
দেশের বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু শনাক্তকরণ পরীক্ষায় ৫০০ টাকার বেশি নেওয়া যাবে না বলে সতর্ক করে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আর সরকারি হাসপাতালে এজন্য খরচ হবে ১০০ টাকা। এ ছাড়া সব হাসপাতালে পরীক্ষাসহ ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা গাইডলাইন অনুযায়ী দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ডেঙ্গু রোগীদের প্লাটিলেট ব্যবহার নিয়েও গাইডলাইনে নির্দেশনা রয়েছে।
গতকাল রবিবার রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ নির্দেশ দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির। সংবাদ সম্মেলনে দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতির সার্বিক চিত্র তুলে ধরা হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় (শনিবার সকাল ৮টা-রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) আরও ৬৭ জন ডেঙ্গু রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে ঢাকায় ভর্তি হয়েছে ৫৮ ও ঢাকার বাইরে ৯ জন। এ নিয়ে এ বছর হাসপাতাল ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১ হাজার ৭৭১ জন। এখন পর্যন্ত মারা গেছে ১৩ জন। ঢাকার পর বেশি রোগী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে : সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় থাকা রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৬৬ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। কক্সবাজারে থাকা বাংলাদেশিদের মধ্যে এ সংখ্যা ৪২৬ জন। সব মিলে এখন পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় ১ হাজার ৫৩২ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ সংখ্যা ঢাকায় শনাক্ত রোগীর চেয়ে বেশি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে দেওয়া ডেঙ্গু আক্রান্তদের তথ্যে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা নেই। এর ব্যাখ্যায় অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘রোহিঙ্গা কমিউনিটি যেহেতু আমাদের নাগরিক নয়, তাই তাদের তথ্য দেওয়া হয় না। তবে যেহেতু তারা আমাদের সঙ্গেই থাকে, জাতিসংঘও তাদের তথ্যটা চায়, সেহেতু গুরুত্ব দিয়েই আমরা তাদের তথ্য সংগ্রহ করি এবং আলাদাভাবে হিসাব রাখি।’
এ বছরের পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘কক্সবাজারে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। সেখানকার স্থানীয় মানুষদের মধ্যে ছড়ানো এ সংখ্যাটাও উপেক্ষা করার মতো নয়। তাদের পরিষ্কার পানির উৎস সীমিত। তারা পানি সংগ্রহ করে অনেক সময় খোলা পাত্রে রেখে দেয়, যা মশার জন্য একটা ভালো প্রজননক্ষেত্র। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কম জায়গায় মানুষ বেশি। ফলে সেখানে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অন্যান্য এলাকার চেয়ে বেশি।’
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের যা পরিস্থিতি, তাতে সেখানে ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনা ‘কঠিন’ বলেও মন্তব্য করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সচেতনতার যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। তাদের সংস্কৃতি আলাদা হওয়ায় এ ব্যাপারে কাজও সেভাবে করা যায় না। তারা একটা নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে থাকেন, সেখানে স্বাস্থ্যকর্মীদেরও অনেক নিয়ম মেনে কাজ করতে হয়।’
সিটি করপোরেশনকে সক্রিয় হওয়ার পরামর্শ : সংবাদ সম্মেলনে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির। তিনি বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে সিটি করপোরেশনগুলোকে জানিয়েছি, খুব দ্রুত যদি মশার স্থানান্তর নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তাহলে যেকোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দুই সিটি করপোরেশনের সঙ্গেই আমাদের যোগাযোগ হয়। আমরা তাদের ম্যাপিং করে জানিয়ে দিই, কোথায় বেশি ছড়াচ্ছে। তাদের জায়গা থেকে আরেকটু বেশি অ্যাকটিভ হতে হবে। যেহেতু আমরা জানিয়ে দিচ্ছি কোথায় কী হচ্ছে, তাই তাদের উড়ন্ত মশা নিয়ন্ত্রণ, লার্ভা ধ্বংসসহ তারা যেসব ব্যবস্থা নেয়, সেগুলোর মাধ্যমে যেন আমরা ভেক্টরটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।’
অবশ্য ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কোন এলাকায় সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী, সে তথ্য জানাতে পারেনি অধিদপ্তর। এ ব্যাপারে অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘যেখানে ঘনবসতি বেশি, সেখানে মশার উপদ্রব বেশি। আমরা পুরো ঢাকা শহরকেই বিবেচনায় নিচ্ছি। আমাদের কাজ রোগী ব্যবস্থাপনা। ডেঙ্গু কোথায় বেশি এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব স্থানীয় সরকারের।’
ডেঙ্গু বাড়ছে কয়েক কারণে : সংবাদ সম্মেলনে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ডেঙ্গু বাড়ার পেছনে জলাবায়ু পরিবর্তন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও জনঘনত্বের কারণের কথা বলেন। অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলেন, ‘বাংলাদেশ অনেক জনবহুল, তার ওপর এখানে দ্রুত নগরায়ণ হচ্ছে। ফলে এখানে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সহজ নয়।’
এ ব্যাপারে অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. রোবেদ আমিন বলেন, ‘জানুয়ারি মাসের পর থেকে অনেক গরম পড়েছে। বিজ্ঞান বলে, কোনো জিওগ্রাফিতে এক ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাড়লে তার দ্বিগুণ পরিমাণ ডেঙ্গু রোগী দেখা দেয়। সব দেখে অনুমান করা হয়েছে, প্রাক মৌসুমেই ডেঙ্গু রোগী বেশি হবে।’
এ ব্যাপারে ডেঙ্গু চিকিৎসায় সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন তৈরির সঙ্গে যুক্ত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. কাজী তারিকুল ইসলাম সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের কেন্দ্র থেকে শুরু করে সবার অংশগ্রহণ জরুরি। ২০০০ সালে এটা বাংলাদেশে আসার পর মাঝে পরিস্থিতি ভালো ছিল। কিন্তু কভিডের আগের বছর একটা বড় সংক্রমণ দেখেছি, গত বছর দেখলাম, এবারও হয়তো এমন কিছু একটা হতে পারে।’
ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে ১১ পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখা। গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব পরামর্শ দেওয়া হয়।
হুমায়ুন ফরীদি ভাইয়ের সঙ্গে আমার পরিচয় হয় মূলত ‘আহা!’ ফিল্ম নির্মাণের যোগসূত্র ধরে। তার আগে দুয়েকবার দেখা হয়েছিল কিন্তু উনি আমাকে তেমনভাবে হয়তো চিনতেন না। এর মধ্যে আমার যে চরিত্র সেটি ফরীদি ভাই ছাড়া আর কেউ করতে পারবে বলে মনে হচ্ছিল না, উনার অভিনয়ের উচ্চমান তো ছিলই, তার সঙ্গে উনি যেকোনো চরিত্রকে যেভাবে হ্যান্ডল করেন, সেটিও বড় কারণ ছিল। কিন্তু শুনলাম, তিনি শিডিউল নিয়ে খুব বিপদে ফেলেন পরিচালকদের, সম্মানীর ব্যাপারটিও বড় নানা কথা। প্রচুর সাহস সঞ্চয় করে কোনো এক বিকেলে প্রথম গিয়ে উনাকে বলি, আমি আর্কিটেক্ট, একটি ছবি বানানোর চেষ্টা করছি। আপনাকে আমার ছবিতে লাগবে। গল্প আর চরিত্রের কথা শুনে উনি একবাক্যে বলে দেন ‘আমি করব।’ আমি রীতিমতো বিস্মিত হই এবং আমার সিনেমাটির বিষয়, গঠন, রীতি কিংবা খুঁটিনাটি বিষয়গুলো নিয়ে উনার সঙ্গে আলোচনা করি। উনি আমার সিনেমার প্রতি আগ্রহ দেখে উৎসাহ দেন। উনার কাছে যাওয়ার আগে তার সম্পর্কে অনেকেই কাস্টিং জটিলতার নানা কিছু বলেছিল। কিন্তু আমি কথা বলার পর মনে হলো উনি ওইসব কথার উল্টো ব্যক্তি; উনি সরল শিল্পীসত্তার মানুষ।
সবচেয়ে মজার বিষয় হলো ‘আহা!’ আমার জীবনের প্রথম ছবি। এর আগে আমি কোনো ছবির শুটিং দেখিনি, ছবি বানানোর তো প্রশ্নই আসে না। আমার এই ‘আহা!’ চলচ্চিত্রটি বানানোর জন্য যে কয়েকজন মানুষের অনুপ্রেরণা আমাকে শক্তি জুগিয়েছে, তাদের মধ্যে হুমায়ুন ফরীদি ভাই অন্যতম। এর মূল কারণ আমার কাছে মনে হয় প্রতিটি চরিত্রের অভিনেতা-অভিনেত্রীরা ব্যক্তি মানুষ হিসেবে কেমন সেটা বোঝার চেষ্টা করেছি আপ্রাণ। তার জন্য আমার অনেক ঝুঁকিও পোহাতে হয়েছে। যেমন একটি উদাহরণ না দিলেই নয়। ‘আহা!’ চলচ্চিত্রের একটি গুরুত্ববহ চরিত্র ‘খাদেম’। এ চরিত্রে অভিনয়ের জন্য ঠিক করি, আমার একটি প্রিয় বড় ভাই যুবদা, খালেদ খানকে। এর আগে আমি খালেদ খান ভাইয়ের সঙ্গে থিয়েটারের মঞ্চসজ্জার কাজও করেছি বেশ কয়েকবার। উনার সঙ্গে নানাবিধ বিষয়ে কথাবার্তা হতো; দেশের সংস্কৃতি, ভবিষ্যৎ, শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাধীন পেশাজীবীর ভূমিকা এমনকি আমাদের পারিবারিক বিভিন্ন বিষয়েও আলোচনা হতো। খুব ভালোভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার পর আমি চলচ্চিত্রটির শুটিং শুরু করি। দুঃখজনক হলেও সত্য শুটিংয়ের প্রথম দিনেই খালেদ খান অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন আমাকে ফরীদি ভাই বলেন তুমি কী চাও? আমি বলেছিলেম, যেকোনো মূল্যে আমি খালেদ ভাইকে আমার চলচ্চিত্রে চাই। তখন ফরীদি ভাই ভীষণ রকমের ব্যস্ত শিল্পী ছিলেন। অনেক কাজ তার হাতে ছিল। সবাই তাকে চাইছিল। কিন্তু ফরীদি ভাই আমাকে সময়টি দিয়েছিলেন। এজন্য আমি উনার প্রতি চিরকৃতজ্ঞ এবং আজকের এই ‘আহা!’ চলচ্চিত্রটি সমাদৃত হওয়া বা জনমানুষের কাছাকাছি যাওয়ার জন্য হুমায়ুন ফরীদি ভাইয়ের ‘কিসলু’ চরিত্রের অবদান অনেক বলে আমি মনে করি। সিনেমর শুটিং শেষে ফরীদি ভাইয়ের সম্মানী দিতে গিয়ে আমি ভীষণভাবে ইতস্ততবোধ করি। তখন একটি বইয়ের ভেতর সম্মানী দিয়ে ফরীদি ভাইয়ের হাতে দিই। এতে ফরীদি ভাই খুব খুশি হন। উনার সম্মানী ‘কত না কেমন’ হতে পারে এ বিষয়টিই অবান্তর হয়ে যায়। আমার এ সম্মানী দেওয়ার ভঙ্গিটিকে উনি শৈল্পিক দৃষ্টিতে দেখেছিলেন।
‘আহা!’ চলচ্চিত্রের কিসলু হাসান চরিত্রে হুমায়ুন ফরীদি অভিনয় করতে করতে বেশ মজা পেয়ে যান এবং উনি নিজেই আমাকে বলেন তুমি চাইলে কিসলু চরিত্রটি আরও বাড়াতে পারো, আমার কোনো আপত্তি নেই। আমি চরিত্রটি বেশি উপভোগ করছি। নানামুখী অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে ছবিটির শুটিং শেষ হয়। এরপর ছবির প্রথম স্ক্রিনিংয়ে ফরীদি ভাইকে আমন্ত্রণ জানাই। উনি আসেন। এরপর যতবার ছবির প্রমোশনের জন্য উনাকে ডেকেছি, ততবারই উনি আগ্রহ নিয়ে এসেছিলেন।
ফরীদি ভাই সম্পর্কে একটা বিষয় না বললেই নয়, তা হলো উনি গভীরভাবে ‘মানবিক দায়িত্ববোধসম্পন্ন’ মানুষ ছিলেন। উনার সরলতা, উদারতা, সমাজের বিভিন্ন বিষয়ের প্রতি যে সচেতন জ্ঞান ও মানবিকতা ছিল, তার এখন হয়তো অনেক শিল্পীর মধ্যেই নেই। ফরীদি ভাইয়ে মতো মানবিক, শিল্পবোধসম্পন্ন ও গুণী মানুষের প্রয়োজনবোধ আমরা প্রতিনিয়তই করি। উনার অপূর্ণতা আমাদের মধ্যে সবসময়ই বিরাজ করে। আসলে উনাকে গভীরভাবে অনুভব করি।
আমার পরের দুটি ছবিও আমি ফরীদি ভাইকে নিয়ে ভেবেছিলাম, তখন তিনি আর নেই। রাজনীতির সঙ্গে যে সংস্কৃতির যোগাযোগ সেখানে উনি সবচেয়ে সৎভাবে আলাপটা করতেন, বুঝতেন ও সতীর্থদের বোঝাতেন। উনার সঙ্গে যখন-তখন কথা বলা যেত যেকোনো বিষয়ে। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে খুব বেশি দরকার ছিল ফরীদি ভাইয়ের এ সময়ে, অতি অভিনয় না করে চরিত্র নির্মাণের ভার্সেটালিটি নিয়ে এমন কে আর আছে!
আমার জন্য খুব দুর্ভাগ্য মনে হয়, শেষদিকে খুব কাছের সম্পর্ক থাকার পরও ফরীদি ভাইকে আমি কোনো শাসন করিনি, তার আপাত বৈরাগ্য ও হতাশা দূর করার চেষ্টা করিনি, এজন্য অপরাধবোধও হয় খুব। গভীর রাতে হাইওয়েতে দরাজ গলায় ফরীদি ভাইয়ের গলায় ‘নবীন কিশোর তোমাকে দেব ভুবনডাঙার হাসি’ শোনার মতোই নানা কারণে উনাকে মিস করি আমি। শুভ জন্মদিন প্রিয় ফরীদি ভাই।
লেখক : চলচ্চিত্র পরিচালক, স্থপতি, কবি ও গীতিকার
চলচ্চিত্র জগতের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আসর কান চলচ্চিত্র উৎসবে বরাবর আলোচনায় থাকে কার হাতে যাবে সিনেমার মুন্সিয়ানার স্বীকৃতি পাম দ’র বা স্বর্ণপাম। এবার কানের ৭৬তম আসরে এই সম্মান ঝুলিতে পুরল ফরাসি নির্মাতা জাস্তিন ত্রিয়েতের ‘অ্যানাটমি অব আ ফল’ চলচ্চিত্র।
তরুণ নির্মাতা জাস্তিন ত্রিয়েতের ক্রাইম থ্রিলার ‘অ্যানাটমি অব আ ফল’ সিনেমার গল্প এগোতে থাকে এক নারীর স্বামীর হত্যাকাণ্ডের পর থেকে। স্যান্দ্রা নামের সেই নারী তার স্বামী স্যামুয়েল ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ছেলে ড্যানিয়েলকে নিয়ে এক নির্জন পাহাড়ি এলাকায় থাকছিলেন এক বছর ধরে। স্যামুয়েলকে বাড়ির বাইরে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় একদিন। সন্দেহজনক মৃত্যুর জন্য তদন্ত শুরু হয়। স্যান্দ্রাকে সন্দেহ করা শুরু করেন তদন্তকারীরা। এক বছর পরে ড্যানিয়েল তার মায়ের বিচারে অংশ নেয়। স্যান্দ্রার একমাত্র ছেলে হয় মামলার সাক্ষী। নৈতিক দ্বিধায় পড়ে যায় সন্তান। এই খুনের পেছনে লুকিয়ে থাকে আরেকটি সত্য। সেই চমকটাই মুগ্ধ করেছে বিচারকদের। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে কানের ইতিহাসে নারী নির্মাতাদের মধ্যে তৃতীয় নারী হিসেবে স্বর্ণপাম জিতে নিয়েছেন ত্রিয়েত। ১৯৯৩ সালে জেন ক্যাম্পিয়ন প্রথম নারী নির্মাতা হিসেবে স্বর্ণপাম জিতে নেন। ২০২১ সালে স্বর্ণপাম জেতেন ফরাসি নির্মাতা জুলিয়া দুকুরনো।
ফ্রান্সের চলচ্চিত্র নির্মাতা জাস্তিন ত্রিয়েত পরিচালনার পাশাপাশি চিত্রনাট্য রচনা ও সম্পাদনাও করেন। প্যারিস ন্যাশনাল স্কুল অব ফাইন আর্টস থেকে পড়াশোনা শেষ করে চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করেন তিনি। নির্মাতার প্রথম ফিচার ছবি ‘এজ অব প্যানিক’-এর প্রিমিয়ার হয়েছিল ২০১৩ সালের কান উৎসবে। ২০১৯ সালের কান উৎসবেও পাম দ’রের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন তিনি।
বাংলাদেশ সময় শনিবার রাত ১২টার পর ঘোষণা করা হয় ৭৬তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের বিজয়ীদের নাম। প্রধান শাখার অন্যান্য পুরস্কারের মধ্যে গ্র্যান্ড প্রিক্স জিতেছে জোনাথন গ্লেজারের সিনেমা ‘দ্য জোন অব ইন্টারেস্ট’, জুরি প্রাইজ জিতেছে আকি কাউরিসমাকির সিনেমা ‘ফলেন লিভস’, সেরা নির্মাতার পুরস্কার জিতেছেন আঙ হুঙ ট্রান (পট আউ ফেউ)। সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন কোজি ইয়াকসু (পারফেস্ট ডেজস), সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতেছেন মেরভি ডিজদার (অ্যাবাউট ড্রাই গ্রাসেস)। চিত্রনাট্যের জন্য পুরস্কার পেয়েছেন সাকামোতো ইয়ুজি (মনস্টার)।
লালমনিরহাটের তিস্তা টোল প্লাজা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে তল্লাশি চালিয়ে বাসের লকারে থাকা একটি চালের বস্তা থেকে ৩৮ লাখ টাকা উদ্ধার করেছে লালমনিরহাট সদর থানা পুলিশ। এ সময় মমিনুল ইসলাম নামের এক যাত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ।
গতকাল রবিবার দুপুরে সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নের লালমনিরহাট-রংপুর মহাসড়কের তিস্তা টোল প্লাজা এলাকায় নাবিল পরিবহনের একটি বাস থেকে এই টাকা উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ জানায়, তিস্তা টোল প্লাজা এলাকায় পুলিশের নিয়মিত ডিউটি ও তল্লাশির কাজ চলছিল। দুপুর ১২টার দিকে কুড়িগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী যাত্রীবাহী নাবিল পরিবহনের একটি বাসের লকারে রাখা যাত্রীদের লাগেজ ও বস্তা তল্লাশি করা হয়। এ সময় একটি চালের বস্তার ভেতর রাখা ৩৮ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। পরে মমিনুল ইসলাম নামে এক যাত্রীকে আটক করে পুলিশ। মমিনুল কুড়িগ্রামের উলিপুর থানার কিশামত তবকপুর গ্রামের ছাবেদ আলীর ছেলে।
সদর থানার ওসি এরশাদুল আলম বলেন, ‘চালের বস্তায় সন্দেহজনক ৩৮ লাখ টাকা জব্দ করা হয়েছে। মমিনুল নামে একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। মমিনুলের দাবি, তার মামার কনস্ট্রাকশন কাজের লেনদেনের টাকা নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিলেন তিনি। বিষয়টি সম্পর্কে আরও খোঁজখবর নিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সদ্য সমাপ্ত গাজীপুর সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের পরাজিত প্রার্থী ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. আজমত উল্লা খান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। গতকাল রবিবার বিকেলে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে দেখা করেন। এ সময় আজমত উল্লা তার লেখা দুটি বই প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেন বলে তার উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে (বাসস) জানিয়েছেন।
এদিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র জায়েদা খাতুন গতকাল দুপুরে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন গাজীপুর সিটির সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম।
আজমত উল্লা খান গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার সময় তাকে উপহার দেওয়া বই দুটি হলো ‘রাজনীতির মহাকবি স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ এবং ‘বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বগুণ আদর্শ ব্যক্তি ও জাতি গঠনে অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত’।
‘রাজনীতির মহাকবি স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ বইটিতে বঙ্গবন্ধুর বংশপরিচয়, কেন তিনি জাতির পিতা, বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা, বঙ্গবন্ধুর ইসলামি মূল্যবোধ ও চেতনা, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা আন্দোলনে শেখ মুজিবুর রহমান, শেখ মুজিবের রাজনৈতিক সংগ্রাম, শেখ মুজিব ঘোষিত ৬ দফা আন্দোলন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ও শেখ মুজিবের রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন, বঙ্গবন্ধুর ডাকে অসহযোগ আন্দোলনে গাজীপুরসহ শিল্পনগরী টঙ্গীবাসীর ভূমিকা, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন মুজিবনগর সরকার ও বাঙালির মুক্তি সংগ্রাম, বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করা হয়।
‘বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বগুণ আদর্শ ব্যক্তি ও জাতি গঠনে অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত’ বইটিতে বঙ্গবন্ধু : নেতা ও নেতৃত্বগুণের জীবন্ত কিংবদন্তি ব্যক্তিত্ব, শেখ মুজিবুর রহমানের দায়িত্ববোধ ও সংগ্রাম, সাংগঠনিক দক্ষতা, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বগুণ থেকে রাজনৈতিক শিষ্টাচার ও শিক্ষা, শেখ মুজিবুর রহমানের সহনশীলতা ও দক্ষতা, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বগুণের পরিচয় ও জাতি গঠনের প্রেরণা, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও জাতীয় নেতৃত্বের প্রতীক, ৭ মার্চের পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ, বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার প্রস্তুতি, ২৫ মার্চের মধ্যরাতেই বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর সম্পর্কে বিশ্বের বিখ্যাত ব্যক্তিদের উক্তি তুলে ধরা হয়।
জন্মগতভাবে আওয়ামী লীগ করেন বলে দাবি জাহাঙ্গীরের : ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হারিয়ে মা জায়েদা খাতুনকে গাজীপুর সিটির নির্বাচনে বিজয়ী করা সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা জাহাঙ্গীর আলম দাবি করেছেন তারা মা-ছেলে জন্মগতভাবে আওয়ামী লীগ সমর্থক। তিনি বলেন, ‘আমি ও আমার মা জন্মগতভাবে আওয়ামী লীগ। কেউ মানুক আর না মানুক, সেটা তাদের ব্যাপার।’ মা জায়েদা খাতুনকে সঙ্গে নিয়ে গতকাল দুপুরে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন জাহাঙ্গীর আলম।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জন্মগতভাবে আওয়ামী লীগ সমর্থক। আমরা মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে এসেছি, নেত্রীর বাড়িতে এসেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমরা সহযোগিতা চাই। আমরা জন্ম থেকে আওয়ামী লীগ করেছি। আওয়ামী লীগ সমর্থক হিসেবেই আছি। অন্যরা কে কী বলল, তাতে আমাদের কিছুই আসে যায় না।’
আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা আমার বিষয় নয়। এটি দলীর বিষয়। তাই দল যেটা ভালো বুঝবে সেটাই করবে।’
এর আগে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র ও সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরের মা জায়েদা খাতুন।
শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের শহীদ সদস্যদের রুহের মাগফিরাত কামনায় ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন জায়েদা খাতুনসহ উপস্থিত নেতাকর্মীরা।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে জায়েদা খাতুন বলেন, ‘সবাইকে সঙ্গে নিয়ে নগরীর সর্বাত্মক উন্নয়নে কাজ করতে চাই। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের উন্নয়নে আমি সবার সহযোগিতা চাই। সবার কাছে সহযোগিতা নেব। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে, সবার সহযোগিতা নিয়ে গাজীপুরের উন্নয়নে মিলেমিশে কাজ করব। উন্নয়নের কাজে আমার ছেলে জাহাঙ্গীরও সঙ্গে থাকবে।’ এ সময় সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমসহ কয়েক হাজার নেতাকর্মী তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কোনো অবস্থাতেই আক্রমণকারী না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, আমরা ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশনের প্রক্রিয়া শুরু করেছি। আমরা বাংলাদেশে প্রথম ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশনের জন্য আইন করে নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন করেছি। ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশনের ক্ষেত্র আমরা প্রস্তুত করছি এবং প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে।
গতকাল রবিবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ শাখা ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের এক যৌথসভায় এসব কথা বলেন তিনি। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, মার্কিন ভিসানীতিতে বলা হচ্ছে যে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য। ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন করার অন্তরায়, কেউ যেন বাধা না দিতে পারে এ কারণে মার্কিন ভিসানীতি। এ কারণে আমাদের মাথাব্যথার কোনো কারণ নেই। তিনি বলেন, যারা ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশনে বাধা দেবে তাদের বিরুদ্ধে ভিসানীতি প্রয়োগ করবে। অথচ তারা ঘোষণা করে বাধা দিচ্ছে। কেরানীগঞ্জে যে নাটক সাজাল, আওয়ামী লীগের অফিস আক্রমণ করে ভাঙচুর করল, নাটক সাজিয়ে ইচ্ছা করে ওখানে গোলমালের সৃষ্টি করল। খাগড়াছড়িতেও তাই, আমাদের অনেক কর্মী আহত হয়ে হাসপাতালে। তাদের এটা লক্ষ্য, অথচ তারা বোঝাতে চায় যে আওয়ামী লীগ বাধা দিচ্ছে। সেজন্য আপনাদের বলি আমাদের শান্তি সমাবেশ নির্বাচন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ থাকুক।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দলটির সাধারণ সম্পাদক বলেন, নেত্রীর নির্দেশ, সব জেলা, মহানগর, ইউনিয়ন, প্রয়োজনে ওয়ার্ড পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত রাখব। আপনাদের আবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, যেহেতু আমরা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, সেজন্য এ শান্তি সমাবেশ। কারও সঙ্গে পাল্টাপাল্টি মিটিং, সমাবেশ করা আমাদের রাজনীতি নয়।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, কোনো অবস্থাতেই আক্রমণকারী হবেন না। কারণ বিএনপি এখন যেকোনোভাবে দেখাতে চায় যে আমরা আক্রমণকারী। কাজেই কোনো অবস্থাতেই মাথা গরম করবেন না। বাংলাদেশের জনগণ আমাদের সঙ্গেই আছে। গাজীপুরে আমরা কিছু ভোটে হেরে গেছি, কিন্তু নির্বাচন গণতান্ত্রিক, অবাধ হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে দেশ-বিদেশে কেউ কিছু বলতে পারেনি। আমরা আমাদের গণতন্ত্রকে জয়ী করেছি সুষ্ঠু এবং অবাধ নির্বাচন করে। সামনেও বরিশাল, খুলনা এবং রাজশাহীতে ইলেকশন আছে, এ নির্বাচনগুলোও অবাধ এবং সুষ্ঠু হবে।
বিএনপি আমলের কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা অনেক সহ্য করেছি। এ অফিসের সামনে ২১ ফেব্রুয়ারির আলোচনা আমাদের করতে দেয়নি। এ অফিসের সামনে মতিয়া চৌধুরীকে, মোহাম্মদ নাছিমকে পেটানো হয়েছে। আমাদের নেতাকর্মীদের বারবার নির্যাতন-অত্যাচার করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকবে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, নিজেরা নিজেদের সঙ্গে লড়াই করলে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিএনপির সরকার তাড়ানোর হুমকির বিষয়ে তিনি বলেন, সরকারকে তাড়াতে হবে, দেখি কে কাকে তাড়ায়। সরকারকে তাড়াবেন বাংলাদেশের মানুষ বুঝিয়ে দেবে। ভোটে বাধা দিতে আসেন, ভালো করে বুঝিয়ে দেবে।
যৌথ সভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুরসহ মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ এবং সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা।
মূল লড়াইয়ের আগে গা গরমের খেলা। সেখানে ব্যাটসম্যানরা ছিলেন আগ্রাসী। তাতে পাকিস্তান পায় ৩৪৫ রানের বড় সংগ্রহ। তারপরও জিততে পারল না। নিউজিল্যান্ড জয় তুলে নিয়েছে ৩৮ বল হাতে রেখেই।
পাকিস্তানের ব্যাটারদের মধ্যে সেঞ্চুরি পেয়েছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। ৯৪ বলে ১০৩ রান করে অবসর নেন তিনি। এছাড়া বাবর আজম ৮০ ও সৌদ শাকিল ৭৫ রান সংগ্রহ করেছেন।
পাকিস্তানের দেয়া ৩৪৬ রানের জবাব দিতে নেমে ৫ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে নিউজিল্যান্ড।
কিউই ব্যাটারদের মধ্যে ওপেনিংয়ে নামা রাচিন রবীন্দ্র ৭২ বলে ৯৭ রান সংগ্রহ করে দলের জয়ে বড় অবদান রাখেন। এছাড়া দীর্ঘদিন পর দলে ফেরা কেন উইলিয়ামসন ৫৪, ড্যারেল মিচেল ৫৯ আর মার্ক চাপম্যান ৬৫ রান করে দলকে ৫ উইকেটের জয় এনে দিয়েছেন।
চলমান সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগে খেলতে নেমে দুই দলের মাঝে হাতাহাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিজেদের শেষ ম্যাচে আজ শুক্রবার রাত দশটার দিকে মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামের ক্রিজে নেমেছিলেন মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ ও দীপঙ্কর দীপনের টিম।
খেলা চলাকালীন সময়ে দীপঙ্কর দীপনের দলের খেলোয়াড়দেরকে প্রথমে উস্কানি দিতে থাকে রাজের টিম। এরপর তাদের দলের লোকজন এসে দীপনের টিমের এক প্লেয়ারকে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে মারধর করতে থাকে। এরপর দীপনের টিমের খেলোয়াড়রা উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং চেয়ার ছুঁড়াছুড়ি শুরু করে। এক পর্যায়ে দুই দলের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়।
দীপনের দলের খেলোয়াড়দের একজন অভিনেতা মনির হোসেন শিমুল অভিযোগ তুলে বলেন, তারা বাইরে থেকে সন্ত্রাসী এনে আমাদের উপর আক্রমণ শুরু করে। এটা কোন ধরণের সিসিএল খেলা?
অন্যদিকে একই দলের আরেক খেলোয়াড় চিত্রনায়ক জয় চৌধুরী বলেন, রাজ ভাইয়ের টিম থেকে আমাদের দলের উপর আক্রমণ শুরু করে। তারা বাইরে থেকে লোকজন নিয়ে এসেছে। আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে একজনকে তুলে নিয়ে মারধর করতে শুরু করে। এরমধ্যে মৌসুমী হামিদ আহত হন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোস্তফা কামাল রাজের দলের পক্ষ থেকে অভিযোগটি অস্বীকার করা হয়। তারা জানান, প্রয়োজন মনে করলে তারা পরে মন্তব্য দেবেন।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে উৎসাহ দিতে তিনদিন ব্যাপী সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ (সিসিএল) আয়োজন করা হয়েছে। এতে মোট ১৬ টি দল অংশ নিয়েছে। আগামীকাল ফাইনালের মধ্য দিয়ে এ আসর সমাপ্ত হবে।
নিজের গান দিয়ে ইউটিউব চ্যানেলের যাত্রা শুরু করলেন ক্লোজআপ তারকা নোলক বাবু।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর বনশ্রীর এক রেস্তোরায় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলের উদ্বোধন করেন এ গায়ক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তার মা।
নোলক বাবুর ইউটিউব চ্যানেলে উন্মুক্ত হয়েছে তার নতুন গান 'মানুষ'। গানের কথা লিখেছেন তরুন সিং, সুর করেছেন শিল্পী নিজেই। গানটির সংগীতায়োজন হৃষিকেশ রকি।
নোলক বাবু বলেন, গানটি গাইতে পেরে আমি মুগ্ধ।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে পুলিশ। নির্বাচনে কী উপায়ে নিরাপত্তা দেওয়া হবে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। তবে সরকারের হাইকমান্ড থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে তথ্য এসেছে, ঘাপটি মেরে থাকা পুলিশের কিছু কর্মকর্তা ও সদস্য সরকারবিরোধীদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রাখছে। পুলিশের একটি প্রতিবেদনেও তথ্য এসেছে সারা দেশে অন্তত আড়াইশো কর্মকর্তা আছেন তারা সরকারবিরোধী হিসেবে পরিচিত। তাদের পুরো কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
এদিকে, চলতি মাস ও আগামী মাসের মধ্যে পুলিশে আরও বড় ধরনের রদবদল করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তালিকাও করা হয়েছে। পাশাপাশি উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্রসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদিও কেনার চেষ্টা করছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানান, সামনের দিনগুলোতে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা। এ নিয়ে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা আগাম সতর্কবার্তাও দিয়েছে। যেকোনো বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধ করতে কিছুদিন আগে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সবকটি ইউনিট প্রধান ও জেলার এসপিদের কাছে বার্তা পাঠানো হয়েছে। বার্তায় বলা হয়েছে রাজনৈতিক দুবৃর্ত্তায়নের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি পুলিশের মধ্যে কোনো সদস্য সরকারবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার তথ্য পেলে জানাতে বলা হয়েছে। ঢাকাসহ সারা দেশেই সব পুলিশ সদস্যকে সতর্ক থাকতে হবে। নির্বাচনকালীন যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। পেশাদার সন্ত্রাসীসহ অন্য অপরাধীদের ধরতে বিশেষ অভিযান চালাতে হবে।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঘাপটি মেরে থাকা পুলিশের কিছু সদস্যের কর্মকান্ড নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। এই সংখ্যা প্রায় আড়াইশো মতো হবে। সংখ্যা আরও বাড়তেও পারে। ইতিমধ্যে তালিকা করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে সরকারের হাইকমান্ডকে অবহিতও করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যেকোনো পরিস্থিতির জন্য পুলিশকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় পুলিশে উদ্বেগ আছে। বৈধ অস্ত্রের সংখ্যার খোঁজ নেওয়া, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও অস্ত্র কারবারিদের গ্রেপ্তার করতে বিশেষ অভিযান চালাতে ইতিমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে অভিযানের নির্দিষ্ট তারিখ এখনো ঠিক হয়নি। হুট করেই আমরা বিশেষ অভিযান শুরু করব। কেপিআই স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন যথাসময়ে হবে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। নির্বাচন নিয়ে যাতে কোনো মহল বা চক্র নাশকতামূলক কর্মকান্ড চালাতে না পারে সে জন্য মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সতর্ক আছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (অপারেশন) আনোয়ার হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশের সবধরনের প্রস্তুতি আছে। দাগি সন্ত্রাসীসহ অন্য অপরাধীদের ধরা ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করতে দ্রুত সময়ের মধ্যে বড় ধরনের অভিযান চালানোর পরিকল্পনা আছে আমাদের।
পুলিশ সূত্র জানায়, আড়াইশো পুলিশ কর্মকর্তার কর্মকান্ড নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। তাদের মোবাইল নম্বর সার্বক্ষণিক ট্র্যাকিং করা হচ্ছে। এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যদেরও খোঁজ রাখা হচ্ছে। নজরদারির মধ্যে থাকা বেশ কয়েকজন পুলিশ সুপার, অ্যাডিশনাল পুলিশ সুপার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ইন্সপেক্টর, সাব-ইন্সপেক্টর আছেন। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের অ্যাডিশনাল ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল বা নেতাদের সাপোর্ট দেওয়া আমাদের কাজ না। জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আমাদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের জন্য উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্র ও যানবাহন ক্রয় করা হচ্ছে। পাশাপাশি ৫০ লাখের মতো রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড কেনা হচ্ছে। আগামী মাসের মধ্যে এসব সরঞ্জাম বাংলাদেশে আসবে বলে আশা করছি। ডিএমপি, সিএমপি, কেএমপি, আরএমপি, বিএমপি, এসএমপি, আরপিএমপি, জিএমপি কমিশনার, বিশেষ শাখা (এসবি), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), অপরাধ তদন্ত বিভাগ, পিবিআই, টুরিস্ট পুলিশ, এটিইউ, রেলওয়ে পুলিশ, নৌপুলিশ, এপিবিএন, হাইওয়ে, শিল্পাঞ্চল পুলিশ প্রধান, সব অ্যাডিশনাল আইজিপি, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা ও রংপুর রেঞ্জে নতুন আগ্নেয়াস্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি পাঠানো হবে। ইতিমধ্যে ইউনিট প্রধানরা পুলিশ সদর দপ্তরে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছেন। বিষয়টি আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকারবিরোধীরা নানা ষড়যন্ত্র করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করতে উঠেপড়ে লেগেছে তারা। বিএনপি আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও করছে। তারা পুলিশের ওপর হামলা করছে। যানবাহনে আগুন দিচ্ছে। আর এসব মোকাবিলা করতে পুলিশকে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে। অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে পুলিশ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। অপরাধীদের ধরতে পুলিশের বিশেষ অভিযান শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।