
মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে রয়েছে মতিঝিল-ফকিরাপুল এলাকার চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভর্তিবাণিজ্য ও বাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্ব। এলাকার আধিপত্য ও ভাগবাটোয়ারা নিয়ে টিপুর সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের অন্য একপক্ষ। তারা পথের কাঁটা মনে করা টিপুকে দুনিয়া থেকেই সরিয়ে দিতে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সহায়তা নেয়। কিলিং মিশনের আগে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে ওইসব আওয়ামী লীগ নেতা গত বছর ১৫ জানুয়ারি রাজধানীর বায়তুল মোকাররমের উল্টো পাশে ‘বার্ডস আই’ রেস্তোরাঁর ছাদে বসে গোপন বৈঠক করেন। ওই সময় পরিকল্পনাকারীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন দুবাইয়ে পলাতক থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান ও ফ্রিডম মানিক। সেখানেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয় টিপুকে হত্যার। টিপুকে গুলি করেন শুটার মাসুম। তিনি শামীমের মোটরসাইকেলে ঘটনাস্থলে যান। টিপুকে গুলি করে শামীমের মোটরসাইকেলেই এলাকা ছাড়েন মাসুম। পরিকল্পনা থেকে শুরু করে কিলিং মিশন বাস্তবায়নে অংশ নেন ৩৪ জন। তাদের মধ্যে ২৪ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। তবে হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের ১০ জন এখনো গ্রেপ্তার হননি।
আওয়ামী লীগ নেতা টিপু ও কলেজছাত্রী সামিয়া আফরিন প্রীতি হত্যা মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। চার্জশিটে ৩৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার বিকেলে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিদর্শক ইয়াসিন শিকদার শাহজাহানপুর থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখায় এ চার্জশিট দাখিল করেন। ১৫ জুন মামলাটির পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য তারিখ ধার্য রয়েছে।
গতকাল দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ বলেন, টিপু হত্যাকাণ্ডের এক মাসের মধ্যে মূল আসামিদের আমরা গ্রেপ্তার করি। হত্যাকাণ্ডে এখন পর্যন্ত যে ২৪ জন গ্রেপ্তার হয়েছে তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তারা জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের আগে তারা বিভিন্ন জায়গায় মিটিং করেছেন। তিনি বলেন, যেহেতু এটি একটি স্পর্শকাতর ঘটনা, সেহেতু তদন্তে কোনো ধরনের সমস্যা যাতে না হয় সেজন্য আমরা প্রতিটি পদক্ষেপ হিসেব করে এগিয়েছি। যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল, কাউকেই আমরা ছাড় দিইনি। কে কোন দল করে সেটাও আমরা দেখার চেষ্টা করিনি।
২০২২ সালের ২৪ মার্চ রাত পৌনে ১০টার দিকে মতিঝিল এজিবি কলোনি কাঁচাবাজারসংলগ্ন রেস্টুরেন্ট থেকে বাসায় ফেরার পথে শাজাহানপুর আমতলা ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের সামনে অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তদের এলোপাতাড়ি গুলিতে নিহত হন মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু এবং কলেজছাত্রী প্রীতি। টিপুর গাড়িচালকও গুলিবিদ্ধ হন। ওই ঘটনায় টিপুর স্ত্রী ফারজানা ইসলাম ডলি মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয়ের ব্যক্তিদের আসামি করা হয়।
ডিবির তদন্তে আসামির তালিকায় যারা : অভিযোগপত্রে ৩৪ জন আসামির নাম রয়েছে। এদের মধ্যে এখনো পলাতক রয়েছেন ১০ জন। তারা হলেনÑ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফ তালুকদার, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা মারুফ আহমেদ মনসুর, বিদেশে পলাতক আন্ডারওয়ার্ল্ডের দুই সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ ও ফ্রিডম মানিক, ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সভাপতি কামরুজ্জামান বাবুল, ১০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক নেতা আমিনুল ইসলাম ওরফে হাবিব, রিফাত হোসেন, রানা মোল্লা, এক্সেল সোহেল ও উজ্জ্বল।
এ ছাড়া এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হওয়া ২৪ জন হলেন মতিঝিল থানা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খায়রুল ইসলাম মাতবর, মতিঝিল থানা জাতীয় পার্টির নেতা জুবের আলম খান রবিন, হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক সোহেল শাহরিয়ার, ১০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি মারুফ রেজা সাগর, ১০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সদস্য মোরশেদুল আলম পলাশ, ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক আরিফুর রহমান সোহেল ওরফে ‘ঘাতক’ সোহেল, সুমন শিকদার ওরফে মুসা, মুসার ভাগ্নে ইয়াসির আরাফাত সৈকত, মুসার ভাতিজা সেকান্দার সিকদার ওরফে আকাশ, ইমরান হোসেন ওরফে জিতু, মোল্লা শামীম, রাকিবুর রহমান, তৌফিক হাসান ওরফে বিডি বাবু, ওমর ফারুক, ‘কিলার’ নাসির, ইশতিয়াক হোসেন জিতু, মাহবুবুর রহমান টিটু, হাফিজুল ইসলাম, মাসুম মোহাম্মদ, নাসির উদ্দিন ওরফে মানিক, মো. মশিউর রহমান ওরফে ইকরাম, ইমাম খান ওরফে দামাল, শুটার সালে ও মোহাম্মদ মারুফ খান।
পলাতকদের বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত তদারকি কর্মকর্তা ডিবি মতিঝিল বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) রাজীব আল মাসুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পলাতক আসামিদের অধিকাংশ দেশে আত্মগোপনে রয়েছে বলে তথ্য রয়েছে আমাদের কাছে। তাদের গ্রেপ্তারে আমরা চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।’
চার্জশিটে এক নম্বর আসামি শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ মন্টি। তিনি দুবাই পালিয়ে আছেন। টিপু হত্যার মধ্য দিয়ে ফের আলোচনায় আসেন জিসান। অভিযোগ রয়েছে, রাজধানীর গুলশান, বনানী, পল্টন, মগবাজার, মালিবাগ, ফকিরাপুল, মতিঝিল এলাকায় একসময় দাপিয়ে বেড়াতেন তিনি। অভিজাত এসব এলাকার ব্যবসা ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়মিত চাঁদা তুলতেন। তালিকাভুক্ত ২৩ সন্ত্রাসীর একজন তিনি। ইন্টারপোল তার নামে রেড অ্যালার্ট জারি করে রেখেছে। জিসান ও আরেক সন্ত্রাসী ফ্রিডম মানিকের ‘ছায়া’ পেয়েই টিপু হত্যাকাণ্ডে সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেন সুমন শিকদার মুসা। তিনি ঢাকার অপরাধজগতের আরেক নিয়ন্ত্রক।
তদন্তে উঠে এসেছে, এ হত্যাকাণ্ডে দুটি অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। এর একটি ছিল ইশতিয়াকের, আরেকটি সৈকতের কাছ থেকে নিয়ে শামীমকে দেওয়া হয়। ইশতিয়াকের পল্টনে অস্ত্র-গুলির দোকান রয়েছে।
হত্যার কারণ : ডিবির তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, একসময় রাজধানীর মতিঝিল, কমলাপুর, শাহজাহানপুরসহ আশপাশ এলাকা সন্ত্রাসী ফ্রিডম মানিক ও জিসানের কব্জায় ছিল। ঠিকাদারি কাজের পাশাপাশি সরকারি জায়গা নিয়ন্ত্রণ, এজিবি কলোনিতে আধিপত্য নিয়ে টিপুর সঙ্গে তাদের বিরোধ বাড়তে থাকে। টিপু বলয়ের বাইরে থাকা নেতাকর্মী মনে করত, তাকে সরানো না গেলে তারা লাভবান হতে পারছেন না। এমনকি মতিঝিলের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য অন্যরা টিপুর কাছে কোটা দাবি করেন। একাধিকবার মতিঝিলকেন্দ্রিক বাণিজ্যের ভাগ অন্যদের দেওয়ার জন্য টিপুকে প্রস্তাব দেওয়া হয়। এতে রাজি হতেন না টিপু।
আগামী ১২ জুন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তাই বাকি আর মাত্র ছয় দিন। তার মধ্যে প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারবেন মাত্র চার দিন। তাই শেষ সময়ে মেয়র, কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলররা কড়া রোদের মধ্যেই নিজের প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত) গতকাল সোমবার দুপুরে শহিদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় জেলা আইনজীবী সমিতির অ্যাডভোকেট ফয়জুল হক ফয়েজের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস, অ্যাডভোকেট আনিস উদ্দিন শহিদ, অ্যাডভোকেট তপংকর চক্রবর্তী প্রমুখ। পরে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের অমৃত লাল দে কলেজ মাঠ, ২৪, ২৫ ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় উঠান বৈঠক করেন।
এ কর্মসূচি চলাকালে খোকন বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দেন নগরবাসীকে। তিনি বলেন, ‘বিগত ১০ বছরে বরিশালবাসী নানা বঞ্চনার শিকার হয়েছেন। এখানকার মানুষের রয়েছে ট্যাক্স বিড়ম্বনা। এখানে রাস্তাঘাটের যে-রকম খারাপ অবস্থা, তেমনি রয়েছে পানি সরবরাহে সংকট। এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে বরিশালের মানুষের জন্য কাজ করতে পাঠিয়েছেন। সুযোগ পেলে সততার সঙ্গে বরিশাল নগরীকে পুনর্গঠিত করব। সিটি করপোরেশন চলবে স্বচ্ছতার মধ্য দিয়ে। এখানকার কোনো ওয়ার্ডবাসী ন্যূনতম সেবা পায় না। এখানকার ময়লা-আবর্জনা সঠিকভাবে পরিষ্কার করা হয় না। কাঁচা মার্কেটগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। দাতা সংস্থাগুলো এখানে কোনো সাহায্য দিচ্ছে না। মাদকের কারণে যুবসমাজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে তাদের মৌলিক সমস্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাকে প্রধানমন্ত্রী এখানে পাঠিয়েছেন একটি ভালো সমাজ গঠন করতে। আমি আশ্বস্ত করছি আমাকে আপনারা সব সময় পাবেন।
এ ছাড়া ডিজিটাল বাতি, রাতের নিরাপত্তা, ফ্রি চিকিৎসাসেবা, বিশুদ্ধ সুপেয় পানি, নারী-শিশু হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয় ও নগর উন্নয়ন কমিটি গঠনসহ ৩০টি সেবা ও কার্যক্রমের প্রতিশ্রুতি নিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপস।
ইশতেহার ঘোষণা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তাপস বলেন, ‘এই ইশতেহার বাস্তবায়ন মোটেই কঠিন কিছু নয়। এখানে কিছু কিছু বিষয় আছে যা হয়তো দীর্ঘমেয়াদি। একজন মেয়র এটা শুরু করলে, তাকেই যে শেষ করতে হবে এমন তো কথা নয়, শুরু হলে তা শেষ হবেই।
গতকাল নগরীর ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বরফকল ও কেডিসি এলাকায় গণসংযোগকালে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত হাতপাখা প্রতীকের বিসিসি মেয়র পদপ্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই বলেন, সিটি করপোরেশনের একজন মেয়রের অন্যতম কর্তব্য হলো নগরীর সর্বস্তরের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। আমি বিজয়ী হলে সর্বস্তরের নাগরিকদের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করতে চাই। এ ছাড়া নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব বগুড়া রোড, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের মুন্সী গ্যারেজ, ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কলেজ অ্যাভিনিউ, ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের গ্যাস্টারবাইন এবং ২৪ নম্বর ওয়ার্ড লালার দিঘীরপাড় এলাকায় গণসংযোগ করেন তিনি।
এবার বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২ লাখ ৭৬ হাজার ভোটার রয়েছেন। মেয়র পদে সাতজন। ৩০টি সাধারণ কাউন্সিলর পদের বিপক্ষে লড়বেন ১৪২ জন প্রার্থী। এ ছাড়া সংরক্ষিত ১০ ওয়ার্ডে ৪২ জন নারী কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন। আগামী ১২ জুন ১২৬টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
কেসিসির গত পাঁচটি নির্বাচনের তিনটিতেই জয়ী হয় জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। এবার মেয়র পদে বিএনপির কোনো প্রার্থী না থাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের সম্ভাবনা নেই। সাধারণ ভোটারদেরও আগ্রহ কম। তবুও থেমে নেই প্রচারণা। তীব্র গরমের মধ্যে কাকডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেকের বিজয় অনেকটা সুনিশ্চিত জেনেও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা নানা কৌশল অবলম্বন করে এগোচ্ছেন।
জানা গেছে, নির্বাচনে মেয়র পদ নিয়ে ভোটারদের মধ্যে তেমন আগ্রহ না থাকলেও বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগকালে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা তালুকদার আব্দুল খালেকের বিগত দিনের কাজ নিয়ে সমালোচনা করছেন। ভোটারদের নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করছেন উপস্থিত হয়ে তাদের পক্ষে ভোট প্রদানের জন্য। বলছেন, তালুকদারের সময়ে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করলেও জনদুর্ভোগ কমেনি। প্রকল্পের প্রকৃত উদ্দেশ্য সফল হয়নি। পরিকল্পনার অভাবে শুধু অর্থের অপচয় হয়েছে। এ ছাড়া ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক গড়ার মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীদের আকৃষ্টের চেষ্টা, সরকারের সমালোচনা করা, উন্নয়ন-সমস্যা নিরসন বিষয়ে নানা প্রতিশ্রুতি, তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব অবস্থান, তীব্র তাপপ্রবাহ উপেক্ষা করে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাওয়াসহ বেশ কিছু কৌশল অবলম্বন করে ভোট বাড়ানোর চেষ্টা করছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। কেউ কেউ বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে গোপনে অর্থের বিনিময়ে আঁতাত করার চেষ্টা করছেন বলেও জানা গেছে। আর বিগত সময়ের উন্নয়ন কর্মকান্ডের তথ্য প্রচারের পাশাপাশি অসমাপ্ত কাজ এগিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তালুকদার আব্দুল খালেক। গতকাল ফেরিঘাট এলাকায় গণসংযোগকালে বিগত দিনের উন্নয়নকাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলে জাতীয় পার্টির মো. শফিকুল ইসলাম মধু বলেন, বিদেশিদের হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে উন্নয়নকাজ করলেও কাজে চরম ধীরগতি রয়েছে। মানও যথাযথ নয়। ফলে জনদুর্ভোগ বেড়েছে। সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতায় মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। পানিনিষ্কাশনে খাল খনন ও ড্রেনেজব্যবস্থার নামে অর্থের অপচয় হয়েছে।
গতকাল নিউ মার্কেট, মিনাবাজার এলাকায় গণসংযোগকালে স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম শফিকুল ইসলাম মুশফিক বলেন, পাঁচ বছর ধরে রাস্তাঘাট খুঁড়ে রেখেছে। তার পছন্দের নির্দিষ্ট ঠিকাদার দিয়ে তিনি কাজ করাচ্ছেন, ফলে কাজে ধীরগতি হলেও ব্যবস্থা নিচ্ছেন না, মান নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। এ সময় তিনি গণমাধ্যমের কাছে নির্বাচনে কালোটাকা ছড়িয়ে জনপ্রতি ৩০০-৫০০ টাকায় শ্রমিক ভাড়া করে মাঠে নামানোর অভিযোগও করেন।
৩১ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগকালে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী মাওলানা আব্দুল আউয়াল বলেন, এলাকার মানুষ আওয়ামী লীগ দেখছে, বিএনপিকে দেখেছে। এখন মানুষ চায় ইসলামী শাসন, সামাজিক ন্যায়বিচার, মানবিক মর্যাদা। জনগণ ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে নীরব বিপ্লব ঘটবে ইনশাআল্লাহ। তিনি অভিযোগ করে বলেন, কালোটাকার ছড়াছড়ি চলছে। কালোটাকা মানুষের ভোটের ওপর প্রভাব ফেলে। টাকা ছড়ানো বন্ধের জন্য কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
অপরদিকে অপপ্রচারে কান না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, খুলনা সিটির সব দৃশ্যমান উন্নয়ন আমার সময়ে হয়েছে। আগামীতে খুলনা সিটিকে স্মার্ট নগরীতে পরিণত করা হবে। জলাবদ্ধতা নিরসনে পরিকল্পিতভাবে খালগুলোর পাশাপাশি রূপসা এবং ভৈরব নদ খনন করার পরিকল্পনা রয়েছে। অসমাপ্ত কাজগুলো এগিয়ে নিতে তিনি জনগণের কাছে ভোট প্রত্যাশা করেন এবং নির্ভয়ে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদানের আহ্বান করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক নেতা জানান, তালুকদারের প্রতিপক্ষ প্রার্থীরা তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছেন। তবে কাউকে এখনো কথা দেননি বলে তিনি জানান।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) খুলনার বিভাগীয় ও জেলার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কুদরত ই খুদা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিগত দিনের নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেখা গেছে। এবার বিএনপি বর্জন করায় নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হওয়ার চিন্তা করার সুযোগ নেই। নির্বাচনে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ ভোট পড়তে পারে।
বিগত দিনের ফলাফল বিশ্লেষণে জানা যায়, খুলনা নগরী ১৯৯০ সালের ৬ আগস্ট খুলনা সিটি করপোরেশনে রূপান্তরিত হয়। সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর প্রথম নির্বাচন হয় ১৯৯৪ সালে। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মাহাবুবুল আলম হিরণকে পরাজিত করে মেয়র হন বিএনপির প্রয়াত নেতা শেখ তৈয়েবুর রহমান। তিনি ২০০২ সালের নির্বাচনেও বিজয়ী হন। বিএনপি ২০০৮ সালের নির্বাচন বর্জন করলেও দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হয়েছিলেন মহানগর বিএনপির তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি। ওই নির্বাচনে তালুকদার আব্দুল খালেক ১ লাখ ৫৭ হাজার ৮১২ ভোট পেয়ে প্রথমবারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মো. মনিরুজ্জামান ১ লাখ ৩১ হাজার ৯৭৬ ভোট পান। ২০১৩ সালের নির্বাচনে বিএনপির মো. মনিরুজ্জামান প্রায় ৬০ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন। তিনি পান ১ লাখ ৮০ হাজার ৯৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক পান ১ লাখ ১৯ হাজার ৪২২ ভোট।
২০১৮ সালের নির্বাচনে দ্বিতীয় মেয়াদে বিজয়ী হন তালুকদার আব্দুল খালেক। ফলাফলে নৌকা প্রতীকের তালুকদার আব্দুল খালেক পান ১ লাখ ৭৬ হাজার ৯০২ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষ প্রতীকের নজরুল ইসলাম মঞ্জু পান ১ লাখ ৮ হাজার ৯৫৬ ভোট। সব মিলে খুলনা সিটি করপোরেশনে ২২ বছরই নগর পিতার চেয়ারে ছিলেন স্থানীয় বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণা আসতেই পাইকারি বাজারে কমতে শুরু করেছে। মোকামগুলোতে মণপ্রতি ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত কমেছে পণ্যটির দাম। সে হিসেবে প্রতি কেজিতে দাম কমেছে ২৫-৩০ টাকা। যদিও খুচরা বাজারে এখনো এর প্রভাব পড়তে দেখা যায়নি। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগামী দু-তিন দিনের মধ্যেই কেজিপ্রতি দাম ৪৫ টাকার নিচে চলে আসবে। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গতকাল সোমবার থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। বেনাপোল, হিলি ও ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে বেশ কটি পেঁয়াজের ট্রাক প্রবেশ করেছে দেশে। যদিও আমদানি করা পেঁয়াজ বাজারে আসার আগেই দেশের সবচেয়ে বড় ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জে প্রতি কেজির দাম এক রাতে ৩০ টাকা কমেছে।
পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে ও কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় গত ১৫ মার্চ পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। পরদিন অর্থাৎ ১৬ মার্চ থেকে দেশের সব বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। এতে চাহিদার পুরোটাই মেটাতে হয়েছে দেশি পেঁয়াজ দিয়ে। সে সময় বলা হয়েছিল, অভ্যন্তরীণ উৎপাদন সন্তোষজনক হওয়ায় আমদানির প্রয়োজন নেই। কিন্তু বাস্তবে আমদানি বন্ধের ঘোষণা আসার পরপরই খুচরা ও পাইকারি বাজারে হু হু করে বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম। যে পেঁয়াজ মার্চ মাসে খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল, সেটি পরের মাসেই এক ধাক্কায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। কয়েক ধাপে দাম বেড়ে বর্তমানে খুচরা বাজারে ৯০ থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা গিয়েছে। সাধারণত পাইকারি বাজারে ৯০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি হলে তা খুচরায় ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে আমদানির ঘোষণা আসায় হঠাৎ করেই নেমে যায় পণ্যটির দাম। আমদানিকারকদের ভাষ্য অনুযায়ী, কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে আমদানি অনুমোদন (আইপি) হাতে পেয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। আগামী দুদিনে দেশের বাজারে পুরোপুরি ভারতীয় পেঁয়াজ প্রবেশ করবে। এতে ভোক্তাপর্যায়ে প্রতি কেজি ৪৫-৫০ টাকা করে বিক্রি হবে।
সিলেটের ব্যবসায়ী মামুন সরকার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ইতিমধ্যে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। এসব পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৩০-৩৫ টাকা করে আমাদের কিনতে হচ্ছে। সাধারণ মানুষ বাজার থেকে এসব পেঁয়াজ ৪৫-৫০ টাকা করে কিনতে পারবেন।
হিলির বন্দর এলাকার ব্যবসায়ী সাজু আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, রাত ৮টা পর্যন্ত প্রায় ৯০০ থেকে ১ হাজার টন পেঁয়াজ ভারত থেকে প্রবেশ করেছে। মানভেদে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৩০-৩৩ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। তবে আগামী সপ্তাহ আরও ১০ টাকা কমে পেঁয়াজ বিক্রি হবে বলেও এই ব্যবসায়ী জানান।
সরেজমিনে গতকাল সোমবার রাজধানীর শ্যামবাজারে ২৫-৩০ টাকা কমে পেঁয়াজ বিক্রি করতে দেখা গিয়েছে ব্যবসায়ীদের, যা গত দুদিন আগেও ৮৮-৯০ টাকা করে বিক্রি করেছেন তারা। সকালের দিকে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৭০ টাকা করে বিক্রি করলেও বিকেলে ৬২-৬৫ টাকা করে বিক্রি হয়েছে। এদিকে কারওয়ান বাজারে গিয়ে দামের ভিন্নতা দেখা গিয়েছে। প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৮০ টাকা করে বিক্রি করছিলেন ব্যবসায়ীরা, যা গতকালও ৯০-১০০ টাকা করে বিক্রি হয়েছে।
রাজবাড়ীর পাইকার বকুল ফকির দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির খবরে মণপ্রতি দাম কমেছে ১ হাজার টাকা করে। শনি-রবিবারে শ্যামবাজারে এক কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮৮-৯০ টাকা করে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের চিঠির খবরে তা কেজিপ্রতি ১০ টাকা কমে সকালের দিকে ৭০ টাকা করে বিক্রি হয়েছে। তবে বিকেলের দিকে ৬০-৬৫ টাকায় পেঁয়াজের দাম নেমে এলে বাজার ক্রেতাশূন্য ছিল।
কারওয়ান বাজারের পাইকার খায়রুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শ্যামবাজার থেকে কিছুটা দামের পার্থক্য থাকে আমাদের এখানে। প্রতি কেজি পেঁয়াজে ২০ টাকা কমেছে। ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির খবরে অনেক ব্যবসায়ী আরও কম দামে পেঁয়াজ ছেড়ে দিচ্ছেন। আজকের মধ্যে ভারতের পেঁয়াজ বাজারে চলে এলে আরও কমে বিক্রি করতে হবে।’
পাইকারি বাজার ওঠানামার সঙ্গে খুচরা বাজারের সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু গতকাল পাইকারি বাজারের কোনো প্রভাব খুচরা বাজারে দেখা যায়নি। পাইকারি বাজারে পেঁয়াজ কেজিতে ২৫-৩০ টাকা কমলেও রাজধানীর হাতিরপুল বাজারে আগের দামেই বিক্রি হতে দেখা গিয়েছে। ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ৯০-১০৫ টাকা করে।
জানতে চাইলে চাঁদপুর স্টোরের বিক্রয়কর্মী দেশ রূপান্তরকে জানান, পেঁয়াজের কেজি ৯০ টাকা করে কিনে ৫-১০ টাকা লাভ করি। পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কমলেও আমরা কমাতে পারছি না। তাদের হিসাব অনুযায়ী প্রতি কেজি পেঁয়াজে এখন ২০ টাকা করে লস দিতে হবে।
অন্যদিকে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির খবরে দেশের জেলা শহরগুলোতেও দাম কমতে শুরু করেছে। হাকিমপুর প্রতিনিধির তথ্য মতে, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির খবরে এক দিনের ব্যবধানে দিনাজপুরের হিলিতে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা করে কমেছে। গতকাল ৮৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও আজ তা কমে ৭৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ঢাকা-১৭ আসনে দলীয় প্রার্থী নিয়ে পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছে জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা)। গতকাল সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে এ আসনে জাপার প্রার্থী ঘোষণা করেছেন দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। কিন্তু সে প্রার্থীকে আমলে নিতে নারাজ পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের নেতৃত্বাধীন জাপা। তারা এই আসনের জন্য প্রার্থী মনোনয়নের কাজ শুরু করেছে। ফলে কে হবেন এই আসনে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে জাপার দলীয় প্রার্থী তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
গতকাল জাপার প্রার্থী হিসেবে জাপার সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং বর্তমান বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের মুখপাত্র ও এরশাদ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান কাজী মো. মামুনূর রশিদকে আনুষ্ঠানিকভাবে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেন রওশন এরশাদ।
পরে রাতে এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাপার মহাসচিব অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক চুন্নু এমপি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কে করেছে, কী করেছেÑ সেটা নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। যে কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। এটা নিয়ে আমাদের কোনো চিন্তা নেই। আমলে নেওয়ার কোনো দরকারও নেই। জাতীয় পার্টিতে ঢাকা-১৭ আসনে প্রার্থী নির্বাচনের কাজ চলছে। ওদের (রওশনপন্থি জাপা) সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যেই মনোনয়ন ফরম দেওয়া শুরু করেছি। কারা কারা নির্বাচন করতে চান, সে ব্যাপারে একটা তালিকাও করেছি। তাদের ফরমও নিতে বলেছি। দু-একজন ফরম নিয়েছেন। যদি ভালো প্রার্থী পাই, তাহলে আমরা প্রার্থী দেব।’
রওশনপন্থি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা দেশ রূপান্তরকে জানান, দলীয় প্রার্থী হিসেবে কাজী মামুনূর রশিদের ব্যাপারে কাদেরপন্থি জাপার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি এবং রওশনপন্থি জাপা ঘোষিত প্রার্থী দলের সম্মিলিত প্রার্থী না। তবে চেষ্টা চলছে তাকেই একক দলীয় প্রার্থী রাখার জন্য।
গতকাল রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে তার দলীয় মনোনয়ন ফরমে স্বাক্ষর করেন রওশন এরশাদ। আগামী ১৭ জুলাই অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদের ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে কাজী মো. মামুনূর রশিদের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন বিরোধীদলীয় নেতা, যা অবিলম্বে দলীয় সিদ্ধান্ত হিসেবে কার্যকরের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
পরে গুলশানে বিরোধীদলীয় নেতার রাজনৈতিক সচিবের বাসভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজী মো. মামুনূর রশিদের হাতে মনোনয়নপত্রটি তুলে দেন সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ও জাপার সাবেক মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা ও গোলাম মসীহ। এ সময় সেখানে তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন জাপার সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক ছাত্রনেতা খন্দকার মনিরুজ্জামান টিটু।
জাপায় যদি দুই প্রার্থী হন, সে ক্ষেত্রে কে পাবেন দলীয় প্রতীক জানতে চাইলে জাপা মহাসচিব অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক চুন্ন বলেন, ‘বিগত সময়ে যারা প্রার্থী হয়েছেন, তাদের লাঙ্গল প্রতীক আমরাই দিয়েছি। আগামীতেও তাই হবে। নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, যেসব দল নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত, সেসব দলের কাউন্সিলের মাধ্যমে যে কমিটি হয়, সেই কমিটি এবং গঠনতন্ত্র নির্বাচন কমিশন অফিসে জমা দিতে হয়। ২০১৮ সালে জাতীয় পার্টির কাউন্সিল হওয়ার পর জি এম কাদেরের নেতৃত্বে কমিটির নাম ও গঠনতন্ত্র জমা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সেটার স্বীকৃতি দিয়েছে। পরে মহাসচিব বদল হলে সেটাও নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হয়েছে ও কমিশন সেটা গ্রহণ করেছে। সুতরাং পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিব মনোনীত প্রার্থী হবেন দলীয় প্রার্থী এবং তিনিই লাঙ্গল প্রতীক পাবেন।’
কাদেরপন্থি জাপার এক নেতা জানান, পার্টির ৯ সদস্যের দলীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি জি এম কাদের ও সদস্য সচিব মুজিবুল হক চুন্নু। এই দুজন ছাড়া লাঙ্গল প্রতীক দেওয়ার এখতিয়ার আর কারও নেই।
দলীয় প্রতীকের ব্যাপারে কাদেরপন্থি জাপার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে স্বীকার করেছেন রওশনপন্থি নেতারাও। এ ব্যাপারে রওশপন্থি এক নেতা বলেন, মূলত রংপুরের নির্বাচন থেকেই প্রতীক নিয়ে সংশয়ের শুরু। সেজন্য চেষ্টা চলছে জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের ঘোষিত প্রার্থীও যেন কাজী মামুনূর রশিদই হন।
জাপার দুই অংশের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাম্প্রতিক কোনো নির্বাচনেই শেষ পর্যন্ত দলীয় প্রার্থী নিয়ে জাপায় কোনো বিভেদ স্থায়ী হয়নি। শুরুতে সংশয় দেখা দিলেও সব নির্বাচনেই একক প্রার্থী দিতে পেরেছে দলটি।
রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত দলীয় প্রার্থী হিসেবে দুই পক্ষেরই সমর্থন ছিল মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার ব্যাপারে। পরে তিনি বিশাল ভোটের ব্যবধানে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে জয়লাভ করেন।
এরপর বিএনপির ছেড়ে দেওয়া সাতটি আসনের ব্যাপারে দলীয় প্রার্থী নিয়ে কোনো বিভেদ ছিল না এবং সে নির্বাচনে ঠাকুরগাঁওয়ে জাপার দলীয় প্রার্থী জয়লাভ করেন। সর্বশেষ গাজীপুর সিটি করপোরেশনে (গাসিক) নির্বাচনেও দলীয় প্রার্থী হিসেবে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে লড়েছেন এম এম নিয়াজউদ্দিন। সামনে অনুষ্ঠেয় রাজশাহী সিটি করপোরেশনে (রাসিক) মো. সাইফুল ইসলাম স্বপন, খুলনা সিটি করপোরেশনে (খুসিক) মো. শফিকুল ইসলাম মধু, বরিশালে সিটি করপোরেশনে (বসিক) প্রকৌশলী মো. ইকবাল হোসেন তাপস ও সিলেট সিটি করপোরেশনে (সিসিক) মো. নজরুল ইসলাম বাবুলকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে জি এম কাদেরপন্থি জাপা। সেখানে রওশনপন্থি জাপার কোনো বিরোধিতা ছিল না।
রওশনপন্থি এক নেতা বলেন, বিগত সময়ের মতো ঢাকা-১৭ আসনেও জাপা প্রার্থী দিলে শেষ পর্যন্ত একক দলীয় প্রার্থী দেবে, কোনো বিরোধ থাকবে না।
জ্বালানি সংকট, মূল্যবৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি কারণে শুধু পরিবহন ক্ষেত্রে নয়, দৈনন্দিন জীবনে সব ক্ষেত্রেই জ্বালানি সাশ্রয়ের তাগিদ বাড়ছে। জার্মানির এক উদ্যোক্তা এক অভিনব উপায়ে সেই কাজে অবদান রাখছেন। কর্নেলিউস পাউল নামে ওই উদ্যোক্তা একেবারে নতুন ধরনের টালি তৈরি করেছেন, যেগুলো সাধারণ টালির মতো ভবনের সুরক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সোলার প্যানেলের মতো বিদ্যুৎ উৎপাদনও করে।
সোলার টালির উদ্ভাবক কর্নেলিউস পাউল বলেন, আমরা সহজে হিসাব করতে পারি। ছাদের ওপর এক হাজার টালির সর্বোচ্চ ক্ষমতা ১০ কিলোওয়াট। জার্মানির কোনো জায়গায় বছরে প্রায় ৯,০০০ কিলোওয়াট আওয়ার, কোথাও-বা ১০ হাজার কিলোওয়াট আওয়ার বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেতে পারে। জার্মানির মতো দেশে বিদ্যুতের ব্যয় হিসাবে ১৫ থেকে ২০ বছরের মধ্যেই টালি কেনা ও বসানোর ব্যয় উঠে আসবে।
তবে কর্নেলিউসের এই উদ্যোগের কিছু প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে। এটির খচর অনেক বেশি হওয়ায় এর বাস্তবসম্মত ব্যবহার নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। একটি বাড়িতে এক হাজার টালি বসানোর ব্যয় প্রায় ৪০ হাজার ইউরো। সাধারণ ছাদের ওপর আলাদা করে সোলার প্যানেল বসানোর ব্যয়ের তুলনায় সেই অঙ্ক অনেক বেশি। এর অন্যতম কারণ অবশ্য টালিগুলো উৎপাদনের জন্য এখনো হাতে অনেক কাজ করতে হয়। ফলে উৎপাদনের ব্যয়ও বেড়ে যায়।
অবশ্য জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি রোবটও কাজে লাগানো হচ্ছে। ফলে কর্নেলিউস আরও বেশি পরিমাণে এবং আরও সস্তায় উৎপাদন করতে পারছেন। দামি সরঞ্জাম কেনার সামর্থ্য নিশ্চিত করতে তিনি বিনিয়োগকারীদের নিজের কোম্পানির অংশীদার করেছেন। এভাবে নতুন কোম্পানির প্রতি আস্থা আদায় করতে পেরেছেন তিনি।
কর্নেলিউস পাউল বলেন, ‘২০১১ সালে আমরা মাত্র তিনজনকে নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম। এখন প্রায় ৭০ জন কর্মী সক্রিয় রয়েছেন। গত বছর আমাদের টার্নওভার দ্বিগুণ হয়ে ৫০ লাখ ছুঁয়েছে। চলতি বছর আমরা সেটা পাঁচ বা ছয় গুণ করতে চাই।’
জ্বালানি সংকটের কারণে জার্মানির অনেক বাসার মালিকের মনে নিজস্ব জ্বালানি উৎপাদনের তাগিদ বাড়ছে বলে কর্নেলিউস সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করছেন। সেই সঙ্গে সম্প্রতি এমন উদ্যোগের জন্য আরও মোটা অঙ্কের রাষ্ট্রীয় সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে, যে ক্ষেত্রে বেশি জটিলতা ছাড়াই ভবনের রূপান্তর ঘটানো যায়।
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া হচ্ছে না। তার পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদনের ওপর গতকাল রবিবার আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে বলেছে, সাজা স্থগিত থাকাবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই।
যদি যেতে হয়, তাহলে সাজা স্থগিতের আদেশ বাতিল করতে হবে। কিন্তু সেটা করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তবে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি।
আইন মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপি বলছে, আন্দোলনের মাধ্যমেই সুরাহার পথ বের করতে হবে। সরকারের এমন নেতিবাচক সিদ্ধান্তের পর এখন পর্যন্ত কোনো কর্মসূচি দেয়নি দলটি। তবে এই ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি এক দফার আন্দোলনের সঙ্গে যোগ হতে পারে বলে জানা গেছে।
৫৩ দিন ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া। বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও দলীয় নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা গুরুতর। বিদেশে নেওয়া ছাড়া তার উন্নত চিকিৎসা সম্ভব নয়। সম্প্রতি বিএনপির চেয়ারপারসনকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ চেয়ে তার ভাই শামীম এস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করেন। এতে মতামত দিতে আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এর ধারাবাহিকতায় আইন মন্ত্রণালয় এতে মতামত দেয়। এ বিষয়ে গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়টি উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেছেন, তার সাময়িক মুক্তির আদেশটা বাতিল করে তাকে (খালেদা জিয়া) কারাগারে নেওয়া হলে তিনি আদালতে যেতে পারেন। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া বাসায় চিকিৎসা নেবেন এবং বিদেশে যেতে পারবেন না এমন দুটো শর্ত সাপেক্ষে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে দন্ডাদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। দরখাস্তটা নিষ্পত্তি করা হয়েছিল। ইতিমধ্যে আটবার দন্ড স্থগিত করা হয়েছে।’
আনিসুল হক বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় কোনো দরখাস্ত যদি একবার নিষ্পত্তি করা হয়, সেই নিষ্পত্তিকৃত দরখাস্ত পুনর্বিবেচনা করার কোনো সুযোগ আইনে থাকে না। আমরা ৪০১ ধারার উপধারা ১, ২, ৩, ৪, ৫ ও ৬ ব্যাখ্যা করে মতামত পাঠিয়েছি। আমাদের মতামত হলো, ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে যে দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হয়েছে, সেটা অতীত এবং মীমাংসিত। এটা আর খোলার কোনো উপায় নেই।’
এক প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তাকে (খালেদা জিয়া) সাজা স্থগিত রেখে যে শর্তযুক্ত মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, সেটা বাতিল করে তারপর পুনরায় বিবেচনা করার সুযোগ থাকলে সেটা করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এই উপমহাদেশে ৪০১ ধারার ক্ষমতা যখন প্রয়োগ করে, তখন এটি আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যায় না বলে সিদ্ধান্তের নজির আছে। সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এখন যে আদেশটা আছে, সেটা যদি বাতিল করা হয়, বাতিল করে তাকে (খালেদা জিয়া) যদি আবার কারাগারে নেওয়া হয়, তাহলে তিনি আদালতে যেতে পারেন। কিন্তু এ অবস্থায় আদালতে যেতে পারবেন না।’ খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের বিষয়টি বাতিল করা হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা অমানবিক হবে, বাতিল করব না।’
আইনমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এক বার্তায় বলেন, ‘আজকের এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে, দেশে আইনের শাসন নেই। প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে এক ভয়ংকর তামাশা করা হচ্ছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, নির্বাহী বিভাগ চাইলেই কাউকে মুক্তি দিতে পারে।’
খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি না দেওয়ায় বিএনপি কী এখন ভাবছে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আন্দোলনের মাধ্যমেই সুরাহার পথ বের করতে হবে।’
আর গতকাল সংবাদ সম্মেলনে দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘এই সিদ্ধান্ত পূর্বপরিকল্পিত ও গভীর নীলনকশার অংশ। মানবতাবিরোধী ও সরকারের বর্বর ইচ্ছা পূরণের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। এই অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জনগণ হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না।’
দলটির নেতাদের অভিযোগ, বিএনপির চেয়ারপারসনের বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদন আইনগতভাবে বিবেচনা না করে, রাজনৈতিকভাবে বিবেচনা করা হয়েছে। ফলে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি এখন সরকারের বিদায়ের ওপর নির্ভর করছে। আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বিদায় করতে না পারলে বিএনপিপ্রধানের মুক্তি এবং বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দরজা খুলবে না। তাই এখন আন্দোলনের মাধ্যমেই এই ইস্যুর সুরাহা করতে চায় দলটি।
কায়সার কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়া এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন, সেখানে বলা হয়েছে, তাকে “দেশে চিকিৎসা নিতে হবে”, তার বদলে “দেশে বা বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারবেন” বলাই যথেষ্ট। কিন্তু দেশে চিকিৎসা গ্রহণের শর্তারোপ করা হলে তা যে চিকিৎসার বিবেচনায় না করে রাজনীতির বিবেচনায় করা হবে, সেটা বোঝার মতো বুদ্ধি সাধারণ মানুষের আছে।’
অসুস্থতার কারণে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের মার্চে করোনার সময় টানা দুই বছর কারাভোগের পর সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় ফিরেছিলেন খালেদা জিয়া। পরে এ পর্যন্ত তার মুক্তির মেয়াদ আটবার বাড়িয়েছে সরকার।
এরই মধ্যে অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় তাকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ দিতে পরিবারের পক্ষে ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার ২৫ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। এ বিষয়ে আইনি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে আবেদনটি পাঠায়।
বিএনপিপ্রধানকে নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন ছিল ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি সরকার ইতিবাচকভাবে দেখতে পারে’। কিন্তু সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ‘বিদেশে যাওয়ার আবেদন করতে হলে খালেদা জিয়াকে কারাগারে ফেরত গিয়ে করতে হবে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের পর সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় এবারও ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত আসবে না। গত শনিবার এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এ শঙ্কাই প্রকাশ করেছিলেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনা আছে, যেকোনো মূল্যে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচন করার ব্যাপারে সরকার মরিয়া। সে কারণে হয়তো খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়টি ঝুঁলিয়ে রাখতে চাইছে এমনটাই মনে করছে সরকারবিরোধীরা। বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা দিলেই সরকারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলেও বিরোধী নেতাদের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে। তবে শর্ত দিয়ে দেশের বাইরে চিকিৎসার বিষয়ে দল যাতে সম্মত না হয়, সে কথাই নেতাদের বলে রেখেছেন খালেদা জিয়া।
বিএনপির হাইকমান্ড মনে করছেন, এ অবস্থায় চলমান এক দফার আন্দোলনে খালেদা জিয়ার মুক্তি বিষয়টি থাকলেও সেটাকে আরও জোরালোভাবে সম্পৃক্ত করতে হবে; যাতে সরকারবিরোধী আন্দোলন বড় ধরনের মোড় নেয়।
জানা গেছে, এই ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে দলটি। আজ সোমবার রাতে দলটির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক রয়েছে। সূত্র বলছে, জোটগত ছাড়াও দলীয়ভাবেও কর্মসূচি আসতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খালেদা জিয়ার এক চিকিৎসক জানান, হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় তার কেবিনে এক্স-রে মেশিন নেওয়া হয়েছিল গতকাল ভোরে। শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণে না এলে সিসিইউতে নেওয়ার পরামর্শ ছিল। দুপুরে তার ইসিজি ও ইকো ডায়াগ্রাম করানো হয়েছে। ফুসফুসের পানি অপসারণের জন্য তার ডান পাশে যে ক্যাথেটার লাগানো ছিল, সেটা আপাতত খুলে ফেলা হয়েছে।
লিভার জটিলতা ছাড়াও ৭৮ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ফুসফুস, কিডনি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। গত ৯ আগস্ট ফিরোজায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে দলীয় মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) সেটআপে কেবিনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছে।
জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ‘ওনার লিভার প্রতিস্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। সে জন্য তাকে দ্রুত বিদেশে উন্নত মাল্টিডিসিপ্লিনারি সেন্টারে পাঠানো দরকার।’
সদ্যোজাত থেকে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে অনেক সময়েই নানা কারণে কানের ব্যথা দেখা যায়। কিছু ক্ষেত্রে দিন কয়েকের মধ্যেই তা সেরেও যায়। কিছু ক্ষেত্রে সেই ব্যথা ঘুরেফিরে আসে ও দীর্ঘস্থায়ী হয়।
দীর্ঘস্থায়ী কানে ব্যথা কখনোই অবহেলা করা উচিত না। যদি কানে ব্যথা বাড়তে থাকে, সে ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। মূলত কানের সংক্রমণ থেকে দীর্ঘস্থায়ী এই ব্যথা হতে পারে।
অনেকেরই ধারণা থাকে যে, বাচ্চাদের কানে পানি ঢুকে বা সদ্যোজাতদের দুধ খাওয়ানোর সময়ে তা কানে ঢুকে সংক্রমণ হয়। এ ছাড়া কানে ময়লা জমেও কানে ব্যথা হয় বলে সাধারণ ধারণা রয়েছে। কিন্তু শিশু বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই ধারণাগুলো ঠিক নয়। স্বাভাবিক অক্ষত কানের পর্দা ভেদ করে পানি, দুধ কানের একদম ভেতরে ঢুকতে পারে না।
শিশু বিশেষজ্ঞদের মতে কান, গলা ও নাক এগুলো একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। ফলে গলায় সংক্রমণ হলে তা সহজেই কানে চলে আসে। বাচ্চার ঠান্ডা লেগে জ্বর, সর্দি-কাশি বা গলায় সংক্রমণ হলে তা কানেও ছড়িয়ে পড়ে। কানের সঙ্গে ফ্যারিঙ্কসের যোগসূত্র তৈরি হয় ইউস্টেশিয়ান টিউবের মাধ্যমে। ফলে যখন সন্তান বা বড়দের ফ্যারিঞ্জাইটিস, ল্যারিঞ্জাইটিস বা টনসিলাইটিস হচ্ছে, তখন সেই সংক্রমণ কানের মধ্যে চলে যেতে পারে।
এ ছাড়া শিশুদের সর্দি থেকেও কানে ব্যথা হয়। বিশেষ করে নবজাতকদের মধ্যে এই উপসর্গ দেখা যায়। বাচ্চারা যেহেতু নিজে থেকে কফ বার করতে পারে না। তাদের ঠান্ডা লেগে গলায় কফ জমে এবং কানেও তরল জমতে পারে। ফলে কানে ব্যথা হয় ও বাচ্চা কাঁদতে থাকে।
শিশুদের কানে ব্যথা হলেই অনেকে কানের ড্রপ দিতে শুরু করেন। কিন্তু এসব করতে বারণ করেন শিশু বিশেষজ্ঞরা। বরং চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল খাওয়ানো যেতে পারে।
শিশু এবং ছোট বাচ্চাদের কানের ব্যথা বা সংক্রমণ সম্পর্কে বোঝানোর ক্ষমতা থাকে না। তাই কিছু লক্ষণ দেখেই তাদের কানে সংক্রমণ নিশ্চিত করা যায়।
১. সংক্রমণের কারণে কানে ব্যথা এবং অস্বস্তি হয়। ব্যথা কমাতে শিশুরা তাদের কান ধরে টানতে থাকে।
২. সংক্রমণে আক্রান্ত শিশু শুয়ে থাকলে এটি মধ্যকর্ণে চাপের পরিবর্তন ঘটায়। যা ব্যথা এবং অস্বস্তির সৃষ্টি করে ফলে শিশুদের জন্য ঘুমানো বা শুয়ে থাকা কঠিন হয়ে যায়।
৩. কানের সংক্রমণের একটি নিশ্চিত লক্ষণ হল শিশুর কান থেকে তরল বা পুঁজ বের হওয়া।
৪. সংক্রমণের কারণে কানের ব্যথা হয় যার ফলে শিশু অতিরিক্ত কান্না করে বা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি খিটখিটে মেজাজ হতে পারে।
৫. সংক্রমণের কারণে কানে তরল জমা হয়ে সাময়িকভাবে শ্রবণশক্তি হারাতে পারে।
৬. জ্বর থাকতে পারে।
৭. ডায়রিয়া, বমি, ক্ষুধা কমে যাওয়া।
১. ঘরে বা রাস্তাঘাটে ধুলো নাক-মুখ দিয়ে ঢুকলে অনেক সময়ে আল্যার্জি ও প্রদাহ হয়। ফলে ইউস্টেশিয়ান টিউব বন্ধ হয়ে যায়। তখন কানে ব্যথা হতে পারে।
২. বিমানে ওঠার সময়ে যেমন ইউস্টেশিয়ান টিউব বন্ধ হয়ে যায়। ফলে অনেকেরই কানে সমস্যা দেখা যায়। বাচ্চারা সেটা বোঝাতে বা বলতে না পেরে কেঁদে ওঠে। তখন বড় হোক বা বাচ্চা, ঢোঁক গিলতে হবে। তা হলেই আবার ইউস্টেশিয়ান টিউবের মুখটা খুলে যাবে। সন্তান খুব ছোট হলে পানি বা লজেন্স খাওয়ানো যায়। সেটা খাওয়ার সময়ে সে ঢোঁক গিললে সমস্যা মিটে যাবে।
৩. ইউস্টেশিয়ান টিউব বন্ধ হয়ে গেলে বা কান বন্ধ হয়ে গেলে, তা ঠিক করার জন্য এক ধরনের ব্যায়াম ভালসালভা ম্যানুভার করা যেতে পারে। এর জন্য নাক দিয়ে অনেকটা শ্বাস গ্রহণ করে তারপরে নাক ও মুখ বন্ধ করে, বেলুন ফোলানোর মতো করে মুখ ফুলিয়ে সেই বাতাস বের করার চেষ্টা করতে হবে। এতে নাক ও মুখ বন্ধ থাকায় ভিতরের বাতাস কানের পথে বেরোনোর চেষ্টা করবে। ফলে বন্ধ কান খুলে যাবে।
৪. এ ছাড়া রাইনাইটিস বা নাকের ভিতরের শ্লেষ্মাঝিল্লির জ্বালাপোড়া ও প্রদাহ থেকেও কানে ব্যথা হতে পারে। তখন ন্যাজ়াল ড্রপ দেন বিশেষজ্ঞরা।
গলার সংক্রমণ যেমন কানে ছড়াতে পারে ঠিক তেমনি কানের সংক্রমণ মস্তিষ্কে ছড়িয়ে যেতে পারে। ট্রান্সভারস বা সিগময়েড সাইনাস কান ও মস্তিষ্কের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করে।
দীর্ঘদিন কানের ইনফেকশন অবহেলা করলে, এই সংক্রমণ সিগময়েড সাইনাস দিয়ে ব্রেনে চলে যেতে পারে। তখন রোগের জটিলতা বেড়ে যায়। যেমন, গলায় যদি স্ট্রেপটোকক্কাস ব্যাকটিরিয়ার দ্বারা সংক্রমণ হয়, তা ব্রেনের মধ্যে চলে গেলে সেখানে মস্তিষ্কে পুঁজ তৈরি করে। এতে বাচ্চার খিঁচুনি হতে পারে, হাত-পায়ের দুর্বলতা দেখা যায়, চোখে কম দেখতে পারে সেই সময়।
তাই কানে সংক্রমণ বা ব্যথা হলেই অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে প্রক্টরিয়াল বডির সঙ্গে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে।সোমবার (২ অক্টোবর) বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা শেষে উপাচার্যের সামনেই এ ঘটনা ঘটে।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনালে ২-০ গোলে আইন বিভাগকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। তবে খেলা শেষে পক্ষপাতিত্বমূলক সিদ্ধান্তের অভিযোগ এনে রেফারির দিকে তেড়ে যান আইন বিভাগের খেলোয়াড়রা। এসময় সহকারী প্রক্টর অমিত দত্ত তাদেরকে থামাতে এগিয়ে গেলে তার সাথে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের ধস্তাধস্তি ঘটে। এক পর্যায়ে অমিত দত্তকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেন শিক্ষার্থীরা। এরপর নাজমুল হোসেন হৃদয় নামে এক শিক্ষার্থী দৌড়ে চলে যেতে লাগলে তাকে বাধা দেন ক্রীড়া কমিটির আহ্বায়ক মো. আইনুল হক। এরপর তাকে মারধর করেন ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী। এসময় আবারও হাতাহাতি শুরু হলে নৃবিজ্ঞান বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থীও সেখানে গিয়ে যুক্ত হন। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ফুটেজও প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। সে ফুটেজে এসবের সত্যতা মিলেছে।এ বিষয়ে সহকারী প্রক্টর অমিত দত্ত বলেন, ‘উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রক্টরিয়াল বডির যে কাজ ছিল, আমি তাই করেছি। শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে রেফারির দিকে তেড়ে যাচ্ছিল। আমি থামাতে গেলে তারা আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। আমি দু’বার মাটিতে পড়ে গিয়েছি।’তবে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল দাবি করেন, ‘খেলা শেষে আমি স্টেজের পাশেই ছিলাম। হুড়োহুড়ির মধ্যে অমিত স্যার আমাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। আমি যখন উঠি তখন আবার আমাকে ফেলে দেন। রানা স্যার, প্রক্টর ওমর সিদ্দিকী, অমিত স্যার, লাল শার্ট পরা আরেকজন (আইনুল হক) আমার কলার চেপে ধরেন। তারপর রানা স্যার আমাকে চড়-থাপ্পড় মারেন। পেছন থেকে আমাকে গলা চেপে ধরেন আরেক স্যার। ধাক্কা লেগে পড়ে গিয়ে আমার ব্লেডিং হয়েছে।’আইন বিভাগের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান বলেন, ‘কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে আমাদের দলের ছেলেরা হৈ-হুল্লোড় করে। এরপর অমিত স্যার আমাদের একজনের কলার ধরে নিচে ফেলে মারধর করেন। শিক্ষকের এমন মারধর দেখে আমরা বিস্মিত হয়েছি।’তবে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি কাউকে মারিনি। প্রক্টরিয়াল বডি নিজেদের দায়িত্ব পালন করেছে।’
ক্রীড়া কমিটির আহ্বায়ক মো. আইনুল হক বলেন, ঘটনার সময় দেখলাম একটা ছেলে দৌড়াচ্ছে। তখন তার দৌড় দেখে মনে হলো কেন সে দৌড়াচ্ছে। তখন তাকে আটকানোর চেষ্টা করলাম। পরে শুনলাম ছেলেটা রেফারির সাথে উদ্ধত আচরণ করেছে। খেলায় যারা পরাজিত হয় তাদের একটা অভিযোগ থাকে। রেফারির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব করার অভিযোগ সত্য নয়।উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈনের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি কোনো বক্তব্য দিবেন না বলে এই প্রতিবেদকের ফোন কল কেটে দেন।
হতাশায় শেষ খালেদার অপেক্ষা
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া হচ্ছে না। তার পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদনের ওপর গতকাল রবিবার আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে বলেছে, সাজা স্থগিত থাকাবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই।
যদি যেতে হয়, তাহলে সাজা স্থগিতের আদেশ বাতিল করতে হবে। কিন্তু সেটা করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তবে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি।
সাড়ে ৩ বছরে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স
দেশের বিদেশি মুদ্রা আয়ের অন্যতম হাতিয়ার প্রবাসী আয়ে বড় ধরনের ধস নেমেছে। সদ্য সমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাসে বিদেশে অবস্থানকারী প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈধপথে ও ব্যাংকের মাধ্যমে মাত্র ১৩৪ কোটি ডলারের বিদেশি মুদ্রার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে। গত সাড়ে তিন বছরে এটি সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স। ৪১ মাস আগে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে এর চেয়ে কম ১০৯ কোটি ডলার সমপরিমাণের রেমিট্যান্স এসেছিল। রেমিট্যান্স-সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, ব্যাংকিং চ্যানেলের চেয়ে খোলা বাজারে ডলারের দামের ব্যবধান বেশি হলে হুন্ডিতে লেনদেন বেড়ে যায়। আর যখন হুন্ডির চাহিদা বাড়ে তখন রেমিট্যান্স কমে যায়। গত মাসে ব্যাংকের চেয়ে খোলা বাজারে ডলারের দাম ৬ থেকে ৭ টাকা বেশি ছিল। তাই বেশি লাভের আশায় বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন প্রবাসীরা।
ডেঙ্গুতে মৃত্যু হাজার ছাড়াল
এ বছর অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে ডেঙ্গু। গতকাল রবিবার ডেঙ্গুতে মৃত্যু হাজারের কোটা ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) সারা দেশে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত আরও ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬ জনে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ৮৮২ জন।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ মো. জাহিদুল ইসলামের সই করা ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
অকাজের ৩৭০০ কোটির সেতু
সেতু হয়। কিন্তু সড়ক হয় না। সেতু করার জন্য নানান প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। কিন্তু সেসব সেতু করেই দায়সারা বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়। ভোগান্তি সাধারণ মানুষের। আবার যতগুলো সেতু করার কথা ততগুলো না করেও প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ করার প্রতিবেদনও দেওয়া হয়েছে। এমন ঘটনা ঘটেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সারা দেশের গ্রামের রাস্তাগুলোতে সেতু বা কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পে। প্রকল্পের এসব অনিয়ম উঠে এসেছে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে।
খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর দাবি আ.লীগ নেতার
আইন পরিবর্তন করে হলেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদার। গত শনিবার রাতে তার ফেসবুকে এ দাবি জানিয়ে স্ট্যাটাস দেন তিনি।
মুহূর্তেই স্ট্যাটাসটি ছড়িয়ে পড়ে। এতে বিএনপির অসংখ্য নেতা, কর্মী-সমর্থক তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রশংসা করেন। অন্যদিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা নিন্দা জানিয়ে দলীয় সব পদ থেকে তার বহিষ্কারের দাবি জানান।
আবদুল মোতালেব হাওলাদার তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘রাজনৈতিক কারণে আইন পরিবর্তন করে হলেও বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ করে দেওয়া হউক।’
স্বল্প আয়ের মানুষের আবাসন অধরাই
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আবাসন এখনো অধরা। দেশের দরিদ্র মানুষের একাংশ ভাসমান তারা ফুটপাত, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে মানবেতর জীবন কাটায়। আর বড় অংশটি বস্তিতে ও নিম্নমানের পরিবেশে দিনাতিপাত করছে। সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে স্বল্প আয়ের মানুষ বাসযোগ্য আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
বছরের পর বছর আবাসন নিয়ে নৈরাজ্য চললেও সরকারের কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বিশ্ব বসতি দিবস পালন করছে বাংলাদেশ। এ দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি’। দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা বাণী দিয়েছেন। দেশজুড়ে দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। র্যালি, সেমিনার, ব্যানার ও ফেস্টুনের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। টেলিভিশনে স্ক্রলও প্রচার করা হচ্ছে।
ফুটপাত থেকে মদের বার সবখানে চাঁদাবাজি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের এক বছরের কমিটি পার করেছে পাঁচ বছরের বেশি সময়। মেয়াদোত্তীর্ণ এ কমিটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। কিছু নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার তথ্য রয়েছে। সর্বশেষ মদের বার ভাঙচুর ও লুট করে আবারও আলোচনায় এ কমিটির নেতাকর্মীরা।
নতুন কমিটি না হওয়ায় নেতারা বেপরোয়া আচরণের পাশাপাশি বিভিন্ন অপরাধে জড়াচ্ছেন বলে মনে করেন সাধারণ কর্মীরা। তারা বলেন, সংগঠনের কর্মকাণ্ডও স্থবির হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানান তারা।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২৭ এপ্রিল ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে মো. রিপন মিয়াকে সভাপতি ও মাহমুদুল হক জুয়েল মোড়লকে সাধারণ সম্পাদক করে তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের এক বছরের জন্য আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে গত বছর ১২ জুন ৩২১ জনের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেন আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য।
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আবাসন এখনো অধরা। দেশের দরিদ্র মানুষের একাংশ ভাসমান তারা ফুটপাত, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে মানবেতর জীবন কাটায়। আর বড় অংশটি বস্তিতে ও নিম্নমানের পরিবেশে দিনাতিপাত করছে। সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে স্বল্প আয়ের মানুষ বাসযোগ্য আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
বছরের পর বছর আবাসন নিয়ে নৈরাজ্য চললেও সরকারের কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বিশ্ব বসতি দিবস পালন করছে বাংলাদেশ। এ দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি’। দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা বাণী দিয়েছেন। দেশজুড়ে দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। র্যালি, সেমিনার, ব্যানার ও ফেস্টুনের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। টেলিভিশনে স্ক্রলও প্রচার করা হচ্ছে।
‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’ অনুযায়ী, দেশে ভাসমান মানুষের সংখ্যা ২২ হাজার ১১৯। এ তালিকায় রয়েছে যারা রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, মাজার, ফুটপাত, সিঁড়ি, ওভারব্রিজের নিচে, লঞ্চ টার্মিনাল, ফেরিঘাট, মার্কেটের বারান্দায় দিন কাটান। আর বস্তিতে বসবাস করছে ১৮ লাখ ৪৮৬ জন। তারা মূলত শহর ও উপশহর এলাকায় টিনের ঘর, সেমিপাকা ঘর বা ঘিঞ্জি পাকা ঘরে বাস করে। তবে বস্তিবাসী কারা সে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০১৬ সালে সরকার আবাসন নীতিমালা করেছে। আবাসন উন্নয়ন তহবিল গঠনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। আবাসন সংকট নিরসন করতে হলে সরকারকে আবাসন তহবিল করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বস্তিবাসী, নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত কারা তার সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে হবে। না হলে বোঝা যাবে না কত মানুষ বস্তিতে থাকে।’
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট কামাল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে আবাসন সংকট কাটছে না। স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে আবাসন।’
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করে ৯ লাখ গৃহহীন মানুষকে চিহ্নিত করে। ইতিমধ্যে আট লাখ মানুষের গৃহের ব্যবস্থা করেছে; প্রায় ৪০ লাখ মানুষের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। বাকিদের জন্যও শেখ হাসিনা ব্যবস্থা করবেন। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্যও আবাসনের ব্যবস্থার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা তার সৈনিক হিসেবে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
জানা যায়, বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার সবার জন্য আবাসন। অঙ্গীকার পূরণে সরকার নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সারা দেশে ৩০টি আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, নোয়াখালী, যশোর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, পাবনা, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, মাগুরা, শরীয়তপুর, নড়াইল, খুলনা, মৌলভীবাজার, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এসব প্রকল্পে ৬ হাজার ৪৩২টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হয়েছে। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ২৭টি ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ১৪টি প্রকল্প রয়েছে। এসব প্রকল্পে ৫ হাজার ৯৩০টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হবে। শেরপুর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, হবিগঞ্জ, সিলেট, ঝিনাইদহ, ঝালকাঠি, মাদারীপুর, পিরোজপুর, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীতে ১৩টি প্রকল্পের মাধ্যমে ১ হাজার ৯৩৫টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রাজউক সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় রাজউক পূর্বাচল, ঝিলমিল, উত্তরা প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় আবাসন প্রকল্পে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের ফ্ল্যাটগুলো উচ্চমূল্যের কারণে নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। পূর্বাচল, ঝিলমিল ও উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্প গ্রহণ করছে সরকার। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনেও বিভিন্ন সংস্থা আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন শহরে বসবাসরত সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সম্পদশালী ব্যক্তিরা। যাদের অনেক ফ্ল্যাট আছে তারা আরও ফ্ল্যাট কিনছেন। কিন্তু বাস্তুহারা, দরিদ্র, নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত সরকারি এসব আবাসনের সুবিধা পাচ্ছেন না। অল্প দামে জমি অধিগ্রহণ করে সরকার আবাসন প্রকল্প তৈরি করে যাদের নামে বরাদ্দ দিচ্ছে তারা রাতারাতি কোটিপতি বনে যাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে জমির মালিক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত।
জাতিসংঘ ১৯৮৫ সালে বিশ্ব বসতি দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৮৬ সাল থেকে সারা বিশে^ অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার এ দিবসটি পালিত হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোন দেশে ভালো চিকিৎসা হতে পারে তার খোঁজ নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা জার্মানিতে হতে পারে কিনা জানতে চেয়েছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। মঙ্গলবার জানতে চাইলে ঢাকায় জার্মানির সিডিএ জান রল্ফ জানোস্কি বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মিসেস জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার ধরন সম্পর্কে জেনেছি। তার ভালো চিকিৎসা বিশ্বের খুব কম দেশে সম্ভব। জার্মানিতে এসব সমস্যার খুব ভালো চিকিৎসা আছে। সরকারের অনুমোদন পেলে তিনি জার্মানিতে চিকিৎসা নিতে পারেন।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিডনির কর্মক্ষমতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ কারণে কয়েকবার তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড মনে করে সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কা মুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড রিকমেন্ডেশনে বলেছেন।
এর আগে ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় ৫ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। এ অবস্থায় তাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই সরকার সেসব আমলে না নিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আগের মতোই লিভারের জটিলতার পাশাপাশি ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে শঙ্কিত তার চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছে। শরীরে ক্যাথেডর লাগানো হয়েছে। আগে যেখানে দুই-তিন দিন পরপর পানি বের করা হয়েছে, এখন প্রতিদিনই পানি বের করতে হচ্ছে। তার কেবিনে মঙ্গলবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। লিভার সিরোসিসের সঙ্গে কিডনির জটিলতাও বাড়ছে। তার লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া সামনে বিকল্প নেই। এর জন্য খুব দ্রুত উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠানো দরকার।