
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক সরকার। ২০১১ সালে দশম বেতন গ্রেডে শারীরিক শিক্ষা দপ্তরের ফিজিক্যাল ইন্সট্রাক্টর পদে যোগদান করেন এই কর্মকর্তা। যোগদানের পর মধ্যবর্তী সময়ে কোনো পদোন্নতি না নিয়েই এক লাফে সপ্তম গ্রেডের কর্মকর্তা বনে যান তিনি। এই কর্মকর্তার পাওয়া পদোন্নয়ন প্রক্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়টির অর্গানোগ্রাম ও পর্যায়োন্নয়নের নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
ওমর ফারুক নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে ২০১৫-১৬ অর্থবছর পর্যন্ত দশম গ্রেডেই বেতনভাতাদি পেয়েছেন। পরে তিনি ফিজিক্যাল ইন্সট্রাক্টর পদের বেতন স্কেল পরিবর্তন করার জন্য আবেদন জানান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে। বিপরীতে ২০১৪ সালে নবম গ্রেডে সেই কর্মকর্তার উন্নীত হওয়ার সুযোগ থাকলেও তা তিনি গ্রহণ করেননি। যার কারণে সেই সময়ে তিনি দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবেই চাকরিতে বর্তমান ছিলেন।
দ্বিতীয় শ্রেণিতে কর্মরত থাকা অবস্থাতেই ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পদোন্নতি পেয়ে হয়ে যান সহকারী পরিচালক (সপ্তম গ্রেড)। অথচ নীতিমালা অনুযায়ী সহকারী পরিচালক হতে হলে নবম গ্রেডে কমপক্ষে ৪ বছরের চাকরিকাল থাকতে হবে।
এর আগে এই কর্মকর্তার করা আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় বলেও সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসন। সেই নথিটি হাতে আসে দেশ রূপান্তরের। সেখানে দেখা যায় আইনি মতামত জানাতে গিয়ে আইন কর্মকর্তা লিখেছিলেন, পদের আপগ্রেডেশন হলেও অভিজ্ঞতার আপগ্রেডেশন না থাকায় তার আবেদনের বিষয়ে কার্যকর করার কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই। এই আইনি মতামতটির অনুমোদনও দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির সে সময়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান।
অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে অর্থনৈতিক লেনদেনের মাধ্যমে এমন সুবিধা বাগিয়ে নিয়েছিলেন এই কর্মকর্তা। তবে কোনো লেনদেন হয়নি বলে মন্তব্য করেন ওমর ফারুক। তিনি বলেন, আমি আবেদন করেছি প্রশাসন আমাকে দিয়েছে। নবম গ্রেডে আবেদন করার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কেন করলেন না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আবেদন করে আবার তা বাতিল করেছি। নাহলে আগের সময়টা তো গণনায় আসবে না।
দশম গ্রেড থেকে সরাসরি ৭ম গ্রেডে যাওয়া অনিয়ম কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি অনিয়ম করিনি। করলে প্রশাসন করেছে। আমি কেন এই দায় নেব।
দশম গ্রেড থেকে সরাসরি সপ্তম গ্রেডে পদোন্নয়ন পাওয়ায় দপ্তরটির জ্যেষ্ঠতায় এসেছে ভিন্নতা। যা মানতে না পেরে দপ্তরটির আরেক কর্মকর্তা ফাহাদুজ্জামান শিবলী জ্যেষ্ঠতা ফিরে পাওয়ার জন্য তদন্ত করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দাবি জানিয়ে আবেদন করেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে। তবে একাধিকবার তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। নতুন করে তৃতীয় বারের মতো তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসন। তবে নতুন গঠন করা কমিটিও দৃশ্যমান কাজ করেনি। বিপরীতে তদন্ত কমিটিতে সদস্য হিসেবে থাকা অর্থ ও হিসাব দপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম পদত্যাগ করেছেন।
পদত্যাগের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুজনই আমার লোক। সিদ্ধান্ত নিতে গেলে এক পক্ষ কষ্ট পাবে অন্য পক্ষ খুশি হবে। যেটি আমার জন্য ভালো হবে না। তাই নিরপেক্ষ থাকলে ভালো হয়। ওমর ফারুকের পদোন্নয়ন অনিয়মে তার সম্পৃক্ততা থাকার অভিযোগের বিষয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, আমার থাকার সুযোগ নেই। তাই তো সরে দাঁড়াচ্ছি তদন্ত কমিটি থেকে।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানোগ্রাম সর্বশেষ হালনাগাদ হওয়ার পরের সময় থেকে চাকরিকাল গণনা করতে গেলেও তা চার বছর পূরণ হয় না। চাকরি নীতিমালা ২০১৮ (সর্বশেষ) অনুযায়ী চার বছরের শর্ত পূরণ করতে হলে তার ২০২১ সাল পর্যন্ত চাকরিরত সময় প্রয়োজন।
এদিকে নতুন অভিযোগ-অর্থনৈতিক লেনদেনের মাধ্যমে পুনরায় আপগ্রেডেশন নিয়ে উপপরিচালক হওয়ার চেষ্টায় ব্যস্ত ওমর ফারুক। তার ওই সংক্রান্ত ফাইলটি উপাচার্যের অনুমোদন হলেই আজ (বুধবার) পদোন্নয়ন বোর্ড অনুষ্ঠিত হবে। পদোন্নয়নের বিষয়ে শারীরিক শিক্ষা দপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক জিয়া উদ্দিন মন্ডল বলেন, ‘এই তথ্য আগে শুনিনি ও বিস্তরভাবে আগে জানতাম না। আগামীকাল (আজ) যেহেতু বোর্ড আমি এসব তথ্য বোর্ডে উপস্থাপন করব। আমি দপ্তরপ্রধান হিসেবে ১০ গ্রেড থেকে ৯ম গ্রেডে আসার তথ্য জানি না তার। সে সরাসরি সহকারী পরিচালকের বোর্ড করেছে।’
পদোন্নয়ন ও নিয়োগ সংক্রান্ত অস্বচ্ছতার বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ূন কবীর বলেন, বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই নিয়ে কোনো মন্তব্য করা যাবে না।
অন্যদিকে মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিয়েও পাওয়া যায়নি বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখরের বক্তব্য।
ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন, যারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে থাকবে তাদের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নিয়ে ভয়ের কিছু নেই।
তিনি বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে বাংলাদেশের মানুষ ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতিকে সহযোগিতা করতে এ ভিসানীতি ঘোষণা করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় এডওয়ার্ড এম কেনেডি সেন্টার ফর পাবলিক সার্ভিস অ্যান্ড দ্য আর্টসে (ইএমকে সেন্টার) যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কের ৫০ বছর শীর্ষক এক বিশেষ আলোকচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠান শেষে তিনি এ কথা বলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বাংলাদেশিরা যা চান, যুক্তরাষ্ট্রেরও চাওয়া একই। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তার প্রতিশ্রুতি পরিষ্কার করেছেন। বাংলাদেশি যাদের সঙ্গে আমার আলোচনা হয়েছে, তারাও একই মতপ্রকাশ করেছেন।’
প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির ওপর আস্থা থাকলে কেন যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি প্রকাশ করেছেÑ এ প্রশ্নে পিটার হাস বলেন, ‘এটা বাংলাদেশের মানুষকে সহযোগিতা করার জন্য করা হয়েছে।
পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনাজনিত কারণে মৃত্যুর বিষয়টি উল্লেখ করে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আসার পর প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করা জটিল হয়ে পড়ে। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের ভুলে বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে দেওয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পুলিশেরই কোনো কোনো সংস্থা আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে দেয়। এ পরিস্থিতিতে অধিকতর তদন্তকারী কর্মকর্তাকে নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়। তদন্তকারীকে অনেক ক্ষেত্রে টার্গেট করে খুনিরা। তারা প্রভাবশালী হলে তদন্ত বাধাগ্রস্ত করতে নানা ফন্দিও আঁটে। তদবিরে কাজ না হলে তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পুলিশের বিভিন্ন দপ্তরে মিথ্যা অভিযোগও করে। কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই সেই কর্মকর্তাকে বদলির নজিরও রয়েছে। এ কারণে থমকে যায় সেই মামলার তদন্ত প্রক্রিয়া।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) যে ২২টি মামলা তদন্ত করে রহস্য উদঘাটন করেছে, সেসব মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
পিবিআই সদর দপ্তর সূত্র বলছে, গত বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত পিবিআই ১০ হাজার ৪২৬টি হত্যা মামলা তদন্ত করেছে। এর মধ্যে ৬৫ শতাংশের বেশি মামলায় অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হয়েছে। প্রতিটি মামলার তদন্তই ছিল চ্যালেঞ্জের।
তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, যখনই ঘটনার ক্লু বের হতে থাকে তখন স্থানীয় বিভিন্ন মহল থেকে তদবির আসতে থাকে। সেসব তদবিরকে পাত্তা না দিলে অনেক ক্ষেত্রে প্রভাবশালীরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে মিথ্যা অভিযোগ করেন। তাতেও কাজ না হলে আর্থিক লেনদেনের মিথ্যা লিখিত অভিযোগ করে পুলিশ সদর দপ্তরে। তাদের মূল লক্ষ্য থাকে তদন্ত বাধাগ্রস্ত করা। সেই অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণ করতে গিয়ে দুর্বিষহ অবস্থায় পড়তে হয় সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তার।
জানতে চাইলে পিবিআইপ্রধান পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) বনজ কুমার মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বাদী বা বিবাদী কোনো ধরনের অভিযোগ করলে আমরা সিনিয়র অফিসার দিয়ে তদন্ত করি। সে ক্ষেত্রে যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয় আমরা ব্যবস্থা নিই। আর যদি প্রমাণিত না হয় তবে ওই তদন্ত কর্মকর্তাকে দিয়েই তদন্ত সম্পন্ন করি।’
চ্যালেঞ্জের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের সব কাজই চ্যালেঞ্জের। সবখানেই চাপ আসে, তবে সেটি মিনিমাইজ করা হয়। কারণ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয় এবং আইজিপি স্যার আমাকে সব ধরনের সাহায্য করেন।’
চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে তদন্ত কর্মকর্তার বিপদে পড়ার ঘটনার মধ্যে অন্যতম, মাদারীপুরের ডাসার থানার আটিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা পিকআপ ভ্যানচালক এনায়েত মল্লি হত্যা মামলা। ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর রাতে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যার নেতৃত্ব দেয় স্থানীয় খোয়াজপুর ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যানের ছেলে। কিন্তু এনায়েতের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে চিকিৎসক উল্লেখ করেন, ‘সাধারণ সড়ক দুর্ঘটনা’জনিত কারণে মৃত্যু। এ ঘটনায় এনায়েতের স্ত্রী রোমানা বেগম মাদারীপুর সদর মডেল থানায় মামলা করেন। তদন্তে পুলিশের রহস্যজনক আচরণে হতাশ হয়ে বাদী মামলাটি পিবিআইকে দিয়ে তদন্ত করার জন্য আইজিপির কাছে আবেদন করেন। পুলিশ সদর দপ্তর ওই বছরের ২৮ ডিসেম্বর মামলাটি পিবিআই গোপালগঞ্জকে তদন্তের নির্দেশ দেয়।
মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পান পিবিআই গোপালগঞ্জ জেলা ইউনিটের তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) আল-আমিন শেখ। তার তদন্তে দুই আসামি হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। তদন্তে উঠে আসে খোয়াজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী মুন্সির ছেলে রাজীব মুন্সির নেতৃত্বে এনায়েত মল্লিকে মারধর করলে তার মৃত্যু হয়। এরপরই আল-আমিনের ওপর বিভিন্ন মহল থেকে চাপ আসতে থাকে। কিন্তু তদন্ত অব্যাহত রাখলে তার বিরুদ্ধে পুলিশ সদর দপ্তরে অভিযোগ করা হয় যে, রিমান্ডে আসামিকে মারধরের ভয় দেখিয়ে আল-আমিন প্রায় ৭ লাখ টাকা উৎকোচ নিয়েছেন। অভিযোগের সত্যতা যাচাই ছাড়াই পিবিআই থেকে তাকে ট্যুরিস্ট পুলিশে বদলি করা হয়।
এরপর ২০২১ সালের ১৭ নভেম্বর পুলিশ সদর দপ্তর এসআই আল-আমিনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগটি মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর দপ্তর) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ফকিরকে তদন্ত করতে বলে। গত বছর ২৭ ফেব্রুয়ারি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ফকির প্রতিবেদন পাঠান পুলিশ সদর দপ্তরের সংশ্লিষ্ট বিভাগে। সেখানে এসআই আল-আমিনের বিরুদ্ধে করা অভিযোগের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে তিনি উল্লেখ করেন। এ ছাড়া এসআই আল-আমিন ২০০০ সালে মে মাসে পুলিশের চাকরিতে যোগদানের পর থেকে এখন পর্যন্ত ভালো কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২৭টি পুরস্কার পান বলেও ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
তবে এ প্রতিবেদনের বিভিন্ন ত্রুটি উল্লেখ করে আবার তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ফকিরকে। এভাবে তিন দফায় তদন্ত করলে প্রতিবারই নির্দোষ প্রমাণিত হন এসআই আল-আমিন।
এ বিষয়ে এসআই আল-আমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মামলাটির তদন্ত শুরু করার পর বিভিন্ন মহল থেকে তদবির আসতে থাকে। এক নম্বর আসামি রাজীব মুন্সির নাম বাদ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করে তারা। কিন্তু আমি সঠিক পথে তদন্ত এগিয়ে নিতে থাকলে একপর্যায়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে বদলি ও হয়রানি করা হয়।’
মামলাটির বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তদন্ত কর্মকর্তা বদল হওয়ার পর তদন্ত কচ্ছপগতিতে চলছে। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বাদীপক্ষের সঙ্গে আপসের জন্য দেন-দরবারও চলছে।
রাজশাহীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় ২০১৬ সালে করা মিজান ও সুমাইয়া হত্যা মামলার তদন্ত করে পিবিআইয়ের তৎকালীন এসআই মহিদুল ইসলাম। এ হত্যাকা-ের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আহত্মহত্যার কথা উল্লেখ ছিল।
মহিদুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তদন্তকালে নানা দিক থেকে সুপারিশ আসতে থাকে। সিনিয়র স্যারদের কাছেও তদবির আসে। তবে কোনো কিছুই তদন্তকে ব্যাহত করতে পারেনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘তদন্ত চলাকালে আমার বিরুদ্ধে বেনামি বেশ কিছু মিথ্যা অভিযোগ আসে এসপি স্যারের কাছে। তবে তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে আমি নির্দোষ।’
বিজ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তির বিকাশের প্রয়োজনীয়তার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুসলিম উম্মাহকে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে তাদের সন্তানদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার ক্ষেত্রে আরও বেশি বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি) ক্যাম্পাসে ৩৫তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি বলেন, ‘আমাদের সন্তানদের পড়াশোনার জন্য আরও বেশি পরিমাণে বিনিয়োগ করতে হবে।’
মুসলমানদের যথেষ্ট পরিমাণ সম্পদ রয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে বিজ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তির উন্নয়নে যথাযথভাবে এই সম্পদ ব্যবহার করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, আমরা এটা করতে পারব।’ তিনি আরও বলেন, ‘যখনই আমি ওআইসি সদস্য দেশে যাই, তাদের আমি এই অনুরোধই করি।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘ইসলামের স্বর্ণযুগে বিশ^সভ্যতা, বিজ্ঞান, ইতিহাস, সাহিত্য, দর্শন, রসায়ন, গণিত, চিকিৎসা, জ্যোতির্বিদ্যা, ভূগোলসহ জ্ঞানের আরও অনেক শাখায় মুসলিম স্কলারদের ব্যাপক অবদান রয়েছে, যা আমাদের মুসলিমদের ঐতিহ্যের গৌরবময় ইতিহাস গড়েছে। সেই যুগের মুসলিম স্কলাররা সংস্কৃতি, জ্ঞান অর্জন, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার এবং সমসাময়িক সাহিত্যে বিশে^ আধিপত্য বিস্তার করেছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘সেই অবস্থান থেকে বর্তমানে মুসলিম উম্মাহর এই পিছিয়ে থাকার কারণগুলো আমাদের বিশ্লেষণ করা দরকার।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্প্রীতির অভাব, জ্ঞান-বিজ্ঞানের অভাব এবং অন্য অনেক বিষয় মুসলিম উম্মাহর পতনের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি এই হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারের জন্য আমাদের মুসলিম উম্মাহকে মতভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি মুসলিম দেশগুলোকে, বিশেষ করে তাদের নিজস্ব শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও বিজ্ঞান এবং আধুনিক প্রযুক্তির বিকাশে আরও বেশি বিনিয়োগ করতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, আধুনিক যুগে মুসলিমরা মাত্র তিনটি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে এটাই এই আধুনিক যুগে গবেষণা, প্রযুক্তি ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে মুসলিম উম্মাহর অবদানের প্রকৃত উদাহরণ। তিনি অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, ‘মুসলিম জাতির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে জোরালো প্রচেষ্টা প্রয়োজন, যাতে করে তারা এ ক্ষেত্রে আরও অবদান রাখতে পারেন।’
চতুর্থ শিল্পবিপ্লব দ্বারা উপস্থাপিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মুসলিম সম্প্রদায়ের পিছিয়ে পড়া উচিত নয়; বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবটিকস, ইন্টারনেট অব থিংস, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ও অন্যান্য খাতে।
ওআইসির মহাসচিব ও ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) চ্যান্সেলর হিসেন ব্রাহিম তাহার সভাপতিত্বে এতে স্বাগত বক্তব্য দেন আইইউটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। এ ছাড়া এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনিও বক্তব্য দেন।
সমাবর্তনে ২০২১ এবং ২০২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের স্নাতক, মাস্টার্স, পিএইচডি এবং ডিপ্লোমা ডিগ্রি দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের অসামান্য ফলাফলের জন্য দুই ধরনের স্বর্ণপদক আইইউটি স্বর্ণপদক এবং ওআইসি স্বর্ণপদক দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে আইইউটির ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী তার অর্থায়নে আইইউটির নবনির্মিত মহিলা হলেরও উদ্বোধন করেন।।
সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় এখন আলোচনায় ভোটসংখ্যা যোগ-বিয়োগের সমীকরণ। ভোটের পাল্লা ভারী করতে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা ব্যস্ত নানা তৎপরতায়। উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলছে ভোটারের মন জয়ের চেষ্টা। আছে নানা কৌশলও।
সিসিকের বর্তমান মেয়র বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী তার দলের সিদ্ধান্ত মেনে এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হননি। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় পরপর দুটি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে পরাজিত করে মেয়র হয়েছেন আরিফুল। বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থক ছাড়াও সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা রয়েছে। তাই এবারের নির্বাচনেও তাকে বিবেচনা করা হচ্ছিল শক্ত প্রার্থী হিসেবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি প্রার্থী না হওয়ায় তার ভোটব্যাংকে নজর পড়েছে প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র প্রার্থীদের। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল মেয়র আরিফের ভোটব্যাংকে ভাগ বসাতে চান। এজন্য তৎপর তারা উভয়েই। গত রবিবার সকালে মেয়র আরিফুলের বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেছেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এ সময় তিনি আরিফুলের দোয়া ও নির্বাচনে সমর্থন প্রত্যাশা করেন। ওইদিনই মধ্যরাতে মেয়র আরিফের বাসায় ছুটে যান জাপার প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুলও। তিনিও একইভাবে আরিফের সমর্থন চান। মেয়র পদের প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর এভাবে বর্তমান মেয়রের বাসায় গিয়ে বৈঠকের বিষয়টি এখন সিলেটে বেশ আলোচিত। অনেকে বলছেন, আরিফুল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করলেও নির্বাচনে যে তার প্রভাব রয়েছে তা স্পষ্ট। তাই তার প্রভাবকে নিজেদের পক্ষে কাজে লাগাতে চাচ্ছেন প্রতিদ্বন্দ্বীরা। অবশ্য আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, আরিফুলের সঙ্গে খাতির জমিয়ে তার সমর্থকদের ভোট পাওয়ার আশাদুরাশায় পরিণত হবে। কারণ আরিফুল যেদিন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার ঘোষণা দেন, ওইদিনই তিনি নির্বাচন বর্জনেরও ডাক দিয়েছেন। এবারের নির্বাচনকে প্রহসন উল্লেখ করে আরিফুল সেদিন বলেছিলেন, ‘প্রহসনের নির্বাচন আমি বর্জন করলাম, আপনারাও করুন, দয়া করে কেউ ভোট দিতে যাবেন না।’
নগরীর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন বলছেন, আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করায় মেয়র পদে নির্বাচনের আমেজ কমে গেছে। তবে ৪২টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদের ভোটে জমজমাট লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। অনেক ওয়ার্ডে বিএনপির প্রার্থীও রয়েছেন। তাই কাউন্সিলর প্রার্থীরাই যার যার ওয়ার্ডে ভোটার উপস্থিতি বাড়াবেন বলে মনে করা হচ্ছে। আর ভোটকেন্দ্রে যারা যাবেন, তাদের মধ্যে আরিফুল সমর্থকরা মেয়র পদে কাকে ভোট দেন সেটা নিয়ে চলছে নানা বিশ্লেষণ। অনেকেই মনে করছেন, আরিফুল সমর্থকদের ভোট ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর বাক্সে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। আর এখানেই আশা দেখছেন জাপা প্রার্থী ও তার সমর্থকরা। আরিফুলবিহীন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামানের সঙ্গে জাপা প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলবেন বলে আশা করছেন জাপা নেতাকর্মীরা। সদ্য সমাপ্ত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে জাপার অনেকে বলছেন, গাজীপুরে একজন বয়োবৃদ্ধ গৃহিণীর কাছে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ নানা কারণে সাধারণ ভোটাররা এখন নৌকার বিপক্ষে।
গাজীপুরের ফল দেখে সিলেট আওয়ামী লীগের কপালেও এখন চিন্তার ভাঁজ। আরিফুল নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর পর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা মনে করেছিলেন তাদের প্রার্থী সহজেই জিতে যাবেন। কিন্তু গাজীপুর সিটি নির্বাচনের ফল তাদের ভাবনা পাল্টে দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে সিলেট আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, গাজীপুর সিটি নির্বাচনের ফল দেখে তারা মোটেও আতঙ্কিত নন, তবে অনেক বেশি সতর্ক হয়েছেন। দলের সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছেন। দল ঐক্যবদ্ধ থাকলে এবং সিলেটের শীর্ষ নেতারা বিশ্বাসঘাতকতা না করলে নৌকার প্রার্থীকে কেউ হারাতে পারবে না।
মেয়র আরিফুলের বাসায় গিয়ে সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে জাপার মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এটি একটি সৌজন্য সাক্ষাৎ। এর বেশি কিছু নয়। তবে নির্বাচন নিয়ে আলাপ হয়েছে, আমি তার দোয়া ও সমর্থন চেয়েছি।’
একই বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘আরিফুল হক দশ বছর ধরে সিলেট সিটির মেয়র। এবার তিনি প্রার্থী হননি। তিনি প্রার্থী হলে নির্বাচন আরও বেশি উৎসবমুখর হতো। কুশলবিনিময়ের জন্যই তার বাসায় গিয়েছিলাম। তিনিও অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে আতিথেয়তা করেছেন। এটাই আমাদের সামাজিক-পারিবারিক সম্পর্কের সৌন্দর্য। এই সম্প্রীতি খুবই জরুরি।’
আনোয়ার ও বাবুলকে কারণ দর্শানোর নোটিশ : মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুলকে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল মঙ্গলবার সিলেট সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফয়সল কাদের স্বাক্ষরিত আলাদা দুটি চিঠিতে তাদের কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রতীক বরাদ্দের আগেই তারা প্রচারপত্র বিতরণ ও গণসংযোগ করেছেন।
বিদেশি মুদ্রার সংকট থাকায় বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়েছে আন্তর্জাতিক ঋণমান যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান মুডিস। সংস্থাটির ভাষ্য, বিদেশি মুদ্রার লেনদেনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উঁচুমাত্রার দুর্বলতা ও তারল্যের ঝুঁকি রয়েছে। একই সঙ্গে চলমান সংকটের মধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতাও প্রকাশ পেয়েছে।
তবে ঋণমান কমালেও দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের পরিস্থিতি স্থিতিশীল বলে মনে করে সংস্থাটি। এর মানে ঋণ যোগ্যতা বা আর্থিক বাধ্যবাধকতা মেটানোর ক্ষমতাতে বাংলাদেশের কোনো পরিবর্তন আসেনি। গত ডিসেম্বরে ঋণমান কমানোর বিষয়ে পূর্বাভাস দিয়েছিল সংস্থাটি। গতকাল সেই পূর্বাভাসের প্রতিফলন ঘটল।
মুডিসের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের বর্তমান ঋণমান কমে দাঁড়িয়েছে বি১-এ। আগে এটি বিএ৩ ছিল। চলমান সংকটের মধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা প্রকাশ পাওয়া এ পদক্ষেপ নিয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি। তবে বাংলাদেশের জন্য মুডিস তাদের পূর্বাভাস স্থিতিশীল রেখেছে। যদিও স্বল্পমেয়াদি ইস্যুয়ার রেটিংয়ের ক্ষেত্রে ‘নট প্রাইম’ মান অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছে তারা।
মুডিসের র্যাংকিং কমার অর্থ হচ্ছে, বাংলাদেশের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে র্যাংকিং যত কমবে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে তত বেশি প্রশ্নের মুখোমুখি হবে। বিশেষ করে, ঋণের সুদের হার বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি স্থানীয় ব্যবসায়ীদের বৈশিক লেনদেন ব্যয় বেড়ে যাবে।
মুডিস বলেছে, পরিস্থিতি খানিকটা সহজ হলেও বাংলাদেশে ডলার-সংকট চলমান এবং বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ কমে যাচ্ছে, যা দেশটির বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতির ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছে। একই সঙ্গে আমদানির ক্ষেত্রে নানা ধরনের বাধা তৈরি হয়েছে। যার ফলাফল হিসেবে জ্বালানির ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, সরকার আমদানি নিয়ন্ত্রণে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিল, তা পুরোপুরি প্রত্যাহার করেনি। একাধিক বিনিময় হার চালু এবং সুদের হার ঠিক করে দেওয়ার মতো অপ্রচলিত যেসব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেখান থেকেও দেশটি ফিরে আসেনি। এসব পদক্ষেপ বিভিন্ন ধরনের বিকৃতি ঘটাচ্ছে।
এ ছাড়া অর্থনীতির আকারের তুলনায় কম রাজস্ব আদায়ের ফলে সরকারের পছন্দসই নীতি গ্রহণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অন্যদিকে টাকার অবমূল্যায়ন ও স্বল্প সময়ে অভ্যন্তরীণ ঋণের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার ফলে সুদবাবদ সরকারকে আরও বেশি অর্থ খরচ করতে হচ্ছে, যা তার ঋণ গ্রহণের সক্ষমতা দুর্বল করার ইঙ্গিত দিচ্ছে। মুডিস আশা করছে, বিদেশি অর্থায়ন বৈদেশিক ও রাজস্বসংক্রান্ত চাপ কিছুটা কমাতে সাহায্য করবে। তবে মহামারীর আগের তুলনায় বৈদেশিক পরিস্থিতি দুর্বল থাকবে এবং উঁচুমাত্রার ঋণের কারণে রাজস্ব পরিস্থিতি দুর্বল হবে। বিশেষ করে মুডিস মনে করছে, যেসব রাজস্ব সংস্কার কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর বাস্তবায়ন হতে অনেক বছর লেগে যাবে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির পূর্বাভাস স্থিতিশীল রাখার যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মুডিস বলেছে, দেশটি কম সুদে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে অর্থায়ন ও সহায়তা পেয়ে যাচ্ছে। ফলে বৈদেশিক ও রাজস্ব খাতে চাপ হালকা হবে বলে তারা মনে করছে। বাংলাদেশের ঋণভার একইরকম অন্যান্য দেশের তুলনায় মাঝারি পর্যায়ে রয়েছে এবং কম সুদে দীর্ঘ সময়ের জন্য ঋণ নেওয়ার কারণে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকবে বলে মুডিস মনে করে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।