
রাত পোহালেই ৫২তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করবে জাতি। দিনের প্রথম প্রহর থেকেই মানুষের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় সিক্ত হতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত লাল-সবুজের গালিচার মধ্যে সাতটি স্তম্ভে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ। এ দিনটিতে জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে নামবে লাখো মানুষের ঢল। তাদের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় মোড়ানো ফুলে ফুলে ভরে উঠবে স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদি।
তাই আজ ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় স্মৃতিসৌধকে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করার পাশাপাশি সৌধ চত্বরের সিঁড়ি ও নানা স্থাপনায় পড়েছে রং-তুলির আঁচড়। নানা রঙের বাহারি ফুলে ঢেকে ফেলা হয়েছে স্মৃতিসৌধের সবুজ চত্বর। এদিন জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ সর্বস্তরের জনতার শ্রদ্ধা নিবেদন ও যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনে ঢাকা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ ও পুলিশ কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক নজরদারির পাশাপাশি চার স্তরের নিñিদ্র নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে।
দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে গণপূর্ত বিভাগের কর্মীরা মাসব্যাপী অক্লান্ত পরিশ্রম করে সৌধ প্রাঙ্গণকে প্রস্তুত করেছেন। আজ সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন শহীদ বেদিতে। এরপর মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা, কূটনীতিকরা, রাজনৈতিক ব্যক্তি ও বীর মুক্তিযোদ্ধারাসহ সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা জানাবেন মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদদের প্রতি।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মহান স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিদেশি কূটনীতিকসহ সর্বস্তরের জনতার শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য গণপূর্ত বিভাগের পক্ষ থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধকে দীর্ঘ প্রায় এক মাস ধরে ধুয়ে-মুছে, নানা রঙের ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। এজন্য গত ২২ মার্চ থেকে স্মৃতিসৌধে দর্শনার্থীসহ জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।’
দিবসটিকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে স্মৃতিসৌধ এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ‘স্বাধীনতা দিবসকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। নিরাপত্তাবেষ্টিত এলাকায় কারা কারা অবস্থান করছেন সেটা প্রযুক্তির মাধ্যমে চিহ্নিত করার পাশাপাশি সাদা পোশাকে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করবে। সৌধ এলাকায় নিরাপত্তা চৌকি, পর্যবেক্ষণ টাওয়ার বসানোর পাশাপাশি আগের চেয়ে ফোর্স আরও বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া ২৬ মার্চ উপলক্ষে গত তিন দিন ধরে আমাদের বিশেষ অভিযান চলমান রয়েছে।’
এবার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায়ও বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি মোতায়েন থাকবে ৪ হাজার পুলিশ সদস্য। এছাড়া ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে যারা স্মৃতিসৌধ এলাকার সামনের ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ব্যবহার করে গাবতলীর দিকে যাবেন তাদের বিকল্প পথ ব্যবহারের অনুরোধ জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।
জাতীয় স্মৃতিসৌধের প্রস্তুতি সরেজমিনে পরিদর্শন করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, ‘২৬ মার্চ রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের লক্ষ্যে জাতীয় স্মৃতিসৌধে সব আয়োজন ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। পরিপাটি করে সাজানো হয়েছে পুরো সাভার উপজেলাকে।’
সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাজহারুল ইসলাম জাতীয় স্মৃতিসৌধ পরিদর্শন করে বলেন, ‘ইতিমধ্যে সৌধ এলাকার আইনশৃঙ্খলাসহ সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।’
এর আগে গত বৃহস্পতিবার সরকারি এক তথ্যবিবরণীতে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের সময় স্মৃতিসৌধ এলাকার ফুল বাগানের যেন কোনো ধরনের ক্ষতিসাধন না হয়, সেদিকে সতর্ক থাকার জন্য সর্বসাধারণের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
শুরু হয়েছে পবিত্র রমজান মাস। গতকাল শুক্রবার ছিল মাসব্যাপী ইবাদতের প্রথম দিন। এ ছাড়া গতকাল দেশে ছিল সাপ্তাহিক ছুটিও। কিন্তু ছুটির দিন হলেও মানুষের ছোটাছুটির কমতি ছিল না। যে কারণে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা ছিল বেশি। গতকাল দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন দুর্ঘটনায় অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছে। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে আরও অন্তত ৫৮ জন। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা সংকটাপন্ন।
দেশ রূপান্তরের সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত-
কুমিল্লার দাউদকান্দি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, উপজেলার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দারায়পুরে বাসচাপায় একটি ইজিবাইক দুমড়ে-মুচড়ে দুই যাত্রী নিহত হয়েছেন। চালকসহ আহত আরও এক শিশুকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দুপুর সোয়া ১২টায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ঢাকা থেকে কুমিল্লাগামী তিশা পরিবহনের একটি বাস রায়পুর এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় পার্শ্ব সড়ক থেকে ইজিবাইকটি মূল সড়কে উঠলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময় ইজিবাইকে থাকা জোৎস্না বেগম (৫২) নামে এক নারী ঘটনাস্থলেই মারা যান। হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান আরেক যাত্রী ইয়াকুব আলী (৩০)। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ইজিবাইকের চালক মাজারুল ইসলাম এবং নিহত জোৎস্না বেগমের নাতনি নুসরাত জাহানকে (৭) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহত জোৎস্না বেগম দেবিদ্বার উপজেলার ছোটনা গ্রামের কাসেম মিয়ার স্ত্রী।
দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার ওসি মো. জাহাঙ্গীর আলম দুর্ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, তিশা পরিবহনের বাসটি পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।
মাগুরা প্রতিনিধি জানান, জেলার শালিখা উপজেলার আড়পাড়া বাজার ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে শাহাবুর রহমান (৪০) ও শাকিব আহমেদ (২৭) নামে দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। নিহত শাহাবুর রহমান (৪০) শালিখা উপজেলার জুনারী গ্রামের নুর মোহাম্মদের ছেলে। শাকিব একই গ্রামের শামীমুর রহমানের ছেলে। শাহাবুর রহমান পেশায় স্থানীয় একজন দন্ত চিকিৎসক।
শালিখা থানার ওসি মোশারফ হোসেন জানান, ওই দুই মোটরসাইকেল আরোহী আড়পাড়া বাজার এলাকায় পৌঁছলে একটি কাভার্ড ভ্যান ও ট্রাকের সঙ্গে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান তারা। কাভার্ড ভ্যান ও ট্রাক জব্দ করা হয়েছে।
ঝালকাঠি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, রাজাপুরে বিআরটিসি বাস দুর্ঘটনায় বাসের সুপারভাইজারসহ দুজন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার গালুয়া ইউনিয়নের কনুদাশকাঠী এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময় বাসের চালককে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে পার্শবর্তী ভা-ারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে বাসের আরও ১৫ যাত্রী।
নিহতরা হলো বাসের সুপারভাইজার মেহেদী হাসান (৪৫) ও যাত্রী পারভেজ হোসেন (৩৫)। তবে নিহতদের বিস্তারিত তথ্য এখনো জানাতে পারেনি পুলিশ।
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধির পাঠানো তথ্য বলছে, জেলার গজারিয়ায় সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ীর সঙ্গে ধাক্কা লেগে এক কাভার্ড ভ্যান চালক নিহত হয়েছেন। তার নাম আব্দুল মোতালেব (৫০)। গতকাল শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে জেলার গজারিয়া উপজেলার তেতৈতলা গ্রামের মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত কাভার্ড ভ্যানচালক মোতালেব ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার পাইপুরা গ্রামের আব্দুল গফুরের ছেলে।
টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে রাস্তাপার হওয়ার সময় বাসচাপায় ময়সের আকন্দ (৫০) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন তার স্ত্রী লিপি বেগম। গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের সল্লা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে।
নিহত ময়সের আকন্দ উপজেলার সল্লা ইউনিয়নের মীরহামজানি গ্রামের মৃত আফাজ উদ্দিন আকন্দের ছেলে। তার স্ত্রী আহত লিপি বেগমকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নাটোর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, নাটোরের গুরুদাসপুরে যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় নাজমা বেগম (৫১) নামে এক নারী নিহত হয়েছেন। শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার হাজিরহাট এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত নাজমা বেগম একই উপজেলার বামনকোলা গ্রামের সাইদুল খাঁর স্ত্রী।
বনপাড়া হাইওয়ে থানার ওসি হাবিবুর রহমান জানান, বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের হাজিরহাট এলাকায় সড়ক পার হচ্ছিল নাজমা বেগম। এ সময় রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী যাত্রীবাহী শ্যামলী পরিবহনের বাস তাকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই নাজমা বেগম মারা যান।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল সংবাদদাতা জানান, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে প্রাণ কোম্পানির কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় সুমন রায় নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। গতকাল দুপুরে শ্রীমঙ্গল শহরের হবিগঞ্জ রোডের হোটেল মেরিনার সামনে এই দুর্ঘটনাটি ঘটে। নিহত ব্যক্তি পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি এবং ঘটনার সময় তিনি ভাগিনার সঙ্গে বাইসাইকেলে নাশতা করতে যাচ্ছিলেন।
দুর্ঘটনার পর স্থানীয় জনগণ প্রায় ১০ মিনিটের মতো সড়ক অবরোধ করে রাখে। পরে শ্রীমঙ্গল থানার পুলিশ সদস্যরা গিয়ে স্থানীয়দের বুঝিয়ে মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যান এবং সড়ক অবরোধ তুলে দেন।
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন জেলার কালীগঞ্জে উপজেলায় একটি যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে ইব্রাহিম হোসেন (৩৫) নামে এক হেলপার নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছে কমপক্ষে আর ২০ যাত্রী। নিহত ইব্রাহিম ওই বাসের হেলপার এবং কালীগঞ্জ পৌরসভাধীন হেলাই গ্রামের আব্দুল কাদেরের ছেলে। শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ওই উপজেলার কেয়াবাগান তেল পাম্পের সামনে একটি মোটরসাইকেলকে সাইড দিতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে খাদে পড়ে যায় বাসটি। কালীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের লিডার রবিউল ইসলাম জানান, সংবাদ পাওয়ার পর আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে ছয়জনকে উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পৌঁছে দিয়েছি। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে যোগ করেন এ ফায়ার ফাইটার অফিসার।
কালীগঞ্জ থানার ওসি আব্দুর রহিম মোল্যা হতাহতের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, একটি বেপরোয়া মোটরসাইকেলকে সাইড দিতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাশের খাদে পড়ে বাসটি।
এ শহর-সমুদ্রে রাত্রি একদা চরিত্র হয়ে উঠেছিল। বুড়িগঙ্গায় অনেক রাতে জোয়ার এলে ঘাটের কাছে চাপকলে লোহার হাড়গোড়ে মড়মড় শব্দ উঠত। নবাবপুরের রাস্তায় সারি সারি বন্ধ দোকানের শাটার ছুঁয়ে উড়ে যেত পরীদের ছায়া। ইংলিশ রোডের মোড়ে পতিতাপল্লী ঘুমাতে পারত না নগ্নতা বুকে করে। ফুলবাড়িয়ায় পুরনো স্টেশনে নেশার ধুনকি জ্বেলে জাগত কিছু মানুষ। রাত্রিবেলা আলো নিভিয়ে প্রতিনায়কের মতো একা হতো সিনেমা হল, মতিঝিল পাড়া। শেয়ারবাজারের আগুনে তখনো পোড়েনি পাড়াটা। শাপলা চত্বরে বীভৎস ফুটে ওঠেনি সিমেন্টের শাপলা ফুল। জোনাকির মতো জ্বলত ছোটখাটো দু-একটি দোকান। রাত গভীর হওয়ার আগেই ইতস্তত করতে করতে ডিপোতে ফিরত সরকারি বাস। শূন্য পথে অন্ধকার মেখে বসে থাকা রিকশাই ছিল পথিকের প্রিয় সখা। রাত্রি সেই শহরে নিজেই ছিল এক অদ্ভুত চরিত্র।
রাত্রি কেন চরিত্র হয়ে ওঠে? হয়তো রাত্রির কাছে আশ্রয় নেয় মানুষের গোপনীয়তা। এখন এই শহরের কোনো গোপনীয়তা নেই। আলো জ্বেলে উন্মাদের মতো বেঁচে থাকা শহরে হয়তো নাগরিকদের আর আড়াল খোঁজার জন্য রাত্রিকে প্রয়োজন হয় না।
‘এত রাতে কোথায় যাব ভাইটি, তোদের সামনের বাসার খোলা বারান্দাতেই শুয়ে থাকি? এত রাতে তো বাড়ি যেতে পারব না।’ রাতের ব্যারোমিটার তখন বাড়ছে শুধু, রাস্তার নিয়ন আলো আর আঁধার দূর করতে না পেরে লজ্জা পেয়ে হয়তো নিভেই গেছে; ঠিক তখন লিকু ভাইয়ের প্রত্যাবর্তন ঘটত। দেশি মদেও নেশায় নিমজ্জিত লিকু ভাইয়ের কাছে কোনোদিন জানা হয়নি, তার বাড়ি কোথায়। আমার কাছে রাত্রির আগন্তুক ছিলেন তিনি। আরও আঁধার নামলে সাইকেলে চেপে ফিরত পাশের বাড়ির দারোয়ান। একটা গানের অর্ধেক চরণ তখন সেই টালমাটাল অবস্থায় ভাসত তার কণ্ঠে ‘যত ভাবি ভুলে যাবো, মন মানে না।’ কাকে ভুলে যেতে চাইতেন সেই মানুষটা? রাত্রির সেই সব চরিত্রদের কাছে প্রশ্ন করে জেনে নেওয়া হয়নি কিছুই। ডেইলি অবজারভার ভবনের সামনে শেষ রাতে পত্রিকা নিতে আসা হকারদের জন্য ডিম সেদ্ধ বসিয়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে ঘুমাত যে ছেলেটা তার কাছে জানা হয়নি কোন অচিন থেকে সে এসেছিল এই শহরে। জানা হয়নি ফকিরেরপুলে বাদশা রেস্তোরাঁয় অনেক মধ্য রাতে হাসিমুখ ছেলেটির নাম। রাত্রি বয়ে গেছে, একটা এমন অনেক রাত্রি বয়ে গেছে তার এইসব চরিত্রদের কাঁধে হাত রেখে।
এই শহরের পুরনো রাত্রিতে অনেকক্ষণ জেগে থাকত স্বল্প সংখ্যক বিরিয়ানির দোকান। নরকের ঢেউ ভেঙে পড়ত ইংলিশ রোড আর কান্দুপট্টির পতিতালয়ে। সেই শহরের এক কবি বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়ে সারা দিন উদভ্রান্ত ঘুরেফিরে শেষে রাত্রি এলে ঠাঁই নিতেন পরিচিত এক পতিতার ঘরে। রাত জেগে কবিতা লিখতেন সেখানে। তার কবিতার প্রথম পাঠক হতেন সেই ঘরের মালকিন। শাহবাগ মোড়ে কবি, সাহিত্যিক আর সাংবাদিকদের ছোট আড্ডা জমে উঠত। ওই পথে বাড়ি ফেরার সময় কেউ কেউ নেমে পড়তেন আড্ডার লোভে। কারুর আবার সেটা ছিল সাকুরা বার থেকে বাড়ি ফেরার সময়। শাহবাগ মোড়ে সেইসব আড্ডার ম্যারাথন সময়কে বাঁধতে ঘড়ির কাঁটাও হয়তো কুলিয়ে উঠতে পারত না। সেইসব আড্ডার কনিষ্ঠ সদস্য হয়ে দেখেছি, শহরের আলো নিভলে, ঘুম এলে নাগরিক চোখে দিনের ক্লান্তি শেষে, তাদের তুখোড় হৈ-হল্লার রাত্রি চারপাশে কেমন করে নতুন আলো জ্বালত।
শাহবাগ থেকে খুব বেশি দূরে নয় ইস্কাটন। সেখানে একটি গ্যাসের চুলা বিক্রির দোকানে গভীর রাত্রির ঢেউ আছড়ে পড়ার আগেই নিয়মিত আড্ডাধারীরা তাদের গল্প গুছিয়ে চলে যেতেন। সেই দোকানটার সামনে রাখা টুলে বসে প্রায় তিনশ পয়ষট্টি দিন আড্ডা দিতেন প্রখ্যাত অভিনয়শিল্পী প্রয়াত গোলাম মুস্তাফা, আমীরুল হক চৌধুরী ছাড়াও আরও অনেকে। সেই শহরের ছিমছাম রাত্রির হাওয়ায় তাদের গল্প আর হাসি আজও যেন ওড়ে এখনকার ইস্কাটনের ভিড়ভর্তি পথে। বলছিলাম, তখন রাত্রি নিজেই এক চরিত্র হয়ে উঠত এইসব মানুষের কাঁধে ভর দিয়ে।
এখন এই শহর শুনি ঘুমায় না। দামি হোটেল বাড়ির অন্দরমহল, আসা-যাওয়ায় ব্যস্ত পানশালার দরজায়, মূল্যবান আসবাবপত্রে ঠাসা কোনো অফিসের বিশেষ কামরায় অথবা ক্লাবগুলোতে রাত্রি জেগে থাকে। কিন্তু এরকম রাত্রিগুলো চরিত্র তৈরি করতে ব্যর্থ। রাতে একজন আহমদ ছফার রিকশা ভ্রমণ, কোনো নিভু নিভু ভাত খাওয়ার দোকানে ছাত্রনেতাদের নৈশ আহারের টেবিলে জমে ওঠা রাজনৈতিক তর্কের নিম্নচাপ, মোহামেডান বা ভিক্টোরিয়া ক্লাবে জুয়া খেলতে আসা কিছু মানুষের দাঁতে দাঁত চেপে শেষ দান পর্যন্ত টিকে থাকার কাহিনিগুলো আর তোলপাড় তোলে না। অনেক আলো এখন এই শহরে। উড়াল সেতুর যুগে ঢুকে পড়েছে মানুষ। ছুটছে বাঘের মতো চোখ জ্বেলে ভিনদেশি মূল্যবান গাড়ি। পাঁচতারা হোটেল আর টেলিভিশন চ্যানেলের টক শো’র টেবিল এখন সরগরম। কিন্তু রাত্রি? রাত্রির চরিত্র হয়ে ওঠার গল্প? সেই সময়ের রাত্রির সমুদ্র তার ঢেউ গুটিয়ে নিয়ে হারিয়ে গেছে।
একটি রোড বদলে দেবে বাকলিয়া ও কালুরঘাট এলাকার মানুষের জীবনযাত্রা। কর্ণফুলীর তীর ঘেঁষে নির্মাণাধীন চাক্তাই-কালুরঘাট রোড নিয়ে উচ্ছ্বসিত হামিদচর শাহজীপাড়ার ৫৫ বছর বয়সী বাসিন্দা মোহাম্মদ সোলেমান। জীবনভর জোয়ার-ভাটার পানিতে অর্ধনিমজ্জিত এলাকায় উঁচু রাস্তা দেখে তিনি খুব খুশি। প্রায় আট কিলোমিটার দীর্ঘ এই রোড দিয়ে অসংখ্য গাড়ি চলাচল করবে। শহরে যেতে দুর্ভোগ পোহাতে হবে না। মোহাম্মদ সোলেমানের মতো নদীতীরের হাজারো মানুষ প্রতিদিন রাস্তার নির্মাণকাজ দেখছেন। তাদের সবার একই কথা, পুরো এলাকা বদলে যাবে।
গত বুধবার চাক্তাই থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত নদীতীরের চার লেনের নির্মাণকাজ দেখতে গিয়ে দেখা গেল, রোডের মাটি ভরাটের কাজ প্রায় শেষ। এখন চলছে পেভমেন্টের কাজ। জোয়ারের পানি থেকে নদীতীরের এলাকাকে রক্ষায় ১২টি খালের মুখে স্লুইসগেট করা হবে। ১০টি গেট নির্মাণ শেষ, বাকি আছে মাত্র দুটি। এগুলোরও নির্মাণ চলছে। এবারের বর্ষার আগেই, জুনে পাঁচটি খালের স্লুইসগেট চালু করা হবে।
প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী রাজীব দাশ বলেন, ‘রাস্তা নির্মাণের কাজ শেষ করতে কিছুটা সময় লাগবে। বর্ষার আগেই পাঁচটি স্লুইসগেট চালু করে দেব। ফলে এই এলাকার মানুষ জলাবদ্ধতা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পাবে।’
কোন পাঁচটি চালু করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চাক্তাই খাল, রাজাখালী খাল, নোয়াখাল, বলিরহাট খাল ও ডোমখালী খালের মুখের স্লুইসগেট প্রস্তুত। এগুলো জুনের আগেই সচল হবে।’
বাকি সøুইসগেটগুলোর কাজ চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সেগুলোর কাজ চলতি বছরে শেষ করা হবে। এখন রাস্তার কাজ চলছে পুরোদমে।’
দেখা গেছে, কর্ণফুলী নতুন ব্রিজ থেকে কল্পলোক পর্যন্ত অংশের কাজ কিছুটা পিছিয়ে আছে। এখনো কাজ শুরু হয়নি ইস্পাহানি থেকে কালুরঘাট ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার অংশের কাজ।
এই অংশের কাজ কবে নাগাদ শুরু হবে জানতে চাইলে প্রকৌশলী রাজীব দাশ বলেন, ‘ভূমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। অধিগ্রহণ শেষ হলেই রাস্তার কাজ শুরু হবে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা কাজ শেষ করতে পারব আশা করছি।’
আগামী বছরের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, নদীর ঢেউ থেকে রাস্তাটিকে রক্ষা করতে প্রায় ২৩ লাখ সিমেন্টর ব্লক নির্মাণ করা হচ্ছে। বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার খোকন নামের এক শ্রমিক আপন মনে সিমেন্টের ব্লক নির্মাণ করছেন। তিনি কোনি (রাজমিস্ত্রির কাজে ব্যবহৃত উপকরণ) দিয়ে সিমেন্ট, পাথর ও বালির মিশ্রণ সমান করছেন। খোকন বলেন, ‘এখানে বেশির ভাগ শ্রমিকের বাড়ি উত্তরবঙ্গে। আমরা এখন ব্লক বানাচ্ছি। এগুলো নদীর দিকের অংশে দেওয়া হবে।’ রোডের কালুরঘাট অংশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠবে।
প্রকল্পের অগ্রগতি প্রসঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘চাক্তাই থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত প্রকল্পটি শুধু চার লেনের একটি সড়ক নয়। সড়ক সুবিধার পাশাপাশি জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকেও নগরবাসীকে রক্ষা করবে এটি। প্রকল্পের আওতায় ১২টি স্লুইসগেট রয়েছে। জলাবদ্ধতাবিষয়ক মেগা প্রকল্প, চাক্তাই থেকে কালুরঘাট প্রকল্প এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পের আওতায় ৪০টি স্লুইসগেটের নির্মাণ শেষ হলেই নগরবাসী জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবে।’
উল্লেখ্য, চাক্তাই-কালুরঘাট সড়ক সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩০ ফুট উঁচু। সড়কটি একনেকে অনুমোদন পায় ২০১৭ সালে। ডিপিপি অনুযায়ী, ২ হাজার ৩১০ কোটি টাকার এই প্রকল্প ২০২০ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল। নানা কারণে প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। পরে প্রকল্প সংশোধন করে বাজেট ২ হাজার ৭৭৯ কোটি টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়। সড়কটি হলে শাহ আমানত সেতু থেকে কালুরঘাট সেতু পর্যন্ত নদীর তীর ঘেঁষে মানুষ যাতায়াত করতে পারবে। পুরো নদীতীর নগরবাসীর বিনোদনের স্পটে পরিণত হবে।
রোজার প্রথম দিনে র্যাব ১০ ভেজাল বিরোধী অভিযান চালিয়ে সাড়ে ১১ লাখ টাকা জরিমানা করেছে। গতকাল শুক্রবার ঢাকার কদমতলী, ডেমরা ও কেরানীগঞ্জ এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়।
একইদিন অসাধু ব্যবসায়ীদের মূল্যবৃদ্ধির পাঁয়তারা বন্ধে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অভিযান চালিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
র্যাব-১০ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ভেজাল খাদ্যদ্রব্য, অনুমোদনহীন নকল বৈদ্যুতিক পাখা, ওষুধ উৎপাদন, মজুদ ও বিক্রি করায় র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে।
র্যাব এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাজহারুল ইসলাম ও র্যাব-১০ এর সমন্বয়ে একটি দল ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে। এসময় বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটের (বিএসটিআই) প্রতিনিধির উপস্থিতিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত অনুমোদনহীন নকল বৈদ্যুতিক পাখা, ওষুধ এবং ভেজাল খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুদ ও বিক্রি করার অপরাধে ৭টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করে। এর মধ্যে হামজা ফুড প্রোডাক্টসকে ২ লাখ টাকা, কেয়ার ল্যাবরেটরিজকে ৩ লাখ টাকা, কসমো প্লাস্টিককে ৫০ হাজার টাকা, শান্ত ফুড প্রোডাক্টসকে ৫০ হাজার টাকা, মিমি এ্যাগ্রো ফুড প্রোডাক্টসকে ৩ লাখ টাকা, জনতা করপোরেশনকে ১ লাখ পঞ্চাশ ৫০ টাকা ও এস কে নুর ফুড প্রোডাক্টসকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে ভ্রাম্যমাণ আদালত আনুমানিক ৫০ হাজার টাকা মূল্যের নকল বৈদ্যুতিক পাখা, ওষুধ ও ভেজাল খাদ্যদ্রব্য জব্দ ও ধ্বংস করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, বেশ কিছুদিন ধরে এই অসাধু ব্যবসায়ীরা অনুমোদনহীন নকল বৈদ্যুতিক পাখা, ওষুধ এবং ভেজাল খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন মজুদ ও বাজারজাত করে আসছিল।
এদিকে গতকাল সকাল পৌনে ১১টার দিকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারের নেতৃত্বে কারওয়ান বাজারে অভিযান চালানো হয়।
এ সময় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা কারওয়ান বাজারের মুরগির দোকান ঘুরে দেখেন এবং সরেজমিনে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে পণ্যের মূল্য পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হন।
অভিযানকালে সালাম নামের এক মাছ বিক্রেতাকে ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। এ ছাড়াও আলমগীর ও হাসান নামের দুই লেবু বিক্রেতাকে যথাক্রমে ৫০০ ও ১০০ টাকা জরিমানা করা হয়।
অভিযানের শুরুতে অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘রমজানে কিছু বিশেষ সবজির (বেগুন, আলু) দাম বেড়ে যায়। সে বিষয়ে আমরা আজকে (গতকাল) তদারকি করব। এছাড়া মুদি সামগ্রী ও মুরগির নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে কি না সেটি তদারকি করব।’ রমজানে সবজির দাম নিয়ে বিক্রেতারা যাতে ভোক্তাদের ঠকাতে না পারে এ জন্য জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তরের বিভিন্ন টিম অভিযান পরিচালনা করবে বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনের উপনির্বাচনে ‘নৌকা’ প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেতে আগ্রহীদের অনেকেই অবস্থান করছেন ঢাকায়। মনোনয়ন ফরম সংগ্রহকারী ২৭ জনের কার হাতে যাবে নৌকার বৈঠা, তা জানা যাবে আজ শনিবার।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়ে আজ শনিবার সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা আহ্বান করা হয়েছে। ওই সভাতেই মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হবে।
এখন পর্যন্ত আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম, প্রয়াত সাংসদ মোসলেম উদ্দিন আহমেদের সহধর্মিণী শিরীণ আহমেদ, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি এস এম আবুল কালাম ও আরেক প্রয়াত এমপি মাঈনুদ্দিন খান বাদলের সহধর্মিণী সেলিনা খান।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ২৭ এপ্রিল ওই আসনের উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারিত রয়েছে। নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দিতে গত সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত তিন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম বিক্রি করা হয়। তিন দিনে ২৭ জন মনোনয়ন পত্র ক্রয় করেন।
স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, মাত্র ছয় মাস মেয়াদের জন্য অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাকর্মীর রেকর্ড হয়েছে। আসনটিতে অতীতে অনুষ্ঠিত নির্বাচন কিংবা উপনির্বাচনে কখনো এত বেশি মনোনয়নপ্রত্যাশী দেখা যায়নি। এবার মনোনয়ন ফরম গ্রহণকারীদের মধ্যে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী যেমন রয়েছেন, তেমনি অতীতের দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এমন লোকজনও রয়েছেন। তবে এদের মধ্যে অল্প কয়েকজনকে ঘিরেই চলছে নানা আলোচনা।
আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে আলোচনার শীর্ষে থাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম বিগত সংসদ নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু আসনটি মহাজোটের শরিক দল জাসদের মাঈনুদ্দিন খান বাদলকে ছেড়ে দেওয়ায় ওই সময় তিনি মনোনয়নবঞ্চিত হন। বাদলের মৃত্যুর কারণে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে উপনির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন ছালাম। কিন্তু দল থেকে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমেদকে সেখানে মনোনয়ন দেওয়া হয়।
প্রয়াত এমপি মোসলেম উদ্দিন আহমেদের সহধর্মিণী শিরীণ আহমদের নামও রয়েছে আলোচনায়। মনোনয়নপত্র বিতরণের দ্বিতীয় দিন বোয়ালখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে সঙ্গে নিয়ে তিনি মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেন। এরপর থেকে তিনি আলোচনার শীর্ষে চলে আসেন।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি এস এম আবুল কালাম ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে ওই আসন থেকে নৌকার প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন। কিন্তু ওই সময় তিনি বিএনপি প্রার্থী এম মোর্শেদ খানের কাছে হেরে যান।
প্রয়াত সংসদ সদস্য বাদলের মৃত্যুর পর ২০২০ সালের উপনির্বাচনেও মনোনয়ন চেয়েছিলেন তার সহধর্মিণী সেলিনা খান। এবারও মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেছেন তিনি।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা জেলা কমিটির পক্ষ থেকে কারও মনোনয়নের জন্য প্রস্তাব করিনি। দলের মনোনয়ন পেতে আগ্রহীরা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। আজ সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভায় তা চূড়ান্ত করে সভা শেষে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে।’ তিনি বলেন, মনোনয়ন চাওয়ার অধিকার সবার আছে। কিন্তু ২৭ জনের মধ্যে মনোনয়ন পাবেন তো একজন। তাই দল যাকে মনোনয়ন দেবে, তার পক্ষেই সবাইকে কাজ করতে হবে।
আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী অন্যান্যের মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ মনোয়ার হোসেন, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাইফুদ্দিন আহমেদ রবি, মো. সাইফুল ইসলাম, মোহাম্মদ খোরশেদ আলম, আশেক রসুল খান, এস এম কফিল উদ্দিন, এটিএম আলী রিয়াজ খান, মোহাম্মদ জাহেদুল হক, জহুর চৌধুরী, সুকুমার চৌধুরী, হায়দার আলী চৌধুরী, মোহাম্মদ মনছুর আলম, আহমেদ ফায়সাল চৌধুরী, বিজয় কুমার চৌধুরী, মো. আবু তাহের, কফিল উদ্দিন খান, মুহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, মো. এমরান, মোহাম্মদ আবদুল কাদের, এ এ নুরুল ইসলাম, মো. মাহবুব রহমান এবং মো. আরশেদুল আলম।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ১৪ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোসলেম উদ্দিন আহমদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আবু সুফিয়ান। বর্তমান সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার দলীয় সিদ্ধান্ত থাকায় এবারের নির্বাচনে বিএনপির কোনো প্রার্থী থাকছে না বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান।
অনিয়ন্ত্রিত জীবনধারা, অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া এবং শরীরচর্চার অভাবের বেশির ভাগ মানুষেরই হার্ট খারাপ হচ্ছে। উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে 'খারাপ' কোলেস্টেরল— এ সব মানুষের নিত্যসঙ্গী। তবে রক্তের বিভিন্ন উপাদানের মাত্রা যদি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে যায়, তা হলে ওষুধ তো খেতেই হবে। সঙ্গে পছন্দের প্রায় সব খাবারেই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়ে যাবে। তবে পুষ্টিবিদেরা বলছেন, রোজকার খাবারে কিছু পরিবর্তন আনলেই পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই হার্টের যাবতীয় সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।
বিরিয়ানি হোক বা পোলাও সঙ্গে মাটনের কোনো পদ ছাড়া জমে না। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা বলছেন, এ ধরনের 'লাল' মাংস খেলে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। তাই খাসির বদলে মুরগির মাংস খাওয়া তুলনায় স্বাস্থ্যকর।
অনেক চেষ্টা করেও ভাজাভুজি খাবারের লোভ সামলাতে পারছেন না। এই অভ্যাসের ফলেই কিন্তু অজান্তেই বেশির ভাগ মানুষের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে চলেছে। পুষ্টিবিদেরা বলছেন, ভাজার বদলে যদি বেকড খাবার খাওয়ার অভ্যাস করা যায়, তবে এই সমস্যা অনেকটাই ঠেকিয়ে রাখা যেতে পারে।
সকালের নাশতায় পাউরুটি খান অনেকেই। কিন্তু পুষ্টিবিদেরা বলছেন, পাউরুটির ওপর মাখন দেওয়ার অভ্যাস ছাড়তে হবে। শুধু পাউরুটি খেতে যদি সমস্যা হয়, তবে ডিম ফেটিয়ে তার মধ্যে পাউরুটি ডুবিয়ে, তা বেক করে নিন। স্বাদ এবং স্বাস্থ্য দুই-ই থাকবে।
মন খারাপ হলে মাঝে মধ্যেই আইসক্রিম খেয়ে ফেলেন। তৎক্ষণাৎ মন ভালো করতে এই টোটকা সত্যিই কার্যকর। কিন্তু সমস্যা হলো আইসক্রিম খাওয়ার অভ্যাসে রক্তে বাড়তে থাকে কোলেস্টেরল। পরবর্তীতে যা হৃদরোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
গরমে তেষ্টা মেটাতে বার বার ঠাণ্ডা পানীয়তে চুমুক দিচ্ছেন। কিন্তু এ পানীয়ে থাকা কৃত্রিম শর্করা যে হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করছে, টের পেয়েছেন কী? পুষ্টিবিদেরা বলছেন, এই তেষ্টা মেটাতে এবং স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে নরম পানীয় না খেয়ে ফল থেকে তৈরি রস খেতে পারেন।
পাকিস্তানের প্রস্তাবিত হাইব্রিড মডেলে নয়, এশিয়া কাপ হবে একটি দেশে। আর সেটা শ্রীলংকা। পাকিস্তান তাতে অংশ না নিতে চাইলে তাদেরকে ছাড়াই হবে এশিয়া কাপ।
ভারতের তরফ থেকে পাকিস্তানকে এমন বার্তা দেয়া হয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে কলকাতাভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক দা টেলিগ্রাফ।
বিসিসিআই সেক্রেটারি জয় শাহ যিনি এসিসিরও প্রেসিডেন্ট পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে বলেছেন, শ্রীলংকায় এশিয়া কাপ খেলতে রাজি আছে ভারতসহ চার পূর্ণ সদস্য। বিষয়টি নিয়ে এসিসির নির্বাহী সভায় আলোচনা করা হবে। পাকিস্তান রাজি না হলে ৫ দল নিয়েই হবে এশিয়া কাপ।
বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ম্যাচ অন্য কোনো দেশে আয়োজনে পিসিবি চেয়ারম্যান নাজমা শেঠির দাবিও নাকচ করে দিয়েছেন জয় শাহ। টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, পাকিস্তানকে ভারতেই খেলতে হবে, না হলে না খেলবে। এ বার্তা পিসিবি এবং আইসিসির দুই কর্মকর্তা যারা সম্প্রতি পাকিস্তান সফর করেন তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছে বিসিসিআই।
রিয়াল মাদ্রিদের সংগে ১৪ বছরের সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলছেন। ৪০ কোটি ইউরো চুক্তিতে সৌদি প্রো লিগের ক্লাব আলো ইত্তিহাদে যোগ দিচ্ছেন।
ক'দিন ধরে এমন কথা শোনা যাচ্ছিল করিম বেনজেমাকে নিয়ে। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন -এমন কথাও চাউর হয় স্পেনের সংবাদ মাধ্যমে।
কিন্তু সব কিছুতে জল ঢাললেন ব্যালন ডি অর জয়ী। স্পেনের গণমাধ্যম মার্কার দেয়া মার্কা লিজেন্ড এওয়ার্ড নিতে গিয়ে বললেন, 'আমি যখন রিয়ালেই আছি তখন ভবিষ্যৎ নিয়ে কেনো বলবো। ইন্টারনেটে যা প্রচার হচ্ছে তা ঠিক না। আমি এখানে ভালো আছি। শনিবার রিয়ালের ম্যাচ আছে, সব ফোকাস আমার সেই ম্যাচকে নিয়ে।'
ক্লাব প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজকে তাকে রিয়ালে আনার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বেনজেমা বলেন, '২১ বছরের আমি এই ক্লাবে যোগ দিয়েছিলাম। এই ক্লাবে খেলার মতো আর কিছু হয় না, সান্তিয়াগো বার্নাবু দারুন এক জায়গা।'
রিয়ালের সংগে চুক্তির মেয়াদ এ মাসেই শেষ হচ্ছে বেনজেমার।
পলিথিন বা একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক, বিভিন্ন ধরনের পলিথিনজাত মিনিপ্যাকের উৎপাদন, ব্যবহার ও এর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সবগুলোই সমস্যা। পলিথিন উৎপাদন ও এর অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের মাধ্যমে বাতাসে যেমন কার্বন নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যায়, অন্যদিকে এর ব্যবহার প্রাণিকুল ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত। প্লাস্টিকের কণা এখন মানুষের রক্তে, মায়ের দুধে, সামুদ্রিক মাছে। শুধু ব্যবহার সম্পর্কিত সমস্যা না, পলিথিনের মাধ্যমে সৃষ্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আরও বেশি সমস্যাসংকুল। কারণ এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, কৃষির উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে, শহরের নর্দমা বন্ধ করে দিচ্ছে তা আবার রোগ-ব্যাধি ছড়াচ্ছে, জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে এবং সবশেষে শহরকে বসবাসের অনুপযোগী করে দিচ্ছে।
এতসব সত্ত্বেও পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ না করা বা বন্ধ করতে না পারার সংকট কোথায় সেটা বুঝতে আমাদের সমস্যা হয়। পলিথিন বন্ধে আইন আছে, নানা ধরনের প্যাকেজিংয়ে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাও অনেক দিন হলো। অন্যদিকে বেশ কিছুদিন ধরে পাটের ব্যাগ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে কিন্তু তা সহসাই হচ্ছে না। ‘সোনালি ব্যাগ’ নিয়ে অনেক ঢাকঢোল পেটানো হয়েছে কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সেই সোনালি স্বপ্ন কেমন জানি ফ্যাকাশে হয়ে আসছে এতদিনে।
পলিথিনের ব্যবহার শহরাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি যার অনেকটাই অভ্যাসগত কারণে। শহরের মানুষের পলিথিনের ওপর অভ্যস্ততা যেমন বেশি, তেমনি তারা ভুক্তভোগীও বেশি। রাস্তাঘাট, ড্রেন নোংরা হয়ে তো থাকেই, বাড়তি পাওনা দুর্গন্ধ, তৈরি হয় জলজট ও ডেঙ্গুর মতো রোগবালাই। বাসাবাড়িতে পলিথিনের ব্যবহার তো আছেই, পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য, বেকারিজাত পণ্যের পলিথিনের ব্যবহার ও পলিথিনের মোড়ক যত্রতত্র নিক্ষেপই এই অবস্থার জন্য দায়ী। শুধু ঢাকা নয় অন্যান্য ছোট-বড় সব শহরে প্রায় একই অবস্থা। আর এগুলোই হচ্ছে পলিথিন নির্ভর অর্থনীতির অনুষঙ্গ কিন্তু এর অনর্থনীতি হচ্ছে পলিথিনের কারণে পরিবেশদূষণ ও জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি যার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি। সাধারণভাবে পলিথিন ব্যবহারের ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক মূল্যমান নির্ধারণ করা হয় না। তবে দূষণের মাত্রা এখন এমন অবস্থায় পৌঁছেছে তাতে পলিথিনের অর্থনীতির থেকে এর ক্ষয়ক্ষতির অর্থনীতি যে অনেক বড় তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আসছে ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হবে। জলবায়ুর পরিবর্তনের পেছনে অন্যতম অনুঘটক হচ্ছে পরিবেশ দূষণ। অর্থমন্ত্রী তার এবারের বাজেট (২০২৩-২৪) বক্তৃতায় জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় অভিযোজন ও প্রশমন উভয় ক্ষেত্রে উদ্যোগ গ্রহণ করার কথা বলেছেন, পরিবেশ সংরক্ষণে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ২০২৩ এর উল্লেখ করেছেন কিন্তু পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে দৃশ্যমান কোনো রূপকল্প এবারের বাজেটে উল্লেখ করতে সমর্থ হননি। এবারের পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘প্লাস্টিক দূষণের সমাধানে শামিল হই সকলে’। গত বছরের এই দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘একটাই পৃথিবী’। পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের যত্রতত্র ব্যবহার আমাদের এই একমাত্র পৃথিবীকে দূষণের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে আইন হয়েছে ২০০২-এ এবং আজ ২০২৩ সাল, এই দীর্ঘ ২১ বছরেও এই আইনের বাস্তবায়ন করা যায়নি। যদিও এবারের বাজেট বক্তৃতায় প্লাস্টিকের তৈরি টেবিলওয়্যার এর মূল্য সংযোজন কর বৃদ্ধি করে ৫ শতাংশ থেকে ৭.৫ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। এখানে পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্ল্যাস্টিক সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। ধরেই নেওয়া যায় শুল্ক বৃদ্ধির এই হার কোনোভাবে পলিথিন নিরুৎসাহিত করার জায়গা থেকে না বরঞ্চ কিছুটা বাড়তি কর আদায়ের চিন্তা থেকে।
পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি সস্তা পলিথিনের ব্যবহার টেকসই ভোগের ধারণার জন্যও কোনোভাবে সহায়ক না। বরঞ্চ এটা এমন এক ধরনের মনস্তত্ত্ব তৈরি করে যা শুধু পরিবেশকেই ধ্বংস করে। যদিও বিশ্বব্যাপী টেকসই ভোগের ধারণার ওপর ভিত্তি করে এখন ‘সার্কুলার অর্থনীতির’ ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। সার্কুলার অর্থনীতি শুধু অপচয় কমায় না, প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা, দূষণরোধ, বর্জ্য থেকে তৈরি পরিবেশদূষণ ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারে। তাই পরিবেশগত ঝুঁকি, কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের অর্থনীতিকে সার্কুলার অর্থনীতিতে রূপান্তরের জন্য বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করছে। অন্যদিকে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই পৃথিবী গড়ে তোলা এবং এ সংশ্লিষ্ট অভীষ্ট ২০৩০ সমূহ অর্জনে সার্কুলার অর্থনীতি অন্যতম হাতিয়ার।
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা শহরে রাস্তায় কোনো পেট বোতল পড়ে থাকতে দেখা যায় না। এর কারণ হচ্ছে এখন পেট বোতলের প্রায় শতভাগ রিসাইকেল করা হয় এবং পেট বোতল সংগ্রহের জন্য অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে হলেও একটি সংগ্রহ-লাইন তৈরি হয়েছে। কিন্তু পলিথিনের ক্ষেত্রে তেমনটা দেখা যায় না। তবে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার সার্কুলার ইকোনমির ধারণার সঙ্গেও একেবারে মানানসই না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রযুক্তিগতভাবে একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিন রিসাইকেল করা অসম্ভব না হলেও এটি একটি জটিল এবং অর্থনৈতিকভাবে ব্যয়বহুল যে কারণে পেট বোতলের মতো রাস্তা থেকে পলিথিন সংগ্রহ করতে কাউকে দেখা যায় না উলটো রাস্তাঘাটে এখানে সেখানে পলিথিন পড়ে থাকে।
পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের অনর্থনীতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এখন প্রথম দরকার এর ব্যবহার বন্ধ করা, এর ব্যবহারকে অনেক বেশি দামি করে ফেলতে হবে আর এর প্রতিফলন থাকতে হবে বাজেটে। দ্বিতীয়ত, সার্কুলার অর্থনৈতিক চর্চার উৎসাহিত করার জন্য পরিকল্পনা, দক্ষতা বৃদ্ধি ও বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি, পলিথিনের বিকল্প সোনালি ব্যাগের মতো উদ্যোগগুলোকে সরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ ও বেসরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে প্রয়োজনীয় উৎসাহ ও প্রণোদনা প্রদান করতে হবে। সরকার প্রতি বছর বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবেশ দিবস পালন করে কিন্তু দিবস পালন শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলেই হবে না এর উদ্যোগ কতটুকু বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে তার ওপরও নজর দিতে হবে। তা নাহলে পলিথিনের অর্থনীতির নামে শুধু অনর্থনীতিকে বাড়িয়ে তোলা হবে, আর সেটা হবে টেকসই অর্থনীতি তৈরির সম্ভাবনার অপমৃত্যু।
লেখক : উন্নয়নকর্মী ও কলামিস্ট
গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহে হাঁসফাঁস অবস্থা মানুষের। এমন অবস্থায় প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছে না কেউ। তাই বলে গরমের ভয়ে ঘরে বসে থাকলে তো আর জীবন চলবে না। শিক্ষার্থীদের ক্লাসে যেতে হবে। আর কর্মজীবীদের অফিস ও অন্যান্য কর্মস্থলে। অনেকেরই এই গরমেও কাজের প্রয়োজনে সারাদিন কেটে যায় বাইরে ঘুরে ঘুরেই। গরমকে মোকাবিলা করতে সঙ্গে এই প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো রাখলেই গরমের কাছে নিজেকে হার মানতে হবে না।
পানি পান
গরমের সময় শরীর থেকে স্বাভাবিক ভাবে অনেক বেশি ঘাম বের হয়ে থাকে। যার ফলে দেখা দিতে পারে পানি শূন্যতা। শরীরের মধ্যে যদি পানির পরিমাণ কমে যায় তাহলে ডিহাইড্রেশন হতে পারে। পানি শূন্যতা দূর করতে হলে প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি খেতে হবে।
বিশুদ্ধ পানি খাওয়ার পাশাপাশি ফলের জুস কিংবা কচি ডাবের পানি খেতে পারেন। দেহের ত্বককে ভালো রাখতে পানি, শরবত বা জুস পানের বিকল্প নেই। গরমে সময় প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ লিটার বিশুদ্ধ পানি খেলে ডিহাইড্রেশন এবং পানি শূণ্যতা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
খাবার স্যালাইন
গরমের সময় ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় লবণ বের হতে থাকে যার ফলে শরীর অনেক দুর্বল হয়ে যায়। এ থেকে মুক্তি পেতে খাবার স্যালাইন খেতে পারেন। বিকেল বেলা খাবার স্যালাইন খেলে অতিরিক্ত গরমেও শরীরে সতেজতা ফিরে আসে। আবার অনেকেই স্বাদযুক্ত স্যালাইন খান যেমন, টেস্টি স্যালাইন। ভুল করেও এসব খাবেন না। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হলো ওরস্যালাইন । তবে আপনাদের মধ্যে যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তারা খাবার স্যালাইন খাওয়ার আগে ভালো কোনো ডাক্তারের মতামত নেওয়া উচিত।
রেড মিট পরিহার করুন
অতিরিক্ত গরমের সময় গরু-ছাগলের মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ গরমের সময় বা অতিরিক্ত গরমের সময় গরুর মাংস খেলে শরীরের তাপমাত্রা অনেকাংশে বেরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গরু-ছাগলের মাংস ছেড়ে মাছ খেতে পারেন। আর অতিরিক্ত গরমে অবশ্যই অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার থেকে দূরে থাকুন।
সবুজ শাক সবজি
গরমের সময় শরীরকে সুস্থ রাখতে বেশি বেশি করে সবুজ শাক সবজি খেতে পারেন। সবুজ শাক সবজিতে অধিক পরিমাণে ভিটামিন মিনারেল এবং খনিজ উপাদান থাকে। এতে করে অতিরিক্ত গরমেও শরীর অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।তাছাড়াও খেতে পারেন তরমুজ যা শরীরে এনার্জি দিতে পারে।
টক জাতীয় ফল
প্রচুর গরমে সুস্থ থাকার উপায় হিসেবে টক জাতীয় ফল খেতে পারেন। যেমন: কামরাঙ্গা, লেবু, তেতুল, আমরা ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে অতিরিক্ত টক ফল খাওয়া ঠিক নয়। যদি কারো এসিডিটির সমস্যা থেকে থাকে তবে টক জাতীয় ফল খাওয়া হতে বিরত থাকুন। টক জাতীয় ফল খালি পেটে খাওয়া যাবে না। এতে করে আরো বেশী অসুস্থ হয়ে পারতে পাবেন।
টক দই
অতিরিক্ত গরমে সুস্থ থাকতে হলে টক দই খেতে পারেন। যারা করা রোদে কাজ করেন বিশেষ করে তাদের জন্য অনেক উপকারী হলো টক দই। রোদের প্রচুর তাপ থেকে শরীরকে কিছুটা হলেও রক্ষা করবে টক দই। টক দই শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে অনেকাংশে সাহায্য করে।
প্রতিদিন গোসল করুন
গরমের সময় প্রতিদিন এক বার করে হলেও গোসল করতে হবে। যদি পারেন তবে দিনে ২ বার গোসল করতে পারেন। গোসল করার ক্ষেত্রে একটু সাবধান থাকতে হবে। বাহির থেকে এসে সাথে সাথে গোসল করতে যাবেন না। একটু বিশ্রাম নিয়ে তারপর গোসল করতে যাবেন। কারণ হঠাৎ করে গরম থেকে এসে গোসল করলে ঠাণ্ডা লাগতে পারে।
ঘরেই অবস্থান করুন
অতিরিক্ত গরমে বিশেষ কোনো প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বাহিরে যাবেন না । যদিও বিভিন্ন কারণে বাহিরে যেতে হয়। সেক্ষেত্রে রোদ থেকে বাঁচতে প্রয়োজনে ছাতা ব্যবহার করতে পারেন। যতটুকু সম্ভব ছায়াযুক্ত স্থানে থাকার চেষ্টা করুন।
শারীরিক পরিশ্রম কম করুন
গরমের সময় অনেকেই আছে অতিরিক্ত ব্যায়াম করে থাকেন এমনটি করা যাবে না কারণ অতিরিক্ত গরমে শরীরের তাপমাত্রা একটু বেশি হয়ে থাকে।
পাতলা সুতি কাপড় পরিধান করা
গরমের সময় পাতলা সুতি কাপড় পরা দরকার। কারণ সাদা কাপড় তাপ শোষণ করতে পারে না বরং তাপের প্রতিফলন ঘটায় ও গরম কম লাগে।
পারফিউম ব্যবহারে সতর্ক থাকুন
অতিরিক্ত গরমে ঘামের গন্ধ থেকে বেচে থাকার জন্য অনেকেই সুগন্ধি ব্যবহার করে থাকে। তবে অতিরিক্ত গরমে পারফিউম ব্যবহার না করাটাই উত্তম কাজ। কারণ, পারফিউম গরম লাগা বৃদ্ধি করে দেয়।
যদিও ব্যবহার করতে হয় তাহলে হালকা গন্ধের সুগন্ধি ব্যবহার করতে পাবেন। বাজারে কিছু সুগন্ধি পাওয়া যায় যেগুলো ব্যবহার করলে ঠাণ্ডা লাগে। সেগুলো ব্যবহার করলে আরো ভালো হয়।
ধূমপান পরিত্যাগ করা
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা কিনা ধূমপান করে থাকি। ধূমপান করলে শরীরের তাপমাত্রা তুলনামূলক ভাবে বেড়ে যায়। তাই প্রচন্ত গরমে সুস্থ থাকতে হলে ধূমপান পরিত্যাগ করতে হবে। যদিও এই অভ্যাসটি সহজে পরিত্যাগ করা যায় না। তাই যতটুকু পারেন ধূমপান কম করার চেষ্টা করুন।
চা কফি পরিত্যাগ করুন
চা, কফি বা অ্যালকোহল খেলে শরীরের তাপমাত্রা আরো বৃদ্ধি পায়। আর যদি অতিরিক্ত গরমে চা, কফি বা অ্যালকোহল খেয়ে থাকেন তাহলে শরীরের তাপমাত্রা অতিরিক্ত হারে বৃদ্ধি পাবে যার ফলে হতে পারে হিটস্ট্রোক। তাই গরমের সময় চা কফি বা অ্যালকোহল খাওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে।
শান্ত থাকুন
মন মেজাজ গরম থাকলে শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পায়। রাগের কারণে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং অতিরিক্ত গরমের ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় আর দুই তাপমাত্রা এক সঙ্গে হলে কি অবস্থা হতে পারে একবার হলেও সেটা ভেবে দেখবেন।
বিশেষজ্ঞরা অতিরিক্ত গরমে শান্ত থাকার জন্য মতামত দিয়ে থাকে। বিশেষ করে যাদের হার্টের সমস্যা আছে তাদের জন্য শান্ত থাকাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।