
১৯৩৩ সালের কিছু আগের কথা। তখনো মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেননি জয়নুল আবেদিন। স্কুলে ক্লাস চলছে, হেডমাস্টার পড়াচ্ছেন। ছাত্রদের মনোযোগ স্যারের দিকে, শুধু একজন ছাত্র তাকিয়ে আছে শ্রেণিকক্ষের জানালা দিয়ে বাইরে। স্যার বেশ কিছুক্ষণ খেয়াল করে দেখলেন ছেলেটি বাইরে তাকাচ্ছে এবং তা দেখে কলম দিয়ে বইতে কিছু আঁকছে। তিনি বইটি চেয়ে নিলেন।
স্যার বইতে যা দেখলেন তাতে তিনি বিস্ময়ে হতবাক। স্যার বই ফেরত দিলেন না, ছাত্রটি ভীষণ ভয় পেয়ে গেল। ভয়ে সে স্কুলে আসাই বন্ধ করে দিল। বেশ কিছুদিন তাকে ক্লাসে অনুপস্থিত দেখে স্যার নিজেই ছাত্রের বাড়িতে খুঁজতে চলে গেলেন। সেখানে গিয়ে স্যার জানতে পারেন, ছাত্রটি প্রতিদিনই বাড়ি থেকে স্কুলের সময় বের হয় আবার স্কুল ছুটির সময় ফিরে আসে। স্যারের তখন বুঝতে আর কিছু বাকি রইল না। সেদিনের ক্লাসের ঘটনা ছাত্রের বাবা-মায়ের কাছে খুলে বলে বইটি ফেরত দিলেন। ভবিষ্যদ্বাণী করলেন, ‘আপনাদের ছেলে এক দিন অনেক বড় শিল্পী হবে।’ এমন ছোটবেলা আর কারই বা হতে পারে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ছাড়া?
জন্মেছিলেন জয়নুল ময়মনসিংহের কিশোরগঞ্জ মহুকুমার কেন্দুয়াতে ১৯১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর। বাবা তমিজউদ্দিন আহমেদ ছিলেন পুলিশের দারোগা, মা জয়নাবুন্নেছা গৃহিণী। ৯ ভাইবোনের মধ্যে জয়নুল আবেদিন ছিলেন সবার বড়। পড়াশোনায় হাতেখড়ি পরিবারের অভ্যন্তরীণ পরিমণ্ডলেই। ছবি আঁকার প্রতি অদম্য আগ্রহে মাত্র ১৬ বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে কলকাতা গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজ দেখতে চলে যান। ছবি আঁকার প্রতি এই ভালোবাসা দেখে মা নিজের গয়না বিক্রি করে ছেলেকে ভর্তি করেন সেখানে। প্রতিভাধর জয়নুলকে বিনা বেতনে অধ্যয়নের সুযোগ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। ১৯৩৮ সালে কলকাতার গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টসের ড্রয়িং আ্যান্ড পেইন্টিং বিভাগ থেকে প্রথম হয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। একই বছর তিনি নিখিল ভারত চিত্র প্রদর্শনীতে ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদ নিয়ে আঁকা তার একগুচ্ছ জলরং ছবির জন্য গভর্নরের স্বর্ণপদক লাভ করেন।
১৯৪৩ সালের দিকে তিনি ময়মনসিংহে তার নিজের বাড়িতে ফিরে আসেন। পৃথিবী জুড়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আর বাংলায় তখন ‘তেতাল্লিশের মন্বন্তর’। কলকাতায় দুর্ভিক্ষের প্রকোপ প্রত্যক্ষ করে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন জয়নুল। ময়মনসিংহ এসে দেখেন আরও ভয়াবহ অবস্থা। আবার চলে গেলেন কলকাতায়। কিন্তু সেখানে যে তার জন্য আরও ভয়ংকর কিছু অপেক্ষা করছে তা তিনি ঘুণাক্ষরেও জানতে পারেননি। অনাহারে, অসুস্থতায় হতভাগা মানুষ ধুঁকে ধুঁকে মারা যেতে থাকে, কলকাতার ফুটপাত ভরে ওঠে খাদ্যাভাবে মৃত মানুষের স্তূপাকার লাশে। ডাস্টবিন থেকে মানুষ আর কুকুরের একসঙ্গে খাবার তুলে খাওয়ার দৃশ্য।
আর্ট কলেজের তরুণ শিক্ষক, যার বুকে দেশপ্রেমের আগুন। তিনি আর স্থির থাকতে পারলেন না। মানবতার এত বড় অপমান, ইতিহাসের এই কলঙ্কজনক অধ্যায়কে তিনি লোকচক্ষুর সামনে, বিশ্বের নজরে আনার লক্ষ্যে আঁকতে শুরু করলেন সেসব হৃদয়বিদারক দৃশ্যের ছবি।
সেসব ছবি দেখে যামিনী রায় বলেছিলেন, ‘এই দুঃখের ওপরে আবার দুঃখ দিলে, জয়নুল।’
ভারতের নাইটিঙ্গেল শ্রীমতী সরোজিনী নাইডু মন্তব্য করেছিলেন, ‘দুর্ভিক্ষের সবচেয়ে মর্মস্পর্শী ও আবেগময় বর্ণনার চেয়ে তার এসব ছবির আবেদন অধিকতর।’
জয়নুল আবেদিনের উদ্যোগে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে পুরান ঢাকার জনসন রোডের ন্যাশনাল মেডিকেল স্কুলের একটি জীর্ণকক্ষে গভর্নমেন্ট আর্ট ইনস্টিটিউট স্থাপিত হয়। তিনি এর প্রথম শিক্ষক ছিলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর একই প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘বাংলাদেশ চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়। ১৯৫৮ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের সবচেয়ে বড় খেতাব হেলাল-ই-ইমতিয়াজ প্রত্যাখ্যান করেন। ১৯৬৮ সালে চিত্রশিল্পবিষয়ক শিক্ষার প্রসারের জন্য ঢাকা আর্ট কলেজের ছাত্রদের তরফ থেকে ‘শিল্পাচার্য’ উপাধি লাভ করেন।
সে সময় পাকিস্তান সামরিক শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে চিত্রশিল্পীদের একত্র করে আর্ট কলেজের মাঠে আয়োজন করেন ‘নবান্ন উৎসব’। সেই উৎসবে ৬৫ ফুট দৈর্ঘ্য আর ৪ ফুট প্রস্থের কাগজে আঁকলেন সোনার বাংলার স্বপ্নভঙ্গের নিদারুণ ছবি।
১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর দেশে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস হয়। মহাগুরু বসে থাকলেন না। আঁকলেন ৩০ ফুট দীর্ঘ ‘মনপুরা-৭০’, দর্শকদের মনে এই ছবিটি এখনো সেই বীভৎস পরিস্থিতির পূর্ণাঙ্গ এক জীবন্তচিত্র হয়ে ধরা দেয়।
১৯৭১ সালের পর স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার বাংলাদেশের সংবিধানের অঙ্গসজ্জার দায়িত্ব দিলেন জয়নুল আবেদিনকে এবং ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে জাতীয় অধ্যাপকের সম্মান দেওয়া হয় তাকে। শিল্পী ও সংগঠক হিসেবে তার সফলতাই তাকে করেছে বাংলাদেশের চিত্রকলাচর্চার অগ্রপথিক। তৎকালীন মুসলিম গ্রামবাংলার জনগোষ্ঠীর সমকালের চিন্তাভাবনার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে তার চিত্রকর্মে। তার চিত্রকর্মে ফুটে উঠেছে বাঙালি জাতির জীবন-সংগ্রাম, সুখ-দুঃখ-বেদনা-বঞ্চনা ও আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিচ্ছবি। তার বিখ্যাত চিত্রকর্মগুলোর মধ্যে, দুর্ভিক্ষ, মনপুরা-৭০, ১৯৫৭-এর নৌকা, ১৯৫৯-এ সংগ্রাম, ১৯৭১-এ বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং ম্যাডোনা উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া সাঁওতাল রমণী’, মই দেওয়া’, ঝড়’, কাক’, ‘বিদ্রোহী’ও প্রশংসা কুড়িয়েছে। ধারণা করা হয় তার তিন হাজারের বেশি চিত্রকর্ম রয়েছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে ৮০৭টি, ময়মনসিংহ সংগ্রহশালায় ৬২টি, বেঙ্গল ফাউন্ডেশন ও ব্যক্তিগত সংগ্রহ হিসেবে নানা ব্যক্তির কাছে বেশ কিছু চিত্রকর্ম প্রদর্শন/রক্ষিত রয়েছে। জয়নুলের পরিবারের কাছে ৪০০টির বেশি চিত্রকর্ম রয়েছে। এ ছাড়া পাকিস্তানের বিভিন্ন সংগ্রহশালায় তার বিপুল পরিমাণ চিত্রকর্ম সংগৃহীত রয়েছে, যা এখনো উদ্যোগ নিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে সংরক্ষণ করা জরুরি।
দুর্ভিক্ষ-চিত্রমালা বাদ দিলে দেশভাগের পূর্ববর্তী (১৯৩০-৪৬) জয়নুল আবেদিনের অনেক চিত্রই এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে অপরিচিত বা একেবারেই কম তার মধ্যে শম্ভুগঞ্জ’ (কালি কলমের স্কেচ, ১৯৩৩), হাঁস’ (জলরং, ১৯৩৩), ফসল মাড়াই’ (জলরং, ১৯৩৪), বনানী দুমকা’ (জলরং, ১৯৩৪), পল্লিদৃশ্য’ (জলরং, ১৯৩৪), ঘোড়ার মুখ’ (পেনসিল-তেলরং, ১৯৩৪), বাইসন জু স্টাডি’ (জলরং, ১৯৩৫), মজুর’ (পেনসিল-স্কেচ, ১৯৩৫) প্রভৃতি।
নিজের চিত্রকর্ম সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি নিজে শিল্পকর্ম করে যত আনন্দ পাই, তার চেয়ে বেশি আনন্দ পাই শিল্পকলাকে সুপ্রতিষ্ঠিত হতে দেখে, জীবনে প্রবিষ্ট হতে দেখলে।’ ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের ১২ মার্চ সোনারগাঁয়ে তিনি ‘বাংলাদেশ লোক ও চারুকলা ফাউন্ডেশন’ স্থাপন করেন। একই সময় ময়মনসিংহে নিজের চিত্রকর্মের একটি সংগ্রহশালাও প্রতিষ্ঠা করেন।
২০০৯ সালে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন বুধ গ্রহের একটি জ্বালামুখ জয়নুল আবেদিনের নামে নামকরণ করে ‘আবেদিন’। উদ্দেশ্য হিসেবে তারা বলেন, মানবসভ্যতার মূল্যবোধ ও উপলব্ধি গভীরভাবে দেখানো জয়নুল আবেদিন সমাজের প্রতিকূলে দাঁড়িয়ে শিল্পী ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সংগঠনে অব্যর্থ ভূমিকা রেখেছেন।
জয়নুলের চিত্রকর্ম মানেই গণমানুষের প্রতিচ্ছবি। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দের ২৮ মে ৬১ বছর বয়সে ফুসফুসের ক্যানসারে মারা যান। বাংলাদেশের শিল্পকলার ইতিহাস আর শিল্পী জয়নুল আবেদিন যেন একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। মৃত্যুর আগে আগে তার বলা ‘এখন তো চারদিকে রুচির দুর্ভিক্ষ। একটা স্বাধীন দেশে সুচিন্তা আর সুরুচির দুর্ভিক্ষ। এই দুর্ভিক্ষের কোনো ছবি হয় না।’ জয়নুল আবেদিনের এ উক্তি কিন্তু আজও প্রাসঙ্গিক।
লেখক : শিল্পী ও আইসিসিআর স্কলার, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতিতে আওয়ামী লীগের কোনো ক্ষতি নেই, বরং লাভ হয়েছে বলে দাবি করেছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, ‘মার্কিন ভিসানীতি নিয়ে বিএনপি বেকায়দায় আছে। সেজন্য তারা নতুন কৌশল নিয়েছে।’
গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মার্কিন নতুন ভিসানীতিতে বিএনপির গলা বসে গেছে, মুখ শুকিয়ে গেছে। বিএনপি নির্বাচন ভয় পায় না, ভয় পায় এ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগকে।’
বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে গোলমাল করলে, ভাঙচুর করলে, মানুষ পোড়ালে, বাস পোড়ালেÑ যারাই জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতি করবে, আগুন সন্ত্রাস করবে, তারাই আজকে ভয় পাচ্ছে।’
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘সর্বশেষ গাজীপুরে সুষ্ঠু নির্বাচন করে দেখিয়ে দিয়েছি, আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন করব।’ আসন্ন চার সিটি এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনও সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মার্কিন ভিসানীতিতে আমাদের একটা লাভ হয়েছে, এত দিন তারা নালিশ করেছে আমেরিকার দরবারে। নিষেধাজ্ঞা আসবে...। নিষেধাজ্ঞা কই? নিষেধাজ্ঞা এখন তাদের বিরুদ্ধে নতুন ভিসানীতিতে।’
নিজেদের ভয় না পাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। কাজেই দেশি-বিদেশি কাউকে আমরা ভয় পাই না। আমরা আমাদের নীতিতে অটল থেকে নির্বাচন চাইছি। আমরা প্রস্তুত, খেলা হবে।’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে ফাইনাল খেলা হবে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, খেলা হবে, ফাইনাল খেলা। আগামী নির্বাচনে নৌকা বনাম ধানের শীষ খেলা হবে। বাংলার মানুষ ধানের শীষ চায় না। তৈরি হয়ে যান, প্রস্তুত হয়ে যান।
ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জ ও খাগড়াছড়িতে শুক্রবারের সংঘর্ষের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কেরানীগঞ্জে নাটক, খাগড়াছড়িতেও নাটক। কেরানীগঞ্জে বিএনপির নাটক ধরা খেয়েছে। আওয়ামী লীগকে আক্রমণকারী সাজাতে এই নাটক বানাচ্ছে। আমেরিকা যে ভিসানীতি প্রকাশ করেছে তাতে নির্বাচনে বাধা দিলে খবর আছে। সেজন্য বিএনপি নতুন কৌশল নিয়েছে।’
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি প্রমুখ বক্তব্য দেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘আমেরিকা ঘোষণা দিয়েছে আগামীতে যারা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বাধা দেবে, তাদের ভিসা দেওয়া হবে না। আর বাধাদানকারীরা হলো আওয়ামী লীগ। দেশে মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনতে গণ-অভ্যুত্থানের কোনো বিকল্প নেই। আজকে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। আমরা আশাবাদী, জনগণ প্রস্তুত। অচিরেই গণ-অভ্যুত্থান শুরু হয়ে যাবে। গণ-অভ্যুত্থানেই সরকারকে বিদায় করা হবে।’ গতকাল শনিবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
উচ্চ আদালতের নির্দেশনাকে অধীন আদালত এবং সরকারের অবজ্ঞা, গায়েবি মামলায় নির্বিচারে গ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলা ও পুলিশি হয়রানি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুতের লোডশেডিং, আওয়ামী সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদে এবং ১০ দফা দাবিতে এই প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়।
গতকাল বেলা আড়াইটায় সভা হওয়ার কথা থাকলেও তা দেরিতে শুরু হয়। ঝড়বৃষ্টি উপেক্ষা করে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা নয়াপল্টনে জড়ো হন। তারা অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ, খালেদা জিয়ার মুক্তি, নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। বিএনপির কর্মসূচি থাকায় নয়াপল্টন এলাকায় অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়।
সারা দেশে বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘গায়ের জোরের অবৈধ সরকার ক্ষমতায় আবারও টিকে থাকার জন্য আমাদের নেতা রফিকুল আলম মজনু, সাইফুল আলম নীরব, মোনায়েম মুন্নাসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা ফের ক্ষমতায় থাকতে গায়েবি মামলা দেওয়া শুরু করেছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। কারণ তাদের উদ্দেশ্য একটাই আবারও গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকা।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘এর আগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত পদযাত্রা কর্মসূচিতে পুলিশ হামলা করেছে। গত শুক্রবার কেরানীগঞ্জে ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায়কে পিটিয়ে আহত করেছে। তাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আহত নিপুণসহ অনেকের বিরুদ্ধে আবার পুলিশ মামলা দিয়েছে।’
খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রীকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ আজ প্রত্যাখ্যান করছে। দেশের পাশাপাশি বিশ্ববাসী জেনে গেছে শেখ হাসিনার অধীনে একটিও সুষ্ঠু নির্বাচন হয় নাই। শেখ হাসিনার অধীনে যে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না তা বিদেশিরাও জেনে গেছে। তাই তারাও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি তুলছেন।’
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলব, অবৈধ অনৈতিক হুকুম মানবেন না। অতীতে যারা এমনটা করেছে তাদের আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আপনারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, কোনো অন্যায় কাজ করবেন না। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছি। আপানারা অতি উৎসাহী হবেন না। জনগণের পক্ষে অবস্থান নিন।’
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হকের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, বিএনপি নেতা মীর সরাফত আলী সপু, আজিজুল বারী হেলাল, মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু প্রমুখ।
আওয়ামী লীগ এখন সন্ত্রাস আর গুন্ডামি করার সংগঠন : বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেছেন, আওয়ামী লীগ এখন আর কোনো রাজনৈতিক দল নয়, এটা সন্ত্রাস আর গু-ামি করার সংগঠন। বিএনপি নেতাকর্মীদের জন্য কারাগার আর বাড়ির মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। বাড়িতে থাকলেও সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকতে হচ্ছে। বাইরে বের হলেও মনে হচ্ছে বৃহৎ কারাগারের মধ্যে আছি। গতকাল শনিবার বিকালে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে যশোর জেলা বিএনপি আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক নার্গিস বেগমের সভাপতিত্বে সমাবেশে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন, সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবুসহ উপজেলা ও জেলা বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ বক্তৃতা করেন।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় রুহুল কবীর রিজভী নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধির সমালোচনা করে বলেন, সব কিছুর দাম বাড়ছে আলোর গতিতে। ঢাকায় গরুর মাংস এখন ৯শ’ টাকা। বাংলাদেশের চিনি এখন বিদেশিনী। আদার কেজি ৫শ’ টাকা। দেশের মানুষ আধপেটা খেয়ে খর্বাকায় বামন হচ্ছে। আর তিনি কাতার, আমেরিকা, লন্ডনে গিয়ে উন্নয়ন, পদ্মা সেতু আর উড়াল সড়কের গল্প শোনাচ্ছেন।
অবিলম্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবি করে রিজভী বলেন, ৪৫ বছর আগে বিচারপতি কে এম হাসান বিএনপির কোন কমিটির কোন সম্পাদকীয় পোস্টে ছিল, সে কারণে যদি তার অধীনে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হয়, তাহলে আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে থাকা আপনার অধীনে কীভাবে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে।
রুহুল কবীর রিজভী বলেন, আমেরিকা বাংলাদেশের জন্য করা ভিসা নীতি ৩ তারিখেই সরকারকে জানিয়েছে। অথচ আমরা জানতে পারলাম পরশু দিন। তিনি প্রশ্ন করেন, এতদিন কেন লুকিয়ে রেখেছিলেন।
শেখ হাসিনা আ.লীগকে রাজনৈতিক দল হিসেবে ধ্বংস করে দিয়েছেন : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, আওয়ামী লীগ আজ কোনো রাজনৈতিক দল নেই, এরা বিক্রি হয়ে গেছে অফিসারদের কাছে, পুলিশের কাছে, দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীর কাছে। এদের কোনো রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নেই। শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক দল হিসেবে ধ্বংস করে দিয়েছেন। আমাদের নেতা দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান আমাদের বলীয়ান করেছেন, শক্তিশালী করেছেন, ইমানদার করেছেন। এই জন্যই আমাদের আগামী নির্বাচনে জয় হবে। তাদের পরাজয় হতে বাধ্য। অপশক্তি, দুর্নীতিবাজ কর্তৃত্বপরায়ণ কোনোদিন জনগণের সামনে দাঁড়াতে পারে না।
শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উচ্চ আদালতের নির্দেশনাকে অধীনস্ত আদালত ও সরকারের অবজ্ঞা, গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলা ও পুলিশি হয়রানি, আওয়ামী সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদে সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে নোয়াখালী প্রেস ক্লাব সড়কে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
খসরু বলেন, আমেরিকার ভিসা নীতিমালা এসেছে। তারা বারবার বলার পরও সরকার তাদের কথা শুনছে না। সরকার বিরোধী দলের নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করছে, নিপীড়ন নির্যাতন চালাচ্ছে। গুম, খুন, মিথ্যা মামলা বন্ধ হচ্ছে না। সুতারাং সাত মাস আগে সেকশন দিয়েছে সুবোধ বালকের মতো ব্যবহার করার জন্য। ভালো হয়ে যাওয়ার জন্য সাত মাস আগে সেকশন দিয়েছে আমেরিকা। যাতে করে বাংলাদেশের মানুষ নির্দ্বিধায় নাগরিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারে।
আমি বর্তমানে ‘শিল্পী’, ভবিষ্যতের ‘স্রষ্টা’ নই। ১৯৬৯ সালে ইত্তেফাকের ঈদসংখ্যায় একটি লেখায় আমাদের শিল্প আন্দোলনের গুরু ও জীবনসংগ্রামের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ওভাবেই আপন চরিত্রের ব্যাখ্যা করেছেন। বর্তমানের এই রূপকার বর্তমানকে দেখেছেন ‘প্রত্যক্ষতা’ ও সমাজে ব্যক্তিবিশেষের ওপর এর ‘প্রতিক্রিয়ায়’ বিবেকববাদী বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে। প্রত্যক্ষতা জয়নুলের তুলিতে স্থান-কালের বিশদ বর্ণনায় নয় বরং সুনির্দিষ্ট উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। মোটা, কর্কশ তুলির টানে আঁকা তার তেতাল্লিশের মন্বন্তরের চিত্রগুলো এ কারণেই প্রতীকধর্মী বর্ণনার বাহুল্যবর্জিত। তিনি বর্তমানের সাক্ষী হিসেবে হাজির করেছেন তার চিত্র-সিরিজ, যা ভবিষ্যতের মানুষকেও মানুষ ও তার সামাজিকতা নিয়ে ভাবাবে, এই সূত্রে শিল্পীর বর্তমানতা কালের গণ্ডি পার হয় অনায়াসে। অর্থাৎ শিল্পাচার্য জয়নুল আপন বয়ানে শুধু বর্তমানের শিল্পী হলেও তিনি বিবেকবাদিতার সূত্রে ভবিষ্যৎকালেরও শিল্পী হিসেবে রয়ে গেছেন।
পশ্চিমবঙ্গের শিল্পলেখক প্রণবরঞ্জন জয়নুলের দুর্ভিক্ষ চিত্রমালায় যে ন্যূনতম রেখা লক্ষ করেছেন তার শক্তি বিষয়ে বিশদ আলোচনার দাবি রাখে। তার আগে এই লেখকের বর্ণনা থেকে আরেকটি বিষয়ে সচেতন হওয়া যাক। প্রণবরঞ্জন লিখেছেন, ছবিগুলোতে ‘কোনো স্থান বিবরণী নেই’, নেই কোনো বিশদ প্রেক্ষাপট। এ কারণেই জয়নুলের দুর্ভিক্ষ চিত্রগুলো স্থান-কালবিষয়ক বর্ণনা না হয়ে, হয়েছে প্রতীক। জয়নুলের বাস্তববাদী মন ও কলাকৌশল লক্ষ করে বলা চলে, এই প্রতীক বিবেকবানের যেমন, তেমন ইতিহাস ও শ্রেণিসচেতন এক শিল্পীর সৃষ্টি।
জয়নুলের ছবি সামাজিক-রাজনৈতিক বিচারে তাৎপর্যপূর্ণ। এই শিল্পী এমন এক ঐতিহাসিক সময়ে জন্ম নিয়েছেন যখন ঔপনিবেশিক শাসনের সূর্যটি অস্তাচলে। তেতাল্লিশের দুর্ভিক্ষ যেমন ব্রিটিশ-ভারত সরকারের সৃষ্ট বিপর্যয়। যদিও মানববিপর্যয় জয়নুলের একটি মূল মনোযোগের স্থল, তথাপি জয়নুলকে সংগ্রামের শিল্পী হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। দুর্ভিক্ষ কিংবা দুর্যোগ এঁকে তিনি মানুষের মধ্যে বঞ্চিতের প্রতি যে দরদ প্রদর্শন করেছেন তা শুধু দরদ নয়। এতে ইতিহাস চেতনাও স্পষ্ট হয়। শিল্পী নিজে মন্তব্য করেছেন, ‘বীভৎসতা’ ফুটিয়ে তোলা তার ‘প্রবৃত্তিকে প্ররোচিত’ করে নাই। এসব ছবির উদ্দেশ্য বিষয়ে জয়নুলের কোনো কুয়াশা ছিল না। শিল্পী লিখেছেন, ‘এ যেন অনেকটা সেই ক্রিটিসিজম বা সমাজের প্রতি, মানবতার প্রতি প্রযোজ্য’। অর্থাৎ সংগ্রামের তৎপরতায় ব্যত্যয় ঘটায় এমন বিষয় ধরে তিনি এক ধরনের সমালোচনাধর্মী চিত্র রচনা করতে চেয়েছেন। দুর্ভিক্ষ চিত্রশালায় যদিও এমন কোনো চিত্রায়ণ শিল্পী ঘটাননি, যার সূত্রে ‘দুর্ভিক্ষ যারা ঘটান’ আর ‘যারা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে’ এ দুইয়ের সম্পর্ক বিষয়ে দর্শক অবগত হবেন। তবু, অভ্যাসের বাইরের এক জগৎকে যখন দর্শক প্রথম প্রত্যক্ষ করল, তার মাজেজা এমন দাঁড়াল যে মানবদেহ, শীর্ণকায় ও মৃত্যুমুখী হওয়া সত্ত্বেও, এক প্রকার বিশ্লেষণী মন জন্মাতে সাহায্য করল। পিপলস ওয়ার নামক পত্রিকার পাতায় যখন এগুলো ছাপা হয়ে দর্শকের সামনে হাজির হলো, তখন তা সমাজ মানসে নতুন ভাবনার সূত্র তৈরি করল বটে।
জয়নুলের হাতে কলকাতার রাস্তার বাস্তবতা ঔপনিবেশিক চালচিত্র হিসেবে রচিত হলো। দুর্ভিক্ষপীড়িতের উপস্থাপনা হয়ে উঠল ঔপনিবেশায়িত জনগোষ্ঠীর দুরবস্থার স্মারক। এ অঞ্চলের শক্তির পাশাপাশি ঐতিহাসিক বাস্তবতাকে তুলে ধরার মধ্য দিয়ে অবিভক্ত ভারতে একটি নতুন পথের নিশানা দিল জয়নুল আবদিন পথটির নাম বাস্তববাদ।
বাস্তববাদ যদি আধুনিক ইউরোপের অবদান হয়, তবে জয়নুল তা আপন মহিমায় এবং নতুনতর মাত্রায় উন্নীত করতে প্রয়াস পান। স্মরণ করা জরুরি যে জয়নুল যখন কলকাতায় শিল্পশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র হিসেবে পাঠ শুরু করবেন, তখন শিক্ষক মুকুল দে তাকে সে সময়ের জনপ্রিয় হয়ে ওঠা প্রাচ্যরীতি শিক্ষা নিতে শুরু করেন। জয়নুল ইউরোপীয় ন্যাচারালিজম বা একাডেমির বাস্তববাদ অনুসরণ করার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। হয়তো কম বয়স থেকেই এই শিল্পী তার ভবিষ্যৎ জীবনের চিত্রকর্ম কেমন চেহারা নেবে সে বিষয়ে আঁচ করতে পেরেছিলেন।
জয়নুলের পরবর্তীকালের চিত্রে যে তুলির আঁচড় তার চিত্রতল শাসন করেছে তার জন্ম দুর্ভিক্ষ চিত্রশালায়। তার ‘বিদ্রোহী গরু’, ‘সংগ্রাম’, ‘সাঁওতাল দম্পতি’ কিংবা ১৯৭০-এ ঘটে যাওয়া ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাসের ওপর আঁকা ‘মনপুরা’ এসব মাস্টারপিসসুলভ কাজে যে খররেখা, যে দৃঢ়তা, তা মন্বন্তরের ছবিগুলোর সূত্রে জন্ম নিয়েছে দাবি করা চলে।
জয়নুলের রেখার জন্ম দুটি সূত্রের সংযোগে সম্ভব হয়েছে। শিক্ষক জীবনের প্রথমপর্যায়ে বাড়তি রোজগার করতে শিল্পী বইয়ের প্রচ্ছদ থেকে শুরু করে পত্রপত্রিকা ও সাময়িকীর জন্য ইলাস্ট্রেশন আঁকতেন। ব্লক তৈরি করে এই ছবি ছাপা হতো। ফলে ব্লক সহজে করা যায় এমন সাদা-কালোর কন্ট্রাস্ট রক্ষা করে ছবি তৈরি করতে হতো। ১৯৩৭-এর পর থেকে যদি বঙ্গদেশে ফ্যাসিবাদবিরোধী তৎপরতা ও মার্ক্সবাদী রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সূচনা হয়, তাদের আমদানি করা চীনা পোস্টারেও একই ধরনের সাদা-কালোর কন্ট্রাস্টে করা অঙ্কনের আধিপত্য ছিল। চল্লিশ দশকের শুরু থেকে জয়নুলের কাজে এমন আলোছায়াহীন ছবির খোঁজ মেলে। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে এর কিছু নমুনা সংগৃহীত আছে।
আরেকটি বিশেষ ঘটনা এর পাশাপাশি উল্লেখের দাবি রাখে চৈনিক শিল্পী জু বেহং-এর কাজ দেখার অভিজ্ঞতা। যদিও চীনা এই শিল্পীর পশ্চিমবঙ্গে সফর (১৯৩৯-৪০) ও শান্তিনিকেতন ও কলকাতায় পরপর প্রদর্শনী করার খবর আমরা জানি, কিন্তু জয়নুল এই প্রদর্শনীতে তার সাদাকালো রেখায় আঁকা চিত্রসমূহ দেখেছেন এমন কোনো দলিলের হদিস পাওয়া যায় না। তবে আন্দাজ করা যায় জয়নুল এই চৈনিক শিল্পীর তুলির আঁচড়ে আঁকা ঘোড়ার অবয়বের সার নির্মাণের দক্ষতা প্রত্যক্ষ করেছেন এবং এর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছেন।
জু বেহং-এর রেখা যদি হয় নান্দনিক, জয়নুলের রেখা বাস্তবানুসারী। কিন্তু তা দৃশ্যতানির্ভর না হয়ে কাঠামোনির্ভর। যে হ্রাসকরণের সূত্রে তিনি খর বা কর্কশ কাঠামো গড়েন, ওতে বাড়তি কোনো লালিত্য দরকার পরে না। গদ্যের ভাব প্রকাশে এমন প্রক্রিয়াকে ভারতীয় ইতিহাসবিদ সংযুক্তা সন্দর্শন ‘মিনিমালিস্ট স্টার্কনেস’ হিসেবে চিনেছেন। তারও অনেক বছর আগে জয়নুলের সহযোদ্ধা চিত্তপ্রসাদ, যার কাছে জয়নুল তার দুর্ভিক্ষের ছবিগুলো ছাপানোর জন্য পাঠিয়েছিলেন, এমন রেখার পেছনের সত্তাটির স্বীকৃতিস্বরূপ চিনতে চেষ্টা করেছিলেন এর পেছনের ‘বজ্রবলিষ্ঠ তুলি’। শিল্পী ও রাজনৈতিক কর্মী চিত্তপ্রসাদ জয়নুলের কাছে লেখা পত্রে আরও উল্লেখ করেন, জয়নুল ‘মানুষের দুর্দশার ছবি দিয়ে জাতির ঘুম নিদ্রাকে কশাঘাত চালান’। তিনি আরও আশা করেন, ‘দুঃখবাদের হাত থেকে মানুষের দৃষ্টি ছিনিয়ে নিয়ে’ শিল্পী জয়নুল যেন জীবনের দিকে তা ফিরিয়ে দেন।
জয়নুল জীবনে ছিলেন বলেই জীবনপ্রবাহের ধারা ব্যাহত হয় এমন দুর্ঘটনার চিত্র এঁকেছেন। জয়নুলের জীবনকে দুই প্রস্থ মাত্রায় ধরা যায়। তিনি একদিকে শিল্পী, অন্যদিকে শিল্প সংগঠক ও শিল্প শিক্ষালয়ের প্রতিষ্ঠাতা। শিক্ষক হিসেবেও তিনি রোমান্টিকতা আক্রান্ত ছিলেন না। আধুনিকতা থেকে যতটুকু নেওয়ার তিনি তা নিয়ে ঢাকার চারুকলা প্রতিষ্ঠান গড়েছেন তার সঙ্গে কলকাতা থেকে এপারে চলে আসা আরও শিল্পীদের সহযোগিতায়। একই প্রতিষ্ঠানে তিনি প্রাচ্যকলা বিভাগ খুলেছেন, এমনকি পঞ্চাশের দশকের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের যাতে দেশজ ঐতিহ্য বিষয়ে চেতনা জাগ্রত থাকে, সেজন্য তিনি গ্রাম্যমেলার সব উপাদান আধুনিক শিক্ষায়তনের চত্বরে হাজির করেছেন। তার নিজের কাঁথা সংগ্রহ দেখে বোঝা যাবে এ দেশে কাঁথার প্রকৃত রূপটি কেমন ছিল, শিল্প-সৌকর্যের অর্জনটি কোন পর্যায়ের ছিল। জয়নুলের প্রয়াণ দিবস সামনে রেখে আহমদ শরীফ থেকে ধার্য করা যাক, ‘আমাদের স্বচ্ছ হওয়া দরকার আত্মপরিচয় নিয়ে দাঁড়ানো দরকার’। স্বচ্ছ মানে হলো আপনার পায়ে দাঁড়ানো, আর জয়নুল এই কাজটা শিল্পের ও শিল্পশিক্ষার পরিসরদ্বয়ের মেলবন্ধন ঘটিয়ে করতে সদাসচেষ্ট ছিলেন। এ কারণে তিনি জাতীয়তাবাদী না হয়েও জাতির হিত সাধনে কর্ম করে গেছেন। জাতীয় চরিত্রের মরীচিকার পেছনে না ছুটে স্থানিকতাকে মূল্য দিয়েছেন তার আশপাশের বাস্তবতা থেকে শিক্ষা নিয়ে নির্ধারণ করেছেন কি আচরণীয় বা পালনীয় ও কি লালনীয়।
লেখক : চিত্রশিল্পী, শিল্পসমালোচক ও কিউরেটর
বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ও জরাবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানে (বাইগাম) নারীকর্মীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির সহকারী পরিচালক আশরাফুল আলম মাসুমের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ওই প্রতিষ্ঠানে যোগদানের পর বেশিরভাগ নারীকে তার কুনজরে পড়তে হয়।
ভুক্তভোগীরা জানান, মাসুমের যৌন হয়রানির বিষয়টি ওই প্রতিষ্ঠানের সবাই জানেন। বিভিন্ন সময়ে যৌন হয়রানির শিকার নারীরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে মৌখিকভাবে অভিযোগ জানিয়েছে, কিন্তু রহস্যজনক কারণে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সামাজিক সম্মানহানি, চাকরি হারানোর ভয় ও দাপ্তরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার ভয়ে এতদিন কেউ তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেননি। এবার ভয় এড়িয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত এক নারী।
দেশ রূপান্তরের সঙ্গে আলাপকালে ওই নারী বলেন, ‘মাসুমের কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সব যোগ্যতা থাকার পরও গত ১২ বছর ধরে নিয়মিত বেতনের বাইরে কোনো সুযোগ-সুবিধা পাইনি।’
তিনি গত ১২ এপ্রিল বাইগামের প্রশাসক ড. মো. মোকতার হোসেনের কাছে মাসুমের যৌন হয়রানির বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তার অভিযোগের পর উপ-পরিচালক দেবব্রত দাস ও সহকারী পরিচালক খন্দকার নুরুন্নাহারের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ওই নারী জানান, তিনি অফিস সহায়ক হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন, প্রশাসন বিভাগে। মাসুম তার সিনিয়র হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কিছুদিন পর থেকে মাসুম তাকে উত্ত্যক্ত করতে শুরু করেন। বিষয়টি তখন মৌখিকভাবে প্রশাসনকে জানালে তাকে প্রশাসন বিভাগ থেকে সরিয়ে হাসপাতাল বিভাগে ডিউটি দেওয়া হয়। বদলির কিছুদিন পর হাসপাতালের ডিরেক্টরের পিএ নবীউল ইসলাম আকাশের মাধ্যমে মাসুম প্রস্তাব পাঠান, তার সঙ্গে সম্পর্ক গড়লে প্রবীণনিবাসে অনুদান পাওয়া ৬টি কম্পিউটারের একটি তার বাসায় পাঠানো হবে। বিষয়টি তৎকালীন মহাসচিব ডা. এ এস এম আতিকুর রহমানের কাছে জানালে তিনি মাসুমকে মৌখিকভাবে সতর্ক করে দেন।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ওই ঘটনার পর মাসুম কিছুদিন নীরব থাকেন। তারপর মাসুম আবার আকাশকে দিয়ে প্রস্তাব পাঠান, তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করলে যত টাকা লাগে দেওয়া হবে। তিনি তাতে রাজি হননি।
ওই নারী বলেন, ‘২০১৮ সালের পহেলা বৈশাখের রাতে অ্যাটেনডেন্ট বিভাগের এক নারী সহকর্মী বাসায় দাওয়াত দেন। সেখানে গিয়ে দেখি, মাসুম বসে আছেন। সেদিন অনেক চেষ্টায় তার হাত থেকে রেহাই পাই। পরদিন ইসি (মিনিং) কমিটির অনেক সদস্যকে বিষয়টি জানাই। প্রশাসন বিভাগের ডিডি বদরুল আহসান ‘স্যার’কেও জানাই। তিনি বিচার না করে আমাকে চুপ করে থাকতে বলেন এবং এ নিয়ে কথা বললে চাকরি নিয়ে সমস্যায় পড়তে পারি বলে জানান।’
জানতে চাইলে বদরুল আহসান জানান, ‘আমাকে কখনো তিনি লিখিত বা মৌখিকভাবে মাসুমের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেননি। তার যৌন হয়রানি সম্পর্কে আমার জানা নেই। তবে সম্প্রতি মাসুমের বিরুদ্ধে প্রশাসকের কাছে একটা অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে।’
ওই নারী বলেন, ‘মাসুম স্যার আমাকে মাঝেমধ্যেই যৌন হয়রানি করেন সেটা আমাদের অফিসের সবাই জানে। তার কথায় সায় না দেওয়ায় এই অফিসে ১২ বছর চাকরি করেও আমি প্রমোশন বা ইনক্রিমেন্ট পাইনি। অফিসে ভয়ে থাকি।’
মাসুমের যৌন হয়রানির শিকার আরও কয়েকজন নারী পরিচয় গোপন রেখে বলেন, ‘তিনি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নারীদের নানাভাবে যৌন হয়রানি করেন। উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে তিনি টার্গেটকৃত নারীকর্মীদের চাকরি সংক্রান্ত নানা সমস্যা তৈরি করে রাখেন। সেসব সমস্যা নিয়ে নারীকর্মীদের তার কাছে ধরনা দিতে বাধ্য করেন। তার কাছে গেলেই তিনি নানা অনৈতিক প্রস্তাব দেন। রাজি না হলে চাকরি স্থায়ীকরণ, ইনক্রিমেন্ট ও অন্যান্য সুবিধা আটকে দেন। বিশেষ করে তৃৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির নারীকর্মীদের বিপাকে ফেলে নিজের উদ্দেশ্য হাসিল করেন।’
সহকারী পরিচালক আশরাফুল আলম মাসুম বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ আনা হয়েছে। আশা করি, তদন্ত কমিটির মাধ্যমে আমি নির্দোষ প্রমাণিত হব।’
প্রবীণ হিতৈষী সংঘের সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কুদ্দুস খান বলেন, ‘মাসুমের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে নারীরা যৌন হয়রানির অভিযোগ করছেন। তার আচরণ ও কাজকর্ম সন্দেহজনক। মৌখিকভাবে নারীরা অভিযোগ জানালেও রহস্যজনক কারণে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।’
বাইগামের প্রশাসক ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের সামাজিক নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালক ড. মো. মোকতার হোসেন জানান, ‘মাসুমের বিরুদ্ধে একজন নারী কর্মচারী লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। আমরা তদন্ত কমিটি করেছি। দ্রুতই তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাব। প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আসন্ন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্ত্রীকে পাশে নিয়ে নির্বাচনে যুদ্ধে অবতীর্ণ খোকন সেরনিয়াবাত। নির্বাচনী প্রতীক বরাদ্দের পর নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় সাড়া ফেলেছেন মেয়র প্রার্থীর সহধর্মিণী লুনা আবদুল্লাহ। খোকন সেরনিয়াবাতকে নির্বাচনে বিজয়ী করার লক্ষ্যে নগরীর মানুষের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন তিনি। আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পরেই লুনা আবদুল্লাহ বরিশালে অবস্থান করছিলেন। সেই সময় থেকেই এই নির্বাচনী কাজে তাকে শামিল হতে দেখা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও ভোটের প্রচারণার পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলেও তার সাবলীল কৌশলী প্রচারণা নির্বাচনী মাঠে আলোড়ন তুলেছে। ভোটের লড়াইয়ে স্বামী খোকন সেরনিয়াবাতের চেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের বরং লড়াই করতে হবে লুনা আবদুল্লাহর সঙ্গে।
লুনা আবদুল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর্যন্ত রাজনৈতিক পরিবারে রয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর মনোনীত মেয়র প্রার্থীকে এবং নৌকাকে বিজয়ী করার জন্য এবার মাঠে নেমেছি। শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হয়ে ঘরে ফিরব, এই আশা নিয়ে আমি নগরবাসীর কাছে ভোট চাইছি। নগরবাসী আমাকে আস্থা দিয়েছে। তারা নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করবেন।’
এদিকে প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার দ্বিতীয় দিন গতকাল শনিবার নগরীর হাতেম আলী কলেজ সংলগ্ন মাঠে খোকন সেরনিয়াবাত তার নির্বাচনী প্রচারণায় চালিয়েছেন। এ সময় তিনি নগরীতে ২৪ ঘণ্টা পানি ও বিদ্যুৎ, জন্মনিবন্ধন করতে অতিষ্ঠ নগরবাসীর দুঃখ দুর্দশা দূর করার অঙ্গীকার করে বলেন, ‘আমাকে ভোট দিয়ে দেখেন আমি আসলেই কথা রাখি কি না, আমার কথা ও কাজ একই থাকবে ইনশা আল্লাহ’।
সিটি নির্বাচনের নৌকা প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট লস্কর নুরুল হক বলেন, ‘আমি মনে করি এই নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা আমাদের দেশে রেওয়াজ হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী টানা তিনবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকে সর্বক্ষেত্রে দৃশ্যমান উন্নয়ন করেছেন। তাই জনসাধারণের বিশ্বাস নৌকা জিতলে উন্নয়ন হবে। এই উন্নয়নের স্বার্থে নগরবাসী নৌকার সঙ্গে রয়েছেন।’ অন্যদিকে গতকাল বেলা ১১টার দিকে নগরীর বটতলা এলাকায় গণসংযোগ করেন জাতীয় পার্টির (জাপা) মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস। এ সময় নগরবাসীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও লিফলেট বিতরণকালে বিসিসি নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়া নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
দলের চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও নগর জাপার সদস্যসচিব তাপস সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখানের নির্বাচন পরিস্থিতি একপক্ষীয়। প্রথম থেকেই আমি খেয়াল করছি যে এখানে যিনি রিটার্নিং অফিসার আছে, তিনি সম্পূর্ণভাবে এক প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন। তিনি পুরোপুরি আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষ হয়ে কাজ করছে। প্রতীক বরাদ্দের আগেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী মার্কা দিয়ে পোস্টার-লিফলেট ছাপিয়েছেন, সেগুলো রিটার্নিং কর্মকর্তার চোখে লাগে না। এই বিষয়গুলো তাকে একাধিকবার জানিয়েছি। কিন্তু তিনি আমাদের কথা আমলে নেন নি।’
এ ছাড়াও ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র নায়েবে মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম নগরীর বাংলা বাজার এলাকায় গণসংযোগ করেছেন। গণসংযোগকালে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগ-পর্যন্ত শঙ্কামুক্ত নই।’
প্রসঙ্গত, আগামী ১২ জুন বরিশাল সিটি করপোরেশনের পঞ্চম পরিষদের নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এবার বরিশাল সিটিতে মোট ভোটার সংখ্যা দুই লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ জন।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থীকে বিজয়ী করতে ‘বিশেষ বর্ধিত সভা’ করেছে বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ। এ সময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির (বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন) টিম লিডার খোকন সেরনিয়াবাতের ভাই আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপিসহ কেন্দ্রীয় নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু ওই সভায় উপস্থিত হননি মেয়র প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত।
বর্ধিত সভার শুভেচ্ছা বক্তব্যে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আপনারা জানেন আগামী ১২ জুন বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। এই নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী আমার ছোট ভাই যিনি ১৫ আগস্টে গুলিবিদ্ধ খোকন সেরনিয়াবাতকে মনোনীত করেছেন। আমরা স্বাগতম জানাই।’
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।