
ময়মনসিংহে ব্রহ্মপুত্র নদ খনন নিয়ে ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার সকালে শহরের কাচারীঘাট এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের হাঁটু জলে দাঁড়িয়ে ‘মৃতের চিৎকার’ শিরোনামে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
এতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেয়। কর্মসূচির মাধ্যমে ব্রহ্মপুত্র নদ খননের নামে যে প্রহসন চলছে তার প্রতিবাদ জানানো হয়। আয়োজনের পুরোটা জুড়ে চলে গান, কবিতা, ঝাঁপাঝাঁপি, আহাজারি। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, সংস্কৃতিকর্মী, রাজনৈতিক নেতারাও সংহতি প্রকাশ করে হাঁটুজলে নেমে চিৎকার করে প্রতিবাদ করেন।
নদের মধ্যে একটি টেবিলে সব ধরনের খাবার থাকলেও ছিল না শুধু পানি। ব্রহ্মপুত্রের চারিদিকে সবকিছু আছে; যেন পানির অভাবে সে ক্ষুধার্ত। নানা আর্তনাদ লেখা প্ল্যাকার্ড স্থাপন করা হয় নদে।
প্রতীকী এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে ময়মনসিংহ নগর এবং বিভিন্ন উপজেলা থেকে তরুণ-তরুণীরা যোগ দেন।
তাদের দাবি, ২০১৯ সালে ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা সরকারি বরাদ্দে ব্রহ্মপুত্র খনন প্রকল্প শুরু হয়। প্রথমে খনন করা হয় নগরের কাচারীঘাট এলাকায়। এর পরের বছর থেকে শুষ্ক মৌসুমে চর জাগছে নদে। অথচ খননের আগেও কখনো এমন চর দেখা যায়নি। ব্রহ্মপুত্রে কখনো এত কম পানি ছিল না।
তারা আরও বলেন, খননের নামে আসলে ব্রহ্মপুত্র নদকে মেরে ফেলা হচ্ছে। খনন করে বালু নদের পাড়ে রাখার কারণে সেসব এলাকা অবৈধ দখলদারদের কবলে চলে যাচ্ছে। যে কারণে ব্রহ্মপুত্র নদ এখন মরে গেছে।
আয়োজনের উদ্যোক্তা সংস্কৃতি কর্মী শামীম আশরাফ বলেন, ‘শিল্পের মানুষের চিন্তা নিয়ে সমন্বিতভাবে মৃতের চিৎকার আয়োজন করা হয়েছে। খননের পর ব্রহ্মপুত্রে শুধু বালু আর বালু। আমরা এমন বালুর সৌন্দর্য চাই না। আমরা চাই স্রোতস্বিনী ব্রহ্মপুত্র নদ। প্রতীকী কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আমরা ব্রহ্মপুত্রকে মেরে ফেলার প্রতিবাদ করছি। মৃত ব্রহ্মপুত্রের হয়ে চিৎকার করছি। আমরা চাই, আমাদের এ চিৎকার কারও কাছে পৌঁছাক।’
জানা গেছে, দখল, দূষণ আর পলি জমে ভরাট হয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র নদে নাব্য ফিরিয়ে আনতে ২০১৯ সালের শেষের দিকে শুরু হয় খননকাজ। প্রায় ২ হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নদের ২২৭ কিলোমিটার খনন করছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। খননের পর যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের সংযোগস্থল জামালপুরের কুলকান্দি থেকে কিশোরগঞ্জের টোক পর্যন্ত নদটি ৩০০ ফুট প্রশস্ত ও শুস্ক মৌসুমে ১০ ফুট গভীর থাকবে এমনটি কথা ছিল। ‘পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের নাব্য উন্নয়নে ড্রেজিং’ শীর্ষক প্রকল্পটি আগামী ২০২৪ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। পাঁচ বছর মেয়াদি প্রকল্পের প্রথম দুই বছর নদের ড্রেজিং এবং পরবর্তী তিন বছর রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করার কথা ছিল।
খননের দায়িত্বে থাকা বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মহসিন মিয়া মোবাইল ফোনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘২০১৯ সালে কাচারীঘাট এলাকায় খনন হয়। তবে বর্ষাকালে উজান থেকে পলি এসে নদে চর পড়ছে। সম্প্রতি আমি ওই এলাকাটি পরিদর্শন করেছি। দুই-এক দিনের মধ্যে আবারও ওই এলাকায় খননকাজ শুরু হবে।’
সারা জীবনের সঞ্চিত অর্থে অথবা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ফ্ল্যাট কিনতে চান অনেকে। আর এ ফ্ল্যাট কেনাবেচার ক্ষেত্রে মালিক ও ক্রেতার মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য রয়েছে অসংখ্য মধ্যস্থতাকারী। কিন্তু ফ্ল্যাট ক্রেতারা হরহামেশা মধ্যস্থতাকারী নামধারী কিছু প্রতারকের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছেন।
চক্রগুলো কখনো ফ্ল্যাটের জাল দলিল বানিয়ে ভুয়া মালিক সাজিয়ে বিক্রি করছে আবার কখনো অন্যের ফ্ল্যাট ক্রেতাকে দেখিয়ে বায়নার নামে টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করছে। ভুক্তভোগীদের অনেকে জাল দলিলের ফ্ল্যাট কিনে কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ নিয়ে পড়ছেন চরম বিপাকে। বিভিন্ন ব্যাংকও এ চক্রের ফাঁদে পা দিচ্ছে। আর এভাবেই ফ্ল্যাট প্রতারক চক্রগুলো হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। প্রতারিত হওয়ার পর টাকা ফেরত চাইলে অনেক ক্রেতাকে নির্যাতনসহ হত্যার হুমকিও দিচ্ছে।
সম্প্রতি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) ও ফ্ল্যাট কিনে প্রতারিত হওয়া একাধিক ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
গত ২ মে ফ্ল্যাট বিক্রির নামে অর্থ আত্মসাৎকারী প্রতারক চক্রের এক হোতা জয়নাল আবেদীনসহ ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি ওয়ারী বিভাগ।
জানতে চাইলে অভিযানসংশ্লিষ্ট ডিবি ওয়ারী বিভাগের পরিদর্শক সাহাব উদ্দিন আজাদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জয়নাল গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে প্রতারণা করে আসছেন। ফ্ল্যাট বিক্রির নামে প্রতারণা ও ব্যাংক থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নিয়ে অসংখ্য মানুষকে নিঃস্ব করেছেন। আর প্রতারণার সেই টাকায় রাজধানীর ভাটারা এলাকায় ৭ কোটি টাকায় একটি সাততলা বাড়ি, উত্তরায় ১৫০০ স্কয়ার ফিটের একটি ফ্ল্যাট, এয়ারপোর্টের পাশে ও মিরপুরে দুটি ফ্ল্যাট কিনেছেন।’ ডিবি কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি জয়নালের বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে।’
ভুক্তভোগী রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা জাহিন সুজ নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. হাফিজুর রহমান দেশ রূপান্তরকে জানান, ফ্ল্যাট কেনাবেচায় মধ্যস্থতাকারী জয়নাল আবেদীনের মাধ্যমে ২ কোটি ৩০ লাখ টাকায় রাজধানীর ভাটারা এলাকায় ২২০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট কেনেন তিনি। কিন্তু পরে জানতে পারেন তিনি প্রতারিত হয়েছেন। এ ঘটনায় হাফিজুর গত ৫ এপ্রিল ডিএমপির ভাটারা থানায় ও ৩ মে ওয়ারী থানায় পৃথক দুটি মামলা করেন।
ভাটারা থানায় করা মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, মিরপুরের দারুস সালাম এলাকার বাসিন্দা জয়নাল আবেদীনের মাধ্যমে সালমা কাশেম নামে একজন নারীর কাছ থেকে ভাটারায় ফ্ল্যাট কেনার জন্য টাকা দেন। গত বছর ৩০ নভেম্বর ফ্ল্যাটটি সালমা কাশেম দলিল করে দেন। পরে ফ্ল্যাটটি বুঝে নেওয়ার জন্য গেলে হাফিজুর জানতে পারেন সালমা কাশেম নামে যে নারী ফ্ল্যাট দলিল করে দিয়েছেন তিনি প্রকৃত মালিক নন। এরপর হাফিজুর মধ্যস্থতাকারী জয়নাল আবেদীনের কাছে টাকা ফেরত চাইলে টালবাহানা শুরু করেন। টাকার জন্য চাপ দিলে জয়নাল তার সহযোগী তানভীর (জয়নালের শ্যালক), মো. রফিক, রুজেল, আলিফ ও অজ্ঞাতনামা চার-পাঁচজনকে সঙ্গে নিয়ে হাফিজুরকে বেদম মারধর করে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে সাদা স্ট্যাম্পে ও তার কোম্পানির সাদা চেকে স্বাক্ষর নিয়ে রাখে।
এ ঘটনায় গত ৩০ এপ্রিল হাফিজুর আবার ডিবিতে অভিযোগ করেন। এর ভিত্তিতে ডিবি ওয়ারী বিভাগ গত ২ মে রাজধানীর বিভন্ন এলকায় অভিযান চালিয়ে জয়নালসহ ফ্ল্যাট প্রতারক চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। এরপরই অনুসন্ধানে ডিবি জানতে পারে, জয়নালের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় গত বছর মেঘনা ব্যাংক ও চলতি বছর আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইপিডিসি প্রতারণার মামলা করেছে।
হাফিজুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফ্ল্যাট বিক্রির সময় চক্রটি প্রকৃত মালিক সালমা কাশেমের জাতীয় পরিচয়পত্র জাল করে, তার পাসপোর্টের সব তথ্য ঠিক রেখে শুধু ছবি পরিবর্তন করে অন্য এক নারীকে মালিক সাজিয়ে ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রি করে দেয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘সঞ্চিত ৯০ লাখ টাকা এবং একটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা ঋণ করে ফ্ল্যাট কেনার টাকা দিয়েছিলাম। এখন একদিকে ঋণের বোঝা, অন্যদিকে প্রাণের ভয় নিয়ে দিন পার করছি।’
জয়নালের প্রতারণার আরেক শিকার মিরপুরের তেল-আটার এক ব্যবসায়ী। তিনিও এখন নিঃস্ব, ব্যাংকের ঋণ খেলাপের মামলায় ফেরারি আসামি। প্রতারক চক্র তাকে হত্যার হুমকি দেওয়ায় পুলিশের কাছেও কোনো অভিযোগ করেননি।
ওই ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, জয়নাল মিরপুরের ক্যাপিটাল মার্কেটে অফিস খুলে ফ্ল্যাট বেচাকেনার মধ্যস্থতা করতেন। প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের কাছে গিয়ে ভালো মানের ফ্ল্যাট কিনে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতেন। ২০২১ সালে তার মাধ্যমে ভাটারা থানা এলাকায় ওজিয়া আফরিন সনিয়া নামে এক নারীর কাছ থেকে ২ কোটি টাকা মূল্যে দুটি ফ্ল্যাট কেনেন। ফ্ল্যাটমালিক সনিয়া ছিলেন জয়নালের আত্মীয়। ওই ফ্ল্যাট কেনার সময় পৃথক চারটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে জয়নাল ৫ কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়ে নিয়ে টাকা মেরে দিয়েছেন। পরে ওই ফ্ল্যাটটি ভাড়া দেওয়ার নামে দখল করেছেন জয়নাল। ঋণের কিস্তি না দিতে পারায় ব্যবসায়ীর নামে মামলা করেছে ব্যাংকগুলো।
জয়নালের প্রতারণা ফাঁদে পা দেন মানিকগঞ্জের অপু ঘোষ। তাকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকায় একটি ফ্ল্যাট কিনে দেওয়ার কথা বলে অগ্রিম ২ লাখ টাকা নেন জয়নাল। অপু ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ব্যাংক ঋণ নিয়ে ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রি করতে গেলে ব্যাংকের কর্মকর্তা বলেন ফ্ল্যাটের কাগজপত্রে ঝামেলা আছে। পরে আমি ওই ফ্ল্যাট আর কিনিনি।’
এ চক্রের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া আরও চারজনের সঙ্গে কথা হয়েছে এ প্রতিবেদকের। তারা কীভাবে জয়নালের প্রতারণার শিকার হয়েছেন জানালেও প্রাণভয়ে নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করেন।
ডিবির একাধিক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রতারক চক্রগুলোর ভয়ংকর দিক হচ্ছে অনেক ফ্ল্যাটমালিকের কাছে অল্প কিছু টাকায় ফ্ল্যাটের বায়না করে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য তার কাছ থেকে কাগজপত্র নেয়। পরে জাল দলিল বানিয়ে অন্যকে মালিক সাজিয়ে সেই ফ্ল্যাট বিক্রি করে দিচ্ছে এবং ওই একটি ফ্ল্যাট দেখিয়ে তিন-চারটি ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে। কিন্তু ফ্ল্যাটের প্রকৃত মালিক এর কিছুই জানেন না।
একটা খবরে হঠাৎ চোখ আটকে গেল। চমকে উঠলাম প্রথমে। তারপর বিষন্ন হলাম। জিনাত বুক সাপ্লাই লিমিটেড নামের বইয়ের দোকানটির দরজা ৬০ বছর পর বন্ধ হয়ে গেল। গত ৩০ এপ্রিল ঢাকা নিউমার্কেটে এ দোকানটির শাটার নামল চিরকালের মতো। বইয়ের দোকান তো রেসের ঘোড়া নয় যে ট্র্যাকের মাঝপথে দম হারিয়ে বসে যাবে! বইয়ের দোকানটির আলো নিভে যাওয়ার সংবাদে মন বিষন্ন হলো। কত স্মৃতি এক লহমায় চোখের সামনে ভেসে উঠল। ভাবলাম, সেই মানুষটার কথা যিনি আমার কন্যাকে দোকানের কাউন্টারে বসে বলেছিলেন, ‘আপনার বাবা আপনার চাইতে ছোট বয়স থেকে আমাদের দোকানে আসতেন।’ কোথায় যাবেন তিনি এখন? কী করবেন এই অবেলায় কাজ ফুরিয়ে যাওয়া অবসরে?
এ শহরের বইয়ের দোকানকে জড়িয়ে আমার অনেক স্মৃতি। শৈশবে বাবার হাত ধরে জিনাতে যাওয়ার সূত্রপাত আমার। তখন ঢুকতে ভারী কাচের দরজাটা বসেনি। তাদের বইয়ের শেলফে সাজানো সারি সারি বই হাতড়ে হাতড়ে দেখতাম। ইংরেজি বইয়ের প্রাধান্য ছিল দোকানটিতে বরাবরই। আমি রূপকথা আর অ্যাডভেঞ্চারবিষয়ক বই কিনতাম। বয়স বাড়ল আমার এই শহরে। কিন্তু জিনাতে ঢুকে বই খোঁজার অভ্যাসটা নেশায় পরিণত হলো। কী যে দারুণ সব বই জড়ো হতো জিনাতে! কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে নিউমার্কেটে গেছি অথচ প্রচুর বইয়ের অদ্ভুত গন্ধমাখা জিনাতে একবার ঢুকিনি এমনটা হয়নি কখনো। অনেক সময় পছন্দের বইটা কেনার টাকা থাকত না পকেটে। তখন কাউন্টারে দাঁড়িয়ে সেলসম্যানদের সঙ্গে বই সম্পর্কিত নানান গল্প ফুরাত না। বইয়ের দোকানের লোকজন সবসময় খুব নিম্নকণ্ঠে কথা বলেন। এটা আমার একটা পর্যবেক্ষণ।
খালেদ ভাইও এমনই নিচু গলায় কথা বলতেন। তাকে পাঞ্জাবি আর প্যান্ট পরিহিত অবস্থায় দেখা যেত বেশি। কাঁধে একটা কাপড়ের ঝোলা আর ঠোঁটে ঝুলছে ছাইয়ের লম্বা মাথা বের হয়ে থাকা সিগারেট। তাকে মাঝেমধ্যে মনে করিয়ে দিতে হতো ছাই ঝাড়ার কথা। ভীষণ মৃদুভাষী ছিলেন একদা ঢাকা শহরে বিখ্যাত বইয়ের দোকান ম্যারিয়েটার কর্ণধার খালেদ ভাই। কোনোদিন হাসিমুখ ছাড়া দেখিনি তাকে। আশির দশকের শুরুর দিকে ঢাকা স্টেডিয়ামের দোতলায় ম্যারিয়েটায় আমার যাতায়াতের শুরু। খালেদ ভাইয়ের কাছে থাকত রাজ্যের বইয়ের খবর। আলাদা আলাদাভাবে তার দোকানে আসা সবার বই পড়ার আগ্রহের ক্ষেত্রটা জানতেন তিনি। বাংলা ও ইংরেজি ভাষার বই আর ম্যাগাজিন আমদানি করত ম্যারিয়েটা। খালেদ ভাই নতুন বই এলেই নিয়মিত ক্রেতাদের নামে আলাদা আলাদা খামে তাদের সম্ভাব্য পছন্দের বই আর পত্রিকা রেখে দিতেন।
ছোট্ট একচিলতে দোকান ছিল ম্যারিয়েটা। বসার জায়গাও ছিল না। বই আর লেখক নিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে খালেদ ভাইয়ের সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা জমে উঠত তখন। কে আসত না তখন ম্যারিয়েটায়! পত্রিকার সাহিত্য পাতার সম্পাদক, কবি, গল্পকার, সাংবাদিক, ফুটবলার, পেশাজীবী, ব্যবসায়ী। সবাই বইয়ের পাঠক। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ম্যারিয়েটার চা আর আড্ডার লোভে সন্ধ্যাবেলা আমার ঠাঁই হতো দোকানের সামনের উঁচু রেলিংয়ে। ম্যারিয়েটায় নিয়মিত আড্ডাধারীরা আসতে শুরু করতেন সন্ধ্যা নামার পর। সাংবাদিক খায়রুল আনোয়ার মুকুল, সৈয়দ শহীদ, প্রয়াত আহমেদ ফারুক হাসান, বাংলাদেশে চলচ্চিত্র আন্দোলনের পুরোধা মুহম্মদ খসরু। তখন ম্যারিয়েটায় আমাদের আড্ডায় আসতেন কবি মহাদেব সাহা, মোহাম্মদ রফিক, অরুণাভ সরকার, ত্রিদিব দস্তিদার, প্রয়াত সাংবাদিক মিনার মাহমুদ এবং কখনো কখনো কবি নির্মলেন্দু গুণ। খালেদ ভাইকে তখন দেখতাম তাদের সঙ্গে সাহিত্যের আলোচনায় নিবিড় হয়ে যেতে।
ম্যারিয়েটাও একদিন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বন্ধ হয়ে গেছে জিনাতের মতো। খালেদ ভাইয়ের মৃত্যুর পর শাহবাগের আজিজ মার্কেটে কিছুদিন টিমটিম করে টিকে থাকার পর বইয়ের এ চমৎকার দোকানটিরও অপমৃত্যু ঘটে।
সেই কবে উঠে গেছে বিজয়নগরের গলিতে পুরনো বইয়ের দুটি দোকানও। কত দুপুর কেটেছে আমার দোকান মালিক শাজাহান ভাইয়ের সঙ্গে গল্প করে আর পুরনো বই ঘেঁটে। কলকাতা থেকে পুরনো ম্যাগাজিন আর বই আনতেন শাজাহান ভাই। ঘুরতে ঘুরতে চলে যেতাম তার ওখানে। পুরনো বইপত্রের স্তূপে ডুবুরি নামিয়ে কখনো দেখা মিলত অপূর্ব সব হীরক খন্ডের।
কত স্মৃতি এ শহরে ঝাঁপ দিল অন্ধকারে। হারিয়ে গেল কত মানুষের স্মৃতি। পুরানা পল্টনের ফুটপাতে চেনামুখ বইয়ের দোকানিরা বিদায় নিলেন তাদের বইপত্র নিয়ে। অন্তরালে চলে গেল শান্তিনগর মোড়ে লোকসাহিত্য বিশারদ মুহম্মদ মনসুর উদ্দিন সাহেবের বড় ছেলের বইয়ের দোকান হাসি প্রকাশনালয়। ভদ্রলোকের ডাকনাম ছিল ফড়িং। মনে পড়ে, কিশোর বয়সে তার দোকানে বই কিনতে গেলে বসে বই পড়তে বলতেন। নানা ধরনের বই হাতে তুলে দিতেন। সব স্মৃতি কেমন ছায়া ছায়া হয়ে হাত ছেড়ে দিচ্ছে। একটা শহরে ভালো লাগার পাট উঠে যেতে থাকলে হাতের মুঠোয় মৃত সময় ছাড়া আর কী থাকে? হয়তো কেউ বলবেন, ‘বিদায় করার পর একটা পুরনো আয়নার জন্য এতটা শোক না থাকাই ভালো।’
বঙ্গবন্ধু সেতুর সোয়া কিলোমিটার দক্ষিণে যমুনা নদীতে বড় বড় পাঁচটি ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন ও বিক্রির উদ্যোগ নেওয়ায় বাঁধ ভেঙে সরকারের আড়াইশ কোটি টাকার প্রকল্প ভেস্তে যাওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় দুই সহস্রাধিক পরিবারের বাড়িঘর নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যমুনার ভাঙনে ২০২১ সালে ওই স্থানের ছয়-সাতটি বাড়িঘর নদীর পেটে চলে যায়। ২০২২ সালের বর্ষায় গাইড বাঁধের মাঝখানে দুই-তিন জায়গায় দেবে যায়। এ অবস্থায় আবার ভাঙন আতঙ্কে এলাকাবাসী বালু উত্তোলন ও বাল্কহেড থেকে খালাস বন্ধে প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
জানা যায়, বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার (নিউ ধলেশ্বরী-পুংলী-বংশাই-তুরাগ-বুড়িগঙ্গা রিভার সিস্টেম) প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) বঙ্গবন্ধু সেতুর ভাটিতে নিউ ধলেশ্বরী নদীর মুখে (অফটেক) খনন ও গাইড বাঁধ নির্মাণ করেছে। ২৩৪ কোটি ২৪ লাখ ৭৮ হাজার টাকায় ১৫৩০ মিটার গাইড বাঁধ (অফটেক বাঁধাই) নির্মাণ করা হয়। টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়নের বেলটিয়া ও হাটবাড়ী আলিপুর অংশে চারটি লটে ভাগ করে পৃথক চারটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওই গাইড বাঁধ নির্মাণ করে।
স্থানীয়রা জানায়, গাইড বাঁধ নির্মাণ হওয়ায় বেলটিয়া এলাকার নদীভাঙা মানুষ ঘরবাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছে। দুই বছর আগে বাংলাদেশ সেতু কর্র্তৃপক্ষ (বাসেক) ও পাউবোর নদীতীর সীমানায় বেলটিয়ার অংশে ভাঙনের ফলে বিশালাকার পুকুর তৈরি হয়। ওই স্থানে প্রথমে জিও ব্যাগ ও সিমেন্টের তৈরি ব্লক ফেলে ভাঙন রোধ করা হয়। পরে ভাঙনের ফলে কর্র্তৃপক্ষ প্রণীত নকশা পরিবর্তন করে চন্দ্রাকারে গাইড বাঁধ নির্মাণ করতে বাধ্য হয়। বর্তমানে ওই চন্দ্রাকার বাঁধের স্থানে বড় বড় পাঁচটি ড্রেজার মেশিন স্থাপন করার নদী ভাঙনের আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কে এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্বপাড় গোলচত্বর পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার এলাকা চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আবদুল মোনেম লিমিটেড। ওই প্রকল্পের সড়ক প্রশস্তকরণে বালু-মাটি সরবরাহ করতে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল সাব-ঠিকাদারি নিয়েছে। তাদের মধ্যে গোহালিয়াবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল হাই আকন্দ নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অন্য অংশীদারদের মধ্যে রয়েছেনÑ গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জহুরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম (মেম্বার), বালু ব্যবসায়ী মাসুদ রানা, ৮ নম্বর (বেলটিয়া) ইউপি সদস্য মো. শাজাহান আলী, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হযরত আলী তালুকদার, সাবেক ইউপি সদস্য সুলতান ফকির প্রমুখ। তারা যমুনার বামতীরের বেলটিয়া অংশে বড় বড় পাঁচটি ড্রেজার ও তিনটি বাল্কহেড (বলগেট) এনে পাইপের চারটি সারি প্রস্তুত করেছেন। আরও একটি প্রস্তুতের পর্যায়ে রয়েছে। তিনটি বাল্কহেডের একটিতে যমুনায় ড্রেজার বসানোর জন্য স্টিলের পাইপ আনা হয়েছে। অন্যটি থেকে বালু খালাস করা হচ্ছে এবং আরেকটি তীরে ভেড়ানো রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন অংশীদার জানান, গোহালিয়াবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে সিরাজগঞ্জের জনৈক তাপস ঠিকাদারের নেওয়া বালুঘাটে ৩০ লাখ টাকা দিয়ে কিয়দংশের অংশীদার হয়েছে। সেখান থেকে বাল্কহেডের মাধ্যমে বালু এনে বেলটিয়ায় খালাস করা হচ্ছে। ওই বালু আবদুল মোনেম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করার কথা রয়েছে। তারা আরও জানান, সিরাজগঞ্জ থেকে বালু কিনে এনে তেমন লাভ হচ্ছে না। যমুনায় জেগে ওঠা চর থেকে বালু আনতে পারলে কিছুটা লাভের মুখ দেখা যেতে পারে। বাংলাদেশ সেতু কর্র্তৃপক্ষের (বাসেক) বঙ্গবন্ধু সেতুর সাইট অফিস ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে কথা বলা হচ্ছে মৌখিক অনুমতি পেলেও যমুনায় জেগে ওঠা চর কেটে বালু আনা হবে।
কালিহাতী উপজেলার আলিপুর গ্রামের প্রবাসী হাতেম আলী জানান, যমুনায় তাদের বাড়ি দুই দফায় ভেঙে গেছে। নিউ ধলেশ্বরী নদীর মুখ বাঁধাই করায় তিনি ও তার দুই ভাই মফিজ উদ্দিন ও হাফেজ উদ্দিন যমুনার বেলটিয়া অংশে পৈতৃক জমিতে নতুন বাড়ি করেছেন। তিনি দুই মেয়ে ও এক ছেলে এবং ভাইদের নিয়ে সেখানে বসবাস করছেন। তিনি জানান, নদীর মুখে বাঁধ নির্মাণ করায় এ অঞ্চলের মানুষ বসবাসের নির্ভরতা খুঁজে পেয়েছে। এক কথায় বলতে গেলে সরকার বাঁধ নির্মাণ করে ‘বাপের’ উপকার করেছে।
বাসেকের বঙ্গবন্ধু সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সেতুর উজানে ৬ ও ভাটিতে ৬ এ ১২ কিলোমিটার এলাকা কেপিআই হিসেবে চিহ্নিত। এই এলাকার মধ্যে ড্রেজার বসানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কেউ ড্রেজার বসানো বা বালু উত্তোলনের চেষ্টা করলে কঠোর হস্তে দমন করা হবে। লোড-আনলোড করার বিষয়টি আমার জানা নেই। এ বিষয়ে কেউ আমার সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি। মহাসড়কে বালু দেওয়ার জন্য লোড-আনলোড করে থাকলে বিষয়টি পাউবো বা স্থানীয় প্রশাসন দেখার কথা। তাছাড়া গাইড বাঁধের ক্ষতি হবে এমন কাজ কাউকেই করতে দেওয়া হবে না।’
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, ‘কোনো কারণেই গাইড বাঁধের ক্ষতি এবং মানুষের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি করা যাবে না। যমুনায় ড্রেজার বসানো ও লোড-আনলোডের বিষয়টি আমরা খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’ তবে বাঁধের বিষয়ে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন।
কক্সবাজারে ডুবন্ত ট্রলারে অর্ধগলিত ১০ লাশ উদ্ধারের ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার আরেক আসামি গিয়াস উদ্দিন ওরফে মুনীর (৩২) আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, পাঁচ বছর ধরে ট্রলারে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকলেও আলোচিত এই ১০ হত্যাকাণ্ডের সময় উপস্থিত ছিলেন না। তখন তিনি চকরিয়ার একটি লবণমাঠে কাজে ব্যস্ত ছিলেন। সাগরে মাছ ধরার ট্রলারে ডাকাতি করতে গিয়েই পিটুনিতে ওই ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ট্রলারে ডাকাতির ঘটনায় মহেশখালী পৌরসভার এক কাউন্সিলর ও এক জলদস্যুর জড়িত থাকার কথা তুলে ধরেছেন মুনীর।
গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা মুনীরের এই জবানবন্দি নথিভুক্ত করেন কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আসাদ উদ্দিন মো. আসিফ। তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা, আইনজীবী ও আদালতের সংশ্লিষ্ট কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
ডাকাতিতে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেওয়া মুনীর কক্সবাজারের চকরিয়ার বদরখালী এলাকার মো. নুর নবীর ছেলে। সংশ্লিষ্টরা জানান, জবানবন্দিতে মুনীর বলেছেন, পেশায় লবণচাষি হলেও মাঝেমধ্যে সাগরে নেমে মাছ ধরার ট্রলারে ডাকাতি করেন। কারণ সংসারে অভাব-অনটন লেগে থাকে। চার-পাঁচ বছর ধরে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত। অনেক ট্রলারে হামলা চালিয়ে মাছ, জাল ও জেলেদের মোবাইল ফোন লুট করেছেন তিনি। তাকে ডাকাতিতে নামিয়েছেন মহেশখালীর সোনাদিয়ার মো. সুমন ডাকাত।
জবানবন্দিতে মুনীর আরও বলেন, শেষবার তিনি অন্য কয়েকজন জলদস্যুর সঙ্গে সাগরে ডাকাতিতে নামেন দ্বিতীয় রোজায়। জলদস্যু সুমনের কথায় ওই সময় মহেশখালী পৌরসভার কাউন্সিলর খায়ের হোসেনের মায়ের দোয়া ট্রলার নিয়ে সাগরে নামেন। তখন ট্রলারে দেখা হয় মহেশখালীর নুরুল কবির (ডুবন্ত ট্রলারে নিহত), চকরিয়ার কোনাখালীর সাইফুল ইসলামসহ (ডুবন্ত ট্রলারে নিহত) আরও সাত জলদস্যুর সঙ্গে। রাত ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে তারা একটি মাছ ধরার ট্রলারে লুটপাট চালান। ট্রলারটিতে মাছ ছিল না। তবে মাছ ধরার জাল, এক ব্যারেল ডিজেল ও পাঁচ-ছয়টি মোবাইল ফোন লুট করা হয়। পরের রাতে আরেকটি ট্রলার থেকে প্রায় ৬০০টি ইলিশ মাছ এবং পাঁচ-ছয়টি মোবাইল ফোন লুট করা হয়। পরদিন দুপুরে লুটের মালামালসহ মায়ের দোয়া ট্রলারটি কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক উপকূলে পৌঁছালে কাউন্সিলর খায়ের ও জলদস্যু সুমন আরেকটি ট্রলার নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। কিছুক্ষণ পর লুটের মালামালগুলো ট্রলারে তুলে নিয়ে মহেশখালীর দিকে চলে যান খায়ের ও সুমন। ডাকাতির হিস্যা হিসেবে মুনীরকে দেওয়া হয় আট হাজার টাকা। ওই যাত্রায় সাইফুলকে ট্রলারে নিয়ে যান মুনীর। সাইফুলের জীবনে ওটাই প্রথম ডাকাতির ঘটনা ছিল।
জবানবন্দিতে মুনীর দাবি করেন, ডুবন্ত ট্রলারে ১০ জনের অর্ধগলিত যে লাশ পাওয়া যায় তাতে তিনি জড়িত ছিলেন না। থাকলে তিনিও গণপিটুনিতে মারা যেতেন। ৭ এপ্রিল ট্রলার নিয়ে সাগরে ডাকাতিতে নামার জন্য সুমন ও নুরুল কবির তাকে কয়েকবার ফোন করেছিলেন। কিন্তু লবণের মাঠে কাজ থাকায় ওই যাত্রায় তিনি যেতে পারেননি। ডাকাতি করতে গিয়ে ১০ জনের গণপিটুনিতে মৃত্যুর খবর শুনে তিনি সুমনকে ফোন করেন। তখন সুমন বলেছিলেন, তিনি তাদের (নিহত ১০ জন) মরতে পাঠাননি, পাঠিয়েছিলেন মালামাল লুটপাট করতে। রোজার মাসে তাদের (নিহতরা) হত্যা করা হয়েছে, তাই তারা সবাই শহীদ হয়েছেন।
মুনীরের দেওয়া জবানবন্দিতে নাম আসার বিষয়ে বক্তব্য জানতে গতকাল শুক্রবার কাউন্সিলর খায়েরের মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি মহেশখালী থানার ওসির কক্ষে আছেন জানিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে বারবার কল করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। অবশ্য মহেশখালী থানার ওসি প্রণব চাকমা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, ‘কাউন্সিলর খায়ের মিথ্যা বলেছেন। তিনি আমার রুমে আসেননি।’ কাউন্সিলর খায়েরকে আটক করা হয়েছে কি নাÑ জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘এটি আমি বলতে পারব না। এটি বলতে পারবেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।’
গত ২৩ এপ্রিল বিকেলে কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক উপকূলে ডুবন্ত একটি মাছ ধরার ট্রলার থেকে ১০ জনের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস। ২৫ এপ্রিল কক্সবাজার সদর মডেল থানায় ৪ জন (মহেশখালীর মাতারবাড়ীর বাইট্যা কামাল, করিম সিকদার, আনোয়ার হোসেন ও বাবুল মাঝি) এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করে মামলা করেন ডুবন্ত ট্রলারের মালিক ও মহেশখালীর হোয়ানক ইউনিয়নের বাসিন্দা নিহত সামশুল আলমের স্ত্রী রোকিয়া আকতার।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিদের ৪টি ট্রলারের ৫০ থেকে ৬০ জন লোক মিলে সামশুলের ট্রলারটি আটকে পরবর্তী সময়ে সামশুলসহ অন্যদের গলায় রশি পেঁচিয়ে, হাত-পা রশি ও জাল দিয়ে বেঁধে মারধর করে মাছ রাখার হিমাগারের ভেতর আটকে রাখে এবং ওপর থেকে ঢাকনায় পেরেক মেরে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে ট্রলারের তলা ফুটো করে দেয়। এতে সেটি ডুবে যায়। সামশুলের সঙ্গে এজাহারে নাম থাকা চার আসামির পূর্বশত্রুতা ছিল।
এ মামলায় গ্রেপ্তার কামাল হোসেন ওরফে বাইট্যা কামাল এর আগে আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেছেন, ঘটনার সময় তিনি কক্সবাজার শহরে ছিলেন। তবে ট্রলারের মাঝি-মাল্লাদের সঙ্গে তার কয়েক দফার কথায় নিশ্চিত হয়েছেন যে ১০ জনের ট্রলারটি সাগরে ডাকাতি করতে নেমেছিল। ডাকাতির একপর্যায়ে কয়েকটি ট্রলারের জেলেরা ১০ জনকে আটক করে প্রথমে পিটুনি দেন। এরপর গুম করার জন্য লাশগুলো বরফ রাখার কক্ষে আটকে রেখে ট্রলারটি সাগরে ডুবিয়ে দেওয়া হয়।
আর মামলার অপর দুই আসামি (ট্রলারের মাঝি) আবু তৈয়ুব ও ফজল কাদের আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেছেন, ঘটনাটি তাদের চোখের সামনে ঘটলেও হত্যাকাণ্ডে তারা জড়িত ছিলেন না।
পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি উপজেলার গুয়ারেখা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা সদ্য প্রয়াত আব্দুর রব সিকদারের স্মরণে কোরআন খতম ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
স্বরূপকাঠি থানা কল্যাণ সমিতির উদ্যোগে ঢাকার খিলগাঁও মডেল হাইস্কুল মিলনায়তনে এ স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। সমিতির সভাপতি মো. হুমায়ূন কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্মরণসভা পরিচালনা করেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন।
স্মরণসভায় বক্তব্য রাখেন সাবেক সচিব শামসুল হক, সাবেক অতিরিক্ত সচিব ময়েজউদ্দিন আহমেদ, হোসনে আরা সেলিনা, দুদকের সাবেক কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান, একেএম মিজানুর রহমান, ওয়াহিদুল ইসলাম মুরাদ, তাহেরুল কবির দোলন, শেখ মো. শাহীন, মো. পারভেজ, কাজী সাইফুদ্দিন বখতিয়ার জাহিদ, জিয়াউল আহসান স্বপন, মো. পারভেজ, রিজভী ভূইয়া, ইঞ্জিনিয়ার পলাশ সিকদার, ইঞ্জিনিয়ার মিলন কৃষ্ণ মণ্ডল প্রমুখ।
স্মরণসভায় প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রব সিকদারের কর্মময় জীবন নিয়ে আলোচনা করা হয়। বক্তারা তাঁর সমাজ কল্যাণমুখী নানা কর্মকাণ্ড তুলে ধরে বলেন, তিনি ছিলেন একজন প্রকৃত সমাজসেবক। তাঁর মৃত্যুতে এলাকাবাসী একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক ও অভিভাবক হারালো।
সভায় প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রব সিকদারের সম্মাননা স্মারক তুলে দেয়া হয় তার সন্তান ইঞ্জিনিয়ার পলাশ সিকদারের হাতে। মিলাদ মাহফিলে মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) হলের আসন দখল করে রাখার বিরুদ্ধে অনশনরত ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম প্রত্যয়সহ তাকে সমর্থন দেওয়া কয়েকজনের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ।
মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।তারা বলেন, ওই স্থানে গত বুধবার রাত থেকে অনশনে ছিলেন প্রত্যয়। তাকে মারধরের পর অ্যাম্বুলেন্সে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যায় হামলায় জড়িতরা। এ সময় প্রত্যয়ের দাবির সঙ্গে সংহতি জানানো প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের ওপরও হামলা হয়।
জানা গেছে, তিন দাবিতে গত বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনের খেলার মাঠে অনশনে বসেন প্রত্যয়। তিনি ওই হলের আবাসিক ছাত্র। তার অন্য দুটি দাবি ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল থেকে অছাত্রদের বের করা ও হলের গণরুমে অবস্থান করা বৈধ ছাত্রদের আসন নিশ্চিত করা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী এবং নবীন শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছিলেন। ওই সময় ক্যাম্পাসে লোডশেডিং চলছিল। হঠাৎ করেই প্রত্যয়সহ তার সঙ্গে থাকা অন্যদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
হামলায় জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচী, মার্কেটিং বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের সৃষ্টি, চারুকলা বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের মনিকা, বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের ৪৮তম ব্যাচের সুরসহ আরও কয়েকজন আহত হন বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যমতে, হামলায় ৩০ থেকে ৪০ জন অংশ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। অভিযুক্তদের কয়েকজন হলেন ছাত্রলীগ নেতা ও রসায়ন বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী গৌতম কুমার দাস, তুষার, ফেরদৌস, নোবেল, গোলাম রাব্বি, মুরসালিন, মুরাদ, সোহেল, তানভীর, রায়হান, রাহাত, সৌমিক, তারেক মীর, সজীব ও নাফিস।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী জানান, আমরা যারা প্রত্যয়ের সঙ্গে ছিলাম তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর প্রত্যয়কে দেখতে চিকিৎসক এসেছিলেন। তখন তারা অ্যাম্বুলেন্সের ওপর হামলা করে সেটি ফিরিয়ে দেয়। প্রক্টরকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি আসেননি। একাধিক ছাত্রীর দিকেও চড়াও হয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মীর মশাররফ হোসেন হলের এক শিক্ষার্থী অসুস্থ এমন একটি ফোনকল পেয়ে তারা অ্যাম্বুলেন্স পাঠায়। তবে কে কল দিয়েছিল সে সম্পর্কে চিকিৎসা কেন্দ্রের কেউ বলতে পারেননি।
তবে যে ফোন নাম্বার থেকে কল দেওয়া হয়েছিল সেটিতে যোগাযোগ করে দেখা যায় নাম্বারটি শাখা ছাত্রলীগের নেতা গৌতম কুমার দাসের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ১৫ হাজার শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না। দরকার হলে আমি পদত্যাগ করব।
এদিকে হামলার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে রাতেই বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মিছিল নিয়ে তারা এ রাত পৌনে ১টায় প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান করছেন।
তবে অনশনরত শিক্ষার্থী সামিউলের ওপর হামলারে পেছনে ছাত্রলীগের কোনো হাত নেই বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেলের। তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি, মীর মশাররফ হোসেন হলের অনশনরত ওই শিক্ষার্থীর ওপর হামলা হয়েছে। তবে সেটা সাধারণ শিক্ষার্থীরা করেছে। সেখানে ছাত্রলীগের একজনও জড়িত নয়।’
অসুস্হ সাবেক ফুটলার মোহাম্মদ মহসীনের পাশে দাড়িয়েছেন তার সাবেক সতীর্থরা। মোহামেডান ক্লাবের সাবেক ফুটবলার ও সোনালী অতীত ক্লাবের সদস্যরা বিকেলে বসে এই সিদ্ধান্ত নেন। পরে মহসীনের বাসায় যান তার সংগে দেখা করতে।সাবেক ফুটবলারদের মধ্যে ছিলেন আব্দুল গাফফার, জোসী, বাবলু, জনি, সাব্বির, রিয়াজ।
এসময় গাফফার জানান, মহসীনের চিকিৎসার জন্য বিসিবি সভাপতির উদ্যোগে বুধবার সকালে অসুস্হ ফুটবলারকে হাসপাতালে ভর্তি করবে।
হাসপাতাল থেকে সুস্থ ও স্বাভাবিক হয়ে ফেরার পর মহসীন কানাডায় ফিরে যেতে চাইলে সাবেক ফুটবলাররা সহায়তা করবে। মহসীন কানাডা থেকে দেশে ফিরেছেন মায়ের পাশে থাকতে। প্রায় নব্বই ছুই ছুই মহসিনের মায়ের পায়ে ব্যথা। মহসীনের পাশাপাশি তার মায়ের চিকিৎসার ব্যাপারেও সাবেক ফুটবলাররা পাশে থাকবেন বলে জানান আবদুল গাফফার।
রাজধানীর বনানীর একটি রেস্তোরাঁ থেকে জামায়াতে ইসলামীর বনানী শাখার ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তাদের মধ্যে বনানী থানা জামায়াতের আমির তাজুল ইসলাম এবং সেক্রেটারি আব্দুর রাফি রয়েছেন।
বনানী থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওয়ারলেস গেটে অবস্থিত নবাবী রেস্টুরেন্টে গোপন মিটিং করাকালে বনানী থানা জামায়াতে ইসলামী আমির তাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রাফিসহ ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
আটক ১০ জনের মধ্যে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাও রয়েছেন।
প্রথম সেটে হেরে পিছিয়ে পড়েছিলেন। তবে পরের সেটেই ঘুরে দাঁড়ান। ৩ ঘণ্টা ৩৮ মিনিটের লড়াইয়ের পর কোয়ার্টার ফাইনালটা জিতে নিলেন নোভাক জকোভিচ। কারেন খাচানভকে ৪-৬, ৭-৬, ৬-২, ৬-৪ ব্যবধানে পরাজিত করে ফ্রেঞ্চ ওপেনের সেমিফাইনালে উঠলেন এই সার্বিয়ান।
কোয়ার্টার ফাইনালের শুরুটা দেখে মনে হচ্ছিল, দিনটা বোধহয় জকোভিচের নয়। তবে মাথা ঠান্ডা রেখেছিলেন তিনি। খাচানভ প্রথম সেট জিতে নেওয়ার পর দ্বিতীয় সেটেও সমানে সমানে লড়াই করেন। যদিও টাইব্রেকারে জোকোর সামনে দাঁড়াতে পারেননি তিনি।
ম্যাচে সমতা ফেরানোর পর এক বার লকার রুমে ফিরে যান জোকোভিচ। তার পর শুধু কোর্টেই ফিরলেন না। নিজের চেনা ছন্দেও ফিরলেন। তৃতীয় এবং চতুর্থ সেটে আর শুরুর মতো লড়াই করতে পারলেন না প্রতিযোগিতার ১১ নম্বর বাছাই।
ফ্রেঞ্চ ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনালে মঙ্গলবার প্রতিযোগিতার প্রথম সেট হারলেন জোকোভিচ। হেরে যেতে পারেন এমন মনে না হলেও এ দিন ছন্দ পেতে কিছু সময় লেগেছে তার। ৩৬ বছরের জোকোভিচ কি সর্বোচ্চ পর্যায়ের টেনিসের ধকল আগের মতো সামলাতে পারছেন না আর?
এমন প্রশ্ন যখন উঁকি দিতে শুরু করছে, তখনই নিজের চেনা ছন্দে দেখা দিয়েছেন। কোয়ার্টার ফাইনালে খাচানভের বিরুদ্ধে সময় পেয়েছেন। সুযোগ পেয়েছেন। সেমিফাইনাল বা ফাইনালের প্রতিপক্ষরা কি ছন্দে ফেরার সময় বা সুযোগ দেবেন তাঁকে?
টেনিসপ্রেমীদের মনে এই প্রশ্ন রেখেই ফ্রেঞ্চ ওপেনের শেষ চারে পৌঁছে গেলেন দু’বারের চ্যাম্পিয়ন। পাশাপাশি কিছুটা হয়তো উদ্বেগেও রাখলেন। সেমিফাইনালে জায়গা নিশ্চিত করার পর জোকার স্বীকারও করে নিয়েছেন, কোয়ার্টার ফাইনালে প্রথম দু’টি সেট তার থেকে ভাল খেলেছেন রুশ প্রতিপক্ষ।
এদিকে ওপর কোয়ার্টার ফাইনালে জয় পেয়েছেন কার্লোস আলকারাজ। সিৎসিপাসের বিপক্ষে তিনি ৩-০ (৬-২, ৬-১, ৭-৬) সেটে জিতে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছেন এই স্পেনিশ টেনিস তারকা।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।