
প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় তীব্র পানির সংকট চলছে। ঢাকা ওয়াসার সরবরাহ লাইনে পানি যাচ্ছে না। বিকল্প উপায়ে পানির গাড়ি চেয়েও গ্রাহকরা পানি পাচ্ছেন না। দীর্ঘ সিরিয়াল থাকায় টাকা দিয়েও পানি কিনতে পারছেন না। এ অবস্থায় রাজধানী ঢাকার অনেক এলাকায় পানির জন্য হাহাকার চলছে। তীব্র গরমে ঢাকায় পানির চাহিদা বেড়েছে। আর বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে পানির উৎপাদন কমে যাওয়ায় বিদ্যমান অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
ঢাকা ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, ঢাকা ওয়াসার দৈনিক পানির উৎপাদন সক্ষমতা ২৮০ কোটি লিটার। আর নগরবাসীর দৈনিক পানির চাহিদা ২৬৫ কোটি লিটার। স্বাভাবিক সময়ে নগরবাসীর পানির চাহিদা পূরণে তেমন কোনো অসুবিধা হয় না। তবে গ্রীষ্ম মৌসুমে পানির চাহিদা বেড়ে গেলে তখন প্রতি বছরই ঢাকা ওয়াসাকে পানি সরবরাহে হিমশিম খেতে দেখা যায়। এবার বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় রাজধানীবাসীর পানির চাহিদা পূরণ করতে পারছে না ঢাকা ওয়াসা। একদিকে তীব্র গরমের কারণে পানির চাহিদা বেড়েছে প্রায় ৩৫ কোটি লিটার। অন্যদিকে পানির উৎপাদন কমেছে প্রায় ৮০ কোটি লিটার। বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার পানির ঘাটতি প্রায় ১১২ কোটি লিটার। এ অবস্থায় কোনো রকম জোড়াতালি দিয়ে চলছে কার্যক্রম।
ঢাকা ওয়াসা সূত্রে আরও জানা যায়, ঢাকা ওয়াসার উত্তোলন করা পানির ৬৫ ভাগ উৎপাদন করে ভূ-গর্ভস্থ উৎস থেকে; অর্থাৎ ১ হাজার ৩৫টি পাম্পের মাধ্যমে এসব পানি উত্তোলন করে থাকে। বিদ্যুৎ চলে গেলে ৪০০টি পাম্প জেনারেটরের মাধ্যমে চালু থাকে। লোডশেডিংয়ের পর জেনারেটর চালু করেও চাহিদা অনুযায়ী পানির উৎপাদন বাড়াতে পারছে না ঢাকা ওয়াসা। অন্যদিকে সায়েদাবাদ, পদ্মা-যশলদিয়া, চাঁদনীঘাট প্ল্যান্ট বা ভূ-উপরিস্থ উৎস থেকে ৩৫ ভাগ পানি উৎপাদন করছে। এসব প্ল্যান্ট নদী থেকে পানি সংগ্রহ করে তা শোধন করে নগরবাসীকে সরবরাহ করছে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা ওয়াসার উপপ্রধান জনতথ্য কর্মকর্তা এম এ মোস্তফা তারেক দেশ রূপান্তরকে বলেন, তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে ঢাকায় প্রায় ৩৫ কোটি লিটার পানির চাহিদা বেড়েছে। পাশাপাশি লোডশেডিংয়ের কারণে পানির উৎপাদন ৩৩ শতাংশ বা প্রায় ৯২ কোটি লিটার কমেছে। তিনি বলেন, ঢাকা ওয়াসার পক্ষ থেকে পানির উৎপাদন বৃদ্ধি এবং সব এলাকার নগরবাসীর কাছে পানি পৌঁছাতে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। যেসব এলাকায় পানি পৌঁছাতে অসুবিধা হচ্ছে, সেই সব এলাকায় গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী গাড়িতে করে পানি পৌঁছানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকা ওয়াসা ১০টি জোনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করে থাকে। প্রতিদিন এসব জোনের স্থাপিত পাম্পগুলোয় দেড়শবারেরও বেশি বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ঘটনা ঘটছে। প্রায় প্রতিদিনই পানি সংকট থাকছে, কুড়িল, জোয়ার সাহারা, আফতাবনগর, বনশ্রী, মিরপুর-১১-এর বি-ব্লক, ভাষানটেক, কাফরুল, ইব্রাহিমপুর, উত্তরখান, দক্ষিণখান, উত্তরার সেক্টর-৭, ১১ ও ১২, জুরাইন, মাতুয়াইল, রহমতপুর, কোনাপাড়া, ডগাইর, কদমতলী, নন্দীপাড়া, মহাখালী-জ ব্লক, মোহাম্মদপুরের চাঁন মিয়া হাউজিং, আদাবর, শ্যামলী, পূর্ব রাজাবাজার ও ক্রিসেন্ট রোড, মানিকনগর, মধ্য বাসাবো, কেবি রোড, দয়াগঞ্জ, কাজলারপাড়, পশ্চিম কাটাসুর ঢাকা রিয়েল এস্টেট হাউজিংসহ মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় তীব্র পানি সংকট চলছে।
তথ্যানুসন্ধানে আরও জানা যায়, ঢাকা ওয়াসার ১০টি অঞ্চল অফিসে দৈনিক দেড় হাজারের বেশি পানির গাড়ির চাহিদা জমা পড়ছে। ঢাকা ওয়াসা চাহিদার বিপরীতে অর্ধেক পানিও সরবরাহ করতে পারছে না। টাকা দিয়ে পানি কিনতেও এটা রীতিমতো লবিং করতে হচ্ছে। যাদের ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে; তাদের পানি পেতে কিছুটা সহজ হচ্ছে। এর বাইরে সাধারণ নগরবাসীকে তীব্র লোডশেডিং, তীব্র দাবদাহের সঙ্গে তীব্র পানি সংকট স্বাভাবিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করছে।
জানতে চাইলে ঢাক ওয়াসার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (কারিগরি) এ কে এম সহিদ উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, তীব্র গরমের কারণে ঢাকায় পানির চাহিদা অনেকাংশে বেড়েছে। আর বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে পানির উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। জেনারেটর দিয়ে পানি উত্তোলন করে এখনকার চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। এ জন্য কোথাও কোথাও পানির সংকট দেখা দিয়েছে। তবে ঢাকা ওয়াসার পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। বৃষ্টি হলেই পানির সংকট পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
প্রায় এক যুগ আগে বন্ধুর মাধ্যমে নরওয়েতে ৭০০ মার্কিন ডলারের পাটজাত পণ্য সরবরাহের কাজ পান খালেদা সুলতানা। অভিজ্ঞতা না থাকলেও পাটের প্রতি মমত্ব আর ভালোবাসার কারণে কিছুটা ঝুঁকি নিয়েই মাঠে নেমে সফলভাবে পণ্য সরবরাহ করেন তিনি। পাটজাত হস্তশিল্পে এভাবেই যাত্রা শুরু এই নারী উদ্যোক্তার।
রাজধানীর রামপুরা এলাকায় অবস্থিত ‘জুট মার্ট অ্যান্ড ক্রাফট ইন বাংলাদেশ’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খালেদা সুলতানার সঙ্গে আলাপচারিতায় জানা গেল ছোটবেলা থেকেই হস্তশিল্পের ওপর প্রবল ঝোঁক ছিল তার। উদ্ভিদবিদ্যায় স্নাতকোত্তর শেষ করে শিক্ষকতাসহ নানা পেশায় যুক্ত ছিলেন। কিন্তু সবসময় ভাবতেন হস্তশিল্পের মাধ্যমে কীভাবে মানুষের লাইফ স্টাইল পরিবর্তন করা যায়, কীভাবে রপ্তানি আয় বাড়ানো যায়।
সেই ভাবনা থেকেই ২০০৮ সালে হস্তশিল্পকে পেশা হিসেবে নেওয়ার পরিকল্পনা করেন খালেদা। কিন্তু চাকরি করে কোনো কিছুই ঠিকমতো গোছাতে পারছিলেন না। একপর্যায়ে ২০১২ সালে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ‘জুট মার্ট অ্যান্ড ক্রাফট ইন বাংলাদেশ’-এর। তিনি বলছিলেন, নরওয়ের প্রথম চালান সফলভাবে সরবরাহ করার পর আরও তিন হাজার মার্কিন ডলারের কাজ পান তিনি। এভাবে বিভিন্ন দেশে ২০১২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত পাটজাত পণ্য সরবরাহ করে আসছেন বেশ সুনামের সঙ্গে। কিন্তু নানা সীমাবদ্ধতার কারণে এখন তিনি সরাসরি রপ্তানি না করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য পাটজাত পণ্য তৈরির কাজ করছেন। পাশাপাশি ব্যবসার ভিত আরও মজবুত করার চেষ্টা করছেন দেশের বাজারে। বর্তমানে তার কারখানায় শতাধিক পাটজাত পণ্য উৎপাদন হয়।
খালেদা বলছিলেন, ‘যেকোনো ব্যবসায় ভালো করতে হলে গবেষণার পাশাপাশি অভিজ্ঞতার দরকার। কিন্তু শুরুর দিকে এ দুটোর কোনোটাই আমার ছিল না। পাটপণ্যের হস্তশিল্পের ক্ষেত্রে এটা আরও বেশি প্রযোজ্য। কারণ এই খাত এখনো সেভাবে দাঁড়াতে পারেনি।’
‘অন্য কেউ হলে হয়তো এতদিনে ব্যবসা বন্ধ করে দিত। কিন্তু আমি লেগে আছি। কারণ আমার বিশ্বাস, দেশে একদিন পাটজাত শিল্পের বড় বিপ্লব হবে। বিশ^বাজারে নেতৃত্ব দেবে বাংলাদেশ। আমাদের দেশে বড় একটা সমস্যা হলো তথ্যের অভাব। পাটজাত শিল্প নিয়ে এখন কিছুটা তথ্য পাওয়া গেলেও শুরুটা ছিল অনেক কঠিন,’ যোগ করেন তিনি।
নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে খালেদাকে কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। ফলে কখনো কখনো বিশাল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। আবার নিজের সবকিছু বিনিয়োগ করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন। যেমন, করোনা মহামারীর কারণে ২০২০ সালের মার্চের পর বড় সংকটে পড়েন তিনি। প্রায় ৫ মাস তার কোনো আয় হয়নি। কিন্তু অফিস ভাড়া, কর্মীদের বেতনসহ নানা ব্যয় বহন করতে হয়েছে। এতে বিপুল আর্থিক ক্ষতি হওয়ায় বড় অফিস ও কারখানা ছেড়ে ছোট পরিসরে নেমে আসার পাশাপাশি অনেক কর্মীকেও বাধ্য হয়ে ছাঁটাই করতে হয়েছে তার।
২০২১ সাল থেকে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ান তিনি। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে আবার সংকট তৈরি হয়। বর্তমানে সেই সংকট কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছেন। কিন্তু গ্যাস-বিদ্যুৎসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম যেভাবে হু হু করে বাড়ছে তাতে কতদিনে এই সংকট কাটিয়ে ওঠা যাবে তা নিয়ে সন্ধিহান তিনি।
খালেদা বলছিলেন, বিদ্যুতের মূল্য কয়েক দফা বাড়ানোর কারণে পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এরপরও ঠিকমতো বিদ্যুৎ না থাকায় উৎপাদন ব্যাহত হয়। কারণ জেনারেটর কেনা বা এর পরিচালনা ব্যয় বহনের সামর্থ্য তার মতো এ খাতের বেশির ভাগ উদ্যোক্তার নেই। ফলে দেশের বাজারে পণ্যের বিক্রি কমছে আর আন্তর্জাতিক বাজারে অন্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছেন না।
এসব চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি দক্ষ কর্মীর অভাব রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই খাত সেই অর্থে বড় না হওয়ায় ঠিকমতো কর্মী পাওয়া যায় না। এর সঙ্গে রয়েছে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের অভাব। অনেক ক্ষেত্রে, বিশ্ববাজারে ভারত, চীন ও ভিয়েতনাম উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার এবং নানারকম সুবিধা দেওয়ায় বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের চেয়েও কম দামে মানসম্মত পণ্য দিতে পারছে। ফলে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ছে।
‘পাটের সুদিন ফিরিয়ে আনতে পাট দিবস চালু, শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়া, ১৭টি পণ্যে পাটের ব্যাগ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করাসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীও বিভিন্ন সময়ে পাট নিয়ে নানা প্রেরণার কথা বলেন। কিন্তু তারপরও দেশে-বিদেশে বিভিন্ন ধরনের সংকট রয়েছে এখনো’, বলছিলেন খালেদা সুলতানা।
তার মতে, ‘পাটের সঙ্গে আমাদের আবেগ জড়িয়ে আছে। পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বিশ্বে এর চাহিদাও ক্রমেই বাড়ছে। কিন্তু আমরা এর বাজার ধরতে এত বেশি দেরি করছি যে, একসময় হয়তো পাটের বিকল্প অন্য কোনো পরিবেশবান্ধব উপকরণ চলে আসবে। আমাদের অবহেলার কারণে তখন হয়তো বিপুল সম্ভাবনাময় পাটের বাজার হারাতে হবে।’
খালেদা জানান, ‘বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের জেডিপিসি আমাদের প্রাণের জায়গা। এই প্রতিষ্ঠানকে আরও বেশি সক্রিয় হতে হবে। এখানে বড় সমস্যা হলো প্রতিষ্ঠানের প্রধান এখানে বেশিদিন থাকতে পারেন না। তাকে বদলি করে নতুন আরেকজনকে পদায়ন করে সরকার। ঘন ঘন এই আসা-যাওয়ার ফলে সময় নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি মূল কাজে ব্যাঘাত ঘটে। এখানে পরিবর্তন দরকার। পাশাপাশি পাট নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যাপকহারে পড়ালেখার সুযোগ সৃষ্টি করা। সেইসঙ্গে অনেক বেশি কার্যকর গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থাকতে হবে, যাতে নতুন উদ্যোক্তারা সেখানে নানা বিষয়ে জানতে ও শিখতে পারে।’
‘দেশের বাজারের উন্নয়নের পাশাপাশি বিশ্ববাজার ধরতে আমাদের পণ্যের প্রচুর ব্র্যান্ডিং করতে হবে। কম খরচে কীভাবে মানসম্মত পণ্য তৈরি করা যায় তা নিয়ে কাজ করতে হবে। একই সঙ্গে এ খাতের উদ্যোক্তাদের সরকার নানারকম প্রণোদনা বা আর্থিক সহায়তা দিতে পারে,’ বলেন তিনি।
খালেদা মনে করেন, এই ব্যবসায় উন্নতি করতে হলে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মেলায় অংশগ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, ‘ঘণ ঘঙড ডরহঃবৎ ঝযড়’ি-এ অংশ নিয়ে তিনি পাটপণ্যের ব্র্যান্ডিং, দাম নির্ধারণ, উত্তর আমেরিকার ক্রেতাদের রুচি ও চাহিদা সম্পর্কে জানতে ও শিখতে পেরেছেন। তিনি এই মেলার স্পন্সর ইউএসএআইডি-অর্থায়নকৃত ফিড্ দ্য ফিউচার বাংলাদেশ হর্টিকালচার অ্যাক্টিভিটি, ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন অফিস (টিএফও) কানাডা এবং এসএমই ফাউন্ডেশন বাংলাদেশকে অশেষ ধন্যবাদ জানান এবং একই সঙ্গে এ ধরনের আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অন্যান্য মেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিতে অনুরোধ জানান।
নতুনদের উদ্দেশে তার পরামর্শ হলো, ভবিষ্যতে এই খাতে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে সহজে রাতারাতি সফল হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ এটা অন্য ব্যবসার মতো না। এখানে সততার সঙ্গে লেগে থাকতে হবে। আন্তরিকতার সঙ্গে ভালো কাজ করতে হবে। তবেই সাফল্য আসবে।
নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি জানালেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে এই পেশায় লেগে থাকার কারণে হোঁচট খেয়েও অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার। সেটাকে কাজে লাগিয়ে আরও ভালো কিছু করতে চাই। বতর্মানে ঢাকার পাশাপাশি খুলনা ও বরিশালের স্থানীয় নারীদের নিয়ে কাজ করছি। ভবিষ্যতে আরও অন্যান্য জেলায় কাজ করার পাশাপাশি আউটলেট বা বিক্রয়কেন্দ্র চালু করে নিজস্ব ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠার ইচ্ছা আছে।’
দেশে একদম শিশু এবং যাদের বয়স ৪০ বছরের ঊর্ধ্বে, তাদের ব্রেন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। এই শ্রেণির মানুষ ব্রেনের ‘ম্যালিগন্যান্ট টিউমার’ দ্বারা আক্রান্ত হয়। তাদের ব্রেন টিউমার থেকে ক্যানসার দেখা দেয়। আর সাধারণত ১৮-৪০ বছর বয়সী মানুষ ‘বেনাইন টিউমারে’ বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এটা সাধারণ টিউমার, যা থেকে ক্যানসার হয় না। অস্ত্রোপচারে সেরে যায়। এমন তথ্য জানিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সার্জারি অনুষদের ডিন ও নিউরোসার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, সব বয়সী মানুষেরই ব্রেন টিউমার হতে পারে। বাচ্চাদেরও হতে পারে। পূর্ণবয়স্ক ও বেশি বয়স্ক মানুষেরও হয়। নারীরাও আক্রান্ত হন। তবে দেশে ঠিক কী পরিমাণ ব্রেন টিউমারের রোগী আছে, তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই বলে জানান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তারা বলেন, এ ধরনের কোনো গবেষণা বাংলাদেশে হয়নি। বিএসএমএমইউর নিউরোসার্জারি বিভাগ শিগগিরই এই পরিসংখ্যান করার চেষ্টা করবে।
রোগী বাড়ছে : বাংলাদেশ সোসাইটি অব নিউরোসার্জনসের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন বলেন, দেশে ব্রেন টিউমারের রোগী বাড়ছে। রোগ শনাক্তকরণে এমআরআই ও সিটিস্ক্যানসহ পর্যাপ্ত পরীক্ষার সুবিধা থাকায় এখন রোগ নির্ণয় হচ্ছে। তিনি বলেন, ভেজাল খাদ্যগ্রহণ, নানা ধরনের রেডিয়েশন বা তেজস্ক্রিয়তা, বিভিন্ন ধরনের দূষণÑ এসব কারণে ব্রেনের ক্যানসার বাড়ছে।
এ ব্যাপারে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স ও হাসপাতালের ইন্টারভেনশন নিউরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. হুমায়ুন কবির সরকার হিমু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ব্রেন টিউমারের রোগী এখন অনেক বেশি। আগে শনাক্ত করার আধুনিক যন্ত্রপাতি ছিল না। এখন অনেক উন্নত এমআরআই মেশিন আছে, অন্যান্য ইমেজিং ব্যবস্থা আছে। এখন ধরা পড়ছে। শিশুদেরও ব্রেন টিউমার হচ্ছে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে শুরুতে নির্ণয় করা গেলে চিকিৎসায় ভালো ফল দেয়। সাধারণত পূর্ণবয়স্ক মানুষের মধ্যেই এই রোগের প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে।
তৃণমূলে চিকিৎসা কম, শহরাঞ্চলে বেশি : ঢাকা ও জেলা শহরগুলোতে ব্রেন টিউমারের পর্যাপ্ত চিকিৎসা রয়েছে। সে অনুপাতে প্রত্যন্ত অঞ্চলে চিকিৎসা অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তারা জানান, বাংলাদেশে এই রোগের পর্যাপ্ত চিকিৎসাব্যবস্থা রয়েছে। বিএসএমএমইউ, ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ ঢাকার বাইরে অন্তত আরও ১৪টি সরকারি মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে চিকিৎসাব্যবস্থা আছে। এ ছাড়া বেসরকারি হাসপাতালেও চিকিৎসা হচ্ছে। তবে সে অনুপাতে বিভাগীয় ও জেলা শহরের বাইরে এর চিকিৎসা অপ্রতুল।
এ ব্যাপারে অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সাল থেকেই ব্রেন টিউমারের চিকিৎসা হচ্ছে। এখন আধুনিক যন্ত্রপাতি এসেছে। নাকের ভেতর দিয়ে ব্রেন টিউমারের অপারেশন হচ্ছে। ব্রেনে ছোট একটা ছিদ্র করে ক্যামেরা দিয়েও এখন অপারেশন করা হচ্ছে। এখন দরকার এই চিকিৎসা সারা দেশে বিস্তৃত করা, যাতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীও এই সেবা পায়।
ডা. হুমায়ুন কবির সরকার হিমু বলেন, কিছু অত্যাধুনিক টেকনোলজি এখনো বাংলাদেশে নেই। যেমন রেডিও সার্জারি অপারেশন হচ্ছে না। এটাকে গামা নাইফ সার্জারি বলে। মেশিন দিয়ে ব্রেনের টিউমার ছোট করে ফেলা যায়। এমন কিছু অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ঘাটতি রয়েছে। নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল এই গামা নাইফ সার্জারি শুরুর পদক্ষেপ নিচ্ছে।
শুরুতেই নির্ণয়ে ক্যানসারের ঝুঁকি থাকে না : চিকিৎসকরা দ্রুত পরীক্ষা করে এই রোগ শনাক্তের পরামর্শ দিয়েছেন। তারা বলেছেন, টিউমার ছোট থাকলে অস্ত্রোপচার করলে ভালো হয়ে যায়। টিউমার বড় হয়ে গেলে রোগ জটিল পর্যায়ে চলে যায়। অস্ত্রোপচার করলেও সম্পূর্ণ ভালো হয় না। অনেক সময় অবশ হয়ে যাওয়া হাত-পা আর ভালো হয় না। আগেই যদি শনাক্ত করা যায় ও চিকিৎসা করা যায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ব্রেন টিউমার ভালো হয়ে যায়।
অবশ্য ব্রেন টিউমারের অস্ত্রোপচার ব্যয়বহুল বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তারা বলেন, যেহেতু অস্ত্রোপচার প্রযুক্তিনির্ভর ও অনেক সময় লাগে, সে কারণে পৃথিবীব্যাপী এর চিকিৎসা ব্যয়বহুল। তবে বাংলাদেশে আশপাশের দেশের তুলনায় খরচ অনেক খরচ কম।
এখনো কারণ আবিষ্কার হয়নি : ঠিক কী কারণে ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ, তার সঠিক কোনো কারণ আবিষ্কার হয়নি বলে জানান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন। তিনি বলেন, তবে অনুমান করা হয় রেডিয়েশন, জন্মগত কিছু কারণ, জিনের মিউটেশন এসব কারণে হচ্ছে। কারণটা জানতে পারলে ওষুধ দিয়েই ভালো করা যেত।
সুতরাং উপসর্গ দেখে এবং সে অনুযায়ী রোগটি শনাক্ত করে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। তিনি বলেন, মাথাব্যথা হয়, হাত-পা অবস হয়ে যায়, হাঁটতে গিয়ে পড়ে যায়, চোখে দেখে না, কথা বলতে পারে না এমন উপসর্গ হলেই নিউরোসার্জন বা নিউরোলজির চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। দ্রুত পরীক্ষা করা গেলে শনাক্ত দ্রুত হয়। তখন সঙ্গে সঙ্গে অস্ত্রোপচার করা যায়। দ্রুত ব্যবস্থা নিলে রোগী ভালো হয়ে যায়।
এ ধরনের রোগীদের মৃত্যুহার কেমন জানতে চাইলে এই চিকিৎসক বলেন, রোগীর মৃত্যু নির্ভর করে টিউমারটা কত বড় হয়েছে ও মাথার কোনো অংশে আছে, সেটার ওপর। ব্রেনের অনেকগুলো স্পর্শকাতর অংশ আছে, যেখানে টিউমার হলে মৃত্যুহার বেশি। তবে অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে রোগীর মৃত্যুহার ১-২ শতাংশ। আগে এ হার অনেক ছিল। এখন উন্নত চিকিৎসা আসার কারণে অনেক কমে গেছে।
আজ বিশ্ব ব্রেন টিউমার দিবস : ব্রেন টিউমারের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে ২০০০ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালন করা হয়। ১৯৯৮ সালে গঠিত জার্মান ব্রেন টিউমার অ্যাসোসিয়েশন নামের দাতব্য সংস্থার উদ্যোগে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। রাজধানীতে দিবসটি উপলক্ষে বিএসএমএমইউ আলোচনা সভা ও গণসচেতনতা শোভাযাত্রার আয়োজন করেছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) আবাসিক হল থেকে অছাত্রদের বের করাসহ তিন দফা দাবিতে অনশন কর্মসূচিতে বসা ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম প্রত্যয়সহ তাকে সমর্থন দেওয়া অন্য শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত পাঁচজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আরও তিন নারী শিক্ষার্থী লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। ওই হামলার সময় ক্যাম্পাসে লোডশেডিং চলছিল।
হামলা ও লাঞ্ছনার শিকার হওয়াদের অভিযোগ, মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী হামলায় অংশ নেয়। প্রত্যয়ের দাবির সঙ্গে সংহতি জানানো প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের ওপরও হামলা চালানো হয়।
হামলার শিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তাপসী রাবেয়া বলেন, ‘সামিউলের দাবির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে আমরা সেখানে অবস্থান করি। যখন রাতে বিদ্যুৎ চলে যায়, তখন আমাদের ওপর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। আমরা যারা নারী শিক্ষার্থী ছিলাম, তাদের গালাগাল করা হয়। অনশনকারী শিক্ষার্থীকে জোর করে অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয়, এরপর আবার সেই অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুরও করা হয়।’
তবে হামলায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল। তিনি বলেন, ‘হামলায় যদি কোনোভাবে ছাত্রলীগের কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়, তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
হল থেকে অছাত্রদের বের করাসহ তিন দাবিতে গত বুধবার (৩১ মে) রাত থেকে মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনে অনশনে বসেছিলেন প্রত্যয়। তিনি ওই হলটির আবাসিক শিক্ষার্থী। হামলার সময় প্রত্যয়কে মারধরের পর অ্যাম্বুলেন্সে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যায় হামলাকারীরা। প্রত্যয়ের অন্য দাবিগুলো হলোÑ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল থেকে গণরুম বিলুপ্ত করা ও হলের মিনি গণরুমে অবস্থান করা বৈধ ছাত্রদের আসন নিশ্চিত করা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মীর মশাররফ হোসেন হল থেকে ছাত্রলীগের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী বের হয়ে আসেন। তারা অনশনরত শিক্ষার্থীকে গালাগাল করার পাশাপাশি মারধর শুরু করেন। একপর্যায়ে তার বিছানা-বালিশে আগুন লাগানোর চেষ্টা করে। এরপর অনশনরত প্রত্যয়কে জোর করে অ্যাম্বুলেন্সে উঠিয়ে চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তখন বাধা দিতে গেলে জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচীকে মারধর করা হয়। এ ছাড়া মাশিয়াত সৃষ্টি, মনিকা নকরেক এবং শারমিন সুর নামে তিন নারী শিক্ষার্থীকেও হেনস্তা করা হয়।
হামলার প্রতিবাদে ওইদিনই রাত ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। তারা জাবি উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের বাসভবনের সামনে গিয়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। সেখানে পাঁচ দফা দাবি জানান বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবিগুলো হলো মীর মশাররফ হোসেন হলে আসন দখল করে থাকা সাবেক ছাত্রদের রাতের মধ্যে হল ত্যাগ করতে বাধ্য করা, উপাচার্যকে বাদী হয়ে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা, প্রক্টর ও প্রাধ্যক্ষকে অব্যাহতি, গণরুম ও গেস্টরুম সংস্কৃতির অবসান ঘটানো এবং প্রথমবর্ষ থেকেই প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য হলে আসনের ব্যবস্থা করা। এসব দাবি পূরণে রাত ২টার দিকে উপাচার্যের আশ্বাসে বিক্ষোভ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে গতকাল বুধবার বেলা ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা কমিটির জরুরি সভা হয়। সেখানে হামলায় জড়িত দুই শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয় এবং বাকিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এসব সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য বেলা ৩টায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। এ সময় উপাচার্য আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন। দাবি পূরণের জন্য আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কাছে সাত দিন সময় চাওয়া হয়। তবে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এক ঘণ্টা সময় দেন। এ সময়ের মধ্যে দাবি না মানলে প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করার ঘোষণা দেন তারা। কিছুক্ষণ পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। তবে পেছনের দরজা দিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম অন্য শিক্ষকদের নিয়ে বের হয়ে যান।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ‘ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে আন্দোলনকারীদের কাছে সাত দিন সময় চেয়েছি, কিন্তু তারা এ সময় দিতে নারাজ। শৃঙ্খলা কমিটিতে আলোচনা হয়েছে। দুজন সাবেক শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।’
তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তারা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করছে প্রশাসন।
আগামী ১২ জুন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আছে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন। আর এই নির্বাচনকে ঘিরে মেয়র প্রার্থীসহ কাউন্সিলর, সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা বিরতিহীনভাবে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। নগরীর পাড়া-মহল্লায়, অলিতে-গলিতে চলছে মাইকিং, গণসংযোগ। জমজমাট পরিবেশের মধ্যেই নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর একটি মন্তব্যে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে নির্বাচনী পরিবেশ। এ ঘটনায় গতকাল বুধবার সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন ইসলামী আন্দোলনের নেতা।
২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী শরীফ মো. আনিছুর রহমান গত ৪ জুন নিজ বাসভবনে বসে সাংবাদিক এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের উপস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় তিনি অভিযোগ করেন, ঢাকায় বসে ‘হাত পাখাকে ৩ কোটি টাকা দিছে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এবং তার ছেলে সাদিক আবদুল্লাহ।’ আরও বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাতকে হারাতেই এই ষড়যন্ত্র।’ এ ঘটনায় শরীফ মোহাম্মদ আনিসুর রহমানকে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। ওই দিন মধ্যরাতে বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তবে এ ব্যাপারে কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে এ বক্তব্য নিয়ে বর্তমানে ইসলামী আন্দোলন নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। গতকাল বুধবার কাউন্সিলর প্রার্থী শরীফ মো. আনিছুর রহমানের বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন ইসলামী আন্দোলনের বরিশাল মহানগর শাখার ছাত্র ও যুবকবিষয়ক সম্পাদক আরিফুর রহমান।
ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. গোলাম ফারুক মামলাটি আমলে নিয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়টি গতকাল বিকেলে নিশ্চিত করেছেন সাইবার ট্রাইবুনালের বেঞ্চ সহকারী নুরুল ইসলাম কাকন।
এ বিষয়ে আরিফুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দলের এবং প্রার্থীর যে ক্লিন ইমেজ রয়েছে তা নষ্ট করার জন্য একটি মহল পাঁয়তারা করছে। আমাদের দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার চেষ্টা চলছে। বরিশাল সিটি নির্বাচনে হাত পাখার মেয়র পদপ্রার্থী ফয়জুল করিমকে নিয়ে মিথ্যা অপবাদ ছড়াচ্ছে। এতে বোঝা যায় আমরা বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে আছি। সেটাকে নষ্ট করার জন্য যারা চেষ্টা করছে এটার বিরুদ্ধে আমরা অভিযোগ করেছি। আমরা আশা করছি এই ব্যাপারে সুষ্ঠু ন্যায়বিচার পাব।
বরিশালে ‘নৌকা’র ইশতেহার : পঁয়ত্রিশটি খাতে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন বরিশাল সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত)। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে এবং নগর পরিকল্পনাবিদ ও স্থপতিদের সহায়তা নিয়ে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করে উন্নত ও নাগরিকবান্ধব বরিশাল নগরী গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেন তিনি।
গতকাল বুধবার দুপুর ১২টায় ক্রাউন কনভেনশন হলে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত। আগামী ১২ জুন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
হোল্ডিং ট্যাক্স পুনর্মূল্যায়ন, অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্স প্রদান, বাড়ির প্ল্যান অনুমোদনে সহজ প্রক্রিয়া অবলম্বন, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, ড্রেনেজ ব্যবস্থার সংস্কারসহ নতুন ড্রেন নির্মাণ, খাল খনন, বর্ধিত এলাকায় পানি ও বিদ্যুতের সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ গ্রহণ, রাস্তাঘাটের সংস্কার, ময়লা-আবর্জনা যথাসময়ে অপসারণ, পচনশীল বর্জ্য থেকে জৈব সার ও বায়োগ্যাস উৎপাদন এবং মশক নিধন প্রভৃতি ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন তিনি তার নির্বাচনী ইশতেহারে।
খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, ‘পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় লাইন চার্জ সহনীয় মাত্রায় রেখে শতভাগ বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হবে; রিকশা ও ব্যাটারিচালিত যানবাহন চলাচলে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হবে; নগরের প্রতিটি সড়কে পর্যাপ্ত সড়ক বাতি স্থাপন করা হবে; সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি ও মাদকমুক্ত নগর গড়ে তোলা হবে এবং পরিকল্পিতভাবে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে বরিশাল নগরীকে সবুজ নগরী (গ্রিন সিটি) হিসেবে গড়ে তোলা হবে।’
জবাবদিহি নিশ্চিতকরণের অঙ্গীকার ব্যক্ত করে খোকন বলেন, “নিয়মিত ‘জনতার মুখোমুখি মেয়র’ শীর্ষক মতবিনিময় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ওয়ার্ডভিত্তিক সমস্যার সমাধান করা হবে, ‘সবার বরিশাল’ শীর্ষক অ্যাপের মাধ্যমে নগরবাসীর কাছ থেকে নাগরিক সমস্যা বিষয়ক অভিযোগ গ্রহণ করা হবে এবং সার্বক্ষণিক তদারকির মাধ্যমে সেসবের সমাধান করা হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।”
বিভিন্ন কলোনিবাসীর নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘হকারদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে, তারুণ্যকে অনুপ্রাণিত করতে প্রতিটি এলাকায় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন করা হবে, বরিশাল নগরীতে গ্যাস-সংযোগ প্রদানে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার নিশ্চিত করে অসাম্প্রদায়িক নগরী প্রতিষ্ঠা করা হবে, তরুণ সমাজের জন্য আইটি নগরী প্রতিষ্ঠাসহ ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে।’ বরিশালকে শিল্প-বাণিজ্যসমৃদ্ধ ও পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেন খোকন সেরনিয়াবাত।
ইশতেহার ঘোষণার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আফজালুল করিম, মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহামুদুল হক খান মামুন, অ্যাডভোকেট লস্কর নুরুল হক, অ্যাডভোকেট আনিস উদ্দিন আহমেদ শহীদ প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর সঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস বৈঠক করেছেন।
গতকাল বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে এ বৈঠক হয়। বৈঠকে বর্তমান জ্বালানি চ্যালেঞ্জগুলো বিষয়ে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি প্রতিষ্ঠানগুলোর বাংলাদেশে বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়েও কথা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জ্বালানি উপদেষ্টার একান্ত সচিব মুকতাদির আজিজ বলেছেন, সকালে (বুধবার) পিটার হাস প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এসেছিলেন। জ্বালানি উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকের আলোচনার বিষয় সম্পর্কে তিনি বলেন, তারা কী আলোচনা করেছেন তা জানি না। সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে টেকসই, ন্যায়সংগত ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিষয়ে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে বৈঠক করেন পিটার হাস।
দেশের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর অংশগ্রহণ বাড়ছে। বর্তমানের বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গ্যাস উৎপাদনকারী ক্ষেত্র বিবিয়ানার মালিক মার্কিন কোম্পানি শেভরন। দেশের গ্যাস উৎপাদনের ৬০ শতাংশ আসে শেভরনের গ্যাসক্ষত্রগুলো থেকে। আমদানি করা গ্যাস এলএনজির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি এক্সিলারেটের ভূমিকা মুখ্য। কোম্পানিটির একটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নিজে অপারেট করছে। আরেকটি ভাড়া দিয়েছে। আরও একটি টার্মিনাল পেতে যাচ্ছে এক্সিলারেট। সম্প্রতি সমুদ্রের পুরো ব্লকে কাজের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে মার্কিন জায়ান্ট এক্সন মবিল। স্থলভাগেও কাজে আগ্রহী এ কোম্পানি। পাশাপাশি শেভরনও গ্যাস অনুসন্ধানে আগ্রহ পোষণ করেছে।
মূল লড়াইয়ের আগে গা গরমের খেলা। সেখানে ব্যাটসম্যানরা ছিলেন আগ্রাসী। তাতে পাকিস্তান পায় ৩৪৫ রানের বড় সংগ্রহ। তারপরও জিততে পারল না। নিউজিল্যান্ড জয় তুলে নিয়েছে ৩৮ বল হাতে রেখেই।
পাকিস্তানের ব্যাটারদের মধ্যে সেঞ্চুরি পেয়েছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। ৯৪ বলে ১০৩ রান করে অবসর নেন তিনি। এছাড়া বাবর আজম ৮০ ও সৌদ শাকিল ৭৫ রান সংগ্রহ করেছেন।
পাকিস্তানের দেয়া ৩৪৬ রানের জবাব দিতে নেমে ৫ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে নিউজিল্যান্ড।
কিউই ব্যাটারদের মধ্যে ওপেনিংয়ে নামা রাচিন রবীন্দ্র ৭২ বলে ৯৭ রান সংগ্রহ করে দলের জয়ে বড় অবদান রাখেন। এছাড়া দীর্ঘদিন পর দলে ফেরা কেন উইলিয়ামসন ৫৪, ড্যারেল মিচেল ৫৯ আর মার্ক চাপম্যান ৬৫ রান করে দলকে ৫ উইকেটের জয় এনে দিয়েছেন।
চলমান সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগে খেলতে নেমে দুই দলের মাঝে হাতাহাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিজেদের শেষ ম্যাচে আজ শুক্রবার রাত দশটার দিকে মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামের ক্রিজে নেমেছিলেন মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ ও দীপঙ্কর দীপনের টিম।
খেলা চলাকালীন সময়ে দীপঙ্কর দীপনের দলের খেলোয়াড়দেরকে প্রথমে উস্কানি দিতে থাকে রাজের টিম। এরপর তাদের দলের লোকজন এসে দীপনের টিমের এক প্লেয়ারকে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে মারধর করতে থাকে। এরপর দীপনের টিমের খেলোয়াড়রা উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং চেয়ার ছুঁড়াছুড়ি শুরু করে। এক পর্যায়ে দুই দলের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়।
দীপনের দলের খেলোয়াড়দের একজন অভিনেতা মনির হোসেন শিমুল অভিযোগ তুলে বলেন, তারা বাইরে থেকে সন্ত্রাসী এনে আমাদের উপর আক্রমণ শুরু করে। এটা কোন ধরণের সিসিএল খেলা?
অন্যদিকে একই দলের আরেক খেলোয়াড় চিত্রনায়ক জয় চৌধুরী বলেন, রাজ ভাইয়ের টিম থেকে আমাদের দলের উপর আক্রমণ শুরু করে। তারা বাইরে থেকে লোকজন নিয়ে এসেছে। আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে একজনকে তুলে নিয়ে মারধর করতে শুরু করে। এরমধ্যে মৌসুমী হামিদ আহত হন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোস্তফা কামাল রাজের দলের পক্ষ থেকে অভিযোগটি অস্বীকার করা হয়। তারা জানান, প্রয়োজন মনে করলে তারা পরে মন্তব্য দেবেন।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে উৎসাহ দিতে তিনদিন ব্যাপী সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ (সিসিএল) আয়োজন করা হয়েছে। এতে মোট ১৬ টি দল অংশ নিয়েছে। আগামীকাল ফাইনালের মধ্য দিয়ে এ আসর সমাপ্ত হবে।
নিজের গান দিয়ে ইউটিউব চ্যানেলের যাত্রা শুরু করলেন ক্লোজআপ তারকা নোলক বাবু।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর বনশ্রীর এক রেস্তোরায় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলের উদ্বোধন করেন এ গায়ক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তার মা।
নোলক বাবুর ইউটিউব চ্যানেলে উন্মুক্ত হয়েছে তার নতুন গান 'মানুষ'। গানের কথা লিখেছেন তরুন সিং, সুর করেছেন শিল্পী নিজেই। গানটির সংগীতায়োজন হৃষিকেশ রকি।
নোলক বাবু বলেন, গানটি গাইতে পেরে আমি মুগ্ধ।
গোটা দেশ এখন দুই ভাগে বিভক্ত। একদল সাকিব আল হাসানকে শূলে চড়াচ্ছে, অন্যরা তামিম ইকবালকে। অথচ জাতীয় ক্রিকেট দল ভারতে গেছে বিশ্বকাপ খেলতে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে খোঁচাখুঁচি। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ খেলতে নেমেছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজেদের প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে। যে উদ্বোধনী জুটি নিয়ে এত দ্বিধা আর সংকোচ, যে কারণে তামিম না থাকায় এত হাহাকার, সেখানেই কিনা বাজিমাত করে পুরো জাতিকে অন্য এক বার্তা দিলেন তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস।
বিশ্বকাপের দলে যে তামিম ইকবাল থাকছেন না, সেটা জানা গিয়েছিল আগের দিনেই। তবু ক্রিকেট ভক্তদের মনের এক কোণে ক্ষীণ আশা ছিল। ওপেনারদের টানা ব্যর্থতার কথা বিবেচনায় হলেও এই ব্যাটসম্যান থাকবেন বলে ছিল তাদের। কিন্তু সেই আশার গুড়ে বালি। তাকে দলে না রাখায় অবশ্য রাস্তায় জনতার ঢল নামেনি, রাজপথে হয়নি কোনো সভা-সমাবেশ। তবে নতুন যুগের দেয়ালে দেয়ালে ছড়িয়ে পড়ে প্রতিবাদী নিন্দার বাণী। হাল জামানায় যাকে ‘টাইমলাইন’ বলে সম্বোধন করা হয়।
সেই সব প্রতিবাদী স্ট্যাটাসও দুই ভাগে বিভক্ত। কেউ সাকিব আল হাসানের পক্ষে, কেউবা তামিম ইকবালের। একদল পরিসংখ্যান-পর্যালোচনা দিয়ে বোঝাতে ব্যস্ত যে এই যুগে তামিমের কৌশল ‘ওল্ড স্কুল’। ওসব এখন আর চলে না। অন্য দল ১৭ বছরের ইতিহাস আর আবেগ নিয়ে হাজির। তাদের কাছেও আছে পরিসংখ্যান। সেটা গত কয়েক বছরের তামিমের ওপেনার সঙ্গীদের একটা তালিকা। তারাই শূলে চড়াচ্ছেন সাকিব-হাথুরু থেকে শুরু করে বিসিবির শীর্ষ কর্তাদের।
বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে সাকিব ক্রীড়াভিত্তিক একটি টিভি চ্যানেলকে দিয়ে গেছেন সাক্ষাৎকার। সেখানে তিনি সরাসরি তামিমের সমালোচনা করেছেন। এই ওপেনার যে দলের প্রয়োজনে পজিশন পরিবর্তনে রাজি হতে চান না, সেই মানসিকতা বাচ্চাদের মতো বলে সমালোচনা করেছেন টাইগার অধিনায়ক। এমনকি তার স্পোর্টসম্যানশিপ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তার আগে তামিম নিজে একটা ভিডিও বার্তায় বলেছেন তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা। মাশারফী বিন মোর্ত্তজাও ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। তাতে করে ক্রিকেটাঙ্গনে এখন যেন ভিডিও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
ক্রিকেট নিয়ে জাতির অবস্থা যখন এমন, তখন ভারতের গোয়াহাটিতে বাংলাদেশের ক্রিকেট দল। আসাম রাজ্যের রাজধানীর বরষাপাড়া ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম উদ্বোধনী ম্যাচ খেলতে নেমেছিল তারা। ছিলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, নাজমুল হোসেন শান্তও ছিলেন না থাকার মতো করেই। প্রথম গা গরমের ম্যাচে তাই নেতৃত্ব দেন মেহেদি হাসান মিরাজ।
টসভাগ্যে মিরাজের পরাজয়ের পর বল হাতে নামে বাংলাদেশ। টানা ৪০ ওভার টাইগারদের বোলারদের যেন শাসন করছিলেন লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা। ঐ সময় পর্যন্ত ৫ উইকেট হারালেও তারা করে ২০২ রান। তারপরই যেন ঘুরে দাঁড়ান টাইগার বোলাররা। শেষ ১০ ওভারের ৫ বাকি থাকতেই গুটিয়ে যায় লঙ্কানরা। ২৬৩ রানের বেশি তারা করতে পারেনি।
২৬৪ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নামা বাংলাদেশের হালটা যে সুখকর হবে না, মুহূর্তেই ধসে পড়বে ব্যাটিং লাইনআপ। সিনিয়রদের কাউকে এসে হাল ধরে নিয়ে টেনে নিয়ে যেতে হবে দলকে। খাঁদের কিনারা থেকে টেনে তুলে হয় জয়, নয়তো সম্মানজনক হার! এমনটাই ছিল অনুমিত। আমরা যে এতেই অভ্যস্ত।
কিন্তু তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস সব অনুমান ভুল প্রমাণ করে দেন। যে ওপেনিং জুটি বাংলাদেশকে ভোগাচ্ছিল, যে সমস্যার কারণে চোট প্রবণ তামিম ইকবালকেও সবাই চাইছিলেন দলে। সেটাই কিনা তারা প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে ভুলিয়ে দিলেন! উদ্বোধনীতে তারা গড়েন ১৩১ রানের জুটি। তাতে ১৩ ম্যাচ পর বাংলাদেশ ওপেনিংয়ে শতরানের জুটি দেখতে পেয়েছে। হোক সেটা প্রস্তুতি ম্যাচ, তবুও তো লড়াই!
সবচেয়ে বড় স্বস্তি লিটন-তানজিদের রানে ফেরা। এশিয়া কাপের আগে জ্বরে ভুগছিলেন লিটন। সেই জ্বরের ধকল কাটিয়ে উঠতে তার সময় লেগেছে। মহাদেশীয় টুর্নামেন্টে যেতে হয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তর চোটের কারণে। কিন্তু নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। এই টুর্নামেন্টে ২ ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন তানজিদ। কিন্তু তিনিও প্রত্যাশা মেটাতে ব্যর্থ হয়েছেন। এমনকি ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ড সিরিজেও।
তাই বিশ্বকাপের দলে তামিম ইকবালকে বাদ দেওয়াতে ঝড় উঠেছিল। সেই ঝড় চলমান ছিল আজ দুপুর অবধি। অনেকেই ভেবে রেখেছিলেন, এই জুটি ব্যর্থ হবে। যা ধারাবাহিক থাকবে টুর্নামেন্টের শুরুতেও। তারপর বিশ্বকাপের মাঝপথে আচমকা ডাক পেয়ে তামিম ইকবাল উড়াল দেবেন ভারতে। ঠিক যেমনটা হয়েছিল ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তান দলে। সেবার জাভেদ মিয়াঁদাদকে ছাড়াই তারা বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিল। কিন্তু ব্যাটারদের ব্যর্থতার কারণে তাকে মাঝপথে উড়িয়ে নেওয়া হয়েছিল, এবং বিশ্বকাপ জিতেছিল।
এমন স্বপ্ন বাংলাদেশের অনেক ক্রিকেটভক্তরাও দেখতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু তানজিদ তামিম আর লিটনের জুটি বদলে দিয়েছে সব হিসেব-নিকেশ। তামিমের ফেরার প্রত্যাশায় যারা গুনছিলেন প্রহর, তাদের মাথায় যেন এবার আকাশ ভেঙে পড়েছে। কারণ তারা যে রানে ফিরেছেন। যুববিশ্বকাপজয়ী তামিম খেলেছেন ৮৪ রানের একটি ইনিংস। ৮৮ বলে যা সাজানো ছিল ১০টি চার ও ২টি ছক্কায়। অন্যপ্রান্তে লিটন ৫৬ বলে ১০ চারে খেলেছেন ৬১ রানের ইনিংস। শুধু কি তাই! এদিন তিনে নেমেছিলেন মিরাজ। তার ব্যাট থেকে এসেছে ৬৭ রান। ৬৪ বলের হার না মানা ইনিংসটি সাজানো ছিল ৫ চার ও ২ ছক্কায়।
পঞ্চপান্ডবের পরের প্রজন্ম তো তারাই। যাদের ব্যাটে শুক্রবার বরষাপাড়ায় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। তাদের রানে ফেরা যেন নতুন দিনের বার্তা দেয়। যে বার্তা আগামীর পথচলার। যেখানে পুরনোকে আকড়ে ধরে রাখার প্রবণতা ক্ষীণ হয়ে আসার বার্তা। সহজ কথায়, তরুণদের রানে ফেরাতে মিয়াঁদাদ হওয়ার সুযোগ আর হচ্ছে না তামিম ইকবালের।
আল নাসরে প্রথম মৌসুমটা ভালো না কাটলেও দ্বিতীয় মৌসুমের শুরু থেকেই ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো আছেন দারুণ ছন্দে। নিজে গোল করে দলকে জেতাচ্ছেন, সতীর্থদের দিয়ে গোল করাচ্ছেন।
শুক্রবারও সৌদি প্রো লিগে আল তা’য়ির বিপক্ষে ২-১ গোলে জিতেছে আল নাসর। এ ম্যাচেও রোনালদো গোল করেছেন এবং করিয়েছেন। তবে তাঁকে নিয়ে বেশি আলোচনা তালিসকার গোলটিতে অসাধারণ এক অ্যাসিস্টের জন্য। অ্যাসিস্টটিতে যে সবার মন ভরিয়ে দিয়েছেন রোনালদো।
তা’য়ির মাঠে আল নাসর গতকাল শুরুটা করেছে দারুণ। একের পর এক আক্রমণে স্বাগতিক দলের রক্ষণ করে দিয়েছে এলোমেলো। ম্যাচের শুরুর দিকেই রোনালদোর দুর্দান্ত একটি প্রচেষ্টা ঠেকিয়ে দেন তা’য়ির গোলকিপার। এ ছাড়া রোনালদোও খুব কাছ থেকে পাওয়া একটি সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি।
তবে ৩২ মিনিটে এগিয়ে যায় আল নাসর। গোলটি করেছেন ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার অ্যান্ডারসন তালিসকা। গোলটিতে রোনালদো অ্যাসিস্ট করেছেন অসাধারণ এক বাই-সাইকেল কিকে। সৌদি প্রো লিগে এ মৌসুমে এটা রোনালদোর পঞ্চম অ্যাসিস্ট।
খেলার স্রোতের বিপরীতে ৭৯ মিনিটে সমতায় ফেরে তা’য়ি। কিন্তু সমতা বেশিক্ষণ থাকেনি। ৩ মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে আল নাসরের জয়সূচক গোলটি করেছেন রোনালদো। সৌদি প্রো লিগে এ মৌসুমে এটা ৭ ম্যাচে তার ১০ নম্বর গোল। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ১৫ ম্যাচ খেলে করেছেন ১৬ গোল।
এই জয়ের পর ৮ ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছে আল নাসর। আল ফেইহার সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করা আল ইত্তিহাদ সমান ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে আছে শীর্ষে। ৮ ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে আল তা’য়ি।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে পুলিশ। নির্বাচনে কী উপায়ে নিরাপত্তা দেওয়া হবে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। তবে সরকারের হাইকমান্ড থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে তথ্য এসেছে, ঘাপটি মেরে থাকা পুলিশের কিছু কর্মকর্তা ও সদস্য সরকারবিরোধীদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রাখছে। পুলিশের একটি প্রতিবেদনেও তথ্য এসেছে সারা দেশে অন্তত আড়াইশো কর্মকর্তা আছেন তারা সরকারবিরোধী হিসেবে পরিচিত। তাদের পুরো কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
এদিকে, চলতি মাস ও আগামী মাসের মধ্যে পুলিশে আরও বড় ধরনের রদবদল করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তালিকাও করা হয়েছে। পাশাপাশি উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্রসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদিও কেনার চেষ্টা করছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানান, সামনের দিনগুলোতে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা। এ নিয়ে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা আগাম সতর্কবার্তাও দিয়েছে। যেকোনো বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধ করতে কিছুদিন আগে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সবকটি ইউনিট প্রধান ও জেলার এসপিদের কাছে বার্তা পাঠানো হয়েছে। বার্তায় বলা হয়েছে রাজনৈতিক দুবৃর্ত্তায়নের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি পুলিশের মধ্যে কোনো সদস্য সরকারবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার তথ্য পেলে জানাতে বলা হয়েছে। ঢাকাসহ সারা দেশেই সব পুলিশ সদস্যকে সতর্ক থাকতে হবে। নির্বাচনকালীন যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। পেশাদার সন্ত্রাসীসহ অন্য অপরাধীদের ধরতে বিশেষ অভিযান চালাতে হবে।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঘাপটি মেরে থাকা পুলিশের কিছু সদস্যের কর্মকান্ড নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। এই সংখ্যা প্রায় আড়াইশো মতো হবে। সংখ্যা আরও বাড়তেও পারে। ইতিমধ্যে তালিকা করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে সরকারের হাইকমান্ডকে অবহিতও করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যেকোনো পরিস্থিতির জন্য পুলিশকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় পুলিশে উদ্বেগ আছে। বৈধ অস্ত্রের সংখ্যার খোঁজ নেওয়া, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও অস্ত্র কারবারিদের গ্রেপ্তার করতে বিশেষ অভিযান চালাতে ইতিমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে অভিযানের নির্দিষ্ট তারিখ এখনো ঠিক হয়নি। হুট করেই আমরা বিশেষ অভিযান শুরু করব। কেপিআই স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন যথাসময়ে হবে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। নির্বাচন নিয়ে যাতে কোনো মহল বা চক্র নাশকতামূলক কর্মকান্ড চালাতে না পারে সে জন্য মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সতর্ক আছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (অপারেশন) আনোয়ার হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশের সবধরনের প্রস্তুতি আছে। দাগি সন্ত্রাসীসহ অন্য অপরাধীদের ধরা ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করতে দ্রুত সময়ের মধ্যে বড় ধরনের অভিযান চালানোর পরিকল্পনা আছে আমাদের।
পুলিশ সূত্র জানায়, আড়াইশো পুলিশ কর্মকর্তার কর্মকান্ড নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। তাদের মোবাইল নম্বর সার্বক্ষণিক ট্র্যাকিং করা হচ্ছে। এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যদেরও খোঁজ রাখা হচ্ছে। নজরদারির মধ্যে থাকা বেশ কয়েকজন পুলিশ সুপার, অ্যাডিশনাল পুলিশ সুপার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ইন্সপেক্টর, সাব-ইন্সপেক্টর আছেন। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের অ্যাডিশনাল ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল বা নেতাদের সাপোর্ট দেওয়া আমাদের কাজ না। জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আমাদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের জন্য উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্র ও যানবাহন ক্রয় করা হচ্ছে। পাশাপাশি ৫০ লাখের মতো রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড কেনা হচ্ছে। আগামী মাসের মধ্যে এসব সরঞ্জাম বাংলাদেশে আসবে বলে আশা করছি। ডিএমপি, সিএমপি, কেএমপি, আরএমপি, বিএমপি, এসএমপি, আরপিএমপি, জিএমপি কমিশনার, বিশেষ শাখা (এসবি), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), অপরাধ তদন্ত বিভাগ, পিবিআই, টুরিস্ট পুলিশ, এটিইউ, রেলওয়ে পুলিশ, নৌপুলিশ, এপিবিএন, হাইওয়ে, শিল্পাঞ্চল পুলিশ প্রধান, সব অ্যাডিশনাল আইজিপি, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা ও রংপুর রেঞ্জে নতুন আগ্নেয়াস্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি পাঠানো হবে। ইতিমধ্যে ইউনিট প্রধানরা পুলিশ সদর দপ্তরে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছেন। বিষয়টি আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকারবিরোধীরা নানা ষড়যন্ত্র করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করতে উঠেপড়ে লেগেছে তারা। বিএনপি আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও করছে। তারা পুলিশের ওপর হামলা করছে। যানবাহনে আগুন দিচ্ছে। আর এসব মোকাবিলা করতে পুলিশকে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে। অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে পুলিশ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। অপরাধীদের ধরতে পুলিশের বিশেষ অভিযান শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।