
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় ১২ জন প্রাণ হারিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে গতকাল শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত নিহত হয় তারা।
এসব ঘটনায় আহত হয়েছে আরও অন্তত পাঁচজন। এর মধ্যে গতকাল সকালে ভোলার দৌলতখানে বাসচাপায় কলেজছাত্রীসহ তিনজন প্রাণ হারিয়েছে। নিহতরা ব্যাটারিচালিত গাড়ির যাত্রী ছিল। গতকাল দুপুর ১টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় ট্রাক উল্টে পথচারীসহ দুজন নিহত হয়েছে। রাজধানীর কাকরাইলে ট্রাকের ধাক্কায় এক ব্যবসায়ী এবং যাত্রাবাড়ীতে গাড়িচাপায় এক যুবক নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া টাঙ্গাইলে বাসচাপায় এক ট্রাকচালক প্রাণ হারিয়েছেন। সিরাজগঞ্জে সড়কে প্রাণ গেছে তিনজনের। বগুড়ায় দুই মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে এক মুক্তিযোদ্ধা নিহত হয়েছেন।
বিস্তারিত আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের খবরে :
দৌলতখানে বাসচাপায় ২ কলেজছাত্রীসহ নিহত ৩ : ভোলার দৌলতখানে যাত্রীবাহী বাসের চাপায় স্থানীয়ভাবে ‘বোরাক’ নামে পরিচিত ব্যাটারিচালিত গাড়িতে থাকা দুই কলেজছাত্রীসহ তিনজন নিহত হয়েছে। গতকাল সকালে ভোলা-চরফ্যাশন মহাসড়কে উপজেলার উত্তর জয়নগর ইউনিয়নের ওতরুদ্দিন এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেনÑ উত্তর জয়নগর ইউনিয়নের কয়ছর মাতাব্বরের কলেজপড়–য়া মেয়ে রিমা আক্তার, জাহাঙ্গীরের মেয়ে শিখা এবং মাংসব্যবসায়ী আবুল কালাম। নিহত দুই কলেজছাত্রী বাংলাবাজার হালিমা খাতুন মহিলা কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। তারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে যাচ্ছিলেন।
স্থানীয়রা জানান, দুই কলেজছাত্রীসহ তিনজন তাদের বাড়ির সামনের সড়ক থেকে বোরাকে চড়ে বাংলাবাজার যাচ্ছিলেন। পথে ওতরুদ্দিন এলাকায় বিপরীত দিক থেকে আসা চরফ্যাশনগামী একটি বাস বোরাকটিকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তারা নিহত হন।
দৌলতখান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সত্যরঞ্জন খাসকেল জানান, দুর্ঘটনার পর ‘বীর শ্যামলী’ নামে ওই বাস ও এর চালক আল আমীনকে আটক করেছে পুলিশ।
কসবায় ট্রাক উল্টে পথচারীসহ নিহত ২ : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় ট্রাক উল্টে পথচারীসহ দুজন নিহত হয়েছে। গতকাল দুপুর ১টার দিকে উপজেলার কসবা-সৈয়দাবাদ সড়কে বিনাউটি ইউনিয়নের চান্দাইসার গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত চালক কামাল মিয়াকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহতরা হলেন ওই ট্রাকের চালকের সহকারী পাপেল হোসেন (১৬) ও পথচারী দেলোয়ার হোসেন (৩৫)। কৃষক দেলোয়ার উপজেলার বিনাউটি ইউনিয়নের হাজীপুর গ্রামের আজিজুল হকের ছেলে। পাপেল একই ইউনিয়নের সৈয়দাবাদ গ্রামের আবদুর রহমানের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, দেলোয়ার হোসেন জুমার নামাজ আদায় করার জন্য জমিতে কাজ শেষে কসবা-সৈয়দাবাদ সড়ক দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। চান্দাইসার এলাকায় কসবা থেকে সৈয়দাবাদ ফেরার পথে ইটবহনকারী একটি খালি ট্রাক দুপুর ১টার দিকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এ সময় পথচারী দেলোয়ার, চালকের সহকারী পাপেল ও চালক সালাউদ্দিন গাড়ির নিচে পড়ে যায়। স্থানীয়রা তাদের কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে দেলোয়ার ও পাপেলকে মৃত ঘোষণা করা হয়। চালক সালাউদ্দিনকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পাঠানো হয়।
এদিকে নিহত দেলোয়ারে লাশ বাড়িতে নিয়ে গেলে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য তৈরি হয়। তার দুই মেয়ে আর এক ছেলেসহ স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়ে।
খবর পেয়ে কসবা থানার ওসি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হাবিবুর রহমান, বিনাউটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. বেদন মিয়া ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। দুঘর্টনার শিকার হওয়া ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে।
ওসি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এতে এক পথচারীসহ দুজন মারা গেছে।
রাজধানীতে নিহত ২ : রাজধানীর কাকরাইলে ট্রাকের ধাক্কায় আবদুল্লাহ লিমন (২৮) নামে এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। তিনি মোটরসাইকেল আরোহী ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ২টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে রাত আড়াইটার দিকে তার মৃত্যু হয়। এ ছাড়া যাত্রাবাড়ীতে সড়কে অজ্ঞাতনামা এক যুবক নিহত হয়েছে।
কাকরাইলে নিহত লিমনের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলার কলেজ রোডে। তার বাবার নাম মৃত মজিবুর রহমান। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে মেজ ছিলেন লিমন।
রমনা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মুজাহিদুল ইসলাম জানান, মধ্যরাতে কাকরাইলে প্রধান বিচারপতি বাসভবনের সামনের মোড়ে একটি ট্রাকের সঙ্গে লিমনের মোটরসাইকেলটির ধাক্কা লাগে। এতে ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হন তিনি। পরে ঢামেক হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। ঘটনার পরপরই ট্রাকটি জব্দ ও এর চালককে আটক করা হয়েছে।
নিহত লিমনের বড় ভাই মো. কাজল জানান, তারা নারায়ণগঞ্জে থাকেন। এলাকাতে ব্যাটারি-আইপিএসের ব্যবসা রয়েছে লিমনের। বন্ধুর বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে নিজের মোটরসাইকেল নিয়ে ঢাকায় আসেন লিমন। অনুষ্ঠান শেষে মাঝরাতে আবার বাড়ি ফেরার জন্য রওনা হয়েছিল। পরে পুলিশের মাধ্যমে তার দুর্ঘটনা খবর শুনে হাসপাতালে গিয়ে মরদেহ দেখতে পান তারা।
এদিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে সড়ক দুর্ঘটনায় অজ্ঞাতনামা এক যুবক নিহত হয়েছেন। তার বয়স আনুমানিক ৩৫ বছর। গত বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
যাত্রাবাড়ী থানার এসআই মোস্তাফিজার রহমান জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী মাতুয়াইল রাজধানী ফিলিং স্টেশনের সামনের সড়কের রাস্তা পার হওয়ার সময় কোনো যানবাহন তাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়। তার নাম পরিচয় সনাক্তের জন্য পুলিশ কাজ করছে।
টাঙ্গাইলে বাসচাপায় ট্রাকচালক নিহত : বঙ্গবন্ধু সেতু ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে বাসচাপায় ইরফান মিয়া (৫০) নামে এক ট্রাকচালক নিহত হয়েছেন। গতকাল বিকেলে মহাসড়কের কালিহাতী উপজেলার পৌলি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ইরফান মিয়া পৌলি এলাকার মৃত বাবর আলীর ছেলে।
স্থানীয়রা জানায়, ইরফান মহাসড়কের পূর্ব পাশ থেকে হেঁটে পশ্চিম পাশে ছোট ভাইকে টাকা দিতে আসছিল। এ সময় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা উত্তরবঙ্গগামী একটি বাস ইফরানকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই ইরফানের মৃত্যু হয়।
এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট শিবু নাথ সরকার বলেন, আইনি প্রক্রিয়া শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
সিরাজগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩ : সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় সোহান (১৯) নামে এক যুবক নিহত ও অপর দুইজন আহত হয়েছেন।
গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার ভাঙ্গাবাড়ি ইউনিয়নের বানিয়াগাঁতী নতুনপাড়া কবরস্থান এলাকায় বেলকুচি-বানিয়াগাঁতী সড়কে এ ঘটনা ঘটে। নিহত সোহান উপজেলার বওড়া পশ্চিমপাড়া এলাকার জাহাঙ্গীর হোসেনের ছেলে। আহতদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তাদের নাম জানা যায়নি।
বেলকুচি থানার এসআই সালাউদ্দিন জানান, তিনজন বানিয়াগাঁতী কবরস্থান এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মোটরসাইকেলটি রাস্তার পাশের একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ঘটনাস্থলেই সোহান মারা যায়। গুরুতর আহত হয় অপর দুই আরোহী। এলাকাবাসী তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় ক্লিনিকে ভর্তি করে। সেখানে তাদের অবস্থার অবনতি হলে ঢাকায় পাঠানো হয়।
অপরদিকে বৃহস্পতিবার রাতে রায়গঞ্জ উপজেলার ভূঁইয়াগাঁতী কামারপাড়া ব্রিজ এলাকায় বগুড়া-নগরবাড়ি মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাসচাপায় জাহাঙ্গীর আলম (৩০) নামে অপর এক যুবক নিহত হয়েছে। নিহত জাহাঙ্গীর বেলকুচি উপজেলার বাসিন্দা বলে জানা গেছে। তিনি রায়গঞ্জের বাড়িপাড়া গ্রামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের হিসাবরক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ওসি বদরুল কবির জানান, জাহাঙ্গীরসহ তিনজন একটি অটোভ্যানে করে যাচ্ছিল। এ সময় পেছন থেকে একতা পরিবহনের একটি বাস তাদের চাপা দিলে জাহাঙ্গীর ঘটনাস্থলেই মারা যায়। অটোভ্যানের অপর যাত্রীরা সামান্য আহত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে বাসটিকে জব্দ করেছে।
বগুড়ায় দুই মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে বৃদ্ধ নিহত : বগুড়ায় দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে আলী আজগর (৭২) নামে এক মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বিকেল সোয়া ৩টার দিকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। আলী আজগর সারিয়াকান্দি উপজেলার হিন্দুকান্দী গ্রামের মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে ও উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার। এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে ধুনটের কালেরপাড়া ইউনিয়নের আরকাদিয়া ব্রিজে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
ধুনট থানার ওসি রবিউল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার চিকাশী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সম্মেলনে যাওয়ার পথে আরকাদিয়া ব্রিজের কাছে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আজগরসহ দুজন গুরুতর আহত হন। পরে তাদের উদ্ধার করে প্রথমে ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাদের বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানেই আজ (গতকাল) সোয়া ৩টায় তিনি মারা যান।
ওসি আরও জানান, মোটরসাইকেল দুটি থানায় জব্দ করা আছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দেশে গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে করোনায় কোনো মৃত্যু নেই। সর্বশেষ ১ জন মারা গেছে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি। এমনকি এ বছর এখন পর্যন্ত মারা গেছে পাঁচজন। তাদের মধ্যে গত জানুয়ারিতে দুজনের ও ফেব্রুয়ারিতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। অথচ একসময় করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ছিল উদ্বেগজনক। গত বছরও মাসে গড়ে ১১৪ ও দিনে ৪ জন করে মারা গেছে। আগের বছর ২০২১ সাল ছিল করোনায় সর্বোচ্চ মৃত্যুর বছর। সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির পাশাপাশি সে বছর সর্বোচ্চ ২০ হাজার ৫১৩ জনের মৃত্যু হয়।
এখন করোনার সংক্রমণও কমে এসেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছে মাত্র পাঁচজন। পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হার ছিল শূন্য দশমিক ৩১ শতাংশ। এ বছরের জানুয়ারিতে দৈনিক গড়ে শনাক্ত হয়েছে ১৪ জন এবং পরের মাসে তা আরও কমে ১০ জনে নেমে আসে। আর ১৭ দিন ধরে দৈনিক গড় শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৭; অর্থাৎ দেশে করোনা মহামারীর আতঙ্ক তেমন নেই। মানুষ এখন অনেকটাই করোনামুক্ত বলে ধরে নিয়েছে। তবে মহামারী পরিস্থিতি মানুষকে অনেক বেশি সতর্ক করেছে। পরিস্থিতির দিকে তীক্ষè নজর রাখছে সরকারও।
করোনা পরিস্থিতির এমন নি¤œমুখী প্রবণতার মধ্যেই আজ করোনায় মৃত্যুর তিন বছর পার করল বাংলাদেশ। ৮ মার্চ ছিল করোনা মহামারীর তিন বছর। ২০২০ সালের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ দেখা দেয়। প্রথম শনাক্ত হয় তিনজন। এর ১০ দিন পর করোনায় প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা মহামারী নিয়ন্ত্রণে মোটামুটি সফল ছিল বাংলাদেশ। আর মৃত্যু নিয়ন্ত্রণে দেশের সাফল্য ছিল মাঝামাঝি ধরনের। এর কারণ হিসেবে করোনা টিকা প্রয়োগের সফলতাকে বড় করে দেখছেন। পাশাপাশি গ্রামপর্যায়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাব্যবস্থা, বয়স্ক জনসংখ্যার সংখ্যা কম, নিয়ন্ত্রণে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ ও সতর্কতাকেও কারণ বলে মনে করছেন তারা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত গত তিন বছরে দেশে করোনায় মোট মারা গেছে ২৯ হাজার ৪৪৫ জন এবং শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৩৭ হাজার ৯৫৯ জন। রোগটিতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ৫১ থেকে ৭০ বছর বয়সী মানুষের। সর্বোচ্চ মৃত্যু দেখেছে ঢাকা বিভাগের মানুষ।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘করোনায় মৃত্যু নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ মোটামুটি সফল ছিল। কারণ মৃত্যুর হারটা ১-২ শতাংশের কাছাকাছি ছিল। বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিশ্নেষণ করলে দেখা যায়, বাংলাদেশে যে মৃত্যুহার, সেটা গ্রহণযোগ্য। আমাদের যদি অন্য দেশের মতো অসংখ্য লোক মারাত্মক লক্ষণ নিয়ে আক্রান্ত হতো, তাহলে ভয়াবহ দুর্যোগ হতো।’
বাংলাদেশ করোনায় মৃত্যু নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে বলে মনে করেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের করোনা টিকার হার ভালো। এটাই মৃত্যু কমার বড় কারণ। টিকার কারণে এখানে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার সংখ্যা অনেক কমে গেছে। সরকার, স্বাস্থ্য কর্র্তৃপক্ষ গুরুত্ব দিয়েছে। নতুন ধরন এলেও টিকার কারণে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা কমে গেছে। কো-মর্বিডিটির কারণে বাংলাদেশে মৃত্যুতে বেশি মারা গেছে বয়স্ক মানুষ।
প্রথম মৃত্যু ২০২০ সালের ১৮ মার্চ : চীন থেকে প্রথম উৎপত্তি হওয়ার পর বাংলাদেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে ২০২০ সালের ৮ মার্চ। সেদিন তিনজনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর এই প্রথম মৃত্যু ঘটে ২০২০ সালের ১৮ মার্চ। এর পরের দুই মাস দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা ৩ অঙ্কের মধ্যে ছিল। পরে তা বাড়তে বাড়তে ওই বছরের জুলাই মাসে সর্বোচ্চে পৌঁছায়। ২ জুলাই সর্বোচ্চ ৪ হাজার ১৯ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। ২০২০ সালের নভেম্বরে সংক্রমণের গতি কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী হলেও ডিসেম্বর থেকে সেটা দ্রুত নিচের দিকে নামতে থাকে। সে বছরের মাঝামাঝি সময়ে সংক্রমণের হার ৩ শতাংশের নিচে নেমে এসেছিল আর দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৩০০ জনেরও কম।
বেশি মৃত্যু ৬১-৭০ বছরের : স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মোট মৃত্যুর ৩১ শতাংশই ছিল ৬১-৭০ বছর বয়সী মানুষ। এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মারা যায় ৫১-৬০ বছর বয়সী মানুষ, যা মোট মৃত্যুর ২৩ শতাংশ। তৃতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে ৭১-৮০ বছর বয়সী মানুষের, যা মোট মৃত্যুর ১৮ শতাংশ। এ ছাড়া ৪১-৫০ বছরের মধ্যে ১২ শতাংশ, ৮১-৯০ বছর ও ৩১-৪০ বছরের মধ্যে ৬ শতাংশ করে মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
ঢাকায় বেশি, ময়মনসিংহে কম : সর্বোচ্চ মানুষ মারা গেছে ঢাকা বিভাগে, যা মোট মৃত্যুর ৪৪ শতাংশ ও কম মারা গেছে ময়মনসিংহ বিভাগে, ৩ শতাংশ। এ ছাড়া চট্টগ্রামে ২০, খুলনায় ১৩, রাজশাহীতে ৭, রংপুরে ৫, সিলেটে সাড়ে ৪ ও বরিশালে ৩ শতাংশ মানুষ মারা গেছে।
বৈশ্বিক মানেও মাঝারি সফলতা বাংলাদেশের : ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশে বয়স্ক লোকদের আনুপাতিক সংখ্যা কম। এ কারণে মৃত্যুটা কোনো কোনো দেশের তুলনায় কম। ইউরোপ, আমেরিকায় যারা সিনিয়র সিটিজেন আনুপাতিক সংখ্যা অনেক বেশি। সে কারণে সেখানে মৃত্যুটা বেশি। বাংলাদেশে বৈশ্বিক মান অনুযায়ী সংক্রমণ ও মৃত্যু নিয়ন্ত্রণে মাঝারি মানের সাফল্য। আমাদের চেয়ে পূর্বের দেশ অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, জাপান, উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, সিঙ্গাপুর বেশি সফল। সেখানে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাব্যবস্থা খুব ভালো। তা ছাড়া ওদের প্রথম সার্স মহামারীর অভিজ্ঞতা আছে। ফলে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে ওখানকার নাগরিকরা আগে থেকেই অভ্যস্ত। যেসব দেশে সর্বজনীন প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ভালো, তারা দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। কিন্তু আমাদের দেশে সর্বজনীন প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নেই। শহরে এটা শূন্য। কমিউনিটি লেভেলে যেটুকু প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা আছে, বড় বড় শহরে তা নেই। এখানে বেসরকারি পর্যায়ের বড় বড় হাসপাতাল আছে।’
এ ব্যাপারে অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশে মোটামুটি কাছাকাছি মৃত্যুর হার। গ্রীষ্মপ্রধান ও অনুন্নত দেশগুলো যেখানে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা কম, সেই দেশগুলোতে মারাত্মক সংক্রমণ কম হয়েছে। আনুপাতিক হারে মৃত্যুও কম হয়েছে। যেমন করোনা টিকার উদ্যোগ বাংলাদেশের চেয়ে অন্যান্য দেশ দেরিতে নিয়েছে। সুতরাং এটা বলা যায়, বাংলাদেশ যা করেছে তা দক্ষিণ এশিয়ার দেশের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কাছাকাছি।
মহামারী ব্যবস্থাপনা রাখার পরামর্শ : অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রথমদিকে একটু সমস্যা হয়েছিল। যখন রোগী বাড়তে থাকল, তখন হাসপাতাল পাওয়া যাচ্ছিল না, প্রশিক্ষিত চিকিৎসা জনশক্তি ছিল না, আইসিইউ সেবা কম ছিল। কিন্তু পরে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এগিয়েছে এবং ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণের একটা পর্যায়ে এসেছে। চিকিৎসা সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি চিকিৎসাব্যবস্থা যুক্ত হলো। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু নিয়ন্ত্রণে খুব যে খারাপ করেছে বলা যাবে না। ভালোই করেছে। তবে অনেক ঘাটতি ছিল। সুতরাং এখান থেকে আমাদের উচিত শিক্ষা নেওয়া। এটাই শেষ প্যানডেমিক বা মহামারী নয়। এখন বার্ড ফ্লু দুয়ারে কড়া নাড়ছে। ভারতসহ বিভিন্ন দেশ ব্যবস্থা নিচ্ছে। করোনা থেকে শিক্ষা নিয়ে যে সব জায়গায় ঘাটতি, সেগুলো পূরণে সচেষ্ট হওয়া দরকার।’
ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘করোনা মোকাবিলায় আমরা যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বিস্তৃত করেছি, সেটা গুটিয়ে আনা ভালো হবে না। পরীক্ষার সুযোগ-সুবিধিা টিকিয়ে রাখতে হবে। আরটিপিসিআর ব্যবস্থ্য, হাইফ্লো অক্সিজেনব্যবস্থা, আইসিইউ এগুলো টিকিয়ে রাখতে হবে। সামনের দিকে এগোতে হবে। যত স্বেচ্ছাসেবক কর্মী তৈরি হয়েছে, তাদের রাখতে হবে। স্বাস্থ্যব্যবস্থায় এদের আত্তীকরণ করতে হবে। এদের যেন মাঝে মাঝে কাজে লাগানো যায়, সে ব্যবস্থা রাখতে হবে। করোনা মহামারী মোকাবিলার ব্যবস্থা যেন সরকার কোনোভাবেই ফেলে না রাখে।’
সেদিন আমার পকেটে সাকল্যে ছিল ১৫ টাকা। তৎকালীন দৈনিক বাংলা ভবনের লক্কর মার্কা লিফট দিয়ে সকালবেলা দুজন নামছি। আমি আর প্রয়াত সাংবাদিক মিনার মাহমুদ। মিনার ভাই আচমকা জানতে চাইলেন, পকেটে কত আছে? আচমকা প্রশ্ন করাটা ছিল তার অভ্যাস। আমিও যথারীতি চমকে গিয়ে জানিয়েছিলাম টাকার পরিমাণ। আশির দশকের মধ্যভাগে আমি তখন সাংবাদিকতা শিখি বন্ধ হয়ে যাওয়া দেশের বিখ্যাত সাপ্তাহিক কাগজ বিচিত্রায়। তখন আমাদের কারোর পকেটেই তেমন টাকা থাকত না। কিন্তু বিচিত্রার প্রিন্টার্স লাইনে নাম ছাপা হওয়ার আনন্দেই দিনগুলো সুবাসিত হয়ে থাকত। দেশের খ্যাতিমান সাংবাদিকদের সংস্পর্শে থেকে কাজ করার সুযোগ পাওয়াটাই ছিল এক বিশাল ঘটনা।
মিনার মাহমুদ সবেমাত্র বিচিত্রার স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। পত্রিকার সম্পাদকীয় বৈঠকে স্থির হলো আমরা দুজন মিলে মাদকাসক্তি নিয়ে স্টোরি করব। সেদিন সকালে আমাদের লক্ষ্য ছিলেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেত্রী জয়শ্রী কবিরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা। বিচিত্রা সম্পাদক প্রয়াত শাহাদত চৌধুরী সূত্রটা ধরিয়ে দিয়েছিলেন। তখন জয়শ্রী কবির প্যাথেড্রিনে আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন। স্পাইনাল কর্ডে একটা অপারেশনের পর তীব্র ব্যথা থেকে পরিত্রাণ পেতে তিনি চিকিৎসকের পরামর্শে এই ব্যথানাশক ইনজেকশন নিতে শুরু করেন এবং আসক্ত হয়ে পড়েন। তার ঠিকানা ছিল তখন মোহাম্মদপুরের একটি পরিত্যক্ত বাড়ি। এখনো মনে আছে, সেদিন আমরা দৈনিক বাংলা ভবন থেকে মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজার পর্যন্ত রিকশা ভাড়া করেছিলাম ১২ টাকায়। মিনার ভাইয়ের পকেট যে সেদিন একেবারেই শূন্য তার কোনো আভাস তখনো আমি পাইনি। মিনার ভাই রিকশায় উঠেই কয়েকটা সিগারেট কিনতে অমøান বদনে নির্দেশ দিলেন।
অগত্যা নিকট ভবিষ্যতে আর্থিক সংকটের চিন্তা জলাঞ্জলি দিয়ে সিগারেট কিনে রিকশায় উঠে বসি। তখন ঢাকার যানজটহীন রাস্তায় রিকশা ভ্রমণ বেশ আনন্দদায়ক ছিল। মিনার ভাই তার হাতে ধরা একটা বই দেখিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘বলো তো, এই বইটার মালিক কে?’
দেখি তার হাতে বাঁধানো একটা মোটা বই। মলাটে নাম লেখা নেই। বইটার প্রথম পৃষ্ঠা ওল্টাতেই জানা হয়, বইটি বিশ্বখ্যাত লেখক এরিখ মারিয়া রেমার্কের আরও বেশি আলোচিত উপন্যাস ‘থ্রি কমরেডস’। আগ্রহে পৃষ্ঠা ওল্টাতেই দেখি বইয়ের মালিক হিসেবে কবি আহসান হাবীবের নাম লেখা আছে। চমকে তাকাই মিনার ভাইয়ের দিকে। আমার দৃষ্টিতে ফুটে ওঠা বিস্ময় চিহ্নের সমাধান করতে জানিয়েছিলেন, বইটা চুরি করেছেন কবির লাইব্রেরি থেকে। এখানে উল্লেখ করা ভালো, কবির বড় ছেলে কথাশিল্পী মঈনুল আহসান সাবের ছিলেন তার বন্ধু। আমি রিকশায় বসেই সাগ্রহে বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টে যাই। আগে এ উপন্যাসটির বঙ্গানুবাদ আমি হাতে পাইনি।
সেদিন মোহাম্মদপুরে পৌঁছে বেশ কিছুক্ষণ এ গলি-সে গলি খোঁজাখুঁজির পর বাড়িটা আবিষ্কার করি। বাড়িটার পুরো অবয়ব এখন আর মনে পড়ে না। তবে সত্যিকার অর্থেই বাড়িটাকে পরিত্যক্ত মনে হয়েছিল। আমরা মøান কাঠের দরজায় কড়া নাড়তেই হাজির হন একজন নারী। তার পেছন পেছন ঢুকে পড়ি বাড়ির অন্দরমহলে। জানা গেল, জয়শ্রী কবির শাওয়ার নিচ্ছেন। অপেক্ষার পালা শুরু হয় আমাদের। মিনার ভাই প্রায় মাসুদ রানার ভঙ্গিতে দক্ষ হাতে তল্লাশি চালান ঘরে বসবাসরত একটি মাত্র টেবিলের ড্রয়ারে। একটু পরেই ঘরের জানালা দিয়ে অনুপ্রবেশকারী দুপুরের রোদ মøান করে দিয়ে উপস্থিত হলেন অভিনেত্রী। পরনে ছিল ঝকঝকে সাদা গাউন আর মাথায় একটা সাদা তোয়ালে উঁচু করে বাঁধা। মুখশ্রীতে সেই লাবণ্য আর নেই! সেদিন বেশ অনেকটা সময় কথা হয়েছিল জয়শ্রী কবিরের সঙ্গে। তিনি হেসেছিলেন, তিনি কেঁদেছিলেন সেই দুপুরে। তার অভিনয়ে উজ্জ্বল কিছু সিনেমার প্রসঙ্গ বারবার তুলছিলেন মিনার ভাই। আর তাতেই অশ্রুসজল হয়ে উঠছিলেন তিনি। একজন সাংবাদিককে তথ্য বের করতে কত কৌশল যে অবলম্বন করতে হয়! সেদিন আমাদের কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন। অনেক প্রশ্নে ছিলেন নিরুত্তর। কিছুটা সময় পরে নিজেই লাঞ্চ করবেন বলে বিদায় নিয়েছিলেন। আমরা পরের দিন আসব বলে বাড়িটা থেকে বের হয়ে এসেছিলাম বাইরে, তীব্র রোদের ভেতরে।
বিপত্তি হলো সাকুরা রেস্তোরাঁর কাছে এসে। মিনার ভাই চমকে তাকিয়ে দেখেন ‘থ্রি কমরেডস’ বইটা ফেলে এসেছেন ওই বাড়িতে। আবার যে ফিরে যাব তার উপায়ও ছিল না। কারণ আমাদের দুজনের পকেটই ছিল ফাঁকা। অগত্যা আগামীকালের ভরসা।
সেদিন আরেকটি ঘটনা ঘটেছিল। ফেরার পথে আমরা আরেকটি সাপ্তাহিক পত্রিকার অফিসে ঢুঁ দিয়েছিলাম। ভারপ্রাপ্ত সম্পাদককে এক পীর সাহেব সম্পর্কে একটা বানানো গল্প বলে সেই ঘটনার ওপর স্টোরি লেখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মিনার মাহমুদ আগাম টাকা নিয়েছিলেন কৌশলে। সে টাকায় সেদিন দুপুরে আমাদের জমজমাট মধ্যাহ্নভোজ জুটেছিল।
‘থ্রি কমরেডস’ বইটা কিন্তু আমরা হারিয়ে ফেলেছিলাম। হারিয়েছিলাম জয়শ্রী কবিরকেও। পরদিন মোহাম্মদপুরের সেই ঠিকানায় গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি রহস্যজনকভাবে। হয়তো তিনি আর কথা বলতে চাননি আমাদের সঙ্গে। যত দূর জানি, জয়শ্রী কবির এখন ইউরোপে বসবাস করেন। সেই দিনগুলোর ছায়া তার ওপর মেঘ বিস্তার করে নেই। আজকাল পেছন ফিরে তাকিয়ে ভাবি, সাংবাদিকতা শুরুর সেই দিনগুলো কী রোমাঞ্চকর আর ঘটনাবহুল ছিল! কত আবিষ্কারের আনন্দ আমাকে আলোড়িত করেছিল তুমুলভাবে। কত কী শিখেছিলাম একটা সময়ে! আর তাতে শেখার আনন্দটা ছিল রাজার মতো।
সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবি আদায়ের চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। সে কারণে নেতাকর্মীদের চাঙা করতে এবং কর্মসূচিগুলোতে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে দলের এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর প্রতি বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা দিচ্ছেন বিএনপির হাইকমান্ড।
বিএনপি এবং এর অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া যেসব নেতা পরপর তিনটি কর্মসূচিতে অনুপস্থিত থাকবেন তাদের দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে বলে সতর্ক করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে এ নির্দেশনার অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির দুই নেতাকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলকে চূড়ান্ত আন্দোলনে ভ্যানগার্ড হিসেবে দেখতে চান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আসন্ন রমজানে ইফতারের রাজনীতি শুরু হবে। এরপর সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নে চলমান আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ দেওয়া হবে। তাই চূড়ান্ত আন্দোলনের আগে নিষ্ক্রিয় নেতাদের দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে দলের ঘোষিত কর্মসূচিতে রাজপথে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ ছাড়া ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচিতে উপস্থিত না থাকলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে।’
আজ শনিবার ১২টি সাংগঠনিক মহানগরে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি করার পর নিষ্ক্রিয় নেতাদের তালিকা তৈরি করে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হবে বলে জানান আব্দুস সালাম।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হক গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, দলীয় কর্মসূচিতে গরহাজির থাকায় নেতাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি। এর অংশ হিসেবে মোহাম্মদপুর থানার অন্তর্গত ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির সহসভাপতি কেএম শামসুর রহমানকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শামসুর রহমান রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অনুপস্থিতিসহ সাংগঠনিক নির্দেশনা অমান্য করায় এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
আমিনুল হক বলেন, ‘এর আগে দলীয় শৃঙ্খলা বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির পল্লবী থানার আহ্বায়ক ও সাবেক কমিশনার মো. সাজ্জাদ হোসেনকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক যুগ্ম মহাসচিব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঢাকা মহানগর বিএনপির পাশাপাশি অঙ্গ সংগঠনগুলোর ঢাকা মহানগরের নেতাদের রাজপথে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে আগামীদিনের আন্দোলন সংগ্রামে ভ্যানগার্ড হিসেবে রাখতে চায় ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলকে। এই তিনটি অঙ্গ সংগঠনের ঢাকা মহানগরীর নেতাদের প্রস্তুত করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এর অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে সংগঠন তিনটির নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল সভা করেছেন তিনি। এখন সংগঠন তিনটির নেতারা নিজেদের কমিটির নেতাদের পাশাপাশি ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করছেন।
আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রামের জন্য ছাত্রদলকে কীভাবে প্রস্তুত করা হচ্ছে জানতে চাইলে বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আমরা ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের নেতাদের নিয়ে ধারাবাহিক বৈঠক করেছি। এখন ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়, বিভিন্ন কলেজ ইউনিটের নেতাদের নিয়ে ধারাবাহিক বৈঠক করছি। আগামীর আন্দোলন সংগ্রাম সফল করতে ছাত্রনেতাদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে।’
ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রাম যেকোনো মূল্যে সফল করতে চাই আমরা। এ কারণে সংগঠনে জবাবদিহিতা এবং সংগঠনের সব পর্যায়ের নেতাদের রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে নিয়মিত অংশগ্রহণের বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পদে থাকার পরও যাদের রাজপথে পাওয়া যাবে না তাদের দল থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবক ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এমন নির্দেশনা আমাদের দিয়েছেন।’
যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চলমান আন্দোলন সংগ্রামে সারা দেশে যুবদলের বেশ কিছু নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অনেকে। এছাড়া কারাগারে রয়েছে বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ যুবদল নেতা। সম্প্রতি যুবদল কেন্দ্রীয় সংসদের যে কমিটি গঠন করা হয়েছে তাদের নিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দিনব্যাপী স্কাইপে বৈঠক করেছি। নেতারা আগামীদিনের আন্দোলন সংগ্রাম সফল করতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে অঙ্গীকার করেছেন।’
স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের নতুন কমিটি গঠনের পর স্বল্প সময়ের মধ্যে পূর্ণা ঙ্গ কমিটি গঠন করে কেন্দ্রে জমা দিয়েছি। শিগগিরই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কমিটি যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত অনুমোদন করবেন। এরপর সে কমিটি ঘোষণা করা হবে। পাশাপাশি আগামীদিনের আন্দোলন সংগ্রামে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমাদের যে ভ্যানগার্ড হিসেবে দেখতে চায় তার জন্য সংগঠনের নেতাদের তৈরি করছি নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে।’
কাতার প্রবাসী জাহাঙ্গীর আলম ড্রাইভিং লাইসেন্স (অপেশাদার) পাওয়ার পরীক্ষা দিতে অনলাইনে আবেদন করেছেন গত ২৮ ফেব্রুয়ারি। তার লার্নার নম্বর হলো : ৫০-১৫৯৫৯৭০৮। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্র্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এই প্রবাসীর লাইসেন্স পরীক্ষায় অংশগ্রহণের তারিখ দিয়েছে আগামী ২৯ মে। কিন্তু সেদিনই জাহাঙ্গীরের কাতারের ভিসার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। যে কারণে এর আগে দেশটিতে পৌঁছাতে হবে তার। এমন পরিস্থিতিতে পরীক্ষার তারিখ এগিয়ে আনতে বিআরটিএর চট্টগ্রাম সার্কেল অফিসের কর্তাদের কাছে এরই মধ্যে একাধিকবার ধরনা দিয়েছেন জাহাঙ্গীর। কিন্তু মেলেনি কোনো ফল।
বিআরটিএর চট্টগ্রাম সার্কেল অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত তারিখ এগিয়ে আনতে হলে জাহাঙ্গীর আলমকে সশরীরে যেতে হবে ঢাকায় বিআরটিএ চেয়ারম্যানের দপ্তরে। মাত্র তিন মাস আগেও আবেদনকারীর জরুরি প্রয়োজনে পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন করার এখতিয়ার ছিল বিআরটিএ চট্টগ্রাম সার্কেল অফিসের প্রধান কর্তার। এখন তার সেই এখতিয়ার আর নেই। তারিখ পরিবর্তনের জন্য সংশ্লিষ্ট আবেদনকারীকে দৌড়াতে হচ্ছে ঢাকায় চেয়ারম্যানের দপ্তরে।
ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষার তারিখ এগিয়ে নিয়ে আসতে না পারায় চরম হতাশা প্রকাশ করেছেন কাতার প্রবাসী জাহাঙ্গীর আলম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী ২৯ মে আমার ভিসার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। কর্মকর্তাদের কাছে অনেক তদবির করেছি। কিন্তু তারা বলেছেন, পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তনের ক্ষমতা বিআরটিএ চেয়ারম্যানের হাতে। এটা এক ধরনের হয়রানি। লাইসেন্সটা পেলে কর্মক্ষেত্রে আমার উপকার হতো।’ বিআরটিএ চট্টগ্রাম সার্কেল অফিসের তথ্য অনুযায়ী, শুধু জাহাঙ্গীর আলম একাই নন, ২৯ মে ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য যে ২৫০ জনকে তারিখ দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে ৪০-৪২ জন আবেদনকারী এমন ভোগান্তিতে পড়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই বিদেশগামী। এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিআরটিএ চট্টগ্রাম সার্কেলের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লাইসেন্স পরীক্ষার তারিখ এগিয়ে আনতে যেসব আবেদনকারী বিআরটিএ চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করেছেন তারাও নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ঢাকায় আবেদন পাঠালেও সেটি ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে থাকে মাসের পর মাস। সেখানে সংশ্লিষ্টদের ঘুষ না দিলে আবেদনপত্র পৌঁছে না চেয়ারম্যানের টেবিলে। অবশ্য অনেকেই সরাসরি চেয়ারম্যানের কাছে গিয়ে পরীক্ষার তারিখ এগিয়ে নিয়ে আসতে সক্ষম হচ্ছেন।’
বিআরটিএ চট্ট-মেট্রো সার্কেল-২-এর সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার) মো. ওমর ফারুক চট্টগ্রাম কার্যালয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন করতে না পেরে আবেদনকারীদের ভোগান্তির বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তিন-চার মাস আগেও এখানকার কর্র্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করে পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন করা যেত। কিন্তু এখন তারিখ পরিবর্তনের এখতিয়ার শুধু চেয়ারম্যান স্যারের কাছে। আবেদনকারীরা বিপাকে পড়লেও আমাদের করার কিছু নেই।’
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদারের মোবাইল ফোনে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে কল করার কারণ জানিয়ে তার মোবাইল ফোনে বার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি।
উপাচার্য ছাড়াই এক বছরের বেশি সময় ধরে কার্যক্রম চালাচ্ছে রাজশাহীর নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। ভারপ্রাপ্ত হিসেবে আগের উপাচার্যকেই দায়িত্ব দিয়ে তার স্বাক্ষরেই দেওয়া হচ্ছে মূল সনদপত্রগুলো। এতে করে পরে এই সনদপত্রের সঠিক মূল্যায়ন হবে কি না তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে শিক্ষার্থীদের মনে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, উপাচার্য নিয়োগের জন্য প্যানেল পাঠানো হয়েছে। তাই যত দিন নতুন উপাচার্য নিয়োগ না হচ্ছে তত দিন ট্রাস্টি বোর্ডের নির্দেশে এই উপাচার্যই ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দাপ্তরিক কাজগুলো করবেন। কিন্তু ইউজিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেছেন, কাউকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষমতা নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের। নিয়ম অনুযায়ী, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হলে সেখানকার উপ-উপাচার্য দায়িত্ব পালন করবেন। আর উপ-উপাচার্যও যদি না থাকেন তবে সে ক্ষেত্রে কোষাধ্যক্ষ দায়িত্ব পালন করবেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার রিয়াজ মাহমুদ বলেন, ‘উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছরের জানুয়ারিতে। নতুন উপাচার্য নিয়োগের জন্য প্যানেল পাঠানো হয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ট্রাস্টি বোর্ড সর্বোচ্চ কর্র্তৃপক্ষ। তারা যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটা বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষকে মানতে হবে। ট্রাস্টি বোর্ড থেকে প্রফেসর আবদুল খালেককে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে। যেহেতু তিনি ভারপ্রাপ্ত হিসেবে এখন দায়িত্বে আছেন, সেহেতু সব ডকুমেন্টে তিনি স্বাক্ষর করতে পারবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্যানেল পাঠিয়েছি। সেটা ইউজিসি, মন্ত্রণালয় হয়ে চ্যান্সেলর নিয়োগ দেবেন। যেহেতু নিয়োগ এখনো হয়নি, সুতরাং বিশ্ববিদ্যালয় তো বন্ধ করে রাখা যাবে না। তাই স্বাভাবিক কার্যক্রম চালানোর স্বার্থে ট্রাস্টি বোর্ড তাকে (আবদুল খালেক) ভারপ্রাপ্ত হিসেবে রেখেছে। তবে কবে নাগাদ নিয়োগ হবে এটা ট্রাস্টি বোর্ড বলতে পারে।’
উপাচার্য নিয়োগ না হওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো দায় নেই দাবি করে রেজিস্ট্রার রিয়াজ মাহমুদ বলেন, ‘একটি সার্টিফিকেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের স্বাক্ষর লাগে। এখন উপাচার্য নিয়োগ দেন চ্যান্সেলর। তাই চ্যান্সেলর যত দিন নিয়োগ না দেবে তত দিন ভারপ্রাপ্ত যিনি আছেন তিনিই কাজ চালাবেন। এ ক্ষেত্রে উপাচার্য নিয়োগের জন্য প্যানেল না পাঠালে একটা দায় থাকে। কিন্তু এখানে এমনটি নয়। প্যানেল পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সেই অনুযায়ী এখনো নতুন উপাচার্য নিয়োগ হয়ে আসেনি।’
এ বিষয়ে নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রাশেদা খালেক বলেন, ‘আমাদের ইউনিভার্সিটিতে উপাচার্যের পদ শূন্য। আমরা নিয়োগের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন পাঠিয়েছি। তবে এখনো নিয়োগ দেয়নি। এখন উপাচার্য ছাড়া তো আর বিশ্ববিদ্যালয় চলে না। এটা তো বন্ধ থাকতে পারে না। তাই আমরা ট্রাস্টি বোর্ড থেকে প্রফেসর আবদুল খালেককে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে রেখেছি। যত দিন নিয়োগ না দেওয়া হবে তত দিন তিনিই সব কাজ চালিয়ে যাবেন। সার্টিফিকেটে তিনিও সাইন করছেন। সেখানে তিনি ভারপ্রাপ্ত হিসেবেই সাইন করছেন।’
তবে ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পরিচালক ওমর ফারুক জানান ভিন্ন তথ্য। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তাদের ট্রাস্টি বোর্ড উপাচার্য নিয়োগের জন্য একটি প্যানেল পাঠিয়েছেন। সেটি আমরা এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হয়ে যাবে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে। সেখান থেকেই চূড়ান্ত হবে এটি। তবে, যতক্ষণ নতুন উপাচার্য নিয়োগ না হচ্ছেন তত দিন সেখানকার উপ-উপাচার্য সেই দায়িত্ব পালন করবেন। আর উপ-উপাচার্য যদি না থাকেন তবে সেখানে কোষাধ্যক্ষ এই দায়িত্ব পালন করবেন।’
নর্থ বেঙ্গল ইউনিভার্সিটিতে আগের উপাচার্যই ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এটা নিয়মসম্মত কি না জানতে চাইলে ওমর ফারুক বলেন, ‘এভাবে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার নিয়ম নেই।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল জলিল বলেন, ‘বিষয়টা খুবই গোপনীয়। এটা আমার জানার কথা না যে, কবে প্যানেল পাঠানো হয়েছে।’
উপাচার্যের মেয়াদ শেষে নিয়ম অনুযায়ী উপ-উপাচার্য হিসেবে তারই দায়িত্বে থাকার কথা কি না জানতে চাইলে অধ্যাপক আবদুল জলিল বলেন, ‘আইনের ব্যাপারটি আমাকে জিজ্ঞেস না করাই ভালো। আমি এমপ্লয়ি আর খালেক স্যার হচ্ছে মালিক। কাজেই এমন জটিল প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারব না। এটা নিয়ে এসব প্রশ্ন সরাসরি স্যারের সঙ্গে কথা বলাই ভালো।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল খালেক বলেন, ‘উপাচার্য নিয়োগের জন্য তিনজনের একটি প্যানেল এখান থেকে পাঠানো হয়েছে। এটির প্রক্রিয়া চলছে। যতটুকু জানি এটি খুব তাড়াতাড়িই হয়ে যাবে। এখন আমি নিজেই ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।’
উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হলে নিয়ম অনুযায়ী উপ-উপাচার্য বা কোষাধ্যক্ষ এই দায়িত্বে থাকার কথা কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা ট্রাস্টি বোর্ড ঠিক করে।’
চলমান সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগে খেলতে নেমে দুই দলের মাঝে হাতাহাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিজেদের শেষ ম্যাচে আজ শুক্রবার রাত দশটার দিকে মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামের ক্রিজে নেমেছিলেন মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ ও দীপঙ্কর দীপনের টিম।
খেলা চলাকালীন সময়ে দীপঙ্কর দীপনের দলের খেলোয়াড়দেরকে প্রথমে উস্কানি দিতে থাকে রাজের টিম। এরপর তাদের দলের লোকজন এসে দীপনের টিমের এক প্লেয়ারকে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে মারধর করতে থাকে। এরপর দীপনের টিমের খেলোয়াড়রা উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং চেয়ার ছুঁড়াছুড়ি শুরু করে। এক পর্যায়ে দুই দলের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়।
দীপনের দলের খেলোয়াড়দের একজন অভিনেতা মনির হোসেন শিমুল অভিযোগ তুলে বলেন, তারা বাইরে থেকে সন্ত্রাসী এনে আমাদের উপর আক্রমণ শুরু করে। এটা কোন ধরণের সিসিএল খেলা?
অন্যদিকে একই দলের আরেক খেলোয়াড় চিত্রনায়ক জয় চৌধুরী বলেন, রাজ ভাইয়ের টিম থেকে আমাদের দলের উপর আক্রমণ শুরু করে। তারা বাইরে থেকে লোকজন নিয়ে এসেছে। আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে একজনকে তুলে নিয়ে মারধর করতে শুরু করে। এরমধ্যে মৌসুমী হামিদ আহত হন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোস্তফা কামাল রাজের দলের পক্ষ থেকে অভিযোগটি অস্বীকার করা হয়। তারা জানান, প্রয়োজন মনে করলে তারা পরে মন্তব্য দেবেন।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে উৎসাহ দিতে তিনদিন ব্যাপী সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ (সিসিএল) আয়োজন করা হয়েছে। এতে মোট ১৬ টি দল অংশ নিয়েছে। আগামীকাল ফাইনালের মধ্য দিয়ে এ আসর সমাপ্ত হবে।
নিজের গান দিয়ে ইউটিউব চ্যানেলের যাত্রা শুরু করলেন ক্লোজআপ তারকা নোলক বাবু।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর বনশ্রীর এক রেস্তোরায় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলের উদ্বোধন করেন এ গায়ক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তার মা।
নোলক বাবুর ইউটিউব চ্যানেলে উন্মুক্ত হয়েছে তার নতুন গান 'মানুষ'। গানের কথা লিখেছেন তরুন সিং, সুর করেছেন শিল্পী নিজেই। গানটির সংগীতায়োজন হৃষিকেশ রকি।
নোলক বাবু বলেন, গানটি গাইতে পেরে আমি মুগ্ধ।
মূল লড়াইয়ের আগে গা গরমের খেলা। সেখানে ব্যাটসম্যানরা ছিলেন আগ্রাসী। তাতে পাকিস্তান পায় ৩৪৫ রানের বড় সংগ্রহ। তারপরও জিততে পারল না। নিউজিল্যান্ড জয় তুলে নিয়েছে ৩৮ বল হাতে রেখেই।
পাকিস্তানের ব্যাটারদের মধ্যে সেঞ্চুরি পেয়েছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। ৯৪ বলে ১০৩ রান করে অবসর নেন তিনি। এছাড়া বাবর আজম ৮০ ও সৌদ শাকিল ৭৫ রান সংগ্রহ করেছেন।
পাকিস্তানের দেয়া ৩৪৬ রানের জবাব দিতে নেমে ৫ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে নিউজিল্যান্ড।
কিউই ব্যাটারদের মধ্যে ওপেনিংয়ে নামা রাচিন রবীন্দ্র ৭২ বলে ৯৭ রান সংগ্রহ করে দলের জয়ে বড় অবদান রাখেন। এছাড়া দীর্ঘদিন পর দলে ফেরা কেন উইলিয়ামসন ৫৪, ড্যারেল মিচেল ৫৯ আর মার্ক চাপম্যান ৬৫ রান করে দলকে ৫ উইকেটের জয় এনে দিয়েছেন।
গোটা দেশ এখন দুই ভাগে বিভক্ত। একদল সাকিব আল হাসানকে শূলে চড়াচ্ছে, অন্যরা তামিম ইকবালকে। অথচ জাতীয় ক্রিকেট দল ভারতে গেছে বিশ্বকাপ খেলতে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে খোঁচাখুঁচি। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ খেলতে নেমেছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজেদের প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে। যে উদ্বোধনী জুটি নিয়ে এত দ্বিধা আর সংকোচ, যে কারণে তামিম না থাকায় এত হাহাকার, সেখানেই কিনা বাজিমাত করে পুরো জাতিকে অন্য এক বার্তা দিলেন তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস।
বিশ্বকাপের দলে যে তামিম ইকবাল থাকছেন না, সেটা জানা গিয়েছিল আগের দিনেই। তবু ক্রিকেট ভক্তদের মনের এক কোণে ক্ষীণ আশা ছিল। ওপেনারদের টানা ব্যর্থতার কথা বিবেচনায় হলেও এই ব্যাটসম্যান থাকবেন বলে ছিল তাদের। কিন্তু সেই আশার গুড়ে বালি। তাকে দলে না রাখায় অবশ্য রাস্তায় জনতার ঢল নামেনি, রাজপথে হয়নি কোনো সভা-সমাবেশ। তবে নতুন যুগের দেয়ালে দেয়ালে ছড়িয়ে পড়ে প্রতিবাদী নিন্দার বাণী। হাল জামানায় যাকে ‘টাইমলাইন’ বলে সম্বোধন করা হয়।
সেই সব প্রতিবাদী স্ট্যাটাসও দুই ভাগে বিভক্ত। কেউ সাকিব আল হাসানের পক্ষে, কেউবা তামিম ইকবালের। একদল পরিসংখ্যান-পর্যালোচনা দিয়ে বোঝাতে ব্যস্ত যে এই যুগে তামিমের কৌশল ‘ওল্ড স্কুল’। ওসব এখন আর চলে না। অন্য দল ১৭ বছরের ইতিহাস আর আবেগ নিয়ে হাজির। তাদের কাছেও আছে পরিসংখ্যান। সেটা গত কয়েক বছরের তামিমের ওপেনার সঙ্গীদের একটা তালিকা। তারাই শূলে চড়াচ্ছেন সাকিব-হাথুরু থেকে শুরু করে বিসিবির শীর্ষ কর্তাদের।
বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে সাকিব ক্রীড়াভিত্তিক একটি টিভি চ্যানেলকে দিয়ে গেছেন সাক্ষাৎকার। সেখানে তিনি সরাসরি তামিমের সমালোচনা করেছেন। এই ওপেনার যে দলের প্রয়োজনে পজিশন পরিবর্তনে রাজি হতে চান না, সেই মানসিকতা বাচ্চাদের মতো বলে সমালোচনা করেছেন টাইগার অধিনায়ক। এমনকি তার স্পোর্টসম্যানশিপ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তার আগে তামিম নিজে একটা ভিডিও বার্তায় বলেছেন তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা। মাশারফী বিন মোর্ত্তজাও ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। তাতে করে ক্রিকেটাঙ্গনে এখন যেন ভিডিও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
ক্রিকেট নিয়ে জাতির অবস্থা যখন এমন, তখন ভারতের গোয়াহাটিতে বাংলাদেশের ক্রিকেট দল। আসাম রাজ্যের রাজধানীর বরষাপাড়া ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম উদ্বোধনী ম্যাচ খেলতে নেমেছিল তারা। ছিলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, নাজমুল হোসেন শান্তও ছিলেন না থাকার মতো করেই। প্রথম গা গরমের ম্যাচে তাই নেতৃত্ব দেন মেহেদি হাসান মিরাজ।
টসভাগ্যে মিরাজের পরাজয়ের পর বল হাতে নামে বাংলাদেশ। টানা ৪০ ওভার টাইগারদের বোলারদের যেন শাসন করছিলেন লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা। ঐ সময় পর্যন্ত ৫ উইকেট হারালেও তারা করে ২০২ রান। তারপরই যেন ঘুরে দাঁড়ান টাইগার বোলাররা। শেষ ১০ ওভারের ৫ বাকি থাকতেই গুটিয়ে যায় লঙ্কানরা। ২৬৩ রানের বেশি তারা করতে পারেনি।
২৬৪ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নামা বাংলাদেশের হালটা যে সুখকর হবে না, মুহূর্তেই ধসে পড়বে ব্যাটিং লাইনআপ। সিনিয়রদের কাউকে এসে হাল ধরে নিয়ে টেনে নিয়ে যেতে হবে দলকে। খাঁদের কিনারা থেকে টেনে তুলে হয় জয়, নয়তো সম্মানজনক হার! এমনটাই ছিল অনুমিত। আমরা যে এতেই অভ্যস্ত।
কিন্তু তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস সব অনুমান ভুল প্রমাণ করে দেন। যে ওপেনিং জুটি বাংলাদেশকে ভোগাচ্ছিল, যে সমস্যার কারণে চোট প্রবণ তামিম ইকবালকেও সবাই চাইছিলেন দলে। সেটাই কিনা তারা প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে ভুলিয়ে দিলেন! উদ্বোধনীতে তারা গড়েন ১৩১ রানের জুটি। তাতে ১৩ ম্যাচ পর বাংলাদেশ ওপেনিংয়ে শতরানের জুটি দেখতে পেয়েছে। হোক সেটা প্রস্তুতি ম্যাচ, তবুও তো লড়াই!
সবচেয়ে বড় স্বস্তি লিটন-তানজিদের রানে ফেরা। এশিয়া কাপের আগে জ্বরে ভুগছিলেন লিটন। সেই জ্বরের ধকল কাটিয়ে উঠতে তার সময় লেগেছে। মহাদেশীয় টুর্নামেন্টে যেতে হয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তর চোটের কারণে। কিন্তু নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। এই টুর্নামেন্টে ২ ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন তানজিদ। কিন্তু তিনিও প্রত্যাশা মেটাতে ব্যর্থ হয়েছেন। এমনকি ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ড সিরিজেও।
তাই বিশ্বকাপের দলে তামিম ইকবালকে বাদ দেওয়াতে ঝড় উঠেছিল। সেই ঝড় চলমান ছিল আজ দুপুর অবধি। অনেকেই ভেবে রেখেছিলেন, এই জুটি ব্যর্থ হবে। যা ধারাবাহিক থাকবে টুর্নামেন্টের শুরুতেও। তারপর বিশ্বকাপের মাঝপথে আচমকা ডাক পেয়ে তামিম ইকবাল উড়াল দেবেন ভারতে। ঠিক যেমনটা হয়েছিল ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তান দলে। সেবার জাভেদ মিয়াঁদাদকে ছাড়াই তারা বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিল। কিন্তু ব্যাটারদের ব্যর্থতার কারণে তাকে মাঝপথে উড়িয়ে নেওয়া হয়েছিল, এবং বিশ্বকাপ জিতেছিল।
এমন স্বপ্ন বাংলাদেশের অনেক ক্রিকেটভক্তরাও দেখতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু তানজিদ তামিম আর লিটনের জুটি বদলে দিয়েছে সব হিসেব-নিকেশ। তামিমের ফেরার প্রত্যাশায় যারা গুনছিলেন প্রহর, তাদের মাথায় যেন এবার আকাশ ভেঙে পড়েছে। কারণ তারা যে রানে ফিরেছেন। যুববিশ্বকাপজয়ী তামিম খেলেছেন ৮৪ রানের একটি ইনিংস। ৮৮ বলে যা সাজানো ছিল ১০টি চার ও ২টি ছক্কায়। অন্যপ্রান্তে লিটন ৫৬ বলে ১০ চারে খেলেছেন ৬১ রানের ইনিংস। শুধু কি তাই! এদিন তিনে নেমেছিলেন মিরাজ। তার ব্যাট থেকে এসেছে ৬৭ রান। ৬৪ বলের হার না মানা ইনিংসটি সাজানো ছিল ৫ চার ও ২ ছক্কায়।
পঞ্চপান্ডবের পরের প্রজন্ম তো তারাই। যাদের ব্যাটে শুক্রবার বরষাপাড়ায় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। তাদের রানে ফেরা যেন নতুন দিনের বার্তা দেয়। যে বার্তা আগামীর পথচলার। যেখানে পুরনোকে আকড়ে ধরে রাখার প্রবণতা ক্ষীণ হয়ে আসার বার্তা। সহজ কথায়, তরুণদের রানে ফেরাতে মিয়াঁদাদ হওয়ার সুযোগ আর হচ্ছে না তামিম ইকবালের।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই গুরুতর। গত সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। আবেদনটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত তাকে অনুমতি দেওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে খালেদা জিয়ার একান্ত সহকারী জানিয়েছেন।
পাশাপাশি সরকারের অনুমতি পেলে দ্রুততম সময়ে তাকে বিদেশে নিতে ভিসা-প্রক্রিয়া শুরু থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ প্রয়োজনীয় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। সরকারের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় ভিসা করানো যাচ্ছে না।
গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে এসব কথা জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম।
তিনি বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের খোঁজখবর নিচ্ছেন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান। শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ থাকলে প্রথমে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হতে পারে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নত হলে অন্য দেশে নেওয়া হবে।
সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘আমার বোন হেঁটে জেলে গেলেন। জেলে থাকাবস্থায় অসুস্থ হলে তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এরপর করোনার কারণে সরকার তাকে দুটি শর্তে মুক্তি দেয়। তখন থেকেই আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে আবেদন করে আসছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার তাকে মুক্তি দেয়নি। বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে না পারায় দিনের পর দিন তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে। এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে আমার বোন।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী এবিএম আব্দুস সাত্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি নেতারা সার্বক্ষণিক চেয়ারপারসনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আমরা সরকারের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে আমরা দ্রুততম সময়ে চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠাতে পারব।’
জিয়া পরিবারের সদস্যরা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তারা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন। অনুমতি পাওয়া মাত্র সব ধরনের পদক্ষেপ নেবেন। ইতিমধ্যে ভিসা প্রস্তুতিসহ অন্যান্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। বিদেশে নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাবেন তার পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান, ব্যক্তিগত সহকারী ফাতেমা ও ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। তখন থেকেই তিনি হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সেবায় সার্বক্ষণিক থাকছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আজ (গতকাল শুক্রবার) ম্যাডাম শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে বিকেলে তাকে তৃতীয়বারের মতো কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। রাতে আবার তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। পরে অবস্থার উন্নতি হলে তাকে ফের কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত চিকিৎসক দলের সদস্যরা জানান, খালেদা জিয়া ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। একই বছরের নভেম্বরে তার চিকিৎসকরা জানান, তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত দলীয় মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা তখন জানিয়েছিলেন, তাদের সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু করার ছিল, তারা তা করেছেন। পরবর্তী চিকিৎসা যুক্তরাজ্য, জার্মানি অথবা যুক্তরাষ্ট্রে করার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিবারকে বলেছেন। পরের বছর জুন মাসে খালেদা জিয়ার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটিতে রিং পরানো হয়। এখনো তার হার্টে দুটি ব্লক রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পাশাপাশি আমরা বিএনপি নেতারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চেয়ারপারসনের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে দ্রুতই চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠানো হবে।’
গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহিলা দলের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে মানুষটি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তাকে আজ সরকার গৃহবন্দি করে রেখেছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হলেও তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। আমরা আশা করি, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে তার পরিবার যে আবেদন করেছে, তা সরকার বাস্তবায়ন করবে।’
সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে। কারণ উনি মুক্ত থাকলে ওনাদের ক্ষমতায় থাকা কঠিন হয়ে যাবে। উনি মুক্ত থাকলে দেশের গণতন্ত্র মুক্ত থাকবে। উনি মুক্ত থাকলে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না।’
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী, সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছে। ফলে এখন জেলে যাওয়া বা আদালতের আশ্রয় নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ওই ৪০১ ধারাতেই বলা আছে, নির্বাহী আদেশে শর্ত ছাড়াই মুক্তি দেওয়া যায়। এমনকি সরকার সাজা মওকুফও করতে পারে। ফলে সরকারই শর্তহীন মুক্তি দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে।’
গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর বিষয়ে দুই-তিন দিন আগে তার ভাই শামীম এস্কান্দার এসেছিলেন। তিনি আবেদন জমা দিলে তা আইনমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে ব্যাখ্যার জন্য।
আবেদনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে থাকা বিএনপি নেতারা।
তারা গত বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছেন। খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। তারাও অপেক্ষা করছেন যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাবেন ওই নেতারা।
খালেদা জিয়াকে জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়ে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশে^র যে কয়েকটি দেশে সম্ভব, জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এরপর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এর আগেও অবশ্য খালেদা জিয়াকে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। এ ছাড়া তার মেরুদ-, হাত ও হাঁটুতে বাতের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হয়। সেদিন থেকে প্রায় দুই বছর কারাবন্দি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আরও সাত বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ করোনা মহামারির শুরুতে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দিয়েছিল সরকার। এরপর থেকে তার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো হচ্ছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।