
ইরানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এক শহরে বিক্ষোভ চলার সময় গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে আহত হন এলাহে তাভোকোলিয়ান নামের এক তরুণী। ডান চোখে ব্যান্ডেজ বাঁধা অবস্থায় তিনি হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছেন, ব্যথায় কাতরাচ্ছেন এমন ভিডিও তখন সাড়া ফেলেছিল বিশ্বজুড়ে। ওই ঘটনায় পিএইচডি ডিগ্রির শিক্ষার্থী এলাহে তাভোকোলিয়ান তার ডান চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। তার তিন মাস পর এলাহে তাভোকোলিয়ান ইনস্টাগ্রামে তার জীবনের সেই কঠিন অধ্যায়ের একটি ভিডিও শেয়ার করেছিলেন। তাতে তিনি লিখেছিলেন, তোমরা আমার চোখের দিকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিলে। কিন্তু আমার হৃৎপিণ্ড এখনো সচল রয়েছে। আমাকে দৃষ্টিহীন করার জন্য তোমাদের ধন্যবাদ। কিন্তু এই ঘটনা বহু লোকের চোখ খুলে দিয়েছে। আমার হৃদয়ের গভীরে থাকা আলো আর আগামীতে সুদিনের আশা আমার মুখে হাসি ফোটাবে। কিন্তু তোমাদের হৃদয় এবং তোমাদের সেনাপতির হৃদয় দিন দিন অন্ধকারে ডুবে যাবে। তিনি লেখেন, কিছুদিনের মধ্যে আমি পাব একটি কাচের চোখ, আর তোমরা পাবে পদক।
বিবিসি বলছে, গত সেপ্টেম্বরে সঠিকভাবে মাথার স্কার্ফ না পরার অভিযোগে ইরানের নীতি পুলিশের হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাশা আমিনির মৃত্যুর পর থেকে হাজার হাজার মানুষ সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। সেসময় এলাহের মতো বহু বিক্ষোভকারীর মুখ লক্ষ্য করে ছররা বন্দুক থেকে গুলি চালানো হয়। দৃষ্টি হারান অসংখ্য বিক্ষোভকারী। এলাহের মতো তারাও এখনো সরব অনলাইনে। তারাও নিজেদের চোখ হারানোর ছবি বা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করছেন। তারাও বলছেন, চোখের আলো কেড়ে নিলেও মনের আলোয় তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ থাকবেন। চালিয়ে যাবেন প্রতিবাদ।
এলাহে সম্প্রতি তার খুলিতে ঢুকে থাকা একটি বুলেট অপসারণের জন্য ইতালিতে গেছেন। সেখানে তার একটি বড় অপারেশন হয়েছে। হাসপাতালের বিছানা থেকে তিনি নিজের একটি ভিডিও পোস্ট করে বলেছেন, এই ঘটনা বর্ণনা করার জন্যই আমাকে বেঁচে থাকতে হবে। অপারেশনের পর তিনি বিবিসি ফার্সিকে বলেছেন, তিনি ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক আদালতে সাক্ষ্য হিসেবে বুলেটটি দেখানোর পরিকল্পনা করছেন।
বিবিসির ভাষ্য, পুলিশের গুলিতে যেসব তরুণ-তরুণী অন্ধ হয়ে গেছেন তারা বলছেন, বেছে বেছে তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়েছিল। যাদের মুখে গুলি লেগেছে আইনের ছাত্র গজল রঞ্জকেশ তাদের একজন। নভেম্বরে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর বন্দর আব্বাসে তার গুলি লাগে। এই ঘটনা সবাইকে জানানোর জন্য ২১ বছর বয়সী গজলই প্রথম সোশ্যাল মিডিয়ায় তার আঘাতের বিষয়ে প্রকাশ্যে ভিডিও পোস্ট করেছিলেন। হাসপাতালের বিছানা থেকে তিনি যে ভিডিওটি শেয়ার করেছেন তাতে দেখা যাচ্ছে তার ডান চোখ থেকে রক্ত ঝরছে। কিন্তু তিনি তখনো আঙুল দিয়ে বিজয়-সূচক ভি চিহ্ন দেখাচ্ছেন। এই ভিডিওটি ভাইরাল হয়, দেশ-বিদেশে ইরানিরা দেখতে পান যে কীভাবে তরুণদের বন্দুকের নিশানা করা হচ্ছে। গজলের এই পোস্টের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এক অনন্য ঘটনা।
একইভাবে আঘাত পেয়েছেন যেসব নারী-পুরুষ তারা বুঝতে পেরেছিলেন যে এই ঘটনা শুধু তাদের জীবনেই ঘটেনি। ট্রমায় সাহায্য পাওয়ার জন্য তারা অনলাইনে একই ধরনের কিছু মানুষকে খুঁজে পান।
ইনস্টাগ্রামে ফার্সি ভাষায় গজল যে বিবৃতি দিয়েছেন তাতে লেখা হয়েছে : চোখের পলক ফেলার শব্দ যেকোনো চিৎকারের চেয়েও বেশি উচ্চকিত। সম্প্রতি তিনি নিজের কিছু নতুন ছবি পোস্ট করেছেন। বিবিসি বলছে, ভালোভাবে লক্ষ্য না করলে ছবিগুলো দেখে মনে হবে এগুলো ফ্যাশন ফটোগ্রাফি। তিনি লিখেছেন, এখনো অসহ্য ব্যথা রয়েছে, কিন্তু এতে একসময় অভ্যস্ত হয়ে যাবে। আমার জীবন চলতে থাকবে কারণ আমার কাহিনি এখনো শেষ হয়নি। আমাদের বিজয় এখনো আসেনি ঠিকই, তবে প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে।
ইরানজুড়ে এভাবে মোট কতজন মানুষ আহত হয়েছেন তার সঠিক হিসাব কেউ জানে না। হাসপাতাল থেকেই গ্রেপ্তার হতে পারেন এই ভয়ে অনেক বিক্ষোভকারী চিকিৎসা সেবা নিতেও ভয় পেয়েছিলেন। নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকা হিসাব করে বের করেছে, একই রকম আহত অন্তত ৫০০ জন গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের মধ্যে তেহরানের তিনটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
তেহরানের এক স্ট্রিট পারফরমার মোহাম্মদ ফারজি সেপ্টেম্বরে গুলিবিদ্ধ হন। বার্ডশট বা ছররা গুলি তার চোখে ঢুকে যায়। তিনি লিখেছেন, এ নিয়ে আমার কোনো অনুতাপ নেই। আমি গর্বিত যে মানুষের মুক্তির জন্য আমি আমার চোখটা উৎসর্গ করতে পেরেছি।
কিন্তু ইরানের দাঙ্গা পুলিশের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান কারামি সম্প্রতি ইরানি গণমাধ্যমে এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেন, তার বাহিনীর বিরুদ্ধে ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ প্রতিবাদকারীদের মুখে গুলি চালানোর অভিযোগগুলো এলো ‘অপপ্রচার।’
সরকারের বৈদেশিক মুদ্রা আয়-ব্যয়ের হিসাবে ঘাটতি হওয়ায় এ খাতের ভারসাম্যে ব্যবধান তৈরি হয়েছে। এতে বাণিজ্য ঘাটতিতে রয়েছে দেশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) দেশের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ১ হাজার ৩৮২ কোটি ৮০ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় (ডলারের গড়মূল্য ১০৬ টাকা দরে) যার পরিমাণ ১ লাখ ৪৬ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময় দেশের বাণিজ্য ঘাটতি ৩৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেশি ছিল। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে ৪ হাজার ৪৭৯ কোটি ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ কম। ২০২১-২২ অর্থবছরের এ সময় আমদানি করা হয়েছিল ৫ হাজার ৪৩৮ কোটি ডলারের পণ্য। এ ছাড়া আমদানির বিপরীতে এ সময় রপ্তানি হয়েছে ৩ হাজার ৪৯৬ কোটি ডলারের পণ্য। গত বছর একই সময়ে ৩ হাজার ১৯৪ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। সে হিসেবে বছরের ব্যবধানে আমদানি বেড়েছে ৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ। রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি হওয়ায় দেশের বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৮২ কোটি ডলার। এক মাস আগে জানুয়ারি শেষে দেশে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ১ হাজার ৩৩৯ কোটি ডলার। সে হিসেবে এক মাসের ব্যবধানে বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে ৪৩ কোটি ডলার। আর আগের বছরের একই সময় বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ২ হাজার ২৪৩ কোটি ডলার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে ৩৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, টানা বড় অঙ্কের বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দিলেও কয়েক মাসে এর পরিমাণ কিছুটা কমেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এলসি খোলা নিয়ে নানা পদক্ষেপের কারণে এমন সফলতা এসেছে। তাদের মতে, অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করায় ধীরে ধীরে আমদানি ও রপ্তানির ব্যবধান কমে আসছে। এসব পদক্ষেপের কারণে আগামীতে আরও কমে আসবে বলে জানান তারা।
চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। সেই হিসাবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো। কিন্তু দেশে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালান্স এখন ঋণাত্মক। অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) চলতি হিসাবে ঘাটতি হয়েছে ৪৩৮ কোটি কোটি ৭০ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় (ডলারের গড়মূল্য ১০৬ টাকা দরে) ৪৬ হাজার ৫০২ কোটি টাকা। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৬৬ দশমিক ১৬ শতাংশ কম।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, আলোচিত সময়ে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) বেড়েছে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতিও। জানুয়ারি মাস শেষে সেবা খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে ৫৮৪ কোটি ডলার। অন্যদিকে সেবা খাতে দেশের ব্যয় হয়েছে ৮৩৯ কোটি ডলার। সেবা খাতের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৫৫ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ২৪৩ কোটি ডলার। সামগ্রিক লেনদেনেও (ওভার অল ব্যালান্স) বড় ঘাটতিতে পড়েছে দেশ। জানুয়ারি শেষে সামগ্রিক লেনদেনের (ঋণাত্মক) পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৯৫ কোটি ডলার। এ সূচকটি আগের অর্থবছরের একই সময় ২২২ কোটি ডলার ঘাটতি ছিল; অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে ঘাটতি বেড়েছে ২৫৮ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বেড়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে জুলাই-ফেব্রুয়ারি ৩১৩ কোটি ডলারের এফডিআই পেয়েছিল বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা বেড়ে ৩৫০ কোটি ডলারে উঠেছে। এক বছরে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ বেড়েছে ১১ দশমিক ৯১ শতাংশ। বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে সরাসরি যে বিদেশি বিনিয়োগ আসে তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ নিয়ে যাওয়ার পর যেটা অবশিষ্ট থাকে, সেটাকে নিট এফডিআই বলা হয়। আলোচিত সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগও বেড়ে ১৫৩ কোটি ৪০ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে। গত অর্থবছর একই সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৩১৩ কোটি ডলার।
এদিকে গত বছরের শুরু থেকেই দেশে ডলার সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে, রপ্তানি ও রেমিট্যান্স কমছে ধারাবাহিকভাবে। ডলার সংকট কাটাতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার ছেড়ে চাপ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে রিজার্ভের পরিমাণও কমছে ধারাবাহিকভাবে। অর্থবছরের শুরুতে রিজার্ভ ৪১ দশমিক ৮২ বিলিয়ন থাকলেও ৩০ মার্চ তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলারে। মূলত সংকটের মধ্যেই বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান প্রবাসী আয় ও রপ্তানিতে বড় ধাক্কা এসেছে। তবে প্রবাসী আয়ে নানা সুবিধা দেওয়ার এবং আমদানি কমিয়ে রপ্তানি বৃদ্ধির পদক্ষেপে ধাক্কা কিছুটা সামাল দেওয়া সম্ভব হয়েছে। অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত ১ হাজার ৬৩০ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। আগের অর্থবছরে একই সময়ে পাঠিয়েছিলেন ১ হাজার ৫২৯ কোটি ডলার।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, দেশের প্রথম নারী ব্যাংক ম্যানেজার, নারী উদ্যোক্তা, রোকিয়া আফজাল রহমান মারা গেছেন। গতকাল বুধবার ভোরে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রোকিয়া আফজাল রহমানের মরদেহ সিঙ্গাপুর থেকে দেশে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। রোকিয়া আফজাল রহমান দুই মেয়ে ও এক ছেলে রেখে গেছেন।
২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে মহিলা ও শিশু, শ্রম ও কর্মসংস্থান, সমাজকল্যাণ এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন রোকিয়া আফজাল রহমান।
তার জন্ম ১৯৪১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর কলকাতায়। বাবা ব্যারিস্টার খোন্দকার আলী আফজাল ছিলেন বঙ্গীয় আইন পরিষদ বা বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলির সচিব, মা সাদিয়া আফজাল ছিলেন শিক্ষানুরাগী।
কলকাতা ও করাচিতে লেখাপড়া শেষ করে রোকিয়ার কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৬২ সালে করাচিতে মুসলিম কমার্শিয়াল ব্যাংকে। দুই বছরের মধ্যে তিনি ব্যাংকটির তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান শাখার ব্যবস্থাপক হন। দেশে প্রথম কোনো নারীর ব্যাংক ম্যানেজার হওয়ার ঘটনা সে সময় আলোচনার জন্ম দেয়।
পরে তিনি মাইডাস ফাইন্যান্সিং লিমিটেডের উদ্যোক্তা পরিচালক এবং রিলায়েন্স ইনস্যুরেন্স লিমিটেডের পরিচালক হন। বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ড সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিন বছর।
১৯৮০ সালে নিজেই কৃষিভিত্তিক ব্যবসা শুরু করেন রোকিয়া, গড়ে তোলেন আরআর কোল্ডস্টোরেজ লিমিটেড। পরে আরলিংকস লিমিটেডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন।
দেশের অন্যতম নারী উদ্যোক্তা রোকিয়া আফজাল আরিস হোল্ডিংস, ইমান কোল্ডস্টোরেজেও বিনিয়োগ করেন। তিনি ডেইলি স্টারের মূল কোম্পানি মিডিয়া ওয়ার্ল্ড লিমিটেডের চেয়ারপারসন এবং প্রথম আলোর মূল কোম্পানি মিডিয়া স্টারের পরিচালক ছিলেন।
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও এশিয়ান উইমেন ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান ছিলেন রোকিয়া আফজাল।
বাংলাদেশ নারী উদ্যোক্তা ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন রোকিয়া মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ছিলেন কয়েকবার। ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের সহসভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
ব্র্যাক, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি।
চট্টগ্রাম নগরে পুকুর ও জলাশয় কমছে ব্যাপক হারে। এ কারণে আগুন নেভাতে যেমন পানির সংকট দেখা দিয়েছে, তেমনি গ্রীষ্মকালে নগরীতে গরমের মাত্রাও বাড়িয়ে দিচ্ছে কয়েকগুণ। দিন দিন এ ঝুঁকি বাড়ছে।
চট্টগ্রামে গত ১৫ বছরে হারিয়ে গেছে তিন হাজার পুকুর ও জলাশয়। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) ২০০৮ সালের ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) অনুযায়ী চট্টগ্রামে ৫ হাজার ৩১টি পুকুর ও জলাশয় ছিল। এখন তা নেমে এসেছে প্রায় দুই হাজারে।
পুকুর ও জলাশয় কমে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে সিডিএর উপপ্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও মাস্টারপ্ল্যান প্রকল্পের পরিচালক আবু ঈসা আনসারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত ১৫ বছরে এসব পুকুর ও জলাশয় ভরাট হয়ে গেছে।’
একটি নগরে কী পরিমাণ পুকুর ও জলাশয় থাকা প্রয়োজন তা জানতে চাইলে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মোহাম্মদ রাশেদুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খেলার মাঠ, পার্ক, উন্মুক্ত স্থান, পুকুর, দীঘি ও জলাশয় মিলে একটি নগরীতে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ জায়গা খালি থাকা প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের শহরগুলোতে এর অর্ধেকও নেই। এতে নগরীতে বসবাসের পরিবেশ যেমন বিনষ্ট হচ্ছে, তেমনি বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকিও বাড়ছে।’
ঝুঁকির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমানে নগরগুলোতে অন্যতম আলোচ্য বিষয় অগ্নিঝুঁকি। দেখা যায়, বিভিন্ন জায়গায় আগুন লাগে কিন্তু নেভানোর জন্য পানি পাওয়া যায় না। আর এতে নগরে অগ্নিঝুঁকি বেড়ে গেছে।
অগ্নিঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে ফায়ার সার্ভিস চট্টগ্রাম বিভাগের উপপরিচালক মোহাম্মদ আবদুল হালিম বলেন, ‘পানি ছাড়া আমাদের কোনো ক্ষমতা নেই। এখন যদি পানিই না পাই তাহলে আগুন নেভাব কী করে। ১৯৬১ সালের আইনে পুকুর ও জলাশয় ভরাট করতে ফায়ার সার্ভিস থেকে অনুমোদন নেওয়া হতো। কিন্তু ২০০০ সালের জলাশয় সংরক্ষণ আইনে ফায়ার সার্ভিস থেকে অনাপত্তিপত্র নেওয়ার কথা বলা নেই। তাই কোথায় ভরাট হচ্ছে তা আমরা জানি না। আগুন লাগলে আমাদের পানির সংকটে ভুগতে হয়।’
জলাশয় সংরক্ষণ আইন-২০০০ অনুযায়ী পুকুর-দীঘি ভরাট নিষিদ্ধ। ভূমি রেকর্ডে (আরএস, বিএস) কোনো জলাশয় থাকলে তা কোনোভাবেই ভরাট করা যাবে না। অন্যদিকে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যানে (ড্যাপ) পুকুর ভরাট বন্ধ করার জন্য একটি নির্দেশনা দিয়েছে। সেই নির্দেশনায় ১৫ কাঠা আয়তনের কোনো বড় জলাশয় কোনোভাবেই ভরাট করা যাবে না। এ বিষয়ে সিডিএর উপপ্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আবু ঈসা আনসারী বলেন, ‘ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যানে স্পষ্ট বলা রয়েছে, শূন্য দশমিক ২৫ একর (১৫ কাঠা) আয়তনের বড় পুকুর বা জলাশয়ে কোনোভাবে ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া যাবে না। অর্থাৎ এসব জলাশয় ভরাট না করার জন্যই এ আইন করা হয়েছে।’
তাহলে ভরাট করে যদি ভবন নির্মাণ করে সে ক্ষেত্রে কি সিডিএ অনুমোদন দেবে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘কোনোভাবেই নয়। নগরীর অনেক এলাকার মানুষ অবৈধভাবে পুকুর ভরাট করে আমাদের কাছে ভবনের অনুমোদন নিতে আসে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট পুকুর ও দীঘি আমাদের ২০০৮ সালের ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যানে মার্ক করা থাকায় আমরা সেসব জায়গায় ভবন নির্মাণের অনুমোদন দিই না।’
এ অবৈধভাবে পুকুর ও জলাশয় ভরাট বন্ধে মাঠপর্যায়ে কাজ করছে পরিবেশ অধিদপ্তর। চট্টগ্রামে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ২০২১ সালে পাঁচটি ও গত বছর ছয়টি মামলাও করা হয়েছিল পুকুর ভরাটের কারণে। এ ছাড়া কোথাও পুকুর ভরাটের সংবাদ পেলে ঘটনাস্থলে যান পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে কথা হয় পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট) সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ কবীরের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ভূমির রেকর্ডে পুকুর উল্লেখ থাকলে অবশ্যই তা বন্ধে আমরা আইনগত পদক্ষেপ নিয়ে থাকি। কিন্তু কেউ যদি ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন (আরএসে পুকুর, বিএসে তা পরিবর্তন করে নাল বা ভিটেজমি) করে তখন আর আমাদের কিছু করার থাকে না।’
তিনি আরও বলেন, পুকুর ভরাট বন্ধ করার জন্যই সরকারের পক্ষ থেকে জলাশয় সংরক্ষণ আইন করা হয়েছিল। কিন্তু তারপরও ক্রমাগতভাবে পুকুর ও জলাশয় ভরাট করে ভবন নির্মাণের মাধ্যমে নগর পরিবেশ বিনষ্ট করা হচ্ছে।
এদিকে চট্টগ্রাম মহানগরীর উত্তর কাট্টলী এলাকায় কাট্টলী দীঘি ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছে প্রশান্তি আবাসিক এলাকা। একই এলাকায় পদ্ম দীঘি ভরাট করে এক্সক্যাভেটর, পে লোডার রাখার বিশাল গ্যারেজ বানানো হয়েছে। চকবাজারে কমলদহ দীঘি ভরাট করে নির্মাণ করা হয়েছে বর্তমান কিশলয় কমিউনিটি সেন্টার, বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল নির্মাণ করতে ভরাট করা হয়েছে মাইল্যার দীঘি। এ ছাড়া মোহাম্মদপুরের বড় পুকুর, শুলকবহরের মসজিদ পুকুর, মধ্যম রামপুরার হাজার দীঘিসহ অসংখ্য পুকুর ও দীঘি ভরাট করা হয়েছে চট্টগ্রামে।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেফমুবিপ্রবি) ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের জাকিয়া সুলতানা জয়া নামে এক শিক্ষার্থী র্যাগিংয়ের শিকার হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক নূরে জান্নাতের বিরুদ্ধে হলে ডেকে নিয়ে র্যাগিং দেওয়ার অভিযোগ করছেন ওই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নূরুন্নাহার বেগম হলের ২৩৪ নম্বর কক্ষে র্যাগিং দেওয়ার ঘটনাটি ঘটে। এ সময় ওই ছাত্রী জ্ঞান হারিয়ে প্রায় ৪৫ মিনিট ওই কক্ষে পরে থাকে। জ্ঞান ফিরলে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ ঘটনায় ওই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) ড. এ এইচ এম মাহবুবুর রহমান বরারব একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
ওই লিখিত অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, গত বৃহস্পতিবার ফিশারিজ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী নূরে জান্নাত আপু আমাকে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করতে বলেন। পরে আমি অসুস্থ শরীর নিয়ে গত রবিবার দুপুর ২টা ৫০মিনিটে হলে আসি। হলে প্রবেশ করার পর আমাকে সিএসি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এক বড় ভাইকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু উক্ত অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না। পরদিন সোমবার সকাল ৯টা ৩০মিনিটে আমাকে ও এনিকে (প্রথম বর্ষে ১ম সেমিস্টার, ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্রী) হলের ২৩৪ নম্বর কক্ষে যেতে বলা হয় এবং উনার সঙ্গে দেখা করে ক্লাসে ঢুকতে বলা হয়। পরে ক্লাস মিস দিয়ে আমি ও এনি হলে যাই। পরে আমাকে আবার ওই একই অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং পরে আমাকে আমার জুনিয়র শিক্ষার্থী এনির সামনে ১০মিনিট কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় এবং পরে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। তার এক ঘণ্টা পর একটু একটু জ্ঞান এলে আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, সোমবার সন্ধ্যায় শিক্ষার্থী জয়া এ ঘটনায় অসুস্থ হয়ে পড়ে। আরও বেশি অসুস্থ হলে জামালপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য জামালপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন।
এ ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘প্রেম সংক্রান্ত বিষয়ের জের ধরে এ ঘটনাটি ঘটছে। প্রেম সংক্রান্ত বিষয়ে এনি নামে এক শিক্ষার্থী নূরে জান্নাতের কাছে হয়তো কোনো বিচার দিয়েছিলেন। পরে নূরে জান্নাত দুজননে ডেকে হলে এই ঘটনা ঘটায়।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জয়া বলেন, ‘আমাকে হলে যে বিষয়ের জন্য ডাকা হয়েছে, আমি সে বিষয় সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। কেন আমাকে হলে নিয়ে এ রকম মানসিক নির্যাতন করা হলো তা আমি জানি না। আমি অসুস্থ থাকার পরও বেশ কয়েকবার আমাকে হলে ডাকা হয় এবং সেখানে নিয়ে মানসিক নির্যাতন করা হয়। এক পর্যায়ে সেখানে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। এ নিয়ে তিনি আরও বলেন, আমি প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই এবং বঙ্গমাতা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ঘটনা আর দ্বিতীয়বার যেন না ঘটে এটাই আমার প্রশাসনের কাছে চাওয়া।
ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী এনি জানান, আমি নূরে জান্নাত বা অন্য কারও কাছে কোনো বিষয়ে বিচার দিইনি। সেদিনই হলে গিয়ে তাকে (নূরে জান্নাত) আমি প্রথম দেখি। এর আগে তাকে আমি চিনতামও না। হলে আমাকে এবং জয়াকে (ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী) কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। এক পর্যায়ে জয়া জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। আমার পরীক্ষা থাকায় কিছুক্ষণ পর হল থেকে আমি চলে আসি।
এ প্রসঙ্গে নূরে জান্নাত বলেন, ‘এ ঘটনার বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমি একটা মেয়েকে ডেকেছিলাম। কিন্তু এমন কোনো অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি। মেয়েটিকে কোনো র্যাগ দেওয়া হয়নি, ধমক দেওয়া হয়নি, উচ্চস্বরে কথা বলা হয়নি। এটা একটা অযৌক্তিক ও মিথ্যা অভিযোগ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) ড. এ এইচ এম মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমরা একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত চলছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. কামরুল আলম খান বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না, আর কিছু শুনিওনি। এখন পর্যন্ত আমার কাছে কোনো লিখিত অভিযোগ বা কেউ মৌখিক কিছু বলেনি।
অনিয়মের পাহাড় মাথায় নিয়ে গত মঙ্গলবার অবসরে গেছেন বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার থেকে আসা ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কামরুন নাহার। তবে অবসরের পরও অধ্যক্ষ কামরুন নাহার ও শিক্ষক প্রতিনিধি ড. ফারহানা খানমের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার এবং ব্যাপক আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
গত ২৮ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক-৭ (প্রতিকল্প) মোহাম্মদ রফিকুল আলম স্বাক্ষরিত এক চিঠি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব বরাবর পাঠানো হয়। সেখানে অধ্যক্ষ ও শিক্ষক প্রতিনিধির অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্ত করে আগামী এক মাসের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রতিবেদন পাঠাতে বলা হয়েছে। এ চিঠির সঙ্গে ৬২ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রও সংযুক্ত করা হয়। এদিকে গত মঙ্গলবার অধ্যক্ষের অবসরের পর কে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেবেন তা নিয়ে শুরু হয় টানাপড়েন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠতার তালিকায় এক নম্বরে থাকা হাসিনা বেগমের এ দায়িত্ব নেওয়ার কথা। কিন্তু সাবেক অধ্যক্ষ কামরুন নাহার ও গভর্নিং বডির তিন-চার সদস্য মিলে গভর্নিং বডির বৈঠক ছাড়াই এ দায়িত্ব জ্যেষ্ঠতার তালিকায় দুই নম্বরে থাকা কেকা রায় চৌধুরীকে দিয়েছেন। ফলে প্রতিষ্ঠানটিতে আবারও অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।
গতকাল বুধবার গভর্নিং বডির পাঁচজন সদস্য, সিনিয়র শিক্ষকরা পৃথকভাবে গভর্নিং বডির সভাপতি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। এমনকি গতকাল প্রতিষ্ঠানের সামনে শতাধিক অভিভাবক বিধি অনুযায়ী অধ্যক্ষের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে অবস্থান নিয়েছিলেন।
প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির সদস্য সিদ্দিকী নাছির উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা গত মঙ্গলবার থেকেই গভর্নিং বডির সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। কিন্তু তিনি সরকারের একজন সচিব বিধায় গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত থাকায় তার সাক্ষাৎ পাইনি। তবে আমরা বেশিরভাগ গভর্নিং বডির সদস্যই জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে দায়িত্ব দেওয়ার পক্ষে। কিন্তু সাবেক অধ্যক্ষ ও তার সহযোগী তিনজন সদস্য মিলে দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠ শিক্ষক কেকা রায় চৌধুরীর কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছেন বলে আমরাও শুনেছি। কিন্তু এই কেকা রায় আগে একবার মাত্র তিন দিন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পেয়ে শতাধিক অবৈধ ভর্তি করিয়েছিলেন। আমরা জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে অধ্যক্ষের দায়িত্ব দিতে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েছি। সেখান থেকে কোনো ফল না এলে আমরা আদালতে যাব।’
জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিধি অনুযায়ী, যিনি জ্যেষ্ঠ শিক্ষক তিনিই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পাবেন। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। তবে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণে কোনো জটিলতা থাকলে মাউশি অধিদপ্তর বা শিক্ষা বোর্ড তা নির্ধারণ করে দিতে পারেন। তবে এর বাইরেও বিশেষ পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আগের মতো প্রেষণে কাউকে অধ্যক্ষের দায়িত্ব দিতে পারেন।’
কামরুন নাহারের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা পড়া অভিযোগে বলা হয়েছে, গভর্নিং বডির অনুমোদন ছাড়া বিধিবহির্ভূতভাবে ৫০ থেকে ৬০ জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন। এমনকি কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়নি। অথচ গভর্নিং বডি প্রবিধানমালা ২০০৯ অনুযায়ী, অধ্যক্ষের এককভাবে কোনো শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের ক্ষমতা নেই।
অভিযোগে বলা হয়েছে, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরে ‘ভিএনএসসি শিল্পাঙ্গন’ নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। সেখানে পাঁচজন প্রশিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। হাজার হাজার শিক্ষার্থী এ শিল্পাঙ্গনে ভর্তি হলেও এর আয়-ব্যয়ের যথাযথ হিসাব দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া নিয়োগের ক্ষেত্রেও মাউশি বা শিল্পকলার কোনো প্রতিনিধি রাখা হয়নি। একইভাবে একটি কারাতে ক্লাবও করা হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানের অনেক অর্থই বিনা রসিদে গ্রহণ করা হয়েছে। অধ্যক্ষের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) নুরুন নবীর মাধ্যমে এ টাকা ভাগাভাগি করা হয়েছে। নিজের লোক দিয়ে প্রশ্নপত্র ছাপিয়েও বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন অধ্যক্ষ। প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো ব্যবহার করে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার নিয়োগ ও ভর্তি পরীক্ষার জন্য আদায়কৃত সম্মানীরও একটি বড় অংশ নিয়েছেন অধ্যক্ষ।
অন্য অভিযোগগুলোর মধ্যে আছে দেশে বিদ্যুতের সংকটের সময় শিক্ষকদের কক্ষের জন্য ৭০টির মতো এয়ার কন্ডিশন কেনা হয়েছে। আর প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকার বিদ্যুৎ বিল দেওয়া হয়েছে। তবে প্রাপ্যতা অনুযায়ী, অধ্যক্ষের বাইরে কেউ এসি ব্যবহার করতে পারেন না। কোনো ধরনের দরপত্র ছাড়াই শিক্ষক প্রতিনিধি ফারহানা খানমের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠানের ক্যান্টিন ভাড়া দিয়েছেন। এমনকি এ কাজে গভর্নিং বডির অনুমোদনও নেওয়া হয়নি। প্রকৃতপক্ষে তারা দুজনই নিজের লোক দিয়ে এ ক্যান্টিন চালাচ্ছেন। প্রতি মাসে অধ্যক্ষ বিপুল পরিমাণ আপ্যায়ন বিল তুললেও কাউকে তেমন কোনো আপ্যায়ন করা হয় না। এমনকি এ অধ্যক্ষের সময়ে স্কুল মাঠে গরুর হাটও বসানো হয়েছে। আর অভিভাবকদের গালাগাল ও পিস্তলের ভয় দেখানো অধ্যক্ষের ফোনালাপ সারা দেশেই তোলপাড় সৃষ্টি করেছিল।
ভিকারুননিসার সদ্য সাবেক অধ্যক্ষ কামরুন নাহার গত রাতে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভিকারুননিসার কোনো অধ্যক্ষ অবসরে গেলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা কারও কারও রুটিন কাজ হয়ে পড়েছে। কারণ এই ভিকারুননিসাকে পুঁজি করেই অনেকে চলে। কিন্তু গত দুই বছর আমার কাছ থেকে কেউ কোনো অনৈতিক সুবিধা পায়নি। ফলে তারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করবে, এটাই স্বাভাবিক।’
অনিয়ন্ত্রিত জীবনধারা, অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া এবং শরীরচর্চার অভাবের বেশির ভাগ মানুষেরই হার্ট খারাপ হচ্ছে। উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে 'খারাপ' কোলেস্টেরল— এ সব মানুষের নিত্যসঙ্গী। তবে রক্তের বিভিন্ন উপাদানের মাত্রা যদি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে যায়, তা হলে ওষুধ তো খেতেই হবে। সঙ্গে পছন্দের প্রায় সব খাবারেই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়ে যাবে। তবে পুষ্টিবিদেরা বলছেন, রোজকার খাবারে কিছু পরিবর্তন আনলেই পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই হার্টের যাবতীয় সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।
বিরিয়ানি হোক বা পোলাও সঙ্গে মাটনের কোনো পদ ছাড়া জমে না। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা বলছেন, এ ধরনের 'লাল' মাংস খেলে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। তাই খাসির বদলে মুরগির মাংস খাওয়া তুলনায় স্বাস্থ্যকর।
অনেক চেষ্টা করেও ভাজাভুজি খাবারের লোভ সামলাতে পারছেন না। এই অভ্যাসের ফলেই কিন্তু অজান্তেই বেশির ভাগ মানুষের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে চলেছে। পুষ্টিবিদেরা বলছেন, ভাজার বদলে যদি বেকড খাবার খাওয়ার অভ্যাস করা যায়, তবে এই সমস্যা অনেকটাই ঠেকিয়ে রাখা যেতে পারে।
সকালের নাশতায় পাউরুটি খান অনেকেই। কিন্তু পুষ্টিবিদেরা বলছেন, পাউরুটির ওপর মাখন দেওয়ার অভ্যাস ছাড়তে হবে। শুধু পাউরুটি খেতে যদি সমস্যা হয়, তবে ডিম ফেটিয়ে তার মধ্যে পাউরুটি ডুবিয়ে, তা বেক করে নিন। স্বাদ এবং স্বাস্থ্য দুই-ই থাকবে।
মন খারাপ হলে মাঝে মধ্যেই আইসক্রিম খেয়ে ফেলেন। তৎক্ষণাৎ মন ভালো করতে এই টোটকা সত্যিই কার্যকর। কিন্তু সমস্যা হলো আইসক্রিম খাওয়ার অভ্যাসে রক্তে বাড়তে থাকে কোলেস্টেরল। পরবর্তীতে যা হৃদরোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
গরমে তেষ্টা মেটাতে বার বার ঠাণ্ডা পানীয়তে চুমুক দিচ্ছেন। কিন্তু এ পানীয়ে থাকা কৃত্রিম শর্করা যে হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করছে, টের পেয়েছেন কী? পুষ্টিবিদেরা বলছেন, এই তেষ্টা মেটাতে এবং স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে নরম পানীয় না খেয়ে ফল থেকে তৈরি রস খেতে পারেন।
পাকিস্তানের প্রস্তাবিত হাইব্রিড মডেলে নয়, এশিয়া কাপ হবে একটি দেশে। আর সেটা শ্রীলংকা। পাকিস্তান তাতে অংশ না নিতে চাইলে তাদেরকে ছাড়াই হবে এশিয়া কাপ।
ভারতের তরফ থেকে পাকিস্তানকে এমন বার্তা দেয়া হয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে কলকাতাভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক দা টেলিগ্রাফ।
বিসিসিআই সেক্রেটারি জয় শাহ যিনি এসিসিরও প্রেসিডেন্ট পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে বলেছেন, শ্রীলংকায় এশিয়া কাপ খেলতে রাজি আছে ভারতসহ চার পূর্ণ সদস্য। বিষয়টি নিয়ে এসিসির নির্বাহী সভায় আলোচনা করা হবে। পাকিস্তান রাজি না হলে ৫ দল নিয়েই হবে এশিয়া কাপ।
বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ম্যাচ অন্য কোনো দেশে আয়োজনে পিসিবি চেয়ারম্যান নাজমা শেঠির দাবিও নাকচ করে দিয়েছেন জয় শাহ। টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, পাকিস্তানকে ভারতেই খেলতে হবে, না হলে না খেলবে। এ বার্তা পিসিবি এবং আইসিসির দুই কর্মকর্তা যারা সম্প্রতি পাকিস্তান সফর করেন তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছে বিসিসিআই।
রিয়াল মাদ্রিদের সংগে ১৪ বছরের সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলছেন। ৪০ কোটি ইউরো চুক্তিতে সৌদি প্রো লিগের ক্লাব আলো ইত্তিহাদে যোগ দিচ্ছেন।
ক'দিন ধরে এমন কথা শোনা যাচ্ছিল করিম বেনজেমাকে নিয়ে। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন -এমন কথাও চাউর হয় স্পেনের সংবাদ মাধ্যমে।
কিন্তু সব কিছুতে জল ঢাললেন ব্যালন ডি অর জয়ী। স্পেনের গণমাধ্যম মার্কার দেয়া মার্কা লিজেন্ড এওয়ার্ড নিতে গিয়ে বললেন, 'আমি যখন রিয়ালেই আছি তখন ভবিষ্যৎ নিয়ে কেনো বলবো। ইন্টারনেটে যা প্রচার হচ্ছে তা ঠিক না। আমি এখানে ভালো আছি। শনিবার রিয়ালের ম্যাচ আছে, সব ফোকাস আমার সেই ম্যাচকে নিয়ে।'
ক্লাব প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজকে তাকে রিয়ালে আনার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বেনজেমা বলেন, '২১ বছরের আমি এই ক্লাবে যোগ দিয়েছিলাম। এই ক্লাবে খেলার মতো আর কিছু হয় না, সান্তিয়াগো বার্নাবু দারুন এক জায়গা।'
রিয়ালের সংগে চুক্তির মেয়াদ এ মাসেই শেষ হচ্ছে বেনজেমার।
পলিথিন বা একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক, বিভিন্ন ধরনের পলিথিনজাত মিনিপ্যাকের উৎপাদন, ব্যবহার ও এর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সবগুলোই সমস্যা। পলিথিন উৎপাদন ও এর অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের মাধ্যমে বাতাসে যেমন কার্বন নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যায়, অন্যদিকে এর ব্যবহার প্রাণিকুল ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত। প্লাস্টিকের কণা এখন মানুষের রক্তে, মায়ের দুধে, সামুদ্রিক মাছে। শুধু ব্যবহার সম্পর্কিত সমস্যা না, পলিথিনের মাধ্যমে সৃষ্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আরও বেশি সমস্যাসংকুল। কারণ এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, কৃষির উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে, শহরের নর্দমা বন্ধ করে দিচ্ছে তা আবার রোগ-ব্যাধি ছড়াচ্ছে, জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে এবং সবশেষে শহরকে বসবাসের অনুপযোগী করে দিচ্ছে।
এতসব সত্ত্বেও পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ না করা বা বন্ধ করতে না পারার সংকট কোথায় সেটা বুঝতে আমাদের সমস্যা হয়। পলিথিন বন্ধে আইন আছে, নানা ধরনের প্যাকেজিংয়ে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাও অনেক দিন হলো। অন্যদিকে বেশ কিছুদিন ধরে পাটের ব্যাগ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে কিন্তু তা সহসাই হচ্ছে না। ‘সোনালি ব্যাগ’ নিয়ে অনেক ঢাকঢোল পেটানো হয়েছে কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সেই সোনালি স্বপ্ন কেমন জানি ফ্যাকাশে হয়ে আসছে এতদিনে।
পলিথিনের ব্যবহার শহরাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি যার অনেকটাই অভ্যাসগত কারণে। শহরের মানুষের পলিথিনের ওপর অভ্যস্ততা যেমন বেশি, তেমনি তারা ভুক্তভোগীও বেশি। রাস্তাঘাট, ড্রেন নোংরা হয়ে তো থাকেই, বাড়তি পাওনা দুর্গন্ধ, তৈরি হয় জলজট ও ডেঙ্গুর মতো রোগবালাই। বাসাবাড়িতে পলিথিনের ব্যবহার তো আছেই, পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য, বেকারিজাত পণ্যের পলিথিনের ব্যবহার ও পলিথিনের মোড়ক যত্রতত্র নিক্ষেপই এই অবস্থার জন্য দায়ী। শুধু ঢাকা নয় অন্যান্য ছোট-বড় সব শহরে প্রায় একই অবস্থা। আর এগুলোই হচ্ছে পলিথিন নির্ভর অর্থনীতির অনুষঙ্গ কিন্তু এর অনর্থনীতি হচ্ছে পলিথিনের কারণে পরিবেশদূষণ ও জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি যার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি। সাধারণভাবে পলিথিন ব্যবহারের ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক মূল্যমান নির্ধারণ করা হয় না। তবে দূষণের মাত্রা এখন এমন অবস্থায় পৌঁছেছে তাতে পলিথিনের অর্থনীতির থেকে এর ক্ষয়ক্ষতির অর্থনীতি যে অনেক বড় তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আসছে ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হবে। জলবায়ুর পরিবর্তনের পেছনে অন্যতম অনুঘটক হচ্ছে পরিবেশ দূষণ। অর্থমন্ত্রী তার এবারের বাজেট (২০২৩-২৪) বক্তৃতায় জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় অভিযোজন ও প্রশমন উভয় ক্ষেত্রে উদ্যোগ গ্রহণ করার কথা বলেছেন, পরিবেশ সংরক্ষণে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ২০২৩ এর উল্লেখ করেছেন কিন্তু পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে দৃশ্যমান কোনো রূপকল্প এবারের বাজেটে উল্লেখ করতে সমর্থ হননি। এবারের পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘প্লাস্টিক দূষণের সমাধানে শামিল হই সকলে’। গত বছরের এই দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘একটাই পৃথিবী’। পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের যত্রতত্র ব্যবহার আমাদের এই একমাত্র পৃথিবীকে দূষণের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে আইন হয়েছে ২০০২-এ এবং আজ ২০২৩ সাল, এই দীর্ঘ ২১ বছরেও এই আইনের বাস্তবায়ন করা যায়নি। যদিও এবারের বাজেট বক্তৃতায় প্লাস্টিকের তৈরি টেবিলওয়্যার এর মূল্য সংযোজন কর বৃদ্ধি করে ৫ শতাংশ থেকে ৭.৫ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। এখানে পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্ল্যাস্টিক সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। ধরেই নেওয়া যায় শুল্ক বৃদ্ধির এই হার কোনোভাবে পলিথিন নিরুৎসাহিত করার জায়গা থেকে না বরঞ্চ কিছুটা বাড়তি কর আদায়ের চিন্তা থেকে।
পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি সস্তা পলিথিনের ব্যবহার টেকসই ভোগের ধারণার জন্যও কোনোভাবে সহায়ক না। বরঞ্চ এটা এমন এক ধরনের মনস্তত্ত্ব তৈরি করে যা শুধু পরিবেশকেই ধ্বংস করে। যদিও বিশ্বব্যাপী টেকসই ভোগের ধারণার ওপর ভিত্তি করে এখন ‘সার্কুলার অর্থনীতির’ ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। সার্কুলার অর্থনীতি শুধু অপচয় কমায় না, প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা, দূষণরোধ, বর্জ্য থেকে তৈরি পরিবেশদূষণ ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারে। তাই পরিবেশগত ঝুঁকি, কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের অর্থনীতিকে সার্কুলার অর্থনীতিতে রূপান্তরের জন্য বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করছে। অন্যদিকে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই পৃথিবী গড়ে তোলা এবং এ সংশ্লিষ্ট অভীষ্ট ২০৩০ সমূহ অর্জনে সার্কুলার অর্থনীতি অন্যতম হাতিয়ার।
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা শহরে রাস্তায় কোনো পেট বোতল পড়ে থাকতে দেখা যায় না। এর কারণ হচ্ছে এখন পেট বোতলের প্রায় শতভাগ রিসাইকেল করা হয় এবং পেট বোতল সংগ্রহের জন্য অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে হলেও একটি সংগ্রহ-লাইন তৈরি হয়েছে। কিন্তু পলিথিনের ক্ষেত্রে তেমনটা দেখা যায় না। তবে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার সার্কুলার ইকোনমির ধারণার সঙ্গেও একেবারে মানানসই না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রযুক্তিগতভাবে একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিন রিসাইকেল করা অসম্ভব না হলেও এটি একটি জটিল এবং অর্থনৈতিকভাবে ব্যয়বহুল যে কারণে পেট বোতলের মতো রাস্তা থেকে পলিথিন সংগ্রহ করতে কাউকে দেখা যায় না উলটো রাস্তাঘাটে এখানে সেখানে পলিথিন পড়ে থাকে।
পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের অনর্থনীতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এখন প্রথম দরকার এর ব্যবহার বন্ধ করা, এর ব্যবহারকে অনেক বেশি দামি করে ফেলতে হবে আর এর প্রতিফলন থাকতে হবে বাজেটে। দ্বিতীয়ত, সার্কুলার অর্থনৈতিক চর্চার উৎসাহিত করার জন্য পরিকল্পনা, দক্ষতা বৃদ্ধি ও বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি, পলিথিনের বিকল্প সোনালি ব্যাগের মতো উদ্যোগগুলোকে সরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ ও বেসরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে প্রয়োজনীয় উৎসাহ ও প্রণোদনা প্রদান করতে হবে। সরকার প্রতি বছর বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবেশ দিবস পালন করে কিন্তু দিবস পালন শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলেই হবে না এর উদ্যোগ কতটুকু বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে তার ওপরও নজর দিতে হবে। তা নাহলে পলিথিনের অর্থনীতির নামে শুধু অনর্থনীতিকে বাড়িয়ে তোলা হবে, আর সেটা হবে টেকসই অর্থনীতি তৈরির সম্ভাবনার অপমৃত্যু।
লেখক : উন্নয়নকর্মী ও কলামিস্ট
গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহে হাঁসফাঁস অবস্থা মানুষের। এমন অবস্থায় প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছে না কেউ। তাই বলে গরমের ভয়ে ঘরে বসে থাকলে তো আর জীবন চলবে না। শিক্ষার্থীদের ক্লাসে যেতে হবে। আর কর্মজীবীদের অফিস ও অন্যান্য কর্মস্থলে। অনেকেরই এই গরমেও কাজের প্রয়োজনে সারাদিন কেটে যায় বাইরে ঘুরে ঘুরেই। গরমকে মোকাবিলা করতে সঙ্গে এই প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো রাখলেই গরমের কাছে নিজেকে হার মানতে হবে না।
পানি পান
গরমের সময় শরীর থেকে স্বাভাবিক ভাবে অনেক বেশি ঘাম বের হয়ে থাকে। যার ফলে দেখা দিতে পারে পানি শূন্যতা। শরীরের মধ্যে যদি পানির পরিমাণ কমে যায় তাহলে ডিহাইড্রেশন হতে পারে। পানি শূন্যতা দূর করতে হলে প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি খেতে হবে।
বিশুদ্ধ পানি খাওয়ার পাশাপাশি ফলের জুস কিংবা কচি ডাবের পানি খেতে পারেন। দেহের ত্বককে ভালো রাখতে পানি, শরবত বা জুস পানের বিকল্প নেই। গরমে সময় প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ লিটার বিশুদ্ধ পানি খেলে ডিহাইড্রেশন এবং পানি শূণ্যতা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
খাবার স্যালাইন
গরমের সময় ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় লবণ বের হতে থাকে যার ফলে শরীর অনেক দুর্বল হয়ে যায়। এ থেকে মুক্তি পেতে খাবার স্যালাইন খেতে পারেন। বিকেল বেলা খাবার স্যালাইন খেলে অতিরিক্ত গরমেও শরীরে সতেজতা ফিরে আসে। আবার অনেকেই স্বাদযুক্ত স্যালাইন খান যেমন, টেস্টি স্যালাইন। ভুল করেও এসব খাবেন না। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হলো ওরস্যালাইন । তবে আপনাদের মধ্যে যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তারা খাবার স্যালাইন খাওয়ার আগে ভালো কোনো ডাক্তারের মতামত নেওয়া উচিত।
রেড মিট পরিহার করুন
অতিরিক্ত গরমের সময় গরু-ছাগলের মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ গরমের সময় বা অতিরিক্ত গরমের সময় গরুর মাংস খেলে শরীরের তাপমাত্রা অনেকাংশে বেরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গরু-ছাগলের মাংস ছেড়ে মাছ খেতে পারেন। আর অতিরিক্ত গরমে অবশ্যই অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার থেকে দূরে থাকুন।
সবুজ শাক সবজি
গরমের সময় শরীরকে সুস্থ রাখতে বেশি বেশি করে সবুজ শাক সবজি খেতে পারেন। সবুজ শাক সবজিতে অধিক পরিমাণে ভিটামিন মিনারেল এবং খনিজ উপাদান থাকে। এতে করে অতিরিক্ত গরমেও শরীর অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।তাছাড়াও খেতে পারেন তরমুজ যা শরীরে এনার্জি দিতে পারে।
টক জাতীয় ফল
প্রচুর গরমে সুস্থ থাকার উপায় হিসেবে টক জাতীয় ফল খেতে পারেন। যেমন: কামরাঙ্গা, লেবু, তেতুল, আমরা ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে অতিরিক্ত টক ফল খাওয়া ঠিক নয়। যদি কারো এসিডিটির সমস্যা থেকে থাকে তবে টক জাতীয় ফল খাওয়া হতে বিরত থাকুন। টক জাতীয় ফল খালি পেটে খাওয়া যাবে না। এতে করে আরো বেশী অসুস্থ হয়ে পারতে পাবেন।
টক দই
অতিরিক্ত গরমে সুস্থ থাকতে হলে টক দই খেতে পারেন। যারা করা রোদে কাজ করেন বিশেষ করে তাদের জন্য অনেক উপকারী হলো টক দই। রোদের প্রচুর তাপ থেকে শরীরকে কিছুটা হলেও রক্ষা করবে টক দই। টক দই শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে অনেকাংশে সাহায্য করে।
প্রতিদিন গোসল করুন
গরমের সময় প্রতিদিন এক বার করে হলেও গোসল করতে হবে। যদি পারেন তবে দিনে ২ বার গোসল করতে পারেন। গোসল করার ক্ষেত্রে একটু সাবধান থাকতে হবে। বাহির থেকে এসে সাথে সাথে গোসল করতে যাবেন না। একটু বিশ্রাম নিয়ে তারপর গোসল করতে যাবেন। কারণ হঠাৎ করে গরম থেকে এসে গোসল করলে ঠাণ্ডা লাগতে পারে।
ঘরেই অবস্থান করুন
অতিরিক্ত গরমে বিশেষ কোনো প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বাহিরে যাবেন না । যদিও বিভিন্ন কারণে বাহিরে যেতে হয়। সেক্ষেত্রে রোদ থেকে বাঁচতে প্রয়োজনে ছাতা ব্যবহার করতে পারেন। যতটুকু সম্ভব ছায়াযুক্ত স্থানে থাকার চেষ্টা করুন।
শারীরিক পরিশ্রম কম করুন
গরমের সময় অনেকেই আছে অতিরিক্ত ব্যায়াম করে থাকেন এমনটি করা যাবে না কারণ অতিরিক্ত গরমে শরীরের তাপমাত্রা একটু বেশি হয়ে থাকে।
পাতলা সুতি কাপড় পরিধান করা
গরমের সময় পাতলা সুতি কাপড় পরা দরকার। কারণ সাদা কাপড় তাপ শোষণ করতে পারে না বরং তাপের প্রতিফলন ঘটায় ও গরম কম লাগে।
পারফিউম ব্যবহারে সতর্ক থাকুন
অতিরিক্ত গরমে ঘামের গন্ধ থেকে বেচে থাকার জন্য অনেকেই সুগন্ধি ব্যবহার করে থাকে। তবে অতিরিক্ত গরমে পারফিউম ব্যবহার না করাটাই উত্তম কাজ। কারণ, পারফিউম গরম লাগা বৃদ্ধি করে দেয়।
যদিও ব্যবহার করতে হয় তাহলে হালকা গন্ধের সুগন্ধি ব্যবহার করতে পাবেন। বাজারে কিছু সুগন্ধি পাওয়া যায় যেগুলো ব্যবহার করলে ঠাণ্ডা লাগে। সেগুলো ব্যবহার করলে আরো ভালো হয়।
ধূমপান পরিত্যাগ করা
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা কিনা ধূমপান করে থাকি। ধূমপান করলে শরীরের তাপমাত্রা তুলনামূলক ভাবে বেড়ে যায়। তাই প্রচন্ত গরমে সুস্থ থাকতে হলে ধূমপান পরিত্যাগ করতে হবে। যদিও এই অভ্যাসটি সহজে পরিত্যাগ করা যায় না। তাই যতটুকু পারেন ধূমপান কম করার চেষ্টা করুন।
চা কফি পরিত্যাগ করুন
চা, কফি বা অ্যালকোহল খেলে শরীরের তাপমাত্রা আরো বৃদ্ধি পায়। আর যদি অতিরিক্ত গরমে চা, কফি বা অ্যালকোহল খেয়ে থাকেন তাহলে শরীরের তাপমাত্রা অতিরিক্ত হারে বৃদ্ধি পাবে যার ফলে হতে পারে হিটস্ট্রোক। তাই গরমের সময় চা কফি বা অ্যালকোহল খাওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে।
শান্ত থাকুন
মন মেজাজ গরম থাকলে শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পায়। রাগের কারণে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং অতিরিক্ত গরমের ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় আর দুই তাপমাত্রা এক সঙ্গে হলে কি অবস্থা হতে পারে একবার হলেও সেটা ভেবে দেখবেন।
বিশেষজ্ঞরা অতিরিক্ত গরমে শান্ত থাকার জন্য মতামত দিয়ে থাকে। বিশেষ করে যাদের হার্টের সমস্যা আছে তাদের জন্য শান্ত থাকাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।