
দেবর-ভাবির দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে জাতীয় পার্টির (জাপা) ভেতর বিভক্তি আবারও প্রকট হয়ে উঠছে। আজ সোমবার পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জন্মদিন পালনের মধ্য দিয়ে সেই বিভাজন ও দ্বন্দ্ব দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। এরশাদের স্ত্রী, পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ এবং এরশাদের ভাই ও পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের আলাদা কর্মসূচি নিয়েছেন। নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে জন্মদিন পালন করছেন দুপক্ষের নেতাকর্মীরা। কেউ কাউকে আমন্ত্রণ জানাননি। এমনকি যৌথভাবে পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের জন্মদিন পালনে কোনো উদ্যোগও নেয়নি কোনোপক্ষ।
জাপায় অভ্যন্তরীণ বিভাজন এতটাই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, দুপক্ষের শীর্ষনেতারা পরস্পরকে দলের ‘কেউ না’ বলেও মন্তব্য করেছেন। জিএম কাদেরপন্থিরা বলছেন, তাদের অংশই পার্টির মূল। রওশন এরশাদের সঙ্গে যারা আছেন, তারা পার্টির কেউ না। আবার রওশনপন্থিদের অভিমত, পার্টির মূলধারার নেতাকর্মীরা তাদের সঙ্গে আছেন। সুতরাং তারাই জাপার মূল অংশ। এই পক্ষ জিএম কাদেরপন্থিদের ‘প্রতারক’ বলেও মন্তব্য করেছেন ও কাদেরপন্থিরা তাদের ‘কেউ না’ বলে জানিয়েছেন।
৯৪তম জন্মদিন আজ : আজ পালিত হচ্ছে এরশাদের ৯৪তম জন্মদিন। ১৯৩০ সালের ২০ মার্চ কুড়িগ্রাম শহরের ‘লাল দালান’ বাড়িখ্যাত নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। সাবেক এ রাষ্ট্রপতি ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন পান ১৯৫২ সালে। ১৯৭৫ সালের ২৪ আগস্ট মেজর জেনারেল পদে উন্নীত হন। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ রাষ্ট্রের ক্ষমতা গ্রহণ করেন এরশাদ। ১৯৮৬ সালে তার প্রতিষ্ঠিত দল জাপার প্রার্থী হিসেবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। তিনি দেশে উপজেলা পদ্ধতি চালু করেন। বিরোধী দলের লাগাতার আন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর ক্ষমতা থেকে বিদায় নেন। এরপর গ্রেপ্তার হয়ে ছয় বছর কারারুদ্ধ ছিলেন।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনেক কীর্তি গড়েছেন এরশাদ। ১৯৯৭ সালের ৯ জানুয়ারি কারাগার থেকে মুক্তি পান। কারাগারে থাকাকালীন ১৯৯১ ও ’৯৬ সালের নির্বাচনে পাঁচটি করে আসনে জয়ী হন। এরশাদের হাতে গড়া জাপা এখন সংসদে প্রধান বিরোধী দল। দশম জাতীয় সংসদেও প্রধান বিরোধী দল ছিল জাপা। ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন এরশাদ।
পরস্পরকে অস্বীকার দুপক্ষের : পৃথকভাবে জন্মদিন পালনের ব্যাপারে জিএম কাদেরপন্থি জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু গতকাল রবিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পার্টির পক্ষ থেকে আমরা জন্মদিন পালন করছি। এর অংশ হিসেবে আগামীকাল (আজ সোমবার) জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে স্যারের (এরশাদ) প্রতিকৃতিতে মাল্যদান ও বিকেল ৩টায় বনানী কার্যালয়ে কেক কাটব। আর স্যারের জন্মদিন উপলক্ষে ২২ মার্চ আলোচনা সভা হবে। সেখানে কাদের সিদ্দিকীসহ আরও কয়েকজন অতিথি অংশ নেবেন।’
এরশাদের জন্মদিন উপলক্ষে রওশনপন্থিদের কর্মসূচির ব্যাপারে জাপা মহাসচিব বলেন, ‘ম্যাডামের পক্ষ থেকে তার বাসভবনে পারিবারিকভাবে মিলাদের আয়োজন করেছে। তারা একসঙ্গে জন্মদিন পালনের কোনো আলাপ-আলোচনা জাপার কারও সঙ্গে, বিশেষ করে আমার সঙ্গে করেনি।’
পৃথক এ জন্মদিন পালনের মধ্য দিয়ে দলের মধ্যকার দ্বন্দ্বের ব্যাপারে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘পার্টির বাইরে কেউ কিছু বললে আমাদের বলার কিছু নেই। তারা পার্টির কেউ কিছু না।’
কিন্তু রওশনপন্থি জাপার নেতা ও এরশাদ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান কাজী মামুনুর রশীদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যেহেতু স্যার জীবিত নেই, ম্যাডাম জীবিত আছেন, তাই তার বাসায় একটা কোরআন তেলাওয়াত দোয়ার আয়োজন করেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আছি। জিএম কাদের আমাদের কোনোদিন ডাকেন না। সুতরাং আমরা তো স্বাভাবিকভাবে আমাদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের জন্মদিন পালন করব।’
কাদেরপন্থি জাপার ব্যাপারে এ নেতা বলেন, ‘পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান হয়েছিল জানুয়ারিতে। ওই অনুষ্ঠানটা একসঙ্গে করার কথা ছিল। এর জন্য একটা যৌথ বিবৃতিও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অনুষ্ঠানে দেখা গেল, একটা প্রতারণা করে জিএম কাদেররা শুধু ম্যাডামকে নিয়ে গেছেন। আমাদের মঞ্চে আনুপাতিক হারে আসন দেবে বা কোথায় বসবে, সেটা আয়োজন করার কথা ছিল। কিন্তু সেগুলোর কিছুই করা হয়নি। তাদের এখন আমরা প্রতারক হিসেবে জানি। ভবিষ্যতে তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক ঐক্য হবে কি না, সেটা ভবিষ্যৎই বলে দেবে।’
দুপক্ষের পৃথক কর্মসূচি : জন্মদিন উপলক্ষে জিএম কাদেরপন্থি জাপা সকাল ১০টায় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয় কাকরাইল চত্বরে এরশাদের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবে। এ ছাড়া আগামীকাল বুধবার বিকেল ৩টায় কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের মাল্টিপারপাস হলে আলোচনা সভা রয়েছে। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করবেন জিএম কাদের। জাপা চেয়ারম্যানের প্রেস সেক্রেটারি-০২ খন্দকার দেলোয়ার জালালী এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কর্মসূচির তথ্য জানান।
অন্যদিকে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ্ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, আজ বেলা ১১টায় গুলশানের ৬৭ নম্বর সড়কের ৪/১-এ বিরোধীদলীয় নেতার বাসভবনে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে বিশেষ দোয়া ও কেক কাটার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে রওশন এরশাদ প্রধান অতিথি হিসেবে এবং এরশাদপুত্র রাহগীর আল মাহি সাদ এরশাদ এমপিসহ পার্টির শীর্ষ নেতারা উপস্থিত থাকবেন। এ ছাড়া স্বাধানীতা দিবস উপলক্ষে ২৭ মার্চ আলোচনা সভা, দোয়া ও ইফতার আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হয়েছে : গত বছর নভেম্বরে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী, দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ দলের ভেতর ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন। সে ডাকে সাড়া দিয়ে বেশ কিছু উদ্যোগও নিতে দেখা গেছে এরশাদের ছোটভাই ও দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে। এরই অংশ হিসেবে জিএম কাদেরের নেতৃত্বে জাপার নেতারা রওশন এরশাদের সঙ্গে কয়েক দফা দেখা করেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে দল পরিচালনায় বেশ কিছু অঙ্গীকারও করেন।
ঐক্যের অংশ হিসেবে ঐক্যবদ্ধভাবে ১ জানুয়ারি জাপার ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন করা হয়। প্রায় চার বছর পর ওই অনুষ্ঠানে একমঞ্চে পাশাপাশি বসেন দেবর-ভাবি কাদের-রওশন। এমনকি টানা ১১ মাস পর সেদিন পার্টির কোনো অনুষ্ঠানে সশরীরেও যোগ দেন রওশন এরশাদ। সর্বশেষ ২০১৮ সালে দলের এক অনুষ্ঠানে একসঙ্গে মঞ্চে ছিলেন এ দুই নেতা।
জাপা নেতরা জানান, জানুয়ারির পর দুপক্ষের মধ্যে আর কোনো ধরনের সমঝোতা বা ঐক্যের আভাস পাওয়া যায়নি। বরং জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে রওশনপন্থি দুই নেতার মামলার কারণে দেবর-ভাবির সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটে। সেই অবনতির সর্বশেষ উদাহরণ হিসেবে দেখা দেয় এরশাদের জন্মদিন।
এ ব্যাপারে রওশনপন্থি নেতারা দেশ রূপান্তরকে জানান, জিএম কাদের গত ৬ মার্চ এরশাদের জন্মদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। সেই কর্মসূচির ব্যাপারে রওশন এরশাদকে কিছুই বলেননি। জিএম কাদের ঐক্যবদ্ধভাবে পালন করতে রাজি না। উনি বিভাজন রেখেই যাচ্ছেন।
দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হচ্ছে জানিয়ে রওশনপন্থি শীর্ষ নেতারা জানান, রওশনপন্থি জাপা ইতিমধ্যেই দেশের ৫২ জেলায় আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছে। এসব জেলায় যারা পার্টির প্রতিষ্ঠাকালীন ও এরশাদের সময় থেকে পার্টির সঙ্গে আছেন, জিএম কাদের তাদের বাদ দিয়ে নিজের লোকজনদের নিয়ে কমিটি করেছেন। মূলধারার লোকজনদের বাদ দিয়ে রাজনীতি করছেন। এরই অংশ হিসেবে সর্বশেষ ১৫ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আহ্বায়ক কমিটির তথ্য জানানো হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রওশনপন্থি এক নেতা বলেন, রওশন এরশাদ আবারও জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। রোজার পর থেকে সম্মেলনের কাজ পুরোদমে শুরু হবে। ২৭ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি সম্মেলন স্থগিত প্রত্যাহারের ঘোষণা দিতে পারেন। সম্মেলন হবে।
জিএম কাদেরের মামলার ব্যাপারে রওশনপন্থি নেতারা বলেন, আমরাও চাই মামলা থেকে জিএম কাদের অব্যাহতি পাক। সে জন্য আমরা নতুন করে আপিল করিনি। আপিল করেও ঝুলিয়ে রেখেছি। উনি যদি সোজা পথে আসেন তাহলে মামলাটা শেষ করব। কিন্তু উনি সেটা চাইছেন না বলে আমরাও সময়ক্ষেপণ করছি। আমরা ওনাকে সুযোগ দিচ্ছি।
স্কটল্যান্ডের এক ক্লাব তাদের গ্রাহকদের পরিবেশ সংরক্ষণে অবদান রাখার অভিনব সুযোগ করে দিচ্ছে। দেশটির গ্লাসগো শহরের ‘এসডব্লিউজিথ্রি’ ক্লাব পার্টির অতিথিদের শরীরের উত্তাপ সংরক্ষণ করে পুনর্ব্যবহার করছে। বডিহিট নামে একটি পদ্ধতির মাধ্যমে নাচের ফ্লোরকে ছোটখাটো জ্বালানি উৎপাদন কেন্দ্রে রূপান্তরিত করেছে ক্লাবটি। আর সেখানে প্রত্যেক মানুষের অবদান ১৫০ থেকে ৪৫০ ওয়াট।
জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০২২ সাল থেকে ক্লাবটি সারা দিন ধরে সেই জ্বালানি ব্যবহার করে। জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানির মাত্রা শূন্যে নিয়ে আসাই ক্লাবটির লক্ষ্য। ক্লাবের অপারেশনস ম্যানেজার বব জাভাহেরি বলেন, ‘আমরা উত্তাপের ফলে সৃষ্টি হওয়া শক্তি ধারণ করে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি। সেই শক্তি সংরক্ষণ করে সেটি দিয়ে সরাসরি বা পরে কোনো সময়ে হিটিং বা এয়ার কন্ডিশনিং করার চেষ্টা করছি। এভাবে নিজেদের এনার্জি ফুটপ্রিন্ট এবং বিদ্যুতের ব্যবহার কমাতে চাই। সেই সঙ্গে গ্যাসের ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে চাই।’
তিনি জানান, সিলিংয়ে বসানো বিশেষ ফ্যান তিনটি ডান্সফ্লোর থেকে উষ্ণ বাতাস শুষে নেয়। তারপর হিট পাম্প সেই শক্তি এক ধরনের তরলের মাধ্যমে উঠানে পাঠিয়ে দেয়। দুটি ১০০ মিটার গভীর গর্তে সেই তরল সংরক্ষণ এবং পরে সেটির উত্তাপ ব্যবহার করা হয়।
ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, অনবদ্য এই উদ্ভাবন করেছেন জ্বালানি প্রকৌশলী হিসেবে পরিচিত ডেভিড টাউন্সএন্ড। তিনি তিন বছরের চেষ্টার পর ফল পেয়েছেন। ডেভিড টাউন্সএন্ড বলেন, ‘এক মিনিট বা তারও কম সময়ে সিলিংয়ের বাক্স থেকে উত্তাপ সরাসরি গর্তে চলে যায়। সেই উত্তাপ প্রয়োজনমতো সময়ে ধারণ করা যায়। যেমন রাতে উত্তাপ ভরে দিনের বেলায় সেটা বের করতে পারি। অথবা গ্রীষ্মে আমরা অনেক পরিমাণ উত্তাপ সঞ্চয় করে শীতে তা ব্যবহার করতে পারি; অর্থাৎ সংরক্ষণের সময়কাল প্রয়োজন অনুযায়ী মানিয়ে নিতে পারি।’
তবে এই ‘বডিহিট’ পদ্ধতি স্থাপনের খরচ মোটেই কম নয়। মোট ব্যয় প্রায় সাত লাখ ইউরো। তা সত্ত্বেও অন্যান্য ক্লাবও একই পথে অগ্রসর হতে চাইছে।
জরায়ু ক্যানসারের নকল টিকা নারীদের শরীরে প্রয়োগের সঙ্গে তিনটি বেসরকারি চিকিৎসাসেবা দাতা সংস্থার জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে পুলিশ। ওই তিন সংস্থার শীর্ষ পর্যায়ের চার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারে মাঠে নেমেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।
ডিবির তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ডা. এ আর খান ফাউন্ডেশনের আবু জাফর, আল নূর ফাউন্ডেশনের কাদের সিদ্দিকী ও পপুলার ভ্যাকসিনেশন সেন্টারের সাইফুল এবং বাবুকে গ্রেপ্তার করতে পারলে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যাবে। তারা আত্মগোপনে চলে গেছেন।
এ ছাড়া আমদানি নিষিদ্ধ হেপাটাইটিস-বি ভ্যাকসিন চোরাই পথে এনে সেগুলোতে পানি মিশিয়ে জরায়ু ক্যানসারের নকল টিকা তৈরির অন্যতম হোতা ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আবু বকর সিদ্দিক হিমেলকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। এর আগে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কার্যকরী কমিটি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় হিমেলকে।
গত দুই বছরে চক্রটি দেশে চিকিৎসা সেবাদানকারী বেসরকারি কিছু সংস্থার মাধ্যমে ঢাকা ও পাশর্^বর্তী এলাকার দেড় শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্যাম্প করে ছয় হাজারের বেশি নারীকে নকল টিকা দিয়েছে। এই চক্রের সাইফুল ইসলাম শিপন, ফয়সাল আহমেদ, আল আমিন, নুরুজ্জামান সাগর ও আতিকুল ইসলাম গত বুধবার গ্রেপ্তার হন। এরপর রিমান্ডে নিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ডিবি। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চক্রের অন্যদের গ্রেপ্তারে মাঠে নামে তারা।
জানতে চাইলে ডিবি তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. আনিচ উদ্দীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা তিনটি সংস্থার শীর্ষ চারজনকে খুঁজছি। এই নকল টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের সংশ্লিষ্টতার প্রাথমিক তথ্য পেয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমদানি নিষিদ্ধ টিকা কীভাবে দেশে ঢুকেছে। জরায়ু ক্যানসার প্রতিরোধক ‘সারভারিক্স’ টিকা গত তিন বছর বাংলাদেশে আমদানি করা হচ্ছে না। এরপরও কীভাবে তারা এই টিকা দিয়েছে, সবকিছুই তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’
থানায় জিডি : ডিবির তদন্তে যখন উঠে আসে নকল টিকা দেওয়ার সঙ্গে এ আর খান ফাউন্ডেশন জড়িত, তখন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ডা. এ আর খান শেরেবাংলা নগর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। ১৭ মার্চ করা ওই জিডিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান ডা. এ আর খান ফাউন্ডেশন দীর্ঘদিন থেকে সুনামের সঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। কিন্তু বিভিন্ন সূত্রে জানতে পারলাম ডা. এ আর খান ফাউন্ডেশনের নাম ব্যবহার করে কিছু কুচক্রী মহল নকল ভ্যাকসিন প্রদানসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। যাদের কার্যক্রমের সঙ্গে ডা. এ আর খান ফাউন্ডেশনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’
তবে ডিবির তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলছে, এ আর খান ফাউন্ডেশনের দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি আবু জাফর। তিনি ডা. এ আর খানের মামাতো ভাই বলে পরিচয় দেন। এই আবু জাফরের মাধ্যমেই নকল টিকার কার্যক্রম পরিচালিত হয়। গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর দারুস সালাম এলাকার এ আর খান হাসপাতাল থেকে তিন বস্তা নকল টিকা সরিয়ে ফেলেন আবু জাফর। এ ছাড়া নকল টিকা তৈরির দায়ে গ্রেপ্তার শিপন (২৬) ২০১৭ সাল থেকে এ আর খান ফাউন্ডেশনে চাকরি করছেন।
দারুস সালামের এ আর খান হাসপাতালের ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, টিকার কার্যক্রম দেখভাল করতেন আবু জাফর। তিনি গাজীপুরে এই কার্যক্রম চালাতেন। হাসপাতালে নিজেকে এ আর খান ফাউন্ডেশনের পরিচালক পরিচয় দিতেন। সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, গত শুক্রবার হাসপতাল থেকে তিন বস্তা টিকা নিয়ে গেছেন জাফর।
নকল টিকা প্রদান ও থানায় জিডির বিষয়ে জানতে ডা. এ আর খানকে ফোন করলে তার ব্যক্তিগত নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
নকল টিকার কারখানা : ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে টিনের ঘরে নকল টিকার কারখানা তৈরি করেন যুবলীগ নেতা হিমেল। সেখান থেকে ছড়িয়ে দেওয়া হয় সারা দেশে। অনুসন্ধানে এমন তথ্য পেয়েছে ডিবি। হিমেলকে গতকাল রবিবার রাতে কেরানীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। আজ সোমবার তাকে আদালতে হাজির করা হবে। হিমেল আর শিপন মিলে নকল টিকা তৈরি করতেন।
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকে উচ্ছেদের নোটিস দিয়েছে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ। গতকাল রবিবার তার শান্তিনিকেতনের বাড়ি ‘প্রতীচী’র ঠিকানায় ওই চিঠি দেওয়া হয়। আগামী ২৯ মার্চ বিশ্বভারতীর সেন্ট্রাল অ্যাডমিশন বিল্ডিংয়ের কনফারেন্স হলে ওই বিতর্কিত জমি নিয়ে শুনানি হবে। এতে অমর্ত্য সেন অথবা তার প্রতিনিধিকে সশরীরে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
বিশ্বভারতীর চিঠিতে দাবি করা হয়েছে, অমর্ত্য সেন ১৩ ডেসিমেল জমি দখল করে রেখেছেন। তাই আইন মেনে তাকে কেন ওই জমি থেকে উচ্ছেদ করা হবে না, সেই প্রশ্ন করা হয়েছে। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।
জমিটি নিয়ে বিতর্ক বেশ পুরনো। কিছুদিন আগে অমর্ত্য সেন যখন শান্তিনিকেতনে ছিলেন, সে সময়ই তাকে একটি চিঠি পাঠায় বিশ্বভারতী কর্র্তৃপক্ষ। তাতে বলা হয়, শিগগিরই ১৩ ডেসিমেল জমি বিশ্ববিদ্যালয়কে ফেরত দিতে হবে। ওই চিঠি ঘিরে জোরালো হয় বিতর্ক। অমর্ত্য সেন পাল্টা দাবি করেন, ওই বাড়ির জমির একটা অংশ বিশ্বভারতী থেকে লিজ নেওয়া, বাকিটা কেনা। জমির বিষয়ে মিথ্যে বলছে কর্র্তৃপক্ষ।
এর মধ্যে শান্তিনিকেতনে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অমর্ত্য সেনের সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় অমর্ত্য সেনের হাতে জমি-সংক্রান্ত কাগজপত্র তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপর বিশ্বভারতীর উপাচার্যকে মমতা বলেন, ‘এভাবে মানুষকে অপমান করা যায় না।’ এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেবেন বলেও সতর্ক করেন।
সম্প্রতি বাবা আশুতোষ সেনের পরিবর্তে জমির লিজ হোল্ডার হিসেবে নিজের নাম নথিভুক্ত করতে আবেদন করেছিলেন অমর্ত্য সেন। বোলপুর ভূমি ও ভূমিসংস্কার দপ্তরে তার শুনানি ছিল। সেখানে উপস্থিত ছিলেন অমর্ত্য সেন এবং বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবীরা। কিন্তু দীর্ঘ শুনানির পরও মীমাংসায় পৌঁছাতে পারেননি।
অভিন্ন নদী তিস্তার পানি প্রত্যাহারে দুটি খাল খননের বিষয়ে নয়াদিল্লির কাছে কূটনৈতিক চিঠির (নোট ভারবাল) মাধ্যমে জানতে চেয়েছে ঢাকা। গতকাল রবিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
তিস্তা নদীর বিষয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ভারতকে চিঠি পাঠিয়েছে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, তাদের চিঠি পাঠানোর কথা। কিন্তু সর্বশেষ তথ্য তার (পররাষ্ট্র সচিব) কাছে নেই। তিনি আরও বলেন, ‘তিস্তা নদীর পানি কমে যাচ্ছে এবং অন্যান্য বিষয়ে আমরা জানতে চেয়েছি।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, তিস্তা নদীর উজানে পশ্চিমবঙ্গের খাল খননসংক্রান্ত বিষয়ে ভারত সরকারের কাছে তথ্য জানতে চেয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
নোট ভারবালে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উদ্বেগ জানানো হয়েছে কি না, জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘কিছু তো হয়নি। সুতরাং কিছু হওয়ার আগে...।’
রোহিঙ্গা ইস্যুতে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে চায় না বাংলাদেশ। এ জন্য সরকার সরল বিশ্বাসে (ইন গুড ফেইথ) মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখবে।
মাসুদ বিন বলেন, ‘তাদের (মিয়ানমার) মনে কী আছে, সেটি আমি এ মুহূর্তে বলতে পারছি না। সেটি সময় বলে দেবে। তবে আমরা সরল বিশ্বাসে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি এবং গত পাঁচ-ছয় মাস তাদের দিক থেকে ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি। সময় বলে দেবে, আগামী ছয় মাসে এটি টেকসই হবে কি না।’
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘১১ লাখকে (রোহিঙ্গা) আমরা স্থান দিয়েছি এবং তাদের দেখভাল করছি গত পাঁচ বছরেরও বেশি সময়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও আমাদের সাহায্য করছে। সুতরাং প্রত্যাবাসন টেকসই হবে, এ বিষয়ে আমরা নিশ্চিত না হলে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাবে না।’
তিনি বলেন, ‘পুরো পরিকল্পনা, অর্থাৎ প্রথম ব্যাচের পরে দ্বিতীয় ব্যাচের কী হবে, ফেরত যাওয়ার মোট সময় কত দেওয়া হবে, আমাদের সঙ্গে মিয়ানমারের অ্যারেঞ্জমেন্টে কিছুটা বলা আছে। কিন্তু প্রতিটি ধাপ বলা নেই। আমরা যখন তাদের সঙ্গে সম্মত হব প্রথম ব্যাচ পাঠানোর জন্য এবং তারপরের পদক্ষেপগুলো কী হবে, সেগুলো সম্পর্কে তাদের কাছ থেকে আমাদের সুস্পষ্ট ধারণা নিতে হবে। না হলে এটি টেকসই হবে না।’
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘প্রত্যাবাসন টেকসই হওয়ার পরে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো হবে। আপনারা যেভাবে দেখছেন, বিষয়টি আসলে সে রকম নয়।’ এটি কালকে শুরু হয়ে যাবে বা পরশু শুরু হয়ে যাবে, বিষয়টি সে রকম নয় বলে জানান তিনি।
পুরনো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) সারতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা চেয়েছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় সেই টাকা দিতে চাচ্ছে না। ফলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কতগুলো ইভিএম ব্যবহার করা হবে সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না নির্বাচন কমিশন। কেননা, পুরনো ইভিএম সচল করতে কমপক্ষে ছয় মাস সময় লাগবে। অর্থ বরাদ্দ না হলে বর্তমানে সচল থাকা ইভিএম দিয়ে সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ২০টি আসনে নির্বাচন করা সম্ভব। এ জটিলতা কাটাতে আবারও নতুন করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি সচিবালয়।
জানতে চাইলে ইভিএম প্রকল্পের পরিচালক কর্নেল সৈয়দ রাকিবুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ইভিএম মেরামতের বিষয়ে যাবতীয় তথ্য আমরা ইসিতে দিয়েছি। সেই বিষয়টি দেখভাল করছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে তারা যে সিদ্ধান্ত দেবে সে অনুযায়ী আমরা কাজ করব।’
জানা গেছে, ইভিএমের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে গত বুধবার নির্বাচন কমিশন বৈঠক করে। সেখানে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কতগুলো আসনে ইভিএম ব্যবহার করা যায় তা নিয়ে আলোচনার একপর্যায়ে জানানো হয়, ইভিএমগুলা সচল করতে বাংলাদশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) ১ হাজার ২৫৯ কোটি ৯০ লাখ টাকার যে প্রস্তাব দিয়েছে, সে ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয় নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করছে। আগামী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে কমিশনের হাতে সময় খুবই কম। আর অর্থ মন্ত্রণালয় অর্থ ছাড়ের পরও ইভিএমগুলা সচল করতে কমপক্ষে ছয় মাস সময় লাগবে। এ পরিস্থিতিতে ইভিএম মেরামতের টাকা চেয়ে আবারও অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে বৈঠক শেষ হয়।
কমিশন সভা শেষে ইসি সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, কমিশন সবসময় বলে আসছে ৭০ থেকে ৮০টি আসনে ইভিএম ব্যবহারের আপ্রাণ চেষ্টা করবে। তবে কত আসন ইভিএম ব্যবহার করা যাবে তা নির্ভর করবে ব্যবহারযাগ্য ইভিএম মেশিনের ওপর। আর ব্যবহারযোগ্য ইভিএমের সর্বশেষ অবস্থান জানা যাবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থপ্রাপ্তি সাপেক্ষে।
সূত্রগুলো বলছে, ইসির কাছে থাকা ১ লাখ ৫০ হাজার ইভিএমের মধ্যে ১ লাখ ১০ হাজারই মেরামত করা লাগবে। এর মধ্যে ৮০ হাজার ইভিএম ভারী এবং ৩০ হাজার ইভিএম হালকা মেরামতের প্রস্তাব দিয়েছে বিএমটিএফ। বাকি ৪০ হাজার ইভিএম পুরোপুরি অকেজো। বর্তমানে মাত্র ৩৫-৪০ হাজার মেশিন সচল রয়েছে।
এ প্রকল্পের সঙ্গে থাকা এক কর্মকর্তা জানান, সমস্যা সমাধানে ইভিএম মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা বরাদ্দ চেয়ে চিঠি চালাচালির পর অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বেশ কয়েকবার বৈঠক করেছে ইসি সচিবালয়। কিন্তু ইতিবাচক সাড়া পায়নি। এখন হাতে সময় কম। ফলে আবারও চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ চিঠির জবাবের ওপর ইভিএমের বিষয়ে ইসি সচিবালয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে।
আগের ইনিংসের মতোই ব্যর্থ উসমান খাজা। পারেননি ডেভিড ওয়ার্নারও। প্রথম ইনিংসের দুই সেঞ্চুরিয়ানও ফিরে গেছেন। দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিংয়ে তাই খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থায় নেই অস্ট্রেলিয়া। তবুও তৃতীয় দিন শেষে এগিয়ে আছে তারা।
ওভালে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতকে ২৯৬ রানে আটকে দেওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেট হারিয়ে ১২৩ রান করে অসিরা। এগিয়ে আছে ২৯৬ রানে।
দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিংয়ের শুরুটা ভালো করেছে ভারত। অস্ট্রেলিয়াকে চেপে ধরেছে তারা।
দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও উসমান খাজা ফেরেন ২৪ রানের মধ্যেই। মারনাস লাবুশান ও স্টিভেন স্মিথের ৬২ রানের জুটি ভাঙেন রবীন্দ্র জাদেজা, পরে ট্রাভিস হেডকেও ফেরান এই স্পিনার। টেস্ট ক্যারিয়ারে অষ্টমবারের মতো স্মিথকে আউট করেছেন জাদেজা।
তৃতীয় দিন শেষে মারনাস লাবুশানের সঙ্গে অপরাজিত আছেন ক্যামেরুন গ্রিন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: অস্ট্রেলিয়া: ৪৬৯ ও ৪৪ ওভারে ১২৩/৪ (লাবুশেন ৪১*, স্মিথ ৩৪; জাদেজা ২/২৫, উমেশ ১/২১)ভারত ১ম ইনিংস: ৬৯.৪ ওভারে ২৯৬ (রাহানে ৮৯, শার্দূল ৫১, জাদেজা ৪৮; কামিন্স ৩/৮৩, গ্রিন ২/৪৪, বোল্যান্ড ২/৫৯)।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাতে বনানীর বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
শুক্রবার সকালে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বনানীর একটি বাসা থেকে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়, যা ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। পরে রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে স্ত্রী হারান শাহরিয়ার কবির।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
নিজের বিদায়ী ম্যাচ বলেই কিনা জ্বলে উঠলেন সার্জিও রামোস। শুরুতেই পেয়ে যান গোলের দেখা। কিলিয়ান এমবাপ্পে আছেন তার আগের মতোই। তিনিও ডাবল লিড এনে দেন। তবে বিদায়ী ম্যাচে নিষ্প্রভ রইলেন লিওনেল মেসি। তাতেই কিনা শুরুতেই এগিয়ে যাওয়া ম্যাচটি হার দিয়ে শেষ করেছে পিএসজি।
লিগ ওয়ানের শেষ ম্যাচে ক্লেরমো ফুতের সঙ্গে ৩-২ গোলে হেরে গেছে প্যারিসিয়ানরা। তাতে রাঙানোর বদলে বিষাদভরা বিদায় হলো মেসি-রামোসদের।
আগেই লিগ শিরোপা নিশ্চিত করা পিএসজি মৌসুমে নিজেদের এই শেষ ম্যাচে দুটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছিল। হুগো একিতেকে ও আশরাফ হাকিমিকে ফেরান কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়ের।
শুরুতে গুছিয়ে উঠতে সময় লেগেছে পিএসজির। প্রথম ১০ মিনিটের পর ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২১ মিনিটের মধ্যে এগিয়ে গিয়েছিল ২-০ গোলে। রামোস ১৬ মিনিটে হেড থেকে এবং তার ৫ মিনিট পর কিলিয়ান এমবাপ্পে পেনাল্টি থেকে গোল করেন।
২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে ক্লেরম ফুতের পাল্টা লড়াই শুরু করতে সময় নিয়েছে মাত্র ৩ মিনিট। ২৪ মিনিটে গোল করেন ক্লেরমঁর গাস্তিয়েন। এর প্রায় ১২ মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে গোল করার সুযোগ নষ্ট করেন ক্লেরমঁ স্ট্রাইকার কেয়ি। পরে অবশ্য ৬৩ মিনিটে তাঁর গোলেই জিতেছে ক্লেরমঁ। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ক্লেরমঁর হয়ে সমতাসূচক গোলটি জেফানের।
বিরতির পর গোলের দারুণ একটি সুযোগ নষ্ট করেন মেসি। ৫৪ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে এমবাপ্পে ঢুকে পড়েন ক্লেরমঁর বিপদসীমায়। তাঁর ক্রস পেয়ে যান ডান প্রান্ত দিয়ে দৌড় বক্সে ঢোকা মেসি। সামনে গোলকিপার একা, কিন্তু মেসি অবিশ্বাস্যভাবে বলটা পোস্টের ওপর দিয়ে মারেন।
সতীর্থ গোলকিপার সের্হিও রিকোর সুস্থতা কামনা করে বিশেষ জার্সি পরে মাঠে দাঁড়িয়েছিলেন মেসি-এমবাপ্পেরা। ঘোড়ায় চড়তে গিয়ে দূর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন রিকো। ম্যাচে বিশেষ জার্সি পরে খেলেছে পিএসজি। মেসি-রামোসদের জার্সির পেছনে রিকোর নাম লেখা ছিল।
৩৮ ম্যাচে ৮৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থেকে মৌসুম শেষ করল পিএসজি। ৮৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে লেঁস। তৃতীয় মার্শেইয়ের সংগ্রহ ৭৩ পয়েন্ট। ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে চারে ইউরোপা লিগ নিশ্চিত করা রেঁনে।