
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে প্রতিদিনের আবহাওয়া আর প্রকৃতিতে। আবহাওয়াবিদদের কাছেও রহস্যময় হয়ে উঠেছে ঝড়-বৃষ্টি বা বন্যার চরিত্র। পুরনো প্রযুক্তির মাধ্যমে নির্ভুল পূর্বাভাসও দিতে পারছেন না তারা। ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সময়মতো পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে না। কৃষকরাও পাচ্ছেন না কৃষি জলবায়ুর ধারণা।
যদিও ২০১৮ সালে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পর আশা করা হচ্ছিল, আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ ও পূর্বাভাস আরও সহজ ও নির্ভুল হবে। কিন্তু প্রায় পাঁচ বছর পর এসেও নিজেদের স্যাটেলাইটের সুবিধা পাচ্ছে না আবহাওয়া অধিদপ্তর। উল্টো একাধিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ রাডার বিকল হয়ে আছে বছরের পর বছর।
এমন প্রেক্ষাপটে আজ ২৩ মার্চ দেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব আবহাওয়া দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য : ‘প্রজন্মান্তরে আবহাওয়া, জলবায়ু ও পানির ভবিষ্যৎ’।
দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার বাণীতে বলেছেন, আবহাওয়া ও জলবায়ু সংক্রান্ত টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকার কাজ করছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিশে^ আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ যেখানে দিন দিন আধুনিক হচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশ পেছনের দিকে যাচ্ছে। সময়োপযোগী অর্থায়ন ও প্রযুক্তির সন্নিবেশ ঘটালেই সঠিক তথ্য দিতে পারবে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়ার আগাম তথ্য না জানায় গত বছর সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছেন আলুচাষিরা। হঠাৎ বৃষ্টির ফলে এ সময় সরিষা ও গমক্ষেতও ক্ষতির মুখে পড়ে। অতিবৃষ্টির আগাম খবর আবহাওয়া অধিদপ্তর দিতে না পারায় এমন পরিস্থিতি হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
একইভাবে গত বছর অক্টোবরে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের ধাক্কায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছিল দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল, মধ্য অঞ্চল ও দক্ষিণ উপকূলের মানুষ। এ ঘূর্ণিঝড়ের শুরু থেকেই গতিবিধি বুঝতে পারেনি আবহাওয়া অধিদপ্তর। ফলে শুরু থেকে সিত্রাংয়ের গতিপথ নিয়ে একেক সময় একেক তথ্য দিয়েছে তরা। সিত্রাংয়ের আঘাতে সে সময় প্রায় ৩৫ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। শুধু তাই নয়, ঘরবাড়ি, মাছের ঘের, পুকুর ও কৃষকের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভাষ্য ছিল, শুরু থেকেই ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এলোমেলো আচরণ করতে পারে। বারবার পাল্টাতে থাকে গতিপথও। তাই এর গতিবিধি ঠিকমতো বোঝা যায়নি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রযুক্তিগত ঘাটতির বিষয়টি স্বীকার করেছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ড. মো. ছাদেকুল আলম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আবহাওয়া অবজারভেশনের (পর্যবেক্ষণ) জন্যও আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারিনি। দ্রুত সময়ের মধ্যে আবহাওয়ার সঠিক তথ্য পেতে হলে সুপার কম্পিউটার প্রয়োজন। কিন্তু এটা কিনতে গেলে ১ হাজার কোটি টাকার উপর খরচ পড়বে। শুধু তাই নয়, এর জন্য পাঁচ মেগাওয়াটের একটা বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রয়োজন। কিন্তু ইনভেস্ট (বিনিয়োগ) না করলে রেজাল্ট (ফল) পাব কোথা থেকে।’
নিজেদের স্যাটেলাইটের সুবিধা পাচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ একটি ‘কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট’। সেখান থেকে আমরা বিশেষ কোনো সুবিধা পাই না। আমাদের জন্য পে-লোডের ব্যবস্থা থাকার কথা ছিল। কিন্তু তারা গুরুত্ব দেয়নি। ফলে আমরা পর্যবেক্ষণ নিতে পারি না। ডেটা আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যবহার করে থাকি। আমাদের জন্য আলাদা করে পে-লোডের প্রয়োজন। সেখানে বিভিন্ন ধরনের ক্যামেরা থাকে আবহাওয়ার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করার জন্য। কিন্তু সেসব নেই। সরকার ঘোষণা দিয়েছে, এরপর যে স্যাটেলাইট পাঠানো হবে সেখানে আবহাওয়া অধিদপ্তরের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে।”
তিনি বলেন, আবহাওয়া পর্যবেক্ষণের জন্য যে পাঁচটি রাডার আছে এগুলোও অনুদানে পাওয়া। আয়ু শেষ হয়ে যাওয়ায় রাডারগুলো ঠিকমতো কাজ করছে না। এর মধ্যে দুটো রাডার অচল হয়ে আছে। যদিও এগুলো মেরামতের কাজ চলছে। ঢাকা এবং রংপুরেরটা পুনঃস্থাপনের কাজ চলছে। বৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি হলে কোথায় বৃষ্টি নামবে বা কতটুকু বৃষ্টি হবে তা নির্ধারণ করা যায় রাডারের সাহায্যে।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস দেয় তা বেশিরভাগ সময় সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছায় না। এর অন্যতম কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের দায়সারা মনোভাবকেই দায়ী করছেন। তাদের মতে, অংশীজনদের সঙ্গে আবহাওয়া অধিদপ্তরের খুব একটা সমন্বয় নেই, থাকলেও কার্যকর নয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাদেকুল আলম বলেন, ‘আবহওয়া অধিদপ্তরের কাজ হচ্ছে তথ্য সরবরাহ করা, মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া নয়। আগের চেয়ে অনেক বেশি নির্ভুল পূর্বাভাস দিতে পারে বাংলাদেশের আবহাওয়া বিভাগ। আমরা যাদের কাছে তথ্য সরবরাহ করে থাকি তার মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে আবার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। এসব স্টেকহোল্ডার বা অংশীজনরা যদি ঠিকভাবে কাজ করে তাহলে সাধারণ ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগবিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিল্লুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগের চেয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর উন্নত হয়েছে। গত কয়েক বছর আবহাওয়া অধিদপ্তর নির্ভুল তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমাদের উন্নত প্রযুক্তির ঘাটতি রয়েছে। কিন্তু নতুন নতুন যন্ত্র আনলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়। তার ব্যবহারও জানতে হবে। আমি মনে করি উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্র কেনার আগে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রশিক্ষিত জনশক্তি না হলে এসব যন্ত্র কিনে কোনো লাভ নেই।’
মেহেরপুর জেলার গড়পুকুর স্থানীয় ঐতিহ্যের অংশ। এটিকে বিনোদন কেন্দ্রে রূপ দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু নিম্নমানের ইট-বালু ও অনিয়মের কারণে গড়া আগেই ধসে পড়ছে বিনোদন কেন্দ্রের ভবন। সম্প্রতি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য। এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত প্রকৌশলীকেও শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
আইএমইডি প্রতিবেদনে জানা গেছে, প্রকল্পটির মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বগুড়ার মেসার্স মাসুমা বেগম নিজে কাজ না করে সাব-লিজে রাজশাহীর এক ঠিকাদারকে দিয়ে করাচ্ছে। এ ধরনের কাজের যার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। এতে কাজের মানও খারাপ হচ্ছে বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে সরকারের মূল্যায়নকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন মানতে রাজি নন পৌরসভার মেয়র, নির্বাহী প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্টরা।
আইএমইডি পরিদর্শনকালে প্রকল্পটির চারটি মূল সমস্যা খুঁজে পেয়েছে। তাতে দেখা যায়, নকশায় পাইলক্যাপ ধরা নেই। এ কারণে গ্রেট বিম বাঁকা হয়ে গেছে। ফলে ধসে পড়তে পারে যেকোনো সময়। অথচ মূল প্রকল্প প্রস্তাবে পাইলক্যাপ ধরা আছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঠিকভাবে কাজ করেনি বলে মত দেওয়া হয়েছে। মেহেরপুর পৌরসভা চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে বলে জানানো হয়েছে সংস্থাটির প্রতিবেদনে।
এই প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হচ্ছে পাবলিক টয়লেট। এতে যে ইট-বালু, সিমেন্ট ও রড ব্যবহার করা হয়েছে তা অত্যন্ত নিম্নমানের। প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা ইট-বালু, সিমেন্ট ও রডের ল্যাব টেস্টিং রিপোর্ট জমা দিতে পারেনি। আইএমইডির প্রতিনিধিদল এসবের নমুনা সংগ্রহ করে রাজশাহী প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়ে (রুয়েট) পাঠিয়েছে। সর্বশেষ ল্যাব টেস্ট রিপোর্টে শুধু বালু ও ইটের তথ্য পাওয়া গেছে। এতে দেখা যায়, ঢালাইয়ের কাজে বালুর এফএম ২ দশমিক ৩ থেকে ২ দশমিক ৫-এর মধ্যে থাকার কথা, কিন্তু ল্যাব টেস্টে মাত্র ১ দশমিক ৬৬ এসেছে। প্রকল্পে নির্দেশনা ছিল প্রথম শ্রেণির ইট ব্যবহার করার, যার স্ট্রেংথ হবে ২ হাজার ৪৬৫ পিএসআই, কিন্তু ল্যাব টেস্টে পাওয়া গেছে ১ হাজার ৯৭৫ পিএসআই।
এ প্রকল্পটির অবস্থান জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের নির্বাচনী এলাকায়। প্রকল্পটি প্রসঙ্গে ফরহাদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এটি একটি ফার্স্ট ক্লাস পৌরসভা। এর কাজ আরও দ্রুত গতিতে করা উচিত। অনিয়ম হলে সংস্থাগুলোকে তদারকি করতে হবে। পৌরসভার অবকাঠামো উন্নয়ন সুন্দরভাবে হোক, সেটা চাই। মিলেমিশে কাজ করতে চাই। সেখানে যত ডেভেলপমেন্ট হবে, সরকারের সুনামও তত বাড়বে।
ডিপিপির সংস্থান ও নকশা অনুযায়ী প্রকল্পের কর্মকা- দেখভালের দায়িত্ব পৌরসভার প্রকৌশল দপ্তরের। এ ক্ষেত্রে তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এ ধরনের ম্যানেজমেন্ট দিয়ে কাজ শেষ করা সম্ভব নয় বলে জানানো হয়েছে।
ঢালাই কাজে বিল নেওয়া হচ্ছে স্টিল শাটারিংয়ের। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে এতে বাঁশ ও কাঠের ফ্রেম ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি কার্যাদেশের চূড়ান্ত লঙ্ঘন বলে জানিয়েছে আইএমইডি। ঢালাইয়ের কাজ যথাযথভাবে না হওয়ায় ঘাটের তলায় ফুটো হয়ে গেছে নির্মাণের আগেই।
গড়পুকুরের সীমানার পশ্চিম দিকে একটি মাছের আড়ত রয়েছে। আড়তটি উচ্ছেদের কথা থাকলেও তা করা হয়নি। জানতে চাইলে পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মজিবর রহমান দেশ রূপান্তরকে জানান, প্রকল্পে কোনো অনিয়ম হয়নি। আইএমইডি যা ইচ্ছে লিখুক। স্টিলের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহার করা হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কোথাও বাঁশ ব্যবহার হয়নি। স্টিলের শাটার দিয়েই কাজ করা হচ্ছে।’
উল্লেখ্য, বাঁশ ও কাঠের শাটার ব্যবহারের ছবি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে।
সুনির্দিষ্ট ঠিকাদারকে দিয়ে কাজ না করিয়ে অনভিজ্ঞ ঠিকাদারকে দিয়ে করাচ্ছেন কেন এমন প্রশ্নের জবাবে মজিবর রহমান বলেন, মূল ঠিকাদারই কাজ করছে। এরা অভিজ্ঞ ঠিকাদার। এর আগে ঠিকাদার কোথায় কাজ করেছেন জবাবে তিনি বলেন, ‘তা আমি বলতে পারব না। তার আগের কাজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে আমার জানা নেই। আমার জানামতে, মানসম্পন্ন কাজ হচ্ছে, ভালো কাজ হচ্ছে।’ ল্যাব টেস্টে নিম্নমানের ইট-বালুর প্রমাণ পাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বালু ব্যবহার করা হচ্ছে ভালো মানের, ইটও ভালো মানের।’
পৌরসভার গড়পুকুরে ৫ ফুট জায়গা ছেড়ে দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশেই ব্যক্তিমালিকানার একটি দেয়াল রয়েছে। দেয়ালের পরই পৌরসভার সীমানা। কিন্তু এই সীমানার পর পৌরসভার জমি হলেও ৫ ফুট জায়গা কেন ছেড়ে দেওয়া হয়েছে আইএমইডিকে তার জবাব দিতে পারেনি পৌরসভা কর্তৃপক্ষ।
অনিয়ম তদন্তে আরও দেখা যায়, সরকারি নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে ক্রয়কার্য সম্পাদন হয়েছে। প্যাকেজটি কেনার লক্ষ্যে দাপ্তরিক প্রাক্কলন করা হয় ১৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা। কিন্তু বিপরীতে ১২ দশমিক ১১ শতাংশ কম দরে ১১ কোটি ৬৫ লাখ টাকায় চুক্তি করা হয়। অথচ সরকারি নির্দেশনায় ১০ শতাংশের বেশি বা কমে চুক্তি করার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
নির্মাণাধীন দৃষ্টিনন্দন ঘাটে প্রধান বিম ইতিমধ্যে বেঁকে গেছে। এ দুটি বিম যেকোনো সময় ভেঙে যেতে পারে বিধায় পিলার দুটি ভেঙে নতুনভাবে নির্মাণের নির্দেশনা দিয়েছে আইএমইডি। দ্বিতীয় ঘাটের ঢালাই সঠিকভাবে না হওয়ায় ঘাটের নিচে ইতিমধ্যে ফুটো হয়ে গেছে। এই ঘাটের সর্বশেষ দুটি পিলার (৫ ও ৬) ইতিমধ্যে বাঁকা হয়ে গেছে।
প্রকল্পটির অনিয়ম প্রসঙ্গে মেহেরপুর পৌরসভার মেয়র মো. মাহফুজুর রহমান রিটন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইএমইডি থেকে কর্মকর্তারা এখানে এসেছিলেন। এর আগেও কয়েকটি অডিট আপত্তি ছিল। প্রকল্পের কাজের রেট বেড়ে যাওয়ায় মূল ঠিকাদার পালিয়েছিলেন। পরে অনেক কষ্টে পরিচিত অন্য ঠিকাদারকে বলে সাব-কন্ট্রাক্টে কাজটি করাচ্ছি। ঠিকাদারও নিয়মিত খবর রাখছেন, কাজের কোনো গুণগত মান খারাপ নেই। তবে, কাজটি যাতে না হয়, বিভিন্ন মহল বাধা দিচ্ছে।’
রুয়েট ল্যাব টেস্টের রিপোর্ট প্রসঙ্গে মেয়র রিটন বলেন, ‘আমার কাছেও ল্যাব টেস্ট রিপোর্ট আছে। এটা কোনো লুকোচুরির কাজ হচ্ছে না, ওপেন কাজ হচ্ছে।’
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য প্রকল্প পরিচালক এ কে এম রেজাউল ইসলামের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
মেহেরপুর পৌর গড়পুকুরের ১১ বিঘা জমির ওপর ১৭ হাজার ৬৭৬ বর্গমিটার আয়তনে ১১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন বিনোদন কেন্দ্র। প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়েছে গত জানুয়ারিতে। কিন্তু মেয়রের যোগসাজশে প্রকল্পটিতে নয়-ছয়ের প্রমাণ পেয়েছে আইএমইডি।
প্রকল্প পরিদর্শনে গিয়ে আইএমইডি প্রতিনিধিদল দেখতে পায়, মাত্র সাত-আটজন শ্রমিক সেখানে কাজ করছেন। চুক্তির মেয়াদ এক বছর পার হলেও কাজ হয়েছে মাত্র ১৬ শতাংশ। এ ছাড়া প্যাকেজটির আওতায় ২০টি খাত রয়েছে, কাজ হচ্ছে মাত্র ৫টি খাতের।
প্রকল্পের জন্য একই সাইনবোর্ডে খরচ হয়েছে, ১ লাখ ১০ হাজার টাকা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাইনবোর্ডটি প্রকল্পের জায়গায় না স্থাপন করে পাশে মাছের আড়তে ইলেকট্রিক খাম্বা ও বাঁশ দিয়ে স্থাপন করা হয়েছে।
নির্মাণকাজ শেষ হলে ঐতিহাসিক গড়পুকুর হবে জেলার অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র। এই গড়পুকুর মেহেরপুর পৌরসভা তথা জেলার ঐতিহ্য। এর আগে সাবেক পৌর মেয়র মোতাচ্ছিম বিল্লাহ মতু ২০০৮ সালে গড়পুকুরে কোটি টাকা ব্যয়ে কেব্্লকারসহ নাগরদোলা করে বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তুলেছিলেন। সে সময় মানুষের আপত্তির মুখে গড়পুকুর পাড়ে মাছের আড়ত নির্মাণ করায় পরিবেশ দূষিত হয় আর নাগরদোলা মানসম্মত না হওয়ায় বিনোদন কেন্দ্রটি সৌন্দর্য হারায়। বন্ধ হয়ে যায় সেসব।
দেশের ৩৬টি পৌরসভায় দারিদ্র্য ও লিঙ্গবৈষম্য দূরসহ স্থানীয় সরকারব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে তৃতীয় নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নীতকরণ-৩ শীর্ষক প্রকল্পটি ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৪ সালের ১ জুলাই একনেকে অনুমোদন হয়। পরে দুইবারে মেয়াদ ও ব্যয় বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৯৩ কোটি টাকা।
যশোর রোড; শুধুমাত্র একটি রাস্তা নয়। একটি আবেগের নাম, একটি ভালোবাসার নাম। একটি ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের নাম! যশোর থেকে বেনাপোল-পেট্রাপোল-বনগাঁ-হাবড়া-বারাসাত পার হয়ে কলকাতার শ্যামবাজার পর্যন্ত বিস্তৃত ১২৫ কিলোমিটারের এ সড়কের মাত্র ৩৫ কিলোমিটার পড়েছে বাংলাদেশে। তবে আবেগ, ভালোবাসা আর বিশ্বজুড়ে এর পরিচিতির সঙ্গে বাংলাদেশ নামটাই বেশি জড়িত।
মহান মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে যশোর রোডের নাম। ১৯৭১ সালে হানাদার বাহিনীর হাত থেকে বাঁচার জন্য এই যশোর রোড পাড়ি দিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল লাখ লাখ মানুষ। খাদ্য-পানির অভাবে পথেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিল শত শত মানুষ। কবি অ্যালেন্স গিন্সবার্গ এই সড়ক দিয়েই মুক্তিযুদ্ধের সময় এসেছিলেন বাংলাদেশে। পথে শরণার্থীদের দুর্দশা দেখে তিনি লিখেছিলেন সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড। তার এ কবিতা মুক্তিযুদ্ধের করুণ চিত্র বিশ্বজুড়ে ছড়াতে রেখেছিল বিশেষ ভূমিকা। ঐতিহাসিক এ মহাসড়কের পাশে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে হাজারো শতবর্ষী বৃক্ষ।
কিন্তু কয়েক বছর আগে আন্তর্জাতিক এ মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এ ঐতিহাসিক বৃক্ষরাজি কাটার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে বাংলাদেশের পরিবেশবাদীদের আন্দোলনের মুখে তা আটকে যায়। সবশেষ ২০১৮ সালে এ নিয়ে হাইকোর্টে রিটও হয়। ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গাছ কাটা নিয়ে স্থিতাবস্থা রয়েছে এবং সেটির নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত গাছ কাটা যাবে না।
পশ্চিমবঙ্গ অংশেও ছিল আদালতের একই ধরনের নির্দেশনা। বনগাঁ শহরের ১ নম্বর রেলগেটে যানজট কমাতে রেলওয়ে উড়ালপুল তৈরির পরিকল্পনা অনুমোদিত হয়েছে। এই জন্য বারাসাত থেকে বনগাঁ পর্যন্ত যশোর রোড ধারে মোট ৩০৫টি প্রাচীন গাছ কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ভারতের জাতীয় সড়ক কর্র্তৃপক্ষ। এর প্রতিবাদে রাজ্যজুড়ে আন্দোলন শুরু হয়েছিল। আন্দোলনের জেরে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলা হয়েছিল। ২০১৮ সালে গাছ কাটার স্থগিতাদেশ দিয়েছিল দেশটির আদালত। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারি মাসে সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে আদালত জানিয়েছে, ৩০৫টি গাছ কাটার আগে ১৫০০টি গাছ লাগাতে হবে জাতীয় সড়ক কর্র্তৃপক্ষকে।
তবে পশ্চিমবঙ্গের কবি, সাহিত্যিক, শিক্ষক, শিল্পী, বুদ্ধিজীবীরা ফের সরব হয়েছেন। আবারও আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। ঘোষণা করেছেন কর্মসূচিও। আগামী ২৫ মার্চ তারা কলকাতা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করবেন, ধর্মতলার মোড়ে লেনিন মূর্তির পাদদেশে করবেন মানববন্ধন।
যশোর রোড গাছ বাঁচাও কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত এসব কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানিয়েছেন দুই বাংলার অন্যতম জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী সাহানা বাজপেয়ী। গতকাল বুধবার নিজেরে ফেসবুকে এক পোস্টে এ আহ্বান জানান তিনি। যুক্তরাজ্য প্রবাসী এ শিল্পীর এমন পোস্ট নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। গতকাল কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তার পোস্টে হাজারো মানুষ তাদের প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। শত শত মানুষ শেয়ার করেছেন তার আহ্বান। পোস্টের নিচে মন্তব্যের ঘরে কেউ তার সঙ্গে সংহতি জানাচ্ছেন কেউবা উন্নয়নের দোহাই দিয়ে সমালোচনা করেছেন। তবে তিনি যৌক্তিক কথায় সে সব সমালোচনার জবাব দিয়েছেন। বলেছেন, যশোর রোড নিয়ে নিজের আবেগ আর প্রয়োজনের কথা। আর যারা সংহতি জানিয়েছেন তাদেরও বিনয়ের সঙ্গে স্বাগত জানিয়েছেন শান্তিনিকেতনের সাবেক এক শিক্ষার্থী। বলেন, গাছের প্রতি প্রেম তার সেই শান্তিনিকেতনের শৈশব-কৈশোর থেকেই জন্মেছে। প্রকৃতির প্রেম পেয়েছেন কবিগুরুর দর্শন থেকেই।
সুমিত পাত্র নামের একজন লিখেছেন, বিকল্প পথ বাতলে দিন, কোন পথে নতুন চওড়া রাস্তা বানানো হলে কলকাতা-পেট্রাপোল যোগাযোগ দ্রুত করা সম্ভব। কারণ যশোর রোড অধিকাংশ জায়গায় অত্যন্ত সংকীর্ণ ফলে যানজট আর দুর্ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা, ফলে রাস্তা চওড়া করা অতীব আবশ্যক। আর অবশ্যই ইন্টারন্যাশনাল করিডর হিসেবে এই রাস্তার গুরুত্ব অপরিসীম, পণ্যবাহী ট্রাক থেকে শুরু করে যাত্রীবাহী পরিবহন সবাইকেই সঠিকভাবে দ্রুত পরিষেবা প্রদানকারী জাতীয় সড়কের ব্যবস্থা করার অত্যন্ত জরুরি। আমার এই বক্তব্যগুলোর ভিত্তিতে আপনার কাছে প্রশ্ন রইল কী বিকল্প নকশা প্রস্তুত আছে আপনার কাছে? তারপর না-হয় হাজার রকমের বন্ধন করে নেবেন।’
তার এমন মন্তব্যের জবাব সাহানা তিনটি পয়েন্টে দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, প্রথমত আমার বাংলাদেশ যাতায়াতে আমি কোনোদিনই আকাশপথে যাইনি- এই রাস্তা ধরে সোনালি/সোহাগ পরিবহনের বাসে যাতায়াত করেছি। বহু বছর। এই রাস্তা ও তার উপযোগিতা আমার অজানা নয় বুঝতেই পারছেন। এই গাছগুলো ব্যক্তিগতভাবে আমার অনেকগুলো জার্নির সাক্ষী।
দুই নম্বর পয়েন্ট হিসেবে সাহানা লিখেছেন, যশোর রোড গাছ বাঁচাও কমিটির উদ্যোক্তারা নিশ্চয়ই বিকল্প রাস্তার কথা ভেবেই আন্দোলনে নেমেছেন। প্রশ্নটি তাদের করবেন। আমি রোড ইঞ্জিনিয়ার নই যে নীল নকশা বানাব। তাদের ডাকে সাড়া দিয়েছি মাত্র কারণ আমি গাছ কেটে রাস্তা/রেলসেতু/ফ্লাইওভার বানানোর বিপক্ষে।
তৃতীয় পয়েন্টে তিনি সুমিত পাত্রের মন্তব্যকে ব্যক্তিগত আক্রমণ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, আপনার প্রশ্নগুলো যথোচিত, কিন্তু আপনি যেভাবে আমাকে পার্সোনালি অ্যাটাক করলেন, তাতে ভাবতে বাধ্য হচ্ছি যে আপনি শুধুমাত্র ৩৫৬টি গাছ কেটে ফেলার সপক্ষে নন। এর বাইরেও কোনো কারণ আছে।
ইতিহাস বলছে, উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে যশোর শহরের বকচরের জমিদার ছিলেন কালী প্রসাদ পোদ্দার। সেই সময় যশোর থেকে বহু হিন্দু নারী গঙ্গাস্নানের জন্য নদীপথে কলকাতা যেতেন। একবার নৌকার মাঝিদের অসহযোগিতার কারণে জমিদারের মা গঙ্গাস্নানে যেতে না পারায় নিজেকে অপমানিত বোধ করে ঘরের দরজা বন্ধ করে অনশনে বসেন। মা শর্ত দেন, গঙ্গাস্নানের জন্য যশোর থেকে চাকদা পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ করে দিলেই তিনি অনশন প্রত্যাহার করবেন। পুত্র কালী প্রসাদ মায়ের দাবি মেনে রাস্তা নির্মাণ করেন। তখন এই সড়কের পাশে বিশ্রাম নেওয়ার উদ্দেশ্যে প্রচুর গাছ লাগানো হয়। সেই গাছই আজ কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে যশোর রোডজুড়ে।
দুর্ঘটনা প্রতিরোধে নানান চেষ্টা করেও লাভ হচ্ছে না। প্রতিদিনই কোনো না কোনো সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও নাখোশ। আবার পুলিশের কর্মকা- নিয়ে পরিবহন নেতারাও খুশি হতে পারছেন না। কিছু দুর্নীতিবাজ পুলিশ সদস্য প্রতি মাসে ‘মাসোহারা’ নিয়ে ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচলের সুবিধা করে দিচ্ছেন এমন অভিযোগ ওঠায় পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চটেছেন দুর্নীতিবাজ পুলিশ সদস্যদের ওপর। এ নিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে গতকাল বুধবারও একটি বৈঠক করেছেন। বৈঠকে সড়কে বাঁকগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
পুলিশের বৈঠক সূত্র জানায়, সারা দেশের মহাসড়কগুলোতে ৮৮৩ বাঁকে দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে। এসব বাঁক দ্রুত সোজা করার সুপারিশ করা হয়েছে হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে। গত ১০ বছরে মহাসড়কে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে এসব বিপজ্জনক বাঁক চিহ্নিত করা হয় বলে বৈঠকে জানানো হয়। পাশাপাশি চাঁদাবাজ পুলিশ সদস্যদের ধরতে ছদ্মবেশে তৎপর থাকতে বিশেষ বার্তা দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
পুলিশ সূত্র জানায়, ৮৮৩টি বাঁকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৬৪টি বাঁক রয়েছে দক্ষিণ বিভাগের মাদারীপুর হাইওয়ে অঞ্চলে।
এ অঞ্চলের আওতায় আছে মাদারীপুর, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, বরিশাল, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, খুলনা, বাগেরহাট, মাগুরা, যশোর ও নড়াইল। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিপজ্জনক বাঁক রয়েছে বগুড়া অঞ্চলে। এ অঞ্চলের বগুড়া, পঞ্চগড়, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর, পাবনা, রংপুর, দিনাজপুর, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধার মহাসড়কে বিপজ্জনক বাঁক রয়েছে ২৪৮টি। এর বাইরে কুমিল্লায় ১৮১, সিলেটে ১২৬ ও গাজীপুর অঞ্চলে ৬৪টি বিপজ্জনক বাঁক রয়েছে।
জানতে চাইলে হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি শাহাবুদ্দীন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত ১০ বছর ধরে দুর্ঘটনা তদন্ত করে এসব বাঁক বা মোড় চিহ্নিত করা হয়েছে। হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে কিছু সুপারিশ করে তা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। তারা এসব বাঁকগুলো পর্যালোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন। পাশাপাশি চালক ও পথচারীদের সচেতন করতেও পুলিশের পক্ষ থেকে নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
তবে শুধু সচেতনতার মাধ্যমেই মহাসড়কের বিপজ্জনক বাঁকগুলোর দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, সচেতনতার পাশাপাশি মহাসড়ককে বাঁকমুক্ত করতেও পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া মহাসড়কে থ্রি-হুইলার যানবাহন নিয়ন্ত্রণ ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন যেন মহাসড়কে চলতে না পারে সেটা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে নসিমন, করিমন ও ভটভটির মতো যানবাহন মহাসড়কে উঠলেই তা ডাম্পিংয়ে দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তারা।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক ও দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআরআই) সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ বলেন, মহাসড়কের এসব বাঁক বছরের পর বছর আলোচনায় রয়েছে। এর মধ্যে কিছু বাঁক সোজা করা হয়েছে। তবে বেশিরভাগ বাঁক এখনো সোজা না করার কারণে দুর্ঘটনার হার বাড়ছে। পাশাপাশি অনেক যানবাহনের ফিটনেস না থাকার পরও তারা মহাসড়কে বেপরোয়া। বেশিরভাগ দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেই তদন্তে ফিটনেস ফেইলের তথ্য বেরিয়ে আসে। এসব বিষয়ে সরকারকে আরও জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দেশ রূপান্তরকে জানায়, বরিশাল থেকে গৌরনদী পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার মহাসড়ক পাড়ি দিতে একজন চালককে অতিক্রম করতে হয় চারটি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক। গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকা এসব বাঁকে বিপরীত দিকের যানবাহনের অবস্থান চিহ্নিত করা যায় না। চালক যতক্ষণে বুঝতে পারেন, তার মধ্যেই ঘটে যায় প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা। বরিশাল-ভুরঘাট পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার মহাসড়কে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে অন্তত দুই ডজন। কাশিপুরের বন বিভাগ ও সমবায় ইনস্টিটিউটের সামনের রাস্তা, গড়িয়ারপাড়ের জননী পেট্রলপাম্প ও কলাডেমা, ক্যাডেট কলেজ, রহমতপুর সেতুর ঢাল, বিমানবন্দর মোড়, দোয়ারিকা সেতুর ঢাল, জয়েশ্রী, গৌরনদী প্রবেশপথ, বামরাইল স্কুলসংলগ্ন, বাটাজোর, আশুকাঠি, টরকি বাজার, কটকস্থল, বার্থি, ভুরঘাটা সেতুর আগে বিপজ্জনক সব বাঁক রয়েছে। বিপজ্জনক বাঁকগুলোর ঝুঁকি আরও বাড়িয়েছে অবৈধ যানবাহন।
সাকুরা পরিবহনের চালক জমির উদ্দিন মোল্লা বলেন, এ মহাসড়কের বিপজ্জনক বেশ কয়েকটি বাঁক রয়েছে। বিশেষ করে বিমানবন্দরের বাঁক, জয়েশ্রী, আশুকাঠি, টরকি বাজার, বার্থি তারা শংকর মন্দির, ভুরঘাটাসহ এ রুটেই ২৫টি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে। এসব বাঁকের আগে দিকনির্দেশনা সংবলিত সাইনবোর্ড থাকলেও গতির কারণে তা খেয়াল করা যায় না। বাঁকগুলোতে দুটি পরিবহন মুখোমুখি না হওয়া পর্যন্ত কেউ কাউকে দেখতে পারে না। নতুন চালকরা অনেক সময় এসব বাঁকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনায় পড়েন।
যশোর রুটে চলাচলরত ট্রাকচালক মমিনউদ্দিন বলেন, দেশের অন্য যেকোনো মহাসড়কের তুলনায় দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মহাসড়কগুলো দুর্ঘটনাপ্রবণ। এ মহাসড়কে সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক বাঁক রয়েছে। রাতে চলাচলের সময় এসব বাঁকে বিপরীত দিক থেকে আসা যানবাহন দেখা যায় না। ঢাকা-ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কে নসিমন, করিমন, ভটটটির মতো অবৈধ গাড়ির চলাচল বেশি। এসব যানবাহনের জন্যও মহাসড়কটি বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।
সিলেট বিভাগের সঙ্গে সড়কপথে সারা দেশের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৩৪ কিলোমিটার অংশ পড়েছে আশুগঞ্জ, সরাইল ও বিজয়নগর উপজেলায়। এসব স্থানে বাঁক রয়েছে ১০টি। আশুগঞ্জ গোলচত্বর, শাহবাজপুর তিতাস সেতুসংলগ্ন বাঁক, ভৈশামোড়া, রামপুরা, চান্দুরা, বীরপাশা ও ক্ষেতবাড়ি এলাকার বাঁকগুলো সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি শামসুল আলম বলেন, মহাসড়কে বিপজ্জনক বাঁকগুলোতে বারবার দুর্ঘটনা ঘটছে। এসব বাঁকে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড দেওয়া হয়েছে। বাঁকগুলো সম্পর্কে আশপাশের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও যানচালকদের নিয়ে সভা করা হয়েছে। সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বাঁকগুলোর দুর্ঘটনা অনেকটাই কমিয়ে আনা গেছে।
জরায়ু ক্যানসারের নকল ভ্যাকসিন (টিকা) ও আমদানি নিষিদ্ধ হেপাটাইটিস-বি টিকা দেওয়ার কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে যে টাকা আয় হয়েছে তার ৫০ ভাগ গেছে চিকিৎসা সেবাদানকারী বেসরকারি সংস্থার ডা. এ আর খান ফাউন্ডেশনে। ফাউন্ডেশনটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু জাফরের মাধ্যমে পরিচালিত হতো সার্বিক কার্যক্রম। নকল টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনার দায়ে গ্রেপ্তার ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম শিপনের ১৬৪ ধারায় আদালতে দেওয়া জবানবন্দি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
নকল টিকা বিক্রির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হওয়ার পর আত্মগোপনে চলে গেছেন ডা. এ আর খান ও তার সহযোগী আবু জাফর।
পুলিশের একটি সূত্র বলছে, জরায়ু ক্যানসারের নকল টিকা ও আমদানি নিষিদ্ধ হেপাটাইটিস-বির টিকা দেওয়ার এই কাজে দেশের চিকিৎসা সেবাদানকারী বেসরকারি তিনটি ফাউন্ডেশনের অন্তত এক ডজন ব্যক্তি জড়িত। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
গত ১৯ মার্চ ঢাকা মহানগর হাকিম মো. শাকিল আহাম্মদ আসামি সাইফুল ইসলাম শিপনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন। শিপন বলেছেন, চার-পাঁচ বছর আগে গাজীপুর আল নূর ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনে চাকরি করতেন তিনি। ফাউন্ডেশনটির চেয়ারম্যান কাদির সিদ্দিকী ও পরিচালক আবু জাফরের মাধ্যমে ক্যাম্পেইন করে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে জরায়ু ক্যানসারের টিকা ‘সারভারিক্স’ ও হেপাটাইটিস-বির টিকা ‘জেনেভ্যাক-বি’ দিয়েছেন। সেখান থেকে আবু জাফরের মাধ্যমে ২০২১ সালে ডা. এ আর খান ফাউন্ডেশনে যোগ দেন। সেখানে তিনি ও আতিকুল ইসলাম, ফয়সাল আহম্মেদ, নুরুজ্জামান সাগর ও মো. আল আমিন বিভিন্ন স্কুলে ডা. এ আর খান ফাউন্ডেশনের ব্যানারে ক্যাম্পেইন করে হেপাটাইটিস-বি এবং জরায়ু ক্যানসারের টিকাদান কার্যক্রম চালান।
স্বীকারোক্তিতে শিপন বলেছেন, আবু জাফর আমদানি নিষিদ্ধ ‘জেনেভ্যাক-বি’ টিকা মিটফোর্ডের ফজর আলী থেকে কিনতেন। কিন্তু ‘সারভারিক্স’ কোথা থেকে কিনতেন সেটা তিনি জানেন না।
তিনি আরও বলেছেন, দু-তিন মাস আগে আল নূর ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আল আমিনের মাধ্যমে কেরানীগঞ্জের হিমেলের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। নকল ‘সারভারিক্স’ টিকা তিনি কম দামে তৈরি করে দিতে পারবেন বলে জানান। তিনি হিমেলের কাছ থেকে টিকা নিয়ে গ্রেপ্তার করা অন্যান্য আসামিসহ স্কুলে স্কুলে টিকা কার্যক্রম চালান। গ্রেপ্তার হওয়ার কিছুদিন আগে তিনি ফজর আলীর মাধ্যমে ১২০০ জেনেভ্যাক-বি টিকা কিনেছেন। ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে অর্জিত অর্থের ৫০ শতাংশ জাফরের মাধ্যমে ডা. এ আর খান ফাউন্ডেশনে দিতেন।
এদিকে শিপনের সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিনি আল নূর ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপক ছিলেন। একটি এলাকার দায়িত্বে ছিলেন তিনি। সেলিনা ফাউন্ডেশন ও পপুলার ভেক্সিনেশন সেন্টারেও তিনি ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি যত দ্রুত অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন তা অবিশ্বাস। তাকে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকে মেরে বের করে দেওয়া হয়। নকল টিকা বিক্রি করে শিপন রাতারাতি কোটিপতি বনে গেছেন। নেদারল্যান্ডসে বাড়ি কিনেছেন বলেও শিপনের সহকর্মীরা দাবি করেন।
তার সাবেক সহকর্মী আল নূর ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপক এ এস ফারহান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা যারা এই ফাউন্ডেশনে কাজ করছি তারা বেতন পাই ২০ থেকে ২৫ হাজার করে। অথচ শিপন নেদারল্যান্ডসে বাড়ি করেছেন, দেশে জমি কিনেছেন। একটি প্রাইভেট কার ও চারটি মোটরসাইকেল কিনেছেন তিনি।’
উল্লেখ্য, চক্রটি ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী ১৪২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্যাম্প করে ছয় হাজারের বেশি নারীকে জরায়ু ক্যানসারের নকল টিকা ‘সারভারিক্স’ ও আমদানি নিষিদ্ধ হেপাটাইটিস-বির টিকা ‘জেনেভ্যাক-বি’ দিয়েছে। এখন পর্যন্ত এ চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
চক্রের সর্বশেষ গ্রেপ্তার করা ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের বহিষ্কৃত নেতা আবু বকর সিদ্দিক হিমেল ডিবির কাছে রিমান্ডে রয়েছেন। দুদিনের রিমান্ডের শেষ দিন গতকাল বুধবার হিমেল চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে বলে জানিয়েছে ডিবির তদন্ত-সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা। ওই কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হিমেল জানিয়েছেন তার এক বন্ধুর মাধ্যমে নকল টিকা তৈরির কাজ শুরু করেন। এর আগে তিনি জামির দালালি করতেন। ৯ মাস আগে টিকা তৈরির কারখানা স্থাপন করেছেন। সেখানে তিন থেকে চার মাস আগে নকল টিকা তৈরি শুরু করে।’
এদিকে নকল টিকা উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পর গত ৮ মার্চ হিমেলকে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কার্যকরী কমিটি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
তদন্তের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিবি তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. আনিচ উদ্দীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা এ সিন্ডিকেটে বেশ কিছু রাঘববোয়ালের জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছি। তাদের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে।’
‘ডা. এ আর খান ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ডা. এ আর খানের সম্পৃক্ততার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তাররা জানিয়েছে, নকল টিকা বিক্রির টাকার অর্ধেক ডা. এ আর খান ফাউন্ডেশনে দিয়েছে। আমরা তদন্ত করে দেখছি।’
পটুয়াখালীর বাউফলে সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্বে দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে উপজেলার ইন্দ্রকুল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত নাফিজ মোস্তফা আনসারী (১৪) ও মারুফ হাওলাদার (১৪) ইন্দ্রকুল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। নাফিস-মারুফের স্বজনদের দাবি, পাঙ্গাশিয়া এলাকার একটি কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত।
স্থানীয় বাসিন্দা ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক দিন আগে উপজেলার পাঙ্গাশিয়া গ্রামে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। ওই মাহফিলে যাওয়ার তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ইন্দ্রকুল উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র মো. মারুফ, মো. সিয়াম ও মো. নাফিসের সঙ্গে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী রায়হান কাজী, মো. হাসিবুল কাজী, মো. সৈকত ও মো. নাইমের কথাকাটাকাটি হয়। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে বিদ্যালয় ছুটি হলে সিয়াম, এনামুল ও নাফিস বাড়ি ফিরছিল। বিদ্যালয়ের উত্তরপাশে পাঙ্গাশিয়া সেতুর কাছে পৌঁছলে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। হামলাকারীরা তাদের পিটিয়ে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। পরে স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে মারুফ ও নাফিজকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে নেওয়ার পর দায়িত্বরত চিকিৎসক ওই দুজনকে মৃত্যু ঘোষণা করেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মিজানুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে জানান, বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ক্লাস শেষ করে বিকেল ৪টার দিকে তিনি লাইব্রেরিতে গিয়ে বসেন। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ করে দুই শিক্ষার্থী এসে জানায়, নাফিজ, মারুফ ও সিয়ামকে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণের বাইরে মারধর করছে দুর্বৃত্তরা। তাৎক্ষণিক সেখানে গেলে তিনি জানতে পারেন, নাফিজ, মারুফ ও সিয়ামকে পাশের একটি ফার্মেসিতে নিয়ে গেছে। সেখানে গিয়ে নাফিজ ও মারুফের পেটে গজ-কাপড় পেঁচানো দেখে দ্রুত বাউফল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাদের বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক নাফিজ ও মারুফকে মৃত ঘোষণা করেন।
শেবাচিম হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মোহাম্মদ কবির আহম্মেদ বলেন, হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তাদের মৃত্যু হয়েছে।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও নিহত নাফিজের স্বজন আনিসুর রহমান হাওলাদার বলেন, ‘কারা, কীভাবে, কেন হামলা করেছে, তা এলাকায় না গিয়ে নিশ্চিত করে বলতে পারব না। তবে শুনেছি, পাঙ্গাশিয়া এলাকায় একটি কিশোর গ্যাং রয়েছে। তারাই এ হামলা চালিয়েছে।’
বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসেছি। আসল রহস্য বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
নিজের বিদায়ী ম্যাচ বলেই কিনা জ্বলে উঠলেন সার্জিও রামোস। শুরুতেই পেয়ে যান গোলের দেখা। কিলিয়ান এমবাপ্পে আছেন তার আগের মতোই। তিনিও ডাবল লিড এনে দেন। তবে বিদায়ী ম্যাচে নিষ্প্রভ রইলেন লিওনেল মেসি। তাতেই কিনা শুরুতেই এগিয়ে যাওয়া ম্যাচটি হার দিয়ে শেষ করেছে পিএসজি।
লিগ ওয়ানের শেষ ম্যাচে ক্লেরমো ফুতের সঙ্গে ৩-২ গোলে হেরে গেছে প্যারিসিয়ানরা। তাতে রাঙানোর বদলে বিষাদভরা বিদায় হলো মেসি-রামোসদের।
আগেই লিগ শিরোপা নিশ্চিত করা পিএসজি মৌসুমে নিজেদের এই শেষ ম্যাচে দুটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছিল। হুগো একিতেকে ও আশরাফ হাকিমিকে ফেরান কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়ের।
শুরুতে গুছিয়ে উঠতে সময় লেগেছে পিএসজির। প্রথম ১০ মিনিটের পর ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২১ মিনিটের মধ্যে এগিয়ে গিয়েছিল ২-০ গোলে। রামোস ১৬ মিনিটে হেড থেকে এবং তার ৫ মিনিট পর কিলিয়ান এমবাপ্পে পেনাল্টি থেকে গোল করেন।
২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে ক্লেরম ফুতের পাল্টা লড়াই শুরু করতে সময় নিয়েছে মাত্র ৩ মিনিট। ২৪ মিনিটে গোল করেন ক্লেরমঁর গাস্তিয়েন। এর প্রায় ১২ মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে গোল করার সুযোগ নষ্ট করেন ক্লেরমঁ স্ট্রাইকার কেয়ি। পরে অবশ্য ৬৩ মিনিটে তাঁর গোলেই জিতেছে ক্লেরমঁ। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ক্লেরমঁর হয়ে সমতাসূচক গোলটি জেফানের।
বিরতির পর গোলের দারুণ একটি সুযোগ নষ্ট করেন মেসি। ৫৪ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে এমবাপ্পে ঢুকে পড়েন ক্লেরমঁর বিপদসীমায়। তাঁর ক্রস পেয়ে যান ডান প্রান্ত দিয়ে দৌড় বক্সে ঢোকা মেসি। সামনে গোলকিপার একা, কিন্তু মেসি অবিশ্বাস্যভাবে বলটা পোস্টের ওপর দিয়ে মারেন।
সতীর্থ গোলকিপার সের্হিও রিকোর সুস্থতা কামনা করে বিশেষ জার্সি পরে মাঠে দাঁড়িয়েছিলেন মেসি-এমবাপ্পেরা। ঘোড়ায় চড়তে গিয়ে দূর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন রিকো। ম্যাচে বিশেষ জার্সি পরে খেলেছে পিএসজি। মেসি-রামোসদের জার্সির পেছনে রিকোর নাম লেখা ছিল।
৩৮ ম্যাচে ৮৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থেকে মৌসুম শেষ করল পিএসজি। ৮৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে লেঁস। তৃতীয় মার্শেইয়ের সংগ্রহ ৭৩ পয়েন্ট। ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে চারে ইউরোপা লিগ নিশ্চিত করা রেঁনে।
এক যুগের ব্যবধানে ঘটা সহিংসতার দুটি ঘটনায় করা তিন শতাধিক মামলা দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার পর তদন্ত করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। মামলাগুলো ২০০১ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা এবং ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় হামলা, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়ের করা হয়েছিল। পাশাপাশি যেসব মামলা বিচারাধীন আছে সেগুলোও দ্রুত নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে পুলিশের সব ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে।
পুুলিশের পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনে আসা ‘ভিআইপি অভিযোগগুলো’ আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে পুলিশ ও দুদক সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নতুন করে তদন্ত করার সময় অহেতুক নিরপরাধ লোকজন যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়ার জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। মামলায় যাদের নাম এসেছে তাদের বিষয়ে আরও গভীরে গিয়ে তদন্ত করতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ২০০১ ও ২০১৩-২০১৫ সালে সহিংসতা মামলাগুলোর তদন্ত দ্রুত শেষ করতে বলা হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানান, রাজনৈতিক কারণে মামলা জিইয়ে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। সব সরকারের আমলেই এসব করা হচ্ছে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর সারা দেশে তান্ডব চালিয়েছিল এই নিয়ে দেশে বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতাসহ অনেকেই আসামি হয়েছেন। ২০১৩-২০১৫ সালে সহিংতার ঘটনা মামলা হয়েছে এসব মামলা দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন ও যেসব মামলা আদালতে বিচারাধীন আছে সেগুলোর দ্রুত বিচারকাজ সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দিনের পর দিন ওইসব মামলা আদালতে ঝুলছে। এতে ভুক্তভোগীরা বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই যারা এসব অপকর্ম করেছে তাদের তাদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে।
সহিংসতা মামলার পাশাপাশি গত ১০ বছরের ব্যবধানে দুর্নীতি দমন কমিশনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ‘ভিআইপি অভিযোগগুলো’ অনুসন্ধান করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, আন্দোলনের নামে বিএনপি ও জামায়াত ২০১৩-২০১৫ সালে তান্ডবলীলা চালিয়েছে। ২০০১ সালে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ব্যাপক অত্যাচার করা হয়েছিল। ওইসব মামলার বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তাছাড়া আন্দোলনের নামে ঢাকাসহ সারা দেশে তান্ডব চালিয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট। সারা দেশেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এসব মামলা কী অবস্থায় আছে তাও পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতা করে যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার অপপ্রয়াস চালিয়েছিল, তাদের বিচার করা হবে। এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তা পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। তবে নিরপরাধ কাউকে আমরা হয়রানি করছি না। ভবিষতেও করব না।
সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করতে একটি মহল দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। তাদের দমন করতে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে হবে না। এতে সাধারণ জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। আন্দোলনের নামে তারা জ্বালাও-পোড়াও করে সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে। এসব ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাগুলো দ্রুত তদন্ত করে অভিযোগপত্র দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি যেসব মামলা আদালতে রয়েছে সেগুলোর বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে।
একই কথা বলেছেন মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, হামলায় পেশিশক্তি যেমন থাকে, রাজনৈতিক শক্তিও থাকে। সাধারণভাবে এমন একটি ধর্মীয় জিগির তোলা হয় তখন অনেক ক্ষেত্রেই সব দল এক হয়ে হামলা চালায়। বিচারাধীন মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। যারা এসব অপকর্ম করছে তাদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। পাশাপাশি যেসব মামলার তদন্ত শেষ হয়নি তা সঠিকভাবে তদন্ত করতে হবে। ঢালাওভাবে রাজনৈতিক নেতাদের দোষারোপ করা যাবে না।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখনো বেশ কিছু মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। তাছাড়া জ্বালাও-পোড়াওয়ের অনেক মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। সবমিলিয়ে অন্তত তিন শতাধিক মামলা হবে। এসব মামলা সক্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে পুুলিশের সব ইউনিটকে বার্তা দেওয়া হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে বিচার না হওয়ায় আবারও একটি মহল দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, স্পর্শকাতর মামলায় দীর্ঘদিনে বিচারকাজ শেষ না হওয়ার কারণে বাদীপক্ষের মধ্যে এক ধরনের হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে আসামিপক্ষ ঘটনা ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করে। আর এসব কারণে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ঝুলে থাকা মামলাগুলো সক্রিয় করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। তবে অহেতুক কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে।
পুলিশ সূত্র জানায়, ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার কারণ উদঘাটন এবং জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে ‘হিউম্যান রাইট ফর পিস’ নামের একটি মানবাধিকার সংগঠন হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। ২০০৯ সালের ৬ মে এসব নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তের জন্য সরকারকে নির্দেশ দেয় আদালত। ২০১০ সালের ২৭ ডিসেম্বর অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মো. সাহাবুদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যর বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। কমিশন দীর্ঘ সময় তদন্ত করে ২০১১ সালের ২৪ এপ্রিল তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের কাছে একটি প্রতিবেদন দেয়। তদন্তকালে কমিশন ৫ হাজার ৫৭১টি অভিযোগ পেয়েছিল। বিএনপি ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাসহ অন্তত ১৮ হাজার নেতাকর্মী জড়িত ছিল বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। সহিংসতার পর বরিশাল বিভাগে ২ হাজার ১৮৯টি, ঢাকায় ১৮৪টি, চট্টগ্রামে ৩৫০টি, রাজশাহীতে ১১৭টি এবং খুলনায় ৪০৫টি হামলার ঘটনা ঘটে। তাছাড়া হামলায় খুলনা বিভাগে ৭৩, ঢাকা বিভাগে ৯২, রাজশাহী বিভাগে ৫৩, চট্টগ্রাম বিভাগে ৯৭, বরিশাল বিভাগে ৩৮ এবং সিলেট বিভাগে ২ জন হত্যাকা-ের শিকার হয়েছে। তারমধ্যে ভোলা, বরিশাল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, যশোর, নাটোর, রাজবাড়ী, পাবনা, ফেনী, রাজশাহী, ঝিনাইদহ, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, দৌলতখান, চরফ্যাশন, লালমোহন, বোরহানউদ্দিন, কুষ্টিয়া, গাজীপুর, চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা এবং মৌলভীবাজার জেলায় হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকাণ্ড বেশি ঘটে। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ২২১টি। এর মধ্যে ৫৭টি মামলা তদন্তাধীন। বাকিগুলোতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্র আরও জানায়, ২০১৩-১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন কর্মসূচি চলাকালে পেট্রলবোমা হামলায় দেশজুড়ে মারা গেছে শতাধিক নিরীহ মানুষ। তারমধ্যে আগুনেই পুড়ে মারা গেছে ৪০ জনের মতো। এ সময় রেললাইন পর্যন্ত উপড়ে ফেলাসহ সরকারি সম্পদ ধ্বংস করা হয়েছে। প্রতিটি ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ওই সময় মামলা হয়েছে প্রায় ৩ হাজার। বেশির ভাগ মামলার তদন্ত হয়েছে। ৪৫০টি মামলা বিচারধীন। এসব মামলায় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা আসামি। তারা কৌশলে বারবার শুনানির তারিখ নেয়, যে কারণে মামলা পিছিয়ে যায়। এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে, কয়েকটি তারিখ দেওয়ার পর মামলাগুলো নিষ্পত্তি করা হবে।
এছাড়া ৩১২টি মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। তদন্ত শেষ করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে নাশকতা মামলার দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বেশিরভাগ মামলার আসামি এলাকায় থাকেন না। তাদের নাম-ঠিকানা খুঁজে বের করে অভিযোগপত্র দেওয়া তদন্তকারী কর্মকর্তার পক্ষে খুব কঠিন হয়ে যায়। আর যেসব মামলায় আদালতে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোরও বিচার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে না। তাছাড়া পলাতক আসামিদের বিষয়ে কিছু আইনি জটিলতার কারণেই দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পুনরায় নাশকতা ঘটানো হতে পারে এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা। এই নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। তার জানামতে, মামলাগুলো নিয়ে আইন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা একাধিক সভা করেছেন।
দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, গত দশ বছরে দুদকে ‘অনেক ভিআইপির’ বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। ওইসব অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। অনুসন্ধানের জন্য আলাদা কমিটি করে দেওয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন চা শিল্পের সার্বিক উন্নয়নে চা শিল্প সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেছেন, বর্তমান সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে দেশে চায়ের উৎপাদন ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আজ রবিবার (৪ জুন) জাতীয় চা দিবস উপলক্ষে গতকাল শনিবার দেওয়া এক বাণীতে এ কথা বলেন রাষ্ট্রপ্রধান।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, এক সময় চা ছিল বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি পণ্য। সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে দেশে চায়ের উৎপাদন ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। চা শিল্পের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার ২০১৭ সালে 'উন্নয়নের পথনকশা : বাংলাদেশ চা শিল্প' অনুমোদন দিয়েছে।
মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, চা শিল্পের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন চা শ্রমিকদের পারিশ্রমিক বৃদ্ধিসহ তাদের সার্বিক জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে বাসস্থান, শৌচাগার ও নলকূপ স্থাপন, শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত চা গবেষণা ইনস্টিটিউটে ল্যাবরেটরি ও লাইব্রেরি স্থাপনের মাধ্যমে গবেষণা কার্যক্রম জোরদারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এ ছাড়া স্বাধীনতার পর যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত চা শিল্প পুনর্গঠনে বাগান মালিকদের আর্থিক সহায়তা প্রদান ও অবকাঠামো উন্নয়নে দ্রুত পদক্ষেপ নেন। তিনি ১৯৭৩ সালে শ্রীমঙ্গলের টি রিসার্চ স্টেশনকে পূর্ণাঙ্গ গবেষণা ইনস্টিটিউটে উন্নীত করেন। এটি বর্তমানে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) হিসেবে দেশের চা গবেষণার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ বছর চা দিবসের প্রতিপাদ্য 'চা দিবসের সংকল্প, শ্রমিকবান্ধব চা শিল্প' অত্যন্ত যথার্থ হয়েছে বলেও মনে করেন রাষ্ট্রপ্রধান।
মো. সাহাবুদ্দিন আশা প্রকাশ করেন, চা শিল্পের সার্বিক উন্নয়নে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ চা বোর্ডসহ চা শিল্প সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বিত প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
রাষ্ট্রপতি 'জাতীয় চা দিবস ২০২৩' উপলক্ষে নেওয়া সব কর্মসূচির সফলতা কামনা করেন।
দুর্ঘটনা ঘটেছিল শুক্রবার রাতে। তারপর থেকে আসছিল হতাহতের ভিন্ন ভিন্ন তথ্য। তবে প্রকৃত ভয়াবহতার চিত্র ফুটতে শুরু করে গতকাল শনিবার ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে। সকালে দেখা যায় তিনটি ট্রেনের বেশিরভাগ কামরা পড়ে আছে মাটিতে। কোনো কামরা পুরোপুরি উল্টে গেছে। কোনোটি আবার উঠে গেছে আরেকটির ওপর। আশপাশে, সামনে-পেছনে শুধু মৃতদেহ। কয়েক ঘণ্টা আগেও যারা বেঁচে ছিলেন, যাদের চোখে স্বপ্ন ছিল তারা লাশ হয়ে পড়ে আছেন খোলা আকাশের নিচে। আহত ও স্বজনহারাদের আর্তনাদ-হাহাকার আর অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনের শব্দে গতকাল সারা দিনই বিভীষিকাময় ছিল ভারতের ওড়িশার বালাশ্বরের কাছের বাহানগায়ের বাতাস। ওড়িশা রাজ্যে ঘোষণা করা হয়েছে এক দিনের শোক।
শুক্রবার রাতে বালাশ্বরে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার পর উদ্ধার শেষে দেশটির সরকার ২৮৮ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সংখ্যাও হাজার ছুঁইছুঁই করছে। উদ্ধারকাজ শেষ হলেও এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও মানুষ আটকে থাকার আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। উদ্ধারকাজের নেতৃত্ব দেওয়া ওড়িশা ফায়ার সার্ভিসের ডিরেক্টর জেনারেল সুধাংশু সারাঙ্গি জানান, নিহতের সংখ্যা ২৮৮। অবশ্য উদ্ধারকাজ শেষ হওয়ার পর রেল কর্র্তৃপক্ষ জানিয়েছে নিহতের সংখ্যা ২৬১। ভারতের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াও দাবি করেছে নিহতের সংখ্যা ২৬১। দেশটির আরেক সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিও প্রথমে ২৬১ জনের কথা বললেও গতকাল সন্ধ্যার পরে তারা নিহতের সংখ্যা ২৮৮ বলেই জানায়। একই সঙ্গে সংবাদমাধ্যমটি বলেছে, নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। দেশটির কেন্দ্রীয় রেল মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অমিতাভ শর্মাও তেমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘উদ্ধারকাজ শেষ হয়েছে। এখন আমরা সংযোগ পুনঃ প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করব। তবে এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে মানুষ থাকার আশঙ্কা রয়েছে।’
এনডিটিভি জানায়, যাত্রীবাহী ট্রেন করমণ্ডল এক্সপ্রেস কলকাতা থেকে চেন্নাই যাচ্ছিল। বেলা ৩টার দিকে শালিমার স্টেশন থেকে ছাড়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেস। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ ট্রেনটি পৌঁছায় বালাশ্বরে। কাছেই বাহানগা বাজারের কাছে মালবাহী ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ট্রেনটি। সে সময় তৃতীয় ট্রেন যশবন্তপুর-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসও এই দুর্ঘটনার শিকার হয়।
ওড়িশা রাজ্যের মুখ্যসচিব প্রদীপ জেনা দুর্ঘটনার পরপর জানিয়েছিলেন, দুর্ঘটনাস্থলে অন্তত ২০০টি অ্যাম্বুলেন্স পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ১০০ জন অতিরিক্ত ডাক্তার সেখানে সেবায় নিয়োজিত করা হয়েছে।
ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনার কারণ কী, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। স্থানীয় মানুষ বলছে, মালগাড়ি গিয়ে ধাক্কা দেয় করমণ্ডল এক্সপ্রেসে। সেই ট্রেন লাইনচ্যুত হয়। উল্টোদিক থেকে আসছিল সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। উল্টে যাওয়া কামরায় ধাক্কা লেগে সেই ট্রেনের অধিকাংশ কামরা উল্টে যায়। গতকাল দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া একজন ভারতের বার্তা সংস্থা এএনআইকে বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর আমি ১০ থেকে ১৫ জনের নিচে চাপা পড়ি। আমি ওই মানুষের স্তূপে সবার নিচে ছিলাম। আমার হাতে আর ঘাড়ে আঘাত লাগে। আমি যখন ট্রেনের বগি থেকে বের হই, তখন দেখি কেউ হাত হারিয়েছে, কেউ পা হারিয়েছে, কারও আবার মুখ সম্পূর্ণ বিকৃত হয়ে গেছে।’
এদিকে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটির নেতৃত্ব দেবেন রেলওয়ে সেফটি বিভাগের কমিশনার। এ সংস্থাটি বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করে।
এখন পর্যন্ত দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে সুনিশ্চিতভাবে জানা না গেলেও সিগন্যালের সমস্যার কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন, এই রুটে ট্রেনের মধ্যে সংঘর্ষ প্রতিরোধী ব্যবস্থা ‘কবচ’ ব্যবহার করা হতো না। রেলওয়ের মুখপাত্র অমিতাভ শর্মা জানান, কবচ সিস্টেমটি এই রুটে নেই। বর্তমানে দিল্লি-হাওড়া এবং দিল্লি-বোম্বে রুটে কবচ স্থাপন করা হচ্ছে।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে তাদের রিপোর্টে উল্লেখ করেছে যে চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেসের চারটি বগি ও ইঞ্জিন লাইনচ্যুত হয়ে পাশের রেললাইনে পড়ে, যে লাইন দিয়ে যশবন্তপুর-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস যাচ্ছিল। দ্বিতীয় ট্রেনটির পেছন দিকের দুটি বগি তখন লাইনচ্যুত হয়।
রেলওয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ১২টি বগি বাহানগার বাজার স্টেশন পার করার সময় লাইনচ্যুত হয় এবং পাশের লাইনের ওপর পড়ে। সে সময় ওই লাইন দিয়ে হাওড়া এক্সপ্রেস ট্রেন যাওয়ার সময় সেগুলোর সঙ্গে ধাক্কা খায় এবং ট্রেনের তিনটি বগি লাইনচ্যুত হয়।
পত্রিকাটির খবর অনুযায়ী, বাহানগা বাজার স্টেশনে চারটি রেললাইন আছে, যার একটিতে দুর্ঘটনার সময় একটি মালবাহী ট্রেন দাঁড়িয়ে ছিল। যাত্রীবাহী ট্রেন দুটি ভিন্ন ভিন্ন লাইনে একে অপরকে বিপরীত দিক দিয়ে পার করার কথা ছিল। কিন্তু একটি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে পাশের লাইনে পড়ে গেলে বিপরীত দিক থেকে আসা হাওড়া এক্সপ্রেসের সঙ্গে সেটির সংঘর্ষ হয়।
হিন্দুস্তান টাইমস পত্রিকা বলছে, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ১৫টি কোচ লাইনচ্যুত হয়ে পাশের লাইনের ওপরে পড়ে এবং পরে হাওড়া এক্সপ্রেসের সঙ্গে সংঘর্ষ হলে সেই ট্রেনের দুটি বগি লাইনের বাইরে চলে যায়।
অন্য একটি সূত্রের বরাত দিয়ে দ্য হিন্দু পত্রিকা খবর প্রকাশ করেছে যে প্রথমে হাওড়া এক্সপ্রেস ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়। করমণ্ডল এক্সপ্রেস পশ্চিমবঙ্গ থেকে তামিলনাড়ু যাতায়াতের মাধ্যম। দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ আগে ট্রেনটি শালিমার স্টেশন অতিক্রম করে। পত্রিকাটি বলছে, মূলত তামিলনাড়ুতে কাজের জন্য ও উন্নত চিকিৎসার জন্য যারা গিয়ে থাকেন, তারা এই ট্রেন ব্যবহার করে থাকেন।
এদিকে বিবিসি বলছে, দুর্ঘটনাস্থল ও হাসপাতালে উপস্থিত সাংবাদিকদের পাঠানো খবর ও ছবি দিয়ে সেখানকার সবশেষ পরিস্থিতির আঁচ পাওয়া যাচ্ছে। রেললাইনসহ আশপাশের জায়গাগুলোতে ট্রেনে থাকা মানুষের জিনিসপত্র ছড়িয়ে রয়েছে। লাইনের পাশে প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরা মৃতদেহ সারিতে রাখা ছিল। কিছুক্ষণ পরপর এই মৃতদেহগুলো গাড়িতে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। ট্রেনের বগির ভেতরে মানুষের স্যান্ডেল, কাপড় এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। উদ্ধারকাজ চলাকালে কয়েকজনকে পড়ে থাকা কাপড় ও দড়ির সাহায্যে টেনে বের করা হয়।
ওড়িশার মুখ্য সচিব প্রদীপ জেনা জানিয়েছেন, ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত মানুষকে গোপালপুরে একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এর বাইরে কিছু মানুষকে বালাশ্বর মেডিকেল কলেজেও নেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের বাইরে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, বালাশ^র হাসপাতালের পোস্টমর্টেম বিভাগের বাইরে শত শত মানুষ ভিড় করেছে। শুক্রবার রাতেই ৫০০ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রদীপ জেনা। মানুষ নিজে থেকে উদ্যোগী হয়ে এসে রক্তদান করে যাচ্ছে।
ভারতের রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব শুক্রবার দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ পরেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে ভুক্তভোগীদের সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের আশ্বাস দেন। দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, তদন্তের জন্য উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কেন দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা শিগগিরই বোঝা যাবে। এই দুর্ঘটনার দায় নিয়ে তিনি পদত্যাগ করবেন কি না, সেই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের চিন্তা মানুষের জীবন বাঁচানো ও উদ্ধারকাজ শেষ করা।’
রেলমন্ত্রী অশি^নী বৈষ্ণব বলেছেন, প্রত্যেক নিহতের পরিবারকে ১০ লাখ রুপি করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া গুরুতর আহতদের জন্য দুই লাখ রুপি ও অপেক্ষাকৃত কম আহতদের জন্য ৫০ হাজার রুপি ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে শনিবার সন্ধ্যার দিকে ওড়িশায় ট্রেন দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তিনি বলেছেন, এই মর্মান্তিক ঘটনায় যারা পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছেন তাদের পাশে রয়েছে সরকার। এটা বেদনাদায়ক ঘটনা। আহতদের চিকিৎসার জন্য সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। এটা গুরুতর ঘটনা। তিনি বলেন, এই দুর্ঘটনার প্রতিটি দিক বিবেচনায় নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দোষীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
ট্রেন দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের সঙ্গে ঘুরে দেখেন দুর্ঘটনাস্থল। পরিদর্শনকালে মমতা বলেন, এই দুর্ঘটনার পেছনে কিছু আছে। ভালো করে তদন্ত করতে হবে। তিনি অভিযোগ তোলেন, রেলের কাজে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনের অ্যান্টিকলিশন ডিভাইস ছিল না। ভারতের সবচেয়ে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে ১৯৮১ সালে। সে সময় অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা একটি প্যাসেঞ্জার ট্রেন বিহার রাজ্যে সাইক্লোনের সময় লাইনচ্যুত হয়ে নদীতে পড়ে যায়। ওই দুর্ঘটনায় অন্তত ৮০০ মানুষ মারা গিয়েছিল।
তুমি জয়ী তুমি বীর
তুমি দুর্ভেদ্য প্রাচীর
তুমি অগ্নি তুমি সেই জ¦লন্ত মশাল
যাতে চিরন্তন প্রজ্বলিত থাকে অগ্নিশিখা
বৈরীর আঘাতে যখন তুমি হও ক্ষতবিক্ষত
অস্ত্র চলে ক্ষিপ্ত বেগে বজ্রশক্তির মতো
সৈনিক তুমি দাউ দাউ করে জ¦লতে থাকা
প্রজ¦লিত অগ্নিশিখা
সেনাবাহিনী তুমি বাংলা মায়ের সার্বভৌমত্ব রক্ষায়
দুই সীমানায় ঘাত-বিঘাতে শহীদ হওয়া হাজার প্রাণ
সেনাবাহিনী মানে সন্তানহারা মায়ের বুকফাটা কান্না
সেনাবাহিনী মানে বাংলার মানুষের পূর্ণ আস্থা ও ভরসা
সেনাবাহিনী মানে দেশের সেবা অক্ষুন্ন রেখে
দেশবাসীকে বাঁচানোর লক্ষ্যে পথচলা
হয়তো তার মনের অবচেতনে জেগে ওঠে
মা-বাবা আর আপনজন
তব্ওু মনের গভীরে জেগে রয় তার শপথ বাণী
কখনো তোমার সম্মান ক্ষুন্ন হতে দেব না মাগো
তুমি যে আমার বঙ্গমাতা
তুমি যে সব দেশের রানী
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।