
আগামী নভেম্বরে রাজধানীর মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের (এমআরটি লাইন-৬) উদ্বোধন করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ময়মনসিংহে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর কেওয়াটখালী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের পরামর্শক সেবা সংক্রান্ত চুক্তি অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানান তিনি।
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের এমআরটি লাইন-৬-এর কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। মতিঝিল পর্যন্ত প্রায় হয়ে গেছে। আমরা আগামী নভেম্বর নাগাদ মতিঝিল পর্যন্ত উদ্বোধন করতে পারব। এমআরটি লাইন-৬ এর কাজ এ বছরই শেষ করতে পারব। সেটাও আমরা আশা করছি।
আগামী ডিসেম্বরে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হওয়ার কথা ছিল। বর্তমানে, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত সব মেট্রোরেল স্টেশন প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চালু আছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থ সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের উপস্থিতিতে পদ্মা সেতু থেকে ৩১৬ কোটি টাকা আমরা রিটার্ন দিয়েছি। যেটা বাংলাদেশে বিরল ব্যাপার। আমরা এই প্রথম রিটার্ন দিয়েছি, জুন মাসে আমরা দ্বিতীয় কিস্তিও সমপরিমাণ অর্থ দেব। সেভাবে প্রধানমন্ত্রীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।
সড়কমন্ত্রী বলেন, এ অর্থবছরেই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণকাজ তেজগাঁও পর্যন্ত শেষ করতে পারব। সে লক্ষ্যে আমাদের কাজ এগিয়ে চলছে। পহেলা বৈশাখে বাঙালি জাতিকে আরও একটি সুখবর দিতে চাই। সেটি হচ্ছে, আগামী জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও ১০০ সেতু নির্মাণকাজ উদ্বোধন করবেন একদিনে।
তিনি আরও বলেন, নভেম্বর নাগাদ ঢাকা শহরে বিআরটিসির বহরে ১০০ ডাবল ডেকার এসি বাস যুক্ত হবে। এই ইলেকট্রিক বাসগুলো প্রথমে সিটি সার্ভিস হিসেবে চলবে। নভেম্বরের মধ্যেই বাসের প্রথম চালান পাব বলে আশা করছি। বিআরটিসির ১০০টি ডাবল ডেকারের মধ্যে ৮০টি ঢাকায় ও ২০টি চট্টগ্রামে চালু করা হবে। পরে অন্য বিভাগীয় শহরগুলোতেও সিটি সার্ভিস চালু করব। তারপর যাব জেলা পর্যায়ে।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, নির্বাচন কীভাবে হবে, সেটি নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার। আমাদের দল নির্বাচনে অংশ নেবে। ১৫ এপ্রিল আমাদের মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠক আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করবেন।
পানামা ও প্যারাডাইস পেপার্সে নাম আসা ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে অনুসন্ধান এখন থমকে আছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি)। এর আগে পাঁচ বছর অনুসন্ধান করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন।
২০১৬ সালে পানামা পেপার্স ও ২০১৭ সালে প্যারাডাইস পেপার্স ফাঁস হয়। এর মাধ্যমে বিশে^ও বহু নামিদামি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কর ফাঁকি দিয়ে সম্পদ অর্জনের তথ্য ফাঁস। অফসর কোম্পানি খুলে তারা কর ফাঁকি দেয়। ওই কেলেঙ্কারিতে বাংলাদেশের ৬১ ব্যক্তি ও ৮ প্রতিষ্ঠানের নাম এসেছে।
এই দুটি পেপার্স ফাঁসের পরই অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। গত বছর উচ্চ আদালতের এক আদেশে যৌথ দল গঠন করার কথা বলা হয়। পরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) নেতৃত্বে যৌথ দল গঠন করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর গত বছরের জুলাইয়ে একটি দল গঠন করে অনুসন্ধানের কার্যক্রম শুরু করলেও এখনো কোনো অগ্রগতির কথা জানাতে পারেনি সিআইডি।
অনুসন্ধান তদারক কর্মকর্তা সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার মুহাম্মদ বাছির উদ্দিন। পানামা ও প্যারাডাইস পেপার্সে নাম আসা ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে অনুসন্ধানের অগ্রগতি জানতে তার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে সিআইডির ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, অনুসন্ধান এগিয়ে নিতে সামনে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে তা নিয়ে দ্রুতই আলোচনা করে সিদ্ধান্তে আসবে সংস্থাটি। অনুসন্ধান শেষে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনগত কার্যক্রম নেওয়া হবে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট কয়েকজন দেশ রূপান্তরকে জানান, ২০১৬ সালের ৭ এপ্রিল দুদকের উপপরিচালক আখতার হামিদ ভূঁইয়ার নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়। দুদক এই অনুসন্ধানে নেমে বিএনপি নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু, ইউনাইটেড গ্রুপের চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ রাজাসহ অন্তত ১৮ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তবে বিষয়টি দুদকের এখতিয়ারবহির্ভূত হওয়ায় অনুসন্ধান থেমে যায়। কারণ হিসেবে কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, অর্থ পাচার আইন অনুযায়ী একমাত্র সরকারি কর্মচারীদের ঘুষ ও দুর্নীতির বিষয়টি তদন্ত করতে পারে দুদক। পরে উচ্চ আদালত থেকে যৌথ তদন্ত দল গঠন করতে বলা হয়।
গত বছর সিআইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট থেকে চিঠি পাওয়ার পর ছয়টি তদন্ত টিম গঠন করা হয়। এসব টিমে দুদকের একজন করে মনোনীত কর্মকর্তা যুক্ত থাকার কথাও জানানো হয়।
ওই সময় গঠিত ছয়টি টিমের নেতৃত্বে যাদের নাম উল্লেখ করা হয় তারা হলেন, ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের সহকারী পুলিশ সুপার আল আমিন হোসেন ও শেখ সুরাইয়া ঊর্মি, সিরিয়াস ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুল আহসান, সাইবার ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী আবু সাঈদ, ঢাকা মেট্রো দক্ষিণের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিসানুল হক এবং ঢাকা মেট্রো উত্তরের সহকারী পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর হোসেন।
এই তদন্ত দলে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুল আহসান জানান, এই দলে তার নাম সুপারিশ করার হলেও তিনি পরে আর যুক্ত হননি। এ ছাড়া অন্য তিন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা গত বছরই কর্মস্থল পরিবর্তন করেছেন বলে জানান।
প্যারাডাইস পেপার্স নিয়ে উইকিপিডিয়ায় বলা হয়েছে, বিশ্বের ৬৭টি দেশের চারশোর মতো সাংবাদিক কয়েক মিলিয়ন গোপন নথি ঘেঁটে বেশ কয়েকজন উচ্চপর্যায়ের রাজনীতিবিদ এবং বিত্তবানদের নাম খুঁজে পেয়েছেন। জার্মানির স্যুড ডয়চে সাইটুং পত্রিকা এসব গোপন নথি সংগ্রহ করে। এ ছাড়া পানামা পেপার্স প্রকাশ করেছে সাড়ে ১১ মিলিয়ন গোপন নথি। যেখানে ২ লাখ ১৪ হাজারের বেশি কোম্পানির নাম উঠে এসেছে। আর এটি জার্মান দৈনিক স্যুড ডয়চে সাইটুং ২০১৬ সালের ৩ এপ্রিল প্রকাশ করেছে। এতে পাঁচটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানসহ অনেকগুলো দেশের সরকার প্রধান, ক্রীড়াবিদ, চলচ্চিত্র অভিনেতা, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, ব্যবসায়ীদের নাম রয়েছে।
আলোচিত এই দ্ইু কেলেঙ্কারিতে যেসব বাংলাদেশিদের নাম এসেছে, তাদের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির কয়েকজন নেতার নাম রয়েছে।
এ ছাড়া যাদের নাম আছে তাদের মধ্যে আছেন ফয়সল চৌধুরী, ওয়াই ফরিদা মোগল, শহীদ উল্লাহ, সামির আহমেদ, সিটিসেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহবুব চৌধুরী, আইজিডব্লিউ অপারেটর সেল টেলিকমের কফিল এইচ এস মুয়ীদ, এক্সেসটেলের মালিক জাইন ওমর, কিউবির অংশীদার আফজালুর রহমান, টেকনোমিডিয়ার সরকার জীবন কুমার, বাংলাট্রাকের আমিনুল হক ও তার ছেলে নাজিম আসাদুল হক এবং তারিক একরামুল হক, সিটিসেলের সাবেক চেয়ারম্যান আজমাত মঈন।
আরও আছেন আবদুল মোনেম গ্রুপের এ এস এম মহিউদ্দিন মোনেম, আসমা মোনেম, দিলীপ কুমার মোদি, মল্লিক সুধীর, কাজী রায়হান জাফর, মো. ইউসুফ রায়হান রেজা, মাহতাবউদ্দিন চৌধুরী, বেনজির আহমেদ, ইশরাক আহমেদ, নভেরা চৌধুরী, সৈয়দা সামিনা মির্জা, উম্মে রুবানা, বিলকিস ফাতিমা, সালমা হক, ফরহাদ গণি, আবুল বাশার, নিজাম এম সেলিম, মোহাম্মদ মোকসেদুল ইসলাম, মোতাজ্জারুল ইসলাম, সেলিমুজ্জামান, সৈয়দ সিরাজুল হক, এফ এম জুবাইদুল হক, মোহাম্মদ শহীদ মাসুদ, খাজা শাহাদত উল্লাহ, মোহাম্মদ ফয়সাল করিম খান, মোহাম্মদ শহীদ মাসুদ, জুলফিকার হায়দার, মির্জা এম ইয়াহিয়া, নজরুল ইসলাম, জাহিদুল ইসলাম, এফ এম জুবাইদুল হক, এ এফ এম রহমাতুল বারী ও খাজা শাহাদাত উল্লাহ।
পানামা-প্যারাডাইস পেপার্সে বাংলাদেশি ব্যক্তি ছাড়াও এসেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ বিমান ইনকরপোরেশন, ইসলামিক সলিডারিটি শিপিং কোম্পানি বাংলাদেশ ইনকরপোরেশন, বাংলাদেশ টেক্সটাইল এজেন্সিস লিমিটেড, এসার বাংলাদেশ হোল্ডিং প্রাইভেট লিমিডেট ও টেলিকম ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড, সেভেন সিজ অ্যাসেটস লিমিটেড, ফ্রন্টিয়ার বাংলাদেশ (বারমুডা) লিমিটেড এবং টেরা বাংলাদেশ ফান্ড লিমিটেড, সোয়েন ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড, ব্রামার অ্যান্ড পার্টনার্স লিমিটেড, ইউনোকল বাংলাদেশ লিমিটেডের একাধিক প্রতিষ্ঠান।
লোকসাহিত্য আমাদের জাতীয় জীবনের প্রতিবিম্ব। বাংলাদেশের জনজীবনকে কেন্দ্র করেই বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। যা ‘লোকায়ত বাংলাদেশের প্রাণ’। বাংলা লোকসংস্কৃতির প্রবহমান ধারায় বাংলা নববর্ষ এক উল্লেখযোগ্য স্থান অধিকার করে আছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে লোকায়ত বাংলাদেশ সিরিজের এবারের নিবেদন-বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিতে বাংলা নববর্ষের প্রভাব।
বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতি কবিতা ও গীতিকাসমৃদ্ধ। এ কারণে বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিতে বাংলাদেশের সমাজ ও জীবনের সার্থক পরিচয় মেলে। তাই বাংলাদেশের কবিতা ও গীতিকাগুলোতে রয়েছে বাংলাদেশ ও বাঙালির পরিচয়। এ দেশের ঋতুবৈচিত্র্যে বাংলা নববর্ষ, ভূ-প্রকৃতি, পশুপাখি, গাছপালা, এ দেশের মানুষের আহার-বিহার, আচার-অনুষ্ঠান, মনের গতিপ্রকৃতি সবকিছুরই চিত্র পাওয়া যায় পল্লীগীতিকাগুলোতে। শুধু তাই নয়, পল্লীগীতিকাগুলোর আদর্শও বাঙালি প্রতিভায় বৈশিষ্ট্যমন্ডিত।
বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতি কী উপাদানে গড়া বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিতে বাংলা নববর্ষের প্রভাব থেকে তার আভাস পাওয়া যায়। এ লোকসাহিত্য-সংস্কৃতিতে নানা ব্রতকথা, পিটালি দিয়ে আলপনা আঁকা এ সব কিছুতেই বাংলা নববর্ষের প্রভাব সবিশেষ লক্ষণীয়।
বাংলা লোকসংস্কৃতির গীতিকাগুলোতে সর্বত্র বিল, খাল, গাঙঝিল, কেয়াবন ও নীপবৃক্ষ এ সমস্ত বাংলাদেশের নববর্ষকালীন চিত্র আমাদের সামনে তুলে ধরে। চাকলাদারের কন্যা কমলার বাল্যকালের পল্লীগানের স্মৃতিতে বাংলাদেশ কীভাবে মধুরভাবে এখনো জড়িয়ে আছে তা পড়ে এখনো আমাদের ক্লান্তি আসে না, প্রত্যেকবারই নতুন মনে হয়। বাল্যকালে মা এদিনে পিঠা তৈরি করতেন, বৈশাখ মাসে নববর্ষের দিনে মনসাদেবীর পূজায় অনেক লোক নতুন কাপড় পরে পূজাম-পে আসত, এখন সে মন্দির দেবতাশূন্য, সন্ধ্যায় কেউ আর সেখানে আরতির বাতি জ্বালে না, বাদ্যাভা- থেমে গেছে। বর্ষাশেষে কৃষকরা সোনার ফসল কেটে আনত। রমণীরা শাঁখ বাজিয়ে, প্রদীপ জ্বালিয়ে নববর্ষ ও নবান্নের গান গেয়ে ‘জোকার’ দিয়ে স্বামী-ভাইদের এগিয়ে ঘরে নিয়ে যেত এবং ফসল ফেলে মঙ্গলোৎসব করত। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে নববর্ষ অর্থাৎ বৈশাখ মাসে লোকসংস্কৃতির এ গানগুলোর কথা স্মরণ করা যেতে পারে। এ ছাড়া বৈশাখ ও বর্ষার বর্ণনা যে কত প্রিয় ও প্রেমিকের হৃদয়ে কী রূপ আবেগ আনয়ন করে তা পুনঃপুন বাংলা সাহিত্যের, কঙ্ক ও লীলার গল্পে চিত্রিত দেখা যায়।
বাংলাদেশের লোকজ জীবন সংস্কৃতির সঙ্গে অবিচ্ছিন্নভাবে জড়িয়ে আছে বাংলা নববর্ষ। কবিরা নিরন্তর লিখেছেন ও লিখে চলেছেন কবিতা। যা আমাদের লোকসাহিত্যের ভা-ারকে করেছে সমৃদ্ধ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের পথ ধরে সব লোককবির কবিতায় নববর্ষের প্রভাব পড়েছে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে। কবি আশরাফ সিদ্দিকীর কবিতায় নববর্ষের প্রভাব পড়েছে এভাবে-
‘আসো বর্ষ, নববর্ষ আনো হর্ষ, আনো বাংলার
বিকৃত নদীর গান, অবারিত ফসলের বান,
আনো পিক কোয়েলিয়া, ঘুঘু আর ময়না খঞ্জনার
উদাসীরা বারমাসী আনো বৃষ্টি সৃষ্টির উল্লাসে।’
বাংলা লোকসংস্কৃতিতে নববর্ষ আমাদের স্বপ্ন দেখায়। চলার পথে দিশা দেয়। লোকসংস্কৃতির আঙিনায় এমন একটি কবিতায় কবি আসাদ চৌধুরী নববর্ষের কথা উল্লেখ করেছেন এভাবে-
‘যেন বা বাসর গোয়াল ঘর
কুমারিকা লতায় সেজেছে।
লাঙলের ফালে এই মাত্র চুমু দিলো
সোনা ও রুপার কাপা জল।’
বাংলা লোকসংস্কৃতিতে মেলার কথা আছে। কবি জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীর কবিতায় তা ফুটে উঠেছে এভাবে-
‘মেলায় আছে ঝুনঝুনি
গাছের ডালে টুনটুনি
উড়িয়ে দেবো ছড়িয়ে দেবো
উঠোন ভরে বিন্নী ধান ।’
বাংলা লোকসংস্কৃতিতে ছড়ায় মনের কথা বলে। কবি ও ছড়াকার আবুল খায়ের মুসলেহ উদ্দিনের ছড়ায় নববর্ষের প্রভাব সবিশেষ লক্ষণীয়-
‘চমকে উঠে হঠাৎ শুনি গাছে
হাজার হাজার পাখির কলতান
পুচ্ছ তুলে নাচছে দূরে কাছে
গাইছে যেন বোশেখ এলো গান
কিচির কিচির শুনে শুনে মোর
কেটে গেল আঁধার মনের ভার,
চেয়ে দেখি স্বচ্ছ বিমল ভোর
দু হাত মেলে ডাকছে বারবার।
চেয়ে দেখি আম কাঁঠালের গাছে
পয়লা বৈশাখ পাতায় পাতায় নাচে
মৌ মৌ ফুল ও ফুলের ঘ্রাণে
বোশেখ আসে, দামাল ছেলের গানে।’
উপসংহারে বলতে হয়, বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিতে বাংলা নববর্ষের প্রভাব ও ব্যাপ্তি ক্রমে ক্রমে বিস্তৃতি লাভ করেছে। যাতে বিধৃত হয়ে আছে বাংলাদেশ ও বাঙালির পরিচয়। চোখেমুখে ভেসে ওঠে লোকায়ত বাংলাদেশের সজল ও সজীব জীবনের প্রতিচ্ছবি।
পুরান ঢাকার নবাবপুরে আগুনে পুড়েছে ২০টির মতো গুদাম। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টার পর নবাবপুরে ডিসেন্ট বেকারির পাশের টিনশেডের একটি গুদামে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১৪টি ইউনিট ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এতে তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, রাত ১০টা ৮ মিনিটে নবাবপুর মার্কেটের ডিসেন্ট বেকারির পাশের টিনশেডের গুদামটিতে আগুনের লাগার খবর পায় তারা। দোতলা ওই ভবনের কর্মচারীদের মেস থেকে আগুনের সূত্রপাত। রাত ১১টা ৪৫ মিনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার ঘোষণা দেওয়ার কিছুক্ষণ পর ভবনের অন্য পাশে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। রাত ১টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আগুন নির্বাপণের কাজ চলছিল।
এর আগে গত ৪ এপ্রিল রাজধানীর অন্যতম বড় কাপড়ের মার্কেট বঙ্গবাজার আগুনে পুরো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।
এর এক কিলোমিটারের মধ্যে নবাবপুর রোডে বিভিন্ন ধরনের যান্ত্রিক ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের পাইকারি বাজার।
গতকাল রাত পৌনে ১২টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশনস ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আগুন লাগা ভবনে গ্যাসের লাইন এবং সিলিন্ডার রয়েছে। গ্যাসের লাইন থেকে নাকি অন্য কোনোভাবে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে তা পরে খতিয়ে দেখা হবে। তবে এখানকার আগুন ছিল খুবই ক্রিটিক্যাল। দ্রুততার সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের একাধিক ইউনিট নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করায় আগুন আশপাশের ভবনে ছড়িয়ে যেতে পারেনি। উৎসুক জনতার ভিড়ে বরাবরের মতো এবারও আগুন নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হয়েছে। যদিও ১ ঘণ্টা ২০ মিনিটে আগুন পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে এনেছি। সবসময় আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসকে সবার সহযোগিতা করা উচিত।
কোথা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, এখানে কর্মচারীরা যে মেসে থাকতেন সেখান থেকে আগুনের সূত্রপাত। এখন পর্যন্ত আগুনে কোনো হতাহতের খবর পাইনি। আগুন ২০টির মতো গোডাউন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সম্প্রতি ঘন ঘন আগুন লাগা কোনো নাশকতা কি না সে প্রশ্ন তুলে এ কর্মকর্তা বলেন, আমাদের সংস্থাগুলো তদন্ত করে দেখছে, আসলে এসব দুর্ঘটনা না নাশকতা।
পাশের ভবনের বাসিন্দা মোহাম্মদ রাসেল বলেন, দোতলায় আগুনের খবর পাই ১০টার দিকে। পরে আগুন বাড়তে থাকে। দোতলা ওই ভবনের ওপরে টিনশেড, কেমিক্যাল গোডাউন, বেকারি ও অন্য প্লাস্টিক মজুদ ছিল। ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে।
ঘটনাস্থলে ইস্টার্ন হাউজিংয়ের মামুনুর রশিদ বলেন, আমাদের একটা গোডাউন আছে ওই ভবনে। সেখানে প্লাস্টিকের শিট মজুদ করা হয়। আগুনের খবর পেয়ে এসেছি। আমাদের গোডাউন পুড়েছে কি না জানতে পারিনি।
ফাতেমা মেশিনারির মালিক মো. শামীম বলেন, আমার হার্ডওয়্যারের মালামাল ছিল ১১ লাখ টাকার ওপর, ক্যাশ ছিল ৩ লাখ টাকা। আমার সব পুড়ে গেছে। আমার গোডাউন ছাড়াও পাশের গোডাউনে মাল রেখেছিলাম, সেগুলোও পুড়েছে।
ডায়মন্ড অ্যান্ড ডিভার্স এবং শারমিন জুয়েলার্সের মালিক এনামুল হক দোলনের বিরুদ্ধে সোনা চোরাকারবারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ রয়েছে, জুয়েলারি ব্যবসার আড়ালে তিনি সোনা চোরাকারবারের বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। একই সঙ্গে তিনি সোনা চোরাকারবারি চক্রের অন্যতম হোতা। তার এলাকা নরসিংদীর মনোহরদীতে গড়ে তুলেছেন অবৈধ সম্পদ।
গোয়েন্দা তথ্য বলছে, দোলনের বিরুদ্ধে সোনা চোরাকারবারে নেতৃত্ব দেওয়ার সঙ্গে অর্থ পাচার, অস্ত্র ও মাদক কেনাবেচায় যুক্ত থাকার তথ্য-প্রমাণ মিলছে।
দোলনের সম্পদের পাহাড় : গোয়েন্দা তথ্য এবং সরেজমিন অনুসন্ধান বলছে, এনামুল হক দোলন ইতিমধ্যে দেশ-বিদেশে বিপুল অবৈধ সম্পদ গড়ে তুলেছেন। রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মার্কেটের জুয়েলারি দোকানকে কেন্দ্র করে দোলন অবৈধ সোনার ব্যবসার শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন। চোরাকারবারের মাধ্যমেই তিনি অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। ঢাকায় একাধিক বাড়ি ও ফ্ল্যাট ছাড়াও তার ব্যাংকে বিপুল অঙ্কের অর্থ রয়েছে।
দোলনের বাড়ি মনোহরদী উপজেলার কাঁচিকাটা গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সিঅ্যান্ডবি-পোড়াদিয়া আঞ্চলিক সড়কের খানবাড়ী বাসস্ট্যান্ডের পাশেই ২০ বিঘা জমির বাগানবাড়ি এনামুল হক খান দোলনের। পুরো জমিটাই সিমেন্টের পিলার ও নেট দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করা। এর ভেতর বিভিন্ন ফুল, ফলের গাছ লাগানো রয়েছে। একটু সামনে এগোতেই সাত বিঘার জমির ওপর অত্যাধুনিক বিলাসবহুল দ্বিতল ভবনের আলিশান বাড়ি। পাঁচ তারকা মানের এ অভিজাত বাড়িটিই খানবাড়ি হিসেবে পরিচিত। এ বাড়িটি নির্মাণের জন্য যাবতীয় ফিটিংসহ গৃহসজ্জার উপকরণ আনা হয় দুবাই ও ইতালি থেকে। সেখানে প্রায় ১০-১২ বছর ধরে কাজ করেন রোসেনা বেগম ও চার বছর ধরে কাজ করছেন নাছিমা বেগম।
তারা বলেন, ‘স্যারে তো এলাকায় বেশি আসে না। আমরাই বাড়িঘর দেখাশোনা করে রাখি। তিনি আগে এলাকার লোকজনকে দান-খয়রাত করতেন। তবে কয়েক বছর ধরে মসজিদ-মাদ্রাসা ছাড়া কোনো সহযোগিতা করেন না।’
এদিকে এনামুল হক দোলনের বাবা আফাজ উদ্দিন খান লুলু রাজাকার ছিলেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। সরেজমিনে জানা যায়, মনোহরদী উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসনাত বাচ্চু, রফিকুল ইসলাম সরকার, ইয়াকুব আলীসহ ১৬২ জন মুক্তিযোদ্ধা লিখিত আবেদন করেন আফাজ উদ্দিন খান লুলুকে রাজাকারের তালিকাভুক্তিকরণের জন্য। আফাজ উদ্দিন খান লুলু রাজনৈতিক জীবনে প্রথমে মুসলীম লীগ করতেন। পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর জিয়ার শাসনামলে ১৯৭৮ সালে স্থানীয় চালাকচর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে জিয়াউর রহমানের হাতে ফুল দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগদান করেন। সে বছরই তিনি বিএনপিদলীয় ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে মনোহরদী-বেলাব থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হয়। পরে ১৯৮৩ সালে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করে ১৯৮৫ সালে মনোহরদী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ সালে তিনি মারা যাওয়ার পর থেকে তার ছেলে এনামুল হক খান দোলন বিএনপির পৃষ্ঠপোষকতা করেন। তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক কার্যনির্বাহী সদস্যও ছিলেন। আর বিএনপির শাসনামল থেকে তিনি সোনা চোরাচালানের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন।
স্থানীয়রা যা বলছেন : এনামুল হক খান দোলনের চাচাতো ভাই মনোহরদী উপজেলা চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম খান বীর, তার ভাতিজা স্থানীয় কাচিকাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোবারক হোসেন খান কনক। স্থানীয়ভাবে তারা বেশ প্রভাবশালী হওয়ায় এলাকাবাসী অনেক কিছু জানলেও প্রকাশ্যে তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে নারাজ।
মুক্তিযুদ্ধকালীন গ্রুপ কমান্ডার মো. রফিকুল ইসলাম সরকার বলেন, আমি দুটি সেকশনের দায়িত্ব ছিলাম। তখন তিনজনকে হত্যা করার নির্দেশনা ছিল। এর মধ্যে আফাজ উদ্দিন লুলু খানের নামও ছিল। কোনোভাবে বুঝতে পেরে গোপনে সে পালিয়ে যায়। পরে ১৯৭৫ সালে সে দেশে ফিরে আসে। মনোহরদী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মতিউর রহমান তারা বলেন, লুলু খান যখন রাজাকারের তালিকায় তখন আমি ভারতে ছিলাম। তার ছেলে দোলন খান যে চোরাকারবারের সঙ্গে জড়িত তা আমরা শুনেছি। জড়িত থাকলে তার বিচার দাবি করছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মুক্তিযোদ্ধা বলেন, আজকে আওয়ামী লীগের শাসনামলে একজন রাজাকারের সন্তান যদি ব্যবসায়ীদের নেতৃত্ব দেয়, তাহলে এই স্বাধীন দেশের জন্য আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছি তারা ভীষণ কষ্ট পাই।
মনোহরদী প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী শরীফুল ইসলাম শাকিল বলেন, এনামুল হক খান দোলন একজন রাজাকারের সন্তান। তিনি স্বর্ণ চোরাচালানের মাধ্যমে দেশ-বিদেশে নামে-বেনামে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। আমরা চাই তার বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও দুদকের লোকজন তদন্ত করলেই সব বেরিয়ে আসবে।
কাচিকাটা ফুরির টেকের স্থানীয় বাসিন্দা ফজলুল হক বলেন, শুনেছি ঢাকায় তার স্বর্ণের ব্যবসা। সেটা বৈধ নাকি অবৈধ জানি না। তবে বৈধ টাকা দিয়ে এত সম্পদের মালিক হওয়া যায় না সেটা আমরা জানি।’
স্থানীয় আবদুল কাদির বলেন, শুনেছি তার নাকি ঢাকার পাশাপাশি দুবাইতে স্বর্ণের দোকান রয়েছে। এত সম্পদের মালিক তিনি কীভাবে হয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা খোঁজ নিলেই সব বেরিয়ে আসবে।’
দোলন খানের পাশের বাড়ির হাসনারা বেগম বলেন, স্বর্ণের ব্যবসা বৈধ নাকি অবৈধ সেটা জানি না। তারা এলাকায় স্কুল, কলেজ, মসজিদসহ অনেক সহায় সম্পদ করেছেন। আগে এলাকায় খরচ করলেও এখন বেশি করেন না। এই বাড়িতে আসেন তবে বেশি না।’
অধরাই ছিলেন দোলন : মূলত দুবাই ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট দোলনের বিরুদ্ধে সোনা চোরাকারবার এবং সিন্ডিকেটে জড়িত থাকার তথ্য দেয়। কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, দুবাই এবং সিঙ্গাপুর সিন্ডিকেটের সহায়তায় দেশ দুটি থেকে বাংলাদেশে আগমনকারী বিভিন্ন যাত্রীর মাধ্যমে স্বর্ণ ও স্বর্ণালংকার দেশে পাঠান দোলন। বিধিবহির্ভূতভাবে মূল্য পরিশোধসহ বিদেশে অর্থ পাচার করেন। চোরাচালানের রহস্য উন্মোচনের জন্য দোলনকে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মজুদ সব স্বর্ণের হিসাব নিয়েছে সংস্থাটি। এর মধ্যে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। গত ডিসেম্বরে দোলনসহ তার স্ত্রী, পুত্র ও কন্যার ব্যাংক হিসাব তলব করেছিল।
তবে চোরাচালানে জড়িত এনামুল হক খান দোলনকে দীর্ঘদিন ধরে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হলেও কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে তিনি খুব সহজেই চালিয়ে যান সোনা চোরাকারবার। সূত্র জানায়, আশকারা পেয়ে দোলন হয়ে ওঠেন সোনা চোরাকারবার চক্রের অন্যতম হোতা। তার নেতৃত্বে বিভিন্ন দেশ থেকে দেশে সোনা ঢুকেছে। তা আবার বেরিয়ে গেছে মুহূর্তেই। মূলত বাংলাদেশকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করে তা পাচার হচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে।
বৈশাখের আগের এ তাপপ্রবাহে উঁকি দিচ্ছে স্বাধীনতার পর দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড। প্রায় এক সপ্তাহ ধরেই দেশের দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলে প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা মানুষের। দেশের সাত বিভাগে এখন বয়ে যাচ্ছে মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রার তাপপ্রবাহ। তবে গতকাল দেশের সাত জেলায় বয়ে গেছে তীব্র তাপপ্রবাহ। ওইসব জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা ছিল ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘর। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আগামী কয়েক দিন দেশের বেশির ভাগ এ তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে। শুধু তা-ই নয় কিছু কিছু এলাকায় বয়ে যেতে পারে চরম তাপপ্রবাহ।
তাপমাত্রা যদি ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে, তবে তাকে বলা হয় মাঝারি তাপপ্রবাহ। আর তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকলে তা হয় তীব্র তাপপ্রবাহ। ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা হলে তা হয় চরম তাপপ্রবাহ।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গতকাল ফরিদপুরের তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রাজশাহীতে ৪০ দশমিক ৫, পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪০ দশমিক ৫, মোংলা ৪০ দশমিক ৮, যশোরের ৪০ দশমিক ৪, চুয়াডাঙ্গায় ৪১ এবং কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গা ও রংপুর বিভাগের দু-এক জায়গা ছাড়া দেশের প্রায় সব জেলার তাপমাত্রাই ছিল ৩৫ থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে।
গতকাল আবহাওয়া অধিদপ্তর-পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলেছে, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এবার বাতাসের আর্দ্রতা স্বাভাবিকের তুলনায় কম। তাই গরমের কারণে মানুষের কষ্ট বেড়েছে। শুষ্ক হাওয়ায় গরমের সঙ্গে শরীর জ্বালাপোড়া এবং ঠোঁট ও চামড়া ফেটে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন মানুষজন।
আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, এবার বছরের এ সময় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় স্থানভেদে ৩০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কম। আকাশে মেঘ সৃষ্টি ও ভেসে আসার সম্ভাবনাও কম। ফলে একদিকে তাপমাত্রা বাড়ছে, অন্যদিকে আর্দ্রতার কারণে কষ্ট আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ পরিস্থিতি আরও কয়েক দিন চলতে পারে।
এদিকে চুয়াডাঙ্গায় মাঝারি থেকে এবার তীব্র তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে চলতি মৌসুমে ২ এপ্রিল থেকে একটানা চুয়াডাঙ্গাতেই দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। একটানা তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় হিট স্ট্রোক, হৃদরোগ, ডায়রিয়া, শিশুদের নিউমোনিয়াসহ গরমজনিত রোগবালাই বেড়ে গেছে। চুয়াডাঙ্গায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ তেমন বাইরে বের হচ্ছেন না।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গতকালই চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। গত বছরের ২৪ ও ২৫ এপ্রিল জেলায় ওই বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ বছর ১১ দিন আগেই গত বছরের রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলেছে। গত বছরের ১৩ এপ্রিল এ জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ছিল ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান জানান, গতকাল তাপমাত্রার পারদ আগের দিনের তুলনায় ১ দশমিক ৩ ডিগ্রি বেড়ে ৪১ ডিগ্রিতে উঠে গেছে। শুরু হয়েছে তীব্র তাপপ্রবাহ। আগামী বুধবার পর্যন্ত তাপমাত্রা বাড়তে থাকবে। চলতি সপ্তাহেই তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রিতে পৌঁছাতে পারে।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
রাজধানীর বনানীর একটি রেস্তোরাঁ থেকে জামায়াতে ইসলামীর বনানী শাখার ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তাদের মধ্যে বনানী থানা জামায়াতের আমির তাজুল ইসলাম এবং সেক্রেটারি আব্দুর রাফি রয়েছেন।
বনানী থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওয়ারলেস গেটে অবস্থিত নবাবী রেস্টুরেন্টে গোপন মিটিং করাকালে বনানী থানা জামায়াতে ইসলামী আমির তাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রাফিসহ ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
আটক ১০ জনের মধ্যে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাও রয়েছেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) হলের আসন দখল করে রাখার বিরুদ্ধে অনশনরত ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম প্রত্যয়সহ তাকে সমর্থন দেওয়া কয়েকজনের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ।
মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।তারা বলেন, ওই স্থানে গত বুধবার রাত থেকে অনশনে ছিলেন প্রত্যয়। তাকে মারধরের পর অ্যাম্বুলেন্সে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যায় হামলায় জড়িতরা। এ সময় প্রত্যয়ের দাবির সঙ্গে সংহতি জানানো প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের ওপরও হামলা হয়।
জানা গেছে, তিন দাবিতে গত বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনের খেলার মাঠে অনশনে বসেন প্রত্যয়। তিনি ওই হলের আবাসিক ছাত্র। তার অন্য দুটি দাবি ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল থেকে অছাত্রদের বের করা ও হলের গণরুমে অবস্থান করা বৈধ ছাত্রদের আসন নিশ্চিত করা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী এবং নবীন শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছিলেন। ওই সময় ক্যাম্পাসে লোডশেডিং চলছিল। হঠাৎ করেই প্রত্যয়সহ তার সঙ্গে থাকা অন্যদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
হামলায় জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচী, মার্কেটিং বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের সৃষ্টি, চারুকলা বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের মনিকা, বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের ৪৮তম ব্যাচের সুরসহ আরও কয়েকজন আহত হন বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যমতে, হামলায় ৩০ থেকে ৪০ জন অংশ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। অভিযুক্তদের কয়েকজন হলেন ছাত্রলীগ নেতা ও রসায়ন বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী গৌতম কুমার দাস, তুষার, ফেরদৌস, নোবেল, গোলাম রাব্বি, মুরসালিন, মুরাদ, সোহেল, তানভীর, রায়হান, রাহাত, সৌমিক, তারেক মীর, সজীব ও নাফিস।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী জানান, আমরা যারা প্রত্যয়ের সঙ্গে ছিলাম তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর প্রত্যয়কে দেখতে চিকিৎসক এসেছিলেন। তখন তারা অ্যাম্বুলেন্সের ওপর হামলা করে সেটি ফিরিয়ে দেয়। প্রক্টরকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি আসেননি। একাধিক ছাত্রীর দিকেও চড়াও হয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মীর মশাররফ হোসেন হলের এক শিক্ষার্থী অসুস্থ এমন একটি ফোনকল পেয়ে তারা অ্যাম্বুলেন্স পাঠায়। তবে কে কল দিয়েছিল সে সম্পর্কে চিকিৎসা কেন্দ্রের কেউ বলতে পারেননি।
তবে যে ফোন নাম্বার থেকে কল দেওয়া হয়েছিল সেটিতে যোগাযোগ করে দেখা যায় নাম্বারটি শাখা ছাত্রলীগের নেতা গৌতম কুমার দাসের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ১৫ হাজার শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না। দরকার হলে আমি পদত্যাগ করব।
এদিকে হামলার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে রাতেই বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মিছিল নিয়ে তারা এ রাত পৌনে ১টায় প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান করছেন।
তবে অনশনরত শিক্ষার্থী সামিউলের ওপর হামলারে পেছনে ছাত্রলীগের কোনো হাত নেই বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেলের। তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি, মীর মশাররফ হোসেন হলের অনশনরত ওই শিক্ষার্থীর ওপর হামলা হয়েছে। তবে সেটা সাধারণ শিক্ষার্থীরা করেছে। সেখানে ছাত্রলীগের একজনও জড়িত নয়।’
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে খরচ বাড়ছে। কোনো যাত্রী আকাশপথে ভ্রমণ করলেই তাকে দিতে হবে ২০০ টাকার কর। একই সঙ্গে বিদেশগামী বিমানযাত্রীদের কর ৬৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শেষ (২০২৩-২৪ অর্থবছর) বাজেট উপস্থাপনকালে এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এদিকে পর্যটন খাত ও বিমানবহর সম্প্রসারণ ও বিমানবন্দর উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে।
পর্যটন খাত : অর্থমন্ত্রীর তার
বক্তৃতায় বলেন, ডলার সাশ্রয়ের জন্য অপ্রয়োজনীয় বিদেশ ভ্রমণ হ্রাস করা, কৃচ্ছ্রতার অভ্যাস গড়ে তোলা এবং নতুন রাজস্ব আয়ের খাত তৈরি করতে সার্কভুক্ত দেশগুলোতে ভ্রমণ কর ৬৭ শতাংশ বাড়িয়ে ২ হাজার, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যাওয়ার ক্ষেত্রে ৩৩ শতাংশ বেড়ে ৪ হাজার এবং অন্যান্য দেশে ৫০ শতাংশ বেড়ে ৬ হাজার টাকা ভ্রমণ কর দিতে হবে।
পর্যটন খাত নিয়ে ব্যাপক পরিকল্পনা : অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় আরও বলেছেন, পর্যটন খাতকে সমৃদ্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক মানের আবাসন ও বিনোদন সুবিধা নিয়ে কক্সবাজার জেলায় সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, নাফ ট্যুরিজম পার্ক এবং সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কভিড-১৯ মহামারীর সময় দেশের পর্যটনশিল্প মারাত্মক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে এ শিল্পকে সহায়তা করার জন্য সরকার ১ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছে। বাংলাদেশে পর্যটন সম্ভাবনাময় এলাকাগুলোতে উন্নয়নে সরকারি অর্থায়নে ১০টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন আছে। পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে একটি পর্যটন মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পর্যটনের উন্নয়ন ও বিকাশের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে ৩৬টি জেলার পর্যটন ব্র্যান্ডিং অনুসারে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার পর্যটন এলাকার ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সৌন্দর্য বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত আকর্ষণীয় পর্যটন স্থানগুলো সংরক্ষণে এবং পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর অবদান বিষয়ে ডকুমেন্টারি ও টেলিভিশন কমার্শিয়াল প্রস্তুত করা হচ্ছে।
বিমানবহর সম্প্রসারণ ও বিমানবন্দর উন্নয়ন : অর্থমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, সরকার দেশে আন্তর্জাতিক মানের বিমান পরিবহনব্যবস্থা গড়ে তুলতে নানাবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। আকাশপথে যাত্রীদের চাহিদা বিবেচনায় চলতি বছরে মালদ্বীপ ও কানাডার টরন্টোতে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট চালু করা হয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের
তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণকাজ ২০২৩ সালের মধ্যে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বর্তমানে দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই কাজ চলছে। কক্সবাজার বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করার লক্ষ্যে রানওয়ে সম্প্রসারণ ও নতুন টার্মিনাল ভবন নির্মাণকাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করে সেখানে একটি আঞ্চলিক হাব গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রকল্প প্রণয়ন করা হচ্ছে। তাছাড়া দেশের অন্যান্য অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অবকাঠামো, রানওয়ে, ট্যাক্সিওয়ে, হ্যাঙ্গার ও আমদানি-রপ্তানি পণ্য সংরক্ষণের শেডগুলো সংস্কার ও উন্নয়নসাধনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।