
বিশ্বের অন্যান্য দেশ বন্ডের মাধ্যমে উন্নয়ন কর্মকা-ের অর্থায়ন করলেও এ খাতের বিকাশ হয়নি বাংলাদেশে। দেরিতে হলেও সম্প্রতি বাংলাদেশও বন্ড বাজারের বিকাশে কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। তবে সেটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়েই রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারি বন্ডের বাজার উন্নয়নে সমীক্ষা করতে গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আইএমএফের কারিগরি মিশনের কর্মকর্তারা বৈঠক করেছেন। সভায় বিশ্বব্যাংকের দুজন বিশেষজ্ঞও ছিলেন। এ সময় দেশের বন্ড মার্কেটের বর্তমান অবস্থা, বন্ড মার্কেটের উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিকল্পনা ও দেশের মানি মার্কেট কীভাবে পরিচালিত হয়, এসব বিষয়ে জানতে চেয়েছে সংস্থাটি। পাশাপাশি বন্ড মার্কেট উন্নয়নে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সে বিষয়েও জানতে চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র।
জানা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কিত বন্ড, স্থানীয় মুদ্রায় বন্ড বাজারের উন্নয়নসহ দেশের মানি মার্কেট সম্পর্কে একটি লিখিত প্রস্তাবনা দেবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এজন্যই মার্কেটগুলোর বর্তমান অবস্থা, নতুন করে নেওয়া পদক্ষেপ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চেয়েছে সংস্থাটির কর্মকর্তারা। ১৭ জুলাই সফরের শেষ দিন অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে একটি লিখিত প্রস্তাবনা দিয়ে যাবে আইএমএফ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আইএমএফের প্রতিনিধিদল স্থানীয় মুদ্রার বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন ও মানি মার্কেট সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জানতে চেয়েছে। এ ক্ষেত্রে মুদ্রানীতি, অকশন কমিটির কাজসহ বন্ড ও মানি মার্কেটের সঙ্গে জড়িতদের কাজ সম্পর্কে জানতে চেয়েছে সংস্থাটি। বন্ড মার্কেটকে শক্তিশালী করতে সংস্থাটির পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাবনা দেওয়ার কথা রয়েছে। এজন্যই এ সংক্রান্ত বিষয়গুলো জানতে চাচ্ছে তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বলেন, বন্ড মার্কেটের উন্নয়নে ফিজিবিলিটি স্টাডিজের কাজ চলছে। বন্ড ইস্যু, বন্ড সেটেলমেন্ট সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে লোকাল কারেন্সি ও বন্ড মার্কেট নিয়ে আলোচনা করছে আইএমএফ। তিনি আরও জানান, দেশে দীর্ঘমেয়াদি ঋণগুলো এখনো ব্যাংকের মাধ্যমে দেওয়া হয়। যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পুঁজিবাজার থেকে বন্ডের মাধ্যমে নেওয়া হয়। তাই পুঁজিবাজারে অর্থের জোগান বৃদ্ধিতে বন্ড শক্তিশালীকরণের ক্ষেত্রে কাজ করছে আইএমএফের টেকনিক্যাল টিম।
আইএমএফের সাত সদস্যের প্রতিনিধিদলে বন্ড বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের দুজন বিশেষজ্ঞ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারি বন্ডের সেকেন্ডারি মার্কেট কীভাবে উন্নয়ন করা যায় তা নিয়েই আইএমএফ টিম বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করছে। সরকারি বন্ড মার্কেট উন্নত হলে বাংলাদেশের বেসরকারি বন্ড মার্কেটও উন্নত হবে।
সূত্র জানায়, আইএমএফ মিশনের চলমান সফরে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কিত বন্ড, স্থানীয় মুদ্রায় বন্ড বাজারের উন্নয়ন, মধ্যমেয়াদি রাজস্ব কাঠামো, অভ্যন্তরীণ সঞ্চয়, সামাজিক নিরাপত্তা, টেকসই ঋণ ব্যবস্থাপনা, নগদ ঋণ ব্যবস্থাপনা, নগদ ঋণের লক্ষ্য ও ব্যবস্থাপনার নীতি এবং নগদ ও ঋণ ব্যবস্থাপনায় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে সমন্বয় থাকার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। লেনদেনের ভারসাম্য ও মুদ্রা বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা, আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা, সঞ্চয়, মুদ্রানীতি পরিচালনা ও বাস্তবায়ন নিয়েও আলোচনা করবে আইএমএফের দল। ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলো তারল্য ব্যবস্থাপনা কীভাবে করছে, সুদের হার বৃদ্ধির কাজ কত দূর এগোল, কল মানি মার্কেটের হাল কী, মুদ্রা বাজারে আন্তঃব্যাংক বাণিজ্য ও তারল্যেরইবা অবস্থা কীÑ এসব বিষয় জানতে চাইবে কারিগরি দলটি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকের বিল এবং বন্ডে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৭২ হাজার ২০২ টাকা। কিন্তু ছয় মাস আগেও এ খাতে বিনিয়োগ স্থিতি ছিল ৩ লাখ ২২ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে ৫০ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকার বিল-বন্ড ভেঙেছেন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানভিত্তিক বিনিয়োগকারীরা। ২০২১ সাল শেষে বিল-বন্ডে বিনিয়োগের স্থিতি ছিল ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার বলেন, নীতিগত জটিলতা বিল এবং বন্ডে বিনিয়োগ কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। এখানে বিনিয়োগ করতে গেলে অনেক ধরনের কাগজপত্র জমা দিতে হয়। তাছাড়া এখানে ইন্টারেস্ট রেট তুলনামূলক কম। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। দৈনিক চাহিদা মেটাতেই হিমশিম খাচ্ছে ব্যাংকগুলো। তাই নতুন করে বন্ডে বিনিয়োগের আগ্রহ হারাচ্ছে ব্যাংক। অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণেই সবাই হাতে টাকা রাখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। বন্ডে বিনিয়োগ করলে একটা নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য টাকাগুলো আটকে যায়। এ মন্দার বাজারে কোনো খাতে টাকা আটকে ফেলা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। বন্ড মার্কেটকে উন্নত করতে হলে নীতিগত পরিবর্তনসহ পুরো খাতকে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে ৯১ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদহার ছিল ৬ দশমিক ৯০ শতাংশ, ১৮২ দিন মেয়াদি বিলে ৭ দশমিক ৩০ এবং ৩৬৪ দিন মেয়াদি বিলের মুনাফা ছিল শতকরা ৭ দশমিক ৭৬ টাকা। অন্যদিকে দুই বছর মেয়াদি বন্ডে সুদের হার ছিল ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ, পাঁচ বছর মেয়াদি ৭ দশমিক ৯০ শতাংশ, ১০ বছর মেয়াদি ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ, ১৫ বছর মেয়াদি ৮ দশমিক ৭৭ এবং ২০ বছর মেয়াদি বন্ডের সুদের হার ছিল ৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
রাষ্ট্রীয় খরচ মেটাতে সরকার বিভিন্ন সময় দেশের নাগরিক বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ নেয়। এর বিপরীতে তাদের নামে ট্রেজারি বিল ও বন্ড ইস্যু করা হয়। একে সরকারি সিকিউরিটিজও বলা হয়। তিন মাস থেকে সর্বোচ্চ এক বছরের জন্য নেওয়া ঋণকে ট্রেজারি বিল ও এক বছর থেকে বিশ বছর পর্যন্ত নেওয়া ঋণকে ট্রেজারি বন্ড বলা হয়। তরল সম্পদ হলো, নগদ টাকা ও খুব সহজে বিনিময়যোগ্য উপাদান। এর মধ্যে বিল-বন্ড অন্যতম। তথ্যমতে, মোট তরল সম্পদের ৭০ শতাংশই বিল ও বন্ড হিসেবে গচ্ছিত থাকে।
ঋণ চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের হিসাব আইএমএফের মান অনুযায়ী ‘বিপিএম৬’ পদ্ধতিতে চলতি জুলাই মাস থেকে সংরক্ষণ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে তা প্রকাশ করা হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার। এবারের সফরে বিপিএম৬ পদ্ধতি মানা হচ্ছে কি না, তা দেখবে আইএমএফ প্রতিনিধিদল। ঋণের পরবর্তী কিস্তি ছাড় হবে আগামী অক্টোবর মাসে। এর আগেই ছাড়কৃত অর্থের ব্যবহার ও আর্থিক খাতের সংস্কারে নেওয়া উদ্যোগগুলো দেখতে এসেছে আইএমএফের প্রতিনিধিদল।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও আইএমএফ মনে করছে, বন্ড মার্কেট উন্নয়ন হলে ব্যাংকের বিকল্প অর্থায়নের সুযোগ হবে উদ্যোক্তাদের। এতে ব্যাংক খাতে দীর্ঘমেয়াদি ঋণের চাপ কমে গিয়ে খেলাপি ঋণের পরিমাণও কমে আসবে।
দেশে বন্ড মার্কেট ততটা শক্তিশালী না হওয়ায় উদ্যোক্তারা এখনো ব্যাংকমুখী হয়ে রয়েছেন। গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, জাপান, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, চীন, থাইল্যান্ড, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামসহ অনেক দেশের চেয়ে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় বাংলাদেশের বন্ড মার্কেটের অনুপাত অনেক নিচে। জাপানে এ হার জিডিপির ২৪১ শতাংশ, মালয়েশিয়ার ১৬৯ শতাংশ, সিঙ্গাপুরের ১১৫ শতাংশ, প্রতিবেশী দেশ ভারতের ৪৯ শতাংশ, সেখানে বাংলাদেশে ৮ শতাংশ। এ ৮ শতাংশের মধ্যে ৭ দশমিক ৯ শতাংশই সরকারি পর্যায়ের বন্ড। বেসরকারি খাতে বন্ডের অবদান মাত্র শূন্য দশমিক ১ শতাংশ।
বৈশ্বিক যুদ্ধ ও অভ্যন্তরীণ নানা কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকটে পড়ে গত জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফের সঙ্গে ঋণ চুক্তিতে যায় বাংলাদেশ। গত ফেব্রুয়ারিতে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের মধ্যে প্রথম কিস্তিতে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার ছাড় করেছে আইএমএফ। বাকি অর্থ ছাড় করবে আগামী ২০২৬ সালের মধ্যে।
ঋণ সমঝোতা অনুযায়ী প্রতি কিস্তি ছাড়ের পূর্বে আগের কিস্তিতে দেওয়া অর্থের ব্যবহারের অগ্রগতি পর্যালোচনা করবে আইএমএফ। অবশ্য আন্তর্জাতিক এ সংস্থার সঙ্গে আলোচনা চলমান থাকার মধ্যেই ঋণ পেতে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়িয়ে ভর্তুকি কমানোসহ আর্থিক খাতের কাঠামো ও নীতি সংস্কারে বেশ কিছু পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করে চলছে বাংলাদেশ।
ঋণ পাওয়ার পর আরও বেশ কিছু পরামর্শ বাস্তবায়ন করে চলছে বাংলাদেশ। মুদ্রানীতির আঙ্গিক বদলে ‘মনিটারি টার্গেটিং’-এর স্থলে ‘ইন্টারেস্ট রেট টার্গেটিং’ করা, ৯ শতাংশে বেঁধে রাখা ঋণ সুদহার সরিয়ে ১১ শতাংশের মধ্যে রাখা, বিনিময় হার বাজারমুখী করতে বাফেদার ওপর ছেড়ে দেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
দেশের ১০ জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ দিয়েছে সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
ঢাকা, গাজীপুর, কুমিল্লা, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, টাঙ্গাইল, পাবনা, শরীয়তপুর, লক্ষ্মীপুর ও ফেনী জেলা নতুন জেলা প্রশাসক পেয়েছে। এর আগে গত ১২ মার্চ ৮ জেলায় ডিসি পদে রদবদল এনেছিল সরকার।
গাজীপুরের ডিসি আনিসুর রহমানকে ঢাকায় বদলি করা হয়েছে। এছাড়া জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খানকে রাঙ্গামাটি, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়রের একান্ত সচিব (উপসচিব) শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিনকে বান্দরবান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের একান্ত সচিব মো. কায়ছারুল ইসলামকে টাঙ্গাইল এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর একান্ত সচিব মু. আসাদুজ্জামানকে পাবনার ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
পানি সম্পদ উপমন্ত্রীর একান্ত সচিব আরিফুজ্জামানকে শরীয়তপুর, অর্থ বিভাগে সংযুক্ত উপসচিব সুরাইয়া জাহানকে লক্ষ্মীপুর, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব (উপসচিব) খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমানকে কুমিল্লা, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে সংযুক্ত উপসচিব মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তারকে ফেনী ও বিদ্যুৎ বিভাগের উপসচিব আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলামকে গাজীপুর জেলার ডিসি করা হয়েছে।
অন্যদিকে ফেনীর ডিসি আবু সেলিম মাহমুদ-উল হাসানকে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব, লক্ষ্মীপুরের ডিসি মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দকে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব, রাঙ্গামাটির ডিসি মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপসচিব, বান্দরবানের ডিসি ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজিকে বিদ্যুৎ বিভাগের উপসচিব ও পাবনার ডিসি বিশ্বাস রাসেল হোসেনকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের উপসচিব হিসেবে বদলি করা হয়েছে।
সরকারের উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের জেলা প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়। জেলাপর্যায়ে ডিসি কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন।
ডিসি জেলার সাধারণ প্রশাসনিক কার্যক্রম, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং কালেক্টর হিসেবে ভূমি ব্যবস্থাপনার বিষয়গুলো তদারকি করেন। এছাড়া সরকারের বিশেষ কর্মসূচি ও চলমান সব উন্নয়নমূলক কাজে জেলা প্রশাসক তদারকি করে থাকেন।
নির্বাচন কমিশনের রোডম্যাপ অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ কিংবা আগামী বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের সময় জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকায় যেকোনো কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ থেকে শুরু করে বাতিলের ক্ষমতাও তাদের থাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থাকে রিটার্নিং কর্মকর্তা তথা ডিসির অধীনে। নির্বাচনের সময় সমন্বয়কারীর ভূমিকায়ও থাকেন ডিসিরা।
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) ডেঙ্গুতে আরও দুজন মারা গেছে। একই সময় এ বছরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬৬১ জন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর আগে মাত্র এক দিন আগেই গত বুধবার বছরের সর্বোচ্চ ৬৭৮ জনের ভর্তির রেকর্ড হয়েছিল।
এ নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতালে রোগী ভর্তি হয়েছে ১১ হাজার ১১৬ জন এবং মারা গেছে ৬৪ জন। ভর্তি রোগীর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি অর্থাৎ এ মাসে গত ছয় দিনে ৩ হাজার ১৩৮ জন ভর্তি হয়েছে। একইভাবে এ মাসের প্রথম ৬ দিনে মারা গেছে ১৭ জন। গত মাসে মৃত্যু ছিল ৩৪ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, নতুন রোগীদের মধ্যে ৪৩৩ জন ঢাকায় ও ২২৮ জন ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ২ হাজার ১৯ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে ঢাকায় চিকিৎসা নিচ্ছে ১ হাজার ৪৯০ জন ও ঢাকার বাইরে ৬৩৯ জন।
এ পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৭ হাজার ৮৯৯ জন ও ঢাকার বাইরে ৩ হাজার ২১৭ জন। আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৮৯২৩ জন। তাদের মধ্যে ঢাকায় ৬ হাজার ৩৫৯ এবং ঢাকার বাইরে ২৫৬৪ জন। এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছে ৬৪ জন।
নির্বাচনবিরোধী অবস্থান থেকে নির্বাচন ভোটারশূন্য করতে বিএনপি নানামুখী ষড়যন্ত্র ও অপতৎপরতায় লিপ্ত বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। জনগণ বিএনপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘জনবিচ্ছিন্ন বিএনপি জনগণের মুখোমুখি হতে ভয় পায়। জনসমর্থনহীনতার ভীতি থেকে নির্বাচন নিয়ে বিভ্রান্তিকর ও অযৌক্তিক অপপ্রচার চালাচ্ছে বিএনপি।’
গতকাল বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের দপ্তর থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনসহ অন্যান্য নির্বাচনে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণই প্রমাণ করে নির্বাচন নিয়ে জনগণের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। বিএনপি ও তাদের জোটে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও এসব নির্বাচনে ৫০ শতাংশের ওপর ভোটাররা ভোট দিয়েছে।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বাংলার জনগণ বিএনপিকে বিশ্বাস করে না। দলটির কোনো চক্রান্তই সফল হবে না। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু পরিবেশেই নির্বাচন হবে। জনগণের রায়েই সরকার পরিবর্তন হবে।’
বিএনপির সময় নির্বাচন কমিশনের স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করার কোনো সুযোগ ছিল না উল্লেখ করে সেতুমন্ত্রী বলেন, ওই সময় নির্বাচন কমিশন ছিল প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অধীন। একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশনের বিশেষ কোনো সক্ষমতাই ছিল না। শেখ হাসিনা নির্বাচন কমিশনকে সাংবিধানিক বিধান অনুযায়ী একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করেছেন। বিশেষত সাংবিধানিক প্রক্রিয়াকে আরও সুদৃঢ় করতে নির্বাচন কশিমন গঠনে সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করেছেন।
ওবায়দুল কাদের দাবি করেন, ‘দলীয় ও বিতর্কিত লোকদের নিয়োগ দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশনসহ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কলঙ্কিত করেছিল বিএনপি। তাদের সময় কোনো গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ক্ষমতা কুক্ষিগত করার অপচেষ্টায় তারা গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করেছে। বিএনপি ক্ষমতা দখল করে সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করার পাশাপাশি রাষ্ট্রব্যবস্থা অকার্যকর করেছিল।’
তিনি দাবি করেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় এলে সেই ধ্বংসাত্মক রাজনীতির পুনরাবৃত্তি ঘটাবে। কারণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার প্রতি ঐতিহ্যগতভাবে তাদের কোনো আস্থা নেই। অন্যদিকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলোর সব ধরনের সক্ষমতা বৃদ্ধি করেছেন।’
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ও তার আগে সরকারের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘পদত্যাগের ঘোষণা সরকারকে সবার আগে দিতে হবে এবং পদত্যাগ করেই দিতে হবে। এ ছাড়া সংলাপের কোনো প্রশ্নই উঠবে না।’
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে বৈঠক শেষে মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জনগণের অধিকার, কথা বলার অধিকার, বাকস্বাধীনতা এগুলো পুনরুদ্ধার করার জন্য আমরা আন্দোলন করছি। বর্তমান অবৈধ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই অত্যন্ত সচেতনভাবে বাংলাদেশের সকল অর্জনকে ধ্বংস করে দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এই বছরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আওয়ামী লীগ সরকার এ বছরেই একটি পাতানো নির্বাচনের পাঁয়তারা করছে। পাতানো নির্বাচন মানুষ কখনো গ্রহণ করবে না। পরিষ্কারভাবে বলে দিতে চাই, এই অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। এদেশের মানুষ মেনে নেবে না। পরিষ্কারভাবে বলেছি, এই সরকারকে পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার আগে সম্মিলিতভাবে যৌথ ঘোষণাপত্র ঘোষণা করব। আর এজন্যই আজকের বৈঠক।
এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করে যদি আবার ক্ষমতায় আসে, আমরা তাতে স্বাগত জানাব।’
বৈঠকে মির্জা ফখরুল ছাড়াও স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু উপস্থিত ছিলেন। ১২ দলের পক্ষে ছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, কল্যাণ পার্টির মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম মহাসচিব মুফতি গোলাম মুহিউদ্দিন ইকরাম প্রমুখ।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘তাদের (আওয়ামী লীগ নেতাদের) সংলাপের কথা মাটিতে পড়ার আগেই হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। সংলাপ নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্যে আওয়ামী নেতারা জনগণের কাছে জাতীয় তামাশার মুখপাত্র হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন।’
তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা খর্ব করে ক্ষমতাকে স্থায়ী করার নীলনকশা করছে সরকার। মূলত, আজ্ঞাবহ ইসি প্রধানমন্ত্রীকে পুনরায় নির্বাচিত করার একটি মেশিন। নিজের স্বাধীনতাকে বিক্রি করে দিয়ে নির্বাচন কমিশন যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তা বিশ্বের ইতিহাসে নজিরবিহীন। বর্তমানে ইসি প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচন ‘ম্যানিপুলেট’ করার একটি মেশিন।”
গত দেড় মাসে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ২২৫টি মামলা, ৮৬৫ জন গ্রেপ্তার ও ১০ হাজার ১০ জনের অধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে বলে জানান তিনি। এ সময় কেন্দ্রীয় নেতা সরাফত আলী সপু, আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারে চা বিক্রি করেন বাদশা মিয়া। ছোট একটা চায়ের স্টল চালিয়ে ভালোই দিন কাটছিল তার। সন্তানদের পড়াশোনা, সংসারের খরচ চলত চায়ের স্টলের আয় দিয়ে। সব খরচ মিটিয়ে প্রতি মাসে সঞ্চয় ছিল ৮-১০ হাজার টাকা। কিন্তু বাজারে সবকিছুর দাম বাড়ায় এখন আর আয় হয় না। উল্টো মাসের শেষের দিকে ঋণ করতে হয়। বাধ্য হয়ে নৈশপ্রহরীর কাজ নিয়েছেন। দৈনিক কর্মঘণ্টা বাড়িয়ে যা আয় হয় তা দিয়েও যেন সংসারের ব্যয় সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। বাজারে প্রতিদিন পণ্যের দাম বাড়ছে।
লাগামহীন নিত্যপণ্যের বাজারে দিশেহারা সব শ্রেণির মানুষ। প্রতিদিন বাড়ছে কোনো না কোনো পণ্যের দাম। বাজরে নতুন করে মাছ, মুরগি, মরিচ, আলুসহ বেশ কটি পণ্যে দামের তীব্রতা যেন আরও বেড়েছে। আগে থেকে কাঁচা মরিচের দামে তেতে থাকা বাজারে সব ধরনের সবজি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে এখন কম দামে বিক্রি হওয়া সবজি ঢেঁড়স ও পেঁপে। তাও কিনতে ভোক্তার খরচ করতে হচ্ছে ৫০ টাকা করে। ১৮০ টাকার টমেটো ঠেকেছে ২৪০ টাকায়। এ ছাড়া মানভেদে প্রতি পিস লাউ বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকা, যা কয়েক দিন আগেও বিক্রি হয়েছে ৫০-৬০ টাকায়। ১০০-১২০ টাকার গাজর ১৬০ টাকা, করলা ৬০-৭০, বেগুন ৮০, মরিচ ৩২০-৪৩০ ও আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়।
চড়া সবজির বাজার নিয়ে ব্যবসায়ীরা জানান, কাঁচাবাজার ওঠানামার মধ্যে থাকে। তবে বর্ষার বৈরী আচরণের জন্য বাজারে অনেক সবজির সরবরাহ কমেছে। ফলে কিছু কিছু মৌসুমি সবজির দাম বাড়তির দিকে। তা ছাড়া মৌসুম শেষ হওয়ায় কিছু সবজি আমদানিনির্ভর হয়ে পড়েছে। এ কারণে টমেটো, গাজর ও কাঁচা মরিচ বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।
শান্তিনগর বাজারের সবজি বিক্রেতা ফয়সাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে লাগাতার বৃষ্টির কারণে বাজারে সবজি সরবরাহ কমেছে। অন্যদিকে ভারতের বাজারে কাঁচা মরিচ ও টমেটোর দাম বাড়ায় দেশের বাজারেও বাড়ছে। সব মিলিয়ে বর্তমানে সবজির বাজার চড়া যাচ্ছে।
এদিকে মুরগির বাজারে গিয়ে কোনো সু-খবর মেলেনি। ২০-৩০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ১৯০-২০০ আর কক মুরগি ২৮০ টাকায়। এ ছাড়া দাম অপরিবর্তিত থেকে গরু ও খাসির মাংস বিক্রি হতে দেখা যায়। প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০-৮৩০ টাকা। খাসির মাংস ১ হাজার ১০০ টাকা ও ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়। তবে ডিমের বাজারে কিছুটা স্বস্তির খবর পাওয়া গেছে। পাইকারিতে পাঁচ টাকা কমে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকায়। কিন্তু খুচরা বাজারে এর ফল পাচ্ছেন না ভোক্তা। প্রতি ডজন ডিম ১৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে তাদের।
হঠাৎ করে ব্রয়লারের দাম বাড়ার বিষয়টি স্বীকার করে ব্যবসায়ীরা বলেন, কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে মুরগির দাম কিছুটা কমতির দিকে ছিল। কিন্তু ঈদের আমেজ শেষ হওয়ায় আবারও বেসামাল হতে চলেছে। তবে মুরগির দাম বাড়ায় বাজারে ভোক্তার চাহিদা ও ব্যবসায়ীদের বিক্রিও কমেছে।
হাতিরপুল বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী হান্নান দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত দুদিনের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে ব্রয়লারের কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। দাম বাড়ায় ১৭০ টাকার মুরগি এখন ২১০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।
মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকায়, যা গত মাসেও ২০০-২২০ টাকায় পাওয়া যেত। পাঙাশ ছাড়াও সস্তায় বিক্রি হওয়া নলা মাছের কেজিতে বেড়েছে ৫০ টাকা। মহাখালী বাজারে প্রতি কেজি নলা মাছ ২৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি তেলাপিয়া (বড়) ৩০০, বড় রুই ৪৫০, ছোট রুই ৩২০, গলদা চিংড়ি ১ হাজার ৬০০, চিংড়ি ৬০০-৬৫০, ইলিশ ২ হাজার ৪০০ ও কাতল মাছের কেজি ৪০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
মাছ ব্যবসায়ীদের ভাষ্য অনুযায়ী, ঈদুল আজহার পর রাজধানীর বাজারে মাছ বিক্রেতাদের সংকট থাকায় মাছের দাম বাড়তির দিকে। জানতে চাইল মহাখালী বাজারের মাছ বিক্রেতা সোহাগ দেশ রূপান্তরকে বলেন, মাছ ব্যবসায়ীরা ঈদের ছুটি শেষে ফিরতে শুরু করেছেন। এখনো সেভাবে বাজার শুরু হয়নি। তা ছাড়া, মাছ বিক্রেতার পাশাপাশি বাজারে মাছের সংকট রয়েছে। সরবরাহ না থাকায় এ সংকট তৈরি হয়েছে। ফলে মাছর দাম কেজিতে প্রতি ২০-৩০ টাকা বেড়েছে।
চলমান সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগে খেলতে নেমে দুই দলের মাঝে হাতাহাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিজেদের শেষ ম্যাচে আজ শুক্রবার রাত দশটার দিকে মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামের ক্রিজে নেমেছিলেন মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ ও দীপঙ্কর দীপনের টিম।
খেলা চলাকালীন সময়ে দীপঙ্কর দীপনের দলের খেলোয়াড়দেরকে প্রথমে উস্কানি দিতে থাকে রাজের টিম। এরপর তাদের দলের লোকজন এসে দীপনের টিমের এক প্লেয়ারকে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে মারধর করতে থাকে। এরপর দীপনের টিমের খেলোয়াড়রা উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং চেয়ার ছুঁড়াছুড়ি শুরু করে। এক পর্যায়ে দুই দলের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়।
দীপনের দলের খেলোয়াড়দের একজন অভিনেতা মনির হোসেন শিমুল অভিযোগ তুলে বলেন, তারা বাইরে থেকে সন্ত্রাসী এনে আমাদের উপর আক্রমণ শুরু করে। এটা কোন ধরণের সিসিএল খেলা?
অন্যদিকে একই দলের আরেক খেলোয়াড় চিত্রনায়ক জয় চৌধুরী বলেন, রাজ ভাইয়ের টিম থেকে আমাদের দলের উপর আক্রমণ শুরু করে। তারা বাইরে থেকে লোকজন নিয়ে এসেছে। আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে একজনকে তুলে নিয়ে মারধর করতে শুরু করে। এরমধ্যে মৌসুমী হামিদ আহত হন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোস্তফা কামাল রাজের দলের পক্ষ থেকে অভিযোগটি অস্বীকার করা হয়। তারা জানান, প্রয়োজন মনে করলে তারা পরে মন্তব্য দেবেন।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে উৎসাহ দিতে তিনদিন ব্যাপী সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ (সিসিএল) আয়োজন করা হয়েছে। এতে মোট ১৬ টি দল অংশ নিয়েছে। আগামীকাল ফাইনালের মধ্য দিয়ে এ আসর সমাপ্ত হবে।
মূল লড়াইয়ের আগে গা গরমের খেলা। সেখানে ব্যাটসম্যানরা ছিলেন আগ্রাসী। তাতে পাকিস্তান পায় ৩৪৫ রানের বড় সংগ্রহ। তারপরও জিততে পারল না। নিউজিল্যান্ড জয় তুলে নিয়েছে ৩৮ বল হাতে রেখেই।
পাকিস্তানের ব্যাটারদের মধ্যে সেঞ্চুরি পেয়েছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। ৯৪ বলে ১০৩ রান করে অবসর নেন তিনি। এছাড়া বাবর আজম ৮০ ও সৌদ শাকিল ৭৫ রান সংগ্রহ করেছেন।
পাকিস্তানের দেয়া ৩৪৬ রানের জবাব দিতে নেমে ৫ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে নিউজিল্যান্ড।
কিউই ব্যাটারদের মধ্যে ওপেনিংয়ে নামা রাচিন রবীন্দ্র ৭২ বলে ৯৭ রান সংগ্রহ করে দলের জয়ে বড় অবদান রাখেন। এছাড়া দীর্ঘদিন পর দলে ফেরা কেন উইলিয়ামসন ৫৪, ড্যারেল মিচেল ৫৯ আর মার্ক চাপম্যান ৬৫ রান করে দলকে ৫ উইকেটের জয় এনে দিয়েছেন।
নিজের গান দিয়ে ইউটিউব চ্যানেলের যাত্রা শুরু করলেন ক্লোজআপ তারকা নোলক বাবু।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর বনশ্রীর এক রেস্তোরায় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলের উদ্বোধন করেন এ গায়ক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তার মা।
নোলক বাবুর ইউটিউব চ্যানেলে উন্মুক্ত হয়েছে তার নতুন গান 'মানুষ'। গানের কথা লিখেছেন তরুন সিং, সুর করেছেন শিল্পী নিজেই। গানটির সংগীতায়োজন হৃষিকেশ রকি।
নোলক বাবু বলেন, গানটি গাইতে পেরে আমি মুগ্ধ।
গোটা দেশ এখন দুই ভাগে বিভক্ত। একদল সাকিব আল হাসানকে শূলে চড়াচ্ছে, অন্যরা তামিম ইকবালকে। অথচ জাতীয় ক্রিকেট দল ভারতে গেছে বিশ্বকাপ খেলতে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে খোঁচাখুঁচি। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ খেলতে নেমেছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজেদের প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে। যে উদ্বোধনী জুটি নিয়ে এত দ্বিধা আর সংকোচ, যে কারণে তামিম না থাকায় এত হাহাকার, সেখানেই কিনা বাজিমাত করে পুরো জাতিকে অন্য এক বার্তা দিলেন তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস।
বিশ্বকাপের দলে যে তামিম ইকবাল থাকছেন না, সেটা জানা গিয়েছিল আগের দিনেই। তবু ক্রিকেট ভক্তদের মনের এক কোণে ক্ষীণ আশা ছিল। ওপেনারদের টানা ব্যর্থতার কথা বিবেচনায় হলেও এই ব্যাটসম্যান থাকবেন বলে ছিল তাদের। কিন্তু সেই আশার গুড়ে বালি। তাকে দলে না রাখায় অবশ্য রাস্তায় জনতার ঢল নামেনি, রাজপথে হয়নি কোনো সভা-সমাবেশ। তবে নতুন যুগের দেয়ালে দেয়ালে ছড়িয়ে পড়ে প্রতিবাদী নিন্দার বাণী। হাল জামানায় যাকে ‘টাইমলাইন’ বলে সম্বোধন করা হয়।
সেই সব প্রতিবাদী স্ট্যাটাসও দুই ভাগে বিভক্ত। কেউ সাকিব আল হাসানের পক্ষে, কেউবা তামিম ইকবালের। একদল পরিসংখ্যান-পর্যালোচনা দিয়ে বোঝাতে ব্যস্ত যে এই যুগে তামিমের কৌশল ‘ওল্ড স্কুল’। ওসব এখন আর চলে না। অন্য দল ১৭ বছরের ইতিহাস আর আবেগ নিয়ে হাজির। তাদের কাছেও আছে পরিসংখ্যান। সেটা গত কয়েক বছরের তামিমের ওপেনার সঙ্গীদের একটা তালিকা। তারাই শূলে চড়াচ্ছেন সাকিব-হাথুরু থেকে শুরু করে বিসিবির শীর্ষ কর্তাদের।
বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে সাকিব ক্রীড়াভিত্তিক একটি টিভি চ্যানেলকে দিয়ে গেছেন সাক্ষাৎকার। সেখানে তিনি সরাসরি তামিমের সমালোচনা করেছেন। এই ওপেনার যে দলের প্রয়োজনে পজিশন পরিবর্তনে রাজি হতে চান না, সেই মানসিকতা বাচ্চাদের মতো বলে সমালোচনা করেছেন টাইগার অধিনায়ক। এমনকি তার স্পোর্টসম্যানশিপ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তার আগে তামিম নিজে একটা ভিডিও বার্তায় বলেছেন তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা। মাশারফী বিন মোর্ত্তজাও ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। তাতে করে ক্রিকেটাঙ্গনে এখন যেন ভিডিও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
ক্রিকেট নিয়ে জাতির অবস্থা যখন এমন, তখন ভারতের গোয়াহাটিতে বাংলাদেশের ক্রিকেট দল। আসাম রাজ্যের রাজধানীর বরষাপাড়া ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম উদ্বোধনী ম্যাচ খেলতে নেমেছিল তারা। ছিলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, নাজমুল হোসেন শান্তও ছিলেন না থাকার মতো করেই। প্রথম গা গরমের ম্যাচে তাই নেতৃত্ব দেন মেহেদি হাসান মিরাজ।
টসভাগ্যে মিরাজের পরাজয়ের পর বল হাতে নামে বাংলাদেশ। টানা ৪০ ওভার টাইগারদের বোলারদের যেন শাসন করছিলেন লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা। ঐ সময় পর্যন্ত ৫ উইকেট হারালেও তারা করে ২০২ রান। তারপরই যেন ঘুরে দাঁড়ান টাইগার বোলাররা। শেষ ১০ ওভারের ৫ বাকি থাকতেই গুটিয়ে যায় লঙ্কানরা। ২৬৩ রানের বেশি তারা করতে পারেনি।
২৬৪ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নামা বাংলাদেশের হালটা যে সুখকর হবে না, মুহূর্তেই ধসে পড়বে ব্যাটিং লাইনআপ। সিনিয়রদের কাউকে এসে হাল ধরে নিয়ে টেনে নিয়ে যেতে হবে দলকে। খাঁদের কিনারা থেকে টেনে তুলে হয় জয়, নয়তো সম্মানজনক হার! এমনটাই ছিল অনুমিত। আমরা যে এতেই অভ্যস্ত।
কিন্তু তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস সব অনুমান ভুল প্রমাণ করে দেন। যে ওপেনিং জুটি বাংলাদেশকে ভোগাচ্ছিল, যে সমস্যার কারণে চোট প্রবণ তামিম ইকবালকেও সবাই চাইছিলেন দলে। সেটাই কিনা তারা প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে ভুলিয়ে দিলেন! উদ্বোধনীতে তারা গড়েন ১৩১ রানের জুটি। তাতে ১৩ ম্যাচ পর বাংলাদেশ ওপেনিংয়ে শতরানের জুটি দেখতে পেয়েছে। হোক সেটা প্রস্তুতি ম্যাচ, তবুও তো লড়াই!
সবচেয়ে বড় স্বস্তি লিটন-তানজিদের রানে ফেরা। এশিয়া কাপের আগে জ্বরে ভুগছিলেন লিটন। সেই জ্বরের ধকল কাটিয়ে উঠতে তার সময় লেগেছে। মহাদেশীয় টুর্নামেন্টে যেতে হয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তর চোটের কারণে। কিন্তু নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। এই টুর্নামেন্টে ২ ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন তানজিদ। কিন্তু তিনিও প্রত্যাশা মেটাতে ব্যর্থ হয়েছেন। এমনকি ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ড সিরিজেও।
তাই বিশ্বকাপের দলে তামিম ইকবালকে বাদ দেওয়াতে ঝড় উঠেছিল। সেই ঝড় চলমান ছিল আজ দুপুর অবধি। অনেকেই ভেবে রেখেছিলেন, এই জুটি ব্যর্থ হবে। যা ধারাবাহিক থাকবে টুর্নামেন্টের শুরুতেও। তারপর বিশ্বকাপের মাঝপথে আচমকা ডাক পেয়ে তামিম ইকবাল উড়াল দেবেন ভারতে। ঠিক যেমনটা হয়েছিল ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তান দলে। সেবার জাভেদ মিয়াঁদাদকে ছাড়াই তারা বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিল। কিন্তু ব্যাটারদের ব্যর্থতার কারণে তাকে মাঝপথে উড়িয়ে নেওয়া হয়েছিল, এবং বিশ্বকাপ জিতেছিল।
এমন স্বপ্ন বাংলাদেশের অনেক ক্রিকেটভক্তরাও দেখতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু তানজিদ তামিম আর লিটনের জুটি বদলে দিয়েছে সব হিসেব-নিকেশ। তামিমের ফেরার প্রত্যাশায় যারা গুনছিলেন প্রহর, তাদের মাথায় যেন এবার আকাশ ভেঙে পড়েছে। কারণ তারা যে রানে ফিরেছেন। যুববিশ্বকাপজয়ী তামিম খেলেছেন ৮৪ রানের একটি ইনিংস। ৮৮ বলে যা সাজানো ছিল ১০টি চার ও ২টি ছক্কায়। অন্যপ্রান্তে লিটন ৫৬ বলে ১০ চারে খেলেছেন ৬১ রানের ইনিংস। শুধু কি তাই! এদিন তিনে নেমেছিলেন মিরাজ। তার ব্যাট থেকে এসেছে ৬৭ রান। ৬৪ বলের হার না মানা ইনিংসটি সাজানো ছিল ৫ চার ও ২ ছক্কায়।
পঞ্চপান্ডবের পরের প্রজন্ম তো তারাই। যাদের ব্যাটে শুক্রবার বরষাপাড়ায় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। তাদের রানে ফেরা যেন নতুন দিনের বার্তা দেয়। যে বার্তা আগামীর পথচলার। যেখানে পুরনোকে আকড়ে ধরে রাখার প্রবণতা ক্ষীণ হয়ে আসার বার্তা। সহজ কথায়, তরুণদের রানে ফেরাতে মিয়াঁদাদ হওয়ার সুযোগ আর হচ্ছে না তামিম ইকবালের।
আল নাসরে প্রথম মৌসুমটা ভালো না কাটলেও দ্বিতীয় মৌসুমের শুরু থেকেই ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো আছেন দারুণ ছন্দে। নিজে গোল করে দলকে জেতাচ্ছেন, সতীর্থদের দিয়ে গোল করাচ্ছেন।
শুক্রবারও সৌদি প্রো লিগে আল তা’য়ির বিপক্ষে ২-১ গোলে জিতেছে আল নাসর। এ ম্যাচেও রোনালদো গোল করেছেন এবং করিয়েছেন। তবে তাঁকে নিয়ে বেশি আলোচনা তালিসকার গোলটিতে অসাধারণ এক অ্যাসিস্টের জন্য। অ্যাসিস্টটিতে যে সবার মন ভরিয়ে দিয়েছেন রোনালদো।
তা’য়ির মাঠে আল নাসর গতকাল শুরুটা করেছে দারুণ। একের পর এক আক্রমণে স্বাগতিক দলের রক্ষণ করে দিয়েছে এলোমেলো। ম্যাচের শুরুর দিকেই রোনালদোর দুর্দান্ত একটি প্রচেষ্টা ঠেকিয়ে দেন তা’য়ির গোলকিপার। এ ছাড়া রোনালদোও খুব কাছ থেকে পাওয়া একটি সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি।
তবে ৩২ মিনিটে এগিয়ে যায় আল নাসর। গোলটি করেছেন ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার অ্যান্ডারসন তালিসকা। গোলটিতে রোনালদো অ্যাসিস্ট করেছেন অসাধারণ এক বাই-সাইকেল কিকে। সৌদি প্রো লিগে এ মৌসুমে এটা রোনালদোর পঞ্চম অ্যাসিস্ট।
খেলার স্রোতের বিপরীতে ৭৯ মিনিটে সমতায় ফেরে তা’য়ি। কিন্তু সমতা বেশিক্ষণ থাকেনি। ৩ মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে আল নাসরের জয়সূচক গোলটি করেছেন রোনালদো। সৌদি প্রো লিগে এ মৌসুমে এটা ৭ ম্যাচে তার ১০ নম্বর গোল। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ১৫ ম্যাচ খেলে করেছেন ১৬ গোল।
এই জয়ের পর ৮ ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছে আল নাসর। আল ফেইহার সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করা আল ইত্তিহাদ সমান ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে আছে শীর্ষে। ৮ ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে আল তা’য়ি।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে পুলিশ। নির্বাচনে কী উপায়ে নিরাপত্তা দেওয়া হবে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। তবে সরকারের হাইকমান্ড থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে তথ্য এসেছে, ঘাপটি মেরে থাকা পুলিশের কিছু কর্মকর্তা ও সদস্য সরকারবিরোধীদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রাখছে। পুলিশের একটি প্রতিবেদনেও তথ্য এসেছে সারা দেশে অন্তত আড়াইশো কর্মকর্তা আছেন তারা সরকারবিরোধী হিসেবে পরিচিত। তাদের পুরো কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
এদিকে, চলতি মাস ও আগামী মাসের মধ্যে পুলিশে আরও বড় ধরনের রদবদল করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তালিকাও করা হয়েছে। পাশাপাশি উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্রসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদিও কেনার চেষ্টা করছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানান, সামনের দিনগুলোতে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা। এ নিয়ে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা আগাম সতর্কবার্তাও দিয়েছে। যেকোনো বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধ করতে কিছুদিন আগে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সবকটি ইউনিট প্রধান ও জেলার এসপিদের কাছে বার্তা পাঠানো হয়েছে। বার্তায় বলা হয়েছে রাজনৈতিক দুবৃর্ত্তায়নের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি পুলিশের মধ্যে কোনো সদস্য সরকারবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার তথ্য পেলে জানাতে বলা হয়েছে। ঢাকাসহ সারা দেশেই সব পুলিশ সদস্যকে সতর্ক থাকতে হবে। নির্বাচনকালীন যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। পেশাদার সন্ত্রাসীসহ অন্য অপরাধীদের ধরতে বিশেষ অভিযান চালাতে হবে।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঘাপটি মেরে থাকা পুলিশের কিছু সদস্যের কর্মকান্ড নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। এই সংখ্যা প্রায় আড়াইশো মতো হবে। সংখ্যা আরও বাড়তেও পারে। ইতিমধ্যে তালিকা করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে সরকারের হাইকমান্ডকে অবহিতও করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যেকোনো পরিস্থিতির জন্য পুলিশকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় পুলিশে উদ্বেগ আছে। বৈধ অস্ত্রের সংখ্যার খোঁজ নেওয়া, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও অস্ত্র কারবারিদের গ্রেপ্তার করতে বিশেষ অভিযান চালাতে ইতিমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে অভিযানের নির্দিষ্ট তারিখ এখনো ঠিক হয়নি। হুট করেই আমরা বিশেষ অভিযান শুরু করব। কেপিআই স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন যথাসময়ে হবে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। নির্বাচন নিয়ে যাতে কোনো মহল বা চক্র নাশকতামূলক কর্মকান্ড চালাতে না পারে সে জন্য মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সতর্ক আছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (অপারেশন) আনোয়ার হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশের সবধরনের প্রস্তুতি আছে। দাগি সন্ত্রাসীসহ অন্য অপরাধীদের ধরা ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করতে দ্রুত সময়ের মধ্যে বড় ধরনের অভিযান চালানোর পরিকল্পনা আছে আমাদের।
পুলিশ সূত্র জানায়, আড়াইশো পুলিশ কর্মকর্তার কর্মকান্ড নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। তাদের মোবাইল নম্বর সার্বক্ষণিক ট্র্যাকিং করা হচ্ছে। এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যদেরও খোঁজ রাখা হচ্ছে। নজরদারির মধ্যে থাকা বেশ কয়েকজন পুলিশ সুপার, অ্যাডিশনাল পুলিশ সুপার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ইন্সপেক্টর, সাব-ইন্সপেক্টর আছেন। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের অ্যাডিশনাল ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল বা নেতাদের সাপোর্ট দেওয়া আমাদের কাজ না। জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আমাদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের জন্য উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্র ও যানবাহন ক্রয় করা হচ্ছে। পাশাপাশি ৫০ লাখের মতো রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড কেনা হচ্ছে। আগামী মাসের মধ্যে এসব সরঞ্জাম বাংলাদেশে আসবে বলে আশা করছি। ডিএমপি, সিএমপি, কেএমপি, আরএমপি, বিএমপি, এসএমপি, আরপিএমপি, জিএমপি কমিশনার, বিশেষ শাখা (এসবি), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), অপরাধ তদন্ত বিভাগ, পিবিআই, টুরিস্ট পুলিশ, এটিইউ, রেলওয়ে পুলিশ, নৌপুলিশ, এপিবিএন, হাইওয়ে, শিল্পাঞ্চল পুলিশ প্রধান, সব অ্যাডিশনাল আইজিপি, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা ও রংপুর রেঞ্জে নতুন আগ্নেয়াস্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি পাঠানো হবে। ইতিমধ্যে ইউনিট প্রধানরা পুলিশ সদর দপ্তরে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছেন। বিষয়টি আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকারবিরোধীরা নানা ষড়যন্ত্র করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করতে উঠেপড়ে লেগেছে তারা। বিএনপি আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও করছে। তারা পুলিশের ওপর হামলা করছে। যানবাহনে আগুন দিচ্ছে। আর এসব মোকাবিলা করতে পুলিশকে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে। অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে পুলিশ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। অপরাধীদের ধরতে পুলিশের বিশেষ অভিযান শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।