তিনজন বানিয়াগাঁতী কবরস্থান এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মোটরসাইকেলটি রাস্তার পাশের একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ঘটনাস্থলেই সোহান মারা যায়। গুরুতর আহত হয় অপর দুই আরোহী। এলাকাবাসী তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় ক্লিনিকে ভর্তি করে। সেখানে তাদের অবস্থার অবনতি হলে ঢাকায় পাঠানো হয়।
অপরদিকে বৃহস্পতিবার রাতে রায়গঞ্জ উপজেলার ভূঁইয়াগাঁতী কামারপাড়া ব্রিজ এলাকায় বগুড়া-নগরবাড়ি মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাসচাপায় জাহাঙ্গীর আলম (৩০) নামে অপর এক যুবক নিহত হয়েছে। নিহত জাহাঙ্গীর বেলকুচি উপজেলার বাসিন্দা বলে জানা গেছে। তিনি রায়গঞ্জের বাড়িপাড়া গ্রামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের হিসাবরক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ওসি বদরুল কবির জানান, জাহাঙ্গীরসহ তিনজন একটি অটোভ্যানে করে যাচ্ছিল। এ সময় পেছন থেকে একতা পরিবহনের একটি বাস তাদের চাপা দিলে জাহাঙ্গীর ঘটনাস্থলেই মারা যায়। অটোভ্যানের অপর যাত্রীরা সামান্য আহত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে বাসটিকে জব্দ করেছে।
বগুড়ায় দুই মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে বৃদ্ধ নিহত : বগুড়ায় দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে আলী আজগর (৭২) নামে এক মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বিকেল সোয়া ৩টার দিকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। আলী আজগর সারিয়াকান্দি উপজেলার হিন্দুকান্দী গ্রামের মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে ও উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার। এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে ধুনটের কালেরপাড়া ইউনিয়নের আরকাদিয়া ব্রিজে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
ধুনট থানার ওসি রবিউল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার চিকাশী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সম্মেলনে যাওয়ার পথে আরকাদিয়া ব্রিজের কাছে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আজগরসহ দুজন গুরুতর আহত হন। পরে তাদের উদ্ধার করে প্রথমে ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাদের বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানেই আজ (গতকাল) সোয়া ৩টায় তিনি মারা যান।
ওসি আরও জানান, মোটরসাইকেল দুটি থানায় জব্দ করা আছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাকিস্তানের প্রস্তাবিত হাইব্রিড মডেলে নয়, এশিয়া কাপ হবে একটি দেশে। আর সেটা শ্রীলংকা। পাকিস্তান তাতে অংশ না নিতে চাইলে তাদেরকে ছাড়াই হবে এশিয়া কাপ।
ভারতের তরফ থেকে পাকিস্তানকে এমন বার্তা দেয়া হয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে কলকাতাভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক দা টেলিগ্রাফ।
বিসিসিআই সেক্রেটারি জয় শাহ যিনি এসিসিরও প্রেসিডেন্ট পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে বলেছেন, শ্রীলংকায় এশিয়া কাপ খেলতে রাজি আছে ভারতসহ চার পূর্ণ সদস্য। বিষয়টি নিয়ে এসিসির নির্বাহী সভায় আলোচনা করা হবে। পাকিস্তান রাজি না হলে ৫ দল নিয়েই হবে এশিয়া কাপ।
বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ম্যাচ অন্য কোনো দেশে আয়োজনে পিসিবি চেয়ারম্যান নাজমা শেঠির দাবিও নাকচ করে দিয়েছেন জয় শাহ। টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, পাকিস্তানকে ভারতেই খেলতে হবে, না হলে না খেলবে। এ বার্তা পিসিবি এবং আইসিসির দুই কর্মকর্তা যারা সম্প্রতি পাকিস্তান সফর করেন তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছে বিসিসিআই।
রিয়াল মাদ্রিদের সংগে ১৪ বছরের সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলছেন। ৪০ কোটি ইউরো চুক্তিতে সৌদি প্রো লিগের ক্লাব আলো ইত্তিহাদে যোগ দিচ্ছেন।
ক'দিন ধরে এমন কথা শোনা যাচ্ছিল করিম বেনজেমাকে নিয়ে। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন -এমন কথাও চাউর হয় স্পেনের সংবাদ মাধ্যমে।
কিন্তু সব কিছুতে জল ঢাললেন ব্যালন ডি অর জয়ী। স্পেনের গণমাধ্যম মার্কার দেয়া মার্কা লিজেন্ড এওয়ার্ড নিতে গিয়ে বললেন, 'আমি যখন রিয়ালেই আছি তখন ভবিষ্যৎ নিয়ে কেনো বলবো। ইন্টারনেটে যা প্রচার হচ্ছে তা ঠিক না। আমি এখানে ভালো আছি। শনিবার রিয়ালের ম্যাচ আছে, সব ফোকাস আমার সেই ম্যাচকে নিয়ে।'
ক্লাব প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজকে তাকে রিয়ালে আনার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বেনজেমা বলেন, '২১ বছরের আমি এই ক্লাবে যোগ দিয়েছিলাম। এই ক্লাবে খেলার মতো আর কিছু হয় না, সান্তিয়াগো বার্নাবু দারুন এক জায়গা।'
রিয়ালের সংগে চুক্তির মেয়াদ এ মাসেই শেষ হচ্ছে বেনজেমার।
ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী বলছেন, তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে বিদ্রোহী প্রার্থীর লোকজন হামলা করে। ওই সময় গুলি ও ককটেলে অন্তত পাঁচজন আহত হন।
তবে বিদ্রোহী প্রার্থীর অভিযোগ, আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর সমর্থকরা মিছিল নিয়ে তার নির্বাচনী কার্যালয়ে গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে অন্তত ১৫ নেতাকর্মীকে আহত করেছে।
সংঘর্ষের পর ময়মনসিংহ-শেরপুর সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করে বিক্ষুব্ধরা। পরে রাত সাড়ে ১০টায় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আগামী ১২ জুন তারাকান্দা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে চার প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান ফজলুল হক, বিদ্রোহী প্রার্থী এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক নুরুজ্জামান সরকার, জাতীয় পার্টির এম এ মাসুদ তালুকদার, ইসলামী আন্দোলনের রফিকুল ইসলাম মণ্ডল।
বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে তারাকান্দা উপজেলা সদর বাজারে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নুরুজ্জামানের প্রধান নির্বাচন পরিচালনা কার্যালয়ে নেতাকর্মীরা অবস্থান করছিল। রাত ৮টার দিকে তারাকান্দা উত্তর বাজার থেকে উপজেলা সদরে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর সমর্থকরা একটি মিছিল বের করেন। মিছিলটি বিদ্রোহী প্রার্থীর কার্যালয়ের কাছে যেতেই ককটেল ও গুলির শব্দ শুনতে পান স্থানীয়রা।
স্থানীরা জানান, এ সময় চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় আহতদের উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। তাৎক্ষণিক ভাবে আহতদের কারো নাম সংগ্রহ করা যায়নি।
এদিকে ঘটনার পরপর ময়মনসিংহ-শেরপুর সড়কের তারাকান্দার মধুপুর বাজার এলাকায় সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে নিয়ে বিক্ষোভ করেন বিদ্রোহী প্রার্থী নুরুজ্জামানের সর্মথকরা। সড়কের দুই পাশে কয়েক কিলোমিটার এলাকায় যানবাহন আটকা পড়ে। পরে পুলিশ রাত সাড়ে ১০টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করে।
নুরুজ্জামান সরকার বলেন, আমার নেতাকর্মীরা নির্বাচনী কার্যালয়ে অবস্থান করার সময় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে একটি মিছিল বের হয়। সেই মিছিল থেকে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ককটেল, দেশীয় অস্ত্র ও নাইট শুটারগান দিয়ে আমাকে মারার জন্য হামলা করে। অন্তত ১৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে।
তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফজলুল হক দাবি করেন, তারাকান্দা উত্তর বাজার থেকে নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণ মিছিল বের করলে সেই মিছিলে অতর্কিতে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ও গুলিবর্ষণ করে হামলা করে বিদ্রোহী প্রার্থীর লোকজন। এ সময় তার অন্তত পাঁচ নেতাকর্মী আহত হন। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম বলেন, তারাকান্দা থেকে গুলিবিদ্ধসহ আটজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তারা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
তারাকান্দা থানার ওসি মো. আবুল খায়ের বলেন, সংঘর্ষে পাঁচজন আহত হয়েছে এমন তথ্য আছে আমাদের কাছে। ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে সত্য কিন্তু গুলির বিষয়টি যাচাই করতে হবে। ঘটনার পর সড়ক অবরোধ করলে পরিস্থিতি শান্ত করে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। ঘটনাস্থলসহ আশপাশ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
পলিথিন বা একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক, বিভিন্ন ধরনের পলিথিনজাত মিনিপ্যাকের উৎপাদন, ব্যবহার ও এর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সবগুলোই সমস্যা। পলিথিন উৎপাদন ও এর অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের মাধ্যমে বাতাসে যেমন কার্বন নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যায়, অন্যদিকে এর ব্যবহার প্রাণিকুল ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত। প্লাস্টিকের কণা এখন মানুষের রক্তে, মায়ের দুধে, সামুদ্রিক মাছে। শুধু ব্যবহার সম্পর্কিত সমস্যা না, পলিথিনের মাধ্যমে সৃষ্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আরও বেশি সমস্যাসংকুল। কারণ এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, কৃষির উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে, শহরের নর্দমা বন্ধ করে দিচ্ছে তা আবার রোগ-ব্যাধি ছড়াচ্ছে, জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে এবং সবশেষে শহরকে বসবাসের অনুপযোগী করে দিচ্ছে।
এতসব সত্ত্বেও পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ না করা বা বন্ধ করতে না পারার সংকট কোথায় সেটা বুঝতে আমাদের সমস্যা হয়। পলিথিন বন্ধে আইন আছে, নানা ধরনের প্যাকেজিংয়ে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাও অনেক দিন হলো। অন্যদিকে বেশ কিছুদিন ধরে পাটের ব্যাগ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে কিন্তু তা সহসাই হচ্ছে না। ‘সোনালি ব্যাগ’ নিয়ে অনেক ঢাকঢোল পেটানো হয়েছে কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সেই সোনালি স্বপ্ন কেমন জানি ফ্যাকাশে হয়ে আসছে এতদিনে।
পলিথিনের ব্যবহার শহরাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি যার অনেকটাই অভ্যাসগত কারণে। শহরের মানুষের পলিথিনের ওপর অভ্যস্ততা যেমন বেশি, তেমনি তারা ভুক্তভোগীও বেশি। রাস্তাঘাট, ড্রেন নোংরা হয়ে তো থাকেই, বাড়তি পাওনা দুর্গন্ধ, তৈরি হয় জলজট ও ডেঙ্গুর মতো রোগবালাই। বাসাবাড়িতে পলিথিনের ব্যবহার তো আছেই, পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য, বেকারিজাত পণ্যের পলিথিনের ব্যবহার ও পলিথিনের মোড়ক যত্রতত্র নিক্ষেপই এই অবস্থার জন্য দায়ী। শুধু ঢাকা নয় অন্যান্য ছোট-বড় সব শহরে প্রায় একই অবস্থা। আর এগুলোই হচ্ছে পলিথিন নির্ভর অর্থনীতির অনুষঙ্গ কিন্তু এর অনর্থনীতি হচ্ছে পলিথিনের কারণে পরিবেশদূষণ ও জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি যার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি। সাধারণভাবে পলিথিন ব্যবহারের ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক মূল্যমান নির্ধারণ করা হয় না। তবে দূষণের মাত্রা এখন এমন অবস্থায় পৌঁছেছে তাতে পলিথিনের অর্থনীতির থেকে এর ক্ষয়ক্ষতির অর্থনীতি যে অনেক বড় তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আসছে ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হবে। জলবায়ুর পরিবর্তনের পেছনে অন্যতম অনুঘটক হচ্ছে পরিবেশ দূষণ। অর্থমন্ত্রী তার এবারের বাজেট (২০২৩-২৪) বক্তৃতায় জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় অভিযোজন ও প্রশমন উভয় ক্ষেত্রে উদ্যোগ গ্রহণ করার কথা বলেছেন, পরিবেশ সংরক্ষণে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ২০২৩ এর উল্লেখ করেছেন কিন্তু পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে দৃশ্যমান কোনো রূপকল্প এবারের বাজেটে উল্লেখ করতে সমর্থ হননি। এবারের পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘প্লাস্টিক দূষণের সমাধানে শামিল হই সকলে’। গত বছরের এই দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘একটাই পৃথিবী’। পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের যত্রতত্র ব্যবহার আমাদের এই একমাত্র পৃথিবীকে দূষণের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে আইন হয়েছে ২০০২-এ এবং আজ ২০২৩ সাল, এই দীর্ঘ ২১ বছরেও এই আইনের বাস্তবায়ন করা যায়নি। যদিও এবারের বাজেট বক্তৃতায় প্লাস্টিকের তৈরি টেবিলওয়্যার এর মূল্য সংযোজন কর বৃদ্ধি করে ৫ শতাংশ থেকে ৭.৫ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। এখানে পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্ল্যাস্টিক সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। ধরেই নেওয়া যায় শুল্ক বৃদ্ধির এই হার কোনোভাবে পলিথিন নিরুৎসাহিত করার জায়গা থেকে না বরঞ্চ কিছুটা বাড়তি কর আদায়ের চিন্তা থেকে।
পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি সস্তা পলিথিনের ব্যবহার টেকসই ভোগের ধারণার জন্যও কোনোভাবে সহায়ক না। বরঞ্চ এটা এমন এক ধরনের মনস্তত্ত্ব তৈরি করে যা শুধু পরিবেশকেই ধ্বংস করে। যদিও বিশ্বব্যাপী টেকসই ভোগের ধারণার ওপর ভিত্তি করে এখন ‘সার্কুলার অর্থনীতির’ ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। সার্কুলার অর্থনীতি শুধু অপচয় কমায় না, প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা, দূষণরোধ, বর্জ্য থেকে তৈরি পরিবেশদূষণ ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারে। তাই পরিবেশগত ঝুঁকি, কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের অর্থনীতিকে সার্কুলার অর্থনীতিতে রূপান্তরের জন্য বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করছে। অন্যদিকে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই পৃথিবী গড়ে তোলা এবং এ সংশ্লিষ্ট অভীষ্ট ২০৩০ সমূহ অর্জনে সার্কুলার অর্থনীতি অন্যতম হাতিয়ার।
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা শহরে রাস্তায় কোনো পেট বোতল পড়ে থাকতে দেখা যায় না। এর কারণ হচ্ছে এখন পেট বোতলের প্রায় শতভাগ রিসাইকেল করা হয় এবং পেট বোতল সংগ্রহের জন্য অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে হলেও একটি সংগ্রহ-লাইন তৈরি হয়েছে। কিন্তু পলিথিনের ক্ষেত্রে তেমনটা দেখা যায় না। তবে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার সার্কুলার ইকোনমির ধারণার সঙ্গেও একেবারে মানানসই না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রযুক্তিগতভাবে একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিন রিসাইকেল করা অসম্ভব না হলেও এটি একটি জটিল এবং অর্থনৈতিকভাবে ব্যয়বহুল যে কারণে পেট বোতলের মতো রাস্তা থেকে পলিথিন সংগ্রহ করতে কাউকে দেখা যায় না উলটো রাস্তাঘাটে এখানে সেখানে পলিথিন পড়ে থাকে।
পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের অনর্থনীতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এখন প্রথম দরকার এর ব্যবহার বন্ধ করা, এর ব্যবহারকে অনেক বেশি দামি করে ফেলতে হবে আর এর প্রতিফলন থাকতে হবে বাজেটে। দ্বিতীয়ত, সার্কুলার অর্থনৈতিক চর্চার উৎসাহিত করার জন্য পরিকল্পনা, দক্ষতা বৃদ্ধি ও বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি, পলিথিনের বিকল্প সোনালি ব্যাগের মতো উদ্যোগগুলোকে সরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ ও বেসরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে প্রয়োজনীয় উৎসাহ ও প্রণোদনা প্রদান করতে হবে। সরকার প্রতি বছর বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবেশ দিবস পালন করে কিন্তু দিবস পালন শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলেই হবে না এর উদ্যোগ কতটুকু বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে তার ওপরও নজর দিতে হবে। তা নাহলে পলিথিনের অর্থনীতির নামে শুধু অনর্থনীতিকে বাড়িয়ে তোলা হবে, আর সেটা হবে টেকসই অর্থনীতি তৈরির সম্ভাবনার অপমৃত্যু।
লেখক : উন্নয়নকর্মী ও কলামিস্ট
আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে ১১ শতাংশ বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এ খাতে মোট ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ১২ হাজার ৬৯৬ হাজার কোটি টাকা বেশি।
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ প্রস্তাব করেন। সামাজিক সুরক্ষা খাতে প্রস্তাবিত এ বরাদ্দ মোট বাজেটের ১৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ এবং মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ দশমিক ৫২ শতাংশ।
এ খাতে বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা ১ লাখ এবং মাসিক ভাতার হার ১০০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের হিসাবে এ ভাতাভোগীর সংখ্যা ৫৭ লাখ ১ হাজার। আর মাসিক ভাতা ৫০০ টাকা।
বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারী ভাতাভোগীর সংখ্যাও ১ লাখ বাড়িয়ে ২৫ লাখ ৭৫ হাজার এবং মাসিক ভাতা ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৫৫০ টাকা করা হচ্ছে। প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর সংখ্যা ৫ লাখ ৩৫ হাজার বাড়িয়ে ২৯ লাখ প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর মাসিক শিক্ষা উপবৃত্তি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ১৫০ টাকা বাড়িয়ে যথাক্রমে ৯০০ ও ৯৫০ টাকা এবং উচ্চ মাধ্যমিকে ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৯৫০ টাকা করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।
প্রস্তাবিত বাজেটে হিজড়া জনগোষ্ঠীর ভাতাভোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৬৫ বাড়িয়ে ৬ হাজার ৮৮০ করা হচ্ছে। এ জনগোষ্ঠীর বিশেষ ভাতাভোগীর সংখ্যা ৩ হাজার ২০ বাড়িয়ে ৫ হাজার ৬২০ করা হচ্ছে।
অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রমে উপকারভোগীর সংখ্যা ১২ হাজার ৯৩০ বাড়ানো হয়েছে এবং বিশেষ ভাতাভোগীর সংখ্যা ৯ হাজার ৫০ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী ৪ হাজার ৩৮০ জন বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
সামাজিক সুরক্ষা আরও রয়েছে মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচি। এতে উপকারভোগীর সংখ্যা ৫০ হাজার বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়াও অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কার্যক্রমে উপকারভোগীর ভাতার হার দৈনিক ২০০ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
আগামী অর্থবছর থেকে সর্বজনীন পেনশন চালুর কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন পাস হয়েছে। আশা করছি, ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকেই বাংলাদেশে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করা সম্ভব হবে। শিগগির একটি পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে এবং জনবল নিয়োগের মাধ্যমে এ কর্তৃপক্ষকে কার্যকর করা হবে।’
অর্থমন্ত্রী জানান, প্রস্তাবিত স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হলে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী সুবিধাভোগী ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত এবং ৫০ বছরের অধিক বয়স্ক সুবিধাভোগী ন্যূনতম ১০ বছর পর্যন্ত চাঁদা দেওয়ার মাধ্যমে আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।