
যশোর সদর উপজেলায় বাসচাপায় ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের সাত যাত্রী নিহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে লেবুতলা বাজারে যশোর-মাগুরা মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে একই পরিবারের পাঁচজন রয়েছেন। তাদের বাড়ি যশোরের বাঘারপাড়ার যাদবপুর ও সদর উপজেলার সুলতানপুর গ্রামে।
যশোরের এ দুর্ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মাথায় সিলেটে বাসচাপায় নিহত হয়েছেন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার (ইজিবাইক) আরও পাঁচ যাত্রী। গতকাল রাত ১০টার দিকে জৈন্তাপুর উপজেলার দরবস্ত এলাকায় সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
এদিকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল বিকেল পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় ১০ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন।
যশোরের দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে পাঁচজনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলো ইজিবাইকচালক সদর উপজেলার সুলতানপুরের সাইফুলের ছেলে ইমরান হোসেন (২৭), বাঘারপাড়ার যাদবপুরের হেলালের যমজ দুই ছেলে হোসেন ও হোসাইন (২), তার মেয়ে খাদিজা (৭), একই গ্রামের বাবুল মুন্সির স্ত্রী ফাহিমা খাতুন (৩০)।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, যশোর থেকে ছেড়ে যাওয়া মাগুরাগামী বাস একটি ইজিবাইককে চাপা দেয়। পরে স্থানীয় বাসিন্দা, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা গিয়ে হতাহতদের উদ্ধার করেন।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেপরোয়া গতির বাস সামনে থাকা ইজিবাইকের ওপর উঠে যায়। এ সময় আরোহীসহ ইজিবাইকটি বাসের নিচে চাপা পড়ে। এতে ঘটনাস্থলে চারজন এবং হাসপাতালে নেওয়ার পর আরও তিনজনের মৃত্যু হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর চালক ও হেলপার বাস রেখে পালিয়ে যায়। তাদের আটকের চেষ্টা চলছে।’
সিলেটের দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে চারজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন জৈন্তাপুরের বড়খোলা গ্রামের মৃত খুর্শেদ আলমের ছেলে মুসদ আলী (৫০), শ্রীখেল গ্রামের মোজাম্মেল আলীর ছেলে নূর উদ্দিন (৫৫), বারগাতি গ্রামের আবদুল বারীর ছেলে আবদুল লতিফ (৫০) ও ফরফরা গ্রামের তরিকুল ইসলামের ছেলে মোহাম্মদ কামাল (২৫)।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রাত ১০টার দিকে একটি বাস সিলেট থেকে জাফলংয়ের দিকে যাচ্ছিল। মহাসড়কের দরবস্ত এলাকায় বিপরীতমুখী ইজিবাইকের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। ইজিবাইকটিতে সাতজন যাত্রী ছিলেন। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে হতাহতদের উদ্ধার করেন। এ দুর্ঘটনায় ইজিবাইকের অন্তত পাঁচ যাত্রী নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন দরবস্ত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাহারুল আলম বাহার।
টাঙ্গাইলে আলাদা তিনটি সড়ক দুর্ঘটনায় নারী ও শিশুসহ পাঁচজন নিহত হয়েছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছে ১২ জন। গতকাল বিকেলে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের রাবনায় এলাকায় কাভার্ড ভ্যান ও পিকআপের সংঘর্ষে তিনজন এবং বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকায় এক নারী ও বাসাইলে এক শিশু নিহত হয়। নিহতদের মধ্যে তিনজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলো জেলার গোপালপুর উপজেলার হযরত আলীর ছেলে শাহ আলম (৪০), সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার গোয়াকড়া গ্রামের হামিদ মিয়ার ছেলে শাহান শাহ (২৫) ও নুরজাহান (৪৫)। তারা সবাই পিকআপের যাত্রী ছিলেন।
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল পুলিশ বক্সের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম জানান, ঈদের ছুটি শেষে গতকাল বিকেলে সিরাজগঞ্জ
থেকে ঢাকায় কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য একটি পিকআপে করে রওনা হন বেশ কয়েকজন। পিকআপটি ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের রাবনা বাইপাস এলাকায় পৌঁছলে একই দিক থেকে আসা একটি কাভার্ড ভ্যান পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে পিকআপে থাকা ১৫ যাত্রী আহত হন। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে সন্ধ্যায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনজনের মৃত্যু হয়। অন্যদিকে একই মহাসড়কে বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকায় বাসচাপায় এক নারী ও বাসাইলে মোটরসাইকলচাপায় এক শিশুর মৃত্যু হয়।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চন্দনাইশে কক্সবাজারগামী সৌদিয়া বাসের ধাক্কায় মো. জসিম উদ্দিন (৩৮) নামে এক নিরাপত্তাকর্মী নিহত হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার দোহাজারী পৌরসভা শাহি মসজিদসংলগ্ন দোহাজারী বাজারে নবী হোটেল অ্যান্ড বিরানি হাউজের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। বাসের চালক মো. মিজানুর রহমানকে (৪৫) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
নিহত জসিম উপজেলার দোহাজারী পৌরসভা ২ নম্বর ওয়ার্ড বারুদখানা এলাকার মৃত মো. ইসহাকের ছেলে। তিনি দোহাজারী কাঁচাবাজারের নৈশপ্রহরী ছিলেন।
খুলনায় সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী সোনিয়া আক্তার নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় তার স্বামী গুরুতর আহত হয়েছেন। গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে নগরীর লবণচরা থানার বিশ্বরোড এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত সোনিয়া জি গ্যাস কোম্পানির কর্মকর্তা আবদুল আলীমের স্ত্রী। তারা দাকোপ উপজেলায় বসবাস করেন।
লবণচরা থানার সহকারী পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) মো. সাইদুর রহমান বলেন, আলীম দম্পতি রাজবাড়ী জেলার বাসিন্দা। চাকরির সুবাদে তারা খুলনার দাকোপ উপজেলায় থাকেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার হওয়ায় তারা ঘুরতে বের হন। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মোটরসাইকেলে নগরীর জিরোপয়েন্টের পৌঁছায় এ দম্পতি। এ সময় পেছন থেকে বিআরটিসির একটি বাস মোটরসাইকেলটি ধাক্কা দেয়। সোনিয়া রাস্তার ওপর পড়ে গেলে বাসটির চাকা তার মাথার ওপর দিয়ে চলে যায়। এতে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় স্বামী গুরুতর আহত হন। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বগুড়া সদরে ট্রাকচাপায় আল ইমরান (৩৫) নামে এক মোটরসাইকেলচালক নিহত ও এর আরোহী আহত হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে সদর উপজেলার বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের মাটিডালি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত আল ইমরান জেলার দুপচাঁচিয়া উপজেলায় জিয়ানগর ইউনিয়নের বড়িয়া গ্রামের ইয়াসিন আলীর ছেলে।
বগুড়া ফুলবাড়ী ফাঁড়ির পুলিশ পরিদর্শক জালাল উদ্দিন জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে বগুড়া মমইন ইকোপার্ক থেকে মোটরসাইকেল চালিয়ে নিজ বাড়ি দুপচাঁচিয়া যাওয়ার পথে মাটিডালি এলাকায় রাস্তার ওঠার সময় মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে যান ইমরান। এ সময় একটি মালবাহী ট্রাক তার ওপর উঠে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই ইমরান মারা যান। ট্রাকটি হাইওয়ে পুলিশ জব্দ করেছে। তবে ট্রাকের চালক ও হেলপার পালিয়ে গেছে।
কুড়িগ্রামের রাজীবপুরে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তাহসিন জামান (১৪) নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বিকেলে উপজেলার সদর ইউনিয়নের বড়াইডাঙ্গী জামে মসজিদ এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত তাহসিন উপজেলার সদর ইউনিয়নের চররাজীবপুর বটতলা গ্রামের প্রভাষক মনিরুজ্জামান মিলনের ছেলে। সে রাজীবপুর সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগে সড়ক দুর্ঘটনায় সিএনজি অটোরিকশার চালক নিহত হয়েছেন। নিহতের নাম সুমন (৩৬)। অন্যদিকে দয়াগঞ্জ ট্রাকস্ট্যান্ড মোড়ে বাসের ধাক্কায় সিএনজি অটোরিকশা আরোহী একই পরিবারের তিনজনসহ চারজন আহত হয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে মুমূর্ষু অবস্থায় সুমনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতি গ্রামের আবদুল কুদ্দুসের ছেলে সুমন। এক ছেলে ও দুই মেয়ের জনক তিনি। থাকতেন রাজধানীর হাজারীবাগ বোরহানপুর বটতলা বাজার এলাকায়।
নিহত সুমনের মামা মো. আল-আমিন জানান, ভাড়া করা সিএনজি অটোরিকশা চালাতেন সুমন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে অটোরিকশা নিয়ে বের হয়েছিলেন। এরপর রাত সাড়ে ৪টার দিকে তারা খবর পান, রায়েরবাগ বাসস্ট্যান্ডে কাভার্ড ভ্যান ধাক্কায় গুরুতর আহত হয়েছেন সুমন। তার অটোরিকশাটিও দুমড়েমুচড়ে গেছে। তখন তারা ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে সুমনের মরদেহ দেখতে পান।
যাত্রাবাড়ী থানার এসআই রফিকুল ইসলাম জানান, রায়েরবাগ বাসস্ট্যান্ডে ফুটওভার ব্রিজের নিচে একটি কাভার্ড ভ্যান মোড় নিচ্ছিল। তখন অটোরিকশাটি সজোরে কাভার্ড ভ্যানের পেছনে ধাক্কা দেয়। এতে চালকের মৃত্যু হয়। অবশ্য অটোরিকশায় কোনো যাত্রী ছিল না। ঘটনার পরপরই কাভার্ড ভ্যানটি চালকসহ জব্দ করা হয়েছে।
দয়াগঞ্জ ট্রাকস্ট্যান্ড মোড়ে বাসের ধাক্কায় আহত সিএনজি অটোরিকশা আরোহীরা হলেন শামসুন্নাহার (৫২), তার ছেলে আলিম উদ্দিন পলাশ (২৯) ও মেয়ে সালেহা বেগম (৩৫) এবং অটোরিকশাচালক মো. আমজাদ আলী (৬০)। গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
আহত পলাশ জানান, তাদের বাড়ি জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায়। গ্রামের বাড়ি থেকে সকালে ট্রেনে করে ঢাকার কমলাপুর আসেন তারা। সেখান থেকে সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করে তাদের বাসা ওয়ারীর নারিন্দায় যাচ্ছিলেন। পথে একটি বাস তাদের বহনকারী অটোরিকশাকে ধাক্কায় দেয়।
খুলনা ব্যুরো, ঢামেক প্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্ট জেলা-উপজেলার প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে প্রতিবেদনটি তৈরি
সারা দিন মানুষের ভিড়ে হিজিবিজি লেগে থাকা রাস্তা, ঘিঞ্জি গলি, মনে হয় একটু ঝুঁকে পড়া ঘরবাড়িগুলো আকাশ ঢেকে ফেলতে ব্যস্ত। কোনো বর্ষায় তেড়ে বৃষ্টি নামলে ঝাপসা হয়ে যাওয়া বাহাদুর শাহ পার্কের সামান্য সবুজ, নিভু নিভু সিঙাড়ার দোকান, টমাস ডেন্টালের সবুজ দরজা। জনসন রোডের মাথায় রিকশা থেকে নেমে মাথা বাঁচাতে এক দৌড়ে বাংলাবাজারের বইপাড়ার বারান্দা। বইয়ের ঘ্রাণ ভাসে সেখানে, সরু সিঁড়ি, প্রায়ই আলোহীন করিডর, মাথায় বইয়ের স্তূপ নিয়ে শ্রমিকদের ঘর্মাক্ত শরীর, প্রকাশকদের অফিসে কবি-সাহিত্যিকদের চলাচল; সেই শহরের বইপাড়ার ভাঙা ভাঙা পুরনো ছবি মনের মধ্যে জট পাকিয়ে ডুব সাঁতারে ফিরে আসে আবার হারিয়ে যায়।
বাংলাবাজারের বইপাড়ার এই আবহের সঙ্গে আমার পরিচয়ের বয়স প্রায় তিরিশ বছর। মনে পড়ে, শিশুসাহিত্যিক আমীরুল ইসলামের সঙ্গে এক সকালে বাংলাবাজার। একটা ইংরেজি বই অনুবাদ করতে হবে। আমীরুল ভাই নিয়ে গিয়েছিলেন তখনকার শিখা প্রকাশনীর বাহার ভাইয়ের কাছে। এখন থেকে বছর তিরিশ আগে প্রকাশকদের ঘরে ঘুরে ঘুরে আড্ডা দিয়ে দিন কাটিয়ে দেওয়াটা দেখলাম ধীরে ধীরে আমার কাছে আকর্ষণের বিষয় হয়ে উঠল।
নিজের লেখা বই প্রকাশ প্রায় নিয়মিত হয়ে উঠলে প্রুফ দেখতে যেতে হতো বাংলাবাজারে। অনন্যার মনিরুল হক, সময় প্রকাশনের ফরিদ আহমেদ, অনুপম প্রকাশনীর মিলন নাথ; কত প্রকাশকদের সঙ্গে পরিচয় হচ্ছে তখন! কবি নির্মলেন্দু গুণকে দেখছি কোনো প্রকাশকের ঘরে বসে প্রুফ দেখছেন। ইমদাদুল হক মিলন ঢুকছেন কোনো কাজ নিয়ে। প্রয়াত কবি আবিদ আজাদ হাঁটছেন পথে প্রুফের কপি অথবা কোনো বই বগলদাবা করে। প্রয়াত কথাশিল্পী বুলবুল চৌধুরীকে পেয়ে যেতাম তার সিগারেট খাওয়ার নিমগ্ন ভঙ্গিসহ। পরিচিতদের সঙ্গে দেখা হয়ে গেলে রাস্তায় দাঁড়িয়েই আড্ডা শুরু হয়ে যেত। কখনো কোনো প্রকাশকের অফিসে দীর্ঘ আড্ডার জালে আটকে পড়া সাহিত্যিকদের কথার খই ছড়িয়ে পড়ত সামনের বারান্দায়। সুন্দর ছিল সেই দিনগুলো। জ্যেষ্ঠ সাহিত্যিকদের সঙ্গে বইপাড়ায় দেখা হওয়া মানেই চা, সিঙাড়া খাওয়ার ধুম পড়ত। একটু হাঁটলেই বিউটি বোর্ডিং। অধিকারী তারকদার স্মিত হাসির আমন্ত্রণ খাবার ঘরে। কাছে দাঁড়িয়ে এমনভাবে খাওয়াতেন যেন কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা। তারকদাও পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন। কত ভালোবাসার দৃশ্য ছবি হয়ে থাকল মনের মধ্যে!
বাংলাবাজারে সেই ঘোরাঘুরির সময়ে আমীরুল ইসলাম হঠাৎ একদিন বলেন, ‘তুমি একটা উপন্যাস লেখো।’
মনে মনে প্রমাদ গুনলাম। কবিতা লেখা আমার কাজ আর আমি লিখব উপন্যাস! কিন্তু আমীরুল ভাইয়ের তাগাদা বন্ধ হলো না। শেষে অনেক ভেবে উপন্যাসের একটা প্লট মাথার মধ্যে গুছিয়ে ফেললাম। লেখাও হয়ে গেল। আমীরুল ভাইকে জানাতেই তার স্বভাবসুলভ প্রশ্ন ছিল, ‘উপন্যাসের নাম কী দিছ মিয়া?’
বললাম, ‘বৃষ্টির পরে’।
মনে আছে, আমীরুল ভাই চোখ কুঁচকে বলেছিলেন, ‘নাম শুনে মনে হইতাছে একটা লোক বৃষ্টির দিনে বসিলার বিল থেইকা উল্টাইনা ছাতি নিয়া শহরে আসতেছে। নামটা বদলাও।’
পাল্টে গিয়ে উপন্যাসের নাম হলো, ‘এই সব অন্ধকার’। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে অনন্যা প্রকাশনী উপন্যাসটা প্রকাশ করেছিল। অবশ্য তার আগে আমার কবিতার প্রথম বই আলোর মুখ দেখে ফেলেছিল। বাংলাবাজারে গেলে মাঝে মাঝে সেই উপন্যাসটা লেখার সময়টা মনে পড়ে। আমীরুল ভাই চাপ প্রয়োগ না করলে হয়তো টানা গদ্য লেখার কাজটা আমার করা হতো না।
বাংলাবাজার থেকে বের হয়ে একটু হাঁটলেই বুড়িগঙ্গা নদী, সদরঘাট। মাঝে মাঝে বইপাড়া থেকে বের হয়ে চলে যেতাম নদী দেখতে। তখনো এত মানুষ আর যানবাহনের ভিড়, কোলাহল কলঙ্কিত করেনি এলাকাটাকে। শীতকালের দুপুরে কুয়াশামাখা নদী, টার্মিনাল, অলস নৌকা আমাকে টানত। বসে থাকতাম সেখানে গিয়ে।
সেখান থেকে কোনো দিন রিকশা নিয়ে সোজা চলে যেতাম পুরানাপল্টনে মানুদার গ্রাফিক প্রিন্টার্সের অফিসে। সেখানে বসে গভীর মনোযোগে বইয়ের প্রচ্ছদ করছে শিল্পী ধ্রুব এষ। নীরবতা ধ্রুবর এক জীবনের দোসর। তবুও পল্টনের বড় রাস্তার দিকে একটা নিরিবিলি চায়ের দোকানে আমরা চা খেতে যেতাম। কথা না বলেও বসে থাকতাম দোকানের বেঞ্চিতে। ধীরে নেমে আসা বিকেলবেলা আমাদের হয়তো আচ্ছন্ন করত। সেখানে কখনো পেতাম বুলবুল চৌধুরী অথবা শিল্পী মাসুক হেলালকে। উদাসীন ধ্রুব একসময় চায়ের কাপ নামিয়ে রেখে রওনা হতো বাড়ির পথে।
এখন লেখকরা অন্তর্জালেই তাদের প্রকাশকদের কাছে লেখা পাঠান, প্রুফ সংশোধন করে দেন অনায়াসে। ঢাকার যানজট টপকে তাদের ছুটতে হয় না বাংলাবাজারে।
বহু বছর আগে ঢাকার নৈশ জীবন নিয়ে পত্রিকায় রিপোর্ট করার জন্য গোটা রাত ঘুরতে হয়েছিল। মনে আছে, নিশুতি রাতে বাংলাবাজারে গিয়ে দেখেছিলাম বন্ধ সারি সারি দোকান ঘর। প্রকাশকদের অফিস নিঝুম হয়ে আছে। সারা দিনের কোলাহলের কোনো দাগ লেগে নেই সরু পথে অথবা বন্ধ শাটারে। আমার মনে হয়েছিল, বইগুলো বন্ধ ঘরের ভেতর ভূত হয়ে জেগে উঠে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। হঠাৎ ভয় পেয়েছিলাম!
আমি আজও বাংলাবাজারে যাই। বইমেলা শুরু হওয়ার আগে প্রকাশকদের ঘরে যাই। চা, সিঙাড়া খাই। বই প্রকাশ নিয়ে কথা বলি। খুঁজি চেনা মানুষ, সাহিত্যিকদের। বের হয়ে খামোখাই এ গলি-সে গলি ঘুরে বেড়াই একা একা। পাল্টে গেছে বাংলাবাজারও। চারপাশের ঘরবাড়ির শরীরে দেখি পরিবর্তনের চিহ্ন। ফেলে আসা দিনের ছবিগুলো আমার সঙ্গে সঙ্গে পথ হাঁটে। ফিরে দেখি হারানো সময়।
বর্ষাকালে নৌযান চলাচলে ঝুঁকিপূর্ণ বঙ্গোপসাগরের ভাসানচর এলাকা। গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ‘পানগাঁও এক্সপ্রেস’ ছাড়াও আরও তিনটি জাহাজ দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল। এ ছাড়া গত পাঁচ বছরে ১৩টি লাইটার জাহাজ (ছোট জাহাজ) দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিল এই এলাকায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিরিক্ত জোয়ার ও বাতাসে গতি কমে আসায় ভাসানচর এলাকায় দুর্ঘটনার শিকার হয় ছোট জাহাজ।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত বছরের ১৮ মে ১৬০০ টন গম নিয়ে ‘এমভি তামিম’ নামের একটি লাইটার জাহাজ ডুবে যায় এই এলাকায়। এ ছাড়া একই বছরের ১৬ এপ্রিল কয়লাবাহী লাইটার জাহাজ ‘তন্ময়-২’ ডুবে যায়। ডুবে থাকা অন্য জাহাজের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ২০২১ সালের ১৩ জুলাই ডুবে যায় ‘এমভি হ্যাং গ্যাং’ নামের একটি লাইটার জাহাজ। একই পয়েন্টে ২০২১ সালের প্রথম সপ্তাহে ডুবে যায় ‘ফুলতলা-১’ নামের আরও একটি জাহাজ। ২০২০ সালের ১৫ আগস্ট সাগরের অতিরিক্ত ঢেউয়ে হ্যাজে পানি প্রবেশ করে সিটি গ্রুপের মালিকানাধীন ‘এমভি সিটি-১৪’ নামের একটি চিনি বোঝাই জাহাজ ডুবে যায়।
এই এলাকার নৌ চলাচল রুটের দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ। দুর্ঘটনার বিষয়ে কথা হয় সংস্থাটির যুগ্ম পরিচালক (নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন) সবুর খানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘শুধু গত সাত মাসে ভাসানচর ও হাতিয়া এলাকায় ছয়টি জাহাজডুবির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে তিনটি উত্তোলন করা হলেও এখনো বাকিগুলো ডুবন্ত অবস্থায় রয়েছে। আর গতকাল পানগাঁও এক্সপ্রেস ছাড়াও আরও তিনটি জাহাজ জোয়ারের সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে কোনোক্রমে উপকূলে গিয়ে ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছে।’
কেন এত দুর্ঘটনা ঘটে : দুর্ঘটনার কারণ জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার) কমোডর এম ফজলার রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এই পয়েন্টে জোয়ারের সময় ঢেউ ও স্রোত খুব বেশি থাকে। তখন জাহাজের গতিবেগ প্রায় শূন্যে নেমে আসে। আর তখনই দুর্ঘটনার মুখোমুখি হয়। গতকাল পানগাঁও এক্সপ্রেসের ক্ষেত্রেও এমনটি হয়েছে। আরও তিনটি জাহাজও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’ চট্টগ্রাম থেকে পানগাঁওয়ের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া ‘পানগাঁও এক্সপ্রেস’ জাহাজটিতে ৯৬টি একক কনটেইনার পণ্য ছিল। সব কনটেইনার নিয়ে জাহাজটি সাগরে ডুবে যায়।
এই ঢেউ কোন সময়ে বেশি থাকে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাধারণত সাগরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখানো হলেই এই অংশে ঢেউয়ের সঙ্গে বাতাসের গতিবেগ বেশি দেখা যায়। কিন্তু তারপরও যেহেতু পণ্য পরিবহন সচল রাখতে হয় তারা সিগন্যালের সময় জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখেন। তবে বৃহস্পতিবার জাহাজটি চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসার সময় সিগন্যাল ছিল না, মাঝপথে এসে সিগন্যাল পায় এবং দুর্ঘটনায় পড়ে।
গত কয়েক বছরের দুর্ঘটনার সময়গুলোর দিকে তাকালে দেখা যাবে বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটেছে এপ্রিল থেকে জুলাই মাসের মধ্যে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের যুগ্ম পরিচালক (নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন) সবুর খান বলেন, ‘এপ্রিল থেকে জুলাই মাসে সাগর উত্তাল থাকে বলে এখানে জোয়ার ও ঢেউ বেশি থাকে। এ ছাড়া শীতকালে এই এলাকায় কুয়াশা বেশি থাকে। তখন এক জাহাজের সঙ্গে আরেক জাহাজের ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনা ঘটে থাকে।’
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম থেকে পানগাঁও এবং খুলনা বা মোংলায় পণ্য স্থানান্তরে জাহাজগুলো ভাসানচরের কাছ দিয়ে অতিক্রম করে থাকে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে ভারতের বিভিন্ন বন্দরের উপকূলীয় বাণিজ্য প্রকল্পের আওতায়ও কিছু জাহাজ উপকূল দিয়ে ভারতে গিয়ে থাকে। তখনো কিছু জাহাজ দুর্ঘটনার মুখোমুখি হয়ে থাকে।
একটি এতিমখানা স্থাপনের জন্য ২ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার পাঠানো হয়েছে। একজন শিক্ষকের নামে আসা এই টাকা পেতে বিমানবন্দরে পরিশোধ করতে হবে ৬৫ হাজার টাকা। এ টাকা দেওয়ার পর কয়েক দফায় চাওয়া হয় আরও টাকা। বিদেশি এসব মুদ্রা নিতে টাকা না দিলে অর্থ পাচার আইনে মামলা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ওই শিক্ষককে এমন হুমকিও দেওয়া হয়। এতে ঘাবড়ে গিয়ে টাকা দিয়ে দেন।
একটি সংঘবদ্ধ সাইবার প্রতারক চক্রের কবলে পড়ে এভাবেই এক শিক্ষক হারিয়েছেন ৪ লাখ টাকা। পরিচয় প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক ওই শিক্ষক দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, ২০২১ সালে এ ঘটনার পর রাজধানীর রামপুরা থানায় একটি মামলা করেন। এরপর মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
জানতে চাইলে পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু ইউসুফ দেশ রূপান্তরকে বলেন, চক্রটি একজন শিক্ষককে ফাঁদে ফেলে ৪ লাখ ১৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। গত বছর নভেম্বরে মামলাটির তদন্ত শেষে চারজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তারা হলো মো. ইউসুফ সরকার (৩২), মো. সাইফুর রহমান মিঠু (৫৮), মো. আলাল হোসেন (২৭) ও এমদাদুল্লাহ (৩৫)।
পিবিআই ও ভুক্তভোগী ওই শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিনথিয়া ফিলিপস নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে বন্ধুত্বের আমন্ত্রণ জানালে তা গ্রহণ করেন শিক্ষক। এরপর আফগানিস্তানের কাবুলে কর্মরত মার্কিন সেনাবাহিনীর সদস্য পরিচয়ে শিক্ষকের সঙ্গে নানা আলাপ চালিয়ে আসছিল কথিত সেই সিনথিয়া। পরে তার মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি এতিমখানা স্থাপনের পরিকল্পনার কথা জানায় এবং নিজেই সেখানে দান করবে বলে প্রস্তাব দেয়। ওই শিক্ষক সরল বিশ্বাসে রাজি হয়ে যান। তবে তাকে বিষয়টি গোপন রাখার শর্ত জানিয়ে দেওয়া হয়।
কিছুদিন পর ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ‘এআরও’ এম কে আজাদ পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি ওই শিক্ষককে ফোন করে জানায়, তার নামে একটি পার্সেল আছে। এ পার্সেল নিতে হলে তাকে এয়ারপোর্ট ক্লিয়ারেন্স ফি বাবদ ৬৫ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে। তার কথামতো একটি বেসরকারি ব্যাংকের হিসাব নম্বরে ৬৫ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন। কিন্তু ওই পার্সেল তার কাছে আসেনি।
এরপর শিক্ষককে আবারও ফোন করে ৫০ হাজার টাকা পাঠাতে বলা হয়। এভাবে কয়েকবার টাকা চাওয়ায় তিনি দিতে না চাইলে চক্রটি তাকে ভয় দেখায়। চক্রের সদস্যরা বলতে থাকেন, তাদের দাবি করা টাকা পরিশোধ করে এ পার্সেল না নিয়ে গেলে শিক্ষকের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার আইনে মামলা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরপর তিনি কয়েক দফায় ৪ লাখ ১৫ হাজার টাকা দেন।
চক্রটি পার্সেল ডেলিভারির কপি পাঠায়, কিন্তু তার ঠিকানায় পার্সেল না আসায় আবার যোগাযোগ করেন। এরপর রামপুরার একটি ঠিকানা পাঠিয়ে সেখানে গিয়ে পার্সেলটি নিতে বলা হয়। তাদের কথামতো শিক্ষক ওই এলাকায় গিয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে বুঝতে পারেন এটি ছিল প্রতারণা।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ওই শিক্ষক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চক্রটি অত্যন্ত কৌশলী। তাদের সঙ্গে কথা বলার সময় বোঝার সুযোগ ছিল না এটি প্রতারণা। এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে, এজন্য তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সাইফুর রহমান মিঠু ও তার দুই সহযোগী আলাল হোসেন ও ইউসুফ সরকারকে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা অপরাধের বিষয় স্বীকার করে। তবে চক্রে জড়িত অন্য সদস্যদের পরিচয় প্রকাশ করেনি।
এ ছাড়া পিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদে চক্রটির প্রধান মিঠু জানায়, গ্রেপ্তার এড়াতে তারা নানা অপকৌশল করে। তারা গরিব লোকজনকে টাকার লোভ দেখিয়ে তাদের দিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকে হিসাব খোলায়। এরপর তাদের নামে করা এসব ব্যাংক হিসাব ব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া টাকা তুলে নেয়।
এ ছাড়া এ ঘটনায় তদন্তে এমদাদুল্লাহ নামে একজনের জড়িত থাকার কথা জানা গেলেও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এ প্রতারণার ঘটনায় ব্যবহার করা ব্যাংক হিসাবটি গোলাম কিবরিয়া নামে এক ব্যক্তির। তাকে গ্রেপ্তারের জন্য তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করলেও তার অবস্থান শনাক্ত করা যায়নি বলে জানিয়েছে পিবিআই।
বরিশাল বিভাগের অভ্যন্তরীণ নদী এবং সমুদ্র মিলিয়ে গত এক যুগে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে ৪৬ শতাংশ। জাটকা নিধন বন্ধ ও ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান সফলভাবে হওয়ায় নদীতে ইলিশের ঝাঁক বাধাহীনভাবে চলাফেরা করতে পেরেছে। তাই ইলিশের বেড়ে ওঠার পাশাপাশি বংশবিস্তার হয়েছে নির্বিঘেœ। এমন পরিস্থিতিতে চলতি মৌসুমে ইলিশ উৎপাদনে বিগত দিনের রেকর্ড ভাঙার প্রত্যাশা করছে বরিশাল মৎস্য বিভাগ। সব মিলিয়ে জেলেরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিও চাঙা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মৎস্য কর্মকর্তারা বলছেন, বরিশাল বিভাগে জাটকা নিধন বন্ধে ২০০৪ সালে এবং ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান শুরু হয় ২০০৯ সালে। এরপর থেকেই আশানুরূপভাবে ইলিশের উৎপাদন বাড়তে শুরু করে। ২০১০ থেকে ২০২২ সালের মৎস্য উৎপাদনের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করেও এর প্রমাণ পাওয়া যায়। এতে দেখা যায়, গত ১২ বছরের ব্যবধানে এই বিভাগে ৪৬ শতাংশ ইলিশ উৎপাদন বেড়েছে। আর চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ইলিশ উৎপাদনের জন্য উপযোগী। তাই বিগত দিনের চেয়ে এই মৌসুমে বেশি ইলিশ পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন মৎস্য কর্মকর্তারা।
বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বরিশাল বিভাগে ২০১০-১১ অর্থবছরে মোট ইলিশ উৎপাদিত হয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার ৬২ মেট্রিক টন, ২০১১-১২ অর্থবছরে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৯৭৭ মেট্রিক টন, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৯৭৬ মেট্রিক টন, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ২ লাখ ২১ হাজার ৫৯৮ মেট্রিক টন, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ২ লাখ ৫৩ হাজার ১৮১ মেট্রিক টন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২ লাখ ৫৮ হাজার ২২৫ মেট্রিক টন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩ লাখ ২৪ হাজার ২৯৭ মেট্রিক টন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩ লাখ ২৯ হাজার ২৫ মেট্রিক টন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩ লাখ ৪১ হাজার ১১৯ মেট্রিক টন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৯২৭ মেট্রিক টন, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৩০১ মেট্রিক টন এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট উৎপাদিত ইলিশের পরিমাণ ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৮৫১ মেট্রিক টন।
বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকতা মো. আসাদুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উজানের স্রোত বাড়লেই আর পানির তাপমাত্রা কমে এলে ইলিশ সমুদ্র থেকে ওপরের দিকে উঠে আসবে। তখন জেলেদের জালে আশানুরূপ ইলিশ ধরা পড়বে।’
জুন-জুলাইয়ে নদীতে ইলিশ কম পাওয়া স্বাভাবিক জানিয়ে বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক আনিছুর রহমান তালুকদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিগত দিনের তুলনায় বর্তমানে ইলিশের পরিমাণ ও আকারে অনেক বড়। আগামী আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে পর্যাপ্ত ইলিশ পাওয়া যাবে।’
এদিকে সাগরে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা ২০ জুলাই শেষ হবে। তাই জেলেরাও নিচ্ছেন সাগরে নামার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। তবে নিষেধাজ্ঞা চলাকালে দেওয়া সরকারি সহায়তা প্রকৃত জেলেদের হাতে পৌঁছাতে টাস্কফোর্স গঠনের দাবি জানিয়েছেন জেলেরা। এ ছাড়া ইলিশ শিকারে তাদের বিভিন্ন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ প্রান্তিক পর্যায়ের জেলেদের।
বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সন্ধ্যা নদী তীরের মিরেরহাট এলাকার বাসিন্দা ইউসুফ হাওলাদার অভিযোগ করে বলেন, ‘ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞাকালে আমরা জেলেরা নদীতে নামতে পারি না। কিন্তু এলাকার নেতারা মৎস্য অফিসার ম্যানেজ করে লোক দিয়ে মাছ ধরায়। এ নিয়ে কথা বলতে গেলে এলাকায়ই থাকতে পারব না।’
পটুয়াখালীর কলাপাড়ার আন্ধারমানিক এলাকার বাসিন্দা মো. ছগির তালুকদার বলেন, ‘বর্তমানে নদী আর সাগরে দুই স্থানেই ইলিশ বেড়েছে। কিন্তু সারা বছর নিষেধাজ্ঞা লেগেই থাকে। ঠিকমতো মাছ ধরতেও পারি না। এ ছাড়া নিষেধাজ্ঞাকালে বরাদ্দের চালও ঠিকমতো পাই না। একটি গ্রুপ যাদের নামে সুপারিশ করে তারাই চাল পায়।’
কোরবানি ঈদের এক সপ্তাহ পার হয়েছে। এখনো চট্টগ্রামের আড়তগুলোতে পড়ে আছে পশুর চামড়া। লবণজাত করা এসব চামড়া বিক্রির জন্য প্রস্তুত। কিন্তু চামড়া কেনার মতো পর্যাপ্ত ট্যানারি নেই চট্টগ্রামে। ঢাকার ট্যানারিগুলোই ভরসা।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একসময় চট্টগ্রামে প্রচুর ট্যানারি ছিল। চামড়ার ব্যবসাও রমরমা ছিল। পুঁজি সংকট, পৃষ্ঠপোষকতার অভাব প্রভৃতি কারণে প্রায় সব ট্যানারিই বন্ধ হয়ে গেছে। এখন একটি মাত্র ট্যানারি আছে রিফ লেদার। কিন্তু তাদের একসঙ্গে এত চামড়ার চাহিদা নেই। তাই এখন আমাদের তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে ঢাকার ট্যানারিগুলোর দিকে।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকার বিভিন্ন ট্যানারির মালিকরা এখানকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। আরও সপ্তাহখানেক পরে তারা চট্টগ্রাম আসতে পারে।’
কোরবানির মৌসুমেই চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে মোট চাহিদার নব্বই শতাংশ চামড়া সংগ্রহ করা হয়। চট্টগ্রামের আড়তদাররা চলতি মৌসুমে সাড়ে তিন লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও মিলেছে ৩ লাখ ১৯ হাজার। এর বাইরে গাউছিয়া কমিটিসহ বিভিন্ন মাদ্রাসার পক্ষ থেকে আরও অন্তত এক লাখ চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা এবার নগরীর চামড়াগুলো সরাসরি আতুরার ডিপো কিংবা বিবির হাটের আড়তগুলোতে নিয়ে এলেও নগরীর বাইরের সিংহভাগ চামড়া সেখানেই লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে। গাউছিয়া কমিটির সংগ্রহ করা চামড়াগুলো নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় একাধিক স্থানে লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
নগরীর আতুরার ডিপোর আড়তদারদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, উপজেলা পর্যায়ে লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করা চামড়া নগরীর বিভিন্ন আড়তে আসা শুরু হয়েছে। সেগুলো আড়তে স্তূপ করে রাখা হচ্ছে। এখনো প্রচুর চামড়া নগরীর বাইরে রয়ে গেছে। এসব চামড়া বিক্রি করতে কতদিন লাগবে তা কেউ বলতে পারছে না। সবাই অপেক্ষা করছে ঢাকার ট্যানারির লোকজনের আসার।
একাধিক আড়তদার বলেন, ‘দেশের চামড়াশিল্পের কাঁচামালের বড় অংশ জোগান দেয় চট্টগ্রামের আড়তগুলো। কিন্তু চামড়া কেনার জন্য চট্টগ্রামে ট্যানারি না থাকায় আমাদের পুরোপুরি ঢাকার ট্যানারিগুলোর ওপর নির্ভর করে থাকতে হয়। তারা অনেক সময় সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কম রেট দিতে চায়। বিকল্প না থাকায় আমাদেরও সেটা মানতে হয়। ফলে বিনিয়োগকৃত পুঁজির বিপরীতে কাক্সিক্ষত মুনাফা পাওয়া যায় না।’
চট্টগ্রামে চালু থাকা একমাত্র ট্যানারি রিফ লেদার লিমিটেড এবার এক লাখ পিস চামড়া কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক মো. মোখলেসুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঈদের দিন থেকেই আমরা চামড়া সংগ্রহ করছি। আমাদের কাছে প্রায় ৫০ হাজার চামড়া এসেছে। সেগুলো লবণ দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে। আগামী সপ্তাহ থেকে আমরা বাকি চামড়া সংগ্রহের কাজ শুরু করব।’
চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমবায় সমিতির সহসভাপতি আবদুল কাদের দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একসময় চট্টগ্রামে ২২টি ট্যানারি ছিল। তখন আড়তদারদের সংগৃহীত চামড়া কিনতে ট্যানারি মালিকরাও প্রতিযোগিতায় নামতেন। তাই মৌসুমি ব্যবসায়ী, আড়তদার কাউকে চামড়া নিয়ে টেনশন করতে হতো না। পরে নানা সীমাবদ্ধতার কারণে রিফ লেদার লিমিটেড ছাড়া বাকি সব ট্যানারি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সংগৃহীত চামড়া বিক্রি ও যথাযথ দাম পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হয় ব্যবসায়ীদের।’
ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ১৮ আগস্ট ৯ বছরের শিশু আরাফাতের মৃত্যু হয়। সপ্তাহ না যেতেই ২৫ আগস্ট মারা যায় আরাফাতের ছোট বোন ৬ বছরের রাইদা। রাজধানীর মধ্যপাইকপাড়ার ছাপাখানা মোড়ের একটি বাসায় দুই সন্তান আরাফাত ও রাইদাকে নিয়ে থাকতেন মোহাম্মদ ইব্রাহিম ও রাবেয়া আক্তার দম্পতি। সন্তানদের মৃত্যুর পর জীবনটাই বদলে গেছে তাদের। তছনছ হয়ে গেছে সাজানো সংসার। ইব্রাহিম ও রাবেয়া দম্পতির মতো বহু পরিবার এবার সর্বস্বান্ত হয়েছে ডেঙ্গুজ¦রের থাবায়। সন্তান হারানো এমন বাবা-মায়েরা পাগলপ্রায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছর ডেঙ্গুতে শূন্য থেকে ২০ বছর বয়সী ১৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা ডেঙ্গুতে মৃত্যুর ১৮ শতাংশ। এর মধ্যে পুরুষ ৮৬ এবং নারী ৯১ জন। এবার শুধু শহর নয়, গ্রামেও ছড়িয়েছে ডেঙ্গু। সেখানেও মারা গেছে অনেক শিশু। এ বছর ডেঙ্গুতে শিশুমৃত্যু নিয়মিত ঘটনা হয়ে দেখা দিয়েছে। এই রোগে এত শিশুর মৃত্যু আগে কখনো হয়নি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এ বছর শূন্য থেকে ২০ বছর বয়সীরা আক্রান্ত হয়েছে ৬৩ হাজার ৯১৯ জন; যা মোট আক্রান্তের ৩২ শতাংশ। এর মধ্যে নারী ২৩ হাজার ৬১৭ এবং পুরুষ ৪০ হাজার ৩০২ জন। ডেঙ্গুতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। তথ্য বলছে, ডেঙ্গুতে শিশুদের আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুর হার কম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়া শিশুদের যারা সুস্থ হয়ে উঠছে, তাদের মধ্যে ভবিষ্যতে শারীরিক জটিলতা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ডেঙ্গুর বর্তমান সংক্রমণের মধ্য দিয়ে শিশুদের জন্য নতুন ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। তাদের মানসিক বিকাশও বাধাগ্রস্ত হতে পারে। ডেঙ্গুর এই পরিস্থিতি শিশুদের নতুন বিপদের দিকে ঠেলে দিয়েছে বলে মনে করছেন তারা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার বিরূপ প্রভাব শিশুদের মধ্যে ভবিষ্যতে দেখা যেতে পারে। মস্তিষ্ক ও অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে এর প্রভাব থাকতে পারে। এতে তাদের মেধাবিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তাদের যদি কিডনি কিংবা লিভারের মতো অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে সেই ভার সারা জীবন বহন করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শিশুদের মৃত্যু নিয়ে ভালোভাবে অ্যানালাইসিস করতে পারছি না। এসব মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে অটোপসি করতে পারলে ভালো হতো। বিভিন্ন দেশে মৃত্যু নিয়ে ডেথ রিভিউ বা অটোপসি করা হয়। এটি করতে পারলে বাংলাদেশে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যেত।’
এদিকে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা দিতেও হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো। কোনো শিশুর শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন হলে পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (পিআইসিইউ) চিকিৎসা দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। শিশু বিশেষজ্ঞদের মতে, ১ মাস থেকে ১২ বছর বয়সী মুমূর্ষু শিশু রোগীদের পৃথক পিআইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দিতে হয়। তবে দেশে পিআইসিইউ সংকট রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে পিআইসিইউর জন্য স্বজনদের হাহাকার করতে দেখা গেছে। হাসপাতালগুলোতে দেখা গেছে ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ শিশুকে সেবা দিতে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা যেমন বেশি, সেখানে শিশু রোগীও উল্লেখযোগ্য। এই দুটি হাসপাতালে একেকটি শয্যায় একাধিক শিশু রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। ঢামেক হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের জন্য পৃথক ওয়ার্ড খুলেছে কর্তৃপক্ষ। ৭০ থেকে ৮০ জনের সেবা পাওয়ার কথা, কিন্তু সেখানে প্রতিদিন সেবা নিচ্ছে প্রায় ৩০০ শিশু। ঢামেক হাসপাতালের ২৫ শিশুকে একসঙ্গে পিআইসিইউতে সেবা দেওয়ার সক্ষমতা আছে। কিন্তু মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোনো পিআইসিইউ নেই।
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখানে শিশুদের ওয়ার্ডেই ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পিআইসিইউ নেই, তবে এনআইসিইউ (নিউনেটাল আইসিইউ বা নবজাতকদের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র) আছে।
এদিকে শিশু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের শরীরে ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গু শনাক্তে পরীক্ষা করা প্রয়োজন। শিশুদের ডেঙ্গুর চিকিৎসা প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শামীমা ইয়াসমীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিশুদের জ্বর আসার তিন দিনের মধ্যে পরীক্ষা করাতে হবে। এবার অনেকের মধ্যে হঠাৎ করে ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিচ্ছে। ফলে তারা দেরিতে চিকিৎসা নিতে আসছে। দেখা গেছে, ডেঙ্গুজ্বরে যেসব শিশু মারা গেছে, তারা বাড়ি থেকেই জটিলতা নিয়ে এসেছে। এখানে একটি বিষয় লক্ষ রাখতে হবে, শুধু প্লাটিলেট কমা আশঙ্কার নয়, রক্তচাপ কমে যাওয়া প্লাটিলেট কমার চেয়ে ভয়ের। তাই আমাদের শিশুদের রক্তচাপ নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে।’
স্যাংশন নিয়ে ভয় না পাওয়ার বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার মেথডিস্ট সেন্ট্রাল হলে নাগরিক সংবর্ধনায় দেওয়া বক্তব্যে তিনি পাল্টা স্যাংশন দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন।
সংবিধান অনুযায়ী সরকারের অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে জানান তিনি। খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা ইস্যু সম্পর্কে প্রশ্ন রাখেন, সাজাপ্রাপ্ত কাউকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠায় কোন দেশ?
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন রেখে বলেন, পৃথিবীর কোন দেশের সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠায় বলতে পারেন? কোনো দেশে পাঠায়? তারা এটা দাবি করে। আমাদের কেউ কেউ আঁতেল আছে। তারা বলে, একটু কী সহানুভূতি দেখাতে পারেন না! সে এভারকেয়ার, বাংলাদেশের সবথেকে দামি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। আর রোজই শুনি এই মরে মরে, এই যায় যায়। বয়সতো আশির ওপর। মৃত্যুর সময় তো হয়ে গেছে। তার মধ্যে অসুস্থ। এখানে এত কান্নাকাটি করে লাভ নাই।
স্যাংশনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নেই। আপনাদেরও বলব, স্যাংশন নিয়ে মাথা ঘামাবেন না।
বিএনপি চেয়ারপারসন ‘অসুস্থ’ খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে শর্ত দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সেই শর্তের অন্যতম ইস্যু হচ্ছে, বিএনপিকে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। এমন ঘোষণার পরপরই খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিদেশে যাওয়ার অনুমতি মিলবে। কিন্তু সরকারের সেই শর্তে রাজি নন খালেদা জিয়া। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, কোনো শর্তের বিনিময়ে তিনি মুক্তি চান না। ফলে বিএনপিকে নির্বাচনে আনার সরকারের যে চেষ্টা, সেটা এ দফায় সফল হচ্ছে না বলে মনে করছেন আন্দোলনে থাকা নেতারা। তাদের মতে, সরকার ফাঁদ পাতলেও এতে পা না দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে বেগম জিয়ার। বরং আন্দোলনে এ সরকারকে বিদায় করে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দরজা খুলতে চান তারা। একই সঙ্গে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করেই আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবেন। এ লক্ষ্যে প্রায় অর্ধশত দল নিয়ে গত প্রায় এক বছর ধরে আন্দোলনে রয়েছেন তারা।
শর্তের বিনিময়ে মুক্তির বিষয়টি তুলে ধরে গত রবিবার রাতে কিশোরগঞ্জে বিএনপির রোডমার্চের সমাপনী সমাবেশে দলটির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে শর্ত দেওয়া হয়েছিল তিনি যদি চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে চান, তাহলে বিএনপিকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে আসতে হবে। বিএনপি থেকে উত্তর দেওয়ার আগেই অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতাল থেকে খালেদা জিয়া বিদ্রোহ করে বলেছেন, তার জীবনে গণতন্ত্রের জন্য কোনো শর্ত নেই। ভোটের অধিকারের জন্য, এই দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য কোনো শর্ত নেই। কোনো শর্ত খালেদা জিয়ার নামের সঙ্গে যায় না এবং আমরাও তা মানি না।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খালেদা জিয়া ৫৪ দিন ধরে টানা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিতই খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের সর্বশেষ অবস্থা খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। এ সময় বেশ কয়েকবার শারীরিকভাবে বেশ অসুস্থ হয়ে পড়লে দলের কয়েকজন নেতার মাধ্যমে মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের দেওয়ার বক্তব্যের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সম্প্রতি দলের মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির কয়েকজন সম্পাদক ও সদস্য খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন। সূত্রগুলো বলছে, একজন ভাইস চেয়ারম্যান ও স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য কথা প্রসঙ্গে এ ধরনের প্রসঙ্গেও ইঙ্গিত দিলে খালেদা জিয়ার শর্ত দিয়ে মুক্ত হতে চান না বলে পুনর্ব্যক্ত করেন। যদিও এর আগে শর্ত দিয়ে দেশের বাইরে চিকিৎসার বিষয়ে দল যাতে সম্মত না হয়, সে কথা নেতাদের আগেই বলে রেখেছিলেন একসময় স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া এ নেত্রী। কোনো অবস্থায় শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাওয়া যাবে না এবং এ ব্যাপারে কোনো ধরনের সমঝোতাও নয়Ñ এ ব্যাপারেও খালেদা জিয়ার স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে হাসপাতালে দেখা করেন। সাক্ষাৎ শেষে বেরিয়ে এসে মঞ্চের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের এ আন্দোলনে উনার সমর্থন আছে। আমাদের একজন নেতা (ওই বৈঠকে) বলেছেন, সরকার একটা নির্বাচনের জাল বিছানোর চেষ্টা করছে। উনি (খালেদা জিয়া) বলেছেন, কোনো অবস্থায় এ সরকারের অধীনে নির্বাচনী ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না।’
এর আগে ৮ মে রাতে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় সাক্ষাৎ শেষে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছিলেন, কেউ কেউ বলছেন আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে যাওয়া উচিত। এমন প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়া তাদের বলেছেন, প্রশ্নই আসে না। এ বিষয়ে আমি কোনো অনুমতি দেব না।
এই প্রেক্ষাপটে বিএনপি মনে করছে, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি এখন সরকারের বিদায়ের ওপর নির্ভর করছে। আন্দোলনে এ সরকারকে বিদায় করতে না পারলে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দরজা খুলবে না। তাই এখন আন্দোলনের মাধ্যমে এ ইস্যুর সমাধান করবে তারা। এজন্য চলমান এক দফার আন্দোলনের সঙ্গে এখন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও চিকিৎসা ইস্যুটি জোরালোভাবে সম্পৃক্ত করতে চান তারা। এতে সরকারবিরোধী আন্দোলন বড় ধরনের মোড় নিতে পারে বলে তাদের বিশ্বাস।
গতকাল সোমবার স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভা হয়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে সভায় খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়। আগামী ৫ অক্টোবর বিএনপি ঘোষিত রোডমার্চ কর্মসূচি শেষ হবে। এর আগেই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবে বিএনপি।
জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু বলেন, ‘দাবার ঘুঁটি হিসেবে খালেদা জিয়াকে ব্যবহারের চিন্তা তারা কীভাবে করে সেটাই বোধগম্য নয়। সরকারের এ ধরনের চিন্তা বা পরিকল্পনা কোনো কাজে আসবে না।’
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে বিএনপিপ্রধানের পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদনের ওপর গত রবিবার আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে বলেছে, সাজা স্থগিত থাকাবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই। যদি যেতে হয়, তাহলে সাজা স্থগিতের আদেশ বাতিল করতে হবে। কিন্তু সেটা করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তবে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি।
আবার গতকাল নিজ কার্যালয়ে সুপ্রিম কোর্টের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাছান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতি কিংবা আপিল বিভাগে আবেদন করতে পারেন। তবে তার আগে তাকে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জেলে যেতে হবে। রাষ্ট্রপতি বা আপিল বিভাগের খালেদা জিয়ার পরিবার আবেদন করবে না বলে দলীয় আইনজীবী সূত্রে জানা গেছে।
বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দেশে আইনের শাসন নেই বলেই বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে ভয়ংকর তামাশা করা হয়েছে। যে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়া এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন, সেখানে বলা হয়েছে, তাকে “দেশে চিকিৎসা নিতে হবে”, তার বদলে “দেশে বা বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারবেন” বলাই যথেষ্ট। এর বাইরে দলের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত নেই।’
এদিকে চিকিৎসক সূত্র জানা গেছে, বর্তমানে খালেদা জিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। গতকাল তার আলট্রাসনোগ্রাম ও ইকো করা হয়েছে।
তিনি জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য প্রণীত আইনের অধীনে ধানমন্ডিতে যে বাড়ি পেয়েছিলেন শেখ রেহানা, বিএনপি ক্ষমতায় এসে সে বাড়ি উচ্ছেদ করে। সেখানে পুলিশ ফাঁড়ি করছে আর ‘লাল টুকটুকে শাড়ি পড়ে’ সেই পুলিশ ফাঁড়ি উদ্বোধন করেছে খালেদা জিয়া। ছেলে কোকোর মৃত্যুর পর তাকে (শেখ হাসিনা) খালেদা জিয়ার বাড়িতে প্রবেশের অনুমতি না দেওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা কীভাবে খালেদা জিয়ার জন্য আমার কাছ থেকে আরও সহানুভূতি আশা করে।’
লন্ডনের মেথোডিস্ট সেন্ট্রাল হল ওয়েস্টমিনস্টারে তার সম্মানে আয়োজিত একটি কমিউনিটি সংবর্ধনায় তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গণতন্ত্রের কথা বলা বিএনপির পক্ষে শোভা পায় না কারণ তারা জনগণের ভোটাধিকার নিয়ে ধোকাবাজি খেলেছে। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি একটি প্রহসনমূলক নির্বাচন করে এবং নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার দেড় মাসের মধ্যেই দেশের জনগণ তাদের ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে। তিনি বলেন, দেশের জনগণ কখনই ভোট কারচুপিকারীদের ক্ষমতায় বসতে দেয় না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার প্রধান হিসেবে তার ওপর ন্যস্ত নির্বাহী ক্ষমতা দিয়ে এতিমদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতির মামলায় কারাদণ্ড স্থগিত করার পর খালেদা জিয়াকে তিনি বাড়িতে থাকতে দিয়েছেন। খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে তার কিছুই করার নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি আইন অনুযায়ী যা করতে পারেন তাই করেছেন। অনেকেই এখন যুক্তি দিচ্ছেন, ‘আইন নিজের গতিতে চললেও খালেদা জিয়ার প্রতি আমি বেশি সহানুভূতি দেখাতে পারি’।
অনুষ্ঠানের মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান শরীফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজেদুর রহমান ফারুক।
উত্তর-পূর্ব পাকিস্তানে একটি অঙ্গ পাচারকারী চক্রের আট সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, পুলিশ বলছে। চক্রটির নেতা ফাওয়াদ মুখতারের বিরুদ্ধে ৩০০ জনেরও বেশি মানুষের কিডনি চুরি করে বের করে ধনী গ্রাহকদের মধ্যে প্রতিস্থাপন করার অভিযোগ রয়েছে।
মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা বিবিসি নিউজ।
বিবিসি জানায়, অস্ত্রোপচারের সময় রোগীর দেহ থেকে কিডনি সরিয়ে ফেলা এবং ধনী গ্রাহকদের কাছে বিক্রির অভিযোগে ফাওয়াদ মুখতার নামের এক চিকিৎসক ও তার দলের আট সদস্যদের গ্রেপ্তার করেছে পাকিস্তান পুলিশ। ফাওয়াদ এ পর্যন্ত তিন শতাধিক রোগীর কিডনি চুরি করেছেন।
এমনকি অস্ত্রোপচারকালে কিডনি চুরির সময় তার হাতে অন্তত তিনজন রোগী মারা গেছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
ফাওয়াদ এর আগে পাঁচবার অসদাচরণের জন্য গ্রেপ্তার হলেও প্রতিবারই জামিন নিয়ে মুক্তি পেয়ে যান। রোববার (১ অক্টোবর) পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী লাহোর থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানায় পাকিস্তান পুলিশ। চক্রটি পূর্ব পাঞ্জাব প্রদেশের পাশাপাশি পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরে কাজ করছে বলে ধারণা করছে পুলিশ।
পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মহসিন নকভি রবিবার একটি সংবাদ সম্মেলনে জানান, “কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্টগুলি বিভিন্ন ব্যক্তিমালিকানাধীন ভবনকে ক্লিনিক আকারে সাজিয়ে সেখানে রোগীদের অস্ত্রোপচার করার সময় রোগীদের অজান্তেই কিডনি সরিয়ে নেয়া হত।“
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ফাওয়াদ মুখতার জানিয়েছেন, তার নেতৃত্বাধীন চক্র এখন পর্যন্ত মোট ৩২৮ রোগীর দেহ থেকে কিডনি চুরি করেছে। প্রতিটি কিডনি বিক্রি হয়েছে ১ কোটি রুপি করে।
২০১০ সালে মানবদেহের প্রত্যঙ্গ ব্যবসা নিষিদ্ধ করে পাকিস্তান। এ অপরাধের জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও মোটা অঙ্কের জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোন দেশে ভালো চিকিৎসা হতে পারে তার খোঁজ নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা জার্মানিতে হতে পারে কিনা জানতে চেয়েছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। মঙ্গলবার জানতে চাইলে ঢাকায় জার্মানির সিডিএ জান রল্ফ জানোস্কি বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মিসেস জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার ধরন সম্পর্কে জেনেছি। তার ভালো চিকিৎসা বিশ্বের খুব কম দেশে সম্ভব। জার্মানিতে এসব সমস্যার খুব ভালো চিকিৎসা আছে। সরকারের অনুমোদন পেলে তিনি জার্মানিতে চিকিৎসা নিতে পারেন।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিডনির কর্মক্ষমতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ কারণে কয়েকবার তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড মনে করে সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কা মুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড রিকমেন্ডেশনে বলেছেন।
এর আগে ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় ৫ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। এ অবস্থায় তাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই সরকার সেসব আমলে না নিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আগের মতোই লিভারের জটিলতার পাশাপাশি ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে শঙ্কিত তার চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছে। শরীরে ক্যাথেডর লাগানো হয়েছে। আগে যেখানে দুই-তিন দিন পরপর পানি বের করা হয়েছে, এখন প্রতিদিনই পানি বের করতে হচ্ছে। তার কেবিনে মঙ্গলবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। লিভার সিরোসিসের সঙ্গে কিডনির জটিলতাও বাড়ছে। তার লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া সামনে বিকল্প নেই। এর জন্য খুব দ্রুত উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠানো দরকার।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই গুরুতর। গত সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। আবেদনটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত তাকে অনুমতি দেওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে খালেদা জিয়ার একান্ত সহকারী জানিয়েছেন।
পাশাপাশি সরকারের অনুমতি পেলে দ্রুততম সময়ে তাকে বিদেশে নিতে ভিসা-প্রক্রিয়া শুরু থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ প্রয়োজনীয় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। সরকারের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় ভিসা করানো যাচ্ছে না।
গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে এসব কথা জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম।
তিনি বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের খোঁজখবর নিচ্ছেন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান। শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ থাকলে প্রথমে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হতে পারে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নত হলে অন্য দেশে নেওয়া হবে।
সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘আমার বোন হেঁটে জেলে গেলেন। জেলে থাকাবস্থায় অসুস্থ হলে তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এরপর করোনার কারণে সরকার তাকে দুটি শর্তে মুক্তি দেয়। তখন থেকেই আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে আবেদন করে আসছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার তাকে মুক্তি দেয়নি। বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে না পারায় দিনের পর দিন তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে। এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে আমার বোন।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী এবিএম আব্দুস সাত্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি নেতারা সার্বক্ষণিক চেয়ারপারসনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আমরা সরকারের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে আমরা দ্রুততম সময়ে চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠাতে পারব।’
জিয়া পরিবারের সদস্যরা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তারা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন। অনুমতি পাওয়া মাত্র সব ধরনের পদক্ষেপ নেবেন। ইতিমধ্যে ভিসা প্রস্তুতিসহ অন্যান্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। বিদেশে নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাবেন তার পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান, ব্যক্তিগত সহকারী ফাতেমা ও ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। তখন থেকেই তিনি হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সেবায় সার্বক্ষণিক থাকছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আজ (গতকাল শুক্রবার) ম্যাডাম শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে বিকেলে তাকে তৃতীয়বারের মতো কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। রাতে আবার তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। পরে অবস্থার উন্নতি হলে তাকে ফের কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত চিকিৎসক দলের সদস্যরা জানান, খালেদা জিয়া ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। একই বছরের নভেম্বরে তার চিকিৎসকরা জানান, তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত দলীয় মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা তখন জানিয়েছিলেন, তাদের সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু করার ছিল, তারা তা করেছেন। পরবর্তী চিকিৎসা যুক্তরাজ্য, জার্মানি অথবা যুক্তরাষ্ট্রে করার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিবারকে বলেছেন। পরের বছর জুন মাসে খালেদা জিয়ার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটিতে রিং পরানো হয়। এখনো তার হার্টে দুটি ব্লক রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পাশাপাশি আমরা বিএনপি নেতারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চেয়ারপারসনের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে দ্রুতই চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠানো হবে।’
গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহিলা দলের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে মানুষটি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তাকে আজ সরকার গৃহবন্দি করে রেখেছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হলেও তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। আমরা আশা করি, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে তার পরিবার যে আবেদন করেছে, তা সরকার বাস্তবায়ন করবে।’
সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে। কারণ উনি মুক্ত থাকলে ওনাদের ক্ষমতায় থাকা কঠিন হয়ে যাবে। উনি মুক্ত থাকলে দেশের গণতন্ত্র মুক্ত থাকবে। উনি মুক্ত থাকলে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না।’
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী, সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছে। ফলে এখন জেলে যাওয়া বা আদালতের আশ্রয় নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ওই ৪০১ ধারাতেই বলা আছে, নির্বাহী আদেশে শর্ত ছাড়াই মুক্তি দেওয়া যায়। এমনকি সরকার সাজা মওকুফও করতে পারে। ফলে সরকারই শর্তহীন মুক্তি দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে।’
গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর বিষয়ে দুই-তিন দিন আগে তার ভাই শামীম এস্কান্দার এসেছিলেন। তিনি আবেদন জমা দিলে তা আইনমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে ব্যাখ্যার জন্য।
আবেদনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে থাকা বিএনপি নেতারা।
তারা গত বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছেন। খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। তারাও অপেক্ষা করছেন যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাবেন ওই নেতারা।
খালেদা জিয়াকে জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়ে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশে^র যে কয়েকটি দেশে সম্ভব, জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এরপর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এর আগেও অবশ্য খালেদা জিয়াকে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। এ ছাড়া তার মেরুদ-, হাত ও হাঁটুতে বাতের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হয়। সেদিন থেকে প্রায় দুই বছর কারাবন্দি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আরও সাত বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ করোনা মহামারির শুরুতে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দিয়েছিল সরকার। এরপর থেকে তার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো হচ্ছে।