
বাজার থেকে ২০০০ রুপির নোট তুলে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই)। চালুর মাত্র সাত বছরের মাথায় গত শুক্রবার সন্ধ্যায় আকস্মিক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নোট বাতিলের কথা জানায় ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরবিআই। পাশাপাশি জানায়, আগামী ২৩ মে থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২০০০ রুপির নোট ব্যাংকে জমা দিয়ে সমমূল্য অর্থ মিলবে। হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি বলেছে, এটি খুব বেশি ব্যবহার করা হচ্ছিল না। বাজারে যত ২০০০ রুপির নোট আছে, তার মাত্র ১০ দশমিক ৮ শতাংশ ব্যবহার হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথা সরকারের এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা শুরু হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা মত দিচ্ছেন পক্ষে-বিপক্ষে। তবে দুর্নীতি ও জাল নোটের দৌরাত্ম্য কমাতে ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট বাতিল করে আনা ‘চিপযুক্ত’ নোট মাত্র সাত বছরের মাথায় বাতিল করে দেওয়ায় শুরু হয়েছে তীব্র রাজনৈতিক সমালোচনা।
২০১৬ সালের শেষ দিকে আচমকা ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট বাতিলের জন্য সারা দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল। বহু সাধারণ মানুষ বাতিল নোট জমা দেওয়ার লাইনে মারা গিয়েছিলেন। ছোট ব্যবসায়ীরা পথে বসেছিলেন। কর্মহীন হয়েছিলেন বহু মানুষ। ২০১৭ সাল থেকে দেশটির প্রবৃদ্ধির হার কমতে শুরু করে। তখন অনেক অর্থনীতিবিদ বলেছিলেন, মূলত নোট বাতিলের কারণে অর্থনীতি গতি হারিয়েছে। সে বিষয়গুলোই মনে করিয়ে দিয়ে রাজনৈতিক নেতারা তীব্র সমালোচনা করেছেন এই সিদ্ধান্তের। সরাসরি কথার আক্রমণ হানছেন সরকারের প্রতি। খোদ প্রধানমন্ত্রীকে ‘অক্ষিত’ বলেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল।
অবশ্য আগেরবার হঠাৎ ঘোষণার কারণে যে বিশৃঙ্খলা হয়েছে এবার তেমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা কম। কারণ এবার নোট বদলের জন্য বেশ খানিকটা সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তার পরও ডালপালা মেলছে জল্পনা-কল্পনা। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে কেন এই নোট বাতিল করা হচ্ছে এবং দেশটির অর্থনীতিতে এর কী প্রভাব পড়তে পারে সে বিষয়ে অর্থনীতিবিদদের মতামত তুলে ধরেছে। তাদের কারও কারও মতে সামনে রাজ্য ও জাতীয় নির্বাচন থাকায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া নিয়েছে বিজেপি সরকার। কারণ নির্বাচনের সময় নগদ লেনদেন বেড়ে যায়।
মুম্বাইভিত্তিক আর্থিক সংস্থা এলঅ্যান্ডটি ফাইন্যান্স হোল্ডিংসের গ্রুপ চিফ ইকোনমিস্ট রেগে নিতসুরে বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে এমন সিদ্ধান্ত সঠিক হয়েছে। যারা উচ্চ মূল্যমানের নোট জমিয়ে রেখেছেন তারা ঝামেলায় পড়বেন। এই অর্থনীতিবিদ মনে করেন, বাজার থেকে দুই হাজার রুপির নোট সরিয়ে নিলে দেশটির অর্থনীতিতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। গত ৬-৭ বছরে ডিজিটাল লেনদেন ও ই-কমার্সের পরিধি অনেক বেড়েছে।
একই ধরনের ভাষ্য, দেশটির সাবেক প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কৃষ্ণমূর্তি সুব্রামানিয়ামেরও। টুইট করে তিনি বলেছেন, ভারতে ডিজিটাল লেনদেন অনেক বেড়ে গেছে। সে কারণে কাগুজে মুদ্রার চাহিদা বা ব্যবহারই অনেকটা কমেছে, বিশেষভাবে কমেছে ২০০০ রুপির নোটের ব্যবহার। এই নোট মূলত অর্থ মজুদ রাখার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে এ সিদ্ধান্তের কারণে সাধারণ মানুষ তেমন একটা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না।
তবে গবেষণা সংস্থা কুয়ান্টইকো রিসার্চের অর্থনীতিবিদ যুবিকা সিনঘালের দাবি, নতুন করে নোট বাতিলের কারণে ছোট ছোট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বা কৃষি ও নির্মাণ শিল্পের মতো খাতে নগদ লেনদেন বেশি হওয়ায় সেখানে স্বল্প সময়ের জন্য সমস্যা হতে পারে।
রয়টার্স জানাচ্ছে, বর্তমানে ভারতের বাজারে ৩ দশমিক ৬২ ট্রিলিয়ন রুপি বা ৪৪ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ২০০০ হাজার রুপির নোট আছে। কিন্তু এর মাত্র ১১ শতাংশের কাছাকাছি ব্যবহার হচ্ছে লেনদেনে। ভারতের অর্থনীতির আকার হিসেবে সংখ্যা অনেক বড় না হলেও তারল্য সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোর জন্য চাপ হয়ে উঠছিল। সরকারের এ সিদ্ধান্ত তাদের হাঁফ ছাড়ার সুযোগ দেবে। রেটিং এজেন্সি আইসিআরএ লিমিটেডের গ্রুপ হেড কার্তিক শ্রীনিভাসানের ভাষ্য, ব্যাংকগুলো জামানত সংকটে ভুগছে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত সেই সংকট ঘোচাবে। ব্যাংকে তারল্যের সরবরাহ বাড়বে। মুম্বাইভিত্তিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান ইমকে গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের অর্থনীতিবিদ মাধবী অরোরারও মনে করেন, এ সিদ্ধান্ত ব্যাংকিংব্যবস্থায় তারল্য সরবরাহে সহায়তা করবে।
তবে অর্থনীতিবিদদের মতো ভাবছেন না রাজনৈতিক নেতারা। তীব্র ভাষায় তারা কটাক্ষ করেছেন সরকারকে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেছেন, ‘২০০০ রুপির নোট বাজারের ছাড়ার সময় তারা (সরকার) বলেছিল, দুর্নীতি বন্ধ হবে। এখন বলছে, ২০০০ রুপির নোট বাতিল হলে দুর্নীতি বন্ধ হবে। আমি এজন্যই বলি, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষিত হওয়া উচিত। অশিক্ষিত প্রধানমন্ত্রীকে একেকজন একেক কথা বলেন কিন্তু তিনি কোনোটাই বুঝতে পারেন না। ভুগতে হয় জনগণকে।’
পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সরকারের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। টুইটে তিনি এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে লিখেছেন, ‘তাহলে এটা ২০০০ টাকার ধামাকা ছিল না। এটা আসলে কোটি কোটি ভারতীয়কে কোটি কোটি টাকার ধোঁকা ছিল। এখনই সময়, সব ভাই-বোনকে অনুরোধ করছি, আপনারা জেগে উঠুন। নোটবন্দি অর্থাৎ ডিমানিটাইজেশনের সময় আমরা যে অসুবিধার মুখোমুখি হয়েছিলাম তা ভোলার নয়। যারা এই পরিস্থিতির মধ্যে আমাদের ফেলেছিল, তাদের কখনো ক্ষমা করবেন না।’
কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ এই সিদ্ধান্তকে তুঘলকি-কাণ্ড হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এ সরকার তার নিচের ঢংয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। আগে কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়, পরে তারা ভাবে।
২০১৬ সালে নোট বাতিলের নোট বাতিলের পর সমালোচনার পাশাপাশি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল বিরোধীরা। সরকারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ৫৮টি আবেদন করা হয়েছিল। আবেদনকারীদের যুক্তি ছিল, ভবিষ্যতের স্বার্থে এ ধরনের প্রক্রিয়ার ত্রুটি বিচ্যুতি প্রতি নজর দেওয়া প্রয়োজন। তবে সরকারের যুক্তি ছিল, ঘড়ির কাঁটা পেছনের দিকে নিয়ে যাওয়া যায় না। চলতির বছরের শুরুতে আদালত সেই বিতর্কের অবসান ঘটিয়েছে। সে সময়ের নোট বাতিলের সিদ্ধান্তকে বৈধ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
তবে নোট বাতিলের উদ্দেশ্য আদৌ সফল কি না, কালো টাকা উদ্ধার হয়েছে কি না, সন্ত্রাসবাদীদের অর্থাগম বন্ধ হয়েছে কি না কিংবা নগদ লেনদেন বন্ধ হয়ে ডিজিটাল ইন্ডিয়া গড়ে উঠেছে কি নাÑ সে বিতর্ক আছে পুরোদমে।
ঢাকার কেরানীগঞ্জে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) ইকুরিয়া কার্যালয়ে অনিয়মই যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। যা চলছে বছরের পর বছর। সেখানে বাড়তি টাকা না দিয়ে শুধুমাত্র সরকার নির্ধারিত ফি দিয়ে কোনো কাজই করা সম্ভব না। আর এসব অনিয়ম দেখার যেন কেউ নেই। কার্যালয়টির বড় কর্তাদের সামনেই চলে দালালদের দাপট। সরকারি এই দপ্তরটিতে কোনো সেবাই টাকা ছাড়া মেলে না বলে অভিযোগ সেবা নিতে আসে ভুক্তভোগীদের।
তারা বলেন, কার্যালয়টিতে চলা অনিয়মের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করেও কোনো সুফল মেলে না। এসব অনিয়ম বড় কর্মকর্তাদের জ্ঞাতসারেই হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে কয়েক দফায় বিআরটিএ’র ইকুরিয়া কার্যালয় ঘুরে দেখা যায়, প্রধান ফটক থেকে শুরু করে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কক্ষের সামনে সক্রিয় দালাল চক্রের সদস্যরা। দালালদের পাশাপাশি নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যদের দাপটও চোখে পড়ার মতো। বেশিরভাগ আনসার সদস্য শৃঙ্খলা রক্ষার চেয়ে সেবা নিতে আসা গ্রাহকদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নিয়ে তাদের কাজ করে দিতে ব্যস্ত। যদিও বিআরটিএ কর্র্তৃপক্ষের দাবি, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে মাঝেমধ্যেই দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা যায়, কার্যালয়টির প্রধান ফটকের চারপাশ ঘিরে সক্রিয় থাকে মো. সিদ্দীক ও জাকির নামে দুই ব্যক্তির গড়ে তোলা দালাল চক্রের সদস্যরা। অনেক বছর ধরেই তারা নিয়ন্ত্রণ করে আসছে এই চক্র। অন্যদিকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কক্ষের সামনে কাজ বাগিয়ে নিতে ব্যস্ত থাকে আনসার সদস্যরা। এর মধ্যে ১২০ নম্বর কক্ষের কাজ আনসার সদস্য রতন, ১১৬ নম্বর কক্ষের কাজ আনসার সদস্য রুবেল খান এবং ১২১ নম্বর কক্ষের কাজ সুমন ও আরিফ মিয়া নামে দুই দালাল নিয়ন্ত্রণ করে। ড্রাইভিং লাইসেন্স হয়ে গেলে স্মার্ট কার্ড নিতে পিয়ন রেজাউলকে দিতে হয় বাড়তি টাকা। এছাড়া পরীক্ষা কেন্দ্রের আশপাশে ঘুরাঘুরি করে বাড়তি টাকা নিয়ে কাজ করিয়ে দেয় প্রভাবশালী আনসার সদস্য মনসুর। সব মিলিয়ে এই কার্যালয়ে একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে ১২ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়ে যায়।
অনুসন্ধানে আরও দেখা যায়, কোনো ধাপে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য ৩০০ জনের মতো লিখিত পরীক্ষা দিলেও ফিল্ড পরীক্ষা (যান চালনার দক্ষতা প্রদর্শন) দেওয়ার সময় তাদের ৫০ জনকেও দেখা যায় না। লিখিত পরীক্ষা দেওয়ার সময়ই পরীক্ষার্থীর সঙ্গে বাড়তি টাকার চুক্তি করে তাকে ফিল্ড পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া লিখিত পরীক্ষা চলাকালে দালালরা পরীক্ষার হলে ঢুকে তাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ পরীক্ষার্থীদের সব উত্তর বলে দেয়।
সম্প্রতি একটি বেসরকারি কলেজের শিক্ষার্থী মো. মইন ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য লিখিত পরীক্ষা দিতে বিআরটিএ’র ইকুরিয়া কার্যালয়ে যান। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এই ইকুরিয়াতে টাকা ছাড়া কোনো কাজই হয় না। টাকা দিলে সব হয়। এখন লিখিত পরীক্ষা দিলাম। আমি মোটরসাইকেল ও গাড়ি চালানোর জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে এলাম। কিন্তু মোটরসাইকেল চালানোর জন্য যেভাবে আঁকাবাঁকা রাস্তা বানিয়েছে, এখানে ফিল্ড পরীক্ষা দিলে আমি ফেল করব। আর গাড়িও চালাতে পারি না। কিন্তু দরবেশ বাবার (দালাল) কল্যাণে গাড়ি না চালিয়ে পাস হয়ে যাব। কারণ গুনে গুনে ১২ হাজার টাকা দিয়েছি। টাকা না দিলে এই ড্রাইভিং লাইসেন্স আমি কোনোভাবেই পাব না।’ দেশের বাইরে গেলে সেখানে মোটরসাইকেল চালানোর জন্য নিজের ড্রাইভিং লাইসেন্স সরকারি ফি দিয়ে সত্যায়িত করতে ইকুরিয়া কার্যালয়ে এসেছিলেন আরেক শিক্ষার্থী ওমর ফারুক। তিনি বলেন, ‘একটা সত্যায়িত সিলের জন্য ১ হাজার টাকা দাবি করছে পিয়ন। কার কাছে দেব অভিযোগ! কর্মকর্তাদেরও ঠিকমতো পাওয়া যায় না। এখানকার পিয়নদের কথাই শেষ কথা।’
মো. ইয়াসিন নামে আরেক ভুক্তভোগী বলেন, ‘ইমার্জেন্সি ড্রাইভিং লাইসেন্স করানোর জন্য এক দালালকে ৪০ হাজার টাকা দিয়েছি। কিন্তু এখানো কাজ করে দিচ্ছে না। কী করব? কার কাছে অভিযোগ দেব। সরকার কি এসব কিছু দেখে না?’
ইকুরিয়া কার্যালয়ে চলা এসব অনিয়মের কথা দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকারও করেছেন সেখানকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘নিচ তলা থেকে ওপর তলা পর্যন্ত সব জায়গায় এখানে টাকা লাগে। আমরা ছোট পোস্টে কাজ করি, শুধু দেখি। দেখা ছাড়া আর কোনো কিছু বলা যাবে না।’
একটি কাগজ দেখিয়ে এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘গত মাসে মোছলেহ উদ্দীন নামের এক ব্যক্তিকে ইচ্ছে করে ৫ বার ফেল করানো হয়েছে। সে কোনো দালালের মাধ্যমে আবেদন করেনি। যার জন্য সে পাস করতে পারছে না। এখানে আসতে আসতে তার জুতা ক্ষয় হয়ে যাবে, তবুও সে পাস করবে না। কারণ এখানে টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয় না।’
নিজের পরিচয় গোপন করে দালাল চক্রের নিয়ন্ত্রক মো. সিদ্দীকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন এই প্রতিবেদক। মোটরসাইকেলের ফিল্ড টেস্ট দিতে পারবেন না এবং গাড়িও চালাতে পারেন নাÑ তারপরও কীভাবে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে পারেন জানতে চাইলে সিদ্দীক বলেন, ‘কোনো কিছু লাগবে না। শুধু টাকা দিলেই হবে। আর টাকা দিলে পরীক্ষার আবার কীসের ঝামেলা! ঝামেলা যাতে না হয় সে জন্যই তো টাকা নেওয়া হচ্ছে। এখানকার সব সমস্যার সমাধান আমি করে দেব।’
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিআরটিএর ইকুরিয়া কার্যালয়ে শুধুমাত্র সরকারি ফি দিয়ে কোনো কাজ হয় না। সরকারি ফি বাদেও অসাধু কিছু কর্মকর্তা আছেন, তাদের একটা ফি আছে। সেই ফি না দিয়ে কোনো কাজ এখানে হয় না। পুরো অফিসই দুর্নীতি দিয়ে ভরা। যার জন্য গাড়ি না চালিয়েও সেখান থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স করে সড়কে গাড়ি চালায় অনেকে। বিআরটিএর এই অনিয়মের জন্য দিনের পর দিন সড়কে মৃত্যুর সংখা বেড়েই যাচ্ছে।’
অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইকুরিয়ার বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্র্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ঢাকা মেট্রো-২ সার্কেলের উপপরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার) মো. সানাউল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দালালদের তো কোনো পরিচয়পত্র নেই যে বুঝব তারা দালাল। এখন কোনো অভিযোগের প্রমাণ দিলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’ এছাড়া মাঝেমধ্যেই ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় বলে দাবি করেন তিনি।
এদিকে বিআরটিএ যে পদ্ধতিতে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয় তা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ প্রসঙ্গে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিআরটিএ ফিল্ড পরীক্ষার নামে তামাশা করছে। বিআরটিএ যে পদ্ধতিতে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয় তা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে কোনোভাবেই সংগতিপূর্ণ নয়। এছাড়া টাকার বিনিময়ে অদক্ষ চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার ফলে সড়কে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। উন্নত দেশের আদলে ড্রাইভিং লাইসেন্স সিস্টেমের অনেক কিছুরই পরিবর্তন আনা দরকার।’
প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলার খরচ করে নিওম নামে একটি ভবিষ্যৎমুখী সবুজ শহর গড়ে তোলার কাজ শুরু করেছে সৌদি আরব। লোহিত সাগরের পাশে প্রায় সাড়ে ২৬ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে তৈরি হচ্ছে শহরটি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, দ্রুতগতির ট্রেন, ড্রোনের মতো সুবিধা নিয়ে পুরোপুরি নবায়নযোগ্য জ¦ালানিনির্ভর শহরটি ২০৩৯ সালে উদ্বোধন করার পরিকল্পনা আছে দেশটির। অতি উচ্চাভিলাষী প্রকল্পটি নিয়ে শুরু থেকে সমালোচনা হচ্ছে। তোলা হয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের উচ্ছেদের অভিযোগও। এবার চলমান প্রকল্পটিতে মানুষ হত্যার অভিযোগও উঠল। খোদ জাতিসংঘ সেখানে মানাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে।
জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে বলছে, জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন বলছে, নিওমের কাজ শুরু করতে হুওয়াইতাত গোত্রের মানুষদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ না দিয়ে তাদের ঘরবাড়ি ভেঙে ফেলা হয়েছে। এ ছাড়া উচ্ছেদকাজে বাধা দেওয়ায় একজনকে হত্যা করা হয়েছে, তিনজনের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। আরও তিনজনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের দায়ে ৫০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সৌদি আরবের প্রখ্যাত নারী অধিকারকর্মী লুজেইন আল-হাথলুলের বোন লিনা আল-হাথলুল ডয়চে ভেলেকে জানান, হুওয়াইতাত গোত্রের মানুষদের বিচার গোপনে করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের মূল উদ্বেগ হচ্ছে সৌদি রক্তে নিওম গড়ে তোলা হচ্ছে।’
মানবাধিকার সংস্থা রিপ্রাইভের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক পরিচালক জিড বাসুনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘জোরপূর্বক উচ্ছেদ, রাষ্ট্রীয় সহিংসতা ও মৃত্যুদণ্ডের ওপর ভিত্তি করে নিওম গড়ে উঠছে। যদিও সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান অঙ্গীকার করেছিলেন যে নিওম প্রকল্পের কাজের জন্য যারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তাদের প্রকল্প বাস্তবায়নকাজে যুক্ত করা হবে।’
জার্মানির কিছু কোম্পানি নিওম প্রকল্পে যুক্ত আছে। তাই ভবিষ্যতে সম্ভাব্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায় শুধু সৌদি আরব নয়, জার্মান কোম্পানিগুলোর ওপরও পড়বে বলে মনে করেন জার্মানির ‘সেন্টার ফর অ্যাপ্লায়েড রিসার্চ ইন পার্টনারশিপ উইথ দ্য ওরিয়েন্ট’-এর ঊর্ধ্বতন গবেষক সেবাস্টিয়ান সন্স। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক সম্প্রতি সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহানের সঙ্গে বৈঠকের সময় দেশটিতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে আলোচনা করেন। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে তিনি বলেন, অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে আইনের শাসন, মানবাধিকার ও স্বাধীনতা থেকে বিচ্ছিন্নভাবে বিবেচনা করা যায় না।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে আন্তঃনগর উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেন দুর্ঘটনার ১৫ ঘণ্টা পর দুটি বগি ও ইঞ্জিন উদ্ধার করা হয়েছে। স্বাভাবিক হয়েছে সিলেটের সঙ্গে ঢাকা ও চট্টগ্রামের রেল যোগাযোগ। গতকাল শনিবার ভোরে দুর্ঘটনার পর আখাউড়া ও কুলাউড়া থেকে দুটি রিলিফ ট্রেন এসে উদ্ধারকাজ শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বগি ও ইঞ্জিন উদ্ধার করে রেললাইন স্বাভাবিক করা হয়।
ভানুগাছ রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার কবির আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগের আর কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকল না।
গতকাল লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে রেললাইনে ভেঙে পড়া গাছে ধাক্কা লেগে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা আন্তঃনগর উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনটির ইঞ্জিন ও দুইটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এর ফলে ঢাকা ও চট্টগ্রামের সঙ্গে সিলেটের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের পরিচালক ওমর ফারুক ও সহকারী পরিচালক সোহেল রানা দেশ রূপান্তরকে বলেন, শ্রীমঙ্গল স্টেশন থেকে লাইন ক্লিয়ারেন্স পেয়ে সিলেটের উদ্দেশে ট্রেন ছেড়ে আসার ১০ মিনিটের পথ পাড়ি দিতেই এ ঘটনাটি ঘটে। বনের ভেতরে ঝড়ে একটি গাছ রেললাইনের ওপর পড়ে ছিল। ট্রেনটি সেই গাছে ধাক্কা দিলে ইঞ্জিন ও দুটি বগি পড়ে যায়। তবে এতে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
এই দুর্ঘটনার কারণে সকাল থেকেই সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ে। ট্রেন দুর্ঘটনার ফলে আন্তঃনগর কালনি ও জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনের চারটি যাত্রা বাতিল করা হয়। ওই ৪ ট্রেনের টিকিট ফেরত দিয়ে যাত্রীদের টাকা ফেরত নিতেও বলা হয় বলে জানান কুলাউড়া রেলস্টেশনের মাস্টার মো. রুমান আহমদ।
এদিকে ট্রেন দুর্ঘটনার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে সরেজমিনে পরিদর্শনে পাঠায় রেলওয়ে বিভাগ। রেলওয়ের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা খায়রুল কবিরকে এর প্রধান করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি গতকাল দুপুর ১২টায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ঝড়ের কারণে বনের গাছ ভেঙে রেললাইনে পড়েছিল এবং সেই গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ট্রেনের ইঞ্জিন ও দুটি বগি ছিটকে পড়ে। কুলাউড়া এবং আখাউড়া থেকে উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে গিয়ে ট্রেনটি উদ্ধার করে। লাউয়াছড়া সংরক্ষিত বনাঞ্চল হওয়ায় সেখানে স্বাভাবিকভাবেই ট্রেনের গতি কম থাকায় কোনো ধরনের হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বাকি আর মাত্র তিন দিন। প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। বাকি দিনগুলো প্রতিটি মুহূর্ত তারা কাজে লাগাতে চান। মেয়র প্রার্থীরা এখন ভোটারদের যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সেগুলো আরও জোরেশোরে বলছেন।
গতকাল শনিবার ছিল প্রচারের ১২তম দিন। প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী, তাদের কর্মী-সমর্থকরা নিজেদের সামর্থ্য উজাড় করে দিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন। সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত মেয়র প্রার্থীরা। চষে বেড়াচ্ছেন সিটি করপোরেশনের আনাচকানাচ।
আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী আজমতউল্লা খান গতকাল সকাল থেকে বাসন থানা এলাকার মোগড়খাল, যোগীতলা নতুন বাজার, চান্দনা বুড়িমোড়, চান্দনা ময়লা পুকুরপাড়, ওয়্যারলেস গেট, টিঅ্যান্ডটি, বাড়ীয়ালী, নগপাড়া মন্ডলবাড়ী, পালেরপাড়া চুনা ফ্যাক্টরি, শাহ আলম বাড়ি, দিঘিরচালা, বারবৈকা মোড়, মতি মার্কেট, কলাবাগান, ইটাহাটা, বাসন, ইসলামপুর, কড্ডা, দক্ষিণ ভোগড়া, চান্দনা চৌরাস্তায় গণসংযোগ করেন এবং বেশ কয়েকটি পথসভায় বক্তব্য দেন।
আজমতউল্লা খান বলেন, ‘সাবেক বহিষ্কৃত মেয়রের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বহুল পরিচিত পত্রপত্রিকা এবং টেলিভিশন চ্যানেলে তার দুর্নীতির খবর বের হয়েছে। বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনে তার দুর্নীতি নিয়ে রিট পিটিশন হয়েছে। দুদক (দুর্নীতি দমন কমিশন) তার বিরুদ্ধে তদন্তে নেমে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পেয়ে তাকে শোকজ করেছে।’ তিনি বলেন, ‘একটি দুর্নীতিযুক্ত সিটি করপোরেশন কোনো দিন মানুষের কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। আল্লাহ যদি আমাকে সুযোগ দেন এ তাহলে এই গাজীপুর সিটি করপোরেশন হবে সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত সিটি করপোরেশন।’
আজমতউল্লা সিটি করপোশেন এলাকার যারা রাস্তাঘাটের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি বলেন, এ টাকা যদি সুষ্ঠুভাবে সৎ থেকে বিলি বণ্টন করা হতো, তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলোর দুর্ভোগ হতো না। তিনি নির্বাচিত হলে সরকারের দেওয়া অর্থ নিয়ম অনুযায়ী সব ক্ষতিগ্রস্তের মধ্যে সমভাবে বণ্টন করে দেওয়া হবে বলে আজমতউল্লা প্রতিশ্রুতি দেন। একই সঙ্গে নিজের দরজা সব সময় মানুষের জন্য খোলা রাখার অঙ্গীকার করেন।
টেবিল ঘড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন টঙ্গী ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডের বউবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিকেল ৪টার দিকে সিটি করপোরেশনের টঙ্গীর ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডের মিরাশপাড়া, নদীবন্দরসহ আশপাশের এলাকায় গণসংযোগ করেন। এরপর ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডের বউবাজারে যায় জায়েদা খাতুনের নির্বাচনী গাড়িবহর। এ সময় তার গাড়িবহর উদ্দেশ্যে করে হঠাৎই ঢিল মারে। এরপর সেখান থেকে দ্রুত রেললাইন পার গরুহাটা সড়কে ঢুকলেই তার গাড়িবহরের সামেন দাঁড়িয়ে তা আটকে দিয়ে নৌকার পক্ষে সেøাগান দিতে থাকে একদল লোক। স্লোগান দিতে থাকা যুবকরা হঠাৎই জায়েদা খাতুনের পেছনের গাড়ির পেছনে থাকা একটি মাইক্রোবাসে ভাঙচুর চালায়। এ সময় চারজনকে টেনেহিঁচড়ে মারধর করে। কিছু সময় পর টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পরে সেখান থেকে গাড়িবহর পেছনের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে পুলিশি নিরাপত্তায় বাসায় চলে যান।
জায়েদা খাতুনের সমর্থক রাশেদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, নৌকার সমর্থকরা তাদের প্রচারের গাড়ি এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আটকে রাখে এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে তার বেশ কয়েকজন কর্মী আহত হন বলেও অভিযোগ ওই সমর্থকের।
টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি আশরাফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, জায়েদা খাতুনের গাড়িবহরে হামলা ও আটকে রাখার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তবে এ ঘটনায় কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী সাবেক সচিব এম এম নিয়াজ উদ্দিন জয়দেবপুর বাসস্ট্যান্ড ও বাসন থানার চান্দনা চৌরাস্তা, হক মার্কেট, বাসন সড়কসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। নির্বাচিত হলে মেধাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সৃজনশীল আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলবেন বলে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান বাসন থানা এলাকায় গণসংযোগ ও পথসভায় যোগ দেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন দলের প্রসিডিয়াম সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীসহ কয়েকজন নেতা। পথসভায় অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী বলেন, ‘গাজীপুর সিটি করপোরেশনকে দুর্নীতি, দুঃশাসনমুক্ত করতে হলে দুর্নীতিমুক্ত আল্লাহ ভীরু প্রার্থীকে ভোট দিতে হবে।’ মেয়র প্রার্থী মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘বায়ুদূষণ আমাদের নাগরিক জীবনের অভিশাপে পরিণত হয়েছে। বায়ুদূষণ নাগরিকদের নানাবিধ শারীরিক-মানসিক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি নির্বাচিত হলে, বায়ুদূষণের ভয়াবহতা থেকে গাজীপুরবাসীকে রক্ষা করতে জরুরি পদক্ষেপ হিসেবে গাজীপুরের উন্নয়ন কর্মকান্ডের ও রাস্তার ধুলোবালি নিয়ন্ত্রণ করব।’
এ ছাড়া হাতি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনুর ইসলাম রনি গাজীপুর সদর থানার বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সব বন্ধুপ্রতিম দেশকে রাজনৈতিক অঙ্গীকারের সঙ্গে আন্তরিক হতে হবে। মিয়ানমারে বিপুল বিনিয়োগকারী দেশগুলোকে নিজেদের স্বার্থে এবং তাদের বিনিয়োগ রক্ষায় এ সংকটের টেকসই সমাধানে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান তিনি।
গতকাল শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ডিপ্লোম্যাটস ওয়ার্ল্ড পাবলিকেশন নামে একটি ম্যাগাজিন আয়োজিত ‘রোহিঙ্গা রিপ্যাট্রিয়েশন : এ পাথওয়ে টু পিস, স্ট্যাবিলিটি অ্যান্ড হার্মনি ইন দ্য বে অব বেঙ্গল রিজিয়ন’ শীর্ষক সেমিনারে যোগদান শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সব সময় আশাবাদী যে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান হবে...তবে এটি সমাধানের জন্য আমাদের মিয়ানমার সরকারের আন্তরিকতা, আমাদের সব বন্ধুরাষ্ট্রের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি প্রয়োজন...তাদের আন্তরিকতা না থাকলে এর সমাধান হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেক দেশ বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে আগ্রহ দেখিয়েছে এবং তারা এখানে বিনিয়োগ করেছে এবং বাণিজ্য বাড়িয়েছে। এই (রোহিঙ্গা) সমস্যার সমাধান না হলে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড (রোহিঙ্গাদের দ্বারা সংঘটিত) হলে এই বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিনিয়োগ টিকিয়ে রাখতে এই অঞ্চলে শান্তি প্রয়োজন।’
লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) মো. মাহফুজুর রহমান সেমিনারটি পরিচালনা করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মো. ওবায়দুল হক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। অন্যদের মধ্যে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও প্রকাশনার নির্বাহী উপদেষ্টা আবুল হাসান চৌধুরী, প্রকাশনার নির্বাহী সম্পাদক নাজিনুর রহিম, গ্যারেথ জন ইভান্স, অধ্যাপক মাইকেল ডব্লিউ চার্নি, মেজর জেনারেল (অব) মো. নাঈম আশফাক চৌধুরী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) হলের আসন দখল করে রাখার বিরুদ্ধে অনশনরত ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম প্রত্যয়সহ তাকে সমর্থন দেওয়া কয়েকজনের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ।
মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।তারা বলেন, ওই স্থানে গত বুধবার রাত থেকে অনশনে ছিলেন প্রত্যয়। তাকে মারধরের পর অ্যাম্বুলেন্সে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যায় হামলায় জড়িতরা। এ সময় প্রত্যয়ের দাবির সঙ্গে সংহতি জানানো প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের ওপরও হামলা হয়।
জানা গেছে, তিন দাবিতে গত বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনের খেলার মাঠে অনশনে বসেন প্রত্যয়। তিনি ওই হলের আবাসিক ছাত্র। তার অন্য দুটি দাবি ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল থেকে অছাত্রদের বের করা ও হলের গণরুমে অবস্থান করা বৈধ ছাত্রদের আসন নিশ্চিত করা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী এবং নবীন শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছিলেন। ওই সময় ক্যাম্পাসে লোডশেডিং চলছিল। হঠাৎ করেই প্রত্যয়সহ তার সঙ্গে থাকা অন্যদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
হামলায় জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচী, মার্কেটিং বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের সৃষ্টি, চারুকলা বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের মনিকা, বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের ৪৮তম ব্যাচের সুরসহ আরও কয়েকজন আহত হন বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যমতে, হামলায় ৩০ থেকে ৪০ জন অংশ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। অভিযুক্তদের কয়েকজন হলেন ছাত্রলীগ নেতা ও রসায়ন বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী গৌতম কুমার দাস, তুষার, ফেরদৌস, নোবেল, গোলাম রাব্বি, মুরসালিন, মুরাদ, সোহেল, তানভীর, রায়হান, রাহাত, সৌমিক, তারেক মীর, সজীব ও নাফিস।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী জানান, আমরা যারা প্রত্যয়ের সঙ্গে ছিলাম তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর প্রত্যয়কে দেখতে চিকিৎসক এসেছিলেন। তখন তারা অ্যাম্বুলেন্সের ওপর হামলা করে সেটি ফিরিয়ে দেয়। প্রক্টরকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি আসেননি। একাধিক ছাত্রীর দিকেও চড়াও হয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মীর মশাররফ হোসেন হলের এক শিক্ষার্থী অসুস্থ এমন একটি ফোনকল পেয়ে তারা অ্যাম্বুলেন্স পাঠায়। তবে কে কল দিয়েছিল সে সম্পর্কে চিকিৎসা কেন্দ্রের কেউ বলতে পারেননি।
তবে যে ফোন নাম্বার থেকে কল দেওয়া হয়েছিল সেটিতে যোগাযোগ করে দেখা যায় নাম্বারটি শাখা ছাত্রলীগের নেতা গৌতম কুমার দাসের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ১৫ হাজার শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না। দরকার হলে আমি পদত্যাগ করব।
এদিকে হামলার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে রাতেই বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মিছিল নিয়ে তারা এ রাত পৌনে ১টায় প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান করছেন।
তবে অনশনরত শিক্ষার্থী সামিউলের ওপর হামলারে পেছনে ছাত্রলীগের কোনো হাত নেই বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেলের। তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি, মীর মশাররফ হোসেন হলের অনশনরত ওই শিক্ষার্থীর ওপর হামলা হয়েছে। তবে সেটা সাধারণ শিক্ষার্থীরা করেছে। সেখানে ছাত্রলীগের একজনও জড়িত নয়।’
রাজধানীর বনানীর একটি রেস্তোরাঁ থেকে জামায়াতে ইসলামীর বনানী শাখার ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তাদের মধ্যে বনানী থানা জামায়াতের আমির তাজুল ইসলাম এবং সেক্রেটারি আব্দুর রাফি রয়েছেন।
বনানী থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওয়ারলেস গেটে অবস্থিত নবাবী রেস্টুরেন্টে গোপন মিটিং করাকালে বনানী থানা জামায়াতে ইসলামী আমির তাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রাফিসহ ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
আটক ১০ জনের মধ্যে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাও রয়েছেন।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।