
চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া থানা-পুলিশের সদস্যরা ভেজাল ও নিম্নমানের খাদ্যপণ্য বিক্রির অভিযোগ তুলে গণহারে চাঁদাবাজি করছে বলে অভিযোগ করেছেন চাক্তাই রাজাখালী এলাকার কিছু ব্যবসায়ী। তারা বলেছেন, বাকলিয়া থানায় কর্মরত পাঁচজন এসআই এক মাস ধরে ব্যবসায়ীদের অতিষ্ঠ করে তুলেছেন। গভীর রাতে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও গুদামে হানা দিয়ে নিম্নমানের পণ্য বিক্রির অভিযোগ তুলে লাখ লাখ টাকা আদায় করছেন এই পুলিশ কর্মকর্তারা। গতকাল সোমবার বেলা ১১টায়ও রাজাখালী এলাকায় কথিত অভিযানে যান বাকলিয়া থানার এসআই আসাদুল্লাহসহ আরও কিছু পুলিশ সদস্য।
এ সময় আপেল মার্কা ‘আরজে সেমাই’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে হানা দেন তারা। ময়দা নিম্নমানের, ট্রেড লাইসেন্স না থাকা এমন বিভিন্ন অভিযোগ তুলে প্রতিষ্ঠানের মালিক রাকিবকে ধরে থানায় নিয়ে যান এসআই আসাদুল্লাহ। বেলা ১১টা থেকে গতকাল এই প্রতিবেদন লেখার সময় (সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত) রাকিবকে থানায় ‘আটক’ করে রাখা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বাকলিয়া থানায় ‘আটক’ অবস্থা থেকে রাকিব মোবাইল ফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আজ বেলা ১১টার দিকে এসআই আসাদুল্লাহসহ কিছু পুলিশ কনস্টেবল আমার প্রতিষ্ঠানে আসেন। এ সময় এসআই আসাদুল্লাহ আমার প্রতিষ্ঠানের ময়দার মান খারাপ বলে অভিযোগ করে আমাকে থানায় এনে আটক করে রেখেছেন। আমি তাদের বলেছি, আমার প্রতিষ্ঠানের জন্য পণ্য কেনার সব কাগজপত্র আমার কাছে আছে। আমার এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ বা মামলা নেই। তবুও কেন আমাকে থানায় বসিয়ে রাখা হয়েছে।’
রাকিবকে থানায় ধরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে এসআই আসাদুল্লাহ বলেন, ‘আজ সকালে রাজাখালী এলাকায় গিয়েছিলাম জমিজমা-সংক্রান্ত একটি মামলার তদন্ত করতে। এ সময় রাকিবের প্রতিষ্ঠানে যাই। থানার সেকেন্ড অফিসার তাকে (রাকিব) থানায় আনতে বলেছেন।’
রাকিবের এবং তার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে থানায় কোনো অভিযোগ বা মামলা নেই। তা ছাড়া গতকাল সেখানে ভেজালবিরোধী কোনো অভিযানও হয়নি, তাহলে কেন রাকিবকে থানায় নিয়ে আটক করে রাখলেন? এমন প্রশ্ন করলে এসআই আসাদুল্লাহ বলেন, সেকেন্ড অফিসার বিস্তারিত জানাবেন।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে জানান, গত এক মাসের ব্যবধানে চাক্তাই-রাজাখালী এলাকার বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিক-কর্মচারীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রায় আট লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছেন আলোচ্য পুলিশ কর্মকর্তারা। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে গতকাল রাতে নিজেদের ব্যবসায়ী সংগঠন চাক্তাই শিল্প ও বণিক সমিতি কার্যালয়ে জরুরি বৈঠক ডাকেন ভুক্তভোগীরা।
তাদের মধ্যে অন্যতম মেসার্স জননী পোলট্রি অ্যান্ড ফিশ ফিডের মালিক রিকু সেন অভিযোগ করে বলেন, ‘এক মাস ধরে বাকলিয়া থানার সাব-ইন্সপেক্টর আমীর হোসেন, মোরশেদ, বেলাল, আসাদ উল্লাহ ও তাজুল ইসলাম বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে গভীর রাতে অভিযান পরিচালনার নামে ব্যবসায়ীদের অতিষ্ঠ করে তুলেছেন। ভেজাল ও নিম্নমানের পণ্য বিক্রির অভিযোগ দিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এভাবে এক মাসে ৮-১০টি প্রতিষ্ঠান থেকে অন্তত আট লাখ টাকা চাঁদাবাজি করেছেন এই পাঁচ সাব-ইন্সপেক্টর।’
এক মাস ধরে চাঁদাবাজি চললেও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ না দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে ব্যবসায়ী রিকু সেন বলেন, ‘আমরা আজ রাতে সমিতির কার্যালয়ে বিষয়টি নিয়ে বসব। এরপর সিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করব।’
ব্যবসায়ীদের তথ্য অনুযায়ী, যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে পুলিশ চাঁদা আদায় করেছে সেগুলো হলো মেসার্স জননী পোলট্রি অ্যান্ড ফিশ ফিড, আবদুল্লাহ এন্টারপ্রাইজ, চাল ব্যবসায়ী আহমদ হোসেন, মেসার্স দেলোয়ার সওদাগরের সেমাই ফ্যাক্টরি, রাজাখালী রোডের আক্কাস সওদাগর ও মেসার্স জয়নাল সওদাগরের ময়দার ফ্যাক্টরি।
ভুক্তভোগী আহাম্মদ নুর সওদাগর অভিযোগ করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নিম্নমানের চাল মজুদের অভিযোগ তুলে ১৬-১৭ দিন আগে এসআই আমীর আমার কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা নিয়ে যান। এর ২০-২২ দিন আগে চাল গুদামজাত করার সময় একই অজুহাত তুলে আমার প্রতিষ্ঠানের ক্যাশিয়ার শফির কাছ থেকে সাব-ইন্সপেক্টর মোরশেদ আড়াই লাখ টাকা নিয়েছেন।’
মেসার্স জননী পোলট্রি অ্যান্ড ফিশ ফিড, প্রোপ্রাইটর রিকু সেন অভিযোগ করে বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমার প্রতিষ্ঠানের জন্য আনা ছোলা, মসুর ডাল ও সরিষা ট্রাক থেকে গুদামে নেওয়ার সময় নিম্নমানের অভিযোগ তুলে সাব-ইন্সপেক্টর আমীর হোসেন ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন।’
ভুক্তভোগী রাজাখালী এলাকার পেঁপে মার্কা সেমাই কারখানার মালিক দেলোয়ার সওদাগর বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠানে মজুদ থাকা ময়দার মান নিম্নমানের বলে অজুহাত তুলে ৬৫ হাজার টাকা নিয়েছেন বাকলিয়া থানার সাব-ইন্সপেক্টর আমীর হোসেন।’
ব্যবসায়ীরা জানান, একইভাবে মেসার্স আবদুল্লাহ এন্টারপ্রাইজের মালিক সোহাগের গুদামে ‘অভিযান’ চালিয়ে নিম্নমানের মৎস্য খাদ্য বিক্রির অভিযোগ তুলে ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা আদায় করা হয়। সোহাগের গুদামে ‘অভিযানের’ নেতৃত্ব দেন এসআই বেলাল, এসআই আমীর হোসেন ও এসআই তাজুল। রাজাখালী রোডের জনতা বিল্ডিংয়ের সামনে মেসার্স জয়নাল সওদাগরের সেমাই ফ্যাক্টরির ময়দার মান খারাপ বলে আদায় করা হয় ১০ হাজার টাকা, মুসলিম বেকারি গলিতে মেসার্স আবুল কালাম ফিড মিলের পণ্য ট্রাক থেকে নামানোর সময় নেওয়া হয় ১০ হাজার টাকা, রাজাখালী রোডের তেল ব্যবসায়ী আক্কাস সওদাগর থেকে নেওয়া হয় ৬৫ হাজার টাকা এবং চাক্তাই মুসলিম বেকারি গলির ভেতরে ঘি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান কুইন কাউ নামক কারখানা থেকে এসআই আমীর নেন ৭০ হাজার টাকা।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, মনি বেগম, মোহাম্মদ কালু ও মো. আকাশ নামে তিনজন মাদক কারবারি চক্রের সদস্য। রাজাখালী ফায়ার সার্ভিস এলাকায় জুয়ার আসর চালায় কালু। স্থানীয় মুসলিম বেকারি গলি এলাকায় মাদক বিক্রি করে মনি বেগম। কিছু পুলিশের সঙ্গে তাদের সখ্য রয়েছে। পুলিশের সঙ্গে সখ্যকে পুঁজি করে চাক্তাই এলাকার বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের তারা নিয়মিত হয়রানি ও চাঁদাবাজি করছে।
ব্যবসায়ীদের দাবি, চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠায় বাকলিয়া থানার এসআই আমীর হোসেনকে কিছুদিন আগে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছে।
তবে বাকলিয়া থানার ওসি আবদুর রহিমের দাবি, পদোন্নতি পাওয়ার পর এসআই আমীরকে কিছুদিন আগে সদরঘাট থানাধীন মাদারবাড়ী ফাঁড়ির ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ বিষয়ে বক্তব্য জানতে গত রবিবার রাত পৌনে ৮টার দিকে এসআই আমীর হোসেনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এদিকে নিজের থানায় কর্মরত পাঁচ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে এমন চাঁদাবাজির অভিযোগ শুনে বিস্মিত হয়েছেন ওসি আবদুর রহিম। তিনি পাল্টা প্রশ্ন রেখে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশ একটা সুশৃঙ্খল বাহিনী। এটা কি মগের মুল্লুক? ব্যবসায়ীরা কেন পুলিশকে বারবার টাকা দেবেন? তারা আমাকে জানাননি কেন? তবে অভিযোগের সত্যতা পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ওসি আবদুর রহিমের সঙ্গে কথা বলার কিছুক্ষণ পর অভিযোগকারীদের নাম-ঠিকানা ও মোবাইল ফোন নম্বর তাকে (ওসি) হোয়াটসঅ্যাপে দেন এই প্রতিবেদক। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলারও অনুরোধ করা হয়। এক ঘণ্টা পর গতকাল সন্ধ্যায় কল করলে ওসি আবদুর রহিম বলেন, ‘ভাই আমি অন্য কাজে ব্যস্ত আছি।’
ঢাকা মহানগরে ২০ ভাগ সবুজ এলাকা থাকা প্রয়োজন, সেখানে আছে সাড়ে ৮ ভাগের কম। আর যেটুকু আছে তাও সীমানাপ্রাচীরে ঘেরা। সবুজ বা উন্মুক্ত জায়গায় বাণিজ্যিক কার্যক্রমও একটি বাধা। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়ের (বুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। ‘ঢাকা নগরীর সবুজ এলাকা এবং এর রাজনৈতিক অর্থনীতি’ শিরোনামে গবেষণাটি গত বছরের জুলাই থেকে অক্টোবর মেয়াদে করা হয়। গতকাল সোমবার সকালে বুয়েটের কাউন্সিল ভবনে এই গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়।
গবেষণায় দেখা যায়, রাজউক ও সিটি করপোরেশন, গণপূর্ত অধিদপ্তর, জাতীয় গৃহায়ন কর্র্তৃপক্ষ ও বিএফডি ঢাকার সবুজ জায়গা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্ত। তবে সবুজ জায়গা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে রাজউকের বিরোধ রয়েছে। আবার সিটি করপোরেশন অনেক ক্ষেত্রে মুনাফা করার জন্য সবুজ জায়গায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে।
রাজউকের অভিযোগ, সরকারি সংস্থা সবুজ জায়গাকে পরিবর্তন করার সময় তার কাছ থেকে অনুমতি নেয় না। তবে চুক্তিতে ব্যত্যয় ঘটালে রাজউক সবুজ জায়গা ফেরত নিতে পারে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকাকে পৃথিবীর আর কোনো শহরের সঙ্গে তুলনা করার সুযোগ নেই। প্রতিদিন যে পরিমাণ মানুষ ঢাকায় ঢুকছে তাতে খোলা জায়গা, খেলার মাঠ বা সবুজ এলাকা রক্ষা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশে যেকোনো পরিকল্পনা বা জননীতি বাস্তবায়ন করতে গেলে যখনই তা কারও স্বার্থের বিরুদ্ধে যায় তখন সেই পরিকল্পনার বিপক্ষে তিনি অবস্থান নেন। এই ধরনের মানসিকতা কমিউনিটির সবার মঙ্গলের জন্য পরিহার করতে হবে।
এ সময় মন্ত্রী ঢাকা ডিটেইলস এরিয়া প্ল্যান বা ড্যাপের কথা উল্লেখ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একজন কর্মী হিসেবে তিনি প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া দায়িত্ব পালন করেছেন সর্বোচ্চ পরিশ্রম ও আন্তরিকতা দিয়ে। ড্যাপ প্রণয়নের ক্ষেত্রে বসবাসের স্থান, খোলা জায়গা, খেলার মাঠ, সবুজ ও জলজ এলাকা থেকে শুরু করে অন্যান্য নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ভালো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজসহ সবার এগিয়ে আসতে হবে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, যেখানে পাঁচ হাজার নাগরিকের সুবিধার ব্যবস্থা করা আছে সেখানে যদি ২০ হাজার লোক বসবাস করে তাহলে কীভাবে বসবাসযোগ্যতা বজায় থাকবে। এই বিষয়গুলো আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে।
গবেষণার নেতৃত্ব প্রদানকারী নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আফসানা হক বলেন, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, রাজউক শহরের মধ্যে সবুজ জায়গা তৈরি করতে পারে। তৈরির পর তা সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করে।
হস্তান্তরের জায়গায় কিছু প্রক্রিয়াগত সমস্যা আছে।
বুয়েটের উপাচার্য সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেন, যে গবেষণা করা হয়, তা যেন দেশের কাজে লাগে, তার জন্য একটা প্ল্যাটফর্ম করা দরকার। বুয়েটের সহ-উপাচার্য আবদুল জব্বার খান বলেন, পৃথিবীর কোথাও পার্ক বা সবুজ এলাকায় দেয়াল দেওয়া হয় না, বাংলাদেশে হয়। সবুজ যেন বাইরের মানুষও দেখতে পারে, সে জন্য বুয়েটের সবুজ এলাকার বিদ্যমান দেয়াল ভেঙে ফেলে স্বচ্ছ দেয়াল করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফরেস্ট সার্ভিস ইন্টারন্যাশনাল কর্মসূচির অর্থায়নে এই গবেষণা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল জব্বার খাঁন, ইউএসএইড বাংলাদেশের অফিস অব ইকোনমিক গ্রোথের পরিচালক মোহাম্মাদ এন খান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বুয়েটের উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার।
দেশে প্রথমবারের মতো এলিট ফোর্স র্যাবের ডগ স্কোয়াডের একটি কুকুর বীরত্বপূর্ণ কাজের জন্য র্যাব মহাপরিচালক পদক পেয়েছে। র্যাব ফোর্সেসের ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও র্যাব মেমোরিয়াল ডে-২০২৩ উপলক্ষে গতকাল সোমবার মহাপরিচালকের দরবার অনুষ্ঠানে ডগ স্কোয়াডের কুকুর ‘চিতা’কে মহাপরিচালক পদক দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন দেশ রূপান্তরকে বলেন, রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় উদ্ধার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে দুর্ঘটনায় নিহত তিন ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে র্যাবের ডগ স্কোয়াডের কুকুর চিতা। এরপরই পদকের সিদ্ধান্ত আসে। তিনি বলেন, দেশে প্রথমবারের মতো র্যাব ডগ স্কোয়াডের একটি কুকুর বীরত্বপূর্ণ কাজের জন্য র্যাব মহাপরিচালক পদক পেয়েছে। ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও র্যাব মেমোরিয়াল ডে-২০২৩ উপলক্ষে মহাপরিচালকের দরবার অনুষ্ঠানে ডগ স্কোয়াডের কুকুর চিতাকে মহাপরিচালক পদক দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন র্যাব মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন, বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) কর্নেল কামরুল হাসান ও অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ইমতিয়াজ আহমেদ।
আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটি থেকে বহিষ্কৃত নেত্রী ও আইপি টিভি জয়যাত্রা টেলিভিশনের চেয়ারম্যান হেলেনা জাহাঙ্গীরসহ পাঁচজনকে প্রতারণার মামলায় দুই বছর করে কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেককে দুই হাজার টাকা অর্থদন্ড দেওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন এ রায় ঘোষণা করেন। দণ্ডপ্রাপ্ত অন্য আসামিরা হলেন জয়যাত্রা টেলিভিশনের মহাব্যবস্থাপক হাজেরা খাতুন, টেলিভিশনের সমন্বয়ক সানাউল্লাহ নূরী, প্রধান বার্তা সম্পাদক কামরুজ্জামান আরিফ ও স্টাফ রিপোর্টার মাহফুজুর রহমান।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আজাদ রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, রায়ের সময় হেলেনা জাহাঙ্গীর ও হাজেরা খাতুন হাজির না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশে দেয় আদালত। সাজাপ্রাপ্ত অপর তিনজনকে সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
জয়যাত্রা টিভির ভোলা জেলা প্রতিনিধি আবদুর রহমান তুহিন বাদী হয়ে ২০২১ সালের ২ আগস্ট রাজধানীর পল্লবী থানায় হেলেনা জাহাঙ্গীরসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়, জয়যাত্রা টিভির স্থানীয় সংবাদদাতা হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য বাদীর কাছ থেকে ৫৪ হাজার টাকা নেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। প্রতিবেদক হিসেবে কয়েক মাস কাজ করলেও তাকে কোনো বেতন দেওয়া দেয়নি। অন্যদিকে তার কাছ থেকে প্রতি মাসে তিন হাজার টাকা নেয় টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ।
তদন্ত শেষে ২০২১ সালের ২১ নভেম্বর হেলেনা জাহাঙ্গীরসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে সিআইডি। ২০২২ সালের ১৮ এপ্রিল অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু হয়। বিচার চলাকালে আসামিদের বিরুদ্ধে ১৩ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন।
রায়ের পর আসামিপক্ষের আইনজীবী আমানুল করিম লিটন রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে জানান।
মহাসড়কে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সড়ক প্রশস্ত করে, লেন বাড়িয়ে বা এক্সপ্রেসওয়ে করেও লাগাম টানা যাচ্ছে না দুর্ঘটনা আর প্রাণহানি। সবশেষ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়কের (ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে) শিবচরে একটি বেপরোয়া গতির বাস দুর্ঘটনায় ১৯ জনের প্রাণহানি হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও কয়েক জন। গত রবিবার অতিরিক্ত গতির ইমাদ পরিবহনের ওই বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে গেলে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। এরপরই মহাসড়কে এমন দুর্ঘটনার কারণ ও তা নিয়ন্ত্রণের উপায় নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা। ইমাদ পরিবহনের বাসটিতে গতি নিয়ন্ত্রক ডিভাইস না থাকাকে দায়ী করে অনেকে নজরদারির বিষয়টিও সামনে এনেছেন। অনেকে আবার বলছেন, গাড়ির ফিটনেসের কথা। তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, গাড়ির বেপরোয়া গতি, চালকদের ঘুমঘুম ভাব, পুরনো চাকা নতুন করে ব্যবহার, শ্রমিকদের কর্মঘণ্টা ঠিক না করা ও এনফোর্সমেন্টের অভাবের কারণেই মহাসড়কে বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে।
আবু সালেহ মুসা নামের এক শিক্ষার্থী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার বাড়ি বরিশাল জেলায়। আগে ঢাকা থেকে লঞ্চে যাওয়া হতো গ্রামের বাড়ি। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় বাস দিয়ে যাতায়াত করা হয়। কিন্তু এই এক্সপ্রেসওয়েতে চালকরা ওভার স্পিডে গাড়ি চালায়। সেদিনও আমি যে বাসে ছিলাম ওই বাসের সঙ্গে মোটরসাইকেলের বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটত। অল্পের জন্য মোটরসাইকেল ও আমাদের বাসটি মারাত্মক দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায়। এভাবেই চলছে হাইওয়ের রোডের বাস।’
ঢাকা-বরিশাল রোডে চলাচল করা হানিফ পরিবহনের বাসচালক শেখ সুমন বলেন, ‘আমাদের কোম্পানির পরিবহনে গতি সীমা বেঁধে দেওয়া আছে। সড়কে যে স্পিডে চলাচল করার কথা বলা হয়, সেগুলো আমরা মেনে চলি। কিন্তু আমার একা তো নিয়ম মেনে চললে হবে না। সব কোম্পানির চালককে নিয়ম মেনে চালাতে হবে। তা না হলে দুর্ঘটনা তো ঘটবেই।’
৪০ বছর ধরে পরিবহন চালকের আসনে আছেন আরেক চালক মো. নবাব মিয়া। তিনি বলেন, ‘গাড়িচালকদের সব সময় দায়ী করা হয় দুর্ঘটনার জন্য। কিন্তু বাসে উঠলে অনেক যাত্রী চালকদের দ্রুত গতিতে চালাতে বাধ্য করে। তখন অনেক চালক যাত্রীদের প্ররোচনায় পড়ে দ্রুত চালায়। এ জন্য দুর্ঘটনা হয়। তাই শুধু চালকদের একা দায় দিলে হবে না। অনেক সময় যাত্রীদেরও দায় থাকে।’
চলাচলের সময় ঘুমভাব হওয়ার কারণ জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বাসচালক বলেন, একজন চালক যদি টানা ২০ থেকে ৩০ ঘণ্টা গাড়ি চালায়, তাহলে তো তার ঘুমঘুম ভাব আসবেই। আর অনেক কোম্পানির গাড়ি থাকে, কিন্তু চালক কম থাকে। তখন এক চালককে দিয়ে মালিকরা অনেক ঘণ্টা চালাতে চায়। এ জন্যও অনেক দুর্ঘটনা ঘটে।’
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হাইওয়েতে যে বাসগুলো চলাচল করে ওই গাড়িতে যে চাকা ব্যবহার করা হয়, সেগুলো বেশির ভাগ সময় পুরনো টায়ার ব্যবহার করা হয়। বিশ্বের অন্য কোনো দেশে পুরনো টায়ার ব্যহার করা হয় না। শুধু বাংলাদেশে বাস মালিকরা টাকা বাঁচাতে পুরনো টায়ার ব্যবহার করে। আর সড়কে যে স্পিড মানতে বলা হয়, সেগুলো তো চালকরা মানে না। যার জন্য এ রকম দুর্ঘটনা হয়। তাই দুর্ঘটনা রোধে কঠোর মনিটরিং করার দাবি জানান তিনি।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ হানিফ খোকন বলেন, দুর্ঘটনা ঘটলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় পরিবহন চালকরা। এই চালকদের কোনো কর্মঘণ্টা ঠিক থাকে না। তাদের কোনো নিয়োগপত্র দেওয়া হয় না। প্রতিদিন টানা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ডিউটি করলেও কোথাও বিশ্রামের জায়গা নেই। মূলত এসব ঠিক না হলে দুর্ঘটনা বাড়বেই।
বাংলাদেশ বাস মালিক সমিতির সহসভাপিত মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের সমিতি থেকে সব বাস মালিককে বলা আছে, সবাই যেন সড়কে যে স্পিডে গাড়ি চলার জন্য বলা হয়, সে নিয়ম মানে। কিন্তু কেউ মানে এ নিয়ম আবার কেউ মানতে চায় না। যার জন্য দুর্ঘটনা ঘটে। আর চালকদের বিশ্রামের জন্য কুমিল্লায় একটি বিশ্রামাগার করা হয়েছে। ধীরে ধীরে বাকি জায়গায় বিশ্রামাগারের জন্য কাজ করা হচ্ছে। আর পরিবহনশ্রমিকদের যে নিয়োগপত্রের কথা বলা হয় তারা তো এক গাড়িতে বেশিদিন ডিউটি করে না। তাহলে কীভাবে দেওয়া হবে নিয়োগপত্র?’
পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. এম শামসুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, দূরপাল্লায় রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকায় সবাই দ্রুত গতিতে চালাতে চায়। কিন্তু যদি ওই সব চালককে এনফোর্সমেন্ট করানো যায়, তাহলে তারা নিয়ম মানতে বাধ্য হবে। আর দুর্ঘটনাও অনেক অংশে কমে আসবে।
বিআরটিএর পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মাহবুব-ই-রব্বানী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যেসব গাড়ির ফিটনেস নেই, সেগুলোর বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান। সম্প্রতি ইমাদ পরিবহনের বাসের সড়কে চলার অনুমোদন ছিল না কিন্তু তারপরও চলাচল করেছে। সেই বাসটির রেজিস্ট্রেশন বাতিলের কাজ চলমান আছে। মহাসড়কে যে বাসগুলো নিয়ম মানে না, সেগুলোর বিরুদ্ধে তো হাইওয়ে পুলিশও ব্যবস্থা নিতে পারে।’
দিনাজপুরের পার্বতীপুরের বড়পুকুরিয়া খনিতে কয়লা উত্তোলন বন্ধ হয়ে গেছে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত খনির ১৩০৬ ফেজ থেকে ৫ লাখ ৫০ হাজার টন কয়লা উত্তোলন করা হয়েছে। বর্তমানে পিডিবির কাছে কোল ইয়ার্ডে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টন কয়লা মজুদ রয়েছে। এখন নতুন ১১১৩ নম্বর ফেজ থেকে কয়লা উৎপাদন শুরুর প্রস্তুতি চলছে।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. সাইফুল ইসলাম সরকার দেশ রূপান্তরকে বলেন, কয়লা উৎপাদন বন্ধ একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। সব প্রস্তুতি শেষ করে আগামী মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে নতুন ১১১৩ নম্বর ফেজ থেকে কয়লা উত্তোলন শুরু করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া এ সময়ে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ত্রুটি-বিচ্যুতি ধরা পড়লে মেরামতের জন্য বাড়তি সময়ের প্রয়োজন হয়। এজন্য কয়লার উৎপাদন সাময়িক বন্ধ থাকে।
খনির কর্মকর্তারা জানান, বন্ধ হয়ে যাওয়া ১৩০৬ নম্বর ফেজে ব্যবহৃত উৎপাদন যন্ত্রপাতি সরিয়ে ১১১৩ নম্বর ফেজে স্থাপন করে আবার কয়লা উত্তোলন শুরু করতে আগামী মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এ ফেজে গত বছরের ২৭ জুলাই কয়লা উত্তোলন শুরু হয়েছিল। নতুন ১১১৩ ফেজে ৩ লাখ টন কয়লা মজুদ রয়েছে।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাতে বনানীর বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
শুক্রবার সকালে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বনানীর একটি বাসা থেকে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়, যা ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। পরে রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে স্ত্রী হারান শাহরিয়ার কবির।
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুতে অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেছেন, সিরাজুল আলম খান স্বাধীনতার প্রাণ পুরুষ, নেপথ্যের নায়ক ও সফল স্বপ্ন দ্রষ্টা। বাঙালির জাতি রাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে, যুব ছাত্রদের মনে স্বাধীনতার অগ্নিশিখা ছড়িয়ে দেওয়ার মন্ত্র এবং সকল সংগ্রাম আন্দোলনকে গণআন্দোলনে রূপান্তর করে স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে আনার অন্যতম কৌশল প্রণয়নকারী তিনি।
সিরাজুল আলম খান ১৯৬২ সালেই স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে নিউক্লিয়াস গঠন করেন। এই নিউক্লিয়াসই ছাত্র জনতার আন্দোলন, ৬ দফা ১১ দফা সহ প্রতিটি আন্দোলনকে স্বাধীনতার পক্ষে জনমত সৃষ্টির কাজে রূপ দিতে গুরু দায়িত্ব পালন করে। একাত্তরের পূর্বেই সম্ভাব্য সশস্ত্র স্বাধীনতা যুদ্ধকে হিসেবে রেখে, বিএল এফ বা মুজিব বাহিনী গঠন করা হয়।
জয়বাংলা বাহিনী গঠন, জাতীয় পতাকা তৈরি ও উত্তোলন,জাতীয় সংগীত নির্ধারণ, বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের সর্বাধিনায়ক ঘোষণা করে স্বাধীনতার ইশতেহার প্রণয়ন, অসহযোগ আন্দোলন, ৭ই মার্চের ভাষণ সহ সকল আন্দোলন সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর সাথে সমন্বয় সাধনে ঐতিহাসিক ও যুগান্তরকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করে অনন্য ইতিহাসের নায়ক তিনি।
সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রামের পর 'বিপ্লবী জাতীয় সরকার' গঠন, স্বাধীনতা সংগ্রামের চেতনায় সংবিধান প্রণয়ন, জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর গঠন এবং সমবায় ভিত্তিক অর্থনীতিসহ ১৫ দফা করণীয় উত্থাপন করে রাষ্ট্র বিনির্মাণের
রূপরেখা প্রদান করেন। ১৯৭২ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল গঠন, ৭৫ এ সিপাহী জনতার গণ অভ্যুত্থানের পরিকল্পনাকারী ছিলেন সিরাজুল খান। বাঙালির জাতীয় ইতিহাসে অনেক অবিস্মরণীয় ঘটনার নেপথ্য নায়ক তিনি।
পরবর্তীতে ঔপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থার বিপরীতে বাংলাদেশের জনগণ কে শ্রমজীবী কর্মজীবী পেশাজীবী সামাজিক শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করে ১৪ দফা সম্মিলিত সম্মিলিত রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক মডেলসহ রাজনৈতিক তত্ত্ব উদ্ভাবন করেন।
ব্যক্তিগত সম্পদ - স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি অর্জনের বাইরে অকৃতদার সিরাজুল আলম খান অনন্য সাধারণ বাঙালি। ইতিহাস তাকে বাঙালির দেদীপ্যমান 'বাতিঘর' হিসেবে ইতিহাসের ঐতিহাসিকতায় ধারণ করবে।
সিরাজুল আলম খান ছিলেন আমার রাজনৈতিক দার্শনিক শিক্ষক। তার মৃত্যুতে দেশ অন্যতম একজন শ্রেষ্ঠ সন্তানকে হারাল। সিরাজুল আলম খান বাঙালির অন্তরাত্মায় সদা সর্বদা সর্বাগ্রে জাগ্রত থাকবেন।
রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেলের আলো ঝলমলে অডিটোরিয়ামে দেশি-বিদেশী মডেল ভাড়া করে এনে সাড়ম্বরে ঘোষণা করা হয়েছিল প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক নারী ফুটবল আসর ওমেন্স সুপার লিগের। সিনে জগতের তারকাদের সঙ্গে মঞ্চে র্যাম্প করতে করতে প্রত্যাশার ঘুড়িটা দূর আকাশে উড়িয়েছিলেন সাবিনা-সানজিদারা। দেশের ফুটবলের বড় বিজ্ঞাপন এখন তারা। ফুটবলপ্রেমীদের তাদের নিয়ে অসীম আগ্রহকে পুঁজি করে কে-স্পোর্টস আর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন চেয়েছিল ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট করে ফায়দা লুটতে। তবে দিন যত গড়িয়েছে, মেয়েদের স্বপ্ন ধূসর হয়েছে। এখন তো তা মিলিয়ে গেছে বহুদূরে।
কে-স্পোর্টস-বাফুফের কর্তারা বুঝেছেন, তাদের লেখা চিত্রনাট্য আর বাস্তবতায় বড্ড ফাঁরাক। তাই তারা বারবার টুর্নামেন্ট শুরুর তারিখ দিয়েও আলোচিত টুর্নামেন্টকে মাঠে নিয়ে যেতে পারেননি। সর্বশেষ ১০ জুন আসর শুরুর ঘোষণা দিয়েছিলেন খোদ বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। সেটাও মিথ্যে হয়ে গেছে। তাই হতাশা ছাঁপিয়ে নারী ফুটবলারদের মনে ভর করেছে রাজ্যের ক্ষোভ।
কে-স্পোর্টস আর বাফুফের কর্তারা ভেবেছিলেন এমন একটা টুর্নামেন্টের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করতে হামলে পড়বে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। গত বছর নেপালে সাফ শিরোপা জয়ের পর মেয়েদের নিয়ে যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল, সেটাই আসলে স্বপ্নবাজ করে তোলে সালাউদ্দিন-মাহফুজা আক্তার-ফাহাদ করিমদের। তবে হয়েছে উল্টো। সেটাই যে হওয়ার কথা! কে-স্পোর্টস কিংবা বাফুফে, দুটি প্রতিষ্ঠানই যে এখন ভীষণভাবে ইমেজ সঙ্কটে ভুগছে। এর মাঝে অগোচরে একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে, যেটা কখনই প্রত্যাশিত ছিল না। কে-স্পোর্টস আর বাফুফের দেখানো স্বপ্নে বুদ হয়ে গিয়েছিলেন ফুটবলাররা। এমন একটা টুর্নামেন্টে খেলতে মুখিয়ে ছিলেন তারা। এমনিতে ঘরোয়া ফুটবল খেলে সেভাবে পারিশ্রমিক জুটে না। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে হলে একটা আকর্ষণীয় পারিশ্রমিকের হাতছানি ছিল। তারচেয়েও বেশি ছিল নানা দেশের নামী-দামী ফুটবলারদের সঙ্গে ড্রেসিং রুম শেয়ার করার সুবর্ণ সুযোগ। দারুণ একটা স্বপ্ন বাস্তবায়নে মুখ বুজে মেয়েরা কঠোর পরিশ্রম করে গেছেন দিনের পর দিন। এর মাঝেই তারা দেখেছেন বাবার মতো কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের বিদায়। বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর ন্যায্য দাবী পুরোপুরি পূরণ না হওয়ার পরও তারা বাফুফের কঠোর অনুশাসন মেনে দুঃসহ গরমে সকাল-বিকাল ঘাম ঝড়িয়েছেন। এরপর যখন দেখলেন এই স্বপ্ন বারবার হোচট খাচ্ছে কে-স্পোর্টসের ব্যর্থতা আর বাফুফের অদূরদর্শীতায়, তখন আর মুখ বুজে থাকতে পারলেন না। হতাশার কথা জানাতে গিয়ে অগোচরে তাদের কণ্ঠ থেকে বের হয়ে এসেছে ক্ষোভের আগুন।
অবস্থা বেগতিক দেখে তড়িঘড়ি বৃহস্পতিবার ক্যাম্প বন্ধ ঘোষণা করে বাফুফে। সিনিয়র খেলোয়াড়দের দেওয়া হয় পাঁচ দিনের ছুটি। বৃহস্পতিবার রাতে বাসে করে সাতক্ষীরাগামী সাফজয়ের অগ্রনায়ক সাবিনা খাতুন দেশ রূপান্তরকে মুঠোফোনে বলছিলেন, 'ওমেন্স সুপার লিগ স্রেফ আমাদের আবেগ নিয়ে খেললো।' একটু থেমে আবার বলতে শুরু করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, 'প্রথমত সাফের পর কোন খেলা নেই। তারপর এই লিগ মেয়েদের নিয়ে দুই দফা এত কিছু করলো, এত আশা দিলো, মেয়েরা খেলার জন্য মুখিয়ে ছিল। আর সব থেকে বড় ব্যাপার বিদেশী খেলোয়াড় যারা দক্ষিণ এশিয়ার, তাদের নিয়ে আমি নিজেও কাজ করছিলাম। তাদের কাছে এখন আমার সম্মান কই থাকলো! বারবার তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। মেয়েরা অনেক আশায় ছিল। কিন্তু... । এটা নিয়ে অবশ্য মেয়েরা অনেক আগেই আশা ছেড়ে দিয়েছিল। এখন আমিও কোন আশা দেখছি না।'
সতীর্থদের সংগে ময়মনসিংহের কলসিন্দুরে বাড়ির যেতে যেতে জাতীয় দলের রাইট উইঙ্গার সানজিদা বলছিলেন, 'আসলে কিছু বলার ভাষাই হারায় ফেলেছি। একটা টুর্নামেন্ট হওয়ার কথা ছিল। এর জন্য আমরা কঠোর অনুশীলণ করছিলাম। আশা ছিল খেলবো। এখন সেটা হচ্ছে না বলে খুব কষ্ট লাগছে। যখন শুনলাম লিগটা হবে না, তখন মনের অবস্থা কেমন হতে পারে, বুঝতেই পারছেন।'
সাফের পর কোন ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি সিনিয়র ফুটবলাররা। এ নিয়ে ভীষণ হতাশ সানজিদা বলেন, 'নয়টা মাস ধরে অপেক্ষায় আছি খেলার। প্রীতি ম্যাচ বলেন কিংবা কোন টুর্নামেন্ট, একটা ম্যাচও আমরা খেলতে পারিনি সাফের পর। অথচ আমাদের সঙ্গে যারা সাফে খেলেছে, তারা প্রায় সবাই পাঁচটা-ছয়টা করে প্রীতি ম্যাচ খেলে ফেলেছে এর মধ্যে।' মেয়েদের সিঙ্গাপুরে গিয়ে প্রীতি ম্যাচ খেলার কথা ছিল, মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাই খেলার কথা ছিল। অথচ বাফুফে অর্থ সঙ্কটসহ নানা অযুহাতে তাদের খেলতে পাঠায়নি। সানজিদা বললেন, 'আমরা আসলে হতাশ হতেও ভুলে গেছি। বারবার টুর্নামেন্টে খেলার কথা বলা হয়, আবার সেটা বাতিল হয়। এরকমটা হতে হতে আসলে আমরা পরিস্থিতির শিকার হয়ে গেছি।'
হতাশা, বঞ্চনায় বাফুফের চাকুরি থেকে পদত্যাগ করেছেন নারী দলের প্রধান কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। প্রিয় কোচের জন্য কষ্ট পান সানজিদা, 'ছোটন স্যারের হাত ধরেই আমার এখানে আসা। তার কাছেই আমার ফুটবলার হয়ে গড়ে ওঠা। তিনি চলে গেছেন। এতে খুব কষ্ট পাই। তিনি আমাদের অনেক আদর-যত্ন করতেন। বাবা-মেয়ের সম্পর্ক যেমন হয়, ঠিক তেমন সম্পর্ক ছিল।'
১৩ জুন সাবিনা-সানজিদাদের ক্যাম্পে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে বাফুফে। বিকল্প নেই বলে তারা হয়তো ফিরবেন। তবে ফেরার সময় তাদের চোখে থাকবে না বড় কোন স্বপ্ন। সেটা দেখাই বারণ। কে-স্পোর্টস আর বাফুফে মিলে যে মেয়েদের সব স্বপ্ন গলা টিপে মেরে ফেলেছে।
বাংলাদেশের রাজনীতির ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিত সিরাজুল আলম খান (দাদা ভাই) আর নেই। ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন। তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
আজ শুক্রবার (৯ জুন) বিকাল আড়াইটার দিকে তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অবিবাহিত ছিলেন।
তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক।
পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তিনি উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট এবং ফুসফুসে সংক্রমণসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
গত ২০ মে সিরাজুল আলম খানকে বার্ধক্যজনিত কারণে ঢাকা মেডিকেলর নতুন ভবনের কেবিনে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। সবশেষ বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাত ৯টা ২০ মিনিটে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।
এর আগে গত ৭ মে থেকে রাজধানীর শমরিতা হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল তার। ২০ মে তাকে ঢাকা মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২০২১ সালে অসুস্থ হয়ে কিছুদিন তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
সিরাজুল আলম খানের জন্ম নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার আলীপুর গ্রামে, ১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি। তার বাবা খোরশেদ আলম খান ছিলেন স্কুল পরিদর্শক। মা সৈয়দা জাকিয়া খাতুন গৃহিণী। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।
স্বাধীনতালগ্নে তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস গঠিত হয়। পরে ছাত্র-তরুণদের আন্দোলন সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তারা। বঙ্গবন্ধুরও ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে ছিলেন এই ছাত্রনেতারা।
স্বাধীন হওয়ার পরপরই শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে সিরাজুল আলম খানের বিরোধের জের ধরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ভেঙে দুই ভাগ হয়। সিরাজুল আলম খানের অনুসারী ছাত্রলীগ ১৯৭২ সালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠন করে। তিনি কখনও মূল নেতৃত্বে না এলেও জাসদ নেতাদের ‘তাত্ত্বিক গুরু’ হিসেবে পরিচিত। তাকে সবাই ‘দাদা ভাই’ নামেই ডাকেন।
সিরাজুল আলম খান কখনও জনসম্মুখে আসতেন না এবং বক্তৃতা-বিবৃতি দিতেন না; আড়ালে থেকে তৎপরতা চালাতেন বলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিতি পান। তার দীর্ঘ ৫১ বছরের রাজনৈতিক জীবন বর্ণাঢ্যের।
আরও পড়ুন—
সিরাজুল আলম খানের বর্ণাঢ্য জীবন
আমার মৃত্যুর পর শোকসভা হবে না, শহীদ মিনারে ডিসপ্লে হবে না লাশ
বাংলাদেশের রাজনৈতিক কাপালিক— সিরাজুল আলম খান
'সিরাজুল আলম খান: বাঙালির বাতিঘর'
যেভাবে রহস্য পুরুষ হলেন দাদাভাই
রাত করে হলে ফেরায় বহিষ্কৃত হন দাদাভাই
মায়ের শাড়ি মুড়িয়ে দাফন করা হবে দাদাভাইকেসিরাজুল আলম খান আর নেই
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমু আত্মহত্যা করেছেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ কমিশনার মো. শহিদুল্লাহ।
মো. শহিদুল্লাহ বলেন, ৪১ বছর বয়সী মুমুর লাশ বাসার বাথরুমের জানালার সঙ্গে রশি থেকে ঝুলছিল। বৃহস্পতিবার (০৮ জুন) রাতে শাহরিয়ার কবিরের মহাখালীর বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করেন তারা। রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন, সে বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেননি উপ-কমিশনার মো. শহিদুল্লাহ।
এ বিষয়ে জানতে শাহরিয়ার কবিরের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাতে বনানীর বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
শুক্রবার সকালে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বনানীর একটি বাসা থেকে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়, যা ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। পরে রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে স্ত্রী হারান শাহরিয়ার কবির।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
নিজের বিদায়ী ম্যাচ বলেই কিনা জ্বলে উঠলেন সার্জিও রামোস। শুরুতেই পেয়ে যান গোলের দেখা। কিলিয়ান এমবাপ্পে আছেন তার আগের মতোই। তিনিও ডাবল লিড এনে দেন। তবে বিদায়ী ম্যাচে নিষ্প্রভ রইলেন লিওনেল মেসি। তাতেই কিনা শুরুতেই এগিয়ে যাওয়া ম্যাচটি হার দিয়ে শেষ করেছে পিএসজি।
লিগ ওয়ানের শেষ ম্যাচে ক্লেরমো ফুতের সঙ্গে ৩-২ গোলে হেরে গেছে প্যারিসিয়ানরা। তাতে রাঙানোর বদলে বিষাদভরা বিদায় হলো মেসি-রামোসদের।
আগেই লিগ শিরোপা নিশ্চিত করা পিএসজি মৌসুমে নিজেদের এই শেষ ম্যাচে দুটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছিল। হুগো একিতেকে ও আশরাফ হাকিমিকে ফেরান কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়ের।
শুরুতে গুছিয়ে উঠতে সময় লেগেছে পিএসজির। প্রথম ১০ মিনিটের পর ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২১ মিনিটের মধ্যে এগিয়ে গিয়েছিল ২-০ গোলে। রামোস ১৬ মিনিটে হেড থেকে এবং তার ৫ মিনিট পর কিলিয়ান এমবাপ্পে পেনাল্টি থেকে গোল করেন।
২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে ক্লেরম ফুতের পাল্টা লড়াই শুরু করতে সময় নিয়েছে মাত্র ৩ মিনিট। ২৪ মিনিটে গোল করেন ক্লেরমঁর গাস্তিয়েন। এর প্রায় ১২ মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে গোল করার সুযোগ নষ্ট করেন ক্লেরমঁ স্ট্রাইকার কেয়ি। পরে অবশ্য ৬৩ মিনিটে তাঁর গোলেই জিতেছে ক্লেরমঁ। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ক্লেরমঁর হয়ে সমতাসূচক গোলটি জেফানের।
বিরতির পর গোলের দারুণ একটি সুযোগ নষ্ট করেন মেসি। ৫৪ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে এমবাপ্পে ঢুকে পড়েন ক্লেরমঁর বিপদসীমায়। তাঁর ক্রস পেয়ে যান ডান প্রান্ত দিয়ে দৌড় বক্সে ঢোকা মেসি। সামনে গোলকিপার একা, কিন্তু মেসি অবিশ্বাস্যভাবে বলটা পোস্টের ওপর দিয়ে মারেন।
সতীর্থ গোলকিপার সের্হিও রিকোর সুস্থতা কামনা করে বিশেষ জার্সি পরে মাঠে দাঁড়িয়েছিলেন মেসি-এমবাপ্পেরা। ঘোড়ায় চড়তে গিয়ে দূর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন রিকো। ম্যাচে বিশেষ জার্সি পরে খেলেছে পিএসজি। মেসি-রামোসদের জার্সির পেছনে রিকোর নাম লেখা ছিল।
৩৮ ম্যাচে ৮৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থেকে মৌসুম শেষ করল পিএসজি। ৮৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে লেঁস। তৃতীয় মার্শেইয়ের সংগ্রহ ৭৩ পয়েন্ট। ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে চারে ইউরোপা লিগ নিশ্চিত করা রেঁনে।