
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘ইভিএম নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো ভোট দেওয়ার সবচেয়ে নিরাপদ পদ্ধতি ইভিএম। এতে কোনো জিন, ভূত, প্রেত নেই। অনেক ওঝা ঝাড়-ফুঁক করেও কিছু পায়নি। ইভিএমে একজনের ভোট আরেকজনের কাছে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ইভিএমে কোনো ত্রুটি পাওয়া যায়নি। যদি কেউ ত্রুটি প্রমাণ করতে পারে, তবে আমি নিজেই এর দায়ভার নেব।’
গতকাল শনিবার সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। নগরীর মেন্দিবাগে জালালাবাদ গ্যাস অডিটোরিয়ামে এ সভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন। সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল আরও বলেছেন, ‘সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করতে নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে রয়েছে। কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার প্রার্থিতা বাতিল করা হবে। তাই আশা করি প্রার্থীরা এমন কিছু করবেন না, যাতে প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যায়।’
নগরীর ৭ নম্বর ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বাড়ির সামনে বর্তমান কাউন্সিলর, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি আফতাব হোসেন খানের সশস্ত্র মহড়ার বিষয়ে সাংবাদিকরা সিইসির কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ ঘটনা আমরা গুরুত্বসহকারে পর্যবেক্ষণ করছি। খুব দ্রুত নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে।’
সিইসি সিটি নির্বাচনে সিলেটের ভোটারদের সময়মতো কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘ভোট দিতে কোনো সমস্যা হলে জানাবেন, আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেব।’
প্রার্থীদের প্রচারণায় পলিথিন মোড়ানো পোস্টার-ব্যানার ব্যবহার প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, ‘আমরা এত নিষ্ঠুর হতে পারব না। পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে আইন আছে। তাই চাইলে পুলিশ পলিথিন মোড়ানো পোস্টার ছিঁড়ে ফেলতে পারে।’ একই সঙ্গে তিনি এ ব্যাপারে প্রার্থীদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।
সিইসি বলেন, ‘সময়ের প্রয়োজনে ভবিষ্যতে হয়তো নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার ধরনই পাল্টে যাবে। প্রচারে তথ্যপ্রযুক্তিই হবে মূল মাধ্যম। প্রার্থীরা ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচার চালাবেন।’
মতবিনিময়সভায় আরও বক্তব্য দেন নির্বাচন কমিশনের সচিব জাহাঙ্গীর আলম, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ইলিয়াছ শরীফ, সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান, সিলেটের পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মামুন, সিলেটের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফয়সল কাদের প্রমুখ।
সভায় সিসিক নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী এবং নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, আগামী ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র হলগুলোতে রয়েছে তীব্র আবাসন সংকট। নামে আবাসিক হলেও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের থাকতে হয় গাদাগাদি করে। হলভেদে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা থাকছেন এক কক্ষে ৩০ জন পর্যন্ত। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাবেক শিক্ষার্থীদের হলে আসন দখল করে থাকার কারণে সংকট বেড়েছে আরও। তাদের ভাষ্য, হলে সিট দখল করে রাখা সাবেক শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে বেশি। এ ছাড়া হলগুলোতে আসন বরাদ্দের বিষয়টিও ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না। প্রশাসন একাধিকবার দাবি পূরণের আশ্বাস দিলেও বাস্তবায়ন না করায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ছেলেদের নয়টি আবাসিক হলে ৫ হাজার ৬৪০টি আসন রয়েছে। তবে শিক্ষার্থী ধারণ ক্ষমতার চাইতেও হলগুলোতে প্রায় দেড়গুণ বেশি শিক্ষার্থী অবস্থান করছেন। এর মধ্যে শিক্ষাজীবন শেষ হওয়া পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৩ ও ৪৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন শেষ হলেও বেশিরভাগ শিক্ষার্থী এখনো হলেই থাকছেন। ৪৫তম ব্যাচেরও অনেকেই হলেই রয়েছেন। এ তালিকায় আছেন ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা। পোষ্য কোটায় ৪৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হয়েও ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন থাকছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে। অথচ নিয়ম অনুসারে পোষ্য হিসেবে তিনি হলে থাকতে পারবেন না।
বিভিন্ন হলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে অছাত্র রয়েছেন ৫০ জনের মতো, মীর মশাররফ হোসেন হলে প্রায় দেড়শ অছাত্র রয়েছে, শহীদ সালাম-বরকত হলে ৬০ থেকে ৭০ জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে দেড় শতাধিক, মওলানা ভাসানী হলে শতাধিক ও আল বেরুনী হলে অর্ধ শতাধিক অছাত্র রয়েছেন। এ ছাড়া আ ফ ম কামালউদ্দিন হলে আছে পঞ্চাশোর্ধ এবং শহীদ রফিক-জব্বার হলে দেড় শতাধিক অছাত্র অবস্থান করছেন।
গত এপ্রিলে অছাত্র হয়েও হলে থাকা শিক্ষার্থীদের একটি তালিকা প্রকাশ করে তাদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তবে সেটি বাস্তবায়ন হয়নি।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে হলে আসন দখল করে থাকার সংখ্যা বেশি। ছাত্রলীগ নেতাদের অনেকেই হলে চার আসনের একটি কক্ষ একাই দখল করে থাকেন। ছাত্রলীগের কমিটিতেও যারা গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন তাদের ছাত্রত্ব শেষ হয়ে গেছে। তবে হলে থেকেই রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
এদিকে বিভিন্ন হলে অছাত্রদের অবস্থানের কারণে চরম দুর্ভোগে পরেছেন অন্য শিক্ষার্থীরা। হলে আসন না পাওয়ায় স্বাভাবিক শিক্ষা জীবনও ব্যহত হচ্ছে বলে দাবি তাদের। তারা বলছেন, হলের গণরুমে ২৫-৩৫ জন থাকছেন। এ ছাড়া দুই ও চারজনের কক্ষে ‘মিনি গণরুমে’ ৮ থেকে ১২ জন করে থাকছেন। আবার প্রথম বর্ষের গণরুমের চিত্র আরও নাজুক। সেখানে একটি বড় কক্ষে ৩০ থেকে ৪০ জন পর্যন্ত থাকেন শিক্ষার্থীরা।
শহীদ রফিক-জব্বার হলের দর্শন বিভাগের ৫১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সজীব আহমেদ বলেন, আমরা একটি রুমে ৪৬ জন থাকি। তীব্র গরমে এখানে টিকে থাকা মুশকিল। রুমের মধ্যে সবসময় শব্দ হতেই থাকে। যে কারণে এখানে পড়াশোনার পরিবেশ নেই।
আবাসন সংকট নিরসনসহ হলে নিয়মিত সব শিক্ষার্থীর আসন নিশ্চিতের দাবিতে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে আশ্বাস দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। এমনকি বিভিন্ন সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নানাভাবে হয়রানি ও মারধরের অভিযোগও রয়েছে।
অছাত্রদের হল থেকে বের করা, গণরুম বিলুপ্ত করা ও মিনি গণরুমে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের আসন নিশ্চিত করার দাবিতে গত ৩১ মে রাত থেকে টানা আট দিন অনশন করেন ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম প্রত্যয়। অনশনরত অবস্থায় গত মঙ্গলবার রাতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাকেসহ প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের মারধর করে। পরে যদিও দাবি পূরণের ব্যাপারে হল প্রাধ্যক্ষের লিখিত আশ্বাসে অনশন ভেঙেছেন ওই শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পারভীন জলী বলেন, ২-৩ বছর আগেই মাস্টার্স শেষ করেও অনেকে হল ছাড়েননি। হল প্রশাসন সেখানে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। সাবেক ছাত্ররা হল না ছাড়লে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। আইন প্রয়োগ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আড়াই মাস আগে নোটিস দিয়েছিল সাবেক ছাত্রদের হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়ে। কিন্তু এরপর আসলেই ওই ছাত্ররা হল ছাড়ল কি না, সেটির তদারকি হয়নি।
এদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ছেলে ও মেয়েদের জন্য ছয়টি হল নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে দুটি নির্মাণ হয়ে গেছে। বাকি চারটি হয়ে গেলে আসন সংকট থাকবে না।
হল কমিটির সভাপতি নাজমুল হাসান তালুকদার বলেন, অছাত্ররা যেন হলে অবস্থান করতে না পারে, সে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে আমরা কাজ করছি। নির্মাণাধীন হলের কাজ শেষ হলে আসন সংকট থাকবে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম বলেন, আবাসন সংকট নিরসনে আমরা কাজ করছি। সমস্যা সমাধানে নতুন হল নির্মাণ করা হচ্ছে। সবগুলো হল হয়ে গেলে এ সংকট আর থাকবে না। এর জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন। অছাত্রদের তালিকা তৈরি করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
বরাবরই স্বাধীনচেতা। আর উদ্যোক্তা হওয়ার নেশা তো আগে থেকেই ছিল। কিন্তু কোন পণ্য নিয়ে শুরু করবেন, সেটাই ছিল ভাবনার বিষয়। একসময় মাথায় এলো এমন কিছু নিয়ে কাজ করতে হবে, যা দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি দেশের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হয়। অবশেষে পাটপণ্য নিয়ে কাজ করবেন বলে ঠিক হলো। এভাবেই শুরু তুলিকা ইকো লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ইসরাত জাহান চৌধুরীর।
তার আগে স্নাতকোত্তর শেষে একাধিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিও করেছেন ইসরাত। পরে সবকিছু ছেড়ে ২০০৭ সালে ব্যবসা শুরু করেন ঢাকার নিকেতনের এই বাসিন্দা। বর্তমানে তার প্রতিষ্ঠান তুলিকা ইকো লিমিটেডের পণ্যের সংখ্যা ৫০টির মতো।
দেশ রূপান্তরকে তিনি বলছিলেন, ‘শূন্য থেকে নয়, একপ্রকার “মাইনাস ফিগার” দিয়েই শুরুটা হয়েছিল। অন্যের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে কাজ করিয়েছি। এখন নিজস্ব কারখানা করেছি। কোটি টাকার “ট্রান্সজেকশন” (লেনদেন) হয়েছে। এই ঘুরে দাঁড়ানোটা ছিল বেশ কঠিন। এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি।’
পাটপণ্য নিয়ে ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে যে আন্তর্জাতিক মেলা হয়ে গেল সেখানে ইউএসএআইডির সহায়তাপ্রাপ্ত ফিড দ্য ফিউচার বাংলাদেশ হর্টিকালচার অ্যাকটিভিটির আর্থিক সহায়তায় দেশের ১৪ জন নারী উদ্যোক্তা অংশ নেন, তাদের একজন ইসরাত জাহান।
এই উদ্যোক্তাদের ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন অফিস (টিএফও) কানাডা ও এসএমই ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ বিভিন্ন ধরনের কারিগরি সহায়তায় ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ দেয়।
কেমন ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সেই মেলার অভিজ্ঞতা? ইসরাত বলেন, ‘ইউএসএআইডি অনেক “হেলপফুল” ছিল। তারা সেখানে সেমিনার করেছে। ক্রেতার সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হবে, পণ্যের বাজারজাত কীভাবে করতে হবে এমন নানা বিষয় হাতে-কলমে শিখিয়েছে আমাদের। তাদের সহায়তায় ওই দেশের পাটপণ্যের বিভিন্ন বাজার পরিদর্শন করার সুযোগ হয়েছে। মেলায় একশটিরও বেশি দেশের পণ্যের প্রদর্শনী ছিল। সেখান থেকেও অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। নতুন ধরনের পণ্য ও নকশা সম্পর্কে জেনেছি। বিদেশি ক্রেতার সঙ্গে সরাসরি কথা বলার সুযোগ হয়েছে। এক কথায় সব ধরনের “সাপোর্ট” দিয়েছে ইউএসএআইডি।’
‘আর সব থেকে গর্বের বিষয় হলো, এই মেলায় আমি দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছি, আমার প্রতিষ্ঠানটি “Artisan Resource” ক্যাটাগরিতে ১০০টিরও বেশি দেশের ১৫ জন ফাইনালিস্ট এর মধ্যে “ইবংঃ ঘবি চৎড়ফঁপঃ” অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। এটি আমার জন্য একটি বড় পাওয়া; আমার সামনে এগিয়ে যাওয়ার নতুন প্রেরণা।’ যোগ করেন ইসরাত।
এই উদ্যোক্তা বর্তমানে ঢাকায় নিজের কারখানার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলায় নারীদের সহায়তায় পণ্য তৈরি করছেন। তার পণ্য বিভিন্ন দেশে রপ্তানিও হচ্ছে।
তিনি মনে করেন, পাটের ভবিষ্যৎ অনেক উজ্জ্বল। আগে দেশে পাটপণ্য বললে বস্তার কথাই মাথায় আসত মানুষের। কিন্তু এখন পাট থেকে নানা রকম পণ্য তৈরি হচ্ছে। কেনার সামর্থ্য বাড়ার পাশাপাশি মানুষের রুচির পরিবর্তন হয়েছে। অন্যদিকে সারা বিশ^ পরিবেশবান্ধব পণ্যের দিকে ঝুঁকছে। এসব বিবেচনায় দেশে-বিদেশে পাটপণ্যের বাজার দিন দিন বড় হচ্ছে।
‘এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে নানা রকম উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে হবে। যেমন ছোট উদ্যোক্তাদের জন্য রপ্তানির পরিবেশ আরও সহজ করতে হবে। অনেক সময় অল্প পরিমাণ পণ্য বিদেশে পাঠাতে বিমান বা জাহাজ ভাড়া বেশি পড়ে যাওয়ায় ক্রেতা হাতছাড়া হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগে মূল্যছাড় দিয়ে কম ভাড়ায় পণ্য পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। দেশে আন্তর্জাতিক পাটমেলার আয়োজন করা খুবই জরুরি, যাতে ছোট উদ্যোক্তারাও সহজেই বিদেশি ক্রেতার কাছে নিজের পণ্যের প্রচারণা চালাতে পারে। কারণ মেলায় অংশ নিলেও অনেক অভিজ্ঞতা হয়। কিন্তু অর্থের অভাবে ইচ্ছে থাকলেও অধিকাংশ উদ্যোক্তা বিদেশের মেলায় অংশ নিতে পারেন না।’ বলছিলেন ইসরাত জাহান।
তার ভাষায়, ‘পাটপণ্যের বিশ^বাজারে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। ভারত সরকার তাদের উদ্যোক্তাদের নানা রকম সুবিধা দেয়। ফলে তাদের উৎপাদন খরচ কম হয়। ভারতে পাট নিয়ে নানা রকম প্রশিক্ষণের পাশাপাশি পিএইচডি ডিগ্রি পর্যন্ত নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে বেসিক কিছু ট্রেনিং ছাড়া এই খাত সম্পর্কে জানা বা বোঝার সুযোগ তেমন একটা নেই। এ-সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় নানা রকম তথ্য পেতেও ভোগান্তি পোহাতে হয়। এমন আরও অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, যেগুলো দূর করতে সরকার আরও বেশি উদ্যোগী হতে পারে।’
পাটপণ্যের জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে একাধিক শিল্প নগরী তৈরির আহ্বান জানিয়ে এই নারী উদ্যোক্তা বলেন, ‘এটা করতে পারলে উদ্যোক্তারা পাটপণ্য তৈরির সব কাঁচামাল এক জায়গা থেকেই সংগ্রহ করতে পারবে। এতে কাজগুলো সহজ হবে। উৎপাদন খরচ কমার পাশাপাশি পণ্যের গুণগত মান আরও ভালো হবে।’
তিনি বলেন, মিল মালিকদের কাছ থেকে দেশীয় উদ্যোক্তারা যাতে সাশ্রয়ী দামে পাটের সুতা কিনতে পারে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করা দরকার। পাশাপাশি মজুদদাররা যাতে পাট মজুদ করে দাম বাড়াতে না পারে, সে জন্য সরকারকে পাটের দাম বেঁধে দিতে হবে। জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার (জেডিপিসি) কিংবা সরকারের অন্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এ কাজটা করা যেতে পারে।
বর্তমানে পোশাকশিল্প থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়। নানা রকম সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার ফলে দিনে দিনে এই শিল্প আজ ভালো একটা অবস্থানে পৌঁছেছে। পাটশিল্পের দিকে যদি এমন নজর দেওয়া যায় তাহলে এই খাতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব বলে ইসরাতের বিশ্বাস।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘নিজের উৎপাদিত পণ্য নিয়ে নিজস্ব ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি বিদেশে বিপণিকেন্দ্র স্থাপনের চেষ্টা করছি। সেই সঙ্গে আরও বেশি পরিমাণে পণ্য রপ্তানির ইচ্ছা আছে ভবিষ্যতে।’
নতুনদের উদ্দেশ্যে ইসরাত বলছিলেন, ব্যবসা করতে হলে অনেক টেকনিক্যাল হতে হবে। সবকিছু সম্পর্কে ভালোভাবে জানার জন্য পড়ালেখার পাশাপাশি নিতে হবে প্রশিক্ষণ। প্রচুর পরিশ্রম করার মানসিকতার সঙ্গে ব্যবসার পেছনে লেগে থাকতে হবে। অনেকেই প্রণোদনার আশায় পাটপণ্যের ব্যবসা শুরু করেন। এটা পুরোপুরি ভুল। এখানে যেসব প্রণোদনা দেওয়া হয় তার বেশিরভাগই বড় প্রতিষ্ঠানগুলো পায়। এ ক্ষেত্রে নানা রকম জটিলতাও রয়েছে। তা ছাড়া শুধু প্রণোদনার আশায় শুরু করলে ভালো উদ্যোক্তা হওয়া যায় না।
এ বছর ডেঙ্গুতে এখন পর্যন্ত যারা মারা গেছে, তাদের প্রায় প্রত্যেকেই রক্তক্ষরণজনিত হেমোরেজিক ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ছিল। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে ডেঙ্গুর শেষ ধাপ শক সিনড্রোমে এদের মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
গতকাল শনিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানান অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। তিনি বলেন, ‘আমরা ক্লিনিক্যালি তাদের মৃত্যুর কারণ জানার চেষ্টা করেছি। আমাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত মৃতদের প্রায় প্রত্যেকে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে ভুগছিলেন এবং শক সিনড্রোমে তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া অন্য আরও কারণ থাকতে পারে, যা জানার জন্য অটোপসি করা প্রয়োজন। কিন্তু তা পরিবার অনুমোদন দেবে না। আর এটা সাধারণ পরীক্ষাও না।’
মহাপরিচালক জানান, এ বছর বেশিরভাগ রোগী রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। এর মধ্যে বর্তমানে সর্বোচ্চ ১৪৭ জন রোগী (গত শুক্রবার পর্যন্ত) মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি।
সব হাসপাতাল প্রস্তুত : স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সারা দেশের সব হাসপাতাল প্রস্তুত রয়েছে। এ বিষয়ে সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে সংশোধিত গাইডলাইন প্রত্যেক হাসপাতালে সরবরাহ করা হয়েছে। হাসপাতালগুলোর চাহিদা অনুযায়ী চিকিৎসক, ওষুধসহ সবকিছু সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রত্যেক বিভাগে ডেঙ্গু চিকিৎসায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। তবে মশা নিধন করাটা সব থেকে জরুরি। সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকার বিভাগসহ সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে।
পরীক্ষার বিষয়ে মহাপরিচালক বলেন, যারা আমাদের কাছে আসছে তাদের ডায়াগনোসিস করা হচ্ছে। পরীক্ষার বিষয়ে আমরা সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছি। গণমাধ্যমসহ সবাইকে এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে। মানুষকে সচেতন করতে হবে। জ্বর হলে তারা যেন ডেঙ্গু পরীক্ষা করান।
এ বিষয়ে অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক ডা. শেইখ দাউদ আদনান জানান, ডেঙ্গু পরীক্ষায় গুরুত্ব দিতে সব হাসপাতালকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। এ ক্ষেত্রে গত বছরই পরীক্ষার ফি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল, সেটাই রাখা হয়েছে (সরকারি হাসপাতালে ১০০ টাকা ও বেসরকারি হাসপাতালে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা)। প্রত্যেক হাসপাতালে গাইডলাইন সরবরাহ করা হয়েছে। রোগীদের জন্য মশারি নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু রোগীরা মশারির ভেতর থাকছে না। চিকিৎসক এলে তারা মশারির ভেতর থাকছে, বাকি সময়টা বাইরে থাকছে। রোগীদের মশারির ভেতরে রাখার বিষয়ে পুলিশিং ব্যবস্থা আমাদের নেই। এ বিষয়ে আমাদের রোগীদেরই সচেতন হতে হবে।
এবার ডেঙ্গুজ্বর থেকে সুস্থ হওয়ার পর রোগীদের জটিলতা বেশি দেখা যাচ্ছে বলেও জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ ব্যাপারে অধিদপ্তরের এমআইএস শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের তথ্য ও ডেঙ্গুর গতিবিধি পর্যবেক্ষণে রোগীদের তথ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালগুলোকে আগত রোগীদের মোবাইল নম্বর ও ঠিকানা সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গু ব্রিফিংয়ের আওতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখন থেকে রাজধানীর ৫৩টি ডেডিকেটেড হাসপাতালের সঙ্গে আরও ৩২টি হাসপাতাল মিলিয়ে ৮৫টি হাসপাতালের তথ্য তুলে ধরা হবে।
নতুন ভর্তি ১৫৬, মৃত্যু ১ : গত ২৪ ঘণ্টায় (শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) ডেঙ্গুতে নতুন করে আরও ১৫৬ জন ডেঙ্গু রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ সময় মারা গেছে একজন। এ নিয়ে গতকাল পর্যন্ত এ বছর ৩ হাজার ২১ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে বর্তমানে চিকিৎসাধীন ৫৪৯ জন।
মোট রোগীর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ২৭৬ জন ও ঢাকার বাইরে ৭৪৫ জন। বর্তমানে ঢাকায় চিকিৎসা নিচ্ছে ৪৭৩ জন ও ঢাকার বাইরে ৭৬ জন।
ডেঙ্গুতে যে ২২ জন মারা গেছে, তাদের ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে গত ১০ দিনে। ভর্তি রোগীর এক-তৃতীয়াংশই ভর্তি হয়েছে এ সময়।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের বিচারাধীন আপিলের সংখ্যা বাড়ছেই। গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগের মতো অপরাধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের রায়ের পর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে এখন পর্যন্ত ৪২টি আপিল বিচারাধীন। এসব মামলায় বেশিরভাগ আসামির মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়েছে ট্রাইব্যুনালে।
সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ট্রাইব্যুনালে রায় হলেও গত ছয় বছরে একটি আপিল মামলাও নিষ্পত্তি হয়নি। আর গত সাড়ে তিন বছরের বেশি সময়ে কোনো আপিলের শুনানি হচ্ছে না। বিচারাধীন থাকা এ মামলাগুলো কবে নাগাদ নিষ্পত্তি হবে এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা কোনো ধারণা দিতে পারেননি।
তবে, রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এ এম আমিন উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, ক্রম অনুযায়ী কার্যতালিকায় এলে আপিলগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়া হবে।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের লক্ষ্যে ২০১০ সালের মার্চে যাত্রা শুরু করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
প্রসিকিউশন শাখার তথ্য মতে, ট্রাইব্যুনালে এখন পর্যন্ত ৫১ রায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন ১৩১ জন আসামি। এর মধ্যে মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়েছে ৯১ জনের বিরুদ্ধে। আমৃত্যু কারাদণ্ড হয়েছে ২৫ জনের। এ ছাড়া যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে ৯ জনের। আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩ অনুযায়ী আসামির সাজা কিংবা খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের বিধান রয়েছে। তবে, সাজাপ্রাপ্ত কিন্তু পলাতক আসামিদের আপিলের সুযোগ নেই। এ ছাড়া ২০১৩ সালে আইনটি সংশোধনের পর অপর্যাপ্ত সাজার বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ রয়েছে আপিল বিভাগে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ১০ বছরের বেশি সময় আগে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আপিলের পর শুনানি শেষে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তার দণ্ড কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এরপর রায় রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) চেয়ে আবেদন করলে ২০১৭ সালের ১৫ মে সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ড বহাল থাকে। এই মামলা নিষ্পত্তির পর আর কোনো আপিল চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি।
সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের তথ্য মতে, আপিল বিভাগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার সবশেষ আপিল শুনানি হয় ২০১৯ সালের ৩ ডিসেম্বর। ট্রাইব্যুনালে সর্বোচ্চ দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের আপিল শুনানি শেষে পরের বছর ১৪ জানুয়ারি তার মৃত্যুদণ্ড বহালের রায় দেয় আপিল বিভাগ। পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে রিভিউ (রায় পুনর্বিবেচনা) আবেদন করেন কায়সার। তবে, এটি শুনানির আগেই গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি কারাগারে থাকা কায়সার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। অন্যদিকে জামায়াত নেতা এটিএম আজহারকে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল একই বছরের ৩১ অক্টোবর বহাল রেখে রায় দেয় আপিল বিভাগ। এ রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করেন আজহার। এটি শুনানির অপেক্ষায় আছে। সে হিসেবে সাড়ে তিন বছরের বেশি সময় ধরে আপিল বিভাগে মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনো মামলার শুনানি হচ্ছে না। তবে, ২০২০ সালের মার্চ থেকে দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের দরুন প্রায় দুই বছর বিচারকাজ বিঘিœত হয়। কখনো ভার্চুয়াল, কখনো নিয়মিত আদালতের কার্যক্রম চলে। বিরূপ পরিস্থিতিতে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকাজেও এর প্রভাব পড়ে। ফলে মামলা নিষ্পত্তির বিষয়টি বিলম্বিত হয়।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায় ও রায় রিভিউ নিষ্পত্তি শেষে বিভিন্ন সময়ে এখন পর্যন্ত ৬ মামলায় ৬ জনের ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হয়েছে। তারা হলেন আবদুল কাদের মোল্লা, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মতিউর রহমান নিজামী এবং মীর কাশেম আলী। এ ছাড়া ট্রাইব্যুনালের রায়ে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমসহ (আমৃত্যু কারাদণ্ড) সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীম (আমৃত্যু কারাদণ্ড), জামায়াতের সাবেক নেতা আবদুস সোবহান (মৃত্যুদণ্ড) মৃত্যুবরণ করায় তাদের আপিল অকার্যকর ঘোষণা করে আপিল বিভাগ। এ ছাড়া ট্রাইব্যুনালে সর্বোচ্চ দণ্ডপ্রাপ্ত মাহবুবুর রহমান, আকমল আলী তালুকদার, মোসলেম প্রধান, সাখাওয়াত হোসেন ও আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বিল্লাল হোসেন মৃত্যুবরণ করায় তাদের আপিল অকার্যকর ঘোষণা করে সর্বোচ্চ আদালত।
ট্রাইব্যুনালের বিভিন্ন সময়ে দেওয়া রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মোবারক হোসেন, আবদুল জব্বার, মাহিদুর রহমান, সিরাজুল হক, খান মো. আকরাম হোসেন, ফোরকান মল্লিক, আতাউর রহমান ননী, মজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়া, মহিবুর রহমান বড় মিয়া, আমির আহমেদ, ইসহাক সিকদার, আবদুল কুদ্দুস, খলিলুর রহমান, আবদুল মান্নান, সামসুদ্দিন আহমেদ, এস এম ইউসুফ আলী, ইউনুছ আহমেদ, রিয়াজ উদ্দিন ফকির, আবদুল কুদ্দুস, রনজু মিয়া, আমজাদ হোসেন হাওলাদার, খন্দকার গোলাম রব্বানী, খন্দকার গোলাম সাব্বিরসহ ৪২ জনের আপিল বিচারাধীন।
ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কেন আপিল নিষ্পত্তি হচ্ছে না সে প্রশ্ন আমাদেরও। ট্রাইব্যুনালে বছরে কমপক্ষে তিনটি মামলার রায় হচ্ছে। ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর আপিল শুনানি ও নিষ্পত্তি একটি আইনি প্রক্রিয়া। কিন্তু এটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ হয়ে আছে। এ প্রক্রিয়ায় এত লম্বা বিরতি চোখে পড়ার মতো। আমরা মনে করি, আপিলগুলো নিষ্পত্তি হওয়া উচিত। প্রয়োজনে প্রসিকিউটরদের যারা আপিল বিভাগে শুনানির অনুমোদন আছে তারা সহযোগিতা করবে।’ জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দুটি মামলা (কায়সার ও আজহার) নিষ্পত্তির লক্ষ্যে তালিকায় ছিল। কিন্তু তাদের আইনজীবীরা সময় নিয়েছিলেন। এখন মামলাগুলো নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়া হবে। কার্যতালিকায় এলে আস্তে আস্তে সবগুলো মামলা নিষ্পত্তি হবে।’
দেশের মাত্র ৩৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পড়াশোনাবিষয়ক কাজে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। অবসর সময় কাটাতে ইন্টারনেট ব্যবহার করে ৬৭ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। এ ছাড়া ৪৩ শতাংশ শিক্ষার্থী যোগাযোগের প্রয়োজনে, ২৫ শতাংশ অনলাইন গেম খেলতে বা ভিডিও দেখতে, ১৩ শতাংশ অনলাইনে কেনাকাটা করতে এবং ৮ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রয়োজনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে।
মানসিক সমস্যার পেছনে ইন্টারনেট ব্যবহারকে দায়ী করেছে ৮৬ শতাংশ তরুণ শিক্ষার্থী। এসব শিক্ষার্থীর ৭২ শতাংশ বলেছে, ইন্টারনেট ব্যবহার করতে গিয়ে তারা কখনো না কখনো মানসিক সমস্যায় পড়েছে। বিশেষ করে মানসিক সমস্যার জন্য পুরোপুরি ইন্টারনেটকে দায়ী করেছে ২৬ শতাংশ শিক্ষার্থী। মাত্র ৮ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছে, ইন্টারনেট ব্যবহারের কারণে তাদের কোনো মানসিক সমস্যা দেখা দেয়নি।
দেশের ১ হাজার ৭৭৩ শিক্ষার্থীর ওপর চালানো এক জরিপে এমন তথ্য পেয়েছে বেসরকারি সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশন। গতকাল শনিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সমীক্ষার এ তথ্য তুলে ধরা হয়। গবেষণায় বলা হয়, ইন্টারনেট তরুণ শিক্ষার্থীদের জন্য অনেকাংশেই নেতিবাচক ফলাফল বয়ে আনছে।
জরিপে বলা হয়, অপরিমিত ইন্টারনেট ব্যবহার করছে ৬২ শতাংশ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে দিনে ১১ ঘণ্টার বেশি অনলাইনে থাকে ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী। এ ছাড়া ৫-৭ ঘণ্টা ইন্টারনেটে থাকে ৩৭ শতাংশ ও ৩২ শতাংশ ব্যবহার করে ২-৪ ঘণ্টার মতো।
৩৪ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছে, ইন্টারনেটে সময় ব্যয় তাদের স্বাভাবিক জীবনে ‘প্রচণ্ড নেতিবাচক’ প্রভাব ফেলছে। এ ছাড়া ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী পড়াশোনায় মনোযোগের বিঘ্নতার জন্য ইন্টারনেটে সময় ব্যয়কে দায়ী করেছে। ১৮ শতাংশ ইন্টারনেটে পর্নো দেখা, সাইবার ক্রাইম, বাজি ধরা, বুলিং করা প্রভৃতি অপ্রীতিকর কাজের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে পড়েছে। ২৩ শতাংশ ধীরে ধীরে অন্তর্মুখী হয়ে পড়েছে, ৩৬ শতাংশ ডিপ্রেশনসহ বিভিন্ন ধরনের মানসিক চাপ অনুভব করেছে এবং ২০ শতাংশ সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বলে সমীক্ষায় উঠে এসেছে।
৩ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী জানায়, ইন্টারনেটে সময় দিতে গিয়ে তারা ‘কখনোই’ পরিবারের সঙ্গে মন খুলে গল্প করতে পারে না। ১৯ শতাংশ শিক্ষার্থী ‘খুব একটা’ পরিবারের সঙ্গে মন খুলে গল্প করে না। মাঝে মাঝে পরিবারের সঙ্গে আড্ডা দেয় ৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থী।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ইন্টারনেট ব্যবহার করতে গিয়ে ৫৯ শতাংশ শিক্ষার্থীর প্রতিদিন পরিমিত ঘুম হয় না। এ ছাড়া ৩৪ দশমিক ৫ শতাংশের মাথা ঝিম ঝিম ও ব্যথা অনুভূত হয়, ১৯ শতাংশের ক্ষুধামান্দ্য দেখা দেয়, ২৪ শতাংশ চোখে ঝাপসা দেখে এবং ২৮ শতাংশ ক্লান্তি অনুভব করে।
পর্নোগ্রাফিতেও আসক্তির তথ্য উঠে এসেছে জরিপে। তাতে বলা হয়, ৩৩ শতাংশ শিক্ষার্থী ইন্টারনেটে পর্নোগ্রাফি বা যৌন উত্তেজক বিষয় সম্পর্কিত ওয়েবসাইট দেখে। তাদের মধ্যে ৩৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর মাথায় বিভিন্ন সময় এ বিষয়ক চিন্তা আসে, ১৪ শতাংশ শিক্ষার্থী সব সময় এ ধরনের কাজের প্রতি আগ্রহ অনুভব করে, ২৫ দশমিক ৫ শতাংশের মনে নিজেকে নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগে, ১৫ শতাংশ বিপরীত লিঙ্গের মানুষকে অসম্মানের দৃষ্টিতে দেখে ও ১০ দশমিক ৫ শতাংশ অনৈতিকভাবে যৌনতৃপ্তি উপভোগ করে।
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, জরিপে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আশঙ্কার চিত্র ফুটে উঠেছে। বিশেষ করে ১৯-৩০ বছর বয়সী যে তরুণ যুবক গোষ্ঠী আছে তাদের হতাশা, বিষন্নতা এবং অন্যান্য সামাজিক-মানসিক অস্থিরতা আগের তুলনায় অনেক বেশি। এদের মধ্যে আত্মহত্যার হারও আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এক্ষেত্রে ইন্টারনেট কিছুটা দায়ী বলেও প্রতীয়মান হচ্ছে।
জরিপের ফলাফল নিয়ে আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট তানসেন রোজ বলেন, শিক্ষার্থীদের বড় একটা অংশ ইন্টারনেটকে বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে। কারণ আমাদের দেশে বিনোদনের ক্ষেত্রগুলো প্রায় সংকীর্ণ হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীদের মাঝে ডিজিটাল লিটারেসি না থাকায় তারা ফাঁদে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়।
সাত বছর পর ভারতের মাটিতে অবতরণ পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের। ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে তারা গিয়েছিল সেখানে। তারপর এবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে। টুর্নামেন্ট শুরুর এক সপ্তাহ আগে তারা পৌঁছালেন দেশটিতে। সেখানে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে হোটেলে।
বার্তা সংস্থা এএফপি তাদের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
বাবর আজমরা সেখানে পৌঁছানো মাত্রই উচ্ছ্বসিত জনতা ভিড় করেন। হায়দ্রবাদের বিমানবন্দরের বাইরে তাদের দেখে অনেকেই চিৎকার করে উল্লাস প্রকাশ করতে থাকেন। বাবরের নাম উচ্চারণ করতও শোনা গেছে এসময়। পুলিশ উৎসুক জনতাকে আটকে রেখেছিল।
রাজনৈতিক বৈরি সম্পর্কের কারণে দুই দলের দেখা হয় না দ্বিপাক্ষিক কোনো সিরিজে। বিশ্ব মাতানো ক্রিকেটার থাকলেও পাকিস্তানিরা খেলতে পারে না আইপিএলে। কারণ ঐ একটাই। তবে বৈশ্বিক বা মহাদেশীয় ইভেন্টে তাদের ঘিরে আগ্রহ থাকে তুঙ্গে। সেটা দেখা গেছে এশিয়া কাপেও।
বিশ্বকাপ খেলতে আজ বাংলাদেশ উড়াল দিয়েছে ভারতে। সেই টুর্নামেন্টে সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন দেখে টাইগাররা। তামিম ইকবাল নেতৃত্ব ছাড়ার পর সাকিব আল হাসানের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে অধিনায়কত্বের ভার। আর আজই জানা গেল, বিশ্বকাপের পর একদিনও তিনি অধিনায়কত্ব করবেন না।
গত ১১ আগস্ট তৃতীয় দফায় ওয়ানডে অধিনায়কের দায়িত্ব নেন সাকিব আল হাসান। তখনই বলা হয়েছিল, সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপ ও ভারত বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দেবেন তিনি।
দেশের একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাতকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘এই বিশ্বকাপই শেষ। এরপর একদিনও (অধিনায়কত্ব) করবো না। যে কারণে আমি এশিয়া কাপের আগে নিতে চাইনি। এরপরও এটা না। আমার কাছে মনে হয়েছে আমি হাসতে চাই, খেলতে চাই, পারফর্ম করতে চাই। এই একটা কারণে আমি করতে চাইনি।’
সাকিব যোগ করেন, ‘আর কোনে কারণ নেই। বেস্ট হয় যদি অধিনায়ক না থাকি। অধিনায়কত্ব কি আমার কোনো ভেল্যু এড করতেছে ক্যারিয়ারে এই স্টেজে এসে? আমি তো মনে করি না।’
সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দলে পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলার ও ছিল না! কারন পরের দিনে সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকী রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা! মানুষের সাইলকোলজি এমন কেনও! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!’
বিশ্বকাপে তামিম ইকবালকে ওপেন থেকে সরিয়ে মিডল অর্ডারে ব্যাট করার প্রস্তাব দিয়ে ফোন করেছিলেন, তামিমের ভাষায় 'বোর্ডের টপ লেভেল' এবং 'ক্রিকেটের সাথে বেশ ইনভলভড' একজন।
তিনি তামিমকে বলেন, ''তুমি তো বিশ্বকাপে যাবা, তোমাকে তো ম্যানেজ করে খেলতে হবে। তুমি এক কাজ করো। তুমি প্রথম ম্যাচ খেলো না আফগানিস্তানের সঙ্গে।'
তিনি আবার বলেন, আচ্ছা তুমি যদি খেলোও, আমরা এমন একটা পরিকল্পনা করছি, তুমি যদি খেলোও, তাহলে নিচে ব্যাট করবে।''
তামিমের এমন বক্তব্যের পর প্রশ্ন উঠেছে, কেই সেই বোর্ড কর্মকর্তা? এক টিভি সাক্ষাৎকারে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'আমি এটা জানিনা।'
পরক্ষণেই তিনি বলেন, 'তবে যদি কেউ বলে থাকে, আমি সিউর তিনি অথোরাইজড পার্সন। আর এরকম কিছু বলে থাকলে আমি খারাপ কিছু বলেছে বলে আমি মনে করিনা। টিমের কথা চিন্তা করেই বলেছে। টিম কম্বিনেশন নিয়ে কথা বলে থাকলে দোষের কি আছে। আমার তো মনে হয় না দোষের কিছু আছে। নাকি এরকম কোনো প্রস্তাব দেয়া যাবে না। নাকি আপনি যা চাইবেন তাই করতে পারবেন?।'
বিশ্বমঞ্চে দেশের ক্রিকেটের দূত বলা যায় সাকিব আল হাসানকে। বর্ণিল এক ক্যারিয়ার গড়েছেন তিনি। তিন ফরম্যাটেই তিনি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। দেশের এই তারকা ক্রিকেটার নিজের পঞ্চম বিশ্বকাপে যাচ্ছেন দলের অধিনায়ক হিসেবে। সেই টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই জানা গেল কবে তিনি অবসর নিচ্ছেন।
দেশের একটি ক্রীড়াভিত্তিক টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজের অবসরের সময় জানিয়েছেন। তার ইচ্ছে ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর অবসর ঘোষণা করার। একইসঙ্গে তিন ফরম্যাটকে বিদায় জানাতে চান দেশের ক্রিকেটের এই তারা।
নেতৃত্ব ছাড়া ও অবসরের প্রসঙ্গ টেনে সাকিব বলেন, ‘আজকে এখন এই অবস্থায় বলছি, ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত ওয়ানডে খেলবো। ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলে টি-টোয়েন্টিকে বিদায় দেবো। টেস্টের অবসর শিগগিরই। তবে একেক ফরমেট একেক সময় ছাড়লেও আনুষ্ঠানিক অবসর ঘোষণা করবো ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর।’
অধিনায়কত্ব নিয়ে সাকিব বলেন, ‘আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দলে পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলার ও ছিল না! কারন পরের দিনে সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকী রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা! মানুষের সাইলকোলজি এমন কেনও! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!’
সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপের আগে একাধিক সিরিজে বিশ্রামের কথা বলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে দলের বাইরে রাখা হয়। শেষ পর্যন্ত এশিয়া কাপেও দলে ফেরানো হয়নি তাকে। যেহেতু সাকিবের নেতৃত্বে সেই আসরে খেলেছে বাংলাদেশ, তাই অনেকের ধারণা সাকিবের চাওয়াতেই দলের বাইরে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ।
তবে সাকিব এসব কথা উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়ক ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দল পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলারও ছিল না! কারন পরের দিন সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকি রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা!'
দলের ভেতরের কথা ভালোভাবে না জেনেই মানুষ যেভাবে সমালোচনা করে সেটাকে হাস্যকর বলেছেন সাকিব। বাংলাদেশ অধিনায়ক সমালোচকদের মানসিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, 'মানুষের সাইলকোলজি এমন কেন! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!'
অধিনায়ক একা যে দল নির্বাচন করেন না সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন সাকিব। তিনি বলেন, 'রিয়াদ ভাইয়ের যে ডেডিকেশন ছিল তার দলের প্রতি যে অবদান ছিল। দলের হয়ে খেলার যে ইচ্ছে ছিল, সবকিছু সবাই দেখতে পেরেছে। আমার দায়িত্বতো পুরো দলটা নির্বাচন করার না। এমনটা হলে এশিয়া কাপের একদিন পরেই এনাউন্স করে দল দিয়ে দিতে পারতাম। এটা অনেক প্রসেসের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। অনেক বিষয় চিন্তা করতে হয়। অনেক কিছু চিন্তা করে দলটা গড়তে হয়।'
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।