
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘আমেরিকা ঘোষণা দিয়েছে আগামীতে যারা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বাধা দেবে, তাদের ভিসা দেওয়া হবে না। আর বাধাদানকারীরা হলো আওয়ামী লীগ। দেশে মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনতে গণ-অভ্যুত্থানের কোনো বিকল্প নেই। আজকে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। আমরা আশাবাদী, জনগণ প্রস্তুত। অচিরেই গণ-অভ্যুত্থান শুরু হয়ে যাবে। গণ-অভ্যুত্থানেই সরকারকে বিদায় করা হবে।’ গতকাল শনিবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
উচ্চ আদালতের নির্দেশনাকে অধীন আদালত এবং সরকারের অবজ্ঞা, গায়েবি মামলায় নির্বিচারে গ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলা ও পুলিশি হয়রানি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুতের লোডশেডিং, আওয়ামী সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদে এবং ১০ দফা দাবিতে এই প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়।
গতকাল বেলা আড়াইটায় সভা হওয়ার কথা থাকলেও তা দেরিতে শুরু হয়। ঝড়বৃষ্টি উপেক্ষা করে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা নয়াপল্টনে জড়ো হন। তারা অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ, খালেদা জিয়ার মুক্তি, নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। বিএনপির কর্মসূচি থাকায় নয়াপল্টন এলাকায় অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়।
সারা দেশে বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘গায়ের জোরের অবৈধ সরকার ক্ষমতায় আবারও টিকে থাকার জন্য আমাদের নেতা রফিকুল আলম মজনু, সাইফুল আলম নীরব, মোনায়েম মুন্নাসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা ফের ক্ষমতায় থাকতে গায়েবি মামলা দেওয়া শুরু করেছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। কারণ তাদের উদ্দেশ্য একটাই আবারও গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকা।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘এর আগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত পদযাত্রা কর্মসূচিতে পুলিশ হামলা করেছে। গত শুক্রবার কেরানীগঞ্জে ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায়কে পিটিয়ে আহত করেছে। তাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আহত নিপুণসহ অনেকের বিরুদ্ধে আবার পুলিশ মামলা দিয়েছে।’
খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রীকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ আজ প্রত্যাখ্যান করছে। দেশের পাশাপাশি বিশ্ববাসী জেনে গেছে শেখ হাসিনার অধীনে একটিও সুষ্ঠু নির্বাচন হয় নাই। শেখ হাসিনার অধীনে যে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না তা বিদেশিরাও জেনে গেছে। তাই তারাও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি তুলছেন।’
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলব, অবৈধ অনৈতিক হুকুম মানবেন না। অতীতে যারা এমনটা করেছে তাদের আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আপনারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, কোনো অন্যায় কাজ করবেন না। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছি। আপানারা অতি উৎসাহী হবেন না। জনগণের পক্ষে অবস্থান নিন।’
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হকের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, বিএনপি নেতা মীর সরাফত আলী সপু, আজিজুল বারী হেলাল, মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু প্রমুখ।
আওয়ামী লীগ এখন সন্ত্রাস আর গুন্ডামি করার সংগঠন : বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেছেন, আওয়ামী লীগ এখন আর কোনো রাজনৈতিক দল নয়, এটা সন্ত্রাস আর গু-ামি করার সংগঠন। বিএনপি নেতাকর্মীদের জন্য কারাগার আর বাড়ির মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। বাড়িতে থাকলেও সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকতে হচ্ছে। বাইরে বের হলেও মনে হচ্ছে বৃহৎ কারাগারের মধ্যে আছি। গতকাল শনিবার বিকালে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে যশোর জেলা বিএনপি আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক নার্গিস বেগমের সভাপতিত্বে সমাবেশে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন, সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবুসহ উপজেলা ও জেলা বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ বক্তৃতা করেন।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় রুহুল কবীর রিজভী নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধির সমালোচনা করে বলেন, সব কিছুর দাম বাড়ছে আলোর গতিতে। ঢাকায় গরুর মাংস এখন ৯শ’ টাকা। বাংলাদেশের চিনি এখন বিদেশিনী। আদার কেজি ৫শ’ টাকা। দেশের মানুষ আধপেটা খেয়ে খর্বাকায় বামন হচ্ছে। আর তিনি কাতার, আমেরিকা, লন্ডনে গিয়ে উন্নয়ন, পদ্মা সেতু আর উড়াল সড়কের গল্প শোনাচ্ছেন।
অবিলম্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবি করে রিজভী বলেন, ৪৫ বছর আগে বিচারপতি কে এম হাসান বিএনপির কোন কমিটির কোন সম্পাদকীয় পোস্টে ছিল, সে কারণে যদি তার অধীনে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হয়, তাহলে আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে থাকা আপনার অধীনে কীভাবে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে।
রুহুল কবীর রিজভী বলেন, আমেরিকা বাংলাদেশের জন্য করা ভিসা নীতি ৩ তারিখেই সরকারকে জানিয়েছে। অথচ আমরা জানতে পারলাম পরশু দিন। তিনি প্রশ্ন করেন, এতদিন কেন লুকিয়ে রেখেছিলেন।
শেখ হাসিনা আ.লীগকে রাজনৈতিক দল হিসেবে ধ্বংস করে দিয়েছেন : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, আওয়ামী লীগ আজ কোনো রাজনৈতিক দল নেই, এরা বিক্রি হয়ে গেছে অফিসারদের কাছে, পুলিশের কাছে, দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীর কাছে। এদের কোনো রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নেই। শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক দল হিসেবে ধ্বংস করে দিয়েছেন। আমাদের নেতা দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান আমাদের বলীয়ান করেছেন, শক্তিশালী করেছেন, ইমানদার করেছেন। এই জন্যই আমাদের আগামী নির্বাচনে জয় হবে। তাদের পরাজয় হতে বাধ্য। অপশক্তি, দুর্নীতিবাজ কর্তৃত্বপরায়ণ কোনোদিন জনগণের সামনে দাঁড়াতে পারে না।
শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উচ্চ আদালতের নির্দেশনাকে অধীনস্ত আদালত ও সরকারের অবজ্ঞা, গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলা ও পুলিশি হয়রানি, আওয়ামী সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদে সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে নোয়াখালী প্রেস ক্লাব সড়কে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
খসরু বলেন, আমেরিকার ভিসা নীতিমালা এসেছে। তারা বারবার বলার পরও সরকার তাদের কথা শুনছে না। সরকার বিরোধী দলের নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করছে, নিপীড়ন নির্যাতন চালাচ্ছে। গুম, খুন, মিথ্যা মামলা বন্ধ হচ্ছে না। সুতারাং সাত মাস আগে সেকশন দিয়েছে সুবোধ বালকের মতো ব্যবহার করার জন্য। ভালো হয়ে যাওয়ার জন্য সাত মাস আগে সেকশন দিয়েছে আমেরিকা। যাতে করে বাংলাদেশের মানুষ নির্দ্বিধায় নাগরিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারে।
বাংলাদেশের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতিতে আওয়ামী লীগের কোনো ক্ষতি নেই, বরং লাভ হয়েছে বলে দাবি করেছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, ‘মার্কিন ভিসানীতি নিয়ে বিএনপি বেকায়দায় আছে। সেজন্য তারা নতুন কৌশল নিয়েছে।’
গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মার্কিন নতুন ভিসানীতিতে বিএনপির গলা বসে গেছে, মুখ শুকিয়ে গেছে। বিএনপি নির্বাচন ভয় পায় না, ভয় পায় এ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগকে।’
বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে গোলমাল করলে, ভাঙচুর করলে, মানুষ পোড়ালে, বাস পোড়ালেÑ যারাই জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতি করবে, আগুন সন্ত্রাস করবে, তারাই আজকে ভয় পাচ্ছে।’
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘সর্বশেষ গাজীপুরে সুষ্ঠু নির্বাচন করে দেখিয়ে দিয়েছি, আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন করব।’ আসন্ন চার সিটি এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনও সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মার্কিন ভিসানীতিতে আমাদের একটা লাভ হয়েছে, এত দিন তারা নালিশ করেছে আমেরিকার দরবারে। নিষেধাজ্ঞা আসবে...। নিষেধাজ্ঞা কই? নিষেধাজ্ঞা এখন তাদের বিরুদ্ধে নতুন ভিসানীতিতে।’
নিজেদের ভয় না পাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। কাজেই দেশি-বিদেশি কাউকে আমরা ভয় পাই না। আমরা আমাদের নীতিতে অটল থেকে নির্বাচন চাইছি। আমরা প্রস্তুত, খেলা হবে।’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে ফাইনাল খেলা হবে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, খেলা হবে, ফাইনাল খেলা। আগামী নির্বাচনে নৌকা বনাম ধানের শীষ খেলা হবে। বাংলার মানুষ ধানের শীষ চায় না। তৈরি হয়ে যান, প্রস্তুত হয়ে যান।
ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জ ও খাগড়াছড়িতে শুক্রবারের সংঘর্ষের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কেরানীগঞ্জে নাটক, খাগড়াছড়িতেও নাটক। কেরানীগঞ্জে বিএনপির নাটক ধরা খেয়েছে। আওয়ামী লীগকে আক্রমণকারী সাজাতে এই নাটক বানাচ্ছে। আমেরিকা যে ভিসানীতি প্রকাশ করেছে তাতে নির্বাচনে বাধা দিলে খবর আছে। সেজন্য বিএনপি নতুন কৌশল নিয়েছে।’
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি প্রমুখ বক্তব্য দেন।
আমি বর্তমানে ‘শিল্পী’, ভবিষ্যতের ‘স্রষ্টা’ নই। ১৯৬৯ সালে ইত্তেফাকের ঈদসংখ্যায় একটি লেখায় আমাদের শিল্প আন্দোলনের গুরু ও জীবনসংগ্রামের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ওভাবেই আপন চরিত্রের ব্যাখ্যা করেছেন। বর্তমানের এই রূপকার বর্তমানকে দেখেছেন ‘প্রত্যক্ষতা’ ও সমাজে ব্যক্তিবিশেষের ওপর এর ‘প্রতিক্রিয়ায়’ বিবেকববাদী বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে। প্রত্যক্ষতা জয়নুলের তুলিতে স্থান-কালের বিশদ বর্ণনায় নয় বরং সুনির্দিষ্ট উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। মোটা, কর্কশ তুলির টানে আঁকা তার তেতাল্লিশের মন্বন্তরের চিত্রগুলো এ কারণেই প্রতীকধর্মী বর্ণনার বাহুল্যবর্জিত। তিনি বর্তমানের সাক্ষী হিসেবে হাজির করেছেন তার চিত্র-সিরিজ, যা ভবিষ্যতের মানুষকেও মানুষ ও তার সামাজিকতা নিয়ে ভাবাবে, এই সূত্রে শিল্পীর বর্তমানতা কালের গণ্ডি পার হয় অনায়াসে। অর্থাৎ শিল্পাচার্য জয়নুল আপন বয়ানে শুধু বর্তমানের শিল্পী হলেও তিনি বিবেকবাদিতার সূত্রে ভবিষ্যৎকালেরও শিল্পী হিসেবে রয়ে গেছেন।
পশ্চিমবঙ্গের শিল্পলেখক প্রণবরঞ্জন জয়নুলের দুর্ভিক্ষ চিত্রমালায় যে ন্যূনতম রেখা লক্ষ করেছেন তার শক্তি বিষয়ে বিশদ আলোচনার দাবি রাখে। তার আগে এই লেখকের বর্ণনা থেকে আরেকটি বিষয়ে সচেতন হওয়া যাক। প্রণবরঞ্জন লিখেছেন, ছবিগুলোতে ‘কোনো স্থান বিবরণী নেই’, নেই কোনো বিশদ প্রেক্ষাপট। এ কারণেই জয়নুলের দুর্ভিক্ষ চিত্রগুলো স্থান-কালবিষয়ক বর্ণনা না হয়ে, হয়েছে প্রতীক। জয়নুলের বাস্তববাদী মন ও কলাকৌশল লক্ষ করে বলা চলে, এই প্রতীক বিবেকবানের যেমন, তেমন ইতিহাস ও শ্রেণিসচেতন এক শিল্পীর সৃষ্টি।
জয়নুলের ছবি সামাজিক-রাজনৈতিক বিচারে তাৎপর্যপূর্ণ। এই শিল্পী এমন এক ঐতিহাসিক সময়ে জন্ম নিয়েছেন যখন ঔপনিবেশিক শাসনের সূর্যটি অস্তাচলে। তেতাল্লিশের দুর্ভিক্ষ যেমন ব্রিটিশ-ভারত সরকারের সৃষ্ট বিপর্যয়। যদিও মানববিপর্যয় জয়নুলের একটি মূল মনোযোগের স্থল, তথাপি জয়নুলকে সংগ্রামের শিল্পী হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। দুর্ভিক্ষ কিংবা দুর্যোগ এঁকে তিনি মানুষের মধ্যে বঞ্চিতের প্রতি যে দরদ প্রদর্শন করেছেন তা শুধু দরদ নয়। এতে ইতিহাস চেতনাও স্পষ্ট হয়। শিল্পী নিজে মন্তব্য করেছেন, ‘বীভৎসতা’ ফুটিয়ে তোলা তার ‘প্রবৃত্তিকে প্ররোচিত’ করে নাই। এসব ছবির উদ্দেশ্য বিষয়ে জয়নুলের কোনো কুয়াশা ছিল না। শিল্পী লিখেছেন, ‘এ যেন অনেকটা সেই ক্রিটিসিজম বা সমাজের প্রতি, মানবতার প্রতি প্রযোজ্য’। অর্থাৎ সংগ্রামের তৎপরতায় ব্যত্যয় ঘটায় এমন বিষয় ধরে তিনি এক ধরনের সমালোচনাধর্মী চিত্র রচনা করতে চেয়েছেন। দুর্ভিক্ষ চিত্রশালায় যদিও এমন কোনো চিত্রায়ণ শিল্পী ঘটাননি, যার সূত্রে ‘দুর্ভিক্ষ যারা ঘটান’ আর ‘যারা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে’ এ দুইয়ের সম্পর্ক বিষয়ে দর্শক অবগত হবেন। তবু, অভ্যাসের বাইরের এক জগৎকে যখন দর্শক প্রথম প্রত্যক্ষ করল, তার মাজেজা এমন দাঁড়াল যে মানবদেহ, শীর্ণকায় ও মৃত্যুমুখী হওয়া সত্ত্বেও, এক প্রকার বিশ্লেষণী মন জন্মাতে সাহায্য করল। পিপলস ওয়ার নামক পত্রিকার পাতায় যখন এগুলো ছাপা হয়ে দর্শকের সামনে হাজির হলো, তখন তা সমাজ মানসে নতুন ভাবনার সূত্র তৈরি করল বটে।
জয়নুলের হাতে কলকাতার রাস্তার বাস্তবতা ঔপনিবেশিক চালচিত্র হিসেবে রচিত হলো। দুর্ভিক্ষপীড়িতের উপস্থাপনা হয়ে উঠল ঔপনিবেশায়িত জনগোষ্ঠীর দুরবস্থার স্মারক। এ অঞ্চলের শক্তির পাশাপাশি ঐতিহাসিক বাস্তবতাকে তুলে ধরার মধ্য দিয়ে অবিভক্ত ভারতে একটি নতুন পথের নিশানা দিল জয়নুল আবদিন পথটির নাম বাস্তববাদ।
বাস্তববাদ যদি আধুনিক ইউরোপের অবদান হয়, তবে জয়নুল তা আপন মহিমায় এবং নতুনতর মাত্রায় উন্নীত করতে প্রয়াস পান। স্মরণ করা জরুরি যে জয়নুল যখন কলকাতায় শিল্পশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র হিসেবে পাঠ শুরু করবেন, তখন শিক্ষক মুকুল দে তাকে সে সময়ের জনপ্রিয় হয়ে ওঠা প্রাচ্যরীতি শিক্ষা নিতে শুরু করেন। জয়নুল ইউরোপীয় ন্যাচারালিজম বা একাডেমির বাস্তববাদ অনুসরণ করার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। হয়তো কম বয়স থেকেই এই শিল্পী তার ভবিষ্যৎ জীবনের চিত্রকর্ম কেমন চেহারা নেবে সে বিষয়ে আঁচ করতে পেরেছিলেন।
জয়নুলের পরবর্তীকালের চিত্রে যে তুলির আঁচড় তার চিত্রতল শাসন করেছে তার জন্ম দুর্ভিক্ষ চিত্রশালায়। তার ‘বিদ্রোহী গরু’, ‘সংগ্রাম’, ‘সাঁওতাল দম্পতি’ কিংবা ১৯৭০-এ ঘটে যাওয়া ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাসের ওপর আঁকা ‘মনপুরা’ এসব মাস্টারপিসসুলভ কাজে যে খররেখা, যে দৃঢ়তা, তা মন্বন্তরের ছবিগুলোর সূত্রে জন্ম নিয়েছে দাবি করা চলে।
জয়নুলের রেখার জন্ম দুটি সূত্রের সংযোগে সম্ভব হয়েছে। শিক্ষক জীবনের প্রথমপর্যায়ে বাড়তি রোজগার করতে শিল্পী বইয়ের প্রচ্ছদ থেকে শুরু করে পত্রপত্রিকা ও সাময়িকীর জন্য ইলাস্ট্রেশন আঁকতেন। ব্লক তৈরি করে এই ছবি ছাপা হতো। ফলে ব্লক সহজে করা যায় এমন সাদা-কালোর কন্ট্রাস্ট রক্ষা করে ছবি তৈরি করতে হতো। ১৯৩৭-এর পর থেকে যদি বঙ্গদেশে ফ্যাসিবাদবিরোধী তৎপরতা ও মার্ক্সবাদী রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সূচনা হয়, তাদের আমদানি করা চীনা পোস্টারেও একই ধরনের সাদা-কালোর কন্ট্রাস্টে করা অঙ্কনের আধিপত্য ছিল। চল্লিশ দশকের শুরু থেকে জয়নুলের কাজে এমন আলোছায়াহীন ছবির খোঁজ মেলে। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে এর কিছু নমুনা সংগৃহীত আছে।
আরেকটি বিশেষ ঘটনা এর পাশাপাশি উল্লেখের দাবি রাখে চৈনিক শিল্পী জু বেহং-এর কাজ দেখার অভিজ্ঞতা। যদিও চীনা এই শিল্পীর পশ্চিমবঙ্গে সফর (১৯৩৯-৪০) ও শান্তিনিকেতন ও কলকাতায় পরপর প্রদর্শনী করার খবর আমরা জানি, কিন্তু জয়নুল এই প্রদর্শনীতে তার সাদাকালো রেখায় আঁকা চিত্রসমূহ দেখেছেন এমন কোনো দলিলের হদিস পাওয়া যায় না। তবে আন্দাজ করা যায় জয়নুল এই চৈনিক শিল্পীর তুলির আঁচড়ে আঁকা ঘোড়ার অবয়বের সার নির্মাণের দক্ষতা প্রত্যক্ষ করেছেন এবং এর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছেন।
জু বেহং-এর রেখা যদি হয় নান্দনিক, জয়নুলের রেখা বাস্তবানুসারী। কিন্তু তা দৃশ্যতানির্ভর না হয়ে কাঠামোনির্ভর। যে হ্রাসকরণের সূত্রে তিনি খর বা কর্কশ কাঠামো গড়েন, ওতে বাড়তি কোনো লালিত্য দরকার পরে না। গদ্যের ভাব প্রকাশে এমন প্রক্রিয়াকে ভারতীয় ইতিহাসবিদ সংযুক্তা সন্দর্শন ‘মিনিমালিস্ট স্টার্কনেস’ হিসেবে চিনেছেন। তারও অনেক বছর আগে জয়নুলের সহযোদ্ধা চিত্তপ্রসাদ, যার কাছে জয়নুল তার দুর্ভিক্ষের ছবিগুলো ছাপানোর জন্য পাঠিয়েছিলেন, এমন রেখার পেছনের সত্তাটির স্বীকৃতিস্বরূপ চিনতে চেষ্টা করেছিলেন এর পেছনের ‘বজ্রবলিষ্ঠ তুলি’। শিল্পী ও রাজনৈতিক কর্মী চিত্তপ্রসাদ জয়নুলের কাছে লেখা পত্রে আরও উল্লেখ করেন, জয়নুল ‘মানুষের দুর্দশার ছবি দিয়ে জাতির ঘুম নিদ্রাকে কশাঘাত চালান’। তিনি আরও আশা করেন, ‘দুঃখবাদের হাত থেকে মানুষের দৃষ্টি ছিনিয়ে নিয়ে’ শিল্পী জয়নুল যেন জীবনের দিকে তা ফিরিয়ে দেন।
জয়নুল জীবনে ছিলেন বলেই জীবনপ্রবাহের ধারা ব্যাহত হয় এমন দুর্ঘটনার চিত্র এঁকেছেন। জয়নুলের জীবনকে দুই প্রস্থ মাত্রায় ধরা যায়। তিনি একদিকে শিল্পী, অন্যদিকে শিল্প সংগঠক ও শিল্প শিক্ষালয়ের প্রতিষ্ঠাতা। শিক্ষক হিসেবেও তিনি রোমান্টিকতা আক্রান্ত ছিলেন না। আধুনিকতা থেকে যতটুকু নেওয়ার তিনি তা নিয়ে ঢাকার চারুকলা প্রতিষ্ঠান গড়েছেন তার সঙ্গে কলকাতা থেকে এপারে চলে আসা আরও শিল্পীদের সহযোগিতায়। একই প্রতিষ্ঠানে তিনি প্রাচ্যকলা বিভাগ খুলেছেন, এমনকি পঞ্চাশের দশকের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের যাতে দেশজ ঐতিহ্য বিষয়ে চেতনা জাগ্রত থাকে, সেজন্য তিনি গ্রাম্যমেলার সব উপাদান আধুনিক শিক্ষায়তনের চত্বরে হাজির করেছেন। তার নিজের কাঁথা সংগ্রহ দেখে বোঝা যাবে এ দেশে কাঁথার প্রকৃত রূপটি কেমন ছিল, শিল্প-সৌকর্যের অর্জনটি কোন পর্যায়ের ছিল। জয়নুলের প্রয়াণ দিবস সামনে রেখে আহমদ শরীফ থেকে ধার্য করা যাক, ‘আমাদের স্বচ্ছ হওয়া দরকার আত্মপরিচয় নিয়ে দাঁড়ানো দরকার’। স্বচ্ছ মানে হলো আপনার পায়ে দাঁড়ানো, আর জয়নুল এই কাজটা শিল্পের ও শিল্পশিক্ষার পরিসরদ্বয়ের মেলবন্ধন ঘটিয়ে করতে সদাসচেষ্ট ছিলেন। এ কারণে তিনি জাতীয়তাবাদী না হয়েও জাতির হিত সাধনে কর্ম করে গেছেন। জাতীয় চরিত্রের মরীচিকার পেছনে না ছুটে স্থানিকতাকে মূল্য দিয়েছেন তার আশপাশের বাস্তবতা থেকে শিক্ষা নিয়ে নির্ধারণ করেছেন কি আচরণীয় বা পালনীয় ও কি লালনীয়।
লেখক : চিত্রশিল্পী, শিল্পসমালোচক ও কিউরেটর
বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ও জরাবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানে (বাইগাম) নারীকর্মীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির সহকারী পরিচালক আশরাফুল আলম মাসুমের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ওই প্রতিষ্ঠানে যোগদানের পর বেশিরভাগ নারীকে তার কুনজরে পড়তে হয়।
ভুক্তভোগীরা জানান, মাসুমের যৌন হয়রানির বিষয়টি ওই প্রতিষ্ঠানের সবাই জানেন। বিভিন্ন সময়ে যৌন হয়রানির শিকার নারীরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে মৌখিকভাবে অভিযোগ জানিয়েছে, কিন্তু রহস্যজনক কারণে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সামাজিক সম্মানহানি, চাকরি হারানোর ভয় ও দাপ্তরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার ভয়ে এতদিন কেউ তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেননি। এবার ভয় এড়িয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত এক নারী।
দেশ রূপান্তরের সঙ্গে আলাপকালে ওই নারী বলেন, ‘মাসুমের কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সব যোগ্যতা থাকার পরও গত ১২ বছর ধরে নিয়মিত বেতনের বাইরে কোনো সুযোগ-সুবিধা পাইনি।’
তিনি গত ১২ এপ্রিল বাইগামের প্রশাসক ড. মো. মোকতার হোসেনের কাছে মাসুমের যৌন হয়রানির বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তার অভিযোগের পর উপ-পরিচালক দেবব্রত দাস ও সহকারী পরিচালক খন্দকার নুরুন্নাহারের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ওই নারী জানান, তিনি অফিস সহায়ক হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন, প্রশাসন বিভাগে। মাসুম তার সিনিয়র হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কিছুদিন পর থেকে মাসুম তাকে উত্ত্যক্ত করতে শুরু করেন। বিষয়টি তখন মৌখিকভাবে প্রশাসনকে জানালে তাকে প্রশাসন বিভাগ থেকে সরিয়ে হাসপাতাল বিভাগে ডিউটি দেওয়া হয়। বদলির কিছুদিন পর হাসপাতালের ডিরেক্টরের পিএ নবীউল ইসলাম আকাশের মাধ্যমে মাসুম প্রস্তাব পাঠান, তার সঙ্গে সম্পর্ক গড়লে প্রবীণনিবাসে অনুদান পাওয়া ৬টি কম্পিউটারের একটি তার বাসায় পাঠানো হবে। বিষয়টি তৎকালীন মহাসচিব ডা. এ এস এম আতিকুর রহমানের কাছে জানালে তিনি মাসুমকে মৌখিকভাবে সতর্ক করে দেন।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ওই ঘটনার পর মাসুম কিছুদিন নীরব থাকেন। তারপর মাসুম আবার আকাশকে দিয়ে প্রস্তাব পাঠান, তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করলে যত টাকা লাগে দেওয়া হবে। তিনি তাতে রাজি হননি।
ওই নারী বলেন, ‘২০১৮ সালের পহেলা বৈশাখের রাতে অ্যাটেনডেন্ট বিভাগের এক নারী সহকর্মী বাসায় দাওয়াত দেন। সেখানে গিয়ে দেখি, মাসুম বসে আছেন। সেদিন অনেক চেষ্টায় তার হাত থেকে রেহাই পাই। পরদিন ইসি (মিনিং) কমিটির অনেক সদস্যকে বিষয়টি জানাই। প্রশাসন বিভাগের ডিডি বদরুল আহসান ‘স্যার’কেও জানাই। তিনি বিচার না করে আমাকে চুপ করে থাকতে বলেন এবং এ নিয়ে কথা বললে চাকরি নিয়ে সমস্যায় পড়তে পারি বলে জানান।’
জানতে চাইলে বদরুল আহসান জানান, ‘আমাকে কখনো তিনি লিখিত বা মৌখিকভাবে মাসুমের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেননি। তার যৌন হয়রানি সম্পর্কে আমার জানা নেই। তবে সম্প্রতি মাসুমের বিরুদ্ধে প্রশাসকের কাছে একটা অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে।’
ওই নারী বলেন, ‘মাসুম স্যার আমাকে মাঝেমধ্যেই যৌন হয়রানি করেন সেটা আমাদের অফিসের সবাই জানে। তার কথায় সায় না দেওয়ায় এই অফিসে ১২ বছর চাকরি করেও আমি প্রমোশন বা ইনক্রিমেন্ট পাইনি। অফিসে ভয়ে থাকি।’
মাসুমের যৌন হয়রানির শিকার আরও কয়েকজন নারী পরিচয় গোপন রেখে বলেন, ‘তিনি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নারীদের নানাভাবে যৌন হয়রানি করেন। উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে তিনি টার্গেটকৃত নারীকর্মীদের চাকরি সংক্রান্ত নানা সমস্যা তৈরি করে রাখেন। সেসব সমস্যা নিয়ে নারীকর্মীদের তার কাছে ধরনা দিতে বাধ্য করেন। তার কাছে গেলেই তিনি নানা অনৈতিক প্রস্তাব দেন। রাজি না হলে চাকরি স্থায়ীকরণ, ইনক্রিমেন্ট ও অন্যান্য সুবিধা আটকে দেন। বিশেষ করে তৃৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির নারীকর্মীদের বিপাকে ফেলে নিজের উদ্দেশ্য হাসিল করেন।’
সহকারী পরিচালক আশরাফুল আলম মাসুম বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ আনা হয়েছে। আশা করি, তদন্ত কমিটির মাধ্যমে আমি নির্দোষ প্রমাণিত হব।’
প্রবীণ হিতৈষী সংঘের সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কুদ্দুস খান বলেন, ‘মাসুমের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে নারীরা যৌন হয়রানির অভিযোগ করছেন। তার আচরণ ও কাজকর্ম সন্দেহজনক। মৌখিকভাবে নারীরা অভিযোগ জানালেও রহস্যজনক কারণে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।’
বাইগামের প্রশাসক ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের সামাজিক নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালক ড. মো. মোকতার হোসেন জানান, ‘মাসুমের বিরুদ্ধে একজন নারী কর্মচারী লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। আমরা তদন্ত কমিটি করেছি। দ্রুতই তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাব। প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আসন্ন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্ত্রীকে পাশে নিয়ে নির্বাচনে যুদ্ধে অবতীর্ণ খোকন সেরনিয়াবাত। নির্বাচনী প্রতীক বরাদ্দের পর নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় সাড়া ফেলেছেন মেয়র প্রার্থীর সহধর্মিণী লুনা আবদুল্লাহ। খোকন সেরনিয়াবাতকে নির্বাচনে বিজয়ী করার লক্ষ্যে নগরীর মানুষের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন তিনি। আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পরেই লুনা আবদুল্লাহ বরিশালে অবস্থান করছিলেন। সেই সময় থেকেই এই নির্বাচনী কাজে তাকে শামিল হতে দেখা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও ভোটের প্রচারণার পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলেও তার সাবলীল কৌশলী প্রচারণা নির্বাচনী মাঠে আলোড়ন তুলেছে। ভোটের লড়াইয়ে স্বামী খোকন সেরনিয়াবাতের চেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের বরং লড়াই করতে হবে লুনা আবদুল্লাহর সঙ্গে।
লুনা আবদুল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর্যন্ত রাজনৈতিক পরিবারে রয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর মনোনীত মেয়র প্রার্থীকে এবং নৌকাকে বিজয়ী করার জন্য এবার মাঠে নেমেছি। শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হয়ে ঘরে ফিরব, এই আশা নিয়ে আমি নগরবাসীর কাছে ভোট চাইছি। নগরবাসী আমাকে আস্থা দিয়েছে। তারা নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করবেন।’
এদিকে প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার দ্বিতীয় দিন গতকাল শনিবার নগরীর হাতেম আলী কলেজ সংলগ্ন মাঠে খোকন সেরনিয়াবাত তার নির্বাচনী প্রচারণায় চালিয়েছেন। এ সময় তিনি নগরীতে ২৪ ঘণ্টা পানি ও বিদ্যুৎ, জন্মনিবন্ধন করতে অতিষ্ঠ নগরবাসীর দুঃখ দুর্দশা দূর করার অঙ্গীকার করে বলেন, ‘আমাকে ভোট দিয়ে দেখেন আমি আসলেই কথা রাখি কি না, আমার কথা ও কাজ একই থাকবে ইনশা আল্লাহ’।
সিটি নির্বাচনের নৌকা প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট লস্কর নুরুল হক বলেন, ‘আমি মনে করি এই নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা আমাদের দেশে রেওয়াজ হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী টানা তিনবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকে সর্বক্ষেত্রে দৃশ্যমান উন্নয়ন করেছেন। তাই জনসাধারণের বিশ্বাস নৌকা জিতলে উন্নয়ন হবে। এই উন্নয়নের স্বার্থে নগরবাসী নৌকার সঙ্গে রয়েছেন।’ অন্যদিকে গতকাল বেলা ১১টার দিকে নগরীর বটতলা এলাকায় গণসংযোগ করেন জাতীয় পার্টির (জাপা) মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস। এ সময় নগরবাসীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও লিফলেট বিতরণকালে বিসিসি নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়া নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
দলের চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও নগর জাপার সদস্যসচিব তাপস সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখানের নির্বাচন পরিস্থিতি একপক্ষীয়। প্রথম থেকেই আমি খেয়াল করছি যে এখানে যিনি রিটার্নিং অফিসার আছে, তিনি সম্পূর্ণভাবে এক প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন। তিনি পুরোপুরি আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষ হয়ে কাজ করছে। প্রতীক বরাদ্দের আগেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী মার্কা দিয়ে পোস্টার-লিফলেট ছাপিয়েছেন, সেগুলো রিটার্নিং কর্মকর্তার চোখে লাগে না। এই বিষয়গুলো তাকে একাধিকবার জানিয়েছি। কিন্তু তিনি আমাদের কথা আমলে নেন নি।’
এ ছাড়াও ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র নায়েবে মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম নগরীর বাংলা বাজার এলাকায় গণসংযোগ করেছেন। গণসংযোগকালে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগ-পর্যন্ত শঙ্কামুক্ত নই।’
প্রসঙ্গত, আগামী ১২ জুন বরিশাল সিটি করপোরেশনের পঞ্চম পরিষদের নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এবার বরিশাল সিটিতে মোট ভোটার সংখ্যা দুই লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ জন।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থীকে বিজয়ী করতে ‘বিশেষ বর্ধিত সভা’ করেছে বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ। এ সময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির (বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন) টিম লিডার খোকন সেরনিয়াবাতের ভাই আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপিসহ কেন্দ্রীয় নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু ওই সভায় উপস্থিত হননি মেয়র প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত।
বর্ধিত সভার শুভেচ্ছা বক্তব্যে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আপনারা জানেন আগামী ১২ জুন বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। এই নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী আমার ছোট ভাই যিনি ১৫ আগস্টে গুলিবিদ্ধ খোকন সেরনিয়াবাতকে মনোনীত করেছেন। আমরা স্বাগতম জানাই।’
জামালপুরে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে চার স্কুলছাত্রকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শনিবার দুপুরে শহরের পৌর এলাকার বগাবাইদ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পৌর কৃষক লীগের সহ-সভাপতি শেখ মোহাম্মদ রুকন ও তার সহোদর শেখ মোতালেবকে আটক করেছে। জামালপুর সদর থানার ওসি কাজী শাহনেওয়াজ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানান, সকালে বগাবাঈদ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী রায়হান তার সহপাঠীদের নিয়ে পাশের এলাকার মনিরাজপুর খেজুরতলা মাঠে ফুটবল খেলতে যায়। এ সময় পৌর কৃষক লীগ নেতা শেখ রুকনের ছেলে বুলবুল তার ৫/৬ জন বন্ধুসহ তাদের ওপর হামলা চালায়। সে সময় স্থানীয়রা তাদের সরিয়ে দেয়। তবে পরে রায়হান তার বন্ধুদের নিয়ে বগাবাঈদ এলাকার আজাদ সরকারি বিদ্যালয় মাঠে ফুটবল খেলতে গেলে কৃষক লীগের নেতার ভাই শেখ মোতালেবের নেতৃত্বে রায়হান, যোবায়ের, রাহাত ও লিমনকে অটোরিকশায় তুলে মারধর শুরু করে। এক পর্যায়ে তাদের আজাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করে। এ খবর পেয়ে নির্যাতিত স্কুল শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা ঘটনাস্থলে গেলে তাদেরও মারধর করে। পরে ৯৯৯-এ ফোন দিলে জামালপুর সদর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে। সেই সঙ্গে শেখ মোহাম্মদ রুকন এবং তার সহোদর শেখ মোতালেবকে আটক করে।
জামালপুর জেলা শিশু সুরক্ষা কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, ‘গাছের সঙ্গে বেঁধে শিশুদের ওপর যে অমানবিক নির্যাতন ও বেদম প্রহার করা হয়েছে, এটা শিশু আইন এবং শিশুরক্ষা নীতিমালা এবং জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদের পরিপন্থী । এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এমন ঘটনা কেউ নেতার প্রত্যাশা করে না। আমরা এ ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
ওসি কাজী শাহনেওয়াজ বলেন, ৯৯৯-এ খরর পেয়ে বগাবাঈদ এলাকায় পুলিশ পাঠানো হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে চার কিশোরকে উদ্ধার করে। এ সময় ২ জনকে আটক করা হয়েছে। কেউ অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অপেক্ষা আর মাত্র ৩ দিনের। তারপরই শুরু হয়ে যাবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ইংল্যান্ডের চার বছরের রাজত্ব আরও চার বছর টিকিয়ে রাখার আর বাকিদের সেই মুকুট কেড়ে নেওয়ার লড়াই শুরু হবে গতবারের দুই ফাইনালিস্টের লড়াই দিয়েই।
শাহরুখ খানকে দিয়ে প্রোমো আর রণবীর সিংকে দিয়ে থিম সং, আইসিসি জানান দিয়েছে ক্রিকেটে বলিউডি আবেগের মিশেল ভালোই থাকবে। কিং খানের ‘জাওয়ান’ কাঁপাচ্ছে পর্দা, কাটতি বাড়ছে বক্স অফিসে; বিশ্বকাপে আইসিসির পকেট ভরবে তো?
প্রস্তুতি বলছে, ভরবে। উইকেটে হবে রান উৎসব, লড়াই হবে ধুন্ধুমার। তাতেই ২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপ হবে এক ব্লকবাস্টার মেগা হিট।
মাস তিনেক আগে, বিশ্বকাপের মূলপর্বের ম্যাচগুলো যে ১০ ভেন্যুতে আয়োজন করা হবে সেই ভেন্যুগুলোর কিউরেটরদের সঙ্গে বসেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান কিউরেটর। সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছেন বিশ্বকাপের একটাই মন্ত্র, রান চাই।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে, ভারত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যে ৩ ওয়ানডের সিরিজ খেলেছে সেই ম্যাচগুলো যদিও বিশ্বকাপের ভেন্যুতে হয়নি তবে সেই সব ম্যাচেও রানের বন্যা বয়েছে।
প্রথম দুটো ওয়ানডেতে বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মাদের ছাড়াই অস্ট্রেলিয়ার করা ২৭৬ রান অনায়াসে তাড়া করে ৫ উইকেটে জিতেছে ভারত। পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের ঠেঙিয়ে তুলেছেন ৩৯৯ রান। তিন নম্বর ম্যাচে আবার অস্ট্রেলিয়া করেছে ৩৫২ রান, যা তাড়া করে ভারতও গিয়েছিল ২৮৬ অবধি।
উদ্বোধনী ম্যাচ হবে গুজরাতের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে। এখানে সবশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয় গত ১ ফেব্রুয়ারি, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি। ম্যাচে শুভমান গিল করেন সেঞ্চুরি, ভারত করে ৪ উইকেটে ২৩৪ রান আর জবাবে নিউজিল্যান্ড অলআউট হয় ৬৬ রানে।
বোঝাই যাচ্ছে, উইকেটের ধরন বুঝে ব্যাট করতে পারলে ৫০ ওভারে এখানে রানবন্যা হবে। বিশ্বকাপে ভারত-অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি হবে চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে। দুই দল এখানে মুখোমুখি হয়েছে বহুবার, পোশাকের রঙ কখনো রঙিন কিংবা কখনো সাদা হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজ কমেনি। এই মাঠে অস্ট্রেলিয়া ২৬৯ রান করে ভারতকে ২১ রানে হারিয়েছে সবশেষ ম্যাচে।
আইপিএল চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সুপার কিংসের ঘরের মাঠে সবশেষ মৌসুমে ধোনির ‘ইয়েলো আর্মি’ ৮ ম্যাচ খেলে ২০০ রানের ওপরে করেছে দুইবার, একবার জিতেছে অন্যবার হেরেছে। তবে দুই ইনিংসেই ২০০’র বেশি রান হয়েছে দুটো ম্যাচেই। অর্থাৎ চাইলে চেন্নাইকেও ব্যাটিং স্বর্গে পরিণত করা সম্ভব।
বিশ্বকাপের আগে দারুণ ছন্দে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ হারার পর টানা তিন ওয়ানডে জিতে সিরিজ তো নিশ্চিত করেছেই, টানা তিন ম্যাচে ৩০০’র ওপর রান করেছে। চতুর্থ ওয়ানডেতে তো ৪০০ পার করেছে প্রোটিয়ারা। ব্যাটিং উইকেটে তারাও যে কোনো প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিতে পারে। হেনরিক ক্লাসেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাত্র ৮৩ বলে খেলেছেন ১৭৪ রানের ইনিংস। বিধ্বংসী রূপে ফিরছেন ডেভিড মিলারও।
প্রোটিয়ারা প্রথম ম্যাচ খেলবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, দিল্লির অরুন জেটলি স্টেডিয়ামে। সেখানে অবশ্য সবশেষ হয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক ম্যাচেও খেলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচে তারা অলআউট হয়েছিল মাত্র ৯৯ রানে। দিল্লির মাঠটা হয়তো খানিকটা স্পিনারদের দিকেই ঝুঁকবে, তবে অন্য মাঠগুলোতে প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের রান উৎসবে মেতে উঠতে দেখার সম্ভাবনা জোরালো। তাই অনেক সাবেক ক্রিকেটারই প্রোটিয়াদের দেখছেন শেষ চারে।
বিশ্বকাপের আগে ক্লাসেন ছাড়াও ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস খেলেছেন ১৮২ রানের ইনিংস, দারুণ ছন্দে ইংল্যান্ডের ডাভিড মালানও। তবে সেরা ছন্দে নিঃসন্দেহে শুভমান গিল। সবশেষ ৫ ইনিংসে দুটো শতরান আর একটা হাফসেঞ্চুরি। নিউজিল্যান্ডের ড্যারিল মিচেলও আছেন দারুণ ছন্দে। দুটো হাফসেঞ্চুরি আর একটা সেঞ্চুরি সবশেষ ৫ ইনিংসে। হায়দ্রাবাদে বিশ্বকাপের অফিশিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তানের ৩৪৫ রান কিউইরা তাড়া করেছে ৩৮ বল হাতে রেখে।
বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল মনে করেন, এই বারের বিশ্বকাপে রানবন্যায় বোলারদের জন্য কাজটা হবে কঠিন। দেশ রূপান্তরকে আশরাফুল বলেন, ‘আমাদের পেসাররা গত এক দেড় বছর ধরে খুবই ভালো করছে। তবে যেহেতু ভারতের মাটিতে খেলা, আমরা দেখেছি যে সাড়ে ৩০০’র বেশি রান হচ্ছে প্রতিটা ম্যাচে। কেউ যদি ভালো না করে, তাকে মনে রাখতে হবে যে টুর্নামেন্টে পরের ম্যাচে ফিরে আসতে হবে। একজনের দিন খারাপ যেতেই পারে, কোনো ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান উঠেই যেতে পারে। ৯টা ম্যাচের ভেতর ৪-৫টা ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান হতে পারে। তাই বোলারদের ফিরে আসার মানসিকতা থাকতে হবে।’
বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমুল আবেদীন ফাহিমও বলেছেন যে দেড় মাসের আসরে প্রস্তুত থাকতে হবে যে কোনো কিছুর জন্যই, ‘দেড় মাসের আসর, ৯টা ম্যাচ এই সময়ে খেলতে হবে বা তারও বেশি। অনেক উত্থান-পতন হবে। যে কোনো কিছুর জন্যই তৈরি থাকতে হবে।’
রান উৎসবের বিশ্বকাপ যে হতে যাচ্ছে, তার সব রসদই মজুদ। মাঠগুলোকে করা হয়েছে ব্যাটিং স্বর্গ, বিশ্বকাপে আসার আগে সেরা সেরা ব্যাটসম্যানরাও আছেন ছন্দে। শুধু প্রশ্ন এটাই, রান উৎসবের এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে রান করবেন কে? সাম্প্রতিক সময়ের ব্যাটিংয়ের ছবিটা যে মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়।
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া হচ্ছে না। তার পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদনের ওপর গতকাল রবিবার আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে বলেছে, সাজা স্থগিত থাকাবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই।
যদি যেতে হয়, তাহলে সাজা স্থগিতের আদেশ বাতিল করতে হবে। কিন্তু সেটা করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তবে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি।
আইন মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপি বলছে, আন্দোলনের মাধ্যমেই সুরাহার পথ বের করতে হবে। সরকারের এমন নেতিবাচক সিদ্ধান্তের পর এখন পর্যন্ত কোনো কর্মসূচি দেয়নি দলটি। তবে এই ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি এক দফার আন্দোলনের সঙ্গে যোগ হতে পারে বলে জানা গেছে।
৫৩ দিন ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া। বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও দলীয় নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা গুরুতর। বিদেশে নেওয়া ছাড়া তার উন্নত চিকিৎসা সম্ভব নয়। সম্প্রতি বিএনপির চেয়ারপারসনকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ চেয়ে তার ভাই শামীম এস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করেন। এতে মতামত দিতে আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এর ধারাবাহিকতায় আইন মন্ত্রণালয় এতে মতামত দেয়। এ বিষয়ে গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়টি উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেছেন, তার সাময়িক মুক্তির আদেশটা বাতিল করে তাকে (খালেদা জিয়া) কারাগারে নেওয়া হলে তিনি আদালতে যেতে পারেন। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া বাসায় চিকিৎসা নেবেন এবং বিদেশে যেতে পারবেন না এমন দুটো শর্ত সাপেক্ষে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে দন্ডাদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। দরখাস্তটা নিষ্পত্তি করা হয়েছিল। ইতিমধ্যে আটবার দন্ড স্থগিত করা হয়েছে।’
আনিসুল হক বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় কোনো দরখাস্ত যদি একবার নিষ্পত্তি করা হয়, সেই নিষ্পত্তিকৃত দরখাস্ত পুনর্বিবেচনা করার কোনো সুযোগ আইনে থাকে না। আমরা ৪০১ ধারার উপধারা ১, ২, ৩, ৪, ৫ ও ৬ ব্যাখ্যা করে মতামত পাঠিয়েছি। আমাদের মতামত হলো, ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে যে দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হয়েছে, সেটা অতীত এবং মীমাংসিত। এটা আর খোলার কোনো উপায় নেই।’
এক প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তাকে (খালেদা জিয়া) সাজা স্থগিত রেখে যে শর্তযুক্ত মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, সেটা বাতিল করে তারপর পুনরায় বিবেচনা করার সুযোগ থাকলে সেটা করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এই উপমহাদেশে ৪০১ ধারার ক্ষমতা যখন প্রয়োগ করে, তখন এটি আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যায় না বলে সিদ্ধান্তের নজির আছে। সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এখন যে আদেশটা আছে, সেটা যদি বাতিল করা হয়, বাতিল করে তাকে (খালেদা জিয়া) যদি আবার কারাগারে নেওয়া হয়, তাহলে তিনি আদালতে যেতে পারেন। কিন্তু এ অবস্থায় আদালতে যেতে পারবেন না।’ খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের বিষয়টি বাতিল করা হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা অমানবিক হবে, বাতিল করব না।’
আইনমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এক বার্তায় বলেন, ‘আজকের এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে, দেশে আইনের শাসন নেই। প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে এক ভয়ংকর তামাশা করা হচ্ছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, নির্বাহী বিভাগ চাইলেই কাউকে মুক্তি দিতে পারে।’
খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি না দেওয়ায় বিএনপি কী এখন ভাবছে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আন্দোলনের মাধ্যমেই সুরাহার পথ বের করতে হবে।’
আর গতকাল সংবাদ সম্মেলনে দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘এই সিদ্ধান্ত পূর্বপরিকল্পিত ও গভীর নীলনকশার অংশ। মানবতাবিরোধী ও সরকারের বর্বর ইচ্ছা পূরণের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। এই অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জনগণ হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না।’
দলটির নেতাদের অভিযোগ, বিএনপির চেয়ারপারসনের বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদন আইনগতভাবে বিবেচনা না করে, রাজনৈতিকভাবে বিবেচনা করা হয়েছে। ফলে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি এখন সরকারের বিদায়ের ওপর নির্ভর করছে। আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বিদায় করতে না পারলে বিএনপিপ্রধানের মুক্তি এবং বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দরজা খুলবে না। তাই এখন আন্দোলনের মাধ্যমেই এই ইস্যুর সুরাহা করতে চায় দলটি।
কায়সার কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়া এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন, সেখানে বলা হয়েছে, তাকে “দেশে চিকিৎসা নিতে হবে”, তার বদলে “দেশে বা বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারবেন” বলাই যথেষ্ট। কিন্তু দেশে চিকিৎসা গ্রহণের শর্তারোপ করা হলে তা যে চিকিৎসার বিবেচনায় না করে রাজনীতির বিবেচনায় করা হবে, সেটা বোঝার মতো বুদ্ধি সাধারণ মানুষের আছে।’
অসুস্থতার কারণে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের মার্চে করোনার সময় টানা দুই বছর কারাভোগের পর সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় ফিরেছিলেন খালেদা জিয়া। পরে এ পর্যন্ত তার মুক্তির মেয়াদ আটবার বাড়িয়েছে সরকার।
এরই মধ্যে অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় তাকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ দিতে পরিবারের পক্ষে ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার ২৫ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। এ বিষয়ে আইনি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে আবেদনটি পাঠায়।
বিএনপিপ্রধানকে নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন ছিল ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি সরকার ইতিবাচকভাবে দেখতে পারে’। কিন্তু সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ‘বিদেশে যাওয়ার আবেদন করতে হলে খালেদা জিয়াকে কারাগারে ফেরত গিয়ে করতে হবে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের পর সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় এবারও ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত আসবে না। গত শনিবার এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এ শঙ্কাই প্রকাশ করেছিলেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনা আছে, যেকোনো মূল্যে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচন করার ব্যাপারে সরকার মরিয়া। সে কারণে হয়তো খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়টি ঝুঁলিয়ে রাখতে চাইছে এমনটাই মনে করছে সরকারবিরোধীরা। বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা দিলেই সরকারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলেও বিরোধী নেতাদের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে। তবে শর্ত দিয়ে দেশের বাইরে চিকিৎসার বিষয়ে দল যাতে সম্মত না হয়, সে কথাই নেতাদের বলে রেখেছেন খালেদা জিয়া।
বিএনপির হাইকমান্ড মনে করছেন, এ অবস্থায় চলমান এক দফার আন্দোলনে খালেদা জিয়ার মুক্তি বিষয়টি থাকলেও সেটাকে আরও জোরালোভাবে সম্পৃক্ত করতে হবে; যাতে সরকারবিরোধী আন্দোলন বড় ধরনের মোড় নেয়।
জানা গেছে, এই ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে দলটি। আজ সোমবার রাতে দলটির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক রয়েছে। সূত্র বলছে, জোটগত ছাড়াও দলীয়ভাবেও কর্মসূচি আসতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খালেদা জিয়ার এক চিকিৎসক জানান, হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় তার কেবিনে এক্স-রে মেশিন নেওয়া হয়েছিল গতকাল ভোরে। শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণে না এলে সিসিইউতে নেওয়ার পরামর্শ ছিল। দুপুরে তার ইসিজি ও ইকো ডায়াগ্রাম করানো হয়েছে। ফুসফুসের পানি অপসারণের জন্য তার ডান পাশে যে ক্যাথেটার লাগানো ছিল, সেটা আপাতত খুলে ফেলা হয়েছে।
লিভার জটিলতা ছাড়াও ৭৮ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ফুসফুস, কিডনি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। গত ৯ আগস্ট ফিরোজায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে দলীয় মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) সেটআপে কেবিনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছে।
জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ‘ওনার লিভার প্রতিস্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। সে জন্য তাকে দ্রুত বিদেশে উন্নত মাল্টিডিসিপ্লিনারি সেন্টারে পাঠানো দরকার।’
সুরের মূর্চ্ছনায় মোহাচ্ছন্ন শ্রোতারা হারিয়ে যাবেন। তারপর নৃত্যের তালে মেতে উঠবে আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি ক্রিকেট স্টেডিয়াম। আগামী বুধবার (৪ অক্টোবর) বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। আয়োজনকে বর্ণাঢ্য করে তুলতে এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
এবারের বিশ্বকাপ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কী থাকছে, এ নিয়ে আয়োজক ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) এখনো চুপ। দর্শকদের চমকে দিতে এমন গোপনীয়তার চেষ্টা অবশ্য প্রায় সব আয়োজকেরাই করে থাকেন।
তবে ভারতীয় গণমাধ্যম পিটিসি পাঞ্জাবের সূত্রে এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইনসাইডস্পোর্ট।
খবরে বলা হয়, বিশ্বকাপের উদ্বোধনী বিভিন্ন পরিবেশনায় থাকবেন বেশ কয়েকজন বলিউড অভিনেতা–অভিনেত্রী ও গায়ক–গায়িকা। এর মধ্যে গান পরিবেশনে থাকবেন কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী আশা ভোসলে, গায়ক ও সংগীত পরিচালক শঙ্কর মহাদেভান, কণ্ঠশিল্পী শ্রেয়া ঘোষাল ও অরিজিত সিং।
নাচের পরিবেশনায় দেখা যাবে রণবীর সিং ও তামান্না ভাটিয়াকে। রণবীর বিশ্বকাপের অফিশিয়াল থিম সংয়েও অংশ নিয়েছিলেন।
নাচ–গানের পাশাপাশি বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তুলে ধরা হবে ভারতের ইতিহাস–ঐতিহ্য ও ক্রিকেট উন্মাদনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে খেলোয়াড়দের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ১০ দলের অধিনায়ক। এ ছাড়া আয়োজক বিসিসিআই ও আইসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তো থাকবেনই।
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আবাসন এখনো অধরা। দেশের দরিদ্র মানুষের একাংশ ভাসমান তারা ফুটপাত, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে মানবেতর জীবন কাটায়। আর বড় অংশটি বস্তিতে ও নিম্নমানের পরিবেশে দিনাতিপাত করছে। সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে স্বল্প আয়ের মানুষ বাসযোগ্য আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
বছরের পর বছর আবাসন নিয়ে নৈরাজ্য চললেও সরকারের কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বিশ্ব বসতি দিবস পালন করছে বাংলাদেশ। এ দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি’। দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা বাণী দিয়েছেন। দেশজুড়ে দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। র্যালি, সেমিনার, ব্যানার ও ফেস্টুনের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। টেলিভিশনে স্ক্রলও প্রচার করা হচ্ছে।
‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’ অনুযায়ী, দেশে ভাসমান মানুষের সংখ্যা ২২ হাজার ১১৯। এ তালিকায় রয়েছে যারা রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, মাজার, ফুটপাত, সিঁড়ি, ওভারব্রিজের নিচে, লঞ্চ টার্মিনাল, ফেরিঘাট, মার্কেটের বারান্দায় দিন কাটান। আর বস্তিতে বসবাস করছে ১৮ লাখ ৪৮৬ জন। তারা মূলত শহর ও উপশহর এলাকায় টিনের ঘর, সেমিপাকা ঘর বা ঘিঞ্জি পাকা ঘরে বাস করে। তবে বস্তিবাসী কারা সে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০১৬ সালে সরকার আবাসন নীতিমালা করেছে। আবাসন উন্নয়ন তহবিল গঠনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। আবাসন সংকট নিরসন করতে হলে সরকারকে আবাসন তহবিল করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বস্তিবাসী, নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত কারা তার সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে হবে। না হলে বোঝা যাবে না কত মানুষ বস্তিতে থাকে।’
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট কামাল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে আবাসন সংকট কাটছে না। স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে আবাসন।’
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করে ৯ লাখ গৃহহীন মানুষকে চিহ্নিত করে। ইতিমধ্যে আট লাখ মানুষের গৃহের ব্যবস্থা করেছে; প্রায় ৪০ লাখ মানুষের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। বাকিদের জন্যও শেখ হাসিনা ব্যবস্থা করবেন। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্যও আবাসনের ব্যবস্থার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা তার সৈনিক হিসেবে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
জানা যায়, বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার সবার জন্য আবাসন। অঙ্গীকার পূরণে সরকার নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সারা দেশে ৩০টি আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, নোয়াখালী, যশোর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, পাবনা, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, মাগুরা, শরীয়তপুর, নড়াইল, খুলনা, মৌলভীবাজার, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এসব প্রকল্পে ৬ হাজার ৪৩২টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হয়েছে। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ২৭টি ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ১৪টি প্রকল্প রয়েছে। এসব প্রকল্পে ৫ হাজার ৯৩০টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হবে। শেরপুর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, হবিগঞ্জ, সিলেট, ঝিনাইদহ, ঝালকাঠি, মাদারীপুর, পিরোজপুর, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীতে ১৩টি প্রকল্পের মাধ্যমে ১ হাজার ৯৩৫টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রাজউক সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় রাজউক পূর্বাচল, ঝিলমিল, উত্তরা প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় আবাসন প্রকল্পে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের ফ্ল্যাটগুলো উচ্চমূল্যের কারণে নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। পূর্বাচল, ঝিলমিল ও উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্প গ্রহণ করছে সরকার। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনেও বিভিন্ন সংস্থা আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন শহরে বসবাসরত সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সম্পদশালী ব্যক্তিরা। যাদের অনেক ফ্ল্যাট আছে তারা আরও ফ্ল্যাট কিনছেন। কিন্তু বাস্তুহারা, দরিদ্র, নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত সরকারি এসব আবাসনের সুবিধা পাচ্ছেন না। অল্প দামে জমি অধিগ্রহণ করে সরকার আবাসন প্রকল্প তৈরি করে যাদের নামে বরাদ্দ দিচ্ছে তারা রাতারাতি কোটিপতি বনে যাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে জমির মালিক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত।
জাতিসংঘ ১৯৮৫ সালে বিশ্ব বসতি দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৮৬ সাল থেকে সারা বিশে^ অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার এ দিবসটি পালিত হয়।
শিশুরাই আগামী দিনের কান্ডারি। তাদের হাতেই অর্পিত হবে আগামী দিনের নেতৃত্ব। দেশের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে শিশুদের সুন্দর, স্বাভাবিক ও ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশে বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করতে হবে। শিশুদের সুস্থ, সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠার গুরুত্ব অনুভব করে জাতিসংঘ শিশু অধিকার সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। এর ফলে শিশুদের জন্য ‘হ্যাঁ’ বলুন, সবার আগে শিশু ইত্যাদি স্লোগান যেমন সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি শিশু অধিকার নিয়ে কাজও হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে বাংলাদেশের সফলতা দৃশ্যমান। বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স ছেলের ক্ষেত্রে ২১ এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৮ বছর নির্ধারণ করেই সরকার দায়িত্ব শেষ করেনি, বরং তা পালিত হচ্ছে কি না তাও নজরদারিতে রেখেছে। ফলে, বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের ঘটনা এখন নেই বললেই চলে। বরং, পত্রপত্রিকায় বাল্যবিয়ে প্রতিহত করতে পাত্র/পাত্রীর সহপাঠী, শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তার (ইউএনও, সমাজসেবা অফিসার) ভূমিকার কথা প্রকাশিত হয়। কিন্তু এর উল্টোচিত্রও রয়েছে।
এমন প্রেক্ষাপটে আজ বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব শিশু দিবস। প্রতিবছর ২০ নভেম্বর জাতিসংঘ বিশ্ব শিশু দিবস পালন করে। তবে অন্যদিনেও এই দিবসটি পালনের নজির রয়েছে। যেমন ভারতে প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর জন্মদিন ১৪ নভেম্বর শিশু দিবস হিসেবে পালিত হয়। আমাদের দেশেও ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালিত হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ সরকার অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার বিশ্ব শিশু দিবস এবং এরপরের এক সপ্তাহ শিশু অধিকার সপ্তাহ হিসেবে পালন করে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এই কর্মসূচিগুলোর সুফল ইতিমধ্যেই পরিলক্ষিত হয়েছে।
নাগরিকের পাঁচটি মৌলিক অধিকার খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা; যা শিশুদের জন্যও প্রযোজ্য তার শতভাগ বাস্তবায়ন দেখা যায় না। রাতে ফুটপাতে শুয়ে থাকা পথশিশু, দিনের বেলা পার্ক-রাস্তার ফুল বিক্রেতা শিশু, লেগুনার হেলপার, খাবার হোটেল, চায়ের দোকানে ফুট-ফরমাশ খেটে দুবেলা আহার জোগানো শিশুরা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত নয়। শুধু যে নিম্নবিত্ত বা দরিদ্র শিশুরাই আমাদের অবিমৃশ্যকারিতার শিকার তা নয়। ঝুঁকিতে পড়েছে মধ্যবিত্ত পরিবারের শিশুদের বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়াও।
শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে লাগাতার পরীক্ষা-নিরীক্ষা, কোচিং ক্লাসের চাপ, জিপিএ ৫ পাওয়ার জন্য অভিভাবকের চাপ সব মিলিয়ে শিশু-কিশোররা অতিক্রম করছে এক ক্রান্তিকাল। পরীক্ষায় ভালো ফলের জন্য বাবা-মা ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশ তাদের ওপর যে মানসিক চাপ সৃষ্টি করে তার ফলাফল দেখা যায় প্রতি বছর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর। সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয় কাক্সিক্ষত ফল না পাওয়ায় শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা।
পূর্ণবয়স্ক একজন মানুষের মৌলিক অধিকার পাঁচটি হলেও একজন শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য দাবি করে আরও বেশি। তার স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন খেলাধুলার সুব্যবস্থা। রাজধানীসহ সারা দেশে আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে খেলার মাঠ। আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুসারে যেকোনো এলাকায় প্রতি পাঁচ হাজার মানুষের জন্য একটি করে খেলার মাঠ প্রয়োজন। যে মাঠের আকার হতে হবে এক একরের। ঢাকার শহরের জনসংখ্যা যদি আড়াই কোটি ধরা হয় তাহলে এই বিশাল জনসংখ্যার জন্য মাঠের প্রয়োজন হবে পাঁচ হাজার। কিন্তু ২০০০ সালের এক জরিপ অনুসারে এই মাঠের সংখ্যা মাত্র ১৫০টি। গত ২৩ বছরে এই সংখ্যা আরও হ্রাস পেয়েছে বলাই বাহুল্য।
মাঠহীন এই শহরে শিশুদের জন্য তৈরি হয়েছে আরেকটি ফাঁদ ফাস্ট ফুড দোকানের প্লে-জোন। প্লে-জোন নির্মাণ করে শিশুদের মনোযোগ আকর্ষণ করছেন ফাস্ট ফুড ব্যবসায়ীরা। ফাস্ট ফুড শিশু স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। ফাস্ট ফুড শিশুদের বার্গার, স্যান্ডউইচ, পেস্ট্রি, কেক, সফট ড্রিংকসের কুফল সম্পর্কে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা নানাভাবে আমাদের সতর্ক করেছেন। ফাস্ট ফুড ও সফট ড্রিংকস গ্রহণের ফলে অতি স্থূলতা, শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা, অ্যালার্জির সমস্যা, ক্যানসার, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি নানা ধরনের শারীরিক অসুস্থতা সৃষ্টি হতে পারে।
স্বাভাবিকভাবেই খেলার মাঠহীন এই খাবারের দোকানগুলো শিশুদের ভীষণ প্রিয়। আর এই সুযোগটিই নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। প্লে-জোন সংযুক্ত এই বিশেষ দোকানের খাবারের মূল্য অন্য সাধারণ দোকানের থেকে অনেক বেশি। কিন্তু সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে এই বাড়তি অর্থ পরিশোধ করতে হয় অভিভাবকদের। খেলার মাঠের সংকট সৃষ্টি করেছে ইনডোর প্লে-শপ। এই ইনডোর প্লে-শপে খেলার জন্য ঘণ্টা অনুসারে অর্থব্যয় করতে হয় অভিভাবকদের। দোকান অনুসারে এই অর্থ ঘণ্টাপ্রতি ৩৫০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
চিকিৎসা, শিক্ষা থেকে শুরু করে এখন খেলাধুলার মতো মৌলিক অধিকারও যখন অর্থের বিনিময়ে কিনতে হয়, তখন বলা যায় না আমাদের শিশুরা নিরাপদ আছে, বলতে হয় তাদের শৈশব নানা চাপে সংকুচিত হয়ে আছে। একটি নিরাপদ, বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ার অঙ্গীকার শুধু নথিতে পড়ে রবে না, বাস্তবায়িতও হবে বিশ্ব শিশু দিবসে এটিই আমাদের প্রত্যাশা।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।