
আজ শুক্রবার প্রথম রমজান থেকে শুরু হচ্ছে বিএনপির ইফতার অনুষ্ঠান। প্রথম দিন রাজধানীর ইস্কাটনের লেডিস ক্লাবে এতিম, আলেম-ওলামাদের সম্মানে ইফতার আয়োজন করা হবে।
বিএনপির ইফতার মাহফিলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে যেন কোনো প্রকার বাধা দেওয়া না হয় সে বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে (ডিএমপি) অনুরোধ করেছে দলটি। ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিএনপির প্রতিনিধিদল এ অনুরোধ জানায়। পাশাপাশি বিনা ওয়ারেন্টে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার না করতে অনুরোধ জানিয়েছেন তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে তার কার্যালয়ে বৈঠক শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের এসব কথা জানান ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান।
বিএনপির তিন সদস্যে প্রতিনিধিদলে আরও ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম ও প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি।
বিনা ওয়ারেন্টে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে এমন দাবি করে আমান বলেন, ‘আগামী নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আবারও বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার শুরু করেছে। আপনারা দেখেছেন, বিনা ওয়ারেন্টে যুবদলের সাধারণ সম্পাদককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বনানীর একটি ক্লাবে সামাজিক অনুষ্ঠান থেকে ৫৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এমনিভাবে সারা দেশে অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা তাদের অনুরোধ করেছি, রমজানে বিনা ওয়ারেন্টে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার না করতে।’
তিনি বলেন, ‘যেখানে কথা বলছি, সবাই বলছে ওপরের নির্দেশে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আমরা বলেছি, এই গ্রেপ্তার বন্ধ করতে হবে। যদি ওয়ারেন্ট থাকে তা দেখিয়ে গ্রেপ্তার করবেন। যাদের নামে ওয়ারেন্ট নেই, বাসায় ঘুমাচ্ছে তাদের রাত ৩টায় তুলে নিয়ে আসবেন, এটা হবে না।’
আমান বলেন, ‘রমজান মাসে বিভিন্ন থানায় আমাদের ইফতার মাহফিল হবে। সেই ইফতার মাহফিলে আমাদের জাতীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন। সেটা যেন বিনা বাধায় করা যায়, সে ব্যাপারে আমরা নিশ্চয়তা চেয়েছি। কমিশনার সাহেব বলেছেন তিনি দেখবেন।’
পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির বৈঠক : ঢাকায় বিদেশি কূটনীতিকদের সম্মানে ইফতার অনুষ্ঠান সামনে রেখে দীর্ঘদিন পর গত বুধবার রাতে বিএনপির বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির বৈঠক হয়েছে। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও দলের বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির প্রধান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কমিটির সদস্য আব্দুল আউয়াল মিন্টু, শামা ওবায়েদ, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা ও ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। আগামী ৩০ মার্চ কূটনীতিকদের সম্মানে ইফতার মাহফিল করবে বিএনপি।
সার কারখানা ও বাসাবাড়িতে গ্যাস সরবরাহ সীমিত করে প্রয়োজনে সিএনজি স্টেশন বন্ধ রেখে আমদানিকৃত গ্যাসের ওপর ভর দিয়ে রমজান এবং গ্রীষ্মে গ্যাসের চাহিদা পূরণের পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। এরপরও গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটে ভুগতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তাদের মতে, এভাবে গ্যাস বন্ধ কিংবা সীমিত করে জোড়াতালি দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টার ফলে রমজান এবং গ্রীষ্মে গ্রাহকরা যেমন ঠিকমতো গ্যাস পাবে না, তেমনি গ্যাসের অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় বিদ্যুতের লোডশেডিং বাড়বে। সার কারখানায় গ্যাসের অভাবে উৎপাদন ব্যাহত হলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কৃষিতে।
গ্রীষ্ম ও সেচ মৌসুমে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি থেকে গ্যাস-বিদ্যুতের চাহিদা বাড়তে বাড়তে এপ্রিল-জুন পর্যন্ত সর্বোচ্চ হয়। রমজান, সেচ মৌসুম ও গ্রীষ্মকালে গ্যাস সরবরাহ নিয়ে পরিকল্পনা করেছে পেট্রোবাংলা। পরিকল্পনা অনুযায়ী মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ২৭০০ থেকে ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হবে। এর মধ্যে দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রে থেকে প্রায় ২২০০ মিলিয়ন ঘনফুট এবং বাকি গ্যাসের চাহিদা পূরণ হবে আমদানিকৃত তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি দিয়ে।
বর্তমানে দেশে দৈনিক প্রায় ২৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ২১৮০ মিলিয়ন ঘনফুট দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে এবং বাকি গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি ও খোলা বাজার থেকে আমদানিকৃত এলএনজির মাধ্যমে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. বদরূল ইমাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বর্তমানে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৩৭০০ থেকে ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এর বিপরীতে ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ করা হলে ঘাটতি থাকবে। যার প্রভাব পড়বে শিল্পকারখানা, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও অন্যান্য খাতে।’
তিনি বলেন, ‘আমদানিকৃত এলএনজির ওপর নির্ভর করে যে পরিকল্পনা করা হচ্ছে তা ভুল। কারণ কদিন আগেও বিশ^বাজারে এলএনজির দাম ৩০ ডলার পর্যন্ত উঠেছিল। এখন সেটা অনেক কমলেও যেকোনো পরিস্থিতিতে হঠাৎ করেই দাম বাড়তে পারে। তখন গ্যাসের সংকট আরও বাড়বে।’
‘সংকটের মুখে পড়ে সরকার ২০২৫ সাল নাগাদ ৪৬টি কূপ খননের উদ্যোগ নিয়েছে। এটা প্রশংসনীয়। আরও আগেই এ কাজ করা দরকার ছিল। অন্তত ২০১৮ সাল থেকে যখন আমদানি শুরু হয় তখন থেকেও যদি অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু হতো তাহলে এতদিনে অনেক গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। আজকের এ ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না’ যোগ করেন তিনি।
বদরূল ইমাম বলেন, এলএনজি আমদানিতে যতবেশি নজর দেওয়া হয়েছে দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধান ততটায় অবহেলিত রয়েছে। প্রতি বছর অন্তত ৫ থেকে ৭টা কূপ খনন করা গেলে সংকট অনেকটাই কাটানো সম্ভব হবে।
সূত্রমতে, বিশ^বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় বেশ কিছুদিন ধরে খোলাবাজার থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধ ছিল। দাম কমতে থাকায় গত ফেব্রুয়ারিতে খোলাবাজার থেকে প্রতিদিন ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আনা হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে গড়ে প্রতিদিন ২৬০০ থেকে ২৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়। চলতি মাস থেকে এলএনজি সরবরাহ বৃদ্ধি করায় গ্যাসের সরবরাহও বেড়ে গেছে। এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিদিন ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট, মে মাসে ৩০০ মিলিয়ন এবং জুনে ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি খোলাবাজার থেকে আমদানির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ সময়ে দেশীয় গ্যাস এবং দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি ও খোলাবাজার থেকে আমদানিকৃত এলএনজির মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করার সক্ষমতা রয়েছে পেট্রোবাংলার। তবে এর মধ্যে যদি কোনো কারণে খোলাবাজারে এলএনজির দাম বেড়ে যায় তাহলে গ্যাস সরবরাহ আরও কমবে।
পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, গ্যাস সরবরাহে বিদ্যুৎকেন্দ্র ও শিল্পকারখানায় অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এ জন্য বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে গেলে বাসাবাড়ি ও সার কারখানায় গ্যাসের সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে গ্যাসের চাপ কমানো অথবা সরবরাহ বন্ধ করা হবে দিনের কিছু সময়ের জন্য। বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদার সময় প্রয়োজনে সিএনজি স্টেশন বন্ধ রাখা হবে। তবে রমজানে সাহরি ও ইফতার তৈরিতে প্রয়োজনীয় গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে মানুষের ভোগান্তি অনেক বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ছাড়া তারাবি নামাজের সময় বিদ্যুতের লোডশেডিং হলে সেই ভোগান্তি আরও বাড়তে পারে।
এ প্রসঙ্গে বদরূল ইমাম বলেন, ‘এটা একটা জোড়াতালির পরিকল্পনা। এতে মানুষের ভোগান্তি বাড়বে। বাসাবাড়িতে গ্যাস সরবরাহ সীমিত করা নাগরিক হিসেবে সমর্থনযোগ্য নয়। এতে এলপিজির দামও আরও বেড়ে যাবে। মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়বে।
বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, গত বছর বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ উৎপাদনে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ১৬০০ মিলিয়ন ঘনফুটের বিপরীতে সরবরাহ করা হয়েছে ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এ বছর বিদ্যুতের সম্ভাব্য চাহিদা ধরা হয়েছে ১৬ হাজার মেগাওয়াট। আমদানিকৃত ও দেশীয় বিদ্যুতের মাধ্যমে এ চাহিদা পূরণ করা হবে। দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ফার্নেস অয়েল ও অন্যান্য জ¦ালানির পাশাপাশি প্রতিদিন অন্তত ১৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন। তবে বিদ্যুৎকেন্দ্রে ১২০০ থেকে ১৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের জোগান দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে পেট্রোবাংলার। ফলে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা দুরূহ হয়ে যাবে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে। অন্যদিকে ডলার সংকটের কারণে কয়লা ও অন্যান্য জ¦ালানি আমদানি ব্যাহত হওয়ায় অন্যান্য কেন্দ্রগুলো থেকেও চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে কি না, তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। সবমিলে এ বছর অন্তত দুই থেকে আড়াই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম মনে করেন, ‘চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করার সক্ষমতা সরকারের নেই। কারণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি সরবরাহ করতে সরকারের ডলার খরচের যে সক্ষমতা দরকার তা সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। জ্বালানি খাতে সরকারের ভুলনীতি আর অন্যায্য ও লুণ্ঠনমূলক ব্যয়ের কারণে দাম বেড়েই চলেছে। সেই ব্যয় মেটাতে এখন বিদ্যুৎ জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি করে ভর্তুকি সমন্বয় করতে চাইছে। এ পরিস্থিতিতে উচ্চদামে বিদেশ থেকে জ্বালানি আমদানি করে চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা অসম্ভব ব্যাপার।’
বিশ্বপ্রকৃতির সঙ্গে মানুষের অন্তরের আত্যন্তিক মিল, যা সহজেই অনুমেয়। বার মাস ও ছয় ঋতুর আবর্তনের মধ্য দিয়ে প্রকৃতি কেবলই রূপ বদলায়। বাইরের সেই রূপান্তর মানুষের চিত্তেও আনে রূপান্তর। অন্তরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা প্রকৃতির রূপ বদলের সঙ্গে মানুষের সুখ-দুঃখের অনুভূতিতে পরিবর্তন আনে। প্রকৃতিকে মানুষ তাই তার সুখ-দুঃখের ভাগী করে নিয়েছে।
বার মাস ও ছয় ঋতুর আবর্তনের ভেতর দিয়ে প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের মনের যে যোগ স্থাপিত হয় আমাদের লোকসাহিত্যে তার নানা প্রকাশ ঘটেছে। এদিক দিয়ে সারি গান লোকসাহিত্যের শাখা লোকসংগীতে স্থান করে নিয়েছে। আর যে লোকায়ত জীবন, যে লোকসংস্কৃতি আমাদের উন্নত ও অভিজাত সাহিত্য, সমাজ ও সভ্যতার উৎস, সারি গান সেই জীবন, সভ্যতা ও সংস্কৃতির অন্যতম আধার।
নড়াইল জেলার লোকসংস্কৃতিতে সারিগান একটি অন্যতম সংযোজন। জীবনের অনুষঙ্গ হিসেবে পরিবেশিত এ গান শ্রমসংগীত হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে । এ পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের এবারের পরিবেশনা ‘নড়ইিলের সারি গান।’
সারি গান বিশ্বের সব ভাষা ও সাহিত্যে দেখা যায়। তবে এই শ্রেণির গীত সবচেয়ে বেশি দেখা যায় বাংলা সাহিত্যে ও বাংলাদেশে। বাংলাদেশে বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন যুগ ও সময়ের সারি গান এত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সারি গান মূলত এক ধরনের কর্মসংগীত। লোকসংগীতের ধারাই সারি গানের উদ্দীপনা। ছাদ পেটানোর সময়, নৌকা বাইচের প্রতিযোগিতায়, ক্ষেতে কাজ করার সময় বা ধান ভানার ক্ষেত্রে সারি গান গাওয়া হয়। সারি গান অনেক সময় আমাদের জীবনবোধের কথা মনে করিয়ে দেয়। ইতিহাস, ধর্মকথার আশ্রয়ে রচিত হয় স্বভাব কবিদের রচিত এ গীত। এ ধরনের একটি সারি গান নড়াইল সদর উপজেলা থেকে সংগৃহীত, যা বিপিন সরকার রচিত।
রাবণের শক্তিশেলে লক্ষণ পৈলো
গাও তোলোরে ও ভাই লক্ষণ রাম কেঁন্দে মলো।।
ওই ওরে- পিতৃসত্য পালন করতে আমি এলাম বন
সঙ্গে এলো সীতাসতী অনুজ ভাই লক্ষণ।।
বনবাসে এলাম আমি দেশে মলো পিতা,
পঞ্চবটি বনে এসে হারা হইলাম সীতা,
সীতা গেলে সীতা পাবো প্রতি ঘরে ঘরে,
প্রাণের ভাই লক্ষণ হারালে, ভাই বলিবো কারে।। গাও-তোলো গাও-তোলো লক্ষণ চলো দেশে নাই,
এ সংসারে মিলবে নারে তোমার মতো ভাই।।
বাংলাদেশের সর্বত্র সারি গান অত্যন্ত জনপ্রিয়। আমাদের লোকসাহিত্যের সারি গানে সাধারণত আধ্যাত্মিক, বীরত্বব্যঞ্জক, হালকা প্রেমমূলক বিষয় সন্নিবিষ্ট হয়। এমন কিছু তথ্য আছে, যা সাহিত্যিক, সামাজিক এবং ঐতিহাসিক দিক থেকে মূল্যবান। কর্মরত অবস্থায় সারি গান সমবেতভাবে পরিবেশিত হয়ে থাকে। নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলা থেকে সংগৃহীত একটি গান উদ্ধৃত করছি :
জয় বাংলা বলিয়া আমরা গেয়ে যাব দেশের গান
হারে আমরা বাংলা মায়েরই সন্তান।।
ওরে বাংালাদেশের নদী করে সাগরের সন্ধান
হাল ধরে পাল তুলে মাঝি গাহে সারিগান রে ।।
ওরে বাংলাদেশের মাঠেঘাটে ফলে সোনার ধান
আমাদেরি খাটনির ফসল, বিশ্বপতির দান রে ।।
ওরে বিশ্বকবি সোনার বাংলা রেখেছিলো নাম
কবি নজরুল গেয়ে গেলো বাংলার জয়গান রে।।
হিন্দু মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান এক মায়ের সন্তান
বাংলা মায়ের গুণে মোদের নাইকো অভিমান রে।।
অসীম বলে বাংলা মায়ের চরণে জানাই
চির নির্বাণ হলে মাগো বক্ষে দিও ঠাঁই রে।।
নড়াইল জেলায় এক সময় প্রচুর সারি গান শোনা যেত। যার সুর টানাটানা ও চড়া এবং খুব জমাট। নৌকা চালানোর সময়, ছাদ পেটানোর সময়, ধান বা পাট কাটার সময় সমবেত কণ্ঠে যে গান গাওয়া হয় তাকে সারি গান বলে। সারি গানের সঙ্গে শ্রমজনিত কোনো কাজের যোগ থাকে। নদীমাতৃক নড়াইলে মাঝিমাল্লারা এই গান বেশি গেয়ে থাকে। এই গান সাধারণত নৌকা বাইচ, শব্দ তানের পর নৃত্য সহকারে গাওয়া হয়ে থাকে। লোহাগড়া উপজেলার দীঘলিয়া ইউনিয়নের আকরাবাড়ি গ্রামের সন্তোষ বিশ্বাসের একটি সারি গানের দল এখনো বিদ্যমান। আশ্বিন মাসে বিলে কাজ করার সময়, দুর্গাপূজায় এবং বড়দিয়ার নবগঙ্গা ও নড়াইলের চিত্রা নদীতে নৌকা বাইচের সময় সারি গান গেয়ে থাকে এ দলটি। এখানে তা উদ্ধৃত করছি :
সোনার কমল ভাসিয়ে কেরে জলেতে দিলো
আমার মা বুঝি কৈলাসে চলিলো
ঐ ওরে কালী ঘাটের কালী মাগো, কৈলাসে ভবানী,
বৃন্দাবনে রাধে তুমি গোকুলে গোপিনী
যাত্রাকালে সঙ্গে আমার এসেছিলো গুণের ভাই,
ওরে লক্ষণ গা তোলো দেশে যাই।।
বনে মলো বনরাজি, দেশে মলো পিতা
গুণের ভাই ছেড়ে হারা হলাম সীতা।
ওরে লক্ষণ গা তোলো দেশে যাই।।
সীতা গেলে সীতা পাব প্রতি ঘরে ঘরে
গুণের ভাই লক্ষণ হারালে ভাই বলিবো কারে।
ওরে লক্ষণ গা তোলো দেশে যাই
যে কালেতে আইলাম বনে, সীতা ছিলো ছোট
দিনে দিনে বাড়ে সীতা বাকল হলো খাটো।
ওরে লক্ষণ গা তোলো দেশে যাই। সব শেষে বলি- নড়াইলের সারি গান বাংলার লোকসাহিত্যে বিপুল ও সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তার করে আছে। যা লোকায়ত বাংলার চিরায়ত সম্পদ।
জায়েদুল আলম
শিক্ষাবিদ ও লেখক
শিশুদের যক্ষ্মা শনাক্তে এখনো পিছিয়ে বাংলাদেশ। সর্বশেষ ২০২১ সালে প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়েছে ২২৭ জন। সে হিসাবে দেশে যক্ষ্মা শনাক্তের হার ৮০ শতাংশ। এর মধ্যে অন্তত ১০ শতাংশ বা ৩৭ হাজার ৫০০ শিশু যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হওয়ার কথা। কিন্তু সরকারি হিসাবে এ সংখ্যা ৪ শতাংশ বা দেড় হাজারের বেশি নয়। অর্থাৎ এখনো ৬ শতাংশ বা ২২ হাজার ৫০০ শিশু যক্ষ্মা রোগী শনাক্তের বাইরে রয়েছে। এর অর্থ যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও শনাক্ত না হওয়ায় এসব শিশু চিকিৎসা পাচ্ছে না।
অবশ্য দেশে শিশু রোগীর সংখ্যার সঠিক কোনো তথ্য সরকারের কাছে নেই। গত এক বছরে কত শিশু যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে, সে তথ্যও নেই।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এবং তাদের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেশে শিশু যক্ষ্মার এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
শিশু যক্ষ্মা রোগী শনাক্তে লক্ষ্যমাত্রা থেকে বাংলাদেশ এখনো পিছিয়ে বলে স্বীকার করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর ডা. মাহফুজার রহমান সরকার। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের লক্ষ্যমাত্রা মোট যক্ষ্মা রোগীর ৮ শতাংশ বা তার বেশি যেন শিশুদের যক্ষ্মা নির্ণয় করতে পারি। কিন্তু বাচ্চাদের শনাক্ত কম হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমরা লক্ষ্য থেকে পিছিয়ে আছি।
এ কর্মকর্তা বলেন, সারা দেশে ৪ শতাংশ বা তার কিছু বেশি শিশু যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত করতে পারছি। মোট যে শনাক্তের হার, তার ৮ শতাংশ (বেসরকারি হিসেবে ১০ শতাংশ) শিশু হওয়ার কথা। কিন্তু হচ্ছে ৪ শতাংশের মতো। বাকি ৪ শতাংশ শনাক্ত হচ্ছে না।
শনাক্ত কম হওয়ার কারণ হিসেবে এই কর্মকর্তা বলেন, শিশুরা বলতে পারে না বা উপসর্গ বোঝে না, আবার অভিভাবকরাও সচেতন না। ফলে বেশিরভাগ শিশু শনাক্তের বাইরে থেকে যাচ্ছে। অথচ সার্বিক ক্ষেত্রে আমাদের যক্ষ্মা শনাক্ত হার অনেক বেশি। অনেক দেশের চেয়ে ভালো আছি। ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী আমাদের মোট শনাক্তের হার ৮২ শতাংশ।
অবশ্য শিশুদের যক্ষ্মা শনাক্তের হার বাড়ানোর জন্য নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে বলে জানান সরকারের যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির এ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, শিশুদেরও যে যক্ষ্মা হতে পারে, সে তথ্য দেশের বিভিন্ন জেলায় সরকারি ও বেসরকারিভাবে প্রচার করা হচ্ছে। আগে শিশুদের যক্ষ্মা শনাক্তের হার আরও কম ছিল। কিন্তু এখন আমরা যেভাবে কাজ করছি তাতে সামনের দুই-এক বছরের মধ্যে শনাক্তের হার আরও বাড়বে।
এমন অবস্থায় আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস। ১৮৮২ সালে ২৪ মার্চ ডা. রবার্ট কক যক্ষ্মা রোগের জীবাণু আবিষ্কার করেন। এর ১০০ বছর পর ১৯৮২ সাল থেকে এই দিনে দিবসটি পালন করা হচ্ছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয়Ñ ‘হ্যাঁ! আমরা যক্ষ্মা নির্মূল করতে পারি’। দিবসটি উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নানা সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে।
১ বছরে ১ লাখ রোগী কমেছে : জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি দেশে যক্ষ্মা রোগীর সর্বশেষ তথ্য প্রকাশ করেছে। কর্মসূচির হিসেবে, গত বছর বাংলাদেশে নতুন ২ লাখ ৬২ হাজার ৭৩১ জন যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়েছে । এ সময় যক্ষ্মার উপসর্গ আছে এমন ২৯ লাখের বেশি লোকের নমুনা পরীক্ষা করে এ রোগী শনাক্ত হয়েছে। সে হিসাবে শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ৯ শতাংশ।
যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির হিসেবে, এর আগের বছর ২০২১ সালে যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়েছিল ৩ লাখ ৭৫ হাজার। সে হিসাবে গত এক বছরে দেশে যক্ষ্মা রোগী কমেছে ১ লাখ ১২ হাজার ২৬৯ জন। চিকিৎসা নিরাময়ের হার গত ১০ বছর ধরে ৯৫ শতাংশের বেশি আছে। সর্বশেষ গত বছর তা আরও বেড়ে ৯৭ শতাংশ হয়েছে।
গত বছর সবচেয়ে বেশি রোগী পাওয়া গেছে ঢাকা বিভাগে, ৭৪ হাজার ৯৪৫ জন ও সবচেয়ে কম পাওয়া গেছে বরিশাল বিভাগে, ১৬ হাজার ৪৯১ জন। এ ছাড়া চট্টগ্রামে ৪৮ হাজার ৯৩৮, রাজশাহীতে ২৭ হাজার ৫৪৫, খুলনায় ২৭ হাজার ১১৭, রংপুরে ২৬ হাজার ৮২৮, সিলেটে ২২ হাজার ২০৭ ও ময়মনসিংহে ১৮ হাজার ৩৬০ জন যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়েছে।
এখনো শনাক্তের বাইরে ২০% রোগী : এখন পর্যন্ত দেশে মোট রোগীর ৮০ শতাংশকে শনাক্ত করতে পারছে সরকার ও বাকি ২০ শতাংশ শনাক্তের বাইরে রয়েছে। ফলে এই ২০ শতাংশ রোগী কোনো চিকিৎসা পাচ্ছে না। এমনকি তাদের মধ্যে ঠিক কী পরিমাণ রোগী মারা যাচ্ছে, সে তথ্যও পাচ্ছে না সরকার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারকে যক্ষ্মা নির্মূলে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে সার্বিক শনাক্ত শতভাগ পূরণ করতে হবে। সব রোগীকে চিকিৎসার আওতায় আনতে না পারলে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়বে।
যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২১ সালে মোট শনাক্ত যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা অনুযায়ী বর্তমানে প্রতি লাখ মানুষের মধ্যে যক্ষ্মা রোগী ২২৭ জন। সে হিসাবে মোট রোগী শনাক্ত হওয়ার কথা ৪ লাখ ৬৮ হাজার ৭৫০ জন। কিন্তু সে বছর শনাক্ত হয়েছে ৩ লাখ ৭৫ হাজার। সে হিসাবে এখনো শনাক্তের বাইরে ৯৩ হাজার ৭৫০ জন। অর্থাৎ এই ২০ শতাংশ রোগী এখনো সরকারের শনাক্ত ও চিকিৎসার নেটওয়ার্কের মধ্যে আসেনি।
প্রতি ১২ মিনিটে যক্ষ্মায় মরছে ১ জন : গত ১০ বছরে দেশে যক্ষ্মায় মৃত্যু কমলেও এখনো এ সংখ্যা উদ্বেগজনক। গত ২০২১ সালে যক্ষ্মায় মারা গেছেন ৪২ হাজার মানুষ। জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির হিসেবে, চিকিৎসার মাধ্যমে ২০১২ থেকে ২০২১ পর্যন্ত প্রায় ২৩ লাখ যক্ষ্মা রোগীকে বাঁচানো গেছে। ২০১৫ সালে যেখানে প্রতি ১ লাখে ৪৫ জন লোকের মৃত্যু হতো, সেখানে ২০২১ সালে যক্ষ্মায় মৃত্যু প্রতি লাখে ২৫ জনে নেমে এসেছে। কিন্তু এখনো দেশে প্রতি মিনিটে একজন ব্যক্তি যক্ষ্মায় আক্রান্ত হচ্ছে এবং প্রতি ১২ মিনিটে যক্ষ্মার কারণে একজন মারা যাচ্ছে।
যক্ষ্মা নির্ণয় ও চিকিৎসা বিনামূল্যে : যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর ডা. মাহফুজার রহমান সরকার বলেন, দেশে সরকারিভাবে যক্ষ্মা রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দেওয়া হয়। এ ব্যয় সরকার বহন করে। মানুষ এ সুবিধা নিচ্ছে। কিন্তু অনেক সময় মানুষ এ তথ্য জানে না। সে জন্য জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। যক্ষ্মা পরীক্ষার ব্যবস্থা জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়েও আছে।
যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির কর্মকর্তারা জানান, যক্ষ্মা রোগ নির্ণয়ের জন্য বর্তমানে বাংলাদেশে ৫১৮টি জিনএক্সপার্ট মেশিন, ১ হাজার ১১৯টি মাইক্রোস্কোপ, ২০৫টি ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন ও ৩৮টি ট্রুনেট মেশিন রয়েছে। এসব পদ্ধতিতে যক্ষ্মার প্রায় ৮২ শতাংশ রোগী শনাক্তকরণ সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়াও একটি ন্যাশনাল রেফারেন্স ল্যাবরেটরি ও পাঁচটি রিজিওনাল রেফারেন্স ল্যাবরেটরির মাধ্যমে যক্ষ্মা রোগ শনাক্ত করা হচ্ছে।
কর্মকর্তারা আরও জানান, সরকারি চারটি বক্ষব্যাধি ক্লিনিক, সাতটি বক্ষব্যাধি হাসপাতাল এবং সরকারি সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও এনজিও ক্লিনিকে বিনামূল্যে যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা দিচ্ছে সরকার।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. আফজালুর রহমান জানান, যক্ষ্মা শনাক্ত হওয়ার পর প্রতিটি রোগীকে বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহের পাশাপাশি নিয়মিত ওষধু সেবন করার জন্য প্রতিটি রোগীর সঙ্গে একজন ডটস প্রোভাইডার নিশ্চিত করা হয়েছে। এর ফলে রোগী শনাক্তের সঙ্গে সঙ্গে যক্ষ্মায় মৃত্যুহার কমে এসেছে এবং চিকিৎসার সাফল্যের হার বেড়েছে। এ উদ্যোগ বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। এ সাফল্যের কারণে ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মার (এমডিআর টিবি) হারও কমে এসেছে।
কেন শিশুরা যক্ষ্মায় আক্রান্ত হচ্ছে : এ ব্যাপারে রাজধানীর শ্যামলী ২৫০ শয্যার টিবি ও অ্যাজমা হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যক্ষ্মা বায়ুবাহিত ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রামক ব্যাধি। রোগটা সাধারণত মাইক্রোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস জীবাণুর সংক্রমণে হয়ে থাকে। এই জীবাণু যেকোনো অঙ্গেই সংক্রমিত হতে পারে। তবে যক্ষ্মায় আক্রান্ত শিশুরা তাদের লক্ষণগুলো বুঝিয়ে বলতে পারে না, তাই প্রায়ই তাদের ক্ষেত্রে এ রোগটি নির্ণয় করতে দেরি হয় এবং উপেক্ষিত হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। বিশ্বব্যাপী মোট যক্ষ্মা রোগীর ১২ শতাংশ শিশু। কিন্তু বাংলাদেশে সঠিকভাবে শনাক্ত না হওয়ার কারণে এ হার চার শতাংশের মতো। শিশুদের হার আরও বেশি হবে বলে মনে করা হয়।
এ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, শিশুর শরীরে যক্ষ্মার জীবাণু প্রবেশ করে বড়দের কাছ থেকে। ফুসফুসে আক্রান্ত একজন যক্ষ্মা রোগীর সংস্পর্শে এলে শিশুর যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। তবে বড় শিশুদের তুলনায় এক মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুরাই বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ এরকম শিশুরা তাদের সময়ের একটা বড় অংশ পরিবারের সদস্য, নিকটাত্মীয় ও খেলার সাথীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সময় কাটায়। এ ছাড়া এমন বয়সী শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বড় শিশুদের তুলনায় কম থাকে। অপুষ্টিতে ভুগছে এমন শিশুদের যক্ষ্মার ঝুঁকি বেশি। কারণ অপুষ্টি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দেয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে এক যুবককে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে থানায় দুইদিন নির্যাতন চালানো হয়েছে বলে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই যুবকের নাম আবদুল আহমেদ ওরফে রুবেল (২৬)। অভিযোগ রয়েছে, মামলা ছাড়া শুধুমাত্র প্রতিপক্ষের প্ররোচনায় হেফাজতে নিয়ে নির্যাতন চালিয়েছে তিন পুলিশ সদস্য। পরে একটি ‘মিথ্যা’ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে নেওয়া হয়।
এ ঘটনায় দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন রুবেলের মা আমেনা বেগম। ডাকযোগে পাঠানো অভিযোগ গত বুধবার পুলিশ সুপার কার্যালয়ে পৌঁছায়। ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে দায়িত্ব দিয়েছেন পুলিশ সুপার।
অভিযোগে বলা হয়, গত ১৪ মার্চ বিকেলে এএসআই আল আমিনসহ তিনজন সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্য রুবেলকে বাড়ি থেকে নিয়ে যায়। এরপর বাঞ্ছারামপুর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তরুণ কান্তি দে, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আল-আমিন মানিক নির্যাতন করে জখম করে।
রুবেলের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাসুদুর রহমান জানান, ১৪ মার্চ বিকেলে রুবেলকে কোনো মামলা ছাড়ায় আটক করা হয়। এরপর দুইদিন নির্যাতন চালিয়ে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১৬ মার্চ আদালতে নেওয়া হয়।
তবে বাঞ্ছারামপুর থানা পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযোগ অস্বীকার করে বলা হয়েছে, ১৫ মার্চ রুবেলের পরিবারের প্রতিপক্ষ রবিউল্লাহ বাদী হয়ে রুবেলের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছে। এই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। কোনো নির্যাতন করা হয়নি।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, রবিউল্লাহর সঙ্গে রুবেলের পরিবারের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। এই বিরোধকে কেন্দ্র করে রুবেলের পরিবার রবিউল্লাহর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে। মামলাটি বর্তমানে চলমান। এতে রবিউল্লাহ ক্ষিপ্ত হয়ে রুবেলের পরিবারের লোকজনের ক্ষতি করার চেষ্টা করে আসছিলেন। এরমধ্যে গত ১৪ মার্চ বিকেলে রবিউল্লাহর প্ররোচনায় এএসআই আল আমিনসহ সাদা পোশাকের তিন পুলিশ সদস্য রুবেলকে বাড়ি থেকে আটক করে। থানায় নিয়ে পরিদর্শক তরুণ কান্তি দে ও এএসআই আল-আমিন দফায় দফায় পিটিয়ে রুবেলকে জখম করে।
এদিকে আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে আদালতে না পাঠিয়ে নির্যাতন করায় তার মা আমেনা বেগম সংবাদ সম্মেলনের প্রস্তুতি নেন। বিষয়টি জানাজানি হলে তড়িঘড়ি করে ১৬ মার্চ দুপুরে একটি মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ। রুবেলের শরীরের জখম দেখে আদালতের পুলিশ সদস্যরা তাকে গ্রহণ না করে চিকিৎসার পরামর্শ দেন। সে সময় আদালত থেকে রুবেলকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পুনরায় আদালতে নেওয়া হয়। পরে আদালত তাকে জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।
এই ঘটনায় মা আমেনা বেগম গত ১৯ মার্চ নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনে তিনজনকে আসামি করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে অভিযোগ দেন। পরদিন ২০ মার্চ জেলা ও দায়রা জজ শারমিন নিগার মামলাটি খারিজ করে পুলিশ সুপারকে জানানোর সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে কিছু নির্দেশনা দেন।
রুবেলের স্ত্রী মায়া মনি বলেন, ‘আমার স্বামীকে আটকের পর পুলিশ হেফাজতে রেখে নির্যাতন করে। ১৪ মার্চ তাকে আটক করলেও ১৬ মার্চ তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে আদালতে পাঠায়। রুবেলকে প্রচুর নির্যাতন করে আদালতে পাঠালে কোর্ট পুলিশ আহতাবস্থায় তাকে গ্রহণ করেনি। আদালত থেকে চিকিৎসার জন্য তাকে নিয়ে যাওয়ার প্রমাণ সিসিটিভি ফুটেজ দেখলে প্রমাণ মিলবে। পুলিশের ভয়ে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় আছি।’
বাঞ্ছারামপুর থানার ওসি মো. নূরে আলম বলেন, রবিউল্লাহর ভাই মাঈনুদ্দিন ও আবদুল আহমেদ রুবেল বাহরাইনে একসঙ্গে থাকত। রুবেল দেশে আসার সময় মাঈনুদ্দিন তার কাছে বাড়ির জন্য স্বর্ণালংকার দেয়। কিন্তু রুবেল দেশে ফিরে স্বর্ণালংকার ফেরত না দেওয়ায় গত ১৫ মার্চ রবিউল্লাহ বাদী হয়ে রুবেলের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দিয়েছে। রুবেলকে এই মামলায় গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়। রুবেলকে কোনো প্রকার নির্যাতন করা হয়নি।
জানতে চাইলে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দেবেন। সে মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বঙ্গোপসাগর দিয়ে ঘনকালো মেঘ বাংলাদেশ ভূখণ্ডে প্রবেশ করায় উপকূল থেকে উত্তরাঞ্চল পর্যন্ত মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টিপাতের কারণে উপকূলীয় অঞ্চলের নিচু রাস্তাঘাট ডুবে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। বৃষ্টিপাত আরও একদিন থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
গতকাল বৃহস্পতিবার আবহাওয়ার আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, দেশের চারটি বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। এতে বলা হয়েছে, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন জানান, আরও একদিন বৃষ্টিপাতের পর মাঝখানে দু-তিন দিন বিরতি দিয়ে আবার বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা ১-৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে। রাতের তাপমাত্রাও সামান্য বাড়তে পারে।
এদিকে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মৌসুমী লঘুচাপের প্রভাবে বাগেরহাটের মোংলাসহ সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আমাদের মোংলা প্রতিনিধি জানান, হঠাৎ বৃষ্টিতে পৌর শহরের নিচু রাস্তাঘাট ও শহরতলীর নিম্নাঞ্চলের রাস্তাঘাটে পানি জমে জলাবদ্ধতার মতো অবস্থা হয়েছে। সকাল থেকে আকাশ রৌদ্রোজ¦ল থাকলেও দুপুর থেকেই আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। এরপর শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি। এ সময় বজ্রপাতের পাশাপাশি হালকা বাতাসও বয়ে যায়। আর এ এলাকায় হঠাৎ হঠাৎ ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে গত দুই-তিন দিন ধরেই। কখনো হঠাৎ আকাশ মেঘাচ্ছন্ন আবার কখনো রৌদ্রোজ¦ল এমন আবহাওয়া বিরাজ করছে সাগর ও সুন্দরবনের এ উপকূলে।
এদিকে বৃষ্টিতে চৈত্রের খরতাপ থেকে স্বস্তি নেমেছে উপকূলীয় এ এলাকার মানুষের মাঝে। সুপেয় পানির সংকট থাকায় বৃষ্টি নামলেই এ পানি সংরক্ষণের হিড়িক পড়ে যায়। অপরদিকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ও বৃষ্টি হলেই চলে যায় বিদ্যুৎ। গতকাল দুপুরে বৃষ্টি নামার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ চলে যায়, আসে বৃষ্টি কমার পরপরই।
মোংলা আবহাওয়া দপ্তরের ইনচার্জ মো. হারুন অর রশিদ বলেন, বৃষ্টি ও মেঘলা আকাশ- এমন অবস্থা থাকতে পারে আগামী তিনদিন। পাশাপাশি বাড়বে তাপমাত্রাও। তবে লঘুচাপের ফলে আপাতত সর্তক সংকেত জারির কোনো সম্ভাবনা নেই বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, কয়েকদিন ধরে কখনো বৃষ্টি, আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকাসহ এ এলাকায় তাপমাত্রাও বৃদ্ধি পাবে।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার আজমপুর ইউনিয়নের মদনপুর গ্রামে স্ত্রীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় চাচাতো ভাইয়ের ছুরিকাঘাতে পলাশ হোসেন (২৮) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন।
শনিবার রাত ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত পলাশ হোসেন ওই গ্রামের মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে।
স্থানীয়রা জানায়, নিহত পলাশ হোসেনের চাচাতো ভাই সুমন প্রায়ই পলাশের স্ত্রীকে উত্ত্যক্ত করত। শনিবার সন্ধ্যায় আবারো উত্ত্যক্ত করে। পলাশ বাড়িতে এলে বিষয়টি তাকে জানায় তার স্ত্রী। এ ঘটনায় পলাশ তার চাচাতো ভাইয়ের কাছে বিষয়টির প্রতিবাদ করতে গেলে উভয়ের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে সুমন ছুরি দিয়ে পলাশকে আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই পলাশ মারা যায়।
মহেশপুর থানার ওসি খন্দকার শামীম উদ্দিন বলেন, নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। নিহত পলাশ পেশায় ভ্যানচালক ছিলেন, সঙ্গে কৃষিকাজও করত।
মার্চে ঘরের মাঠে দুটি প্রীতি ম্যাচের পর আন্তর্জাতিক ফুটবলে দেখা যায়নি আর্জেন্টিনাকে। তিন মাস পর আগামী মাসে তারা খেলবে আরও দুটি প্রীতি ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে সেই ম্যাচের জন্য ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করেছেন লিওনেল স্কালোনি। তবে ঘোষিত সেই দলে নেই লাউতারো মার্তিনেজ।
আর্জেন্টিনার ক্রীড়াভিত্তিক সংবাদমাধ্যম টিওয়াইসি স্পোর্টস ও ওলে তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গোড়ালির চোটের কারণে মার্তিনেজ চিকিৎসাধীন আছেন। তাই তাকে জাতীয় দলের স্কোয়াডে রাখা হয়নি।
চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে ইন্টার মিলানের হয়ে গোল করেছিলেন। ফাইনালেও তাকে ইতালিয়ান ক্লাবটির হয়ে খেলতে দেখা যেতে পারে। তারপরই তিনি মাঠের বাইরে চলে যাবেন। ঐ সময়ে তিনি বিশ্রামে থাকবেন। আর তাই কোচ স্কালোনি তাকে দলে রাখবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার শিরোপা জয়ের অন্যতম সদস্য মার্তিনেজ। তবে পুরো টুর্নামেন্টে তিনি ব্যাথানাশক ঔষধ খেয়ে খেলছিলেন।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ও ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা।
রেফারির বাঁশি বাজার তিন মিনিটের মধ্যেই রিয়াল মাদ্রিদের জালে জড়ায় বল। রাফা মিরের দুর্দান্ত এক গোলে লিড পায় সেভিয়া। তবে শেষ অবধি তারা ধরে রাখতে পারেনি সে হাসি। রদ্রিগোর জোড়া গোলে জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে রিয়াল।
রাতে লা-লিগার ম্যাচে সেভিয়ার মুখোমুখি হয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। খেলার তৃতীয় মিনিটেই লিড পেয়েছিল সেভিয়া। তবে ২৯ মিনিটে রদ্রিগো সমতায় ফেরান রিয়ালকে। সমতা নিয়ে বিরতিতে যায় দুই দল।
বিরতির পর ফের বাড়ে আক্রমণের ধার। যার ফলে ৬৯ মিনিটে দ্বিতীয় গোলের দেখা পায় রিয়াল। এবারও নায়ক রদ্রিগোই। এবারেরটি অবশ্য টনি ক্রুসের সহায়তায়। পরে আর কোনো গোল না হওয়ায় ২-১ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে মাদ্রিদের ক্লাবটি।
তবে ম্যাচের ৮৩ মিনিটে লাল কার্ড দেখে আকুনা। হারের আগে সেভিয়ার আর্জেন্টাইন এই ডিফেন্ডারের ভুলে ১০ জনের দল নিয়ে খেলতে হয় রিয়ালকে।
শুরুতে গোল হজম করলেও ৬৭ শতাংশ সময় নিজেদের দখলে বল রেখেছিল রিয়াল। ছয়বার আক্রমণে গিয়েছিল তারা, যার মধ্যে তিনটি শট ছিল গোলবার লক্ষ্য করে।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
সংলাপে রাজনৈতিক সংকট দূর হওয়ার নজির তৈরি হয়নি এখনো। তবুও নানা সময়ে সংকট নিরসনে রাজনীতিতে সংলাপ করা নিয়ে আলোচনা হয়। সংলাপের আশ্রয় নিতেও দেখা গেছে দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভিন্ন মেরুতে অবস্থান থাকায় আবারও রাজনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে। এই সংকট মোকাবিলায় আলোচনায় এসেছে ‘সংলাপ’। যদিও প্রধান দুই দলের নেতারা সংলাপে অনীহা প্রকাশ করে আসছেন। আবার আড়ালে আলাপে দুই দলের আগ্রহও দেখা গেছে।
অন্তরালের সংলাপ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার আড়ালে আলাপের মূল কারণ হলো বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বড় একটি অংশ বয়স্ক হয়ে গেছেন। তাদের অনেকের এবারের পরে নির্বাচন করার সক্ষমতা আর থাকবে না। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকতে গিয়ে সামাজিক মর্যাদা নষ্ট হয়েছে। এ সময় সংসদ সদস্য হয়ে মর্যাদা নিয়ে চলতে চান তারা। বিএনপির ওই অংশের সঙ্গে তৃণমূল পর্যায়ের অনেক নেতাও রয়েছেন যারা নির্বাচনে যেতে চান। ফলে নির্বাচনে যেতে আগ্রহী বিএনপির সেই সব নেতা আড়ালে আলাপে থাকতে রাজি আছেন। অন্যদিকে আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক দেখতে চাওয়া বিদেশি শক্তিগুলোর সরকারের ওপর চাপ থাকায় বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে চায় আওয়ামী লীগ। ফলে প্রকাশ্যে সংলাপের আগ্রহ না দেখিয়ে আড়ালের আলাপে আগ্রহী দলটির নেতারা।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংবিধানের বাইরে এক চুলও নড়বে না। অন্যদিকে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে কোনোভাবেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যাবে না। দুই দলই নিজেদের এমন অনড় অবস্থান দেখাচ্ছে। দুই দলের পরস্পরবিরোধী অবস্থানে সৃষ্ট সংকট সমাধানে বিদেশি তৎপরতা বেশ আগে থেকেই শুরু হয়েছে। নির্বাচন যতই এগিয়ে আসতে শুরু করেছে বিদেশি সেই তৎপরতায়ও গতি এসেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ-বিএনপি কাউকেই কাছাকাছি অবস্থানে, অর্থাৎ এক মেরুতে আনতে পারেনি এখনো। তবে বিদেশি প্রভাবশালী দেশগুলোর প্রতিনিধিরা সংকট নিরসনে দুই দলকেই সংলাপে বসার জন্য বলছেন।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকেরা সংলাপের মধ্য দিয়ে সমস্যা সমাধানের রাস্তা ঠিক করতে দুই দলকেই তাগিদ দিয়েছেন। বিদেশিদের অবস্থান হলো আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক দেখতে চান তারা। সে জন্য রাস্তা তৈরি করতে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ ও ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপিকে পরামর্শ দিয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলই সংলাপে অনীহা দেখিয়ে আসছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ্যে অনীহার কথা জানিয়েছেন। বিএনপিও প্রায় প্রতিদিনই অনীহা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখছে।
তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও সংলাপে সমাধান আসেনি। এবারও সংলাপে সমাধান আসার সম্ভাবনা কম। যদি সংলাপের আগেই এজেন্ডা নির্ধারণ করে সংলাপে বসে, সেই সংলাপ সফল হওয়ার পথ থাকে না।
দুই দলের একাধিক সূত্র দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, প্রকাশ্যে সংলাপ না করে এবার আড়ালে সংলাপ হতে পারে। অনেকটা হঠাৎ করেই আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘এমন ঘটনা ঘটে যেতে পারে-বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন দিয়ে বসতে পারেন।’ তিনি বলেন, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। সেই প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
নির্বাচন সামনে রেখে দেশে অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকেরা সংকট নিরসনে এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। ওই সব বৈঠকে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দুই দলেরই অবস্থান জানতে চেয়েছেন তারা। একই সঙ্গে দুই দলকে তারা এই বার্তাই দিতে চেয়েছেন যে ভিন্নমত থাকলেও স্থিতিশীলতা ও সুশাসনের স্বার্থে আগামী সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও অবাধ হওয়া জরুরি। এ কারণে নির্বাচনের আগে দুই প্রধান দলের মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতার আবশ্যকতা রয়েছে। এই সমঝোতার জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ, কিংবা উভয় পন্থায় দুই দলের মধ্যে ‘আলাপ’ হওয়া দরকার, তা সেটা সংলাপ বা আলোচনা যে নামেই করা হোক না কেন। এদিকে কূটনীতিকদের কাছে আওয়ামী লীগ অভিযোগ করেছে, বিএনপি কোনো ধরনের সংলাপে আগ্রহী নয়। ২০১৪ সালের নির্বাচন কেন্দ্র করে বিএনপির আচরণ বিদেশিদের কাছে তুলে ধরে সংলাপে বিএনপির অনীহার কথা জানান।
ক্ষমতাসীন দলের নেতারা দাবি করছেন, রাজনীতিতে কোনো কিছু আদায় করতে হলে আন্দোলনের মাধ্যমে পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ক্ষমতাসীনদের বাধ্য করতে হয়। কিন্তু সেটা বিএনপি পারছে না। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ আন্দোলন করেছিল। সেখানে জনগণকে সম্পৃক্ত করে বিএনপিকে পদত্যাগে বাধ্য করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিএনপি এখন সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারবে বলে মনে করছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। মাঠে আওয়ামী লীগের অবস্থান আছে। জনগণ সরকারের সঙ্গে আছে। আর তাদের সঙ্গে জনগণই নেই। তাই তো খালেদা জিয়াকে এখনো মুক্ত করতে পারেনি।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ‘যেকোনো সমস্যার সমাধান সংলাপের মাধ্যমেই পাওয়া সম্ভব। সংলাপে বসলে হয়তো শতভাগ পাব না। তবে গিভ অ্যান্ড টেক তো কিছু হবেই। গণতন্ত্রে সংলাপের কোনো বিকল্প নেই।’
তবে দলটির সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য বলেন, ‘সংলাপ চলছে। মিডিয়ায়, টক শোতে, মাঠে মঞ্চে। এক দল আরেক দলকে উদ্দেশ্য করে যে বক্তব্য দিচ্ছে, তাও এক ধরনের সংলাপ। এসব অনেকেই সংলাপ বলে টের না পেলেও মূলত এটাও সংলাপ।’
আওয়ামী লীগের নেতাদের দাবি, সংলাপের ব্যাপারে পশ্চিমা কূটনীতিকেরা তাদের তেমন কোনো পরামর্শ দেননি। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ‘আমরা তাদের (কূটনীতিক) বলেছি সংলাপের উদ্যোগ আমরা নিয়ে কী করব? তাদের (বিএনপি) যদি কোনো দাবি থাকে তাহলে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলতে পারে। নির্বাচন কমিশন যদি সুপারিশ করে, সেটা অবশ্যই সরকারের কাছে আসবে। সরকার দেখবে তখন।’
সংলাপ প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘এ ধরনের কোনো ভাবনা আমাদের নাই।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি। আর আওয়ামী লীগ বলছে, নির্বাচনকালীন এই সরকারই থাকবে এবং তাদের অধীনে নির্বাচনে হবে। নিরপেক্ষ বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ অবস্থায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নির্বাচনকালীন সংকট সমাধানে কূটনীতিকদের দূতিয়ালি চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারেও ইতিবাচক বিএনপি। সাম্প্রতিক সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, জাতিসংঘসহ বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী দেশ ও সংস্থার দূতসহ বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। ওই বৈঠকগুলোতে কেন এই সরকারের অধীনে, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যেতে চায় না তা ব্যাখ্যা করেছে দলটি। বিএনপি দলীয় সরকারের অধীনে যাবে না, সেটিও স্পষ্ট করেছে। একই সঙ্গে কূটনীতিকদের বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা কী হবে সে বিষয়ে সংলাপের আহ্বান আসলে তাতে সাড়া দেবে বিএনপি। আর এই সংকট মোকাবিলায় কূটনীতিকদের ‘রোল প্লে’ (ভূমিকা রাখা) করার সুযোগ আছে বলে মনে করেন দলটির নেতারা। তাদের মতে, প্রকাশ্যে না হলেও পর্র্দার অন্তরালে সংলাপ হতে পারে। কূটনীতিকদের দৌড়ঝাঁপের কারণে রাজনৈতিক অঙ্গনেও গুঞ্জন রয়েছে ভেতর-ভেতর সংলাপ হচ্ছে।
সর্বশেষ ১৮ মে গুলশানের আমেরিকান ক্লাবে মার্কিন দূতাবাসের পলিটিক্যাল চিফ ব্রান্ডন স্ক্যাট, পলিটিক্যাল অফিসার ম্যাথিউ বে, পলিটিক্যাল কনস্যুলার ডেনিয়েল শেরির সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ।
জানতে চাইলে শামা ওবায়েদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকগুলোতে তারা আমাদের অবস্থান জানতে চান। আমরাও আমাদের অবস্থান তুলে ধরি। সর্বশেষ তারা জানতে চেয়েছেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে আপনাদের অবস্থান কী। আমরা বলেছি, আন্দোলন চলছে, সেটা আমরা কন্টিনিউ (চালিয়ে যাব) করব। তারা অন্য পক্ষের (ক্ষমতাসীনদের) কথাও শুনছেন। এ অবস্থায় তারা কী করছে (দূতিয়ালি), নাকি অন্য কিছু হচ্ছে সেটা তাদের বিষয়। তবে আমরা মনে করি, গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে আরেকটি গণতান্ত্রিক দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসুক, মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত হোক, সে ব্যাপারে তাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকুক।’
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আনুষ্ঠানিক সংলাপের ব্যাপারে কূটনীতিকেরা কোনো বৈঠকেই আমাদের কিছু বলেনি।’
তবে বৈঠকগুলোতে থাকা দলের আরেক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা একাধিকবার সরকারের সঙ্গে সংলাপ করেছি। ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনের সংলাপে পর চরম বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের তিন মাস পর নতুন নির্বাচন দেওয়ার কথা বলে তারা প্রতারণা করেছে। তাই এজেন্ডা ছাড়া কোনো সংলাপে আমরা যাচ্ছি না। কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে আমরা বলেছি, আনুষ্ঠানিক সংলাপের বিষয়ে আমরা ইতিবাচক। কিন্তু সেটি হতে হবে নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা কী হবে তা নিয়ে।’
ওই নেতার আরও বলেন, ‘সরকার এখন বিভিন্ন চাপে আছে। আন্তর্জাতিক চাপ তো আগে থেকেই আছে। এখন নতুন করে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপ বেড়েছে। এসব চাপ সামাল দিতে তারা সংলাপের নামে নানা কথা বলবে। কূটনীতিকদের সঙ্গে আলোচনায় সরকারের মনোভাবে কিছু হলেও আঁচ করা যায়। হয়তো কয়েক দিন পর সরকার আনুষ্ঠানিক সংলাপের জন্য আমন্ত্রণও জানাতে পারে।’
তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে বর্তমানে তার মাসিক বেতন প্রায় ৩৪ হাজার। বাবার আর্থিক অবস্থাও অসচ্চল। কিন্তু তার আছে বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, দামি জমিসহ অন্যান্য সম্পত্তি। সবমিলে তিনি অন্তত ১০ কোটি টাকার মালিক। দেশের ভেতরে যাতায়াত করেন বিমানে। ইচ্ছে হলে বিদেশেও যান। মাত্র ২৬ বছরে এত স্বল্প বেতনে চাকরি করেও সম্পদের বিশাল পাহাড় গড়ে সবাইকে তাজ্জব লাগিয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী মুহাম্মদ এয়াকুব। একই সঙ্গে তিনি সিবিএর সাধারণ সম্পাদক এবং গ্যাস অ্যান্ড অয়েলস ফেডারেশনের মহাসচিব। তার বিরুদ্ধে রয়েছে নিয়োগ-পদোন্নতি নিয়ে বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে বিভিন্ন সময়ে ভুয়া অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তা প্রমাণ হয়নি। আমি নিয়মিত আয়কর দাখিল করি। কোথাও অসামঞ্জস্য থাকলে সেটা আরও আগে ধরা পড়ত। আমি দুর্নীতিবাজ না। তবে আবার সুফিও না। সিবিএর নেতা হয়ে মসজিদের ইমাম সাহেবও হওয়া যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমি পাঁচবার প্রত্যক্ষ ভোটে এবং তিনবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। আমি খুব গরিব ঘরের সন্তান। কিন্তু বেতন-ভাতা ভালো। এর বাইরে প্রতি বছর ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা কোম্পানির লভ্যাংশ পাই। মাছ চাষের জন্য তিনটি পুকুর আছে। গরু পালন করি। দুই ভাই বিদেশে থাকে। এসব টাকা দিয়েই বাড়ি কিনেছি। যমুনা অয়েলের একজন ক্লিনারেরও তো বাড়ি আছে। আমি সিবিএর নেতা। আমার একটা বাড়ি থাকা কি অন্যায়?’
এয়াকুব বলেন, ‘আমি আমার বিরুদ্ধে লেখেন কোনো সমস্যা নেই। মানুষ আজ পড়লে কাল ভুলে যাবে। হয়তো কিছু সম্মানহানি হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেও দেশ ও পারিবারিক প্রেক্ষাপটে আজ আমি কেরানি। কমার্স কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করেছি। চাইলে আজ থেকে ১০ বছর আগেই কর্মকর্তা হতে পারতাম। কিন্তু সিবিএর নেতা হওয়া একটা নেশা।’
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার বেঙ্গুরা গ্রামের এয়াকুব ১৯৯৪ সালে যমুনা অয়েল কোম্পানিতে অস্থায়ী পদে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে চাকরি শুরু করেন। মাত্র তিন বছরের মাথায় ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠানের টাইপিস্ট পদে তার চাকরি স্থায়ী হয়। দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রভিডেন্টফান্ড ও অন্যান্য খাতে টাকা কর্তন শেষে মাস শেষে তিনি বেতন পান ৩৩ হাজার ৯০৩ টাকা।
জানা গেছে, এত দিন ৪২ হাজার টাকার ভাড়া বাড়িতে থাকতেন এয়াকুব। সম্প্রতি ভাড়া বাসা ছেড়ে চট্টগ্রাম নগরীর অভিজাত এলাকা লালখান বাজারে তিনটি ফ্ল্যাট কিনেছেন, যার আয়তন প্রায় সাড়ে চার হাজার বর্গফুট। দুটো ইউনিটে তিনি নিজে থাকেন, অন্যটি ভাড়া দিয়েছেন।
স্থানীয়দের দাবি, তিনটি ফ্ল্যাটের আনুমানিক মূল্য প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার মতো হবে। অভিজাত ফ্ল্যাট দুটি দামি আসবাব দিয়ে সাজানো হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিষয়টি জানতে চাইলে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা ঋণ এবং নিজের জমানো টাকা দিয়ে চার হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনেছি।
আরও জানা গেছে, নিজস্ব ফ্ল্যাট ছাড়াও চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এক্সেল রোডে এয়াকুবের ৪ কাঠা জমিতে টিনশেডের ঘর আছে। ১০টি পরিবারের কাছে ভাড়া দিয়েছেন তিনি। দুদকের অনুসন্ধানেও এর প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। এয়াকুবের জমি ও ঘরসহ বর্তমানে ওই সম্পত্তির বাজারমূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা হতে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে তিনি অস্বীকার করে বলেছেন, ওই সম্পত্তির মালিক তিনি নন। জমিটি প্রথমে বায়না করলেও পরে আর কেনেননি।
এর বাইরে পতেঙ্গা, বেঙ্গুরাসহ বিভিন্ন স্থানে এয়াকুবের নামে-বেনামে জমি ও অন্যান্য সম্পদ থাকার তথ্য এসেছে দেশ রূপান্তরের কাছে।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এয়াকুব একটি মাইক্রোবাস ব্যবহার করেন। তবে দেশ রূপান্তরের কাছে তার দাবি, এই গাড়ির মালিক তার পরিচিত। কিন্তু গাড়িটি তার নয়।
অভিযোগ উঠেছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির ঠিকাদারের শ্রমিক মো. আবদুল নুর ও মো. হাসান ফয়সালের সহযোগিতায় সিবিএ নেতা এয়াকুব কোম্পানির ডিপোতে চাকরি দেওয়ার নামে ৮ জনের কাছ থেকে কুরিয়ার সার্ভিস ও বিকাশের মাধ্যমে ২০১৯ সালে কয়েক দফায় ২৯ লাখ ৭৪ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু তাদের কাউকে চাকরি দেওয়া হয়নি। ওই টাকাও ফেরত পাননি কেউই। সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী ডিপোতে কর্মরত তৎকালীন কর্মচারী তোতা মিয়ার মাধ্যমে এয়াকুবকে ওই টাকা পাঠানো হয়। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর একাধিক রসিদ দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে।
চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে তোতা মিয়া ও চাকরি প্রার্থীদের নানা রকম ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে এয়াকুবসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানায় ২০১৯ সালের ১৯ জুলাই সাধারণ ডায়েরি করেন মো. তোতা মিয়া।
এয়াকুব দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছিল। তিনি কোনো ধরনের অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত নন। বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় অভিযোগকারী আমার কাছে এবং কোম্পানির দায়িত্বশীলদের কাছে ক্ষমা চেয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
তবে বিষয়টি নিয়ে যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর। তাদের অভিযোগ, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিবিএ নেতা এয়াকুব তোতা মিয়াকে ডেকে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার নির্দেশ দেন। ওই সময় টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে একটা মীমাংসা করা হলেও পরে ওই টাকা ফেরত দেয়নি এয়াকুব। তবে এয়াকুবের দাবি, তিনি কাউকে চাপ প্রয়োগ করেননি। অভিযোগটি মিথ্যে প্রমাণিত হওয়ায় তোতা মিয়া তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিযোগ করেন, সিবিএর কিছু নেতা নানা রকম অনিয়ম-দুর্নীতি করলেও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেন না।
এ বিষয়ে জানতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গিয়াস উদ্দীন আনচারীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করে, খুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। কোম্পানির ঢাকা কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি দুদকের এক প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, ক্যাজুয়াল ও কন্ট্রাক্টর ক্যাজুয়াল নিয়োগ, ফার্নেস অয়েল, বিটুমিনসহ বিভিন্ন খাতে এয়াকুব মাসোহারা নেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী জানিয়েছেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় প্রধান তেল স্থাপনা ও দেশের সব ডিপো থেকে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায়েরও মৌখিক অভিযোগ পেয়েছে দুদক। তার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে বদলিসহ নানা রকম শাস্তি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যোগসাজশ থাকার অভিযোগ করেছেন একাধিক কর্মচারী।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১-এর সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, বিভিন্ন রেকর্ডপত্র এবং সরেজমিন তথ্য পর্যালোচনা করে এয়াকুবের বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য হওয়ায় তা প্রকাশ্যে অনুসন্ধান করা দরকার। তার ওই সুপারিশ আমলে নিয়ে কমিশন আজ রবিবার সকালে চট্টগ্রাম কার্যালয়ে শুনানিতে হাজির হতে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছেন।
তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে বর্তমানে তার মাসিক বেতন প্রায় ৩৪ হাজার। বাবার আর্থিক অবস্থাও অসচ্চল। কিন্তু তার আছে বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, দামি জমিসহ অন্যান্য সম্পত্তি। সবমিলে তিনি অন্তত ১০ কোটি টাকার মালিক। দেশের ভেতরে যাতায়াত করেন বিমানে। ইচ্ছে হলে বিদেশেও যান। মাত্র ২৬ বছরে এত স্বল্প বেতনে চাকরি করেও সম্পদের বিশাল পাহাড় গড়ে সবাইকে তাজ্জব লাগিয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী মুহাম্মদ এয়াকুব। একই সঙ্গে তিনি সিবিএর সাধারণ সম্পাদক এবং গ্যাস অ্যান্ড অয়েলস ফেডারেশনের মহাসচিব। তার বিরুদ্ধে রয়েছে নিয়োগ-পদোন্নতি নিয়ে বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে বিভিন্ন সময়ে ভুয়া অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তা প্রমাণ হয়নি। আমি নিয়মিত আয়কর দাখিল করি। কোথাও অসামঞ্জস্য থাকলে সেটা আরও আগে ধরা পড়ত। আমি দুর্নীতিবাজ না। তবে আবার সুফিও না। সিবিএর নেতা হয়ে মসজিদের ইমাম সাহেবও হওয়া যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমি পাঁচবার প্রত্যক্ষ ভোটে এবং তিনবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। আমি খুব গরিব ঘরের সন্তান। কিন্তু বেতন-ভাতা ভালো। এর বাইরে প্রতি বছর ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা কোম্পানির লভ্যাংশ পাই। মাছ চাষের জন্য তিনটি পুকুর আছে। গরু পালন করি। দুই ভাই বিদেশে থাকে। এসব টাকা দিয়েই বাড়ি কিনেছি। যমুনা অয়েলের একজন ক্লিনারেরও তো বাড়ি আছে। আমি সিবিএর নেতা। আমার একটা বাড়ি থাকা কি অন্যায়?’
এয়াকুব বলেন, ‘আমি আমার বিরুদ্ধে লেখেন কোনো সমস্যা নেই। মানুষ আজ পড়লে কাল ভুলে যাবে। হয়তো কিছু সম্মানহানি হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেও দেশ ও পারিবারিক প্রেক্ষাপটে আজ আমি কেরানি। কমার্স কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করেছি। চাইলে আজ থেকে ১০ বছর আগেই কর্মকর্তা হতে পারতাম। কিন্তু সিবিএর নেতা হওয়া একটা নেশা।’
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার বেঙ্গুরা গ্রামের এয়াকুব ১৯৯৪ সালে যমুনা অয়েল কোম্পানিতে অস্থায়ী পদে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে চাকরি শুরু করেন। মাত্র তিন বছরের মাথায় ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠানের টাইপিস্ট পদে তার চাকরি স্থায়ী হয়। দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রভিডেন্টফান্ড ও অন্যান্য খাতে টাকা কর্তন শেষে মাস শেষে তিনি বেতন পান ৩৩ হাজার ৯০৩ টাকা।
জানা গেছে, এত দিন ৪২ হাজার টাকার ভাড়া বাড়িতে থাকতেন এয়াকুব। সম্প্রতি ভাড়া বাসা ছেড়ে চট্টগ্রাম নগরীর অভিজাত এলাকা লালখান বাজারে তিনটি ফ্ল্যাট কিনেছেন, যার আয়তন প্রায় সাড়ে চার হাজার বর্গফুট। দুটো ইউনিটে তিনি নিজে থাকেন, অন্যটি ভাড়া দিয়েছেন।
স্থানীয়দের দাবি, তিনটি ফ্ল্যাটের আনুমানিক মূল্য প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার মতো হবে। অভিজাত ফ্ল্যাট দুটি দামি আসবাব দিয়ে সাজানো হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিষয়টি জানতে চাইলে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা ঋণ এবং নিজের জমানো টাকা দিয়ে চার হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনেছি।
আরও জানা গেছে, নিজস্ব ফ্ল্যাট ছাড়াও চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এক্সেল রোডে এয়াকুবের ৪ কাঠা জমিতে টিনশেডের ঘর আছে। ১০টি পরিবারের কাছে ভাড়া দিয়েছেন তিনি। দুদকের অনুসন্ধানেও এর প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। এয়াকুবের জমি ও ঘরসহ বর্তমানে ওই সম্পত্তির বাজারমূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা হতে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে তিনি অস্বীকার করে বলেছেন, ওই সম্পত্তির মালিক তিনি নন। জমিটি প্রথমে বায়না করলেও পরে আর কেনেননি।
এর বাইরে পতেঙ্গা, বেঙ্গুরাসহ বিভিন্ন স্থানে এয়াকুবের নামে-বেনামে জমি ও অন্যান্য সম্পদ থাকার তথ্য এসেছে দেশ রূপান্তরের কাছে।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এয়াকুব একটি মাইক্রোবাস ব্যবহার করেন। তবে দেশ রূপান্তরের কাছে তার দাবি, এই গাড়ির মালিক তার পরিচিত। কিন্তু গাড়িটি তার নয়।
অভিযোগ উঠেছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির ঠিকাদারের শ্রমিক মো. আবদুল নুর ও মো. হাসান ফয়সালের সহযোগিতায় সিবিএ নেতা এয়াকুব কোম্পানির ডিপোতে চাকরি দেওয়ার নামে ৮ জনের কাছ থেকে কুরিয়ার সার্ভিস ও বিকাশের মাধ্যমে ২০১৯ সালে কয়েক দফায় ২৯ লাখ ৭৪ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু তাদের কাউকে চাকরি দেওয়া হয়নি। ওই টাকাও ফেরত পাননি কেউই। সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী ডিপোতে কর্মরত তৎকালীন কর্মচারী তোতা মিয়ার মাধ্যমে এয়াকুবকে ওই টাকা পাঠানো হয়। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর একাধিক রসিদ দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে।
চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে তোতা মিয়া ও চাকরি প্রার্থীদের নানা রকম ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে এয়াকুবসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানায় ২০১৯ সালের ১৯ জুলাই সাধারণ ডায়েরি করেন মো. তোতা মিয়া।
এয়াকুব দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছিল। তিনি কোনো ধরনের অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত নন। বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় অভিযোগকারী আমার কাছে এবং কোম্পানির দায়িত্বশীলদের কাছে ক্ষমা চেয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
তবে বিষয়টি নিয়ে যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর। তাদের অভিযোগ, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিবিএ নেতা এয়াকুব তোতা মিয়াকে ডেকে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার নির্দেশ দেন। ওই সময় টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে একটা মীমাংসা করা হলেও পরে ওই টাকা ফেরত দেয়নি এয়াকুব। তবে এয়াকুবের দাবি, তিনি কাউকে চাপ প্রয়োগ করেননি। অভিযোগটি মিথ্যে প্রমাণিত হওয়ায় তোতা মিয়া তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিযোগ করেন, সিবিএর কিছু নেতা নানা রকম অনিয়ম-দুর্নীতি করলেও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেন না।
এ বিষয়ে জানতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গিয়াস উদ্দীন আনচারীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করে, খুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। কোম্পানির ঢাকা কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি দুদকের এক প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, ক্যাজুয়াল ও কন্ট্রাক্টর ক্যাজুয়াল নিয়োগ, ফার্নেস অয়েল, বিটুমিনসহ বিভিন্ন খাতে এয়াকুব মাসোহারা নেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী জানিয়েছেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় প্রধান তেল স্থাপনা ও দেশের সব ডিপো থেকে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায়েরও মৌখিক অভিযোগ পেয়েছে দুদক। তার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে বদলিসহ নানা রকম শাস্তি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যোগসাজশ থাকার অভিযোগ করেছেন একাধিক কর্মচারী।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১-এর সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, বিভিন্ন রেকর্ডপত্র এবং সরেজমিন তথ্য পর্যালোচনা করে এয়াকুবের বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য হওয়ায় তা প্রকাশ্যে অনুসন্ধান করা দরকার। তার ওই সুপারিশ আমলে নিয়ে কমিশন আজ রবিবার সকালে চট্টগ্রাম কার্যালয়ে শুনানিতে হাজির হতে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছেন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।