
এই শহরের নিচে আরেকটা শহর আছে। তার নিচে আরেকটা, তার নিচে আরেকটা...যেন এক পাতালপুরী। সেই পাতালপুরী আমাদের এই আসল শহরটার মতোই দেখতে। সেখানে সূত্রাপুর, নাজিরা বাজার আছে, সদরঘাট আছে। আছে শান্তিনগর, ধানমন্ডি, মতিঝিল, নীলক্ষেত, গুলশান আর বাড্ডা। তবে সেই শহরের বাসিন্দারা একটু অন্য রকম। তাদের দৃষ্টি সূর্যের মতো জ্বলজ্বলে। তাদের কারও হাতে খুনের রক্তের দাগ, কারও ঠোঁটের ফাঁকে হাসির চিহ্নের মতো লেগে থাকে প্রতারণা; নখের তলায় জমা কালচে ময়লার মতো গোপনীয়তা। সেখানে হাওয়া দাঁতে দাঁত চেপে কথা বলে, আক্রোশে কুঞ্চিত হয়ে থাকে আকাশ। ওই গোপন, অদৃশ্য আর উন্মত্ত শহরটাই হচ্ছে অন্ডারওয়ার্ল্ড; এই শহরের অপরাধ জগৎ।
পৃথিবীর সব শহরের তলায় সমান্তরাল এবং ভয়ংকর আরেকটা শহর ছিল, আছে এবং থাকবেও। সেখানকার ভাষা ভিন্ন, বেড়ে ওঠা ভিন্ন। সেই শহরের বেশির ভাগ কাহিনি সাধারণ নাগরিকদের কাছে অজানাই থেকে যায়।
তখনো সত্তরের দশক শেষ হয়নি। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় কিশোর আর তরুণদের নিয়ে গজিয়ে ওঠা স্ট্রিট কর্নার গ্যাংয়ের হাতে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র এসে পৌঁছাতে শুরু করে। কিশোর বয়সে মধ্য ঢাকার একটি পাড়ায় বসবাস করতাম। সেখানেও জাদুমন্ত্রে উপস্থিত হলো আগ্নেয়াস্ত্র। আমার সামনে পাতালে যাওয়ার সিঁড়ির দরজা যেন খুলে গেল। শুরু হলো পাড়ায় পাড়ায় খুন, জখম আর আধিপত্য বিস্তারের লড়াই। কৌতূহলী আর অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় মন আমাকে টেনে নিয়ে যায় সেই দরজার দিকে।
দেশ সদ্য স্বাধীন হয়েছে রক্তাক্ত যুদ্ধের ভেতর দিয়ে। তারপর অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন। আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাওয়া বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো তখনো দেশে সশস্ত্র বিপ্লবের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। ঠিক ওই সময়ে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের রাজনৈতিক ব্যবহারের ধরন পাল্টে যায়। আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি করে সন্ত্রাসের রাজত্ব। প্রশাসন আর পুলিশের নাকের ডগায় বসে নতুন প্রজন্মের সন্ত্রাসীরা অদৃশ্য রেখা টেনে শহরটাকে ভাগ করে ফেলে। অস্ত্রের আধিপত্যের জোরে কেউ সামনে এগিয়ে আসে, কেউ পিছু হটে যায়। এক অদ্ভুত সময়ে প্রবেশ করে সেই শহরের অপরাধ জগৎ।
অস্ত্রগুলো ভোজবাজির মতো কোত্থেকে এসেছিল? কারা হাতে তুলে দিয়েছিল সেই আগুনের মন্ত্র! আমি আজও মাঝে মাঝে ভাবি, ভেবে আশ্চর্য হই। ছায়া ছায়া কিছু মানুষ, নিঃশব্দ তাদের চলাচল। তারাই পৌঁছে দিয়ে যেত সেই অগ্নিবাণ। তাদের পরিচয় সব সময় জানা সম্ভব হতো না। বড় হয়ে সাংবাদিকতা করতে গিয়ে কয়েকটা অনুসন্ধানের কাজে জড়িয়ে গিয়ে দেখেছি কীভাবে অস্ত্র হাত বদলায়, সেই ছায়া ছায়া মানুষগুলো অপরাধ জগৎকে কীভাবে অস্থির করে তোলে। কিন্তু শেষ বিন্দুতে পৌঁছানো যায় না। অধরাই থেকে যায় অনেক কিছু।
অধরা থেকে যায় নাকি রেখে দেওয়া হয়? সেই শহরের অথবা এই শহরের অপরাধ জগতে একটি অলিখিত মন্ত্র এখনো নীরবতা। সবাই সবকিছু জানে আবার কেউ কিছুই জানে না। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছি আশির দশকে। পুরোটা সময় তখন ছিল স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে উত্তাল। সেই আন্দোলনের আগুনকে উসকে দিয়েছিল অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র। অনেকটাই বিস্মিত হয়ে দেখলাম, সত্তরের দশকের শেষ ভাগে যারা স্ট্রিট কর্নার গ্যাং হিসেবে বিভিন্ন এলাকার অধিপতি বনে গিয়েছিল, তারাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে তখন আন্দোলনের পুরোভাগে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তখন জমা হচ্ছে বারুদ, জমা হচ্ছে অগ্নিবাণ। কোত্থেকে আসত সেই অগ্নিবাণ? অদ্ভুত রাজনৈতিক সমীকরণে ঝকঝকে আগ্নেয়াস্ত্রগুলো পাওয়া যেত জেনারেল এরশাদের সৃষ্ট ফ্রিডম পার্টির কাছ থেকে। সমীকরণগুলো ছিল বেশ জটিল। পুরনো পাড়ার কানেকশন কাজ করত রাজনৈতিক বাধা টপকে। আবার সর্বহারা পার্টির কাছ থেকেও অস্ত্র আসত ভাড়ায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কার দিনে, অথবা বড় ধরনের সরকারবিরোধী কর্মসূচির আগে অস্ত্র ভেসে উঠত অন্তরাল থেকে। মাঝে মাঝে অন্তর্দলীয় কোন্দলেও ব্যবহৃত হতো এসব অস্ত্র। অপরাধ জগৎ আর অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের মাঝখানে ভেদরেখাটা খুব সবল ছিল না তখন। এ অস্ত্রই আবার নীরবতা বেছে নিয়ে ফিরে যেত যথাস্থানে।
আন্ডারওয়ার্ল্ডে নীরবতা বড় মন্ত্র। এই মন্ত্রের কারণেই ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে যখন প্রথম সাবমেশিনগান ব্যবহৃত হলো তার উৎস নিয়ে কেউ কথা বলেনি। সাংবাদিকরাও না। যে রাতে জিথ্রি রাইফেল ব্যবহৃত হলো তখনো একধরনের নীরবতার পর্দা ঝুলে রইল। আশির দশকের মাঝামাঝি স্টেনগান হাতে বেপরোয়া ছুটে চলা এক তরুণের ছবি ছাপা হলো বড় একটি দৈনিক কাগজের প্রথম পৃষ্ঠায়। তার পরিচয় সবাই জেনেও নামটা উচ্চারিত হলো না। সবই নীরবতার শর্তে পরিচালিত নির্বাক ছায়াছবি যেন।
অস্ত্র চিনতাম, অস্ত্রের গায়ে ব্যাচ নম্বর জানতাম, স্টেনগানের গুলির পেছনে তার পেঁচিয়ে যে রিভলবারে ব্যবহার করা হয় তা-ও জানতাম। বলিনি কেন! আমারও কি নীরবতার শর্তে ঠোঁট সেলাই করা ছিল? আন্ডারওয়ার্ল্ডে নিশ্চুপ থাকাও একটা বড় ভূমিকা। তাই বন্ধু, সহযাত্রী যখন নিজের বাড়ির সামনে বুলেটে সেলাই হয়ে মৃত্যুবরণ করে, তখনো সব জেনে গিলে ফেলতে হয় সবকিছু। যখন খুনির মুখ খুব কাছে এসে কথা বলে, মেনে নিতে হয় উদাসীন হয়ে। মাঝে মাঝে অবাক হয়ে ভাবি, সেই শহরে রক্তের দাগের পেছনের গল্পটা জেনেও কেন বলিনি কোনো দিন!
এই শহরের নিচে আরেকটা শহর আছে...তার নিচে আরও একটা...সেই শহরটাকে আমি চিনতাম একদা। মানুষগুলোও আমার চেনা ছিল। বিস্মৃতি হয়ে কোথায় হারিয়ে গেছে গল্পগুলো। সবই আসলে কোড অব সাইলেন্স!
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা ধেয়ে আসছে বাংলাদেশ উপকূলের দিকে। ঘণ্টায় প্রায় ১৭৫ কিলোমিটার গতি নিয়ে আগামীকাল রবিবার উপকূলে আছড়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে এ ঘূর্ণিঝড়টির। এমন পরিস্থিতিতে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী উপকূলীয় জেলাগুলোর প্রশাসন আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে মানুষকে সরিয়ে আনাসহ প্রয়োজনীয় বিভিন্ন প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু সেসব ছাপিয়ে উপকূলবর্তী জনপদের মানুষের ভয় বাড়িয়ে দিচ্ছে ধসে যাওয়া বেড়িবাঁধ। নানাভাবে তারা অরক্ষিত। এমনকি এমন অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে বেড়িবাঁধের চিহ্ন পর্যন্ত নেই। এ ছাড়াও নেই পর্যাপ্ত ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র।
উপকূলীয় এসব এলাকার মধ্যে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপকূলের শঙ্খনদ এবং বঙ্গোপসাগরের কয়েক জায়গায় ধসে যাওয়া বেড়িবাঁধ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের পূর্ব গহিরা বরফকল থেকে কোস্টগার্ড জেটি পর্যন্ত এবং জুঁইদণ্ডী ইউনিয়নের ভোলার বাড়ি এলাকার বেড়িবাঁধের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। গত বছরের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের পানি বেড়ে গেলে এসব এলাকার বেড়িবাঁধ টপকে পানি ঢুকেছিল। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জরুরি ভিত্তিতে বালুর বস্তা ফেলে পানি ঠেকানোয় তখন লোকালয়ের তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
অন্যদিকে পাউবোর চলমান প্রতিরক্ষা কাজের মধ্যে ৯০০ মিটার মাটির অভাবে থমকে রয়েছে। উপকূলের বার আউলিয়ায় ৩০০ মিটার, বাইগ্যার ঘাটে ৩০০ মিটার ও উঠান মাঝির ঘাট এলাকায় ৩০০ মিটার বাঁধের কাজ হয়নি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, পাউবোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা আর ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে যথাসময়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ হয়নি।
পাউবোর তথ্য অনুযায়ী, আনোয়ারা উপকূল সুরক্ষায় ২০১৬ সালের জুনে প্রায় ৩২০ কোটি টাকা ব্যয়ে আনোয়ারা থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত ৩৮টি প্যাকেজে কাজ শুরু হয়। পরে ওই কাজের সঙ্গে সংগতি রেখে ডিপিপি সংশোধন করে প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে ৫৭৭ কোটি ২৩ লাখ টাকায় উন্নীত করে অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (একনেক)। ২০২১ সালের ৬ অক্টোবর এ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকল্পের ৫১টি প্যাকেজে উপকূল সুরক্ষা, নদী খনন, রেগুলেটর নির্মাণ ও মেরামতের কাজ চলছে। প্রতিরক্ষা কাজের ১৩.৮০২ কিলোমিটারের মধ্যে ৯.৬৭২ কিলোমিটার কাজ শেষ হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে ঘূর্ণিঝড় মোখার বার্তায় রীতিমতো দুশ্চিন্তায় পড়েছেন আনোয়ারা উপকূলবাসী। বিশেষ করে দুর্বল বেড়িবাঁধ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছে উপকূলের মানুষ। তারা বলেছেন, বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ চললেও বেশ কিছু স্থান এখনো মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। আবার অনেক স্থানে বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ চলমান। যা ঘূর্ণিঝড়ে সৃষ্ট প্লাবন মোকাবিলার সক্ষমতা রাখে না। যদিও পাউবোর দাবি, বেড়িবাঁধের দুর্বল স্থানগুলো সংস্কার করা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা কায়সার উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পূর্ব গহিরার বরফকল থেকে কোস্টগার্ড জেটি পর্যন্ত বেড়িবাঁধ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ঘূর্ণিঝড় উঠলে তড়িগড়ি করে ওই অংশে সংস্কার করা হয়। কিন্তু অদৃশ্য কারণে ওই স্থানে ছয় বছরেও স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ হয়নি। বর্তমানে বাঁধের যে উচ্চতা তাতে সামান্য জলোচ্ছ্বাসে তা উপচে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করবে।’
রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আমিন শরীফ বলেন, ‘উপকূলীয় এই ইউনিয়নের পূর্ব গহিরা ও বাইগ্যার ঘাট এলাকার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। পাউবোর কর্মকর্তারা সরেজমিনে এসে বেড়িবাঁধ দেখে গেছে। ঠিকাদারের লোকজন ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধের সংস্কারকাজ শুরু করেছে। তবে এসব জায়গায় বাঁধ টিকবে কি না তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। বাঁধ ভাঙলে পুরো ইউনিয়ন পানিতে তলিয়ে যাবে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পাউবোর চট্টগ্রাম পওর-১-এর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী অনুপম দাশ বলেন, ‘আনোয়ারার পুরো বেড়িবাঁধ এলাকা মনিটরিং করা হচ্ছে। বেড়িবাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ স্থান মেরামত করা হচ্ছে। এরপরও কোথাও বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাৎক্ষণিক সংস্কার করা হবে।’
সার্বিক বিষয়ে আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইশতিয়াক ইমন বলেন, ‘উপজেলার ৫৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করার জন্য ইউপি চেয়ারম্যান ও সিপিপি টিম লিডারদের বলা হয়েছে। প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী, শিশুখাদ্য মজুদ রয়েছে। এ ব্যাপারে সবসময় মনিটরিং করা হচ্ছে।’
আনোয়ারার মতোই ভাঙা বাঁধ নিয়ে শঙ্কায় উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার মানুষ। তিনদিকে নদী ও একদিকে সাগরঘেরা এ জনপদের মানুষের কাছে দুর্যোগের খবর মানেই আতঙ্ক। নেই টেকসই বাঁধ, নেই পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্রও। বিচ্ছিন্ন এমন স্থানও রয়েছে, যেখানে বাঁধ কিংবা ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রের কোনোটাই নেই।
এলাকাবাসী বলছে, সাগর ও নদীঘেরা এ জনপদের বাঁধগুলো কোথাও ভাঙা, কোথাও দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ। কোনো কোনো এলাকায় নেই ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র। এমন পরিস্থিতিতে ঘূর্ণিঝড় মোখা যতই উপকূলের দিকে এগোচ্ছে, ততই বাড়ছে শঙ্কা। কারণ বেশিরভাগ বেড়িবাঁধই অরক্ষিত। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ চরনজির, চরহেয়ার ও চরকাশেমের মানুষ।
উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ চরনজিরের বাসিন্দা আবদুল বারেক বলেন, ‘হুনছি (শুনেছি) বন্যা আসতাছে। আমরা খুব আতঙ্কে আছি, আমাদের এই চরে শেল্টার (ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র) নাই। বন্যা হলে আমরা কই যাব বাবা? বন্যা হলেও আমাদের বাড়িঘর সব তলাই (ডুবে) যায়। গেল (গত) কয়েক বছরের বন্যায় ছেলে-সন্তান নিয়ে গাছে ছিলাম। আমাদের এই চরে একটি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র জরুরি। ঘূর্ণিঝড় আসলেই আতঙ্কে থাকতে হয়।’
এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় পুরো উপজেলায় ৮৮টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি। জানা গেছে, গত বর্ষা মৌসুমে ও নদীভাঙনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধের সংস্কার করা হলেও চরমোন্তাজ ইউনিয়নের চরআণ্ডা এলাকার প্রায় ৪ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়ে গেছে। ফলে স্বাভাবিক জোয়ারে চেয়ে একটু বেশি পানি হলেই ওই এলাকার ভাঙা ও সংস্কারহীন বাঁধ দিয়ে পানি ঢোকার শঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া চালিতাবুনিয়া এলাকার উত্তর চালিতাবুনিয়ায় বেড়িবাঁধের একাংশ দিয়ে লোকালয় পানি প্রবেশ করবে বলে আশঙ্কা করছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। বেড়িবাঁধহীন রয়েছে উপজেলার চরনজির, চরকাশেম, কাউখালী ও চরকানকুনি। এসব জনপদ জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
চরমোন্তাজ ইউনিয়নের চরআন্ডা ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘এমনিতেই বিচ্ছিন্ন ইউনিয়ন চরমোন্তাজ, আবার চরমোন্তাজের বিচ্ছিন্ন একটি চর হলো চরআন্ডা। এ চরের চারদিকেই নদী ও সমুদ্র। চরআ-া গ্রামে প্রায় চার হাজার লোকের বসবাস। আর রয়েছে একটি মাত্র সাইক্লোন শেল্টার, যা পর্যাপ্ত নয়। পূর্ব ও পশ্চিম পাশে বেড়িবাঁধ ভাঙা, যার কারণে খুব দ্রুত পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। দুর্যোগ এলে আমাদের সবসময় চিন্তায় থাকতে হয়। ঝড়-বন্যায় আমরা কোথায় যাব তার কোনো ভালো ব্যবস্থা নেই। এখানে নামেই মাত্র একটা মাত্র সাইক্লোন শেল্টার, যেখানে ১৫০-২০০ লোক আশ্রয় নিতে পারে।’
বেড়িবাঁধের কারণে ঝুঁকির বিষয়ে জানতে চাইলে পাউবোর কলাপাড়া জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী খালেদ বিন অলীদ বলেন, ‘ইতিমধ্যে ১ হাজার ৪৫০ মিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণকাজ চলছে। তবে চরআন্ডার ৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ এখনো বিধ্বস্ত রয়েছে। আমরা সেটি নির্মাণের জন্যও প্রস্তাব পাঠিয়েছি। বরাদ্দ পেলে বাঁধটির নির্মাণকাজ শুরু হবে।’
এ ব্যাপারে রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা গলাচিপার ইউএনও মহিউদ্দিন আল হেলাল বলেন, ‘যেহেতু চরআণ্ডা ও চরনজির খুবই ঝুঁকিপূর্ণ, তাই আমরা ওখানকার জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলব। সেখানকার ব্যাপারে আমাদের বিশেষ নজর থাকবে। প্রয়োজন হলে একজন কর্মকর্তাকে ফোকাল পারসন হিসেবে ট্যাগ (যুক্ত) করে রাখব। এখন তো আর তাৎক্ষণিক আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করতে পারব না। আমরা ওখান থেকে কিছু লোকজন উদ্ধার করে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারি। আর যেখানে বেড়িবাঁধ নেই তা নির্মাণে আমরা প্রস্তাব পাঠিয়েছি।’
* প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন জাহেদুল হক, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি এবং তুহিন রাজ, রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা
১৩ মে। ১৯৪৭ সাল। কলকাতার ১১৯ লাউডন স্ট্রিটের ‘রেড অ্যান্ড কিওর হোম’। মাত্র একুশ বছর বয়সের এক যুবক যিনি লিখেছেন ৭-৮ বছর। এরপর দেহ রাখলেন, অর্থাৎ অগস্ত্যযাত্রা। মৃত্যুর কারণ মূলত অনিয়ম। লালঝাণ্ডার সমতার পৃথিবীর স্বপ্নে শরীরের প্রতি বেদম অত্যাচার। প্রথমে ম্যালেরিয়ার ধাক্কায় দুর্বল শরীর, তারপর ক্ষয়রোগে চিরক্ষয়ের দিকে যাত্রা।
বাংলা সাহিত্যের জন্য অন্তত অমোঘ কিছু কবিতা লিখে গেছেন তিনি। যার আবেদন কখনো শেষ হবে না, অন্তত পৃথিবীতে শোষণ-বঞ্চনা যতদিন থাকবে ততদিন প্রাসঙ্গিক থাকবেন সুকান্ত ভট্টাচার্য।
বাংলাদেশের শিক্ষাক্রমের নানা শ্রেণিতে তার লেখা একাধিক কবিতা পাঠ্য। দুর্মর, আঠারো বছর বয়স, ছাড়পত্র, একটি মোরগের কাহিনীর মতো কবিতা পাঠক একবার পড়লে তা কখনো ভোলার নয়, তা শুধু তার রাজনীতিসচেতনতা নয়, আদি ও আসল কবিতার শক্তিতেই।
‘হিমালয় থেকে সুন্দরবন, হঠাৎ বাংলাদেশ/কেঁপে কেঁপে ওঠে পদ্মার উচ্ছ্বাসে,/সে কোলাহলে রুদ্ধস্বরের আমি পাই উদ্দেশ/জলে ও মাটিতে ভাঙনের বেগ আসে।//হঠাৎ নিরীহ মাটিতে কখন/জন্ম নিয়েছে সচেতনতার ধান,/গত আকালের মৃত্যুকে মুছে/আবার এসেছে বাংলাদেশের প্রাণ।// ‘‘হয় ধান নয় প্রাণ” এ শব্দে/সারা দেশ দিশাহারা,/একবার মরে ভুলে গেছে আজ/ মৃত্যুর ভয় তারা।//সাবাস, বাংলাদেশ, এ পৃথিবী/অবাক তাকিয়ে রয়/জ্বলে পুড়ে-মরে ছারখার/তবু মাথা নোয়াবার নয়।// (অংশবিশেষ)
স্মর্তব্য, ১৯৪৭ সালে দেশভাগও হয়নি, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন তখনো সুদূরপরাহত, কলকাতায় বসে কবি সুকান্ত লিখছেন, সাবাস বাংলাদেশ, এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়ৃ বাঙালিকে বলছেন, জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার তবু মাথা নোয়াবার নয়।
বাংলাদেশের যেকোনো অর্জনে এখনো ব্যবহার করা হয় সুকান্তর এই পঙ্ক্তি। ৬-৭ বছরের সাহিত্যজীবনে মাত্র হাতেগোনা কিছু কবিতায় বিস্ময়কর সব পঙ্ক্তি আর দৃশ্য রচনা করেছেন সুকান্ত। রবীন্দ্রোত্তর বাংলা কবিতার বৈপ্লবিক ভাবধারাটি যাদের সৃষ্টিশীল রচনায় সমৃদ্ধ হয়েছে, সুকান্ত তাদের অন্যতম। তার কবিতার ছন্দ, ভাষা, রচনাশৈলী এত স্বচ্ছন্দ, বলিষ্ঠ ও নিখুঁত যে, তার বয়সের বিবেচনায় এরূপ রচনা বিস্ময়কর ও অসাধারণ বলে মনে হয়। মাত্র তিনটি কাব্যগ্রন্থ ছাড়পত্র (১৯৪৭), পূর্বাভাস (১৯৫০), মিঠে-কড়া (১৯৫১)। যার দুটিই প্রকাশিত হয় মৃত্যুর পর। কি আর কোন বাংলা সাহিত্যের কবির কথা মনে পড়ে যাচ্ছে, হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন, আবুল হাসানের সঙ্গেই সুকান্তর এমন অদ্ভুত কাকতালীয় মিল।
বাংলা সাহিত্যের মার্কসবাদী ভাবধারায় বিশ্বাসী এবং প্রগতিশীল চেতনার অধিকারী কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের জন্ম ১৫ আগস্ট ১৯২৬ সালে, কলকাতার কালীঘাট অঞ্চলের অন্তর্গত ৪৩নং মহিম হালদার স্ট্রিটে তার মামাবাড়িতে। তার পৈতৃক বাড়ি সে সময়ের ফরিদপুর জেলার উনশিয়া গ্রামে, যা এখন গোপালগঞ্জের অন্তর্গত। সুকান্তের বাবা নিবারণ ভট্টাচার্য ছিলেন এক গ্রন্থাগারের মালিক, মা সুনীতি দেবী ছিলেন একজন সাধারণ গৃহবধূ। নিবারণ-সুনীতি দম্পতির ছয় ছেলের নাম যথাক্রমে মনমোহন, সুশীল, প্রশান্ত, বিভাষ, অশোক এবং অমীয়। সুকান্ত তার বড় দাদা মনমোহন এবং বউদি সরজু দেবীর খুবই আদরের ছিলেন। তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একজন মানুষ ছিলেন এই সরজু দেবী বা রানীদি। সেই সময়ের বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক মনিন্দ্রলাল বসুর “সুকান্ত” গল্পটি পড়ে সরজু দেবীই তার নাম রেখেছিলেন সুকান্ত।
বেলেঘাটা দেশবন্ধু স্কুল থেকে ১৯৪৫ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে অকৃতকার্য হলেন সুকান্ত। এ সময় ছাত্র আন্দোলন ও বামপন্থি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়ায় তার আনুষ্ঠানিক শিক্ষারও বারোটা বেজে গেল। সুকান্তের বাল্যবন্ধু ছিলেন কবি অরুণাচল বসু। সুকান্ত সমগ্রতে লেখা সুকান্তের চিঠিগুলোর বেশিরভাগই অরুণাচল বসুকে লেখা। অরুণাচল বসুর মাতা কবি সরলা বসু সুকান্তকে পুত্র¯েœহে দেখতেন। সুকান্ত ছেলেবেলায় মাতৃহারা হলেও সরলা বসু তাকে সেই অভাব কিছুটা পূরণ করে দিতেন। কবির জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছিল কলকাতার বেলেঘাটার ৩৪ হরমোহন ঘোষ লেনের বাড়িতে। সেই বাড়িটি এখনো অক্ষত আছে। পাশের বাড়িটিতে এখনো বসবাস করেন সুকান্তের একমাত্র জীবিত ভাই বিভাষ ভট্টাচার্য। পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সুকান্তের নিজের ভ্রাতুষ্পুত্র।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, তেতাল্লিশের মন্বন্তর, ফ্যাসিবাদী আগ্রাসন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রভৃতির বিরুদ্ধে কলম ধরলেন সুকান্ত। ১৯৪৪ সালে তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন। একাধারে বিপ্লবী ও স্বাধীনতার আপসহীন সংগ্রামী কবি সুকান্ত ছিলেন কম্যুনিস্ট পার্টির সারাক্ষণের কর্মী। পার্টি ও সংগঠনের কাজে অত্যধিক পরিশ্রমের ফলে নিজের শরীরের ওপর যে অত্যাচার তিনি করেছিলেন সাহিত্য সমালোচকরা এখনো এটিকেই তার অকালমৃত্যুর কারণ বলে মনে করেন। ফ্যাসিবাদী আগ্রাসন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও অনৈতিক ব্রিটিশ শাসন প্রভৃতির বিরুদ্ধে তিনি ও তার দল ভীষণভাবে সোচ্চার হন সেসময়ে। এ ব্যাপারগুলো প্রভাবিত করে তার কবিতাকেও।
১৯৪৪ সালে “আকাল” নামক একটি সংকলনগ্রন্থ তিনি সম্পাদনাও করেন এবং সেখানেই শোষিত মানুষের কর্মজীবন, ভবিষ্যৎ পৃথিবীর জন্য সংগ্রাম, সমাজের দুর্দশাজনিত বেদনা এবং শোষণমুক্ত স্বাধীন সমাজের স্বপ্ন প্রভৃতি বিষয় নিয়ে কবিতা লিখতে থাকেন। তার সেই কবিতা সংকলন মানুষকে ভীষণভাবে সাহস ও অনুপ্রেরণা জোগায় রাজনৈতিক কর্মকান্ডে সক্রিয় হতে। সুকান্ত কবিতা লেখার সঙ্গেই সঙ্গেই বিভিন্ন গান, গল্প, নাটক এবং প্রবন্ধও রচনা করেছিলেন। দুই বাংলা থেকেই প্রকাশিত হয়েছে সুকান্ত ভট্টাচার্যের রচনাসমগ্র। আঠারো বছর বয়স কবিতায় তারুণ্যকে দুঃসাহসের সারথি, যেকোনো কাজ চাইলেই করে ফেলতে পারার সক্ষমতা তাদের আছে এই প্রত্যয় প্রাণে ঢুকিয়ে দেওয়া কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য। প্রয়াণ দিবসে তাকে স্মরণ শ্রদ্ধা জানাই। তিনিই তো যুগে যুগে প্রাণে জ্বালিয়ে রেখেছেন দেশলাইয়ের কাঠি। লিখেছিলেন আমি একটা ছোট্ট দেশলাইয়ের কাঠি/এত নগণ্য, হয়তো চোখেও পড়ি না/তবু জেনো/মুখে আমার উসখুস করছে বারুদ /বুকে আমার জ্বলে উঠবার দুরন্ত উচ্ছ্বাস;/আমি একটা দেশলাইয়ের কাঠি।//
দেশলাইয়ের কাঠি শান্ত তারুণ্য জেগে উঠে একদিন নিশ্চয়ই এ জাতির সকল কালিমা করবে দূর, সত্যিকার অর্থেই হৃদয়ে ধারণ করবে প্রয়াণের ৭৬ বছর পর, আজও তরুণ কবি সুকান্তকে।
রাজধানী ধানমন্ডির সাত মসজিদ সড়কের আইল্যান্ডের গাছ কাটা বন্ধে ৪ দাবি জানিয়েছেন পরিবেশবাদী ও সচেতন নাগরিকরা। গতকাল শুক্রবার বিকেলে আবাহনী মাঠের পাশে ধানমণ্ডি এলাকাবাসী ও ‘সাত মসজিদ গাছ রক্ষা আন্দোলন’ আয়োজিত সবুজ সংহতি ও সবুজ প্রাচীর নামে এক প্রতিবাদ সমাবেশে এ দাবি জানান তারা। সমাবেশে প্রতিবাদী তরুণ শিল্পী, আলোকচিত্রী, লেখক, গবেষক, পরিবেশপ্রেমী ও সংস্কৃতিকর্মীদের সঙ্গে গাছ রক্ষার এই আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে যুক্ত হয়েছেন শতাধিক পরিবেশবাদী, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও ব্যক্তি।
সমাবেশে আয়োজকরা চারটি দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো সাত মসজিদ সড়কের গাছ কাটা বন্ধ করে কাটা গাছের স্থানে দেশীয় প্রজাতির গাছ লাগাতে হবে, জনগণের করের টাকায় একবার গাছ লাগানো এবং আরেকবার গাছ কেটে আবার ‘উন্নতমানের দ্রুতবর্ধনশীল গাছ লাগানোর নতুন প্রকল্প গ্রহণের নামে গাছ-বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে, বৃক্ষ ও নগরবাসীবান্ধব সুনির্দিষ্ট নীতিমালা গ্রহণের মাধ্যমে নগরের গাছ ও সবুজবলয় সুরক্ষা করতে হবে এবং নগর উন্নয়নে প্রকৃতিভিত্তিক পরিকল্পনাকে গুরুত্ব দিতে হবে।
সমাবেশে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সভাপতি মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, ‘উন্নয়নের নামে গাছ কাটা হচ্ছে। উন্নয়ন বলতে তারা কী বোঝাতে চাইছেন? মানুষের জীবনের সঙ্গে প্রকৃতির বেঁচে থাকা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। আমরা সুস্থ প্রকৃতি চাই, সুন্দর প্রকৃতি চাই। আমরা প্রকৃতির সঙ্গে বেড়ে উঠতে চাই। প্রকৃতিকে ধ্বংস করে উন্নয়ন চাই না। উন্নয়ন একটি উপায়, উন্নয়ন কখনো লক্ষ্য হতে পারে না। উন্নয়ন করা হয় মানুষের ভালোর জন্য, মানুষের সুুস্বাস্থ্য দেওয়ার জন্য, নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য।’ স্বাগত বক্তব্যে আন্দোলনের সমন্বয়ক আর্ট অ্যান্ড মিউজিয়াম কিউরেটর আমিরুল রাজীব বলেন, ‘গাছ কেটে যে উন্নয়ন হচ্ছে, সেই উন্নয়ন হচ্ছে এক শ্রেণির লোকের পকেটের উন্নয়ন। এটি জনগণের উন্নয়ন নয়। গাছ কাটা কোনো উন্নয়ন নয়। যেই মেয়র গাছ কাটে, সেই মেয়র আমরা চাই না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষক রোবাইয়াত ফেরদৌস বলেন, ‘গাছ আমাদের অক্সিজেন দেয়। এ জন্য গাছকে বাঁচাতে হবে ব্যাপারটি এমন নয়। গাছেরও বাঁচার অধিকার আছে। আমাদের যেমন বাঁচার অধিকার আছে, তেমনি একটি সত্তা হিসেবে গাছেরও বাঁচার অধিকার আছে।’
এএলআরডির নির্বাহী প্রধান শামসুল হুদা বলেন, ‘গাছ পাহারা দেওয়ার কথা আমাদের মেয়র সাহেবের কিন্তু তিনি বা তার লোকেরা এই গাছ কাটছেন আর পাহারা দিচ্ছেন আমাদের তরুণরা। উন্নয়ন মানে গাছ কাটা নয়, পাহাড় কাটা নয়, নদী ভরাট করা নয়। আমরা শুধু সাত মসজিদ রোডের গাছ কাটার বিপক্ষে নই, এই দাবি সারা দেশের জন্য।’
সমাবেশে বাংলাদেশ রিকশা ভ্যানচালক শ্রমিক ফেডারশনের ধানমন্ডি শাখার সভাপতি সুমন মৃধা বলেন, ‘আমাদের তো এসি নাই, রোদ-বৃষ্টির মধ্যেই থাকি। একটু গাছের নিচে গিয়া বসি আমরা। কী যে শান্তি লাগে তা বোঝাতে পারব না। এসির চেয়েও শান্তি। কিন্তু এখানকার গাছগুলো নির্বিচারে কেটে ফেলা হয়েছে। গাছগুলো আমাদের রক্ষা করতে হবে।’
গবেষক পাভেল পার্থর সঞ্চালনায় সাত মসজিদ সড়ক গাছ রক্ষা আন্দোলনের ব্যানারে আয়োজিত এ সমাবেশে সংহতি জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, গণস্বাস্থ্য, বেলা, বারসিক, উদীচী, জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশন, ছায়ানট, নাগরিক উদ্যোগ, নারীপক্ষ, নিজেরা করি, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, বাপা, নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কসহ শতাধিক সংগঠন ও ব্যক্তি।
আবাসন খাতের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান রূপায়ণ হাউজিং এস্টেট লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেছেন বর্তমানে রিয়েল স্টেট খাতের আইকন মো. আলীনূর রহমান। গত বুধবার রূপায়ণ গ্রুপের বোর্ড অব ডিরেক্টরস তাকে নতুন এ পদে পদায়ন করে। রূপায়ণ গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাইফ আলী খাঁন অতুল মো. আলীনূর রহমানের হাতে এ পদোন্নতিপত্র তুলে দেন। এ সময় রূপায়ণ গ্রুপের মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগের সহকারী পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে মো. আলীনূর রহমান একই প্রতিষ্ঠানের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) হিসেবে সুনাম ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া ২০২১ সালে তিনি আবাসন খাতের অন্যতম সেকেন্ডারি মার্কেটিং প্রতিষ্ঠান রাতুল প্রপার্টিজ লিমিটেডের ডিএমডি হিসেবে যোগদান করেন। মো. আলীনূর রহমান ২৫ বছর ধরে দেশের আবাসন খাতের বিভিন্ন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে নির্মাণ, সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং, কাস্টমার সার্ভিসসহ ব্যবস্থাপনা পরিচালনার দায়িত্ব সুনামের সঙ্গে পালন করেন। তিনি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংসহ বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে সর্বোচ্চ ডিগ্রি লাভ করেন।
নতুন এ দায়িত্ব পাওয়ার পর মো. আলীনূর রহমান বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও নির্মাণসামগ্রীর আকাশছোঁয়া দামের কারণে অন্যান্য খাতের মতো চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছে আবাসন শিল্প। এতসবের মধ্যেও আন্তর্জাতিক মানের আর্কিটেকচারাল ডিজাইনের মাধ্যমে মেগা গেটেড কমিউনিটিসহ আধুনিক বিশ্বমানের প্রকল্প নির্মাণ করছে রূপায়ণ গ্রুপ। আর তাই রূপায়ণ হাউজিং এস্টেট লিমিটেডের ক্রেতাদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিতে কাজ করবেন বলে উল্লেখ করেন তিনি। উল্লেখ্য, রূপায়ণ হাউজিং এস্টেট লিমিটেড ও রাতুল প্রপার্টিজ লিমিটেড রূপায়ণ গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
নরসিংদীর মনোহরদী পৌরসভার মেয়র আমিনুর রশিদ সুজনের ব্যক্তিগত সহকারী ও শ্রমিক লীগ নেতা মাছুম হাসান শুভর বিরুদ্ধে দম্পতিকে আটকে রেখে মারধর ও স্বর্ণালংকার লুটের অভিযোগ উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার দিকে মনোহরদীর আনোয়ার সিএনজি স্টেশনে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগীরা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করে অভিযোগের পর পুলিশ অভিযুক্ত মাছুম হাসান শুভকে আটক করে।
পরে রাতেই ভুক্তভোগী হারুনুর রশিদ ধ্রুব বাদী হয়ে শুভসহ পাঁচজনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও তিন-চারজনকে আসামি করে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়ার পর গতকাল শুক্রবার মামলাটি নথিভুক্ত করে প্রধান আসামি শুভকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন মনোহরদী থানার ওসি ফরিদ হোসেন। গ্রেপ্তার শুভ মনোহরদী পৌর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম শহরের বায়েজিদ বোস্তামী থানা এলাকার মৃত আবুল বাশারের ছেলে হারুনুর রশিদ ধ্রুব ঢাকায় বেসরকারি একটি টেলিভিশন স্টেশনে সহকারী প্রোগ্রাম প্রডিউসার পদে কর্মরত আছেন। তিন বছর আগে তিনি গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার বারিষাব ইউনিয়নের বারাব গ্রামের পুলিশ সদস্য হারুনুর রশিদের মেয়ে রেশমা আক্তারকে বিয়ে করেন। এ দম্পতি থাকেন ঢাকার ফার্মগেট এলাকায়।
ধ্রুব জানান, গত বুধবার সকালে স্ত্রীকে নিয়ে কাপাসিয়ায় শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে যান। পরদিন দুপুরে কেনাকাটা করতে ভগ্নিপতি মোসাদ্দেকের সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে পাশের মনোহরদী বাজারে যান। সেখান থেকে বেলা ৩টার দিকে অটোরিকশায় গ্যাস ভর্তি করতে তারা আনোয়ার সিএনজি স্টেশনে যান। গ্যাস ভরা শেষে সিএনজি স্টেশন থেকে বের হওয়ার সময় হঠাৎ সাত-আটজন যুবক তাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় তারা বিভিন্ন কটূক্তি ও নানান ধরনের হুমকি দিতে থাকে। একপর্যায়ে পৌর মেয়রের পিএস শ্রমিক লীগ নেতা শুভ এসে তাদের বিভিন্ন প্রশ্ন করতে থাকে। প্রশ্নের উত্তর দিতে আপত্তি করায় ধ্রুবের স্ত্রী রেশমাকে থাপ্পড় মারে শুভ। ওই সময় হামলাকারীরা রেশমার গলায় থাকা সোনার চেইন ও ধ্রুবের হাতের দুটি সোনার আংটি ছিনিয়ে নিয়ে যায়। সিএনজি স্টেশনের মতো জনবহুল জায়গায় এ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলেও ভয়ে সেখানে উপস্থিত কেউ এগিয়ে আসেনি। উল্টো হামলাকারীরা বিয়ের কাবিন না দেখালে যেতে দেবে না জানিয়ে ধ্রুব-রেশমা দম্পতিকে সিএনজি স্টেশনের একটি কক্ষে আটকে রাখে। পরে মোবাইল ফোনে বিয়ের কাবিননামার ছবি দেখালে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর ঘটনাস্থল থেকে নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে ভীতসন্তস্ত্র এ দম্পতি জাতীয় জরুরি সেবার নাম্বার ৯৯৯-এ কল করে পুলিশের সহযোগিতা চান। এরপর পুলিশের একটি দল তাদের উদ্ধার করে।
ধ্রুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি জীবনে এমন ভীতিকর পরিস্থিতিতে কখনোই পরিনি। ওই সময়টুকু এখনো মনে হলে আমি আঁতকে উঠছি। তারা আমার সামনে আমার স্ত্রীকে থাপ্পড় দিয়েছে। স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়েছে। আমরা এর বিচার চাই। তবে আমরা সাধারণ মানুষ, আইনি ঝামেলা নিয়েও দুশ্চিন্তায় আছি।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মনোহরদী থানার ওসি ফরিদ হোসেন বলেন, ‘পুলিশ ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে অভিযুক্তদের শনাক্ত করেছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে।’
নিজের বিদায়ী ম্যাচ বলেই কিনা জ্বলে উঠলেন সার্জিও রামোস। শুরুতেই পেয়ে যান গোলের দেখা। কিলিয়ান এমবাপ্পে আছেন তার আগের মতোই। তিনিও ডাবল লিড এনে দেন। তবে বিদায়ী ম্যাচে নিষ্প্রভ রইলেন লিওনেল মেসি। তাতেই কিনা শুরুতেই এগিয়ে যাওয়া ম্যাচটি হার দিয়ে শেষ করেছে পিএসজি।
লিগ ওয়ানের শেষ ম্যাচে ক্লেরমো ফুতের সঙ্গে ৩-২ গোলে হেরে গেছে প্যারিসিয়ানরা। তাতে রাঙানোর বদলে বিষাদভরা বিদায় হলো মেসি-রামোসদের।
আগেই লিগ শিরোপা নিশ্চিত করা পিএসজি মৌসুমে নিজেদের এই শেষ ম্যাচে দুটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছিল। হুগো একিতেকে ও আশরাফ হাকিমিকে ফেরান কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়ের।
শুরুতে গুছিয়ে উঠতে সময় লেগেছে পিএসজির। প্রথম ১০ মিনিটের পর ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২১ মিনিটের মধ্যে এগিয়ে গিয়েছিল ২-০ গোলে। রামোস ১৬ মিনিটে হেড থেকে এবং তার ৫ মিনিট পর কিলিয়ান এমবাপ্পে পেনাল্টি থেকে গোল করেন।
২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে ক্লেরম ফুতের পাল্টা লড়াই শুরু করতে সময় নিয়েছে মাত্র ৩ মিনিট। ২৪ মিনিটে গোল করেন ক্লেরমঁর গাস্তিয়েন। এর প্রায় ১২ মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে গোল করার সুযোগ নষ্ট করেন ক্লেরমঁ স্ট্রাইকার কেয়ি। পরে অবশ্য ৬৩ মিনিটে তাঁর গোলেই জিতেছে ক্লেরমঁ। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ক্লেরমঁর হয়ে সমতাসূচক গোলটি জেফানের।
বিরতির পর গোলের দারুণ একটি সুযোগ নষ্ট করেন মেসি। ৫৪ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে এমবাপ্পে ঢুকে পড়েন ক্লেরমঁর বিপদসীমায়। তাঁর ক্রস পেয়ে যান ডান প্রান্ত দিয়ে দৌড় বক্সে ঢোকা মেসি। সামনে গোলকিপার একা, কিন্তু মেসি অবিশ্বাস্যভাবে বলটা পোস্টের ওপর দিয়ে মারেন।
সতীর্থ গোলকিপার সের্হিও রিকোর সুস্থতা কামনা করে বিশেষ জার্সি পরে মাঠে দাঁড়িয়েছিলেন মেসি-এমবাপ্পেরা। ঘোড়ায় চড়তে গিয়ে দূর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন রিকো। ম্যাচে বিশেষ জার্সি পরে খেলেছে পিএসজি। মেসি-রামোসদের জার্সির পেছনে রিকোর নাম লেখা ছিল।
৩৮ ম্যাচে ৮৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থেকে মৌসুম শেষ করল পিএসজি। ৮৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে লেঁস। তৃতীয় মার্শেইয়ের সংগ্রহ ৭৩ পয়েন্ট। ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে চারে ইউরোপা লিগ নিশ্চিত করা রেঁনে।
এক যুগের ব্যবধানে ঘটা সহিংসতার দুটি ঘটনায় করা তিন শতাধিক মামলা দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার পর তদন্ত করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। মামলাগুলো ২০০১ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা এবং ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় হামলা, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়ের করা হয়েছিল। পাশাপাশি যেসব মামলা বিচারাধীন আছে সেগুলোও দ্রুত নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে পুলিশের সব ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে।
পুুলিশের পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনে আসা ‘ভিআইপি অভিযোগগুলো’ আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে পুলিশ ও দুদক সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নতুন করে তদন্ত করার সময় অহেতুক নিরপরাধ লোকজন যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়ার জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। মামলায় যাদের নাম এসেছে তাদের বিষয়ে আরও গভীরে গিয়ে তদন্ত করতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ২০০১ ও ২০১৩-২০১৫ সালে সহিংসতা মামলাগুলোর তদন্ত দ্রুত শেষ করতে বলা হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানান, রাজনৈতিক কারণে মামলা জিইয়ে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। সব সরকারের আমলেই এসব করা হচ্ছে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর সারা দেশে তান্ডব চালিয়েছিল এই নিয়ে দেশে বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতাসহ অনেকেই আসামি হয়েছেন। ২০১৩-২০১৫ সালে সহিংতার ঘটনা মামলা হয়েছে এসব মামলা দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন ও যেসব মামলা আদালতে বিচারাধীন আছে সেগুলোর দ্রুত বিচারকাজ সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দিনের পর দিন ওইসব মামলা আদালতে ঝুলছে। এতে ভুক্তভোগীরা বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই যারা এসব অপকর্ম করেছে তাদের তাদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে।
সহিংসতা মামলার পাশাপাশি গত ১০ বছরের ব্যবধানে দুর্নীতি দমন কমিশনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ‘ভিআইপি অভিযোগগুলো’ অনুসন্ধান করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, আন্দোলনের নামে বিএনপি ও জামায়াত ২০১৩-২০১৫ সালে তান্ডবলীলা চালিয়েছে। ২০০১ সালে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ব্যাপক অত্যাচার করা হয়েছিল। ওইসব মামলার বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তাছাড়া আন্দোলনের নামে ঢাকাসহ সারা দেশে তান্ডব চালিয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট। সারা দেশেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এসব মামলা কী অবস্থায় আছে তাও পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতা করে যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার অপপ্রয়াস চালিয়েছিল, তাদের বিচার করা হবে। এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তা পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। তবে নিরপরাধ কাউকে আমরা হয়রানি করছি না। ভবিষতেও করব না।
সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করতে একটি মহল দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। তাদের দমন করতে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে হবে না। এতে সাধারণ জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। আন্দোলনের নামে তারা জ্বালাও-পোড়াও করে সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে। এসব ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাগুলো দ্রুত তদন্ত করে অভিযোগপত্র দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি যেসব মামলা আদালতে রয়েছে সেগুলোর বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে।
একই কথা বলেছেন মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, হামলায় পেশিশক্তি যেমন থাকে, রাজনৈতিক শক্তিও থাকে। সাধারণভাবে এমন একটি ধর্মীয় জিগির তোলা হয় তখন অনেক ক্ষেত্রেই সব দল এক হয়ে হামলা চালায়। বিচারাধীন মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। যারা এসব অপকর্ম করছে তাদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। পাশাপাশি যেসব মামলার তদন্ত শেষ হয়নি তা সঠিকভাবে তদন্ত করতে হবে। ঢালাওভাবে রাজনৈতিক নেতাদের দোষারোপ করা যাবে না।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখনো বেশ কিছু মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। তাছাড়া জ্বালাও-পোড়াওয়ের অনেক মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। সবমিলিয়ে অন্তত তিন শতাধিক মামলা হবে। এসব মামলা সক্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে পুুলিশের সব ইউনিটকে বার্তা দেওয়া হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে বিচার না হওয়ায় আবারও একটি মহল দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, স্পর্শকাতর মামলায় দীর্ঘদিনে বিচারকাজ শেষ না হওয়ার কারণে বাদীপক্ষের মধ্যে এক ধরনের হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে আসামিপক্ষ ঘটনা ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করে। আর এসব কারণে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ঝুলে থাকা মামলাগুলো সক্রিয় করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। তবে অহেতুক কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে।
পুলিশ সূত্র জানায়, ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার কারণ উদঘাটন এবং জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে ‘হিউম্যান রাইট ফর পিস’ নামের একটি মানবাধিকার সংগঠন হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। ২০০৯ সালের ৬ মে এসব নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তের জন্য সরকারকে নির্দেশ দেয় আদালত। ২০১০ সালের ২৭ ডিসেম্বর অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মো. সাহাবুদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যর বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। কমিশন দীর্ঘ সময় তদন্ত করে ২০১১ সালের ২৪ এপ্রিল তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের কাছে একটি প্রতিবেদন দেয়। তদন্তকালে কমিশন ৫ হাজার ৫৭১টি অভিযোগ পেয়েছিল। বিএনপি ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাসহ অন্তত ১৮ হাজার নেতাকর্মী জড়িত ছিল বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। সহিংসতার পর বরিশাল বিভাগে ২ হাজার ১৮৯টি, ঢাকায় ১৮৪টি, চট্টগ্রামে ৩৫০টি, রাজশাহীতে ১১৭টি এবং খুলনায় ৪০৫টি হামলার ঘটনা ঘটে। তাছাড়া হামলায় খুলনা বিভাগে ৭৩, ঢাকা বিভাগে ৯২, রাজশাহী বিভাগে ৫৩, চট্টগ্রাম বিভাগে ৯৭, বরিশাল বিভাগে ৩৮ এবং সিলেট বিভাগে ২ জন হত্যাকা-ের শিকার হয়েছে। তারমধ্যে ভোলা, বরিশাল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, যশোর, নাটোর, রাজবাড়ী, পাবনা, ফেনী, রাজশাহী, ঝিনাইদহ, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, দৌলতখান, চরফ্যাশন, লালমোহন, বোরহানউদ্দিন, কুষ্টিয়া, গাজীপুর, চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা এবং মৌলভীবাজার জেলায় হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকাণ্ড বেশি ঘটে। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ২২১টি। এর মধ্যে ৫৭টি মামলা তদন্তাধীন। বাকিগুলোতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্র আরও জানায়, ২০১৩-১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন কর্মসূচি চলাকালে পেট্রলবোমা হামলায় দেশজুড়ে মারা গেছে শতাধিক নিরীহ মানুষ। তারমধ্যে আগুনেই পুড়ে মারা গেছে ৪০ জনের মতো। এ সময় রেললাইন পর্যন্ত উপড়ে ফেলাসহ সরকারি সম্পদ ধ্বংস করা হয়েছে। প্রতিটি ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ওই সময় মামলা হয়েছে প্রায় ৩ হাজার। বেশির ভাগ মামলার তদন্ত হয়েছে। ৪৫০টি মামলা বিচারধীন। এসব মামলায় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা আসামি। তারা কৌশলে বারবার শুনানির তারিখ নেয়, যে কারণে মামলা পিছিয়ে যায়। এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে, কয়েকটি তারিখ দেওয়ার পর মামলাগুলো নিষ্পত্তি করা হবে।
এছাড়া ৩১২টি মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। তদন্ত শেষ করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে নাশকতা মামলার দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বেশিরভাগ মামলার আসামি এলাকায় থাকেন না। তাদের নাম-ঠিকানা খুঁজে বের করে অভিযোগপত্র দেওয়া তদন্তকারী কর্মকর্তার পক্ষে খুব কঠিন হয়ে যায়। আর যেসব মামলায় আদালতে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোরও বিচার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে না। তাছাড়া পলাতক আসামিদের বিষয়ে কিছু আইনি জটিলতার কারণেই দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পুনরায় নাশকতা ঘটানো হতে পারে এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা। এই নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। তার জানামতে, মামলাগুলো নিয়ে আইন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা একাধিক সভা করেছেন।
দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, গত দশ বছরে দুদকে ‘অনেক ভিআইপির’ বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। ওইসব অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। অনুসন্ধানের জন্য আলাদা কমিটি করে দেওয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন চা শিল্পের সার্বিক উন্নয়নে চা শিল্প সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেছেন, বর্তমান সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে দেশে চায়ের উৎপাদন ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আজ রবিবার (৪ জুন) জাতীয় চা দিবস উপলক্ষে গতকাল শনিবার দেওয়া এক বাণীতে এ কথা বলেন রাষ্ট্রপ্রধান।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, এক সময় চা ছিল বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি পণ্য। সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে দেশে চায়ের উৎপাদন ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। চা শিল্পের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার ২০১৭ সালে 'উন্নয়নের পথনকশা : বাংলাদেশ চা শিল্প' অনুমোদন দিয়েছে।
মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, চা শিল্পের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন চা শ্রমিকদের পারিশ্রমিক বৃদ্ধিসহ তাদের সার্বিক জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে বাসস্থান, শৌচাগার ও নলকূপ স্থাপন, শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত চা গবেষণা ইনস্টিটিউটে ল্যাবরেটরি ও লাইব্রেরি স্থাপনের মাধ্যমে গবেষণা কার্যক্রম জোরদারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এ ছাড়া স্বাধীনতার পর যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত চা শিল্প পুনর্গঠনে বাগান মালিকদের আর্থিক সহায়তা প্রদান ও অবকাঠামো উন্নয়নে দ্রুত পদক্ষেপ নেন। তিনি ১৯৭৩ সালে শ্রীমঙ্গলের টি রিসার্চ স্টেশনকে পূর্ণাঙ্গ গবেষণা ইনস্টিটিউটে উন্নীত করেন। এটি বর্তমানে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) হিসেবে দেশের চা গবেষণার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ বছর চা দিবসের প্রতিপাদ্য 'চা দিবসের সংকল্প, শ্রমিকবান্ধব চা শিল্প' অত্যন্ত যথার্থ হয়েছে বলেও মনে করেন রাষ্ট্রপ্রধান।
মো. সাহাবুদ্দিন আশা প্রকাশ করেন, চা শিল্পের সার্বিক উন্নয়নে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ চা বোর্ডসহ চা শিল্প সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বিত প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
রাষ্ট্রপতি 'জাতীয় চা দিবস ২০২৩' উপলক্ষে নেওয়া সব কর্মসূচির সফলতা কামনা করেন।
তুমি জয়ী তুমি বীর
তুমি দুর্ভেদ্য প্রাচীর
তুমি অগ্নি তুমি সেই জ¦লন্ত মশাল
যাতে চিরন্তন প্রজ্বলিত থাকে অগ্নিশিখা
বৈরীর আঘাতে যখন তুমি হও ক্ষতবিক্ষত
অস্ত্র চলে ক্ষিপ্ত বেগে বজ্রশক্তির মতো
সৈনিক তুমি দাউ দাউ করে জ¦লতে থাকা
প্রজ¦লিত অগ্নিশিখা
সেনাবাহিনী তুমি বাংলা মায়ের সার্বভৌমত্ব রক্ষায়
দুই সীমানায় ঘাত-বিঘাতে শহীদ হওয়া হাজার প্রাণ
সেনাবাহিনী মানে সন্তানহারা মায়ের বুকফাটা কান্না
সেনাবাহিনী মানে বাংলার মানুষের পূর্ণ আস্থা ও ভরসা
সেনাবাহিনী মানে দেশের সেবা অক্ষুন্ন রেখে
দেশবাসীকে বাঁচানোর লক্ষ্যে পথচলা
হয়তো তার মনের অবচেতনে জেগে ওঠে
মা-বাবা আর আপনজন
তব্ওু মনের গভীরে জেগে রয় তার শপথ বাণী
কখনো তোমার সম্মান ক্ষুন্ন হতে দেব না মাগো
তুমি যে আমার বঙ্গমাতা
তুমি যে সব দেশের রানী
দুর্ঘটনা ঘটেছিল শুক্রবার রাতে। তারপর থেকে আসছিল হতাহতের ভিন্ন ভিন্ন তথ্য। তবে প্রকৃত ভয়াবহতার চিত্র ফুটতে শুরু করে গতকাল শনিবার ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে। সকালে দেখা যায় তিনটি ট্রেনের বেশিরভাগ কামরা পড়ে আছে মাটিতে। কোনো কামরা পুরোপুরি উল্টে গেছে। কোনোটি আবার উঠে গেছে আরেকটির ওপর। আশপাশে, সামনে-পেছনে শুধু মৃতদেহ। কয়েক ঘণ্টা আগেও যারা বেঁচে ছিলেন, যাদের চোখে স্বপ্ন ছিল তারা লাশ হয়ে পড়ে আছেন খোলা আকাশের নিচে। আহত ও স্বজনহারাদের আর্তনাদ-হাহাকার আর অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনের শব্দে গতকাল সারা দিনই বিভীষিকাময় ছিল ভারতের ওড়িশার বালাশ্বরের কাছের বাহানগায়ের বাতাস। ওড়িশা রাজ্যে ঘোষণা করা হয়েছে এক দিনের শোক।
শুক্রবার রাতে বালাশ্বরে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার পর উদ্ধার শেষে দেশটির সরকার ২৮৮ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সংখ্যাও হাজার ছুঁইছুঁই করছে। উদ্ধারকাজ শেষ হলেও এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও মানুষ আটকে থাকার আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। উদ্ধারকাজের নেতৃত্ব দেওয়া ওড়িশা ফায়ার সার্ভিসের ডিরেক্টর জেনারেল সুধাংশু সারাঙ্গি জানান, নিহতের সংখ্যা ২৮৮। অবশ্য উদ্ধারকাজ শেষ হওয়ার পর রেল কর্র্তৃপক্ষ জানিয়েছে নিহতের সংখ্যা ২৬১। ভারতের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াও দাবি করেছে নিহতের সংখ্যা ২৬১। দেশটির আরেক সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিও প্রথমে ২৬১ জনের কথা বললেও গতকাল সন্ধ্যার পরে তারা নিহতের সংখ্যা ২৮৮ বলেই জানায়। একই সঙ্গে সংবাদমাধ্যমটি বলেছে, নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। দেশটির কেন্দ্রীয় রেল মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অমিতাভ শর্মাও তেমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘উদ্ধারকাজ শেষ হয়েছে। এখন আমরা সংযোগ পুনঃ প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করব। তবে এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে মানুষ থাকার আশঙ্কা রয়েছে।’
এনডিটিভি জানায়, যাত্রীবাহী ট্রেন করমণ্ডল এক্সপ্রেস কলকাতা থেকে চেন্নাই যাচ্ছিল। বেলা ৩টার দিকে শালিমার স্টেশন থেকে ছাড়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেস। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ ট্রেনটি পৌঁছায় বালাশ্বরে। কাছেই বাহানগা বাজারের কাছে মালবাহী ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ট্রেনটি। সে সময় তৃতীয় ট্রেন যশবন্তপুর-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসও এই দুর্ঘটনার শিকার হয়।
ওড়িশা রাজ্যের মুখ্যসচিব প্রদীপ জেনা দুর্ঘটনার পরপর জানিয়েছিলেন, দুর্ঘটনাস্থলে অন্তত ২০০টি অ্যাম্বুলেন্স পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ১০০ জন অতিরিক্ত ডাক্তার সেখানে সেবায় নিয়োজিত করা হয়েছে।
ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনার কারণ কী, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। স্থানীয় মানুষ বলছে, মালগাড়ি গিয়ে ধাক্কা দেয় করমণ্ডল এক্সপ্রেসে। সেই ট্রেন লাইনচ্যুত হয়। উল্টোদিক থেকে আসছিল সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। উল্টে যাওয়া কামরায় ধাক্কা লেগে সেই ট্রেনের অধিকাংশ কামরা উল্টে যায়। গতকাল দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া একজন ভারতের বার্তা সংস্থা এএনআইকে বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর আমি ১০ থেকে ১৫ জনের নিচে চাপা পড়ি। আমি ওই মানুষের স্তূপে সবার নিচে ছিলাম। আমার হাতে আর ঘাড়ে আঘাত লাগে। আমি যখন ট্রেনের বগি থেকে বের হই, তখন দেখি কেউ হাত হারিয়েছে, কেউ পা হারিয়েছে, কারও আবার মুখ সম্পূর্ণ বিকৃত হয়ে গেছে।’
এদিকে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটির নেতৃত্ব দেবেন রেলওয়ে সেফটি বিভাগের কমিশনার। এ সংস্থাটি বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করে।
এখন পর্যন্ত দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে সুনিশ্চিতভাবে জানা না গেলেও সিগন্যালের সমস্যার কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন, এই রুটে ট্রেনের মধ্যে সংঘর্ষ প্রতিরোধী ব্যবস্থা ‘কবচ’ ব্যবহার করা হতো না। রেলওয়ের মুখপাত্র অমিতাভ শর্মা জানান, কবচ সিস্টেমটি এই রুটে নেই। বর্তমানে দিল্লি-হাওড়া এবং দিল্লি-বোম্বে রুটে কবচ স্থাপন করা হচ্ছে।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে তাদের রিপোর্টে উল্লেখ করেছে যে চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেসের চারটি বগি ও ইঞ্জিন লাইনচ্যুত হয়ে পাশের রেললাইনে পড়ে, যে লাইন দিয়ে যশবন্তপুর-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস যাচ্ছিল। দ্বিতীয় ট্রেনটির পেছন দিকের দুটি বগি তখন লাইনচ্যুত হয়।
রেলওয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ১২টি বগি বাহানগার বাজার স্টেশন পার করার সময় লাইনচ্যুত হয় এবং পাশের লাইনের ওপর পড়ে। সে সময় ওই লাইন দিয়ে হাওড়া এক্সপ্রেস ট্রেন যাওয়ার সময় সেগুলোর সঙ্গে ধাক্কা খায় এবং ট্রেনের তিনটি বগি লাইনচ্যুত হয়।
পত্রিকাটির খবর অনুযায়ী, বাহানগা বাজার স্টেশনে চারটি রেললাইন আছে, যার একটিতে দুর্ঘটনার সময় একটি মালবাহী ট্রেন দাঁড়িয়ে ছিল। যাত্রীবাহী ট্রেন দুটি ভিন্ন ভিন্ন লাইনে একে অপরকে বিপরীত দিক দিয়ে পার করার কথা ছিল। কিন্তু একটি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে পাশের লাইনে পড়ে গেলে বিপরীত দিক থেকে আসা হাওড়া এক্সপ্রেসের সঙ্গে সেটির সংঘর্ষ হয়।
হিন্দুস্তান টাইমস পত্রিকা বলছে, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ১৫টি কোচ লাইনচ্যুত হয়ে পাশের লাইনের ওপরে পড়ে এবং পরে হাওড়া এক্সপ্রেসের সঙ্গে সংঘর্ষ হলে সেই ট্রেনের দুটি বগি লাইনের বাইরে চলে যায়।
অন্য একটি সূত্রের বরাত দিয়ে দ্য হিন্দু পত্রিকা খবর প্রকাশ করেছে যে প্রথমে হাওড়া এক্সপ্রেস ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়। করমণ্ডল এক্সপ্রেস পশ্চিমবঙ্গ থেকে তামিলনাড়ু যাতায়াতের মাধ্যম। দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ আগে ট্রেনটি শালিমার স্টেশন অতিক্রম করে। পত্রিকাটি বলছে, মূলত তামিলনাড়ুতে কাজের জন্য ও উন্নত চিকিৎসার জন্য যারা গিয়ে থাকেন, তারা এই ট্রেন ব্যবহার করে থাকেন।
এদিকে বিবিসি বলছে, দুর্ঘটনাস্থল ও হাসপাতালে উপস্থিত সাংবাদিকদের পাঠানো খবর ও ছবি দিয়ে সেখানকার সবশেষ পরিস্থিতির আঁচ পাওয়া যাচ্ছে। রেললাইনসহ আশপাশের জায়গাগুলোতে ট্রেনে থাকা মানুষের জিনিসপত্র ছড়িয়ে রয়েছে। লাইনের পাশে প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরা মৃতদেহ সারিতে রাখা ছিল। কিছুক্ষণ পরপর এই মৃতদেহগুলো গাড়িতে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। ট্রেনের বগির ভেতরে মানুষের স্যান্ডেল, কাপড় এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। উদ্ধারকাজ চলাকালে কয়েকজনকে পড়ে থাকা কাপড় ও দড়ির সাহায্যে টেনে বের করা হয়।
ওড়িশার মুখ্য সচিব প্রদীপ জেনা জানিয়েছেন, ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত মানুষকে গোপালপুরে একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এর বাইরে কিছু মানুষকে বালাশ্বর মেডিকেল কলেজেও নেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের বাইরে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, বালাশ^র হাসপাতালের পোস্টমর্টেম বিভাগের বাইরে শত শত মানুষ ভিড় করেছে। শুক্রবার রাতেই ৫০০ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রদীপ জেনা। মানুষ নিজে থেকে উদ্যোগী হয়ে এসে রক্তদান করে যাচ্ছে।
ভারতের রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব শুক্রবার দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ পরেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে ভুক্তভোগীদের সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের আশ্বাস দেন। দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, তদন্তের জন্য উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কেন দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা শিগগিরই বোঝা যাবে। এই দুর্ঘটনার দায় নিয়ে তিনি পদত্যাগ করবেন কি না, সেই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের চিন্তা মানুষের জীবন বাঁচানো ও উদ্ধারকাজ শেষ করা।’
রেলমন্ত্রী অশি^নী বৈষ্ণব বলেছেন, প্রত্যেক নিহতের পরিবারকে ১০ লাখ রুপি করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া গুরুতর আহতদের জন্য দুই লাখ রুপি ও অপেক্ষাকৃত কম আহতদের জন্য ৫০ হাজার রুপি ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে শনিবার সন্ধ্যার দিকে ওড়িশায় ট্রেন দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তিনি বলেছেন, এই মর্মান্তিক ঘটনায় যারা পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছেন তাদের পাশে রয়েছে সরকার। এটা বেদনাদায়ক ঘটনা। আহতদের চিকিৎসার জন্য সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। এটা গুরুতর ঘটনা। তিনি বলেন, এই দুর্ঘটনার প্রতিটি দিক বিবেচনায় নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দোষীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
ট্রেন দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের সঙ্গে ঘুরে দেখেন দুর্ঘটনাস্থল। পরিদর্শনকালে মমতা বলেন, এই দুর্ঘটনার পেছনে কিছু আছে। ভালো করে তদন্ত করতে হবে। তিনি অভিযোগ তোলেন, রেলের কাজে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনের অ্যান্টিকলিশন ডিভাইস ছিল না। ভারতের সবচেয়ে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে ১৯৮১ সালে। সে সময় অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা একটি প্যাসেঞ্জার ট্রেন বিহার রাজ্যে সাইক্লোনের সময় লাইনচ্যুত হয়ে নদীতে পড়ে যায়। ওই দুর্ঘটনায় অন্তত ৮০০ মানুষ মারা গিয়েছিল।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।