
এগিয়ে আসছে মাহে রমজান, বাজারে ব্যবসায়ীরা দোকানে মজুদ করছেন বস্তা বস্তা মুড়ি; এমন দৃশ্য রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বেশির ভাগ জায়গার। ব্যতিক্রম শুধু সিলেট। দেশের পূর্ব কোণের বাসিন্দাদের ইফতারের পাতে মুড়ি একেবারেই ব্রাত্য; বরং ইফতারে সিলেটবাসীর প্রিয় খাবার পাতলা খিচুড়ি। বাড়িতে বানানো খিচুড়ির পাশাপাশি এখন রেস্টুরেন্টগুলোতেও ইফতারের অন্যান্য অনুষঙ্গের সঙ্গে বিক্রি হচ্ছে পাতলা খিচুড়ি। সঙ্গে সব সময়ের প্রিয় আখনি তো আছেই। সিলেটের বাকরখানিও ঢাকাই বাকরখানির চেয়ে স্বাদে ও গড়নে আলাদা। টানা পরোটার মতো হালকা মিষ্টি স্বাদের এই বাকরখানি মাগরিবের নামাজের পর চায়ে ডুবিয়ে খাওয়ার মজাই আলাদা!
একটা সময় বাংলা বা পূর্ববঙ্গ প্রদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল বলেই হয়তো সিলেটের খাদ্য সংস্কৃতি দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে খানিকটা ভিন্ন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় গণভোটের মাধ্যমে সিলেটকে আসাম থেকে বিচ্ছিন্ন করে পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। আসামের সঙ্গে যুক্ত থাকার প্রভাব সিলেটবাসীর খাদ্যাভ্যাসে পড়েছে ঠিকই, তবে তা ইফতারের বেলায় হয়তো নয়। আসামের অত্যন্ত জনপ্রিয় পদ মাসোর টেঙ্গা (মাছের টক তরকারি) সিলেটেও বহুল প্রচলিত এবং সমাদৃত। তবে ইফতারে পাতলা খিচুড়ির প্রবর্তনের নেপথ্যে খুব সম্ভবত ইয়েমেনের প্রভাব। ১৩০৩ সালে গৌড়ের হিন্দু রাজা গৌড় গোবিন্দের সঙ্গে লড়াই বাধে সুলতান শামসউদ্দিন ফিরোজ শাহের। ফিরোজ শাহের তিনটি আক্রমণ ব্যর্থ হলে চতুর্থ আক্রমণে ইয়েমেন থেকে আসা সুফি সাধক ও ইসলাম প্রচারক হজরত শাহজালাল ও তার ৩৬০ সঙ্গী যোগ দেন নাসিরউদ্দিন সিপাহসালারের বাহিনীর সঙ্গে। গৌড় গোবিন্দ পরাজিত হয়ে পালিয়ে যান আর সিলেটে ইসলাম প্রচার শুরু হয়। ইবনে বতুতার ভ্রমণকাহিনি ‘রিহলা’তেও আছে শাহজালালের (রহ.) সঙ্গে মরোক্কান পর্যটকের সাক্ষাতের কথা, তার আবাসকে ঘিরে গড়ে ওঠা মুসলিম জনপদের কথা। ধরে নেওয়া যেতেই পারে, ইয়েমেন থেকে হজরত শাহজালালের (রহ.) সফরসঙ্গী হয়ে যারা এসেছিলেন, তারা পবিত্র রমজান মাসে ইফতারে যে খাবারটা খেতেন সেটাই ধীরে ধীরে গোটা জনপদেই ছড়িয়ে গেছে।
ইয়েমেন বা গোটা মধ্যপ্রাচ্যেই ইফতারে অন্যতম প্রধান খাবার হচ্ছে হারিসা। আধভাঙা যবের দানা সেদ্ধ করে তাতে মাংস, চর্বি মিশিয়ে রান্না করা হয় হারিসা, যা দেখতে এবং প্রকৃতিতে অনেকটা সিলেটের পাতলা খিচুড়ির মতোই। হতে পারে একটা সময় হারিসা খাওয়া হলেও কালের বিবর্তনে এবং উপকরণের দু®প্রাপ্যতায় হারিসার জায়গা নিয়েছে পাতলা খিচুড়ি। সিলেটে পাতলা খিচুড়ি রান্না হয় দুইভাবে, ডাল দিয়ে এবং ডাল ছাড়া। প্রধান উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃয় হতো হাওরের রাতাবোরো চাল। এই চালের সঙ্গে ডাল ও অন্যান্য মসলা মিশিয়েই নরম, প্রায় তরল থকথকে পাতলা খিচুড়ি রান্না হয় ইফতারে। সঙ্গে অবশ্য ছোলা (সিলেটিরা যাকে বলেন চানা), পেঁয়াজু, আলুর চপ বেগুনি এসব থাকেই। তবে মুড়ি একদমই ব্রাত্য। ঢাকায় যেভাবে ছোলা, পেঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ এমনকি জিলাপি সবকিছু ভেঙে কচলে মুড়ির সঙ্গে মাখিয়ে খাওয়া হয় সিলেটের ইফতারে এমন দৃশ্য কল্পনাতেও আসবে না।
সিলেটে ইফতারে রোজকার অনুষঙ্গ পাতলা খিচুড়ি, তবে অতিথি আপ্যায়নে কিংবা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে ইফতার পাঠাতে স্পেশাল আইটেম হলো আখনি। ঢাকাই তেহারির মতোই আখনি, তবে স্বাদে একটু ভিন্নতা আছে। পোলাওর চাল আর ছোট করে টুকরো করা মাংস দিয়ে তেহারির আদলে রান্না করা আখনিতে মাংসের সঙ্গে যোগ করা হয় কিউব করে কাটা গাজর, মটর আর আলু। বাসাবাড়িতে রান্নার পাশাপাশি এখন সিলেটের বিভিন্ন রেস্টুরেন্টের ইফতারের পসরাতেও আছে গরু, মুরগি বা খাসির আখনি।
সিলেটের বাকরখানিও স্বাদে এবং চেহারায় ঢাকাই বাকরখানির চেয়ে একেবারেই আলাদা। দেখতে অনেকটাই টানা পরোটার মতো। বাকরখানি হালকা মিষ্টি স্বাদের হয়ে থাকে। শুকনো অথবা হালকা সেঁকে নেওয়া বাকরখানি দুধ চায়ে ডুবিয়ে খাওয়ার মজাই আলাদা। তারাবিহর নামাজের পর বাসায় ফিরে ক্লান্ত মুসল্লিরা চা আর বাকরখানি খেয়ে প্রশান্তি ফিরে পান। তাই তো সিলেটের ফিজা অ্যান্ড কোং, রিফাত অ্যান্ড কোং, ফুলকলিসহ বেশির ভাগ কনফেকশনারি ও বেকারি রোজার মাসজুড়েই তৈরি করে বাকরখানি। অনাবাসী সিলেটিরা আত্মীয়স্বজনদের মাধ্যমে সিলেট থেকে আনিয়ে নেন এই বাকরখানি, যা অন্য কোথাও পাওয়া যায় না।
ফেসবুক, ইউটিউবের কল্যাণে ঢাকার বড় বাপের পোলায় খায়, সুতলি কাবাবসহ অনেক কিছুই পৌঁছে গেছে সিলেটের ইফতার বাজারে। তবে সেসব ক্ষণিকের অতিথি। সিলেটের মানুষ ইফতারে ঘরে তৈরি পাতলা খিচুড়িতেই মজে আছেন, যা স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকরও। নানান ভাজাপোড়ার সঙ্গে মুড়িমাখার ‘অনুপ্রবেশ’ এখনো হয়নি সিলেটবাসীর হেঁশেলে।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
সরকারি হাসপাতালে ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখার বিষয়টি চূড়ান্ত করেছে সরকার। আগামী ৩০ মার্চ থেকে প্রাথমিকভাবে দেশের ১০ জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে রোগী দেখা শুরু হচ্ছে। হাসপাতালের ডিউটি শেষে বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত একজন চিকিৎসক সপ্তাহে দুদিন রোগী দেখবেন। এ সময় রোগীদের প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থাও থাকবে।
এসব চেম্বারে চিকিৎসকদের দেখাতে নির্দিষ্ট ফি দিতে হবে রোগীদের। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে রোগীদের সার্জারি, ডায়াগনস্টিক, ক্লিনিক্যাল, প্যারা-ক্লিনিক্যাল টেস্টসহ বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষার জন্যও বৈকালিক ফি নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর মধ্যে অধ্যাপককে ৫০০ টাকা, সহযোগী অধ্যাপককে ৪০০, সহকারী অধ্যাপককে ৩০০ এবং অন্য চিকিৎসককে ২০০ টাকা করে ফি দিতে হবে। এসব ফি থেকে অধ্যাপকরা ৪০০ টাকা, সহযোগী অধ্যাপক ৩০০, সহকারী অধ্যাপক ২০০ এবং অন্য চিকিৎসকরা ১৫০ টাকা করে পাবেন। বাকি টাকা প্রত্যেক চিকিৎসককের সঙ্গে দুজন করে সহযোগী থাকবেন এবং তারা প্রত্যেকে ৫০ টাকা করে পাবেন।
গতকাল সোমবার দুপুরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সভাপতিত্বে কনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস নীতিমালা-২০২৩ চূড়ান্তকরণ-সংক্রান্ত এক সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়। পরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এক সংবাদ সম্মেলনে এসব বিষয়ে জানান।
অবশ্য প্রাথমিকভাবে কোন ১০ জেলা ও ২০ জেলায় প্র্যাকটিস শুরু হচ্ছে এবং কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফি কত ও কীভাবে এসব সেবা পাবেন রোগীরা এসব বিষয়ে কিছু জানাননি স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এ ছাড়া দেশব্যাপী কবে থেকে এই প্র্যাকটিস শুরু হচ্ছে, সে ব্যাপারেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে কনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস শুরুর কারণ ব্যাখ্যা করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সরকারি হাসপাতালে সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত চিকিৎসকরা বিনামূল্যে রোগী দেখেন। এতে বিকেলে বহু মানুষ চিকিৎসা নিতে না পেরে বাইরে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে দেখান। প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের ‘ফি’ বেশি হওয়ায় দেশের মানুষের চিকিৎসাব্যয় বহু গুণ বৃদ্ধি পায়। এজন্য সরকার কনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিসের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে কিছু সম্মানী ফি দেওয়ার মাধ্যমে মানুষ চিকিৎসা নিতে পারবেন।
এসব চেম্বারে আসা রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুবিধার ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বৈকালিক চিকিৎসাসেবায় ছোট অস্ত্রোপচার ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রাফিসহ অন্য যে সেবাগুলো থাকে, সেগুলোও থাকবে। আর এসব সেবারও মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। তার একটি অংশ পাবেন চিকিৎসক ও সহযোগিতাকারীরা, আরেকটি অংশ পাবে হাসপাতাল।
তিনি আরও বলেন, মানুষের চিকিৎসাব্যয় কেন বৃদ্ধি পাচ্ছে সেসব বিষয় নিয়ে দফায় দফায় আলোচনা করা হয়েছে। দেশের সব বিভাগে গিয়ে জেলা, উপজেলা হাসপাতালে সেবার মান যাচাই করা হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে দেশের চিকিৎসক নেতাকর্মীদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ), স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদসহ (স্বাচিপ) সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ে দফায় দফায় কথা হয়েছে। দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা বৃদ্ধির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাও রয়েছে। সব বিষয় মিলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধির বিভিন্ন উদ্যোগের অংশ হিসেবে এই বৈকালিক ইনস্টিউশনাল প্র্যাকটিস আপাতত ছোট আকারে শুরু করা হচ্ছে। এই কাজের সুফলতা দেখে খুব দ্রুতই দেশের সব জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা চালু করা হবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, একজন চিকিৎসককে সপ্তাহে মাত্র দুদিন অতিরিক্ত তিন ঘণ্টা করে সেবা দিতে হবে। তবে এই সেবা যাতে মানুষ সপ্তাহে অন্তত ছয় দিন নিশ্চিত করে পান সেটি নিশ্চিত করতে হবে। এখানে চিকিৎসক, নার্স ও টেকনিশিয়ানরা পর্যায়ক্রমে দায়িত্ব পালন করবেন।
এই প্র্যাকটিসের ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, একজন বিশেষ চিকিৎসক বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার কিংবা কনসালটেশনে যে টাকা নেন, চেম্বার প্র্যাকটিসে তার চেয়ে অনেক কম টাকা নেবেন। অনেক দেশেই সরকারি চিকিৎসকরা প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেন না। আমরা সরকারি চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসের অনুমোদন দিই। এখন তারা যাতে সেই প্র্যাকটিসটা সরকারি প্রতিষ্ঠানে করেন কমমূল্যে, আমরা সেই চেষ্টা করছি। এতে মানুষ ভালো চিকিৎসাসেবা পাবেন।
ব্যক্তিগত চেম্বারের কারণে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবায় কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কি না জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এ রকম কিছু আমরা দেখছি না। বিকেলের সেবার কারণে সকালের সেবায় কোনো প্রভাব পড়বে না। সরকারি হাসপাতালে প্রাতিষ্ঠানিক প্র্যাকটিস শুরু হলে মানুষ আরও ভালো সেবা পাবেন। যে সেবাটা তারা দিনের বেলায় পেতেন, সেটি তারা সন্ধ্যা পর্যন্ত পাবেন। জরুরি সেবাও তারা হাসপাতাল থেকে পাবেন। সার্বিক স্বাস্থ্যসেবার একটি উন্নয়ন হবে।
এসব চেম্বারে চিকিৎসকদের রোগী দেখার বাধ্যবাধকতা প্রসঙ্গে সভায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, চিকিৎসকরাসহ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সরকারি সেবাদানের জন্য সরকারের প্রয়োজন হলে ২৪ ঘণ্টা সেবা দিতে হবে এটাই নিয়ম। সে ক্ষেত্রে সব পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী সরকারের নির্দেশনা মেনে চলতে বাধ্য থাকবেন।
সভায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আজিজুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. টিটো মিঞা, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিব) সভাপতি অধ্যাপক ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী, মহাসচিব অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান মিলন, ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষা প্রমুখ বক্তব্য দেন।
ময়মনসিংহের নান্দাইলে সরকারের নির্মিত মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের জনবল নিয়োগ নিয়ে চরম বিতর্ক ও সমালোচনার মুখে পড়েছেন নিয়োগ কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবুল মনসুর। জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে ইউএনও আবুল মনসুর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত ভেঙে তার জন্মস্থান কিশোরগঞ্জের প্রার্থীদের প্রাধান্য দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এই মডেল মসজিদে সদ্য নিয়োগ দেওয়া চারটি পদের মধ্যে ইমাম, মুয়াজ্জিন, খাদেমসহ তিনটি পদেই নিয়োগ পেয়েছেন নিয়োগ কমিটির সভাপতির বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার প্রার্থীরা।
তবে ইউএনও আবুল মনসুরের দাবি, যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই করেই নিয়োগ কমিটি উপযুক্ত প্রার্থীদের নিয়োগ দিয়েছে। অবশ্য নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব জানিয়েছেন, তার সঙ্গে কোনো ধরনের পরামর্শ না করে সভাপতি তার পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দিয়েছেন।
জানা গেছে, গত ৯ জানুয়ারি একাধিক দৈনিক পত্রিকায় নান্দাইল মডেল মসজিদে একজন পেশ ইমাম, একজন মুয়াজ্জিন ও দুজন খাদেম নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত বিজ্ঞাপনের বিপরীতে সব পদ মিলিয়ে শতাধিক আবেদন জমা পড়ে। গত ২০ ফেব্রুয়ারি সেসব আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা সম্পন্ন করে নিয়োগ কমিটি।
প্রবেশপত্রে লিখিত শর্তাবলি অনুযায়ী লিখিত পরীক্ষার পর ফলাফল নোটিস বোর্ডে ও ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। এমনকি মৌখিক পরীক্ষা (ভাইভা) নেওয়ার পরও বিস্তারিত ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি। আর তখন থেকেই শুরু হয় বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার হতে থাকে ইমাম হিসেবে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন পার্শ্ববর্তী কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেলার জীনারি গ্রামের এক যুবক। যিনি সম্পর্কে নিয়োগ কমিটির সভাপতি ইউএনওর ভাগিনা। বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে বিভিন্ন জন বিভিন্ন পোস্ট দিতে থাকেন। এমন পরিস্থিতিতে এই প্রতিবেদক তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে বিষয়টি নিয়ে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে (ট্যাগ করে) একটি পোস্ট দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে নিয়োগ কমিটির সভাপতি ইউএনও আবুল মনসুর নান্দাইল মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান আকন্দের মাধ্যমে এই প্রতিনিধির বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দেন। অবশ্য পরে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিয়োগ কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে বলে ইউএনওর ঘনিষ্ঠ একজন এই প্রতিনিধিকে আশ্বস্ত করেন।
এরই মধ্যে ইমাম পদে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নিয়োগের আশঙ্কা প্রকাশ করেন একই পদে আবেদনকারী মাওলানা হামিদুজ্জামান। তিনি নান্দাইল মডেল মসজিদের জায়গায় থাকা আগের মসজিদের সর্বশেষ খতিব ছিলেন। মাওলানা হামিদুজ্জামান ৩ মার্চ মুসল্লিদের উপস্থিতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘নিয়োগ কমিটির সভাপতি নান্দাইল উপজেলা থেকে আবেদিত গুরুত্বপূর্ণ আলেম-ওলামাদের বাদ দিয়ে ওনার পছন্দমতো ব্যক্তিদের নিয়োগ দিতে তিনজনের প্যানেল করে তদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। আমরা যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে নান্দাইল উপজেলা থেকে সব জনবল নিয়োগের দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় আমরা নিয়োগ কমিটির বিরুদ্ধে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করব।’
এ ছাড়া ১৭ মার্চ ইমাম পদে আবেদনকারী আমিনুল ইসলাম, হামিদুজ্জামান, বাহাউদ্দীন ও জুবায়ের তাদের স্বাক্ষরিত একটি লিখিত আবেদন ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক বরাবর জমা দেন। ওই আবেদনে তারা স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে পেশ ইমাম নিয়োগের পাঁয়তারা চলছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
এত কিছুর পরও নিয়োগ কমিটির সভাপতির ১৬ মার্চ স্বাক্ষরিত নিয়োগপত্র ১৯ মার্চ জনসম্মুখে প্রকাশিত হয়। এতে দেখা যায়, ইউএনওর ভাগিনা উল্লেখ করে যাকে নিয়োগ দেওয়া হবে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা চলছিল, সেই রাকিবুল ইসলামই পেশ ইমাম পদে নিয়োগ পেয়েছেন। এতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবারও সভাপতি নিয়োগে স্বজনপ্রীতি করেছেন দাবি করে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এনামুল হক ছোটন নামে একজন ফেসবুকের কমেন্ট বক্সে লেখেন, ‘নান্দাইলের ইউএনও একজন দুর্নীতিবাজ। তার মতো লোকের কারণে নান্দাইলের এমন অবস্থা।’ একই ব্যক্তি আরেকটি কমেন্টে লেখেন, ‘নান্দাইলের ইউএনওকে মানুষ বানিয়েই আল্লাহ ভুল করেছে।’ মাসুদুর রহমান নামে একজন কমেন্ট বক্সে লেখেন, ‘গত কিছুদিন পূর্বে আমি জাতীয় সংসদ ভবনে একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে আবেদনপ্রত্যাশী হিসেবে দেখা করে বিষয়টি নিয়ে কথা বলি। তিনি আমাকে জানিয়েছেন, এই পদে নান্দাইলের ইউএনওর পছন্দের লোক আছে।’ ইউএনওর সমালোচনা করে লেখা এমন অসংখ্য মন্তব্য এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছে।
পেশ ইমাম পদে নিয়োগ পাওয়া রাকিবুল ইসলামের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার জীনারি গ্রামের রাহের আমিনের ছেলে। তবে ইউএনওর সঙ্গে তার আত্মীয়তার সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়নি। ঢাকার উত্তরখানের জামিয়া ইসলামিয়া ফারুকিয়া নামে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করেন এই রাকিবুল ইসলাম। শিক্ষাগত সনদ অনুযায়ী তার জন্ম ১৯৯৯ সালে। সে হিসাবে বয়স দাঁড়ায় ২৩ বছর। পেশ ইমাম পদে আবেদনের যোগ্যতা হিসেবে নিয়োগ বিজ্ঞাপ্তির (ক) অনুচ্ছেদে খতিব, মুফতি বা মুহাদ্দিস হিসেবে কোনো প্রতিষ্ঠানে পাঁচ বছরের বাস্তবত অভিজ্ঞতা থাকার কথা উল্লেখ ছিল। কিন্তু নিয়োগ পাওয়া ইমাম ২০২১ সালে দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করেছেন; যা থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট হয় যে ২০২১ সাল পর্যন্ত পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন রাকিবুল ইসলাম। পেশাদার খতিব বা মুহাদ্দিস হিসেবে তার চাকরি করার কোনো সুযোগ হয়নি।
এই নিয়োগ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার মাওলানা মাজাহার নামে এক আবেদনকারী বলেন, ‘যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার দিক থেকে আমি অনেক এগিয়ে ছিলাম। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমার বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছে। এরপরও রহস্যময় কারণে আমার চাকরি হয়নি। আমার এতে দুঃখ নেই, তবে একটি উপজেলার প্রথম শ্রেণির একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অনভিজ্ঞ অল্প বয়সের যুবক ছেলে নিয়োগ দেওয়ায় সরকারের প্রকৃত উদ্দেশ্য বিফলে যাবে।’
আমিনুল ইসলাম নামে আরেক আবেদনকারী বলেন, ‘আমরা প্রথম থেকেই এমন একটি নিয়োগের বিষয়ে সন্দিহান ছিলাম। শেষ পর্যন্ত তাই হয়েছে। অনভিজ্ঞ ইমাম নিয়োগ দেওয়ার মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তির শর্ত ভঙ্গ করা হয়েছে। যদি সে (রাকিবুল ইসলাম) অভিজ্ঞতার কোনো সনদ দিয়ে থাকে, সেটা অবশ্যই জালিয়াতির মাধ্যমে দিয়েছে। আমরা সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্র্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাচ্ছি যে শর্ত ভঙ্গ হওয়ায় তদন্ত সাপেক্ষে নিয়োগ বিজ্ঞাপ্তির ৮ নম্বর শর্ত মোতাবেক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন আবেদনকারী বলেন, ‘প্রবেশপত্রে উল্লেখ ছিল লিখিত ও ভাইভার ফলাফল নোটিস বোর্ড ও ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। কিন্তু রহস্যময় কারণে আদৌ তা করা হয়নি। আমরা জানতে পারলাম না কত নম্বর পেয়েছি, কার অবস্থান কত। কেন প্রকৃত যোগ্য অভিজ্ঞ আলেমগণ নিয়োগবঞ্চিত হলো? কেউ যদি কোনো মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ায় তাহলে সে মোকাররার ইমাম হতে পারে, কিন্তু খতিব হতে পারে না। নিয়োগপ্রাপ্ত ইমাম লেখাপড়া শেষ করেছে ২০২১-২২ সালে, সে কখন খতিব হলো বা মুহাদ্দিস হলো? আমরা মনে করি স্বজনপ্রীতি করা হয়েছে, তাই তদন্তসাপেক্ষে এই নিয়োগ বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। নিয়োগ কমিটির সভাপতির গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলায় হওয়ায় চারটি পদের মধ্যে ইমাম, মুয়াজ্জিন, খাদেমসহ তিনটি পদেই নিয়োগ পেয়েছে কিশোরগঞ্জ জেলার প্রার্থীরা।’
সার্বিক বিষয়ে আলোচিত এই নিয়োগ কমিটির সদস্যসচিব ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন নান্দাইল উপজেলা শাখার কর্তাকর্তা সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি নিয়োগ কমিটিতে থাকলেও এ ব্যাপারে সভাপতি (ইউএনও) আমার সাথে বিন্দুমাত্র পরামর্শ করেননি। উনি ওনার মনমতো নিয়োগ দিয়েছেন। এ ছাড়া পেশ ইমাম পদে যাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তার অভিজ্ঞতার সনদ দাখিল করলেও পড়াশোনার সনদের সাথে তা সাংঘর্ষিক।’
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে নিয়োগ পাওয়া পেশ ইমাম রাকিবুল ইসলামের মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় শুনে দশ মিনিট পরে কথা বলবেন বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। কিন্তু পরে আবার একাধিকবার কল করা হলেও তিনি আর রিসিভ করেননি।
আর নিয়োগ কমিটির সভাপতি ইউএনও আবুল মনসুর বলেন, ‘যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই করেই নিয়োগ কমিটি নিয়োগ দিয়েছে। সে (রাকিবুল ইসলাম) কখন কী পাস করেছে, এটা দেখার বিষয় নয়, তার ইমাম হিসেবে ছয় বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে।’ অবশ্য খতিবের অভিজ্ঞতার বিষয়টি এড়িয়ে যান ইউএনও। তিনি বলেন, ‘এগুলো আপনাদের দেখার বিষয় না।’ আর ফলাফল নোটিস বোর্ডে টানানো বা প্রকাশ না করার কারণ জানতে চাইলে বলেন, ‘ফলাফল প্রকাশ করার কোনো বিধান নেই।’
নিখোঁজের পর স্থপতি ইমতিয়াজ মোহাম্মদ ভূঁইয়ার মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় হওয়া হত্যা মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গত রবিবার রাতের বিভিন্ন সময়ে সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
ডিবি বলছে, একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র টাকা হাতিয়ে নিতে ইমতিয়াজকে অপহরণ করে। পরে টাকা না পেয়ে তাকে হত্যা করে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলো মিল্লাত হোসেন মুন্না, এহসান ওরফে মেঘ ও মো. আনোয়ার হোসেন অভি। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জ বন্দর থানার একটি গ্যারেজ থেকে হত্যাকাণ্ডের সময় ব্যবহৃত একটি গাড়ি জব্দ করা হয়েছে। গতকাল সোমবার ঢাকা মহানগর ডিবির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার গোলাম সবুর গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, ইমতিয়াজ হত্যায় জড়িত পাঁচজনের মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরাফাত ও আলিফ নামে বাকি দুজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
ইমতিয়াজ ঢাকার তেজগাঁও থানা এলাকার মোহাম্মদ হোসেন ভূঁইয়ার ছেলে। তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বাড়ির নকশার কাজ করতেন। তার স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। গত ৭ মার্চ বাড়ি থেকে বের হয়ে তিনি নিখোঁজ হন। পরদিন ৮ মার্চ তার স্ত্রী ফাহমিদা আক্তার কলাবাগান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এর পরদিন মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখানের একটি ঝোপের ভেতর থেকে ইমতিয়াজের লাশ উদ্ধার হয়। তবে পরিবার তখন তা জানতে পারেনি। বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেলে ইমতিয়াজ নিখোঁজের বিষয়ে প্রতিবেদন সম্প্রচারিত হলে ১০ দিন পর পরিবার জানতে পারে, ইমতিয়াজ মোহাম্মদ খুন হয়েছেন। সিরাজদীখানে যে ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার হয়েছে, তা ইমতিয়াজের। পরে আদালতের অনুমতিতে ওই লাশ কবর থেকে উত্তোলনের পর তা ইমতিয়াজের বলে শনাক্ত করেন স্বজনরা।
ডিবি জানায়, একটি অ্যাপের মাধ্যমে চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যক্তিকে ফাঁদে ফেলে বাসায় ডেকে নিত। পরে ব্ল্যাকমেইল করে আপত্তিকর ভিডিও ধারণ ও ছবি তুলে ওই ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা আদায়ের চেষ্টা করত। ভুক্তভোগীরা সামাজিক অবস্থানের কারণে কখনোই এ বিষয়ে মুখ খুলতেন না। চাঁদাবাজি ও মুক্তিপণের টাকা জমা হতো চক্রের সদস্য আরাফাতের মায়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে।
মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ওই অ্যাপের মাধ্যমে স্থপতি ইমতিয়াজের সঙ্গে চক্রের সদস্য আসিফের পরিচয় হয়। ৭ মার্চ ইমতিয়াজের মোবাইল ফোনে কল করে তাকে কলাবাগানের একটি বাসায় ডেকে নেয় আসিফ। সেখানে আগে থেকেই ছিল আরাফাত, মুন্না, মেঘ। তারা সবাই মিলে ইমতিয়াজকে ফাঁদে ফেলে টাকার জন্য মারধর করে। একপর্যায়ে ইমতিয়াজ মারা যান। পরে একটি গাড়িতে করে মুন্সীগঞ্জ গিয়ে লাশ ফেলে দেওয়া হয়।
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, স্থপতি ইমতিয়াজ হত্যায় গ্রেপ্তার আসামি এহসান ওরফে মেঘ মুন্সীগঞ্জের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এ ছাড়া গ্রেপ্তার অন্য আসামি মুন্না ও অভিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রহিমা আক্তারের কাছে তৃতীয় লিঙ্গের মেঘ ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়।
রাজধানীর মহাখালীর সাততলা বস্তি এবং ওয়ারীর সুইপার কলোনিতে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। রবিবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে সুইপার কলোনিতে এবং গতকাল সোমবার সকাল পৌনে ৭টার দিকে সাততলা বস্তিতে পৃথক অগ্নিকা-ের ঘটনা দুটি ঘটে। আগুনে সুইপার কলোনির ২০টি এবং সাততলা বস্তির ১৫০টি ঘর পুড়ে গেছে। সাততলা বস্তির ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও সুইপার কলোনির আগুনে শিশুসহ সাতজন দগ্ধ হয়েছে। তাদের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।
সাততলা বস্তিবাসীর তথ্যমতে, গতকাল সকাল ৬টা ৪৮ মিনিটের দিকে বস্তির এক কোণে দোতলা একটি ঘর থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। মুহূর্তে ধোঁয়া ও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তখনো বস্তির অধিকাংশ বাসিন্দা ঘুমাচ্ছিলেন। যে ঘরে আগুন ধরে, সেই ঘরের বাসিন্দাদের চিৎকারে সবার ঘুম ভাঙে। বস্তির বাসিন্দারা চেষ্টা করেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হন। এরই মধ্যে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে এর আগেই পুড়ে ছাই হয়ে যায় একতলা, দোতলাবিশিষ্ট অনেক ঘর।
বুয়ার কাজ করেন জুলেখা বেগম। বস্তির একটি ঘরে স্বামী-সন্তান নিয়ে ভাড়া থাকেন। সকালে কাজে যাওয়ার জন্য ঘুম থেকে উঠতেই চিৎকার শুনতে পান। দেখেন, তার ঘরের কাছাকাছি একটি ঘরে আগুন ধরে গেছে। স্বামী-সন্তানকে জাগিয়ে খালি হাতেই ঘর থেকে বের হয়ে যান তিনি। রবিবার রাতে স্বামী কাজের সাড়ে ৪০০ টাকা এনে তার হাতে দিয়েছিলেন। সেই টাকাও নিতে পারেননি। শুধু বিছানার ওপর থেকে বাটন মোবাইলটা হাতে নিতে পেরেছেন। জুলেখার ধারণা, বস্তির অনেকে আশপাশে বুয়ার কাজ করেন। তারা সকাল সকাল শিশুসন্তানদের জন্য রান্না করে রেখে যান। তেমনি কোনো একটি ঘরে রান্না করার সময় এ ঘটনা ঘটতে পারে। তবে যে ঘর থেকে আগুনের সূত্রপাত, সেই ঘরের গ্যাসের চুলা রয়েছে বলে জানিয়েছেন জুলেখাসহ একাধিক বস্তিবাসী। তাদের ধারণা, হয়তো চুলার লাইন লিকেজ ছিল কিংবা চুলা থেকেই আগুন লাগতে পারে।
ছায়েরা বেগম নামের আরেক বাসিন্দা জানান, গ্যাসের লাইন অফ করো, গ্যাস অফ করো এমন চিৎকারে তার ঘুম ভাঙে। ঘর থেকে বের হতেই দেখেন দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। তিনিও হাতের কাছে যা ছিল তা নিয়েই ঘর থেকে এক কাপড়ে বেরিয়ে যান।
ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দারা বলছিলেন, ঘুমে থাকার কারণে তারা কোনো মালামালই বের করতে পারেননি। কেবল হাতে বহন করা যায়, এমন মালামাল নিয়ে এক কাপড়ে বেরিয়ে গেছেন। ভোরবেলায় হালকা বাতাস থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তবে বস্তিতে অবৈধ গ্যাস, বিদ্যুতের লাইন রয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক বস্তিবাসী।
গতকাল বেলা ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, তখনো পুড়ে যাওয়া ঘর থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। বস্তির ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দারা পোড়া টিন, খাট, আসবাব বের করার চেষ্টা করছেন। বস্তির অধিকাংশ ঘরই দোতলাবিশিষ্ট। একটি ঘরের মধ্যে বেশ কয়েকটি কক্ষও রয়েছে। মূলত চতুর্দিক ইটের দেয়াল আর ওপরে টিন, আর ঘরের ভেতরের কক্ষগুলো কাঠ দিয়ে সাজানো। রয়েছে হরেক রকমের আসবাবও। পুড়ে যাওয়া একটি ঘরের ভেতরে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের ‘কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপন প্রকল্পের’ কয়েক শ সনদ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। অধিকাংশ সনদের কিছু অংশ পুড়ে গেছে। আবার অনেকগুলো বান্ডিল আকারে পড়ে রয়েছে। কেউ টিন আর পলিথিন দিয়ে সনদগুলো ঢেকে রেখেছেন, যাতে কারও নজরে না পড়ে। মূলত কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপন প্রকল্পের অধীনে এক বছরের জন্য যেসব কিশোর-কিশোরী দক্ষতামূলক প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন সহশিক্ষা নিয়ে থাকে, কোর্স সম্পন্ন হওয়ার পর তাদের মহিলা অধিদপ্তর থেকে এই সনদ দেওয়া হয়। কিন্তু বস্তিতে পুড়ে যাওয়া এবং ভালো সদনগুলোতে কোনো প্রশিক্ষণার্থীর নাম-পরিচয় উল্লেখ নেই। নাম-ঠিকানার জায়গা খালি রয়েছে। অথচ প্রতিটি সনদে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফরিদা পারভীন এবং কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপন প্রকল্পের পরিচালক মো. তরিকুল আলমের স্বাক্ষর রয়েছে। এতে প্রতীয়মান হয়, বস্তির কোনো একটি চক্র এই সনদগুলো সংগ্রহ করে টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে আসছিল। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা সম্ভব হয়নি।
ফায়ার সার্ভিসের জোন কমান্ডার আব্দুল আলিম জানান, সাততলা বস্তিতে আগুন লাগার খবরে হেডকোয়ার্টার্স, মহাখালী, বনানী থেকে ৯টি ইউনিটের প্রায় দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ জানা যায়নি। তবে আগুনে বস্তির অনেক টিনশেডের ঘর পুড়ে গেছে। আগুনে কয়েক শ ঘর পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন ওই বস্তির বাসিন্দারা। তবে কন্ট্রোল রুমের ডিউটি অফিসার খালেদা ইয়াসমিন জানান, তাদের হিসাবে আগুনে ১৫০টি ঘর পুড়ে গেছে।
এদিকে, অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতি পরিবারকে ৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। ডিএনসিসি জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন জানান, অগ্নিকান্ডের ঘটনা জানার পর মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম সার্বক্ষণিক তদারকি করেছেন। তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে অগ্নিকা-ের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা প্রণয়ন করে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবারকে ৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া অগ্নিকান্ডে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের নির্দেশও দিয়েছেন।
সুইপার কলোনিতে আগুন : সাততলা বস্তির আগুনের আগে রবিবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে ওয়ারীর জয়কালী মন্দিরের হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে সুইপার কলোনিতে আগুন লাগে। এতে নারী-শিশুসহ সাতজন দগ্ধ হয়েছেন। দগ্ধ ব্যক্তিরা হলেন ৬৫ বছর বয়সী গীতা রানী দে, ৬০ বছর বয়সী কান্তা রানী, ৩৬ বছর বয়সী রাজু ও ৫২ বছর বয়সী আফজাল হোসেন, ৭ বছর বয়সী কৃষ্ণ, ২৭ বছর বয়সী শান্তি এবং ৩ বছর বয়সী লক্ষ্মণ। তাদের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।
ডিউটি অফিসার খালেদা ইয়াসমিন জানান, মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে ওই কলোনিতে রবিবার রাত ৩টা ২০ মিনিটে আগুন ধরার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে ভোররাতের দিকে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. বাচ্চু মিয়া জানান, দগ্ধ অবস্থায় চারজনকে উদ্ধার করে বার্ন ইনস্টিটিউটে নিয়ে এসে অবজারভেশনে রাখা হয়েছে। তাদের চিকিৎসা চলছে। একই ঘটনায় তিনজনকে দগ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলের বার্নে নিয়ে আসা হয়েছে। তারা চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ফায়ার সার্ভিসের ধারণা, সিগারেটের আগুন বা গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে সুইপার কলোনির আনুমানিক ২০টি টিনশেড ঘরে আগুন লেগেছিল। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় পাশের কয়েকটি মুরগির দোকান। আগুনে ফ্লাইওভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কি না, তাও পরীক্ষা করে দেখা হবে বলে জানান তারা।
বাটা সিগন্যালে বহুতল ভবনে আগুন : রাজধানীর বাটা সিগন্যাল এলাকার শেলটেক কম্পিউটার সিটি ভবনে আগুন লেগে কয়েকটি দোকান পুড়ে গেছে। ভবনটির পঞ্চমতলায় লাগা আগুনে তিনটি দোকান পুরোপুরি পোড়ার পাশাপাশি আরও কয়েকটি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সেখানে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট আগুন নেভাতে কাজ করে। প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় রাত সাড়ে ৯টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেটর) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, নয়তলা ভবনটির পঞ্চমতলায় আগুন লাগে। আগুন অন্য কোনো তলায় ছড়াতে পারেনি। তার আগেই নিয়ন্ত্রণ করা গেছে। এতে তিনটি কম্পিউটার ও এর যন্ত্রাংশের দোকান ব্যাপকভাবে পুড়ে গেছে। এ ঘটনায় একজন সামান্য আহত হয়েছেন জানিয়ে ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা বলেন, অন্য কারও দগ্ধ বা আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
বাটা সিগন্যাল মোড় থেকে শাহবাগের দিকে কিছুটা এগোলে হাতের ডান দিকেই রাস্তার পাশে নয়তলা শেলটেক কম্পিউটার সিটি ভবন। এর পাঁচতলা পর্যন্ত দোকান। তার ওপরের তলাগুলো আবাসিক। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আগুন লাগার পর পাঁচতলা থেকে নিচের তলার লোকজন দ্রুত নেমে আসেন। আর ওপরের তলাগুলোর বাসিন্দারা ছাদে চলে যান।
ওই ভবনের দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন বলেছেন, পাঁচতলায় একটি মোবাইল সার্ভিসিংয়ের দোকানে আগুন লাগে, পরে তা পাশের কয়েকটি দোকানে ছড়িয়ে পড়ে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।