
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ভবনেই গণপূর্ত অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র (ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট) নেই। বহুতল ভবন নির্মাণের আগে এবং পরে তা বসতের বা ব্যবহারের উপযোগী কি না, তার জন্য দুই প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন বা ছাড়পত্র লাগে।
কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনগুলোর জন্য দুই প্রতিষ্ঠানের কোনোটির ছাড়পত্র নেই। অনুমোদন ছাড়াই চলছে বিশ্ববিদ্যালয়টির একাডেমিক ও আবাসিক কার্যক্রম।
অনুমোদন তথা ছাড়পত্র না নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও ওয়ার্কস দপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. হাফিজুর রহমান।
অনুমোদন না নিয়ে বিধি অমান্য করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ময়মনসিংহ বিভাগের উপপরিচালক মো. মতিয়ার রহমান।
দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনা ঘটলে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, সে বিবেচনা থেকেই ভবন নির্মাণ করা হয়। সব ঠিক থাকলেই ছাড়পত্র (ক্লিয়ারেন্স সনদ) দেওয়া হয়। সনদের বাইরে গিয়ে ভবন নির্মাণ এবং ব্যবহারের সুযোগ নেই। অভিযোগ এলে আমরা জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় সুরাহা করার চেষ্টা করব। তবে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের কাছ থেকে ক্লিয়ারেন্স নেয়নি।’
ময়মনসিংহ গণপূর্ত দপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়ার্কস ও প্ল্যানিং কমিটির সদস্য এ কে এম কামরুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান। তারা তাদের মতো সিদ্ধান্ত নেয়। তবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ক্লিয়ারেন্স নেওয়া দরকার। না নিলে আইন অমান্য করা হয়। আমি উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থাগ্রহণের লক্ষ্যে কাজ করব।’
একদিকে ভবনের অনুমোদন নেই, অন্যদিকে অগ্নিনির্বাপণের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব। দশতলা বঙ্গমাতা ছাত্রী হলে অগ্নিনির্বাপণের জন্য ৬২টি ছোট সিলিন্ডার রয়েছে। এসবের কোনোটিরই মেয়াদ তথা কার্যকারিতা নেই। এ কথা নিশ্চিত করেছেন হলটির প্রাধ্যক্ষ নুসরাত শারমিন তানিয়া।
অগ্নিনির্বাপণের প্রস্তুতি কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা চিন্তিত। বারবার বলেও সমাধান পাইনি। আমাদের কিছু সিলিন্ডার থাকলেও সেগুলোর মেয়াদ নেই। তা ছাড়া এসব কীভাবে ব্যবহার করতে হয়, সে বিষয়ে কাউকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। মোটকথা, এ ব্যাপারে প্রশিক্ষিত লোকবল নেই। কিছুদিন আগে হলে আগুন লাগার কথা ছড়িয়ে পড়লে আতঙ্কে হুড়োহুড়ি করে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়। আমরা নিদানের ব্যবস্থার জন্য প্রকৌশল দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করেই যাচ্ছি।’
ফায়ার সার্ভিস ও গণপূর্তের ছাড়পত্রহীন ভবনে হলের কার্যক্রম চলছে কি না জানতে চাইলে নুসরাত শারমিন বলেন, ‘আমাদের ডিপিডি ও প্রকৌশল দপ্তর বলেছে, সব অনুমোদন আছে। তবে তারা আমাদের কোনো ডকুমেন্ট দেয়নি।’
একই চিত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দশতলা বঙ্গবন্ধু হল, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবন, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ভবন, কলা ও বিজ্ঞান ভবনসহ শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ডরমিটোরি, কোয়ার্টার ও প্রশাসনিক ভবনের। এমনকি নির্মাণাধীন কোনো ভবনের নকশার অনুমোদন নেই।’
আগুন নেভানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫৪টি সিলিন্ডার থাকলেও অধিকাংশের মেয়াদ নেই; এসব ব্যবহারের নিয়মও কেউ জানে না। অগ্নিনির্বাপণের কোনো প্রশিক্ষণের আয়োজনও নেই। ১৫৪টি সিলিন্ডারের মধ্যে বঙ্গমাতা হলে ৬২টি, বঙ্গবন্ধু হলে ২২টি, সামাজিক বিজ্ঞান ও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে ৩০টি করে এবং প্রশাসনিক ভবনে ১০টি সিলিন্ডার রয়েছে বলে জানা গেলেও জায়গামতো সেগুলো দৃশ্যমান নয়।
চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি বঙ্গমাতা হলে আগুন লাগার গুজবে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে হাসপাতালেও নিতে হয়েছিল। এরপর প্রশাসন নড়েচড়ে বসলেও অগ্নিনির্বাপণ বিষয়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যায়নি।
৫৭ একরের বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কোনো পানির উৎস নেই। বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে পানির ব্যবস্থা কীভাবে হবে তা নিয়ে শঙ্কিত ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। এত বড় ভবনের আগুন নেভানো তাদের রিজার্ভের পানি দিয়ে সম্ভব নয়।
আগুন নেভানোর সরঞ্জামের ঘাটতি ও ছাড়পত্র না থাকলেও তাদের প্রস্তুতি রয়েছে বলে মনে করেন পরিকল্পনা ও ওয়ার্কস দপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. হাফিজুর রহমান ও ইঞ্জিনিয়ার মাহবুব হোসেন। হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দুটি আন্ডারগ্রাউন্ড রিজার্ভার রয়েছে। আগুন লাগলে সেখান থেকে পানি সরবরাহ করা যাবে। আর জলাশয় নির্মাণের কাজ চলছে। ভবিষ্যতে ছাড়পত্রের বিষয়টি দেখা যাবে। আগুন লাগলে সৃষ্টিকর্তা না চাইলে আমাদের প্রস্তুতি দিয়েও লাভ হবে না। যা হয়ে গেছে, তা তো হয়েই গেছে।’
ভবনের গণপূর্ত ও ফায়ার সার্ভিসের সনদ না থাকার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার ধারণা নেই। সংশ্লিষ্ট দপ্তর বলতে পারবে। যদি সেসবের প্রয়োজন থাকে আর আমাদের সেসব না থেকে থাকে, তাহলে আমরা প্রশাসনিকভাবে সেসব নিয়ে কাজ করব। এসব বিষয়ে দ্রুতই চিঠি দেওয়া হবে।’
বঙ্গমাতা হলের শিক্ষার্থী ফাইজাহ ওমর তূর্ণা বলেন, ‘আমরা আতঙ্কে থাকি। সারা দেশে যেভাবে আগুন লাগছে, চিন্তা হয়। আমাদের এত বড় হল, তার আগুন নেভানোর কোনো ব্যবস্থা নেই; যা আছে তা ব্যবহার করতেও জানি না আমরা। আগুন লাগলে ভয়েই মরে যাব।’
বঙ্গবন্ধু হলের শিক্ষার্থী ফাহমিদ অর্ক বলেন, ‘আগুন নেভানোর যথেষ্ট ব্যবস্থা নেই। ব্যবস্থা না নিলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে শিক্ষার্থীরা। সত্বর সুরাহার ব্যবস্থা করা উচিত।’
অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার দুর্দশা নিয়ে চিন্তিত শিক্ষক সমিতির সভাপতি রিয়াদ হাসান। তিনি বলেন, ‘আমরা নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে কাজ শুরু করার উদ্যোগ নেব।’
তখনো দিনের আলো ফোটেনি পুরোপুরি, পুব আকাশ সবে একটু একটু করে পরিষ্কার হতে শুরু করেছে। তখন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উপস্থিত হতে শুরু করলেন নীলরঙের টি-শার্ট পরা কিছু মানুষ। প্রথমে একজন-দুজন। তারপর পাঁচজন-দশজনের ছোট ছোট দলে। সংখ্যা দাঁড়াল ১২৭। এরা একটি বিশেষ উদ্যোগে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসেছেন। এরা এসেছেন ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরপরাধ বাঙালির ওপর যে গণহত্যা চালিয়েছিল তার প্রতিবাদ জানাতে, এরা এসেছেন সেদিন যারা আত্মত্যাগ করেছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে, এরা এসেছেন শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে দেশ গড়ার দীপ্ত শপথ নিতে, এরা এসেছেন জাতীয় শহীদ মিনার থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত ‘শোক থেকে শক্তি : অদম্য পদযাত্রা’য় অংশ নিতে।
শেকড় একাত্তরেই : অভিযাত্রী দলের সমন্বয়ক মির্জা জাকারিয়া বেগ জানান, ‘শোক থেকে শক্তি : অদম্য পদযাত্রা’র শেকড় একাত্তরেই প্রোথিত। ১৯৭১ সালে দেশমাতৃকার মুক্তিতে একদল অভিযাত্রী ‘বিশ্ব বিবেক জাগরণ পদযাত্রা’য় অংশগ্রহণ করেছিলেন। পদযাত্রীরা বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে জনসভা করতেন। গণহত্যা সম্পর্কে নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে আহ্বান জানাতেন বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়ানোর। তাদের সবার হাতে হাতে শোভা পেত ‘আমাদের এক কথা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা’, ‘মুজিবের মুক্তি চাই’ সংবলিত প্ল্যাকার্ড ও জাতীয় পতাকা। আমরাও তাদের অনুসরণ করে এ পদযাত্রাটি সাজিয়েছি। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত বিভিন্ন স্থানে আমরা উপস্থিত হই, শ্রদ্ধা জানাই এবং আমাদের অগ্রজরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা বলেন। এর মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম, যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেছেন, তাদের কাছ থেকে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে পারছে।
এবারের পদযাত্রা : এবারের পদযাত্রায় শিক্ষাবিদ ও জনপ্রিয় লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, বাংলাদেশের প্রথম এভারেস্টজয়ী নারী নিশাত মজুমদার, ভারতেশ্বরী হোমসের শিক্ষক হেনা সুলতানা, কিশোর মুক্তিযোদ্ধা মহসীন হোসেন ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, নানা পেশা এবং বয়সের শতাধিক পদযাত্রী অংশ নেন। জাতীয় শহীদ মিনারে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমরা অনেকেই এই শহীদ মিনারের গুরুত্ব হয়তো বুঝি না, কিন্তু পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কিন্তু বুঝতে পেরেছিল এর শক্তি। সে কারণে ৭১ সালে তারা এই শহীদ মিনার ভেঙে ফেলেছিল। কিন্তু তারা ভেঙে ফেললেও এটি আমরা তৈরি করেছি কারণ এটি আমাদের দেশ তৈরির ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছে। তারা জীবন দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে কীভাবে কোনো কিছু আদায় করতে হয়।’
শহীদ মিনার থেকে পদযাত্রীরা এরপর জগন্নাথ হলের দিকে যাত্রা শুরু করে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে এ হলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী গণহত্যা চালায়। শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের সামনে ভারতেশ্বরী হোমসের হেনা সুলতানা নতুন প্রজন্মের অভিযাত্রীদের বলেন, ‘পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নৃশংসতার কোনো তুলনা পৃথিবী নেই। তারা নিরীহ ছাত্রদের আবাসিক হলে অতর্কিতে প্রবেশ করে নির্বিচারে হত্যা করেছে ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারী সবাইকে। তারপর তাদের মৃতদেহ টেনেহেঁচড়ে এনে মাটিচাপা দিয়ে লুকোতে চেষ্টা করেছে। কিন্তু বিশ্ববাসীর কাছে লুকোতে পারেনি। এমন জঘন্যতম হত্যাকা- পৃথিবীর ইতিহাসে আর নেই।’ জগন্নাথ হলের শহীদদের এক মিনিট নীরবতা পালন করে পদযাত্রীরা রমনা কালীমন্দিরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। রমনা কালীমন্দিরে পদযাত্রীরা উপস্থিত হলে অভিযাত্রী দলের সমন্বয়ক মির্জা জাকারিয়া বেগ পদযাত্রীদের উদ্দেশে বলেন, ‘একসময় এই মন্দির ছিল উপমহাদেশের প্রখ্যাত কালীমন্দির। একে ঘিরে গড়ে উঠেছিল গ্রাম। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে স্বামী পরমান্দসহ ১০১ জনকে পুড়িয়ে মারা হয় এবং অগণিত নারীকে ধরে নিয়ে যায় যাদের খোঁজ আর কখনো পাওয়া যায়নি। এখানে উন্নতজাতের ৫০টি গরুর গোশালা ছিল। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর রোষানল থেকে রেহাই পায়নি সেই অবলা প্রাণীও। পুড়িয়ে মারা হয়েছিল তাদেরও। মানুষ কতটা নৃশংস হতে পারে তা এ ঘটনা থেকে বোঝা যায়।’ পদযাত্রীরা শহীদদের প্রতি এক মিনিট নীরবতা পালন করে শিখা চিরন্তনীর উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে।
শিখা চিরন্তনীতে পদযাত্রীদের উদ্দেশে ইমাম হোসেন গাজী বলেন, ‘এই শিখা চিরন্তনী আমাদের সার্বভৌমত্বের প্রতীক। স্বাধীনতার প্রতীক এ শিখা আমরা রক্ষা করে চলব। স্বাধীনতার এই দিনে এটিই হোক আমাদের অঙ্গীকার।’ এরপর শিক্ষার্থীরা ছবির হাট হয়ে মধুর ক্যান্টিনের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। মধুর ক্যান্টিন সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে জানাতে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা মহসীন হোসেন বলেন, ‘মধুদা ছিলেন ছাত্রদের ভরসার স্থান। তার মধুর ক্যান্টিনেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিভিন্ন আন্দোলনের পরিকল্পনা দানা বেঁধেছে, সে কারণে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী মধুদা এবং তার ক্যান্টিনের প্রতি ক্ষুব্ধ ছিল। প্রথম সুযোগেই তাই মধুদা ও তার ছেলেকে তারা হত্যা করে এবং ক্যান্টিনকে একটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছিল।’
মধুদার আবক্ষ ভাস্কর্যের সামনে এক মিনিট নীরবতা পালন করে অভিযাত্রী দল স্মৃতি চিরন্তনীর উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। সেখানে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে অভিযাত্রী দল মহম্মদপুরের শারীরিক শিক্ষা কলেজের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী শারীরিক শিক্ষা কলেজকে ১৯৭১ টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করেছিল। হেনা সুলতানা পদযাত্রীদের জানান, এখানেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে এনেছিল দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা এবং তার ছেলেকে। জিজ্ঞাসাবাদের পর একবার মুক্তি দিয়েও তাদের আবার ডেকে আনে এবং এরপর তাদের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
মর্মান্তিক এ ঘটনা জেনে পদযাত্রীদের মন ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। তাদের অনুপ্রেরণা জোগাতে মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমরা অনেক ত্যাগের বিনিময়ে এ স্বাধীনতা পেয়েছি এবং আমরা এগিয়ে যাব। আমরা এগিয়ে যাব তার একটি লক্ষণ আমি উল্লেখ করি। এখানে যারা অংশগ্রহণ করেছে তাদের মধ্যে নারী ও পুরুষের সংখ্যা প্রায় সমান-সমান। যেকোনো কাজে যদি নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ থাকে তাহলে সেটি অবশ্যই সফলতা পায়। আমাদের দেশ গড়ার কাজে যেহেতু তোমরা সবাই অংশগ্রহণ করছ সেহেতু আমি নিশ্চিত জানি আমরা এগিয়ে যাবই। বঙ্গবন্ধুর ভাষায় বলতে, কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না।’
এরপর পদযাত্রীরা রায়েরবাজার বধ্যভূমির উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে জাফর ইকবাল ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের স্মৃতি উল্লেখ করে বলেন, ‘আমাদের জীবনের শ্রেষ্ঠতম আনন্দের দিন ছিল। দীর্ঘদিন পর আমরা নির্ভয়ে বাড়ি থেকে বের হতে পেরেছি। আমি একটি পত্রিকা কিনলাম। তখন একটা পত্রিকা ছিল দৈনিক পাকিস্তান। ১৬ ডিসেম্বর পত্রিকা কিনে দেখলাম পাকিস্তান শব্দটি ক্রস চিহ্ন দিয়ে কেটে দেওয়া, পাশে লেখা বাংলাদেশ। মনটা আনন্দে ভরে উঠল। কিন্তু মনও আবার খারাপ হয়ে গেল ভেতরে একটা খবর পড়ে। সেখানে লেখা দেশের এই বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক এদের পাওয়া যাচ্ছে না। সারা দেশ যখন খুঁজতে শুরু করল তখন দুয়েক দিন পর এখানে এই রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে তাদের পাওয়া গেল। তোমরা মনে রেখো এ দেশটা এক সাগর রক্তের বিনিময়ে পেয়েছি। লন্ডন টাইমস একটি কথা লিখেছিল, যদি রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা কিনতে হয় তাহলে বাংলাদেশের থেকে বেশি দাম কেউ দেয়নি। কথাটা সত্য। এই ত্যাগ যেন বৃথা না যায় সে চেষ্টাই আমাদের করতে হবে।’
রায়েরবাজার বধ্যভূমি থেকে পদযাত্রীরা বসিলা ঘাটে পৌঁছে। সেখান থেকে তারা নৌপথে জাতীয় স্মৃতিসৌধের দিকে যাত্রা করে। অভিযাত্রী দলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, বাংলাদেশের প্রথম এভারেস্টজয়ী নিশাত মজুমদার জানান, ’৭১ যারা দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল তারা একটি বড় অংশ নৌপথে ভ্রমণ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। সেদিনের কথা স্মরণ করে আমরা এ পদযাত্রায় নৌপথকেও অন্তর্ভুক্ত করেছি। নৌকাযোগে পদযাত্রীরা চাকলগ্রামে পৌঁছে। সেখান থেকে হেঁটে তারা জাতীয় স্মৃতিসৌধে পৌঁছে। সেখানে তাদের তারুণ্যের দীপ্ত শপথ পাঠ করান নিশাত মজুমদার। পদযাত্রীরা শপথ নেয়, শুদ্ধ সাংস্কৃতিক সৌধ, অর্থনৈতিক উন্নয়নের সৌধ, সম্প্রীতির সৌধ আর জাতির নবজাগরণের সৌধ নির্মাণের। শপথ গ্রহণের পর পদযাত্রীরা নীরবতা বজায় রেখে স্মৃতিসৌধ ত্যাগ করে। শেষ হয় শোককে শক্তিতে রূপান্তরের অদম্য পদযাত্রা।
পদযাত্রা শেষ হলেও তাকে বয়ে নিয়ে চলেছে নতুন প্রজন্মের নির্জন (১৬), কনা (১০), নাহিয়ান (৬), সায়ান (৮), পদ্ম (২), মহুয়া (৫), মাশফিক (৪), উমামা (৮), মাহিরাহ (৫), আভা (৮), স্নেহা রায়হান (৫), ওস্মি (১৩)। নবম শ্রেণিপড়ুয়া নির্জন জানায়, এ পদযাত্রায় অংশগ্রহণের জন্য সে কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছে। ওস্মি অবশ্য প্রথম নয়। কনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে সবচেয়ে বেশিবার অংশগ্রহণের রেকর্ড তার। প্রতিবারই তার প্রথমবারের মতো অনুভূতি হয় বলে জানায়। পদযাত্রায় বহন করা জাতীয় পতাকাটি সঙ্গে করে নিয়ে যেতে চায় মাশফিক। দিনের শেষে ‘শোক থেকে শক্তি : অদম্য পদযাত্রা’ হয়ে ওঠে বর্তমান প্রজন্মের কাছ থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের লাল-সবুজের স্বপ্ন বুঝে নেওয়ার উপলক্ষ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটে অবৈধভাবে টাকা নিয়ে চাকরি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এই লেনদেন সম্পর্কিত একটি ফোনালাপ দৈনিক দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে।
গত ১৯ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটে মেশিন অপারেটর পদে রানা এবং আব্দুল্লাহ আল মামুন লিমনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই নিয়োগে দুই প্রার্থীর কাছ থেকে ৮ লাখ করে মোট ১৬ লাখ টাকা নেন ছাত্রলীগের পাঁচ নেতা।
অভিযুক্তরা হলেন ঢাবি লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাজফুজুর রহমান ফাহাদ, সাধারণ সম্পাদক খবির হোসেন সুমন, হাজারীবাগ থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবুল হাসনাত বাহার, লেদার ইনস্টিটিউট ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি মুইন মুহতাদিউল হক রাহাত এবং সাধারণ সম্পাদক রেদোয়ানুল হক রাসেল। আবুল হাসনাত বাহার নিজ কার্যালয়ে রাহাত বাদে বাকি তিনজনকে ৩ লাখ ২০ হাজার করে টাকা দেন। তবে রাহাতের টাকা বাহার নিজের কাছে রেখে দেন। এতে ক্ষুব্ধ হন লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট ছাত্রলীগের সভাপতি মুইন মুহতাদিউল হক রাহাত। ক্ষুব্ধ রাহাতের সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক রেদোয়ানুল হক রাসেলের মধ্যকার ১ মিনিট ৮ সেকেন্ড কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়েছে।
রেকর্ডে রাসেলের উদ্দেশ্যে রাহাতকে বলতে শোনা যায়, ‘তোমাদের কী হইছে, এখানে এটা আমাকে খুলে বলো তো।’ উত্তরে রাসেল বলেন, ‘আমাকে বাহার ভাই ফোন দিয়েছিলেন। ফোন দিয়ে উনি আমাকে বলছেন, “অফিসে আয়।” সবাইকে ফোন দিয়ে উনি ডাকছেন। এরপর সবাই সেখানে যাওয়ার পর আপনাকে (রাহাত) ফোন দিয়েছিলেন উনি। আপনাকে ফোন দেওয়ার পর উনি সেখানে টাকা ভাগ করেছেন।’ কীভাবে টাকা ভাগ করা হয়েছে রাহাত এটি জানতে চাইলে রাসেল বলেন, টাকা পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত হতে রাহাত আবার জিজ্ঞাসা বলেন, ‘১৬ লাখ টাকাই পাঁচ ভাগ করা হয়েছে?’ নিশ্চিত করে রাসেল বলেন, ‘হ্যাঁ, পাঁচ ভাগ করছে। মানে সবাইকে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। আর আপনারটা (রাহাত) বাহার ভাইয়ের কাছে রাখা আছে।’ এরপর কাকে কাকে টাকা দেওয়া হয়েছে, সেটা বর্ণনা করে রাসেল বলেন, ‘আমাকে (রাসেল), মাহফুজ ভাইকে, সুমন ভাইকে, আপনাকে (রাহাত) এবং বাহার ভাইকেও ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।’ রেকর্ডিংয়ের শেষ দিকে রাহাতকে বলতে শোনা যায়, আচ্ছা, ১৬ লাখকে পাঁচ ভাগ করলে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকাই তো হয়।
অভিযোগের বিষয়ে আবুল হাসনাত বাহার বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না।’
মাজফুজুর রহমান ফাহাদ বলেন, ‘রাজনীতিতে অনেকেই অনেককে ফাঁসানোর চেষ্টা করে। এখানে এমনটাই হয়েছে হয়তো। আমি তো এখন পদে নেই। আমি কীভাবে নিয়োগ বাণিজ্য করব? আমি এ বিষয়ে জানি না।’
খবির হোসেন সুমন বলেন, ‘এই ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।’
মুইন মুহতাদিউল হক রাহাত বলেন, ‘রেকর্ডটা শুনলে বোঝা যাবে যে আমি নিয়োগ বাণিজ্য কিংবা টাকা ভাগাভাগির সঙ্গে জড়িত নই। এই ঘটনা শোনার পর আমি রাসেলের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাই। রেকর্ডে পরিষ্কারভাবে বলাও আছে যে তারা টাকা পাঁচ ভাগ করেছে। আমাকে না জানিয়ে সভাপতি হিসেবে আমার নামে নাকি তারা টাকা ভাগ করেছে। এটা আমি জানিও না আমার নামের ভাগের টাকাটা বাহার নিয়েছেন। আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। যদি জানতাম তাহলে আমি এ ধরনের কাজের সঙ্গে জড়িতও হতাম না।’
রেদোয়ানুল হক রাসেল বলেন, ‘এই অভিযোগ সঠিক। উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে আমার নামে এ ধরনের কথা ছড়ানো হচ্ছে। রেকর্ডিংয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘রেকর্ডের ওই ব্যক্তি আমি নই।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন বলেন, ‘অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে জানতে লেদার ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তার ফোনে সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, ‘বিষয়টা দুঃখজনক। আমি যত দূর শুনেছি, দক্ষ এবং যোগ্য লোকেরাই নিয়োগ পেয়েছে। এরপরও যদি কোনো ধরনের অনিয়ম ও আর্থিক লেনদেনের ঘটনা ঘটে থাকে, আমি খোঁজ নিয়ে দেখব।’
বাজার থেকে মুরগি কিনে ড্রেসিং করার পর অনেকেই মুরগির পা, গিলা-কলিজা (লটপট) ফেলে যান। আর এসব গিলা, কলিজা কম দামে কেনেন নিম্ন আয়ের মানুষ। কিন্তু বাজারে হঠাৎ মুরগির দাম বাড়ায় এসব গিলা, কলিজার কদর বেড়েছে। তবে এখানেও দাম বেড়েছে কেজিতে ৫০ টাকা। এতে নিম্ন আয়ের মানুষ এসব কিনতে হিমশিম খাচ্ছে।
গতকাল রবিবার কারওয়ান বাজার, শান্তিনগর ও ফার্মগেট বাজার ঘুরে দেখা যায়, ভোক্তাদের ফেলে যাওয়া মুরগির কাটা পা বিক্রি হচ্ছে ১৫০, কলিজা ২৬০, মাথা ও গলার মাংস ১৬০ ও মিশ্র গিলা-কলিজা বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৪০ টাকা করে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, কয়েক মাসের ব্যবধানে গিলা-কলিজা ও পা প্রতি কেজিতে অন্তত ৫০ টাকার বেশি বেড়েছে।
বিক্রেতাদের ভাষ্যমতে, মুরগির দাম বেশি থাকায় এসব গিলা-কলিজার চাহিদা অনেক বেড়েছে। আগে শুধু ফুটপাত কিংবা মোটামুটি মানের রেস্তোরাঁর মালিকরা এসব গিলা-কলিজা মুরগির লটপটি হিসেবে কিনতেন। এখন নিম্ন আয়ের মানুষও কিনছে। চাহিদার তুলনায় জোগান কম থাকায় কেজিতে অন্তত ৫০ টাকার বেশি বেড়েছে।
কারওয়ান বাজারের সুলাইমান নামের এক লটপটি ব্যবসায়ী দেশ রূপান্তরকে বলেন, তিন-চার মাস আগেও এসব গিলা-কলিজার চাহিদ তেমন একটা ছিল না। বাজারে একচেটিয়া মুরগির দাম বাড়ার কারণে গিলা-কলিজার চাহিদাও বেড়েছে দ্বিগুণ।
এদিকে মোহাম্মদপুর বাজারে গিয়ে তিনটি গিলা-কলিজার দোকান দেখতে পাওয়া যায়। এসব দোকানে হামিদ উল্লাহ, বাচ্চু শিকদারসহ অন্তত পাঁচজনকে ফেলে যাওয়া এসব গিলা-কলিজা কিনতে দেখা যায়।
জানতে চাইলে রানু আক্তার নামের এক ক্রেতা কিছুটা ক্ষোভের স্বরে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার স্বামী যে বেতন পান তা দিয়ে ঘরভাড়া ও বাচ্চাদের পড়ার খরচ দিতে কষ্ট হয়। তার মধ্যে ভালো বাজার করার সামর্থ্য থাকে না। আগে কিছুটা সাশ্রয়ী মূল্যে মুরগি কিনতে পারতাম। এখন তা কেনার কথা ভাবতেও পারি না। যার জন্য অন্যের ফেলে যাওয়া মুরগির এসব গিলা-কলিজা কিনতে এসেছি। এখন দেখছি, এসব গিলা-কলিজার দামও অনেক বেড়েছে।’
রাইসুল নামের এক বিকশাচালক বলেন, ‘আগে মাঝেমধ্যে গিলা-কলিজা কিনতাম। বাজারে সবকিছুুর দাম বাড়ায় এখন নিয়মিত গিলা-কলিজা কিনছি। দেখছি মুরগির মাংসের মতো কোনো কারণ ছাড়াই এসব মাংসের দাম বেশি চাচ্ছে বিক্রেতারা।’
শুধু নিম্ন আয়ের মানুষই না ছোটখাটো চাকরিজীবীদেরও মুরগি কিনতে না পেরে গিলা-কলিজা কিনতে দেখা গেছে। একজন জানান, মুরগির দাম বাড়তি হওয়ায় প্রথমবারের মতো অন্যের ফেলে দেওয়া মুরগির এসব গিলা-কলিজা কিনতে এসেছেন তিনি। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দেশের বাজারে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে দ্রব্যমূল্যের বাড়তি চাপ। চাল, ডাল, আটা, ময়দা, তেল, চিনি, মাংস, সবজি, ফল এমন কোনো পণ্য নেই যে দাম বাড়েনি। দেড় মাসের ব্যবধানে নজিরবিহীনভাবে প্রোটিনের চাহিদা মেটানো সস্তায় কিনতে পাওয়া ব্রয়লার মুরগির কেজিতে বেড়েছ ৮০-১০০ টাকা। নিরুপায় হয়ে অন্যের ফেলে যাওয়া মুরগির কাটা পা, গিলা, কলিজা কিনতে এসেছি।’
এদিকে বাজারে ব্রয়লার মুরগি গতকাল ২২০-২৪০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। গত বৃহস্পতিবার ব্যবসায়ীদের ঘোষণার পর বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম কমতে শুরু করেছে।
বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার তিনটি বইয়ের জন্য ‘বিশেষ সাহিত্য পুরস্কার’ দিয়েছে ফাউন্ডেশন অব সার্ক রাইটার্স অ্যান্ড লিটারেচার (এফওএসডব্লিউএএল)। গতকাল রবিবার প্রখ্যাত পাঞ্জাবি ঔপন্যাসিক এবং এফওএসডব্লিউএএল-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অজিত কাউর আনুষ্ঠানিকভাবে সংগঠনের আঞ্চলিক সম্মেলনে সফররত বাংলাদেশি লেখক ও গবেষক রামেন্দু মজুমদার এবং মফিদুল হকের হাতে এ পুরস্কার তুলে দেন।
সার্ক সাহিত্য পুরস্কার হলো ২০০১ সাল থেকে এফওএসডব্লিউএএলের দেওয়া একটি বার্ষিক পুরস্কার। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’ এবং ‘আমার দেখা নয়াচীন’ এ তিনটি বইয়ের জন্য বঙ্গবন্ধুকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে গতকাল সকালে শুরু হয়েছে এফওএসডব্লিউএএল-এর তিন দিনব্যাপী আঞ্চলিক সাহিত্য সম্মেলন। সম্মেলনে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলের বিপুল সংখ্যক বিশিষ্ট লেখক-সাহিত্যিক অংশগ্রহণ করছেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে সম্মেলনের উদ্বোধনের তাৎপর্য বর্ণনা করে অজিত কাউর এর আগে এক বার্তায় লিখেছিলেন যে, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয় কোনো ছোট ঘটনা ছিল না। তিনি আরও বলেন, ‘‘বিশ্বজুড়ে মানুষ ভূমি ও অঞ্চলের জন্য, বিদেশি নিপীড়ক বা রাজা ও স্বৈরশাসকদের কাছ থেকে তাদের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ছিল ভিন্ন ও অনন্য। কারণ এটি ছিল ‘মানুষের প্রাণবন্ত আত্মা’ সংরক্ষণ যা শুধুমাত্র তার নিজস্ব সংস্কৃতি এবং নিজস্ব ভাষায় স্পন্দিত এবং বিকাশ লাভ করে!’’
অজিত কাউর তার বার্তায় বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের মধ্যে না থাকলেও তিনি আমাদের জন্য তিনটি মূল্যবান ও চিন্তাশীল বই রেখে গেছেন। তাই এই মহান মানবের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তাকে (বঙ্গবন্ধু) এফওএসডব্লিউএএল সাহিত্য উৎসব-২০২৩-এর সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ থেকে এফওএসডব্লিউএএল আঞ্চলিক সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন বিশিষ্ট লেখক সেলিনা হোসেন, রামেন্দু মজুমদার, মহিদুল হক ও মোহিত কামাল।
দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের মিনিস্টার (প্রেস) শাবান মাহমুদ এবং হাইকমিশনের পক্ষে কনস্যুলার (রাজনৈতিক) সফিউল আলম অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। বাসস
জরায়ু ক্যানসারের নকল ভ্যাকসিন (টিকা) ও আমদানি নিষিদ্ধ হেপাটাইটিস-বি টিকাদান কার্যক্রম চালাতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ব্যবহারের বিষয়টি সামনে আসার পর নড়েচড়ে বসেছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। কর্মকর্তাদের দিয়ে অভিযান চালানোর পর এবার ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পূর্বানুমোদন ছাড়া স্কুল কলেজে বেসরকারিপর্যায়ে কোনো ধরনের ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম না চালাতে অনুরোধ করেছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। গত ১৯ মার্চ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর দেওয়া এক চিঠিতে এ অনুরোধ করা হয়েছে।
দেশে আমদানি নিষিদ্ধ হেপাটাইটিস-বি ভ্যাকসিন (টিকা) চোরাই পথে এনে সেগুলো ভেঙে পানি মিশিয়ে জরায়ু ক্যানসারের নকল টিকা তৈরি করে নারীদের দেওয়া এক চক্রের ছয় সদস্যকে সম্প্রতি গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। চক্রটি গত দুই বছরে ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী ১৪২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্যাম্প করে ছয় হাজারের বেশি নারীকে জরায়ু ক্যানসারের নকল টিকা ‘সারভারিক্স’ ও আমদানি নিষিদ্ধ হেপাটাইটিস-বির টিকা ‘জেনেভ্যাক-বি’ দিয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বরাবর ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আপনাদের অবহিত করা যাচ্ছে যে সারভারিক্স ভ্যাকসিন (টিকা) নকল পাওয়া গেছে। অনিবন্ধিত জেনেভ্যাক-বি ভ্যাকসিনের নকল লেবেল লাগিয়ে একটি চক্র নকল করছে, যা গত ১৬ মার্চ ডিবি (পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ) কতৃক জব্দ করা হয়েছে। গত ১৮ মার্চ ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা মিরপুরের দারুস সালামে এ আর খান ফাউন্ডেশনে ভ্যাকসিনটি দিয়ে মেয়েদের ভ্যাকসিনেশন করা হতো তার আলামত পেয়েছে। উল্লেখ্য যে, গাজীপুর জেলার বিভিন্ন স্কুল, কলেজে নকল ভ্যাকসিনের প্রচারণা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।’
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ‘স্কুল, কলেজে বেসরকারিপর্যায়ে কোনো ধরনের ভ্যাকসিনেশন করার জন্য বলা হলে এ বিষয়ে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পূর্বানুমোদন থাকা আবশ্যক। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পূর্বানুমতি ছাড়া এ ধরনের ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রাম স্কুল-কলেজে না করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।’
এ চিঠির প্রেক্ষিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর কী পদক্ষেপ নিয়েছে তা জানতে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি সাড়া দেননি। মাধ্যমিক উইংয়ের পরিচালক মোহাম্মদ বেলাল হোসেনও ফোন ধরেননি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) হলের আসন দখল করে রাখার বিরুদ্ধে অনশনরত ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম প্রত্যয়সহ তাকে সমর্থন দেওয়া কয়েকজনের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ।
মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।তারা বলেন, ওই স্থানে গত বুধবার রাত থেকে অনশনে ছিলেন প্রত্যয়। তাকে মারধরের পর অ্যাম্বুলেন্সে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যায় হামলায় জড়িতরা। এ সময় প্রত্যয়ের দাবির সঙ্গে সংহতি জানানো প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের ওপরও হামলা হয়।
জানা গেছে, তিন দাবিতে গত বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনের খেলার মাঠে অনশনে বসেন প্রত্যয়। তিনি ওই হলের আবাসিক ছাত্র। তার অন্য দুটি দাবি ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল থেকে অছাত্রদের বের করা ও হলের গণরুমে অবস্থান করা বৈধ ছাত্রদের আসন নিশ্চিত করা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী এবং নবীন শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছিলেন। ওই সময় ক্যাম্পাসে লোডশেডিং চলছিল। হঠাৎ করেই প্রত্যয়সহ তার সঙ্গে থাকা অন্যদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
হামলায় জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচী, মার্কেটিং বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের সৃষ্টি, চারুকলা বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের মনিকা, বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের ৪৮তম ব্যাচের সুরসহ আরও কয়েকজন আহত হন বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যমতে, হামলায় ৩০ থেকে ৪০ জন অংশ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। অভিযুক্তদের কয়েকজন হলেন ছাত্রলীগ নেতা ও রসায়ন বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী গৌতম কুমার দাস, তুষার, ফেরদৌস, নোবেল, গোলাম রাব্বি, মুরসালিন, মুরাদ, সোহেল, তানভীর, রায়হান, রাহাত, সৌমিক, তারেক মীর, সজীব ও নাফিস।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী জানান, আমরা যারা প্রত্যয়ের সঙ্গে ছিলাম তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর প্রত্যয়কে দেখতে চিকিৎসক এসেছিলেন। তখন তারা অ্যাম্বুলেন্সের ওপর হামলা করে সেটি ফিরিয়ে দেয়। প্রক্টরকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি আসেননি। একাধিক ছাত্রীর দিকেও চড়াও হয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মীর মশাররফ হোসেন হলের এক শিক্ষার্থী অসুস্থ এমন একটি ফোনকল পেয়ে তারা অ্যাম্বুলেন্স পাঠায়। তবে কে কল দিয়েছিল সে সম্পর্কে চিকিৎসা কেন্দ্রের কেউ বলতে পারেননি।
তবে যে ফোন নাম্বার থেকে কল দেওয়া হয়েছিল সেটিতে যোগাযোগ করে দেখা যায় নাম্বারটি শাখা ছাত্রলীগের নেতা গৌতম কুমার দাসের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ১৫ হাজার শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না। দরকার হলে আমি পদত্যাগ করব।
এদিকে হামলার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে রাতেই বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মিছিল নিয়ে তারা এ রাত পৌনে ১টায় প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান করছেন।
তবে অনশনরত শিক্ষার্থী সামিউলের ওপর হামলারে পেছনে ছাত্রলীগের কোনো হাত নেই বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেলের। তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি, মীর মশাররফ হোসেন হলের অনশনরত ওই শিক্ষার্থীর ওপর হামলা হয়েছে। তবে সেটা সাধারণ শিক্ষার্থীরা করেছে। সেখানে ছাত্রলীগের একজনও জড়িত নয়।’
অসুস্হ সাবেক ফুটলার মোহাম্মদ মহসীনের পাশে দাড়িয়েছেন তার সাবেক সতীর্থরা। মোহামেডান ক্লাবের সাবেক ফুটবলার ও সোনালী অতীত ক্লাবের সদস্যরা বিকেলে বসে এই সিদ্ধান্ত নেন। পরে মহসীনের বাসায় যান তার সংগে দেখা করতে।সাবেক ফুটবলারদের মধ্যে ছিলেন আব্দুল গাফফার, জোসী, বাবলু, জনি, সাব্বির, রিয়াজ।
এসময় গাফফার জানান, মহসীনের চিকিৎসার জন্য বিসিবি সভাপতির উদ্যোগে বুধবার সকালে অসুস্হ ফুটবলারকে হাসপাতালে ভর্তি করবে।
হাসপাতাল থেকে সুস্থ ও স্বাভাবিক হয়ে ফেরার পর মহসীন কানাডায় ফিরে যেতে চাইলে সাবেক ফুটবলাররা সহায়তা করবে। মহসীন কানাডা থেকে দেশে ফিরেছেন মায়ের পাশে থাকতে। প্রায় নব্বই ছুই ছুই মহসিনের মায়ের পায়ে ব্যথা। মহসীনের পাশাপাশি তার মায়ের চিকিৎসার ব্যাপারেও সাবেক ফুটবলাররা পাশে থাকবেন বলে জানান আবদুল গাফফার।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।