
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
এগিয়ে আসছে মাহে রমজান, বাজারে ব্যবসায়ীরা দোকানে মজুদ করছেন বস্তা বস্তা মুড়ি; এমন দৃশ্য রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বেশির ভাগ জায়গার। ব্যতিক্রম শুধু সিলেট। দেশের পূর্ব কোণের বাসিন্দাদের ইফতারের পাতে মুড়ি একেবারেই ব্রাত্য; বরং ইফতারে সিলেটবাসীর প্রিয় খাবার পাতলা খিচুড়ি। বাড়িতে বানানো খিচুড়ির পাশাপাশি এখন রেস্টুরেন্টগুলোতেও ইফতারের অন্যান্য অনুষঙ্গের সঙ্গে বিক্রি হচ্ছে পাতলা খিচুড়ি। সঙ্গে সব সময়ের প্রিয় আখনি তো আছেই। সিলেটের বাকরখানিও ঢাকাই বাকরখানির চেয়ে স্বাদে ও গড়নে আলাদা। টানা পরোটার মতো হালকা মিষ্টি স্বাদের এই বাকরখানি মাগরিবের নামাজের পর চায়ে ডুবিয়ে খাওয়ার মজাই আলাদা!
একটা সময় বাংলা বা পূর্ববঙ্গ প্রদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল বলেই হয়তো সিলেটের খাদ্য সংস্কৃতি দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে খানিকটা ভিন্ন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় গণভোটের মাধ্যমে সিলেটকে আসাম থেকে বিচ্ছিন্ন করে পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। আসামের সঙ্গে যুক্ত থাকার প্রভাব সিলেটবাসীর খাদ্যাভ্যাসে পড়েছে ঠিকই, তবে তা ইফতারের বেলায় হয়তো নয়। আসামের অত্যন্ত জনপ্রিয় পদ মাসোর টেঙ্গা (মাছের টক তরকারি) সিলেটেও বহুল প্রচলিত এবং সমাদৃত। তবে ইফতারে পাতলা খিচুড়ির প্রবর্তনের নেপথ্যে খুব সম্ভবত ইয়েমেনের প্রভাব। ১৩০৩ সালে গৌড়ের হিন্দু রাজা গৌড় গোবিন্দের সঙ্গে লড়াই বাধে সুলতান শামসউদ্দিন ফিরোজ শাহের। ফিরোজ শাহের তিনটি আক্রমণ ব্যর্থ হলে চতুর্থ আক্রমণে ইয়েমেন থেকে আসা সুফি সাধক ও ইসলাম প্রচারক হজরত শাহজালাল ও তার ৩৬০ সঙ্গী যোগ দেন নাসিরউদ্দিন সিপাহসালারের বাহিনীর সঙ্গে। গৌড় গোবিন্দ পরাজিত হয়ে পালিয়ে যান আর সিলেটে ইসলাম প্রচার শুরু হয়। ইবনে বতুতার ভ্রমণকাহিনি ‘রিহলা’তেও আছে শাহজালালের (রহ.) সঙ্গে মরোক্কান পর্যটকের সাক্ষাতের কথা, তার আবাসকে ঘিরে গড়ে ওঠা মুসলিম জনপদের কথা। ধরে নেওয়া যেতেই পারে, ইয়েমেন থেকে হজরত শাহজালালের (রহ.) সফরসঙ্গী হয়ে যারা এসেছিলেন, তারা পবিত্র রমজান মাসে ইফতারে যে খাবারটা খেতেন সেটাই ধীরে ধীরে গোটা জনপদেই ছড়িয়ে গেছে।
ইয়েমেন বা গোটা মধ্যপ্রাচ্যেই ইফতারে অন্যতম প্রধান খাবার হচ্ছে হারিসা। আধভাঙা যবের দানা সেদ্ধ করে তাতে মাংস, চর্বি মিশিয়ে রান্না করা হয় হারিসা, যা দেখতে এবং প্রকৃতিতে অনেকটা সিলেটের পাতলা খিচুড়ির মতোই। হতে পারে একটা সময় হারিসা খাওয়া হলেও কালের বিবর্তনে এবং উপকরণের দু®প্রাপ্যতায় হারিসার জায়গা নিয়েছে পাতলা খিচুড়ি। সিলেটে পাতলা খিচুড়ি রান্না হয় দুইভাবে, ডাল দিয়ে এবং ডাল ছাড়া। প্রধান উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃয় হতো হাওরের রাতাবোরো চাল। এই চালের সঙ্গে ডাল ও অন্যান্য মসলা মিশিয়েই নরম, প্রায় তরল থকথকে পাতলা খিচুড়ি রান্না হয় ইফতারে। সঙ্গে অবশ্য ছোলা (সিলেটিরা যাকে বলেন চানা), পেঁয়াজু, আলুর চপ বেগুনি এসব থাকেই। তবে মুড়ি একদমই ব্রাত্য। ঢাকায় যেভাবে ছোলা, পেঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ এমনকি জিলাপি সবকিছু ভেঙে কচলে মুড়ির সঙ্গে মাখিয়ে খাওয়া হয় সিলেটের ইফতারে এমন দৃশ্য কল্পনাতেও আসবে না।
সিলেটে ইফতারে রোজকার অনুষঙ্গ পাতলা খিচুড়ি, তবে অতিথি আপ্যায়নে কিংবা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে ইফতার পাঠাতে স্পেশাল আইটেম হলো আখনি। ঢাকাই তেহারির মতোই আখনি, তবে স্বাদে একটু ভিন্নতা আছে। পোলাওর চাল আর ছোট করে টুকরো করা মাংস দিয়ে তেহারির আদলে রান্না করা আখনিতে মাংসের সঙ্গে যোগ করা হয় কিউব করে কাটা গাজর, মটর আর আলু। বাসাবাড়িতে রান্নার পাশাপাশি এখন সিলেটের বিভিন্ন রেস্টুরেন্টের ইফতারের পসরাতেও আছে গরু, মুরগি বা খাসির আখনি।
সিলেটের বাকরখানিও স্বাদে এবং চেহারায় ঢাকাই বাকরখানির চেয়ে একেবারেই আলাদা। দেখতে অনেকটাই টানা পরোটার মতো। বাকরখানি হালকা মিষ্টি স্বাদের হয়ে থাকে। শুকনো অথবা হালকা সেঁকে নেওয়া বাকরখানি দুধ চায়ে ডুবিয়ে খাওয়ার মজাই আলাদা। তারাবিহর নামাজের পর বাসায় ফিরে ক্লান্ত মুসল্লিরা চা আর বাকরখানি খেয়ে প্রশান্তি ফিরে পান। তাই তো সিলেটের ফিজা অ্যান্ড কোং, রিফাত অ্যান্ড কোং, ফুলকলিসহ বেশির ভাগ কনফেকশনারি ও বেকারি রোজার মাসজুড়েই তৈরি করে বাকরখানি। অনাবাসী সিলেটিরা আত্মীয়স্বজনদের মাধ্যমে সিলেট থেকে আনিয়ে নেন এই বাকরখানি, যা অন্য কোথাও পাওয়া যায় না।
ফেসবুক, ইউটিউবের কল্যাণে ঢাকার বড় বাপের পোলায় খায়, সুতলি কাবাবসহ অনেক কিছুই পৌঁছে গেছে সিলেটের ইফতার বাজারে। তবে সেসব ক্ষণিকের অতিথি। সিলেটের মানুষ ইফতারে ঘরে তৈরি পাতলা খিচুড়িতেই মজে আছেন, যা স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকরও। নানান ভাজাপোড়ার সঙ্গে মুড়িমাখার ‘অনুপ্রবেশ’ এখনো হয়নি সিলেটবাসীর হেঁশেলে।
সরকারি হাসপাতালে ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখার বিষয়টি চূড়ান্ত করেছে সরকার। আগামী ৩০ মার্চ থেকে প্রাথমিকভাবে দেশের ১০ জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে রোগী দেখা শুরু হচ্ছে। হাসপাতালের ডিউটি শেষে বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত একজন চিকিৎসক সপ্তাহে দুদিন রোগী দেখবেন। এ সময় রোগীদের প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থাও থাকবে।
এসব চেম্বারে চিকিৎসকদের দেখাতে নির্দিষ্ট ফি দিতে হবে রোগীদের। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে রোগীদের সার্জারি, ডায়াগনস্টিক, ক্লিনিক্যাল, প্যারা-ক্লিনিক্যাল টেস্টসহ বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষার জন্যও বৈকালিক ফি নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর মধ্যে অধ্যাপককে ৫০০ টাকা, সহযোগী অধ্যাপককে ৪০০, সহকারী অধ্যাপককে ৩০০ এবং অন্য চিকিৎসককে ২০০ টাকা করে ফি দিতে হবে। এসব ফি থেকে অধ্যাপকরা ৪০০ টাকা, সহযোগী অধ্যাপক ৩০০, সহকারী অধ্যাপক ২০০ এবং অন্য চিকিৎসকরা ১৫০ টাকা করে পাবেন। বাকি টাকা প্রত্যেক চিকিৎসককের সঙ্গে দুজন করে সহযোগী থাকবেন এবং তারা প্রত্যেকে ৫০ টাকা করে পাবেন।
গতকাল সোমবার দুপুরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সভাপতিত্বে কনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস নীতিমালা-২০২৩ চূড়ান্তকরণ-সংক্রান্ত এক সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়। পরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এক সংবাদ সম্মেলনে এসব বিষয়ে জানান।
অবশ্য প্রাথমিকভাবে কোন ১০ জেলা ও ২০ জেলায় প্র্যাকটিস শুরু হচ্ছে এবং কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফি কত ও কীভাবে এসব সেবা পাবেন রোগীরা এসব বিষয়ে কিছু জানাননি স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এ ছাড়া দেশব্যাপী কবে থেকে এই প্র্যাকটিস শুরু হচ্ছে, সে ব্যাপারেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে কনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস শুরুর কারণ ব্যাখ্যা করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সরকারি হাসপাতালে সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত চিকিৎসকরা বিনামূল্যে রোগী দেখেন। এতে বিকেলে বহু মানুষ চিকিৎসা নিতে না পেরে বাইরে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে দেখান। প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের ‘ফি’ বেশি হওয়ায় দেশের মানুষের চিকিৎসাব্যয় বহু গুণ বৃদ্ধি পায়। এজন্য সরকার কনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিসের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে কিছু সম্মানী ফি দেওয়ার মাধ্যমে মানুষ চিকিৎসা নিতে পারবেন।
এসব চেম্বারে আসা রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুবিধার ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বৈকালিক চিকিৎসাসেবায় ছোট অস্ত্রোপচার ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রাফিসহ অন্য যে সেবাগুলো থাকে, সেগুলোও থাকবে। আর এসব সেবারও মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। তার একটি অংশ পাবেন চিকিৎসক ও সহযোগিতাকারীরা, আরেকটি অংশ পাবে হাসপাতাল।
তিনি আরও বলেন, মানুষের চিকিৎসাব্যয় কেন বৃদ্ধি পাচ্ছে সেসব বিষয় নিয়ে দফায় দফায় আলোচনা করা হয়েছে। দেশের সব বিভাগে গিয়ে জেলা, উপজেলা হাসপাতালে সেবার মান যাচাই করা হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে দেশের চিকিৎসক নেতাকর্মীদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ), স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদসহ (স্বাচিপ) সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ে দফায় দফায় কথা হয়েছে। দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা বৃদ্ধির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাও রয়েছে। সব বিষয় মিলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধির বিভিন্ন উদ্যোগের অংশ হিসেবে এই বৈকালিক ইনস্টিউশনাল প্র্যাকটিস আপাতত ছোট আকারে শুরু করা হচ্ছে। এই কাজের সুফলতা দেখে খুব দ্রুতই দেশের সব জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা চালু করা হবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, একজন চিকিৎসককে সপ্তাহে মাত্র দুদিন অতিরিক্ত তিন ঘণ্টা করে সেবা দিতে হবে। তবে এই সেবা যাতে মানুষ সপ্তাহে অন্তত ছয় দিন নিশ্চিত করে পান সেটি নিশ্চিত করতে হবে। এখানে চিকিৎসক, নার্স ও টেকনিশিয়ানরা পর্যায়ক্রমে দায়িত্ব পালন করবেন।
এই প্র্যাকটিসের ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, একজন বিশেষ চিকিৎসক বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার কিংবা কনসালটেশনে যে টাকা নেন, চেম্বার প্র্যাকটিসে তার চেয়ে অনেক কম টাকা নেবেন। অনেক দেশেই সরকারি চিকিৎসকরা প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেন না। আমরা সরকারি চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসের অনুমোদন দিই। এখন তারা যাতে সেই প্র্যাকটিসটা সরকারি প্রতিষ্ঠানে করেন কমমূল্যে, আমরা সেই চেষ্টা করছি। এতে মানুষ ভালো চিকিৎসাসেবা পাবেন।
ব্যক্তিগত চেম্বারের কারণে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবায় কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কি না জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এ রকম কিছু আমরা দেখছি না। বিকেলের সেবার কারণে সকালের সেবায় কোনো প্রভাব পড়বে না। সরকারি হাসপাতালে প্রাতিষ্ঠানিক প্র্যাকটিস শুরু হলে মানুষ আরও ভালো সেবা পাবেন। যে সেবাটা তারা দিনের বেলায় পেতেন, সেটি তারা সন্ধ্যা পর্যন্ত পাবেন। জরুরি সেবাও তারা হাসপাতাল থেকে পাবেন। সার্বিক স্বাস্থ্যসেবার একটি উন্নয়ন হবে।
এসব চেম্বারে চিকিৎসকদের রোগী দেখার বাধ্যবাধকতা প্রসঙ্গে সভায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, চিকিৎসকরাসহ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সরকারি সেবাদানের জন্য সরকারের প্রয়োজন হলে ২৪ ঘণ্টা সেবা দিতে হবে এটাই নিয়ম। সে ক্ষেত্রে সব পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী সরকারের নির্দেশনা মেনে চলতে বাধ্য থাকবেন।
সভায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আজিজুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. টিটো মিঞা, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিব) সভাপতি অধ্যাপক ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী, মহাসচিব অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান মিলন, ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষা প্রমুখ বক্তব্য দেন।
ময়মনসিংহের নান্দাইলে সরকারের নির্মিত মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের জনবল নিয়োগ নিয়ে চরম বিতর্ক ও সমালোচনার মুখে পড়েছেন নিয়োগ কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবুল মনসুর। জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে ইউএনও আবুল মনসুর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত ভেঙে তার জন্মস্থান কিশোরগঞ্জের প্রার্থীদের প্রাধান্য দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এই মডেল মসজিদে সদ্য নিয়োগ দেওয়া চারটি পদের মধ্যে ইমাম, মুয়াজ্জিন, খাদেমসহ তিনটি পদেই নিয়োগ পেয়েছেন নিয়োগ কমিটির সভাপতির বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার প্রার্থীরা।
তবে ইউএনও আবুল মনসুরের দাবি, যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই করেই নিয়োগ কমিটি উপযুক্ত প্রার্থীদের নিয়োগ দিয়েছে। অবশ্য নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব জানিয়েছেন, তার সঙ্গে কোনো ধরনের পরামর্শ না করে সভাপতি তার পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দিয়েছেন।
জানা গেছে, গত ৯ জানুয়ারি একাধিক দৈনিক পত্রিকায় নান্দাইল মডেল মসজিদে একজন পেশ ইমাম, একজন মুয়াজ্জিন ও দুজন খাদেম নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত বিজ্ঞাপনের বিপরীতে সব পদ মিলিয়ে শতাধিক আবেদন জমা পড়ে। গত ২০ ফেব্রুয়ারি সেসব আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা সম্পন্ন করে নিয়োগ কমিটি।
প্রবেশপত্রে লিখিত শর্তাবলি অনুযায়ী লিখিত পরীক্ষার পর ফলাফল নোটিস বোর্ডে ও ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। এমনকি মৌখিক পরীক্ষা (ভাইভা) নেওয়ার পরও বিস্তারিত ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি। আর তখন থেকেই শুরু হয় বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার হতে থাকে ইমাম হিসেবে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন পার্শ্ববর্তী কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেলার জীনারি গ্রামের এক যুবক। যিনি সম্পর্কে নিয়োগ কমিটির সভাপতি ইউএনওর ভাগিনা। বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে বিভিন্ন জন বিভিন্ন পোস্ট দিতে থাকেন। এমন পরিস্থিতিতে এই প্রতিবেদক তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে বিষয়টি নিয়ে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে (ট্যাগ করে) একটি পোস্ট দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে নিয়োগ কমিটির সভাপতি ইউএনও আবুল মনসুর নান্দাইল মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান আকন্দের মাধ্যমে এই প্রতিনিধির বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দেন। অবশ্য পরে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিয়োগ কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে বলে ইউএনওর ঘনিষ্ঠ একজন এই প্রতিনিধিকে আশ্বস্ত করেন।
এরই মধ্যে ইমাম পদে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নিয়োগের আশঙ্কা প্রকাশ করেন একই পদে আবেদনকারী মাওলানা হামিদুজ্জামান। তিনি নান্দাইল মডেল মসজিদের জায়গায় থাকা আগের মসজিদের সর্বশেষ খতিব ছিলেন। মাওলানা হামিদুজ্জামান ৩ মার্চ মুসল্লিদের উপস্থিতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘নিয়োগ কমিটির সভাপতি নান্দাইল উপজেলা থেকে আবেদিত গুরুত্বপূর্ণ আলেম-ওলামাদের বাদ দিয়ে ওনার পছন্দমতো ব্যক্তিদের নিয়োগ দিতে তিনজনের প্যানেল করে তদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। আমরা যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে নান্দাইল উপজেলা থেকে সব জনবল নিয়োগের দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় আমরা নিয়োগ কমিটির বিরুদ্ধে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করব।’
এ ছাড়া ১৭ মার্চ ইমাম পদে আবেদনকারী আমিনুল ইসলাম, হামিদুজ্জামান, বাহাউদ্দীন ও জুবায়ের তাদের স্বাক্ষরিত একটি লিখিত আবেদন ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক বরাবর জমা দেন। ওই আবেদনে তারা স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে পেশ ইমাম নিয়োগের পাঁয়তারা চলছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
এত কিছুর পরও নিয়োগ কমিটির সভাপতির ১৬ মার্চ স্বাক্ষরিত নিয়োগপত্র ১৯ মার্চ জনসম্মুখে প্রকাশিত হয়। এতে দেখা যায়, ইউএনওর ভাগিনা উল্লেখ করে যাকে নিয়োগ দেওয়া হবে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা চলছিল, সেই রাকিবুল ইসলামই পেশ ইমাম পদে নিয়োগ পেয়েছেন। এতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবারও সভাপতি নিয়োগে স্বজনপ্রীতি করেছেন দাবি করে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এনামুল হক ছোটন নামে একজন ফেসবুকের কমেন্ট বক্সে লেখেন, ‘নান্দাইলের ইউএনও একজন দুর্নীতিবাজ। তার মতো লোকের কারণে নান্দাইলের এমন অবস্থা।’ একই ব্যক্তি আরেকটি কমেন্টে লেখেন, ‘নান্দাইলের ইউএনওকে মানুষ বানিয়েই আল্লাহ ভুল করেছে।’ মাসুদুর রহমান নামে একজন কমেন্ট বক্সে লেখেন, ‘গত কিছুদিন পূর্বে আমি জাতীয় সংসদ ভবনে একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে আবেদনপ্রত্যাশী হিসেবে দেখা করে বিষয়টি নিয়ে কথা বলি। তিনি আমাকে জানিয়েছেন, এই পদে নান্দাইলের ইউএনওর পছন্দের লোক আছে।’ ইউএনওর সমালোচনা করে লেখা এমন অসংখ্য মন্তব্য এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছে।
পেশ ইমাম পদে নিয়োগ পাওয়া রাকিবুল ইসলামের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার জীনারি গ্রামের রাহের আমিনের ছেলে। তবে ইউএনওর সঙ্গে তার আত্মীয়তার সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়নি। ঢাকার উত্তরখানের জামিয়া ইসলামিয়া ফারুকিয়া নামে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করেন এই রাকিবুল ইসলাম। শিক্ষাগত সনদ অনুযায়ী তার জন্ম ১৯৯৯ সালে। সে হিসাবে বয়স দাঁড়ায় ২৩ বছর। পেশ ইমাম পদে আবেদনের যোগ্যতা হিসেবে নিয়োগ বিজ্ঞাপ্তির (ক) অনুচ্ছেদে খতিব, মুফতি বা মুহাদ্দিস হিসেবে কোনো প্রতিষ্ঠানে পাঁচ বছরের বাস্তবত অভিজ্ঞতা থাকার কথা উল্লেখ ছিল। কিন্তু নিয়োগ পাওয়া ইমাম ২০২১ সালে দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করেছেন; যা থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট হয় যে ২০২১ সাল পর্যন্ত পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন রাকিবুল ইসলাম। পেশাদার খতিব বা মুহাদ্দিস হিসেবে তার চাকরি করার কোনো সুযোগ হয়নি।
এই নিয়োগ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার মাওলানা মাজাহার নামে এক আবেদনকারী বলেন, ‘যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার দিক থেকে আমি অনেক এগিয়ে ছিলাম। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমার বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছে। এরপরও রহস্যময় কারণে আমার চাকরি হয়নি। আমার এতে দুঃখ নেই, তবে একটি উপজেলার প্রথম শ্রেণির একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অনভিজ্ঞ অল্প বয়সের যুবক ছেলে নিয়োগ দেওয়ায় সরকারের প্রকৃত উদ্দেশ্য বিফলে যাবে।’
আমিনুল ইসলাম নামে আরেক আবেদনকারী বলেন, ‘আমরা প্রথম থেকেই এমন একটি নিয়োগের বিষয়ে সন্দিহান ছিলাম। শেষ পর্যন্ত তাই হয়েছে। অনভিজ্ঞ ইমাম নিয়োগ দেওয়ার মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তির শর্ত ভঙ্গ করা হয়েছে। যদি সে (রাকিবুল ইসলাম) অভিজ্ঞতার কোনো সনদ দিয়ে থাকে, সেটা অবশ্যই জালিয়াতির মাধ্যমে দিয়েছে। আমরা সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্র্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাচ্ছি যে শর্ত ভঙ্গ হওয়ায় তদন্ত সাপেক্ষে নিয়োগ বিজ্ঞাপ্তির ৮ নম্বর শর্ত মোতাবেক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন আবেদনকারী বলেন, ‘প্রবেশপত্রে উল্লেখ ছিল লিখিত ও ভাইভার ফলাফল নোটিস বোর্ড ও ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। কিন্তু রহস্যময় কারণে আদৌ তা করা হয়নি। আমরা জানতে পারলাম না কত নম্বর পেয়েছি, কার অবস্থান কত। কেন প্রকৃত যোগ্য অভিজ্ঞ আলেমগণ নিয়োগবঞ্চিত হলো? কেউ যদি কোনো মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ায় তাহলে সে মোকাররার ইমাম হতে পারে, কিন্তু খতিব হতে পারে না। নিয়োগপ্রাপ্ত ইমাম লেখাপড়া শেষ করেছে ২০২১-২২ সালে, সে কখন খতিব হলো বা মুহাদ্দিস হলো? আমরা মনে করি স্বজনপ্রীতি করা হয়েছে, তাই তদন্তসাপেক্ষে এই নিয়োগ বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। নিয়োগ কমিটির সভাপতির গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলায় হওয়ায় চারটি পদের মধ্যে ইমাম, মুয়াজ্জিন, খাদেমসহ তিনটি পদেই নিয়োগ পেয়েছে কিশোরগঞ্জ জেলার প্রার্থীরা।’
সার্বিক বিষয়ে আলোচিত এই নিয়োগ কমিটির সদস্যসচিব ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন নান্দাইল উপজেলা শাখার কর্তাকর্তা সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি নিয়োগ কমিটিতে থাকলেও এ ব্যাপারে সভাপতি (ইউএনও) আমার সাথে বিন্দুমাত্র পরামর্শ করেননি। উনি ওনার মনমতো নিয়োগ দিয়েছেন। এ ছাড়া পেশ ইমাম পদে যাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তার অভিজ্ঞতার সনদ দাখিল করলেও পড়াশোনার সনদের সাথে তা সাংঘর্ষিক।’
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে নিয়োগ পাওয়া পেশ ইমাম রাকিবুল ইসলামের মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় শুনে দশ মিনিট পরে কথা বলবেন বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। কিন্তু পরে আবার একাধিকবার কল করা হলেও তিনি আর রিসিভ করেননি।
আর নিয়োগ কমিটির সভাপতি ইউএনও আবুল মনসুর বলেন, ‘যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই করেই নিয়োগ কমিটি নিয়োগ দিয়েছে। সে (রাকিবুল ইসলাম) কখন কী পাস করেছে, এটা দেখার বিষয় নয়, তার ইমাম হিসেবে ছয় বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে।’ অবশ্য খতিবের অভিজ্ঞতার বিষয়টি এড়িয়ে যান ইউএনও। তিনি বলেন, ‘এগুলো আপনাদের দেখার বিষয় না।’ আর ফলাফল নোটিস বোর্ডে টানানো বা প্রকাশ না করার কারণ জানতে চাইলে বলেন, ‘ফলাফল প্রকাশ করার কোনো বিধান নেই।’
নিখোঁজের পর স্থপতি ইমতিয়াজ মোহাম্মদ ভূঁইয়ার মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় হওয়া হত্যা মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গত রবিবার রাতের বিভিন্ন সময়ে সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
ডিবি বলছে, একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র টাকা হাতিয়ে নিতে ইমতিয়াজকে অপহরণ করে। পরে টাকা না পেয়ে তাকে হত্যা করে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলো মিল্লাত হোসেন মুন্না, এহসান ওরফে মেঘ ও মো. আনোয়ার হোসেন অভি। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জ বন্দর থানার একটি গ্যারেজ থেকে হত্যাকাণ্ডের সময় ব্যবহৃত একটি গাড়ি জব্দ করা হয়েছে। গতকাল সোমবার ঢাকা মহানগর ডিবির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার গোলাম সবুর গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, ইমতিয়াজ হত্যায় জড়িত পাঁচজনের মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরাফাত ও আলিফ নামে বাকি দুজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
ইমতিয়াজ ঢাকার তেজগাঁও থানা এলাকার মোহাম্মদ হোসেন ভূঁইয়ার ছেলে। তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বাড়ির নকশার কাজ করতেন। তার স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। গত ৭ মার্চ বাড়ি থেকে বের হয়ে তিনি নিখোঁজ হন। পরদিন ৮ মার্চ তার স্ত্রী ফাহমিদা আক্তার কলাবাগান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এর পরদিন মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখানের একটি ঝোপের ভেতর থেকে ইমতিয়াজের লাশ উদ্ধার হয়। তবে পরিবার তখন তা জানতে পারেনি। বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেলে ইমতিয়াজ নিখোঁজের বিষয়ে প্রতিবেদন সম্প্রচারিত হলে ১০ দিন পর পরিবার জানতে পারে, ইমতিয়াজ মোহাম্মদ খুন হয়েছেন। সিরাজদীখানে যে ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার হয়েছে, তা ইমতিয়াজের। পরে আদালতের অনুমতিতে ওই লাশ কবর থেকে উত্তোলনের পর তা ইমতিয়াজের বলে শনাক্ত করেন স্বজনরা।
ডিবি জানায়, একটি অ্যাপের মাধ্যমে চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যক্তিকে ফাঁদে ফেলে বাসায় ডেকে নিত। পরে ব্ল্যাকমেইল করে আপত্তিকর ভিডিও ধারণ ও ছবি তুলে ওই ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা আদায়ের চেষ্টা করত। ভুক্তভোগীরা সামাজিক অবস্থানের কারণে কখনোই এ বিষয়ে মুখ খুলতেন না। চাঁদাবাজি ও মুক্তিপণের টাকা জমা হতো চক্রের সদস্য আরাফাতের মায়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে।
মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ওই অ্যাপের মাধ্যমে স্থপতি ইমতিয়াজের সঙ্গে চক্রের সদস্য আসিফের পরিচয় হয়। ৭ মার্চ ইমতিয়াজের মোবাইল ফোনে কল করে তাকে কলাবাগানের একটি বাসায় ডেকে নেয় আসিফ। সেখানে আগে থেকেই ছিল আরাফাত, মুন্না, মেঘ। তারা সবাই মিলে ইমতিয়াজকে ফাঁদে ফেলে টাকার জন্য মারধর করে। একপর্যায়ে ইমতিয়াজ মারা যান। পরে একটি গাড়িতে করে মুন্সীগঞ্জ গিয়ে লাশ ফেলে দেওয়া হয়।
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, স্থপতি ইমতিয়াজ হত্যায় গ্রেপ্তার আসামি এহসান ওরফে মেঘ মুন্সীগঞ্জের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এ ছাড়া গ্রেপ্তার অন্য আসামি মুন্না ও অভিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রহিমা আক্তারের কাছে তৃতীয় লিঙ্গের মেঘ ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়।
রাজধানীর মহাখালীর সাততলা বস্তি এবং ওয়ারীর সুইপার কলোনিতে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। রবিবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে সুইপার কলোনিতে এবং গতকাল সোমবার সকাল পৌনে ৭টার দিকে সাততলা বস্তিতে পৃথক অগ্নিকা-ের ঘটনা দুটি ঘটে। আগুনে সুইপার কলোনির ২০টি এবং সাততলা বস্তির ১৫০টি ঘর পুড়ে গেছে। সাততলা বস্তির ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও সুইপার কলোনির আগুনে শিশুসহ সাতজন দগ্ধ হয়েছে। তাদের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।
সাততলা বস্তিবাসীর তথ্যমতে, গতকাল সকাল ৬টা ৪৮ মিনিটের দিকে বস্তির এক কোণে দোতলা একটি ঘর থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। মুহূর্তে ধোঁয়া ও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তখনো বস্তির অধিকাংশ বাসিন্দা ঘুমাচ্ছিলেন। যে ঘরে আগুন ধরে, সেই ঘরের বাসিন্দাদের চিৎকারে সবার ঘুম ভাঙে। বস্তির বাসিন্দারা চেষ্টা করেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হন। এরই মধ্যে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে এর আগেই পুড়ে ছাই হয়ে যায় একতলা, দোতলাবিশিষ্ট অনেক ঘর।
বুয়ার কাজ করেন জুলেখা বেগম। বস্তির একটি ঘরে স্বামী-সন্তান নিয়ে ভাড়া থাকেন। সকালে কাজে যাওয়ার জন্য ঘুম থেকে উঠতেই চিৎকার শুনতে পান। দেখেন, তার ঘরের কাছাকাছি একটি ঘরে আগুন ধরে গেছে। স্বামী-সন্তানকে জাগিয়ে খালি হাতেই ঘর থেকে বের হয়ে যান তিনি। রবিবার রাতে স্বামী কাজের সাড়ে ৪০০ টাকা এনে তার হাতে দিয়েছিলেন। সেই টাকাও নিতে পারেননি। শুধু বিছানার ওপর থেকে বাটন মোবাইলটা হাতে নিতে পেরেছেন। জুলেখার ধারণা, বস্তির অনেকে আশপাশে বুয়ার কাজ করেন। তারা সকাল সকাল শিশুসন্তানদের জন্য রান্না করে রেখে যান। তেমনি কোনো একটি ঘরে রান্না করার সময় এ ঘটনা ঘটতে পারে। তবে যে ঘর থেকে আগুনের সূত্রপাত, সেই ঘরের গ্যাসের চুলা রয়েছে বলে জানিয়েছেন জুলেখাসহ একাধিক বস্তিবাসী। তাদের ধারণা, হয়তো চুলার লাইন লিকেজ ছিল কিংবা চুলা থেকেই আগুন লাগতে পারে।
ছায়েরা বেগম নামের আরেক বাসিন্দা জানান, গ্যাসের লাইন অফ করো, গ্যাস অফ করো এমন চিৎকারে তার ঘুম ভাঙে। ঘর থেকে বের হতেই দেখেন দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। তিনিও হাতের কাছে যা ছিল তা নিয়েই ঘর থেকে এক কাপড়ে বেরিয়ে যান।
ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দারা বলছিলেন, ঘুমে থাকার কারণে তারা কোনো মালামালই বের করতে পারেননি। কেবল হাতে বহন করা যায়, এমন মালামাল নিয়ে এক কাপড়ে বেরিয়ে গেছেন। ভোরবেলায় হালকা বাতাস থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তবে বস্তিতে অবৈধ গ্যাস, বিদ্যুতের লাইন রয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক বস্তিবাসী।
গতকাল বেলা ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, তখনো পুড়ে যাওয়া ঘর থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। বস্তির ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দারা পোড়া টিন, খাট, আসবাব বের করার চেষ্টা করছেন। বস্তির অধিকাংশ ঘরই দোতলাবিশিষ্ট। একটি ঘরের মধ্যে বেশ কয়েকটি কক্ষও রয়েছে। মূলত চতুর্দিক ইটের দেয়াল আর ওপরে টিন, আর ঘরের ভেতরের কক্ষগুলো কাঠ দিয়ে সাজানো। রয়েছে হরেক রকমের আসবাবও। পুড়ে যাওয়া একটি ঘরের ভেতরে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের ‘কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপন প্রকল্পের’ কয়েক শ সনদ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। অধিকাংশ সনদের কিছু অংশ পুড়ে গেছে। আবার অনেকগুলো বান্ডিল আকারে পড়ে রয়েছে। কেউ টিন আর পলিথিন দিয়ে সনদগুলো ঢেকে রেখেছেন, যাতে কারও নজরে না পড়ে। মূলত কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপন প্রকল্পের অধীনে এক বছরের জন্য যেসব কিশোর-কিশোরী দক্ষতামূলক প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন সহশিক্ষা নিয়ে থাকে, কোর্স সম্পন্ন হওয়ার পর তাদের মহিলা অধিদপ্তর থেকে এই সনদ দেওয়া হয়। কিন্তু বস্তিতে পুড়ে যাওয়া এবং ভালো সদনগুলোতে কোনো প্রশিক্ষণার্থীর নাম-পরিচয় উল্লেখ নেই। নাম-ঠিকানার জায়গা খালি রয়েছে। অথচ প্রতিটি সনদে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফরিদা পারভীন এবং কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপন প্রকল্পের পরিচালক মো. তরিকুল আলমের স্বাক্ষর রয়েছে। এতে প্রতীয়মান হয়, বস্তির কোনো একটি চক্র এই সনদগুলো সংগ্রহ করে টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে আসছিল। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা সম্ভব হয়নি।
ফায়ার সার্ভিসের জোন কমান্ডার আব্দুল আলিম জানান, সাততলা বস্তিতে আগুন লাগার খবরে হেডকোয়ার্টার্স, মহাখালী, বনানী থেকে ৯টি ইউনিটের প্রায় দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ জানা যায়নি। তবে আগুনে বস্তির অনেক টিনশেডের ঘর পুড়ে গেছে। আগুনে কয়েক শ ঘর পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন ওই বস্তির বাসিন্দারা। তবে কন্ট্রোল রুমের ডিউটি অফিসার খালেদা ইয়াসমিন জানান, তাদের হিসাবে আগুনে ১৫০টি ঘর পুড়ে গেছে।
এদিকে, অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতি পরিবারকে ৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। ডিএনসিসি জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন জানান, অগ্নিকান্ডের ঘটনা জানার পর মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম সার্বক্ষণিক তদারকি করেছেন। তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে অগ্নিকা-ের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা প্রণয়ন করে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবারকে ৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া অগ্নিকান্ডে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের নির্দেশও দিয়েছেন।
সুইপার কলোনিতে আগুন : সাততলা বস্তির আগুনের আগে রবিবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে ওয়ারীর জয়কালী মন্দিরের হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে সুইপার কলোনিতে আগুন লাগে। এতে নারী-শিশুসহ সাতজন দগ্ধ হয়েছেন। দগ্ধ ব্যক্তিরা হলেন ৬৫ বছর বয়সী গীতা রানী দে, ৬০ বছর বয়সী কান্তা রানী, ৩৬ বছর বয়সী রাজু ও ৫২ বছর বয়সী আফজাল হোসেন, ৭ বছর বয়সী কৃষ্ণ, ২৭ বছর বয়সী শান্তি এবং ৩ বছর বয়সী লক্ষ্মণ। তাদের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।
ডিউটি অফিসার খালেদা ইয়াসমিন জানান, মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে ওই কলোনিতে রবিবার রাত ৩টা ২০ মিনিটে আগুন ধরার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে ভোররাতের দিকে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. বাচ্চু মিয়া জানান, দগ্ধ অবস্থায় চারজনকে উদ্ধার করে বার্ন ইনস্টিটিউটে নিয়ে এসে অবজারভেশনে রাখা হয়েছে। তাদের চিকিৎসা চলছে। একই ঘটনায় তিনজনকে দগ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলের বার্নে নিয়ে আসা হয়েছে। তারা চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ফায়ার সার্ভিসের ধারণা, সিগারেটের আগুন বা গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে সুইপার কলোনির আনুমানিক ২০টি টিনশেড ঘরে আগুন লেগেছিল। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় পাশের কয়েকটি মুরগির দোকান। আগুনে ফ্লাইওভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কি না, তাও পরীক্ষা করে দেখা হবে বলে জানান তারা।
বাটা সিগন্যালে বহুতল ভবনে আগুন : রাজধানীর বাটা সিগন্যাল এলাকার শেলটেক কম্পিউটার সিটি ভবনে আগুন লেগে কয়েকটি দোকান পুড়ে গেছে। ভবনটির পঞ্চমতলায় লাগা আগুনে তিনটি দোকান পুরোপুরি পোড়ার পাশাপাশি আরও কয়েকটি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সেখানে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট আগুন নেভাতে কাজ করে। প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় রাত সাড়ে ৯টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেটর) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, নয়তলা ভবনটির পঞ্চমতলায় আগুন লাগে। আগুন অন্য কোনো তলায় ছড়াতে পারেনি। তার আগেই নিয়ন্ত্রণ করা গেছে। এতে তিনটি কম্পিউটার ও এর যন্ত্রাংশের দোকান ব্যাপকভাবে পুড়ে গেছে। এ ঘটনায় একজন সামান্য আহত হয়েছেন জানিয়ে ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা বলেন, অন্য কারও দগ্ধ বা আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
বাটা সিগন্যাল মোড় থেকে শাহবাগের দিকে কিছুটা এগোলে হাতের ডান দিকেই রাস্তার পাশে নয়তলা শেলটেক কম্পিউটার সিটি ভবন। এর পাঁচতলা পর্যন্ত দোকান। তার ওপরের তলাগুলো আবাসিক। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আগুন লাগার পর পাঁচতলা থেকে নিচের তলার লোকজন দ্রুত নেমে আসেন। আর ওপরের তলাগুলোর বাসিন্দারা ছাদে চলে যান।
ওই ভবনের দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন বলেছেন, পাঁচতলায় একটি মোবাইল সার্ভিসিংয়ের দোকানে আগুন লাগে, পরে তা পাশের কয়েকটি দোকানে ছড়িয়ে পড়ে।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করা, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠাসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে আজ রোববার ঢাকা ছাড়া সব মহানগরে পদযাত্রা কর্মসূচি করবে বিএনপি। আজকের পদযাত্রা কর্মসূচির মাধ্যমে সপ্তাহব্যাপী সরকারবিরোধী কর্মসূচির প্রথম ধাপ শেষ হচ্ছে দলটির।
এর আগে, গত ২৩ মে দেশের ১১টি মহানগরে ‘পদযাত্রা’ করে বিএনপি। ঢাকার বাইরে মহানগরগুলোতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের ১০ দফাসহ দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ ও অন্যান্য জনগুরুত্বপূর্ণ দাবিতে এই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে আজ রোববার (২৮ মে) পদযাত্রা করবে ৬ দলীয় জোট (দল ও সংগঠন) গণতন্ত্র মঞ্চ। এদিন বেলা ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ থেকে এই পদযাত্রা শুরু হবে, যা শেষ হবে বাড্ডায়।
গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রোববার ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ রেলগেট থেকে বাড্ডা পর্যন্ত গণতন্ত্র মঞ্চের ঢাকা উত্তরের পদযাত্রা শুরু হবে। অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে এ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। মালিবাগ রেলগেটে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে পদযাত্রা শেষ হবে।
পদযাত্রায় অংশ নেবেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারীসহ গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতারা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ব শান্তির পক্ষে সোচ্চার ছিলেন এবং মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।
বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।
ড. মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উৎসব আমাদের বিদেশস্থ সকল মিশনে উদযাপন করছি। জুলিও কুরি পদক ছিল জাতির পিতার কর্মের স্বীকৃতি এবং বাংলাদেশের জন্য প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মান।
তিনি বলেন, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে কারাবরণ করেন বঙ্গবন্ধু। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য, সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন বঙ্গবন্ধু মেনে নিতে পারেননি। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাংলার নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে স্বাধীনতার ডাক দেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার মানুষ দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর “সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বৈরীতা নয়”- এই বৈদেশিক নীতি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু তার শান্তির বার্তা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতিসংঘে এক নম্বর শান্তিরক্ষী দেশের মর্যাদা পেয়েছে। দেশে দেশে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ চালু করেছে।
‘বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনে আমাদের অঙ্গীকার হবে বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে কাজ করে যাওয়া। তাহলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন অর্জিত হবে’।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বিশ্ব শান্তি পরিষদ ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদকে ভূষিত করে।
অপারেশন ছাড়াই সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় আব্দুল মোতালেব হোসেন (৩৫) নামের এক মানসিক রোগীর পেট থেকে ১৫টি কলম বের করেছেন চিকিৎসক।
এ কাজ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সিরাজগঞ্জের শহীদ এম.মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুই চিকিৎসক। তাদের এই সাফল্যে রীতিমত হৈচৈ পড়ে গেছে নেট দুনিয়ায়।
এ বিষয়ে আব্দুল মোতালেবের মা লাইলী খাতুন বলেন, তার ছেলে মোতালেব খুব ভাল ছাত্র ছিল। ২টি লেটার মার্ক নিয়ে এসএসসি পাস করে কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। এরপর খারাপ সঙ্গদোষে সে আস্তে আস্তে মাদকাসক্ত হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। এরপর থেকে পথে ঘাটে ঘুরে বেড়ানোর সময় কুড়িয়ে পাওয়া কলমগুলি খাদ্য মনে করে খেয়ে ফেলে। বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। গত এক বছর ধরে তার শরীরে জ্বর ও পেটে ব্যথা শুরু হয়। অনেক চিকিৎসার পরও তা ভালো হচ্ছিল না। অবশেষে গত ১৬ মে তাকে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম. মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনে ভর্তি করি। এখানে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর তার অসুখের কারণ ধরা পড়ে। পরে চিকিৎসকরা তার পেটের ভিতর থেকে বিনা অপারেশনে কলমগুলো বের করে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. আমিনুল ইসলাম খান বলেন, মোতালেব হোসেন প্রথমে পেটে ব্যথা নিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়। মেডিসিন ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা এক্সরে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম করেও পেটে কি সমস্যা সেটা শনাক্ত করতে পারছিলেন না। ফলে রোগীটিকে আমার কাছে রেফার্ড করেন। এন্ডোস্কপির মাধ্যমে পরীক্ষা করে তার পেটের ভেতর ১৫টি কলম দেখে প্রথমে চমকে যাই। এটা কীভাবে সম্ভব। পরে এন্ডোস্কপির মাধ্যমেই অপারেশন ছাড়াই আমরা কলমগুলো বের করার সিদ্ধান্ত নেই। তিনি আরও বলেন, কাজটি আমাদের জন্য দারুণ চ্যালেঞ্জিং ছিল। কলমগুলো একে একে পাকস্থলীতে সেট হয়ে গিয়েছিল। কলমগুলো বের করতে আমাদের প্রথমে মাথায় চিন্তা ছিল যেন, কলমগুলোর কারণে কোনোভাবেই শ্বাসনালিতে গিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ না হয়ে যায়। এছাড়াও রক্তক্ষরণের একটা চিন্তাও মাথায় ছিল। অতঃপর প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আমরা কলমগুলো বের করে নিয়ে আসতে সক্ষম হই।
শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, এন্ডোস্কপি করা ব্যক্তি মানসিক অসুস্থ হওয়ায় তার কলম খাওয়ার অভ্যাস ছিল। এভাবে খেতে খেতে সে অনেক কলম খেয়ে ফেলে। কলমগুলো তার পেটের মধ্যে জমা হয়েছিল। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে তার পেটের ভিতর ১৫টি কলম থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হই। এবং অপারেশন ছাড়াই এন্ডোস্কপির মাধ্যমে তার পেটের ভেতর থেকে একে একে ১৫টি আস্ত কলম বের করে আনি। বর্তমানে রোগীটি সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকদের অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং সুস্থ আছেন।
তিনি আরও বলেন, এন্ডোস্কপির মাধ্যমে মানুষের পেট থেকে কলম বের করার মতো ঘটনা বাংলাদেশে এটাই প্রথম। তাও আবার একটি-দু‘টি নয় ১৫টি কলম। এর আগে ঢাকা মেডিকেলে এক ব্যক্তির পেট থেকে এন্ডোসকপির মাধ্যমে একটি মোবাইল বের করেছেন চিকিৎসকরা।
এ বিষয়ে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে এমন সাফল্য এটাই প্রথম। আমরা অত্যাধুনিক ভিডিও এন্ডোস্কপি মেশিনের মাধ্যমে এবং আমাদের দক্ষ ডাক্তার দ্বারা অপারেশন ছাড়াই শুধু এন্ডোস্কপির মাধ্যমে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের পেট থেকে ১৫টি কলম বের করে আনতে সক্ষম হয়েছি। শুধু এটাই নয়, আমরা বিনা অপারেশনে পেটের পাথর, কিডনিতে পাথর থেকে শুরু করে অনেক কিছুই অপারেশন ছাড়াই সেগুলো অপসারণের কাজ করে যাচ্ছি।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে ভোটের পরিবেশ ভালো বলে জানান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পরও বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের চাকরি পাওয়ার হার প্রায় একই রয়েছে। ১০ শতাংশ কোটা থাকা অবস্থায় তারা যে পরিমাণ চাকরি পাচ্ছিলেন, কোটা তুলে দেওয়ার পরও প্রায় একই হারে চাকরি পাচ্ছেন। সাধারণ ক্যাডার বা কারিগরি ক্যাডারে পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারগুলোতে এগিয়ে গিয়ে বিসিএসে মোট চাকরি পাওয়ার হারে প্রায় একই অবস্থান ধরে রেখেছেন নারীরা।
অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, কোটা তুলে দিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। আসলে তা হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার পরও তারা প্রায় সমানতালে এগিয়ে চলছেন।
৪০তম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে বয়সে ছেলেরা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে সেই বয়সে অধিকাংশ নারীকেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে হয়। সংসার করে, সন্তান লালনপালন করে নারীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে অনেক মেধাবী নারী প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারেন না। অনেক নারী পারিবারিক কারণে বিয়ের পর চাকরির আবেদনই করেন না। বিয়ের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা আসে। এসব কাটিয়ে উঠে চাকরিতে প্রবেশ করা কঠিন। আর বিসিএসের চাকরি মানেই বদলিযোগ্য। সংসার-সন্তান রেখে বদলিকৃত পদে যোগ দেওয়া কঠিন বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে নারীদের জন্য এ চাকরি সহজ নয়। একজন পুরুষ বেকার নারী বিয়ে করে, কিন্তু একজন নারী বেকার পুরুষ বিয়ে করে না। এ বিষয়টাও ছেলেদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এ বাস্তবতা থেকেও পুরুষ প্রতিযোগী বেশি হয়। অন্যদিকে যোগ্য হলেও অনেক নারী প্রতিযোগিতাই করে না।
একজন নারী ইউএনও বলেন, পরীক্ষার হলে বা মৌখিক পরীক্ষার সময় অনেক নারীকে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সঙ্গে আনতে হয়। এগুলোও অনেক সময় নারীকে চাকরির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। ঘরে ঘরে বাধা পায় নারীর অগ্রযাত্রার নানা চেষ্টা। নগর-জীবনে নারীর অস্তিত্ব অনেকটা স্বচ্ছন্দের। কিন্তু নগরসভ্যতার বাইরে বিশাল বিস্তৃত গ্রামীণ জনজীবনে পুরুষতন্ত্রের নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বেষ্টনী এখনো নারীকে ধরাশায়ী করে রাখে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটছে নারী-পুরুষ। তবু তাদের মধ্যে ভারসাম্য নেই।
কোটা না থাকার পরও নারীরা তাদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখলেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকেও মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিসিএসে এর প্রতিফল ঘটেছে। যে পরিমাণ মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, সেই তুলনায় চাকরিতে প্রবেশের হার বেশি। উচ্চশিক্ষায় যায় হয়তো ৮০ ভাগ ছেলে। আর মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার হার ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২৬ বা ২৭ শতাংশ মেয়ে বিসিএস দিয়ে চাকরি পাচ্ছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে মেয়েরা অনেক ভালো করছে।’
এক প্রশ্নের জবাব ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘মেয়েদের কাছে শিক্ষা এখনো অপরচুনিটি (সুযোগ) আর ছেলেদের কাছে অধিকার। মেয়েরা যখন এ সুযোগটা পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগাতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ছেলেসন্তানের জন্য যে বিনিয়োগ, মেয়েসন্তানের জন্য এখনো তার চেয়ে অনেক কম। এখনো মনে করা হয় মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, পরিবারের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষিত ছেলের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক বেশি বহন করে। এসব প্রতিবন্ধকতা হাজার বছরে তৈরি হয়েছে। এগুলো দূর হতে আরও সময় লাগবে।’
অন্যান্য কোটার মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মেধা কোটায়ও নিয়োগ পেতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে এখনো। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি। কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। ৪০তম সাধারণ বিসিএস হচ্ছে কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। ধাপে ধাপে বাছাই করে গত বছর ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় ১৩ মাস পর গত মাসে সেই সুপারিশের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পিএসসি। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসে মোট ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। যা কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৯১ ও ৩৭তমে ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল। গত ১ নভেম্বর এ বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, কোটামুক্ত একটি সাধারণ বিসিএসে ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীদের শক্ত সক্ষমতা প্রকাশ করে। কারণ এর আগে কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার পরও নারীরা ১ শতাংশও পিছিয়ে পড়েননি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক বিসিএসে নারীদের আবেদনের হার অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের হার পুরুষের তুলনায় কম অর্থাৎ গড় হার কম। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও নারী প্রার্থীদের পুরুষের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো কক্ষে নারী প্রার্থী থাকেই না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধাপগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে নারীদের অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। ৪০তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারী নারী ছিলেন ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। যোগ্য আবেদনকারী পুরুষ ছিলেন ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পুরুষের হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ১৪ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের কারিগরি ক্যাডারে ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫৩ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ এবং কারিগরি ক্যাডারে নারীরা পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারে এগিয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। যা ৩৮তমে ২৬ দশমিক ৩০ এবং ৩৭তমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নেওয়া ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারেও নারীরা পিছিয়েছেন। জেলা কোটাও না থাকায় নাটোর, ভোলা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রশাসন ক্যাডারে কেউ সুপারিশ পাননি।
গত বছর প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিভিল প্রশাসনের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। সরকারি দপ্তরের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করেন সবচেয়ে কমসংখ্যক নারী। মন্ত্রণালয়ের মোট জনবলের ১৯, অধিদপ্তরের ৩১, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের ১২ এবং আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাংশ কর্মী নারী।