
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, যদি জনগণ ভোট দিতে পারে, যদি জনগণের ইচ্ছাটাকে প্রয়োগ করতে পারে, তাহলে তারা (আওয়ামী লীগ) ১০টা আসনও পাবে না। তারা জনগণের ভোট দেওয়া বন্ধ রেখে; নিজেরা সিল দিয়ে আগের রাতে ভোট করে। তারপর বলে ভোট হয়ে গেছে, আমরা জিতে গেছি।
গতকাল শনিবার বিকেলে বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে বরিশালে বিএনপির সহযোগী সংগঠনের যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের ডাকা তারুণ্যের সমাবেশে তিনি এই মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এ সরকার শুধু ভোটচোর না; এরা আমাদের পকেটও মারে। এ সরকারের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে চুরি করা, ডাকাতি করা, আর চুরি করা টাকা বিদেশে পাচার করা। তারা বলে তারা (আওয়ামী লীগ) নাকি বৈধ সরকার। সংবিধান অনুযায়ী এরা বৈধ নয়।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘আমরা পরিষ্কার করে বলছি এ সরকার বৈধ নয়। এ সরকার অবৈধ। এই অবৈধ সরকারের অধীনে কোনো দিন সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন যদি না হয়, তাহলে সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। গোটা দেশের মানুষ এক। এ সরকারের অধীনে আমরা কোনো নির্বাচনে যাব না।’
মির্জা ফখরুল সদ্য অনুষ্ঠিত বরিশাল সিটি নির্বাচনে হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী ও চরমোনাই পীর ফয়জুল করীমকে নিয়ে বলেন, ‘তাদের অধীনে নাকি ভালো নির্বাচন হয়। চরমোনাইর পীর তাকে আঘাত করতে পর্যন্ত দ্বিধাবোধ করেনি। আবার ইলেকশন কমিশন বলে “তিনি কি ইন্তেকাল করেছেন” এমন ইলেকশন কমিশন বানিয়েছে শেখ হাসিনা। প্রধান ইলেকশন কমিশন; যিনি প্রার্থী না মরলে শান্তি পান না। এরা আবার বলে “আমাদের অধীনে নির্বাচন হবে”।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকের নতুন একটি সংগ্রাম শুরু হয়েছে, এ সংগ্রাম ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। এই ভয়াবহ ফ্যাসিবাদ, অবৈধ সরকার, তারা আজকে মায়েদের সন্তানহারা করেছে। আজকের সমগ্র দেশে এই আওয়ামী লীগ, ভয়াবহ অবৈধ সরকার, শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য লোভে পড়ে লুট, পাচার করে ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার চেষ্টা করছে। আজ ১৪ বছর ধরে অত্যাচার, নির্যাতন করছে। জনগণের ক্ষতি করছে।’
সমাবেশে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণের সভাপতিত্বে এবং যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী প্রমুখ।
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি দলীয়ভাবে না গেলে সরকার দলের কিছু নেতাদের নানা প্রলোভন ও ভয়ভীতি দেখিয়ে নির্বাচনে নিতে পারে এমনটাই আশঙ্কা করছে দলটি। সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনরত দলটি এটাও আশঙ্কা করছে যে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত প্রয়াত নাজমুল হুদার মেয়ে অন্তরা হুদার নেতৃত্বে তৃণমূল বিএনপির মাধ্যমেও দলের নেতাদের সংসদ নির্বাচনে নেওয়ার চেষ্টা চালাতে পারে আওয়ামী লীগ।
ক্ষমতাসীনদের এই কৌশল ঠেকাতে পাল্টা প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। দলটি সদ্য সমাপ্ত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়া স্থানীয় নেতাদের ‘মোনাফেক’ ও ‘বিশ্বাসঘাতক’ আখ্যা দিয়ে আজীন বহিষ্কার করেছে। জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রেও এই অবস্থানে থাকছে দলটি। বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাসহ একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতার সঙ্গে কথা এ তথ্য জানা গেছে।
তারা বলছেন, তৃণমূল বিএনপি নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্য না হলেও তাদের সরকারের নির্দেশে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। তবে নির্বাচন সামনে রেখে সরকার যত অপচেষ্টা করুক না কেন তা কোনো কাজে আসবে না। কারণ, তারা বিশ্বাস করেন ডুবন্ত নৌকায় উঠে বিএনপির কোনো নেতা নিজেকে রাজনৈতিকভাবে শেষ করে দিতে চাইবেন না। এরপরও বিএনপির কেউ চেষ্টা করলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদেরও বর্জন করা হবে।
আওয়ামী লীগের কৌশল সম্পর্কে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে গত ১৪ বছর অনেক অপকৌশল গ্রহণ করেছে। আগামীতেও তারা শেষ চেষ্টা করবে। কিন্তু তারা বিএনপির দায়িত্বশীল কোনো নেতাকে তাদের দলে কিংবা নির্বাচনে নিতে পারেনি। আগামীতেও পারবে না। কারণ বিএনপি বিগত যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ ও সুসংগঠিত।’
গত ১২ মে শুরু হওয়া পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির কেন্দ্রীয় কোনো নেতা অংশ নেননি। কয়েকজনের নাম শোনা গেলে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার দলের সিদ্ধান্ত মেনে তারা প্রার্থী হননি। তবে স্থানীয়ভাবে বিএনপি পরিবারের সদস্য হিসেবে পরিচিত দুজন গাজীপুর ও বরিশালে মেয়র পদে নির্বাচন করেছেন। এ ছাড়া স্থানীয় বেশ কয়েকজন নেতা কাউন্সিলর পদে অংশ নিয়েছেন। কাউন্সিলর পদে অংশ নেওয়া শতাধিক নেতাকে আজীবন বহিষ্কার করেছে বিএনপি। তবে বহিষ্কৃতদের মধ্যে অন্তত ৩৩ জন জয়লাভ করেছেন।
এর আগে বিএনপি ত্যাগী উকিল আব্দুস সাত্তার ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে উপনির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়লাভ করেন। তাকে জেতানোর জন্য আওয়ামী লীগ ও তার মিত্ররা সেখানে প্রার্থী দেয়নি, গণমাধ্যমে এমন খবর হয়েছে। উকিল সাত্তার গত বছরের ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশে অন্য সংসদ সদস্যদের সঙ্গে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। পরে পদত্যাগও করেছিলেন।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উকিল আব্দুস সাত্তার যে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশে নেবেন, সেটা আমরা আগেই ধারণা করেছিলাম। আওয়ামী লীগ বিএনপিকে অস্বস্তিতে বা বিপদে ফেলতে আগামী সংসদ নির্বাচনেও এমন কৌশল নিতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘বিগত সংসদ নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগ এমন অপকর্ম করেছিল। কিন্তু সুবিধা করতে পারেনি। আগামীতে তো আরও পারবে না; বিশেষ করে আমাদের ভয় ছিল চলমান সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীরা সরকারের প্ররোচনায় নির্বাচন করতে পারেন। তবে দলের পদধারী কেউ সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হননি।’
আগামী নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের কৌশলের বিষয়ে বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিনা ভোটে আওয়ামী লীগ আবারও জয়ী হতে হেন কাজ নেই যা তারা করবে না। তাই আমরাও সতর্ক আছি। আমাদের চোখ-কান খোলা আছে। সরকারের শেষ সময়ে দলের কেউ সেই নির্বাচনে অংশ নেবে না। তারপরও যদি কেউ ভয়ে কিংবা লোভে পড়ে নির্বাচনে যায়, তবে তাকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হবে। যাদের বহিষ্কার করা হবে, তাদের আর কখনোই দলে ফেরানো হবে না।’
এ প্রসঙ্গে এ্যানি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়া তৈমূর আলম খন্দকারকে বহিষ্কারের বিষয়টি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, তাকে আর দলে ফেরোনো হবে না। এসব নেতা দলের নেতাকর্মীদের কাছে মোনাফেক হিসেবে চিহ্নিত হবেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার আগাম নির্বাচনের পাঁয়তারা করছে। এমনকি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর যেসব দল নির্বাচনে যাবে না তাদের ওপর আরও চড়াও হতে পারে। বিরোধী রাজনীতির জ্যেষ্ঠ ও মাঝারি সারির নেতাদের গ্রেপ্তার করা হতে পারে। এ ছাড়া সারা দেশে আবারও হঠাৎ করে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা ও গ্রেপ্তার, পুরনো মামলার রায় দিচ্ছে সরকার। এ বিষয়গুলো কিছুটা ভাবিয়ে তুলছে আমাদের।’
সম্প্রতি বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব অভিযোগ করেছেন, তাদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তুলে নিয়ে, নির্যাতন করে ও কারাগারে আটকে রেখে নির্বাচন অংশ নিতে সরকার চাপ দিচ্ছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বিএনপিকে ভাঙার চেষ্টা করবে। কিন্তু বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে যে বিএনপি তার বাইরে যাকে-তাকে বিএনপি বলে ভোটে নেওয়ার চেষ্টা করলে এবং ভোট করার চেষ্টা করলে তা দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্য হবে না। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশে^র কোনো বন্ধুদেশ সেই নির্বাচনের বৈধতা দেবে না। তাই বিএনপি এসব বিষয় নিয়ে চিন্তিত নয়।’
মানুষ পৃথিবী ছাড়িয়ে মহাশূন্যে অভিযানে চালালেও অতল সাগরের কতটুকু আমাদের চেনা? পৃথিবীর বিশাল জলরাশির নিচে ওত পেতে আছে শত বিপদ। এই বিপদগুলোর কারণে প্রাচীনকালের নাবিকরা সাগর-মহাসাগরের নানা অংশ নিয়ে রটিয়েছেন গল্প, দানবের কল্পকাহিনি। সাগরকেন্দ্রিক রহস্যের মধ্যে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের রহস্য এখনো বলতে গেলে সমাধান হয়নি। এ ছাড়া যেসব এলাকায় প্রচুর জাহাজডুবি হয়েছে সাগরের সেসব অঞ্চল আখ্যা পেয়েছে অভিশপ্ত এলাকা হিসেবে। জাহাজডুবির নানা বিয়োগান্তক কাহিনি আজও টানে মানুষকে। এগুলোরই একটি হলো টাইটানিক। এমনকি শত বছর পেরিয়ে টাইটানিকের ধ্বংসস্থল বরং বলা ভালো কবর এখনো টানে অভিযাত্রীদের। টাইটানের কঙ্কাল দেখার যাত্রাটাও যে কতটা বিপজ্জনক তার সর্বশেষ উদাহরণ ডুবোযান ‘টাইটান’। এ ডুবোযান ও এর পাঁচ আরোহীর করুণ পরিণতির পর বিবিসির এক প্রতিবেদন বলছে ১৯১২ সালে ডুবে যাওয়া টাইটানিকের এলাকা এখনো বিপদমুক্ত নয়, বরং যৌক্তিকভাবে অভিশপ্তই বলা যায়। কারণ টাইটানিকের এই কবর ঘিরে নানা বিপদের ফাঁদ পেতে রেখেছে প্রকৃতি নিজেই।
হিমঠাণ্ডা সাগরে এক হিমশৈল বা আইসবার্গ ধ্বংস ডেকে এনেছিল দানবীয় টাইটানিকের। এখনো সেই ঝুঁকি রয়েই গেছে। বিবিসি জানায়, আইসবার্গগুলো এখনো জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে বড় ধরনের বিপত্তি তৈরি করে ২০১৯ সালের মার্চ থেকে আগস্ট মাসে ১ হাজার ৫১৫টি আইসবার্গ দক্ষিণ দিকে ভেসে আটলান্টিক সাগরে জাহাজ চলাচলের পথে ঢুকে পড়েছিল। টাইটানিকের এই চির-বিশ্রামের জায়গাটি তাই ঝুঁকিমুক্ত নয় এখনো। উপরিতল থেকে যাওয়া যাক গভীরে, যেখানে ঘুটঘুটে অন্ধকার। সাগরের পানি খুব দ্রুত সূর্যালোক শোষণ করে, এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় এক হাজার মিটারের (৩,৩০০ ফুট) চেয়ে বেশি গভীরে সূর্যালোক পৌঁছায় না। এর নিচে সাগরের যেকোনো জায়গা অতল অন্ধকারে ডুবে রয়েছে। আর ঠিক এ কারণেই টাইটানিক যে জায়গায় ডুবে আছে সেটি ‘মিডনাইট জোন’ নামে পরিচিত।
আগে যারা সাবমার্সিবল নিয়ে ওই জায়গায় গিয়েছিল তাদের অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, সম্পূর্ণ অন্ধকারের মধ্য দিয়ে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে সাগরের গভীরে নামার পর সাবমার্সিবলের আলোর নিচে হঠাৎ করেই সমুদ্রের তলদেশ এবং টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের কাঠামো ফুটে ওঠে। এ কারণে এ রকম গভীরতায় ডুবোযান পরিচালনা করা একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। তাছাড়া আছে প্রচণ্ড চাপ। সমুদ্রতলে ৩ হাজার ৮০০ মিটার (১২,৫০০ ফুট) পানির নিচে টাইটানিক এবং তার চারপাশের সবকিছু প্রায় ৪০এমপিএ চাপ সহ্য করছে, যা সমুদ্রের পিঠে পানির চাপের তুলনায় ৩৯০ গুণ বেশি। টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ ঘিরে রয়েছে চোরা স্রোত, এই স্রোতও বিপদের কারণ হতে পারে। সবচেয়ে বড় সত্য হলো টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের চারপাশে এমন অন্যান্য ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা এখনো অজানা রয়ে গেছে। সব মিলিয়ে নিখোঁজ টাইটান এবং অভিযাত্রীদের ভাগ্যে ঠিক কী ঘটেছিল সে সম্পর্কে সূত্র পাওয়া যাচ্ছে সামান্যই।
নির্ধারিত সময়েই উৎপাদনে আসছে কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র। দিনে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার এই কেন্দ্রটির বয়লার পরীক্ষা শুরু হয়েছে। গতকাল শনিবার বিদ্যুৎকেন্দ্রটির চিমনি দিয়ে ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়। পুরোপুরি উৎপাদনে যাওয়ার আগে বয়লার পরীক্ষার মাধ্যমে সবকিছু ঠিক আছে কি না তা যাচাই করে দেখা হচ্ছে। আগামী সেপ্টেম্বরেই পূর্ণমাত্রায় উৎপাদনে আসার লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে।
জানতে চাইলে মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ (কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড সিপিজিসিবিএল) প্রকল্পের পরিচালক আবুল কালাম আজাদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এভাবে টেস্ট কার্যক্রম চলবে।
তিনি বলেন, ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতিদিন কয়লা পুড়বে ১০ হাজার টন।
তাহলে কত দিনের কয়লা মজুদ রেখে উৎপাদনে আসবে কেন্দ্রটি? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘৬০ দিনের জন্য ছয় লাখ টন কয়লা মজুদ থাকবে প্রতিনিয়ত। ইতিমধ্যে প্রায় তিন লাখ টন কয়লা এসেছে এবং পর্যায়ক্রমে আরও আসতে থাকবে। অর্থাৎ, কয়লা আসা একটি রুটিন প্রক্রিয়া।’
স্থানীয় মাতারবাড়ী ধলঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান বলেন, ‘এত দিন আমরা বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুল্লি দিয়ে ধোঁয়া বের হতে দেখিনি। কিন্তু এখন আমরা চিমনি দিয়ে লালচে ধোঁয়া বের হতে দেখছি।’
এদিকে গতকাল সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রথমবারের মতো চুল্লি জ্বালানো হয়। পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদনে যাওয়ার প্রাথমিক ধাপ হিসেবে বয়লারের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়। বয়লার সচলের সক্ষমতার প্রমাণ হলো চুল্লি দিয়ে ধোঁয়া নির্গত হওয়া। আগামী দুই মাস এভাবে পরীক্ষা করে কেন্দ্রের কোথায় কী সমস্যা হচ্ছে তা নির্ধারণ করে সমাধান করা হবে বলে প্রকৌশলীরা জানান।
এই কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল কয়লা। কয়লা আনা হচ্ছে ইন্দোনেশিয়া থেকে। গত ২৫ এপ্রিল প্রথমবারের মতো জাহাজে করে কয়লা আনার পর গত শুক্রবারও একটি জাহাজে কয়লা এসেছে। এ পর্যন্ত পাঁচটি জাহাজে প্রায় তিন লাখ টন কয়লা এসেছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের রিজার্ভারগুলোতে এসব কয়লা জমা করা হচ্ছে।
কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিপিজিসিবিএল) অধীনে জাপানের তিনটি প্রতিষ্ঠানের একটি কনসোর্টিয়াম বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করছে। এই প্রকল্পের আওতায় ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি স্টিম টারবাইন, সার্কুলেটিং কুলিং ওয়াটার স্টেশন স্থাপন, ২৭৫ মিটার উচ্চতার চিমনি ও পানি শোধনব্যবস্থা স্থাপন করা হবে। পাশাপাশি টাউনশিপ নির্মাণ, গ্রাম বিদ্যুতায়ন এবং পল্লীবিদ্যুতায়ন কাজের আওতায় চকরিয়া-মাতারবাড়ী ১৩২ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণ ও ১৩২/৩৩ কেভি ক্ষমতাসম্পন্ন একটি সাবস্টেশন নির্মাণ করা হবে। যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন ও অ্যাশ ডিসপোজাল এরিয়া এবং বাফার জোন নির্মাণ করা হবে।
২০১৫ সালে কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প নেয় সরকার। জাইকার অর্থায়নে সেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বঙ্গোপসাগর থেকে মাতারবাড়ী পর্যন্ত ১৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ, ১৬ মিটার ড্রাফট (গভীরতা) এবং ২৫০ মিটার চওড়া চ্যানেল নির্মাণ করা হয় বিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায়। কয়লা বিদ্যুতের চ্যানেলের ওপর ভিত্তি করে গভীর সমুদ্রবন্দর গড়ে তোলা যায় বলে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) একটি প্রস্তাব দেয়। সেই প্রস্তাব ও পরে সমীক্ষার পর ‘মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প’ গ্রহণ করা হয়। আর এরই আওতায় চ্যানেলের চওড়া ১০০ মিটার বাড়ানোর পাশাপাশি গভীরতাও ১৮ মিটারে উন্নীত করে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্প নেওয়া হয়। এই বন্দরে ইতিমধ্যে ২২৯ মিটার দীর্ঘ ও ১২ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের (জাহাজের নিচে পানির গভীরতা) জাহাজ ভেড়ানোর মাধ্যমে গভীর সমুদ্রবন্দরের খেতাব অর্জন করেছে মাতারবাড়ী।
কক্সবাজারের পেকুয়ায় একটি মাটির বাঁধ নির্মাণে ৩০ লাখ টাকা ব্যয় হলেও প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রায় এক কোটি টাকা সমমূল্যের গম। শুষ্ক মৌসুমে চাষাবাদের সুবিধার্থে টইটং ইউনিয়নের একটি খালে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে অস্থায়ী ক্রস বাঁধটি নির্মাণ করা হয়। উপজেলার বারবাকিয়া ও টইটং ইউনিয়নের অনাবাদি জমি চাষাবাদের আওতায় আনার জন্য টইটং ইউনিয়নের টইটং-সোনাইছড়ি খালে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে অস্থায়ী বাঁধটি নির্মাণ করা হয়। যদিও বাঁধটি তৈরির সময় সরকারি কোনো বরাদ্দ ছিল না। নির্মাণকাজ শেষে স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ জাফর আলম ও কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প দেখিয়ে ২০০ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ নিয়ে আসা হয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর থেকে।
চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি সংসদ সদস্য জাফর আলম পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূর্বিতা চাকমা, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আবু তাহের, টইটং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী, বারবাকিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মাওলানা বদিউল আলম জিহাদীকে সঙ্গে নিয়ে ক্রস বাঁধটির নির্মাণকাজ উদ্ধোধন করেন। উদ্বোধন শেষে জাফর আলম স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘অধিক চাষাবাদ ও ফলনের লক্ষ্যে বিকল্প হিসেবে চাষাবাদের সুবিধার্থে টইটং-সোনাইছড়ি খালে অস্থায়ী মাটির ক্রস বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে ব্যয় হবে আনুমানিক ৩০ লাখ টাকা। উদ্বোধনের দুদিনের মধ্যেই টইটং খালের বারবাকিয়া নতুন পাড়া ও টইটং ইউনিয়নের নাপিতখালী পয়েন্টে মাটির ক্রস বাঁধটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। অবশ্য গত এপ্রিল মাসে বোরো আবাদ শেষ হওয়ায় অস্থায়ী বাঁধটি কেটে দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, টইটং-সোনাইছড়ি খাল একটি প্রবহমান খাল। এ জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) টইটং-সোনাইছড়ি খালের ওপর একটি মিনি রাবার ড্যাম নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে দরপত্রও আহ্বান করে। কিন্তু এলসি খুলে রাবার ব্যাগ আনতে হবে চীন থেকে। সে জন্য ড্যাম নির্মাণের কাজ স্থবির হয়ে পড়ায় টইটং-সোনাইছড়ি খালে বোরো মৌসুমে অস্থায়ী বাঁধটি নির্মাণ করা হয়েছিল। যাতে শুষ্ক মৌসুমে খালের মিঠাপানি আটকে টইটং ও বারবাকিয়া ইউনিয়নে বিপুল পরিমাণ জমিতে রবিশস্যের চাষাবাদ নির্বিঘেœ করা যায়।
পেকুয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাঁধটি নির্মাণের সময় এ জন্য সরকারি কোনো বরাদ্দ ছিল না। পরে জাফর আলম ও কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প দেখিয়ে ২০০ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ নিয়ে আসা হয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর থেকে। গত মে মাসে সেই বরাদ্দ আসার পর টইটং ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও একই ইউনিনের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হাজি শাহাব উদ্দিনকে সভাপতি করে পেকুয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে একটি প্রকল্প কমিটি জমা দেওয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত সপ্তাহে প্রকল্প কমিটির সভাপতি শাহাব উদ্দিন পেকুয়া পিআইও অফিস থেকে ১০০ মেট্রিক টন গম বরাদ্দের ছাড়পত্র নিয়ে চকরিয়া খাদ্য গুদাম থেকে তা উত্তোলন করে বাইরে বিক্রি করে দেন। বর্তমানে প্রতি টন গমের সরকারি বাজারমূল্য প্রায় ৫০ হাজার টাকা। সেই হিসাবে ১০০ মেট্রিক টন গমের দাম প্রায় ৫০ লাখ টাকা। বরাদ্দের আরও ১০০ মেট্রিক টন গম বিক্রির জন্য চলতি জুন মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে পিআইও অফিস থেকে ছাড়পত্র নিয়ে উত্তোলনের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন প্রকল্প কমিটির সভাপতি। বাঁধটির নির্মাণকাজ উদ্বোধনের সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য ৩০ লাখ টাকা ব্যয় হবে বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু সেই বাঁধ নির্মাণে প্রায় কোটি টাকার ২০০ মেট্রিক টন গম বরাদ্দের বিষয়টি নিয়ে এলাকায় চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। অনেকেই বিষয়টিকে সরকারি অর্থের হরিলুট হিসেবে আখ্যায়িত করছেন।
বারবাকিয়া ইউনিয়নের কৃষক রাসেল অভিযোগ করে বলেন, ‘টইটং-সোনাইছড়ি খালে অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সর্বোচ্চ ব্যয় হবে ১০-১৫ লাখ টাকার মতো। কিন্তু সেখানে ২০০ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ দেওয়ার ব্যাপরাটি রহস্যঘেরা। সংশ্লিষ্টরা বরাদ্দের গম লুট করতেই প্রকল্পে বেশি ব্যয় দেখিয়ে এই কা- ঘটিয়েছেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প কমিটির সভাপতি শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘সংসদ সদস্য আমাকে প্রকল্প কমিটির সভাপতি বানিয়েছেন। গত সপ্তাহে বরাদ্দের ১০০ মেট্রিক টন গম উত্তোলন করেছি। বরাদ্দ অনুযায়ী কাজ করা হয়েছে। আমি দুদিন ধরে অসুস্থ। আপনার সঙ্গে (প্রতিবেদক) এ বিষয়ে আর কথা বলতে পারব না।’
অস্থায়ী মাটির বাঁধটি তৈরির সময় কোনো বরাদ্দ না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পেকুয়ার পিআইও মো. আবু তাহের।
মাটির বাঁধ তৈরিতে বিপুল পরিমাণ গম বরাদ্দের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এমপি সাহেব ঢাকায় গিয়ে তদবির করে বরাদ্দ নিয়ে এসেছেন। তবে প্রকল্পে যদি অনিয়ম হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই তদন্ত করে দেখব।’
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ‘পেকুয়ার টইটং খালে মাটির ক্রস বাঁধের জন্য বরাদ্দ অতিরিক্ত হয়ে গেলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
চট্টগ্রামের হাটহাজারীর উত্তর ফতেয়াবাদে প্রস্তাবিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার’ প্রকল্প প্রশাসনিক অনুমোদন পেয়েছে। প্রকল্পের ডিপিপি প্রি-একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। চট্টগ্রাম-নাজিরহাট-রাঙ্গামাটি মহাসড়ক সংলগ্ন দক্ষিণ পাহাড়তলী মৌজার অধীন ১০ একর ফসলি জমিতে প্রকল্পটি হবে। জমি অধিগ্রহণের লক্ষ্যে কিছুদিন আগে উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার নিরুপম চাকমা প্রকল্প এলাকার জমি মাপজোখ করে চিহ্নিত করেছেন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা পেয়ে সেদিন প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছেন হাটহাজারী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহিদুল আলম এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু রায়হান। তবে ফসলি জমিতে প্রকল্পটি হওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে।
জানা গেছে, দেশের নাগরিক ও শিক্ষার্থীদের সহজে মহাকাশ সম্পর্কে ধারণা দেওয়া এবং মহাকাশবিজ্ঞান শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করতে এই নভোথিয়েটার নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। নির্দেশনা পেয়ে ২০১৯ সালে প্রকল্পের ডিপিপি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে পাঠায় চট্টগ্রামের গণপূর্ত অধিদপ্তর।
হাটহাজারী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু রায়হান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার প্রকল্পটি এখন প্রি-একনেকে আছে। শিগগির একনেকে সেটি অনুমোদন হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা প্রকল্প এলাকাটি চিহ্নিত করে মাপজোখ করে দিচ্ছি। প্রকল্পের জন্য জায়গা লাগবে ১০ একর। সেটি হতে হবে বর্গাকৃতির। আগামী কিছুদিনের মধ্যে জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার এবং উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার যৌথভাবে প্রকল্প এলাকার জমি চিহ্নিত এবং মাপজোখ করবে। প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণসহ যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কাজ শুরু হতে বছরখানেক সময় লাগবে।’
এদিকে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন নিয়ে জমির মালিকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তাদের ভাষ্য, তারা সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের বিরোধী নয়; বরং সেটি বাস্তবায়ন হলে নাগরিক এবং শিক্ষার্থীরা মহাকাশবিজ্ঞান শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হবে। পাশাপাশি স্থানীয় শিক্ষিত বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফসলি জমি নষ্ট করে দেশে কোনো উন্নয়ন প্রকল্প গড়ে তোলা যাবে না মর্মে ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন।
এদিকে প্রকল্পটি আদৌ বাস্তবায়ন হবে কি না, তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়দের অনেকেই। সেখানকার জমির মালিকদের অভিমত, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার প্রকল্পটি গড়ে তোলা হচ্ছে ফসলি জমিতে। প্রকল্প এলাকার বাইরে আরও আবাদযোগ্য ১৫ থেকে ২০ একর জমি থাকছে। সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা দরিদ্র শ্রেণির। প্রকল্প এলাকার কৃষিজমিই তাদের একমাত্র অবলম্বন। সরকার চাইলে ফসলি জমি নষ্ট না করে স্থানীয় জঙ্গল দক্ষিণ পাহাড়তলী মৌজায় খাসজমিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে পারে। এ ছাড়া প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে কিংবা সুষ্ঠু পরিকল্পনা না থাকলে উত্তর ফতেয়াবাদের পশ্চিম দিক থেকে আসা বর্ষা ও পাহাড়ি ঢলের পানি নিষ্কাষণ বাধাগ্রস্ত হয়ে বিস্তীর্ণ এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার, ঢাকার পরিচালক নায়মা ইয়াসমিন বলেন, ‘প্রকল্পটি ফসলি জমির ওপর গড়ে তোলা হচ্ছে নাকি অনাবাদি জমির ওপর, সেটি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ভালো বলতে পারবেন।’
স্থানীয় বাসিন্দা মো. শোয়াইব বলেন, ‘মাঠপর্যায়ে বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার প্রকল্পের কাজ শুরু হতে এখনো অনেক দেরি। আগামী জানুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বর্তমান সরকার পুনরায় ক্ষমতায় এলে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন নিয়ে কোনো সংশয় থাকছে না। কিন্তু অন্য কোনো দল ক্ষমতায় এলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নামে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে কি না, তা যথেষ্ট সংশয় আছে। কারণ বর্তমান সরকারের আমলে জমি অধিগ্রহণের গেজেট নোটিফিকেশন হয়ে গেলে পরবর্তী সরকার প্রকল্প বাস্তবায়ন না করলে সংকটে পড়বে জমির মালিকরা।
নায়মা ইয়াসমিন বলেন, প্রস্তাবিত প্রকল্পটি নতুন প্রজন্মকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষায় আগ্রহী করা, জনগণের মধ্যে মহাকাশবিজ্ঞান সম্পর্কিত ধারণা এবং বৈজ্ঞানিক মনোভাব সঞ্চার করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য বিভিন্ন সায়েন্টিফিক এক্সিবিটসের বৈজ্ঞানিক দিক জনগণের কাছে সহজবোধ্যভাবে উপস্থাপন এবং তাহাদের বিজ্ঞান শিক্ষায় আগ্রহী করা।
ব্যাংকপাড়াখ্যাত মতিঝিল এখন মৃতপ্রায়। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোতে না পারায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অন্যত্র সরে যাচ্ছে। দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতির চাকা ঘোরানো মতিঝিলে আবাসিক ভবন, শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান তৈরি না হলে দেশের প্রধান এই বাণিজ্যিক অঞ্চল প্রাণ হারাবে বলে মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
তাদের মতে, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে বড় অবদান রয়েছে মতিঝিলের টাকার। শুধু তা-ই নয়, মতিঝিলে উপার্জিত অর্থে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে দুবাই, সিঙ্গাপুর, আমেরিকা, কানাডাসহ আরও অনেক দেশে। এখানকার উপার্জিত টাকা অনেকে জমা রেখেছেন সুইস ব্যাংকেও। শুধু উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি মতিঝিলে। এ যেন মা কাঁকড়ার আত্মত্যাগের গল্প। মা কাঁকড়া বাচ্চাদের আগলে রাখে বুকের ভেতর; যেদিন বাচ্চাগুলো বের হয়ে আসে, সেদিন খোলস ছাড়া মা কাঁকড়ার আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। মা কাঁকড়ার মতো দুঃখী ও ত্যাগী বাণিজ্যিক মতিঝিল।
ষাটের দশকে মতিঝিলে গড়ে ওঠে দেশের কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল (সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট-সিবিডি)। সেই থেকে এখনো দেশের প্রধান বাণিজ্যিক অঞ্চল মতিঝিল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের সংখ্যা ৬১। এর মধ্যে সরকারি ৮টি, বেসরকারি ৪৫টি এবং বিদেশি ব্যাংক রয়েছে ৮টি। এ ছাড়া ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ৮১টি বীমা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্ধেকের বেশির প্রধান কার্যালয় চলে গেছে কারওয়ান বাজার, গুলশান-বনানী ও উত্তরায়। নতুন করে যেসব ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অনুমোদন পাচ্ছে, সেগুলোর প্রধান কার্যালয় মতিঝিলের বাইরে করা হচ্ছে।
জানা গেছে, মতিঝিলের আশপাশে পরিকল্পিত কোনো আবাসিক এলাকা, অভিজাত হোটেল, কাজের ফাঁকে অবসর কাটানোর মতো উন্মুক্ত স্থান, শপিং কমপ্লেক্স না থাকায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজের সুবিধার জন্য অন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান কার্যালয়গুলোও মতিঝিলের বাইরের এলাকা, অর্থাৎ কারওয়ান বাজার, গুলশান অ্যাভিনিউ, কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউতে গড়ে উঠছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দৈনিক বাংলা, শাপলা চত্বর, মধুমিতা সিনেমা হল এবং ইত্তেফাক মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে এবং দিলকুশা, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ভবন এবং বঙ্গভবনের পাশের এলাকাজুড়ে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল। বিশ্বের বাণিজ্যিক অঞ্চলের ভবনগুলো সুউচ্চ হয়ে থাকে। কিন্তু মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের পাশেই বঙ্গভবন। নিরাপত্তার কারণে বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর কোনো বহুতল ভবন করতে দেওয়া হচ্ছে না। যদিও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী, মতিঝিলের প্লটগুলোর ‘নন-রেসট্রিকটেড’ উচ্চতা দেওয়া রয়েছে। কিন্তু বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর সাড়ে চারতলার বেশি উচ্চতার ভবনের অনুমোদন মেলে না। ফলে মূল্যবান ওই প্লটগুলোর সঠিক ব্যবহার করতে পারছেন না মালিকরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার স্থাপনাগুলোর বেশিরভাগ জরাজীর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণও রয়েছে কয়েকটি ভবন। একটির সঙ্গে অন্যটি লাগানো। দুটি ভবনের মাঝখানে উন্মুক্ত জায়গা নেই বেশিরভাগ ভবনের। দিলকুশা এলাকার বঙ্গভবন লাগানো ভবনগুলোর মাঝখানেও কোনো ফাঁকা জায়গা দেখা যায় না।
সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, মতিঝিল এলাকার ফুটপাতগুলো হকারদের দখলে। ভাঙাচোরা এবড়োখেবড়ো সড়ক। সড়ক বিভাজকগুলো শ্রীহীন। এগুলোতে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ হয়নি। প্রধান সড়ক থেকে একটু ভেতরে গেলে মতিঝিলের আরও করুণ দশা চোখে পড়ে। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকার সড়কের ফুটপাতে গড়ে উঠেছে চটের ছালা দিয়ে ঘেরা খাবারের হোটেল, চায়ের দোকান এবং নানা পণ্যের অস্থায়ী দোকান। সামান্য বৃষ্টিতে মতিঝিল এলাকার সড়কগুলো তলিয়ে থাকে পানির নিচে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাভুক্ত। ডিএসসিসি এলাকার জন্য একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজ চলছে। খসড়া মাস্টারপ্ল্যানে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দাবি করেছে, কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল হিসেবে মূল্যায়ন করলে মতিঝিল ইতিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছে। যদিও এটা মানতে নারাজ ডিএসসিসির কারিগরি কমিটি।
মতিঝিল এলাকার বেহাল অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থানীয় কাউন্সিলর মো. মোজাম্মেল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিল এলাকার সংস্কার ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে ডিএসসিসি। পরিত্যক্ত প্রায় ১০ কাঠা জায়গার ওপর একটি পার্ক তৈরি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পার্কটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মতিঝিলের সড়ক, নর্দমা, ফুটপাত ও সড়ক বিভাজকের অনেক সমস্যা রয়েছে। সেগুলোর সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা দরকার। পর্যায়ক্রমে এ এলাকার বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে কাজ করবে ডিএসসিসি। তবে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের মূল সংস্কার ও আধুনিকায়নের দায়িত্ব রাজউকের। রাজউককে সেসব বিষয় পরিকল্পনা করে বাস্তবায়ন করতে হবে। এসব কাজে সিটি করপোরেশনের সহযোগিতা লাগলে করপোরেশন সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে তোলে রাজউক। রাজউক সূত্রে জানা যায়, ষাটের দশক থেকেই মতিঝিলের পুরোপুরি বাণিজ্যিক বৈশিষ্ট্য অনুপস্থিত। বিশে^র উন্নত দেশগুলোর বাণিজ্যিক অঞ্চলে শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান থাকে। আর কাছাকাছি এলাকায় পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা থাকে। মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার ক্ষেত্রে সেটা ছিল না। অভিজাত মানের হোটেল পূর্বাণী গড়ে উঠলেও আশপাশে সময় কাটানোর মতো ব্যবস্থা নেই। সে কারণে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দেশ-বিদেশ থেকে আসা লোকজন গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় থাকেন। মতিঝিলের সৌন্দর্য নিশ্চিত করতে ও আধুনিকায়নে যেসব বিষয়ে দৃষ্টি রাখা দরকার ছিল রাজউক ও সিটি করপোরেশন সেটা করেনি।
রাজউক সূত্রে আরও জানা যায়, ঢাকার অভিজাত আবাসিক এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধরা, উত্তরা। সেই সব এলাকা থেকে মানুষ মতিঝিলে আসেন। শহরের জনসংখ্যা বাড়ায় দিন দিন যানজট বাড়ছে। ওই সব এলাকা থেকে মতিঝিলে আসতে সড়কে এক থেকে দেড় ঘণ্টা চলে যায়। দৈনিক ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা কর্মঘণ্টার মধ্যে ৩০ শতাংশ সময় সড়কে নষ্ট হচ্ছে। ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে চিন্তা করেছে, তার কর্মস্থল এমন একটা জায়গায় হবে যা তার আবাসনের কাছাকাছি। মতিঝিল থেকে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অন্যত্র সরে যাওয়ার ক্ষেত্রে এসব বিষয়ও ভূমিকা রেখেছে।
কালের বিবর্তনে গুলশান হয়ে উঠেছে বাণিজ্যিক এলাকা। কারওয়ান বাজার, উত্তরায়ও গেছে কিছু। এসব জায়গায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক কার্যক্রমও সেখানে চলে গেছে। এসব এলাকার আশপাশে গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় তাদের বসবাস। আবাসিক এলাকা ছাড়া, পৃথিবীর কোথাও শতভাগ জায়গা শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষা অথবা একই শ্রেণির কর্মকান্ডের জন্য ব্যবহার হয় না।
রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও মুখপাত্র মো. আশরাফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, নগর পরিকল্পনায় ভূমির ব্যবহার সম্পর্কে বলা হয়, যেকোনো জায়গার ব্যবহার হবে ২৪ ঘণ্টা। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল কর্মচঞ্চল থাকে মাত্র ১২ ঘণ্টা। এরপর ওই জায়গার ব্যবহার হয় না। রাতে নীরব ও ভুতুড়ে এলাকায় পরিণত হয়।
তিনি বলেন, যে মতিঝিলে দিনের বেলায় হাঁটা যায় না; গাড়ির কারণে, যানজটে; সেই মতিঝিলে রাত ৮টার পরে আবার একাও হাঁটা যায় না; অনিরাপদ বোধ হয়। এ জন্য যারা দিনে বাণিজ্য করতে আসেন, তারা মতিঝিল এলাকার হোটেলগুলোতে থাকেন না। অন্যদিকে গুলশান-বনানী এলাকায় থাকলে তারা শপিংয়ে যেতে পারেন, কফি শপে যেতে পারেন। এসব কারণে সারা বিশ্বে ভূমির মিশ্র ব্যবহারকে উৎসাহিত করেছে।
আশরাফুল ইসলাম বলেন, মতিঝিল এলাকা যেহেতু ইতিমধ্যে তার আভিজাত্য হারিয়ে ফেলেছে, এ জন্য মতিঝিলের জমির শ্রেণিকে মিশ্র ব্যবহার হিসেবে ঢেলে সাজানোর প্রস্তুতি নিয়েছে রাজউক। সংশোধিত ড্যাপে সে বিষয়ে নির্দেশনা রাখা হয়েছে। পৃথিবীর নগর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ৫০, ৬০ বা ১০০ বছর অন্তর সেসব ঢেলে সাজানো হয়। সেটা বিবেচনায় নিয়েই মতিঝিল এলাকাকেও ঢেলে সাজাতে হবে। এখানে আবাসিকের বৈশিষ্ট্য দিতে হবে; কনডোমিনিয়াম গড়ে তুলতে হবে। ইতিমধ্যে রাজউক বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনে ১৬ একর জায়গা নিয়ে একটি পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানে লাইব্রেরি, ওয়াকওয়ে থাকবে। বসার ব্যবস্থা থাকবে। মতিঝিল এলাকায় ঝিল ছিল, ওই ঝিলকে প্রাধান্য দিয়ে পার্কটি তৈরি করা হবে। বহুমুখী ব্যবহার ছাড়া মতিঝিলকে আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।
জানতে চাইলে নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিলের আধুনিকায়ন ও ভূমির মিশ্র ব্যবহারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে। তাহলে মতিঝিল সচল থাকবে; তবে ঢাকা শহর বড় হওয়ায় আরও বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে ওঠা ইতিবাচক। এসব পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা দরকার ছিল; কিন্তু ঢাকার ক্ষেত্রে সে রকম হয়নি। এটা দুঃখজনক। এ জন্য শহরে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ঢাকায় এখন অনেকগুলো বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সেই সব অঞ্চলে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় স্থাপনের অনুমোদন দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত বড় বড় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় মতিঝিলে রয়েছে। তবে ব্যবসা গুলশান, বনানী, উত্তরা, গাজীপুরে সরে যাওয়ায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানও ব্যবসা কেন্দ্রের কাছাকাছি চলে যাচ্ছে।
উত্তরাধিকার সূত্রে বা পারিবারিক পরিচয়ে রাজনীতির চর্চা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এ উপমহাদেশে। বাবার সূত্রে কিংবা দাদার সূত্রে রাজনীতিতে এসে অনেকে পূর্বসূরিকে ছাড়িয়ে গেছেন। আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেদের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। রাজনীতিতে হয়েছেন বটবৃক্ষ। আবার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও উত্তরাধিকার সূত্রে পদ-পদবি পেয়ে যাওয়ার উদাহরণও আছে। যারা এভাবে রাজনীতিতে এসেছেন, তারা কার্যত বনসাই হয়ে আছেন।
দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ, স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ প্রায় সব দলেই উত্তরাধিকারের চর্চা রয়েছে। পারিবারিক সূত্রে এমপি হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান একাদশ সংসদে এ সংখ্যা ৯৮। স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ জাগায় যে, আগামী দ্বাদশ সংসদে এ সংখ্যা কত হবে? যদিও বর্তমান সংসদের ৩৪টি উপনির্বাচনে উত্তরাধিকার সূত্রে এমপি হয়েছেন কমই।
রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের চর্চা যে খারাপ সেটা মোটেও বলা যাবে না। বরং উত্তরাধিকারের কারণে দেশের জন্য, জনগণের জন্য অবদান রাখা ঐতিহ্যবাহী দল আরও শক্তিশালী হওয়ার উজ্জ্বল উদাহরণও আছে। যেমন ভারতের রাজনীতিতে ইন্দিরা গান্ধী। বাবা নেহরু গান্ধীর উত্তরসূরি হলেও নিজের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে কংগ্রেসের রাজনীতিকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছেন। তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। টানা তিনবারসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে পঁচাত্তর-পরবর্তী আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান ঘটেছে। আরও শক্তিশালী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরেছে।
বিএনপির ক্ষেত্রেও বলা যায়, দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলটির হাল ধরেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া। তাদের ছেলে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সংসদের ৩০০ আসনে উত্তরসূরি হিসেবে বা পারিবারিক পরিচয়ে মনোনয়ন পাওয়ার পাশাপাশি সংরক্ষিত ৫০ আসনেও এই চর্চা আছে। বরং হিসাব করলে বেশিই দেখা যায়।
সব মিলিয়ে একাদশ সংসদেই উত্তরসূরি বা পারিবারিক পরিচয়ে এমপি রয়েছেন শতাধিক। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করে। পারিবারিক সূত্রে রাজনীতিতে আসা সরকারি দলের এমপির সংখ্যা ৮৬। এর মধ্যে প্রায় ৭০ জনই মাঠের রাজনীতি করে আসেননি। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ২৯ জনের মধ্যে এই সংখ্যা ৭। এ ছাড়া সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি।
একাদশ সংসদে বিএনপির সাতটি আসন ছিল। এর মধ্যে একটি সংরক্ষিত নারী আসন। তাদের মধ্যে রুমিন ফারহানা সংরক্ষিত আসনে এমপি হন। তার বাবা অলি আহাদ আওয়ামী লীগের প্রথম প্রচার সম্পাদক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বা সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলের প্রভাব ধরে রাখতে নেতার পরিবারের সদস্যদের রাজনীতিতে আনা হয়। আবার অনেক সময় যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
তবে উত্তরাধিকার চর্চার প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এমন চর্চার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনীতির ভারসাম্য নষ্ট হয়। সংসদে দেখা যায়, অনেকে বক্তব্য দিতে পারেন না। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিও বোঝেন না। আবার জনসমাবেশে অরাজনৈতিক আচরণ করেন, যা সরকার বা দলকে বেকায়দায় ফেলে দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উত্তরাধিকারের রাজনীতি গণতন্ত্র ও আধুনিক রাজনীতির বিরোধী। দলের জন্য ও রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর।’ তিনি বলেন, ‘গত ১৫-২০ বছরে এ ধারার রাজনীতির চর্চা বেশি হচ্ছে বলেই দুর্বল হয়েছে রাজনীতি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক ত্যাগ-তিতিক্ষা বা যোগ্যতা থাকলে এটা গ্রহণ করা যায়। উত্তরাধিকার সূত্রে সংসদে এত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা অবশ্যই দুশ্চিন্তার। আমি মনে করি, এ সংখ্যা নিয়ে প্রত্যেক দলেরই চিন্তার ব্যাপার আছে। কারণ দাদা, বাবার যোগ্যতায় এসব পদ পেয়ে থাকলে গণতন্ত্র কতটা মজবুত করবে, সেটাও ভাবতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রে উত্তরাধিকারের সুযোগ নেই। আবার এটাকে ধর্মগ্রন্থের বাণী মনে করলেও চলবে না। কারও যদি যোগ্যতা থেকে থাকে, তাহলে বাবা-দাদা থাকলে আসতে পারবেন না সেটাও তো হতে পারে না।’
আওয়ামী লীগের যারা : এমপি ও মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন পঞ্চগড় থেকে নির্বাচিত। তার বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম ১৯৭০, ’৭৩, ’৭৯ ও ’৮৬ সালের এমপি। দিনাজপুর থেকে নির্বাচিত খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুর রউফ চৌধুরী। তিনি ১৯৯৬ সালের এমপি ও দলের নেতা ছিলেন। ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা। এ ছাড়া তিনবার দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
দিনাজপুরের আরেকটি আসন থেকে নির্বাচিত ইকবালুর রহিমের বাবা প্রয়াত আবদুর রহিম। তিনি সত্তরের এমপি ছিলেন। তবে ইকবালুর রহিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দিনাজপুরের আরেকটি আসনের এমপি শিবলী সাদিক। তার বাবা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজুও এমপি ছিলেন।
রংপুর-২ আসনের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরীর চাচা আনিসুল হক চৌধুরী এমপি ছিলেন। গাইবান্ধা-২ আসনের মাহাবুব আরা গিনি পারিবারিক বিবেচনায় এমপি হয়েছেন। বগুড়া-১ আসনের সাহাদারা মান্নান প্রয়াত এমপি আবদুল মান্নানের স্ত্রী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল ১৯৭৩ সালের এমপি প্রয়াত মইন উদ্দীন আহমদের ছেলে। নওগাঁ-৫ আসনের নিজাম উদ্দিন জলিলের (জন) বাবা প্রয়াত আবদুল জলিল ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী। সিরাজগঞ্জ-১ আসনের তানভীর শাকিল জয় প্রয়াত মন্ত্রী ও নেতা মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে। তার দাদা জাতীয় চার নেতার অন্যতম মনসুর আলী। সিরাজগঞ্জ-২ আসনের ডা. হাবিবে মিল্লাত সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মেয়ের জামাই। সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের তানভীর ইমাম প্রয়াত নেতা এইচ টি ইমামের ছেলে। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের মেরিনা জাহান দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রয়াত মযহারুল ইসলামের মেয়ে। তার ভাই চয়ন ইসলামও এমপি ছিলেন। পাবনা-২ আসনের আহমেদ ফিরোজ কবির প্রয়াত আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি ১৯৭৩ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। মেহেরপুর-১ আসনের ফরহাদ হোসেনের বাবা প্রয়াত মোহাম্মদ সহিউদ্দিন ছিলেন ১৯৭০, ’৭৩ ও ’৮৬ সালের এমপি। কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি সেলিম আলতাফ জর্জের দাদা গোলাম কিবরিয়া ছিলেন এমপি। ঝিনাইদহ-২ আসনের তাহজীব আলম সিদ্দিকীর বাবা প্রয়াত নুরে আলম সিদ্দিকী ছিলেন দলের নেতা। ঝিনাইদহ-৩ আসনের এমপি শফিকুল আজম খান। তার বাবা প্রয়াত শামসুল হুদা জাতীয় পার্টির এমপি ছিলেন। যশোর-৫ আসনের স্বপন ভট্টাচার্যের ভাই পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য দলের নেতা। অবশ্য রাজনীতিতে স্বপনেরও অবদান রয়েছে। রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বাবা প্রয়াত রফিকুল্লাহ চৌধুরী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। মাগুরা-১ আসনের এমপি সাইফুজ্জামান শিখর। তার বাবা মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান তিনবারের এমপি ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হেলালের ছেলে শেখ ফারহান নাসের তন্ময় বাগেরহাট-২ আসনের এমপি। বাগেরহাট-৩ আসনের হাবিবুন নাহার খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের স্ত্রী। খুলনা-২ আসনের শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল শেখ নাসেরের ছেলে। খুলনা-৩ আসনের মন্নুজান সুফিয়ানের স্বামী আবু সুফিয়ান এ আসনের এমপি ছিলেন। তিনি নিজেও অবশ্য রাজনীতি করেছেন। ভোলা-২ আসনের আলী আজম মুকুল দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা। ভোলা-৪ আসনের আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের বাবা প্রয়াত এমএম নজরুল ইসলাম ১৯৭৯ ও ’৯১ সালের এমপি। টাঙ্গাইল-৬ আসনের আহসানুল ইসলাম সাবেক এমপি হাজি মকবুল আহমেদের ছেলে। টাঙ্গাইলের আরেক আসনের এমপি খান আহমেদ শুভ দলের জেলা সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুকের ছেলে। ফারুক ১৯৭৩ সালে এমপি ছিলেন। ময়মনসিংহ-১ আসনের জুয়েল আরেং সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের ছেলে। ময়মনসিংহ-২ আসনের শরীফ আহমেদের বাবা শামসুল হক চারবারের এমপি। ময়মনসিংহ-১০ আসনের ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের বাবা প্রয়াত এমপি আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ। নেত্রকোনার এমপি সাজ্জাদ হাসানের বাবা প্রয়াত আখলাকুল হোসাইন আহমেদ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সৈয়দা জাকিয়া নূর চার জাতীয় নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ও দলের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন। কিশোরগঞ্জের আরেক এমপি রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে। অন্য এমপি নাজমুল হাসান পাপনের বাবা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুুর রহমান। তার মা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আইভি রহমান। মানিকগঞ্জের নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের বাবা প্রয়াত সায়েদুর রহমান এমপি ছিলেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে নির্বাচিত নসরুল হামিদের বাবা হামিদুর রহমান দলের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। মা হাসনা হামিদও রাজনীতি করতেন। গাজীপুরের জাহিদ আহসান রাসেল প্রয়াত নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে। সিমিন হোসেন রিমি প্রয়াত জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে। মেহের আফরোজ চুমকির বাবা প্রয়াত ময়েজউদ্দিন ১৯৭০ ও ’৭৩ সালের এমপি। কাজী কেরামত আলীর বাবা কাজী হেদায়েত হোসেন গণপরিষদ সদস্য ছিলেন। মুজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) বাবা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মীয়। তার আরেক ছেলে নূর-ই-আলম চৌধুরীও এমপি। ফরিদপুর-৩ আসনের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আত্মীয় পরিচয়ে এমপি হন। ফরিদপুরের আরেকটি আসনের এমপি শাহদাব আকবরের মা প্রয়াত এমপি দলের নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। নাহিম রাজ্জাকের বাবা প্রয়াত নেতা ও এমপি আবদুর রাজ্জাক। জয়া সেনগুপ্তা প্রয়াত এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী। এ কে আবদুল মোমেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই। গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজের (মিলাদ গাজী) বাবা প্রয়াত এমপি দেওয়ান ফরিদ গাজী। মাহবুব আলীর বাবা আছাদ আলী প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। আনিসুল হকের বাবা প্রয়াত সিরাজুল হক ১৯৭০ সালের এমপি ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা। রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের বাবা এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সী ছিলেন জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের এমপি। দীপু মনির বাবা প্রয়াত এমএ ওয়াদুদ ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আয়েশা ফেরদাউসের স্বামী প্রয়াত এমপি মোহাম্মদ আলী। মাহফুজুর রহমানের বাবা মুস্তাফিজুর রহমান ১৯৯১ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বাবা প্রয়াত ফজলুল কবির চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাবা চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বাবা প্রয়াত এমপি আখতারুজ্জামান চৌধুরী। সাইমুম সরওয়ার কমলের বাবা প্রয়াত ওসমান সরওয়ার চৌধুরী ছিলেন ১৯৭৩ সালের এমপি। শাহিনা আক্তার চৌধুরীর স্বামী সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। শিরীন আহমেদের স্বামী প্রয়াত বজলুর রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। নাহিদ ইজাহার খানের বাবা খন্দকার নাজমুল হুদা পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর নিহত সেনা কর্মকর্তা। খাদিজাতুল আনোয়ারের বাবা প্রয়াত এমপি রফিকুল আনোয়ার। ওয়াসিকা আয়শা খানের বাবা প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সার দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন। কানিজ ফাতেমা আহমেদের স্বামী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী আওয়ামী লীগ নেতা। আঞ্জুম সুলতানা সীমার বাবা কুমিল্লার প্রয়াত নেতা আফজল খান। উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমের (শিউলী আজাদ) স্বামী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদ। রুমানা আলীর বাবা প্রয়াত এমপি রহমত আলী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের এমপি বদরুদ্দোজা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম। তার মামা খালেদ মোশাররফ। পারিবারিক পরিচয়ে এমপি হলেও সংগ্রাম এমপি হওয়ার আগে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। সুলতানা নাদিরার স্বামী প্রয়াত নেতা গোলাম সবুর টুলু। হাবিবা রহমান খান শেফালীর বাবা প্রয়াত ফজলুর রহমান খান তিনবারের এমপি ছিলেন। জাকিয়া পারভীন খানমের বাবা সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান খান চুন্নু মিয়া। তার স্বামী আওয়ামী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। অপরাজিতা হকের বাবা প্রয়াত খন্দকার আসাদুজ্জামান ছিলেন তিনবারের এমপি। তামান্না নুসরাত বুবলীর স্বামী প্রয়াত লোকমান হোসেন ছিলেন নরসিংদীর মেয়র। জাকিয়া তাবাসসুমের বাবা প্রয়াত আজিজুর রহমান দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ফরিদা খানম নারী মুক্তিযোদ্ধা। তার স্বামী নোয়াখালী জেলা মুজিব বাহিনী প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েত। রাজবাড়ীর সালমা চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুল ওয়াজেদ চৌধুরী ছিলেন এমপি। সৈয়দা রাশিদা বেগমের স্বামী কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সৈয়দ নিজাম উদ্দিন লাইট। ফেরদৌসী ইসলাম জেসীর বাবা প্রয়াত ভাষাসৈনিক ও সংসদ সদস্য আ আ ম মেসবাহুল হক বাচ্চু। পারভীন হক সিকদারের বাবা প্রয়াত ব্যবসায়ী জয়নুল হক সিকদার। জামালপুরের আবুল কালাম আজাদ শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভায়রা। এ ছাড়া শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল উদ্দীন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও শামীম ওসমানের পারিবারিক পরিচয় থাকলেও তারা এখন প্রত্যেকে রাজনীতিতে স্বনামে প্রতিষ্ঠিত।
জাতীয় পার্টি : বিরোধী দলনেতা রওশন এরশাদ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী। তাদের ছেলে সাদ এরশাদও এমপি। আহসান আদেলুর রহমান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ভাগ্নে। জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদেরও এমপি। নীলফামারী-৪ আসনে আদেলুর রহমান আদেল, তার বাবা ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি ছিলেন। নাসরীন জাহান রত্না দলের কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী। আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান।
অন্যান্য : ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারীর আসনে এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি। মাহী বি চৌধুরীর বাবা সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সেলিনা ইসলামের স্বামী পদচ্যুত এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল।
সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ৫টি রোডমার্চসহ টানা ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করবে দলটি। তবে মাঝে তিন দিন ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর কোনো কর্মসূচি নেই। বিএনপির নতুন ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সমাবেশ, রোডমার্চ ও দোয়া মাহফিল।
গতকাল সোমবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। আমাদের অনেক রাজনৈতিক জোট ও দল যুগপৎ আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে আমরা কতগুলো কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
কর্মসূচি ঘোষণার সময় অসুস্থতার কারণে মহাসচিবের অনুরোধে সেটি পড়ে শোনান স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
পাঁচটি রোডমার্চ : ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব থেকে সিলেট (সিলেট বিভাগ), ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল থেকে পটুয়াখালী (বরিশাল বিভাগ), ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ (ময়মনসিংহ বিভাগ) এবং ৩ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম (কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বিভাগ) রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকায় হবে সমাবেশ : ১৯ সেপ্টেম্বর জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ, গাজীপুরের টঙ্গী; ২২ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা; ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার, আমিনবাজার; ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ, ৩০ সেপ্টেম্বর শ্রমজীবী সমাবেশ এবং ২ অক্টোবর কৃষক সমাবেশ হবে। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
তবে ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর বিএনপির কোনো কর্মসূচি না থাকলেও যুগপৎ আন্দোলনের অংশীজনদের কর্মসূচি রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে যে জোট ও দলগুলো আছে, তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তারা হয়তো সবগুলো করবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকাকেন্দ্রিক সমাবেশ-পদযাত্রার কর্মসূচি গণতন্ত্র মঞ্চের : এদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের দারুস সালাম ভবনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতন্ত্র মঞ্চ। নতুন এই কর্মসূচি হচ্ছে ১৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলার সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা এবং ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম জোটের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির বাইরে জোটের নিজস্ব কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা বলছে, গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে সেমিনার ও আলোচনা সভাও হবে। সেসবের তারিখ-স্থানসহ বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।
গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির কর্মসূচি: ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা জেলা জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে, ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার-সিলেট রোডমার্চ, ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পেশাজীবী সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-পটুয়াখালী রোডমার্চ, ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার ও ঢাকা জেলার আমিনবাজারে সমাবেশ, ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ রোডমার্চ, ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় জনসমাবেশ, ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ ও ৩০ সেপ্টেম্বর কৃষক-শ্রমিক সমাবেশ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রোডমার্চ, ৩ অক্টোবর কুমিল্লা-ফেনী-মিরসরাই-চট্টগ্রাম রোডমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির নেতারা। এ ছাড়া আইনজীবীদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এবং আন্দোলনরত সব দল সমর্থন জানাবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় দলটি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪০-৫০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতির অঙ্ক কষছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটি মনে করছে, সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৪০ শতাংশ ভোটার কেন্দ্রমুখী করতে পারলে নির্বাচন বিতর্ক সামাল দিতে কোনো বেগ পেতে হবে না।
আগামী নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের নেওয়া নানা পরিকল্পনার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা হলো ভোটের দিন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। এ ছাড়া জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে নির্বাচন নিয়ে জনমত আওয়ামী লীগের পক্ষেই থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পর আওয়ামী লীগ এ তিন পরিকল্পনাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে দলের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান।
চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর করেন। এর আগে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল সফর করে। প্রধানমন্ত্রীর সফরের পর আওয়ামী লীগে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বলে দাবি করছেন দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা।
তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিগত দুই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি আওয়ামী লীগ তথা সরকারকে দেশ-বিদেশে বেশ বিপাকে ফেলেছিল। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে কোনো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চায় না সরকারি দল। সেজন্য আগে থেকেই আটঘাট বেঁধে নামতে চায় ক্ষমতাসীনরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে না ধরেই কমপক্ষে ৪০ ভাগ ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হয়ে যাবে। সেই নির্বাচনে এ সংখ্যক ভোটার ভোট দিতে কেন্দ্রে এলে ভোটের পরে ভোট প্রশ্নবিদ্ধ করার যে চক্রান্ত বিএনপির রয়েছে, সেটি ব্যর্থ হয়ে যাবে। এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করার অন্যতম কারণ হলো এটি।
সরকারের ওপর অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচনের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। গত আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন থেকে ফেরার পর সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনগণ ভোট দিতে পারলেই সেটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, ৫০-৪০ শতাংশ ভোট কাস্টিং করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে আওয়ামী লীগ। তা সম্ভব হলেই ভোট বিতর্ক এড়ানো যাবে। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের পরে সব নির্বাচনেই ভোটার উপস্থিতি হতাশাজনক ছিল। এ বিষয়টি নিয়ে নানা সমালোচনা ও প্রশ্ন উঠেছে। কোনো কোনো ফোরামে আলোচনায় সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে কম ভোটার উপস্থিতির উদাহরণ। তাই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্য নির্ধারণ করে নির্বাচন প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
দলের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচনে আসবে না এটা ধরে নিয়েই তিন পরিকল্পনায় সফল হতে পারবেন তারা। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর শেষে আওয়ামী লীগ মনে করে নির্বাচন পর্যন্ত জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য বেঁধে রাখা পারলেই নির্বাচন পর্যন্ত আর সমস্যাগুলো বড় বাধা হয়ে আসবে না সরকারের সামনে। বাকিটা হলো ভোটের দিন লক্ষ্য অনুযায়ী ভোটার উপস্থিতি ঘটানো।
ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা আরও বলেন, ভোটার উপস্থিতি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তেমন আধুনিক উদ্যোগ নেই। কম ভোট উপস্থিতির এটিও একটি কারণ। প্রত্যেক ভোটারকে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসতে হবে এমনকি পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে, সেটি ইসিকে ভাবতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোও কেন্দ্রে ভোটার আনতে যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন না। এ নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে কী কী উপায় নেওয়া যেতে পারে তা নিয়ে গবেষণা চলছে। ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, স্বল্প সময়ে যে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা যায়, সেগুলো আগামী নির্বাচনে করা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মানুষের কর্মব্যস্ততা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। কর্মব্যস্ত জীবনে সময় পেলে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার চেয়ে পরিবারকে একটু সময় দেওয়াকে বেশি গুরুত্বের মনে করেন ভোটাররা।’ ভোট দেওয়ার প্রবণতা পৃথিবীর অনেক দেশেই কমেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে একটি দল নির্বাচনে না যাওয়ায় নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে মনে করে না ভোটাররা। ফলে নির্বাচন বর্জন করা দলের ভোটাররা কেন্দ্রে যান না এবং দলের প্রার্থী বিজয়ী হবেন এ ভেবে আওয়ামী লীগের ভোটাররাও যান না। গত নির্বাচনগুলোতে ভোট কম পড়ার বড় কারণ এগুলো। তবে আগামী নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, সেগুলো নিয়ে কাজ করছেন তারা। জাফরউল্যাহ আরও বলেন, ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বেড়ে যাবে।’
আওয়ামী লীগের হিসাবে মোট ভোটারের প্রায় ৩৫ শতাংশই তাদের ভোটার। এবার দলীয় ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় দলটি।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ভোটার কেন্দ্রে আনার উদ্যোগ সফল হলে ভোট নিয়ে সব প্রশ্নই দূর করতে পারবে আওয়ামী লীগ। ২০১৪ ও ’১৮ সালের দুটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্নের মধ্যে কম ভোটার উপস্থিতিও অন্যতম। তারা চান না এবার সেই প্রশ্ন উঠুক।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ছোট ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণেও ঘাটতি রয়েছে। ফলে সরকার বড় বড় কাজ করছে ঠিকই, ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণ করা সম্ভব হয়নি বলে সাধারণ জনগণের একটি অংশ সরকারের প্রতি পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছে না, এমনটাই মনে করছেন তারা। তাই ভোটের আগে বাকি সময়ে ছোট বিষয়গুলো আমলে নিয়ে তা পূরণ করা হলে সাধারণ জনগণের ওই অংশটি আওয়ামী লীগের ওপরই আস্থা রাখবে বলে তারা বিশ্বাস করেন।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, নিত্যপণ্যের দাম লাফিয়ে বাড়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সব শ্রেণির মানুষকে। সংসার জীবনের কশাঘাতে পড়ে সরকারের অবিশ্বাস্য উন্নয়ন ওই শ্রেণির মানুষের কাছে তেমন গুরুত্ব বহন করে না। সংসার সামলাতে যে বিষয়গুলো বেশ বেগ পেতে হচ্ছে সেগুলোকে নির্বাচন পর্যন্ত কড়া মনিটরিংয়ে রেখে সামাল দেওয়া সম্ভব হলে মধ্যবিত্ত/নিম্নবিত্ত অংশের আস্থা অর্জন করতে পারবে বলে তারা মনে করছেন। আর আস্থা অর্জন করতে পারলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে তাদের বিশ্বাস।
জনআকাক্সক্ষা পূরণের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে বারবার একই চেহারা দেখছেন এলাকার মানুষ। অন্যদিকে জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণে প্রতিবারই ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন নির্বাচিত ওই জনপ্রতিনিধি। তাতে মানুষ বিরক্ত হন। এলাকার ভোটাররা মনে করেন, একজনকে কতবার ভোট দেব? এটি হলো জনআকাক্সক্ষা। এ জায়গায় নতুন মুখ নিয়ে আসা সম্ভব হলে মানুষের মধ্যে নতুন করে আশা জাগবে। রাজনীতিতে সক্রিয় নন, এমন লোকজনও আগ্রহী হবেন। নতুন প্রার্থীকে ভোট দিতে কেন্দ্রে ভোটাররা আসবেন।
এদিকে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি বিপাকে পড়েছে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খুব ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়ে যাবে এ বিষয়টি বিএনপির কাছেও পরিষ্কার হয়ে গেছে। নির্বাচন সময়মতো হয়ে যাবে এটা এখন বিএনপিও বিশ্বাস করে। দলটি ভাবছে, আন্দোলন জমছে না, নির্বাচনও ঠেকানো যাবে না। আর সেটাই তাদের বিপাকের কারণ।’
রুবেলা বা জার্মান মিজেলস একটি সংক্রামক রোগ। এটি রুবেলাভাইরাস থেকে হয়ে থাকে। একে জার্মান হাম বা তিন দিনের হামও বলা হয়। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। করোনা ভাইরাসের মতই আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকেই এই রোগ ছড়ায়। গর্ভাবস্থায় এই রোগ গর্ভস্থ শিশুর নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
রুবেলা সাধারণত ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির ড্রপলেটসের মাধ্যমে বাতাসে ছড়ায় এবং পরবর্তীতে শ্বাসপ্রশ্বাসের মধ্যে দিয়ে আরেকজনকে আক্রান্ত করে। এ ছাড়া গর্ভবতী মা থেকে গর্ভস্থ সন্তানের রুবেলাভাইরাস হতে পারে।
তবে একবার এই রোগটি হয়ে গেলে সাধারণত স্থায়ীভাবে আর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
রুবেলার লক্ষণ বোঝা করা কঠিন, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। কারণ রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে ভাইরাসটি রোগীর দেহে সাত থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে।
এই রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গ সাধারণত ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায় এবং সাধারণত ১ থেকে ৫ দিন স্থায়ী হয়।
হালকা জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮.৯ C) বা তার কম
মাথাব্যথা
নাকে সর্দি বা বন্ধ নাক।
চোখ লাল হয়ে যাওয়া ও চুলকানি হওয়া।
মাথা ও ঘাড়ের পেছনের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং ব্যথা হওয়া, কানের পিছনের লিম্ফ নড পিণ্ডর মতো ফুলে যাওয়া
লাল বা গোলাপি ফুসকুড়ি যা মুখে শুরু হয় এবং দ্রুত ঘাড়, শরীর, বাহু ও পায়ে ছড়িয়ে পড়ে
জয়েন্টগুলোতে ব্যথা, বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে
হাঁচি-কাশি এবং নাক দিয়ে পানি পড়া
শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা
ক্ষুধা মন্দা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা
রুবেলাভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে। এটি সাধারণত চিকিৎসা ছাড়াই ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।
এমনকি গর্ভবতী নারী আক্রান্ত হলে মা বা শিশুর ও কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে গর্ভবতী নারী রুবেলা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে এলে তাকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া যেতে পারে। তাই রুবেলাকে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা খুব জরুরি।
তবে একবার আক্রান্ত হলে সে সময় যা যা করতে হবে,
১. যেহেতু রোগটি অনেক ছোঁয়াচে তাই আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলতে হবে।
২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং আক্রান্ত হলে কঠোর পরিশ্রমের কাজ না করাই ভালো
৩. সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে
৪. ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ যুক্ত ফলমূল খেতে হবে বেশি করে।
৫. প্রতিদিন গোসল করাতে হবে, শরীরে জ্বর থাকলে ভেজা কাপড় একটু পর পর শরীর মুছতে হবে।
৬. কোনও ওষুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
কেউ যদি গর্ভাবস্থায় রুবেলায় আক্রান্ত হন তবে রুবেলা অনাগত শিশুর ক্ষতি করার পাশাপাশি গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়া শিশুর জন্মের পরে তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
হার্টের ত্রুটি
ছানি
বধিরতা
বিলম্বিত শেখা
লিভার এবং প্লীহার ক্ষতি
ডায়াবেটিস
থাইরয়েড সমস্যা
রুবেলার সুনির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা না থাকায় টিকা হলো উত্তম প্রতিষেধক। এই রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল হাম-মাম্পস-রুবেলা (এমএমআর) টিকার দুই ডোজ টিকা প্রয়োগ। সব বয়সেই এই টিকা নেয়া যায়।
টিকার প্রথম ডোজটি সাধারণত শিশুর নয় থেকে ১৫ মাসের মধ্যে দেয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয় শিশুর সাড়ে তিন থেকে ছয় বছর বয়সের মধ্যে। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্করা এই টিকা নিতে পারেন। সাধারণত প্রথম ডোজ নেয়ার কমপক্ষে এক মাস থেকে তিন মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়।
কিশোরীদের ১৫ বছর বয়সে টিটি টিকার সঙ্গে এক ডোজ হাম-রুবেলা টিকা দিতে হয়। এ ছাড়া গর্ভধারণে ইচ্ছুক নারীদের রুবেলা অ্যান্টিবডি টেস্ট করে প্রয়োজন হলে ৩ মাস ব্যবধানে ২ ডোজ টিকা দেওয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা পরবর্তী এক মাসের মধ্যে সন্তান নিতে নিষেধ করা হয়।
১. অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। কেউ হাঁচি-কাশি দিলে তার থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে হবে।
২. হাত সবসময় সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার রাখতে হবে।
৩. নাকে, চোখে, মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. কাশি বা হাঁচি আসলে সে সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহৃত টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে।
৫. যাদের শরীরে ফুসকুড়ি বা র্যাশ জাতীয় আছে তাদের সাথে শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
৬. অতিরিক্ত ভীর বা জনসমাগম এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে।