
রাজধানীর বনানীতে সিটি করপোরেশনের জমিতে পাঁচ তারকা হোটেল শেরাটনের যে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে, আগামী দুই মাসের মধ্যে চুক্তি মোতাবেক পাওনা বুঝে নিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। এরপর এ বিষয়ে আগামী তিন মাসের মধ্যে একটি প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছে আদালত। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোরাক রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের প্রতি এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এ সংক্রান্ত এক রিটের প্রাথমিক শুনানির পর গতকাল সোমবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেয়। দুপক্ষের চুক্তির আলোকে তাদের পাওনা বুঝে না নেওয়ার নিষ্ক্রিয়তাকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, এ মর্মে রুলও জারি করেছে আদালত। স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব, রাজধানী উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র, বোরাক রিয়েল এস্টেট লিমিটেডসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে বোরাক রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী রমজান আলী শিকদার ও মো. আবু তালেব। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ইমতিয়াজ মইনুল ইসলাম নীলিম। আর রিটের পক্ষে শুনানি করেন রিটকারী আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সাইফুদ্দিন খালেদ। আদেশের বিষয়ে আইনজীবী আবু তালেব বলেন, ‘বোরাক রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের সঙ্গে ডিএনসিসির যে চুক্তি এবং তাদের যে আপস-মীমাংসা সেই মোতাবেক ডিএনসিসির প্রাপ্য আগামী দুই মাসের মধ্যে বুঝে নেয় সেই মর্মে নির্দেশনামূলক আদেশ হয়েছে। এ বিষয়টি তিন মাসের মধ্যে লিখিত আকারে আদালতকে অবহিত করতে বলা হয়েছে।’
আদালতে শুনানির বিষয়ে এ আইনজীবী বলেন, ‘রিট পিটিশনে দুর্নীতির গন্ধ পাওয়ার কথা অভিযোগ আকারে উল্লেখ করা হয়েছিল। পাবলিকের ইন্টারেস্ট নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করা হয়। আদালত সব পক্ষের বক্তব্য শুনে এ মর্মে প্রাথমিকভাবে সন্তুষ্ট হয়েছে যে, এখানে তো দুর্নীতির বিষয় নয়, এখানে মুখ্য বিষয় হচ্ছে চুক্তিভুক্ত বিষয়। চুক্তি মোতাবেক ডিএনসিসির জন্য যে অংশ বরাদ্দ তারা বুঝে নিচ্ছে না কেন? সেজন্য সিটি করপোরেশন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে একটি চিঠিও দিয়েছিল। সেই চিঠিতেই স্পষ্ট যে, ডিএনসিসি ও বোরাক রিয়েল এস্টেটের সঙ্গে একটি সমঝোতা করেছে, সেই সমঝোতার ভিত্তিতে তারা ৩০ শতাংশের জায়গায় ৪০ শতাংশ যাতে বুঝে নিতে পারেন সেই কথা বলেছেন। এখন সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় যদি নিষ্পত্তি করে দেয় তাহলে বিষয়টি মীমাংসা হয়ে যায়। এ বিষয়টি ত্বরান্বিত করতে আজকে (গতকাল) হাইকোর্ট আদেশ দিয়েছেন। রিটকারী যে অভিযোগ দিয়েছেন, সেসব বিষয় আদালত গ্রহণ করেননি।’
এদিকে রিটকারী আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বলেন, ‘আদালত রিট আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে বোরাক রিয়েল এস্টেট কোম্পানির কাছ থেকে সিটি করপোরেশন যেন তার পাওনা ফ্ল্যাট দুই মাসের মধ্যে বুঝে নেয় সেই নির্দেশ দিয়েছেন। আর তিন মাসের মধ্যে পাওনা ফ্ল্যাট বুঝে পাওয়ার বিষয়টি হলফনামা আকারে আদালতকে জানাতে বলা হয়েছে।’
‘সরকারি জমিতে পাঁচ তারকা হোটেল’ শিরোনামে গত ১ জুন প্রথম আলো একটি সংবাদ প্রকাশ করে। ইতিমধ্যে মানহানিকর সংবাদ প্রকাশ করায় দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক ও প্রকাশক মতিউর রহমান এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক মোহাম্মদ মোস্তফাকে উকিল নোটিস পাঠিয়েছেন বোরাক রিয়েল এস্টেট লিমিটেড ও প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহা. নূর আলী। নোটিস পাওয়ার দুদিনের মধ্যে প্রথম আলোর অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে সংবাদটি অপসারণ এবং এক সপ্তাহের মধ্যে ৫০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে বলা হয়েছে ওই নোটিসে। এ ছাড়া মিথ্যা সংবাদ প্রকাশের ঘটনায় প্রথম আলো কর্র্তৃপক্ষকে শর্তহীনভাবে লিখিত ক্ষমা চাইতেও বলা হয়েছে। প্রথম আলোয় প্রকাশিত ওই মিথ্যা প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে গত রবিবার হাইকোর্টে রিট করেন আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
২০০৬ সালের ৭ মে রাজধানীর বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ে ৪৪ নম্বর প্লটে একটি বহুতল ভবন নির্মাণের চুক্তি সম্পাদিত হয় ঢাকা সিটি করপোরেশন ও বোরাক রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের মধ্যে। চুক্তি অনুযায়ী সব সরকারি নিয়ম ও বিধিবিধান মেনেই সেখানে হোটেল শেরাটন ভবন নির্মাণ করে বোরাক রিয়াল এস্টেট লিমিটেড। প্রকল্পটি বোরাক রিয়েল এস্টেট ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের যৌথ মালিকানাধীন প্রকল্প।
শেরাটন হোটেল নির্মাণে ২০০৭ সালের ২৫ জুন ঢাকা সিটি করপোরেশনের তৎকালীন অথরাইজড অফিসার কর্র্তৃক (প্রধান প্রকৌশলী) ৩০ তলা ভবনের নকশা অনুমোদন দেওয়া হয়। এ ছাড়া ২০০৭ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বুয়েট কর্র্তৃক ৩০ তলা ভবনের স্ট্রাকচারাল নকশা ভেটিংসাপেক্ষে ভবনটি নির্মিত হয়েছে। এরপর ২০০৭ সালে সিটি করপোরেশন কর্র্তৃক বিভিন্ন সংস্থা থেকে ৩০ তলার ছাড়পত্র গ্রহণ করা হয় (সিটি করপোরেশন, ডিএমপি, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, তিতাস, পরিবেশ অধিদপ্তর, ডেসকো, ঢাকা ওয়াসা ইত্যাদি)। সিটি করপোরেশনের আরএফপি অনুসারে ৬০ কাঠা জমির ওপরই ভবন নির্মাণের জন্য ২০০৪ সালের ১০ এপ্রিল দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল।
এরপর ২০১১ সালের ২৭ নভেম্বর ডিএনসিসির তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ১৫ থেকে ৩০ তলার ভবন নির্মাণের বিষয়টি মেয়র কর্র্তৃক অনুমোদন হয়েছে মর্মে উল্লেখ করে স্থানীয় সরকার সচিবকে চিঠির মাধ্যমে অবহিত করে। সে সময় মেয়র প্রয়াত আনিসুল হক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে দুপক্ষের মধ্যে অমীমাংসিত বিষয়গুলো সমাধানে উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং বোরাক রিয়েল এস্টেটকে ২০১৫ সালের ৩১ মে লিখিতভাবে অবহিত করেন।
বোরাক রিয়েল এস্টেট তাদের প্রাপ্য শেয়ারের নিজ জায়গায় হোটেলটি স্থাপন করেছে যা ১২-২৮ তলা পর্যন্ত অবস্থিত। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অংশ সংরক্ষিত রয়েছে যা ৪-১১ তলা পর্যন্ত অবস্থিত। ডিএনসিসি এ সংরক্ষিত প্রাপ্য অংশ যে কোনো সময় বুঝে নিতে পারে। উল্লেখ্য, ডিএনসিসির প্রাপ্য অংশে হোটেল শেরাটনের কোনো কিছুই অবস্থিত নয়।
প্রকল্পটির ১৫ থেকে ২৮ তলার শেয়ার বণ্টন প্রক্রিয়াটি দুপক্ষের মধ্যে ইতিমধ্যে মেয়রের সভাপতিত্বে ডিএনসিসির বোর্ডসভায় তাদের অনুকূলে ৩০ শতাংশের পরিবর্তে ৪০ শতাংশ শেয়ার অনুমোদিত হয়েছে।
১৪ তলা পর্যন্ত শেয়ার বণ্টন নিয়ে কোনো দিনই কোনো প্রশ্ন ছিল না। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ওই সিদ্ধান্ত চিঠির মাধ্যমে ২০২৩ সালের ২ মার্চ স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবকে অবহিত করেছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন তাদের প্রাপ্য ৪০ শতাংশ অর্থাৎ ৪ থেকে ১১ তলা পর্যন্ত তাদের প্রাপ্য অংশ যেকোনো সময় বুঝে নিতে পারে।
শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনুযায়ী নির্ধারণ হয়ে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় ব্যবহারের জন্য কাগজের পরিমাণ। যার চাহিদা জানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এ চাহিদা ও কেনার প্রক্রিয়া ঘিরে অনিয়ম এবং অসাধু বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। যার সত্যতাও মিলেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির তদন্তে।
খাতার চাহিদা প্রেরণ, দরপত্র প্রক্রিয়া, ক্রয় থেকে মজুদকরণ ও বিতরণের হিসাব নিয়ে দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে উঠে আসে ভয়ংকর চিত্র। বড় ধরনের এ অনিয়মে কয়েকজন কর্মকর্তার দলবদ্ধ সম্পৃক্ততার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও এ অনিয়ম খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। যে কমিটি ইতিমধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমাও দিয়েছে। যার অনুলিপি দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে। তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রয়োজনের থেকে বেশি চাহিদা প্রেরণ, টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতা, ক্রয়, ছাপা, মজুদকরণ, বিতরণ ও সংরক্ষণে সংশ্লিষ্টদের অবেহলা ও অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে কমিটি।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে এ প্রতিবেদক সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে তথ্য জানতে চাইলে সেখানেও বেশ অমিল উঠে আসে।
সাবেক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নির্মল চন্দ্র সাহা ২০২১ সালের ২৮ জুন ৭০ হাজার মূল উত্তরপত্র ও ৭০ হাজার অতিরিক্ত উত্তরপত্রসহ আরও ২৩টি উপাদান চাহিদাপত্র অনুযায়ী গ্রহণ ও মজুদ করেন। একই বছরের ৫ সেপ্টেম্বর নির্মল চন্দ্র সাহার চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ায় ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে যোগ দেন আবদুল হালিম। যোগদানের তিন মাসের মাথায় ৮ ডিসেম্বর ১ লাখ উত্তরপত্রসহ ২০টি উপাদান চেয়ে নমুনা ছাড়া চাহিদা প্রেরণ করেন তিনি। যেখানে চাহিদা প্রেরণের ছয় মাস আগে ৭০ হাজার উত্তরপত্র মজুদ করে দপ্তরটি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪টি বিভাগের চাহিদা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বছরে ৩৫ হাজারের কাছাকাছি উত্তরপত্রের প্রয়োজন পড়ে। অথচ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর প্রতি বছর সর্বনিম্ন ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ পর্যন্ত চাহিদা প্রেরণ করে এবং তা কেনারও অনুমোদন পায়। কিন্তু সেই উত্তরপত্রের ব্যবহার ও মজুদের সঠিক হিসাব দেখাতে পারে না দপ্তরটি। ছয় মাসের মাথাতেই আবার উত্তরপত্রের চাহিদা পাঠানোর কারণ জানতে চাইলে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) আবদুল হালিম বলেন, ‘আমি আগের আহ্বান কিংবা মজুদের বিষয়ে জানতাম না। আমাকে জানানোও হয়নি। চাহিদা সৃষ্টি হওয়ায় ক্রয়ের জন্য ব্যবস্থা নিতে বলেছি। আমি দায়িত্ব পাওয়ার পর তা সংরক্ষণের সঠিক হিসাব রাখতে কাজ করছি।’
তবে আবদুল হালিমের দাবির সত্যতা পায়নি তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ও বিভাগগুলোর চাহিদা অনুযায়ী, ৭ হাজার ২৩২ শিক্ষার্থীর পরীক্ষার জন্য সর্বোচ্চ ৩৫ হাজার উত্তরপত্রের দরকার। সেখানে প্রয়োজনের চেয়ে কখনো দ্বিগুণ আবার কখনোবা তিনগুণ চাহিদা প্রেরণ করে তা কেনা হয়। এ প্রক্রিয়াটিকে অনিয়ম ও দুর্নীতি হিসেবে আখ্যা দিয়েছে তদন্ত কমিটি। রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এবং প্রকিউরমেন্ট অফিসারকে এ কার্যক্রমের জন্য দায়ী করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদন। এ ছাড়া এ সিকিউরিটি পেপার কেনার টেন্ডার রেজিস্ট্রার করতে পারেন না বলেও মন্তব্য রয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে।
পরীক্ষার খাতাকে সিকিউরিটি প্রিন্টিং বলা হলেও তা স্পষ্টভাবে কারও দায়িত্বে রাখা হয়নি অর্থবিধিতে। তবে সাধারণ ছাপার এখতিয়ার রেজিস্ট্রারের আছে বলে উল্লেখ রয়েছে এ বিধিতে। এ ক্ষেত্রে ইচ্ছে করেই গলদ রাখা হয়েছে বলে মন্তব্য একাধিক শিক্ষকের।
এ বিষয়ে কলা অনুষদের এক শিক্ষক বলেন, ‘ঈদের আর বৈশাখের কার্ড ছাপানোকে সাধারণ মুদ্রণ বলা যায়, তবে পরীক্ষার খাতা অবশ্যই সাধারণ মুদ্রণ নয়। এটি ভর্তি পরীক্ষার মতোই সিকিউরিটি প্রিন্টিংয়ের আওতায় থাকবে। এ নিয়ে অস্পষ্টতা অবশ্যই পরিকল্পিত।’
তবে এ বিধি নিয়ে কথা বলতে চাননি অর্থবিধি প্রণয়নে কাজ করা অর্থ দপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম।
অন্যদিকে পরীক্ষার খাতাকে অবশ্যই সিকিউরিটি প্রিন্ট হিসেবে মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ূন কবীর। তবে বিধি অনুযায়ী, সেটি করতে না পারার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘বিধির কোথাও লেখা নেই এ সিকিউরিটি প্রেসের টেন্ডার রেজিস্ট্রার করতে পারবে না।’ তবে সিকিউরিটি প্রেসের টেন্ডার রেজিস্ট্রার করতে পারবে এমন কোনো বিধিরও উল্লেখ নেই।
অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী, প্রকিউরমেন্ট পদটি পরিকল্পনা ও ইঞ্জিনিয়ার দপ্তরের আওতায় থাকার কথা থাকলেও এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পদটি রয়েছে রেজিস্ট্রার দপ্তরের আওতাধীন, যা নিয়মেরও লঙ্ঘন।
উত্তরপত্র ক্রয় ও মুদ্রণকাজে অর্থনৈতিক অস্বচ্ছতার প্রমাণও পাওয়া যায় ক্রয় প্রক্রিয়ায়। অনুসন্ধানে দেখা যায়, কর্ণফুলী পেপার মিল থেকে কাগজ কেনার পর তা বিশ্ববিদ্যালয়ে আনা-নেওয়া, লোডিং ও আনলোডিং খাতে ব্যয় দেখানো হয়েছে ৫০ হাজার টাকা, যা প্রত্যেকবার কেনার ক্ষেত্রেই ধরা হয়। নথিতে আনা-নেওয়া, লোডিং-আনলোডিং বাবদ ব্যয় দেখানো হলেও তা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে দেখা যায়নি। এমনকি তা স্টোরেও নথিভুক্ত করা হয়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে কাগজ আনার দাবি করেন প্রকিউরমেন্ট অফিসার আহসানউল্লাহ রাসেল এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. লিয়াকত হাসান। যদিও এ কাগজ আসার কথা অস্বীকার করেছেন স্টোর অফিসার নাজমুল হাসান। এ ছাড়া টেন্ডার আহ্বান করার আগেই এমএস ত্বকী এন্টারপ্রাইজের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় পরীক্ষার পেপারসামগ্রী আনা হয়ে থাকে। কিন্তু অর্ডার পাওয়ার আগেই কীভাবে প্রতিষ্ঠানটি সরবরাহ করে থাকে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
কাগজ পরিবহন খরচের হিসাব জানতে চাইলে মো. লিয়াকত হাসান একেকবার একেক পরিমাণ অর্থের কথা বলেন। পরিবহন বাবদ এ ব্যয়ের ৫০ হাজার টাকার গরমিলে সহকারী রেজিস্ট্রার মো. লিয়াকত হাসান ও প্রকিউরমেন্ট অফিসার আহসানউল্লাহ রাসেলের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে। অভিযোগ রয়েছে এ অর্থ তাদের মধ্যেই ভাগাভাগি হয়ে থাকে।
২০১১ সাল থেকে একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে একই ব্যক্তিরা সম্পৃক্ত থেকে কাগজ কেনা থেকে মুদ্রণকাজ পরিচালনা করে আসছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তা বলেছেন, কেনাকাটার এ অনিয়মের মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করে নিয়েছে সিন্ডিকেটটি। সিকিউরিটি প্রিন্টিংসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উপাদান কেনার দরপত্রে পিপিআর ২০০৮ আইন মানার কথা থাকলেও, সেটি করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের সহকারী রেজিস্ট্রার মো. লিয়াকত হাসান নিজেই মূলত এ মুদ্রণ ব্যবসার কাজ করে থাকেন। কাজের বিল প্রাপ্তির সময় যে প্যাডে উপস্থাপন করা হয়েছে সেখানে কোনো প্রোপ্রাইটরের নাম উল্লেখ নেই। এ ছাড়া রাজশাহীতে হেড অফিস ও ঢাকায় শোরুম দাবি করা এমএস ত্বকী এন্টারপ্রাইজের প্যাডে উল্লিখিত দুটি নাম্বারই একই ব্যক্তির। যার নাম আরমান। ত্রিশালের শোরুমের দেখভাল করেন লিয়াকত নিজেই। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে লিয়াকত হাসান বলেন, ‘আমি নই, আমার ভাই এ ব্যবসা করেন । আমি এ কাজ করি না।’ অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চপদস্থদের কমিশন দিয়ে এ ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন এই কর্মকর্তা।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ কে এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর কাছে তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে, সেই সঙ্গে তা প্রক্রিয়াধীন।’
এ বিষয়ে উপাচার্যের বক্তব্য জানতে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করে এবং কল করার কারণ জানিয়ে বার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ূন কবীর বলেন, ‘অভিযোগ এলে এবং তার প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ফ্রান্সের ছোট্ট গ্রাম থেকে একটি ছোট্ট ইঁদুরের প্যারিসে আসা, সেখানে বড় এক রেস্তোরাঁয় এক তরুণের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব ও পরে ওই রেস্তোরাঁর রাঁধুনি হয়ে ওঠার গল্প নিয়ে তৈরি এক অ্যানিমেশন মুভি ১৫ বছর আগে চমকে দিয়েছিল বিশ্ববাসীকে। সিনেমার গল্পটা অবাস্তব হলেও মানুষের রেস্তোরাঁর ইঁদুরের রান্না করা এবং মুখের ভাষা ছাড়াই ওই তরুণের সঙ্গে বন্ধুত্ব হওয়ার বিষয়টির কারণে বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল র্যাটাটুলি নামের সিনেমাটি। প্যারিস শহর
কর্র্তৃপক্ষ এবার সেই সিনেমার মতোই ইঁদুরের সঙ্গে সহাবস্থানের উপায় খুঁজতে শুরু করেছে।
গতকাল সিএনএন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বিশ্বের অনেক বড় শহরের মতো ফ্রান্সের রাজধানীকেও ইঁদুরের উপদ্রব কমাতে রীতিমতো লড়াই করতে হচ্ছে। লড়াই করতে করতে ক্লান্ত নগর কর্র্তৃপক্ষ এবার মানুষ আর ইঁদুর একসঙ্গে থাকতে পারে কি না সে বিষয়টিই খুঁজে দেখার চেষ্টা শুরু করেছে। বিষয়টি গবেষণা করে দেখতে একটি কমিটি গঠন করছেন প্যারিসের মেয়র অ্যানি ইদালগো।
সিএনএন জানিয়েছে, সম্প্রতি সিটি কাউন্সিলের সভায় ইঁদুরের সমস্যা নিয়ে প্যারিসের ১৭তম প্রশাসনিক বিভাগের প্রধান ও ডানপন্থি রিপাবলিকান পার্টির সদস্য জিওফ্রয় বোলার্ডের এক প্রশ্নের জবাবে ওই কমিটি গঠনের কথা জানান শহরের জনস্বাস্থ্যের দায়িত্বে থাকা ডেপুটি মেয়র অ্যানি সুরিস।
ডেপুটি মেয়র অ্যানি সুরিস বলেন, মানুষ ও ইঁদুর কতটা কার্যকরভাবে একসঙ্গে বাস করতে পারে এবং পরিস্থিতি কেমন হলে তা প্যারিসবাসীর সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাবে না, তা বুঝতে এই গবেষণা হচ্ছে। ইঁদুরের রোগ ছড়ানো নিয়ে ডেপুটি মেয়র বলেন, যে ইঁদুরগুলো নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে সেগুলো প্লেগের জীবাণু বহনকারী কালো ইঁদুর নয়। আর অন্য ধরনের ইঁদুরও ব্যাকটেরিয়াজনিত লেপ্টোস্পাইরোসিসের মতো রোগ ছড়াতে পারে।
২০১৭ সালে প্যারিসের ইঁদুরবিরোধী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নেওয়া কিছু পদক্ষেপ তুলে ধরেন সুরিস। এর মধ্যে ইঁদুরকে মাটির নিচে ফিরিয়ে নেওয়ার পদক্ষেপ হিসেবে হাজারো নতুন বিন বসানোর কথাও বলেন তিনি। পরে এক টুইটে সুরিস বলেন, ইঁদুর এখন প্যারিসে জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক কোনো ঝুঁকি তৈরি করছে না। এ নিয়ে কারও আপত্তি থাকলে ফরাসি ‘হাই কাউন্সিল অন পাবলিক হেলথ’ কর্র্তৃপক্ষকে তা খতিয়ে দেখতে বলেন তিনি। তিনি বলেন, আমাদের বৈজ্ঞানিক পরামর্শ দরকার, কোনো রাজনৈতিক প্রেস রিলিজ নয়।
প্রাণী অধিকার নিয়ে কাজ করা প্যারিস অ্যানিমাক্স জুপোলিস (পাজ) নগর কর্র্তৃপক্ষের গবেষণার ওই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে সংগঠনটি বলেছে, প্যারিসের মতো ফ্রান্সের অন্যান্য বড় শহরেও ইঁদুরের উপস্থিতি রয়েছে। ফলে ইঁদুরের সঙ্গে সহাবস্থানের প্রশ্নটি স্বাভাবিকভাবেই এখানে আসে। আমরা ইঁদুরের সঙ্গে ‘শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান’র কথা বলি, তার মানে ইঁদুর নিয়ে বাড়িঘর বা অ্যাপার্টমেন্টে বাস করার কথা বোঝাই না। আমরা যেটা নিশ্চিত করার কথা বলি তা হলো, এই প্রাণীগুলো যেন কষ্ট না পায় এবং সেগুলোর উৎপাতে আমরাও যেন বিরক্ত না হই।
সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী সায়ীদ আবদুল্লাহর বাসার সামনে সশস্ত্র মহড়ার ঘটনায় ওই ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর, আসন্ন নির্বাচনের প্রার্থী, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফতাব খানকে তলব করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কমিশনের ঢাকার প্রধান কার্যালয়ে আগামীকাল বুধবার হাজির হয়ে তাকে ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। গতকাল সোমবার ইসির পরিচালক (জনসংযোগ) শরিফুল আলম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘সিটি করপোরেশন নির্বাচন আচরণ বিধিমালা ২০১৬-এর বিধি ৩০ লঙ্ঘনের দায়ে, বিধি ৩১ ও ৩২ অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলর প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল অথবা তার বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, সে বিষয়ে লিখিত বক্তব্যসহ নির্বাচন কমিশনে (কক্ষ নম্বর-৩১৪, নির্বাচন ভবন) আগামী ১৪ জুন বিকেল ৩টায় ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য নির্বাচন কমিশন নির্দেশনা প্রদান করেছেন। সিলেট সিটি করপোরেশনের ৭ নম্বর সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আফতাব হোসেন খানের (ঘুড়ি প্রতীক) বিরুদ্ধে লোকজনসহ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বাড়ির সামনে সশস্ত্র মহড়া দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ, ভিডিওচিত্র রয়েছে এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি প্রচারিত হয়েছে।’
এতে আরও বলা হয়েছে, ‘তা ছাড়া ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিল প্রার্থী সায়ীদ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ (লাটিম প্রতীক) এ বিষয়ে কমিশন বরাবর লিখিত অভিযোগ এবং থানায় এজাহার দায়ের করেছেন। অভিযোগ ও এজাহারের ভিত্তিতে রিটার্নিং অফিসার তদন্ত করে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছেন, যেখানে ঘটনাটির সত্যতা পাওয়া গেছে।’
সিলেট আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ের মিডিয়া সেলের (সিটি-নির্বাচন) কর্মকর্তা সৈয়দ কামাল হোসেন জানান, ‘নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আফতাব হোসেন খানকে ১৪ তারিখ নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রধান কার্যালয়ে ডাকা হয়েছে।’
এদিকে সশস্ত্র মহড়ার ঘটনার পর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আফতাব খানের বিরুদ্ধে মামলাকারী ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী সায়ীদ আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে এবার মামলা হয়েছে। গত রবিবার রাতে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর কর্মী শাহনুরকে মারধরের অভিযোগে সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও কাউন্সিলর প্রার্থী আফতাব হোসেন খান বাদী হয়ে সায়ীদ মো. আবদুল্লাহসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় ৭০-৮০ জনকে আসামি করে মামলাটি করেছেন। গতকাল সোমবার সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) বিমানবন্দর থানার ওসি মঈন উদ্দিন এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এসএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) সুদীপ দাস জানান, কাউন্সিলর প্রার্থী আফতাব হোসেন খান নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দাখিল করলে, কমিশন মহানগর পুলিশের কাছে অভিযোগটি পাঠায়। তারপর মামলা হিসেবে অভিযোগটি গ্রহণ করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে যাদের নাম রয়েছে তারা হলেন নগরীর বনকলাপাড়া (দিঘিরপাড়) এলাকার মৃত তখলিছুর রহমানের ছেলে সায়ীদ আবদুল্লাহ (৩৬), পশ্চিম পীর মহল্লার ঐক্যতান ২২০ নম্বর বাসার আবদুল খালিকের ছেলে আবুল কালাম মাস্টার (৪৫), বনকলাপাড়া নূরানী ১০৪/৩ নম্বর বাসার কাজী মিজান (২৯), পশ্চিম পীর মহল্লা ৩৬ নম্বর বাসার সন্দু মিয়ার ছেলে জুনেদ আহমদ (৩৫), অগ্রণী আ/এ এলাকার গেছু মিয়ার ছেলে সোহাগ মিয়া (২৬), বনকলাপাড়া এলাকার শাহীন (৩০), একই এলাকার ৮২ নম্বর গলির মুমিন মিয়ার ছেলে রাজন আহমদ, কানাইঘাটের ভাল্লুকমারা গ্রামের মৃত তাহের আলীর ছেলে আলাউদ্দিন (৩৭), বনকলাপাড়া এলাকার নূরানী ৪৭ নম্বর বাসার ছাবের মিয়া (৩৪), নূরানী ৬৮/১ নম্বর বাসার মনির উদ্দিনের ছেলে এমাদ উদ্দিন সুয়েব (৩৩), মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে মতিউর রহমান মৃধা (৪২), নূরানী ৮৩/২৫ নম্বর বাসার মীর হোসেন ভূঁইয়ার ছেলে আমিন মিয়া (৩২), নূরানী ৪০ নম্বর বাসার আল আমিন (২৮)।
গত মঙ্গলবার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী সায়ীদ মো. আবদুল্লাহর বাড়ির সামনে কাউন্সিলর আফতাবের নেতৃত্বে সশস্ত্র মহড়া দেওয়া হয়। জানা গেছে, সায়ীদ আবদুল্লাহ জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এ ঘটনায় সায়ীদ আবদুল্লাহ কাউন্সিলর আফতাবের বিরুদ্ধে ইসিতে অভিযোগ দেন এবং থানায় মামলা করেন।
অশান্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আবারও ছাত্রদলের দুপক্ষের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলা ও সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় উভয়পক্ষ অর্ধশতাধিক ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি গঠন নিয়ে গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের বিরাসার বাইপাস এলাকায় এ সংঘর্ষ শুরু হয়। অন্তত আধাঘণ্টা ধরে চলা এ সংঘর্ষের সময় মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
জানা গেছে, গত ৮ জুন রাতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শাহীনুর রহমানকে আহ্বায়ক, সমীর চক্রবর্তীকে সদস্য সচিব ও পাঁচজনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে জেলা ছাত্রদলের সাত সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। তারা সবাই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ব্যক্তিগত সহকারী আবদুর রহমান সানীর বড় ভাই ব্যবসায়ী কবীর আহমেদ ভূঞার অনুসারী। এতে চরম ক্ষুব্ধ হয় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থনীতিবিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামলের অনুসারী জেলা ছাত্রদলের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়ক ফুজায়েল চৌধুরী ও তার সমর্থকরা। তারা গত শুক্রবার সকাল-বিকেল তাণ্ডব চালায় শহরের কান্দিপাড়া এলাকায়। ভাঙচুর করা হয় জেলা ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটির আহ্বায়ক শাহীনুর রহমান এবং কৃষক দলের আহ্বায়ক আবু শামীম মো. আরিফ ও যুগ্ম আহ্বায়ক কাউসার কাউন্সিলরের বাড়ি। পরদিন শনিবার রাতে শহরের জামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসা রোড এলাকায় দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, গোলাগুলি ও বোমাবাজির ঘটনা ঘটে। নবগঠিত জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্যরা বিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়ক ফুজায়েল চৌধুরীর সমর্থকদের দাপটে কোথাও দাঁড়াতে না পেরে এলাকা পরিবর্তন করে শহরের উত্তরাংশে লোকনাথ টেংকের পাড়ে গতকাল সোমবার সকালে মিছিলের ঘোষণা দিয়ে গত রবিবার থেকে প্রচারণা শুরু করে। এ খবর পেয়ে ফুজায়েল সমর্থকরা একই সময়ে একই জায়গায় পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করে প্রচারণা চালান। এমন পরিস্থিতিতে ফের শহরে আতঙ্ক দেখা দেয়। সংঘর্ষের আশঙ্কায় নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটিকে লোকনাথ টেংকের পাড়ে কর্মসূচি পালনের অনুমতি দেয়নি প্রশাসন ও পুলিশ। এ অবস্থায় তারা গতকাল সকালে শহরতলির বিরাসার মোড় থেকে আনন্দ মিছিল বের করে। মিছিলে জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক আবু শামীম আরিফ (ভিপি শামীম), স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন দিলীপ, ছাত্রদলের নতুন ঘোষিত কমিটির আহ্বায়ক শাহীনুর রহমান ও সদস্য সচিব সমীর চক্রবর্তীসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। মিছিল শুরুর আগমুহূর্তে ফুজায়েল চৌধুরীর নেতৃত্বে ছাত্রদলের ‘পদবঞ্চিত’ নেতাকর্মীরা হঠাৎ করে ধারালো অস্ত্রশস্ত্রসহ হামলা চালায়। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। মুহুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-লালপুর সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বাসস্ট্যান্ড এলাকার ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে পালাতে থাকেন। বোমার শব্দ, মারামারি ও দোকানের শাটার নামানোর শব্দে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয় পাশের বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডের প্রধান কার্যালয় ও তাদের স্কুল অ্যান্ড কলেজে। অন্তত আধা ঘণ্টা ধরে বিরাসার ও খৈয়াসার এলাকায় সংঘর্ষ চলে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, উভয়পক্ষের লোকজন কমপক্ষে অর্ধশত হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। খবর পেয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম শেখ ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. এমরানুল ইসলামের নেতৃত্বে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাঠিপেটা ও টিয়ার শেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সদর মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম জানান, তারা তিন রাউন্ড টিয়ার শেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সেলিম শেখ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সকাল থেকেই পরিস্থিতি বিবেচনায় আমি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশসহ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করি। সংঘর্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সংঘর্ষের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটির সদস্য সচিব সমীর চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা শহরতলির বিরাসার এলাকায় আনন্দ মিছিল করার সময় পদবঞ্চিতরা পেছন থেকে হামলা করে। আমরা ধাওয়া করলে তারা পালিয়ে যায়।’ জেলা ছাত্রদলের বিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়ক ফুজায়েল চৌধুরী বলেন, ‘মাদক কারবারির নেতৃত্বে গঠিত ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি আমরা মানি না। তারা যেখানেই কর্মসূচি দেবে, সেখানেই প্রতিহত করা হবে।’
চট্টগ্রামে ভূমি অধিগ্রহণের ১ কোটি ১৩ লাখ টাকা আত্মসাতের মামলায় তাদের বিরুদ্ধে একাধিকবার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। পুলিশ ও আদালতের নথিপত্রে প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে তারা ‘পলাতক’। পলাতক আসামি হিসেবে তাদের নাম-ঠিকানা দিয়ে গত ১ মার্চ একটি গেজেটও প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্ট আদালত। অথচ তারা সরকারি কর্মস্থলে চাকরি করছেন।
এই তিনজন হলেন দেবতোষ চক্রবর্তী, সুশীল বিকাশ চাকমা ও নুর চৌধুরী। প্রথমজন অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা। দ্বিতীয়জন কানুনগো।
তৃতীয়জন সার্ভেয়ার। এর মধ্যে শেষের দুজন কর্মরত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায়। দেবতোষ চক্রবর্তী বর্তমানে কর্মরত আছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের এলএ শাখায়। সুশীল বিকাশ চাকমা আছেন লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা ভূমি অফিসে এবং নুর চৌধুরী আছেন চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা ভূমি অফিসে। সরকারি একটি গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারি ভূমি অধিগ্রহণের ১ কোটি ১৩ লাখ ১৪ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করে দুদক। মামলার আসামি করা হয় চট্টগ্রামের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার সাবেক এবং বর্তমান কর্মকর্তা, কানুনগো, সার্ভেয়ারসহ ১৫ জন। এই ১৫ আসামির মধ্যে ১০ জন জামিনে আছেন। আলোচ্য তিনজনসহ বাকি পাঁচ আসামি পলাতক আছেন। মামলাটি বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১-এর তৎকালীন সহকারী পরিচালক জাফর আহমদ এ মামলা করেন।
অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা দেবতোষ চক্রবর্তীসহ ছয়জনকে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ এবং মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে, যা বাংলাদেশ গেজেট হিসেবে গত ১ মার্চ প্রকাশিত হয়। বিজ্ঞপ্তিতে চলতি বছরের ২ এপ্রিল আদালতে আসামিদের হাজির হওয়ার জন্য বলা হয়। কিন্তু তারা নির্ধারিত আদালতে হাজির হননি। দুদকের করা মামলার পলাতক আসামি হলেও বর্তমানে চট্টগ্রামের এলএ শাখায় অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন দেবতোষ চক্রবর্তী।
অভিযোগ, দেবতোষ চক্রবর্তী শুধু ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তাই নন। সরকারি কর্মচারী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে তিনি হয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্যও। তার রেজিস্ট্রেশন নম্বর ২০১৬০৫৪৫০১। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সাড়ে চার বছর ধরে তাকে খুঁজে না পেলেও জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের ২৪০ নম্বর কক্ষে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে দুদক কর্তৃক মামলা করার পর দেবতোষ চক্রবর্তীকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বদলি করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি ‘ম্যানেজ’ করে ফের বদলি হয়ে চলে আসেন চট্টগ্রাম জেলা ভূমি অধিগ্রহণ শাখায়।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম জিয়াউদ্দিন বলেন, আইনজীবী সমিতির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সমিতির কোনো সদস্য সরকারি বা আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে পারবে না। যদি করেন তাহলে গঠনতন্ত্রের ৯ বিধির ১ উপধারা মতে, ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। বক্তব্য জানতে অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা দেবতোষের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে দেবতোষ চক্রবর্তী সম্পর্কে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) আবু রায়হান দোলন বলেন, ‘এলএ শাখায় অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে দেবতোষ চক্রবর্তী নামে কেউ কর্মরত আছেন কি না আমাকে দেখতে হবে।’
চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানার ওসি জাহীদুল কবির বলেন, আদালত কর্তৃক গেজেট প্রকাশ হলেও এই থানায় কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে কি না দেখতে হবে।
জানা গেছে, ১ কোটি ১৩ লাখ ১৪ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুদক মামলা করলেও তদন্ত শেষে ২০২২ সালের ৩১ জুলাই আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন দুদক, ঢাকার কর্মকর্তা (উপপরিচালক) আবুল কালাম আজাদ। তিনি আসামিদের মামলার দায় থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করেছিলেন। কিন্তু চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ এবং মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ ড. বেগম জেবুননেছার আদালত দুদকের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ না করে ১৫ আসামির বিরুদ্ধে অপরাধ আমলে নেয়।
১ মার্চ প্রকাশিত গেজেট নোটিফিকেশনে বলা হয়, ‘মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইস্যু করা হইয়াছে। কিন্তু তাদের না পাওয়ায় জারি করা সম্ভব হয় নাই। যেহেতু ১৯৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ৮৭ ও ৮৮ ধারার বিধান মোতাবেক ওই আসামিদের বিরুদ্ধে কার্যক্রম গ্রহণ করা হইয়াছে এবং আদালতের বিশ্বাস করিবার কারণ রহিয়াছে যে, এই আদালতের বিচারার্থে উক্ত আসামিগণ গ্রেপ্তার এড়াইবার জন্য পলাতক রহিয়াছে বা আত্মগোপন করিয়াছে।’ দেবতোষ চক্রবর্তীসহ পলাতক থাকা অন্য পাঁচ আসামির গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে নগরের কোতোয়ালি থানার ওসিকে রবিবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
জারি করা ওই বিজ্ঞপ্তিতে ছয় আসামির মধ্যে ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের এলএ শাখার তৎকালীন ভূমি হুকুম দখল কর্মকর্তা, বর্তমানে ভূমি মন্ত্রণালয়ের গুচ্ছগ্রাম-২-এর উপপরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ শাহাদাৎ হোসেন। তিনি গত ২৮ মে আত্মসমর্পণ করে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে জামিনের আবেদন করেন। বিচারক মুনশি আবদুল মজিদ শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। চার দিন পর চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হন।
আদালত সূত্র জানায়, দুদকের করা ওই মামলায় (স্পেশাল ৬১/২০২২) অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা দেবতোষ চক্রবর্তী, কানুনগো সুশীল বিকাশ চাকমা এবং সার্ভেয়ার নুর চৌধুরীসহ পাঁচজন আসামি পলাতক আছেন। মামলায় জামিনে আছেন মিজানুর রহমান মাসুদ, হাফিজুর রহমান, মো. পারভেজ আলম, নুরে কানিজ রীনা, লাকী বেগম, সার্ভেয়ার যথাক্রমে মো. শহীদুল ইসলাম মুরাদ, মো. মজিবর রহমান, মো. আমানাতুল মাওলা, আশীষ চৌধুরী এবং ভূমি হুকুম দখল কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহাদাৎ হোসেন।
আল হিলালের হয়ে অভিষেকের পর চার ম্যাচ খেলেছিলেন নেইমার। কিন্তু কোনো ম্যাচে তিনি পাননি কোনো গোলের দেখা। অবশেষে আরবের ক্লাবটির হয়ে নিজের পঞ্চম ম্যাচে তিনি পেয়েছেন গোলের দেখা। তাতে দলও পেয়েছে বড় জয়ের দেখা।
এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগে ইরানের ক্লাব নাসাজি মাজান্দারানকে হারিয়েছে ৩-০ ব্যবধানে। দুই ম্যাচে চার পয়েন্ট নিয়ে ডি গ্রুপের দুইয়ে আল হিলাল। ছয় পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে নাভবাহোর।
ম্যাচের ১৮ মিনিটেই এগিয়ে যায় হিলাল। মোহাম্মদ আল বুরায়েকের বাড়ানো বলে জাল খুঁজে নেন অ্যালেক্সান্ডার মিত্রোভিজ। ৩৮ মিনিটে দুই দলই পরিণত হয় দশ জনের দলে। তর্কে জড়িয়ে লাল কার্ড দেখেন দুই দলের দুই ফুটবলার।
৫৮ মিনিটে সেই কাঙ্খিত গোলের দেখা পান নেইমার। নাসের আল দাওয়াসারির পা ঘুরে বল পেয়ে বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া শটে লক্ষ্যভেদ করেন এই তারকা। আর শেষ দিকে সালেহ আল সাহেরির গোলে বড় নিশ্চিত হয় আল হিলালের।
‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-৩’ শীর্ষক একটি প্রকল্প ২০২০ সালে অনুমোদন করিয়ে নিয়েছিলেন সংসদ সদস্যরা (এমপি)। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় তালিকা অনুযায়ী সংসদ সদস্যরা তাদের চাহিদার পরিবর্তন আনেন। তারা ইউনিয়ন পর্যায়ে রাস্তা না করে সেতু তৈরির ওপর জোর দেন। কিছু ক্ষেত্রে খাতভিত্তিক ব্যয় না চেয়ে থোক বরাদ্দও চাওয়া হয়েছিল। চাহিদার জটিলতায় ধীরগতিতে চলে প্রকল্পের বাস্তবায়ন। ঠিক সময়ে প্রকল্পটি শেষ করতে না পারার শঙ্কায় ফের সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।
যদিও একই রকম আরেকটি প্রকল্পের কাজ তখনো চলমান ছিল। চলমান একটি প্রকল্প শেষ না হতেই সংসদ সদস্যদের জন্য আরেকটি প্রকল্প নিয়ে তখন বেশ আলোচনা-সমালোচনাও হয়েছিল।
প্রকল্প-৩-এর মেয়াদ আছে আর এক বছর। অথচ কাজ চলছে ঢিমেতালে। নির্বাচনের আগে তাদের চাহিদার পরিবর্তন নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৬ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকার প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের পর ধীরে ধীরে এগোতে থাকে। এর বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। গত আগস্ট পর্যন্ত প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি ৪১ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
এ প্রকল্পের আওতায় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে প্রত্যেক সংসদ সদস্য ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছিলেন। সংসদ সদস্যরা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকার রাস্তাঘাট, সেতু, কালভার্ট নির্মাণে বছরে পাঁচ কোটি টাকা করে এই বরাদ্দ দেওয়া হয়।
প্রতি বছর পাঁচ কোটি করে চার বছরে এ অর্থে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করার কথা তাদের। সিটি করপোরেশন এলাকার ২০ সংসদ সদস্য এবং সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্যরা এ বরাদ্দের বাইরে রয়েছেন।
নিজ এলাকার উন্নয়নে এমন সুযোগ পেলেও সংসদ সদস্যরা কাজে লাগাতে পারেননি। প্রকল্পের মেয়াদ প্রায় শেষ। অথচ প্রকল্প বাস্তবায়ন অর্ধেকেরও কম হয়েছে। অধিকাংশ সংসদ সদস্যই তাদের প্রস্তাবিত প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারেননি। কিন্তু তারা বলছেন, যে চাহিদা তারা দিয়েছিলেন তার অধিকাংশ পেয়েছেন।
জানতে চাইলে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ও সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার আসনে যেসব চাহিদা দিয়েছিলাম সবগুলোই পেয়েছি। কিন্তু এ মুহূর্তে এসে বাস্তবায়নের অগ্রগতি ৪১ শতাংশ বলা হচ্ছে, এটি বিশ্বাসযোগ্য নয়। পরিকল্পনা কমিশনে কীসের ভিত্তিতে এই সংশোধনী প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তা জানি না।’
সংসদ সদস্যরা যে চাহিদা পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছেন সে বিষয়ে ইনু বলেন, ‘কোনো এমপি চাহিদা পরিবর্তন করার কথা নয়। আমার এলাকায় যা চেয়েছি তাই তো পুরোটা তারা দিতে পারেননি। প্রতি বছর পাঁচ কোটির বরাদ্দ, তার বাইরে তো তারা বাস্তবায়ন করতে পারবেন না।’ পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সম্প্রতি প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভা (পিইসি) অনুষ্ঠিত হয়েছে। পিইসি সভায় প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ রুহুল আমিন খানের কাছে সংশোধনের যৌক্তিকতা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। সেখানে তিনি বলেন, এ প্রকল্পে জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে ইতিমধ্যে বেশ কিছু সড়ক ও সেতু-কালভার্ট নতুনভাবে নির্মাণের প্রস্তাব পাওয়া গেছে। প্রাপ্ত স্কিমগুলোর গুরুত্ব বিবেচনায় বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। স্কিমগুলো বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পে অতিরিক্ত বরাদ্দ প্রয়োজন।
পিইসি সভার কার্যবিবরণী অনুযায়ী, এ বিষয়ে কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) মো. ছায়েদুজ্জামান বলেন, যেসব স্কিম অতীব জনগুরুত্বপূর্ণ সেগুলোর যৌক্তিকতাসহ সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (আরডিপিপি) অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তবে, নতুনভাবে গৃহীত স্কিমগুলো বাস্তবায়নের জন্য বরাদ্দ ৫০ কোটি টাকার কম করতে হবে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, তৃতীয় দফার এ প্রকল্পের আওতায় নতুন করে উপজেলা সড়ক নির্মাণ করা হবে ৩০৫ দশমিক ২১ কিলোমিটার। ইউনিয়ন সড়ক নির্মাণ করা হবে ৬৬০ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার। গ্রাম সড়ক উন্নয়ন হবে ৫ হাজার ৭৫ দশমিক ৭৬ কিলোমিটার। গ্রামীণ সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ হবে ১ হাজার ৯০ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার। গ্রামীণ সড়কে ১০০ মিটারের কম দৈর্ঘ্যরে সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করা হবে ৭ হাজার ৯৯২ দশমিক ২২ মিটার।
এসব প্রস্তাব সংসদ সদস্যদের চাহিদার ভিত্তিতেই করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবায়নের সময় ফের বাদ সাধেন তারাই। পরে মূল প্রকল্প প্রস্তাব থেকে প্রস্তাবিত প্রথম সংশোধনে ১৯৩ কিলোমিটার উপজেলা সড়ক, ৮৩ দশমিক ৯১ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়ক, ৫০৫ দশমিক ৪৪ কিলোমিটার গ্রাম সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম বাদ দেওয়ার আবদার করেছেন তারা। এর বিপরীতে ৩৯২ দশমিক শূন্য ১ কিলোমিটার গ্রাম সড়ক ও ২ হাজার ৬৭৪ দশমিক ৫১ মিটার সেতু-কালভার্টের প্রস্তাব এসেছে তাদের কাছ থেকে। সে অনুযায়ী সংশোধনী প্রস্তাব তৈরি করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।
জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ রুহুল আমিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা চিন্তা করেছি এ রাস্তাটি আজকে করব, কিন্তু দেখা গেল অন্য কোনো প্রকল্পের মাধ্যমে এ রাস্তাটি হয়ে গেছে। এমপিরা যেভাবে ডিও দেন প্রকল্পটি সেভাবে চলে, আমাদের ফ্রেমওয়ার্কটিই সেভাবে তৈরি করা।’
এ মুহূর্তে প্রকল্পটি সংশোধনের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আছে পরিবেশের জন্য ড্রেনেজ সুবিধা রাখতে হবে। একটি রাস্তা করতে গিয়ে দেখা গেল, একটি কালভার্ট বা সেতুর প্রয়োজন হয়েছে। এটি এখন প্রথম প্রায়োরিটি (অগ্রাধিকার)। এটি প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন হিসেবে কাজ করছে।’
বাস্তবায়নের ধীরগতির কারণ হিসেবে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘যখন প্রকল্পটি অনুমোদন হয়েছিল তখন করোনা মহামারী ছিল। করোনার কারণে প্রকল্পটির কাজ দেরিতে শুরু হয়েছিল, যার ফলে এ মুহূর্তে বাস্তবায়ন অগ্রগতি এ পর্যায়ে এসেছে।
পিইসি সভায় সংশোধনের কারণ জানতে চাওয়া হলে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ১১তম জাতীয় সংসদ সদস্যদের প্রাথমিক চাহিদাপত্র (ডিও) গ্রহণ করে স্কিমের তালিকা প্রণয়ন করা হয়। তবে বাস্তবায়ন পর্যায়ে বিশেষ পরিস্থিতি ও অগ্রাধিকার ক্রমপরিবর্তনের ফলে আরডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত স্কিম তালিকা পরিবর্তন করে ডিওর মাধ্যমে সংশোধিত নতুন স্কিম তালিকা করা হয়েছে। পরিবর্তিত স্কিম তালিকা অনুযায়ী গ্রাম সড়ক ও সেতু-কালভার্টের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং উপজেলা-ইউনিয়ন সড়কের পরিমাণ কমেছে।
এ প্রকল্পের তথ্য-বিশ্লেষণে দেখা যায়, এতে সবচেয়ে বেশি ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫ হাজার ৭৫ কিলোমিটারের গ্রামীণ সড়ক উন্নয়নের জন্য। এতে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪ হাজার ৬০ কোটি টাকা। ৬৬০ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়ক উন্নয়নের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫২৮ কোটি টাকা, ৩০৫ কিলোমিটার উপজেলা সড়ক উন্নয়নের জন্য ২৯০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছিল। তা ছাড়া ১ হাজার ৯০ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক সংরক্ষণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৮১ কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, এর আগে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ প্রথম সরকার গঠনের পর প্রত্যেক সংসদ সদস্য নিজ আসনের অবকাঠামো উন্নয়নে ১৫ কোটি টাকা করে পেয়েছিলেন। সে সময় প্রকল্পের ব্যয় ছিল ৪ হাজার ৮৯২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এটি ২০১০ সালের মার্চ থেকে ২০১৬ সালের জুনে শেষ হয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে সংসদ সদস্যদের ২০ কোটি টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এ পর্যায়ে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৬ হাজার ৭৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদে বাস্তবায়ন হয়েছে। এ প্রকল্পটি শেষ না করেই তৃতীয় মেয়াদে আবার ২০ কোটি টাকা করে দেওয়া হয়। এই উদ্যোগের কারণে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় প্রশ্নের মুখে পড়ে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এ প্রকল্পের আওতায় সংসদ সদস্যরা সরাসরি টাকা পাবেন না। তারা শুধু তাদের নির্বাচনী আসনে পছন্দ মোতাবেক প্রকল্পের নাম দেবেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চত্বরে শোভন আচরণ এবং বিশৃঙ্খলা-সৃষ্টি করে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার কারণে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের পাঁচ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার স্বাক্ষরিত এক পত্রে তাদের বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এইচএম আবু বকর চৌধুরী।
বহিষ্কৃতরা হলেন মোক্তারপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুল হেকিম, সদস্য মো. জাকির হোসেন, ওই ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য মো. আকরাম হোসেন, একই ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ফয়সাল ফকির এবং ওই ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জাইদুল।
তবে ঘটনার উসকানিদাতা মোক্তারপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান মো. আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের সাংগঠনিক ব্যবস্থা এখনো নেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এইচএম আবু বকর চৌধুরী বলেন, পুরো বিষয়টি আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা দেখছেন। এ ব্যাপারটি তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন।
সারা দেশে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ১ হাজার ৫৭৭টি অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ঢাকায় ঘটেছে ১৫৫টি, যা আগস্ট মাসের চেয়ে ২৭টি বেশি। এ সময় আগুনে ৪ জন নিহত ও ১১ আহত হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স মিডিয়া সেল থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকায় ১৫৫টি আগুনের ঘটনায় ৭ জন আহত হলেও কেউ মারা যায়নি। রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, হাজারীবাগ, তেজগাঁও, বারিধারা, উত্তরা এলাকায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা বেশি ঘটেছে। এর মধ্যে মিরপুর, মোহাম্মদপুর, বারিধারা এলাকায় গত মাসে ১৬টি করে অগ্নিকান্ড ঘটেছে।
সেপ্টেম্বর মাসের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ঢাকা বিভাগে ৬০৩, ময়মনসিংহ বিভাগে ৬৩, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৮৯, রাজশাহী বিভাগে ২২৫, খুলনা বিভাগে ১৩২, সিলেট বিভাগে ৫৭, বরিশাল বিভাগে ৬০ ও রংপুর বিভাগে ২৪৮টি আগুনের ঘটনা ঘটেছে।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, আগস্ট মাসের চেয়ে সেপ্টেম্বরে অগ্নিকাণ্ড কমেছে। আগস্টে সারা দেশে ১ হাজার ৬৬৭টি আগুনের ঘটনা ঘটেছিল।
পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা সেপ্টেম্বরে সারা দেশে ৭৮৭টি বিভিন্ন দুর্ঘটনায় উদ্ধার কার্যক্রমে অংশ নেন। এর মধ্যে আছে ঢাকায় ১৫৯, ময়মনসিংহে ৫৫, চট্টগ্রামে ১০২, রাজশাহীতে ২০১, খুলনায় ৮৮, সিলেটে ২৭, বরিশালে ৪১ ও রংপুর বিভাগে
১১৪টি দুর্ঘটনা।
ফায়ার সার্ভিস আরও জানায়, বিভিন্ন দুর্ঘটনার মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা রয়েছে ৫৯০। এ ছাড়া রান্নাঘরের গ্যাস সিলিন্ডারজনিত দুর্ঘটনা ঘটেছে ১০, গ্যাসলাইনে ত্রুটিজনিত ঘটনা ১৩, লিফট দুর্ঘটনা ১৫, বজ্রপাতের ১৯, নদী ও পানিতে ডুবে যাওয়ার ১১৫ এবং অন্যভাবে আরও ২৫টি দুর্ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় ১৮৪ জন নিহত ও ৭৭৭ জন আহত হয়েছে।
সেপ্টেম্বর মাসে শুধু ঢাকায় ৪৯টি বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত হয়েছে। রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, তেজগাঁও, পুরান ঢাকা এলাকায় দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে।
ফায়ার সার্ভিসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত মাসে সারা দেশ থেকে ফায়ার সার্ভিস আগুন ও বিভিন্ন দুর্ঘটনায় ৪ হাজার ৩৫৪টি কলের মাধ্যমে সেবা দিয়েছে। এ ছাড়া ১ হাজার ১৫২টি কলের মাধ্যমে ১ হাজার ৯৮ জন রোগী পরিবহনে অ্যাম্বুলেন্স সেবা দিয়েছে।
ঢাকায় অগ্নি দুর্ঘটনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলে গত ১৪ সেপ্টেম্বর ভোররাতে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। সেখানে আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিট কাজ করে। আর তখন তাদের সহযোগিতা করেছেন সেনা, নৌ, বিমানবাহিনী ও বিজিবির সদস্যরা। প্রায় ৫ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। কোনো ধরনের হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও মার্কেটের বিভিন্ন দোকানের মালামাল, আসবাবসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী ওই সময় বলেছিলেন, মার্কেটের ভেতরে কোনো ফায়ার সেফটি ও ফায়ার ফাইটিংয়ের ব্যবস্থা ছিল না। এ ছাড়া মার্কেটটি অনেকটা বঙ্গবাজার মার্কেটের মতো। ফুটপাত ও সড়কে দোকান থাকা এবং মানুষের ভিড়ের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হয়।
এর আগে বঙ্গবাজারের চারটি মার্কেটে অগ্নিকান্ডের পর ঢাকার বিভিন্ন মার্কেটে অভিযান চালায় ফায়ার সার্ভিস। বেশিরভাগ মার্কেট আগুনের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছিল অগ্নিনির্বাপণ বাহিনী। এরপরই নিউ সুপার মার্কেটে আগুনের ঘটনা ঘটে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও লক্ষ্মীপুর-৩ শূন্য আসনের উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির তফসিল অনুযায়ী আগামী ৫ নভেম্বর এই দুই আসনের উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে কমিশন সভা ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ এ তথ্য জানান।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১১ অক্টোবর (বুধবার) মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন, মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ১২ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার), মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল ১৩ থেকে ১৭ অক্টোবর, আপিল নিষ্পত্তি ১৮ অক্টোবর (বুধবার), প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৯ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার), প্রতীক বরাদ্দ ২০ অক্টোবর (শুক্রবার) এবং ভোটগ্রহণ ৫ নভেম্বর।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক। সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তারা। লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন কুমিল্লা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা। সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন লক্ষ্মীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা।
এর আগে, গত ১ অক্টোবর সংসদ সচিবালয় এই দুই আসন শূন্য ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচিত এমপি আবদুস সাত্তার ভূঞা এবং লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত এমপি এ কে এম শাহজাহান কামাল রাজধানীর একটি হাসপাতালে গত ৩০ সেপ্টেম্বর মারা যান। এরপর আসন দুটি শূন্য ঘোষণা করা হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোন দেশে ভালো চিকিৎসা হতে পারে তার খোঁজ নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা জার্মানিতে হতে পারে কিনা জানতে চেয়েছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। মঙ্গলবার জানতে চাইলে ঢাকায় জার্মানির সিডিএ জান রল্ফ জানোস্কি বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মিসেস জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার ধরন সম্পর্কে জেনেছি। তার ভালো চিকিৎসা বিশ্বের খুব কম দেশে সম্ভব। জার্মানিতে এসব সমস্যার খুব ভালো চিকিৎসা আছে। সরকারের অনুমোদন পেলে তিনি জার্মানিতে চিকিৎসা নিতে পারেন।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিডনির কর্মক্ষমতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ কারণে কয়েকবার তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড মনে করে সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কা মুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড রিকমেন্ডেশনে বলেছেন।
এর আগে ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় ৫ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। এ অবস্থায় তাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই সরকার সেসব আমলে না নিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আগের মতোই লিভারের জটিলতার পাশাপাশি ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে শঙ্কিত তার চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছে। শরীরে ক্যাথেডর লাগানো হয়েছে। আগে যেখানে দুই-তিন দিন পরপর পানি বের করা হয়েছে, এখন প্রতিদিনই পানি বের করতে হচ্ছে। তার কেবিনে মঙ্গলবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। লিভার সিরোসিসের সঙ্গে কিডনির জটিলতাও বাড়ছে। তার লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া সামনে বিকল্প নেই। এর জন্য খুব দ্রুত উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠানো দরকার।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই গুরুতর। গত সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। আবেদনটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত তাকে অনুমতি দেওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে খালেদা জিয়ার একান্ত সহকারী জানিয়েছেন।
পাশাপাশি সরকারের অনুমতি পেলে দ্রুততম সময়ে তাকে বিদেশে নিতে ভিসা-প্রক্রিয়া শুরু থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ প্রয়োজনীয় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। সরকারের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় ভিসা করানো যাচ্ছে না।
গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে এসব কথা জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম।
তিনি বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের খোঁজখবর নিচ্ছেন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান। শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ থাকলে প্রথমে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হতে পারে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নত হলে অন্য দেশে নেওয়া হবে।
সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘আমার বোন হেঁটে জেলে গেলেন। জেলে থাকাবস্থায় অসুস্থ হলে তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এরপর করোনার কারণে সরকার তাকে দুটি শর্তে মুক্তি দেয়। তখন থেকেই আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে আবেদন করে আসছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার তাকে মুক্তি দেয়নি। বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে না পারায় দিনের পর দিন তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে। এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে আমার বোন।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী এবিএম আব্দুস সাত্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি নেতারা সার্বক্ষণিক চেয়ারপারসনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আমরা সরকারের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে আমরা দ্রুততম সময়ে চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠাতে পারব।’
জিয়া পরিবারের সদস্যরা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তারা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন। অনুমতি পাওয়া মাত্র সব ধরনের পদক্ষেপ নেবেন। ইতিমধ্যে ভিসা প্রস্তুতিসহ অন্যান্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। বিদেশে নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাবেন তার পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান, ব্যক্তিগত সহকারী ফাতেমা ও ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। তখন থেকেই তিনি হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সেবায় সার্বক্ষণিক থাকছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আজ (গতকাল শুক্রবার) ম্যাডাম শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে বিকেলে তাকে তৃতীয়বারের মতো কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। রাতে আবার তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। পরে অবস্থার উন্নতি হলে তাকে ফের কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত চিকিৎসক দলের সদস্যরা জানান, খালেদা জিয়া ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। একই বছরের নভেম্বরে তার চিকিৎসকরা জানান, তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত দলীয় মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা তখন জানিয়েছিলেন, তাদের সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু করার ছিল, তারা তা করেছেন। পরবর্তী চিকিৎসা যুক্তরাজ্য, জার্মানি অথবা যুক্তরাষ্ট্রে করার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিবারকে বলেছেন। পরের বছর জুন মাসে খালেদা জিয়ার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটিতে রিং পরানো হয়। এখনো তার হার্টে দুটি ব্লক রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পাশাপাশি আমরা বিএনপি নেতারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চেয়ারপারসনের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে দ্রুতই চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠানো হবে।’
গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহিলা দলের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে মানুষটি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তাকে আজ সরকার গৃহবন্দি করে রেখেছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হলেও তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। আমরা আশা করি, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে তার পরিবার যে আবেদন করেছে, তা সরকার বাস্তবায়ন করবে।’
সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে। কারণ উনি মুক্ত থাকলে ওনাদের ক্ষমতায় থাকা কঠিন হয়ে যাবে। উনি মুক্ত থাকলে দেশের গণতন্ত্র মুক্ত থাকবে। উনি মুক্ত থাকলে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না।’
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী, সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছে। ফলে এখন জেলে যাওয়া বা আদালতের আশ্রয় নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ওই ৪০১ ধারাতেই বলা আছে, নির্বাহী আদেশে শর্ত ছাড়াই মুক্তি দেওয়া যায়। এমনকি সরকার সাজা মওকুফও করতে পারে। ফলে সরকারই শর্তহীন মুক্তি দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে।’
গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর বিষয়ে দুই-তিন দিন আগে তার ভাই শামীম এস্কান্দার এসেছিলেন। তিনি আবেদন জমা দিলে তা আইনমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে ব্যাখ্যার জন্য।
আবেদনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে থাকা বিএনপি নেতারা।
তারা গত বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছেন। খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। তারাও অপেক্ষা করছেন যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাবেন ওই নেতারা।
খালেদা জিয়াকে জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়ে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশে^র যে কয়েকটি দেশে সম্ভব, জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এরপর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এর আগেও অবশ্য খালেদা জিয়াকে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। এ ছাড়া তার মেরুদ-, হাত ও হাঁটুতে বাতের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হয়। সেদিন থেকে প্রায় দুই বছর কারাবন্দি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আরও সাত বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ করোনা মহামারির শুরুতে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দিয়েছিল সরকার। এরপর থেকে তার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো হচ্ছে।