
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপির সঙ্গে সংলাপ নিয়ে আমির হোসেন আমুর বক্তব্য তার ব্যক্তিগত। এটি সরকার বা আওয়ামী লীগ বা ১৪ দলের বক্তব্য নয়।
গতকাল বুধবার সচিবালয়ে সমসাময়িক বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমির হোসেন আমু আমাদের দলের অন্যতম জ্যেষ্ঠ নেতা। তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটি তার ব্যক্তিগত বক্তব্য। তার এ বক্তব্য নিয়ে আমাদের দলের মধ্যে, সরকারের মধ্যে কোনো আলোচনা হয়নি। এমনকি ১৪ দলের মধ্যেও কোনো আলোচনা হয়নি। এটি সম্পূর্ণভাবে তার ব্যক্তিগত বক্তব্য। তবে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল, তিনি বলেছেন আসলে গণমাধ্যমে যেভাবে এসেছে তিনি ঠিক সেভাবে বলেননি। যেভাবেই আসুক এটি তার ব্যক্তিগত অভিমত।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেভাবে ভারতে নির্বাচনকালীন সময়ে চলতি সরকার দায়িত্ব পালন করে, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, যুক্তরাজ্য পালন করে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টও পদত্যাগ
করেন না, তিনিও নির্বাচনকালীন সময়ে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। যেভাবে সব গণতান্ত্রিক দেশে চলতি সরকার নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্ব পালন করে; ঠিক সেভাবে আমাদের দেশেও বর্তমান সরকার নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্ব পালন করবে এবং প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। সেই সরকারের আকার কী হবে না হবে সেটি হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার।’
নির্বাচন কমিশনের আয়োজন ও ব্যবস্থাপনাতেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে উল্লেখ করে সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে আমাদের সরকার সর্বতোভাবে সহায়তা করবে, যাতে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক, উৎসবমুখর একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আমরা চাই সে নির্বাচনে বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করুক এবং সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি অত্যন্ত চমৎকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক, বিশ্বের কাছে উদাহরণ হিসেবে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক, সেটিই আমরা চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনকে ভয় পায়। তারা ২০১৪ সালের নির্বাচন প্রতিহত করার চেষ্টা করেছে, ৫০০ ভোটকেন্দ্র জ¦ালিয়ে দিয়েছে, দুজন প্রিসাইডিং অফিসারকে হত্যা করেছে এবং সাড়ে তিন হাজার মানুষ পুড়িয়েছে, তার মধ্যে ৫০০ মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। তারা আসলে নির্বাচন প্রতিহত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত এবং সেই কথাটিই মির্জা ফখরুল সাহেব আবার বলেছেন। কিন্তু এবার আর তাদের পক্ষে নির্বাচন প্রতিহত করা কিংবা নির্বাচন বর্জন করা সম্ভবপর হবে না।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘অবশ্যই বিএনপি একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেই পারে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি করবে না। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য তা নয়, তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে নির্বাচন ভ-ুল করে দেশে একটি বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি করা। কিন্তু নির্বাচন জনগণের অংশগ্রহণ হচ্ছে মুখ্য বিষয়। জনগণ যদি ব্যাপকভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং ভোট অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হয়, তাহলে সেটি জনগণের অংশগ্রহণমূলক একটি ভালো নির্বাচন।’
তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় পুত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর তার প্রতি সহানুভূতি জানাতে দেশের প্রধানমন্ত্রী গিয়ে বেগম জিয়ার দরজায় আধাঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পরও যারা দরজা খোলেনি, যারা অগ্নিসন্ত্রাস চালায়, মানুষের ওপর হামলা চালায়, তাদের সঙ্গে আলোচনা করে কী হবে, সেটি হচ্ছে বড় প্রশ্ন।’
প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় তীব্র পানির সংকট চলছে। ঢাকা ওয়াসার সরবরাহ লাইনে পানি যাচ্ছে না। বিকল্প উপায়ে পানির গাড়ি চেয়েও গ্রাহকরা পানি পাচ্ছেন না। দীর্ঘ সিরিয়াল থাকায় টাকা দিয়েও পানি কিনতে পারছেন না। এ অবস্থায় রাজধানী ঢাকার অনেক এলাকায় পানির জন্য হাহাকার চলছে। তীব্র গরমে ঢাকায় পানির চাহিদা বেড়েছে। আর বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে পানির উৎপাদন কমে যাওয়ায় বিদ্যমান অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
ঢাকা ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, ঢাকা ওয়াসার দৈনিক পানির উৎপাদন সক্ষমতা ২৮০ কোটি লিটার। আর নগরবাসীর দৈনিক পানির চাহিদা ২৬৫ কোটি লিটার। স্বাভাবিক সময়ে নগরবাসীর পানির চাহিদা পূরণে তেমন কোনো অসুবিধা হয় না। তবে গ্রীষ্ম মৌসুমে পানির চাহিদা বেড়ে গেলে তখন প্রতি বছরই ঢাকা ওয়াসাকে পানি সরবরাহে হিমশিম খেতে দেখা যায়। এবার বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় রাজধানীবাসীর পানির চাহিদা পূরণ করতে পারছে না ঢাকা ওয়াসা। একদিকে তীব্র গরমের কারণে পানির চাহিদা বেড়েছে প্রায় ৩৫ কোটি লিটার। অন্যদিকে পানির উৎপাদন কমেছে প্রায় ৮০ কোটি লিটার। বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার পানির ঘাটতি প্রায় ১১২ কোটি লিটার। এ অবস্থায় কোনো রকম জোড়াতালি দিয়ে চলছে কার্যক্রম।
ঢাকা ওয়াসা সূত্রে আরও জানা যায়, ঢাকা ওয়াসার উত্তোলন করা পানির ৬৫ ভাগ উৎপাদন করে ভূ-গর্ভস্থ উৎস থেকে; অর্থাৎ ১ হাজার ৩৫টি পাম্পের মাধ্যমে এসব পানি উত্তোলন করে থাকে। বিদ্যুৎ চলে গেলে ৪০০টি পাম্প জেনারেটরের মাধ্যমে চালু থাকে। লোডশেডিংয়ের পর জেনারেটর চালু করেও চাহিদা অনুযায়ী পানির উৎপাদন বাড়াতে পারছে না ঢাকা ওয়াসা। অন্যদিকে সায়েদাবাদ, পদ্মা-যশলদিয়া, চাঁদনীঘাট প্ল্যান্ট বা ভূ-উপরিস্থ উৎস থেকে ৩৫ ভাগ পানি উৎপাদন করছে। এসব প্ল্যান্ট নদী থেকে পানি সংগ্রহ করে তা শোধন করে নগরবাসীকে সরবরাহ করছে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা ওয়াসার উপপ্রধান জনতথ্য কর্মকর্তা এম এ মোস্তফা তারেক দেশ রূপান্তরকে বলেন, তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে ঢাকায় প্রায় ৩৫ কোটি লিটার পানির চাহিদা বেড়েছে। পাশাপাশি লোডশেডিংয়ের কারণে পানির উৎপাদন ৩৩ শতাংশ বা প্রায় ৯২ কোটি লিটার কমেছে। তিনি বলেন, ঢাকা ওয়াসার পক্ষ থেকে পানির উৎপাদন বৃদ্ধি এবং সব এলাকার নগরবাসীর কাছে পানি পৌঁছাতে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। যেসব এলাকায় পানি পৌঁছাতে অসুবিধা হচ্ছে, সেই সব এলাকায় গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী গাড়িতে করে পানি পৌঁছানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকা ওয়াসা ১০টি জোনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করে থাকে। প্রতিদিন এসব জোনের স্থাপিত পাম্পগুলোয় দেড়শবারেরও বেশি বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ঘটনা ঘটছে। প্রায় প্রতিদিনই পানি সংকট থাকছে, কুড়িল, জোয়ার সাহারা, আফতাবনগর, বনশ্রী, মিরপুর-১১-এর বি-ব্লক, ভাষানটেক, কাফরুল, ইব্রাহিমপুর, উত্তরখান, দক্ষিণখান, উত্তরার সেক্টর-৭, ১১ ও ১২, জুরাইন, মাতুয়াইল, রহমতপুর, কোনাপাড়া, ডগাইর, কদমতলী, নন্দীপাড়া, মহাখালী-জ ব্লক, মোহাম্মদপুরের চাঁন মিয়া হাউজিং, আদাবর, শ্যামলী, পূর্ব রাজাবাজার ও ক্রিসেন্ট রোড, মানিকনগর, মধ্য বাসাবো, কেবি রোড, দয়াগঞ্জ, কাজলারপাড়, পশ্চিম কাটাসুর ঢাকা রিয়েল এস্টেট হাউজিংসহ মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় তীব্র পানি সংকট চলছে।
তথ্যানুসন্ধানে আরও জানা যায়, ঢাকা ওয়াসার ১০টি অঞ্চল অফিসে দৈনিক দেড় হাজারের বেশি পানির গাড়ির চাহিদা জমা পড়ছে। ঢাকা ওয়াসা চাহিদার বিপরীতে অর্ধেক পানিও সরবরাহ করতে পারছে না। টাকা দিয়ে পানি কিনতেও এটা রীতিমতো লবিং করতে হচ্ছে। যাদের ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে; তাদের পানি পেতে কিছুটা সহজ হচ্ছে। এর বাইরে সাধারণ নগরবাসীকে তীব্র লোডশেডিং, তীব্র দাবদাহের সঙ্গে তীব্র পানি সংকট স্বাভাবিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করছে।
জানতে চাইলে ঢাক ওয়াসার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (কারিগরি) এ কে এম সহিদ উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, তীব্র গরমের কারণে ঢাকায় পানির চাহিদা অনেকাংশে বেড়েছে। আর বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে পানির উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। জেনারেটর দিয়ে পানি উত্তোলন করে এখনকার চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। এ জন্য কোথাও কোথাও পানির সংকট দেখা দিয়েছে। তবে ঢাকা ওয়াসার পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। বৃষ্টি হলেই পানির সংকট পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
প্রায় এক যুগ আগে বন্ধুর মাধ্যমে নরওয়েতে ৭০০ মার্কিন ডলারের পাটজাত পণ্য সরবরাহের কাজ পান খালেদা সুলতানা। অভিজ্ঞতা না থাকলেও পাটের প্রতি মমত্ব আর ভালোবাসার কারণে কিছুটা ঝুঁকি নিয়েই মাঠে নেমে সফলভাবে পণ্য সরবরাহ করেন তিনি। পাটজাত হস্তশিল্পে এভাবেই যাত্রা শুরু এই নারী উদ্যোক্তার।
রাজধানীর রামপুরা এলাকায় অবস্থিত ‘জুট মার্ট অ্যান্ড ক্রাফট ইন বাংলাদেশ’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খালেদা সুলতানার সঙ্গে আলাপচারিতায় জানা গেল ছোটবেলা থেকেই হস্তশিল্পের ওপর প্রবল ঝোঁক ছিল তার। উদ্ভিদবিদ্যায় স্নাতকোত্তর শেষ করে শিক্ষকতাসহ নানা পেশায় যুক্ত ছিলেন। কিন্তু সবসময় ভাবতেন হস্তশিল্পের মাধ্যমে কীভাবে মানুষের লাইফ স্টাইল পরিবর্তন করা যায়, কীভাবে রপ্তানি আয় বাড়ানো যায়।
সেই ভাবনা থেকেই ২০০৮ সালে হস্তশিল্পকে পেশা হিসেবে নেওয়ার পরিকল্পনা করেন খালেদা। কিন্তু চাকরি করে কোনো কিছুই ঠিকমতো গোছাতে পারছিলেন না। একপর্যায়ে ২০১২ সালে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ‘জুট মার্ট অ্যান্ড ক্রাফট ইন বাংলাদেশ’-এর। তিনি বলছিলেন, নরওয়ের প্রথম চালান সফলভাবে সরবরাহ করার পর আরও তিন হাজার মার্কিন ডলারের কাজ পান তিনি। এভাবে বিভিন্ন দেশে ২০১২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত পাটজাত পণ্য সরবরাহ করে আসছেন বেশ সুনামের সঙ্গে। কিন্তু নানা সীমাবদ্ধতার কারণে এখন তিনি সরাসরি রপ্তানি না করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য পাটজাত পণ্য তৈরির কাজ করছেন। পাশাপাশি ব্যবসার ভিত আরও মজবুত করার চেষ্টা করছেন দেশের বাজারে। বর্তমানে তার কারখানায় শতাধিক পাটজাত পণ্য উৎপাদন হয়।
খালেদা বলছিলেন, ‘যেকোনো ব্যবসায় ভালো করতে হলে গবেষণার পাশাপাশি অভিজ্ঞতার দরকার। কিন্তু শুরুর দিকে এ দুটোর কোনোটাই আমার ছিল না। পাটপণ্যের হস্তশিল্পের ক্ষেত্রে এটা আরও বেশি প্রযোজ্য। কারণ এই খাত এখনো সেভাবে দাঁড়াতে পারেনি।’
‘অন্য কেউ হলে হয়তো এতদিনে ব্যবসা বন্ধ করে দিত। কিন্তু আমি লেগে আছি। কারণ আমার বিশ্বাস, দেশে একদিন পাটজাত শিল্পের বড় বিপ্লব হবে। বিশ^বাজারে নেতৃত্ব দেবে বাংলাদেশ। আমাদের দেশে বড় একটা সমস্যা হলো তথ্যের অভাব। পাটজাত শিল্প নিয়ে এখন কিছুটা তথ্য পাওয়া গেলেও শুরুটা ছিল অনেক কঠিন,’ যোগ করেন তিনি।
নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে খালেদাকে কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। ফলে কখনো কখনো বিশাল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। আবার নিজের সবকিছু বিনিয়োগ করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন। যেমন, করোনা মহামারীর কারণে ২০২০ সালের মার্চের পর বড় সংকটে পড়েন তিনি। প্রায় ৫ মাস তার কোনো আয় হয়নি। কিন্তু অফিস ভাড়া, কর্মীদের বেতনসহ নানা ব্যয় বহন করতে হয়েছে। এতে বিপুল আর্থিক ক্ষতি হওয়ায় বড় অফিস ও কারখানা ছেড়ে ছোট পরিসরে নেমে আসার পাশাপাশি অনেক কর্মীকেও বাধ্য হয়ে ছাঁটাই করতে হয়েছে তার।
২০২১ সাল থেকে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ান তিনি। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে আবার সংকট তৈরি হয়। বর্তমানে সেই সংকট কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছেন। কিন্তু গ্যাস-বিদ্যুৎসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম যেভাবে হু হু করে বাড়ছে তাতে কতদিনে এই সংকট কাটিয়ে ওঠা যাবে তা নিয়ে সন্ধিহান তিনি।
খালেদা বলছিলেন, বিদ্যুতের মূল্য কয়েক দফা বাড়ানোর কারণে পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এরপরও ঠিকমতো বিদ্যুৎ না থাকায় উৎপাদন ব্যাহত হয়। কারণ জেনারেটর কেনা বা এর পরিচালনা ব্যয় বহনের সামর্থ্য তার মতো এ খাতের বেশির ভাগ উদ্যোক্তার নেই। ফলে দেশের বাজারে পণ্যের বিক্রি কমছে আর আন্তর্জাতিক বাজারে অন্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছেন না।
এসব চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি দক্ষ কর্মীর অভাব রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই খাত সেই অর্থে বড় না হওয়ায় ঠিকমতো কর্মী পাওয়া যায় না। এর সঙ্গে রয়েছে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের অভাব। অনেক ক্ষেত্রে, বিশ্ববাজারে ভারত, চীন ও ভিয়েতনাম উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার এবং নানারকম সুবিধা দেওয়ায় বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের চেয়েও কম দামে মানসম্মত পণ্য দিতে পারছে। ফলে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ছে।
‘পাটের সুদিন ফিরিয়ে আনতে পাট দিবস চালু, শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়া, ১৭টি পণ্যে পাটের ব্যাগ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করাসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীও বিভিন্ন সময়ে পাট নিয়ে নানা প্রেরণার কথা বলেন। কিন্তু তারপরও দেশে-বিদেশে বিভিন্ন ধরনের সংকট রয়েছে এখনো’, বলছিলেন খালেদা সুলতানা।
তার মতে, ‘পাটের সঙ্গে আমাদের আবেগ জড়িয়ে আছে। পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বিশ্বে এর চাহিদাও ক্রমেই বাড়ছে। কিন্তু আমরা এর বাজার ধরতে এত বেশি দেরি করছি যে, একসময় হয়তো পাটের বিকল্প অন্য কোনো পরিবেশবান্ধব উপকরণ চলে আসবে। আমাদের অবহেলার কারণে তখন হয়তো বিপুল সম্ভাবনাময় পাটের বাজার হারাতে হবে।’
খালেদা জানান, ‘বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের জেডিপিসি আমাদের প্রাণের জায়গা। এই প্রতিষ্ঠানকে আরও বেশি সক্রিয় হতে হবে। এখানে বড় সমস্যা হলো প্রতিষ্ঠানের প্রধান এখানে বেশিদিন থাকতে পারেন না। তাকে বদলি করে নতুন আরেকজনকে পদায়ন করে সরকার। ঘন ঘন এই আসা-যাওয়ার ফলে সময় নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি মূল কাজে ব্যাঘাত ঘটে। এখানে পরিবর্তন দরকার। পাশাপাশি পাট নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যাপকহারে পড়ালেখার সুযোগ সৃষ্টি করা। সেইসঙ্গে অনেক বেশি কার্যকর গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থাকতে হবে, যাতে নতুন উদ্যোক্তারা সেখানে নানা বিষয়ে জানতে ও শিখতে পারে।’
‘দেশের বাজারের উন্নয়নের পাশাপাশি বিশ্ববাজার ধরতে আমাদের পণ্যের প্রচুর ব্র্যান্ডিং করতে হবে। কম খরচে কীভাবে মানসম্মত পণ্য তৈরি করা যায় তা নিয়ে কাজ করতে হবে। একই সঙ্গে এ খাতের উদ্যোক্তাদের সরকার নানারকম প্রণোদনা বা আর্থিক সহায়তা দিতে পারে,’ বলেন তিনি।
খালেদা মনে করেন, এই ব্যবসায় উন্নতি করতে হলে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মেলায় অংশগ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, ‘ঘণ ঘঙড ডরহঃবৎ ঝযড়’ি-এ অংশ নিয়ে তিনি পাটপণ্যের ব্র্যান্ডিং, দাম নির্ধারণ, উত্তর আমেরিকার ক্রেতাদের রুচি ও চাহিদা সম্পর্কে জানতে ও শিখতে পেরেছেন। তিনি এই মেলার স্পন্সর ইউএসএআইডি-অর্থায়নকৃত ফিড্ দ্য ফিউচার বাংলাদেশ হর্টিকালচার অ্যাক্টিভিটি, ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন অফিস (টিএফও) কানাডা এবং এসএমই ফাউন্ডেশন বাংলাদেশকে অশেষ ধন্যবাদ জানান এবং একই সঙ্গে এ ধরনের আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অন্যান্য মেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিতে অনুরোধ জানান।
নতুনদের উদ্দেশে তার পরামর্শ হলো, ভবিষ্যতে এই খাতে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে সহজে রাতারাতি সফল হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ এটা অন্য ব্যবসার মতো না। এখানে সততার সঙ্গে লেগে থাকতে হবে। আন্তরিকতার সঙ্গে ভালো কাজ করতে হবে। তবেই সাফল্য আসবে।
নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি জানালেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে এই পেশায় লেগে থাকার কারণে হোঁচট খেয়েও অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার। সেটাকে কাজে লাগিয়ে আরও ভালো কিছু করতে চাই। বতর্মানে ঢাকার পাশাপাশি খুলনা ও বরিশালের স্থানীয় নারীদের নিয়ে কাজ করছি। ভবিষ্যতে আরও অন্যান্য জেলায় কাজ করার পাশাপাশি আউটলেট বা বিক্রয়কেন্দ্র চালু করে নিজস্ব ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠার ইচ্ছা আছে।’
দেশে একদম শিশু এবং যাদের বয়স ৪০ বছরের ঊর্ধ্বে, তাদের ব্রেন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। এই শ্রেণির মানুষ ব্রেনের ‘ম্যালিগন্যান্ট টিউমার’ দ্বারা আক্রান্ত হয়। তাদের ব্রেন টিউমার থেকে ক্যানসার দেখা দেয়। আর সাধারণত ১৮-৪০ বছর বয়সী মানুষ ‘বেনাইন টিউমারে’ বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এটা সাধারণ টিউমার, যা থেকে ক্যানসার হয় না। অস্ত্রোপচারে সেরে যায়। এমন তথ্য জানিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সার্জারি অনুষদের ডিন ও নিউরোসার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, সব বয়সী মানুষেরই ব্রেন টিউমার হতে পারে। বাচ্চাদেরও হতে পারে। পূর্ণবয়স্ক ও বেশি বয়স্ক মানুষেরও হয়। নারীরাও আক্রান্ত হন। তবে দেশে ঠিক কী পরিমাণ ব্রেন টিউমারের রোগী আছে, তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই বলে জানান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তারা বলেন, এ ধরনের কোনো গবেষণা বাংলাদেশে হয়নি। বিএসএমএমইউর নিউরোসার্জারি বিভাগ শিগগিরই এই পরিসংখ্যান করার চেষ্টা করবে।
রোগী বাড়ছে : বাংলাদেশ সোসাইটি অব নিউরোসার্জনসের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন বলেন, দেশে ব্রেন টিউমারের রোগী বাড়ছে। রোগ শনাক্তকরণে এমআরআই ও সিটিস্ক্যানসহ পর্যাপ্ত পরীক্ষার সুবিধা থাকায় এখন রোগ নির্ণয় হচ্ছে। তিনি বলেন, ভেজাল খাদ্যগ্রহণ, নানা ধরনের রেডিয়েশন বা তেজস্ক্রিয়তা, বিভিন্ন ধরনের দূষণÑ এসব কারণে ব্রেনের ক্যানসার বাড়ছে।
এ ব্যাপারে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স ও হাসপাতালের ইন্টারভেনশন নিউরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. হুমায়ুন কবির সরকার হিমু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ব্রেন টিউমারের রোগী এখন অনেক বেশি। আগে শনাক্ত করার আধুনিক যন্ত্রপাতি ছিল না। এখন অনেক উন্নত এমআরআই মেশিন আছে, অন্যান্য ইমেজিং ব্যবস্থা আছে। এখন ধরা পড়ছে। শিশুদেরও ব্রেন টিউমার হচ্ছে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে শুরুতে নির্ণয় করা গেলে চিকিৎসায় ভালো ফল দেয়। সাধারণত পূর্ণবয়স্ক মানুষের মধ্যেই এই রোগের প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে।
তৃণমূলে চিকিৎসা কম, শহরাঞ্চলে বেশি : ঢাকা ও জেলা শহরগুলোতে ব্রেন টিউমারের পর্যাপ্ত চিকিৎসা রয়েছে। সে অনুপাতে প্রত্যন্ত অঞ্চলে চিকিৎসা অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তারা জানান, বাংলাদেশে এই রোগের পর্যাপ্ত চিকিৎসাব্যবস্থা রয়েছে। বিএসএমএমইউ, ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ ঢাকার বাইরে অন্তত আরও ১৪টি সরকারি মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে চিকিৎসাব্যবস্থা আছে। এ ছাড়া বেসরকারি হাসপাতালেও চিকিৎসা হচ্ছে। তবে সে অনুপাতে বিভাগীয় ও জেলা শহরের বাইরে এর চিকিৎসা অপ্রতুল।
এ ব্যাপারে অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সাল থেকেই ব্রেন টিউমারের চিকিৎসা হচ্ছে। এখন আধুনিক যন্ত্রপাতি এসেছে। নাকের ভেতর দিয়ে ব্রেন টিউমারের অপারেশন হচ্ছে। ব্রেনে ছোট একটা ছিদ্র করে ক্যামেরা দিয়েও এখন অপারেশন করা হচ্ছে। এখন দরকার এই চিকিৎসা সারা দেশে বিস্তৃত করা, যাতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীও এই সেবা পায়।
ডা. হুমায়ুন কবির সরকার হিমু বলেন, কিছু অত্যাধুনিক টেকনোলজি এখনো বাংলাদেশে নেই। যেমন রেডিও সার্জারি অপারেশন হচ্ছে না। এটাকে গামা নাইফ সার্জারি বলে। মেশিন দিয়ে ব্রেনের টিউমার ছোট করে ফেলা যায়। এমন কিছু অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ঘাটতি রয়েছে। নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল এই গামা নাইফ সার্জারি শুরুর পদক্ষেপ নিচ্ছে।
শুরুতেই নির্ণয়ে ক্যানসারের ঝুঁকি থাকে না : চিকিৎসকরা দ্রুত পরীক্ষা করে এই রোগ শনাক্তের পরামর্শ দিয়েছেন। তারা বলেছেন, টিউমার ছোট থাকলে অস্ত্রোপচার করলে ভালো হয়ে যায়। টিউমার বড় হয়ে গেলে রোগ জটিল পর্যায়ে চলে যায়। অস্ত্রোপচার করলেও সম্পূর্ণ ভালো হয় না। অনেক সময় অবশ হয়ে যাওয়া হাত-পা আর ভালো হয় না। আগেই যদি শনাক্ত করা যায় ও চিকিৎসা করা যায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ব্রেন টিউমার ভালো হয়ে যায়।
অবশ্য ব্রেন টিউমারের অস্ত্রোপচার ব্যয়বহুল বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তারা বলেন, যেহেতু অস্ত্রোপচার প্রযুক্তিনির্ভর ও অনেক সময় লাগে, সে কারণে পৃথিবীব্যাপী এর চিকিৎসা ব্যয়বহুল। তবে বাংলাদেশে আশপাশের দেশের তুলনায় খরচ অনেক খরচ কম।
এখনো কারণ আবিষ্কার হয়নি : ঠিক কী কারণে ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ, তার সঠিক কোনো কারণ আবিষ্কার হয়নি বলে জানান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন। তিনি বলেন, তবে অনুমান করা হয় রেডিয়েশন, জন্মগত কিছু কারণ, জিনের মিউটেশন এসব কারণে হচ্ছে। কারণটা জানতে পারলে ওষুধ দিয়েই ভালো করা যেত।
সুতরাং উপসর্গ দেখে এবং সে অনুযায়ী রোগটি শনাক্ত করে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। তিনি বলেন, মাথাব্যথা হয়, হাত-পা অবস হয়ে যায়, হাঁটতে গিয়ে পড়ে যায়, চোখে দেখে না, কথা বলতে পারে না এমন উপসর্গ হলেই নিউরোসার্জন বা নিউরোলজির চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। দ্রুত পরীক্ষা করা গেলে শনাক্ত দ্রুত হয়। তখন সঙ্গে সঙ্গে অস্ত্রোপচার করা যায়। দ্রুত ব্যবস্থা নিলে রোগী ভালো হয়ে যায়।
এ ধরনের রোগীদের মৃত্যুহার কেমন জানতে চাইলে এই চিকিৎসক বলেন, রোগীর মৃত্যু নির্ভর করে টিউমারটা কত বড় হয়েছে ও মাথার কোনো অংশে আছে, সেটার ওপর। ব্রেনের অনেকগুলো স্পর্শকাতর অংশ আছে, যেখানে টিউমার হলে মৃত্যুহার বেশি। তবে অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে রোগীর মৃত্যুহার ১-২ শতাংশ। আগে এ হার অনেক ছিল। এখন উন্নত চিকিৎসা আসার কারণে অনেক কমে গেছে।
আজ বিশ্ব ব্রেন টিউমার দিবস : ব্রেন টিউমারের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে ২০০০ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালন করা হয়। ১৯৯৮ সালে গঠিত জার্মান ব্রেন টিউমার অ্যাসোসিয়েশন নামের দাতব্য সংস্থার উদ্যোগে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। রাজধানীতে দিবসটি উপলক্ষে বিএসএমএমইউ আলোচনা সভা ও গণসচেতনতা শোভাযাত্রার আয়োজন করেছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) আবাসিক হল থেকে অছাত্রদের বের করাসহ তিন দফা দাবিতে অনশন কর্মসূচিতে বসা ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম প্রত্যয়সহ তাকে সমর্থন দেওয়া অন্য শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত পাঁচজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আরও তিন নারী শিক্ষার্থী লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। ওই হামলার সময় ক্যাম্পাসে লোডশেডিং চলছিল।
হামলা ও লাঞ্ছনার শিকার হওয়াদের অভিযোগ, মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী হামলায় অংশ নেয়। প্রত্যয়ের দাবির সঙ্গে সংহতি জানানো প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের ওপরও হামলা চালানো হয়।
হামলার শিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তাপসী রাবেয়া বলেন, ‘সামিউলের দাবির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে আমরা সেখানে অবস্থান করি। যখন রাতে বিদ্যুৎ চলে যায়, তখন আমাদের ওপর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। আমরা যারা নারী শিক্ষার্থী ছিলাম, তাদের গালাগাল করা হয়। অনশনকারী শিক্ষার্থীকে জোর করে অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয়, এরপর আবার সেই অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুরও করা হয়।’
তবে হামলায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল। তিনি বলেন, ‘হামলায় যদি কোনোভাবে ছাত্রলীগের কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়, তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
হল থেকে অছাত্রদের বের করাসহ তিন দাবিতে গত বুধবার (৩১ মে) রাত থেকে মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনে অনশনে বসেছিলেন প্রত্যয়। তিনি ওই হলটির আবাসিক শিক্ষার্থী। হামলার সময় প্রত্যয়কে মারধরের পর অ্যাম্বুলেন্সে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যায় হামলাকারীরা। প্রত্যয়ের অন্য দাবিগুলো হলোÑ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল থেকে গণরুম বিলুপ্ত করা ও হলের মিনি গণরুমে অবস্থান করা বৈধ ছাত্রদের আসন নিশ্চিত করা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মীর মশাররফ হোসেন হল থেকে ছাত্রলীগের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী বের হয়ে আসেন। তারা অনশনরত শিক্ষার্থীকে গালাগাল করার পাশাপাশি মারধর শুরু করেন। একপর্যায়ে তার বিছানা-বালিশে আগুন লাগানোর চেষ্টা করে। এরপর অনশনরত প্রত্যয়কে জোর করে অ্যাম্বুলেন্সে উঠিয়ে চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তখন বাধা দিতে গেলে জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচীকে মারধর করা হয়। এ ছাড়া মাশিয়াত সৃষ্টি, মনিকা নকরেক এবং শারমিন সুর নামে তিন নারী শিক্ষার্থীকেও হেনস্তা করা হয়।
হামলার প্রতিবাদে ওইদিনই রাত ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। তারা জাবি উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের বাসভবনের সামনে গিয়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। সেখানে পাঁচ দফা দাবি জানান বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবিগুলো হলো মীর মশাররফ হোসেন হলে আসন দখল করে থাকা সাবেক ছাত্রদের রাতের মধ্যে হল ত্যাগ করতে বাধ্য করা, উপাচার্যকে বাদী হয়ে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা, প্রক্টর ও প্রাধ্যক্ষকে অব্যাহতি, গণরুম ও গেস্টরুম সংস্কৃতির অবসান ঘটানো এবং প্রথমবর্ষ থেকেই প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য হলে আসনের ব্যবস্থা করা। এসব দাবি পূরণে রাত ২টার দিকে উপাচার্যের আশ্বাসে বিক্ষোভ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে গতকাল বুধবার বেলা ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা কমিটির জরুরি সভা হয়। সেখানে হামলায় জড়িত দুই শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয় এবং বাকিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এসব সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য বেলা ৩টায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। এ সময় উপাচার্য আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন। দাবি পূরণের জন্য আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কাছে সাত দিন সময় চাওয়া হয়। তবে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এক ঘণ্টা সময় দেন। এ সময়ের মধ্যে দাবি না মানলে প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করার ঘোষণা দেন তারা। কিছুক্ষণ পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। তবে পেছনের দরজা দিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম অন্য শিক্ষকদের নিয়ে বের হয়ে যান।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ‘ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে আন্দোলনকারীদের কাছে সাত দিন সময় চেয়েছি, কিন্তু তারা এ সময় দিতে নারাজ। শৃঙ্খলা কমিটিতে আলোচনা হয়েছে। দুজন সাবেক শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।’
তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তারা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করছে প্রশাসন।
আগামী ১২ জুন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আছে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন। আর এই নির্বাচনকে ঘিরে মেয়র প্রার্থীসহ কাউন্সিলর, সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা বিরতিহীনভাবে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। নগরীর পাড়া-মহল্লায়, অলিতে-গলিতে চলছে মাইকিং, গণসংযোগ। জমজমাট পরিবেশের মধ্যেই নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর একটি মন্তব্যে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে নির্বাচনী পরিবেশ। এ ঘটনায় গতকাল বুধবার সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন ইসলামী আন্দোলনের নেতা।
২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী শরীফ মো. আনিছুর রহমান গত ৪ জুন নিজ বাসভবনে বসে সাংবাদিক এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের উপস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় তিনি অভিযোগ করেন, ঢাকায় বসে ‘হাত পাখাকে ৩ কোটি টাকা দিছে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এবং তার ছেলে সাদিক আবদুল্লাহ।’ আরও বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাতকে হারাতেই এই ষড়যন্ত্র।’ এ ঘটনায় শরীফ মোহাম্মদ আনিসুর রহমানকে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। ওই দিন মধ্যরাতে বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তবে এ ব্যাপারে কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে এ বক্তব্য নিয়ে বর্তমানে ইসলামী আন্দোলন নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। গতকাল বুধবার কাউন্সিলর প্রার্থী শরীফ মো. আনিছুর রহমানের বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন ইসলামী আন্দোলনের বরিশাল মহানগর শাখার ছাত্র ও যুবকবিষয়ক সম্পাদক আরিফুর রহমান।
ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. গোলাম ফারুক মামলাটি আমলে নিয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়টি গতকাল বিকেলে নিশ্চিত করেছেন সাইবার ট্রাইবুনালের বেঞ্চ সহকারী নুরুল ইসলাম কাকন।
এ বিষয়ে আরিফুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দলের এবং প্রার্থীর যে ক্লিন ইমেজ রয়েছে তা নষ্ট করার জন্য একটি মহল পাঁয়তারা করছে। আমাদের দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার চেষ্টা চলছে। বরিশাল সিটি নির্বাচনে হাত পাখার মেয়র পদপ্রার্থী ফয়জুল করিমকে নিয়ে মিথ্যা অপবাদ ছড়াচ্ছে। এতে বোঝা যায় আমরা বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে আছি। সেটাকে নষ্ট করার জন্য যারা চেষ্টা করছে এটার বিরুদ্ধে আমরা অভিযোগ করেছি। আমরা আশা করছি এই ব্যাপারে সুষ্ঠু ন্যায়বিচার পাব।
বরিশালে ‘নৌকা’র ইশতেহার : পঁয়ত্রিশটি খাতে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন বরিশাল সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত)। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে এবং নগর পরিকল্পনাবিদ ও স্থপতিদের সহায়তা নিয়ে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করে উন্নত ও নাগরিকবান্ধব বরিশাল নগরী গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেন তিনি।
গতকাল বুধবার দুপুর ১২টায় ক্রাউন কনভেনশন হলে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত। আগামী ১২ জুন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
হোল্ডিং ট্যাক্স পুনর্মূল্যায়ন, অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্স প্রদান, বাড়ির প্ল্যান অনুমোদনে সহজ প্রক্রিয়া অবলম্বন, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, ড্রেনেজ ব্যবস্থার সংস্কারসহ নতুন ড্রেন নির্মাণ, খাল খনন, বর্ধিত এলাকায় পানি ও বিদ্যুতের সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ গ্রহণ, রাস্তাঘাটের সংস্কার, ময়লা-আবর্জনা যথাসময়ে অপসারণ, পচনশীল বর্জ্য থেকে জৈব সার ও বায়োগ্যাস উৎপাদন এবং মশক নিধন প্রভৃতি ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন তিনি তার নির্বাচনী ইশতেহারে।
খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, ‘পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় লাইন চার্জ সহনীয় মাত্রায় রেখে শতভাগ বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হবে; রিকশা ও ব্যাটারিচালিত যানবাহন চলাচলে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হবে; নগরের প্রতিটি সড়কে পর্যাপ্ত সড়ক বাতি স্থাপন করা হবে; সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি ও মাদকমুক্ত নগর গড়ে তোলা হবে এবং পরিকল্পিতভাবে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে বরিশাল নগরীকে সবুজ নগরী (গ্রিন সিটি) হিসেবে গড়ে তোলা হবে।’
জবাবদিহি নিশ্চিতকরণের অঙ্গীকার ব্যক্ত করে খোকন বলেন, “নিয়মিত ‘জনতার মুখোমুখি মেয়র’ শীর্ষক মতবিনিময় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ওয়ার্ডভিত্তিক সমস্যার সমাধান করা হবে, ‘সবার বরিশাল’ শীর্ষক অ্যাপের মাধ্যমে নগরবাসীর কাছ থেকে নাগরিক সমস্যা বিষয়ক অভিযোগ গ্রহণ করা হবে এবং সার্বক্ষণিক তদারকির মাধ্যমে সেসবের সমাধান করা হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।”
বিভিন্ন কলোনিবাসীর নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘হকারদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে, তারুণ্যকে অনুপ্রাণিত করতে প্রতিটি এলাকায় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন করা হবে, বরিশাল নগরীতে গ্যাস-সংযোগ প্রদানে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার নিশ্চিত করে অসাম্প্রদায়িক নগরী প্রতিষ্ঠা করা হবে, তরুণ সমাজের জন্য আইটি নগরী প্রতিষ্ঠাসহ ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে।’ বরিশালকে শিল্প-বাণিজ্যসমৃদ্ধ ও পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেন খোকন সেরনিয়াবাত।
ইশতেহার ঘোষণার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আফজালুল করিম, মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহামুদুল হক খান মামুন, অ্যাডভোকেট লস্কর নুরুল হক, অ্যাডভোকেট আনিস উদ্দিন আহমেদ শহীদ প্রমুখ।
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া হচ্ছে না। তার পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদনের ওপর গতকাল রবিবার আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে বলেছে, সাজা স্থগিত থাকাবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই।
যদি যেতে হয়, তাহলে সাজা স্থগিতের আদেশ বাতিল করতে হবে। কিন্তু সেটা করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তবে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি।
আইন মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপি বলছে, আন্দোলনের মাধ্যমেই সুরাহার পথ বের করতে হবে। সরকারের এমন নেতিবাচক সিদ্ধান্তের পর এখন পর্যন্ত কোনো কর্মসূচি দেয়নি দলটি। তবে এই ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি এক দফার আন্দোলনের সঙ্গে যোগ হতে পারে বলে জানা গেছে।
৫৩ দিন ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া। বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও দলীয় নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা গুরুতর। বিদেশে নেওয়া ছাড়া তার উন্নত চিকিৎসা সম্ভব নয়। সম্প্রতি বিএনপির চেয়ারপারসনকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ চেয়ে তার ভাই শামীম এস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করেন। এতে মতামত দিতে আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এর ধারাবাহিকতায় আইন মন্ত্রণালয় এতে মতামত দেয়। এ বিষয়ে গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়টি উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেছেন, তার সাময়িক মুক্তির আদেশটা বাতিল করে তাকে (খালেদা জিয়া) কারাগারে নেওয়া হলে তিনি আদালতে যেতে পারেন। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া বাসায় চিকিৎসা নেবেন এবং বিদেশে যেতে পারবেন না এমন দুটো শর্ত সাপেক্ষে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে দন্ডাদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। দরখাস্তটা নিষ্পত্তি করা হয়েছিল। ইতিমধ্যে আটবার দন্ড স্থগিত করা হয়েছে।’
আনিসুল হক বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় কোনো দরখাস্ত যদি একবার নিষ্পত্তি করা হয়, সেই নিষ্পত্তিকৃত দরখাস্ত পুনর্বিবেচনা করার কোনো সুযোগ আইনে থাকে না। আমরা ৪০১ ধারার উপধারা ১, ২, ৩, ৪, ৫ ও ৬ ব্যাখ্যা করে মতামত পাঠিয়েছি। আমাদের মতামত হলো, ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে যে দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হয়েছে, সেটা অতীত এবং মীমাংসিত। এটা আর খোলার কোনো উপায় নেই।’
এক প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তাকে (খালেদা জিয়া) সাজা স্থগিত রেখে যে শর্তযুক্ত মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, সেটা বাতিল করে তারপর পুনরায় বিবেচনা করার সুযোগ থাকলে সেটা করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এই উপমহাদেশে ৪০১ ধারার ক্ষমতা যখন প্রয়োগ করে, তখন এটি আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যায় না বলে সিদ্ধান্তের নজির আছে। সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এখন যে আদেশটা আছে, সেটা যদি বাতিল করা হয়, বাতিল করে তাকে (খালেদা জিয়া) যদি আবার কারাগারে নেওয়া হয়, তাহলে তিনি আদালতে যেতে পারেন। কিন্তু এ অবস্থায় আদালতে যেতে পারবেন না।’ খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের বিষয়টি বাতিল করা হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা অমানবিক হবে, বাতিল করব না।’
আইনমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এক বার্তায় বলেন, ‘আজকের এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে, দেশে আইনের শাসন নেই। প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে এক ভয়ংকর তামাশা করা হচ্ছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, নির্বাহী বিভাগ চাইলেই কাউকে মুক্তি দিতে পারে।’
খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি না দেওয়ায় বিএনপি কী এখন ভাবছে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আন্দোলনের মাধ্যমেই সুরাহার পথ বের করতে হবে।’
আর গতকাল সংবাদ সম্মেলনে দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘এই সিদ্ধান্ত পূর্বপরিকল্পিত ও গভীর নীলনকশার অংশ। মানবতাবিরোধী ও সরকারের বর্বর ইচ্ছা পূরণের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। এই অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জনগণ হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না।’
দলটির নেতাদের অভিযোগ, বিএনপির চেয়ারপারসনের বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদন আইনগতভাবে বিবেচনা না করে, রাজনৈতিকভাবে বিবেচনা করা হয়েছে। ফলে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি এখন সরকারের বিদায়ের ওপর নির্ভর করছে। আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বিদায় করতে না পারলে বিএনপিপ্রধানের মুক্তি এবং বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দরজা খুলবে না। তাই এখন আন্দোলনের মাধ্যমেই এই ইস্যুর সুরাহা করতে চায় দলটি।
কায়সার কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়া এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন, সেখানে বলা হয়েছে, তাকে “দেশে চিকিৎসা নিতে হবে”, তার বদলে “দেশে বা বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারবেন” বলাই যথেষ্ট। কিন্তু দেশে চিকিৎসা গ্রহণের শর্তারোপ করা হলে তা যে চিকিৎসার বিবেচনায় না করে রাজনীতির বিবেচনায় করা হবে, সেটা বোঝার মতো বুদ্ধি সাধারণ মানুষের আছে।’
অসুস্থতার কারণে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের মার্চে করোনার সময় টানা দুই বছর কারাভোগের পর সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় ফিরেছিলেন খালেদা জিয়া। পরে এ পর্যন্ত তার মুক্তির মেয়াদ আটবার বাড়িয়েছে সরকার।
এরই মধ্যে অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় তাকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ দিতে পরিবারের পক্ষে ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার ২৫ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। এ বিষয়ে আইনি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে আবেদনটি পাঠায়।
বিএনপিপ্রধানকে নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন ছিল ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি সরকার ইতিবাচকভাবে দেখতে পারে’। কিন্তু সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ‘বিদেশে যাওয়ার আবেদন করতে হলে খালেদা জিয়াকে কারাগারে ফেরত গিয়ে করতে হবে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের পর সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় এবারও ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত আসবে না। গত শনিবার এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এ শঙ্কাই প্রকাশ করেছিলেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনা আছে, যেকোনো মূল্যে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচন করার ব্যাপারে সরকার মরিয়া। সে কারণে হয়তো খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়টি ঝুঁলিয়ে রাখতে চাইছে এমনটাই মনে করছে সরকারবিরোধীরা। বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা দিলেই সরকারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলেও বিরোধী নেতাদের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে। তবে শর্ত দিয়ে দেশের বাইরে চিকিৎসার বিষয়ে দল যাতে সম্মত না হয়, সে কথাই নেতাদের বলে রেখেছেন খালেদা জিয়া।
বিএনপির হাইকমান্ড মনে করছেন, এ অবস্থায় চলমান এক দফার আন্দোলনে খালেদা জিয়ার মুক্তি বিষয়টি থাকলেও সেটাকে আরও জোরালোভাবে সম্পৃক্ত করতে হবে; যাতে সরকারবিরোধী আন্দোলন বড় ধরনের মোড় নেয়।
জানা গেছে, এই ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে দলটি। আজ সোমবার রাতে দলটির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক রয়েছে। সূত্র বলছে, জোটগত ছাড়াও দলীয়ভাবেও কর্মসূচি আসতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খালেদা জিয়ার এক চিকিৎসক জানান, হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় তার কেবিনে এক্স-রে মেশিন নেওয়া হয়েছিল গতকাল ভোরে। শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণে না এলে সিসিইউতে নেওয়ার পরামর্শ ছিল। দুপুরে তার ইসিজি ও ইকো ডায়াগ্রাম করানো হয়েছে। ফুসফুসের পানি অপসারণের জন্য তার ডান পাশে যে ক্যাথেটার লাগানো ছিল, সেটা আপাতত খুলে ফেলা হয়েছে।
লিভার জটিলতা ছাড়াও ৭৮ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ফুসফুস, কিডনি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। গত ৯ আগস্ট ফিরোজায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে দলীয় মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) সেটআপে কেবিনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছে।
জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ‘ওনার লিভার প্রতিস্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। সে জন্য তাকে দ্রুত বিদেশে উন্নত মাল্টিডিসিপ্লিনারি সেন্টারে পাঠানো দরকার।’
অপেক্ষা আর মাত্র ৩ দিনের। তারপরই শুরু হয়ে যাবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ইংল্যান্ডের চার বছরের রাজত্ব আরও চার বছর টিকিয়ে রাখার আর বাকিদের সেই মুকুট কেড়ে নেওয়ার লড়াই শুরু হবে গতবারের দুই ফাইনালিস্টের লড়াই দিয়েই।
শাহরুখ খানকে দিয়ে প্রোমো আর রণবীর সিংকে দিয়ে থিম সং, আইসিসি জানান দিয়েছে ক্রিকেটে বলিউডি আবেগের মিশেল ভালোই থাকবে। কিং খানের ‘জাওয়ান’ কাঁপাচ্ছে পর্দা, কাটতি বাড়ছে বক্স অফিসে; বিশ্বকাপে আইসিসির পকেট ভরবে তো?
প্রস্তুতি বলছে, ভরবে। উইকেটে হবে রান উৎসব, লড়াই হবে ধুন্ধুমার। তাতেই ২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপ হবে এক ব্লকবাস্টার মেগা হিট।
মাস তিনেক আগে, বিশ্বকাপের মূলপর্বের ম্যাচগুলো যে ১০ ভেন্যুতে আয়োজন করা হবে সেই ভেন্যুগুলোর কিউরেটরদের সঙ্গে বসেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান কিউরেটর। সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছেন বিশ্বকাপের একটাই মন্ত্র, রান চাই।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে, ভারত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যে ৩ ওয়ানডের সিরিজ খেলেছে সেই ম্যাচগুলো যদিও বিশ্বকাপের ভেন্যুতে হয়নি তবে সেই সব ম্যাচেও রানের বন্যা বয়েছে।
প্রথম দুটো ওয়ানডেতে বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মাদের ছাড়াই অস্ট্রেলিয়ার করা ২৭৬ রান অনায়াসে তাড়া করে ৫ উইকেটে জিতেছে ভারত। পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের ঠেঙিয়ে তুলেছেন ৩৯৯ রান। তিন নম্বর ম্যাচে আবার অস্ট্রেলিয়া করেছে ৩৫২ রান, যা তাড়া করে ভারতও গিয়েছিল ২৮৬ অবধি।
উদ্বোধনী ম্যাচ হবে গুজরাতের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে। এখানে সবশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয় গত ১ ফেব্রুয়ারি, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি। ম্যাচে শুভমান গিল করেন সেঞ্চুরি, ভারত করে ৪ উইকেটে ২৩৪ রান আর জবাবে নিউজিল্যান্ড অলআউট হয় ৬৬ রানে।
বোঝাই যাচ্ছে, উইকেটের ধরন বুঝে ব্যাট করতে পারলে ৫০ ওভারে এখানে রানবন্যা হবে। বিশ্বকাপে ভারত-অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি হবে চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে। দুই দল এখানে মুখোমুখি হয়েছে বহুবার, পোশাকের রঙ কখনো রঙিন কিংবা কখনো সাদা হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজ কমেনি। এই মাঠে অস্ট্রেলিয়া ২৬৯ রান করে ভারতকে ২১ রানে হারিয়েছে সবশেষ ম্যাচে।
আইপিএল চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সুপার কিংসের ঘরের মাঠে সবশেষ মৌসুমে ধোনির ‘ইয়েলো আর্মি’ ৮ ম্যাচ খেলে ২০০ রানের ওপরে করেছে দুইবার, একবার জিতেছে অন্যবার হেরেছে। তবে দুই ইনিংসেই ২০০’র বেশি রান হয়েছে দুটো ম্যাচেই। অর্থাৎ চাইলে চেন্নাইকেও ব্যাটিং স্বর্গে পরিণত করা সম্ভব।
বিশ্বকাপের আগে দারুণ ছন্দে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ হারার পর টানা তিন ওয়ানডে জিতে সিরিজ তো নিশ্চিত করেছেই, টানা তিন ম্যাচে ৩০০’র ওপর রান করেছে। চতুর্থ ওয়ানডেতে তো ৪০০ পার করেছে প্রোটিয়ারা। ব্যাটিং উইকেটে তারাও যে কোনো প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিতে পারে। হেনরিক ক্লাসেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাত্র ৮৩ বলে খেলেছেন ১৭৪ রানের ইনিংস। বিধ্বংসী রূপে ফিরছেন ডেভিড মিলারও।
প্রোটিয়ারা প্রথম ম্যাচ খেলবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, দিল্লির অরুন জেটলি স্টেডিয়ামে। সেখানে অবশ্য সবশেষ হয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক ম্যাচেও খেলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচে তারা অলআউট হয়েছিল মাত্র ৯৯ রানে। দিল্লির মাঠটা হয়তো খানিকটা স্পিনারদের দিকেই ঝুঁকবে, তবে অন্য মাঠগুলোতে প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের রান উৎসবে মেতে উঠতে দেখার সম্ভাবনা জোরালো। তাই অনেক সাবেক ক্রিকেটারই প্রোটিয়াদের দেখছেন শেষ চারে।
বিশ্বকাপের আগে ক্লাসেন ছাড়াও ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস খেলেছেন ১৮২ রানের ইনিংস, দারুণ ছন্দে ইংল্যান্ডের ডাভিড মালানও। তবে সেরা ছন্দে নিঃসন্দেহে শুভমান গিল। সবশেষ ৫ ইনিংসে দুটো শতরান আর একটা হাফসেঞ্চুরি। নিউজিল্যান্ডের ড্যারিল মিচেলও আছেন দারুণ ছন্দে। দুটো হাফসেঞ্চুরি আর একটা সেঞ্চুরি সবশেষ ৫ ইনিংসে। হায়দ্রাবাদে বিশ্বকাপের অফিশিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তানের ৩৪৫ রান কিউইরা তাড়া করেছে ৩৮ বল হাতে রেখে।
বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল মনে করেন, এই বারের বিশ্বকাপে রানবন্যায় বোলারদের জন্য কাজটা হবে কঠিন। দেশ রূপান্তরকে আশরাফুল বলেন, ‘আমাদের পেসাররা গত এক দেড় বছর ধরে খুবই ভালো করছে। তবে যেহেতু ভারতের মাটিতে খেলা, আমরা দেখেছি যে সাড়ে ৩০০’র বেশি রান হচ্ছে প্রতিটা ম্যাচে। কেউ যদি ভালো না করে, তাকে মনে রাখতে হবে যে টুর্নামেন্টে পরের ম্যাচে ফিরে আসতে হবে। একজনের দিন খারাপ যেতেই পারে, কোনো ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান উঠেই যেতে পারে। ৯টা ম্যাচের ভেতর ৪-৫টা ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান হতে পারে। তাই বোলারদের ফিরে আসার মানসিকতা থাকতে হবে।’
বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমুল আবেদীন ফাহিমও বলেছেন যে দেড় মাসের আসরে প্রস্তুত থাকতে হবে যে কোনো কিছুর জন্যই, ‘দেড় মাসের আসর, ৯টা ম্যাচ এই সময়ে খেলতে হবে বা তারও বেশি। অনেক উত্থান-পতন হবে। যে কোনো কিছুর জন্যই তৈরি থাকতে হবে।’
রান উৎসবের বিশ্বকাপ যে হতে যাচ্ছে, তার সব রসদই মজুদ। মাঠগুলোকে করা হয়েছে ব্যাটিং স্বর্গ, বিশ্বকাপে আসার আগে সেরা সেরা ব্যাটসম্যানরাও আছেন ছন্দে। শুধু প্রশ্ন এটাই, রান উৎসবের এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে রান করবেন কে? সাম্প্রতিক সময়ের ব্যাটিংয়ের ছবিটা যে মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়।
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আবাসন এখনো অধরা। দেশের দরিদ্র মানুষের একাংশ ভাসমান তারা ফুটপাত, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে মানবেতর জীবন কাটায়। আর বড় অংশটি বস্তিতে ও নিম্নমানের পরিবেশে দিনাতিপাত করছে। সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে স্বল্প আয়ের মানুষ বাসযোগ্য আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
বছরের পর বছর আবাসন নিয়ে নৈরাজ্য চললেও সরকারের কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বিশ্ব বসতি দিবস পালন করছে বাংলাদেশ। এ দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি’। দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা বাণী দিয়েছেন। দেশজুড়ে দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। র্যালি, সেমিনার, ব্যানার ও ফেস্টুনের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। টেলিভিশনে স্ক্রলও প্রচার করা হচ্ছে।
‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’ অনুযায়ী, দেশে ভাসমান মানুষের সংখ্যা ২২ হাজার ১১৯। এ তালিকায় রয়েছে যারা রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, মাজার, ফুটপাত, সিঁড়ি, ওভারব্রিজের নিচে, লঞ্চ টার্মিনাল, ফেরিঘাট, মার্কেটের বারান্দায় দিন কাটান। আর বস্তিতে বসবাস করছে ১৮ লাখ ৪৮৬ জন। তারা মূলত শহর ও উপশহর এলাকায় টিনের ঘর, সেমিপাকা ঘর বা ঘিঞ্জি পাকা ঘরে বাস করে। তবে বস্তিবাসী কারা সে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০১৬ সালে সরকার আবাসন নীতিমালা করেছে। আবাসন উন্নয়ন তহবিল গঠনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। আবাসন সংকট নিরসন করতে হলে সরকারকে আবাসন তহবিল করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বস্তিবাসী, নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত কারা তার সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে হবে। না হলে বোঝা যাবে না কত মানুষ বস্তিতে থাকে।’
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট কামাল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে আবাসন সংকট কাটছে না। স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে আবাসন।’
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করে ৯ লাখ গৃহহীন মানুষকে চিহ্নিত করে। ইতিমধ্যে আট লাখ মানুষের গৃহের ব্যবস্থা করেছে; প্রায় ৪০ লাখ মানুষের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। বাকিদের জন্যও শেখ হাসিনা ব্যবস্থা করবেন। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্যও আবাসনের ব্যবস্থার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা তার সৈনিক হিসেবে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
জানা যায়, বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার সবার জন্য আবাসন। অঙ্গীকার পূরণে সরকার নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সারা দেশে ৩০টি আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, নোয়াখালী, যশোর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, পাবনা, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, মাগুরা, শরীয়তপুর, নড়াইল, খুলনা, মৌলভীবাজার, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এসব প্রকল্পে ৬ হাজার ৪৩২টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হয়েছে। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ২৭টি ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ১৪টি প্রকল্প রয়েছে। এসব প্রকল্পে ৫ হাজার ৯৩০টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হবে। শেরপুর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, হবিগঞ্জ, সিলেট, ঝিনাইদহ, ঝালকাঠি, মাদারীপুর, পিরোজপুর, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীতে ১৩টি প্রকল্পের মাধ্যমে ১ হাজার ৯৩৫টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রাজউক সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় রাজউক পূর্বাচল, ঝিলমিল, উত্তরা প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় আবাসন প্রকল্পে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের ফ্ল্যাটগুলো উচ্চমূল্যের কারণে নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। পূর্বাচল, ঝিলমিল ও উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্প গ্রহণ করছে সরকার। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনেও বিভিন্ন সংস্থা আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন শহরে বসবাসরত সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সম্পদশালী ব্যক্তিরা। যাদের অনেক ফ্ল্যাট আছে তারা আরও ফ্ল্যাট কিনছেন। কিন্তু বাস্তুহারা, দরিদ্র, নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত সরকারি এসব আবাসনের সুবিধা পাচ্ছেন না। অল্প দামে জমি অধিগ্রহণ করে সরকার আবাসন প্রকল্প তৈরি করে যাদের নামে বরাদ্দ দিচ্ছে তারা রাতারাতি কোটিপতি বনে যাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে জমির মালিক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত।
জাতিসংঘ ১৯৮৫ সালে বিশ্ব বসতি দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৮৬ সাল থেকে সারা বিশে^ অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার এ দিবসটি পালিত হয়।
সুরের মূর্চ্ছনায় মোহাচ্ছন্ন শ্রোতারা হারিয়ে যাবেন। তারপর নৃত্যের তালে মেতে উঠবে আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি ক্রিকেট স্টেডিয়াম। আগামী বুধবার (৪ অক্টোবর) বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। আয়োজনকে বর্ণাঢ্য করে তুলতে এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
এবারের বিশ্বকাপ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কী থাকছে, এ নিয়ে আয়োজক ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) এখনো চুপ। দর্শকদের চমকে দিতে এমন গোপনীয়তার চেষ্টা অবশ্য প্রায় সব আয়োজকেরাই করে থাকেন।
তবে ভারতীয় গণমাধ্যম পিটিসি পাঞ্জাবের সূত্রে এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইনসাইডস্পোর্ট।
খবরে বলা হয়, বিশ্বকাপের উদ্বোধনী বিভিন্ন পরিবেশনায় থাকবেন বেশ কয়েকজন বলিউড অভিনেতা–অভিনেত্রী ও গায়ক–গায়িকা। এর মধ্যে গান পরিবেশনে থাকবেন কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী আশা ভোসলে, গায়ক ও সংগীত পরিচালক শঙ্কর মহাদেভান, কণ্ঠশিল্পী শ্রেয়া ঘোষাল ও অরিজিত সিং।
নাচের পরিবেশনায় দেখা যাবে রণবীর সিং ও তামান্না ভাটিয়াকে। রণবীর বিশ্বকাপের অফিশিয়াল থিম সংয়েও অংশ নিয়েছিলেন।
নাচ–গানের পাশাপাশি বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তুলে ধরা হবে ভারতের ইতিহাস–ঐতিহ্য ও ক্রিকেট উন্মাদনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে খেলোয়াড়দের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ১০ দলের অধিনায়ক। এ ছাড়া আয়োজক বিসিসিআই ও আইসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তো থাকবেনই।
দেশের বিদেশি মুদ্রা আয়ের অন্যতম হাতিয়ার প্রবাসী আয়ে বড় ধরনের ধস নেমেছে। সদ্য সমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাসে বিদেশে অবস্থানকারী প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈধপথে ও ব্যাংকের মাধ্যমে মাত্র ১৩৪ কোটি ডলারের বিদেশি মুদ্রার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে। গত সাড়ে তিন বছরে এটি সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স। ৪১ মাস আগে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে এর চেয়ে কম ১০৯ কোটি ডলার সমপরিমাণের রেমিট্যান্স এসেছিল। রেমিট্যান্স-সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, ব্যাংকিং চ্যানেলের চেয়ে খোলা বাজারে ডলারের দামের ব্যবধান বেশি হলে হুন্ডিতে লেনদেন বেড়ে যায়। আর যখন হুন্ডির চাহিদা বাড়ে তখন রেমিট্যান্স কমে যায়। গত মাসে ব্যাংকের চেয়ে খোলা বাজারে ডলারের দাম ৬ থেকে ৭ টাকা বেশি ছিল। তাই বেশি লাভের আশায় বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন প্রবাসীরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, সদ্যবিদায়ী সেপ্টেম্বর মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে এসেছে ১৩৪ কোটি ৩৬ লাখ ডলার রেমিট্যান্স। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় ১৪ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। এ অঙ্ক আগের বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় ১৯ কোটি ৫৯ লাখ বা ১২ দশমিক ৭২ শতাংশ কম। গত বছর সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৫৩ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। এ ছাড়া গত আগস্টের তুলনায়ও সেপ্টেম্বরে প্রবাসী আয় কমেছে ২৫ কোটি ৫৮ লাখ ডলার বা প্রায় ১৬ শতাংশ। আগস্টে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ডলার।
প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১১ কোটি ৮৬ লাখ ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ৩ কোটি ৫১ লাখ ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১১৮ কোটি ৪৮ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৫০ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স।
আলোচিত সময়ে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। ব্যাংকটি গত মাসে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করেছে ৩৪ কোটি ১০ লাখ ডলারের। এর পরের অবস্থানে থাকা ট্রাস্ট ব্যাংক ১১ কোটি এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ১০ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ১৬১ কোটি ৬ লাখ মার্কিন ডলার। আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ হয়েছিল। যার পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। ডলার সংকট ও বাজার স্থিতিশীলতার জন্য রপ্তানি ও প্রবাসী আয় এবং আমদানি দায় পরিশোধের ক্ষেত্রে ডলারের দাম নির্ধারণ করে আসছে ব্যাংকগুলো। এখন প্রবাসী আয়ে প্রতি ডলারে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা দাম দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। রপ্তানি বিল নগদায়নে প্রতি ডলারের বিপরীতে দাম দেওয়া হচ্ছে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। আর আমদানি ও আন্তঃব্যাংক লেনদেনে দেওয়া হচ্ছে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা।
তবে কার্ব মার্কেট বা খোলা বাজারে নগদ এক ডলার কিনতে গ্রাহকদের গুনতে হচ্ছে ১১৭ থেকে ১১৮ টাকা। চিকিৎসা, শিক্ষা বা ভ্রমণের জন্য যারা বিদেশে যাচ্ছেন, তাদের নগদ প্রতি ডলার কিনতে দেশি মুদ্রা খরচ করতে হচ্ছে সর্বোচ্চ ১১৮ টাকা পর্যন্ত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নির্বাচনী বছরে সাধারণত রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে। এটা সবসময়ই হয়। এর মূল কারণ অর্থ পাচার। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থ পাচার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে পাচার ঠেকানো কঠিন। এজন্য সব সংস্থাকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
তবে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে টাকা পাচার। নির্বাচনী বছর হওয়ায় রাজনৈতিক কারণেই রেমিট্যান্স কমছে। হুন্ডির মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স আসছে। আর এ মাধ্যমেই দেশের টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকে কোনোভাবেই রিজার্ভ ধরে রাখতে পারছে না। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আমদানি ব্যয় মেটানোসহ ডলার বিক্রির কারণে অব্যাহত রয়েছে এ সূচক। এতে বড় ধরনের চাপের মুখে রয়েছে আর্থিক খাতের এ নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, বর্তমানে দেশের রিজার্ভের পরিমাণ (২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) ২ হাজার ৭০৫ কোটি ডলার। কিন্তু আন্তর্জাতিক নিয়মে আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম৬ অনুযায়ী, সবশেষ ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকৃত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়ায় ২ হাজার ১১৫ কোটি ডলার, যা দিয়ে তিন থেকে সাড়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটাতে পারবে বাংলাদেশ। যদিও নিট রিজার্ভ হিসাব করলে তা আরও অনেক কমে আসবে।
সারা বিশ্বে প্রচলিত ও বহুলব্যবহৃত আইএমএফের ব্যালান্স অব পেমেন্টস অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ম্যানুয়াল (বিপিএম৬) অনুযায়ী, রিজার্ভ গণনায় বাংলাদেশ ব্যাংক গঠিত বিভিন্ন তহবিলের পাশাপাশি বিমানের জন্য প্রদত্ত ঋণ গ্যারান্টি, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে মুদ্রা বিনিময়, পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষকে দেওয়া ঋণ, ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকে আমানত এবং নির্দিষ্ট গ্রেডের নিচে থাকা সিকিউরিটিতে বিনিয়োগের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত নয়। এসব খাতে বর্তমানে রিজার্ভ থেকে ৫৯০ কোটি ডলার দেওয়া আছে, যা বাদ দিয়ে হিসাব করা হয়েছে।
প্রবাসী আয়ে নেতিবাচক সংবাদ এলেও রপ্তানিতে কিছুটা সুখবর এসেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৬৮ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি আয় এসেছিল ১ হাজার ২৫০ কোটি ডলারের বেশি। অর্থাৎ শুধু পোশাকে ভর করে দেশের রপ্তানি আয় বেড়েছে ৯ দশমিক ৫১ শতাংশ। গতকাল রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশের রপ্তানি আয়ের চিত্র গত বছরের তুলনায় কিছুটা ভালো। যদিও রপ্তানিতে ভরসা শুধু পোশাক খাত। একক মাস হিসেবে সেপ্টেম্বরে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১০ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৩৯৮ কোটি ডলারের। কিন্তু সেপ্টেম্বর শেষে আয় দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৬৮ কোটি ডলার। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ দশমিক ১৬ শতাংশ কম রপ্তানি আয় এসেছে। যদিও গত বছরের একই সময়ের চেয়ে রপ্তানি আয় ৯ দশমিক ৫১ শতাংশ বেড়েছে।
রপ্তানিতে এখনো সবচেয়ে বড় ভরসা পোশাক খাত। সেপ্টেম্বর শেষে এ খাতের রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ১৬১ কোটি ডলার। গত বছরের একই সময়ে এ খাতের রপ্তানি আয় হয়েছিল ১ হাজার ২৭ কোটি ডলার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১৩ দশমিক ০৭ শতাংশ।
তবে অন্য খাতগুলোর রপ্তানি আয়ে তেমন কোনো ইতিবাচক সাড়া নেই। এক সময়ের সোনালি আঁশ পাটে রপ্তানি ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ২২ কোটি ডলারে। সম্ভাবনায় থাকা চামড়া খাতের রপ্তানি ১৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ২৬ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। রপ্তানিতে অবদান রাখা হোম টেক্সটাইলের রপ্তানি ৪৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ কোটি ডলারে। কৃষি খাতের রপ্তানিও ৫ দশমিক ২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ২৫ কোটি ৭৪ লাখ ডলারে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোন দেশে ভালো চিকিৎসা হতে পারে তার খোঁজ নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা জার্মানিতে হতে পারে কিনা জানতে চেয়েছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। মঙ্গলবার জানতে চাইলে ঢাকায় জার্মানির সিডিএ জান রল্ফ জানোস্কি বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মিসেস জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার ধরন সম্পর্কে জেনেছি। তার ভালো চিকিৎসা বিশ্বের খুব কম দেশে সম্ভব। জার্মানিতে এসব সমস্যার খুব ভালো চিকিৎসা আছে। সরকারের অনুমোদন পেলে তিনি জার্মানিতে চিকিৎসা নিতে পারেন।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিডনির কর্মক্ষমতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ কারণে কয়েকবার তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড মনে করে সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কা মুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড রিকমেন্ডেশনে বলেছেন।
এর আগে ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় ৫ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। এ অবস্থায় তাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই সরকার সেসব আমলে না নিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আগের মতোই লিভারের জটিলতার পাশাপাশি ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে শঙ্কিত তার চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছে। শরীরে ক্যাথেডর লাগানো হয়েছে। আগে যেখানে দুই-তিন দিন পরপর পানি বের করা হয়েছে, এখন প্রতিদিনই পানি বের করতে হচ্ছে। তার কেবিনে মঙ্গলবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। লিভার সিরোসিসের সঙ্গে কিডনির জটিলতাও বাড়ছে। তার লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া সামনে বিকল্প নেই। এর জন্য খুব দ্রুত উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠানো দরকার।