
আবাসন খাতের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান রূপায়ণ হাউজিং এস্টেট লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেছেন বর্তমানে রিয়েল স্টেট খাতের আইকন মো. আলীনূর রহমান। গত বুধবার রূপায়ণ গ্রুপের বোর্ড অব ডিরেক্টরস তাকে নতুন এ পদে পদায়ন করে। রূপায়ণ গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাইফ আলী খাঁন অতুল মো. আলীনূর রহমানের হাতে এ পদোন্নতিপত্র তুলে দেন। এ সময় রূপায়ণ গ্রুপের মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগের সহকারী পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে মো. আলীনূর রহমান একই প্রতিষ্ঠানের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) হিসেবে সুনাম ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া ২০২১ সালে তিনি আবাসন খাতের অন্যতম সেকেন্ডারি মার্কেটিং প্রতিষ্ঠান রাতুল প্রপার্টিজ লিমিটেডের ডিএমডি হিসেবে যোগদান করেন। মো. আলীনূর রহমান ২৫ বছর ধরে দেশের আবাসন খাতের বিভিন্ন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে নির্মাণ, সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং, কাস্টমার সার্ভিসসহ ব্যবস্থাপনা পরিচালনার দায়িত্ব সুনামের সঙ্গে পালন করেন। তিনি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংসহ বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে সর্বোচ্চ ডিগ্রি লাভ করেন।
নতুন এ দায়িত্ব পাওয়ার পর মো. আলীনূর রহমান বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও নির্মাণসামগ্রীর আকাশছোঁয়া দামের কারণে অন্যান্য খাতের মতো চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছে আবাসন শিল্প। এতসবের মধ্যেও আন্তর্জাতিক মানের আর্কিটেকচারাল ডিজাইনের মাধ্যমে মেগা গেটেড কমিউনিটিসহ আধুনিক বিশ্বমানের প্রকল্প নির্মাণ করছে রূপায়ণ গ্রুপ। আর তাই রূপায়ণ হাউজিং এস্টেট লিমিটেডের ক্রেতাদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিতে কাজ করবেন বলে উল্লেখ করেন তিনি। উল্লেখ্য, রূপায়ণ হাউজিং এস্টেট লিমিটেড ও রাতুল প্রপার্টিজ লিমিটেড রূপায়ণ গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা ধেয়ে আসছে বাংলাদেশ উপকূলের দিকে। ঘণ্টায় প্রায় ১৭৫ কিলোমিটার গতি নিয়ে আগামীকাল রবিবার উপকূলে আছড়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে এ ঘূর্ণিঝড়টির। এমন পরিস্থিতিতে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী উপকূলীয় জেলাগুলোর প্রশাসন আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে মানুষকে সরিয়ে আনাসহ প্রয়োজনীয় বিভিন্ন প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু সেসব ছাপিয়ে উপকূলবর্তী জনপদের মানুষের ভয় বাড়িয়ে দিচ্ছে ধসে যাওয়া বেড়িবাঁধ। নানাভাবে তারা অরক্ষিত। এমনকি এমন অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে বেড়িবাঁধের চিহ্ন পর্যন্ত নেই। এ ছাড়াও নেই পর্যাপ্ত ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র।
উপকূলীয় এসব এলাকার মধ্যে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপকূলের শঙ্খনদ এবং বঙ্গোপসাগরের কয়েক জায়গায় ধসে যাওয়া বেড়িবাঁধ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের পূর্ব গহিরা বরফকল থেকে কোস্টগার্ড জেটি পর্যন্ত এবং জুঁইদণ্ডী ইউনিয়নের ভোলার বাড়ি এলাকার বেড়িবাঁধের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। গত বছরের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের পানি বেড়ে গেলে এসব এলাকার বেড়িবাঁধ টপকে পানি ঢুকেছিল। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জরুরি ভিত্তিতে বালুর বস্তা ফেলে পানি ঠেকানোয় তখন লোকালয়ের তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
অন্যদিকে পাউবোর চলমান প্রতিরক্ষা কাজের মধ্যে ৯০০ মিটার মাটির অভাবে থমকে রয়েছে। উপকূলের বার আউলিয়ায় ৩০০ মিটার, বাইগ্যার ঘাটে ৩০০ মিটার ও উঠান মাঝির ঘাট এলাকায় ৩০০ মিটার বাঁধের কাজ হয়নি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, পাউবোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা আর ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে যথাসময়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ হয়নি।
পাউবোর তথ্য অনুযায়ী, আনোয়ারা উপকূল সুরক্ষায় ২০১৬ সালের জুনে প্রায় ৩২০ কোটি টাকা ব্যয়ে আনোয়ারা থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত ৩৮টি প্যাকেজে কাজ শুরু হয়। পরে ওই কাজের সঙ্গে সংগতি রেখে ডিপিপি সংশোধন করে প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে ৫৭৭ কোটি ২৩ লাখ টাকায় উন্নীত করে অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (একনেক)। ২০২১ সালের ৬ অক্টোবর এ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকল্পের ৫১টি প্যাকেজে উপকূল সুরক্ষা, নদী খনন, রেগুলেটর নির্মাণ ও মেরামতের কাজ চলছে। প্রতিরক্ষা কাজের ১৩.৮০২ কিলোমিটারের মধ্যে ৯.৬৭২ কিলোমিটার কাজ শেষ হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে ঘূর্ণিঝড় মোখার বার্তায় রীতিমতো দুশ্চিন্তায় পড়েছেন আনোয়ারা উপকূলবাসী। বিশেষ করে দুর্বল বেড়িবাঁধ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছে উপকূলের মানুষ। তারা বলেছেন, বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ চললেও বেশ কিছু স্থান এখনো মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। আবার অনেক স্থানে বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ চলমান। যা ঘূর্ণিঝড়ে সৃষ্ট প্লাবন মোকাবিলার সক্ষমতা রাখে না। যদিও পাউবোর দাবি, বেড়িবাঁধের দুর্বল স্থানগুলো সংস্কার করা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা কায়সার উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পূর্ব গহিরার বরফকল থেকে কোস্টগার্ড জেটি পর্যন্ত বেড়িবাঁধ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ঘূর্ণিঝড় উঠলে তড়িগড়ি করে ওই অংশে সংস্কার করা হয়। কিন্তু অদৃশ্য কারণে ওই স্থানে ছয় বছরেও স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ হয়নি। বর্তমানে বাঁধের যে উচ্চতা তাতে সামান্য জলোচ্ছ্বাসে তা উপচে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করবে।’
রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আমিন শরীফ বলেন, ‘উপকূলীয় এই ইউনিয়নের পূর্ব গহিরা ও বাইগ্যার ঘাট এলাকার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। পাউবোর কর্মকর্তারা সরেজমিনে এসে বেড়িবাঁধ দেখে গেছে। ঠিকাদারের লোকজন ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধের সংস্কারকাজ শুরু করেছে। তবে এসব জায়গায় বাঁধ টিকবে কি না তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। বাঁধ ভাঙলে পুরো ইউনিয়ন পানিতে তলিয়ে যাবে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পাউবোর চট্টগ্রাম পওর-১-এর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী অনুপম দাশ বলেন, ‘আনোয়ারার পুরো বেড়িবাঁধ এলাকা মনিটরিং করা হচ্ছে। বেড়িবাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ স্থান মেরামত করা হচ্ছে। এরপরও কোথাও বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাৎক্ষণিক সংস্কার করা হবে।’
সার্বিক বিষয়ে আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইশতিয়াক ইমন বলেন, ‘উপজেলার ৫৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করার জন্য ইউপি চেয়ারম্যান ও সিপিপি টিম লিডারদের বলা হয়েছে। প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী, শিশুখাদ্য মজুদ রয়েছে। এ ব্যাপারে সবসময় মনিটরিং করা হচ্ছে।’
আনোয়ারার মতোই ভাঙা বাঁধ নিয়ে শঙ্কায় উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার মানুষ। তিনদিকে নদী ও একদিকে সাগরঘেরা এ জনপদের মানুষের কাছে দুর্যোগের খবর মানেই আতঙ্ক। নেই টেকসই বাঁধ, নেই পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্রও। বিচ্ছিন্ন এমন স্থানও রয়েছে, যেখানে বাঁধ কিংবা ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রের কোনোটাই নেই।
এলাকাবাসী বলছে, সাগর ও নদীঘেরা এ জনপদের বাঁধগুলো কোথাও ভাঙা, কোথাও দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ। কোনো কোনো এলাকায় নেই ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র। এমন পরিস্থিতিতে ঘূর্ণিঝড় মোখা যতই উপকূলের দিকে এগোচ্ছে, ততই বাড়ছে শঙ্কা। কারণ বেশিরভাগ বেড়িবাঁধই অরক্ষিত। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ চরনজির, চরহেয়ার ও চরকাশেমের মানুষ।
উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ চরনজিরের বাসিন্দা আবদুল বারেক বলেন, ‘হুনছি (শুনেছি) বন্যা আসতাছে। আমরা খুব আতঙ্কে আছি, আমাদের এই চরে শেল্টার (ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র) নাই। বন্যা হলে আমরা কই যাব বাবা? বন্যা হলেও আমাদের বাড়িঘর সব তলাই (ডুবে) যায়। গেল (গত) কয়েক বছরের বন্যায় ছেলে-সন্তান নিয়ে গাছে ছিলাম। আমাদের এই চরে একটি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র জরুরি। ঘূর্ণিঝড় আসলেই আতঙ্কে থাকতে হয়।’
এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় পুরো উপজেলায় ৮৮টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি। জানা গেছে, গত বর্ষা মৌসুমে ও নদীভাঙনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধের সংস্কার করা হলেও চরমোন্তাজ ইউনিয়নের চরআণ্ডা এলাকার প্রায় ৪ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়ে গেছে। ফলে স্বাভাবিক জোয়ারে চেয়ে একটু বেশি পানি হলেই ওই এলাকার ভাঙা ও সংস্কারহীন বাঁধ দিয়ে পানি ঢোকার শঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া চালিতাবুনিয়া এলাকার উত্তর চালিতাবুনিয়ায় বেড়িবাঁধের একাংশ দিয়ে লোকালয় পানি প্রবেশ করবে বলে আশঙ্কা করছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। বেড়িবাঁধহীন রয়েছে উপজেলার চরনজির, চরকাশেম, কাউখালী ও চরকানকুনি। এসব জনপদ জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
চরমোন্তাজ ইউনিয়নের চরআন্ডা ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘এমনিতেই বিচ্ছিন্ন ইউনিয়ন চরমোন্তাজ, আবার চরমোন্তাজের বিচ্ছিন্ন একটি চর হলো চরআন্ডা। এ চরের চারদিকেই নদী ও সমুদ্র। চরআ-া গ্রামে প্রায় চার হাজার লোকের বসবাস। আর রয়েছে একটি মাত্র সাইক্লোন শেল্টার, যা পর্যাপ্ত নয়। পূর্ব ও পশ্চিম পাশে বেড়িবাঁধ ভাঙা, যার কারণে খুব দ্রুত পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। দুর্যোগ এলে আমাদের সবসময় চিন্তায় থাকতে হয়। ঝড়-বন্যায় আমরা কোথায় যাব তার কোনো ভালো ব্যবস্থা নেই। এখানে নামেই মাত্র একটা মাত্র সাইক্লোন শেল্টার, যেখানে ১৫০-২০০ লোক আশ্রয় নিতে পারে।’
বেড়িবাঁধের কারণে ঝুঁকির বিষয়ে জানতে চাইলে পাউবোর কলাপাড়া জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী খালেদ বিন অলীদ বলেন, ‘ইতিমধ্যে ১ হাজার ৪৫০ মিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণকাজ চলছে। তবে চরআন্ডার ৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ এখনো বিধ্বস্ত রয়েছে। আমরা সেটি নির্মাণের জন্যও প্রস্তাব পাঠিয়েছি। বরাদ্দ পেলে বাঁধটির নির্মাণকাজ শুরু হবে।’
এ ব্যাপারে রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা গলাচিপার ইউএনও মহিউদ্দিন আল হেলাল বলেন, ‘যেহেতু চরআণ্ডা ও চরনজির খুবই ঝুঁকিপূর্ণ, তাই আমরা ওখানকার জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলব। সেখানকার ব্যাপারে আমাদের বিশেষ নজর থাকবে। প্রয়োজন হলে একজন কর্মকর্তাকে ফোকাল পারসন হিসেবে ট্যাগ (যুক্ত) করে রাখব। এখন তো আর তাৎক্ষণিক আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করতে পারব না। আমরা ওখান থেকে কিছু লোকজন উদ্ধার করে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারি। আর যেখানে বেড়িবাঁধ নেই তা নির্মাণে আমরা প্রস্তাব পাঠিয়েছি।’
* প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন জাহেদুল হক, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি এবং তুহিন রাজ, রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা
এই শহরের নিচে আরেকটা শহর আছে। তার নিচে আরেকটা, তার নিচে আরেকটা...যেন এক পাতালপুরী। সেই পাতালপুরী আমাদের এই আসল শহরটার মতোই দেখতে। সেখানে সূত্রাপুর, নাজিরা বাজার আছে, সদরঘাট আছে। আছে শান্তিনগর, ধানমন্ডি, মতিঝিল, নীলক্ষেত, গুলশান আর বাড্ডা। তবে সেই শহরের বাসিন্দারা একটু অন্য রকম। তাদের দৃষ্টি সূর্যের মতো জ্বলজ্বলে। তাদের কারও হাতে খুনের রক্তের দাগ, কারও ঠোঁটের ফাঁকে হাসির চিহ্নের মতো লেগে থাকে প্রতারণা; নখের তলায় জমা কালচে ময়লার মতো গোপনীয়তা। সেখানে হাওয়া দাঁতে দাঁত চেপে কথা বলে, আক্রোশে কুঞ্চিত হয়ে থাকে আকাশ। ওই গোপন, অদৃশ্য আর উন্মত্ত শহরটাই হচ্ছে অন্ডারওয়ার্ল্ড; এই শহরের অপরাধ জগৎ।
পৃথিবীর সব শহরের তলায় সমান্তরাল এবং ভয়ংকর আরেকটা শহর ছিল, আছে এবং থাকবেও। সেখানকার ভাষা ভিন্ন, বেড়ে ওঠা ভিন্ন। সেই শহরের বেশির ভাগ কাহিনি সাধারণ নাগরিকদের কাছে অজানাই থেকে যায়।
তখনো সত্তরের দশক শেষ হয়নি। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় কিশোর আর তরুণদের নিয়ে গজিয়ে ওঠা স্ট্রিট কর্নার গ্যাংয়ের হাতে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র এসে পৌঁছাতে শুরু করে। কিশোর বয়সে মধ্য ঢাকার একটি পাড়ায় বসবাস করতাম। সেখানেও জাদুমন্ত্রে উপস্থিত হলো আগ্নেয়াস্ত্র। আমার সামনে পাতালে যাওয়ার সিঁড়ির দরজা যেন খুলে গেল। শুরু হলো পাড়ায় পাড়ায় খুন, জখম আর আধিপত্য বিস্তারের লড়াই। কৌতূহলী আর অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় মন আমাকে টেনে নিয়ে যায় সেই দরজার দিকে।
দেশ সদ্য স্বাধীন হয়েছে রক্তাক্ত যুদ্ধের ভেতর দিয়ে। তারপর অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন। আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাওয়া বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো তখনো দেশে সশস্ত্র বিপ্লবের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। ঠিক ওই সময়ে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের রাজনৈতিক ব্যবহারের ধরন পাল্টে যায়। আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি করে সন্ত্রাসের রাজত্ব। প্রশাসন আর পুলিশের নাকের ডগায় বসে নতুন প্রজন্মের সন্ত্রাসীরা অদৃশ্য রেখা টেনে শহরটাকে ভাগ করে ফেলে। অস্ত্রের আধিপত্যের জোরে কেউ সামনে এগিয়ে আসে, কেউ পিছু হটে যায়। এক অদ্ভুত সময়ে প্রবেশ করে সেই শহরের অপরাধ জগৎ।
অস্ত্রগুলো ভোজবাজির মতো কোত্থেকে এসেছিল? কারা হাতে তুলে দিয়েছিল সেই আগুনের মন্ত্র! আমি আজও মাঝে মাঝে ভাবি, ভেবে আশ্চর্য হই। ছায়া ছায়া কিছু মানুষ, নিঃশব্দ তাদের চলাচল। তারাই পৌঁছে দিয়ে যেত সেই অগ্নিবাণ। তাদের পরিচয় সব সময় জানা সম্ভব হতো না। বড় হয়ে সাংবাদিকতা করতে গিয়ে কয়েকটা অনুসন্ধানের কাজে জড়িয়ে গিয়ে দেখেছি কীভাবে অস্ত্র হাত বদলায়, সেই ছায়া ছায়া মানুষগুলো অপরাধ জগৎকে কীভাবে অস্থির করে তোলে। কিন্তু শেষ বিন্দুতে পৌঁছানো যায় না। অধরাই থেকে যায় অনেক কিছু।
অধরা থেকে যায় নাকি রেখে দেওয়া হয়? সেই শহরের অথবা এই শহরের অপরাধ জগতে একটি অলিখিত মন্ত্র এখনো নীরবতা। সবাই সবকিছু জানে আবার কেউ কিছুই জানে না। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছি আশির দশকে। পুরোটা সময় তখন ছিল স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে উত্তাল। সেই আন্দোলনের আগুনকে উসকে দিয়েছিল অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র। অনেকটাই বিস্মিত হয়ে দেখলাম, সত্তরের দশকের শেষ ভাগে যারা স্ট্রিট কর্নার গ্যাং হিসেবে বিভিন্ন এলাকার অধিপতি বনে গিয়েছিল, তারাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে তখন আন্দোলনের পুরোভাগে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তখন জমা হচ্ছে বারুদ, জমা হচ্ছে অগ্নিবাণ। কোত্থেকে আসত সেই অগ্নিবাণ? অদ্ভুত রাজনৈতিক সমীকরণে ঝকঝকে আগ্নেয়াস্ত্রগুলো পাওয়া যেত জেনারেল এরশাদের সৃষ্ট ফ্রিডম পার্টির কাছ থেকে। সমীকরণগুলো ছিল বেশ জটিল। পুরনো পাড়ার কানেকশন কাজ করত রাজনৈতিক বাধা টপকে। আবার সর্বহারা পার্টির কাছ থেকেও অস্ত্র আসত ভাড়ায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কার দিনে, অথবা বড় ধরনের সরকারবিরোধী কর্মসূচির আগে অস্ত্র ভেসে উঠত অন্তরাল থেকে। মাঝে মাঝে অন্তর্দলীয় কোন্দলেও ব্যবহৃত হতো এসব অস্ত্র। অপরাধ জগৎ আর অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের মাঝখানে ভেদরেখাটা খুব সবল ছিল না তখন। এ অস্ত্রই আবার নীরবতা বেছে নিয়ে ফিরে যেত যথাস্থানে।
আন্ডারওয়ার্ল্ডে নীরবতা বড় মন্ত্র। এই মন্ত্রের কারণেই ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে যখন প্রথম সাবমেশিনগান ব্যবহৃত হলো তার উৎস নিয়ে কেউ কথা বলেনি। সাংবাদিকরাও না। যে রাতে জিথ্রি রাইফেল ব্যবহৃত হলো তখনো একধরনের নীরবতার পর্দা ঝুলে রইল। আশির দশকের মাঝামাঝি স্টেনগান হাতে বেপরোয়া ছুটে চলা এক তরুণের ছবি ছাপা হলো বড় একটি দৈনিক কাগজের প্রথম পৃষ্ঠায়। তার পরিচয় সবাই জেনেও নামটা উচ্চারিত হলো না। সবই নীরবতার শর্তে পরিচালিত নির্বাক ছায়াছবি যেন।
অস্ত্র চিনতাম, অস্ত্রের গায়ে ব্যাচ নম্বর জানতাম, স্টেনগানের গুলির পেছনে তার পেঁচিয়ে যে রিভলবারে ব্যবহার করা হয় তা-ও জানতাম। বলিনি কেন! আমারও কি নীরবতার শর্তে ঠোঁট সেলাই করা ছিল? আন্ডারওয়ার্ল্ডে নিশ্চুপ থাকাও একটা বড় ভূমিকা। তাই বন্ধু, সহযাত্রী যখন নিজের বাড়ির সামনে বুলেটে সেলাই হয়ে মৃত্যুবরণ করে, তখনো সব জেনে গিলে ফেলতে হয় সবকিছু। যখন খুনির মুখ খুব কাছে এসে কথা বলে, মেনে নিতে হয় উদাসীন হয়ে। মাঝে মাঝে অবাক হয়ে ভাবি, সেই শহরে রক্তের দাগের পেছনের গল্পটা জেনেও কেন বলিনি কোনো দিন!
এই শহরের নিচে আরেকটা শহর আছে...তার নিচে আরও একটা...সেই শহরটাকে আমি চিনতাম একদা। মানুষগুলোও আমার চেনা ছিল। বিস্মৃতি হয়ে কোথায় হারিয়ে গেছে গল্পগুলো। সবই আসলে কোড অব সাইলেন্স!
১৩ মে। ১৯৪৭ সাল। কলকাতার ১১৯ লাউডন স্ট্রিটের ‘রেড অ্যান্ড কিওর হোম’। মাত্র একুশ বছর বয়সের এক যুবক যিনি লিখেছেন ৭-৮ বছর। এরপর দেহ রাখলেন, অর্থাৎ অগস্ত্যযাত্রা। মৃত্যুর কারণ মূলত অনিয়ম। লালঝাণ্ডার সমতার পৃথিবীর স্বপ্নে শরীরের প্রতি বেদম অত্যাচার। প্রথমে ম্যালেরিয়ার ধাক্কায় দুর্বল শরীর, তারপর ক্ষয়রোগে চিরক্ষয়ের দিকে যাত্রা।
বাংলা সাহিত্যের জন্য অন্তত অমোঘ কিছু কবিতা লিখে গেছেন তিনি। যার আবেদন কখনো শেষ হবে না, অন্তত পৃথিবীতে শোষণ-বঞ্চনা যতদিন থাকবে ততদিন প্রাসঙ্গিক থাকবেন সুকান্ত ভট্টাচার্য।
বাংলাদেশের শিক্ষাক্রমের নানা শ্রেণিতে তার লেখা একাধিক কবিতা পাঠ্য। দুর্মর, আঠারো বছর বয়স, ছাড়পত্র, একটি মোরগের কাহিনীর মতো কবিতা পাঠক একবার পড়লে তা কখনো ভোলার নয়, তা শুধু তার রাজনীতিসচেতনতা নয়, আদি ও আসল কবিতার শক্তিতেই।
‘হিমালয় থেকে সুন্দরবন, হঠাৎ বাংলাদেশ/কেঁপে কেঁপে ওঠে পদ্মার উচ্ছ্বাসে,/সে কোলাহলে রুদ্ধস্বরের আমি পাই উদ্দেশ/জলে ও মাটিতে ভাঙনের বেগ আসে।//হঠাৎ নিরীহ মাটিতে কখন/জন্ম নিয়েছে সচেতনতার ধান,/গত আকালের মৃত্যুকে মুছে/আবার এসেছে বাংলাদেশের প্রাণ।// ‘‘হয় ধান নয় প্রাণ” এ শব্দে/সারা দেশ দিশাহারা,/একবার মরে ভুলে গেছে আজ/ মৃত্যুর ভয় তারা।//সাবাস, বাংলাদেশ, এ পৃথিবী/অবাক তাকিয়ে রয়/জ্বলে পুড়ে-মরে ছারখার/তবু মাথা নোয়াবার নয়।// (অংশবিশেষ)
স্মর্তব্য, ১৯৪৭ সালে দেশভাগও হয়নি, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন তখনো সুদূরপরাহত, কলকাতায় বসে কবি সুকান্ত লিখছেন, সাবাস বাংলাদেশ, এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়ৃ বাঙালিকে বলছেন, জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার তবু মাথা নোয়াবার নয়।
বাংলাদেশের যেকোনো অর্জনে এখনো ব্যবহার করা হয় সুকান্তর এই পঙ্ক্তি। ৬-৭ বছরের সাহিত্যজীবনে মাত্র হাতেগোনা কিছু কবিতায় বিস্ময়কর সব পঙ্ক্তি আর দৃশ্য রচনা করেছেন সুকান্ত। রবীন্দ্রোত্তর বাংলা কবিতার বৈপ্লবিক ভাবধারাটি যাদের সৃষ্টিশীল রচনায় সমৃদ্ধ হয়েছে, সুকান্ত তাদের অন্যতম। তার কবিতার ছন্দ, ভাষা, রচনাশৈলী এত স্বচ্ছন্দ, বলিষ্ঠ ও নিখুঁত যে, তার বয়সের বিবেচনায় এরূপ রচনা বিস্ময়কর ও অসাধারণ বলে মনে হয়। মাত্র তিনটি কাব্যগ্রন্থ ছাড়পত্র (১৯৪৭), পূর্বাভাস (১৯৫০), মিঠে-কড়া (১৯৫১)। যার দুটিই প্রকাশিত হয় মৃত্যুর পর। কি আর কোন বাংলা সাহিত্যের কবির কথা মনে পড়ে যাচ্ছে, হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন, আবুল হাসানের সঙ্গেই সুকান্তর এমন অদ্ভুত কাকতালীয় মিল।
বাংলা সাহিত্যের মার্কসবাদী ভাবধারায় বিশ্বাসী এবং প্রগতিশীল চেতনার অধিকারী কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের জন্ম ১৫ আগস্ট ১৯২৬ সালে, কলকাতার কালীঘাট অঞ্চলের অন্তর্গত ৪৩নং মহিম হালদার স্ট্রিটে তার মামাবাড়িতে। তার পৈতৃক বাড়ি সে সময়ের ফরিদপুর জেলার উনশিয়া গ্রামে, যা এখন গোপালগঞ্জের অন্তর্গত। সুকান্তের বাবা নিবারণ ভট্টাচার্য ছিলেন এক গ্রন্থাগারের মালিক, মা সুনীতি দেবী ছিলেন একজন সাধারণ গৃহবধূ। নিবারণ-সুনীতি দম্পতির ছয় ছেলের নাম যথাক্রমে মনমোহন, সুশীল, প্রশান্ত, বিভাষ, অশোক এবং অমীয়। সুকান্ত তার বড় দাদা মনমোহন এবং বউদি সরজু দেবীর খুবই আদরের ছিলেন। তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একজন মানুষ ছিলেন এই সরজু দেবী বা রানীদি। সেই সময়ের বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক মনিন্দ্রলাল বসুর “সুকান্ত” গল্পটি পড়ে সরজু দেবীই তার নাম রেখেছিলেন সুকান্ত।
বেলেঘাটা দেশবন্ধু স্কুল থেকে ১৯৪৫ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে অকৃতকার্য হলেন সুকান্ত। এ সময় ছাত্র আন্দোলন ও বামপন্থি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়ায় তার আনুষ্ঠানিক শিক্ষারও বারোটা বেজে গেল। সুকান্তের বাল্যবন্ধু ছিলেন কবি অরুণাচল বসু। সুকান্ত সমগ্রতে লেখা সুকান্তের চিঠিগুলোর বেশিরভাগই অরুণাচল বসুকে লেখা। অরুণাচল বসুর মাতা কবি সরলা বসু সুকান্তকে পুত্র¯েœহে দেখতেন। সুকান্ত ছেলেবেলায় মাতৃহারা হলেও সরলা বসু তাকে সেই অভাব কিছুটা পূরণ করে দিতেন। কবির জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছিল কলকাতার বেলেঘাটার ৩৪ হরমোহন ঘোষ লেনের বাড়িতে। সেই বাড়িটি এখনো অক্ষত আছে। পাশের বাড়িটিতে এখনো বসবাস করেন সুকান্তের একমাত্র জীবিত ভাই বিভাষ ভট্টাচার্য। পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সুকান্তের নিজের ভ্রাতুষ্পুত্র।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, তেতাল্লিশের মন্বন্তর, ফ্যাসিবাদী আগ্রাসন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রভৃতির বিরুদ্ধে কলম ধরলেন সুকান্ত। ১৯৪৪ সালে তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন। একাধারে বিপ্লবী ও স্বাধীনতার আপসহীন সংগ্রামী কবি সুকান্ত ছিলেন কম্যুনিস্ট পার্টির সারাক্ষণের কর্মী। পার্টি ও সংগঠনের কাজে অত্যধিক পরিশ্রমের ফলে নিজের শরীরের ওপর যে অত্যাচার তিনি করেছিলেন সাহিত্য সমালোচকরা এখনো এটিকেই তার অকালমৃত্যুর কারণ বলে মনে করেন। ফ্যাসিবাদী আগ্রাসন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও অনৈতিক ব্রিটিশ শাসন প্রভৃতির বিরুদ্ধে তিনি ও তার দল ভীষণভাবে সোচ্চার হন সেসময়ে। এ ব্যাপারগুলো প্রভাবিত করে তার কবিতাকেও।
১৯৪৪ সালে “আকাল” নামক একটি সংকলনগ্রন্থ তিনি সম্পাদনাও করেন এবং সেখানেই শোষিত মানুষের কর্মজীবন, ভবিষ্যৎ পৃথিবীর জন্য সংগ্রাম, সমাজের দুর্দশাজনিত বেদনা এবং শোষণমুক্ত স্বাধীন সমাজের স্বপ্ন প্রভৃতি বিষয় নিয়ে কবিতা লিখতে থাকেন। তার সেই কবিতা সংকলন মানুষকে ভীষণভাবে সাহস ও অনুপ্রেরণা জোগায় রাজনৈতিক কর্মকান্ডে সক্রিয় হতে। সুকান্ত কবিতা লেখার সঙ্গেই সঙ্গেই বিভিন্ন গান, গল্প, নাটক এবং প্রবন্ধও রচনা করেছিলেন। দুই বাংলা থেকেই প্রকাশিত হয়েছে সুকান্ত ভট্টাচার্যের রচনাসমগ্র। আঠারো বছর বয়স কবিতায় তারুণ্যকে দুঃসাহসের সারথি, যেকোনো কাজ চাইলেই করে ফেলতে পারার সক্ষমতা তাদের আছে এই প্রত্যয় প্রাণে ঢুকিয়ে দেওয়া কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য। প্রয়াণ দিবসে তাকে স্মরণ শ্রদ্ধা জানাই। তিনিই তো যুগে যুগে প্রাণে জ্বালিয়ে রেখেছেন দেশলাইয়ের কাঠি। লিখেছিলেন আমি একটা ছোট্ট দেশলাইয়ের কাঠি/এত নগণ্য, হয়তো চোখেও পড়ি না/তবু জেনো/মুখে আমার উসখুস করছে বারুদ /বুকে আমার জ্বলে উঠবার দুরন্ত উচ্ছ্বাস;/আমি একটা দেশলাইয়ের কাঠি।//
দেশলাইয়ের কাঠি শান্ত তারুণ্য জেগে উঠে একদিন নিশ্চয়ই এ জাতির সকল কালিমা করবে দূর, সত্যিকার অর্থেই হৃদয়ে ধারণ করবে প্রয়াণের ৭৬ বছর পর, আজও তরুণ কবি সুকান্তকে।
রাজধানী ধানমন্ডির সাত মসজিদ সড়কের আইল্যান্ডের গাছ কাটা বন্ধে ৪ দাবি জানিয়েছেন পরিবেশবাদী ও সচেতন নাগরিকরা। গতকাল শুক্রবার বিকেলে আবাহনী মাঠের পাশে ধানমণ্ডি এলাকাবাসী ও ‘সাত মসজিদ গাছ রক্ষা আন্দোলন’ আয়োজিত সবুজ সংহতি ও সবুজ প্রাচীর নামে এক প্রতিবাদ সমাবেশে এ দাবি জানান তারা। সমাবেশে প্রতিবাদী তরুণ শিল্পী, আলোকচিত্রী, লেখক, গবেষক, পরিবেশপ্রেমী ও সংস্কৃতিকর্মীদের সঙ্গে গাছ রক্ষার এই আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে যুক্ত হয়েছেন শতাধিক পরিবেশবাদী, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও ব্যক্তি।
সমাবেশে আয়োজকরা চারটি দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো সাত মসজিদ সড়কের গাছ কাটা বন্ধ করে কাটা গাছের স্থানে দেশীয় প্রজাতির গাছ লাগাতে হবে, জনগণের করের টাকায় একবার গাছ লাগানো এবং আরেকবার গাছ কেটে আবার ‘উন্নতমানের দ্রুতবর্ধনশীল গাছ লাগানোর নতুন প্রকল্প গ্রহণের নামে গাছ-বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে, বৃক্ষ ও নগরবাসীবান্ধব সুনির্দিষ্ট নীতিমালা গ্রহণের মাধ্যমে নগরের গাছ ও সবুজবলয় সুরক্ষা করতে হবে এবং নগর উন্নয়নে প্রকৃতিভিত্তিক পরিকল্পনাকে গুরুত্ব দিতে হবে।
সমাবেশে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সভাপতি মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, ‘উন্নয়নের নামে গাছ কাটা হচ্ছে। উন্নয়ন বলতে তারা কী বোঝাতে চাইছেন? মানুষের জীবনের সঙ্গে প্রকৃতির বেঁচে থাকা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। আমরা সুস্থ প্রকৃতি চাই, সুন্দর প্রকৃতি চাই। আমরা প্রকৃতির সঙ্গে বেড়ে উঠতে চাই। প্রকৃতিকে ধ্বংস করে উন্নয়ন চাই না। উন্নয়ন একটি উপায়, উন্নয়ন কখনো লক্ষ্য হতে পারে না। উন্নয়ন করা হয় মানুষের ভালোর জন্য, মানুষের সুুস্বাস্থ্য দেওয়ার জন্য, নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য।’ স্বাগত বক্তব্যে আন্দোলনের সমন্বয়ক আর্ট অ্যান্ড মিউজিয়াম কিউরেটর আমিরুল রাজীব বলেন, ‘গাছ কেটে যে উন্নয়ন হচ্ছে, সেই উন্নয়ন হচ্ছে এক শ্রেণির লোকের পকেটের উন্নয়ন। এটি জনগণের উন্নয়ন নয়। গাছ কাটা কোনো উন্নয়ন নয়। যেই মেয়র গাছ কাটে, সেই মেয়র আমরা চাই না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষক রোবাইয়াত ফেরদৌস বলেন, ‘গাছ আমাদের অক্সিজেন দেয়। এ জন্য গাছকে বাঁচাতে হবে ব্যাপারটি এমন নয়। গাছেরও বাঁচার অধিকার আছে। আমাদের যেমন বাঁচার অধিকার আছে, তেমনি একটি সত্তা হিসেবে গাছেরও বাঁচার অধিকার আছে।’
এএলআরডির নির্বাহী প্রধান শামসুল হুদা বলেন, ‘গাছ পাহারা দেওয়ার কথা আমাদের মেয়র সাহেবের কিন্তু তিনি বা তার লোকেরা এই গাছ কাটছেন আর পাহারা দিচ্ছেন আমাদের তরুণরা। উন্নয়ন মানে গাছ কাটা নয়, পাহাড় কাটা নয়, নদী ভরাট করা নয়। আমরা শুধু সাত মসজিদ রোডের গাছ কাটার বিপক্ষে নই, এই দাবি সারা দেশের জন্য।’
সমাবেশে বাংলাদেশ রিকশা ভ্যানচালক শ্রমিক ফেডারশনের ধানমন্ডি শাখার সভাপতি সুমন মৃধা বলেন, ‘আমাদের তো এসি নাই, রোদ-বৃষ্টির মধ্যেই থাকি। একটু গাছের নিচে গিয়া বসি আমরা। কী যে শান্তি লাগে তা বোঝাতে পারব না। এসির চেয়েও শান্তি। কিন্তু এখানকার গাছগুলো নির্বিচারে কেটে ফেলা হয়েছে। গাছগুলো আমাদের রক্ষা করতে হবে।’
গবেষক পাভেল পার্থর সঞ্চালনায় সাত মসজিদ সড়ক গাছ রক্ষা আন্দোলনের ব্যানারে আয়োজিত এ সমাবেশে সংহতি জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, গণস্বাস্থ্য, বেলা, বারসিক, উদীচী, জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশন, ছায়ানট, নাগরিক উদ্যোগ, নারীপক্ষ, নিজেরা করি, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, বাপা, নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কসহ শতাধিক সংগঠন ও ব্যক্তি।
নরসিংদীর মনোহরদী পৌরসভার মেয়র আমিনুর রশিদ সুজনের ব্যক্তিগত সহকারী ও শ্রমিক লীগ নেতা মাছুম হাসান শুভর বিরুদ্ধে দম্পতিকে আটকে রেখে মারধর ও স্বর্ণালংকার লুটের অভিযোগ উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার দিকে মনোহরদীর আনোয়ার সিএনজি স্টেশনে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগীরা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করে অভিযোগের পর পুলিশ অভিযুক্ত মাছুম হাসান শুভকে আটক করে।
পরে রাতেই ভুক্তভোগী হারুনুর রশিদ ধ্রুব বাদী হয়ে শুভসহ পাঁচজনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও তিন-চারজনকে আসামি করে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়ার পর গতকাল শুক্রবার মামলাটি নথিভুক্ত করে প্রধান আসামি শুভকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন মনোহরদী থানার ওসি ফরিদ হোসেন। গ্রেপ্তার শুভ মনোহরদী পৌর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম শহরের বায়েজিদ বোস্তামী থানা এলাকার মৃত আবুল বাশারের ছেলে হারুনুর রশিদ ধ্রুব ঢাকায় বেসরকারি একটি টেলিভিশন স্টেশনে সহকারী প্রোগ্রাম প্রডিউসার পদে কর্মরত আছেন। তিন বছর আগে তিনি গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার বারিষাব ইউনিয়নের বারাব গ্রামের পুলিশ সদস্য হারুনুর রশিদের মেয়ে রেশমা আক্তারকে বিয়ে করেন। এ দম্পতি থাকেন ঢাকার ফার্মগেট এলাকায়।
ধ্রুব জানান, গত বুধবার সকালে স্ত্রীকে নিয়ে কাপাসিয়ায় শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে যান। পরদিন দুপুরে কেনাকাটা করতে ভগ্নিপতি মোসাদ্দেকের সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে পাশের মনোহরদী বাজারে যান। সেখান থেকে বেলা ৩টার দিকে অটোরিকশায় গ্যাস ভর্তি করতে তারা আনোয়ার সিএনজি স্টেশনে যান। গ্যাস ভরা শেষে সিএনজি স্টেশন থেকে বের হওয়ার সময় হঠাৎ সাত-আটজন যুবক তাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় তারা বিভিন্ন কটূক্তি ও নানান ধরনের হুমকি দিতে থাকে। একপর্যায়ে পৌর মেয়রের পিএস শ্রমিক লীগ নেতা শুভ এসে তাদের বিভিন্ন প্রশ্ন করতে থাকে। প্রশ্নের উত্তর দিতে আপত্তি করায় ধ্রুবের স্ত্রী রেশমাকে থাপ্পড় মারে শুভ। ওই সময় হামলাকারীরা রেশমার গলায় থাকা সোনার চেইন ও ধ্রুবের হাতের দুটি সোনার আংটি ছিনিয়ে নিয়ে যায়। সিএনজি স্টেশনের মতো জনবহুল জায়গায় এ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলেও ভয়ে সেখানে উপস্থিত কেউ এগিয়ে আসেনি। উল্টো হামলাকারীরা বিয়ের কাবিন না দেখালে যেতে দেবে না জানিয়ে ধ্রুব-রেশমা দম্পতিকে সিএনজি স্টেশনের একটি কক্ষে আটকে রাখে। পরে মোবাইল ফোনে বিয়ের কাবিননামার ছবি দেখালে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর ঘটনাস্থল থেকে নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে ভীতসন্তস্ত্র এ দম্পতি জাতীয় জরুরি সেবার নাম্বার ৯৯৯-এ কল করে পুলিশের সহযোগিতা চান। এরপর পুলিশের একটি দল তাদের উদ্ধার করে।
ধ্রুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি জীবনে এমন ভীতিকর পরিস্থিতিতে কখনোই পরিনি। ওই সময়টুকু এখনো মনে হলে আমি আঁতকে উঠছি। তারা আমার সামনে আমার স্ত্রীকে থাপ্পড় দিয়েছে। স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়েছে। আমরা এর বিচার চাই। তবে আমরা সাধারণ মানুষ, আইনি ঝামেলা নিয়েও দুশ্চিন্তায় আছি।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মনোহরদী থানার ওসি ফরিদ হোসেন বলেন, ‘পুলিশ ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে অভিযুক্তদের শনাক্ত করেছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে।’
অনিয়ন্ত্রিত জীবনধারা, অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া এবং শরীরচর্চার অভাবের বেশির ভাগ মানুষেরই হার্ট খারাপ হচ্ছে। উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে 'খারাপ' কোলেস্টেরল— এ সব মানুষের নিত্যসঙ্গী। তবে রক্তের বিভিন্ন উপাদানের মাত্রা যদি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে যায়, তা হলে ওষুধ তো খেতেই হবে। সঙ্গে পছন্দের প্রায় সব খাবারেই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়ে যাবে। তবে পুষ্টিবিদেরা বলছেন, রোজকার খাবারে কিছু পরিবর্তন আনলেই পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই হার্টের যাবতীয় সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।
বিরিয়ানি হোক বা পোলাও সঙ্গে মাটনের কোনো পদ ছাড়া জমে না। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা বলছেন, এ ধরনের 'লাল' মাংস খেলে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। তাই খাসির বদলে মুরগির মাংস খাওয়া তুলনায় স্বাস্থ্যকর।
অনেক চেষ্টা করেও ভাজাভুজি খাবারের লোভ সামলাতে পারছেন না। এই অভ্যাসের ফলেই কিন্তু অজান্তেই বেশির ভাগ মানুষের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে চলেছে। পুষ্টিবিদেরা বলছেন, ভাজার বদলে যদি বেকড খাবার খাওয়ার অভ্যাস করা যায়, তবে এই সমস্যা অনেকটাই ঠেকিয়ে রাখা যেতে পারে।
সকালের নাশতায় পাউরুটি খান অনেকেই। কিন্তু পুষ্টিবিদেরা বলছেন, পাউরুটির ওপর মাখন দেওয়ার অভ্যাস ছাড়তে হবে। শুধু পাউরুটি খেতে যদি সমস্যা হয়, তবে ডিম ফেটিয়ে তার মধ্যে পাউরুটি ডুবিয়ে, তা বেক করে নিন। স্বাদ এবং স্বাস্থ্য দুই-ই থাকবে।
মন খারাপ হলে মাঝে মধ্যেই আইসক্রিম খেয়ে ফেলেন। তৎক্ষণাৎ মন ভালো করতে এই টোটকা সত্যিই কার্যকর। কিন্তু সমস্যা হলো আইসক্রিম খাওয়ার অভ্যাসে রক্তে বাড়তে থাকে কোলেস্টেরল। পরবর্তীতে যা হৃদরোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
গরমে তেষ্টা মেটাতে বার বার ঠাণ্ডা পানীয়তে চুমুক দিচ্ছেন। কিন্তু এ পানীয়ে থাকা কৃত্রিম শর্করা যে হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করছে, টের পেয়েছেন কী? পুষ্টিবিদেরা বলছেন, এই তেষ্টা মেটাতে এবং স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে নরম পানীয় না খেয়ে ফল থেকে তৈরি রস খেতে পারেন।
পাকিস্তানের প্রস্তাবিত হাইব্রিড মডেলে নয়, এশিয়া কাপ হবে একটি দেশে। আর সেটা শ্রীলংকা। পাকিস্তান তাতে অংশ না নিতে চাইলে তাদেরকে ছাড়াই হবে এশিয়া কাপ।
ভারতের তরফ থেকে পাকিস্তানকে এমন বার্তা দেয়া হয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে কলকাতাভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক দা টেলিগ্রাফ।
বিসিসিআই সেক্রেটারি জয় শাহ যিনি এসিসিরও প্রেসিডেন্ট পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে বলেছেন, শ্রীলংকায় এশিয়া কাপ খেলতে রাজি আছে ভারতসহ চার পূর্ণ সদস্য। বিষয়টি নিয়ে এসিসির নির্বাহী সভায় আলোচনা করা হবে। পাকিস্তান রাজি না হলে ৫ দল নিয়েই হবে এশিয়া কাপ।
বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ম্যাচ অন্য কোনো দেশে আয়োজনে পিসিবি চেয়ারম্যান নাজমা শেঠির দাবিও নাকচ করে দিয়েছেন জয় শাহ। টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, পাকিস্তানকে ভারতেই খেলতে হবে, না হলে না খেলবে। এ বার্তা পিসিবি এবং আইসিসির দুই কর্মকর্তা যারা সম্প্রতি পাকিস্তান সফর করেন তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছে বিসিসিআই।
রিয়াল মাদ্রিদের সংগে ১৪ বছরের সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলছেন। ৪০ কোটি ইউরো চুক্তিতে সৌদি প্রো লিগের ক্লাব আলো ইত্তিহাদে যোগ দিচ্ছেন।
ক'দিন ধরে এমন কথা শোনা যাচ্ছিল করিম বেনজেমাকে নিয়ে। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন -এমন কথাও চাউর হয় স্পেনের সংবাদ মাধ্যমে।
কিন্তু সব কিছুতে জল ঢাললেন ব্যালন ডি অর জয়ী। স্পেনের গণমাধ্যম মার্কার দেয়া মার্কা লিজেন্ড এওয়ার্ড নিতে গিয়ে বললেন, 'আমি যখন রিয়ালেই আছি তখন ভবিষ্যৎ নিয়ে কেনো বলবো। ইন্টারনেটে যা প্রচার হচ্ছে তা ঠিক না। আমি এখানে ভালো আছি। শনিবার রিয়ালের ম্যাচ আছে, সব ফোকাস আমার সেই ম্যাচকে নিয়ে।'
ক্লাব প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজকে তাকে রিয়ালে আনার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বেনজেমা বলেন, '২১ বছরের আমি এই ক্লাবে যোগ দিয়েছিলাম। এই ক্লাবে খেলার মতো আর কিছু হয় না, সান্তিয়াগো বার্নাবু দারুন এক জায়গা।'
রিয়ালের সংগে চুক্তির মেয়াদ এ মাসেই শেষ হচ্ছে বেনজেমার।
পলিথিন বা একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক, বিভিন্ন ধরনের পলিথিনজাত মিনিপ্যাকের উৎপাদন, ব্যবহার ও এর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সবগুলোই সমস্যা। পলিথিন উৎপাদন ও এর অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের মাধ্যমে বাতাসে যেমন কার্বন নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যায়, অন্যদিকে এর ব্যবহার প্রাণিকুল ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত। প্লাস্টিকের কণা এখন মানুষের রক্তে, মায়ের দুধে, সামুদ্রিক মাছে। শুধু ব্যবহার সম্পর্কিত সমস্যা না, পলিথিনের মাধ্যমে সৃষ্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আরও বেশি সমস্যাসংকুল। কারণ এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, কৃষির উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে, শহরের নর্দমা বন্ধ করে দিচ্ছে তা আবার রোগ-ব্যাধি ছড়াচ্ছে, জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে এবং সবশেষে শহরকে বসবাসের অনুপযোগী করে দিচ্ছে।
এতসব সত্ত্বেও পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ না করা বা বন্ধ করতে না পারার সংকট কোথায় সেটা বুঝতে আমাদের সমস্যা হয়। পলিথিন বন্ধে আইন আছে, নানা ধরনের প্যাকেজিংয়ে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাও অনেক দিন হলো। অন্যদিকে বেশ কিছুদিন ধরে পাটের ব্যাগ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে কিন্তু তা সহসাই হচ্ছে না। ‘সোনালি ব্যাগ’ নিয়ে অনেক ঢাকঢোল পেটানো হয়েছে কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সেই সোনালি স্বপ্ন কেমন জানি ফ্যাকাশে হয়ে আসছে এতদিনে।
পলিথিনের ব্যবহার শহরাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি যার অনেকটাই অভ্যাসগত কারণে। শহরের মানুষের পলিথিনের ওপর অভ্যস্ততা যেমন বেশি, তেমনি তারা ভুক্তভোগীও বেশি। রাস্তাঘাট, ড্রেন নোংরা হয়ে তো থাকেই, বাড়তি পাওনা দুর্গন্ধ, তৈরি হয় জলজট ও ডেঙ্গুর মতো রোগবালাই। বাসাবাড়িতে পলিথিনের ব্যবহার তো আছেই, পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য, বেকারিজাত পণ্যের পলিথিনের ব্যবহার ও পলিথিনের মোড়ক যত্রতত্র নিক্ষেপই এই অবস্থার জন্য দায়ী। শুধু ঢাকা নয় অন্যান্য ছোট-বড় সব শহরে প্রায় একই অবস্থা। আর এগুলোই হচ্ছে পলিথিন নির্ভর অর্থনীতির অনুষঙ্গ কিন্তু এর অনর্থনীতি হচ্ছে পলিথিনের কারণে পরিবেশদূষণ ও জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি যার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি। সাধারণভাবে পলিথিন ব্যবহারের ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক মূল্যমান নির্ধারণ করা হয় না। তবে দূষণের মাত্রা এখন এমন অবস্থায় পৌঁছেছে তাতে পলিথিনের অর্থনীতির থেকে এর ক্ষয়ক্ষতির অর্থনীতি যে অনেক বড় তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আসছে ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হবে। জলবায়ুর পরিবর্তনের পেছনে অন্যতম অনুঘটক হচ্ছে পরিবেশ দূষণ। অর্থমন্ত্রী তার এবারের বাজেট (২০২৩-২৪) বক্তৃতায় জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় অভিযোজন ও প্রশমন উভয় ক্ষেত্রে উদ্যোগ গ্রহণ করার কথা বলেছেন, পরিবেশ সংরক্ষণে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ২০২৩ এর উল্লেখ করেছেন কিন্তু পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে দৃশ্যমান কোনো রূপকল্প এবারের বাজেটে উল্লেখ করতে সমর্থ হননি। এবারের পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘প্লাস্টিক দূষণের সমাধানে শামিল হই সকলে’। গত বছরের এই দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘একটাই পৃথিবী’। পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের যত্রতত্র ব্যবহার আমাদের এই একমাত্র পৃথিবীকে দূষণের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে আইন হয়েছে ২০০২-এ এবং আজ ২০২৩ সাল, এই দীর্ঘ ২১ বছরেও এই আইনের বাস্তবায়ন করা যায়নি। যদিও এবারের বাজেট বক্তৃতায় প্লাস্টিকের তৈরি টেবিলওয়্যার এর মূল্য সংযোজন কর বৃদ্ধি করে ৫ শতাংশ থেকে ৭.৫ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। এখানে পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্ল্যাস্টিক সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। ধরেই নেওয়া যায় শুল্ক বৃদ্ধির এই হার কোনোভাবে পলিথিন নিরুৎসাহিত করার জায়গা থেকে না বরঞ্চ কিছুটা বাড়তি কর আদায়ের চিন্তা থেকে।
পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি সস্তা পলিথিনের ব্যবহার টেকসই ভোগের ধারণার জন্যও কোনোভাবে সহায়ক না। বরঞ্চ এটা এমন এক ধরনের মনস্তত্ত্ব তৈরি করে যা শুধু পরিবেশকেই ধ্বংস করে। যদিও বিশ্বব্যাপী টেকসই ভোগের ধারণার ওপর ভিত্তি করে এখন ‘সার্কুলার অর্থনীতির’ ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। সার্কুলার অর্থনীতি শুধু অপচয় কমায় না, প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা, দূষণরোধ, বর্জ্য থেকে তৈরি পরিবেশদূষণ ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারে। তাই পরিবেশগত ঝুঁকি, কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের অর্থনীতিকে সার্কুলার অর্থনীতিতে রূপান্তরের জন্য বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করছে। অন্যদিকে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই পৃথিবী গড়ে তোলা এবং এ সংশ্লিষ্ট অভীষ্ট ২০৩০ সমূহ অর্জনে সার্কুলার অর্থনীতি অন্যতম হাতিয়ার।
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা শহরে রাস্তায় কোনো পেট বোতল পড়ে থাকতে দেখা যায় না। এর কারণ হচ্ছে এখন পেট বোতলের প্রায় শতভাগ রিসাইকেল করা হয় এবং পেট বোতল সংগ্রহের জন্য অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে হলেও একটি সংগ্রহ-লাইন তৈরি হয়েছে। কিন্তু পলিথিনের ক্ষেত্রে তেমনটা দেখা যায় না। তবে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার সার্কুলার ইকোনমির ধারণার সঙ্গেও একেবারে মানানসই না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রযুক্তিগতভাবে একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিন রিসাইকেল করা অসম্ভব না হলেও এটি একটি জটিল এবং অর্থনৈতিকভাবে ব্যয়বহুল যে কারণে পেট বোতলের মতো রাস্তা থেকে পলিথিন সংগ্রহ করতে কাউকে দেখা যায় না উলটো রাস্তাঘাটে এখানে সেখানে পলিথিন পড়ে থাকে।
পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের অনর্থনীতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এখন প্রথম দরকার এর ব্যবহার বন্ধ করা, এর ব্যবহারকে অনেক বেশি দামি করে ফেলতে হবে আর এর প্রতিফলন থাকতে হবে বাজেটে। দ্বিতীয়ত, সার্কুলার অর্থনৈতিক চর্চার উৎসাহিত করার জন্য পরিকল্পনা, দক্ষতা বৃদ্ধি ও বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি, পলিথিনের বিকল্প সোনালি ব্যাগের মতো উদ্যোগগুলোকে সরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ ও বেসরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে প্রয়োজনীয় উৎসাহ ও প্রণোদনা প্রদান করতে হবে। সরকার প্রতি বছর বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবেশ দিবস পালন করে কিন্তু দিবস পালন শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলেই হবে না এর উদ্যোগ কতটুকু বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে তার ওপরও নজর দিতে হবে। তা নাহলে পলিথিনের অর্থনীতির নামে শুধু অনর্থনীতিকে বাড়িয়ে তোলা হবে, আর সেটা হবে টেকসই অর্থনীতি তৈরির সম্ভাবনার অপমৃত্যু।
লেখক : উন্নয়নকর্মী ও কলামিস্ট
গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহে হাঁসফাঁস অবস্থা মানুষের। এমন অবস্থায় প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছে না কেউ। তাই বলে গরমের ভয়ে ঘরে বসে থাকলে তো আর জীবন চলবে না। শিক্ষার্থীদের ক্লাসে যেতে হবে। আর কর্মজীবীদের অফিস ও অন্যান্য কর্মস্থলে। অনেকেরই এই গরমেও কাজের প্রয়োজনে সারাদিন কেটে যায় বাইরে ঘুরে ঘুরেই। গরমকে মোকাবিলা করতে সঙ্গে এই প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো রাখলেই গরমের কাছে নিজেকে হার মানতে হবে না।
পানি পান
গরমের সময় শরীর থেকে স্বাভাবিক ভাবে অনেক বেশি ঘাম বের হয়ে থাকে। যার ফলে দেখা দিতে পারে পানি শূন্যতা। শরীরের মধ্যে যদি পানির পরিমাণ কমে যায় তাহলে ডিহাইড্রেশন হতে পারে। পানি শূন্যতা দূর করতে হলে প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি খেতে হবে।
বিশুদ্ধ পানি খাওয়ার পাশাপাশি ফলের জুস কিংবা কচি ডাবের পানি খেতে পারেন। দেহের ত্বককে ভালো রাখতে পানি, শরবত বা জুস পানের বিকল্প নেই। গরমে সময় প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ লিটার বিশুদ্ধ পানি খেলে ডিহাইড্রেশন এবং পানি শূণ্যতা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
খাবার স্যালাইন
গরমের সময় ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় লবণ বের হতে থাকে যার ফলে শরীর অনেক দুর্বল হয়ে যায়। এ থেকে মুক্তি পেতে খাবার স্যালাইন খেতে পারেন। বিকেল বেলা খাবার স্যালাইন খেলে অতিরিক্ত গরমেও শরীরে সতেজতা ফিরে আসে। আবার অনেকেই স্বাদযুক্ত স্যালাইন খান যেমন, টেস্টি স্যালাইন। ভুল করেও এসব খাবেন না। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হলো ওরস্যালাইন । তবে আপনাদের মধ্যে যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তারা খাবার স্যালাইন খাওয়ার আগে ভালো কোনো ডাক্তারের মতামত নেওয়া উচিত।
রেড মিট পরিহার করুন
অতিরিক্ত গরমের সময় গরু-ছাগলের মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ গরমের সময় বা অতিরিক্ত গরমের সময় গরুর মাংস খেলে শরীরের তাপমাত্রা অনেকাংশে বেরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গরু-ছাগলের মাংস ছেড়ে মাছ খেতে পারেন। আর অতিরিক্ত গরমে অবশ্যই অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার থেকে দূরে থাকুন।
সবুজ শাক সবজি
গরমের সময় শরীরকে সুস্থ রাখতে বেশি বেশি করে সবুজ শাক সবজি খেতে পারেন। সবুজ শাক সবজিতে অধিক পরিমাণে ভিটামিন মিনারেল এবং খনিজ উপাদান থাকে। এতে করে অতিরিক্ত গরমেও শরীর অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।তাছাড়াও খেতে পারেন তরমুজ যা শরীরে এনার্জি দিতে পারে।
টক জাতীয় ফল
প্রচুর গরমে সুস্থ থাকার উপায় হিসেবে টক জাতীয় ফল খেতে পারেন। যেমন: কামরাঙ্গা, লেবু, তেতুল, আমরা ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে অতিরিক্ত টক ফল খাওয়া ঠিক নয়। যদি কারো এসিডিটির সমস্যা থেকে থাকে তবে টক জাতীয় ফল খাওয়া হতে বিরত থাকুন। টক জাতীয় ফল খালি পেটে খাওয়া যাবে না। এতে করে আরো বেশী অসুস্থ হয়ে পারতে পাবেন।
টক দই
অতিরিক্ত গরমে সুস্থ থাকতে হলে টক দই খেতে পারেন। যারা করা রোদে কাজ করেন বিশেষ করে তাদের জন্য অনেক উপকারী হলো টক দই। রোদের প্রচুর তাপ থেকে শরীরকে কিছুটা হলেও রক্ষা করবে টক দই। টক দই শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে অনেকাংশে সাহায্য করে।
প্রতিদিন গোসল করুন
গরমের সময় প্রতিদিন এক বার করে হলেও গোসল করতে হবে। যদি পারেন তবে দিনে ২ বার গোসল করতে পারেন। গোসল করার ক্ষেত্রে একটু সাবধান থাকতে হবে। বাহির থেকে এসে সাথে সাথে গোসল করতে যাবেন না। একটু বিশ্রাম নিয়ে তারপর গোসল করতে যাবেন। কারণ হঠাৎ করে গরম থেকে এসে গোসল করলে ঠাণ্ডা লাগতে পারে।
ঘরেই অবস্থান করুন
অতিরিক্ত গরমে বিশেষ কোনো প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বাহিরে যাবেন না । যদিও বিভিন্ন কারণে বাহিরে যেতে হয়। সেক্ষেত্রে রোদ থেকে বাঁচতে প্রয়োজনে ছাতা ব্যবহার করতে পারেন। যতটুকু সম্ভব ছায়াযুক্ত স্থানে থাকার চেষ্টা করুন।
শারীরিক পরিশ্রম কম করুন
গরমের সময় অনেকেই আছে অতিরিক্ত ব্যায়াম করে থাকেন এমনটি করা যাবে না কারণ অতিরিক্ত গরমে শরীরের তাপমাত্রা একটু বেশি হয়ে থাকে।
পাতলা সুতি কাপড় পরিধান করা
গরমের সময় পাতলা সুতি কাপড় পরা দরকার। কারণ সাদা কাপড় তাপ শোষণ করতে পারে না বরং তাপের প্রতিফলন ঘটায় ও গরম কম লাগে।
পারফিউম ব্যবহারে সতর্ক থাকুন
অতিরিক্ত গরমে ঘামের গন্ধ থেকে বেচে থাকার জন্য অনেকেই সুগন্ধি ব্যবহার করে থাকে। তবে অতিরিক্ত গরমে পারফিউম ব্যবহার না করাটাই উত্তম কাজ। কারণ, পারফিউম গরম লাগা বৃদ্ধি করে দেয়।
যদিও ব্যবহার করতে হয় তাহলে হালকা গন্ধের সুগন্ধি ব্যবহার করতে পাবেন। বাজারে কিছু সুগন্ধি পাওয়া যায় যেগুলো ব্যবহার করলে ঠাণ্ডা লাগে। সেগুলো ব্যবহার করলে আরো ভালো হয়।
ধূমপান পরিত্যাগ করা
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা কিনা ধূমপান করে থাকি। ধূমপান করলে শরীরের তাপমাত্রা তুলনামূলক ভাবে বেড়ে যায়। তাই প্রচন্ত গরমে সুস্থ থাকতে হলে ধূমপান পরিত্যাগ করতে হবে। যদিও এই অভ্যাসটি সহজে পরিত্যাগ করা যায় না। তাই যতটুকু পারেন ধূমপান কম করার চেষ্টা করুন।
চা কফি পরিত্যাগ করুন
চা, কফি বা অ্যালকোহল খেলে শরীরের তাপমাত্রা আরো বৃদ্ধি পায়। আর যদি অতিরিক্ত গরমে চা, কফি বা অ্যালকোহল খেয়ে থাকেন তাহলে শরীরের তাপমাত্রা অতিরিক্ত হারে বৃদ্ধি পাবে যার ফলে হতে পারে হিটস্ট্রোক। তাই গরমের সময় চা কফি বা অ্যালকোহল খাওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে।
শান্ত থাকুন
মন মেজাজ গরম থাকলে শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পায়। রাগের কারণে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং অতিরিক্ত গরমের ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় আর দুই তাপমাত্রা এক সঙ্গে হলে কি অবস্থা হতে পারে একবার হলেও সেটা ভেবে দেখবেন।
বিশেষজ্ঞরা অতিরিক্ত গরমে শান্ত থাকার জন্য মতামত দিয়ে থাকে। বিশেষ করে যাদের হার্টের সমস্যা আছে তাদের জন্য শান্ত থাকাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।