
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তুরস্কের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ছয় দিনের সফরে গতকাল শুক্রবার সকালে আঙ্কারায় পৌঁছেছেন। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ভিভিআইপি উড়োজাহাজ রাষ্ট্রপতি, তার স্ত্রী ড. রেবেকা সুলতানা এবং সফর সঙ্গীদের নিয়ে ভোর সাড়ে ৪টায় আঙ্কারা এসেনবোগা বিমানবন্দরের অবতরণ করে। এর আগে রাত ১১টার দিকে উড়োজাহাজটি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যায়। খবর বাসসের।
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সফররত তার প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন জানান, আঙ্কারা বিমানবন্দরে পৌঁছালে তুরস্কে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. আমানুল হক রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানান। এ সময় রাষ্ট্রদূত ওইয়া তুঙ্গা চাগলি, তুরস্কের
প্রটোকল প্রধান গোনেচ আচিকোলুসহ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
তুরস্ক সরকারের আমন্ত্রণে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন আঙ্কারার ‘প্রেসিডেন্সিয়াল কমপ্লেক্সে’ ৩ জুন বিকেল ৫টায় (তুরস্কের স্থানীয় সময়) শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। আঙ্কারার কানকায়া প্রাসাদে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান কর্তৃক আয়োজিত একটি আনুষ্ঠানিক নৈশভোজে অংশ নেবেন তিনি। উচ্চপর্যায়ের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে কয়েকটি কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে রাষ্ট্রপতির।
তুরস্ক ভ্রমণকালীন সময়ে রাষ্ট্রপতি আঙ্কারায় ‘শেরাটন আঙ্কারা হোটেলে’ অবস্থান করছেন। ৬ জুন সন্ধ্যায় দেশে ফেরার কথা রয়েছে রাষ্ট্রপ্রধানের।
বজ্রপাত হলে এখন প্রায় প্রতিদিন মানুষের প্রাণহানি ঘটছে। কখনো কখনো বজ্রপাতে একসঙ্গে অনেক মানুষের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগেও বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যু হতো কিন্তু তা এখনকার তুলনায় অনেক কম। এখন যেসব বজ্রপাত হচ্ছে সেগুলো স্বল্প সময়ের মধ্যে হচ্ছে। কারণ হঠাৎ করেই আকাশে বজ্রমেঘ তৈরি হচ্ছে তার স্থায়িত্ব থাকছে ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট। ফলে সাধারণ মানুষ বুঝতে পারলেও নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না। ফলে প্রাণহানির ঘটনা বাড়ছে।
বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঠিক কত মানুষের মৃত্যু হয় তার সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সংগৃহীত তথ্য বলছে, ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার মতো দুর্যোগে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি কমলেও বজ্রপাতে মৃত্যু আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ১০ বছরে ঘূর্ণিঝড়ে মৃত্যু হয়েছে ১১৭ জনের। অন্যদিকে একই সময়ে বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ৭৩ জনের। এ সময় আহত হয়েছেন ৩০৫ জন। আরেকটি বেসরকারি সংগঠন জানায়, চলতি বছর মার্চ থেকে মে মাসের ৩ তারিখ পর্যন্ত মারা গেছে ৬৬ জন। এর মধ্যে ৬৩ পুরুষ ও ৩ জন নারী। তাদের মধ্যে শিশু রয়েছে দুটি। এ সময়ের মধ্যে আহত হয়েছে আটজন। এর মধ্যে শুধু কৃষিকাজ করতে গিয়েই মৃত্যু হয়েছে ৫১ জনের। নৌকায় থাকা অবস্থায় বা মাছ ধরতে গিয়ে মারা গেছে ১১ জন। এ ছাড়া বজ্রপাত ও কালবৈশাখীর মধ্যে আম কুড়াতে গিয়ে বজ্রাঘাতে মারা গেছে একজন। বাড়ির আঙ্গিনায় খেলা করার সময় বজ্রপাতে মারা গেছে তিনজন।
২০২২ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৩-এর মে মাস পর্যন্ত বজ্রপাতে ৩৪০ জন মারা গেছে। গত বছর এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বজ্রপাতে মারা গেছে ২৭৪ জন। এর মধ্যে ২৩৯ পুরুষ আর ৩৫ জন নারী। নারী ও পুরুষের মধ্যে শিশু রয়েছে ১২ জন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, ভৌগোলিক অবস্থান, জলবায়ুর পরিবর্তন আর অসচেতনতার কারণে এ প্রাকৃতিক দুর্যোগে অসংখ্য মানুষ মারা যাচ্ছে। আর দিন দিন তা বাড়ছে। তবে সেই অনুপাতে সচেতনতামূলক বা মোকাবিলার প্রস্তুতি বাড়েনি।
বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মূলত টেম্পারোরের যে ভ্যারিয়েশন (তাপমাত্রার তারতম্য) হয় তার কারণে বজ্রপাত বেড়ে যায়। উচ্চ তাপমাত্রা এবং নিম্ন তাপমাত্রার যখন ভ্যারিয়েশন ঘটে তখন বজ্রপাত হয়।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে হাওরাঞ্চলে বজ্রপাতে বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে। এর মধ্যে যারা মাঠে কাজ করে বা জেলে রয়েছে, তাদের সংখ্যাই বেশি।’
অধ্যাপক কামরুজ্জামান বলেন, ‘নাসার একটি গবেষণা রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, আমাদের কার্বনেশন যখন বাড়ছে তখনই বায়ুদূষণ বাড়ছে আর সেই সময় বজ্রপাতও বাড়ছে। কার্বনেশনের সঙ্গে বায়ুদূষণের একটা সম্পর্ক পাওয়া যাচ্ছে। আমরা যদি বাংলাদেশের পরিসংখ্যানের কথা চিন্তা করি তাহলে দেখা যাচ্ছে, গত ১০ বছরে প্রায় ৪ শতাংশের বেশি কার্বনেশন বেড়েছে। সেই হিসাবে আমাদের দেশে বেশি বজ্রপাত হওয়ারই কথা।’
আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে প্রতি বছর গড়ে ৮৪ লাখ বজ্রপাত হয়, যার ৭০ শতাংশই হয়ে থাকে এপ্রিল থেকে জুনে। এটা বর্ষা শুরুর মৌসুম। বর্ষা শেষে অর্থাৎ মৌসুমি বায়ু ফেরত যাওয়ার সময় সেপ্টেম্বর-অক্টোবরেও বজ্রপাত বাড়ে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এমএ ফারুখ বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রি মনসুন সিজনে (প্রাক বর্ষা মৌসুম) বাংলাদেশের আকাশসীমায় বজ্রপাত বৃদ্ধির হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। আমরা আসলেই আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছি।’ তিনি বলেন, ‘২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত আমাদের কাছে যে তথ্য রয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, গত ছয় বছরে গড়ে ৮ লাখ ৮৬ হাজার বজ্রপাত আকাশসীমায় ঘটেছে। এর মধ্যে দুটো ধরন আছে। একটা হচ্ছে মেঘ থেকে মেঘ, অন্যটি হচ্ছে মেঘ থেকে মাটিতে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনটা মেঘ থেকে মেঘ বা কোনটা মেঘ থেকে মাটিতে আসছে, সেটা চিহ্নিত করতে পারিনি। তবে চেষ্টা চলছে।’
অধ্যাপক ফারুখ বলছেন, ‘বজ্রপাতের দুই রকমের মৌসুমগত পরিবর্তন হচ্ছে। একটা হচ্ছে বৃষ্টিপাতের মৌসুম। বৃষ্টিপাতের মৌসুমটা পরিবর্তন হচ্ছে। অরেকটা হচ্ছে তাপমাত্রার যে ক্রমাগত বৃদ্ধি, আবার কখনো বাড়ছে কখনো কমছে। শীতকালে ব্যত্যয় ঘটছে। তবে শীতের সময়টা ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে। কারণ তাপমাত্রা বাড়ছে। তাপমাত্রা বাড়ার কারণে শীতের দৈর্ঘ্যটা কমে আসছে। অর্থাৎ সিজন পরিবর্তন হচ্ছে, আবহাওয়ার ধরন পরিবর্তন হচ্ছে। সুতরাং আবহাওয়ার এ পরিবর্তনের ফলে সারা বছর এ বজ্রপাত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।’
কেন সিলেট অঞ্চলে বজ্রপাত বেশি হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে এ বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘এটার অন্যতম কারণ হচ্ছে পাহাড়ের অবস্থান। এখানে একরের পর একর, হেক্টরের পর হেক্টর ধানের জমি এবং সমতল ভূমি। সুনামগঞ্জ বর্ডার শেষ হলো, ভারতের বর্ডার শুরু হলো, সেখান থেকে পাহাড় শুরু হলো এবং প্রচুর গাছপালা শুরু হলো। মাঝখানে আমাদের দেশে পাহাড়ও নেই, গাছপালাও নেই। ওই দিকের পাহাড়গুলো, মূলত আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়ের পাহাড়। বাংলাদেশে শীত শেষ হওয়ার পরপরই দক্ষিণাঞ্চল থেকে শুষ্ক ও আর্দ্রতাসম্পন্ন বাতাস প্রবেশ করে তখন ওই এলাকায় পাহাড়গুলোতে ধাক্কা খেয়ে প্রাক বর্ষা মৌসুমের বজ্রপাত তৈরি হয়। এ কারণে বেশি বজ্রপাতের ঘটনা ঘটছে।’
কেন বজ্রপাত মৃত্যু রোধ করা যাচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখন যেসব বজ্রপাত হচ্ছে, সেটা স্বল্প সময়ের মধ্যে হচ্ছে। কারণ হঠাৎ করে বজ্রমেঘটা তৈরি হচ্ছে। তার স্থায়িত্ব ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট। এরপর কিন্তু মেঘটা কেটে যাচ্ছে। এ সময়টার মধ্যে বজ্রপাত হচ্ছে, মানুষ মারা যাচ্ছে। মানুষকে দ্রুত সতর্ক সংকেত দেওয়া যেত যদি ফোরকাস্টিং সিস্টেমটা আরেকটু ভালো থাকত। মানুষের কাছে তথ্যগুলো পৌঁছানো সম্ভব হলে নিঃসন্দেহে মানুষকে বাঁচানো সম্ভব হতো।’
অধ্যাপক ফারুখ বলেন, ‘পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ কৃত্রিমভাবে আবহাওয়া প্রভাবিত করে আসছে। এ ক্ষেত্রে সে ধরনের আধুনিক প্রযুক্তি কিছু জায়গায় ব্যবহার করা যায়। বজ্রপাত হওয়ার আগে ধনাত্মক ও ঋণাত্মক চার্য স্থানান্তর হয় সেটাও কিন্তু কৃত্রিমভাবে প্রভাবিত করা সম্ভব। এতে করে বজ্রপাতের ধরনটাকে পরিবর্তন করা সম্ভব। এমনকি লেজারের লাইটের মাধ্যমে বজ্রপাতকে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলা সম্ভব। এরকম ঘটনা কিন্তু কাতারসহ অনেক উন্নত দেশে আছে। কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নত দেশগুলোর মতো নয়। ফলে সচেতন করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। এ ক্ষেত্রে সম্মিলিত উদ্যোগই একমাত্র ভরসা। এ ছাড়া সরকার চাইলে যেসব এলাকায় বজ্রপাত হয় সেখানে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিতে পারে। কৃষকদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করা যেতে পারে। বজ্রপাত হওয়ার আগে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে অ্যালার্ম বেজে উঠবে, কৃষকরা তখন সেখানে আশ্রয় নেবেন।’
আগে থেকে বজ্রপাতের পূর্বাভাস দেওয়া যায় কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আবহওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বজ্রপাত নিয়ে খুব কম দেশেই পূর্বাভাস দেওয়া হয়। বড়জোর ছয় থেকে আট মিনিট আগে পর্যন্ত সতর্কতা দেওয়া যায়। লাইটেনিং ডিটেক্টরের (বজ্রপাত শনাক্তকরণ যন্ত্র) মাধ্যমে মোবাইলে ফোনে একটা অ্যালার্ম দেওয়া হয়, যেটা উন্নতবিশ্বে আছে। পরীক্ষামূলকভাবে আমাদের দেশেও এর কার্যক্রম চলছে। এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরাও পারব। সে ক্ষেত্রে দুর্যোগ অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর তাদেরও সহযোগিতা দরকার।’
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘সরকার ২০১৬ সালে বজ্রপাতকে দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করেছে। সে ক্ষেত্রে ১৫টি জেলাকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে বেশি বজ্রপাত হয়। এসব এলাকায় ১৩৫টি উপজেলায় ৩০৯টি লাইটেনিং অ্যারেস্টার বসানো হয়েছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। এটা প্রচুর দরকার। কিন্তু এর অনেক দাম। এর বেশিরভাগই আমদানি করতে হয়। এটা নিয়ে একটা প্রকল্প নিলে হয়তো কেনা যাবে। কিন্তু নদীর মধ্যে বা মাঝনদীতে কভার করতে পারবে কি না সেটাও চিন্তার বিষয়। কারণ এটার সর্বোচ্চ রেডিয়াস ৫০০ ফুট।’
তিনি বলেন, ‘এর বাইরে এমন কোনো পূর্বাভাস যন্ত্র বের হয়নি। আধঘণ্টা আগে হয়তো আঁচ করা যাবে। কোথায় পড়বে সেটা কিন্তু নিশ্চিত হওয়া যাবে না। সুতরাং বজ্রপাত আমাদের জন্য বড় একটি থ্রেট (হুমকি)। এই মুহূর্তে মানুষকে সচেতন করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। কীভাবে সচেতন হবে এ বার্তাগুলো প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছতে হবে। এ কাজগুলো জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে করা হচ্ছে। আমরা এ বিষয়ে চিঠিও দিয়েছি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ট্রেনিংয়েরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
ব্যাপক সমালোচনার মুখে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের নির্দেশে লিফট কিনতে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) প্রতিনিধিদলের বিদেশযাত্রা স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গতকাল শুক্রবার দুপুরে পাবিপ্রবির জনসংযোগ দপ্তরের উপপরিচালক ফারুক হোসেন চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতির নির্দেশে পাবিপ্রবি প্রশাসন প্রতিনিধিদলের সফর স্থগিত করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।
এর আগে, লিফট কিনতে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদলের তুরস্ক সফরে যাত্রার কথা জানাজানি হলে সারা দেশে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে পাবিপ্রবি সাধারণ শিক্ষক-কর্মকর্তাদের পাশাপাশি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান রিজেন্ট বোর্ড সদস্যরাও।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, ৬ জুন পাবিপ্রবির ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদলের লিফট প্রাক-জাহাজীকরণ পরিদর্শনে তুরস্ক যাওয়ার সফরসূচি নির্ধারিত ছিল।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, গত ১৫ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) জিএম আজিজুর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদলের বিদেশ সফরের বিষয়টি রেজিস্ট্রার বিজন কুমার ব্রহ্মকে জানানো হয়। ওই চিঠিতে ‘পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পে বিভিন্ন স্থাপনার লিফট সংগ্রহের প্রাক-জাহাজীকরণে ছয় সদস্যের একটি পরিদর্শক দলের তুরস্ক ভ্রমণের সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এসএম মোস্তফা কামাল খানের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে ছিলেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কেএম সালাহ উদ্দিন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) ফরিদ আহমেদ, উপ-বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশলী (ইইই) মো. রিপন আলী, উপ-বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশলী জহির মোহা. জিয়াউল আবেদীন, প্রকল্প পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) জিএম আজিজুর রহমান।
গণমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে উপাচার্য ড. হাফিজা খাতুন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সফরের বিষয়টি অনেক আগে থেকেই অনুমোদন করা আছে। এতে রাষ্ট্রীয় অর্থের কোনো অপচয় হবে না। সফরের ব্যয় ঠিকাদার বহন করবেন।’
তবে ভিন্নমত পোষণ করে উপাচার্যের এমন বক্তব্য সঠিক নয় মন্তব্য করেন বিশ্ববিদ্যালয় রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য মুক্তিযোদ্ধা অঞ্জন চৌধুরী। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তুরস্কের যে লিফট পাবিপ্রবিতে সংযোজনের কথা রয়েছে, সেই হিটকক্স গ্লোবাল ইঞ্জিনিয়ারিং নামক প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ১৫০টি লিফট সরবরাহ করেছে। সুতরাং লিফট দেখতে তুরস্কে যাওয়ার প্রয়োজন নেই লিফট এখন জাহাজীকরণ প্রক্রিয়ায় রয়েছে। সেখানে মতামত প্রদানেরও সুযোগ নেই। তাছাড়া প্রতিনিধিদলের সদস্যরা এ বিষয়ে অভিজ্ঞও নন। এটি আদতে পাবিপ্রবির কর্তাদের একটি প্রমোদভ্রমণ ছাড়া আর কিছুই নয়। কিন্তু তারা বিষয়টি নিয়ে টানা কয়েক দিন ধরে মানুষকে বিভ্রান্ত করেছেন।’
প্রসঙ্গত, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের আবাসিক হল, অ্যাকাডেমিক ভবনসহ পাঁচটি আধুনিক নির্মাণাধীন ভবনের জন্য ২৫টি লিফট কিনতে ৭ জুন তুরস্ক সফরে যাওয়ার কথা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদলের। এ খবর জানাজানি হলে পাবনাসহ সারা দেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। গতকাল দুপুরে রাষ্ট্রপতির নির্দেশে সে সফর স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবেক মন্ত্রী ডা. মো. আফছারুল আমীন এমপি ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গতকাল শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।
ডা. আফছারুল আমীনের ছোট ভাই ডা. মো. আরিফুল আমীন দেশ রূপান্তরকে জানান, আজ শনিবার সকাল ১০টায় আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর হেলিকপ্টারে তার মরদেহ চট্টগ্রাম নিয়ে আসা হবে। আসর নামাজের পর জমিয়তুল ফালাহ ময়দানে তার দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। বাদ এশা নগরীর দক্ষিণ কাট্টলী ফজলুল হাজেরা কলেজ প্রাঙ্গণে তৃতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হবে।
পারিবারিক সূত্র জানায়, ২০২০ সালে ডা. আফছারুল আমীনের ফুসফুসে ক্যান্সার ধরা পড়ে। প্রথমে তিনি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নেন। পরে দেশে ফিরে তিনি চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।
এদিকে চট্টগ্রাম-১০ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ডা. আফছারুল আমীনের মৃত্যুতে গভীর শোক-দুঃখ প্রকাশ করে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘আফছারুল আমীন ভাই মৃত্যুকাল অবধি দেশ ও দশের প্রতি দায়িত্ব পালন করে গেছেন।’
ডা. আমীনের ইন্তেকালের সংবাদে শোকাহত তথ্যমন্ত্রী প্রয়াতের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং তার শোকাহত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
চট্টগ্রাম-৭ আসনের সংসদ সদস্য তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান বলেন, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে পরপর তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত ডা. আফছারুল আমীন আগে সরকারের নৌপরিবহন ও পরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।
চলতি মেয়াদে ডা. আফছারুল শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, এভাবে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত দেশ ও মানুষের জন্য কর্মের দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন তিনি। আমরা তার আত্মার শান্তি কামনা করি।
ডা. আফছারুল আমীন ১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে তিনি চট্টগ্রাম-১০ আসন থেকে পরপর তিন দফা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি নৌপরিবহন এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন।
চসিক মেয়রের শোক : ডা. আফছারুল আমীন এমপির মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী। এক শোক বার্তায় তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে সুপ্রতিষ্ঠিত রাখতে মো. আফছারুল আমীন আমৃত্যু লড়ে গেছেন। মেয়র তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
হুমায়ুন ফরীদিকে আমি প্রথম সামনাসামনি দেখি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের মিলনায়তনে কবিতা পাঠের আসরে। সেই শহরে তখনো বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র বিশাল ভবনে উঠে যায়নি। বাংলামোটরের মোড়ে উদ্যানসমেত একতলা একটা ছড়ানো বাড়ি গাছপালায় ছাওয়া। প্রবেশের ফটক থেকে কিছুটা হেঁটে ঢুকতে হতো মূল কেন্দ্রে।
ক্যালেন্ডারের পৃষ্ঠায় আশির দশক সবে শুরু হয়েছে। তখনো সামরিক শাসনের চোখ রাঙানি সর্বত্র। সম্ভবত কবি আবুল হাসানের জন্ম অথবা মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কোনো একটা অনুষ্ঠান ছিল কেন্দ্রে। হুমায়ুন ফরীদি কবিতা পাঠ করতে এসেছিলেন। খুব সাধারণ শার্ট-প্যান্ট পরিহিত সেই দুর্দান্ত অভিনয়শিল্পীকে দেখে সেদিন খুব অবাক হয়েছিলাম। কোনো কিছুর বাড়াবাড়ি নেই মাথায় লম্বা চুল ছাড়া। সেদিন বেশ ভিড় ছিল মিলনায়তনের বাইরে। সামনের চাতালের এক পাশে দাঁড়িয়ে হাতের সিগারেটটা শেষ করে সোজা মঞ্চে উঠে কবিতা পাঠ করেছিলেন। আজও মনে পড়ে কাটা কাটা অথচ নিম্ন কণ্ঠে তিনি কবিতার প্রথম লাইন ‘এই ভাবে একা একা ভ্রমণে যাওয়া আমার ঠিক হয়নি’ পাঠ করতেই মিলনায়তনের দর্শক সারিতে নীরবতা নেমে এসেছিল। তার শান্ত কণ্ঠস্বরে মুহূর্তেই শ্রোতারা স্থির। সেদিন বিকেল ফুরিয়ে সন্ধ্যা নামার আগেই বিদায় নিয়েছিলেন হুমায়ুন ফরীদি। কিন্তু আমার উৎসুক মনের মধ্যে রয়ে গেলেন তিনি।
অল্প বয়সে আমি সাংবাদিকতার কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে যাই। সাপ্তাহিক বিচিত্রায় কাজের সূত্রে পত্রিকায় জুতা সেলাই থেকে চন্ডীপাঠ পর্যন্ত করি। তখনই আমার সাংবাদিকতা জীবনের প্রথম সম্পাদক শাহাদত চৌধুরী আচমকা বিচিত্রায় টেলিভিশন পর্যালোচনা লেখার দায়িত্ব দিলেন। সেই সময়ে বিটিভিতে নানান ধরনের অনুষ্ঠান আর নাটকের সমালোচনা লেখার কাজটা আমার গুরুদন্ড মনে হলেও আজ ভাবি, ওই কাজের দায়িত্ব না পেলে হুমায়ুন ফরীদির মতো অসাধারণ এক অভিনেতার সঙ্গে পরিচয়ের সেতু গড়ে উঠত না।
ফরীদি ভাইয়ের মধ্যে একসঙ্গে অনেকগুলো মানুষের যৌথ বসবাস ছিল বলে আমার সব সময় মনে হয়। তার আচমকা হেসে ওঠা, নীরবতা, হঠাৎ অন্যকে চমকে দিয়ে একটা কথা বলার স্বভাবের কারণে তার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে নার্ভাস বোধ করতাম। কিন্তু সেই স্বভাবসুলভ ভঙ্গিগুলোর বাইরে অদ্ভুত এক নির্জনতা ছিল মানুষটার ভেতরে। কথা বলতে বলতে হঠাৎ অন্য মনস্ক হয়ে গিয়ে কী যেন ভাবতেন। সেই হুমায়ুন ফরীদির তল খুঁজে পাওয়া ছিল কঠিন কাজ।
বেইলি রোডের মহিলা সমিতি মঞ্চে তখন ঢাকা থিয়েটারের কীর্তনখোলা নাটকটি দারুণ আলোড়ন তুলেছে। মঞ্চে ছায়ারঞ্জন চরিত্রে ফরীদি ভাইয়ের অভিনয় দেখে আমিও অভিভূতদের একজন। কীর্তনখোলা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে পত্রিকা অফিস থেকে এক দুপুরে ফোন করেছিলাম ফরীদি ভাইকে। তখন কাকরাইলে একটি অফিসে কাজ করতেন। রিসিভারের অপর প্রান্তে কিছু একটা ভেবে নিয়ে বললেন, ‘ফোনে বলব না। বরং তুমি চলে এসো।’ অফিসে হাজির হতেই বললেন, ‘চলো, তোমাকে চাইনিজ খাওয়াব।’ প্রস্তাবটা পেয়ে ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। ওই অফিসের নিচেই চীনা খাবারের দোকান ছিল। সেখানে বসে কোনো একটা খাবার নাড়াচাড়া করতে করতে সেদিন ফরীদি ভাই ঢাকার মঞ্চনাটক, তার অভিনয়জীবন নিয়ে অনেক কথা বলেছিলেন।
ফরীদি ভাইয়ের সঙ্গে আমার মাঝে মাঝে আড্ডা দেওয়ার সুযোগ ঘটত শাহাদত চৌধুরীর দপ্তরে। সেখানে অবশ্য ঢাকার নাটক ও সিনেমা জগতের বহু মহারথীই আসতেন। কিন্তু হুমায়ুন ফরীদিকে ঢুকতে দেখলে আমি নিঃশব্দে তাদের আড্ডায় অনুপ্রবেশ করতাম তার কথা শুনব বলে।
অনেক বছর পর টেলিভিশনের জন্য নাটক লিখতে শুরু করি। তখন নাটক লেখাই হয়ে উঠেছিল আমার পেশা। অভিনেত্রী এবং পরিচালক আফসানা মিমির প্রোডাকশন পৌষ ফাগুনের পালায় ফরীদি ভাই একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। পশ্চিম বাংলার ঔপন্যাসিক গজেন্দ্রকুমার মিত্রের আলোচিত ত্রয়ী উপন্যাসের নাট্যরূপ দিয়েছিলাম আমি। ফরীদি ভাই কাজ করতে এসে আমাকে ডেকে পাঠিয়ে স্ক্রিপ্টে তার সংলাপ লেখার ধরনটাই পাল্টে দিয়েছিলেন। একটি সংলাপকে সামান্য অদলবদল করে দিলে একটি চরিত্রের পুরো আদলই যে পাল্টে যায়, সেটা ফরীদি ভাইয়ের কাছেই শেখা হয়েছিল।
একজন অভিনেতার ভেতরে কতজন মানুষ বসবাস করে! মঞ্চে একের পর এক সফল চরিত্রের রূপায়ণ, টিভির পর্দায় নিয়ম ভাঙা অভিনয়, নিজে নিজেই সংলাপ তৈরি করে আউড়ে যাওয়া হুমায়ুন ফরীদি একা হয়ে গিয়ে আবার কতটা নিঃসঙ্গ হয়ে থাকেন নিজের ভেতরে তা দেখে বিস্মিত হই আজও। কোনো গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ফরীদি ভাই বলেছিলেন, ‘আমি অনেক সময় হাসি আমার প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য।’ ওই হাসিটার অনুরণন আজও রয়ে গেল মনে। আমি দেখতে পাই, ফরীদি ভাই কবিতা পাঠ শেষ করে মঞ্চ থেকে নেমে মিশে যাচ্ছেন সাধারণের ভিড়ে।
‘এই ভাবে একা একা ভ্রমণে যাওয়া আমার ঠিক হয়নি।’ তিনি সত্যি সত্যি একা ভ্রমণে গিয়ে আর ফিরে আসেননি। ওটাই ছিল তার নিয়তি।
রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দ পেয়েই প্রচারে নেমেছেন প্রার্থীরা। এরই মধ্যে পাড়ায় পাড়ায় শুরু হয়েছে প্রচার কার্যক্রম। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজশাহী শিল্পকলা একাডেমিতে প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়।
নির্বাচন কমিশন বলছে, সুন্দর ভোট উপহার দেওয়ার জন্য তারা কাজ করছেন। আচরণবিধি দেখার জন্য এরই মধ্যে ১০ জন ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে কাজ শুরু করেছেন।
অন্যদিকে প্রতীক পাওয়ার পর এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘আমি খুবই আশাবাদী। এ নির্বাচনে জয়লাভ করব ইনশাআল্লাহ। মনে করি, এ নির্বাচনে ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ ভোট কাস্ট হতে পারে।’ আজ (শনিবার) তার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
রাসিক নির্বাচনে এবার চারজন মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী হিসেবে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন দলীয় প্রতীক ‘নৌকা’ পেয়েছেন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাইফুল ইসলাম স্বপন পান ‘লাঙ্গল’, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মুরশিদ আলম পেয়েছেন ‘হাতপাখা’ এবং জাকের পার্টির প্রার্থী একেএম আনোয়ার হোসেন ‘গোলাপ ফুল’ প্রতীক পেয়েছেন।
এখন পর্যন্ত ভোটের প্রচারে অনেকটা এগিয়ে খায়রুজ্জামান লিটন। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে তিনি মাঠ গোছানোর কাজ করছেন। আনুষ্ঠানিক প্রচার গতকাল থেকে শুরু হলেও তিনি দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার পর থেকেই ব্যাপকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। অন্য তিন প্রার্থী প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে সুষ্ঠু ভোটের প্রত্যাশা করেছেন।
এ বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী মুরশিদ আলম বলেন, ‘আমরা যদি বিজয় লাভ করি তাহলে আমাদের প্রথম টার্গেট থাকবে, দুর্নীতির মূলোৎপাটন করা।’
ইভিএম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে আমাদের আস্থাও আছে আবার শঙ্কাও আছে। শঙ্কা হলো যে, এর আগেও আমরা দেখে আসছি, ইভিএমে ব্যাপক কারচুপি হয়। এক জায়গায় ভোট দিলে আরেক জায়গায় চলে যায়। নির্বাচন কমিশন যদি আমাদের সুন্দর একটি ভোট উপহার দেয়, এটাই হলো আমাদের আস্থার জায়গা।’
জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী সাইফুল ইসলাম স্বপন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত পরিবেশ খুব সুন্দর আছে। নির্বাচন কেমন হবে, সেটা এখনো বলতে পারছি না।’ ভোটার উপস্থিতি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন এ প্রার্থী।
জাকের পার্টির প্রার্থী একেএম আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ইভিএমে ভোট হবে, কিন্তু এখনো ভোটারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে না। কীভাবে এতে ভোট দেওয়া হবে, সেটা প্রার্থী হিসেবে আমাকেও জানানো হয়নি। এটা নিয়েই শঙ্কা যে, সবাই ঠিকঠাক ভোট দিতে পারবে কি না।’
রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘প্রার্থীদের আচরণবিধি পালনের জন্য ১০ জন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আমরা কাজ করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘ইভিএমের বিষয়ে মানুষকে সচেতন করার কাজ চলছে। কীভাবে ভোট দিতে হবে এ বিষয়ে জানানো হচ্ছে।’
আগামী ২১ জুন রাসিক নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে। এবার মেয়র পদে চারজন ছাড়াও ১০টি সংরক্ষিত নারী আসনের জন্য ৪৬ এবং ৩০টি সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদের জন্য ১১২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সব কেন্দ্রেই ভোটগ্রহণ হবে ইভিএমে।
জুলাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ হারে বাংলাদেশ দল। যে সিরিজে চট্টগ্রামে ঘরের মাঠে টাইগাররা ২-১ ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল। আর এই সিরিজে পরাজয়ের পেছনে বড় কারণ অধিনায়ক তামিম ইকবাল! এমনটাই মনে করেন বাংলাদেশ দলের বর্তমান অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
আফগানদের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ শেষে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তামিম। একদিন পরে অবশ্য অবসর ভাঙলেও সেই সিরিজ আর খেলেননি তিনি। একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় কিস্তিতে সাকিব সেই সিরিজ হারের দায় দিলেন তামিমের ওপরই।
'আফগানিস্তানের সঙ্গে সিরিজ হারটা আমি পুরোপুরি একজনকে দায় দেব, অধিনায়ক। এক ম্যাচ পরে আমাদের হাতে আরও দুই ম্যাচ ছিল। আমরা তৃতীয় ম্যাচে ঠিকই কামব্যাক করেছি কিন্তু একটা ম্যাচ সময় লেগেছে আমাদের। সুতরাং এটা আর কারো দায় নয়, পুরো সিরিজটায় দায় একজনের ওপর। বিশ্বের কোথাও অন্তত দেখিনি যে এক ম্যাচ পরেই এরকম অধিনায়ক এসে ইমোশনালি বলে ফেলেন যে আমি ভাই খেলব না আর ক্রিকেট।’
সাকিব বলেন, 'আমার ধারণা যদি কোনো অধিনায়কের দায়িত্ববোধ থাকত, সে এটা করতে পারত না। আমার কাছে মনে হয়, এটা দলকে অনেক বাজে একটা পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে এবং আমার মনে হয় ওইটাই এখনো রিকভার করতে সময় লাগছে, যেটা আমি অনুভব করি।’
কুমিল্লার লাকসামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে হামলা চালিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে ৭ জনকে গুরুতর আহত করার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) পৌর সদরের ৭নং ওয়ার্ডের গাজীমূড়া আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন— ফারুক, রাশেদ, শাহজাহান ও মনির হোসেন। প্রাথমিকভাবে এদের নাম জানা যায়। তবে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত ব্যক্তির নাম মনির হোসেন। আহত ব্যক্তিদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে অনুষ্ঠানের আয়োজক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল মান্নানের অভিযোগ করে বলেন, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের অনুসারীরা এ হামলা চালিয়েছেন বলে তিনি দাবি করছেন।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় গাজীমূড়া আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে মিলাদ ও বেলা তিনটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন উপলক্ষে দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল মান্নান। সকালে শান্তিপূর্ণ অনুষ্ঠান হয়। তবে চারটার দিকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রীর অনুসারী ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক দাবিদার জাহাঙ্গীর আলম, লাকসাম উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শিহাব খান এবং পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফ খানের নেতৃত্বে শতাধিক লোক মাদ্রাসার ফটকে তালা দেন। এ সময় আবদুল মান্নান তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে আবদুল মান্নানের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সেখানে হামলা হয়। এতে আহত হয়েছেন সাতজন। হামলার সময় রামদা দিয়ে মনির হোসেন নামের এক হকারের হাত ও পা কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। পরে দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল মান্নান বলেন, আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী (রাজনৈতিক)। বৃহস্পতিবার সকালে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) এর অনুষ্ঠান করি। বিকেলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে দোয়ার আয়োজন করি। এ সময় জাহাঙ্গীর, শিহাব ও স্বাধীনের নেতৃত্বে শতাধিক লোক আমার এলাকার লোকজনের ওপর হামলা করেন। মনির নামের এক হকার অনুষ্ঠান দেখতে আসেন। তাঁকে কোপানো হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। মন্ত্রীর লোকজন এই হামলা করেছেন। আমি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-৯ (লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইব। সামাজিক এই কর্মসূচিতে হামলা চালানো হয়েছে, যা ন্যক্কারজনক ঘটনা।
এ ঘটনার অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর, শিহাব ও সাইফের মুঠো ফোনে বার বার কল দিও বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে লাকসাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও লাকসাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইউনুস ভূঁইয়া বলেন, আমাদের স্বেচ্ছাসেবক লীগের জাহাঙ্গীরকে প্রথমে মান্নান মারধর করে। এরপর সেখানে ঝামেলা হয়েছে বলে শুনেছি।
লাকসাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল মান্নানের কর্মসূচিতে একজনকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন। তবে এ নিয়ে থানায় কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
৯ দফার ভিত্তিতে ১৫টি ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন নিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ভোটাধিকার, সন্ত্রাস-দখলদারিত্বমুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাস, সর্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ছাত্র আন্দোলন গড়ে তুলতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতৃত্বে 'ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্য' আত্মপ্রকাশ করেছে।
আজ শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের মুখপাত্র হিসেবে এ ঘোষণা করেন। ছাত্র ঐক্যের সমন্বয়কারী করা হয়েছে ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খানকে।
জোটভুক্ত হতে যাচ্ছে যেসব ছাত্রসংগঠন
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জেএসডি), গণতান্ত্রিক ছাত্রদল (এলডিপি), নাগরিক ছাত্র ঐক্য, জাগপা ছাত্রলীগ, ছাত্র ফোরাম (গণফোরাম মন্টু), ভাসানী ছাত্র পরিষদ, জাতীয় ছাত্রসমাজ (কাজী জাফর), জাতীয় ছাত্রসমাজ (পার্থ), জাগপা ছাত্রলীগ (লুৎফর) ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ, বিপ্লবী ছাত্র সংহতি এবং রাষ্ট্র সংস্কার ছাত্র আন্দোলন।
ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের দাবিসমূহ
১. বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ও রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সংস্কারে আন্দোলনরত দলগুলোর ৩১ দফা বাস্তবায়ন করা।
২. শিক্ষা ব্যবস্থার লক্ষ্য হবে মানবিকতার বিকাশ, নৈতিকতা বোধের উন্নতি, মানুষে মানুষে বৈষম্যবিরোধী চিন্তার অনুশীলন এবং এই লক্ষ্য পূরণে শিক্ষাকাঠামো, পাঠদানপদ্ধতি, ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক সমস্ত ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক চর্চাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে জিডিপির অন্তত ৫ ভাগ বরাদ্দ করে সকলের জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। যাতে করে শিক্ষার্থীরা জ্ঞান দক্ষতা ও সৃজনশীলতা বিকাশের উপযোগী হয়ে জাতীয় সম্পদে পরিণত হয়। একটি উৎপাদনমুখী অর্থনৈতিক পুনর্গঠন এর প্রয়োজন মেটাতে বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণায় সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ। দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে কারিগরি শিক্ষার বিকাশ। বুনিয়াদি শিক্ষাকে সার্বজনীন, অবৈতনিক ও মানসম্মত করার উদ্যোগ গ্রহণ।
৩. সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দীদের নিঃশর্ত মুক্তি এবং সাইবার সিকিউরিটি আইনসহ নিবর্তনমূলক সকল আইন বাতিল করতে হবে।
৪. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্যাতনবিরোধী আইন করে শিক্ষাঙ্গনগুলোকে সন্ত্রাস ও দখলদারিত্ব মুক্ত করা, সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন, প্রথম বর্ষ থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ছাত্রদের সিট পাওয়ার বৈধ অধিকারের স্বীকৃতি এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে তা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ। সর্বোপরি দলমত নির্বিশেষে সকল সংগঠনের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।
৫. শিক্ষার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, শিক্ষকদের বেতন কাঠামোর পুনর্নির্ধারণ, মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধার পুনর্বিন্যাসসহ বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ। শিক্ষক সংখ্যা বৃদ্ধি করে পর্যাপ্ত উপকরণ ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের পুষ্টি ও মনোযোগের কথা মাথায় রেখে মিড ডে মিল চালু করতে হবে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভ্যাট (মূল্য সংযোজনী কর) আরোপ করা চলবে না। বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বেতন-ফি কমাতে হবে এবং অভিন্ন নীতিমালা ও বেতন কাঠামো নির্ধারণ করতে হবে।
৬. জ্ঞানকে গভীর করার জন্য মাতৃভাষায় শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। ফলে সারা বিশ্বের সমস্ত ধ্রুপদী সাহিত্য ও পাঠ্যপুস্তককে মাতৃভাষায় রূপান্তরের জন্য একটি জাতীয় অনুবাদ সংস্থা স্থাপন করে দ্রুততার সাথে এই কাজ সম্পন্ন করতে হবে।
৭. বর্তমান সরকার যেভাবে ইতিহাসের ব্যক্তিকেন্দ্রিক বয়ান তৈরি করেছে এবং জনগণের ভূমিকাকে নির্বাসিত করেছে তার বদলে বাংলাদেশের জনগণের নির্ধারক ভূমিকাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং ইতিহাসে সকল ব্যক্তির যার যা অবদান আছে তার স্বীকৃতি দিয়ে বাংলাদেশের জনগণের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকাকে প্রতিষ্ঠা এবং জনগণের সামনে প্রকৃত ইতিহাস পৌঁছে দেওয়ার জরুরি কাজটি করার জন্য পাঠ্যপুস্তক সংস্কার করতে হবে।
৮. শিক্ষার্থীদের মেধা ও যোগ্যতা অনুযায়ী শিক্ষা গ্রহণের সমস্ত ব্যবস্থা এবং শিক্ষা শেষে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষার্থীদের সহজ শর্তে শিক্ষা ঋণ দিতে হবে। সকল শিক্ষার্থীকে স্বাস্থ্যবিমার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করার জন্য সহজ শর্তে ঋণ দিতে হবে।
৯. সকল জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ নির্বিশেষে সকল শিক্ষার্থীর সুযোগের সমতা এবং নাগরিক অধিকারের সাংবিধানিক নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করলে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতির আওতায় আসতে পারেন যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিক। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এমন কথাই জানিয়েছেন। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।
একইসঙ্গে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসসহ অন্য সকল কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এদিনের সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন ছাড়াও নাগরিকদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ নিয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া স্টেট ডিপার্টমেন্টের এই ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রসঙ্গটিও উঠে আসে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে ওই ব্রিফিংয়ের বিস্তারিত বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, আমি এখন নির্দিষ্ট কোনও পদক্ষেপ ঘোষণা করতে যাচ্ছি না। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের ঘোষণা অনুসারে বাংলাদেশে অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ করার কাজে দায়ী কিংবা জড়িত থাকার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সরকার এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভীসা নীতি কার্যকর করার পদক্ষেপ আমরা শুরু করেছি।
তিনি আরও বলেন, গত ২৪ মে ভিসা নীতি ঘোষণার সময় আমরা এটা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছি। আমরা ভিসা নীতির কথা বলেছি তবে কারও নাম উল্লেখ করিনি। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া দুর্বল ও বাধাগ্রস্থ করার কাজে দায়ী কিংবা জড়িত যেকোনও বাংলাদেশির ক্ষেত্রে এই ভিসা নীতি কার্যকর হবে। অন্য যেকোনও ব্যক্তির ক্ষেত্রে যদি আমরা মনে করি তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা প্রয়োজন, সেক্ষেত্রে আমরা এই নীতি প্রয়োগ করব।
দেশের ক্রিকেট নিয়ে নানা সময়ে আলোচিত-সমালোচিত বোর্ড প্রধান নাজমুল হাসান পাপান। জাতীয় দলের প্রায় প্রতিটি বিষয় নিয়েই মাথা ঘামান তিনি। তার এই তৎপরতাকে কীভাবে দেখেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ প্রশ্ন করা হয়েছিল সাকিবে। তার সোজাসাপটা জবাব, ‘আমার সঙ্গে (সম্পর্ক) কখনো অস্বস্তির হয়নি। আমাদের মধ্যে বোঝাপড়া ভালো। আমি ওনাকে বুঝি। উনি আমাকে বোঝেন। আমাদের মধ্যে কথা হয়, এমন হলে ভালো হতো, অমন হলে ভালো হতো। যে আলোচনাটা হয়, ফলদায়ক হয়। আমার কাছে (তাঁর সঙ্গে কাজ করা) সমস্যা হয়নি কখনো।’
নাজমুলের আগে বিসিবি সভাপতি ছিলেন এখনকার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল। তিনিও জাতীয় দলের সঙ্গে বেশ ভালোভাবেই জড়িত ছিলেন বলে জানান সাকিব। তবে নাজমুল অনেক বেশি জড়িত বলে মনে করেন সাকিব, 'কামাল ভাইও দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। হয়তো তখন এত মিডিয়া ছিল না, উনি হয়তো মিডিয়াতে অত কথা বলেন নাই। যে কারণে জানা যেত না। কিন্তু দলে কী হচ্ছে, এসবে উনিও জড়িত ছিলেন। আর পাপন ভাই যেটাকে বলে ইন হ্যান্ডস জড়িত। অনেক বেশি যুক্ত। এমন বোর্ড প্রেসিডেন্ট পাওয়াও কঠিন।’
অনেক বেশি জড়িত থাকা বোর্ডপ্রধান ভালো কি মন্দ, প্রশ্ন করা হলে সাকিবের চটজলদি জবাব, ‘দুটোই। নিতে পারলে ভালো। যারা নিতে পারে না, তাদের জন্য অনেক ডিফিকাল্ট।’
নাজমুল হাসানের সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করার সুবাদে তার মধ্যে যদি একটা ভালো দিক খুঁজতে বলেন প্রশ্নকর্তা। সাকিব বলেন ‘বিশেষভাবে জাতীয় দলের জন্য সবকিছু করতে রাজি আছেন।'আর মন্দ দিক কোনটি? হাসতে হাসতে সাকিবের জবাব, ‘মে বি ইন্টারভিউ (হয়তো সাক্ষাৎকার)’।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে পুলিশ। নির্বাচনে কী উপায়ে নিরাপত্তা দেওয়া হবে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। তবে সরকারের হাইকমান্ড থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে তথ্য এসেছে, ঘাপটি মেরে থাকা পুলিশের কিছু কর্মকর্তা ও সদস্য সরকারবিরোধীদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রাখছে। পুলিশের একটি প্রতিবেদনেও তথ্য এসেছে সারা দেশে অন্তত আড়াইশো কর্মকর্তা আছেন তারা সরকারবিরোধী হিসেবে পরিচিত। তাদের পুরো কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
এদিকে, চলতি মাস ও আগামী মাসের মধ্যে পুলিশে আরও বড় ধরনের রদবদল করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তালিকাও করা হয়েছে। পাশাপাশি উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্রসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদিও কেনার চেষ্টা করছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানান, সামনের দিনগুলোতে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা। এ নিয়ে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা আগাম সতর্কবার্তাও দিয়েছে। যেকোনো বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধ করতে কিছুদিন আগে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সবকটি ইউনিট প্রধান ও জেলার এসপিদের কাছে বার্তা পাঠানো হয়েছে। বার্তায় বলা হয়েছে রাজনৈতিক দুবৃর্ত্তায়নের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি পুলিশের মধ্যে কোনো সদস্য সরকারবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার তথ্য পেলে জানাতে বলা হয়েছে। ঢাকাসহ সারা দেশেই সব পুলিশ সদস্যকে সতর্ক থাকতে হবে। নির্বাচনকালীন যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। পেশাদার সন্ত্রাসীসহ অন্য অপরাধীদের ধরতে বিশেষ অভিযান চালাতে হবে।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঘাপটি মেরে থাকা পুলিশের কিছু সদস্যের কর্মকান্ড নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। এই সংখ্যা প্রায় আড়াইশো মতো হবে। সংখ্যা আরও বাড়তেও পারে। ইতিমধ্যে তালিকা করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে সরকারের হাইকমান্ডকে অবহিতও করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যেকোনো পরিস্থিতির জন্য পুলিশকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় পুলিশে উদ্বেগ আছে। বৈধ অস্ত্রের সংখ্যার খোঁজ নেওয়া, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও অস্ত্র কারবারিদের গ্রেপ্তার করতে বিশেষ অভিযান চালাতে ইতিমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে অভিযানের নির্দিষ্ট তারিখ এখনো ঠিক হয়নি। হুট করেই আমরা বিশেষ অভিযান শুরু করব। কেপিআই স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন যথাসময়ে হবে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। নির্বাচন নিয়ে যাতে কোনো মহল বা চক্র নাশকতামূলক কর্মকান্ড চালাতে না পারে সে জন্য মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সতর্ক আছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (অপারেশন) আনোয়ার হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশের সবধরনের প্রস্তুতি আছে। দাগি সন্ত্রাসীসহ অন্য অপরাধীদের ধরা ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করতে দ্রুত সময়ের মধ্যে বড় ধরনের অভিযান চালানোর পরিকল্পনা আছে আমাদের।
পুলিশ সূত্র জানায়, আড়াইশো পুলিশ কর্মকর্তার কর্মকান্ড নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। তাদের মোবাইল নম্বর সার্বক্ষণিক ট্র্যাকিং করা হচ্ছে। এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যদেরও খোঁজ রাখা হচ্ছে। নজরদারির মধ্যে থাকা বেশ কয়েকজন পুলিশ সুপার, অ্যাডিশনাল পুলিশ সুপার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ইন্সপেক্টর, সাব-ইন্সপেক্টর আছেন। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের অ্যাডিশনাল ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল বা নেতাদের সাপোর্ট দেওয়া আমাদের কাজ না। জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আমাদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের জন্য উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্র ও যানবাহন ক্রয় করা হচ্ছে। পাশাপাশি ৫০ লাখের মতো রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড কেনা হচ্ছে। আগামী মাসের মধ্যে এসব সরঞ্জাম বাংলাদেশে আসবে বলে আশা করছি। ডিএমপি, সিএমপি, কেএমপি, আরএমপি, বিএমপি, এসএমপি, আরপিএমপি, জিএমপি কমিশনার, বিশেষ শাখা (এসবি), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), অপরাধ তদন্ত বিভাগ, পিবিআই, টুরিস্ট পুলিশ, এটিইউ, রেলওয়ে পুলিশ, নৌপুলিশ, এপিবিএন, হাইওয়ে, শিল্পাঞ্চল পুলিশ প্রধান, সব অ্যাডিশনাল আইজিপি, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা ও রংপুর রেঞ্জে নতুন আগ্নেয়াস্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি পাঠানো হবে। ইতিমধ্যে ইউনিট প্রধানরা পুলিশ সদর দপ্তরে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছেন। বিষয়টি আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকারবিরোধীরা নানা ষড়যন্ত্র করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করতে উঠেপড়ে লেগেছে তারা। বিএনপি আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও করছে। তারা পুলিশের ওপর হামলা করছে। যানবাহনে আগুন দিচ্ছে। আর এসব মোকাবিলা করতে পুলিশকে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে। অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে পুলিশ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। অপরাধীদের ধরতে পুলিশের বিশেষ অভিযান শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।