
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ৩২ নম্বর নিউনেটাল (সদ্য প্রসূত) ওয়ার্ডে এক যুগ ধরে আধিপত্য চলছে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ‘লাইফ কেয়ার’-এর। সরকারি এ হাসপাতালে তিনটি পোর্টেবল (বহনযোগ্য) এক্স-রে মেশিন থাকলেও তা বছরের পর বছর অকার্যকর রেখে শিশুদের (সদ্য ভূমিষ্ঠ) জটিল রোগ নির্ণয়ের জন্য শুধু লাইফ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারকেই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। আর এর নেপথ্যে রয়েছে প্রতি মাসে ওয়ার্ডটির চিকিৎসক-নার্সদের লাখ লাখ টাকার কমিশন বাণিজ্য। আধিপত্য ধরে রাখতে লাইফ কেয়ার কর্র্তৃপক্ষ চিকিৎসক-নার্সদের নানান সুবিধা দিচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুর জটিল কোনো শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে পরীক্ষার জন্য প্রয়োজন পড়ে পোর্টেবল এক্স-রে মেশিনের। ট্রলিতে বহন করে এ যন্ত্রটি এক স্থান থেকে আরেক স্থানে নেওয়া হয়। শিশুর বুক বা মস্তিষ্ক পরীক্ষার জন্য ফি নেওয়া হয় ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে প্রতিদিন গড়ে রোগী ভর্তি থাকে ১৮০-২০০ জন। প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৫০ জন নতুন রোগী ভর্তি হয় এ ওয়ার্ডে। একজন চিকিৎসক জানান, সদ্য ভূমিষ্ঠ ৩০ থেকে ৪০ শিশুর বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রতিদিন পোর্টেবল এক্স-রে মেশিন ব্যবহৃত হয়। চমেক হাসপাতালে পোর্টেবল এক্স-রে মেশিন রয়েছে তিনটি। কিন্তু চমেকেরই একটি চক্র লাইফ কেয়ার সেন্টারকে সুবিধা পাইয়ে দিতে লোকবল সংকটের অজুহাতে কোটি টাকা দামের এসব যন্ত্র যথাযথভাবে ব্যবহার করছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি স্বীকারও করেছেন চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান। অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের টেকনোলজিস্ট সাদেকুর রহমান চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি পোর্টেবল এক্স-রে মেশিন আছে আইসিইউতে। বাকি দুটি দিয়ে কাজ চালাই। যখন যে ওয়ার্ডে ডাক পড়ে সেখানে আমরা যাই। তবে লোকবল সংকটের কারণে রোগীদের সেবা ব্যাহত হয়।’
সর্বশেষ গত ২৯ এপ্রিল মো. শফিউল আলম নামে এক যুবককে গ্রেপ্তারের পর ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে লাইফ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ‘রাজত্বের’ বিষয়টি আলোচনায় আসে। ওইদিন বেলা ১১টার দিকে ৩২ নম্বর নিউনেটাল ওয়ার্ডে ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা উল্লেখ করে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান জানান, মো. শফিউল আলম নামে এক যুবক সেদিন এক রোগীর প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলছিল। সন্দেহ হলে সেখানে কর্তব্যরত আনসার সদস্যরা ওই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে সেই যুবক এক আনসার সদস্যকে মারধর করেন। পরে প্রমাণ হয় যে আনসার সদস্যকে মারধর করা যুবক লাইফ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালাল। এরপর তার বিরুদ্ধে পাঁচলাইশ থানায় চমেক হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার কামরুজ্জামান বাদী হয়ে মামলা করেন।
নগরের পাঁচলাইশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাদিকুর রহমান জানান, শফিউল আলমের বিরুদ্ধে হওয়া মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ঘটনার দিন শফিউল এবং তার সহযোগীরা (অজ্ঞাত) বিভিন্ন সময় চমেক হাসপাতালে বিনা অনুমতিতে অনুপ্রবেশ করে হাসপাতালে আসা গ্রামের অসহায়, কম শিক্ষিত ও গরিব দুস্থ রোগীদের ভুল বুঝিয়ে লাইফ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ অন্যান্য প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যায়। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ঘটনার দিন একজন রোগীকে ভুল বুঝিয়ে আসামি শফিউল লাইফ কেয়ারে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় সেখানে কতর্ব্যরত সহকারী প্লাটুন কমান্ডার আনিছুর রহমানসহ কয়েকজন আনসার সদস্য বাধা দিলে তাদের মারধর করে শফিউল। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে চমেকের কুইক রেসপন্স টিমের সদস্যরা। এ সময় তাকে ছাড়িয়ে নিতে ঘটনাস্থলে আসেন লাইফ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ম্যানেজার আবদুর রব। তিনি এসেই মামলার বাদীকে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখান।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে লাইফ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপক আবদুর রব বলেন, ‘আসলে এটা একটা ভুল বোঝাবুঝি। ১৫ বছর আগে আমাদের কর্র্তৃপক্ষের পৃষ্ঠপোষকতায় ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে “ওয়াইফাই” লাগানো হয়। চিকিৎসকরা স্পিড বাড়ানোর জন্য বললে ঘটনার দিন ওয়াইফাই টেকনেশিয়ানের সঙ্গে সমন্বয় করতে ওই ওয়ার্ডে যান শফিউল। সেখানে আনসার সদস্যদের সঙ্গে কোনো মারামারি হয়নি। আর এক যুগ ধরে ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে আধিপত্য ধরে রাখতে লাইফ কেয়ার কর্র্তৃপক্ষ প্রতি মাসে চিকিৎসক-নার্সদের সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার বিষয়টিও ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।’
এদিকে এক যুগ ধরে ৩২ নম্বর নিউনেটাল ওয়ার্ডে লাইফ কেয়ারের ‘আধিপত্যের’ জন্য রোগী কিংবা তাদের স্বজনদের দুষছেন ওই ওয়ার্ডের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. শাহীন। তিনি বলেন, ‘ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা রোগীদের সব লেভেলে সুন্দর সেবা দিতে চেষ্টা করছি। আমার সহকর্মী সহকারী অধ্যাপক ডা. মাসুদুর রহমানসহ নার্সরা মিলে কাজ করছি। দালাল ধরতে ওয়ার্ডে চিকিৎসক-নার্সদের সমন্বয়ে পাঁচটি টিম করেছি। কিন্তু দালালরা আমাদের চেয়ে চালাক। একজন প্রসূতি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আসার পর দালালরা তাকে ঘিরে ধরে। ভর্তির টিকিট কাটা, চিকিৎসক দেখানো সব দায়িত্ব পালন করেন দালালরা। ওয়ার্ডে ভর্তির সময় সংশ্লিষ্ট দালালকে “আত্মীয়” বলে পরিচয় দেওয়ার জন্য রোগী বা প্রসূতির শিখিয়ে দেওয়া হয়। ওয়ার্ডে আসার পর নার্স বা হাসপাতাল কর্মচারীরা তো দালালদের চেনেন। এ সময় বিষয়টি সংশ্লিষ্ট প্রসূতি বা রোগীকে অবহিত করলে তারা তা আমলে নেন না।’
লাইফ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের একক আধিপত্য বজায় রাখার বিনিময়ে ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের চিকিৎসক-নার্সদের মাসিক সুবিধা দেওয়া সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে ডা. মো. শাহীন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘লাইফ কেয়ার থেকে চিকিৎসক তো প্রশ্নই উঠে না। নার্সরাও ভালো। তবে দুষ্ট লোকগুলো হলো চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা।’
তবে চমেক হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এক যুগ ধরে ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে রাজত্ব চালাচ্ছে লাইফ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এ ওয়ার্ডে অন্য কোনো বেসরকারি রোগ নির্ণয় কেন্দ্রের লোক বা দালাল ঢুকতে পারে না। এ প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতায় ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে ওয়াইফাই সুবিধা চালু করা হয়েছে। এ ওয়ার্ডে লাইফ কেয়ারের দালালরা ২৪ ঘণ্টায় তিন শিফটে দায়িত্ব পালন করে। লাইফ কেয়ারের দালালদের সঙ্গে যোগসাজশ ছিল ওই ওয়ার্ডের সাবেক একজন নার্স ইনচার্জের। সম্প্রতি ওই নার্স ইনচার্জকে নার্সিং মেট্রন অফিসে বদলি করা হয়।
অভিযোগ আছে, সাবেক এ নার্স ইনচার্জ বুকের দুধ খাওয়াতে প্রসূতি মায়েদের নিরুৎসাহিত করতেন। হাসপাতালের বাইরে বিভিন্ন দোকান থেকে ‘বেবি ফুড’ বা কৃত্রিম দুধ কিনতে বাধ্য করতেন। সংশ্লিষ্ট প্রসূতির স্বজন সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর জন্য দুধ কেনার সময় একটি টোকেন দিতেন দোকানদার। ওই টোকেন দেওয়া হতো সাবেক ওই নার্স ইনচার্জকে। এরপর তিনি মাস শেষে দোকানগুলো থেকে কমিশন নিতেন।
চমেক হাসপাতাল ঘিরে কিছু বেসরকারি রোগ নির্ণয় কেন্দ্রের অপতৎপরতার কথা তুলে ধরে হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার শামীম আহসান বলেন, শুধু লাইফ কেয়ার নয়, জেনেটিক, এপিক, পপুলারসহ বেশ কিছু ডায়াগনস্টিক সেন্টার নিজেদের লোক দিয়ে হাসপাতালের রোগী ও স্বজনদের জিম্মি করে রেখেছে। হাসপাতাল ঘিরে আছে ২৬টি ওষুধের দোকানের সিন্ডিকেট। বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে আছে তাদের দালাল। হাসপাতালে সরকারিভাবে সব ধরনের ওষুধ সাপ্লাই থাকলেও তারা রোগী বা স্বজনদের ভুল বুঝিয়ে সর্বস্বান্ত করছে। ওষুধ বিক্রির নামে হাতিয়ে নিচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ের জন্য রোগী কিংবা তার স্বজনদের ভুলভাল বুঝিয়ে নিজেদের পছন্দের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যায় দালালরা। দালাল এবং বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি সম্পর্কে তথ্য দিয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান আরও বলেন, ‘চমেকের আইসিইউতে ভর্তি থাকা একজন রোগীকে ভাগিয়ে নিতে পারলে দালালরা পায় ৩০ হাজার, একজন সাধারণ রোগীর ক্ষেত্রে ৫ থেকে ১০ হাজার, অস্ত্রোপচারের একজন রোগীর ক্ষেত্রে পায় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। রোগীদের জন্য হাসপাতালে সরকারিভাবে প্রায় সব ধরনের ওষুধ সরবরাহ থাকলেও বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির মেডিসিন রিপ্রেজেন্টেটিভ (এমআর) বিভিন্ন ওয়ার্ডে (বিশেষ করে সন্ধ্যার পর) ঘোরাঘুরি করে। তারা রোগীর কাছ ওষুধ বিক্রির নামে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেয়।’
খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ দেশের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নুরুল ইসলাম মারা গেছেন। গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় রাত ১২টার দিকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। অধ্যাপক নুরুল ইসলাম হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে জানা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি অব আমেরিকার অধ্যাপক আদনান মোর্শেদ গতকাল মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে অধ্যাপক নুরুল ইসলামের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি মৃত্যুর আগপর্যন্ত খাদ্য নীতিবিষয়ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (ইফপ্রি) ইমেরিটাস ফেলো হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ১৯৮৭ সালে তিনি সংস্থাটির মহাপরিচালকের জ্যেষ্ঠ নীতি পরামর্শক হিসেবে যোগ দেন।
সুদীর্ঘ কর্মজীবনে অধ্যাপক নুরুল ইসলাম জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) অর্থনীতি ও সামাজিক নীতি বিভাগের সহকারী মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) চেয়ারম্যান ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ছিলেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেন।
বিশ্বের বিভিন্ন স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং অ্যাকাডেমিক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন অধ্যাপক নুরুল ইসলাম। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ইয়েল, অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজ এবং লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস। দেশ-বিদেশে ২৫টির বেশি বই প্রকাশিত হয়েছে তার।
ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের পরিস্থিতি কাভারের জন্য সাংবাদিকতায় ২০২৩ সালের সর্বোচ্চ সম্মাননা পুরস্কার পুলিৎজার জিতে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম এপি ও নিউ ইয়র্ক টাইমস। স্থানীয় সময় গত সোমবার নিউ ইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এবারের পুলিৎজার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে সাংবাদিকতায় সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার হচ্ছে পুলিৎজার।১৯১৭ সাল থেকে নিয়মিত এই পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। একাধিকবার এ পুরস্কার জিতেছে নিউ ইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট এবং ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের মতো বিখ্যাত পত্রিকাগুলো।
পুলিৎজারের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার হিসেবে বিবেচনা করা হয় পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ডকে। ইউক্রেনে মস্কোর আগ্রাসন কাভারেজ করে পাবলিক সার্ভিস এবং ব্রেকিং নিউজ ফটোগ্রাফির ক্যাটাগরিতে পুরস্কার জিতেছে সংবাদমাধ্যম এপি। পূর্ব ইউক্রেনের বন্দরনগরী মারিওপোলের রুশ অবরোধের পরিস্থিতি তুলে ধরেছিলেন প্রতিষ্ঠানটির সংবাদকর্মীরা। এই ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পাওয়া এপির সাংবাদিকরা হলেন মিসতিসলাভ চেরনভ, ইভজেনি মালোলেতকা, ভাসিলিসা স্তেপানেঙ্কো ও লরি হিনান্ট।
এপি’র জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং নির্বাহী সম্পাদক জুলি পেস বলেন, এপি সাংবাদিকরা পুরো যুদ্ধজুড়ে ইউক্রেনে সাহসী ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। বিশেষ করে সংঘাতের মানবিক দিকটি ফুটিয়ে তুলেছিলেন তারা।
অন্যদিকে ইউক্রেনের বুচা শহরে রুশ বাহিনীর সংঘটিত হত্যাকাণ্ড কাভারেজের জন্য আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনের পুরস্কারটি গেছে নিউইয়র্ক টাইমসের ঘরে।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে গর্ভপাত নিয়ে নিয়মিত প্রতিবেদন প্রকাশ করায় ন্যাশনাল রিপোর্টিং ক্যাটাগরিতে পুরস্কার জিতে নিয়েছেন ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদক ক্যারোলিন কিচেনার। অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বিভাগে পুরস্কার জিতেছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসও ব্রেকিং নিউজ বিভাগ ও ফিচার ফটোগ্রাফি বিভাগে পুরস্কার জিতে নিয়েছে। এ বছর সাংবাদিকতায় ১৫টি ক্যাটাগরিতে দেওয়া হয়েছে পুলিৎজার সম্মাননা। পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রত্যেকে পাবে ১৫ হাজার ডলার করে।
ঝাঁজ বেড়েছে পেঁয়াজের। আদায় লেগেছে আগুন। চিনিতে মজুদ সংকট দেখিয়ে চলছে যাচ্ছেতাই। হঠাৎই গত ৫ মে আরও এক দফা বেড়েছে ভোজ্য তেলের দাম। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম হয়েছে আকাশচুম্বী। অনেক পণ্যের ক্ষেত্রে দ্বিগুণের বেশি দাম বাড়তেও দেখা গিয়েছে।
সর্বশেষ বাজারের তথ্য অনুযায়ী প্রতি কেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ২৮০-৩১০ টাকা করে। যা গত এক মাস আগেও ১৪০-২২০ টাকা করে বিক্রি হয়েছে। কেজিতে ২৫-৩০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকা, ২০-২৫ টাকার আলুর কেজি ৪০ টাকা ও ১২৫ টাকার চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা করে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কোনো কারণই ছাড় দেন না আমাদের ব্যবসায়ীরা। কোনো না কোনো ছুতা পেলেই মজুদ সংকট দেখিয়ে অস্থির করে তোলেন নিত্যপণ্যের বাজার। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে নিত্যপণ্যের বাজারে উত্তাপ দেখা দেয়। মুখিয়ে থাকা অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ইউরোপের যুদ্ধের প্রভাবকে টোপ হিসেবে কাজে লাগিয়ে দেশের ভোজ্য তেলের বাজারে অস্থির করে তুলে। সরকার নানা সময় পদক্ষেপ নিয়েও চালকের আসনে বসা ব্যবসায়ীদের সরাতে পারেনি। উল্টো ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সমঝোতা করে বাজার সমন্বয় করেছে। তবে তা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি।
কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সিনিয়র সহ-সভাপতি নজরুল হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ব্যবসায়ীরা শক্তিশালী এটি আপনাকে স্বীকার করতেই হবে। এমপি, মন্ত্রী থেকে শুরু যেহেতু সব স্থানে তাদের আধিপত্য রয়েছে। এছাড়াও কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকারের আমলারা ব্যবসায়ীদের থেকে সুবিধা নিয়ে জনগণের ক্ষতি করছে। এর একটা বড় উদাহরণ হতে পারে, ব্যবসায়ীরা যখন যা দাবি করছেন তারা তাই মেনে নিচ্ছেন। তবে সব কিছু ছাপিয়ে সরকারের সদিচ্ছা থাকলে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হতো। তাদের সদিচ্ছা নেই বলেই অবৈধ মজুদকারী ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, নতুন করে বাজারে আলু-পেঁয়াজের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। তারা ভাবছে চিনি, ভোজ্য তেল ও মুরগির বাজার নিয়ে সিন্ডিকেটকারী ব্যবসায়ীদের যথাযথ শাস্তি না হওয়ায় নতুন করে আলু-পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এই ক্ষেত্রে বলব, দেশে আইন রয়েছে। কিন্তু আইনের সঠিক প্রয়োগ নেই। যার ফলে ব্যবসায়ীরা যে যখন ইচ্ছে তাদের মতো খাদ্যপণ্য স্টক করে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাদের হাত থেকে দেশের সাধারণ মানুষকে রক্ষায় আইনের যথাযথ প্রয়োগ জরুরি।
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভোক্তা অধিদপ্তর দাম নির্ধারণ করে দেয় না। এর জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, বাজারে হঠাৎ করে পেঁয়াজ ও আদার দাম বেড়েছে। এসব পণ্যের ক্ষেত্রে সরাসরি কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সিদ্ধান্ত নেবে। কৃষকের স্বার্থে বর্তমানে আইপি বন্ধ করে রাখা হয়েছে। যেন কৃষক তাদের ন্যায্য মূল্য পায়। যতদিন পর্যন্ত আইপি বন্ধ থাকবে ততদিন পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। তবে বাজারে পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক কোনো বিষয় চোখে পড়লে আমরা ব্যবস্থা নেব।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত শহরের বঙ্গতাজ অডিটরিয়ামে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে রিটার্নিং অফিসার মো. ফরিদুল ইসলাম মেয়র, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ করেন।
এদিকে প্রতীক পেয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন। নির্বাচনের মেয়র প্রার্থী, সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড এবং সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীরা তাদের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। রিটার্নিং অফিসারের হাত থেকে প্রার্থীরা নিজ পছন্দের প্রতীক নিয়ে এলাকায় চলে যান। সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে ৮ জন, ১৯টি সংরক্ষিত মহিলা আসনে ৭৮ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৪৩ জন প্রার্থীসহ সর্বমোট ৩২৯ জন প্রার্থী লড়ছেন।
মেয়র পদে দলীয় প্রতীক ছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত প্রতীক থেকে তাদের পছন্দের প্রতীক দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সংরক্ষিত এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীদের ক্ষেত্রেও নির্বাচন কমিশনের দেওয়া নির্ধারিত প্রতীক থেকে তাদের পছন্দের এবং একই প্রতীক একাধিক প্রার্থীর দাবি থাকলে ওই ক্ষেত্রে লটারির মাধ্যমে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আজমতউল্লা খানের দলীয় প্রতীক (নৌকা), জাতীয় পার্টির প্রার্থী এমএম নিয়াজ উদ্দিন পেয়েছেন দলীয় প্রতীক (লাঙ্গল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গাজী আতাউর রহমান পেয়েছেন (হাতপাখা), জাকের পার্টির প্রার্থী মো. অলিউর রহমান (গোলাপ ফুল), স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন (টেবিল ঘড়ি), স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনুর ইসলাম (হাতি) প্রতীক, গণফ্রন্টের আতিকুল ইসলাম (মাছ) প্রতীক, স্বতন্ত্র প্রার্থী হারুন অর রশীদ (ঘোড়া) বরাদ্দ পেয়েছেন।
প্রতীক পেয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমতউল্লা খান দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রচারণা শুরু করেন। তিনি চান্দনা চৌরাস্তায় একটি কমিউনিটি সেন্টারে গাজীপুর জেলা ও মহানগর যুবলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় যোগ দেন। পরে তিনি নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রচারণায় যান।
আজমতউল্লা খান বলেন, জনগণের সেবার যে কাজগুলো আছে, অধিকারগুলো আছে তা সুনিশ্চত করার জন্য আমি আপনাদের কাছে ভোট প্রার্থনা করছি। আমরা আজ এখান থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শুরু করছি। নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে নির্বাচনের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আমাদের নেতাকর্মীরা মাঠে প্রচারণা চালাবে।
সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন রিটার্নিং অফিসারের হাত থেকে তার পছন্দের (টেবিল ঘড়ি) প্রতীক বুঝে নেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, নগরবাসীর কাছে মেয়র পদে (টেবিল ঘড়ি) প্রতীকে একটি ভোট চাচ্ছি এবং সবার সহযোগিতা কামনা করছি। তিনি নির্বাচন কমিশনের প্রতি একটি সুষ্ঠু ভোট উপহার দেওয়ার আহ্বান জানান। এ সময় তার সমর্থনে অডিটরিয়ামের বাইরে শত শত কর্মী-সমর্থক ঘড়ি ঘড়ি বলে সেøাগান দিতে থাকেন। পরে তিনি ওখানে কিছুক্ষণ থেকে কর্মী-সমর্থকদের ভিড় ঠেলে তার নিজ বাড়ি পার্শ্ববর্তী কানাইয়া এলাকায় যান। এ সময় সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম মায়ের সঙ্গেই ছিলেন। তিনিও মায়ের জন্য ভোট চান।
লাঙ্গল প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে জাতীয় পার্টির মনোনীত মেয়র প্রার্থী সাবেক স্বাস্থ্য সচিব এম এম নিয়াজ উদ্দিন বলেন, আমি আশা করি ওই নির্বাচনে আমরা (লাঙ্গল) জয়ী হব। আমি নির্বাচিত হতে পারলে একটি সুন্দর সিটি করপোরেশন গড়ে তুলব। একটি সুন্দর নগরী হবে, মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করব।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান বলেন, আসন্ন গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সব প্রার্থীর জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। ইভিএম নিয়ে জনমনে যে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে তা দূর করতে হবে। ২৫ মে প্রশ্নবিদ্ধ কোনো নির্বাচন হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে গাজীপুর থেকে কঠোর আন্দোলনের সূচনা হবে।
গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। এদের মধ্যে ১৮ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন। এখানে ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার আজ গাজীপুরে যাচ্ছেন : প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল আজ বুধবার গাজীপুরে আসবেন। তিনি প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করবেন। সকাল সাড়ে ১০টায় গাজীপুর শহরের রাজবাড়ি রোডে পিটিআই শহীদ আহসান উল্লা মাস্টার অডিটরিয়ামে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর হোসেন এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব মো. জাহাংগীর আলম।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মো. ফরিদুল ইসলাম জানান, গাজীপুর সিটি নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানের জন্য প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় মিলিত হবেন।
১৯ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ : এদিকে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে জন্য ১৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রতীক বরাদ্দের তারিখ থেকে ভোট গ্রহণের দুদিন আগ পর্যন্ত অর্থাৎ ৯ মে থেকে ২৩ মে পর্যন্ত নির্বাচনী আচরণবিধি সংক্রান্ত মোবাইল কোর্ট অভিযান চালাবেন তারা। এ ছাড়া নির্বাচনে আচারণবিধি প্রতিপালনে দায়িত্ব পালনের জন্য আরও তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন।
শরীয়তপুরের জাজিরার বিকেনগর ইউনিয়নের হাওলাদারকান্দি গ্রামের প্রয়াত আবদুল হক ঢালীর ছেলে হুমায়ুন ঢালী। পাঁচ বছর আগেও জাজিরা উপজেলার কাজিরহাটসহ কয়েকটি হাটে ছাগল বিক্রির দালালির পাশাপাশি অন্যের জমিতে ট্রাক্টর চালিয়ে করতেন হালচাষ। দরিদ্র পরিবার ও দিনমজুরের সন্তান এই হুমায়ুনের একসময় নিজের ভিটেমাটি ছাড়া আর কোনো জমি ছিল না। কিন্তু মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে সেই তিনিই এখন কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক। নিজের নামে কিনেছেন কয়েক কোটি টাকার জমিও। মাত্র কয়েক বছরে আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যাওয়া এই হুমায়ুন এখন মাদারীপুর ও শরীয়তপুরের টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়েছেন।
পদ্মা সেতুকেন্দ্রিক বিভিন্ন প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে কারসাজি করে ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে সরকারের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে মাদারীপুর জেলা প্রশাসন থেকে ২০ জন দালালের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। যাতে রয়েছে আলোচিত এই হুমায়ুন ঢালীর নামও। এই দালালদের সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধানের জন্য তালিকাটি ইতিমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠানো হয়েছে।
নাওডোবা-জাজিরা আঞ্চলিক সড়কঘেঁষে বিকেনগর ইউনিয়নের দৈনিক বাজার এলাকায় হুমায়ুন ঢালীর বাড়ি। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, পাঁচতলা একটি বাড়ির নির্মাণকাজ চলছে। ইতিমধ্যে দোতলার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এই বাড়িটি কিছুদিন আগেও ছিল একতলা। কিন্তু নাওডোবা-জাজিরা আঞ্চলিক সড়ক চার লেনে উন্নীতের কাজ শুরু হবে জানার পর বাড়িটি বর্ধনের কাজ শুরু হয়। যাতে জমি ও স্থাপনার ক্ষতিপূরণ বাবদ মোটা অঙ্কের টাকা পাওয়া যায়। এ ছাড়া অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ বাবদ অতিরিক্ত টাকা উত্তোলনের জন্য হুমায়ুন ঢালীর বাড়ির চত্বরে টিনের আরও ৫টি চৌচালা ঘর তোলা হয়েছে।
জানা গেছে, পদ্মা সেতুর জাজিরা পয়েন্টের নাওডোবা গোলচত্বর থেকে শরীয়তপুর সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় তিনটি প্যাকেজে ২৭ কিলোমিটার সড়ক চার লেন, ২৭টি কালভার্ট ও ২টি সেতু নির্মাণ করা হচ্ছ। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ২৩১ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে জমি অধিগ্রহণে। আর এই ক্ষতিপূরণের টাকা দিচ্ছে শরীয়তপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে। নাওডোবা থেকে শরীয়তপুর পর্যন্ত সড়ক চার লেন করার প্রকল্প অনুমোদন পাওয়ার পর থেকেই দুই পাশে স্থাপনা নির্মাণের হিড়িক পড়েছে। ডিসি অফিসের এলএ শাখার কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে গড়ে উঠেছে প্রভাবশালী দালাল চক্র। তাদের উদ্দেশ্য একটাই, সরকারের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে ভাগবাটোয়ারা করে নেওয়া।
এলাকাবাসী জানিয়েছে, সড়ক প্রশস্ত করতে উভয় পাশেই জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। ক্ষতিপূরণ হিসেবে বেশি অর্থ হাতিয়ে নিতে এসব স্থাপনা নির্মাণ করছে দালাল চক্র। এজন্য রাতারাতি তোলা হচ্ছে ঘর। লাগানো হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির চারা গাছ। নির্মাণ করা হচ্ছে কারখানা ও খামার। সড়কের উভয় পাশেই দেখা গেছে নির্মাণাধীন পাকা, আধা পাকা ও টিনশেডের বসতঘর, দোকান, করাতকল, মাছ, মুরগি ও গরুর খামার।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বিকেনগর এলাকার চান মিয়া শেখের কাছ থেকে ২২ শতাংশ জমি কেনেন তালিকাভুক্ত দালাল হুমায়ুন ঢালী। যার দলিল নম্বর ৮০১/২০। একই বছরের ৯ জুন একই এলাকার জলিল শিকদারের কাছ থেকে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ জমি কেনেন তিনি। যার দলিল নম্বর ১২৮৭/২০। ওই বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি একই এলাকার দানেছ শেখের কাছ থেকে ২১ শতাংশ জমি কেনেন হুমায়ুন ঢালী। যার দলিল নম্বর ৬৬৩/২০। তার আগের বছর ২০১৮ সালের ৬ আগস্ট একই এলাকার আবদুল জলিল শিকদারের কাছ থেকে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ জমি কেনেন তিনি। যার দলিল নম্বর ৩১২৩/১৯।
হুমায়ুন ঢালীর কাছে জমি বিক্রি করা জাকির শিকদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি দেড়-দুই বছর আগে দুটি জমি হুমায়ুন ঢালীর কাছে বিক্রি করেছি। জমির পরিমাণ একটা ৪ কাঠা, অন্যটি ৫ কাঠা। একটি ২৩ লাখ টাকা, অন্যটি ৫ লাখ টাকা। হঠাৎ শুনি হুমায়ুন ঢালী অনেক জমি কিনতেছে। তখন তার কাছে জমি বিক্রি করছি। শুনছি ব্রিজের ওখান থেকে (পদ্মা সেতু) টাকা কামাই করছে। মানুষের বিল নাকি কি করে নিয়ে গেছে। কেমনে কী করছে তা জানি না।’
হুমায়ুন ঢালীর কাছে জমি বিক্রি করা আরেকজন ইদ্রিস হাওলাদার। তিনি বলেন, ‘আমি ৭ শতাংশ ও আমার চাচা ২০ শতাংশ জমি হুমায়ুন ঢালীর কাছে বিক্রি করছে। ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা করে শতাংশ দাম দিছে। হুমায়ুন ঢালী আগে সংসারী কাজ করত। কোথায় এত টাকা পেল তা জানি না।’
বিকেনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাজি ইস্কান্দার আলী ভূঁইয়া বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন বিদেশে ছিলাম। এক বছর আগে দেশে এসে নির্বাচন করে চেয়ারম্যান হয়েছি। হুমায়ুন ঢালীকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। পাঁচ বছর আগেও নিম্ন ফ্যামিলির ছিল তারা। এখন অর্থবিত্ত ও প্রভাবশালী হয়েছে। তবে কীভাবে এত টাকাপয়সা, অর্থবিত্ত হলো, কী ব্যবসা করে, তা আমার জানা নেই। আমি জানি ৫-৭ বছর আগে এমনই কৃষিকাজ করত। বর্তমানে আমাদের সঙ্গে রাজনীতিতে জড়িত সে। তাকে কোনো পদ দেওয়া নেই। নির্দিষ্ট কোনো ব্যবসা নেই তার। এখন আবার দুবাই যাওয়া-আসা করে।’
প্রতিবেশী খোকন হাওলাদার বলেন, ‘হুমায়ুন ঢালী আমার পরিচিত, আমাদের পাশেই বাড়ি। ছোট থেকে একত্রেই বড় হয়েছি। ওরে ৪ বছর আগেও মেশিন (পাওয়ার টিলার) চালাইতে, কৃষিকাজ করতে দেখেছি। কাজীরহাটে বকরি-ছাগলের দালালি করতে দেখেছি। হঠাৎ করেই দেখি ও অনেক জমিজমা কিনেছে। অনেক বড় বিল্ডিং করছে। কদিন আগে টিভিতে দেখেছি মাদারীপুরের ডিসি তার নামে দুদকে একটা মামলা দিয়েছে।’
হুমায়ুন ঢালীর মেয়ে ফাতেমা আক্তারের (১৯) কাছে তার বাবার অর্থ-সম্পদের উৎস সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার বাবা দুবাইয়ে অন্যরকমের ব্যবসা করেন। যেমন : সাবান, শ্যাম্পু, কসমেটিকসের ব্যবসা করেন।’
হুমায়ুন ঢালীর মা জমিলা খাতুন বলেন, ‘হুমায়ুন আগে মেশিন (পাওয়ার টিলার) চালাইছে, ধান-পান ভাঙাইছে। আমার বাবার বাড়ির জায়গা-জমির টাকাপয়সা পাইছি ২০ লাখ। অন্য ছেলেদেরসহ হুমায়ুনকে সেই টাকার ভাগ দিয়েছি।’
সার্বিক বিষয়ে হুমায়ুন ঢালীর বক্তব্য নিতে তার বাড়িতে যান এই প্রতিবেদক। তার সঙ্গে দেখাও হয়। কিন্তু পরিচয় গোপন করে বাড়ি থেকে কৌশলে সটকে পড়েন। পরে মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি বিভিন্ন ব্যস্ততা দেখিয়ে বলেন, ‘আমি বিদেশে ছিলাম, বর্তমানে দুবাই থেকে এনে কসমেটিকসের ব্যবসা করি। ব্যবসার লাইসেন্স নেই, তবে এয়ারপোর্টে ট্যাক্স দিই। আমার নানার বাড়ির ৫০ বিঘা জমি বিক্রির টাকা পাইছি। আর বাবার দেড় কোটি টাকার জমি বিক্রি করেছি, আমরা চার ভাই। আমি কোনো জমি কিনি নাই।’
নিজের নির্মাণাধীন অট্টালিকাসম বাড়ি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার বাড়ি আমার বাবা করে রেখে গেছেন। আমার বাবা মারা গেছেন সাত বছর আগে। বাবা কৃষক ছিলেন। আপনি আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কথা বইলেন, এগুলো (হঠাৎ বিপুল সম্পদের মালিক হওয়া) সব মিথ্যা কথা।’ এসব কথা বলেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন হুমায়ুন।
হুমায়ুনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শরীয়তপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সাইফুদ্দিন গিয়াস বলেন, ‘আমাদের এখান থেকে কোনো ধরনের অনৈতিক কাজ করার সুযোগ নেই। দালালদের তালিকা পেলে প্রয়োজনে আমাদের অফিসে টাঙিয়ে রাখা হবে। কেউ যাতে অনৈতিক সুবিধা না নিতে পারে তার জন্য আমরা প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
এ বিষয়ে মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, ‘নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি নয়, আমরা সবার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব। যারা রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎ করেছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। আমরা তদন্তপূর্বক সবার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেব।’
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
রাজধানীর বনানীর একটি রেস্তোরাঁ থেকে জামায়াতে ইসলামীর বনানী শাখার ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তাদের মধ্যে বনানী থানা জামায়াতের আমির তাজুল ইসলাম এবং সেক্রেটারি আব্দুর রাফি রয়েছেন।
বনানী থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওয়ারলেস গেটে অবস্থিত নবাবী রেস্টুরেন্টে গোপন মিটিং করাকালে বনানী থানা জামায়াতে ইসলামী আমির তাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রাফিসহ ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
আটক ১০ জনের মধ্যে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাও রয়েছেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) হলের আসন দখল করে রাখার বিরুদ্ধে অনশনরত ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম প্রত্যয়সহ তাকে সমর্থন দেওয়া কয়েকজনের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ।
মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।তারা বলেন, ওই স্থানে গত বুধবার রাত থেকে অনশনে ছিলেন প্রত্যয়। তাকে মারধরের পর অ্যাম্বুলেন্সে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যায় হামলায় জড়িতরা। এ সময় প্রত্যয়ের দাবির সঙ্গে সংহতি জানানো প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের ওপরও হামলা হয়।
জানা গেছে, তিন দাবিতে গত বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনের খেলার মাঠে অনশনে বসেন প্রত্যয়। তিনি ওই হলের আবাসিক ছাত্র। তার অন্য দুটি দাবি ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল থেকে অছাত্রদের বের করা ও হলের গণরুমে অবস্থান করা বৈধ ছাত্রদের আসন নিশ্চিত করা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী এবং নবীন শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছিলেন। ওই সময় ক্যাম্পাসে লোডশেডিং চলছিল। হঠাৎ করেই প্রত্যয়সহ তার সঙ্গে থাকা অন্যদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
হামলায় জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচী, মার্কেটিং বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের সৃষ্টি, চারুকলা বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের মনিকা, বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের ৪৮তম ব্যাচের সুরসহ আরও কয়েকজন আহত হন বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যমতে, হামলায় ৩০ থেকে ৪০ জন অংশ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। অভিযুক্তদের কয়েকজন হলেন ছাত্রলীগ নেতা ও রসায়ন বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী গৌতম কুমার দাস, তুষার, ফেরদৌস, নোবেল, গোলাম রাব্বি, মুরসালিন, মুরাদ, সোহেল, তানভীর, রায়হান, রাহাত, সৌমিক, তারেক মীর, সজীব ও নাফিস।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী জানান, আমরা যারা প্রত্যয়ের সঙ্গে ছিলাম তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর প্রত্যয়কে দেখতে চিকিৎসক এসেছিলেন। তখন তারা অ্যাম্বুলেন্সের ওপর হামলা করে সেটি ফিরিয়ে দেয়। প্রক্টরকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি আসেননি। একাধিক ছাত্রীর দিকেও চড়াও হয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মীর মশাররফ হোসেন হলের এক শিক্ষার্থী অসুস্থ এমন একটি ফোনকল পেয়ে তারা অ্যাম্বুলেন্স পাঠায়। তবে কে কল দিয়েছিল সে সম্পর্কে চিকিৎসা কেন্দ্রের কেউ বলতে পারেননি।
তবে যে ফোন নাম্বার থেকে কল দেওয়া হয়েছিল সেটিতে যোগাযোগ করে দেখা যায় নাম্বারটি শাখা ছাত্রলীগের নেতা গৌতম কুমার দাসের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ১৫ হাজার শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না। দরকার হলে আমি পদত্যাগ করব।
এদিকে হামলার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে রাতেই বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মিছিল নিয়ে তারা এ রাত পৌনে ১টায় প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান করছেন।
তবে অনশনরত শিক্ষার্থী সামিউলের ওপর হামলারে পেছনে ছাত্রলীগের কোনো হাত নেই বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেলের। তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি, মীর মশাররফ হোসেন হলের অনশনরত ওই শিক্ষার্থীর ওপর হামলা হয়েছে। তবে সেটা সাধারণ শিক্ষার্থীরা করেছে। সেখানে ছাত্রলীগের একজনও জড়িত নয়।’
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে খরচ বাড়ছে। কোনো যাত্রী আকাশপথে ভ্রমণ করলেই তাকে দিতে হবে ২০০ টাকার কর। একই সঙ্গে বিদেশগামী বিমানযাত্রীদের কর ৬৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শেষ (২০২৩-২৪ অর্থবছর) বাজেট উপস্থাপনকালে এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এদিকে পর্যটন খাত ও বিমানবহর সম্প্রসারণ ও বিমানবন্দর উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে।
পর্যটন খাত : অর্থমন্ত্রীর তার
বক্তৃতায় বলেন, ডলার সাশ্রয়ের জন্য অপ্রয়োজনীয় বিদেশ ভ্রমণ হ্রাস করা, কৃচ্ছ্রতার অভ্যাস গড়ে তোলা এবং নতুন রাজস্ব আয়ের খাত তৈরি করতে সার্কভুক্ত দেশগুলোতে ভ্রমণ কর ৬৭ শতাংশ বাড়িয়ে ২ হাজার, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যাওয়ার ক্ষেত্রে ৩৩ শতাংশ বেড়ে ৪ হাজার এবং অন্যান্য দেশে ৫০ শতাংশ বেড়ে ৬ হাজার টাকা ভ্রমণ কর দিতে হবে।
পর্যটন খাত নিয়ে ব্যাপক পরিকল্পনা : অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় আরও বলেছেন, পর্যটন খাতকে সমৃদ্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক মানের আবাসন ও বিনোদন সুবিধা নিয়ে কক্সবাজার জেলায় সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, নাফ ট্যুরিজম পার্ক এবং সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কভিড-১৯ মহামারীর সময় দেশের পর্যটনশিল্প মারাত্মক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে এ শিল্পকে সহায়তা করার জন্য সরকার ১ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছে। বাংলাদেশে পর্যটন সম্ভাবনাময় এলাকাগুলোতে উন্নয়নে সরকারি অর্থায়নে ১০টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন আছে। পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে একটি পর্যটন মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পর্যটনের উন্নয়ন ও বিকাশের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে ৩৬টি জেলার পর্যটন ব্র্যান্ডিং অনুসারে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার পর্যটন এলাকার ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সৌন্দর্য বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত আকর্ষণীয় পর্যটন স্থানগুলো সংরক্ষণে এবং পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর অবদান বিষয়ে ডকুমেন্টারি ও টেলিভিশন কমার্শিয়াল প্রস্তুত করা হচ্ছে।
বিমানবহর সম্প্রসারণ ও বিমানবন্দর উন্নয়ন : অর্থমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, সরকার দেশে আন্তর্জাতিক মানের বিমান পরিবহনব্যবস্থা গড়ে তুলতে নানাবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। আকাশপথে যাত্রীদের চাহিদা বিবেচনায় চলতি বছরে মালদ্বীপ ও কানাডার টরন্টোতে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট চালু করা হয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের
তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণকাজ ২০২৩ সালের মধ্যে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বর্তমানে দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই কাজ চলছে। কক্সবাজার বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করার লক্ষ্যে রানওয়ে সম্প্রসারণ ও নতুন টার্মিনাল ভবন নির্মাণকাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করে সেখানে একটি আঞ্চলিক হাব গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রকল্প প্রণয়ন করা হচ্ছে। তাছাড়া দেশের অন্যান্য অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অবকাঠামো, রানওয়ে, ট্যাক্সিওয়ে, হ্যাঙ্গার ও আমদানি-রপ্তানি পণ্য সংরক্ষণের শেডগুলো সংস্কার ও উন্নয়নসাধনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।