
তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা আহসানুল করিম ডালিম। বসবাস বগুড়া সদরের লাহিড়ীপাড়া ইউনিয়নের কাজী নুরুইল গ্রামে। ২০১৯ সালে বেশ চ্যালেঞ্জ নিয়ে ফিলিপাইন থেকে সংগ্রহ করেন ব্ল্যাক সুগার কেইন জাতের ১৬টি চারা। যার মধ্যে বেঁচে থাকে সাতটি। এরপর টিকে থাকা চারাগুলো থেকে নতুন আরও চারা তৈরি করে পরীক্ষামূলক চাষাবাদের কাজ শুরু করেন ডালিম। নিজের ছয় শতক জমিতে এ বিশেষ জাতের আখ চাষ করে তৈরি করতে থাকেন চারা। মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে তরুণ এ উদ্যোক্তার আট বিঘা জমিতে এখন শোভা পাচ্ছে কয়েক হাজার ব্ল্যাক সুগার কেইন।
যা থেকে দেশে প্রথমবারের মতো গুড় ও গুড়ের পাউডার বা লাল চিনি তৈরি করছেন এ উদ্যোক্তা। স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে কোনো ধরনের রাসায়নিক ছাড়াই তার তৈরি গুড় ও লাল চিনি সুস্বাদু হওয়ায় ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে সব শ্রেণির মানুষের কাছে।
ইতিমধ্যে ডালিমের তৈরি গুড় ও গুড়ের পাউডার বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি শুরু হয়েছে। বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্যাকেটজাত করে গ্রাহকের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। কিন্তু এতেই সীমাবদ্ধ থাকতে চান না এ কৃষি উদ্যোক্তা। কৃষক পর্যায়ে এ কালো জাতের আখ চাষ ছড়িয়ে দিতে চান তিনি।
জানা গেছে, একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার প্রশিক্ষক ছিলেন আহসানুল কবির ডালিম। সেই চাকরি ছেড়ে কৃষির প্রতি ঝুঁকে পড়েন তিনি। নিজ গ্রামের বেশ কিছু তরুণকে নিয়ে গড়ে তোলেন ‘কর্ষণ’ নামে একটি কৃষিভিত্তিক সংগঠন। তরুণ এ কৃষি উদ্যোক্তা নিজের জমিসহ অন্যের কিছু জমি বর্গা নিয়ে শুরু করেন চাষাবাদ। শুরু হয় মাটিতে সোনা ফসল ফলানোর মিশন। একই জমিতে একাধিক ফসল উৎপাদনসহ আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে কৃষির উৎপাদন বাড়াতে মনোযোগী হন তিনি ও তার দলের সদস্যরা।
আহসানুল কবির ডালিম জানান, তিনি ফিলিপাইন থেকে প্রথমে ব্ল্যাক সুগার কেইন জাতের ১৬টি চারা সংগ্রহ করেন। যার মধ্যে ৯টি চারা নষ্ট হয়ে গেলেও টিকে যায় ৭টি। সেই চারা থেকে আরও চারা তৈরি করে চাষের কাজ শুরু করেন।
ব্ল্যাক সুগার কেইন গাঢ় লালচে বা কালো খয়েরি জাতের আখ। যার মিষ্টতা ও স্বাদ অতুলনীয়। দেশীয় আখের মতো হলেও রয়েছে বেশ কিছু ভিন্নতা। এ আখের কাণ্ড নরম, রস ও মিষ্টতার পরিমাণ বেশি, এ ছাড়া চাষের পর লাভও বেশি। এসব কথা ভেবেই বহু চেষ্টার পর ফিলিপাইনের কালো জাতের আখ ‘ব্ল্যাক সুগার কেইন’ চাষ শুরু করেন ডালিম।
তিনি জানান, এ জাতের আখ ১০ থেকে ১১ মাসে পরিপূর্ণ লম্বায় ১২ থেকে ১৫ ফুট হয়। প্রতি বিঘায় চাষকৃত আখ থেকে থেকে গুড় হবে ২ টন, যা থেকে ২-৪ লাখ টাকার গুড় ও গুড়ের পাউডার বা লাল চিনি পাওয়া যাবে। যা পরবর্তী বছরে দ্বিগুণ হবে। একই সঙ্গে আখের চারাও বিক্রি করা যাবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, জমি থেকে আখ তুলে এনে তা মাড়াই করে রস বানানো হচ্ছে, সেই রস পরিশোধন করে চুলায় দীর্ঘসময় জ্বাল দেওয়া হচ্ছে। এরপর রস ধীরে ধীরে গুড়ে পরিণত হয়। সেই জ্বাল দেওয়া গুড় থেকে বিশেষ পদ্ধতিতে পাউডার বা লাল চিনি উৎপাদন করা হচ্ছে।
এসব প্রক্রিয়া দেখতে আসা বগুড়া শহরের ফুলবাড়ী এলাকার সজল শেখ দেশ রূপান্তরকে জানান, এমন সুমিষ্ট আখের রস তিনি প্রথমবারের মতো খেয়েছেন, গুড়ের স্বাদ অসাধারণ।
বগুড়া শহর থেকে আসা অরূপ, রাজ্জাক ও আল-আমিন জানান, কালো জাতের আখ থেকে তৈরি লাল চিনির স্বাদ এর আগে কখনো তারা পাননি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়ার অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) কৃষিবিদ এনামুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ইতিপূর্বে কৃষি উদ্যোক্তা ডালিম ব্ল্যাক সুগার কেইন চাষে সফল হয়েছেন। তার প্রশংসনীয় উদ্যোগ দেখে অন্য কৃষকরা এ চাষে ঝুঁকে পড়ছেন। কৃষি বিভাগ চাষিদের উৎসাহিত করছে, বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করছে।’
সরকারি আজিজুল হক কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রায়হান ইসলাম বলেন, ‘চিনির বিকল্প হিসেবে বাণিজ্যিকভাবে পাউডার গুড় তৈরি হলে নতুন করে বাজার সৃষ্টি হবে। কালো জাতের আখ উৎপাদনে উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসবে, এতে করে চিনির আমদানিনির্ভরতা কমে আসবে, যা অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
মরণনেশা ইয়াবাার পর আইসের চালান আনা-নেওয়ার রুট পরিবর্তন করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে তারা এখন রুট পরিবর্তন করেছে। কক্সবাজারের টেকনাফের রুট বাদ দিয়ে কারবারিরা কলকাতা ও শিলিগুড়ি রুট টার্গেট করেছে বলে পুলিশের কাছে তথ্য রয়েছে। এই ইয়াবা চোরাচালানের কক্সবাজারের সাগরপথে প্রথম দিকে ক্রিস্টাল মেথ বা আইস আসত। এরপর স্থল সীমান্তের বিভিন্ন রুটে আসা শুরু হয়েছে। এখন কড়াকড়ির কারণে নতুন রুট বেছে নিচ্ছে তারা। ইয়াবা বাদ দিয়ে ওই কারবারিরাই আইস চোরাচালানের দিকে ঝুঁকেছে।
সম্প্রতি পুলিশের একটি গোপন প্রতিবেদনে আইস চোরাচালান বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশের ভেতরে সেবনও বেড়ে গেছে। তরুণ-তরুণীদের মধ্যে আইস গ্রহণ বেড়ে গেছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভিযানে বাহক ধরা পড়লেও মূল হোতারা থাকছে আড়ালেই। তারা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের ধারেকাছেও যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এসব তথ্যের ভিত্তিতে নতুন করে আইসের কারবারিদের একটি তালিকার কাজ শুরু হয়েছে বলে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে।
জানতে চাইলে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক আনোয়ার হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কিছু কিছু এলাকা দিয়ে ইয়াবা ও আইস আসছে তা সত্য, তবে কারবারিদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। তাদের ধরতে নজরদারি ও অভিযান বাড়ানো হয়েছে, বিশেষ করে টেকনাফ এলাকাকে আলাদাভাবে দেখছি আমরা।’
কয়েক মাস আগে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামকে মাদকপ্রবণ এলাকা ঘোষণার পরিকল্পনার কথা জানানো হয়।
সম্প্রতি কক্সবাজারের উখিয়ায় ২১ কেজি আইসের একটি চালান ধরা পড়ে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বলেছে, এটিই এ যাবৎকালে সবচেয়ে বড় চালান।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দেশ রূপান্তরকে জানান, ২০১৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর জিগাতলার ৭/এ রোডের ৬৮ নম্বর ভবনে অভিযান চালায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। তাদের কাছে তথ্য ছিল, বাসার ভেতরে বিশেষ কোনো মাদক উৎপাদন হচ্ছে। কিন্তু কোনোভাবেই মাদকের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। কিন্তু তাদের সোর্স জানাচ্ছিল এখানে নতুন ধরনের মাদক আছেই। এরপর শুরু হয় ব্যাপক তল্লাশি। একপর্যায়ে অধিদপ্তরের রাসায়নিক কর্মকর্তাদের ডেকে পাঠানো হয়। টানা ২৫ ঘণ্টা অভিযানে আবিষ্কার হয় ক্রিস্টাল মেথ বা আইসের ‘কারখানা’। গ্রেপ্তার করা হয় হাসিব বিন-মোয়াম্মার রশিদ নামের এক যুবককে। হাসিবের সঙ্গে মিয়ানমারের কারবারিদের গভীর সখ্য থাকায় জামিনে বের হয়ে তিনি একই কারবার চালাচ্ছেন। ওটাই দেশে প্রথম এই আইস নামের মাদক উদ্ধারের ঘটনা। এতে করে প্রশাসন সতর্ক হয়ে যায়।
এ ঘটনার পর গত বছর কক্সবাজার সীমান্ত এলাকা থেকে প্রায় ৭৮ কেজি আইস জব্দ করে বিজিবি। তবে চলতি বছরের ২৬ এপ্রিল উখিয়া সীমান্তে এক চালানেই জব্দ হয় ২১ কেজি আইস। অথচ গত বছরের এপ্রিল মাসে এই দুটি সীমান্তে মাত্র ৩ কেজি ১৯২ গ্রাম আইস জব্দ করা হয়েছিল।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এমন পরিসংখ্যান বলে দেয়, ৫ বছরে দেশে আইস পাচার বেড়েছে শতগুণ। অথচ আইস চালানের মূল হোতা কারা তা আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। মাঝেমধ্যেই আইসসহ গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের দাবি, নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছানোর দায়িত্বে ছিলেন তারা। কিন্তু কার কাছে পৌঁছানো হবে, সে বিষয়ে তাদের কাছে কোনো তথ্য থাকে না। বলতে গেলে অনেকটাই সোনা পাচার ও জঙ্গিদের যোগাযোগের ‘কাটআউট’ পদ্ধতিতে আইস পাচার হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা তথ্য বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হয়েছি, ইয়াবার পরিবর্তে এখন আইসের দিকে চলে যাচ্ছে কারবারিরা। তারা নতুন নতুন রুট তৈরি করছে। কক্সকবাজার ও টেকনাফের পরিবর্তে কলকাতা ও শিলিগুড়ি রুট ব্যবহারের পাঁয়তারা করছে। কারবারিরা বাংলাদেশের পাশাপাশি বিদেশেও পাচার করছে। নতুন রুটের বিষয়টি জানিয়ে সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা ও সদস্যদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সূত্রগুলো জানায়, ক্রিস্টাল মেথ বা মেথা-অ্যামফিটামিন প্রধানত তৈরি হয় থাইল্যান্ডে। পাশাপাশি মালয়েশিয়া ও মিয়ানমারে তৈরি হচ্ছে। মূলত এই তিন দেশ থেকে এটি ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুরসহ নানা দেশে পাচার হয়। ইয়াবা থেকে ২০-২৫ গুণ বেশি ক্ষতিকারক মাদক হচ্ছে আইস। এক গ্রাম আইসের দাম ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা। কাশির ওষুধ তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হয় এমন দুটি উপাদান আইসে পাওয়া গেছে। ২০১৮ সালে সরকার একটি কাঁচামাল আমদানি নিষিদ্ধ করে। এ ছাড়া এ উপাদানটির নানা অপব্যবহারের অভিযোগও আছে। ২০১৮ সালে গ্রেপ্তার হাসিব বিন মোয়াম্মার রশিদ মালয়েশিয়ার নটিংহাম ইউনিভার্সিটির শাখা ক্যাম্পাসের ছাত্র ছিলেন। তিনি দেশে ফিরে বাজার থেকে বিভিন্ন ধরনের কাশির ট্যাবলেট সংগ্রহ করে ওই উপাদানটি আলাদা করে আইস তৈরি করছিলেন। এ বিষয়ে তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। তিনিই মূলত এই ফরমুলা বাজারে ছেড়ে দেন। এরপর থেকে আইসের প্রতি আসক্তি দেখা দিয়েছে বিত্তশালী পরিবারের তরুণ-তরুণীদের একটি গোষ্ঠীর মধ্যে। আগে যারা ইয়াবায় আসক্ত ছিলেন, তারাই মূলত আইসের প্রতি ঝুঁকে গেছেন।
সূত্র আরও জানায়, ইয়াবা ব্যবসায় কড়াকড়ির কারণে এবং আইসের সেবন বেড়ে যাওয়ায় এই কারবারের দিকে ঝুঁকে পড়ছে এক শ্রেণির মাদক কারবারি। তারা আগে ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিল। ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা টেকনাফ থেকে কক্সবাজার হয়ে ইয়াবার মতোই চট্টগ্রাম ও ঢাকায় পাঠানো শুরু করে অ্যামফিটামিনের পাউডার ও দানা। প্রথম দিকের চালানগুলো ক্রিস্টাল বা তালমিছরি দানার মতো পাওয়া গেলেও এখন ধরা পড়ছে বেশির ভাগই পাউডার।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মিয়ানমার থেকে আইস পাঠানোর একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে। এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা বিনা পুঁজিতেই আইসের কারবার করে আসছে। তারা প্রকৃত মালিকের কাছে আইস পৌঁছানোর পর টাকা নিয়ে থাকে। আইস পৌঁছানো থেকে শুরু করে সবকিছুরই নিয়ন্ত্রণ হয়ে থাকে মিয়ানমার ও টেকনাফ থেকে। ঢাকায় কোথায় পৌঁছাতে হবে এ বিষয়ে বাহকের কাছে কোনো ধারণাই থাকে না। তারা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আইস বহন করে নিয়ে যাওয়ার পর একটি কলের অপেক্ষায় থাকে। এ ক্ষেত্রে শুধু বাহকের মোবাইল নম্বর থাকে প্রকৃত মালিকের কাছে। নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছানোর পর আইসের মালিক সাংকেতিক কোড ব্যবহার করে অথবা মোবাইল ফোনে কল করে চালান বুঝে নেন। এ কারণে বাহক ধরা পড়লেও আইসের প্রকৃত মালিকের কাছে পৌঁছানো অনেকটাই দুরূহ হয়ে ওঠে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দাবি, ৫ বছর আগে দেশে প্রথমবারের মতো মাত্র পাঁচ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ উদ্ধার করা হয়। ঢাকায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ওই অভিযানের পর নতুন এই মাদক নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। সেই তোলপাড়ে ভাটা পড়লেও থেমে থাকেনি এর পাচার ও ব্যবহার। ক্রিস্টাল মেথ বা আইসের অতি উচ্চমূল্যের কারণে মূলত এটা উচ্চবিত্তদের মাদক হিসেবে চিহ্নিত। আইস দেখতে অনেকটা লবণ বা চিনির গুঁড়ার মতো। এ কারণে সহজেই এই মাদক পাচার করা সম্ভব হচ্ছে। চিনি বা লবণের প্যাকেটে করে এই মাদক ঢুকে পড়েছে দেশের অভিজাত এলাকায়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন্স ও গোয়েন্দা) তানভীর মমতাজ বলেন, ‘ডিমান্ড বাড়লে সাপ্লাই বাড়বে, এটা স্বাভাবিক। তা ছাড়া নতুন মাদক হিসেবে এর মুনাফা বেশি পায় কারবারিরা, এর চাহিদাও থাকে বেশি। এ জন্য কারবারিরাও ঝুঁকে পড়ে। এতে পাচারও বেড়ে যায়।’ আইস যেহেতু উচ্চবিত্তদের মাদক হিসেবে পরিচিত, সে হিসেবে চোরাচালান কম হওয়ার কথা। কিন্তু উখিয়া সীমান্তে এক চালানেই ২১ কেজি আইস জব্দের ঘটনা তাদের ভাবিয়ে তুলেছে। এই মাদক পাচারে বাংলাদেশ রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে কি না, সেই তদন্তও করা হবে এখন। এ জন্য বড় চালানসহ ধরা পড়া তিনজনের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আইসসেবীর সংখ্যা কত, সেই পরিসংখ্যানও নেই। সাধারণত উচ্চবিত্তের সন্তানরা এই মাদকে আসক্ত। এরা এই মাদক নিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লেও সরকারি চিকিৎসাকেন্দ্রে সাধারণত আসে না। বিদেশে বা দেশের বেসরকারি বড় হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিয়ে থাকে। এ জন্য এ ধরনের মাদকাসক্তদের কোনো পরিসংখ্যান নেই।
প্রতি বছর দেশে আলুর অভ্যন্তরীণ চাহিদা ৭৫-৮০ লাখ টন। বিপরীতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বছরে প্রায় ২০-২৫ লাখ টন আলু বেশি উৎপাদন হয়। স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করার ফলে ওজন কিছুটা কমে যায়। এ কারণে দামেরও পরিবর্তন হয়। তবে বাজারে আলুর সরবরাহ ঠিকঠাক থাকলেও কোনো কারণ ছাড়াই আলুর দাম বাড়তে শুরু করেছে। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা করে। যা ঈদের আগেও ছিল ৩০ টাকা।
বাজারে খবর নিয়ে দেখা যায়, চলতি বছরের মার্চ মাসে ওঠা নতুন আলু ইতিমধ্যে বাজারে। ওই আলুই বর্তমানে খুচরায় ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। পাইকারদের ভাষ্যমতে, ঈদের পরে বাজারে আলুর সরবরাহ কম হওয়ায় আলুর দাম বেড়েছে। এখন থেকে প্রত্যেক সপ্তাহে আলুর দাম আরও বাড়বে। হঠাৎ করে আলুর মূল্যবৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে তারা কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
কারওয়ান বাজারের পাইকার জাকির আহমেদ বলেন, বাজারে আলুর সরবরাহ কম থাকায় আলুর দাম বেড়েছে। কয়েকদিন যাবৎ আলুর কোনো চালান না আসায় প্রতি কেজি আলুতে ৪-৫ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে বিক্রমপুরের আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৭ দশমিক ৫০ টাকা ও রাজশাহীর আলু ২৮ দশমিক ৫০ টাকা। বাজারে আরও কয়েকদিন আলু না এলে দাম আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তেজতুরি পাড়ার কহিনুর স্টোরের দোকানি ফাহিম বলেন, আমাদের বাজার থেকে বেশি দামে কিনতে হয় তাই বেশি দামে বিক্রি করছি। এতে আমাদের ব্যবসায় লস হচ্ছে। দাম কম থাকলে কাস্টমার বেশি করে নিত। কিন্তু দাম বাড়ার কারণে ক্রেতারা সবধরনের নিত্যপণ্য কেনা কমিয়েছে।
এদিকে ক্রেতারা বলছেন, দেশের আলুর চাহিদার থেকে উৎপাদান বেশি হয়। এতে করে বছরজুড়ে প্রতি কেজি আলু ২০-২৫ টাকা বিক্রি স্বাভাবিক। কিন্তু হঠাৎ করে আলুর কেজি ৪০ টাকা হওয়ায় ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারসাজি।
বাংলামোটর এলাকায় আবুল কাশেম নামের এক ক্রেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, রোজার আগেও আলুর কেজি ছিল ২৫ টাকা করে। ২-১ টাকা করে বৃদ্ধি পেতে পেতে সেই আলুর কেজি ঠেকেছে ৩৫ টাকায়। কিন্তু আকস্মিকভাবে প্রতি কেজি আলুতে ৫ টাকা বৃদ্ধি অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে। যে চাহিদার তুলনায় লাখ লাখ টন উদ্বৃত্ত থাকে প্রতি বছর। আলুর মূল্যবৃদ্ধির পেছনে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট দায়ী।
এ বিষয়ে জানতে চেয়ে কারওয়ান বাজার ২ নম্বর মালিক সমিতি আড়ত ভবনের সেক্রেটারিকে মুঠোফোনে কল করে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মালিক সমিতির এক নেতা বলেন, করোনার বছরগুলোতে কৃষকরা তাদের অনেক লোকসান দিয়েছে। সে জন্য চলতি বছর অনেক কৃষক আলু চাষ করা থেকে বিরত থেকেছে। এ জন্য বাজারে আলুর সংকট দেখা দিয়েছে। কিন্তু দেশের প্রধান খাদ্যপণ্যের মধ্যে আলু একমাত্র উদ্বৃত্ত ফসল। যা চাহিদার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি উৎপাদিত হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর দেশে ৪ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা হাতে নেওয়া হয়। এরই মধ্যে ৪ লাখ ৫১ হাজার হেক্টর জমির আলু উত্তোলন করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪ লাখ ৫ হাজার হেক্টর জমিতে ১ কোটি ১২ লাখ টন আলু উৎপাদন হয়েছে। গড় ফলন প্রতি হেক্টরে ২৪ দশমিক ৭৭ টন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের বরাদ্দ দেওয়া ৯৫৪টি সোলার প্যানেল স্থাপন নিয়ে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার বাটনাতলী ইউনিয়নে বিনামূল্যের সোলার প্যানেল পেতে সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা করে।
অভিযোগ আছে, মানিকছড়ি উপজেলার বাটনাতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহিম এবং ওই ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মো. আবদুল মমিন, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মানিক ত্রিপুরা এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মহরম আলীসহ আরও কয়েকজন সোলার প্যানেল দেওয়ার নামে সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে প্রায় ৪০ লাখ টাকা আদায় করেছেন। গত রমজানের আগে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ৯৫৪ জনের পূর্ণাঙ্গ তালিকা পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডে জমা দেওয়া হয়। এরপর গত ২১ মার্চ বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা ও ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল আলম চৌধুরী বাটনাতলী ইউনিয়নে সোলার প্যানেল বিতরণ কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করতে যান। তখনই জনপ্রতিনিধিদের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি প্রকাশ পায়। সেখানে উপস্থিত সুবিধাভোগীদের কেউ কেউ টাকার বিনিময়ে তালিকায় তাদের নাম অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা এবং ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল আলম চৌধুরীর কাছে স্বীকার করেন। পরে সোলার প্যানেল বিতরণ কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করে সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে নেওয়া টাকা ফেরত দিয়ে নতুন করে তালিকা করতে বলা হয়।
কিন্তু এ নির্দেশনা আমলে না দিয়ে প্রস্তাবিত সুবিধাভোগীদের পরিবারের স্বামীর পরিবর্তে স্ত্রী, স্ত্রীর পরিবর্তে স্বামী, বাবার পরিবর্তে ছেলে, ভাইয়ের পরিবর্তে বোন, বোনের পরিবর্তে ভাইকে রেখে নতুন করে তালিকা করা হচ্ছে।
সোলার প্যানেল পেতে ৩ হাজার টাকা দিয়েছেন ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা আমির আলী। এ ওয়ার্ডের মেম্বার মানিক ত্রিপুরা বলায় স্থানীয় এক দোকানদারকে ওই টাকা দেন তিনি। গতকাল রবিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে তার সঙ্গে কথা বলেন দেশ রূপান্তরের এই প্রতিবেদক। তিনি বলেন, ‘সোলার প্যানেল পেতে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের খরচের নামে অনেকের কাছ থেকে টাকা তোলা হয়েছে। কিন্তু প্যানেল পাইনি এখনো। আমি বর্গাচাষি। মেম্বার মানিক ত্রিপুরা বলায় অনেক কষ্টে টাকাগুলো জোগাড় করে দিয়েছিলাম।’
এদিকে সোলার প্যানেল দেওয়ার নামে সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কথা একটি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে স্বীকার করেছেন বাটনাতলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগ নেতা মো. আকতার হোসেন, ইউনিয়ন পরিষদের দফাদার মোস্তফা কামাল, পরিষদ সদস্য মো. আবুল হাশেম, অংজাই মারমা, স্কুলশিক্ষক আবু তাহের, সাবেক ইউপি সদস্য আব্রেচাই মারমা।
পাবর্র্ত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড জানাচ্ছে, একটি সোলার প্যানেলের দাম ৪৫ হাজার টাকা। এ হিসেবে প্রায় ৫ কোটি টাকা মূল্যের ৯৫৪টি সোলার প্যানেলগুলো বর্তমানে বাটনাতলী ইউনিয়নের ছদুরখীল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেঝেতে পড়ে আছে অযতেœ।
বাটনাতলী ইউনিয়ন পরিষদের অভিযুক্ত জনপ্রতিনিধিরা আর্থিক দুর্নীতির দায় থেকে রক্ষা পেতে মানিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতার দ্বারস্থ হয়েছেন বলে জানা গেছে। ওই নেতা অভিযুক্তদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন দপ্তরে জোরালো তদবির চালাচ্ছেন বলে একটি গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সম্পূর্ণ সরকারি অর্থ ব্যয়ে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে বান্দরবানসহ তিন পার্বত্য জেলায় একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে। প্রকল্পটি ২০১৫-১৬ অর্থবছর অনুমোদন হয়ে বাস্তবায়ন শুরু হয় পরবর্তী অর্থবছর থেকে।
জানা গেছে, দ্বিতীয় পর্যায়ে বাটনাতলী ইউনিয়ন এলাকার জন্য ৯৫৪টি সোলার প্যানেল বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে ১ নম্বর ওর্য়াডে ৬৪টি, ২ নম্বর ওয়ার্ডে ১৩৯টি, ৩ নম্বর ওয়ার্ডে ১৬৯টি, ৭ নম্বর ওয়ার্ডে ২৮৩টি, ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ২৪৫টি, ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ৫৪টি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল আলম চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সোলার প্যানেল বিতরণ নিয়ে যে অভিযোগ আমরা শুনেছি সেগুলো সংশোধন করার চেষ্টা চলছে। সোলার প্যানেল দেওয়ার বিনিময়ে উপকারভোগীদের কাছ থেকে ইউপি চেয়ারম্যান বা মেম্বারদের টাকা নেওয়ার বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ দেননি। সেখানকার নেতৃস্থানীয়দের কেউ কেউ বলছেন টাকা নেওয়ার বিষয়টি অসত্য। আবার কেউ কেউ বলছেন সত্য। আমরা তদন্ত করছি।’
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে গতকাল পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চকমাকে মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ধরেননি।
মানিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রক্তিম চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সোলার প্যানেল বিতরণের সঙ্গে উপজেলা পরিষদ বা প্রশাসনকে সম্পৃক্ত করা হয় না। গত ২১ মার্চ পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান স্যার জানিয়েছিলেন যে, সোলার প্যানেলগুলো তিনি বিতরণ করতে গিয়েছিলেন কিন্তু করেননি।’
সোলার প্যানেল দেওয়ার নামে প্রায় ৪০ লাখ টাকা আদায়ের বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন বাটনাতলী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুর রহিম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সোলার প্যানেল বিতরণ নিয়ে সমস্যার কথা আমি কিছু জানি না। বৃষ্টি থাকায় সেদিন বিতরণ স্থগিত করা হয়েছিল। পরে বিতরণ করার কথা বলে চলে যান পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল রঞ্জন চাকমা। উপকারভোগীদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা নেওয়ার সঙ্গে আমার নামটা কেন আসছে তা জানি না। এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন-বানোয়াট।’
৯ নম্বর ওয়ার্ডের নারী ইউপি সদস্য কোহিনুর বেগম বলেন, ‘সোলার প্যানেলের ব্যাপারে আমরা মহিলা মেম্বাররা কিছুই জানি না। শুনছি সোলার প্যানেল এসেছে। এ ব্যাপারে পরিষদে গিয়ে জিজ্ঞেস করলে তারা বলেন, কোনো বিদ্যুৎ বা সোলার আসেনি। এটা নিয়ে যখন গ-গোল লাগছে তখন শুনি, সোলার দেবে বলে মেম্বাররা টাকা খেয়েছে। এটা নিয়ে গত রমজানে পরিষদে বৈঠকও হয়েছে। বৈঠকে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিনও উপস্থিত ছিলেন। ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রহিমও ছিলেন। বৈঠকে আমাদের ডেকেছেন। ওই বৈঠকে মমিন মেম্বার, মহরম আলী মেম্বার, মানিক মেম্বার সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে নেওয়া টাকা ফেরত দেবেন বলেছেন।’
৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুল মমিন বলেন, ‘সোলার প্যানেল নিয়ে কী সমস্যা হয়েছে আমি জানি না। উপকারভোগীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়েও আমি জানি না।’
বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের নতুন হাইকমিশনার সারাহ কুক গতকাল রবিবার ঢাকায় এসেছেন। তিনি হাইকমিশনার হিসেবে রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসনের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন। ঢাকায় যুক্তরাজ্যের হাইকমিশন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
সারাহ কুক বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে ফিরতে পেরে আমি আনন্দিত এবং যথেষ্ট সম্মানিত বোধ করছি। বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে শক্তিশালী সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিদ্যমান। বাণিজ্য, বিনিয়োগ, উন্নয়ন, নিরাপত্তাসহ অভিন্ন অনেক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছে যুক্তরাজ্য। আমি দুই দেশের দীর্ঘদিনের এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে শক্তিশালী করতে অঙ্গীকারবদ্ধ।’
সারাহ কুক ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন দপ্তরের (ডিএফআইডি) বাংলাদেশ কার্যালয়ের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সম্প্রতি তিনি যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রধান এবং তানজানিয়ায় যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০০৫ সালে ডিএফআইডিতে যোগ দেন। তিনি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরেও কাজ করেছেন।
যুক্তরাজ্যে সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগে সারাহ কুক গায়ানার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং সলোমন দ্বীপপুঞ্জের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি প্রাইসওয়াটার হাউসকুপারসে অর্থনৈতিক পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন।
এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার প্রথম দিন গতকাল রবিবার ১১ শিক্ষা বোর্ডে অনুপস্থিত ছিল ৩১ হাজার ৪৪৭ জন শিক্ষার্থী। সবচেয়ে বেশি অনুপস্থিত ছিল মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে। প্রথম দিন বহিষ্কার হয়েছে ২০ জন শিক্ষার্থী। কাল মঙ্গলবার এসএসসির বাংলা দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা হবে।
প্রথম দিন গতকাল রাজধানীর বাড্ডা হাইস্কুল কেন্দ্র পরিদর্শন করেন মন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, চলমান এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের সুযোগ নেই। তবে কেউ কেউ গুজব রটাতে পারে। আর গুজব রটিয়ে ধরা পড়লে কঠোর শাস্তি হবে। প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে গুজব রটানো রোধে সার্বক্ষণিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। যেখানেই কোনো ব্যত্যয় দেখা যাচ্ছে, কেউ গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করছে বা কিছু হচ্ছে, সেখানেই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
আগামী বছর পরীক্ষার সময় এগোবে কি না জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আগামী বছর পরীক্ষা এগিয়ে আনার চেষ্টা করব। তবে যারা পরীক্ষা দেবে তারা পুরো প্রস্তুতির সময় পেয়েছে কি না তা দেখা হবে। সারা দেশের শিক্ষকদের একটি মতামত নেওয়া হবে। তারা কোন সময়ের মধ্যে সিলেবাস শেষ করতে পারবেন, শুধু তো তাড়াহুড়ো করে শেষ করলে হবে না। স্বস্তিতে শেষ করতে হবে। তবে চেষ্টা করব, স্বাভাবিকের যত কাছাকাছি সময়ে নিয়ে যাওয়া যায়।’
প্রশ্নপত্রে ভুলের বিষয়ে দীপু মনি বলেন, ‘ভুলভ্রান্তি যেটা সেটা তো ভুলই। গতবার যে কটি জায়গায় যাদের ভুল হয়েছে তাদের কড়া মাশুল দিতে হয়েছে। যারা দায়িত্বে থাকেন, তাদের যাতে ভুল না হয়, সেদিকে সচেতন থাকতে হবে।’
পরীক্ষা-সংক্রান্ত আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের তথ্যে জানা গেছে, প্রথম দিন ১১ শিক্ষা বোর্ডে অনুপস্থিত ছিল ৩১ হাজার ৪৪৭ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অনুপস্থিত ছিল মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে ১১ হাজার ৩৮৩ জন। ঢাকা বোর্ডে ৪ হাজার ২২২ জন, রাজশাহীতে ১ হাজার ৭২০, কুমিল্লায় ২ হাজার ৬১৮, যশোরে ১ হাজার ৮৩৪, চট্টগ্রামে ১ হাজার ৬০৭, সিলেটে ৯৪০, বরিশালে ১ হাজার ২৬, দিনাজপুরে ২ হাজার ২৪৭, ময়মনসিংহে ৯৭৮ ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে ২ হাজার ৮৭২ জন অনুপস্থিত ছিল। আর সবচেয়ে বেশি বহিষ্কার হয়েছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে ১১ জন শিক্ষার্থী।
এসএসসির কেন্দ্র পরিদর্শনের সময় শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ, ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার প্রমুখ।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
রাজধানীর বনানীর একটি রেস্তোরাঁ থেকে জামায়াতে ইসলামীর বনানী শাখার ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তাদের মধ্যে বনানী থানা জামায়াতের আমির তাজুল ইসলাম এবং সেক্রেটারি আব্দুর রাফি রয়েছেন।
বনানী থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওয়ারলেস গেটে অবস্থিত নবাবী রেস্টুরেন্টে গোপন মিটিং করাকালে বনানী থানা জামায়াতে ইসলামী আমির তাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রাফিসহ ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
আটক ১০ জনের মধ্যে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাও রয়েছেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) হলের আসন দখল করে রাখার বিরুদ্ধে অনশনরত ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম প্রত্যয়সহ তাকে সমর্থন দেওয়া কয়েকজনের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ।
মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।তারা বলেন, ওই স্থানে গত বুধবার রাত থেকে অনশনে ছিলেন প্রত্যয়। তাকে মারধরের পর অ্যাম্বুলেন্সে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যায় হামলায় জড়িতরা। এ সময় প্রত্যয়ের দাবির সঙ্গে সংহতি জানানো প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের ওপরও হামলা হয়।
জানা গেছে, তিন দাবিতে গত বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনের খেলার মাঠে অনশনে বসেন প্রত্যয়। তিনি ওই হলের আবাসিক ছাত্র। তার অন্য দুটি দাবি ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল থেকে অছাত্রদের বের করা ও হলের গণরুমে অবস্থান করা বৈধ ছাত্রদের আসন নিশ্চিত করা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী এবং নবীন শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছিলেন। ওই সময় ক্যাম্পাসে লোডশেডিং চলছিল। হঠাৎ করেই প্রত্যয়সহ তার সঙ্গে থাকা অন্যদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
হামলায় জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচী, মার্কেটিং বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের সৃষ্টি, চারুকলা বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের মনিকা, বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের ৪৮তম ব্যাচের সুরসহ আরও কয়েকজন আহত হন বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যমতে, হামলায় ৩০ থেকে ৪০ জন অংশ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। অভিযুক্তদের কয়েকজন হলেন ছাত্রলীগ নেতা ও রসায়ন বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী গৌতম কুমার দাস, তুষার, ফেরদৌস, নোবেল, গোলাম রাব্বি, মুরসালিন, মুরাদ, সোহেল, তানভীর, রায়হান, রাহাত, সৌমিক, তারেক মীর, সজীব ও নাফিস।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী জানান, আমরা যারা প্রত্যয়ের সঙ্গে ছিলাম তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর প্রত্যয়কে দেখতে চিকিৎসক এসেছিলেন। তখন তারা অ্যাম্বুলেন্সের ওপর হামলা করে সেটি ফিরিয়ে দেয়। প্রক্টরকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি আসেননি। একাধিক ছাত্রীর দিকেও চড়াও হয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মীর মশাররফ হোসেন হলের এক শিক্ষার্থী অসুস্থ এমন একটি ফোনকল পেয়ে তারা অ্যাম্বুলেন্স পাঠায়। তবে কে কল দিয়েছিল সে সম্পর্কে চিকিৎসা কেন্দ্রের কেউ বলতে পারেননি।
তবে যে ফোন নাম্বার থেকে কল দেওয়া হয়েছিল সেটিতে যোগাযোগ করে দেখা যায় নাম্বারটি শাখা ছাত্রলীগের নেতা গৌতম কুমার দাসের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ১৫ হাজার শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না। দরকার হলে আমি পদত্যাগ করব।
এদিকে হামলার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে রাতেই বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মিছিল নিয়ে তারা এ রাত পৌনে ১টায় প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান করছেন।
তবে অনশনরত শিক্ষার্থী সামিউলের ওপর হামলারে পেছনে ছাত্রলীগের কোনো হাত নেই বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেলের। তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি, মীর মশাররফ হোসেন হলের অনশনরত ওই শিক্ষার্থীর ওপর হামলা হয়েছে। তবে সেটা সাধারণ শিক্ষার্থীরা করেছে। সেখানে ছাত্রলীগের একজনও জড়িত নয়।’
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে খরচ বাড়ছে। কোনো যাত্রী আকাশপথে ভ্রমণ করলেই তাকে দিতে হবে ২০০ টাকার কর। একই সঙ্গে বিদেশগামী বিমানযাত্রীদের কর ৬৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শেষ (২০২৩-২৪ অর্থবছর) বাজেট উপস্থাপনকালে এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এদিকে পর্যটন খাত ও বিমানবহর সম্প্রসারণ ও বিমানবন্দর উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে।
পর্যটন খাত : অর্থমন্ত্রীর তার
বক্তৃতায় বলেন, ডলার সাশ্রয়ের জন্য অপ্রয়োজনীয় বিদেশ ভ্রমণ হ্রাস করা, কৃচ্ছ্রতার অভ্যাস গড়ে তোলা এবং নতুন রাজস্ব আয়ের খাত তৈরি করতে সার্কভুক্ত দেশগুলোতে ভ্রমণ কর ৬৭ শতাংশ বাড়িয়ে ২ হাজার, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যাওয়ার ক্ষেত্রে ৩৩ শতাংশ বেড়ে ৪ হাজার এবং অন্যান্য দেশে ৫০ শতাংশ বেড়ে ৬ হাজার টাকা ভ্রমণ কর দিতে হবে।
পর্যটন খাত নিয়ে ব্যাপক পরিকল্পনা : অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় আরও বলেছেন, পর্যটন খাতকে সমৃদ্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক মানের আবাসন ও বিনোদন সুবিধা নিয়ে কক্সবাজার জেলায় সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, নাফ ট্যুরিজম পার্ক এবং সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কভিড-১৯ মহামারীর সময় দেশের পর্যটনশিল্প মারাত্মক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে এ শিল্পকে সহায়তা করার জন্য সরকার ১ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছে। বাংলাদেশে পর্যটন সম্ভাবনাময় এলাকাগুলোতে উন্নয়নে সরকারি অর্থায়নে ১০টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন আছে। পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে একটি পর্যটন মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পর্যটনের উন্নয়ন ও বিকাশের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে ৩৬টি জেলার পর্যটন ব্র্যান্ডিং অনুসারে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার পর্যটন এলাকার ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সৌন্দর্য বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত আকর্ষণীয় পর্যটন স্থানগুলো সংরক্ষণে এবং পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর অবদান বিষয়ে ডকুমেন্টারি ও টেলিভিশন কমার্শিয়াল প্রস্তুত করা হচ্ছে।
বিমানবহর সম্প্রসারণ ও বিমানবন্দর উন্নয়ন : অর্থমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, সরকার দেশে আন্তর্জাতিক মানের বিমান পরিবহনব্যবস্থা গড়ে তুলতে নানাবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। আকাশপথে যাত্রীদের চাহিদা বিবেচনায় চলতি বছরে মালদ্বীপ ও কানাডার টরন্টোতে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট চালু করা হয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের
তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণকাজ ২০২৩ সালের মধ্যে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বর্তমানে দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই কাজ চলছে। কক্সবাজার বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করার লক্ষ্যে রানওয়ে সম্প্রসারণ ও নতুন টার্মিনাল ভবন নির্মাণকাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করে সেখানে একটি আঞ্চলিক হাব গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রকল্প প্রণয়ন করা হচ্ছে। তাছাড়া দেশের অন্যান্য অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অবকাঠামো, রানওয়ে, ট্যাক্সিওয়ে, হ্যাঙ্গার ও আমদানি-রপ্তানি পণ্য সংরক্ষণের শেডগুলো সংস্কার ও উন্নয়নসাধনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।