
কাউকে নির্বাচনে আনা সরকারের কাজ নয় বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে আনা সরকারের কাজ নয়। নির্বাচন আয়োজক কর্র্তৃপক্ষ নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনে সরকারি দল একটি পক্ষ। সব বিরোধী দলও একটি পক্ষ। সেখানে নির্বাচনে আনা না আনার... নির্বাচনে কেউ আসবে কী আসবে না সেই দায়িত্ব পালন করতে পারে নির্বাচন কমিশন। এটা সরকারি দলের দায়িত্ব নয়।’
জাতীয় সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিশেষ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৪৭ বিধিতে উপস্থাপিত প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে গতকাল শনিবার এসব কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী।
নানা ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে জানিয়ে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘সংসদীয় গণতন্ত্র যাতে নিরবচ্ছিন্নভাবে চলতে না পারে সেজন্য নানা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি আজকে নানা ষড়যন্ত্র করছে। তারা ২০১৪ সালের নির্বাচন ভ-ুল করার জন্য ৫০০ ভোটকেন্দ্র জ্বালিয়ে দিয়েছিল। কয়েক ডজন মানুষ হত্যা করে। তবে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সংসদের পথচলা অব্যাহত থেকেছে। গণতন্ত্রের পথচলা অব্যাহত থেকেছে। আজকেও সেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সংসদকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এই সংসদের পথচলাকে ও সংসদীয় গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য কয়েক দিন আগে বিএনপির সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘সংসদকে কারাগারে পরিণত করা ও সংসদ চত্বরে আদালত বসানো, স্বাধীনতাবিরোধী শাহ আজিজুর রহমানকে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী বানানো, সংসদকে কলঙ্কিত করা ও মর্যাদা ক্ষুন্ন করার দায়িত্ব তারা এড়াতে পারে না। তাদের বিচারের আওতায় আনা প্রয়োজন কি না সেটা ভেবে দেখা দরকার।’
ঢাকার আদালত চত্বর থেকে ছিনিয়ে নেওয়া আনসার আল ইসলামের দুই জঙ্গি দেশেই আছে। ঘটনার পর তারা সদরঘাট হয়ে ‘আনসার হাউজে’ গিয়ে অবস্থান নেন। সেখান থেকে ছিনতাইয়ে অংশ নেওয়া সহযোগীদের কেউ কেউ চলে যায় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের একটি বাসায়। বাসাটি আগেই ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। সেখানে নিয়মিত বৈঠক করে ওই সহযোগীরা কারাগারে থাকা চার জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করে ঘটনার ছয় মাস আগে।
ছিনতাইয়ের পরিকল্পনার বার্তাটি প্রথম ওই জঙ্গিদের দেওয়া হয় কারাগারে, তাসনীম ওরফে শিখার মাধ্যমেই। কিন্তু পরিকল্পনা অনুযায়ী চারজনকে ছিনিয়ে নেওয়া চেষ্টা করলেও দুজনকে নিতে ব্যর্থ হয় জঙ্গিরা।
শিখা ও আরেক সহযোগী হুসনা আক্তার ওরফে হুসনাকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)। গত শুক্রবার নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত শিখা ছিনিয়ে নেওয়া জঙ্গি আবু সিদ্দিক সোহেলের স্ত্রী। তাদের দুজনকে কোতোয়ালি থানায় সন্ত্রাস ও জঙ্গি বিরোধী আইনে দায়েরকৃত মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। দুজনকে জিজ্ঞসাবাদের জন্য ৫ দিন হেফাজতে (রিমান্ড) পেয়েছে সিটিটিসি।
সিটিটিসির ভাষ্য, গ্রেপ্তারের পর শিখা ও হুসনা জানিয়েছেন যে, ছয় মাস আগে তারা এই পরিকল্পনা করেন। ছিনতাইয়ের কাজে কোন রাস্তা ব্যবহার করবে, ছিনতাই শেষে কোথায় মিলিত হবে, ব্যর্থ হলে তাৎক্ষণিক কী করবে। আর এসব নিয়ে কাশিমপুর কারাগার ও আদালতে জঙ্গিদের সঙ্গে প্রধান সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেন শিখা।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২০ নভেম্বর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে হাজিরা দিতে আসে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত ওরফে সামির ওরফে ইমরান (২৪), মো. আবু সিদ্দিক সোহেল (৩৪), মো. আরাফাত রহমান (২৪) এবং মো. আব্দুস সবুর। তাদের আদালতের হাজতখানায় নিয়ে যাওয়ার সময় মূল ফটকের সামনে পৌঁছামাত্র আনসার আল ইসলামের অজ্ঞাতনামা সদস্যরা পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত এবং মো. আবু সিদ্দিক সোহেলকে ছিনিয়ে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়।
গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (সিটিটিসি) মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআিইডি) ও ভুয়া পরিচয়পত্র দিয়ে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে একটি বাসা ভাড়া নেয় জঙ্গিরা। সেই বাসায় বসে সব পরিকল্পনা করা হয়। এই হামলায় যারা যারা অংশগ্রহণ করেছে তাদের কয়েকজন এই বাসায় অবস্থান করত এবং বাকিরা বাইরে থেকে এসে এই পরিকল্পনায় অংশ নিয়েছে। সর্বশেষ ১ নভেম্বর তারা এই বাসায় বসে পালানোর পথ ঠিক করে এবং কে কোন কাজটি করবে তা নির্ধারণ করে। যে পথ দিয়ে পালাবে সেটাও তারা রেকি করেছিল। তারা আদালত প্রাঙ্গণেও এসেছিল। যারা ছিনতাইয়ে অংশ নিয়েছিল মোটামুটি সবার নামই সিটিটিসি পেয়েছে বলে তিনি জানান।
এই কর্মকর্তা বলেন, পরিকল্পনামাফিক ঘটনার দিন দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিয়ে তারা দুটি ভাগে ভাগ হয়ে একটি গ্রুপ ছিনতাইকৃত জঙ্গিদের নিয়ে সদরঘাটের দিকে চলে যায় এবং শিখাসহ আরেকটি গ্রুপ অন্য পথ দিয়ে চলে যায়ে। তাদের পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তারা একটি ‘আনসার হাউজে’ গিয়ে মিলিত হয় (সেইফ হাউজ)। সেখানে কয়েকদিন থেকে শিখা চলে আসেন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ওই বাসায়। ছিনতাইকৃত জঙ্গি সোহেল ও শামীম দুই দিকে চলে যান। সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তাদের এক জায়গায় রাখা হয়নি। দুই জায়গায় নেওয়া হয়েছে। তবে ওই সেইফ হাউজ কোথায় সেটা জানাননি তিনি।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘শিখা ও হুসনাকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে পলাতক দুই জঙ্গি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। তাদের গ্রেপ্তারে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ছিনিয়ে নেওয়া জঙ্গিরা দেশেই আছে।’
জঙ্গিরা ছয় মাস ধরে পরিকল্পনা করল, বার্তা গেল কারাগারে, এরপর তারা রেকি করে গেল এর কোনোটাই গোয়েন্দারা জানতে পারল না, এটাকে গোয়েন্দা ব্যর্থতা মনে করেন কি না জানতে চাইলে সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘সব তথ্য জানা যাবে এমন কোনো কথা নেই। কাজটা তারা অতি গোপনে করেছে এবং শিখা সোহেলের স্ত্রী পরিচয় দিয়ে কারাগারে দেখা করেছে। হয়তো তারা ইশারা ইঙ্গিতে তথ্য দিয়েছে যেটা আমাদের নজরদারি এড়াতে সক্ষম হয়েছে।’ তিনি জানান, ছিনিয়ে নেওয়ার দিন শিখা ও আয়মান সরেজমিনে উপস্থিত থেকে মনিটরিং করেছে। ১০-১২ জন জঙ্গি ছিনতাইয়ে সরাসরি অংশ নিয়েছে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা তাদের শীর্ষ পর্যায়ের সিদ্ধান্তেই হয়েছে। পরিকল্পনায় যারা যারা ছিল আমরা তাদের নামও পেয়েছি।’
অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, গ্রেপ্তারকৃত শিখা ২০১৪ সালে এমআইএসটি থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে প্রথম শ্রেণি লাভ করেন। একপর্যায়ে তার ভাই মোজ্জাম্মেল হোসেন ওরফে সাইমনের মাধ্যমে তিনি আনসার আল ইসলামের আদর্শে দীক্ষিত হন। পরবর্তী সময়ে সাইমনের মধ্যস্থতায় আবু সিদ্দিক সোহেলের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। সোহেল আনসার আল ইসলামের সামরিক (আসকারি) শাখার সদস্য। সোহেলের সঙ্গে বিয়ের পর থেকে তিনি আরও গভীরভাবে জঙ্গি সংগঠনটির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ২০১৭ সালে মুক্তমনা ব্লগার অভিজিত রায়, দীপন ও নীলাদ্রি নিলয় হত্যা মামলার আসামি সোহেল গ্রেপ্তার হন। এরপর থেকে বিভিন্ন এনক্রিপ্টেড অ্যাপসের মাধ্যমে শিখা কারাবন্দি সোহেলসহ সংগঠনের অন্য সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখেন।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, কাশিমপুর কারাগার থেকে ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজিরা দেওয়ার সময় এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয় এবং পরিকল্পনার সমন্বয়ক হিসেবে শিখাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ঘটনার দিন তিনি আদালত এলাকায় পৌঁছে তার বাবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান এবং ছিনতাইয়ের ঘটনায় নেতৃত্ব দেওয়া মশিউর রহমান ওরফে আয়মানসহ আনসার আল ইসলামের সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুরো পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সক্রিয় অংশ নেন।
পরিবারের সদস্য ৭ জন। এর মধ্যে ৫ জনই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। উপার্জনের কোনো পথ না থাকায় প্রতিবন্ধী ভাতা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় চলছে অভাব অনটনের সংসার।
এটি কুড়িগ্রাম সদরের হলোখানা ইউনিয়নের চর সুভারকুটি গ্রামের মোক্তারের হাট এলাকার সহিদার রহমান (৬৫) পরিবার। তিনি জন্মগতভাবে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। তার স্ত্রী আছমা বেগমও বিয়ের পরেই টাইফয়েটজ¦রে আক্রান্ত হয়ে দৃষ্টি হারান। তাদের ৫ সন্তানের মধ্যে শফিকা খাতুন (১৮), শরিফা খাতুন (১৬) ও মাছুম বিল্লাহ (২০) জন্মগতভাবে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। ফলে তারা শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছে না। সহিদার রহমান স্থানীয় একটি মসজিদে মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করতেন। কিন্তু অসুস্থতাজনিত কারণে তিনি চাকরি হারিয়েছেন।
স্থানীয় সাহেরা বেগম নামের এক নারী বলেন, সহিদারের পরিবারে খুবই অভাব। অনিশ্চয়তায় দিন পার করছে তারা। কেন না একমাত্র পুত্র সন্তান মাছুম বিল্লাহও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হওয়ায় সেও কোনো কর্ম করতে পারছে না। বিভিন্ন মানুষের সহযোগিতায় তাদের সংসার চলছে।
সহিদার রহমান বলেন, আমার পরিবারের কী অবস্থা আপনারা ভালো জানেন। আগে একটি মসজিদে মোয়াজ্জিনের কাজ করেছি। এখন অসুস্থতার কারণে তাও করতে পারছি না। প্রতিবন্ধীর ভাতা ও মানুষের সাহায্য সহযোগিতায় কোনো রকমে চলছি। আমার পরিবারকে সরকারের পাশাপাশি কেউ যদি একটা স্থায়ী আয়ের ব্যবস্থা করে দিত তাহলে মনে হয় একটু ভালো চলতে পারতাম। না হলে তো এই ভাবে কষ্ট করতে করতে জীবনটা শেষ হয়ে যাবে।
সহিদারের মেয়ে সাঈয়েদা সিদ্দিকা বলেন, আমি উচ্চ ম্যাধমিক পাস করেছি। পরিবারে অভাব থাকার কারণে ঠিকমতো পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারছি না। তার পরেও কষ্ট করে পড়াশোনা করছি।
সদরের হলোখানা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম রেজা বলেন প্রতিবন্ধী ভাতা পরিবারটির একমাত্র আয়ের উৎস। কিছুদিন আগে ইউএনও স্যার সরেজমিন পরিদর্শন করে গেছেন। সেই সঙ্গে তাদের একটি গরু প্রদান করেছেন। আমরাও ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছি। এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আমরা ৫ জনকেই সুবর্ণ কার্ড করে দিয়েছি। সরকারের দেওয়া প্রতিবন্ধী ভাতায় পরিবারটির সংসার চলছে। তার পরেও আমরা আমাদের বিভাগ থেকে সবসময়ই সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছি।
রংপুরের গঙ্গাচড়া উত্তর খলেয়া পন্ডিতপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পরিমল কুমার কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে স্কুলটিকে বাড়ির মতো ব্যবহার করা করে আসছেন। যখন ইচ্ছে তখন আসেন-যান। ক্লাসে বা অফিস কক্ষে বসে ঘুমান তিনি। কখনো কখনো স্যান্ডো গেঞ্জি পরেই আসেন স্কুলে। আবার কখনো শ্রেণিকক্ষে তার রাখা ধান-চালের বস্তার মধ্যেই চলে ক্লাস। এ ছাড়া অর্থ আত্মসাৎসহ বিস্তর অভিযোগ উঠেছে পরিমল কুমারের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মনিরুল ইসলাম নামে এক অভিভাবক সদস্য।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয়টি ১৯৯১ সালে স্থাপিত। ২০১২ সাল পর্যন্ত রেজি. প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে পরিচালিত হয়। ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হয়। বর্তমানে স্কুলে প্রধান শিক্ষকসহ পাঁচজন শিক্ষক রয়েছেন। কাগজে-কলমে শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭৬ জন। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা থেকেই পরিমল প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তখন থেকে প্রধান শিক্ষক পারিবারিকভাবে ম্যানেজিং কমিটি গঠন করে বিদ্যালয়ের সিøপ বিভিন্ন বরাদ্দের অর্থ আত্মসাৎ করে আসছেন। ভুয়া নাম দিয়ে উপবৃত্তির টাকা তুলেছেন। এ ছাড়াও প্রধান শিক্ষক স্কুলের ল্যাপটপ ও প্রজেক্টর বাড়িতে নিয়ে ভাড়া দেন। নিয়মিত স্কুলে আসেন না। কখনো কখনো শরীরে পোশাক ছাড়াই লুঙ্গি পরে স্কুলে আসেন। মাঝেমধ্যে মাঠে চড়ান গরু। স্কুলের কক্ষে রাখেন ধানের বস্তা।
এ ছাড়াও স্কুলে সিলিং ফ্যান ও টিন বাড়িতে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। তার এমন কর্মকা-ের কিছু ছবি এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। সেই ছবিগুলোতে দেখা যায়, প্রধান শিক্ষক পরিমল স্কুলে লুঙ্গি পরে আছেন, অফিস কক্ষে সহকারী শিক্ষকদের সঙ্গে খালি গায়ে চেয়ারে বসে আছেন, টেবিলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেছেন, স্যান্ডো গেঞ্জি পরে সহকারী শিক্ষকদের সামনে বসে আছেন, স্কুলের শ্রেণিকক্ষে ধানের বস্তা ঢোকাচ্ছেন, স্কুল মাঠে গরু বাঁধছেন, শ্রেণিকক্ষের বেঞ্চের ওপর স্তূপ করা ধানের বস্তার পাশে বসা শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাচ্ছেন।
গত রবিবার দুপুর ৩টার দিকে ওই বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে ওইসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। এ সময় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পরিমলকে স্কুলে পাওয়া যায়নি। সহকারী শিক্ষকরা জানান, প্রধান শিক্ষক অফিশিয়াল কাজের কথা বলে সকাল ১০টায় স্কুল ত্যাগ করেছেন। আর ফেরেননি। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ও গায়ে পোশাক ছাড়াই স্কুলে আসার বিষয়ে জানতে চাইলে দুজন সহকারী শিক্ষক বলেন, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সবই সত্য। তারা জানান, প্রধান শিক্ষকের বাড়ি স্কুলের সঙ্গে। তাই তিনি প্রায় সময় খালি গায়ে স্কুলে এসে সহকারী শিক্ষকদের তদারকি করেন। মাঝেমধ্যে চেয়ারেই ঘুমিয়ে যান। প্রায় সময় স্কুল সময়ে স্ত্রীকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যান।
আরেক সহকারী শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, প্রত্যেক শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির কার্ড করে দেওয়ার সময়ে প্রধান শিক্ষক ৫০ থেকে ১০০ টাকা করে নিয়েছেন। তিনি ২০১৫ ও ’১৬ সালে তার চতুর্থ শ্রেণির ছেলে জ্যোতিময় সরকার জয়কে একই ক্লাসে রেখে উপবৃত্তির টাকা তুলে আত্মসাৎ করেন। এ টাকা তুলতে তিনি উপবৃত্তির কার্ডে জয়ের দুই নাম ব্যবহার করেন। ২০১৫ সালে জয়ের নাম জ্যোতিময় সরকার জয় এবং ২০১৬ সালে জয় সরকার ব্যবহার করা হয় বলে শিক্ষকরা জানান।
ওই দুই শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে কখনো জাতীয় দিবস পালন করেন না। এমনকি ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসও না। মা সমাবেশ হয়নি কখনো। এ ছাড়াও প্রধান শিক্ষক অফিসের সিলিং ফ্যান, স্কুলের অ্যাংগেল ও টিন বাড়িতে নিয়ে গেছেন। ২০১৯ সালে ল্যাপটপ ও প্রজেক্টর বরাদ্দ পেলেও সেগুলো ওই সময়ে বাড়িতে নিয়ে যান। এরপর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রজেক্টর ও ল্যাপটপ ভাড়া দেন।
অভিভাবক সদস্য মনিরুল ইসলাম বলেন, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ শুধু এখনই ওঠেনি। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এমন অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাগমা সিলভিয়া বলেন, ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তের জন্য দুজন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়েছি। এখনো প্রতিবেদন হাতে পাইনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ তামান্না বলেন, ওই প্রধান শিক্ষকের স্কুলে ঘুমানোর ছবিসহ একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করতে শিক্ষা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়েছি। প্রতিবেদন হাতে পেলে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্টের জনপ্রিয়তার মাত্রা এখন ৪০ শতাংশেরও নিচে। তাই প্রেসিডেন্ট পদে পুনর্নির্বাচনে বাইডেন শেষ পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
তবে ৮০ বছর বয়সী এই প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠজনরা অবশ্য জোর দিয়েই বলছেন, ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেবেন বাইডেন। এমনকি শিগগিরই নাকি তিনি নির্বাচনী প্রচারণাও শুরু করবেন। যদিও এসব এখনো নিজের মুখে ঘোষণা করেননি বাইডেন। এদিকে জনমত জরিপগুলো বলছে, বেশির ভাগ ডেমোক্র্যাট চান প্রার্থী হিসেবে অন্য কাউকে মনোনীত করা হোক। কিন্তু সম্ভাব্য ডেমোক্র্যাট প্রার্থীরা নিজেরাই বলছেন, যদি বাইডেন শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী দৌড়ে নামেন, তাহলে তারা তাকে চ্যালেঞ্জ করবেন না। অতএব আপাতত সব যেন নির্ভর করছে বাইডেনের সিদ্ধান্তের ওপর।
বাইডেন যদি নির্বাচনে লড়বেন না বলে সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে কী হবে? এমন প্রশ্নে বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, দুজন ডেমোক্র্যাট নেতার কথা, যারা ইতিমধ্যে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়তে চান। এ ছাড়া তুলে ধরেছে আরও কয়েকজনের কথা, যারা প্রার্থিতা ঘোষণা করতে পারেন। ম্যারিয়েন উইলিয়ামসন হলেন প্রথম ডেমোক্র্যাট, যিনি ২০২৪ সালের নির্বাচনে লড়তে দলের মনোনয়ন চেয়েছেন এবং মার্চ মাস থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচারণাও শুরু করেছেন। সত্তর বছর বয়সী মিসেস উইলিয়ামসন দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক ন্যায়বিচারের পক্ষে আন্দোলন করছেন। তার লেখা বই বেস্ট সেলার হয়েছে। তিনি রাজনীতিতে পা রাখেন ২০২০ সালে। দলের মধ্যে প্রগতিশীল বাম শক্তির পক্ষে তিনি এক শক্তিশালী কণ্ঠস্বর। তিনি ২০২৪ সালের নির্বাচনের জন্য যে জোট গড়ে তুলেছেন, সেটি সর্বজনীন সরকারি স্বাস্থ্যসেবা, বিনা মূল্যে চাইল্ড কেয়ার, দাসপ্রথার ক্ষতিপূরণ হিসেবে কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের অন্তত এক ট্রিলিয়ন অর্থ প্রদান এবং শান্তি মন্ত্রণালয় নামে একটি ফেডারেল সংস্থা তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ইতিমধ্যে ডেমোক্র্যাটদের হয়ে প্রেসিডেন্ট পদে লড়তে কাগজপত্র জমা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত কেনেডি পরিবারের সদস্য রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র (৬৯)। প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির ভাতিজা এবং নিহত অ্যাটর্নি জেনারেল ববি কেনেডির ছেলে রবার্ট জুনিয়র কেনেডি বংশের ১২তম সদস্য, যিনি রাজনৈতিক পদে নির্বাচনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এপ্রিলের পর থেকে তার প্রচারাভিযান শুরু করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তবে টিকা নিয়ে ষড়যন্ত্র তত্ত্বের প্রচার করে বেশ বিতর্কিত তিনি।
বাইডেন বয়সের কারণে প্রেসিডেন্ট লড়াই থেকে সরে গেলে যিনি সম্ভবত সবচেয়ে বেশি লাভবান হবেন, তিনি হলেন দেশটির বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। ৫৮ বছর বয়সী হ্যারিস যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট, প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং প্রথম এশীয়-আমেরিকান ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০২০ সালে নারী নেতৃত্বের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অদৃশ্য বাধার পাঁচিলটি ভেঙে ফেলতে সক্ষম হন। কমলা হ্যারিসের পর সবচেয়ে বেশি গুঞ্জন চলছে ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের রাজনীতিবিদ, গভর্নর গ্যাভিন নিউসমকে নিয়ে। পঞ্চান্ন বছর বয়সী নিউসম পেশায় মদ ব্যবসায়ী। ২০১৮ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর নির্বাচিত হন এবং রক্ষণশীল ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে নিজেকে প্রগতিশীল শক্তির প্রধান ধারক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। করোনা মহামারীর শুরুর দিকে দৃঢ় নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তিনি প্রশংসা অর্জন করেন।
এই চার হেভিওয়েট ডেমোক্র্যাট নেতা ছাড়াও বিবিসির প্রতিবেদনে এসেছে ৮১ বছর বয়সী সেই বার্নি স্যান্ডার্সের কথা। স্বতন্ত্র সিনেটর স্যান্ডার্স ভোটের সময় সাধারণত ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গেই থাকেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী মনোনয়নের প্রতিযোগিতায় ২০১৬ সালে ডেমোক্রেটিক পার্টির হেভিওয়েট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে তিনি প্রায় জিতে গিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট পদে ডেমোক্র্যাটদের অন্য সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন জেবি প্রিটজকার, ফিল মারফি, এমি ক্লোবুশার, এলিজাবেথ ওয়ারেন প্রমুখ।
সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে সংসদের বিশেষ অধিবেশনে সংসদ সদস্যরা বলেছেন, সংসদের মান ক্রমাগতভাবে ক্ষুণœ হচ্ছে। সংসদের চরিত্র পাল্টে যাচ্ছে। সংসদকে সত্যিকার অর্থে সব কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু করতে হলে এখানে জনগণের দুঃখ-কষ্ট নিয়ে আলোচনা করতে হবে। ইতিমধ্যে সংবিধানে যে জঞ্জাল জমেছে তা দূর করতে হবে। পঞ্চদশ সংশোধনীতে সংবিধানের চার মূল নীতিমালা ফিরিয়ে আনলেও জঞ্জালগুলো দূর না করলে আধুনিক বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে না।
জাতীয় সংসদের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ ধারায় প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনার আনা প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে গতকাল শনিবার সংসদ সদস্যরা এসব কথা বলেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, সংবিধানে যে ধর্মনিরপেক্ষতার সংজ্ঞা রয়েছে তা লঙ্ঘন করে সেখানে সাংঘর্ষিক বিষয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে সংবিধানে যে জঞ্জাল জমে গেছে তা দূর করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সত্যিকার অর্থে এই সংসদ হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের ফসল। তবে এই পার্লামেন্ট কখনো মসৃণ ছিল না। এই সংসদে কখনো আঘাত এসেছে, বাতিল হয়েছে, সংসদকে ঠুঁটো জগন্নাথ করা হয়েছে। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খন্দকার মোশতাক খুনি ও স্বাধীনতাবিরোধীদের নিয়ে সরকারকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করেন। অবৈধ ক্ষমতাধারী জিয়াউর রহমান সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী করে সংবিধান পাল্টে দেন, অধিকার ক্ষুণœ করেন।
রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘ইতিমধ্যে সংবিধানে যে জঞ্জাল জমেছে তা এখনো দূর করা যায়নি। ১২ বিধিতে সংবিধানে যে ধর্মনিরপেক্ষতার সংজ্ঞা রয়েছে তা ভঙ্গ করে কিন্তু সেখানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম এখনো বহাল রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের স্বীকৃতি দিয়েছেন কিন্তু তাদের মধ্যে অসন্তোষ দূর হয়নি। তাদের আদিবাসী হিসেবে নয়, নৃগোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। পঞ্চদশ সংশোধনীতে সংবিধানের চার মূল নীতিমালা ফিরিয়ে আনলেও এই জঞ্জালগুলো দূর না করলে আধুনিক বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে না।’
তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় দেখছি আমাদের পার্লামেন্টের মান ক্ষুণœ হচ্ছে। এখানে এক ঘণ্টার বক্তব্যের মধ্যে ৩ মিনিট মাত্র গ্রামের সাধারণ মানুষের কথা হয়। বাকি কথা হয় দলের নেতার কথা, নিজের কথা। এর বাইরে সংসদ এগোতে পারছে না। রাষ্ট্রপতি বলেছেন, সংসদে এমন অবস্থা হয়েছে এখানে আইনজীবী না থাকার কারণে ভবিষ্যতে আইন প্রণয়ন করতে আইনপ্রণেতাদের বাইরে থেকে আনতে হবে। আজকে রাজনীতি ও নির্বাচনের বাণিজ্যিকায়নের ফলে সংসদের চরিত্র পাল্টে যাচ্ছে, নতুন চেহারা দাঁড়িয়েছে। আজকে ব্যবসায়ীর সংখ্যা সংসদে অনেক বেশি। ফলে ব্যবসায়ীদের সংখ্যা বাড়লে তাদের স্বার্থে সংসদের পরিস্থিতি পাল্টে যায়। আজকে প্রয়োজন সংসদের সংস্কার করা। সংবিধান পর্যালোচনা প্রয়োজন।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু সংবিধানের চার মূলনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিষয়গুলো বিলোপ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী জাতিগত বিভ্রান্তি দূরীকরণ এবং ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে সংসদ সদস্যদের ক্ষমতায়নে সংবিধান পর্যালোচনায় সংসদীয় কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন। সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রীকে প্রধান করে তিনি সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে এই সংবিধান পর্যালোচনা কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেন।
ইনু বলেন, নষ্ট রাজনীতির ধারক-বাহক বিএনপি ও জামায়াত তথাকথিত ২৭ দফা ও ১০ দফা দিয়ে সংবিধান খোলনলচে বদলে দেওয়ার হুংকার ছেড়েছে। সংবিধানটাকেই বাতিল করার কথা বলছে। তিনি বলেন, বিএনপি পঁচাত্তরের পর যেসব অপরাধ করেছে, এখনো তার পক্ষে সাফাই গাইছে। বিএনপি আসলে মুখে বাংলাদেশ, অন্তরে পাকিস্তান বলে জপ করছে। বিএনপি আসলে বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠে পাকিস্তানের বদলি খেলোয়াড়। বিএনপি সংবিধান খেয়ে ফেলতে চায়। রাজাকারদের রাজনীতির মধ্যে আবার ফিরিয়ে আনতে চায়। তারা সাংবিধানিক ধারা বানচাল করতে চায়। অসাংবিধানিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়। কোনো মাঝামাঝি রাস্তা নয়; বিএনপিকে রুখেই দিতে হবে, রাজনীতির মাঠ থেকে বিতাড়িত করতে হবে।
জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের মতের দ্বিমত থাকতে হবে। তবে সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে, সংসদকে সত্যিকার কার্যকর করতে চাইলে এই সংসদের মধ্যে মানুষের দুঃখ-কষ্ট সমস্যা নিয়ে আলোচনা হতে হবে। সেই আলোচনা না হলে সবাই এখানে বললেও কেন্দ্রবিন্দু হবে না। সংসদের বাইরের কথাই কেন্দ্রবিন্দু হবে; যা বাইরে আছে তাদের কথাই গণমাধ্যমে প্রাধান্য পাবে। এটা কেবল বিরোধী দলের দায়িত্ব নয়। এটা আজকে সরকার দলের দায়িত্ব। সবাই মিলে আমাদের জনগণের কথা বলতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দলের প্রতি আনুগত্য থাকতে হবে। কিন্তু দলের চেয়ে রাষ্ট্র ও জনগণ বড়। সরকার দলের সদস্যদের বলবÑ এ দেশে কি কোনো ভুল হয় না? কই আপনারা তো সেই ভুল ধরে দেন না।’
বাকস্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বলতে বিএনপি যেটা বোঝায়, আদতে সেটা নয় বলে মন্তব্য করে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান বলেন, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা, শিক্ষিতের হার ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির অবস্থার ওপর ভিত্তি করে বাকস্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দেওয়া উচিত।
বিএনপি-জামায়াতসহ সরকারবিরোধী আন্দোলনকারীদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন আছে। তার অধীনে নির্বাচন হবে। রাষ্ট্র চলবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।
বর্তমানে দেশে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র হচ্ছে দাবি করে সরকারদলীয় আরেক সদস্য তানভীর শাকিল জয় বলেন, আজকে আমাদের মহান স্বাধীনতা, স্বাধীনতা যুদ্ধকে অপমান করা হয়। আজকে স্বাধীনতা দিবসকে অপমান করে বিকৃতভাবে চাইল্ড এক্সপ্লোটেশনের মাধ্যমে জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়।
তিনি বলেন, আমি সেসব সুশীল বাবু এবং তাদের পত্রিকার কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই, যখন ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিলÑ তখন স্বাধীনতার চেতনা কোথায় ছিল? যখন ২১ আগস্টে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল তখন স্বাধীনতা কোথায় ছিল? যখন বাংলাদেশে সারের জন্য কৃষকদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল, যখন বিদ্যুতের জন্য সাধারণ মানুষকে গুলি করা হয়েছিল তখন স্বাধীনতা কোথায় ছিল? তখন তো আপনাদের বোধোদয় হয় নাই, তখন তো আপনারা স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলেন নাই। এখন আপনারা স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলেন।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দাবি করে সরকারি দলের আরেক সংসদ সদস্য ও সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ বলেন, আগামী নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নানান ধরনের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত হচ্ছে, সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে সতর্ক থাকতে হবে। তিনি আরও বলেন, সেই ষড়যন্ত্র মোকাবিলার জন্য আমাদের নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে আগামী নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণসহকারে নিতে হবে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে নৌকা মার্কা বিজয়ী করে সোনার বাংলা বাস্তবায়িত করব।
আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা ও গণপরিষদ সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী ইমাজউদ্দিন প্রামাণিক বলেন, ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পরই মুক্তিযুদ্ধ শুরু হবে এটা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ওই নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার বোর্ডেই বলেছিলেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু একমাত্র প্রথম বাংলাদেশের স্বাধীনতা চেয়েছেন, তার আগে অনেক নেতা ছিলেন তারা কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাননি। বাংলাদেশের মানুষের পুরোপুরি মুক্তি চাননি। তারা ক্ষমতায় যেতে চেয়েছেন আর বঙ্গবন্ধু একমাত্র নেতা যিনি জীবন দিয়ে স্বাধীনতা দিয়ে গেলেন। এত কাজ করার পরও যদি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার পক্ষে ক্যানভাস করতে হয় তাহলে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যে আরও দুর্ভোগ আছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) হলের আসন দখল করে রাখার বিরুদ্ধে অনশনরত ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম প্রত্যয়সহ তাকে সমর্থন দেওয়া কয়েকজনের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ।
মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।তারা বলেন, ওই স্থানে গত বুধবার রাত থেকে অনশনে ছিলেন প্রত্যয়। তাকে মারধরের পর অ্যাম্বুলেন্সে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যায় হামলায় জড়িতরা। এ সময় প্রত্যয়ের দাবির সঙ্গে সংহতি জানানো প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের ওপরও হামলা হয়।
জানা গেছে, তিন দাবিতে গত বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনের খেলার মাঠে অনশনে বসেন প্রত্যয়। তিনি ওই হলের আবাসিক ছাত্র। তার অন্য দুটি দাবি ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল থেকে অছাত্রদের বের করা ও হলের গণরুমে অবস্থান করা বৈধ ছাত্রদের আসন নিশ্চিত করা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী এবং নবীন শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছিলেন। ওই সময় ক্যাম্পাসে লোডশেডিং চলছিল। হঠাৎ করেই প্রত্যয়সহ তার সঙ্গে থাকা অন্যদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
হামলায় জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচী, মার্কেটিং বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের সৃষ্টি, চারুকলা বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের মনিকা, বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের ৪৮তম ব্যাচের সুরসহ আরও কয়েকজন আহত হন বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যমতে, হামলায় ৩০ থেকে ৪০ জন অংশ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। অভিযুক্তদের কয়েকজন হলেন ছাত্রলীগ নেতা ও রসায়ন বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী গৌতম কুমার দাস, তুষার, ফেরদৌস, নোবেল, গোলাম রাব্বি, মুরসালিন, মুরাদ, সোহেল, তানভীর, রায়হান, রাহাত, সৌমিক, তারেক মীর, সজীব ও নাফিস।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী জানান, আমরা যারা প্রত্যয়ের সঙ্গে ছিলাম তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর প্রত্যয়কে দেখতে চিকিৎসক এসেছিলেন। তখন তারা অ্যাম্বুলেন্সের ওপর হামলা করে সেটি ফিরিয়ে দেয়। প্রক্টরকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি আসেননি। একাধিক ছাত্রীর দিকেও চড়াও হয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মীর মশাররফ হোসেন হলের এক শিক্ষার্থী অসুস্থ এমন একটি ফোনকল পেয়ে তারা অ্যাম্বুলেন্স পাঠায়। তবে কে কল দিয়েছিল সে সম্পর্কে চিকিৎসা কেন্দ্রের কেউ বলতে পারেননি।
তবে যে ফোন নাম্বার থেকে কল দেওয়া হয়েছিল সেটিতে যোগাযোগ করে দেখা যায় নাম্বারটি শাখা ছাত্রলীগের নেতা গৌতম কুমার দাসের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ১৫ হাজার শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না। দরকার হলে আমি পদত্যাগ করব।
এদিকে হামলার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে রাতেই বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মিছিল নিয়ে তারা এ রাত পৌনে ১টায় প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান করছেন।
তবে অনশনরত শিক্ষার্থী সামিউলের ওপর হামলারে পেছনে ছাত্রলীগের কোনো হাত নেই বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেলের। তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি, মীর মশাররফ হোসেন হলের অনশনরত ওই শিক্ষার্থীর ওপর হামলা হয়েছে। তবে সেটা সাধারণ শিক্ষার্থীরা করেছে। সেখানে ছাত্রলীগের একজনও জড়িত নয়।’
অসুস্হ সাবেক ফুটলার মোহাম্মদ মহসীনের পাশে দাড়িয়েছেন তার সাবেক সতীর্থরা। মোহামেডান ক্লাবের সাবেক ফুটবলার ও সোনালী অতীত ক্লাবের সদস্যরা বিকেলে বসে এই সিদ্ধান্ত নেন। পরে মহসীনের বাসায় যান তার সংগে দেখা করতে।সাবেক ফুটবলারদের মধ্যে ছিলেন আব্দুল গাফফার, জোসী, বাবলু, জনি, সাব্বির, রিয়াজ।
এসময় গাফফার জানান, মহসীনের চিকিৎসার জন্য বিসিবি সভাপতির উদ্যোগে বুধবার সকালে অসুস্হ ফুটবলারকে হাসপাতালে ভর্তি করবে।
হাসপাতাল থেকে সুস্থ ও স্বাভাবিক হয়ে ফেরার পর মহসীন কানাডায় ফিরে যেতে চাইলে সাবেক ফুটবলাররা সহায়তা করবে। মহসীন কানাডা থেকে দেশে ফিরেছেন মায়ের পাশে থাকতে। প্রায় নব্বই ছুই ছুই মহসিনের মায়ের পায়ে ব্যথা। মহসীনের পাশাপাশি তার মায়ের চিকিৎসার ব্যাপারেও সাবেক ফুটবলাররা পাশে থাকবেন বলে জানান আবদুল গাফফার।
রাজধানীর বনানীর একটি রেস্তোরাঁ থেকে জামায়াতে ইসলামীর বনানী শাখার ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তাদের মধ্যে বনানী থানা জামায়াতের আমির তাজুল ইসলাম এবং সেক্রেটারি আব্দুর রাফি রয়েছেন।
বনানী থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওয়ারলেস গেটে অবস্থিত নবাবী রেস্টুরেন্টে গোপন মিটিং করাকালে বনানী থানা জামায়াতে ইসলামী আমির তাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রাফিসহ ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
আটক ১০ জনের মধ্যে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাও রয়েছেন।
প্রথম সেটে হেরে পিছিয়ে পড়েছিলেন। তবে পরের সেটেই ঘুরে দাঁড়ান। ৩ ঘণ্টা ৩৮ মিনিটের লড়াইয়ের পর কোয়ার্টার ফাইনালটা জিতে নিলেন নোভাক জকোভিচ। কারেন খাচানভকে ৪-৬, ৭-৬, ৬-২, ৬-৪ ব্যবধানে পরাজিত করে ফ্রেঞ্চ ওপেনের সেমিফাইনালে উঠলেন এই সার্বিয়ান।
কোয়ার্টার ফাইনালের শুরুটা দেখে মনে হচ্ছিল, দিনটা বোধহয় জকোভিচের নয়। তবে মাথা ঠান্ডা রেখেছিলেন তিনি। খাচানভ প্রথম সেট জিতে নেওয়ার পর দ্বিতীয় সেটেও সমানে সমানে লড়াই করেন। যদিও টাইব্রেকারে জোকোর সামনে দাঁড়াতে পারেননি তিনি।
ম্যাচে সমতা ফেরানোর পর এক বার লকার রুমে ফিরে যান জোকোভিচ। তার পর শুধু কোর্টেই ফিরলেন না। নিজের চেনা ছন্দেও ফিরলেন। তৃতীয় এবং চতুর্থ সেটে আর শুরুর মতো লড়াই করতে পারলেন না প্রতিযোগিতার ১১ নম্বর বাছাই।
ফ্রেঞ্চ ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনালে মঙ্গলবার প্রতিযোগিতার প্রথম সেট হারলেন জোকোভিচ। হেরে যেতে পারেন এমন মনে না হলেও এ দিন ছন্দ পেতে কিছু সময় লেগেছে তার। ৩৬ বছরের জোকোভিচ কি সর্বোচ্চ পর্যায়ের টেনিসের ধকল আগের মতো সামলাতে পারছেন না আর?
এমন প্রশ্ন যখন উঁকি দিতে শুরু করছে, তখনই নিজের চেনা ছন্দে দেখা দিয়েছেন। কোয়ার্টার ফাইনালে খাচানভের বিরুদ্ধে সময় পেয়েছেন। সুযোগ পেয়েছেন। সেমিফাইনাল বা ফাইনালের প্রতিপক্ষরা কি ছন্দে ফেরার সময় বা সুযোগ দেবেন তাঁকে?
টেনিসপ্রেমীদের মনে এই প্রশ্ন রেখেই ফ্রেঞ্চ ওপেনের শেষ চারে পৌঁছে গেলেন দু’বারের চ্যাম্পিয়ন। পাশাপাশি কিছুটা হয়তো উদ্বেগেও রাখলেন। সেমিফাইনালে জায়গা নিশ্চিত করার পর জোকার স্বীকারও করে নিয়েছেন, কোয়ার্টার ফাইনালে প্রথম দু’টি সেট তার থেকে ভাল খেলেছেন রুশ প্রতিপক্ষ।
এদিকে ওপর কোয়ার্টার ফাইনালে জয় পেয়েছেন কার্লোস আলকারাজ। সিৎসিপাসের বিপক্ষে তিনি ৩-০ (৬-২, ৬-১, ৭-৬) সেটে জিতে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছেন এই স্পেনিশ টেনিস তারকা।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।