
মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহার আর বাকি মাত্র একদিন। প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপনে বেড়েছে ঘরমুখো মানুষের ভিড়। গতকাল সোমবার ঈদের আগে ছিল শেষ কর্মদিবস। অফিস শেষ করেই শেকড়ের টানে বাড়ি ফিরতে বাস টার্মিনালমুখী ছুটতে দেখা যায় বহু মানুষকে। তবে রাজধানীর প্রবেশপথগুলো পার হতেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হয় এসব যাত্রীকে। মূলত মহাসড়কের পাশে পশুর হাটের জন্য যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তবে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীদের তেমন ভিড় দেখা যায়নি।
গতকাল সরেজমিনে সায়েদাবাদ ও গাবতলী বাস টার্মিনালে দেখা যায়, ঈদযাত্রার ব্যস্ততা শুরু হয়ে গেছে। সকালে যাত্রীর চাপ কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিকালের পর যাত্রীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। গাবতলী টার্মিনালের একদিকে গরুর হাট অন্যদিকে বাস টার্মিনালে ঘরমুখো মানুষের কারণে সড়কে বাড়তে থাকে চাপ।
সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে বাসের অপেক্ষায় থাকা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মী মো. যুবায়ের দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শেষ কর্মদিবসে কাজ শেষ করে বিকেলের দিকে এলাম গ্রামে যাওয়ার জন্য। ভিড় এড়ানোর জন্য আগেভাগেই যাচ্ছি বাড়ি।’
সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের এক টিকিট বিক্রেতা মো. রাকিব বলেন, ‘ঈদযাত্রার ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। সকালের দিকে যাত্রী কম থাকলেও রাতে চাপ বাড়বে। সামনে আরও বাড়বে যাত্রীসংখ্যা।’
এদিকে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার টাঙ্গাইলের বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব এলাকায় গতকাল উত্তরবঙ্গ ও ঢাকামুখী লেনে যানজটের সৃষ্টি হয়। কখনো কখনো যানজট কমলে ধীরগতিতে চলাচল করে যানবাহন। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী এবং যানবাহনের চালক ও তাদের সহকারীরা। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা বেশি ভোগান্তি পোহান। গতকাল সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব টোলপ্লাজার আগে ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে উত্তরবঙ্গগামী পরিবহনের তীব্র যানজট দেখা গেছে। কিছুক্ষণ পর পর পরিবহনগুলোর চাকা ঘুরতে শুরু করলেও একেবারেই ছিল ধীরগতি। এর মধ্যে ট্রাক ও ব্যক্তিগত গাড়ি বেশি লক্ষ করা যায়।
বঙ্গবন্ধু সেতু-ভূঞাপুর-এলেঙ্গা আঞ্চলিক মহাসড়কের সেতু পূর্ব এলাকা থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানবাহন ধীরগতিতে চলাচল করে। এছাড়া গোবিন্দাসী টি-রোড, ভূঞাপুর বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন এলাকায় থেমে থেমে যানজট সৃষ্টি হয়।
ভূঞাপুর থানার ওসি মুহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব-ভূঞাপুর-এলেঙ্গা লিংক রোড দিয়ে উত্তরবঙ্গগামী সবধরনের পরিবহন চলাচল করছে। যার ফলে কিছু কিছু স্থানে যানবাহন ধীরগতিতে চলছে। তবে যানজট এড়াতে পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য কাজ করছেন।’
ঈদযাত্রায় যাত্রীর চাপ বাড়ার ফলে টাঙ্গাইলের বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৩০ হাজার যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৬৫ হাজার টাকা। গতকাল বঙ্গবন্ধু সেতু অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আহসানুল কবীর পাভেল এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে সড়কে বেড়েছে প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেলসহ ব্যক্তিগত যানবাহনের চাপ।’
তিনি আরও জানান, রবিবার রাতে বঙ্গবন্ধু সেতুতে কয়েকটি দুর্ঘটনার কারণে কয়েক দফা টোল আদায় বন্ধ রাখা হয়েছিল। তবে গতকাল সকাল থেকে স্বাভাবিকভাবে যানবাহন পারাপার হচ্ছে।
অন্যদিকে গতকাল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল অনেকটাই স্বাভাবিক ছিল। এই রুটের যাত্রীদের ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে গিয়ে খুব একটা ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় মহাসড়কের দাউদকান্দির অংশ পরিদর্শন করেন হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি (সিলেট-কুমিল্লা রিজিওন) ফরিদা ইয়াসমিন। তিনি বলেন, ‘ঈদযাত্রায় মহাসড়কে যান চলাচল নির্বিঘœ করতে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কোনো যানবাহন না থামানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। হাইওয়ে পুলিশের সদস্য ছাড়াও বিশেষ ইউনিফর্মে কাজ করছে হাইওয়ে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের প্রশিক্ষিত সদস্য। ফলে যানজট আর ভোগান্তিবিহীন ঈদযাত্রায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন যাত্রীরা। হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা রিজিয়নের নিয়ন্ত্রণাধীন মহাসড়ক এবং আঞ্চলিক সড়কে যানজট নেই, স্বস্তিতে বাড়ি ফিরছেন ঘরমুখো মানুষ।’ বিশেষ এই ব্যবস্থা ঈদের ১ সপ্তাহ আগে শুরু হয়ে ঈদের পর এক সপ্তাহ পর্যন্ত চলবে বলেও তিনি জানান।
দাউদকান্দি হাইওয়ে পুলিশের ওসি মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘মানুষের স্বস্তির ঈদযাত্রা নিশ্চিত করতে মহাসড়কের দাউদকান্দি অংশে হাইওয়ে পুলিশের ৫টি পেট্রোল টিমের পাশাপাশি কোনো ইমার্জেন্সি সামাল দিতে রাস্তায় ২টি কুইক রেসপন্স টিম দায়িত্ব পালন করছে। এছাড়াও হাইওয়ে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের প্রশিক্ষিত ১০ জন সদস্য গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ডে দায়িত্ব পালন করছে। সব মিলিয়ে ঈদে ঘরমুখো মানুষের নির্বিঘেœ বাড়ি পৌঁছানো নিশ্চিতে আমরা সার্বক্ষণিক কাজ করছি।’
প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন দাউদকান্দি (কুমিল্লা) প্রতিনিধি ও ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা
পাবনার রূপপুরে নির্মাণাধীন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি ‘ইউরেনিয়াম’ আনতে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) নিয়ম মেনে অন্তত ২৪ রকমের প্রস্তুতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে বেশিরভাগ প্রস্তুতি। সেপ্টেম্বরের শেষে অথবা অক্টোবরের শুরুতে রাশিয়া থেকে জ্বালানি এসে বাংলাদেশে পৌঁছাতে পারে বলে আশা করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
গত ৫ মে রাশিয়ায় এ বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রথম ব্যাচের পারমাণবিক জ্বালানি (ইউরেনিয়াম) উৎপাদন প্রস্তুতি সনদসংক্রান্ত চুক্তি সই হয়েছে।
রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে বাণিজ্যিক উৎপাদনের প্রথম দিন থেকে পরবর্তী তিন বছর জ্বালানির জন্য কোনো অর্থ পরিশোধ করতে হবে না বাংলাদেশকে। প্রথমবার জ্বালানি লোড করার পর তা দিয়ে একটানা ১২ মাস পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। এরপর প্রতি বছরে একবার করে মোট জ্বালানির এক-তৃতীয়াংশ করে জ্বালানি পরিবর্তনের পর নতুন জ্বালানি লোড করা হবে। তবে তিন বছর পর ১৮ মাস অন্তর নিয়ম মেনে জ্বালানি পরিবর্তন করা হবে।
প্রকল্প পরিচালক ও আন্তর্জাতিক পরমাণু বিশেষজ্ঞ ড. মোহাম্মদ শৌকত আকবর দেশ রূপান্তরকে বলেন, জ্বালানি আমদানির প্রস্তুতি হিসেবে ‘ফুয়েল রেডিনেসের’ জন্য চুক্তি সই হয়েছে। জ্বালানি প্রস্তুত এবং জনবল তৈরিতে সমস্যা নেই। সময়বদ্ধ কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী দেশের এবং আইএইএ’র সব ধরনের নিয়ম-কানুন মেনে ফুয়েল (জ্বালানি) আনার জন্য যেসব কাজ করা দরকার, তা দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। কোথাও গ্যাপ নেই। আইএইএ’র একটি প্রতিনিধিদল নিরাপত্তাসহ অন্য বিষয় সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করছে এবং বাংলাদেশকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিচ্ছে। তারা ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছে।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ইতিমধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটে জ্বালানি লোডের জন্য কোর ব্যারেল স্থাপন করা হয়েছে। যার মধ্যে বসানো হবে পারমাণবিক জ্বালানি-ইউরেনিয়াম। এ ইউরেনিয়াম থেকে পারমাণবিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্রমতে, স্পর্শকাতর এ জ্বালানি আমদানি, পরিবহন ও সংরক্ষণের জন্য আইএইএ’র অনুমোদন ও লাইসেন্সের পাশাপাশি রাশান ফেডারেশনের রপ্তানি নীতির আলোকে তাদের অনুমতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের পরমাণু নিয়ন্ত্রক সংস্থারও অনুমোদন নিতে হবে। পাশাপাশি প্রকল্পের অবকাঠামোগত বিষয় জড়িত। ইউরেনিয়াম আমদানি এটা দেশের পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে বড় মাইলফলক। কারণ জ্বালানি আমদানি ও সংরক্ষণ সম্পন্ন হলে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক নিউক্লিয়ার ক্লাবে যুক্ত হওয়ার পাশাপাশি বিশ্বে পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হিসেবেও পরিচিতি লাভ করবে। সেই সঙ্গে বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে উৎপাদন শুরু করতে আর কোনো বড় ধরনের চ্যালেঞ্জও থাকবে না।
পারমাণবিক জ্বালানি আনতে বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রস্তুতির পাশাপাশি আইএইএ’র অনুমোদন, আমদানি, পরিবহন, হ্যান্ডেলিং, ফুয়েল ইমপোর্ট পারমিটসহ যেসব লাইসেন্স নিতে হবে, সেগুলো ধাপে ধাপে এগিয়ে চলেছে। আগস্টের মধ্যেই সব প্রস্তুতি শেষ হবে বলে আশা করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ইউরেনিয়াম উৎপাদন থেকে শুরু করে বিদ্যুৎকেন্দ্রে এ জ্বালানি ভরা বা ফুয়েল রড স্থাপন করা পর্যন্ত পাঁচটি মূল বিষয়ের প্রস্তুতি রয়েছে। এর মধ্যে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে নির্মাণকাজের প্রস্তুতি, বিভিন্ন ধরনের লাইসেন্স গ্রহণ, পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের প্রস্তুতি, পারমাণবিক জ্বালানি তৈরি এবং সবশেষে সেই জ্বালানি বাংলাদেশে আনার পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। সবকিছু ঠিকঠাকভাবে করার জন্য আগে থেকেই একটি পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে দ্রুততার সঙ্গে বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন শুরু করতে পরিকল্পনার আগেই বেশিরভাগ কাজ শেষ হচ্ছে।
বিশেষ বিমানে করে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে এ জ্বালানি বাংলাদেশে আনতে সব প্রস্তুতি পুরোদমে এগিয়ে চলেছে। এরই মধ্যে আমদানির প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বিমান পরিবহন চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। সেই সঙ্গে ‘রিপোর্টিং ডকুমেন্টেশন’-এর তালিকা নিশ্চিত করতে বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকার প্রস্তুতির জন্য বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের অনুমোদন মিলেছে। পারমাণবিক জ্বালানি সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় দলিলের অনুমোদনের পাশাপাশি এ কাজের সঙ্গে যারা যুক্ত থাকবেন, এমন বেশ কিছু জনবল নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ কাজের জন্য বিভিন্ন ধাপে লাইসেন্স অর্জনের পথে অনেকটাই এগিয়ে রূপপুর প্রকল্প। পারমাণবিক জ্বালানি আমদানির জন্য যে লাইসেন্স দরকার, সেটির জন্যও ইতিমধ্যে আবেদন করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে।
রূপপুরে জ্বালানি পৌঁছানোর পর তা পরিচালনা বা স্থানান্তরের সময় দুর্ঘটনা এড়াতে একটি বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তার মধ্য দিয়েই জ্বালানি স্থানান্তর ও ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা। তারপরও যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে কারও নির্দেশের অপেক্ষা না করে বিশেষ দলের প্রশিক্ষিত কর্মীরা দ্রুত পদক্ষেপ নেবে। যাতে কোনো ধরনের সমস্যা না হয়।
পারমাণবিক জ্বালানি সংরক্ষণ ও এ সংশ্লিষ্ট কাজের অংশ হিসেবে ‘ফুয়েল স্টোরেজ’, জরুরি কেন্দ্রসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি পরমাণুর বিকিরণ পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে। এ প্রস্তুতিও প্রায় শেষের দিকে।
আইএইএ’র গাইডলাইন অনুযায়ী নির্মাণাধীন এ বিদ্যুৎ প্রকল্পে ফিজিক্যাল প্রটেকশন সিস্টেম (পিপিএস) রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যাতে বিদ্যুৎকেন্দ্রে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি না হয়। ইতিমধ্যে এ সংক্রান্ত বেশ কিছু কাজ শেষ হয়েছে। আগামী মাসের মধ্যে পুরো কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এ কাজের তত্ত্বাবধায়নে রয়েছে সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ ইউনিট।
জ্বালানি আমদানি করার সময় কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হলে সেজন্য বীমা বা ইন্স্যুরেন্স করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেই কাজটিও ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। এ ছাড়া জ্বালানি স্থানান্তর কাজে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের যারা যুক্ত থাকবেন, তাদের বেশিরভাগই পরীক্ষার মাধ্যমে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতিপত্র পেয়েছেন।
রাশিয়ার সাইবেরিয়াতে পারমাণবিক জ্বালানি উৎপাদন শেষ হলে তা যথাযথ প্রক্রিয়ায় করা হয়েছে কি না, সেজন্য বিশেষজ্ঞ দল রাশিয়া গিয়ে পরিদর্শন করবে। সবকিছু ঠিক থাকলে এ সংক্রান্ত একটি সম্মতিপত্র সই হবে। এ কাজটি আগামী মাসে হওয়ার কথা রয়েছে। সেই সঙ্গে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে জ্বালানি সরবরাহের প্রস্তুতি নিশ্চিত করতে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ এবং রাশিয়ার নিয়ন্ত্রক সংস্থা যৌথভাবে প্রকল্প এলাকায় গিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবে। এরপর জ্বালানি আমদানির জন্য বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের অনুমোদন নিতে হবে।
প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সব প্রস্তুতি শেষে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার সম্মতি নিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের প্রথম ব্যাচের পারমাণবিক জ্বালানি বাংলাদেশে এসে পৌঁছবে। নভেম্বর পর্যন্ত আরও কয়েক ধাপে এ জ্বালানি আসবে। এ পুরো প্রক্রিয়া নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা, যাতে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে। প্রকল্পের শুরু থেকেই তারা বিভিন্ন ধাপের কাজ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে লাইসেন্স দেওয়ার পাশাপাশি নানারকম প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিচ্ছে।
সূত্রমতে, কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে জ্বালানি আমদানি করে তা বিদ্যুৎকেন্দ্রে পাঠানো হবে। এজন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়সহ সম্পৃক্ত থাকবে আরও অনেক মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর। নিরাপত্তার জন্য সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে গোয়েন্দা তৎপরতা থাকবে।
রাশিয়ার কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওতায় পরমাণু শক্তি কমিশন বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের জেনারেল ডিজাইনার ও কন্ট্রাক্টর রাশিয়ার রসাটম করপোরেশনের প্রকৌশল শাখা।
বাংলাদেশের একক প্রকল্প হিসেবে সবচেয়ে বড় অবকাঠামো এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে ২০২৪ সালে এবং এর পরের বছর দ্বিতীয় ইউনিট থেকে ১২০০ মেগাওয়াট করে মোট ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিড যোগ হওয়ার কথা রয়েছে।
চলমান ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে আলোচিত-সমালোচিত এক যোদ্ধা গ্রুপ ওয়াগনার। অর্থের বিনিময়ে এরা লড়ছিল রাশিয়ার পক্ষে। কিছুদিন আগেই যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হয়ে ওঠা ইউক্রেনের বাখমুত শহর দখলে নিয়ে রাশিয়ার নিয়মিত সেনাদের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছিল তারা। তবে মাত্র তিন দিন আগেই তাদের নেতৃত্ব দেওয়া ইয়েভগেনি প্রিগোজিন বিদ্রোহ করে বসেন। শেষ পর্যন্ত তিনি জয় পাননি, পালাতে হয়েছে রাশিয়া ছেড়ে। তবে যে রাশিয়ার পয়সা নিয়ে লড়েছেন, সেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে যাওয়ায় তিনি আলোচনায় রয়ে গেছেন, থাকবেন আরও অনেক দিন। জায়গা পাবেন ইতিহাসেও। এই প্রিগোজিনের মতোই ভারতেও এক যোদ্ধা ছিলেন। ওয়াগনারের মতো তারও একটি দল ছিল, যারা ভাড়াটে সৈনিক হিসেবে কাজ করতেন দেশীয় সামন্তদের জন্য। পরে অবশ্য তিনি কাজ করেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হয়েও।
ইতিহাসবিদরা বলছেন, অনুপগিরি গোঁসাই নামে ওই নাগা যোদ্ধার কারণেই ভারতে শক্ত ভিত গাড়তে পেরেছিল ইংরেজরা। যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাটের ওয়েসলিয়ান ইউনিভার্সিটির ইতিহাসবিদ উইলিয়াম আর পিঞ্চ তার ‘ওয়ারিয়র অ্যাসেটিক অ্যান্ড ইন্ডিয়ান এমপায়ার্স’ বইতে বলেছেন, অনুপগিরি ছিলেন একজন রহস্যময় ব্যক্তি, যাকে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষদিকে সফলতম সামরিক উদ্যোক্তা বা ‘ভাড়াটে বাহিনী’ বলা যেতে পারে। অনুপগিরি নানা পক্ষের হয়ে লড়াই করেছেন। ১৭৬১ সালের পানিপথের যুদ্ধে তিনি মুঘল সম্রাট ও আফগানদের হয়ে মারাঠাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। তিন বছর পর তিনি মুঘল বাহিনীর হয়ে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন বক্সারের লড়াইয়ে। আবার দিল্লিতে পারস্যের নাজাফ খানের উত্থানেও অনুপগিরি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। এরও পরে তিনি যোগ দেন ব্রিটিশদের পক্ষে এবং তাদের হয়ে ১৮০৩ সালে মারাঠাদের পরাজিত করার যুদ্ধে ভূমিকা রাখেন। ব্রিটিশদের দিল্লি দখলের যুদ্ধেও তিনি সহায়তা করেছিলেন। এটা ছিল সেই ঘটনা যার ফলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দক্ষিণ এশিয়ায় তথা বিশ্বে সবচেয়ে বড় শক্তি হয়ে ওঠে।
অনুপগিরি গোঁসাই শুধু সৈনিক ছিলেন না, ছিলেন একজন সন্ন্যাসীও। তিনি ছিলেন হিন্দু দেবতা শিবের ভক্ত একজন নাগা বা নগ্ন সাধু, যাদের ভারতে খুবই সম্মানের চোখে দেখা হতো। তারা একটি প্রধান হিন্দু ধর্মীয় গোষ্ঠীর সদস্য যারা উলঙ্গ থাকেন, গায়ে মাখানো থাকে ছাই আর মাথায় জটা। ভারতের কুম্ভ মেলা যা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব, তাতে এদের প্রায়ই দেখা যায়।
উইলিয়াম আর পিঞ্চের ভাষ্য, নাগারা ‘ভয়ংকর এবং উচ্ছৃঙ্খল’ এরকম একটা ধারণা থাকলেও অষ্টাদশ শতাব্দীতে এ নাগারা ‘ভালো ভালো অস্ত্রে সজ্জিত এবং সুশৃঙ্খল’ ছিলেন। তাছাড়া অশ্বারোহী এবং পদাতিক দুই ধরনেরই সেনা হিসেবেও তারা ছিলেন অত্যন্ত উন্নতমানের। সে যুগে নাগাদের সুনাম ছিল আচমকা আক্রমণকারী সেনা দল হিসেবে, তাছাড়া হাতাহাতি যুদ্ধেও তাদের পারঙ্গমতা ছিল।
পিঞ্চ লিখেছেন, অনুপগিরি গোঁসাইয়ের নেতৃত্বে তাদের একটি পূর্ণাঙ্গ পদাতিক বাহিনী গড়ে ওঠে, যারা সে সময়কার যেকোনো সেরা সৈন্য দলের সঙ্গেও পাল্লা দিতে পারত। অষ্টাদশ শতকের শেষদিকে অনুপগিরি এবং তার ভাই উমরাওগিরি ২০ হাজার লোকের বাহিনীর নেতৃত্ব দিতেন। ঊনবিংশ শতাব্দীতে এসে কামান এবং রকেটধারী সন্ন্যাসী সৈন্যদের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পায়।
লেখক ইতিহাসবিদ উইলিয়াম ডালরিম্পল অনুপগিরিকে বর্ণনা করেছেন একজন ‘ভীতি উদ্রেককারী নাগা সেনানায়ক’ হিসেবে যাকে হিম্মত বাহাদুর বা সাহসী বীর হিসেবে মুঘল খেতাব দেওয়া হয়েছিল। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং কীভাবে তারা ভারতে আধিপত্য কায়েম করল, তা নিয়ে দি অ্যানার্কি নামে একটি বই লিখেছেন উইলিয়াম ডালরিম্পল। তিনি তার লেখায় বক্সারের যুদ্ধের নাটকীয় বর্ণনা দিয়েছেন যে যুদ্ধের ফলে বাংলা ও বিহারে ব্রিটিশ ক্ষমতা নিশ্চিত হয়েছিল। ওই যুদ্ধে অনুপগিরি তার ঊরুতে গুরুতর আঘাত পেয়েছিলেন। আহত অবস্থায় তিনি মুঘল সম্রাট সুজা-উদ-দৌলাকে বোঝান যেন তিনি রণক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যান।
তাহসিন হোসেইন নামে এক কিশোরকে ‘ভুল চিকিৎসায়’ মৃত্যুর অভিযোগে রাজধানীর ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ডা. এ এম শামীমসহ সাতজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়েছে। গতকাল সোমবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেগম ফারাহ দিবা ছন্দার আদালতে ভুক্তভোগীর বাবা মনির হোসেন মামলাটি করেন। বাদীর জবানবন্দি শেষে আদালত ধানম-ি মডেল থানার ওসিকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালের সার্জন ডা. মো. সাইফুল্লাহ, সহকারী সার্জন ডা. মাকসুদ, ডা. সাব্বির আহমেদ, ডা. মোশাররফ, ডা. কনক ও হাসপাতালের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার মো. শাহজাহান।
অভিযোগে বাদী বলেন, তার ছেলে তাহসিন কিছুদিন থেকে অসুস্থ বোধ করায় গত ২৭ মার্চ তাকে ল্যাবএইডের ডা. সাইফুল্লাহকে দেখানো হয়। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, তার অবস্ট্রাক্টিভ স্মল গাট বা নাড়ির প্যাঁচ রয়েছে। যার কারণে তার পেটে ব্যথা এবং মলত্যাগ করতে পারছে না। দ্রুত অস্ত্রোপচার করতে হবে। পরে গত ২৮ মার্চ অস্ত্রোপচার করা হয়। এরপর তাহসিনের অবস্থার অবনতি হতে থাকে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. মাকসুদ বাদীকে জানান অস্ত্রোপচার সফল হয়নি। রোগীকে সুস্থ করতে হলে আবার অপারেশন করতে হবে। এরপর ৬ এপ্রিল দ্বিতীয়বার অস্ত্রোপচার করেন ডা. সাইফুল্লাহ। দ্বিতীয়বার অপারেশনের পরেও রোগীর অবস্থা খারাপ হতে থাকে। দীর্ঘ তিন মাস চিকিৎসা চলার পর গত ২৩ জুন তাহসিনের মৃত্যু হয়।
বাদী আরও বলেন, আমার ছেলের কী রোগ হয়েছে, সেটাই ডাক্তাররা জানাতে পারেননি। অথচ তার দুইবার অপারেশন করেছেন, এ সময়ে আমার ছেলেকে ১৪৪ ব্যাগ রক্ত দিতে হয়েছে, হাসপাতালের বিল দিতে হয়েছে প্রায় ২৭ লাখ টাকা। আমি প্রথম অপারেশনের পর এখান থেকে রিলিজ নিয়ে ভারতে চিকিৎসা করাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ল্যাবএইড কর্তৃপক্ষ রোগীর ছাড়পত্রও দেয়নি আমাকে।
রাজধানীর হাতিরপুল বাজার থেকে সবজি কেনেন বেসরকারি চাকরিজীবী হাবিব হোসেন। বাসায় ফেরার পথে কাঁচা মরিচ কিনতে গিয়ে তিনি রীতিমতো আঁতকে ওঠেন। দোকানির সঙ্গে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে চার দোকান ঘুরে ৪০০ টাকা কেজিতে ২৫০ গ্রাম কাঁচা মরিচ কিনে বাসায় ফেরেন।
কোরবানির ঈদ সামনে রেখে কাঁচা মরিচের রেকর্ড দাম বৃদ্ধি হয়েছে। সরবরাহ সংকটের অজুহাতে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৪০০ টাকায়, যা গত শুক্রবারে বিক্রি হয়েছে ২০০-২১০ টাকা করে। অর্থাৎ চার দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি মরিচের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। গতকাল সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল ও কলাবাগানের কাঁচাবাজার ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
এ পরিস্থিতিতে গত রবিবার ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। এতে দীর্ঘ ১০ মাস পর কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি মিলেছে। পাশাপাশি অনুমতি দেওয়া হয়েছে টমেটো আমদানিরও। হাকিমপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধির পাঠানো তথ্য অনুযায়ী আমদানির অনুমতির প্রথম দিনে এক ট্রাক মরিচ আমদানি হয়। এতে ৭ হাজার ৬০০ কেজি কাঁচা মরিচ দিনাজপুর স্থলবন্দর দিয়ে দেশে প্রবেশ করেছে। ঈদের ছুটিতে স্থলবন্দরের আমদানির শেষ কর্মদিবসে একই সমপরিমাণের আরও চার ট্রাক মরিচ আমদানি হবে। বাংলাদেশ ট্রেডিং করপোরেশনের (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত বছরের জুন মাসে খুচরা ব্যবসায়ীরা ৪০-৬০ টাকায় কেজিপ্রতি কাঁচা মরিচ বিক্রি করেছে। খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের ভাষ্য মতে, আসন্ন কোরবানির ঈদে প্রচুর কাঁচা মরিচের ব্যবহার হবে। চাহিদার তুলনায় বাজারে সরবরাহ সংকট থাকায় মরিচের দাম বাড়ছে। পাইকারিতে প্রতি পাল্লা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৬০০-১৭০০ টাকায়। খুচরায় অন্যান্য খরচ মিলিয়ে কেজিতে ৩৫০-৪০০ টাকার নিচে বিক্রি করলে পোষায় না।
হাতিরপুল বাজারের সবজি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী বলেন, সর্বশেষ ৯০০ টাকায় মরিচের পাল্লা কিনেছি। কিন্তু পাঁচ দিন পর কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখি প্রতি পাল্লা মরিচ দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। দাম কমানোর বিষয়ে পাইকারদের সঙ্গে কথা বলা যায় না। কম দাম দিয়ে কিনতে পারলে ভোক্তার হাতে কম দামে মরিচ দিতে পারতাম।
কারওয়ান বাজারের পাইকার শামিম জানান, সিলেটের বন্যা ও ভারী বৃষ্টিপাতের জন্য মরিচের উৎপাদন কমে আসায় বাজারে চাপ বেড়েছে। সে হিসেবে চাহিদার থেকে বাজারে কাঁচা মরিচের সরবরাহ কমেছে। তা ছাড়া বছরের অন্যান্য সময় যেমন চাহিদা থাকে, তেমনি কোরবানির সময় তা অনেক বেড়ে যায়। ফলে বাজারে প্রতি পাল্লা মরিচে ৬০০ টাকার বেশি বেড়েছে।
কলাবাগান বাজারের এক সবজি ব্যবসায়ী বলেন, ১০ দিন আগে কাঁচা মরিচ বিক্রি করেছি ১৬০-১৮০ টাকা কেজি। বর্তমানে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় মরিচের দাম বেড়েছে। প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৪১০ টাকায়। মরিচ বিক্রি করতে গিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়াতে হচ্ছে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান জানান, বাজারব্যবস্থার সঠিক তদারকি না থাকায় যে যেভাবে পারছে ব্যবসা করে যাচ্ছে। বিষয়গুলো নিয়ে আমরা বলে যাচ্ছি ও বিভিন্ন গণমাধ্যমেও প্রায় শিরোনাম হচ্ছে। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। তাই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেও বাজারের স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসবে বলে মনে হয় না।
বিদ্যালয়ের নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম হয়েও দুই লাখ টাকা ঘুষ দিতে না পারায় আয়া পদে চাকরি না পাওয়া হবিগঞ্জের মাধবপুরের মাসুমা আক্তার প্রতিকার চেয়ে এবার আদালতে মামলা করেছেন। গত ১৭ জুন হবিগঞ্জের সহকারী জজ আদালতে স্বত্ব মামলা করেন ‘নিয়োগবঞ্চিত’ হতদরিদ্র এই নারী।
মামলায় বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক, সভাপতিসহ পরিচালনা পর্ষদের (গভর্নিং বডি) ১০ সদস্যকে বিবাদী করা হয়েছে। আদালত আগামী ১৬ আগস্ট সশরীরে হাজির হয়ে কারণ দর্শানোর জন্য বিবাদীদের প্রতি সমন জারি করেছে।
এর আগে মাধবপুর উপজেলার জগদীশপুর যোগেশ চন্দ্র হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে আয়া পদে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম হয়েও দুই লাখ টাকা ঘুষ দিতে না পারায় চাকরি না পাওয়ার কথা উল্লেখ করে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও প্রতিকার পাননি বলে জানিয়েছেন মাসুমা।
মামলার আরজিতে বলা হয়েছে, গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর জগদীশপুর যোগেশ চন্দ্র হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে আয়াসহ চতুর্থ শ্রেণির কয়েকটি পদে লোক নিয়োগের জন্য সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে কর্র্তৃপক্ষ। আয়া পদে আবেদন করেন পূর্ব ইটাখোলা গ্রামের তাজুল ইসলামের মেয়ে মাসুমা আক্তার। গত ২ এপ্রিল ওই পদগুলোতে নিয়োগের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ওইদিনই লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ঘোষিত ফলাফলে আয়া পদে চার প্রার্থীর মধ্যে মাসুমা প্রথম হন। পাঁচ সদস্যের নিয়োগ বোর্ড সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্ত মাসুমাকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে। কিন্তু ওইদিন সন্ধ্যার পর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল্লাহ ভুঞা মাসুমার মোবাইল ফোনে কল করে তার সঙ্গে দেখা করতে বলেন। মাসুমা তার বৃদ্ধ বাবা তাজুল ইসলামকে নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাসায় যান। সেখানে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নাছির উদ্দিন খানও উপস্থিত ছিলেন। প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নিয়োগপত্র পেতে হলে দুই লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। কিন্তু হতদরিদ্র মাসুমা ঘুষ দিতে অস্বীকৃতি জানান। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ৬ এপ্রিল সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক গভর্নিং বডির সভা ডেকে মাসুমাকে নিয়োগ না দেওয়ার বিষয়টি জানিয়ে দেন। গভর্নিং বডির সদস্যরা কারণ জানতে চাইলে তারা সদুত্তর দিতে পারেননি।
পরে মাসুমা এ বিষয়ে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেন। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মাধবপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনজুর আহ্সান মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল হোসেনকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। গত ১৬ মে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল হোসেন নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম হওয়া মাসুমাকে নিয়োগ দিলে এ ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হতো না বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করে অনতিবিলম্বে গভর্নিং বডি সভা করে এ সমস্যার সমাধান করতে পারে বলে অভিমত দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে ‘নিয়োগবঞ্চিত’ মাসুমা আক্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি খুবই অসহায় এক নারী। চাকরি আমার খুবই দরকার। কোথাও প্রতিকার না পেয়ে বাধ্য হয়ে আদালতে মামলা করেছি।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনজুর আহ্সান বলেন, ‘পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তদন্ত রিপোর্ট ঊর্ধ্বতন কর্র্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে।’
অপেক্ষা আর মাত্র ৩ দিনের। তারপরই শুরু হয়ে যাবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ইংল্যান্ডের চার বছরের রাজত্ব আরও চার বছর টিকিয়ে রাখার আর বাকিদের সেই মুকুট কেড়ে নেওয়ার লড়াই শুরু হবে গতবারের দুই ফাইনালিস্টের লড়াই দিয়েই।
শাহরুখ খানকে দিয়ে প্রোমো আর রণবীর সিংকে দিয়ে থিম সং, আইসিসি জানান দিয়েছে ক্রিকেটে বলিউডি আবেগের মিশেল ভালোই থাকবে। কিং খানের ‘জাওয়ান’ কাঁপাচ্ছে পর্দা, কাটতি বাড়ছে বক্স অফিসে; বিশ্বকাপে আইসিসির পকেট ভরবে তো?
প্রস্তুতি বলছে, ভরবে। উইকেটে হবে রান উৎসব, লড়াই হবে ধুন্ধুমার। তাতেই ২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপ হবে এক ব্লকবাস্টার মেগা হিট।
মাস তিনেক আগে, বিশ্বকাপের মূলপর্বের ম্যাচগুলো যে ১০ ভেন্যুতে আয়োজন করা হবে সেই ভেন্যুগুলোর কিউরেটরদের সঙ্গে বসেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান কিউরেটর। সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছেন বিশ্বকাপের একটাই মন্ত্র, রান চাই।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে, ভারত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যে ৩ ওয়ানডের সিরিজ খেলেছে সেই ম্যাচগুলো যদিও বিশ্বকাপের ভেন্যুতে হয়নি তবে সেই সব ম্যাচেও রানের বন্যা বয়েছে।
প্রথম দুটো ওয়ানডেতে বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মাদের ছাড়াই অস্ট্রেলিয়ার করা ২৭৬ রান অনায়াসে তাড়া করে ৫ উইকেটে জিতেছে ভারত। পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের ঠেঙিয়ে তুলেছেন ৩৯৯ রান। তিন নম্বর ম্যাচে আবার অস্ট্রেলিয়া করেছে ৩৫২ রান, যা তাড়া করে ভারতও গিয়েছিল ২৮৬ অবধি।
উদ্বোধনী ম্যাচ হবে গুজরাতের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে। এখানে সবশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয় গত ১ ফেব্রুয়ারি, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি। ম্যাচে শুভমান গিল করেন সেঞ্চুরি, ভারত করে ৪ উইকেটে ২৩৪ রান আর জবাবে নিউজিল্যান্ড অলআউট হয় ৬৬ রানে।
বোঝাই যাচ্ছে, উইকেটের ধরন বুঝে ব্যাট করতে পারলে ৫০ ওভারে এখানে রানবন্যা হবে। বিশ্বকাপে ভারত-অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি হবে চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে। দুই দল এখানে মুখোমুখি হয়েছে বহুবার, পোশাকের রঙ কখনো রঙিন কিংবা কখনো সাদা হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজ কমেনি। এই মাঠে অস্ট্রেলিয়া ২৬৯ রান করে ভারতকে ২১ রানে হারিয়েছে সবশেষ ম্যাচে।
আইপিএল চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সুপার কিংসের ঘরের মাঠে সবশেষ মৌসুমে ধোনির ‘ইয়েলো আর্মি’ ৮ ম্যাচ খেলে ২০০ রানের ওপরে করেছে দুইবার, একবার জিতেছে অন্যবার হেরেছে। তবে দুই ইনিংসেই ২০০’র বেশি রান হয়েছে দুটো ম্যাচেই। অর্থাৎ চাইলে চেন্নাইকেও ব্যাটিং স্বর্গে পরিণত করা সম্ভব।
বিশ্বকাপের আগে দারুণ ছন্দে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ হারার পর টানা তিন ওয়ানডে জিতে সিরিজ তো নিশ্চিত করেছেই, টানা তিন ম্যাচে ৩০০’র ওপর রান করেছে। চতুর্থ ওয়ানডেতে তো ৪০০ পার করেছে প্রোটিয়ারা। ব্যাটিং উইকেটে তারাও যে কোনো প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিতে পারে। হেনরিক ক্লাসেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাত্র ৮৩ বলে খেলেছেন ১৭৪ রানের ইনিংস। বিধ্বংসী রূপে ফিরছেন ডেভিড মিলারও।
প্রোটিয়ারা প্রথম ম্যাচ খেলবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, দিল্লির অরুন জেটলি স্টেডিয়ামে। সেখানে অবশ্য সবশেষ হয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক ম্যাচেও খেলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচে তারা অলআউট হয়েছিল মাত্র ৯৯ রানে। দিল্লির মাঠটা হয়তো খানিকটা স্পিনারদের দিকেই ঝুঁকবে, তবে অন্য মাঠগুলোতে প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের রান উৎসবে মেতে উঠতে দেখার সম্ভাবনা জোরালো। তাই অনেক সাবেক ক্রিকেটারই প্রোটিয়াদের দেখছেন শেষ চারে।
বিশ্বকাপের আগে ক্লাসেন ছাড়াও ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস খেলেছেন ১৮২ রানের ইনিংস, দারুণ ছন্দে ইংল্যান্ডের ডাভিড মালানও। তবে সেরা ছন্দে নিঃসন্দেহে শুভমান গিল। সবশেষ ৫ ইনিংসে দুটো শতরান আর একটা হাফসেঞ্চুরি। নিউজিল্যান্ডের ড্যারিল মিচেলও আছেন দারুণ ছন্দে। দুটো হাফসেঞ্চুরি আর একটা সেঞ্চুরি সবশেষ ৫ ইনিংসে। হায়দ্রাবাদে বিশ্বকাপের অফিশিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তানের ৩৪৫ রান কিউইরা তাড়া করেছে ৩৮ বল হাতে রেখে।
বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল মনে করেন, এই বারের বিশ্বকাপে রানবন্যায় বোলারদের জন্য কাজটা হবে কঠিন। দেশ রূপান্তরকে আশরাফুল বলেন, ‘আমাদের পেসাররা গত এক দেড় বছর ধরে খুবই ভালো করছে। তবে যেহেতু ভারতের মাটিতে খেলা, আমরা দেখেছি যে সাড়ে ৩০০’র বেশি রান হচ্ছে প্রতিটা ম্যাচে। কেউ যদি ভালো না করে, তাকে মনে রাখতে হবে যে টুর্নামেন্টে পরের ম্যাচে ফিরে আসতে হবে। একজনের দিন খারাপ যেতেই পারে, কোনো ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান উঠেই যেতে পারে। ৯টা ম্যাচের ভেতর ৪-৫টা ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান হতে পারে। তাই বোলারদের ফিরে আসার মানসিকতা থাকতে হবে।’
বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমুল আবেদীন ফাহিমও বলেছেন যে দেড় মাসের আসরে প্রস্তুত থাকতে হবে যে কোনো কিছুর জন্যই, ‘দেড় মাসের আসর, ৯টা ম্যাচ এই সময়ে খেলতে হবে বা তারও বেশি। অনেক উত্থান-পতন হবে। যে কোনো কিছুর জন্যই তৈরি থাকতে হবে।’
রান উৎসবের বিশ্বকাপ যে হতে যাচ্ছে, তার সব রসদই মজুদ। মাঠগুলোকে করা হয়েছে ব্যাটিং স্বর্গ, বিশ্বকাপে আসার আগে সেরা সেরা ব্যাটসম্যানরাও আছেন ছন্দে। শুধু প্রশ্ন এটাই, রান উৎসবের এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে রান করবেন কে? সাম্প্রতিক সময়ের ব্যাটিংয়ের ছবিটা যে মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।