
কক্সবাজারের পেকুয়ায় একটি মাটির বাঁধ নির্মাণে ৩০ লাখ টাকা ব্যয় হলেও প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রায় এক কোটি টাকা সমমূল্যের গম। শুষ্ক মৌসুমে চাষাবাদের সুবিধার্থে টইটং ইউনিয়নের একটি খালে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে অস্থায়ী ক্রস বাঁধটি নির্মাণ করা হয়। উপজেলার বারবাকিয়া ও টইটং ইউনিয়নের অনাবাদি জমি চাষাবাদের আওতায় আনার জন্য টইটং ইউনিয়নের টইটং-সোনাইছড়ি খালে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে অস্থায়ী বাঁধটি নির্মাণ করা হয়। যদিও বাঁধটি তৈরির সময় সরকারি কোনো বরাদ্দ ছিল না। নির্মাণকাজ শেষে স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ জাফর আলম ও কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প দেখিয়ে ২০০ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ নিয়ে আসা হয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর থেকে।
চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি সংসদ সদস্য জাফর আলম পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূর্বিতা চাকমা, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আবু তাহের, টইটং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী, বারবাকিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মাওলানা বদিউল আলম জিহাদীকে সঙ্গে নিয়ে ক্রস বাঁধটির নির্মাণকাজ উদ্ধোধন করেন। উদ্বোধন শেষে জাফর আলম স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘অধিক চাষাবাদ ও ফলনের লক্ষ্যে বিকল্প হিসেবে চাষাবাদের সুবিধার্থে টইটং-সোনাইছড়ি খালে অস্থায়ী মাটির ক্রস বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে ব্যয় হবে আনুমানিক ৩০ লাখ টাকা। উদ্বোধনের দুদিনের মধ্যেই টইটং খালের বারবাকিয়া নতুন পাড়া ও টইটং ইউনিয়নের নাপিতখালী পয়েন্টে মাটির ক্রস বাঁধটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। অবশ্য গত এপ্রিল মাসে বোরো আবাদ শেষ হওয়ায় অস্থায়ী বাঁধটি কেটে দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, টইটং-সোনাইছড়ি খাল একটি প্রবহমান খাল। এ জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) টইটং-সোনাইছড়ি খালের ওপর একটি মিনি রাবার ড্যাম নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে দরপত্রও আহ্বান করে। কিন্তু এলসি খুলে রাবার ব্যাগ আনতে হবে চীন থেকে। সে জন্য ড্যাম নির্মাণের কাজ স্থবির হয়ে পড়ায় টইটং-সোনাইছড়ি খালে বোরো মৌসুমে অস্থায়ী বাঁধটি নির্মাণ করা হয়েছিল। যাতে শুষ্ক মৌসুমে খালের মিঠাপানি আটকে টইটং ও বারবাকিয়া ইউনিয়নে বিপুল পরিমাণ জমিতে রবিশস্যের চাষাবাদ নির্বিঘেœ করা যায়।
পেকুয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাঁধটি নির্মাণের সময় এ জন্য সরকারি কোনো বরাদ্দ ছিল না। পরে জাফর আলম ও কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প দেখিয়ে ২০০ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ নিয়ে আসা হয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর থেকে। গত মে মাসে সেই বরাদ্দ আসার পর টইটং ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও একই ইউনিনের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হাজি শাহাব উদ্দিনকে সভাপতি করে পেকুয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে একটি প্রকল্প কমিটি জমা দেওয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত সপ্তাহে প্রকল্প কমিটির সভাপতি শাহাব উদ্দিন পেকুয়া পিআইও অফিস থেকে ১০০ মেট্রিক টন গম বরাদ্দের ছাড়পত্র নিয়ে চকরিয়া খাদ্য গুদাম থেকে তা উত্তোলন করে বাইরে বিক্রি করে দেন। বর্তমানে প্রতি টন গমের সরকারি বাজারমূল্য প্রায় ৫০ হাজার টাকা। সেই হিসাবে ১০০ মেট্রিক টন গমের দাম প্রায় ৫০ লাখ টাকা। বরাদ্দের আরও ১০০ মেট্রিক টন গম বিক্রির জন্য চলতি জুন মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে পিআইও অফিস থেকে ছাড়পত্র নিয়ে উত্তোলনের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন প্রকল্প কমিটির সভাপতি। বাঁধটির নির্মাণকাজ উদ্বোধনের সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য ৩০ লাখ টাকা ব্যয় হবে বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু সেই বাঁধ নির্মাণে প্রায় কোটি টাকার ২০০ মেট্রিক টন গম বরাদ্দের বিষয়টি নিয়ে এলাকায় চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। অনেকেই বিষয়টিকে সরকারি অর্থের হরিলুট হিসেবে আখ্যায়িত করছেন।
বারবাকিয়া ইউনিয়নের কৃষক রাসেল অভিযোগ করে বলেন, ‘টইটং-সোনাইছড়ি খালে অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সর্বোচ্চ ব্যয় হবে ১০-১৫ লাখ টাকার মতো। কিন্তু সেখানে ২০০ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ দেওয়ার ব্যাপরাটি রহস্যঘেরা। সংশ্লিষ্টরা বরাদ্দের গম লুট করতেই প্রকল্পে বেশি ব্যয় দেখিয়ে এই কা- ঘটিয়েছেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প কমিটির সভাপতি শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘সংসদ সদস্য আমাকে প্রকল্প কমিটির সভাপতি বানিয়েছেন। গত সপ্তাহে বরাদ্দের ১০০ মেট্রিক টন গম উত্তোলন করেছি। বরাদ্দ অনুযায়ী কাজ করা হয়েছে। আমি দুদিন ধরে অসুস্থ। আপনার সঙ্গে (প্রতিবেদক) এ বিষয়ে আর কথা বলতে পারব না।’
অস্থায়ী মাটির বাঁধটি তৈরির সময় কোনো বরাদ্দ না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পেকুয়ার পিআইও মো. আবু তাহের।
মাটির বাঁধ তৈরিতে বিপুল পরিমাণ গম বরাদ্দের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এমপি সাহেব ঢাকায় গিয়ে তদবির করে বরাদ্দ নিয়ে এসেছেন। তবে প্রকল্পে যদি অনিয়ম হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই তদন্ত করে দেখব।’
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ‘পেকুয়ার টইটং খালে মাটির ক্রস বাঁধের জন্য বরাদ্দ অতিরিক্ত হয়ে গেলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি দলীয়ভাবে না গেলে সরকার দলের কিছু নেতাদের নানা প্রলোভন ও ভয়ভীতি দেখিয়ে নির্বাচনে নিতে পারে এমনটাই আশঙ্কা করছে দলটি। সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনরত দলটি এটাও আশঙ্কা করছে যে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত প্রয়াত নাজমুল হুদার মেয়ে অন্তরা হুদার নেতৃত্বে তৃণমূল বিএনপির মাধ্যমেও দলের নেতাদের সংসদ নির্বাচনে নেওয়ার চেষ্টা চালাতে পারে আওয়ামী লীগ।
ক্ষমতাসীনদের এই কৌশল ঠেকাতে পাল্টা প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। দলটি সদ্য সমাপ্ত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়া স্থানীয় নেতাদের ‘মোনাফেক’ ও ‘বিশ্বাসঘাতক’ আখ্যা দিয়ে আজীন বহিষ্কার করেছে। জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রেও এই অবস্থানে থাকছে দলটি। বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাসহ একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতার সঙ্গে কথা এ তথ্য জানা গেছে।
তারা বলছেন, তৃণমূল বিএনপি নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্য না হলেও তাদের সরকারের নির্দেশে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। তবে নির্বাচন সামনে রেখে সরকার যত অপচেষ্টা করুক না কেন তা কোনো কাজে আসবে না। কারণ, তারা বিশ্বাস করেন ডুবন্ত নৌকায় উঠে বিএনপির কোনো নেতা নিজেকে রাজনৈতিকভাবে শেষ করে দিতে চাইবেন না। এরপরও বিএনপির কেউ চেষ্টা করলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদেরও বর্জন করা হবে।
আওয়ামী লীগের কৌশল সম্পর্কে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে গত ১৪ বছর অনেক অপকৌশল গ্রহণ করেছে। আগামীতেও তারা শেষ চেষ্টা করবে। কিন্তু তারা বিএনপির দায়িত্বশীল কোনো নেতাকে তাদের দলে কিংবা নির্বাচনে নিতে পারেনি। আগামীতেও পারবে না। কারণ বিএনপি বিগত যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ ও সুসংগঠিত।’
গত ১২ মে শুরু হওয়া পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির কেন্দ্রীয় কোনো নেতা অংশ নেননি। কয়েকজনের নাম শোনা গেলে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার দলের সিদ্ধান্ত মেনে তারা প্রার্থী হননি। তবে স্থানীয়ভাবে বিএনপি পরিবারের সদস্য হিসেবে পরিচিত দুজন গাজীপুর ও বরিশালে মেয়র পদে নির্বাচন করেছেন। এ ছাড়া স্থানীয় বেশ কয়েকজন নেতা কাউন্সিলর পদে অংশ নিয়েছেন। কাউন্সিলর পদে অংশ নেওয়া শতাধিক নেতাকে আজীবন বহিষ্কার করেছে বিএনপি। তবে বহিষ্কৃতদের মধ্যে অন্তত ৩৩ জন জয়লাভ করেছেন।
এর আগে বিএনপি ত্যাগী উকিল আব্দুস সাত্তার ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে উপনির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়লাভ করেন। তাকে জেতানোর জন্য আওয়ামী লীগ ও তার মিত্ররা সেখানে প্রার্থী দেয়নি, গণমাধ্যমে এমন খবর হয়েছে। উকিল সাত্তার গত বছরের ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশে অন্য সংসদ সদস্যদের সঙ্গে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। পরে পদত্যাগও করেছিলেন।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উকিল আব্দুস সাত্তার যে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশে নেবেন, সেটা আমরা আগেই ধারণা করেছিলাম। আওয়ামী লীগ বিএনপিকে অস্বস্তিতে বা বিপদে ফেলতে আগামী সংসদ নির্বাচনেও এমন কৌশল নিতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘বিগত সংসদ নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগ এমন অপকর্ম করেছিল। কিন্তু সুবিধা করতে পারেনি। আগামীতে তো আরও পারবে না; বিশেষ করে আমাদের ভয় ছিল চলমান সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীরা সরকারের প্ররোচনায় নির্বাচন করতে পারেন। তবে দলের পদধারী কেউ সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হননি।’
আগামী নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের কৌশলের বিষয়ে বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিনা ভোটে আওয়ামী লীগ আবারও জয়ী হতে হেন কাজ নেই যা তারা করবে না। তাই আমরাও সতর্ক আছি। আমাদের চোখ-কান খোলা আছে। সরকারের শেষ সময়ে দলের কেউ সেই নির্বাচনে অংশ নেবে না। তারপরও যদি কেউ ভয়ে কিংবা লোভে পড়ে নির্বাচনে যায়, তবে তাকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হবে। যাদের বহিষ্কার করা হবে, তাদের আর কখনোই দলে ফেরানো হবে না।’
এ প্রসঙ্গে এ্যানি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়া তৈমূর আলম খন্দকারকে বহিষ্কারের বিষয়টি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, তাকে আর দলে ফেরোনো হবে না। এসব নেতা দলের নেতাকর্মীদের কাছে মোনাফেক হিসেবে চিহ্নিত হবেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার আগাম নির্বাচনের পাঁয়তারা করছে। এমনকি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর যেসব দল নির্বাচনে যাবে না তাদের ওপর আরও চড়াও হতে পারে। বিরোধী রাজনীতির জ্যেষ্ঠ ও মাঝারি সারির নেতাদের গ্রেপ্তার করা হতে পারে। এ ছাড়া সারা দেশে আবারও হঠাৎ করে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা ও গ্রেপ্তার, পুরনো মামলার রায় দিচ্ছে সরকার। এ বিষয়গুলো কিছুটা ভাবিয়ে তুলছে আমাদের।’
সম্প্রতি বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব অভিযোগ করেছেন, তাদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তুলে নিয়ে, নির্যাতন করে ও কারাগারে আটকে রেখে নির্বাচন অংশ নিতে সরকার চাপ দিচ্ছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বিএনপিকে ভাঙার চেষ্টা করবে। কিন্তু বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে যে বিএনপি তার বাইরে যাকে-তাকে বিএনপি বলে ভোটে নেওয়ার চেষ্টা করলে এবং ভোট করার চেষ্টা করলে তা দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্য হবে না। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশে^র কোনো বন্ধুদেশ সেই নির্বাচনের বৈধতা দেবে না। তাই বিএনপি এসব বিষয় নিয়ে চিন্তিত নয়।’
মানুষ পৃথিবী ছাড়িয়ে মহাশূন্যে অভিযানে চালালেও অতল সাগরের কতটুকু আমাদের চেনা? পৃথিবীর বিশাল জলরাশির নিচে ওত পেতে আছে শত বিপদ। এই বিপদগুলোর কারণে প্রাচীনকালের নাবিকরা সাগর-মহাসাগরের নানা অংশ নিয়ে রটিয়েছেন গল্প, দানবের কল্পকাহিনি। সাগরকেন্দ্রিক রহস্যের মধ্যে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের রহস্য এখনো বলতে গেলে সমাধান হয়নি। এ ছাড়া যেসব এলাকায় প্রচুর জাহাজডুবি হয়েছে সাগরের সেসব অঞ্চল আখ্যা পেয়েছে অভিশপ্ত এলাকা হিসেবে। জাহাজডুবির নানা বিয়োগান্তক কাহিনি আজও টানে মানুষকে। এগুলোরই একটি হলো টাইটানিক। এমনকি শত বছর পেরিয়ে টাইটানিকের ধ্বংসস্থল বরং বলা ভালো কবর এখনো টানে অভিযাত্রীদের। টাইটানের কঙ্কাল দেখার যাত্রাটাও যে কতটা বিপজ্জনক তার সর্বশেষ উদাহরণ ডুবোযান ‘টাইটান’। এ ডুবোযান ও এর পাঁচ আরোহীর করুণ পরিণতির পর বিবিসির এক প্রতিবেদন বলছে ১৯১২ সালে ডুবে যাওয়া টাইটানিকের এলাকা এখনো বিপদমুক্ত নয়, বরং যৌক্তিকভাবে অভিশপ্তই বলা যায়। কারণ টাইটানিকের এই কবর ঘিরে নানা বিপদের ফাঁদ পেতে রেখেছে প্রকৃতি নিজেই।
হিমঠাণ্ডা সাগরে এক হিমশৈল বা আইসবার্গ ধ্বংস ডেকে এনেছিল দানবীয় টাইটানিকের। এখনো সেই ঝুঁকি রয়েই গেছে। বিবিসি জানায়, আইসবার্গগুলো এখনো জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে বড় ধরনের বিপত্তি তৈরি করে ২০১৯ সালের মার্চ থেকে আগস্ট মাসে ১ হাজার ৫১৫টি আইসবার্গ দক্ষিণ দিকে ভেসে আটলান্টিক সাগরে জাহাজ চলাচলের পথে ঢুকে পড়েছিল। টাইটানিকের এই চির-বিশ্রামের জায়গাটি তাই ঝুঁকিমুক্ত নয় এখনো। উপরিতল থেকে যাওয়া যাক গভীরে, যেখানে ঘুটঘুটে অন্ধকার। সাগরের পানি খুব দ্রুত সূর্যালোক শোষণ করে, এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় এক হাজার মিটারের (৩,৩০০ ফুট) চেয়ে বেশি গভীরে সূর্যালোক পৌঁছায় না। এর নিচে সাগরের যেকোনো জায়গা অতল অন্ধকারে ডুবে রয়েছে। আর ঠিক এ কারণেই টাইটানিক যে জায়গায় ডুবে আছে সেটি ‘মিডনাইট জোন’ নামে পরিচিত।
আগে যারা সাবমার্সিবল নিয়ে ওই জায়গায় গিয়েছিল তাদের অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, সম্পূর্ণ অন্ধকারের মধ্য দিয়ে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে সাগরের গভীরে নামার পর সাবমার্সিবলের আলোর নিচে হঠাৎ করেই সমুদ্রের তলদেশ এবং টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের কাঠামো ফুটে ওঠে। এ কারণে এ রকম গভীরতায় ডুবোযান পরিচালনা করা একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। তাছাড়া আছে প্রচণ্ড চাপ। সমুদ্রতলে ৩ হাজার ৮০০ মিটার (১২,৫০০ ফুট) পানির নিচে টাইটানিক এবং তার চারপাশের সবকিছু প্রায় ৪০এমপিএ চাপ সহ্য করছে, যা সমুদ্রের পিঠে পানির চাপের তুলনায় ৩৯০ গুণ বেশি। টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ ঘিরে রয়েছে চোরা স্রোত, এই স্রোতও বিপদের কারণ হতে পারে। সবচেয়ে বড় সত্য হলো টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের চারপাশে এমন অন্যান্য ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা এখনো অজানা রয়ে গেছে। সব মিলিয়ে নিখোঁজ টাইটান এবং অভিযাত্রীদের ভাগ্যে ঠিক কী ঘটেছিল সে সম্পর্কে সূত্র পাওয়া যাচ্ছে সামান্যই।
নির্ধারিত সময়েই উৎপাদনে আসছে কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র। দিনে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার এই কেন্দ্রটির বয়লার পরীক্ষা শুরু হয়েছে। গতকাল শনিবার বিদ্যুৎকেন্দ্রটির চিমনি দিয়ে ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়। পুরোপুরি উৎপাদনে যাওয়ার আগে বয়লার পরীক্ষার মাধ্যমে সবকিছু ঠিক আছে কি না তা যাচাই করে দেখা হচ্ছে। আগামী সেপ্টেম্বরেই পূর্ণমাত্রায় উৎপাদনে আসার লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে।
জানতে চাইলে মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ (কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড সিপিজিসিবিএল) প্রকল্পের পরিচালক আবুল কালাম আজাদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এভাবে টেস্ট কার্যক্রম চলবে।
তিনি বলেন, ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতিদিন কয়লা পুড়বে ১০ হাজার টন।
তাহলে কত দিনের কয়লা মজুদ রেখে উৎপাদনে আসবে কেন্দ্রটি? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘৬০ দিনের জন্য ছয় লাখ টন কয়লা মজুদ থাকবে প্রতিনিয়ত। ইতিমধ্যে প্রায় তিন লাখ টন কয়লা এসেছে এবং পর্যায়ক্রমে আরও আসতে থাকবে। অর্থাৎ, কয়লা আসা একটি রুটিন প্রক্রিয়া।’
স্থানীয় মাতারবাড়ী ধলঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান বলেন, ‘এত দিন আমরা বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুল্লি দিয়ে ধোঁয়া বের হতে দেখিনি। কিন্তু এখন আমরা চিমনি দিয়ে লালচে ধোঁয়া বের হতে দেখছি।’
এদিকে গতকাল সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রথমবারের মতো চুল্লি জ্বালানো হয়। পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদনে যাওয়ার প্রাথমিক ধাপ হিসেবে বয়লারের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়। বয়লার সচলের সক্ষমতার প্রমাণ হলো চুল্লি দিয়ে ধোঁয়া নির্গত হওয়া। আগামী দুই মাস এভাবে পরীক্ষা করে কেন্দ্রের কোথায় কী সমস্যা হচ্ছে তা নির্ধারণ করে সমাধান করা হবে বলে প্রকৌশলীরা জানান।
এই কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল কয়লা। কয়লা আনা হচ্ছে ইন্দোনেশিয়া থেকে। গত ২৫ এপ্রিল প্রথমবারের মতো জাহাজে করে কয়লা আনার পর গত শুক্রবারও একটি জাহাজে কয়লা এসেছে। এ পর্যন্ত পাঁচটি জাহাজে প্রায় তিন লাখ টন কয়লা এসেছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের রিজার্ভারগুলোতে এসব কয়লা জমা করা হচ্ছে।
কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিপিজিসিবিএল) অধীনে জাপানের তিনটি প্রতিষ্ঠানের একটি কনসোর্টিয়াম বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করছে। এই প্রকল্পের আওতায় ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি স্টিম টারবাইন, সার্কুলেটিং কুলিং ওয়াটার স্টেশন স্থাপন, ২৭৫ মিটার উচ্চতার চিমনি ও পানি শোধনব্যবস্থা স্থাপন করা হবে। পাশাপাশি টাউনশিপ নির্মাণ, গ্রাম বিদ্যুতায়ন এবং পল্লীবিদ্যুতায়ন কাজের আওতায় চকরিয়া-মাতারবাড়ী ১৩২ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণ ও ১৩২/৩৩ কেভি ক্ষমতাসম্পন্ন একটি সাবস্টেশন নির্মাণ করা হবে। যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন ও অ্যাশ ডিসপোজাল এরিয়া এবং বাফার জোন নির্মাণ করা হবে।
২০১৫ সালে কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প নেয় সরকার। জাইকার অর্থায়নে সেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বঙ্গোপসাগর থেকে মাতারবাড়ী পর্যন্ত ১৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ, ১৬ মিটার ড্রাফট (গভীরতা) এবং ২৫০ মিটার চওড়া চ্যানেল নির্মাণ করা হয় বিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায়। কয়লা বিদ্যুতের চ্যানেলের ওপর ভিত্তি করে গভীর সমুদ্রবন্দর গড়ে তোলা যায় বলে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) একটি প্রস্তাব দেয়। সেই প্রস্তাব ও পরে সমীক্ষার পর ‘মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প’ গ্রহণ করা হয়। আর এরই আওতায় চ্যানেলের চওড়া ১০০ মিটার বাড়ানোর পাশাপাশি গভীরতাও ১৮ মিটারে উন্নীত করে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্প নেওয়া হয়। এই বন্দরে ইতিমধ্যে ২২৯ মিটার দীর্ঘ ও ১২ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের (জাহাজের নিচে পানির গভীরতা) জাহাজ ভেড়ানোর মাধ্যমে গভীর সমুদ্রবন্দরের খেতাব অর্জন করেছে মাতারবাড়ী।
চট্টগ্রামের হাটহাজারীর উত্তর ফতেয়াবাদে প্রস্তাবিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার’ প্রকল্প প্রশাসনিক অনুমোদন পেয়েছে। প্রকল্পের ডিপিপি প্রি-একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। চট্টগ্রাম-নাজিরহাট-রাঙ্গামাটি মহাসড়ক সংলগ্ন দক্ষিণ পাহাড়তলী মৌজার অধীন ১০ একর ফসলি জমিতে প্রকল্পটি হবে। জমি অধিগ্রহণের লক্ষ্যে কিছুদিন আগে উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার নিরুপম চাকমা প্রকল্প এলাকার জমি মাপজোখ করে চিহ্নিত করেছেন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা পেয়ে সেদিন প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছেন হাটহাজারী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহিদুল আলম এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু রায়হান। তবে ফসলি জমিতে প্রকল্পটি হওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে।
জানা গেছে, দেশের নাগরিক ও শিক্ষার্থীদের সহজে মহাকাশ সম্পর্কে ধারণা দেওয়া এবং মহাকাশবিজ্ঞান শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করতে এই নভোথিয়েটার নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। নির্দেশনা পেয়ে ২০১৯ সালে প্রকল্পের ডিপিপি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে পাঠায় চট্টগ্রামের গণপূর্ত অধিদপ্তর।
হাটহাজারী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু রায়হান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার প্রকল্পটি এখন প্রি-একনেকে আছে। শিগগির একনেকে সেটি অনুমোদন হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা প্রকল্প এলাকাটি চিহ্নিত করে মাপজোখ করে দিচ্ছি। প্রকল্পের জন্য জায়গা লাগবে ১০ একর। সেটি হতে হবে বর্গাকৃতির। আগামী কিছুদিনের মধ্যে জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার এবং উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার যৌথভাবে প্রকল্প এলাকার জমি চিহ্নিত এবং মাপজোখ করবে। প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণসহ যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কাজ শুরু হতে বছরখানেক সময় লাগবে।’
এদিকে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন নিয়ে জমির মালিকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তাদের ভাষ্য, তারা সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের বিরোধী নয়; বরং সেটি বাস্তবায়ন হলে নাগরিক এবং শিক্ষার্থীরা মহাকাশবিজ্ঞান শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হবে। পাশাপাশি স্থানীয় শিক্ষিত বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফসলি জমি নষ্ট করে দেশে কোনো উন্নয়ন প্রকল্প গড়ে তোলা যাবে না মর্মে ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন।
এদিকে প্রকল্পটি আদৌ বাস্তবায়ন হবে কি না, তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়দের অনেকেই। সেখানকার জমির মালিকদের অভিমত, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার প্রকল্পটি গড়ে তোলা হচ্ছে ফসলি জমিতে। প্রকল্প এলাকার বাইরে আরও আবাদযোগ্য ১৫ থেকে ২০ একর জমি থাকছে। সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা দরিদ্র শ্রেণির। প্রকল্প এলাকার কৃষিজমিই তাদের একমাত্র অবলম্বন। সরকার চাইলে ফসলি জমি নষ্ট না করে স্থানীয় জঙ্গল দক্ষিণ পাহাড়তলী মৌজায় খাসজমিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে পারে। এ ছাড়া প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে কিংবা সুষ্ঠু পরিকল্পনা না থাকলে উত্তর ফতেয়াবাদের পশ্চিম দিক থেকে আসা বর্ষা ও পাহাড়ি ঢলের পানি নিষ্কাষণ বাধাগ্রস্ত হয়ে বিস্তীর্ণ এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার, ঢাকার পরিচালক নায়মা ইয়াসমিন বলেন, ‘প্রকল্পটি ফসলি জমির ওপর গড়ে তোলা হচ্ছে নাকি অনাবাদি জমির ওপর, সেটি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ভালো বলতে পারবেন।’
স্থানীয় বাসিন্দা মো. শোয়াইব বলেন, ‘মাঠপর্যায়ে বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার প্রকল্পের কাজ শুরু হতে এখনো অনেক দেরি। আগামী জানুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বর্তমান সরকার পুনরায় ক্ষমতায় এলে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন নিয়ে কোনো সংশয় থাকছে না। কিন্তু অন্য কোনো দল ক্ষমতায় এলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নামে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে কি না, তা যথেষ্ট সংশয় আছে। কারণ বর্তমান সরকারের আমলে জমি অধিগ্রহণের গেজেট নোটিফিকেশন হয়ে গেলে পরবর্তী সরকার প্রকল্প বাস্তবায়ন না করলে সংকটে পড়বে জমির মালিকরা।
নায়মা ইয়াসমিন বলেন, প্রস্তাবিত প্রকল্পটি নতুন প্রজন্মকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষায় আগ্রহী করা, জনগণের মধ্যে মহাকাশবিজ্ঞান সম্পর্কিত ধারণা এবং বৈজ্ঞানিক মনোভাব সঞ্চার করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য বিভিন্ন সায়েন্টিফিক এক্সিবিটসের বৈজ্ঞানিক দিক জনগণের কাছে সহজবোধ্যভাবে উপস্থাপন এবং তাহাদের বিজ্ঞান শিক্ষায় আগ্রহী করা।
নরসিংদীর পলাশের জিনারদীতে বসতঘরে ঢুকে এক কলেজছাত্রীকে ছুরি মেরে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। তার নাম বিনা মিত্র (১৮)। গত শুক্রবার রাতে এ ঘটনা ঘটে।
গতকাল শনিবার সকালে মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। বিনা মিত্র ঘোড়াশাল মুসাবিন হাকিম ডিগ্রি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিল।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুই বছর আগে ঘোড়াশাল পৌর এলাকার লাগাইল্লা গ্রামের সঞ্জয় মিত্রের সঙ্গে বাবা-মার অজান্তে প্রেম করে বিয়ে করে বিনা মিত্র। বিয়ের পর সে জানতে পারে সঞ্জয় আগে থেকেই বিবাহিত এবং তার সন্তানও রয়েছে। পরে সে ৫ থেকে ৬ মাস সংসার করে বাবার বাড়িতে চলে আসে। মাঝে মধ্যে তার স্বামীও তাদের বাড়িতে আসা-যাওয়া করত। কিন্তু কিছুদিন ধরে স্বামীর সঙ্গে মনোমালিন্য চলছিল তার। এরমধ্যে শুক্রবার রাতে বরাব মন্দিরের পাশে পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে রথযাত্রার প্রসাদ খাওয়া শেষে বাড়িতে ফিরে আসে সে। রাতে তার বাবা-মার থাকার ঘরের পাশের আরেকটি ঘরে পড়তে বসে বিনা। এ সময় তার মা উর্মিলা মিত্র কবিরাজি চিকিৎসা নিতে পাশের বাড়িতে যান। আর বাবা মুকুঞ্জ মিত্র পাশের রুমে ঘুমিয়ে পড়েন। পরে রাত ৯টার দিকে তার মা বাড়িতে এসে মেয়ের বিবস্ত্র মরদেহ দেখতে পান।
জিনারদী ইউপি মেম্বার জয়ন্ত দাস বলেন, রাতে আমরা বিষয়টি জানতে পেরে চেয়ারম্যান ও প্রশাসনকে জানাই। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে বিবস্ত্র অবস্থায় মেয়েটিকে পড়ে থাকতে দেখি। খুবই নৃশংসভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
পলাশ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সামসুল হক বলেন, সকালে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহতের মরদেহের বুকে ছুরিকাঘাত ও ছুরিবিদ্ধ ছিল। এ ঘটনায় তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাত বছর পর ভারতের মাটিতে অবতরণ পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের। ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে তারা গিয়েছিল সেখানে। তারপর এবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে। টুর্নামেন্ট শুরুর এক সপ্তাহ আগে তারা পৌঁছালেন দেশটিতে। সেখানে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে হোটেলে।
বার্তা সংস্থা এএফপি তাদের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
বাবর আজমরা সেখানে পৌঁছানো মাত্রই উচ্ছ্বসিত জনতা ভিড় করেন। হায়দ্রবাদের বিমানবন্দরের বাইরে তাদের দেখে অনেকেই চিৎকার করে উল্লাস প্রকাশ করতে থাকেন। বাবরের নাম উচ্চারণ করতও শোনা গেছে এসময়। পুলিশ উৎসুক জনতাকে আটকে রেখেছিল।
রাজনৈতিক বৈরি সম্পর্কের কারণে দুই দলের দেখা হয় না দ্বিপাক্ষিক কোনো সিরিজে। বিশ্ব মাতানো ক্রিকেটার থাকলেও পাকিস্তানিরা খেলতে পারে না আইপিএলে। কারণ ঐ একটাই। তবে বৈশ্বিক বা মহাদেশীয় ইভেন্টে তাদের ঘিরে আগ্রহ থাকে তুঙ্গে। সেটা দেখা গেছে এশিয়া কাপেও।
বিশ্বকাপ খেলতে আজ বাংলাদেশ উড়াল দিয়েছে ভারতে। সেই টুর্নামেন্টে সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন দেখে টাইগাররা। তামিম ইকবাল নেতৃত্ব ছাড়ার পর সাকিব আল হাসানের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে অধিনায়কত্বের ভার। আর আজই জানা গেল, বিশ্বকাপের পর একদিনও তিনি অধিনায়কত্ব করবেন না।
গত ১১ আগস্ট তৃতীয় দফায় ওয়ানডে অধিনায়কের দায়িত্ব নেন সাকিব আল হাসান। তখনই বলা হয়েছিল, সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপ ও ভারত বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দেবেন তিনি।
দেশের একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাতকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘এই বিশ্বকাপই শেষ। এরপর একদিনও (অধিনায়কত্ব) করবো না। যে কারণে আমি এশিয়া কাপের আগে নিতে চাইনি। এরপরও এটা না। আমার কাছে মনে হয়েছে আমি হাসতে চাই, খেলতে চাই, পারফর্ম করতে চাই। এই একটা কারণে আমি করতে চাইনি।’
সাকিব যোগ করেন, ‘আর কোনে কারণ নেই। বেস্ট হয় যদি অধিনায়ক না থাকি। অধিনায়কত্ব কি আমার কোনো ভেল্যু এড করতেছে ক্যারিয়ারে এই স্টেজে এসে? আমি তো মনে করি না।’
সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দলে পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলার ও ছিল না! কারন পরের দিনে সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকী রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা! মানুষের সাইলকোলজি এমন কেনও! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!’
বিশ্বকাপে তামিম ইকবালকে ওপেন থেকে সরিয়ে মিডল অর্ডারে ব্যাট করার প্রস্তাব দিয়ে ফোন করেছিলেন, তামিমের ভাষায় 'বোর্ডের টপ লেভেল' এবং 'ক্রিকেটের সাথে বেশ ইনভলভড' একজন।
তিনি তামিমকে বলেন, ''তুমি তো বিশ্বকাপে যাবা, তোমাকে তো ম্যানেজ করে খেলতে হবে। তুমি এক কাজ করো। তুমি প্রথম ম্যাচ খেলো না আফগানিস্তানের সঙ্গে।'
তিনি আবার বলেন, আচ্ছা তুমি যদি খেলোও, আমরা এমন একটা পরিকল্পনা করছি, তুমি যদি খেলোও, তাহলে নিচে ব্যাট করবে।''
তামিমের এমন বক্তব্যের পর প্রশ্ন উঠেছে, কেই সেই বোর্ড কর্মকর্তা? এক টিভি সাক্ষাৎকারে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'আমি এটা জানিনা।'
পরক্ষণেই তিনি বলেন, 'তবে যদি কেউ বলে থাকে, আমি সিউর তিনি অথোরাইজড পার্সন। আর এরকম কিছু বলে থাকলে আমি খারাপ কিছু বলেছে বলে আমি মনে করিনা। টিমের কথা চিন্তা করেই বলেছে। টিম কম্বিনেশন নিয়ে কথা বলে থাকলে দোষের কি আছে। আমার তো মনে হয় না দোষের কিছু আছে। নাকি এরকম কোনো প্রস্তাব দেয়া যাবে না। নাকি আপনি যা চাইবেন তাই করতে পারবেন?।'
বিশ্বমঞ্চে দেশের ক্রিকেটের দূত বলা যায় সাকিব আল হাসানকে। বর্ণিল এক ক্যারিয়ার গড়েছেন তিনি। তিন ফরম্যাটেই তিনি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। দেশের এই তারকা ক্রিকেটার নিজের পঞ্চম বিশ্বকাপে যাচ্ছেন দলের অধিনায়ক হিসেবে। সেই টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই জানা গেল কবে তিনি অবসর নিচ্ছেন।
দেশের একটি ক্রীড়াভিত্তিক টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজের অবসরের সময় জানিয়েছেন। তার ইচ্ছে ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর অবসর ঘোষণা করার। একইসঙ্গে তিন ফরম্যাটকে বিদায় জানাতে চান দেশের ক্রিকেটের এই তারা।
নেতৃত্ব ছাড়া ও অবসরের প্রসঙ্গ টেনে সাকিব বলেন, ‘আজকে এখন এই অবস্থায় বলছি, ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত ওয়ানডে খেলবো। ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলে টি-টোয়েন্টিকে বিদায় দেবো। টেস্টের অবসর শিগগিরই। তবে একেক ফরমেট একেক সময় ছাড়লেও আনুষ্ঠানিক অবসর ঘোষণা করবো ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর।’
অধিনায়কত্ব নিয়ে সাকিব বলেন, ‘আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দলে পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলার ও ছিল না! কারন পরের দিনে সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকী রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা! মানুষের সাইলকোলজি এমন কেনও! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!’
সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপের আগে একাধিক সিরিজে বিশ্রামের কথা বলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে দলের বাইরে রাখা হয়। শেষ পর্যন্ত এশিয়া কাপেও দলে ফেরানো হয়নি তাকে। যেহেতু সাকিবের নেতৃত্বে সেই আসরে খেলেছে বাংলাদেশ, তাই অনেকের ধারণা সাকিবের চাওয়াতেই দলের বাইরে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ।
তবে সাকিব এসব কথা উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়ক ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দল পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলারও ছিল না! কারন পরের দিন সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকি রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা!'
দলের ভেতরের কথা ভালোভাবে না জেনেই মানুষ যেভাবে সমালোচনা করে সেটাকে হাস্যকর বলেছেন সাকিব। বাংলাদেশ অধিনায়ক সমালোচকদের মানসিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, 'মানুষের সাইলকোলজি এমন কেন! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!'
অধিনায়ক একা যে দল নির্বাচন করেন না সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন সাকিব। তিনি বলেন, 'রিয়াদ ভাইয়ের যে ডেডিকেশন ছিল তার দলের প্রতি যে অবদান ছিল। দলের হয়ে খেলার যে ইচ্ছে ছিল, সবকিছু সবাই দেখতে পেরেছে। আমার দায়িত্বতো পুরো দলটা নির্বাচন করার না। এমনটা হলে এশিয়া কাপের একদিন পরেই এনাউন্স করে দল দিয়ে দিতে পারতাম। এটা অনেক প্রসেসের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। অনেক বিষয় চিন্তা করতে হয়। অনেক কিছু চিন্তা করে দলটা গড়তে হয়।'
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।