
বঙ্গবাজার ও নিউ সুপার মার্কেটের সাম্প্রতিক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর রাজধানী ঢাকার ৫৮টি বিপণিবিতানকে অগ্নিদুর্ঘটনার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে তালিকাভুক্ত করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। এর মধ্যে গাউছিয়া মার্কেটসহ ৯টি মার্কেটকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ছাড়া ১৪টি মার্কেটকে মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ এবং ৩৫টি মার্কেটকে ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায় রাখা হয়েছে। গতকাল রবিবার ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অধিদপ্তরটির পরিচালক (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী এসব তথ্য জানান।
ফায়ার সার্ভিসের জরিপে অতি ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটের তালিকায় গাউছিয়া মার্কেট ছাড়াও রয়েছে চকবাজারের উর্দু রোডের শহীদুল্লাহ মার্কেট, একই এলাকার শাকিল আনোয়ার টাওয়ার, রাজধানী ও নিউ রাজধানী সুপার মার্কেট, ফুলবাড়িয়ার বরিশাল প্লাজা, লালবাগের আলাউদ্দিন মার্কেট, শরীফ মার্কেট, সিদ্দিকবাজারের রোজ ভিস্তা এবং সদরঘাটের মায়া কাটারা।
সংবাদ সম্মেলনে লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম বলেন, ‘যেসব মার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ আমরা তাদের চিঠি দিচ্ছি। আমরা বারবার সতর্ক করে যাচ্ছি। এমনকি সম্প্রতি আগুন লাগা নিউ সুপার মার্কেটকেও সতর্ক করে ১০টির মতো চিঠি ইস্যু করা হয়েছিল। তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার আমাদের নেই। যারা ভবন নির্মাণের অনুমতি দেন, এটার তদারকি ও ব্যবস্থা নেওয়া তাদের বিষয়।’
ফায়ার সার্ভিসের এই পরিচালক আরও বলেন, ‘মার্কেটের ব্যবসায়ী ও মালিক সমিতিকে আমরা বলতে চাই, আপনারা মার্কেটের বিভিন্ন পয়েন্টে সারা রাত নিজস্ব লোক নিয়োগ দিন। এতে করে যে শুধু নাশকতা রোধ করা যাবে তা নয়, বর্তমানে দেশের তাপমাত্রা বেশি, যদি অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে মার্কেটের কোনো দাহ্যপদার্থে আগুন লাগে, তারা প্রাথমিকভাবে আগুন নেভাতে কাজ করবে।’
বিল্ডিং কোড না মেনে ভবন তৈরি করা হয় উল্লেখ করে তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘মার্কেটের খালি স্থানে দোকান করা হয়, মালামাল রাখা হয়। নিয়মের কোনো তোয়াক্কা করা হয় না। মালিক ও ভবন কর্র্তৃপক্ষ কারও কথা শোনে না বলেই আগুন লাগলে তা নেভাতে কষ্ট হয়ে যায়।’
ফায়ার সার্ভিসের ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় থাকা ৩৫টি মার্কেটের মধ্যে রয়েছে কদমতলীর আলম সুপার মার্কেট, বুড়িগঙ্গা সেতু মার্কেট, খিলগাঁওয়ের খিলগাঁও সিটি করপোরেশন কাঁচা রাজার মার্কেট, তিলপাপাড়া মিনার মসজিদ মার্কেট, ডেমরার হাজি হোসেন প্লাজা, ইসলাম প্লাজা, নিউ মার্কেট, দোহারের আয়েশা শপিং কমপ্লেক্স, এ হাকিম কমপ্লেক্স, নবাবগঞ্জের শরীফ কমপ্লেক্স, মিরপুরের বাচ্চু মিয়া কমপ্লেক্স, ড্রিমওয়্যার, এশিয়ান শপিং কমপ্লেক্স, মুক্তিযোদ্ধা সুপার মার্কেট, ফেয়ার প্লাজা, মিরপুর রোডের গ্লোব শপিং সেন্টার, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, চাঁদনী চক মার্কেট, নিউ সুপার মার্কেট, নূরজাহান সুপার মার্কেট, নিউ মার্কেটের হজরত বাকু শাহ হকার্স মার্কেট, ইসলামিয়া বই মার্কেট, গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট, সিটি প্লাজা ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট, সিদ্দিকবাজারের হান্নান ম্যানশন, রোজ মেরিনস মার্কেট, দুকু টাওয়ার, তেজগাঁওয়ের শেপাল এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড, সিভিল ইঞ্জিনিয়ার লিমিটেড, নাসা মেইনল্যান্ড, মাওলানা মুফতি দীন মো. রোডের জাকারিয়া ম্যানশন, লালবাগের হাজি আবদুল মালেক ম্যানশন এবং ওয়ারীর ইপিলিয়ন হোল্ডিং লিমিটেড।
এ ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় ঢাকায় ভবন আছে ১ হাজার ৫১১টি। যেগুলোর মধ্যে মার্কেট, হোটেল, রেস্তোরাঁ ও আবাসিক ভবন রয়েছে।
উচ্চমূল্যস্ফীতির কারণে স্বল্প আয়ের মানুষদের আয়ের বড় অংশই চলে যায় খাবার কিনতে। সংসার চালাতে এই শ্রেণির এক-তৃতীয়াংশের বেশি মানুষ এখন ধার করে চলছে। এমন পরিস্থিতিতে এবারের ঈদে নি¤œ আয়ের বেশির ভাগ মানুষের নতুন কাপড় কেনার সামর্থ্য নেই। এতে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য যেসব মার্কেট রয়েছে, সেগুলোতে কাক্সিক্ষত বেচাকেনা নেই। তবে কিছুটা চাপে থাকা মধ্যবিত্ত কিংবা সংকটের আঁচ না পাওয়া উচ্চবিত্তদের কেনাকাটা থেমে নেই। তাদের পদচারণে শপিং মলগুলোতে ভিড় বাড়ছে অন্যান্য বছরের মতোই। ব্যবসায়ীদের দাবি, এ বছর ঈদের কেনাকাটা ৩০ শতাংশ কমেছে।
ঈদুল ফিতরের বাকি মাত্র কয়েক দিন। কিন্তু এ উৎসবের আগে সব সময়ই ব্যবসা ভালো করেন ব্যবসায়ীরা। এবারের আগুন আতঙ্কে ছোট ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত, বড় শপিং মলগুলোর ঈদের ব্যবসা স্বাভাবিক। যদিও পণ্যমূল্য বেশি থাকায় শপিং মলগুলোর ব্যবসায়ীরাও আগের বছরের তুলনায় বেচা-বিক্রি কম বলে দাবি করছেন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট ও শপিং মল সেজেছে নানান সাজে। ছেলেদের জন্য নতুন ডিজাইনের পাঞ্জাবি এবং মেয়েদের জন্য থ্রিপিস-টপস জিন্সের সংমিশ্রণে এসেছে নানা পোশাক। তবে উচ্চমূল্যস্ফীতির কারণে এবারের ঈদে বহুগুণে বিক্রি কমেছে। এর মধ্যে তুলনামূলকভাবে যমুনা ফিউচার পার্ক ও বসুন্ধরার মতো বড় শপিং মলগুলোর ব্যবসায়ীদের বেশি বিক্রি হলেও নিম্নমধ্যবিত্তদের জন্য গুলিস্তানের পীর ইয়ামিন ও মৌচাক মার্কেটের ব্যবসায়ীদের বিক্রি অন্যান্য বছরের তুলনায় অর্ধেকে নেমেছে।
গতকাল রবিবার বসুন্ধরা শপিং মল ও যমুনা ফিউচার পার্কের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, আগের বছরের চেয়ে সব ধরনের পোশাকে অন্তত ৩০০-৫০০ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে। এসব মার্কেটে এবার ঈদের বেচাকেনা অনেকাংশে কমেছে।
যমুনা ফিউচার পার্কের ‘ইয়োলোতে’ দীর্ঘ ৫ বছর বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করছেন আদ্রিয়ান। তার চোখে এবারের ঈদের বাজারে সব থেকে বিক্রি কম হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ইয়োলোর চাকরিজীবনে এ বছরে বিক্রির অবস্থা এতটা খারাপ দেখেছি। করোনার পরে যে বছর দোকান খুলেছে, সে বছরও এমন সময়ে দৈনিক পাঞ্জাবি বিক্রি হয়েছে মিনিমাম ৫০-৭০ হাজার টাকা। এবার সেই বিক্রি ঠেকেছে ৪০-৫০ হাজার টাকার মধ্যে। আমাদের শোরুমে ছেলেদের ঈদ পোশাকে পাঞ্জাবির বিক্রি ভালো। বাকি বিভাগগুলোর অবস্থা খারাপ যাচ্ছে। এবারের ঈদের বেচাকেনা কেবল যে আমাদের একার খারাপ যাচ্ছে তা-ই নয়, পুরো মার্কেকেটর ব্যবসায়ীদের অবস্থা একই।’
উত্তরা থেকে আসা আকরাম-ফতেমা দম্পতি বলেন, ‘এবার পোশাকের মূল্য আমাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। অস্বাভাবিকভাবে পোশাকের দাম বেড়েছে। গত বছর পরিবারের সবার জন্য ঈদের পোশাক কিনতে খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। এবার সেই বাজেটে অর্ধেক মানুষের জন্য পোশাক ক্রয় করতে কষ্ট হচ্ছে।’
মার্কেট ব্যবধানে এবার সব ধরনের ঈদপোশাকে গড়ে ৩০-৫৫ শতাংশ পর্যন্ত দাম বেড়েছ। এর মধ্যে গতবার ১৪০০ টাকায় বিক্রি হওয়া কটন কাপড়ের পাঞ্জাবি এবার বিক্রি হচ্ছে ১৮০০-১৯০০ টাকায়, সব ধরনের শার্টে বেড়েছে ৩০০-৪০০ টাকা, ৫০০ টাকার পোলো শার্ট বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৬৫০ টাকা, জিন্স প্যান্ট বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকা এবং সব থেকে বেশি মেয়েদের শাড়ি ও থ্রি-পিসের দাম ১ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
বসুন্ধরা শপিং মলের কয়েকজন বিক্রয়কর্মী জানান, ছুটির দিনগুলোতে একটু ভালো হলেও অন্য বছরের হিসাবে এবার বিক্রি কমেছে অন্তত ৩০ শতাংশের মতো। তারা আশা করছেন ঈদের আগে বেচাকেনা বাড়বে।
তবে ছোট মার্কেটগুলোর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, শিপমেন্ট ও ইয়ার ভাড়া বেশি হওয়ায় এবার ঈদের পোশাকের দাম অনেক বেড়েছে। পাইকারিতেই ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা বেড়ে মেয়েদের একটি টপস বিক্রি হচ্ছে ১৫০০-২০০০ টাকা, সায়রা থ্রিপিস বিক্রি হচ্ছে ৩-৪ হাজার টাকা, ন্যারাকাট বিক্রি হচ্ছে ৫-৬ হাজার টাকা ও লেহেঙ্গা ৬-৭ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।
গুলিস্তানের পীর ইয়ামিন ও মৌচাক মার্কেটে খবর নিয়ে জানা যায়, এবারের ঈদবাজারে দেশীয় পোশাকের পাশাপাশি ভারত, পাকিস্তান ও চীন থেকে আমাদানি করা ঈদপোশাক মার্কেট দখল করেছে। ব্যবসায়ীরা একেক দোকানে ২০ লাখ থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করেছেন আমাদানিকৃত পোশাকের ওপর। বসুন্ধরার মতো অভিজাত শপিং মলের তুলনায় এসব মার্কেটে বিক্রি অনেক কম। তবে নারীদের জন্য আমদানিকৃত পোশাকের মধ্যে গয়ারা, সারারা, লেহেঙ্গা, নায়নাসহ নানান পোশাকের চাহিদা রয়েছে।
গত শনিবার রাত ৮টার দিকে পীর ইয়ামিন মার্কেটের কোয়ালিটি কালেকশনের স্বত্বাধিকারী জয় বলেন, ডলারের মূল্য বেশি থাকায় পোশাক আমাদানি করতে এবার বাড়তি খরচ হয়েছে। নতুন করে ইয়ার ভাড়া যুক্ত হওয়া। সব মিলিয়ে এ বছর কিছুটা বাড়তি দামেই ঈদের পোশাক বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘গত বছর গুলিস্তানের ফুটপাতে বসেই দৈনিক ৫০ হাজার টাকা সেল করতে পেরেছি। এবারে তার অর্ধেকও বিক্রি করতে পরছি না। সাধারণ ক্রেতারা দাম শুনেই দোকানের বাইরে থেকে চলে যান। এবারে সর্বোচ্চ ২৩ রোজায় ১৯ হাজার টাকার মাল বিক্রি করেছি।’
একই মার্কেটের আরেক ব্যবসায়ী পারুল বস্ত্রালয়ের মালিক আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘এই সময়ে মার্কেটে সব থেকে বেশি ভিড় থাকার কথা। সারা বছর যা ব্যবসা হয় ঈদকে কেন্দ্র করে এর থেকে বেশি বিক্রি হয়। কিন্তু এবার ৩০ লাখ টাকার শাড়ি-থ্রিপিস তুলে অলস সময় পার করছি।’
মোহাম্মদ নাজমুল আলম নামের এক ক্রেতা বলেন, ভেবেছিলাম এই সময়ে মার্কেটে প্রচন্ড ভিড় থাকবে। এসে দেখছি একদম লোকজন নেই বললেই চলে। বর্তমানের চিত্র যা রয়েছে, তা বছরের অন্যান্য স্বাভাবিক সময়ের মতো। কিন্তু ঈদের কেনাকাটা করতে এসে দেখছি পোশাকের দাম অনেক বেড়েছে। বাজেটের সঙ্গে মিল না থাকায় উপহারের পোশাক কম কিনতে হয়েছে।
জামদানির আঁতুড়ঘর হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের নোয়াপাড়া বিসিক শিল্প নগরীর জামদানি পল্লী। যেখানে জামদানি উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত প্রায় পাঁচ হাজার তাঁতি। গত কয়েক বছরে করোনা মহামারীসহ বিভিন্ন কারণে জামদানি শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হলেও আসছে ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে এখানকার জামদানি শিল্প। ঈদকে সামনে রেখে তাঁতিদের যেন দম ফেলারও ফুরসত নেই।
তবে এবার জামদানি পল্লীতে সরাসরি আসা ক্রেতার চেয়ে অনলাইনে শাড়ি বিক্রি বেশি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তাঁতিরা। ই-কমার্সের মাধ্যমে এবং সরাসরি শাড়ি কিনতে আসা ক্রেতাদের কাছে মিলিয়ে এই ঈদে প্রায় ৫০ কোটি টাকার শাড়ি বিক্রির লক্ষ্য রয়েছে ব্যবসায়ীদের। রূপগঞ্জের জামদানি এসে নিয়ে যাচ্ছেন দেশের দূর-দূরান্ত থেকে আসা ক্রেতারা। এছাড়া প্রায় ১০ কোটি টাকা সমমূল্যের জামদানি ভারত, ভুটান, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হবে বলে আশা করছেন তাঁতি ও কারখানা মালিকরা। এতে আয় হচ্ছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা।
তাঁতিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জামদানি শাড়ির হরেক রকমের নকশা হয়ে থাকে। তার মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয়গুলো হলো- পান্না হাজার, তেরছা, পানসি, ময়ূরপঙ্খী, বটতপাতা, করলা, জাল, বুটিদার, জলপাড়, দুবলী, ডুরিয়া, বলিহার, কটিহার ও কলকাপাড়।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, খটখট শব্দে মুখরিত হয়ে আছে রূপগঞ্জের জামদানি পল্লী। শ্রমিকরা কাজের সময় স্পিকারে বাজাচ্ছে গান। সেই গান শুনতে শুনতে মনের আনন্দে কাজ করছে জামদানি পল্লীর তাঁতিরা। আর মাত্র কয়েক দিন পরই ঈদুল ফিতর, আর তাই জামদানি পল্লীর প্রায় প্রত্যেকটি ঘরেই চলছে জামদানি শাড়ি তৈরির কাজ। মনের মাধুরী মিশিয়ে তাঁতিরা তৈরি করছে নানা নকশার জামদানি শাড়ি। জামদানি পল্লীর ভেতরের দোকানগুলোতে পাইকারি ও খুচরা ক্রেতাদের ভিড় ছিল বেশ। পল্লীর ভেতরেই রয়েছে জামদানি বিক্রির ১২টি শোরুম। যেখান থেকে পাইকারি ও খুচরা ক্রেতাদের পছন্দমতো নান্দনিক বিভিন্ন নকশার জামদানি কিনে নিয়ে যেতে দেখা যায়। আগে তাঁতিরা শুধুমাত্র জামদানি শাড়ি তৈরি করলেও বতর্মানে জামদানি দিয়ে পাঞ্জাবি, থ্রি-পিস, টু-পিস ও বাচ্চাদের বিভিন্ন ধরনের পোশাক তৈরি করা হচ্ছে। এতে করে জামদানির জনপ্রিয়তা দিন দিন আরও বাড়ছে। তবে ক্রেতারা হতাশা প্রকাশ করেন জামদানি পল্লীর পরিবেশ নিয়ে। তাদের অভিযোগ, রাস্তাঘাটের বেহালদশা আর ঘিঞ্জি পরিবেশ পল্লীর সৌন্দর্য অনেকটাই ম্লান করছে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে পল্লীর তাঁতি ও দোকান মালিকদের প্রায় সবারই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পেইজ রয়েছে। ঈদকে সামনে রেখে সেই পেইজের মাধ্যমেই তারা শাড়ি বিক্রি করে চলেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ই-কমার্সে বেশ সাড়াও পাচ্ছেন তাঁতিরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রোফাইল তৈরি করে পেইজ খুলে নিজেদের তৈরি শাড়ির ছবি আপলোড করে মূল্য লিখে দিচ্ছেন তারা। যাদের পছন্দ হচ্ছে অগ্রিম কিছু টাকা দিয়ে শাড়ি হাতে পাওয়ার পর বাকি টাকা দিচ্ছেন। তাঁতিদের শাড়িগুলো কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পৌঁছে যাচ্ছে। একেকটি শাড়ি ২ হাজার থেকে শুরু করে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে। এছাড়া তাঁতিদের কাছ থেকে জামদানি কিনে অনেকে আবার অনলাইনে বিক্রি করেও বেশ মুনাফা করছেন।
পল্লীর বিসমিল্লাহ জামদানি ঘরের মালিক আসিফ বলেন, ‘গত কয়েক বছর জামদানির বাজার খারাপ গেলেও এ বছর থেকে বাজার চাঙ্গা হতে শুরু করেছে। বিক্রি বেড়েছে বহু গুণ। আগে শাড়ি বিক্রি করে তাঁতিদের মজুরি দিতে হিমশিম খেতে হলেও বর্তমানে বেশ ভালোভাবেই তা দিতে পারছি। বর্তমানে দোকানে বিক্রি অনেক কমে গেলেও ঈদকে সামনে রেখে অনলাইনে শাড়ি খুব ভালো বিক্রি হচ্ছে।’
সোহাগ জামদানি ঘরের মালিক সোহাগ জানান, তার বাবা নজরুল ইসলাম গত ২০ বছর ধরে জামদানির সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন। পল্লীতে তার বাবার দোকানও রয়েছে। তিনি সরকারি মুড়াপাড়া কলেজে স্নাতকে লেখাপড়া করছেন। এর পাশাপাশি গত বছর সোহাগ জামদানি নামে ফেসবুকে একটি পেইজ খুলেন। সেখানে নিয়মিত জামদানি শাড়ির ছবি আপলোড করতে থাকেন। কয়েক মাস যেতে না যেতেই দোকানের পাশাপাশি অনলাইনেও জামদানি শাড়ি বিক্রি হতে থাকল অনেক। ঈদকে সামনে রেখেও পেইজে শাড়ি বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে।
রূপগঞ্জের জামদানি পল্লী থেকে জামদানি কিনে অনলাইনে বিক্রি করেন সামিরা আক্তার মিতু। ‘কুসুম ফুল জামদানি’ নামে তার ফেসবুক পেইজ রয়েছে। লেখাপড়া শেষ করে চাকরির পাশাপাশি অনলাইনে জামদানি বিক্রি করছেন। এতে সাড়াও পাচ্ছেন বেশ।
এদিকে জামদানির কারিগরদের অভিযোগ, গত কয়েক বছর বাজার মন্দার অজুহাতে তাঁতকল মালিকরা শ্রমিকদের মজুরি বাড়ায়নি। কিন্তু এ বছর জামদানির বাজার অনেকটাই ভালো। কিন্তু তারপরও কারিগরদের মজুরি তেমন বাড়ানো হয়নি। শাড়ির দাম বাড়লেও তাঁতকল মালিকরা তাদের মজুরি বাড়াননি। যে কারণে অনেক কারিগর পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন। অবশ্য তাঁতকল মালিকদের দাবি, বিক্রি বাড়লেও সুতার দাম ও রক্ষণাবেক্ষণসহ বিভিন্ন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। তাই কারিগরদের মজুরিও তেমন একটা বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না।
ঈদের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি থাকলেও বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ, বেপজা ও পাটকলসহ অন্যান্য কল-কারখানার মাত্র ১৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ শ্রমিক-কর্মচারী এখন পর্যন্ত বোনাস পেয়েছেন। এ হিসাবে ৮২ দশমিক ২৭ শতাংশ শ্রমিক-কর্মচারীর ভাগ্যে এখনো বোনাস মেলেনি। গত ১৩ এপ্রিল বাংলাদেশ শিল্প পুলিশের দেওয়া এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারা দেশে ৯ হাজার ৬১৬ শিল্প-কারখানার মধ্যে ১ হাজার ৭০৫টি কারখানার বোনাস পরিশোধ করা হয়েছে এবং বকেয়া রয়েছে ৭ হাজার ৯১১টি কারখানা শ্রমিকদের বোনাস। তবে এ নিয়ে বড় ধরনের কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কা নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রতিবেদনে ওইসব কারখানায় শ্রমিকদের বোনাস পরিশোধে দ্রুতই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে চলতি মাসের শুরুতে ৫ এপ্রিল ঈদের ছুটির আগেই বেতন ও বোনাস পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু এখনো পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। এরইমধ্যে ধাপে ধাপে অনেক কারখানায় আগাম ছুটি দেওয়া হয়েছে। কিš‘ তারা এখনো বোনাস পায়নি বলে অনেকে দাবি করেছেন।
জানতে চাইলে শিল্প পুলিশের প্রধান ও অতিরিক্ত আইজিপি মাহাবুবর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত সপ্তাহ পর্যন্ত বকেয়া বোনাসের তালিকা দীর্ঘ ছিল। আশা করছি, ঈদের আগে তা কমে আসবে। তবে এটা নিয়ে কোনো পক্ষ যেন চক্রান্ত করতে না পারে সেদিকেখেয়াল রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি দ্রুত বেতন-বোনাস পরিশোধের জন্য মালিকপক্ষের সঙ্গেও শিল্প পুলিশ কথা বলছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানায়, গত ৫ এপ্রিল বুধবার রাজধানীর শান্তিনগরে শ্রম অধিদপ্তর, শ্রমিক ও মালিকপক্ষের গঠিত ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে শিল্প পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, সারা মাস চাকরি করার পর যদি ঈদের আগে শ্রমিকরা বেতন-ভাতা না পান, তবে এ থেকে উদ্ভূত পরিস্থিতি কারও পক্ষে সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। তাই মালিকরা সময়মতো বেতন-ভাতা দেবেন বলে আশা করি। যাতে সবাই ঈদ ভালোভাবে কাটাতে পারে। এ ঘটনার পর গত ১৩ এপ্রিল শিল্প পুলিশের পক্ষ থেকে একটি প্রতিবেদন সরকারের উচ্চ পর্যায়ে পাঠানো হয়। সেখানে দেখা গেছে ৮২ দশমিক ২৭ শতাংশ শ্রমিক-কর্মচারীর ভাগ্যে এখনো বোনাস মেলেনি। অর্থাৎ সারা দেশে ৯ হাজার ৬১৬ কারখানার মধ্যে ১ হাজার ৭০৫টি কারখানার বোনাস পরিশোধ করা হয়েছে এবং বকেয়া রয়েছে ৭ হাজার ৯১১টি কারখানা শ্রমিকদের বোনাস।
শিল্প পুলিশের দেওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইপি-১ (ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ-১) ইউনিটের অধীনে বিজিএমইএর ৪৪২টি কারখানার মধ্যে ১৫টিতে বোনাস পরিশোধ করা হয়েছে। বকেয়া রয়েছে ৪৭২টি। আইপি-২ ইউনিটের অধীনে ৭৫৯টি কারখানার মধ্যে ৩১টির বোনাস পরিশোধ করা হলেও বকেয়া রয়েছে ৭২৮টির। আইপি-৩ ইউনিটের ২৭০টি কারখানার মধ্যে ৫৮টি বোনাস পরিশোধ এবং ২১২টির বকেয়া রয়েছে। আইপি-৪ ইউনিটের আওতাধীন ৮৩টি কারখানার মধ্যে ১৬টির বোনাস পরিশোধ এবং ৬৭টির বকেয়া রয়েছে। একইভাবে আইপি-৫ ইউনিটের ৬০টির মধ্যে ১৫টির পরিশোধ এবং ৪৫টির বকেয়া, আইপি-৬ এর ১১টির মধ্যে ৪টির পরিশোধ এবং ৭টির বকেয়া এবং আইপি-৮ এর ৬টির মধ্যে ৬টির বোনাস পরিশোধ করা হয়েছে। এ হিসাবে বিজিএমইএর মোট ১ হাজার ৬৩১টি কারখানার মধ্যে ১৪৫টি কারখানার বোনাস পরিশোধ করেছে মালিক কর্তৃপক্ষ। বোনাস বকেয়া রয়েছে মোট ১ হাজার ৪৮৬টি কারখানার। অর্থাৎ ৯১ দশমিক ১১ শতাংশ কারখানার বোনাস বকেয়া রয়েছে। বিকেএমইর ৭০০ কারখানার মধ্যে ৭৮টি কারখানার বোনাস পরিশোধ করা হলেও বকেয়া রয়েছে ৬২২টির। এ হিসাবে বোনাস বকেয়া রয়েছে বিকেএমইএর ৮৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ কারখানার। বিটিএমএর মোট ৩৫৮টি কারখানার মধ্যে মাত্র ৪৮টি কারখানার বোনাস পরিশোধ করা হয়েছে। বোনাস বকেয়া রয়েছে ৩১০টির। অর্থাৎ বিটিএমএর ৮৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ কারখানার বোনাস এখন দিতে পারেনি মালিক কর্তৃপক্ষ। বেপজার মোট ৩৪৫টি কারখানার মধ্যে ১৩২টির বোনাস পরিশোধ এবং ২১৩টির বকেয়া রয়েছে। এ হিসাবে বোনাস বকেয়া রয়েছে ৬১ দশমিক ৭৪ শতাংশ কারখানার। পাটকলের মোট ৮৩টি কারখানার মধ্যে ১৪টির বোনাস পরিশোধ এবং ৬৯টির বকেয়া আছে। অর্থাৎ ৮৩ শতাংশ কারখানার বোনাস এখন বকেয়া। এছাড়া অন্যান্য ৬ হাজার ৪৯৯টি কারখানার মধ্যে ১ হাজার ২৮৮টির বোনাস পরিশোধ এবং ৫ হাজার ২১১টির বকেয়া রয়েছে। এ হিসাবে ৮০ দশমিক ১৮ শতাংশ কারখানার বোনাস পরিশোধ করা হয়নি।
জানা গেছে, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ, বেপজা এবং পাটকলসহ অন্যান্য কারখানার সর্বমোট সংখ্যা ৯ হাজার ৬১৬টি। এর মধ্যে ১ হাজার ৭০৫টির বোনাস পরিশোধ এবং ৭ হাজার ৯১১টির বকেয়া আছে। সর্বমোট হিসাবে বোনাস পরিশোধকৃত কারখানার শতকরা হার ১৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ এবং বোনাস অপরিশোধকৃত কারখানার শতকরা হার ৮২ দশমিক ২৭ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি বোনাস বকেয়া রয়েছে বিজিএমইএর এবং সবচেয়ে কম বোনাস বকেয়া রয়েছে বেপজার আওতাধীন কারখানার। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত আইপি-১ (ঢাকা), আইপি-২ (গাজীপুর), আইপি-৩ (চট্টগ্রাম), আইপি-৪ (নারায়ণগঞ্জ), আইপি-৫ (ময়মনসিংহ) ও আইপি-৬ (খুলনা) ইউনিটের আওতাধীন মোট ৯৭টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। এর মধ্যে বিজিএমইএর ১৭টি, বিকেএমইর ৭টি, বিটিএমএর ৩টি, বেপজার ২টি এবং অন্যান্য খাতের ৬৮টি কারখানা রয়েছে। এরমধ্যে গাজীপুরে সবচেয়ে বেশি ৩০টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। একই সময় এই ৬টি ইউনিটে সর্বমোট ২০ হাজার ২৭৬ জন শ্রমিক বেকার হয়েছেন। এরমধ্যে বিজিএমইএর ৬ হাজার ৬৪৭ জন, বিকেএমইএর ১ হাজার ৪৬৫ জন, বিটিএমএর ২ হাজার ৮৭ জন, বেপজার ২ হাজার ৪৫ জন এবং অন্যান্য শিল্প-কারখানার ৮ হাজার ৩২ জন শ্রমিক রয়েছে। পাশাপাশি ৮৭টি কল-কারখানা নতুনভাবে খোলা হয়েছে। এরমধ্যে বিজিএমইএর ৯টি, বিকেএমইএর ৫টি, বিটিএমএর ১টি, বেপজার ২টি এবং অন্যান্য শিল্প-কারখানা ৭০টি। একই সময় নতুন করে সর্বমোট ১১ হাজার ৯৬৫ জন শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। বিএনপিকে নির্বাচনে আনতেও দেশটির সহযোগিতা চাওয়া হয়নি।
গতকাল রবিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আমন্ত্রণে ড. মোমেন যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান এবং সেখানে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে ইতিমধ্যে দেশ-বিদেশে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
গতকাল ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জানতে চান, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না। জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘কোনো আলোচনা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তোমাদের দেশের আইনে নির্বাচন হবে। আমরা আশা করব, তোমরা নির্বাচনে একটা ম্যাজিক দেখাবে। যাতে আমরা দুনিয়ার লোকের কাছে বলতে পারি।’ বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘না’। তিনি আরও বলেন, সব দলের আন্তরিকতা না থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না।
নির্বাচন নিয়ে সার্বিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চাওয়ার বিষয়ে মোমেন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র চায় একটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। আমরাও চাই। এখানে আমাদের কোনো দ্বিমত নেই। আমি সহযোগিতা চেয়েছি। আমি বলেছি, সুষ্ঠু নির্বাচন সরকার একা করতে পারবে না। নির্বাচন কমিশন একা করলে হবে না। সব দল ও মতের লোকের আন্তরিকতা থাকতে হবে। তোমরা (যুক্তরাষ্ট্র) এসব ব্যাপারে সাহায্য করো।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ কেউ তাদের (যুক্তরাষ্ট্রকে) বলেছে, ‘আমাদের বিরোধী দলের লোকজন মিটিং করতে পারে না, করতে গেলে তাদের জেলে নিয়ে যায় সরকার। আমি জানিয়েছি, আমরা তো রাজনৈতিক কারণে জেলে নিই না। কোনো অপরাধ করলে জেলে নিই। তাদের (বিরোধী দল) তো আমরা কোথাও আটকাই না।’
তিনি আরও বলেন, ‘কেউ যদি রাস্তা বন্ধ করে দিতে চায়, তোমার দেশে (যুক্তরাষ্ট্রে) হলে তুমিও (ব্লিঙ্কেন) অ্যালাউ করবে না। তারা (বিএনপি) মুক্তভাবে সব মিটিং করতে পারে।’
যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে নির্বাচন নিয়ে প্রচুর বার্তা আসছেÑ এ ব্যাপারে সরকার বিরক্ত বা চাপ অনুভব করছে কি নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘না, আমরা খুব খুশি। আমরা নিজেরা একটা সুষ্ঠু নির্বাচন করব। তারা (যুক্তরাষ্ট্র) বলছে, ভালো। আমাদের চাঙা রাখছে। আমরা চাই সুষ্ঠু নির্বাচন হোক।’
বিএনপি নির্বাচনে না এলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি নাÑ এ প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, ‘কেন হবে না? দেশের মানুষ ভোট দিলে হবে না কেন? আমেরিকা একটা বড় দেশ, ওদের দেশে কত রাজনৈতিক দল আছে, সেগুলোর নাম শুনেছেন?’
নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষক পাঠানো নিয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তারা (যুক্তরাষ্ট্র) যত পারুক পর্যবেক্ষক পাঠাক। কোনো অসুবিধা নেই। তাদের বলেছি, তোমাদের দেশের পর্যবেক্ষক নাও, আমরা এটা ওপেন করে রেখেছি।’
মোমেন-ব্লিঙ্কেনের বৈঠক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতিতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সুশীল সমাজের কথা বলার অধিকারের বিষয়টি স্থান পাওয়া প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বলেছি, আমার দেশে ১২৫১টি দৈনিক বের হয়। তোমার দেশ এত বড়, সেখানে মাত্র ১২৭৯টা বের হয়। আমরা মোটামুটি তোমাদের কাছাকাছি আছি। বাংলাদেশ হলো সেই দেশ যারা গণতন্ত্রের জন্য, ন্যায়বিচারের জন্য, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছে, সংগ্রাম করেছে। সুতরাং আমাদের আর এটা নতুন করে শেখানোর প্রয়োজন নেই।’
র্যাবের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে মোমেন বলেন, ‘এটা একটা প্রসেসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।’
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্দলীয় সরকার না থাকলে বিএনপি তাতে অংশ নেবে না বলে নিজেদের অবস্থান আবারও পুনর্ব্যক্ত করেছে বিএনপি। একই সঙ্গে তারা জানিয়েছে, দাবি আদায় না হলে তারা যে আন্দোলনে রয়েছে তা আরও কঠোর করবেন। তারা এও বলেছেন, ক্ষমতাসীনরা নিজেদের সংশোধনকৃত সংবিধানের অধীনেই নির্বাচন করবেন এমন অনঢ় অবস্থান থেকে সরে এলে, সংলাপ বা আলোচনার বিষয়টি তারা দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন।
গতকাল রবিবার বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি নেতারা তাদের এ অবস্থানের কথা তুলে ধরেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। যদি এ নিয়ে বিএনপি নেতারা খোলাসা করে কিছু বলেনি। তবে কূটনৈতিক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের ধারাবাহিক বৈঠকের অংশ হিসেবে বিএনপির সঙ্গে এই বৈঠক হলো। এর আগে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠক করেন পিটার হাস।
বিএনপির মিডিয়া সেল জানায়, মার্কিন রাষ্ট্রদূতের আমন্ত্রণে তার বাসায় বৈঠকের নেতৃত্ব দেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ। বেলা পৌনে ১১টার দিকে পিটার হাসের গুলশানের বাসায় শুরু হওয়া বৈঠকটি শেষ হয় দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে।
জানতে চাইলে মহাসচিব মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এই বৈঠক নিয়মিত আলোচনার অংশ।’
আর শামা ওবায়েদ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের আমন্ত্রণে আমরা গিয়েছিলাম। বৈঠকে দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ সার্বিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’
তবে মার্কিন দূতাবাসের ফেসবুক পেইজে বৈঠকের একটি ছবি প্রকাশ করে বলেছে, ‘রাষ্ট্রদূত হাস বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও শামা ওবায়েদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং অহিংস রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার গুরুত্ব বিষয়ে আলোচনা করেন।’
মার্কিন দূতাবাসের ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র ব্রায়ান বৈঠকের ব্যাপারে জানান, ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে একটি অহিংস রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার গুরুত্ব নিয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।’
একটি সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়। সে লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছে। গতকালের বৈঠকেও নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অবস্থান ও পরবর্তী পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে বিএনপি তা তুলে ধরে। বিএনপি তাদের অহিংস আন্দোলন এবং এতে জনগণের সম্পৃক্ততার বিষয়টিও আলোচনায় আনেন।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) হলের আসন দখল করে রাখার বিরুদ্ধে অনশনরত ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম প্রত্যয়সহ তাকে সমর্থন দেওয়া কয়েকজনের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ।
মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।তারা বলেন, ওই স্থানে গত বুধবার রাত থেকে অনশনে ছিলেন প্রত্যয়। তাকে মারধরের পর অ্যাম্বুলেন্সে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যায় হামলায় জড়িতরা। এ সময় প্রত্যয়ের দাবির সঙ্গে সংহতি জানানো প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের ওপরও হামলা হয়।
জানা গেছে, তিন দাবিতে গত বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনের খেলার মাঠে অনশনে বসেন প্রত্যয়। তিনি ওই হলের আবাসিক ছাত্র। তার অন্য দুটি দাবি ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল থেকে অছাত্রদের বের করা ও হলের গণরুমে অবস্থান করা বৈধ ছাত্রদের আসন নিশ্চিত করা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী এবং নবীন শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছিলেন। ওই সময় ক্যাম্পাসে লোডশেডিং চলছিল। হঠাৎ করেই প্রত্যয়সহ তার সঙ্গে থাকা অন্যদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
হামলায় জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচী, মার্কেটিং বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের সৃষ্টি, চারুকলা বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের মনিকা, বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের ৪৮তম ব্যাচের সুরসহ আরও কয়েকজন আহত হন বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যমতে, হামলায় ৩০ থেকে ৪০ জন অংশ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। অভিযুক্তদের কয়েকজন হলেন ছাত্রলীগ নেতা ও রসায়ন বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী গৌতম কুমার দাস, তুষার, ফেরদৌস, নোবেল, গোলাম রাব্বি, মুরসালিন, মুরাদ, সোহেল, তানভীর, রায়হান, রাহাত, সৌমিক, তারেক মীর, সজীব ও নাফিস।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী জানান, আমরা যারা প্রত্যয়ের সঙ্গে ছিলাম তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর প্রত্যয়কে দেখতে চিকিৎসক এসেছিলেন। তখন তারা অ্যাম্বুলেন্সের ওপর হামলা করে সেটি ফিরিয়ে দেয়। প্রক্টরকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি আসেননি। একাধিক ছাত্রীর দিকেও চড়াও হয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মীর মশাররফ হোসেন হলের এক শিক্ষার্থী অসুস্থ এমন একটি ফোনকল পেয়ে তারা অ্যাম্বুলেন্স পাঠায়। তবে কে কল দিয়েছিল সে সম্পর্কে চিকিৎসা কেন্দ্রের কেউ বলতে পারেননি।
তবে যে ফোন নাম্বার থেকে কল দেওয়া হয়েছিল সেটিতে যোগাযোগ করে দেখা যায় নাম্বারটি শাখা ছাত্রলীগের নেতা গৌতম কুমার দাসের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ১৫ হাজার শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না। দরকার হলে আমি পদত্যাগ করব।
এদিকে হামলার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে রাতেই বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মিছিল নিয়ে তারা এ রাত পৌনে ১টায় প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান করছেন।
তবে অনশনরত শিক্ষার্থী সামিউলের ওপর হামলারে পেছনে ছাত্রলীগের কোনো হাত নেই বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেলের। তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি, মীর মশাররফ হোসেন হলের অনশনরত ওই শিক্ষার্থীর ওপর হামলা হয়েছে। তবে সেটা সাধারণ শিক্ষার্থীরা করেছে। সেখানে ছাত্রলীগের একজনও জড়িত নয়।’
রাজধানীর বনানীর একটি রেস্তোরাঁ থেকে জামায়াতে ইসলামীর বনানী শাখার ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তাদের মধ্যে বনানী থানা জামায়াতের আমির তাজুল ইসলাম এবং সেক্রেটারি আব্দুর রাফি রয়েছেন।
বনানী থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওয়ারলেস গেটে অবস্থিত নবাবী রেস্টুরেন্টে গোপন মিটিং করাকালে বনানী থানা জামায়াতে ইসলামী আমির তাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রাফিসহ ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
আটক ১০ জনের মধ্যে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাও রয়েছেন।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।