
বাজার থেকে মুরগি কিনে ড্রেসিং করার পর অনেকেই মুরগির পা, গিলা-কলিজা (লটপট) ফেলে যান। আর এসব গিলা, কলিজা কম দামে কেনেন নিম্ন আয়ের মানুষ। কিন্তু বাজারে হঠাৎ মুরগির দাম বাড়ায় এসব গিলা, কলিজার কদর বেড়েছে। তবে এখানেও দাম বেড়েছে কেজিতে ৫০ টাকা। এতে নিম্ন আয়ের মানুষ এসব কিনতে হিমশিম খাচ্ছে।
গতকাল রবিবার কারওয়ান বাজার, শান্তিনগর ও ফার্মগেট বাজার ঘুরে দেখা যায়, ভোক্তাদের ফেলে যাওয়া মুরগির কাটা পা বিক্রি হচ্ছে ১৫০, কলিজা ২৬০, মাথা ও গলার মাংস ১৬০ ও মিশ্র গিলা-কলিজা বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৪০ টাকা করে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, কয়েক মাসের ব্যবধানে গিলা-কলিজা ও পা প্রতি কেজিতে অন্তত ৫০ টাকার বেশি বেড়েছে।
বিক্রেতাদের ভাষ্যমতে, মুরগির দাম বেশি থাকায় এসব গিলা-কলিজার চাহিদা অনেক বেড়েছে। আগে শুধু ফুটপাত কিংবা মোটামুটি মানের রেস্তোরাঁর মালিকরা এসব গিলা-কলিজা মুরগির লটপটি হিসেবে কিনতেন। এখন নিম্ন আয়ের মানুষও কিনছে। চাহিদার তুলনায় জোগান কম থাকায় কেজিতে অন্তত ৫০ টাকার বেশি বেড়েছে।
কারওয়ান বাজারের সুলাইমান নামের এক লটপটি ব্যবসায়ী দেশ রূপান্তরকে বলেন, তিন-চার মাস আগেও এসব গিলা-কলিজার চাহিদ তেমন একটা ছিল না। বাজারে একচেটিয়া মুরগির দাম বাড়ার কারণে গিলা-কলিজার চাহিদাও বেড়েছে দ্বিগুণ।
এদিকে মোহাম্মদপুর বাজারে গিয়ে তিনটি গিলা-কলিজার দোকান দেখতে পাওয়া যায়। এসব দোকানে হামিদ উল্লাহ, বাচ্চু শিকদারসহ অন্তত পাঁচজনকে ফেলে যাওয়া এসব গিলা-কলিজা কিনতে দেখা যায়।
জানতে চাইলে রানু আক্তার নামের এক ক্রেতা কিছুটা ক্ষোভের স্বরে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার স্বামী যে বেতন পান তা দিয়ে ঘরভাড়া ও বাচ্চাদের পড়ার খরচ দিতে কষ্ট হয়। তার মধ্যে ভালো বাজার করার সামর্থ্য থাকে না। আগে কিছুটা সাশ্রয়ী মূল্যে মুরগি কিনতে পারতাম। এখন তা কেনার কথা ভাবতেও পারি না। যার জন্য অন্যের ফেলে যাওয়া মুরগির এসব গিলা-কলিজা কিনতে এসেছি। এখন দেখছি, এসব গিলা-কলিজার দামও অনেক বেড়েছে।’
রাইসুল নামের এক বিকশাচালক বলেন, ‘আগে মাঝেমধ্যে গিলা-কলিজা কিনতাম। বাজারে সবকিছুুর দাম বাড়ায় এখন নিয়মিত গিলা-কলিজা কিনছি। দেখছি মুরগির মাংসের মতো কোনো কারণ ছাড়াই এসব মাংসের দাম বেশি চাচ্ছে বিক্রেতারা।’
শুধু নিম্ন আয়ের মানুষই না ছোটখাটো চাকরিজীবীদেরও মুরগি কিনতে না পেরে গিলা-কলিজা কিনতে দেখা গেছে। একজন জানান, মুরগির দাম বাড়তি হওয়ায় প্রথমবারের মতো অন্যের ফেলে দেওয়া মুরগির এসব গিলা-কলিজা কিনতে এসেছেন তিনি। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দেশের বাজারে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে দ্রব্যমূল্যের বাড়তি চাপ। চাল, ডাল, আটা, ময়দা, তেল, চিনি, মাংস, সবজি, ফল এমন কোনো পণ্য নেই যে দাম বাড়েনি। দেড় মাসের ব্যবধানে নজিরবিহীনভাবে প্রোটিনের চাহিদা মেটানো সস্তায় কিনতে পাওয়া ব্রয়লার মুরগির কেজিতে বেড়েছ ৮০-১০০ টাকা। নিরুপায় হয়ে অন্যের ফেলে যাওয়া মুরগির কাটা পা, গিলা, কলিজা কিনতে এসেছি।’
এদিকে বাজারে ব্রয়লার মুরগি গতকাল ২২০-২৪০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। গত বৃহস্পতিবার ব্যবসায়ীদের ঘোষণার পর বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম কমতে শুরু করেছে।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ভবনেই গণপূর্ত অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র (ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট) নেই। বহুতল ভবন নির্মাণের আগে এবং পরে তা বসতের বা ব্যবহারের উপযোগী কি না, তার জন্য দুই প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন বা ছাড়পত্র লাগে।
কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনগুলোর জন্য দুই প্রতিষ্ঠানের কোনোটির ছাড়পত্র নেই। অনুমোদন ছাড়াই চলছে বিশ্ববিদ্যালয়টির একাডেমিক ও আবাসিক কার্যক্রম।
অনুমোদন তথা ছাড়পত্র না নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও ওয়ার্কস দপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. হাফিজুর রহমান।
অনুমোদন না নিয়ে বিধি অমান্য করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ময়মনসিংহ বিভাগের উপপরিচালক মো. মতিয়ার রহমান।
দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনা ঘটলে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, সে বিবেচনা থেকেই ভবন নির্মাণ করা হয়। সব ঠিক থাকলেই ছাড়পত্র (ক্লিয়ারেন্স সনদ) দেওয়া হয়। সনদের বাইরে গিয়ে ভবন নির্মাণ এবং ব্যবহারের সুযোগ নেই। অভিযোগ এলে আমরা জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় সুরাহা করার চেষ্টা করব। তবে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের কাছ থেকে ক্লিয়ারেন্স নেয়নি।’
ময়মনসিংহ গণপূর্ত দপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়ার্কস ও প্ল্যানিং কমিটির সদস্য এ কে এম কামরুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান। তারা তাদের মতো সিদ্ধান্ত নেয়। তবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ক্লিয়ারেন্স নেওয়া দরকার। না নিলে আইন অমান্য করা হয়। আমি উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থাগ্রহণের লক্ষ্যে কাজ করব।’
একদিকে ভবনের অনুমোদন নেই, অন্যদিকে অগ্নিনির্বাপণের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব। দশতলা বঙ্গমাতা ছাত্রী হলে অগ্নিনির্বাপণের জন্য ৬২টি ছোট সিলিন্ডার রয়েছে। এসবের কোনোটিরই মেয়াদ তথা কার্যকারিতা নেই। এ কথা নিশ্চিত করেছেন হলটির প্রাধ্যক্ষ নুসরাত শারমিন তানিয়া।
অগ্নিনির্বাপণের প্রস্তুতি কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা চিন্তিত। বারবার বলেও সমাধান পাইনি। আমাদের কিছু সিলিন্ডার থাকলেও সেগুলোর মেয়াদ নেই। তা ছাড়া এসব কীভাবে ব্যবহার করতে হয়, সে বিষয়ে কাউকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। মোটকথা, এ ব্যাপারে প্রশিক্ষিত লোকবল নেই। কিছুদিন আগে হলে আগুন লাগার কথা ছড়িয়ে পড়লে আতঙ্কে হুড়োহুড়ি করে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়। আমরা নিদানের ব্যবস্থার জন্য প্রকৌশল দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করেই যাচ্ছি।’
ফায়ার সার্ভিস ও গণপূর্তের ছাড়পত্রহীন ভবনে হলের কার্যক্রম চলছে কি না জানতে চাইলে নুসরাত শারমিন বলেন, ‘আমাদের ডিপিডি ও প্রকৌশল দপ্তর বলেছে, সব অনুমোদন আছে। তবে তারা আমাদের কোনো ডকুমেন্ট দেয়নি।’
একই চিত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দশতলা বঙ্গবন্ধু হল, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবন, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ভবন, কলা ও বিজ্ঞান ভবনসহ শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ডরমিটোরি, কোয়ার্টার ও প্রশাসনিক ভবনের। এমনকি নির্মাণাধীন কোনো ভবনের নকশার অনুমোদন নেই।’
আগুন নেভানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫৪টি সিলিন্ডার থাকলেও অধিকাংশের মেয়াদ নেই; এসব ব্যবহারের নিয়মও কেউ জানে না। অগ্নিনির্বাপণের কোনো প্রশিক্ষণের আয়োজনও নেই। ১৫৪টি সিলিন্ডারের মধ্যে বঙ্গমাতা হলে ৬২টি, বঙ্গবন্ধু হলে ২২টি, সামাজিক বিজ্ঞান ও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে ৩০টি করে এবং প্রশাসনিক ভবনে ১০টি সিলিন্ডার রয়েছে বলে জানা গেলেও জায়গামতো সেগুলো দৃশ্যমান নয়।
চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি বঙ্গমাতা হলে আগুন লাগার গুজবে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে হাসপাতালেও নিতে হয়েছিল। এরপর প্রশাসন নড়েচড়ে বসলেও অগ্নিনির্বাপণ বিষয়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যায়নি।
৫৭ একরের বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কোনো পানির উৎস নেই। বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে পানির ব্যবস্থা কীভাবে হবে তা নিয়ে শঙ্কিত ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। এত বড় ভবনের আগুন নেভানো তাদের রিজার্ভের পানি দিয়ে সম্ভব নয়।
আগুন নেভানোর সরঞ্জামের ঘাটতি ও ছাড়পত্র না থাকলেও তাদের প্রস্তুতি রয়েছে বলে মনে করেন পরিকল্পনা ও ওয়ার্কস দপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. হাফিজুর রহমান ও ইঞ্জিনিয়ার মাহবুব হোসেন। হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দুটি আন্ডারগ্রাউন্ড রিজার্ভার রয়েছে। আগুন লাগলে সেখান থেকে পানি সরবরাহ করা যাবে। আর জলাশয় নির্মাণের কাজ চলছে। ভবিষ্যতে ছাড়পত্রের বিষয়টি দেখা যাবে। আগুন লাগলে সৃষ্টিকর্তা না চাইলে আমাদের প্রস্তুতি দিয়েও লাভ হবে না। যা হয়ে গেছে, তা তো হয়েই গেছে।’
ভবনের গণপূর্ত ও ফায়ার সার্ভিসের সনদ না থাকার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার ধারণা নেই। সংশ্লিষ্ট দপ্তর বলতে পারবে। যদি সেসবের প্রয়োজন থাকে আর আমাদের সেসব না থেকে থাকে, তাহলে আমরা প্রশাসনিকভাবে সেসব নিয়ে কাজ করব। এসব বিষয়ে দ্রুতই চিঠি দেওয়া হবে।’
বঙ্গমাতা হলের শিক্ষার্থী ফাইজাহ ওমর তূর্ণা বলেন, ‘আমরা আতঙ্কে থাকি। সারা দেশে যেভাবে আগুন লাগছে, চিন্তা হয়। আমাদের এত বড় হল, তার আগুন নেভানোর কোনো ব্যবস্থা নেই; যা আছে তা ব্যবহার করতেও জানি না আমরা। আগুন লাগলে ভয়েই মরে যাব।’
বঙ্গবন্ধু হলের শিক্ষার্থী ফাহমিদ অর্ক বলেন, ‘আগুন নেভানোর যথেষ্ট ব্যবস্থা নেই। ব্যবস্থা না নিলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে শিক্ষার্থীরা। সত্বর সুরাহার ব্যবস্থা করা উচিত।’
অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার দুর্দশা নিয়ে চিন্তিত শিক্ষক সমিতির সভাপতি রিয়াদ হাসান। তিনি বলেন, ‘আমরা নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে কাজ শুরু করার উদ্যোগ নেব।’
তখনো দিনের আলো ফোটেনি পুরোপুরি, পুব আকাশ সবে একটু একটু করে পরিষ্কার হতে শুরু করেছে। তখন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উপস্থিত হতে শুরু করলেন নীলরঙের টি-শার্ট পরা কিছু মানুষ। প্রথমে একজন-দুজন। তারপর পাঁচজন-দশজনের ছোট ছোট দলে। সংখ্যা দাঁড়াল ১২৭। এরা একটি বিশেষ উদ্যোগে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসেছেন। এরা এসেছেন ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরপরাধ বাঙালির ওপর যে গণহত্যা চালিয়েছিল তার প্রতিবাদ জানাতে, এরা এসেছেন সেদিন যারা আত্মত্যাগ করেছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে, এরা এসেছেন শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে দেশ গড়ার দীপ্ত শপথ নিতে, এরা এসেছেন জাতীয় শহীদ মিনার থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত ‘শোক থেকে শক্তি : অদম্য পদযাত্রা’য় অংশ নিতে।
শেকড় একাত্তরেই : অভিযাত্রী দলের সমন্বয়ক মির্জা জাকারিয়া বেগ জানান, ‘শোক থেকে শক্তি : অদম্য পদযাত্রা’র শেকড় একাত্তরেই প্রোথিত। ১৯৭১ সালে দেশমাতৃকার মুক্তিতে একদল অভিযাত্রী ‘বিশ্ব বিবেক জাগরণ পদযাত্রা’য় অংশগ্রহণ করেছিলেন। পদযাত্রীরা বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে জনসভা করতেন। গণহত্যা সম্পর্কে নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে আহ্বান জানাতেন বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়ানোর। তাদের সবার হাতে হাতে শোভা পেত ‘আমাদের এক কথা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা’, ‘মুজিবের মুক্তি চাই’ সংবলিত প্ল্যাকার্ড ও জাতীয় পতাকা। আমরাও তাদের অনুসরণ করে এ পদযাত্রাটি সাজিয়েছি। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত বিভিন্ন স্থানে আমরা উপস্থিত হই, শ্রদ্ধা জানাই এবং আমাদের অগ্রজরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা বলেন। এর মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম, যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেছেন, তাদের কাছ থেকে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে পারছে।
এবারের পদযাত্রা : এবারের পদযাত্রায় শিক্ষাবিদ ও জনপ্রিয় লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, বাংলাদেশের প্রথম এভারেস্টজয়ী নারী নিশাত মজুমদার, ভারতেশ্বরী হোমসের শিক্ষক হেনা সুলতানা, কিশোর মুক্তিযোদ্ধা মহসীন হোসেন ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, নানা পেশা এবং বয়সের শতাধিক পদযাত্রী অংশ নেন। জাতীয় শহীদ মিনারে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমরা অনেকেই এই শহীদ মিনারের গুরুত্ব হয়তো বুঝি না, কিন্তু পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কিন্তু বুঝতে পেরেছিল এর শক্তি। সে কারণে ৭১ সালে তারা এই শহীদ মিনার ভেঙে ফেলেছিল। কিন্তু তারা ভেঙে ফেললেও এটি আমরা তৈরি করেছি কারণ এটি আমাদের দেশ তৈরির ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছে। তারা জীবন দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে কীভাবে কোনো কিছু আদায় করতে হয়।’
শহীদ মিনার থেকে পদযাত্রীরা এরপর জগন্নাথ হলের দিকে যাত্রা শুরু করে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে এ হলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী গণহত্যা চালায়। শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের সামনে ভারতেশ্বরী হোমসের হেনা সুলতানা নতুন প্রজন্মের অভিযাত্রীদের বলেন, ‘পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নৃশংসতার কোনো তুলনা পৃথিবী নেই। তারা নিরীহ ছাত্রদের আবাসিক হলে অতর্কিতে প্রবেশ করে নির্বিচারে হত্যা করেছে ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারী সবাইকে। তারপর তাদের মৃতদেহ টেনেহেঁচড়ে এনে মাটিচাপা দিয়ে লুকোতে চেষ্টা করেছে। কিন্তু বিশ্ববাসীর কাছে লুকোতে পারেনি। এমন জঘন্যতম হত্যাকা- পৃথিবীর ইতিহাসে আর নেই।’ জগন্নাথ হলের শহীদদের এক মিনিট নীরবতা পালন করে পদযাত্রীরা রমনা কালীমন্দিরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। রমনা কালীমন্দিরে পদযাত্রীরা উপস্থিত হলে অভিযাত্রী দলের সমন্বয়ক মির্জা জাকারিয়া বেগ পদযাত্রীদের উদ্দেশে বলেন, ‘একসময় এই মন্দির ছিল উপমহাদেশের প্রখ্যাত কালীমন্দির। একে ঘিরে গড়ে উঠেছিল গ্রাম। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে স্বামী পরমান্দসহ ১০১ জনকে পুড়িয়ে মারা হয় এবং অগণিত নারীকে ধরে নিয়ে যায় যাদের খোঁজ আর কখনো পাওয়া যায়নি। এখানে উন্নতজাতের ৫০টি গরুর গোশালা ছিল। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর রোষানল থেকে রেহাই পায়নি সেই অবলা প্রাণীও। পুড়িয়ে মারা হয়েছিল তাদেরও। মানুষ কতটা নৃশংস হতে পারে তা এ ঘটনা থেকে বোঝা যায়।’ পদযাত্রীরা শহীদদের প্রতি এক মিনিট নীরবতা পালন করে শিখা চিরন্তনীর উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে।
শিখা চিরন্তনীতে পদযাত্রীদের উদ্দেশে ইমাম হোসেন গাজী বলেন, ‘এই শিখা চিরন্তনী আমাদের সার্বভৌমত্বের প্রতীক। স্বাধীনতার প্রতীক এ শিখা আমরা রক্ষা করে চলব। স্বাধীনতার এই দিনে এটিই হোক আমাদের অঙ্গীকার।’ এরপর শিক্ষার্থীরা ছবির হাট হয়ে মধুর ক্যান্টিনের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। মধুর ক্যান্টিন সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে জানাতে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা মহসীন হোসেন বলেন, ‘মধুদা ছিলেন ছাত্রদের ভরসার স্থান। তার মধুর ক্যান্টিনেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিভিন্ন আন্দোলনের পরিকল্পনা দানা বেঁধেছে, সে কারণে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী মধুদা এবং তার ক্যান্টিনের প্রতি ক্ষুব্ধ ছিল। প্রথম সুযোগেই তাই মধুদা ও তার ছেলেকে তারা হত্যা করে এবং ক্যান্টিনকে একটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছিল।’
মধুদার আবক্ষ ভাস্কর্যের সামনে এক মিনিট নীরবতা পালন করে অভিযাত্রী দল স্মৃতি চিরন্তনীর উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। সেখানে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে অভিযাত্রী দল মহম্মদপুরের শারীরিক শিক্ষা কলেজের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী শারীরিক শিক্ষা কলেজকে ১৯৭১ টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করেছিল। হেনা সুলতানা পদযাত্রীদের জানান, এখানেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে এনেছিল দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা এবং তার ছেলেকে। জিজ্ঞাসাবাদের পর একবার মুক্তি দিয়েও তাদের আবার ডেকে আনে এবং এরপর তাদের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
মর্মান্তিক এ ঘটনা জেনে পদযাত্রীদের মন ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। তাদের অনুপ্রেরণা জোগাতে মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমরা অনেক ত্যাগের বিনিময়ে এ স্বাধীনতা পেয়েছি এবং আমরা এগিয়ে যাব। আমরা এগিয়ে যাব তার একটি লক্ষণ আমি উল্লেখ করি। এখানে যারা অংশগ্রহণ করেছে তাদের মধ্যে নারী ও পুরুষের সংখ্যা প্রায় সমান-সমান। যেকোনো কাজে যদি নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ থাকে তাহলে সেটি অবশ্যই সফলতা পায়। আমাদের দেশ গড়ার কাজে যেহেতু তোমরা সবাই অংশগ্রহণ করছ সেহেতু আমি নিশ্চিত জানি আমরা এগিয়ে যাবই। বঙ্গবন্ধুর ভাষায় বলতে, কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না।’
এরপর পদযাত্রীরা রায়েরবাজার বধ্যভূমির উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে জাফর ইকবাল ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের স্মৃতি উল্লেখ করে বলেন, ‘আমাদের জীবনের শ্রেষ্ঠতম আনন্দের দিন ছিল। দীর্ঘদিন পর আমরা নির্ভয়ে বাড়ি থেকে বের হতে পেরেছি। আমি একটি পত্রিকা কিনলাম। তখন একটা পত্রিকা ছিল দৈনিক পাকিস্তান। ১৬ ডিসেম্বর পত্রিকা কিনে দেখলাম পাকিস্তান শব্দটি ক্রস চিহ্ন দিয়ে কেটে দেওয়া, পাশে লেখা বাংলাদেশ। মনটা আনন্দে ভরে উঠল। কিন্তু মনও আবার খারাপ হয়ে গেল ভেতরে একটা খবর পড়ে। সেখানে লেখা দেশের এই বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক এদের পাওয়া যাচ্ছে না। সারা দেশ যখন খুঁজতে শুরু করল তখন দুয়েক দিন পর এখানে এই রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে তাদের পাওয়া গেল। তোমরা মনে রেখো এ দেশটা এক সাগর রক্তের বিনিময়ে পেয়েছি। লন্ডন টাইমস একটি কথা লিখেছিল, যদি রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা কিনতে হয় তাহলে বাংলাদেশের থেকে বেশি দাম কেউ দেয়নি। কথাটা সত্য। এই ত্যাগ যেন বৃথা না যায় সে চেষ্টাই আমাদের করতে হবে।’
রায়েরবাজার বধ্যভূমি থেকে পদযাত্রীরা বসিলা ঘাটে পৌঁছে। সেখান থেকে তারা নৌপথে জাতীয় স্মৃতিসৌধের দিকে যাত্রা করে। অভিযাত্রী দলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, বাংলাদেশের প্রথম এভারেস্টজয়ী নিশাত মজুমদার জানান, ’৭১ যারা দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল তারা একটি বড় অংশ নৌপথে ভ্রমণ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। সেদিনের কথা স্মরণ করে আমরা এ পদযাত্রায় নৌপথকেও অন্তর্ভুক্ত করেছি। নৌকাযোগে পদযাত্রীরা চাকলগ্রামে পৌঁছে। সেখান থেকে হেঁটে তারা জাতীয় স্মৃতিসৌধে পৌঁছে। সেখানে তাদের তারুণ্যের দীপ্ত শপথ পাঠ করান নিশাত মজুমদার। পদযাত্রীরা শপথ নেয়, শুদ্ধ সাংস্কৃতিক সৌধ, অর্থনৈতিক উন্নয়নের সৌধ, সম্প্রীতির সৌধ আর জাতির নবজাগরণের সৌধ নির্মাণের। শপথ গ্রহণের পর পদযাত্রীরা নীরবতা বজায় রেখে স্মৃতিসৌধ ত্যাগ করে। শেষ হয় শোককে শক্তিতে রূপান্তরের অদম্য পদযাত্রা।
পদযাত্রা শেষ হলেও তাকে বয়ে নিয়ে চলেছে নতুন প্রজন্মের নির্জন (১৬), কনা (১০), নাহিয়ান (৬), সায়ান (৮), পদ্ম (২), মহুয়া (৫), মাশফিক (৪), উমামা (৮), মাহিরাহ (৫), আভা (৮), স্নেহা রায়হান (৫), ওস্মি (১৩)। নবম শ্রেণিপড়ুয়া নির্জন জানায়, এ পদযাত্রায় অংশগ্রহণের জন্য সে কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছে। ওস্মি অবশ্য প্রথম নয়। কনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে সবচেয়ে বেশিবার অংশগ্রহণের রেকর্ড তার। প্রতিবারই তার প্রথমবারের মতো অনুভূতি হয় বলে জানায়। পদযাত্রায় বহন করা জাতীয় পতাকাটি সঙ্গে করে নিয়ে যেতে চায় মাশফিক। দিনের শেষে ‘শোক থেকে শক্তি : অদম্য পদযাত্রা’ হয়ে ওঠে বর্তমান প্রজন্মের কাছ থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের লাল-সবুজের স্বপ্ন বুঝে নেওয়ার উপলক্ষ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটে অবৈধভাবে টাকা নিয়ে চাকরি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এই লেনদেন সম্পর্কিত একটি ফোনালাপ দৈনিক দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে।
গত ১৯ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটে মেশিন অপারেটর পদে রানা এবং আব্দুল্লাহ আল মামুন লিমনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই নিয়োগে দুই প্রার্থীর কাছ থেকে ৮ লাখ করে মোট ১৬ লাখ টাকা নেন ছাত্রলীগের পাঁচ নেতা।
অভিযুক্তরা হলেন ঢাবি লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাজফুজুর রহমান ফাহাদ, সাধারণ সম্পাদক খবির হোসেন সুমন, হাজারীবাগ থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবুল হাসনাত বাহার, লেদার ইনস্টিটিউট ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি মুইন মুহতাদিউল হক রাহাত এবং সাধারণ সম্পাদক রেদোয়ানুল হক রাসেল। আবুল হাসনাত বাহার নিজ কার্যালয়ে রাহাত বাদে বাকি তিনজনকে ৩ লাখ ২০ হাজার করে টাকা দেন। তবে রাহাতের টাকা বাহার নিজের কাছে রেখে দেন। এতে ক্ষুব্ধ হন লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট ছাত্রলীগের সভাপতি মুইন মুহতাদিউল হক রাহাত। ক্ষুব্ধ রাহাতের সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক রেদোয়ানুল হক রাসেলের মধ্যকার ১ মিনিট ৮ সেকেন্ড কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়েছে।
রেকর্ডে রাসেলের উদ্দেশ্যে রাহাতকে বলতে শোনা যায়, ‘তোমাদের কী হইছে, এখানে এটা আমাকে খুলে বলো তো।’ উত্তরে রাসেল বলেন, ‘আমাকে বাহার ভাই ফোন দিয়েছিলেন। ফোন দিয়ে উনি আমাকে বলছেন, “অফিসে আয়।” সবাইকে ফোন দিয়ে উনি ডাকছেন। এরপর সবাই সেখানে যাওয়ার পর আপনাকে (রাহাত) ফোন দিয়েছিলেন উনি। আপনাকে ফোন দেওয়ার পর উনি সেখানে টাকা ভাগ করেছেন।’ কীভাবে টাকা ভাগ করা হয়েছে রাহাত এটি জানতে চাইলে রাসেল বলেন, টাকা পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত হতে রাহাত আবার জিজ্ঞাসা বলেন, ‘১৬ লাখ টাকাই পাঁচ ভাগ করা হয়েছে?’ নিশ্চিত করে রাসেল বলেন, ‘হ্যাঁ, পাঁচ ভাগ করছে। মানে সবাইকে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। আর আপনারটা (রাহাত) বাহার ভাইয়ের কাছে রাখা আছে।’ এরপর কাকে কাকে টাকা দেওয়া হয়েছে, সেটা বর্ণনা করে রাসেল বলেন, ‘আমাকে (রাসেল), মাহফুজ ভাইকে, সুমন ভাইকে, আপনাকে (রাহাত) এবং বাহার ভাইকেও ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।’ রেকর্ডিংয়ের শেষ দিকে রাহাতকে বলতে শোনা যায়, আচ্ছা, ১৬ লাখকে পাঁচ ভাগ করলে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকাই তো হয়।
অভিযোগের বিষয়ে আবুল হাসনাত বাহার বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না।’
মাজফুজুর রহমান ফাহাদ বলেন, ‘রাজনীতিতে অনেকেই অনেককে ফাঁসানোর চেষ্টা করে। এখানে এমনটাই হয়েছে হয়তো। আমি তো এখন পদে নেই। আমি কীভাবে নিয়োগ বাণিজ্য করব? আমি এ বিষয়ে জানি না।’
খবির হোসেন সুমন বলেন, ‘এই ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।’
মুইন মুহতাদিউল হক রাহাত বলেন, ‘রেকর্ডটা শুনলে বোঝা যাবে যে আমি নিয়োগ বাণিজ্য কিংবা টাকা ভাগাভাগির সঙ্গে জড়িত নই। এই ঘটনা শোনার পর আমি রাসেলের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাই। রেকর্ডে পরিষ্কারভাবে বলাও আছে যে তারা টাকা পাঁচ ভাগ করেছে। আমাকে না জানিয়ে সভাপতি হিসেবে আমার নামে নাকি তারা টাকা ভাগ করেছে। এটা আমি জানিও না আমার নামের ভাগের টাকাটা বাহার নিয়েছেন। আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। যদি জানতাম তাহলে আমি এ ধরনের কাজের সঙ্গে জড়িতও হতাম না।’
রেদোয়ানুল হক রাসেল বলেন, ‘এই অভিযোগ সঠিক। উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে আমার নামে এ ধরনের কথা ছড়ানো হচ্ছে। রেকর্ডিংয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘রেকর্ডের ওই ব্যক্তি আমি নই।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন বলেন, ‘অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে জানতে লেদার ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তার ফোনে সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, ‘বিষয়টা দুঃখজনক। আমি যত দূর শুনেছি, দক্ষ এবং যোগ্য লোকেরাই নিয়োগ পেয়েছে। এরপরও যদি কোনো ধরনের অনিয়ম ও আর্থিক লেনদেনের ঘটনা ঘটে থাকে, আমি খোঁজ নিয়ে দেখব।’
বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার তিনটি বইয়ের জন্য ‘বিশেষ সাহিত্য পুরস্কার’ দিয়েছে ফাউন্ডেশন অব সার্ক রাইটার্স অ্যান্ড লিটারেচার (এফওএসডব্লিউএএল)। গতকাল রবিবার প্রখ্যাত পাঞ্জাবি ঔপন্যাসিক এবং এফওএসডব্লিউএএল-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অজিত কাউর আনুষ্ঠানিকভাবে সংগঠনের আঞ্চলিক সম্মেলনে সফররত বাংলাদেশি লেখক ও গবেষক রামেন্দু মজুমদার এবং মফিদুল হকের হাতে এ পুরস্কার তুলে দেন।
সার্ক সাহিত্য পুরস্কার হলো ২০০১ সাল থেকে এফওএসডব্লিউএএলের দেওয়া একটি বার্ষিক পুরস্কার। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’ এবং ‘আমার দেখা নয়াচীন’ এ তিনটি বইয়ের জন্য বঙ্গবন্ধুকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে গতকাল সকালে শুরু হয়েছে এফওএসডব্লিউএএল-এর তিন দিনব্যাপী আঞ্চলিক সাহিত্য সম্মেলন। সম্মেলনে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলের বিপুল সংখ্যক বিশিষ্ট লেখক-সাহিত্যিক অংশগ্রহণ করছেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে সম্মেলনের উদ্বোধনের তাৎপর্য বর্ণনা করে অজিত কাউর এর আগে এক বার্তায় লিখেছিলেন যে, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয় কোনো ছোট ঘটনা ছিল না। তিনি আরও বলেন, ‘‘বিশ্বজুড়ে মানুষ ভূমি ও অঞ্চলের জন্য, বিদেশি নিপীড়ক বা রাজা ও স্বৈরশাসকদের কাছ থেকে তাদের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ছিল ভিন্ন ও অনন্য। কারণ এটি ছিল ‘মানুষের প্রাণবন্ত আত্মা’ সংরক্ষণ যা শুধুমাত্র তার নিজস্ব সংস্কৃতি এবং নিজস্ব ভাষায় স্পন্দিত এবং বিকাশ লাভ করে!’’
অজিত কাউর তার বার্তায় বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের মধ্যে না থাকলেও তিনি আমাদের জন্য তিনটি মূল্যবান ও চিন্তাশীল বই রেখে গেছেন। তাই এই মহান মানবের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তাকে (বঙ্গবন্ধু) এফওএসডব্লিউএএল সাহিত্য উৎসব-২০২৩-এর সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ থেকে এফওএসডব্লিউএএল আঞ্চলিক সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন বিশিষ্ট লেখক সেলিনা হোসেন, রামেন্দু মজুমদার, মহিদুল হক ও মোহিত কামাল।
দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের মিনিস্টার (প্রেস) শাবান মাহমুদ এবং হাইকমিশনের পক্ষে কনস্যুলার (রাজনৈতিক) সফিউল আলম অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। বাসস
জরায়ু ক্যানসারের নকল ভ্যাকসিন (টিকা) ও আমদানি নিষিদ্ধ হেপাটাইটিস-বি টিকাদান কার্যক্রম চালাতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ব্যবহারের বিষয়টি সামনে আসার পর নড়েচড়ে বসেছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। কর্মকর্তাদের দিয়ে অভিযান চালানোর পর এবার ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পূর্বানুমোদন ছাড়া স্কুল কলেজে বেসরকারিপর্যায়ে কোনো ধরনের ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম না চালাতে অনুরোধ করেছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। গত ১৯ মার্চ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর দেওয়া এক চিঠিতে এ অনুরোধ করা হয়েছে।
দেশে আমদানি নিষিদ্ধ হেপাটাইটিস-বি ভ্যাকসিন (টিকা) চোরাই পথে এনে সেগুলো ভেঙে পানি মিশিয়ে জরায়ু ক্যানসারের নকল টিকা তৈরি করে নারীদের দেওয়া এক চক্রের ছয় সদস্যকে সম্প্রতি গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। চক্রটি গত দুই বছরে ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী ১৪২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্যাম্প করে ছয় হাজারের বেশি নারীকে জরায়ু ক্যানসারের নকল টিকা ‘সারভারিক্স’ ও আমদানি নিষিদ্ধ হেপাটাইটিস-বির টিকা ‘জেনেভ্যাক-বি’ দিয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বরাবর ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আপনাদের অবহিত করা যাচ্ছে যে সারভারিক্স ভ্যাকসিন (টিকা) নকল পাওয়া গেছে। অনিবন্ধিত জেনেভ্যাক-বি ভ্যাকসিনের নকল লেবেল লাগিয়ে একটি চক্র নকল করছে, যা গত ১৬ মার্চ ডিবি (পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ) কতৃক জব্দ করা হয়েছে। গত ১৮ মার্চ ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা মিরপুরের দারুস সালামে এ আর খান ফাউন্ডেশনে ভ্যাকসিনটি দিয়ে মেয়েদের ভ্যাকসিনেশন করা হতো তার আলামত পেয়েছে। উল্লেখ্য যে, গাজীপুর জেলার বিভিন্ন স্কুল, কলেজে নকল ভ্যাকসিনের প্রচারণা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।’
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ‘স্কুল, কলেজে বেসরকারিপর্যায়ে কোনো ধরনের ভ্যাকসিনেশন করার জন্য বলা হলে এ বিষয়ে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পূর্বানুমোদন থাকা আবশ্যক। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পূর্বানুমতি ছাড়া এ ধরনের ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রাম স্কুল-কলেজে না করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।’
এ চিঠির প্রেক্ষিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর কী পদক্ষেপ নিয়েছে তা জানতে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি সাড়া দেননি। মাধ্যমিক উইংয়ের পরিচালক মোহাম্মদ বেলাল হোসেনও ফোন ধরেননি।
আগের ইনিংসের মতোই ব্যর্থ উসমান খাজা। পারেননি ডেভিড ওয়ার্নারও। প্রথম ইনিংসের দুই সেঞ্চুরিয়ানও ফিরে গেছেন। দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিংয়ে তাই খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থায় নেই অস্ট্রেলিয়া। তবুও তৃতীয় দিন শেষে এগিয়ে আছে তারা।
ওভালে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতকে ২৯৬ রানে আটকে দেওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেট হারিয়ে ১২৩ রান করে অসিরা। এগিয়ে আছে ২৯৬ রানে।
দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিংয়ের শুরুটা ভালো করেছে ভারত। অস্ট্রেলিয়াকে চেপে ধরেছে তারা।
দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও উসমান খাজা ফেরেন ২৪ রানের মধ্যেই। মারনাস লাবুশান ও স্টিভেন স্মিথের ৬২ রানের জুটি ভাঙেন রবীন্দ্র জাদেজা, পরে ট্রাভিস হেডকেও ফেরান এই স্পিনার। টেস্ট ক্যারিয়ারে অষ্টমবারের মতো স্মিথকে আউট করেছেন জাদেজা।
তৃতীয় দিন শেষে মারনাস লাবুশানের সঙ্গে অপরাজিত আছেন ক্যামেরুন গ্রিন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: অস্ট্রেলিয়া: ৪৬৯ ও ৪৪ ওভারে ১২৩/৪ (লাবুশেন ৪১*, স্মিথ ৩৪; জাদেজা ২/২৫, উমেশ ১/২১)ভারত ১ম ইনিংস: ৬৯.৪ ওভারে ২৯৬ (রাহানে ৮৯, শার্দূল ৫১, জাদেজা ৪৮; কামিন্স ৩/৮৩, গ্রিন ২/৪৪, বোল্যান্ড ২/৫৯)।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাতে বনানীর বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
শুক্রবার সকালে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বনানীর একটি বাসা থেকে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়, যা ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। পরে রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে স্ত্রী হারান শাহরিয়ার কবির।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
নিজের বিদায়ী ম্যাচ বলেই কিনা জ্বলে উঠলেন সার্জিও রামোস। শুরুতেই পেয়ে যান গোলের দেখা। কিলিয়ান এমবাপ্পে আছেন তার আগের মতোই। তিনিও ডাবল লিড এনে দেন। তবে বিদায়ী ম্যাচে নিষ্প্রভ রইলেন লিওনেল মেসি। তাতেই কিনা শুরুতেই এগিয়ে যাওয়া ম্যাচটি হার দিয়ে শেষ করেছে পিএসজি।
লিগ ওয়ানের শেষ ম্যাচে ক্লেরমো ফুতের সঙ্গে ৩-২ গোলে হেরে গেছে প্যারিসিয়ানরা। তাতে রাঙানোর বদলে বিষাদভরা বিদায় হলো মেসি-রামোসদের।
আগেই লিগ শিরোপা নিশ্চিত করা পিএসজি মৌসুমে নিজেদের এই শেষ ম্যাচে দুটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছিল। হুগো একিতেকে ও আশরাফ হাকিমিকে ফেরান কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়ের।
শুরুতে গুছিয়ে উঠতে সময় লেগেছে পিএসজির। প্রথম ১০ মিনিটের পর ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২১ মিনিটের মধ্যে এগিয়ে গিয়েছিল ২-০ গোলে। রামোস ১৬ মিনিটে হেড থেকে এবং তার ৫ মিনিট পর কিলিয়ান এমবাপ্পে পেনাল্টি থেকে গোল করেন।
২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে ক্লেরম ফুতের পাল্টা লড়াই শুরু করতে সময় নিয়েছে মাত্র ৩ মিনিট। ২৪ মিনিটে গোল করেন ক্লেরমঁর গাস্তিয়েন। এর প্রায় ১২ মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে গোল করার সুযোগ নষ্ট করেন ক্লেরমঁ স্ট্রাইকার কেয়ি। পরে অবশ্য ৬৩ মিনিটে তাঁর গোলেই জিতেছে ক্লেরমঁ। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ক্লেরমঁর হয়ে সমতাসূচক গোলটি জেফানের।
বিরতির পর গোলের দারুণ একটি সুযোগ নষ্ট করেন মেসি। ৫৪ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে এমবাপ্পে ঢুকে পড়েন ক্লেরমঁর বিপদসীমায়। তাঁর ক্রস পেয়ে যান ডান প্রান্ত দিয়ে দৌড় বক্সে ঢোকা মেসি। সামনে গোলকিপার একা, কিন্তু মেসি অবিশ্বাস্যভাবে বলটা পোস্টের ওপর দিয়ে মারেন।
সতীর্থ গোলকিপার সের্হিও রিকোর সুস্থতা কামনা করে বিশেষ জার্সি পরে মাঠে দাঁড়িয়েছিলেন মেসি-এমবাপ্পেরা। ঘোড়ায় চড়তে গিয়ে দূর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন রিকো। ম্যাচে বিশেষ জার্সি পরে খেলেছে পিএসজি। মেসি-রামোসদের জার্সির পেছনে রিকোর নাম লেখা ছিল।
৩৮ ম্যাচে ৮৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থেকে মৌসুম শেষ করল পিএসজি। ৮৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে লেঁস। তৃতীয় মার্শেইয়ের সংগ্রহ ৭৩ পয়েন্ট। ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে চারে ইউরোপা লিগ নিশ্চিত করা রেঁনে।